পশ্চিমাদের মানবতা বিরোধী এক জঘন্য অপরাধ কৃত্তিম রোগ এইডস এর প্রসার




বিজ্ঞান বড় নিষ্ঠুর! আমরা শুধু প্রমাণ ধরে এগিয়ে যাই। কোন প্রমাণ বুঝতে গিয়ে বোকা বনলে বোকা বানানো হবে শুধু নিজেকেই।

-ডক্টর রবিন ওয়েইস, রয়াল সোসাইটি হুপার তত্ত্ব-কপরাস্কি বিতর্কের কো-অর্ডিনেটর।


চার কোটি মৃত্যু, আট কোটি জানাশোনা মানুষ আক্রান্ত। অজান্তে আরো আরো অনেক। আফ্রিকা মহাদেশ ছিন্নভিন্ন। সারা পৃথিবী আতঙ্কিত… মাত্র তিন দশকে যে দুর্যোগ নিয়ে এসেছে এইডস, তার কাছাকাছি কোনকিছু মানুষ কোনদিন কল্পনাও করতে পারেনি। না, হিরোশিমাতে নয়, নাগাসাকিতেও নয়।

আগামি চল্লিশ বছরের মধ্যে দশ কোটি অপরিণত বাচ্চা শিশু মারা যাবে এইডসে। বুড়ো হাবড়াদের ক্যান্সারে মারা যাবার মত কোন ঘটনা নয় এইডস, শিশুদের উপর আসা রূপকথার দানবের আক্রমণ।

পশ্চিমা বিশ্ব একে সব সময় অবহেলা করে এসেছে। জাতিসংঘ করেছে হেলা, অবহেলা করেছে রিগ্যান-বুশ-ক্লিনটন-বুশ-ওবামা প্রশাসন। অবহেলা করেছে চীন-ভারত-ব্রিটেন-রাশিয়া। আর বেড়েই গেছে এইডস। দাবানলের মত। একটু, একটু, একটু করে।

বাড়ছে এইডস। বিজ্ঞান-কম্যুনিটি একেবারে নিশ্চুপ।

কেন?

মাত্র কয়েকটা প্রশ্ন, আর ভেঙে গেল সব দেয়াল।

ক. এইডস: জিজ্ঞাসার দেড়যুগ





প্রথম আবিষ্কারের পর মানুষ স্তম্ভিত হয়ে যায়। কোত্থেকে এল এই বোমা! তখন কেউ প্রাণিরাজ্যে এই ধারার ভাইরাসের কথা শোনেওনি।

-ডক্টর সাইমন হবসন, পাস্তুর ইন্সটিটিউট, এইডসের প্রথম শণাক্তকারী।

কাটার আগেরদিন ডক্টররা এসে একটা ইঞ্জেকশন দিত শিম্পাঞ্জীকে। সাথে সাথে প্যারালাইজড হয়ে যেত চিম্পগুলো। ওদেরকে খেত না, কিছু জিনিস বের করে নিয়ে বাকিটা ফেলে দিত। অপারেশন চলার সময়ও বানরগুলো দেখতে পেত নিজের শরীরের কাটাকুটি।

-ক্রিস্তোফ বায়েলো। ক্যাম্প ল্যান্ডির অ্যাসিস্ট্যান্ট।


বছর আঠারো আগের কথা।

টিভিতে এক বন্ধু তার মায়ের সাথে এইডসে মারা যাওয়া প্রধম শ্বেতাঙ্গ মেয়েটাকে নিয়ে ফিচার দেখছিল। কিন্তু কীভাবে মারা গেল মেয়েটা বানরের রোগে?

মা বলল, একটা বানর মেয়েটাকে কামড়ে দিয়েছিল। তারপর এই রোগ হয়।

অবশ্যই না।

মানুষের পশুগামিতা আজকের নয়। তিন হাজার বছর আগেও পৃথিবীর সবচে উন্নত ও সবচে সমৃদ্ধ জাতির মধ্যে একটা, গ্রিকরা পশুগামী ও শিশুগামী ছিল। তাদের পটে পটে সে চিত্র আকা। আফ্রিকানরা পশুগামী ছিল পাঁচ হাজার বছর ধরেই। গৃহপালিত জেব্রা বা বানর কোন নতুন কথা নয়। আর বানরের এইডস হয় সুপ্রাচীণ কাল থেকেই। যদি পশুগামিতার জন্য বানর থেকে এইডস এসে থাকে, তাহলে কেন পাঁচ বা দশ হাজার বছর আগে মানুষের এইডস হয়নি?

বিষয়টা ভাবাত অনেক আগে থেকেই।

এখনো মনে পড়ে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বোয়োটেকনোলজিতে ভর্তি হয়ে প্রথম সেমিস্টারে ইন্ট্রোডাকশন টু বায়োলজি ক্লাসে জিগ্যেস করেছিলাম কথাটা। ম্যাডাম দক্ষ শিক্ষক। স্রেফ ধমক দিয়ে বসিয়ে দিয়েছেন। জিগ্যেস করেছিলাম ইন্ট্রোডাকশন টু জেনেটিক্স ক্লাসে। সেখানে এক মিনিট চুপ হয়ে দাড়িয়ে ছিলেন শিক্ষক। তারপর অভিযোগ গিয়েছিল ডিন স্যারের কাছে। ছাত্ররা অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে।

কিন্তু আসলেই প্রশ্নটা অপ্রাসঙ্গিক ছিল না। এটা ছিল যন্ত্রণার প্রশ্ন।

কেন এইডস রোগে মানুষ দশ হাজার বছর আগে থেকেই আক্রান্ত হয়নি? কেন হয়নি এমনকি দুইশ বছর আগেও? কেন মানুষ এইডসে তথনি আক্রান্ত হল, যখন মানুষের হাতে জেনেটিক্সের স্বর্ণদুয়ার খুলে গেল? কেন মানুষ আক্রান্ত হল সেই সময়, যখন মানবজাতি জিনকে আইসোলেট করতে শিখেছে, জিনকে ট্রান্সপ্লান্ট ও ট্রান্সক্রাইব করতে শিখেছে…

হান্টার থিওরি মতে, মানুষের গায়ে এইচআইভি আসে বানর খেতে গিয়ে বা মারতে গিয়ে। বিজ্ঞানীরা চোখ বন্ধ করে এই তত্ত্ব বিশ্বাস করে। প্রশ্ন মাত্র একটা, বানর খাবার রীতি তো আফ্রিকায় হাজারো বছর ধরে। এখন কেন এইডস এল?

