সাধারণ সংস্কৃতি ও ইসলামী সংস্কৃতি




পাশাচাত্য প্রভাবিত জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ করে একদল দ্রুত এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারেন যে, এদেশে ইসলামী সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে, যারা ইসলামী জীবনকে পছন্দ করে এবং ভালবাসে। অন্যদল যারা ধর্মনিরপেক্ষ জীবন যাপনে উৎসাহী তারা বর্তমান জীবন ধারার চালচিত্র প্রত্যক্ষ করে বলে আমরা একটু খোলামেলা, মুক্ত-উদার আধুনিক জীবনযাপন করতে পারছিনা; ধর্মই গোড়ামীর মূল হয়ে আছে।

অবশ্য এও লক্ষণীয় যে বর্তমান ধর্ম নিরপেক্ষবাদীরা ধর্মের কথা বললে বহু আপত্তিজনক মন্তব্য করে কিন্তু কিন্তু সরাসরি ইসলাম ধর্মের নাম নেয় না। কারণ তারা ভেতর থেকে জানে এবং বিশ্বাস করে বর্তমানে যারা ইসলামী জীবন যাপনে, পোষাকে এবং বক্তৃতার মাধ্যমে অতিদরদি তারা ভেতরে ভেতরে অনেকটা ভন্ড হলেও, প্রকৃত ইসলামী জীবন সত্যি মানুষকে মুক্তি দিতে পারে, দেবার সে ক্ষমতা ইসলামের আছে; এর প্রমাণ যুগে যুগে ইসলাম মানব সভ্যতার সামনে বহুভাবে উপস্থিত করেছে।

আমরা আলোচনা করব ইসলামী সংস্কৃতি ও সাধারণ সংস্কৃতি বিষয়ে। সংস্কৃতি জিনিসটা কিন্তু একটি সাধারণ অর্থাৎ General Culture. অন্যটি ইসলামী সংস্কৃতি অর্থাৎ একটি ধর্মাক্রান্ত Culture. সাধারণ সংস্কৃতির মধ্যে জীবনের দৃশ্যমান ও আনুভূতিক শিল্পময় প্রকাশ লক্ষ করা যায় এবং তাতে লাগামহীন জীবনযাপনের উলঙ্গতাকে নানাভাবে বর্ণময় করার চেষ্টা দেখা যায়। অন্যদিকে ইসলামী সংস্কৃতির বহি:প্রকাশ ঘটে কেবল আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর নি:শংসয়ভাবে বিশ্বাসী মুমিনদের জীবন যাপনকে কেন্দ্র করে যেখানে অবিশ্বাসী হবার, কিংবা কোরআন ও রাসূলের জীবন যাপনের বাইরে যাওয়ার কোন উপায় নেই। আমরা আধুনিক চিন্তাধারার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিচিত্রমুখী শিক্ষা ও উদার বিশ্বাসকে অঙ্গিকার করে বর্তমান পটভুমিতে আলোচনায় অগ্রসর হয়ে বলব ইসলামী সংস্কৃতি ও সাধারণ সংস্কৃতির মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই তা সঠিক নয়। একটি ঐশী গ্রন্থ যে জীবন ভাবনার পেছনে প্রধান উদ্দীপক শক্তি হিসেবে কাজ করে না, একজন মহামানবের প্রত্যক্ষ জীবনাচার ও চরিত্রনীতির প্রভাব নেই, সে জীবন ভাবনার মধ্যে মানুষের জন্য কোন কল্যাণকর কিছু থাকতে পারে না। ধর্ম কতকগুলো নির্ধারিত বিধানকে জারি রেখে জীবনকে একটা মূল উদ্দেশ্য ও অনিবার্য পরিণামের দিকে চালিত করে যা অন্ধ অজ্ঞ জ্ঞানী ও মুখ বধির ও বিত্তবান সকলের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য এবং তা অমান্য করার জন্য একটি শাস্তিও ঘোষণা করে। ফলত ধর্ম নির্দেশিত বিশেষত: ইসলামী জীবন ব্যবস্থা নির্দেশিত সংস্কৃতি সাধারণ সংস্কৃতি থেকে মৌলিকভাবে আলাদা। সাধারণ সংস্কৃতির পেছনে কোন ধর্ম নেই। আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ পালন করার বাধ্যবাধকতা নেই, ফলে কোন রকম জাগতিক ও পারলৌকিক সম্ভাবনাও থাকে না। সাধারণ জীবনযাপন মানে ধর্ম নিরপেক্ষ, অঙ্গীকার শূন্য পারলৌকিক দায় মুক্ত একেবারে যয়েচ্ছাচারের জীবন যাপন থেকে গড়ে উঠে সাধারণ সংস্কৃতি যার ইতিহাস রচনা করে জাতি ও গোষ্ঠীগত ব্যবহারিক জীবনের ঐতিহ্য, বিশেষ করে প্রথাগত আনন্দ অনুষ্ঠান, আচার ও উৎসব সাধারণ সংস্কৃতির উপাদান সঞ্চার করে।

