আল্লাহ পাক কোথায় আছেন এবং আমরা আল্লাহ, জ্বিন, ফেরেশতা ও পরকালকে কেন দেখতে পাই না





সালাফি ও দেওবন্দীদের মাঝে আল্লাহ পাকের অবস্থান নিয়ে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সালাফী/আহলে হাদীসদের মতে আল্লাহ পাক আরশে আযীমে রয়েছেন আর দেওবন্দীদের মতে আল্লাহ পাক স্থান এর সীমাবদ্ধতা থেকে পবিত্র তিনি সর্বত্রই আছেন। আমি মনে করি এটি একটি অহেতুক বিতর্ক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভিন্ন ডাইমেশনে অবস্থান করেন এবং তাতে আরশে থাকা বা সর্বত্র থাকার মাঝে কোনই পার্থক্য সৃষ্টি করে না। একই সাথে আরশে এবং সর্বত্রই তিনি থাকতে পারেন ভিন্ন মাত্রা/ডাইমেশনে। আমাদের পৃথিবী হল চার মাত্রার জগত। দৈর্ঘ, প্রস্থ, উচ্চতা এবং সময়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলেছেন আরো বেশি মাত্রা বিশিষ্ট জগতও রয়েছে এবং কম মাত্রার অধিবাসীরা বেশী মাত্রার অবস্থান ও প্রকৃতি বুঝতে সক্ষম হয় না। হয়ত বা শয়তান রয়েছে চার মাত্রার জগতে, জ্বিন পাচ মাত্রায়, ফেরেশতা ও পরকাল (বেহেশত-দোযখ) ছয় মাত্রায় এবং আল্লাহর রব্বুল আলামীন হয়তবা আরো উর্দ্ধ কোন মাত্রায় রয়েছেন। আর নিম্ন মাত্রায় অবস্থান কারীরা উচ্চ মাত্রায় অবস্থানকারীদের দেখতে পায়না কিন্তু উচ্চ মাত্রায় অবস্থান কারী নিম্ন মাত্রায় অবস্থান কারীর সকল কিছুই দেখতে পায়। নিম্নে বিজ্ঞানের সাহায্যে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হল।

এক অদ্ভূত ও আশ্চর্যরকম জটিল বিশ্বব্রহ্মান্ডে আমরা বাস করি। একে জানার জন্য আমাদের কৌতুহলের সীমা নেই।

প্রায়ই মনে প্রশ্ন জাগে –

- আমরা এখানে কেন আসলাম?

- এই পৃথিবী ও বিশ্বব্রহ্মান্ড এবং আমরা কোথা থেকে আসলাম? এবং

- পৃথিবী নামক এই গ্রহটি কী দিয়ে তৈরী?

সৌভাগ্যবশত আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন ঐ সব প্রশ্নের জবাব সম্পর্কে অনেক কিছু জানা গেছে। এবং আরো অনেক অনেক জানার বাকী রয়েছে। বিজ্ঞান এসব বিষয়ে আমাদের কৌতুহল অনেকটা মিটিয়েছে। এসব বিষয়ের জবাবে String Theory হচ্ছে সর্বসাম্প্রতিক প্রচেষ্টা যা’ উপরের শেষ প্রশ্নটি এবং দ্বিতীয় প্রশ্নটির আংশিক জবাব দিতে এগিয়ে এসেছে।

আমাদের এই পৃথিবী কী দিয়ে তৈরী এ প্রশ্নের জবাব দিয়ে শুরু করা যাক। এখন আমরা জানি পদার্থ “পরমানু” দিয়ে তৈরী। এবং এই পরমাণু আবার ৩টি মূল উপাদানে তৈরী। ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন। এই ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এই নিউক্লিয়াস আবার প্রোটন আর নিউট্রন দিয়ে তৈরী। অর্থাৎ পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস। আর ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এখানে “ইলেকট্রন” হচ্ছে নির্ভেজালভাবে মৌলিক কণা। অন্যদিকে প্রোটন এবং নিউট্রন আবার Quark নামক ক্ষুদ্র কণা দিয়ে তৈরী। এবং যতদূর জানা গেছে – Quark হচ্ছে প্রাথমিক কণা (Elementary Particle).