যে প্রশ্নটার উত্তর চার বছর পড়ার সময় পাইনি, সেটাই পেলাম গুগল থেকে। জয়তু গুগল বাবা। জয় ইউটিউবের জয়।

খ. এইডস: একটি অতি প্রয়োজনীয়, অপরিহার্য রোগ



আমাদের সবাই যেতে বাধ্য ছিল। চিফরা আছে গ্রামে গ্রামে। তারা সবার বাড়ি চেনে। কেউ না গেলে উপায় নেই। সবাইকে যেতে হত, সবাইকে গিয়ে গিয়ে ভ্যাকসিন খেতে হত। কারো না গিয়ে উপায় ছিল না।

-জ্যাক নেকজেয়ো, কঙ্গোর স্থানীয় অধিবাসী।

আমি ৯৫% নিশ্চিত, কপরাস্কির শিম্পাঞ্জী থেকেই এইডসের গোড়াপত্তন। বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বকে এড়াতে চায়, এই এড়ানো হল পাগলামি।

-বিল হ্যামিল্টন, ডারউইনের পর পৃথিবীতে সবচে বড় ইভোলিউশনারি বায়োলজিস্ট। বিল হ্যামিল্টন আফ্রিকায় দুবার গিয়েছিলেন চিম্প এসআইভি ভাইরাস সংগ্রহের জন্য। পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিবর্তন বিজ্ঞানী দ্বিতীয় ট্রিপে, সামান্য ম্যালেরিয়ার আক্রমণে মারা গেলেন? আফ্রিকার বুকে? তাও আবার দু হাজার সালের মার্চ মাসে! এও বিশ্বাস্য?


পৃথিবীতে আকৃতি-প্রকৃতি আর বর্ণের দিক দিয়ে হাজারো জাতির বাস হলেও মূলত তিন প্রকার মানুষই পাওয়া যায়, সাদা, মধ্যবর্তী এবং কালো।

চলুন যাই পাঁচ হাজার বছর আগে...

ব্যাবিলনের আশপাশের অঞ্চল থেকে আরিয়ানরা যাত্রা শুরু করল। এক অংশ গেল ভারতে। হয়ে গেল দেবতা। কালচে ভারতীয়দের প্রভু হবার জন্য খুব বেশি কিছু দরকার নেই আর্যদের। তাদের আছে পৃথিবীর সবচে প্রাচীণ সভ্যতা। আছে জাদুবিদ্যা-ঐশিবিদ্যার নামে চিকিৎসা শাস্ত্র, পদার্থ-রসায়নে অতুল দক্ষতা, আছে নগর পরিচালনা-সমাজবিজ্ঞান-মনোবিজ্ঞানের অতুল দক্ষতা।

আরেক অংশ চলে গেল ইউরোপের দিকে।

তারপর, হাজার কয়েক বছর পর, পালতোলা নেৌকাগুলো সাগর পেরুনোর উপযোগীতা পেল।

ইউরোপীয় সাদারা পাল তুলে দিল উত্তর আমেরিকার দিকে, দক্ষিণ আমেরিকার দিকে, অস্ট্রেলিয়া-জাভা-ভারত আর আফ্রিকার দিকে। পুরো পৃথিবী তাদের ভয়ে তটস্থ।

ঐতিহাসিকভাবেই সাদারা ধরে নিয়েছিল, কালো ও কালচে জনগোষ্ঠী হল পৃথিবীর মানুষ, আর সাদারা দেবতা। তারা ধরে নিয়েছিল, সাদারাই শুধু মানুষ আর কালো-কালচেরা হল মানুষ-পশুর মিলন। সুতরাং তাদের দাস করে নাও। তোমার কী কী সম্পদ আছে? একটা বেসিন-রাঞ্চহাউস, খান পঞ্চাশেক ঘোড়া, দশটার মত গরু আর ছটা কালো দাসদাসী।

এই ধারণা এত সবল ছিল যে, এই উনিশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত কালোদের মানুষ বলা হয়নি কোথাও, দু একটা ধর্ম ব্যতীত।

তারপর অপ্রকৃত মানবদের বিলুপ্ত করার পথ শুরু হল। উত্তর আমেরিকায় প্রায় বিলুপ্ত। অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় বিলুপ্ত। দক্ষিণ আমেরিকায় সাপ্রেসড। কিন্তু আসল সমস্যা তো কাটে না। এশিয়ার কেলেগুলো তো ঝাড়েবংশে বাড়ছে। বাড়ছে আফ্রিকার পশুগুলোও।

তারপর বয়ে গেল আরো সময়। আন্দোলন। ট্রামে চড়তে চায় কালোরা। সেখানেই শেষ নয়, তারা রেস্তোরায় খেতে চায়। কত্তবড় সাহস!

আজকে আমরা যে ঢাকা ক্লাব নিয়ে আদিখ্যেতা করি, সেখানে লেখা ছিল,

দেশিজ অ্যান্ড ডগস নট অ্যালাউড।

তো কালোরা, দেশিজরা, রেড ইন্ডিয়ানরা, অ্যাব-অরিজিনি অস্ট্রেলিয়ানরা নিজেদেরকে মানুষ ভাবা শুরু করল।

তারা নাগরিকত্ব চায়। তারা ভোটাধিকার চায়। তারা মানুষ হতে চায়।

সমাজবিজ্ঞানী-জীববিজ্ঞানীরা হিসাব করলেন, এম্নিতেই সব সময় শীতের অঞ্চলে জন্মহার কম। তার উপর পুজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় কেউ অতিরিক্ত সন্তান নিতে চায় না। বিয়ে বহির্ভুত সমাজ ব্যবস্থা অনেক কষ্টে প্রচলন করা হল মেসনিক উদ্দেশ্য সফল করার জন্য। কিন্তু বিয়ে বহির্ভূত সমাজ ব্যবস্থায় বিশাল ফাকা জায়গা। মেয়েগুলো আর সন্তান নিতে চায় না। বয়ফ্রেন্ড আর কয়দিনের? এমনকি হাসবেন্ডই বা কয়দিনের? তারপর এই বোঝা বওয়ার কোন মানে নেই। নিজের পিতা-মাতাকে তারা দেখে না, সন্তান নিলে ওই সন্তানকে প্রতিপালন করে জীবন শেষ, কিন্তু তারা তো দেখবে না শেষ সময়ে।

এরপর যুগ আরো এগিয়ে গেল। কৃত্রিম কেমিক্যালগুলোকে খাবারে যুক্ত করার ফলে একটা বিষম খারাপ ফলাফল দেখা দিল। পুরুষ-নারীদের উর্বরতা লুপ্ত হচ্ছে সাঙ্ঘাতিকভাবে। কৃত্রিম লবণ টেস্টিঙ সল্ট, বা কোক-পেপসি, অ্যানার্জি ড্রিঙ্কের ইন্ডাস্ট্রি তো বন্ধ করা যাবে না। এম্নিতেই এইসব খাবারের মূল কনজিউমার সাদারা। তাদের উর্বরতাও গেছে কমে। এখন চাইলেও সন্তান নিতে পারে না। সন্তান নিলে সেটা ধারণ করা ক্রিটিক্যাল হয় মেয়েদের জন্য। চারিদিকে গর্ভপাত। প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবেই।

সমাজবিদরা দেখলেন, ইয়াল্লা! এভাবে চললে তো দু হাজার ত্রিশ সালের মধ্যে সারা পৃথিবীর সাদাদের মধ্যে অন্তত ৯০% জেনেটিকভাবে মিলিত মিশ্রিত হয়ে যাবে কালোর সাথে। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম নিজেদের সাদা বা কালো কিছুই বলতে পারবে না।

দু হাজার ষাট-সত্তর সালের মধ্যে পৃথিবীতে কোন খাঁটি সাদা পারবে না আরেকজন খাঁটি সাদার সাথে যুক্ত হতে। দৈহিক প্রয়োজনেই তাদের কালোর সাথে মিশ্রিত হতে হবে।

এবং দু হাজার আশি সালের মধ্যে পৃথিবীতে কোন সাদা দেশ, সঙ্গঠন, অঞ্চল, প্রতিষ্ঠান কিছু থাকবে না। পৃথিবী অবশেষে এক হবে, গ্লোবাল ভিলেজ হবে, কিন্তু তাতে সাদা রেস যাবে হারিয়ে। কোন দেশই ঠেকাতে পারবে না। কারণ তাকে চলতে হলে ২: ২.১ রেশিওতে জনসংখ্যা বাড়াতে হবে। আর ইউরোপে কোন দেশই এই রেশিওতে জনসংখ্যা বাড়াতে পারবে না বলেই তাদের কালো ও আধকালো দেশ থেকে মানুষ আমদানি করতে হবে। কোন দেশ চায় পিছিয়ে যেতে?

উপায় মাত্র একটা। কালো ঠেকাও।

গ. এইডস: আ এইড টু দ্য হোয়াইটস?



আমার আত্মপক্ষ সমর্থনের কিছু নেই। হুপারের আত্মপক্ষ সমর্থন করতে হবে।

-কপরাস্কি। এইডসের মহান জনক।

জানি না কখন কোথায় কীভাবে। কিন্তু সবাই ধরে নিলাম, শিম্পাঞ্জীর এসআইভি থেকেই এসেছে এইচআইভি। কখন? অবশ্যই এই শতকে (১৯০০)। কোথায়? স্পষ্টত মানবজাতির কেন্দ্রে। উত্তর পূব উগান্ডা।

-সাইমন।


জানেন কি, আফ্রিকায় এইডসের কী অবস্থা?

আফ্রিকার অন্তত তিনটা দেশের প্রতিটা মানুষ এইডসে আক্রান্ত, নিশ্চিত।

আফ্রিকার অন্তত পাঁচটা দেশে এইডস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দুই তৃতীয়াংশ।

পুরো আফ্রিকার কমুনিটি ধ্বংস হবেই। কোন উপায় নেই। যদি না তারা শুধুমাত্র রক্ত পরীক্ষা করে শারীরিক নৈকট্যে যায়। আর রক্ত পরীক্ষা করলে প্রথম অনেকটা সময় পর্যন্ত এইডসের চিহ্নই পাওয়া যাবে না। পাওয়া যাবে যখন, তখন ওই রোগী অনেকটা সময় পার করে এসেছেন।

এর শুরু কোথায়?

কেন এইডস এই উনিশো পঞ্চাশের পর দেখা দিল? কেন দেখা দেয়নি আরো হাজারো বছর আগে? আফ্রিকানরা বানরগামী হয়েছে দেখে তাদের এইডস হয়? নাকি অন্য কিছু?

হ্যা, বানরে এইডস ছিল বহু আগে থেকেই।

কিন্তু বানরে যত টাইপের এইডস হয়, তার প্রতিটার ভাইরাস নিয়ে কৃত্রিম মানবীয় অঙ্গে ইনপুট করা হয়েছে। ফলাফল? প্রতিবার এইডসের বিনাশ। তাহলে? এবার দেখা যাক মানুষের এইডস নিয়ে বানরে ঢোকানো।

হ্যা, মানুষের এইডস কখনো বানরের শরীরে টেকে না। আর বানরের এইডসও মানুষের শরীরে টেকে না।

ঘ. এইডস: আবিষ্কার-পুনরাবিষ্কার



আমরা দু হাজারের বেশি পরিণত মানুষের ব্লাড সেরাম সংগ্রহ করেছিলাম। সেটাই পরীক্ষা করতে দেই, এইচআইভি পাওয়া যায় কিনা দেখার জন্য। একটা স্যাম্পলে এইডস জিরোপজেটিভ পাওয়া যায়। পরে তা অন্য ল্যাবগুলোতে পরীক্ষা করে প্রমাণিত হয়। এই প্রথম কোথাও এইডস এর উৎস পাওয়া গেল। আর সেই রক্ত নেয়া হয়েছিল লিওপোল্ডভিল থেকে।

-প্রফেসর জোসেফ ভ্যান্ডেপিট, বেলজিয়ান চিকিৎসক, উত্তর পূব উগান্ডার এলাকায় মানব রক্তের স্যাম্পল গ্রহণ করেন ১৯৫৯ সালে, অনেক বছর পর এক সহকর্মীর কাছে পরীক্ষার করার জন্য দিয়েছিলেন। বেলজিয়ান কঙ্গোর আগের রাজধানীর নাম লিওপোল্ডভিল পাল্টে এখন হয়েছে কানশাসা।