সংস্কৃতি যদি জাতির জীবনে কেবল নাচগান ও আনন্দ অনুষ্ঠানের বিষয় হয়ে উঠে তাহলে তা মানব প্রবৃত্তির একটা বিশেষ প্রবণতার অদম্য প্রকাশ রূপে ধীরে ধীরে বিকৃতি ও নগ্নতাকে উৎসাহিত করে। আমরা যদিও বিশ্বাস করতে দ্বিধা করব না যে সংস্কৃতি আমাদের বুদ্ধি ও চেতনাপুঞ্জের যতই নান্দনিক প্রকাশ হোক তার মধ্যে রয়েছে সেই আবেগ যা মানুষকে তার মৌলিক কর্মপ্রয়াসের বাইরে একটা উপভোগ্য ক্রিয়াশীলতার দিকে আকর্ষণ করে। নর-নারীর প্রজনন চেতনা এক আদিম প্রবণতা, যা মানুষের মধ্যে আজ প্র্রেম-ভালবাসা, মায়া-মমতা, স্নেহ-প্রীতিময় মধুর ও বিচিত্র সম্ভাষণে একটা মার্জিত রূপ পেয়েছে। আমরা সভ্যতার উন্নতি দেখেছি শুধু মানুষের জন্য মরণাস্ত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে নয়, মানুষের জন্য বাঁচার উপায় সন্ধানেও। তাই বিজ্ঞান মানুষকে অপরিমেয় জীবন উপকরণ দিয়েছে যার নিত্য নতুন ব্যবহার ও প্রভাব মানব চিত্তে সঞ্চিত আদিম ধর্ম বিশ্বাসের অনেক স্তরকে নষ্ট করে দিয়েছে। অতএব বিজ্ঞান শাসিত সাধারণ জীবনে সংস্কৃতির ব্যাপ্তি ঘটেছে প্রচুর, যার মধ্যে কলাণমূলক উদ্দেশ্য পাওয়া না গেলেও বৈচিত্র ও বর্ণময়তা পাওয়া যায়।

সাধারণ জীবনে নৈতিকতার প্রশ্ন দুর্বল, তাই মানবিক কল্যাণের অস্তিত্ব কম এবং সেকারণে জীবন জগত আল্লাহ পরকাল ফেরেস্তা প্রভৃতি বিষয়ে আস্থাবান জ্ঞানীর সংখ্যা নগণ্য হওয়ায় মূর্খ ও অবিবেচকদের কাছে সাধারণ ধর্মশূন্য জীবন যাপনের মধ্যে আরাম ও আনন্দ বেশি। আমরা ধর্মবিচ্ছিন্ন জীবনে যা পাই তা দিয়ে পার্থিব প্রয়োজন মিটে যায়, কিন্তু ধর্মকে স্বীকার করে নিলে আমাদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে একটা নিয়ন্ত্রণ; সব কিছু লাগামহীনভাবে বলা যাবে না বা করাও সম্ভব নয়; সব কিছুর মধ্যে আমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশিত জীবনের মডেল প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করব। সে কারণে ইসলামী সংস্কৃতি গোড়া থেকে স্বতন্ত্র জীবনধারার ব্যাখ্যা দেয় মানুষকে।

ইসলাম একটি ধর্ম হিসেবে যতখানি ব্যাখ্যেয় তার চেয়ে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান রূপে অগ্রগণ্য। মানব জীবনের এমন কোন স্তর নেই যেখানে ইসলাম তার আলো নিক্ষেপ করে নি। তাই ধর্ম নিরপেক্ষ সাধারণ সংস্কৃতির চেয়ে ইসলামী সংস্কৃতির ব্যাপ্তি ও গভীরতা অনেক বেশি। ইসলাম ধর্মের পূর্বে মানুষকে হেদায়েত করার জন্য মহান আল্লাহ পাক তাওরাত, ইঞ্জিল ও যাবুর নামের যেসব ঐশী গ্রন্থ নাযিল করেছেন তাতে মানুষের জন্য ছিল উপদেশ এবং অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আসার পথনির্দেশ; কিন্তু কালক্রমে তা মানুষের হতে পড়ে নিমর্মভাবে বিকৃত হয়, ফলে কাল কেয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির প্রতিটি মুহুর্তকে আলোকিত করে, মানুষের ভুল ও নির্ভুল আচরণের সম্ভাব্যও অনিবার্য ফলাফল ব্যাখ্যা করে ইহকাল ও পরোকালের তাৎপর্য উল্লেখ করে আল্লাহপাক পবিত্র কোরআন মানুষের হেদায়েতের জন্য সর্বশেষ গ্রন্থ হিসেবে প্রেরণ করেন। অতএব এই মহাগ্রন্থে মানুষের আচরণবিধির যে সুশৃঙ্খল নির্দেশ রয়েছে তার ভিত্তিতে মুসলমানদের মধ্যে গড়ে উঠছে সুন্দর ন্যায়পরায়ণ সহিষ্ণু সভ্য আচার ব্যবহারের চমৎকার ঐতিহ্য; অবশ্য আল্লাহর ক্ষমতায় বিশ্বাসী এবং নিজেদের পরিণাম সম্পর্কে সচেতন মুমিনদের মাঝে এ ঐতিহ্য ইসলামের গোড়া থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

রমণীর গ্রীবাদেশ পর্যন্ত আবৃত রাখবে, এবং পুরুষের সঙ্গে কথা বলবে এমন গলায় যাতে তাদের করুণ কন্ঠস্বর পুরুষের হৃদয়স্থিতঅসুখ বৃদ্ধি না করে। এমন বাধ্যবাধকতার মধ্যে মুসলিম রমণীকুলকে জীবন যাপন করতে নির্দেশ দেবার মধ্যে কতখানি কল্যাণ নিহিত সে বিষয়ে আলোচনা করলে একটি বিষয় বেরিয়ে আসে যে, বর্তমান কঠিন ও কষ্টকর মনে হলেও পরিণামে কল্যাণকর, এমন সম্ভাবনা রেখেই আল্লাহ মানুষের জীবন ও তার কর্মপদ্ধতি এবং আচরণ বিধি নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে আমাদের সংস্কৃতির পুরোটাই বিশেষত্ব লাভ করে; যেমন নামায ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য ফরয। আমরা বিভিন্ন মযহাব পন্থীরা যেভাবে হোক নামায আদায় করে থাকি; প্রতি ওয়াক্ত নামায শেষে যদি মসজিদে আগত প্রত্যেক নামাযী এক অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি করে বেরিয়ে যেত, এবং শুধু ঈদের নামাযে এটি সীমাবদ্ধ না থেকে প্রত্যেক ওয়াক্ত জামাতের পরে এটি সম্ভব হত তাহলে এ আচরণের মধ্যে আমরা অন্তত: দুটো কল্যাণকর ফল পেতাম। এক. নামাযে এসে অপরিচিত লোক বুকে টেনে পরিচিত হওয়া; দুই. যদি পূর্ববর্তী রেষারেষি থাকে তা এই কোলাকুলির মধ্যে কিছুটা হলেও অবদমিত হওয়া। এভাবে আমরা একটা সুন্দর রীতি চালু করতে পারতাম যা পরে নামাযের অনিবার্য অঙ্গ হেসেবে গণ্য হত এবং তার মধ্যে প্রতিফলিত হত আমাদের উদার আত্মার পরিচয়।

আমি আগেই বলেছি, বর্তমান প্রজন্মের গবেষক ও মাওলানারা, পাঠক ও বুদ্ধিজীবীরা যদি নি:সংশয়ভাবে খোদায়ী ইলম-এ অভিষিক্ত হয়ে না থাকেন, এবং পাশ্চাত্য ধারায় গড়ে উঠা বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় নিজেদের জ্ঞান ও পান্ডিত্য খুব মূল্যবান মনে করেন তাদের কাছে সংস্কৃতি বলতে কয়েকটি মুহুর্তের আনন্দদায়ক ক্রিয়াকৌতুক ও নাচ গানের সমষ্টি বলে মনে হবে। অতএব উচুস্তরের শিক্ষাগত সনদপত্র পাওয়া সত্ত্বেও মানুষের ইচ্ছা ও অনিচ্ছার, বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের, ক্ষণকাল ও দীর্ঘকালের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত হতে পারে নি।

দুনিয়ায় জীবন যাপনের জন্য মানুষের পুজি হল বিশ্বাস। এই বিশ্বাসকে আলোকিত করে তার প্রতিষ্ঠিত আচরণ ও আকাঙ্ক্ষা। যারা অবিশ্বাসী আল্লাহ ও পরকালে এবং মানুষের প্রতি সদয় ব্যবহারে যারা অগ্রবর্তী না এবং জন্মের পূর্ববর্তী ও মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সম্পর্কে যারা চিন্তা করে না হতে পারে তাদের পাহাড় পরিমাণ সম্পদ আছে, বিত্ত ও সম্রাজ্যের সীমানা তাদের নেই; তবুও তারা মানুষের জন্য কখনো কল্যাণকর নয়; তাদের জীবন পদ্ধতি যত লালসাপূর্ণ ও চাকচিক্যময় হোক তাতে কোন রুচিবান সংস্কৃতির পরিচয় স্থায়ী হতে পারে না। সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বার বার ভৌগলিক সামাজিকতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন এবং যুদ্ধ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য বদলে যায়, নতুন রূপ পরিগ্রহ করে। কিন্তু ইসলামী সংস্কৃতি কোরআন ও হাদীস নির্দেশিত জীবন পদ্ধতির মধ্যে আবর্তিত হয় বলে তার উপর পারিবেশিক প্রভাব থাকলেও এর মৌলিক কোন পরিবর্তন সম্ভব হয় না; কারন কোরআন ও আল্লাহ অপরিবর্তনীয়; হাদীসগুলোর মর্যদাও তেমনি সংরক্ষিত।

যে সংস্কৃতির পেছনে কোন ঐশী গ্রন্থের নির্দেশনা নেই, আমি তাকে সাধারণ সংস্কৃতি বলেছি এবং তা কিভাবে বার বার রং বদলায় তার কিছু নমুনা পেশ করছি। নাচ-গানের মধ্যে মানুষের সেই আদিম প্রবৃত্তির প্রকাশ যা কোন নিয়মাধীনে কখনো বন্ধ করা যায় নি। আমরা জানি ইসলামী সংস্কৃতিতে নাচ গানের প্রসঙ্গ অবান্তর; অতএব তা ইসলামী সংস্কৃতি নয়; যদিও আল্লাহর ভক্তরা হৃদয়ের আবেগ প্রকাশে কখনো কখনো আশ্রয় নিয়েছেন বাদ্যহীন গান ও গজলেন। প্রত্যেক জাতি গোষ্ঠীর মত বাঙালিরাও নাচ গান করে, যদিও তারা মুসলমান আমরা দেখতে চাচ্ছি যে অর্থের প্রাচুর্য ও পরিবর্তিত পরিবেশ কিভাবে সাধারণ সংস্কৃতির পালাবদল ঘটায়। এক সময় এদেশে সাধারণ শিল্পীদের কন্ঠে হারমোনিয়াম বায়া-তবলা সহযোগে গান শোনা যেত। কিন্তু বর্তমানে বিত্তবান মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যুবক সম্প্রদায় আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে পাশ্চাত্যরীতির ব্যান্ডশো চালু করল এখানে। ব্যান্ডশোর নাচ গান আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির মধ্যে কখনো ছিল না; কিন্তু অঢেল অর্থ যখন অবৈধ পথে রোজগার হল, সময় যখন অবসরের গান রচনার, তখন অমেধাবী যুবক শ্রেণী পাশ্চাত্য ঢং এর গানবাদ্যের প্রচলন ঘটালো রাজধানী শহর ঢাকাসহ অন্য শহরগুলোতেও। মুসলিম সমাজে যেখানে রমণীদের গ্রীবাদেশ পর্যন্ত আবৃত থাকার কথা, সেখানে আধুনিকতার নামে শহরের বড় বড় হোটেলে চলে টিকেট করে নগ্ননৃত্যের প্রতিযোগিতা। 'বল ড্যান্স' নামের একধরণের নাচ গানের রীতির কথা রুশীয় সমাজে বিদ্যমান, তা আজ কাল আমাদের সমাজে অহরহ দেখা যায়। নারী ও পুরুষের কাতর কন্ঠের বাগবিনিময় যেখানে ইসলামী অনুশাসনে প্রায় নিষিদ্ধ সেখানে জাতীয় পর্যায়ের এমন কোন অনুষ্ঠান নেই যেখানে নারী ও পুরুষের যুগল নৃত্য উপভোগ্য নয়।

বলছিলাম, অবৈধ অর্থ কিভাবে সংস্কৃতির ধারা বদলে দেয়। এবার বলছি রাজনৈতিক পরিবর্তন কীভাবে সংস্কৃতির বদল ঘটায়। পূর্বে এদেশে সংবাদ পত্রসাময়িকী ছাপা হত, সে সময় নগ্ন ছবির ছায়াও প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় দেখা যেত না, কিন্তু বি.এন.পি (১৯৯১-১৯৯৬) সরকারের সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার, সংবাদপত্রে কুসংস্কারকে এতটা নগ্ন রূপ দিয়েছে যা অতীতে কখনো দেখা যায় নি। নগ্ন ছবি না হলে সাময়িকীগুলোর প্রচ্ছদ হয় না, এটাই এখন সংস্কৃতি। এভাবে সিনেমায় এসেছে নগ্নতার মহা প্রতিযোগীতা।

আমরা বার বার বিদেশী সংস্কৃতিকে দোষারোপ করি। প্রতিবেশী দেশ থেকে ব্লু ফ্লিম, আপত্তিকর গান ও ছরিব দেদার সরবরাহ ক্রমান্বয়ে দেশীয় শুদ্ধ মার্জিত সংস্কৃতিকে কলুষিত করে তুলেছে, এর সঙ্গে আছে পাশ্চাত্য উলঙ্গতার নির্বিচার পরিগ্রহণ। আমরা দেখছি কিভাবে একদল উঠতি যুবক যুবতী বিদেশী প্রতিবেশী অপসংস্কৃতির কুপ্রভাবে জড়িয়ে নৈতিক ও আত্মিক সমৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত। বর্তমানে সংস্কৃতির এই উদার মানবিকীকরণ প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে তাহলে এক সময় বাঙালি কায়দায় ছেলে বাবাকে বাবা না ডেকে হরদম 'ড্যাডি' যখন ডাকবে বাঙালি বাবাদের যদি 'ড্যাডি' শুনতে ভাল নাও লাগে তখন কিছুই করার থাকবে না আফসোস ব্যাতিত। আমরা পরের রাজ্য গ্রাস করিনি কখনো, কিন্তু আমরা পরের উচ্ছিষ্ট গ্রাস করছি অহরহ। এ সত্য ইতিহাস প্রমাণ করে। যে সব ত্যাগ আমরা জাতীয় জীবনের ফলদায়ক গৌরব বলে মনে করি, তার উদ্দেশ্য যদি নিখুতভাবে বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে আজকের অধ:পতনের বীজ ঐ সব আন্দোলন ও বিজয়ের মধ্যে নিহিত ছিল। যাক সে সব রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের কথা। আমি বলছিলাম কিভাবে সংস্কৃতির পালাবাদল ঘটে। এরকম বদল ঘটা অন্যায় নয় যদি তা জাতিসত্তাকে বিনষ্ট না করে।

এবার বলব অজ্ঞতা কিভাবে ধর্মীয় কুসংস্কারের দিকে ঠেলে দেয়। আমরা জানি, শিক্ষার দিক থেকে এদেশের মানুষ শতকরা কতজন অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। ইসলাম ধর্ম দর্শন সম্পর্কে কোরআন ও হাদীস সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ ও অন্ধ মুসলমান সম্প্রদায় দেখছে এদেশের মাটিতে পীর মাশায়েখদের মত একদল অর্থলোভী সম্পদভোগী সম্প্রদায়ের শিকড় গেড়ে গেছে। ধর্মীয় উপদেশ যারা অর্থ ও সম্পদের বিনিময়ে বিক্রি করে, যারা কিছু ধর্মীয় জ্ঞান নিরক্ষর মানুষকে অনুগতদাসে পরিণত করার জন্য ব্যবহার করে, আত্মা-পরম্ত্মার জাকজমক ব্যবসায় লিপ্ত হয়েছে, তারা কি আল্লাহর পবিত্র কালামকে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছে না? এভাবে এদেশের অজ্ঞ সম্প্রদায় না জানার জন্য নিজেদের শ্রমের ফল পীরের দরগায় গিয়ে নষ্ট করছে। যে লোকটির নিজের চোখে কোরআন পাঠ করে অর্থ বোঝার ক্ষমতা নেই, এবং আল্লাহর উপদেশ ও নিষেধকে জানার সামার্থ্য নেই, তাকে কোন পীর আল্লাহর কাছে পৌছে দিতে পারে আমি জানি না যদি তার কর্মগত সততা ও ঈমান ঠিক না থাকে।

সত্যকে গোপন করার মধ্যে যে পাপ ও ব্যাধির বিস্তার ঘটে বর্তমানে এদেশে ধর্মের নামে গজিয়ে উঠা পীরবাদের সংস্কৃতি সে পাপ ও ব্যাধিকে প্রতিদিন বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভক্তের হুদয় যখন অন্ধ, গুরুর উদ্দেশ্য যখন শিষ্যের অর্থ ও সামর্থের দিকে তখন কল্যান দাড়াবে কোথায়? এভাবে ইসলাম ধর্মে কুসংস্কার বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসলাম সর্বোচ্চ জ্ঞান ও বৃদ্ধিবাদের ধর্ম, আবেগ ও অন্ধত্বের স্থান ইসলামে নেই। অতএব শরীয়তকে এড়িয়ে মারেফাত কিংবা হাকিকত সম্পূর্ণ ইসলামের পরিপন্থি। আম দৃঢ়চিত্তে বলব আল্লাহ যা বিনা মূল্যে মানুষকে দিয়েছেন, মানুষ তা বিনামূল্যে বিতরণ না করা পর্যন্ত তারা দানশীল হবে না, সেটা হোক অর্থ-সম্পদ, হোক ধর্মীয় বা জাগতিক বিদ্যাবুদ্ধি।

বিভ্রান্তদের দল যত বড় হোক সত্য যখন আসবে বিভ্রান্তদের ধ্বংস ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না। ইসলামী জীবন ও সংস্কৃতি নিয়ে যাদের আগ্রহ তারা আগে জানুক আল্লাহর পরিচয় এবং আল-কোরআনকে এবং সেই সঙ্গে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সHappy এর জীবনাদর্শকে। তাহলে তার সাধারণ সংস্কৃতি ও ইসলামী সংস্কৃতির রূপরেখা আলাদাভাবে সম্পাদন করতে সক্ষম হবে। যার গৃহ নেই, সে কি করে ঘরে সূর্যের আলো বা বৃষ্টি পড়ার কথা ভাববে? যার জ্ঞান নেই আলোকিত গ্রন্থের সে কি করে পার্থক্য বিচার করবে ভন্ড ধার্মিকের চেয়ে বিশ্বাসী ন্যায়পরায়ণ অনেক বেশী গ্রহণযোগ্য।

আমরা সেই সংস্কৃতিকে গ্রহণে তৎপর থাকব যা আমাদের জাতিসত্ত্বা ও ধর্মকে কলুষিত করে না, যা আমাদের ইচ্ছা ও আচরণকে আরো উজ্জ্বলতা দান করে। ইসলামী সংস্কৃতি কখনো আল্লাহ, আল-কোরআন, হযরত মুহাম্মদ (সHappy ব্যতীত সম্ভব নয় এবং যেখানে এ তিনের অস্তিত্ব নেই সেখানে মুসলমান থাকতে পারে না, অধমদের কথা স্বতন্ত্র।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে

শর্ষীনা, ফুরফুরা, জৌনপুরী, ফুলতলী, সোনাকান্দা সহ সকল বালাকোটি পীরগনের শেরেকী আকীদা