তাহলে জানা গেল – পরমাণুর (Atom) ভিতরের উপাদান এ পর্যন্ত যতদূর সংক্ষেপে জেনেছি তা-ই হলো কণা পদার্থবিদ্যা বা Particle Physics. এবং ঐ জ্ঞানই কণা পদার্থবিদ্যার Standard Model. এবং এই Particle Physics আমাদের জানায় যে আমাদের এই পরিচিত পৃথিবী কী উপাদান দিয়ে তৈরী (Building Block) এবং এর ভিতর কী কী বল কাজ করে? (the forces through which these blocks interact). আর, মোট ১২টি মূল উপাদান (twelve basic building blocks) রয়েছ। এর মধ্যে ৬টি হলো Quark (up, down, charm, strange, bottom and top)। বাকী ৬টি Lepton (electron, muon, tauon and 3 neutrinos)।



Big Bang থেকে সৃষ্ট এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের (Universe) ভিতর ক্রিয়াশীল মোট ৪টি মৌলিক বল (fundamental force) বিদ্যমান। ওগুলো হলোঃ

- মাধ্যাকর্ষণ বল (gravity)

- তড়িৎচৌম্বকীয় বল (Electromagnetism)

- সবল পারমানবিক বল (Strong Nuclear Force) এবং

- দূর্বল পারমানবিক বল (Weak Nuclear Force)

ঐ বলগুলো যে মৌলিক কণা দ্বারা প্রযুক্ত হয় তার নাম Photons বা আলোক কণা। উদাহরণ স্বরূপঃ কোন চুম্বক যখন একটি লোহার পেরেককে আকর্ষণ করে তখন চুম্বক-লোহার পেরেকের মধ্যে Photons বা আলোক কণা বিনিময় হয়। অন্যদিকে মাধ্যাকর্ষণ বল (gravity) প্রযুক্ত হয় graviton নামক মৌলিক কণা দ্বারা। আর সবল পারমানবিক বল (Strong Nuclear Force) প্রযুক্ত হয় ৮টি মৌলিক কণা দ্বারা যেগুলো gluons নামে পরিচিত। এবং সবশেষে দূর্বল পারমানবিক বল (Weak Nuclear Force) প্রযুক্ত হয় ৩টি মৌলিক কণা দ্বারা যেগুলো (W+), (W-) এবং (Z) নামে পরিচিত।

একটা সময় পর্যন্ত উল্লিখিত কণা ও বল সমূহের আচরণ, ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া মোটামুটি নির্ভুলভাবে বর্ণনা করা সম্ভব হয়েছে পদার্থবিদ্যার Standard Model of Particle Physics-এ। কিন্তু একটা ব্যতিক্রম বাদে। এবং তা’ হলো gravity. কিছু কৌশলগত কারণে অতি পরিচিত মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে আনবিক পর্যায়ে ব্যাখ্যা করা দুরুহ হয়ে দেখা দেয়। এবং দীর্ঘ অনেক বছর পর্যন্ত তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় Quantum Theory of Gravity-কে সূত্রাবদ্ধ করা সম্ভব হয়ে উঠে নাই।



String Theory’র প্রস্তাবিত প্রাথমিক কণা (Elementary Particle) “String” এর ছবি।

কিন্তু গত এক দুই দশকে String Theory সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। আশা জাগায় আনবিক পর্যায়ে gravity-কে ব্যাখ্যা করার। (microscopic theory of gravity). শুধু তাই নয়, এটি মহাবিশ্বের একেবারে প্রাথমিক স্তরের অবস্থা (fundamental structure of our universe) সম্পর্কে বর্ণনা করার অখন্ড, সমন্বিত ও সামগ্রিক চিত্র প্রকাশে সক্ষমতা দেখায়। তাই উচ্ছ্বসিত হয়ে এটিকে কেউ কেউ Theory of Everything আখ্যা দেয়।

String Theory’র মোদ্দা কথা হলো –

কণা পদার্থবিদ্যার মৌলিক কণাগুলো যেখানে “Point” এর মত সেখানে String Theory’র ক্ষেত্রে তা’ বড়শির সুতো (hook like string) মত। একটি কণা যেখানে শুধুই নড়াচড়া করতে পারে সেখানে String Theory’র ষ্টীং-গুলো মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারে। দোল খেতে পারে। এদিক সেদিক নড়াচড়া করতে পারে। (oscillate). এবং বড়শির মত দেখতে সূতোগুলো যখন এদিক সেদিক নড়াচড়া করে তখন এটিকে একটু দূর থেকে সূতোর মত দেখায় না, একটি ইলেকট্রন হিসেবেই দেখায়। আবার একটু ভিন্ন অবস্থান থেকে তাকালে এটিকে photons বা quarks মনে হয়। তাই এই String Theory শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়ে গেলে তবে বলা যায় যে আমাদের এই বিশ্বব্রহ্মান্ড বা সমগ্র পৃথিবী String দিয়ে তৈরী! এই থিয়োরী এখনো under development. বিকশিত হচ্ছে। টুকরো টুকরো অল্প অল্প করে তথ্য জানা যাচ্ছে এ সম্পর্কে। আস্তে আস্তে পরিষ্কার হচ্ছে।

এখন এই String Theory আমাদের স্রষ্টার অস্তিত্বের সন্ধান দিক বা না-দিক - সেটা পরের কথা, কিন্তু এই থিয়োরি একটা অবাক করা পিলে চমকানো তথ্য আমাদের উপহার দেয়। গাণিতিকভাবে। গাণিতিক অনুসিদ্ধান্তে। এবং তা’ হলো Dimension! বা মাত্রা। বস্তুত এর আগে পর্যন্ত বিজ্ঞান জগতে ৪ মাত্রার অস্তিত্ব প্রমাণিত বা জানা ছিলো। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এবং সময়। আমরা এই চার মাত্রার জগতে বসবাস করি। কিন্তু এই string theory আরো কয়েকটি মাত্রার সন্ধান এনে দেয় যা’ এর আগে অনাবিষ্কৃত ছিলো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কোথায় এই অতিরিক্ত মাত্রা বা Dimension-গুলো??? কোনো কোনো বিজ্ঞানী মত প্রকাশ করে যে এই ডাইমেনশানগুলো এতই ক্ষুদ্র যে তা’ আমরা trace করতে অক্ষম। আবার কেউ কেউ বলে এগুলো আমাদের মহাবিশ্বের একেবারে বাইরে অবস্থান করছে। যাকে বলা যায় Wag Universe. অনেকটা নিচের ছবির মতো।



দেখতে পর্দা বা membrane এর মতো। পাশাপাশি অনেকগুলো মহাবিশ্ব বা Universe, ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় যাদের অবস্থান। তাত্ত্বিকভাবে এই higher dimensional wag-গুলো আমাদের চাইতে কয়েক মিলিমিটার দূরত্বে অবস্থান করছে। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব যে আমাদের অগোচরে এবং এত নিকটে ভিন্ন মাত্রার বা অস্তিত্ব থাকতে পারে! আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ভিন্ন মাত্রার আবিষ্কার এবং তার অন্তঃস্থিত মহাবিশ্বের ক্রিয়েটর বা গডের অবস্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। অর্থাৎ আমরা গডকে যে দেখিনা তার কারণ এই মাত্রাগত ভিন্নতা। পুরো ব্যাপারটা কয়েকটি ছবির মাধ্যমে বোঝা যাকঃ







Astronomer Laura Danly (ছবির মহিলাটি) Alex Fellopinco’র (পুরুষটি) (টিভি স্ক্রীণে) সাথে যোগাযোগ করতে চাচ্ছে। তার নাম ধরে ডাকছে। অর্থাৎ Laura (মহিলাটি) Alex এর নাম ধরে ডাকছে। কিন্তু Alex শুনছে না। তাই সাড়া দিচ্ছে না। এর কারণ Laura অবস্থান করছে 3-dimension এ। কারণ তার দৈর্ঘ্য, প্রশ্ন এবং উচ্চতা সবই আছে। অন্যদিকে Alex অবস্থান করছে 2-dimension এ। কারণ টিভি স্ক্রীণে তার কেবল দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে। Laura মত একটি মাত্রা “উচ্চাতা” নেই। Alex এর ডাইমেনশান ১ (এক) কম। তাই তাদের পরষ্পরের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে না। Alex Laura-কে দেখতে পারছে না। কারণ সে ২-মাত্রায় বন্দী। আর Laura Alex-কে দেখছে। এবং তার কথা শুনতেও পারছে। সে আছে উপরের মাত্রায়। আর Alex আছে নিচের মাত্রায়। সে Laura-তে দেখতে পারছে না। শুনতেও পারছে না।





ধরা যাক, কোন universe, যে কোন কল্পিত universe, উপরের টিভি স্ক্রীণের মত। এখানে একটু বস্তু দেখা যাচ্ছে। বস্তুটি উপরে নিচে, ডানে বায়ে Move করতে পারবে। কিন্তু পরবর্তী চিত্রের মত সামনে পিছনে যেতে পারবে না। এই সামনে পিছনে যাওয়ার “Dimension”-টি গাণিতিকভাবে প্রকাশ করা যায়। বর্ণনা করা যায়। কিন্তু Physically ঐ Dimension-টিতে যাওয়া যায় না। তাই Alex যেমন Laura’র ডাইমেনশানে যেতে পারছে না বা দেখতে পারছে না বা শুনতে পারছে না তদ্রুপ আমরাও আমাদের খুবই কাছাকাছি লুক্কায়িত (Hidden) মাত্রায় বা Dimension-এ যেতে পারছি না। এখানে বিজ্ঞানীরা অনুসিদ্ধান্তে আসছে যে – যদি সৃষ্টিকর্তা বা অন্য কোন সৃষ্টি (Creation) যেমনঃ ধর্মে কথিত জ্বিন, ফেরেশতা, শয়তান বা আত্মা (Soul) ইত্যাদি সৃষ্টিসমূহও এই রকম উচ্চ মাত্রায় (Higher Dimension), ছবির মহিলা Laura’র মত, অবস্থান করছে, আমাদের দেখছে, শুনছে, আমাদেরই অগোচরে অজান্তে। এইভাবে দেখা যায় যে ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ও কথিত বিভিন্ন সৃষ্টি যেমন শয়তান, ফেরেশতা, জ্বীন ও আত্মা ইত্যাদি যে সব আমরা দেখি না এবং যে সব জিনিষ আমাদের পর্যবেক্ষণের আওতায় নেই বলেই তথাকথিত নাস্তিকরা বিশ্বাস করে না সেগুলোকে অতি আধুনিক বিজ্ঞান কিন্তু অস্বীকার করে না। উড়িয়ে দেয় না। নাস্তিকরা বিজ্ঞান পূজারী বলে গর্ব করে। বিজ্ঞানের লেভেল লাগায়। অথচ তারাই সবচাইতে বেশী বিজ্ঞান বিরোধী।



এই নোট পোষ্টটির একটি অংশ তৈরীতে নিচের ভিডিওটির সাহায্য নেয়া হয়েছে। বাকী অংশ বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে অনুবাদ করা।

https://www.youtube.com/watch?v=1Zdhd-rrl-Y

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে

শর্ষীনা, ফুরফুরা, জৌনপুরী, ফুলতলী, সোনাকান্দা সহ সকল বালাকোটি পীরগনের শেরেকী আকীদা