তো, যদি বলেন যে, এসআইভি থেকে এইচআইভি এসেছে, তাহলে প্রশ্ন হল, কখন মানুষ এই বানরদের সংস্পর্শে এল? কোথায় সংস্পর্শে এল? মানুষ সাধারণত বানরের সংসর্গে আসে মাত্র দুই পথে। খেতে যাবার সময়, মানুষের গা হয়ত কেটে গেল, আর সেখানে বানরের রক্ত লেগে গেল রান্নার আগে। আর একটা পথ, আপনি বানরের শরীরে ভ্যাকসিন বানিয়ে সেটাকে মানুষের শরীরে ঢুকিয়ে দিন।

-ডক্টর সেসিল ফক্স, প্যাথোলজিস্ট, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অভ ইনফেকশাস ডিজিজেস, ইউএসএ (১৯৮২-১৯৮৯)

সময়কাল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। আমেরিকায় তখন পোলিও ভয়ানক রোগ। পোলিওর ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু মানুষ সব সময় সহজটা চায়। ভ্যাকসিন ইনজেক্ট করতে তাদের ভাল লাগে না। চাই খাবার উপযোগী পোলিও ভ্যাকসিন। মুখে দেয়ার মত।

এই মুখে দেয়ার মত পোলিও ভ্যাকসিন এইডস নিয়ে এল সারা পৃথিবীতে।

শিম্পাঞ্জী রক্ত ও শিম্পাঞ্জী কিডনিতে কালচার করা হত পোলিওর টিকা। তারপর সেগুলো খাওয়ানো হল দশ লাখেরও বেশি আফ্রিকান শিশুকে। দশ লাখেরও বেশি। এত মহত হয়ে গিয়েছিল মার্কিন সরকার। এত কালোপ্রেমি হয়ে গিয়েছিল তখন।

যেখানে যেখানে খাওয়ানো হল, সেখানে সেখানে প্রথম উদ্ভব হয় এইডসের।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা সেই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়ার জন্য সব সময় প্রস্তুত।

প্যারিসের পাস্তুর ইন্সটিটিউটে ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম এইডস আবিষ্কৃত হয়। সাইমন হবসন এই টিমের সদস্য ছিলেন। সিমিয়ান ইমিউনোডিফিসিয়েন্সি ভাইরাস, এসআইভি অবশেষে ‘প্রকাশ্যে’ আাবিষ্কৃত হয় ১৯৮৯ সালে। সেই ফ্রান্সেই, বানরের এইডস ভাইরাস। তখন এইচআইভি বা হিউম্যান ইমিউনোডেভিসিয়েন্সি ভাইরাসকে এসআইভির বংশধর ধরে নেয়া হয়।

ঙ. রোলিং স্টোন: পাথর গড়াল বিজ্ঞানীদের মাথায়

১৯৫৫ সালের দিকে ডক্টর কাপরাস্কি সাবেক বেলজিয়ান কঙ্গোতে পোলিও ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেন পরীক্ষামূলকভাবে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে। আর পরে আমরা জানতে পারি, সেই অঞ্চলেই সবচে বেশি এইডস রোগি আছে। সেখানেই এইডস শুরু হয়। এবং সেই সময়ের পরপরই শুরু হয়।

-টম কার্টিস, মুক্ত সাংবাদিক, এইডসের রহস্য উন্মোচনকারী।


উত্তর পূব উগান্ডা ছিল ১৯৫০ এর দশকে বেলজিয়ান কঙ্গোর অংশ।

আফ্রিকার কালো বুকে একজন মানুষকে অনুসরণ করে এইডসের কারণ নতুন করে আবিষ্কৃত হয়।

১৯৯২ সাল। রোলিংস্টোন ম্যাগাজিনে ছাপা হল একটা আর্টিকেল। ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট টম কার্টিস দাবি করলেন, পোলিও ভ্যাকসিন থেকেই শুরু হয়েছিল এইডস।

১৯৫৮ সালেও অ্যামেরিকা পোলিও ভীতিতে ভুগছে। তখন নব্বই মিলিয়ন অ্যামেরিকানদের ভ্যাকসিন দেয়া হয়। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে। জোনাস সাল্ক বিখ্যাত হয়ে ওঠেন এই ভ্যাকসিন আবিষ্কারে। পোলিও ভ্যাকসিন তৈরিই হত ম্যাকাক/ রেসাস বানরের অঙ্গ থেকে। ভারত আর ফিলিপাইন থেকে দফায় দফায় বানর নেয়া হয় তখন সে দেশটায়।



সেই সময় ফিলাডেলফিয়ার ডক্টর হিলারি ক্যাপরাস্কি ছিলেন এক তরুণ, নাম-করার জন্য উদগ্রীব গবেষক। রাশিয়া থেকে আমেরিকায় এসে থানা গেড়েছেন।

তিনি বিকলাঙ্গ শিশুদের উপর গোপনে সরাসরি তার আবিষ্কার হতে যাওয়া মুখে খাবার জীবন্ত পোলিও ভ্যাকসিন টেস্ট করেছিলেন খোদ নিউইয়র্কেই। অন্তত বিশজনের উপর। কথাটা প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং এতেই তার নীতিশাস্ত্র বোঝা যায়। থামেননি তিনি। প্রাইভেট অষুধ কোম্পানির সহায়তায় এই টেস্ট চালিয়ে যান প্রাইভেট হাসপাতালগুলোয়।

চ. অ্যালবার্ট সেবিনের সতর্কবাণী: ভাইরাস এক্স



এদিকে একবার ইঞ্জেকশনের ভ্যাকসিনে অসুস্থ হল আড়াইশো শিশু, মারা গেল এগারোজন। পথ প্রশস্ত কপরাস্কির সামনে। তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আছেন মুখে খাবার ভ্যাকসিন তৈরির আরেক বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট সেবিন। যুদ্ধে পরিণত হল তাদের প্রতিযোগিতা। আর সব বিজ্ঞানীর প্রতিযোগিতার মতই।

এই কাজের জন্য তাদের পরীক্ষা করতে হবে। আর পরীক্ষা করার একমাত্র উপায়, আগে ভ্যাকসিন নেয়নি, এমন বিশাল পপুলেশনের কাছে যাওয়া। আমেরিকায় তো নয়।

সেভিন তার নিজের দেশ রাশিয়ার সাথে গোপন ডিল করে লাটভিয়া, এস্তোনিয়া আর কাজাখস্তানে ছয় মিলিয়ন শিশুকে ভ্যাকসিন দেন। সেখানে এইডসের কোন ঘটনাই ঘটেনি।

কপরাস্কি বেছে নিলেন উত্তর কঙ্গো। দারুণ চিকিৎসা ব্যবস্থা যেমন আছে, তেমনি আছে টেস্ট ফিল্ড। কঙ্গোতে ভ্যাকসিন দেয়ার এক বছরের মাথায় প্রথম দেখা দিল এইডসের লক্ষণ!

১৯৫৮ সালে অ্যালবার্ট বিশ্লেষণ করেন ক্যাপরাস্কির চ্যাট নামের ভ্যাকসিনটা। অ্যালবার্ট সেই ভ্যাকসিনের স্যাম্পলে ভাইরাস পেলেন। অচেনা ভাইরাস। নাম দিলেন, ভাইরাস এক্স… তিনি ক্যাপরাস্কিকে এই ভাইরাসের কথা জানান, কিন্তু ক্যাপরাস্কি তখন এই জবাব দেন-

‘প্রিয় অ্যালবার্ট, আমি তোমার অসাধারণ চিঠিটাকে খুব ভালভাবে দেখেছি। সেখানে আরো অসাধারণ একটা সিদ্ধান্ত ছিল। আমার পক্ষে কল্পনাও করা সম্ভব না যে, অন্য কোন অনুসন্ধানী কোন একটা কথা বলবেন আর সেটা শুনেই আমি লাফিয়ে উঠব, দশ বছরের গবেষণা জলাঞ্জলী দিব… বিদায়, আমার এককালের বন্ধু ও সহকর্মী।'

আরো একটা প্রশ্ন রয়ে যায়, আমেরিকার গুপ্ত সার্ভিসগুলো নিয়মিত রাশিয়ানদের ভাগিয়ে আনত। তারা তাদের কার্যসিদ্ধির জন্য রাশিয়ার ওরাল ভ্যাকসিনের এই জায়ান্টকে ভাগিয়ে এনে তারপর তাকে দিয়ে কাজ শেষ করিয়েছে কি?

ক্যাপরাস্কি কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরেই গেলেন। অ্যালবার্টের ভ্যাকসিন কাজের প্রমাণিত হল। তারটাই সারা পৃথিবীতে এমনকি খোদ আমেরিকায়ও ব্যবহার হল। তাহলে কপরাস্কি ব্যবহৃত হল ঠিক কোন জায়গায়, কোন কাজে?

হ্যা, অবশেষে কপরাস্কির ভ্যাকসিনে একটা ভাইরাসের কথা আমেরিকাও স্বীকার করে নিচ্ছে তার গবেষণাকে গ্রহণ না করে।



এই প্রবন্ধ ছাপার দোষে রোলিং স্টোন প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছিল।

-ডক্টর সেসিল ফক্স, প্যাথোলজিস্ট।


বিষয়টা এখানেই থেমে যেত, বাদ সাধলেন এডোয়ার্ড হুপার। ব্রিটিশ সাংবাদিক। হাজার হাজার পৃষ্ঠার গবেষণা শেষ করে সিদ্ধান্তে আসেন, এসআইভি বহনকারী শিম্পাঞ্জীকে ব্যবহার করেছে কপরাস্কি। সতেরো বছর ধরে তিনি শত শত সংশ্লিষ্ট মানুষের সাক্ষাৎকার নেন, হাজার হাজার প্রমাণ সংগ্রহ করেন। ১৯৯৯ সালে হুপার হাজার পাতার বইতে তার রিসার্চ প্রকাশ করেন। দ্য রিভার, আ জার্নি ব্যাক টু দ্য সোর্স অভ এইচআইভি অ্যান্ড এইডস

এইডস মানুষের কাজ, ঈশ্বরের নয়। শিম্পাঞ্জী কিডনি ও শিম্পাঞ্জী রক্তে প্রস্তুত করা পোলিও ভ্যাকসিন দশ লাখেরও বেশি আফ্রিকানকে বেলজিয়ান কঙ্গো, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডিতে খাইয়ে দেয়া হয় ১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে। এই হল গোড়া। এখান থেকেই শিম্পাঞ্জীর ভাইরাস মানুষে এসে হাজির হয়।

-এডোয়ার্ড হুপার। দ্য রিভারের লেখক।

জ. অবশেষে অরিন্দম কহিলা বিষাদে



চারশো। প্রত্যেক শিম্পাঞ্জীর পরিণতি ছিল মৃত্যু।-হুপার ।

অবশেষে মুখ খুললেন হিলারি কপরাস্কি। যাকে এই কাজের পুরস্কারস্বরূপ ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ফিলাডেলফিয়ার উইস্টার ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টরের পদে রাখা হয়।

তার কথা অনুযায়ী, ভারত ও ফিলিপাইন থেকে রেসাস বানর এবং আরো দুটা প্রজাতি ব্যবহার করেছি। খুব ঠান্ডা মাথায় এবং সরাসরি বললেন, জীবনে কোনদিন তিনি শিম্পাঞ্জী ব্যবহার করেননি।

কপরাস্কি কীভাবে ভ্যাকসিন বানিয়েছিলেন, তার কোন ডকুমেন্ট এখন আর নেই। অথচ এই বিষয়টা চরম অস্বাভাবিক, আমেরিকার মত দেশে। কারা সরিয়েছে সেসব? কাদের প্রয়োজন ছিল সরানো?



অথচ ভিডিওতে দেখা যায়, ছিয়াশিটা শিম্পাঞ্জি আনছেন ডক্টর কপরাস্কি, আর সেই ভিডিও ছিল স্বয়ং বেলজিয়াম সরকারের! এবং তিনি কাজটা ৫৭ সালে করেননি, করেছেন ৪৭ সালে! আর কপরাস্কির গবেষণা ফ্যাসিলিটিতে শুধু চিম্প ছিল না, পৃথিবীর সবচে বড় চিম্প ফ্যাসিলিটি ছিল সেটা!

সাতচল্লিশে? তাহলে মাঝখানে দশবছর কী করলেন এই শিম্পাঞ্জী নিয়ে?

চারশোর অধিক চিম্পকে কেন আবার নতুন করে আনা হল ছাপ্পান্ন থেকে আটান্ন সালের মধ্যে?

ঝ. শ্রেষ্ঠ বিবর্তন বিজ্ঞানী বিল হ্যামিল্টন: রয়াল সোসাইটিতে শিম্পাঞ্জী বিতর্ক

মৃত্যুর আগে এডোয়ার্ড হুপারের সাথে সায়েন্টিফিক কমুনিটির বিতর্ক আয়োজন করেন বিল হ্যামিল্টন, খোদ রয়াল সায়েন্টিফিক সোসাইটিতে। এই প্রথম সোসাইটি কোন অ-বিজ্ঞানীকে বিজ্ঞানীদের সভায় কোন তত্ত্ব নিয়ে বিতর্ক করার সুযোগ দিচ্ছেন। আর এই ব্যবস্থাটা করে যখন বিল হ্যামিল্টন আফ্রিকায় গেলেন এসআইভির সন্ধানে, সেখানে দ্বিতীয় অভিযানের সময় সামান্য ম্যালেরিয়ার আক্রমণে মারা যান তিনি।

কপরাস্কি দয়া করে হাজির ছিলেন সেই বিতর্কে। প্রথমে হুপারের তত্ত্বের বিরুদ্ধে যুক্তি দেয়া শুরু হয়। ভালই চলছিল আলোচনা।

কিন্তু হুপারকে কুপোকাত করা হল সম্পূর্ণ অন্যদিক দিয়ে। ঘোষণা করা হল, কপরাস্কির সেই ভ্যাকসিনের স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে এসআইভি নেই, নেই এইচআইভি এমনকি চিম্প ডিএনএ!

চ্যাট টেন এ ইলেভেন পরীক্ষা করে দেখা হয় কপরাস্কির সেই ৫৭-৬০ ভ্যাকসিন লট থেকে। প্রশ্ন হল, এটা কি কঙ্গোতে ব্যবহার করা হয়েছে? না। এই লটটাকে বানানোর পর সিল করে রাখা হয়েছিল। স্যাম্পল হিসাবেই ভবিষ্যতের প্রমাণের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল।

এই লট দিয়ে কখনোই কিছু প্রমাণ করা যাবে না। প্রমাণ করা যাবে না যে এইচইইভি পোলিও ভ্যাকসিন থেকে আসেনি। ব্রিটিশ রয়াল সোসাইটি আগেো তাদের প্রমাণের ভিতর বড় বড় গর্ত রাখত। এখনো রাখে।

-ডক্টর সেসিল ফক্স।

কঙ্গোর সেই ফ্যাসিলিটিটা ছিল ঝা চকচকে। বিশাল আকৃতি আর আয়তনের। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য এই জায়গা নয়। আমাদের লক্ষ্য ক্যাম্প লিন্ডি। ক্যাম্প লিন্ডি ছিল রাজধানী থেকে চল্লিশ মিনিটের উজান পথ, নদী ধরে। সেখানেই শিম্পাঞ্জীগুলো রাখা হত।

ঞ. ক্যাম্প লিন্ডি: ডক্টর পল অস্টেরিখ ও শিম্পাঞ্জী



আমি কোনদিন এমন কোন কাজ করিনি। এবং মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে তেমন কাজ করাকে আমি সরাসরি অস্বীকার করছি।

-লিখিত বক্তব্যে পল অস্টেরিখ, কপরাস্কির সহযোগী।


যখন সাদা লোকটা এল, আমরা ছিলাম শ্রমিক। কিছুই জানতাম না। তারা এল, তাদের কাজ করল, পোলিো করল। তাদের কাজের কথা আর কেউ জানে না। জানলে শুধু জানতে পারে নার্সরা। আমরা জানি না, নার্সরা। তারাই জানে সব রহস্য…

-ক্রিস্তফ বাইয়ালো, জঙ্গলের মাঝখানে বসানো গোপন ক্যাম্প, ক্যাম্প লিন্ডিতে কপরাস্কির অ্যাসিস্ট্যান্ট। উনিশো পঞ্চাশ সালে বাইয়ালো শিম্পাঞ্জীর দেখাশোনা করা, খাওয়ানোর দায়িত্বে ছিলেন।

তার দাবি অনুযায়ী, সেখানে মাত্র পনেরদিনে একশর বেশি শিম্পাঞ্জী আনা হয়েছিল। এগারোজন অ্যাসিস্ট্যান্ট আর মাত্র দুজন নার্স ছিল সেই ক্যাম্পে। নার্স দুজনই সব জানত। এমনকি এই অ্যাসিস্ট্যান্টরাও জানতো না।

আমরা ক্যাম্পটাই বানিয়েছি শিম্পাঞ্জী রাখার জন্য। আমাকে একটা করে মারতে বলত, আমি মারতাম। প্রত্যেকদিন দুটা থেকে তিনটা করে। তারপর অটোপসি করতাম। বুক ধরে নিচ পর্যন্ত কাটতাম। তারপর বের করে আনতাম লিভার, আর দুটা বল কাটতাম, কিডনি নামের বল। কোন মাংস কাটতাম না। ডক্টর সেগুলো নিয়ে যেত মূল ল্যাবে। সেখান থেকে আমেরিকায়। আমি পল অস্টেরিখের অধীনে কাজ করতাম।

-জোসেস লিম্বায়া, ক্যাম্প লিন্ডির নার্স। কপরাস্কির সহযোগী পল অস্টেরিখ ছিলেন ভাইরোলজির ল্যাব হেড!

জীবিত অঙ্গ ব্যবহার করা হত শুধুমাত্র টিস্যু কালচার করে পোলিও ভ্যাকসিন চাষের জন্য, আর কোন কাজে এত বেশি জন্তুর প্রয়োজন পড়তে পারে না।

আমরা ভাইরোলজি ডিপার্টমেন্টে ভ্যাকসিন বানাতাম যেন বানানোর পর তা ৫০ মিলিলিটারের কন্টেইনারে ভরা যায়। প্রতিটার লেবেল লাগাতাম আমরা। বিষয়টা গোপন। লেবেলগুলোতে লিখতাম, অ্যান্টি-পোলিও ভ্যাকসিন।

-পল অস্টেরিখের অধীনে ল্যাবে ভ্যাকসিন বানানোর কাজে নিয়োজিত ফিলিপ্পে এলবে, অ্যাসিস্ট্যান্ট।

শিশুদের জন্য অ্যান্টি পোলিও খাবার ভ্যাকসিন। আমিই প্রমাণ। আমি অস্টেরিখের সাথে ছিলাম, আমিই বানিয়েছি সেইসব জিনিস। ফ্লাক্স ধুতাম। স্টেরাইল বিশাল বড় একটা ডিশে সে ভ্যাকসিন তৈরি করত। ভাগ ভাগ করে ভরার দায়িত্ব আমার। অনেক দূর থেকে আসত। সেগুলো নষ্ট করার সুযোগ ছিল না।

-জ্যাক কানয়ামা। ডক্টর অস্টেরিখের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট।

কিন্তু মহান বিজ্ঞানী পল অস্টেরিখ এ বিষয়ে কথা বলবেন না।

তিনি কথা না বললেও তাঁর সহকারীরা কথা বলেই যাচ্ছে।

ভাইরাস কালটিভেট করা হত কিডনি সেলে। শিম্পাঞ্জির কিডনির কোষে। কারণ, শিম্পাঞ্জীর কিডনি সেল মাল্টিপ্লাই হয় তাড়াতাড়ি। পোলিও ভাইরাসের জন্য এই সেল ছিল খুব ভাল দ্রবণ।

-মাইক্রোবায়োলজিস্ট গ্যাস্টর লিনান। ক্যাম্প লিন্ডির সহ গবেষক।

কোন একটা এলাকায় গবেষণা চালানোর জন্য সেখানকার লোকাল প্রাণির মধ্যে যেটা সবচে বেশি পোষক দেহ হতে পারে, সেটাকেই ব্যবহার করা হয়। কপরাস্কি কেন আফ্রিকায় ক্যাম্প করে ভারত আর ফিলিপাইন থেকে রেসাস বানর আনবেন? ভারত বা ফিলিপাইনে কেন ক্যাম্প করলেন না? আর যদি আফ্রিকার লোকাল পশু দিয়ে করে থাকেন, তাহলে কেন শিম্পাঞ্জি দিয়ে করবেন না? পাস্তুর ইন্সটিটিউটের উনিশো ষাট সালের এক গবেষক জানান, আফ্রিকায় সবচে ভাল পোষক দেহ হতে পারে শিম্পাঞ্জী। আর কিছু নয়। যে কেউ পোষক দেহ ব্যবহার করলে কেন চিম্প করবে না?

চিম্প। মানুষের সবচে কাছের প্রাণি। জেনেটিক দিক দিয়ে সবচে ক্লোজ।

অস্টেরিখ এমনটাও দাবি করে, কোন ভ্যাকসিন তার ল্যাবে তৈরিই হয়নি। অথচ ডকুমেন্টএখনো যা আছে, তাতে লেখা, আড়াই লাখ শিশুর জন্য আড়াই লাখ ভ্যাকসিন। এথনো টিকে আছে দুয়েকটা ডকুমেন্ট, তাতে শিম্পাঞ্জীর বৈজ্ঞানিক নাম লেখা, সেটার ব্যবহারের কথা লেখা। কপরাস্কিকে জিগ্যেস করা হয়েছিল, আপনার অজান্তে কি শিম্পাঞ্জী ব্যবহারের কোন সম্ভাবনা আছে? না। আমার অজান্তে কোন কিছু করার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই।

সবচে কষ্টের বিষয় হল, ওই ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামে সবাই যেতে বাধ্য ছিল। আফ্রিকার মানুষগুলোকে জোর করে খাইয়ে দেয়া হয় পোলিও টিকা। আর সেই পোলিও টিকাটা দশ বছরের গোপন গবেষণার ফল। খুব ঢাকঢাক গুড়গুড় করে, দূরে শিম্পাঞ্জী রেখে, কাছে অন্য বানরের স্যাম্পল দিয়ে, অন্য বানরের স্যাম্পল ভবিষ্যতের জন্য জমা রেখে, পুরো বিষয়টাকে অস্বীকার করে এবং এতবড় দুর্ঘটনার পরও পুরষ্কৃত হয়ে আমেরিকার স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান হয়ে কপরাস্কি কোন্ অশনি সংকেত যেন দিচ্ছেন আমাদেরকে।

এইডস: কেন? কেন? কেন?



একটা বিষয় আমাকে শারীরিকভাবে রাগত করে। আমরা এখন জেনেটিক দিক দিয়ে এত ক্ষমতাবান যে, সিন্থেটিক পোলিো ভ্যাকসিন বানাতে পারি রিকম্বিনেন্ট প্রোটিন থেকে। কিন্তু এখনো আমরা তা করি না। আমরা বানরের গুড়া করা দেহ নিয়ে আজো, শিশুদের শরীরে প্রবেশ করাই।

-সেসিল ফক্স।

‘অবশ্যই শিম্পাঞ্জী ব্যবহার করা হয়েছে। এত কথার কী হল? আমরা অবশ্যই বৈজ্ঞানিক গবেষণার উদ্দেশে শিম্পাঞ্জী ব্যবহার করেছি। কালচারটা স্টেরাইল ছিল। অস্টেরিখ আর ডুরানের জন্য তৈরি করতাম আমি। কী কাজে লাগবে, জানতাম না। সামান্য সময় করিনি শিম্পাঞ্জী ব্যবহারের কাজটা। অনেক অনেক দিন করেছি। আর কিছু বলার নাই। অতিরিক্ত বলে ফেলেছি আমি। এর মধ্যেই বেশি কথা বলে ফেলেছি…’

-পিয়ের ডুপান, স্ট্যানলিভিল ল্যাবের চিফ টেকনিশিয়ান। ১৯৪৯-১৯৬০।


পরীক্ষামূলক একটা কাজে কেন দশ লাখের বেশি মানুষকে ব্যবহার করা হবে?

পরীক্ষামূলক একটা কাজে কেন জনগণকে, সবাইকে বাধ্য করা হবে?

কেন এই জিনিসটাকে কং্গোর চারপাশের সীমান্তে ব্যবহার করা হবে, যা আসলে মধ্য আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে পরিণত হয়?

কেন এই পরীক্ষা কঙগো ো সেসব দেশগুলোর স্বাধীনতার আগে আগে করা হল, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে রূপান্তরিত হবে?

কেন, যে সাতটি অঞ্চলে, পনেরটি ক্যাম্পে টিকা দেয়া হয়েছিল, তার সাথে তেরোটি এইডস উদ্ভব অঞ্চল মিলে যায়?

কেন এই টিকা আমেরিকার জগনগণকে দেয়া হয়নি?

কেন, অজানা (এইডস) ভাইরাস তার স্যাম্পলে আছে, বলার পরো, সতর্ক করার পরো কপরাস্কি থামেনি? তার কাজই পোলিো ভাইরাস নিয়ে, সুদূর রাশিয়ার স্যাম্পলে যদি এইডস ভাইরাস ধরা পড়ে, তার ল্যাবে কি ভাইরাসটা স্যাম্পল থেকে ধরা পড়েনি?

এই টিকা উদ্ভবের দশ বছর আগে থেকে শত শত শিম্পাঞ্জীর উপর গবেষণা করছিল কপরাস্কি, ঠিক কী কারণে?

তার পরো, তার মূল বিষয় ভাইরাস হবার পরো সে কেন এইডস দেখতে পায়নি বানরে?

শিম্পাঞ্জী যেহেতু সাবচে ভাল পোষক, এটা দিয়েই কাজ সারা হবে। স্বাভাবিক। তাহলে প্রকাশ্যে অন্য বানর দেখিয়ে গোপনে শিম্পাঞ্জীর আলাদা ক্যাম্প নদীর গভীরে জংগলের ভিতরে বানানোর দরকার কী?

কপরাস্কি কি সেই উনিশো ষাট সালেই জানতেন, যে এক ধরনের স্যাম্পল জোগাড় করে রাখতে হবে, যাতে শিম্প নেই? তিনি কেন স্যাম্পলের বেলায় নন-শিম্প স্যাম্পল রাখলেন?

ব্রিটিশ সোসাইটি কেন তাকে সমর্থন দিচ্ছে এতকিছুর পরো?

কেন, এইডসের পিছনে কপরাস্কির হাত আবিষ্কারের পরো কপরাস্কিকে আমেরিকান একটা হেলথ ইন্সটিটিউটের প্রথান করে রাখা হল আরো দেড় দশক?

দশ বছরের শিম্পাঞ্জী নিয়ে গোপন গবেষণায় ঠিক কী আবিষ্কার করেছিলেন কপরাস্কি? ঠিক কী আবিষ্কারের পর তিনি তা নিয়ে দশটা বছর ব্যয় করেন এবং তার ফলে পৃথিবীতে এইডস সৃষ্টি হয়?

মিডিয়াতে কেন এই কথাটা এখনো আসতে দেয়া হয় না?

যদি চিম্পের কিডনি থেকে বানানো পোলিো ভ্যাকসিনের জন্যই রোগটা হয়ে থাকে,

তাহলে, এসআইভি আর এইচআইভির মধ্যে যে জেনেটিক পার্থক্য আছে, যার কারণে মানুষের শরীরে বানরের এইডস হয় না, সেই পার্থক্যটা তৈরি করে দিল কে?

উত্তরটা জানা আছে কারো?



অতএব

এইডস কোন রোগ নয়, এইডস হচ্ছে মার্কিন গবেষণাগারে তৈরী এক ধরনের কৃত্তিম জীবাণু, যা অস্ত্র হিসেবে বিভিন্ন দেশের উপর প্রয়োগ করা হয়। এইডস জীবাণূর আড়লে ইহুদীবাদী আমেরিকা সারা বিশ্বে তার বহু স্বার্থ হাসিল করে।

যেমন:

ক) এর মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোকে দুর্বল করে রাখা,

খ) এ সুযোগে উক্ত রাষ্ট্রগুলোকে সহজে শোষন করা যায়,

গ) রোগ সারানোর নাম দিয়ে সারা বিশ্বে একচোটিয়া ব্যবসা করা যায়।

তাই সমগ্র ‍বিশ্বে এইডস গবেষক ও বিজ্ঞানীর নাম দিয়ে যারা থাকে তারা নিশ্চিত ইহুদীবাদী আমেরিকা তথা সিআইএ’র সোল এজেন্ট। ইহুদীবাদী মিডিয়া এদের হাইলাইট করে, নোবেল প্রাইজের মাধ্যেমে তাদের প্রচার প্রসার বৃদ্ধি করে এবং এদের মাধ্যমেই এইডস প্রতিরোধে বিভিন্ন ঔষধ বানিয়ে ব্যবসা করা হয়।

যাই হোক, গত কিছুদিন আগে মালয়েশিয়ার যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় তার ২৯৫ যাত্রীর মধ্যে ১০৮ জনই ছিলো শীর্ষ স্থানীয় এইডস বিশেষজ্ঞ। তারা প্রত্যেককেই অস্ট্রেলিয়াতে এইডস বিষয়ক একটি সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছিলো। তবে রাশিয়া বা যে দলই কাজটি করুক, তাদের মূল টার্গেট ছিলো, এক সাথে প্রতিপক্ষের বিশাল এমাউন্টের এজেন্টকে ধ্বংস করা। (এর আগেও প্রতিপক্ষের এজেন্ট ধ্বংস করতে এ ধরনের বহু কৃত্তিম দুর্ঘটনার ইতিহাস আছে)।

তবে মজার বিষয় হলো: ঐ বিমানটিতে যে ১০৮ জন এইডস বিশেষজ্ঞ ছিলো তা নিয়ে ডেইলি মিরর ও টেলিগ্রাফ দলিল সমৃদ্ধ রিপোর্ট করার পরে সবার সন্দেহ ঘণিভূত হয়, ঠিক তখনই এদের পরিচয় লুকাতে উঠে পড়ে যায় একটি মহল। ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে উল্টো রিপোর্ট ছাপানো হয়, টেলিগ্রাফ ও মিররের ঐ রিপোর্ট মিথ্যা, এ ঘটনায় ১০৮ জন নয়, মাত্র ৬ জন এইডস বিশেষজ্ঞ মারা গেছে।”

তাই আমার মনে হয়, মালয়েশিয়ায় এ দুর্ঘটনায় সিআইএ তার বহু গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ট হারালো।

১০৮ জন এইডস বিশেষজ্ঞ নিহত: http://bangla.bdnews24.com/world/article823313.bdnews

১০৮ জন এইডস বিশেষজ্ঞ নিহত: http://www.telegraph.co.uk/news/worldnews/australiaandthepacific/australia/10975275/Leading-HIV-researchers-lost-as-flight-MH17-is-downed-in-Ukraine.html

বিশেষজ্ঞ’র সংখ্যা নিয়ে লকোচুরি: http://www.arthosuchak.com/archives/81911/%E0%A7%A7%E0%A7%A6%E0%A7%AE-%E0%A6%A8%E0%A7%9F-%E0%A7%AC-%E0%A6%9C%E0%A6%A8-%E0%A6%8F%E0%A6%87%E0%A6%A1%E0%A6%B8-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%80-%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%87/

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

৭১ এর যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস