সবই আল্লাহ করিয়েছেন - আসলে কে দায়ী – আল্লাহ না দোষী ব্যক্তি ? তথাকথিত প্যারাডক্সের সমাধান?
অনেকে বলে থাকেন – আল্লাহ্তো সবই জানতেন , তাহলে তিনি বিচার করবেন
কেন? আল্লাহ তো জানতেনই , আদম আঃ গন্ধক ফল খাবেন , ইবলিশ তাঁর সিজদা করবে
না – তাহলে , এর জন্যে কে দায়ী। আল্লাহ নাকি , আদম আঃ । তাদেরকে ইসলামিক
স্কলাররা উদাহরণ দিয়েছেন , এভাবে -
– একটা ক্লাসের ছাত্ররা পরীক্ষায় কেমন করবে – সেটা একজন মনযোগী শিক্ষক বলে দিতে পারবেন।ক্লাসের ছাত্রর দৌড় কিরকম – শিক্ষক জানেন।যদি রহিমকে , শিক্ষক বলেন – তুমি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ এর বেশি পাবে না- এবং আমি নিশ্চিত।তাহলে কি আপনি বলবেন – রহিমের রেজাল্টতো শিক্ষক আগেই বলে দিয়েছেন – এখন , খারাপ রেজাল্টের জন্যে রহিম দায়ী থাকবে না ? এখানেও এমনই , দায়ী আল্লাহ্ নয় – মানুষই।
শিক্ষক জানতেন , রহিম পরীক্ষায় জিপিএ ফোরই পাবে।তাঁর পড়াশোনার ধরনটাই তেমন ছিল।শিক্ষণ জানতেন , তাহলে কি রহিমের বাবা এসে শিক্ষককে ধরবেন – আমার ছেলের খারাপ রেজাল্টের জন্যে আপনিই দায়ী।
আমাদের সমস্যা হচ্ছে – আমরা পড়াশোনা করি কম , তবুও উত্তর দেবার চেষ্টা করি।না পারলে , মনগড়া উত্তর বের করে নেই।আসলে , এইসব প্যারাডক্সের উত্তর সারাদিন নিজ মনে ভেবে ভেবে সিদ্ধান্তে উপনীত হবার পরিবর্তে – স্কলাররা কি বলেছেন , সেটা দেখতে হবে।
ইবন সিনা এই কুযুক্তির উত্তর দিতে গিয়ে বলেছিলেন –
“আমাদের জানা , আর স্রস্টার জানা – এর মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে।আমরা যেটা জানি সেটা প্রতি মুহূর্তে বদলাতে পারে।প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাদের জ্ঞান প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তন হয়।আমাদের জ্ঞান পরিবর্তনশীল।আর স্রস্টার জ্ঞান অর্থাৎ জানা – STATIC ( স্থির)।” কুরআনে সূরা ইব্রাহিমের ৪ নগ সহ বহু জায়গায় বলা হয়েছে আল্লাহ পরমজ্ঞানী।এর মানে আল্লাহ সবই জানেন, তাঁর জ্ঞান স্থির।মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা নয় – ফেড্রিখ নিটশে নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন – মানুষের কাছে পরম জ্ঞান বলে কিছু নেই।মানুষের জ্ঞান নিত্য নতুনভাবে পরিবর্তন হয় , আজ সে যা জানে – কাল সেটা নতুন তথ্যের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়ে যায়।কিন্তু , আল্লাহর কাছে এমনটা হয় না।
আমরা জানি , সবকিছুর একটা শুরু আছে , এবং সবকিছুর একটা শেষ আছে।ঠিক সেভাবেই , সময়কেও আল্লাহ একদিন সৃষ্টি করেছেন , এর একটা শুরু রেখেছেন , পাশাপাশি তিনি কিন্তু একবারেই সৃষ্টি করেন।সেই হিসেবেই , তিনি সময়কে পুরোপুরিই সৃষ্টি করেছেন।অর্ধেক সৃষ্টি বলে কিছু নেই – আছে পুনঃসৃষ্টি।আপনি যদি মেধাবী হয়ে থাকেন – তাহলে এখনি বুঝে যাবেন যে – সময় যেহেতু তিনি পুরো সৃষ্টি করেই ফেলেছেন , তাহলে সেই সময়ের মধ্যে যা যা ঘটেছে – তিনি সবই জানেন ।তাঁর মানে হচ্ছে – আল্লাহর কাছে কোন “হবে” বলে শব্দ নেই।
''অথচ আল্লাহ্ তোমাদের সৃষ্টি করেছেন আর তোমরা যা তৈরি কর তাও?’’ ( আশ শাফায়াত – ৯৬ )
- আসলে , আমরা সৃষ্টি করি না , আমরা শুধু তাঁর সৃষ্ট জিনিসকেই রূপ পরিবর্তন করি।
আল্লাহ্ , সময়কে সৃষ্টি করে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে রেখেছেন।তাই , এই সময়ের মধ্যে যা হবে সবই আল্লাহ্ জানেন।কারণ , “হবে” শব্দটা আমাদের জন্যে প্রযোজ্য।আল্লাহ্র জন্যে নয়।আল্লাহ্র কাছে “হবে” বলে কিছু নেই।কারণ , তিনি সময়কে সৃষ্টি করেই রেখেছেন।আর মানুষ এই সময়ে স্বাধীনভাবে কাজ করবে –
- এবং মানুষ তাই পায়, যা সে করে , তার কর্ম শীঘ্রই দেখা হবে। অতঃপর তাকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। (৫৩:৩৯-৪১)।
আর এর মধ্যে আল্লাহ্ মানুষকে নানারকম ডিফিকাল্ট সিচুয়েশন তৈরি করে পরীক্ষা করেন।পরীক্ষা করার কথা কুরআনে শতাধিকবার এসেছে।পরীক্ষা মানেই কঠিন একটা পরিস্থিতি তৈরি করে – মানুষকে পরীক্ষা করা।
তিনি ঠিক সেভাবেই , আদম আঃ কে , ইবলিশকে পরীক্ষা করেছেন – তারা কি করে সেটা দেখবার জন্যে।কিন্তু , আমরা কুরআন , হাদিস থেকে জানতে পারি যে – তিনি এতই বুদ্ধিমান শিক্ষক ছিলেন যে – তারা পরীক্ষায় জিপিএ ফোর না জিপিএ ফাইভ পাবে – সেটা আল্লাহ আগে থেকেই জানেন , ঠিক যেমনটা জানতো , রহিমের শিক্ষক , যে রহিম জিপিএ ফোরএর বেশি পাবে না।তাহলে , এইবার বলুন – রহিমের শিক্ষককে কি রহিমের জিপিএ ফোর মানে খারাপ রেজাল্টের জন্যে দায়ী করা সম্ভব? যদি , সুস্থ মস্তিষ্কের হন , তাহলে – উত্তর দিবেন , না , রহিমের শিক্ষক জানতেন বলে কি – তাঁকে দায়ী করা সম্ভব।কক্ষনো না।তাহলে – এইবার বলুন – আপনি কিভাবে আল্লাহকে গন্ধম ফল খাওয়ার কথা আগেই জানার জন্যে দায়ী করবেন?
আমরা যেভাবে – রহিমকে খারাপ রেজাল্টের জন্যে দায়ী করবো , শিক্ষককে না । ঠিক সেভাবেই – দায়ী করবো – আদম আঃ কে , ইবলিশকে – আল্লাহকে নয়।
আল্লাহও আমাদেরকে বলেন –
কুরআনএর আয়াত দিয়ে শেষ পেরেক ঠুকি –
সূরা ফুসিলাতের ৪৬ নং আয়াতে -
যে কেউ সৎকর্ম করে থাকে, সেটি তো তার নিজের জন্যেই, আর যে কেউ মন্দকাজ করে সেটি তো তারই বিরুদ্ধে। আর তোমার প্রভু দাসদের প্রতি আদৌ অন্যায়কারী নন।
কেউ , ভাল – খারাপ কাজ করলে , তার জন্যে তারাই দায়ী।মোটেও আল্লাহ নয় – আল্লাহ , নিজেই কুরআনে বলেছেন – আমি আমার বান্দাদের উপর অন্যায় করি না।
রহিমের রেজাল্ট সম্পর্কে রহিমের শিক্ষক জানতেন , তিনি হাতে ধরে রেজাল্ট খারাপ করে দেননি – ঠিক তেমনভাবেই – আল্লাহ বলেছেন – আমি জানতাম।
–“ আর এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা তো অনুমানেরই অনুসরণ করছে, আর নিঃসন্দেহ সত্যের বিরুদ্ধে অনুমানে কোনো লাভ হয় না।সেজন্য তাকে উপেক্ষা করো যে আমাদের উপদেশ থেকে ফিরে যায় আর দুনিয়ার জীবন ছাড়া আর কিছু চায় না।এইটিই তাদের জ্ঞানের শেষসীমা। নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু -- তিনিই ভাল জানেন তাকে যে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে, আর তিনিই ভাল জানেন যে সৎপথপ্রাপ্ত।“(৫৩:২৮-৩০)
এরপর , আবার সূরা আলে ইমরানের ৯০ নং আয়াতে উল্লেখ আছে –
নিঃসন্দেহ যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের বিশ্বাস স্থাপনের পরে, তারপর অবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়ে যায়, তাদের তওবা কখনো কবুল করা হবে না; আর এরা নিজেরাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট।
আয়াতটা খেয়াল করুন –
১ - যারা অবিশ্বাস পোষণ করে – নিজেরাই করে।
২ - তাদের বিশ্বাস স্থাপনের পরে – নিজেরাই করে।
৩ - তারপর অবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়ে যায়, - নিজের অবিশ্বাস , নিজেই বাড়ায়।
৪ - আর এরা নিজেরাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট। - হ্যাঁ , এরা নিজেরাই নিজে নিজেই পথভ্রষ্ট।
এর মানে কি দাঁড়াচ্ছে – আল্লাহ কাউকে ইচ্ছে করে , খারাপ কাজের দিকে ঠেলে দেননা।তারা নিজেরাই , নিজেদের খারাপ কাজর দিকে ধাবিত হয়।শাস্তিও আল্লাহ দিবেন –
কুরআন বলছে – সূরা নাহলের ২৫ নং আয়াতে -
“ ফলে কিয়ামতের দিনে তারা নিজেদের বোঝা পুরোমাত্রায় বহন করবে, আর তাদেরও বোঝার কতকটা যাদের তারা পথভ্রষ্ট করেছে কোনো জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও। তারা যা বহন করে তা কি নিকৃষ্ট নয়?
তাদের অবিশ্বাসের শাস্তি তারা পাবেই।আল্লাহ একমাত্র সেই শ্রেণিকেই পথ ভ্রষ্ট করেন – যারা অন্যায় আচরণ করতেই থাকে।সত্য দেখেও না দেখার ভান করে।সত্যকে জেনে বুঝেই উপেক্ষা করে -
সূরা আর রুমের ২৯ নং আয়াতে -
বস্তুত যারা অন্যায়াচরণ করে তারা জ্ঞানহীনতা বশতঃ তাদের কামনার অনুসরণ করে। সেজন্যে যাকে আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট করেন তাকে কে সৎপথে চালিত করবে? আর তাদের জন্য সাহায্যকারীদের কেউ নেই।
আল্লাহ , আমাদেরকে সবার কাছে – সত্য পৌঁছে দেবার আহবান জানিয়েছেন - জ্ঞান ও সুষ্ঠু উপদেশের দ্বারা।এরপরও যারা , তাঁর বানীকে অস্বীকার করবে – তাঁর জন্যে তারাই দায়ী।আল্লাহ শুধু জানেন কারা এমনটা করবে ।
সূরা নাহলের ১২৫ নং আয়াতে
তোমার প্রভুর রাস্তায় আহ্বান করো জ্ঞান ও সুষ্ঠু উপদেশের দ্বারা, আর তাদের সাথে পর্যালোচনা কর এমনভাবে যা শ্রেষ্ঠ। নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু স্বয়ং ভাল জানেন তাকে যে তাঁর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে, আর তিনি ভাল জানেন সৎপথাবলন্বীদের।
( এখানে – পথভ্রষ্ট মানে – আল্লাহর নিষেধ অমান্য করা।শুধু ধর্ম নয়। চুরি থেকে শুরু করে যেকন অন্যায় – সবই পথভ্রষ্টও।কারণ , এটা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা।)
আল্লাহ কাদেরকে পথভ্রষ্ট হতে দেন –
তাঁদেরকেই যারা – “তোমার প্রভুর রাস্তায় আহ্বান করো জ্ঞান ও সুষ্ঠু উপদেশের দ্বারা, আর তাদের সাথে পর্যালোচনা কর এমনভাবে যা শ্রেষ্ঠ।“ এভাবে আল্লাহর পথে ডাক দেবার পরও সাড়া দেয়না।সত্য জেনেও এড়িয়ে চলে – তাদেরকেই আল্লাহ পথভ্রষ্ট হতে দেন।আল্লাহ , সবার কাছে – রাসূল পাঠিয়েছেন – তবুও যদি সে অস্বীকার করে করে বসে , তাহলেই সে পথভ্রষ্ট।
সূরা ইব্রাহিমের ৪ নং আয়াতে -
“আর আমরা এমন কোনো রসূলকে পাঠাইনি তাঁর স্বজাতির ভাষা ব্যতীত, যেন তাদের জন্য তিনি সুস্পষ্ট করতে পারেন। তারপর আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট হতে দেন যাকে তিনি ইচ্ছে করেন, আর যাকে ইচ্ছে করেন সৎপথে চালান। আর তিনিই তো মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।
এখানে – বলা হয়েছে আল্লাহ পরমজ্ঞানী।এর মানে আল্লাহ সবই জানেন, তাঁর জ্ঞান স্থির।মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা নয় – ফেড্রিখ নিটশে নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন – মানুষের কাছে পরম জ্ঞান বলে কিছু নেই।মানুষের জ্ঞান নিত্য নতুনভাবে পরিবর্তন হয় , আজ সে যা জানে – কাল সেটা নিতুন তথ্যের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়ে যায়।
এরপরও , আল্লাহ তাদেরকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন – তারপরেও তারা সত্যকে অস্বীকার করে বসে।সত্য চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠা সত্ত্বেও তারা অস্বীকার করে বসে। সেক্ষেত্রে – আল্লাহ তাদেরকেই পথভ্রষ্ট হতে দেন।
- “আর তারা ভেবেছিল যে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে না, সেজন্য তারা হলো অন্ধ আর বধির, এরপর আল্লাহ্ তাদের দিকে ফিরলেন। তারপরেও তাদের অনেকে অন্ধ ও বধির হলো। আর তারা যা করে আল্লাহ্ তার দর্শক। “(৫:৭১)
সবশেষে মানুষ যা করে – তাঁর জন্যে সে নিজেই দায়ী।
- এবং মানুষ তাই পায়, যা সে করে , তার কর্ম শীঘ্রই দেখা হবে। অতঃপর তাকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। (৫৩:৩৯-৪১)।
একজন নাস্তিক – তার টাইমলাইনে লিখেছেন - “ইসলামের শত্রু , মেড বাই আল্লাহ্”।
নাস্তিবাদীরা এই যুক্তির গ্যাঁড়াকলে পড়ে বেশি।
কথাটা হবে দুইভাবে –
“ইসলামের শত্রু , নোনড বাই আল্লাহ্ এজ লাইক এজ রহিম’স রেজাল্ট ওয়াজ নোনড বাই হিজ টিচার”।
“ইসলামের শত্রু , যা আল্লাহ্ জানতো ঠিক সেভাবেই , যেভাবে রহিমের জিপিএ ৪ এর সম্পর্কে জানতেন তার টিচার”।যদি টিচারকে দায়ী করা না যায় – তাহলে আল্লাহকেও দায়ী করা সম্ভব নয়।কারণ টিচার জানলেই টিচার দায়ী হয় না –তেমনিভাবে আল্লাহ্ জানলেও আল্লাহ্ দায়ী হবে না।জানলেই কেউ দায়ী হয় না।কর্মফল রহিমের , দায়ী রহিমই।কর্মফল নাস্তিকের , দায়ী নাস্তিকই।
এরপর , দুই নং সমস্যা , তার লিখা উচিত – ইসলামের শত্রু , ফেইল্ড ইন আল্লাহ’স এক্সাম।
কারণ , আল্লাহ্ তাকে পরীক্ষা করবার জন্যেই –বিশ্বাসের দোলাচালে ফেলেছেন।দেখেছেন – কিভাবে সে সেই দোলাচাল পেরিয়ে আসে।অবিশ্বাসের বীজ ঢুকিয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করে পরীক্ষা করেছেন – সে কিভাবে পেরিয়ে আসে।কিন্তু , নাস্তিকরা সেই পরীক্ষায় করুণভাবে অকৃতকার্য হয়েছে।আল্লাহ্ কুরআনে বলেছেন –
- ''নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে জ্ঞান দৃষ্টি এসেছে, কাজেই যে কেউ দেখতে পায়, সেটি তার নিজের আত্মা র জন্যে, আর যে কেউ অন্ধ হবে, সেটি তার বিরুদ্ধে যাবে। আর আমি তোমাদের উপরে তত্ত্বাবধায়ক নই।’’(৬:১০৪)
অর্থ অত্যন্ত স্পষ্ট – আল্লাহ্ আমাদের তত্ত্বাবধায়ক নন।“যে কেউ অন্ধ হবে, সেটি তার বিরুদ্ধে যাবে” – হ্যাঁ , যে ভুল করবে সেইই দায়ী হবে- আল্লাহ্ নন।কারণ , আল্লাহ্ আমাদের বর্তমান কাজের তত্ত্বাবধায়ক নন।আর , আল্লাহ্ ইচ্ছা করেই এই কঠিন পরীক্ষায় ফেলার ক্ষেত্রে - ইসলামিক স্কলার – আল জুনায়েদ এই সম্পর্কে বলেছেন -
“একজন মানুষকে তার খারাপ স্বভাব-চরিত্রের জন্যে দায়ী করা হবে না , বরং দায়ী করা হবে – যদি সে তার খারাপ স্বভাব চরিত্র অনুযায়ী আচরণ করা হয়” (হি-লওয়াত আল আউলিয়া )
হ্যাঁ , আল্লাহ্ কর্তৃক প্রদত্ত নাস্তিবাদী মনোভাবের জন্যে নয় – দায়ী করা হবে সে অনুযায়ী আচরণের জন্যে।কুরআন বলে –
- “আর তারা ভেবেছিল যে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে না, সেজন্য তারা হলো অন্ধ আর বধির, এরপর আল্লাহ্ তাদের দিকে ফিরলেন। তারপরেও তাদের অনেকে অন্ধ ও বধির হলো। আর তারা যা করে আল্লাহ্ তার দর্শক। “(৫:৭১)
সকল নাস্তিকদের জিজ্ঞেস করে দেখুন – তারা বিশ্বাস করে না , যে তাদের কোন পরীক্ষা হবে কিংবা হচ্ছে না।তারা এই প্রশ্নও করে – আল্লাহ্ থাকলে তার অবিশ্বাসীদের কিছু বলে না কেন ? কেতাবি – শব্দ , দ্যা সাইলেন্স অফ গড ! তাদের জন্যে বলা হয়েছে - আর তারা যা করে আল্লাহ্ তার দর্শক। নজরুলের কবিতার সুরে বলি – দিনে দিনে বহু বাড়িতেছে দেনা , শুধিতে হইবে ঋণ।হ্যাঁ , দেখা হবে – রোজ কেয়ামতের মাঠে।
কুরআন বলে –“ আর এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা তো অনুমানেরই অনুসরণ করছে, আর নিঃসন্দেহ সত্যের বিরুদ্ধে অনুমানে কোনো লাভ হয় না।সেজন্য তাকে উপেক্ষা করো যে আমাদের উপদেশ থেকে ফিরে যায় আর দুনিয়ার জীবন ছাড়া আর কিছু চায় না।এইটিই তাদের জ্ঞানের শেষসীমা। নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু -- তিনিই ভাল জানেন তাকে যে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে, আর তিনিই ভাল জানেন যে সৎপথপ্রাপ্ত।“(৫৩:২৮-৩০) হ্যাঁ ,
আসুন বৃথা অনুমান দিয়ে , সত্যকে ঢেকে না রেখে – সত্যকে আলিঙ্গন করুন।
আশা করি – এই তথাকথিত প্যারাডক্সের সমাধান হয়েছে। এটা প্যারাডক্স নয় – আমাদের জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুল অনুমান।এ ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য কারো কৃতকর্মের ভার তাঁর উপরেই বর্তায়- এইটার জন্যে আল্লাহ্ দায়ী নয়।আল্লাহ্ জানতেন , বলেই আল্লাহ্ দায়ী নয়। যারা মানব সমুন্নত বিবেককে বন্ধক দেয় , তার জন্যে তারাই দায়ী।
– একটা ক্লাসের ছাত্ররা পরীক্ষায় কেমন করবে – সেটা একজন মনযোগী শিক্ষক বলে দিতে পারবেন।ক্লাসের ছাত্রর দৌড় কিরকম – শিক্ষক জানেন।যদি রহিমকে , শিক্ষক বলেন – তুমি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ এর বেশি পাবে না- এবং আমি নিশ্চিত।তাহলে কি আপনি বলবেন – রহিমের রেজাল্টতো শিক্ষক আগেই বলে দিয়েছেন – এখন , খারাপ রেজাল্টের জন্যে রহিম দায়ী থাকবে না ? এখানেও এমনই , দায়ী আল্লাহ্ নয় – মানুষই।
শিক্ষক জানতেন , রহিম পরীক্ষায় জিপিএ ফোরই পাবে।তাঁর পড়াশোনার ধরনটাই তেমন ছিল।শিক্ষণ জানতেন , তাহলে কি রহিমের বাবা এসে শিক্ষককে ধরবেন – আমার ছেলের খারাপ রেজাল্টের জন্যে আপনিই দায়ী।
আমাদের সমস্যা হচ্ছে – আমরা পড়াশোনা করি কম , তবুও উত্তর দেবার চেষ্টা করি।না পারলে , মনগড়া উত্তর বের করে নেই।আসলে , এইসব প্যারাডক্সের উত্তর সারাদিন নিজ মনে ভেবে ভেবে সিদ্ধান্তে উপনীত হবার পরিবর্তে – স্কলাররা কি বলেছেন , সেটা দেখতে হবে।
ইবন সিনা এই কুযুক্তির উত্তর দিতে গিয়ে বলেছিলেন –
“আমাদের জানা , আর স্রস্টার জানা – এর মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে।আমরা যেটা জানি সেটা প্রতি মুহূর্তে বদলাতে পারে।প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাদের জ্ঞান প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তন হয়।আমাদের জ্ঞান পরিবর্তনশীল।আর স্রস্টার জ্ঞান অর্থাৎ জানা – STATIC ( স্থির)।” কুরআনে সূরা ইব্রাহিমের ৪ নগ সহ বহু জায়গায় বলা হয়েছে আল্লাহ পরমজ্ঞানী।এর মানে আল্লাহ সবই জানেন, তাঁর জ্ঞান স্থির।মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা নয় – ফেড্রিখ নিটশে নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন – মানুষের কাছে পরম জ্ঞান বলে কিছু নেই।মানুষের জ্ঞান নিত্য নতুনভাবে পরিবর্তন হয় , আজ সে যা জানে – কাল সেটা নতুন তথ্যের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়ে যায়।কিন্তু , আল্লাহর কাছে এমনটা হয় না।
আমরা জানি , সবকিছুর একটা শুরু আছে , এবং সবকিছুর একটা শেষ আছে।ঠিক সেভাবেই , সময়কেও আল্লাহ একদিন সৃষ্টি করেছেন , এর একটা শুরু রেখেছেন , পাশাপাশি তিনি কিন্তু একবারেই সৃষ্টি করেন।সেই হিসেবেই , তিনি সময়কে পুরোপুরিই সৃষ্টি করেছেন।অর্ধেক সৃষ্টি বলে কিছু নেই – আছে পুনঃসৃষ্টি।আপনি যদি মেধাবী হয়ে থাকেন – তাহলে এখনি বুঝে যাবেন যে – সময় যেহেতু তিনি পুরো সৃষ্টি করেই ফেলেছেন , তাহলে সেই সময়ের মধ্যে যা যা ঘটেছে – তিনি সবই জানেন ।তাঁর মানে হচ্ছে – আল্লাহর কাছে কোন “হবে” বলে শব্দ নেই।
''অথচ আল্লাহ্ তোমাদের সৃষ্টি করেছেন আর তোমরা যা তৈরি কর তাও?’’ ( আশ শাফায়াত – ৯৬ )
- আসলে , আমরা সৃষ্টি করি না , আমরা শুধু তাঁর সৃষ্ট জিনিসকেই রূপ পরিবর্তন করি।
আল্লাহ্ , সময়কে সৃষ্টি করে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে রেখেছেন।তাই , এই সময়ের মধ্যে যা হবে সবই আল্লাহ্ জানেন।কারণ , “হবে” শব্দটা আমাদের জন্যে প্রযোজ্য।আল্লাহ্র জন্যে নয়।আল্লাহ্র কাছে “হবে” বলে কিছু নেই।কারণ , তিনি সময়কে সৃষ্টি করেই রেখেছেন।আর মানুষ এই সময়ে স্বাধীনভাবে কাজ করবে –
- এবং মানুষ তাই পায়, যা সে করে , তার কর্ম শীঘ্রই দেখা হবে। অতঃপর তাকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। (৫৩:৩৯-৪১)।
আর এর মধ্যে আল্লাহ্ মানুষকে নানারকম ডিফিকাল্ট সিচুয়েশন তৈরি করে পরীক্ষা করেন।পরীক্ষা করার কথা কুরআনে শতাধিকবার এসেছে।পরীক্ষা মানেই কঠিন একটা পরিস্থিতি তৈরি করে – মানুষকে পরীক্ষা করা।
তিনি ঠিক সেভাবেই , আদম আঃ কে , ইবলিশকে পরীক্ষা করেছেন – তারা কি করে সেটা দেখবার জন্যে।কিন্তু , আমরা কুরআন , হাদিস থেকে জানতে পারি যে – তিনি এতই বুদ্ধিমান শিক্ষক ছিলেন যে – তারা পরীক্ষায় জিপিএ ফোর না জিপিএ ফাইভ পাবে – সেটা আল্লাহ আগে থেকেই জানেন , ঠিক যেমনটা জানতো , রহিমের শিক্ষক , যে রহিম জিপিএ ফোরএর বেশি পাবে না।তাহলে , এইবার বলুন – রহিমের শিক্ষককে কি রহিমের জিপিএ ফোর মানে খারাপ রেজাল্টের জন্যে দায়ী করা সম্ভব? যদি , সুস্থ মস্তিষ্কের হন , তাহলে – উত্তর দিবেন , না , রহিমের শিক্ষক জানতেন বলে কি – তাঁকে দায়ী করা সম্ভব।কক্ষনো না।তাহলে – এইবার বলুন – আপনি কিভাবে আল্লাহকে গন্ধম ফল খাওয়ার কথা আগেই জানার জন্যে দায়ী করবেন?
আমরা যেভাবে – রহিমকে খারাপ রেজাল্টের জন্যে দায়ী করবো , শিক্ষককে না । ঠিক সেভাবেই – দায়ী করবো – আদম আঃ কে , ইবলিশকে – আল্লাহকে নয়।
আল্লাহও আমাদেরকে বলেন –
কুরআনএর আয়াত দিয়ে শেষ পেরেক ঠুকি –
সূরা ফুসিলাতের ৪৬ নং আয়াতে -
যে কেউ সৎকর্ম করে থাকে, সেটি তো তার নিজের জন্যেই, আর যে কেউ মন্দকাজ করে সেটি তো তারই বিরুদ্ধে। আর তোমার প্রভু দাসদের প্রতি আদৌ অন্যায়কারী নন।
কেউ , ভাল – খারাপ কাজ করলে , তার জন্যে তারাই দায়ী।মোটেও আল্লাহ নয় – আল্লাহ , নিজেই কুরআনে বলেছেন – আমি আমার বান্দাদের উপর অন্যায় করি না।
রহিমের রেজাল্ট সম্পর্কে রহিমের শিক্ষক জানতেন , তিনি হাতে ধরে রেজাল্ট খারাপ করে দেননি – ঠিক তেমনভাবেই – আল্লাহ বলেছেন – আমি জানতাম।
–“ আর এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা তো অনুমানেরই অনুসরণ করছে, আর নিঃসন্দেহ সত্যের বিরুদ্ধে অনুমানে কোনো লাভ হয় না।সেজন্য তাকে উপেক্ষা করো যে আমাদের উপদেশ থেকে ফিরে যায় আর দুনিয়ার জীবন ছাড়া আর কিছু চায় না।এইটিই তাদের জ্ঞানের শেষসীমা। নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু -- তিনিই ভাল জানেন তাকে যে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে, আর তিনিই ভাল জানেন যে সৎপথপ্রাপ্ত।“(৫৩:২৮-৩০)
এরপর , আবার সূরা আলে ইমরানের ৯০ নং আয়াতে উল্লেখ আছে –
নিঃসন্দেহ যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের বিশ্বাস স্থাপনের পরে, তারপর অবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়ে যায়, তাদের তওবা কখনো কবুল করা হবে না; আর এরা নিজেরাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট।
আয়াতটা খেয়াল করুন –
১ - যারা অবিশ্বাস পোষণ করে – নিজেরাই করে।
২ - তাদের বিশ্বাস স্থাপনের পরে – নিজেরাই করে।
৩ - তারপর অবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়ে যায়, - নিজের অবিশ্বাস , নিজেই বাড়ায়।
৪ - আর এরা নিজেরাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট। - হ্যাঁ , এরা নিজেরাই নিজে নিজেই পথভ্রষ্ট।
এর মানে কি দাঁড়াচ্ছে – আল্লাহ কাউকে ইচ্ছে করে , খারাপ কাজের দিকে ঠেলে দেননা।তারা নিজেরাই , নিজেদের খারাপ কাজর দিকে ধাবিত হয়।শাস্তিও আল্লাহ দিবেন –
কুরআন বলছে – সূরা নাহলের ২৫ নং আয়াতে -
“ ফলে কিয়ামতের দিনে তারা নিজেদের বোঝা পুরোমাত্রায় বহন করবে, আর তাদেরও বোঝার কতকটা যাদের তারা পথভ্রষ্ট করেছে কোনো জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও। তারা যা বহন করে তা কি নিকৃষ্ট নয়?
তাদের অবিশ্বাসের শাস্তি তারা পাবেই।আল্লাহ একমাত্র সেই শ্রেণিকেই পথ ভ্রষ্ট করেন – যারা অন্যায় আচরণ করতেই থাকে।সত্য দেখেও না দেখার ভান করে।সত্যকে জেনে বুঝেই উপেক্ষা করে -
সূরা আর রুমের ২৯ নং আয়াতে -
বস্তুত যারা অন্যায়াচরণ করে তারা জ্ঞানহীনতা বশতঃ তাদের কামনার অনুসরণ করে। সেজন্যে যাকে আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট করেন তাকে কে সৎপথে চালিত করবে? আর তাদের জন্য সাহায্যকারীদের কেউ নেই।
আল্লাহ , আমাদেরকে সবার কাছে – সত্য পৌঁছে দেবার আহবান জানিয়েছেন - জ্ঞান ও সুষ্ঠু উপদেশের দ্বারা।এরপরও যারা , তাঁর বানীকে অস্বীকার করবে – তাঁর জন্যে তারাই দায়ী।আল্লাহ শুধু জানেন কারা এমনটা করবে ।
সূরা নাহলের ১২৫ নং আয়াতে
তোমার প্রভুর রাস্তায় আহ্বান করো জ্ঞান ও সুষ্ঠু উপদেশের দ্বারা, আর তাদের সাথে পর্যালোচনা কর এমনভাবে যা শ্রেষ্ঠ। নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু স্বয়ং ভাল জানেন তাকে যে তাঁর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে, আর তিনি ভাল জানেন সৎপথাবলন্বীদের।
( এখানে – পথভ্রষ্ট মানে – আল্লাহর নিষেধ অমান্য করা।শুধু ধর্ম নয়। চুরি থেকে শুরু করে যেকন অন্যায় – সবই পথভ্রষ্টও।কারণ , এটা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা।)
আল্লাহ কাদেরকে পথভ্রষ্ট হতে দেন –
তাঁদেরকেই যারা – “তোমার প্রভুর রাস্তায় আহ্বান করো জ্ঞান ও সুষ্ঠু উপদেশের দ্বারা, আর তাদের সাথে পর্যালোচনা কর এমনভাবে যা শ্রেষ্ঠ।“ এভাবে আল্লাহর পথে ডাক দেবার পরও সাড়া দেয়না।সত্য জেনেও এড়িয়ে চলে – তাদেরকেই আল্লাহ পথভ্রষ্ট হতে দেন।আল্লাহ , সবার কাছে – রাসূল পাঠিয়েছেন – তবুও যদি সে অস্বীকার করে করে বসে , তাহলেই সে পথভ্রষ্ট।
সূরা ইব্রাহিমের ৪ নং আয়াতে -
“আর আমরা এমন কোনো রসূলকে পাঠাইনি তাঁর স্বজাতির ভাষা ব্যতীত, যেন তাদের জন্য তিনি সুস্পষ্ট করতে পারেন। তারপর আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট হতে দেন যাকে তিনি ইচ্ছে করেন, আর যাকে ইচ্ছে করেন সৎপথে চালান। আর তিনিই তো মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।
এখানে – বলা হয়েছে আল্লাহ পরমজ্ঞানী।এর মানে আল্লাহ সবই জানেন, তাঁর জ্ঞান স্থির।মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা নয় – ফেড্রিখ নিটশে নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন – মানুষের কাছে পরম জ্ঞান বলে কিছু নেই।মানুষের জ্ঞান নিত্য নতুনভাবে পরিবর্তন হয় , আজ সে যা জানে – কাল সেটা নিতুন তথ্যের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়ে যায়।
এরপরও , আল্লাহ তাদেরকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন – তারপরেও তারা সত্যকে অস্বীকার করে বসে।সত্য চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠা সত্ত্বেও তারা অস্বীকার করে বসে। সেক্ষেত্রে – আল্লাহ তাদেরকেই পথভ্রষ্ট হতে দেন।
- “আর তারা ভেবেছিল যে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে না, সেজন্য তারা হলো অন্ধ আর বধির, এরপর আল্লাহ্ তাদের দিকে ফিরলেন। তারপরেও তাদের অনেকে অন্ধ ও বধির হলো। আর তারা যা করে আল্লাহ্ তার দর্শক। “(৫:৭১)
সবশেষে মানুষ যা করে – তাঁর জন্যে সে নিজেই দায়ী।
- এবং মানুষ তাই পায়, যা সে করে , তার কর্ম শীঘ্রই দেখা হবে। অতঃপর তাকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। (৫৩:৩৯-৪১)।
একজন নাস্তিক – তার টাইমলাইনে লিখেছেন - “ইসলামের শত্রু , মেড বাই আল্লাহ্”।
নাস্তিবাদীরা এই যুক্তির গ্যাঁড়াকলে পড়ে বেশি।
কথাটা হবে দুইভাবে –
“ইসলামের শত্রু , নোনড বাই আল্লাহ্ এজ লাইক এজ রহিম’স রেজাল্ট ওয়াজ নোনড বাই হিজ টিচার”।
“ইসলামের শত্রু , যা আল্লাহ্ জানতো ঠিক সেভাবেই , যেভাবে রহিমের জিপিএ ৪ এর সম্পর্কে জানতেন তার টিচার”।যদি টিচারকে দায়ী করা না যায় – তাহলে আল্লাহকেও দায়ী করা সম্ভব নয়।কারণ টিচার জানলেই টিচার দায়ী হয় না –তেমনিভাবে আল্লাহ্ জানলেও আল্লাহ্ দায়ী হবে না।জানলেই কেউ দায়ী হয় না।কর্মফল রহিমের , দায়ী রহিমই।কর্মফল নাস্তিকের , দায়ী নাস্তিকই।
এরপর , দুই নং সমস্যা , তার লিখা উচিত – ইসলামের শত্রু , ফেইল্ড ইন আল্লাহ’স এক্সাম।
কারণ , আল্লাহ্ তাকে পরীক্ষা করবার জন্যেই –বিশ্বাসের দোলাচালে ফেলেছেন।দেখেছেন – কিভাবে সে সেই দোলাচাল পেরিয়ে আসে।অবিশ্বাসের বীজ ঢুকিয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করে পরীক্ষা করেছেন – সে কিভাবে পেরিয়ে আসে।কিন্তু , নাস্তিকরা সেই পরীক্ষায় করুণভাবে অকৃতকার্য হয়েছে।আল্লাহ্ কুরআনে বলেছেন –
- ''নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে জ্ঞান দৃষ্টি এসেছে, কাজেই যে কেউ দেখতে পায়, সেটি তার নিজের আত্মা র জন্যে, আর যে কেউ অন্ধ হবে, সেটি তার বিরুদ্ধে যাবে। আর আমি তোমাদের উপরে তত্ত্বাবধায়ক নই।’’(৬:১০৪)
অর্থ অত্যন্ত স্পষ্ট – আল্লাহ্ আমাদের তত্ত্বাবধায়ক নন।“যে কেউ অন্ধ হবে, সেটি তার বিরুদ্ধে যাবে” – হ্যাঁ , যে ভুল করবে সেইই দায়ী হবে- আল্লাহ্ নন।কারণ , আল্লাহ্ আমাদের বর্তমান কাজের তত্ত্বাবধায়ক নন।আর , আল্লাহ্ ইচ্ছা করেই এই কঠিন পরীক্ষায় ফেলার ক্ষেত্রে - ইসলামিক স্কলার – আল জুনায়েদ এই সম্পর্কে বলেছেন -
“একজন মানুষকে তার খারাপ স্বভাব-চরিত্রের জন্যে দায়ী করা হবে না , বরং দায়ী করা হবে – যদি সে তার খারাপ স্বভাব চরিত্র অনুযায়ী আচরণ করা হয়” (হি-লওয়াত আল আউলিয়া )
হ্যাঁ , আল্লাহ্ কর্তৃক প্রদত্ত নাস্তিবাদী মনোভাবের জন্যে নয় – দায়ী করা হবে সে অনুযায়ী আচরণের জন্যে।কুরআন বলে –
- “আর তারা ভেবেছিল যে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে না, সেজন্য তারা হলো অন্ধ আর বধির, এরপর আল্লাহ্ তাদের দিকে ফিরলেন। তারপরেও তাদের অনেকে অন্ধ ও বধির হলো। আর তারা যা করে আল্লাহ্ তার দর্শক। “(৫:৭১)
সকল নাস্তিকদের জিজ্ঞেস করে দেখুন – তারা বিশ্বাস করে না , যে তাদের কোন পরীক্ষা হবে কিংবা হচ্ছে না।তারা এই প্রশ্নও করে – আল্লাহ্ থাকলে তার অবিশ্বাসীদের কিছু বলে না কেন ? কেতাবি – শব্দ , দ্যা সাইলেন্স অফ গড ! তাদের জন্যে বলা হয়েছে - আর তারা যা করে আল্লাহ্ তার দর্শক। নজরুলের কবিতার সুরে বলি – দিনে দিনে বহু বাড়িতেছে দেনা , শুধিতে হইবে ঋণ।হ্যাঁ , দেখা হবে – রোজ কেয়ামতের মাঠে।
কুরআন বলে –“ আর এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা তো অনুমানেরই অনুসরণ করছে, আর নিঃসন্দেহ সত্যের বিরুদ্ধে অনুমানে কোনো লাভ হয় না।সেজন্য তাকে উপেক্ষা করো যে আমাদের উপদেশ থেকে ফিরে যায় আর দুনিয়ার জীবন ছাড়া আর কিছু চায় না।এইটিই তাদের জ্ঞানের শেষসীমা। নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু -- তিনিই ভাল জানেন তাকে যে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে, আর তিনিই ভাল জানেন যে সৎপথপ্রাপ্ত।“(৫৩:২৮-৩০) হ্যাঁ ,
আসুন বৃথা অনুমান দিয়ে , সত্যকে ঢেকে না রেখে – সত্যকে আলিঙ্গন করুন।
আশা করি – এই তথাকথিত প্যারাডক্সের সমাধান হয়েছে। এটা প্যারাডক্স নয় – আমাদের জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুল অনুমান।এ ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য কারো কৃতকর্মের ভার তাঁর উপরেই বর্তায়- এইটার জন্যে আল্লাহ্ দায়ী নয়।আল্লাহ্ জানতেন , বলেই আল্লাহ্ দায়ী নয়। যারা মানব সমুন্নত বিবেককে বন্ধক দেয় , তার জন্যে তারাই দায়ী।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন