হাদীস অস্বিকার কারী আহলে কুরআনগণ নি:সন্দেহে অমুসলিম




https://www.facebook.com/groups/286879648180584/

http://www.bd-today.net/blog/blogdetail/detail/4803/TrueIslam/30113#.VMwCAWiUdIw

http://ahlehaqmedia.com/2946

http://www.amarblog.com/boiragi/posts/151840

http://www.amarblog.com/boiragi/posts/150687

http://www.amarblog.com/boiragi/posts/150853

http://www.amarblog.com/boiragi/posts/151785

http://www.somewhereinblog.net/blog/tarifblog/28779728

http://www.somewhereinblog.net/blog/tarifblog/28780491

http://www.somewhereinblog.net/blog/tarifblog/28780573

http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/4370/theslave/47211#.U5vkqnaMfIU

http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/10713/innocentboy/64193#.VTJ4Yrafud8

http://www.shodalap.org/muhammad-hasan/24703/

http://www.shodalap.org/muhammad-hasan/24730/

http://www.shodalap.org/bngsadat/24532/

http://www.shodalap.org/m_ahmed/14621

http://www.shodalap.org/m_ahmed/14952/

http://www.shodalap.org/m_ahmed/9821

http://www.shodalap.org/m_ahmed/14336

http://www.shodalap.org/zubayer-ahmed/14429

http://www.shodalap.org/mohi/14432

http://www.shodalap.org/mohi/14559

http://www.shodalap.org/mohi/14862

http://www.shodalap.org/munim/10626

http://www.shodalap.org/munim/10665

http://www.shodalap.org/munim/11003

http://www.shodalap.org/category/quran-only

http://www.waytojannah.com/history-of-hadeeth-collection/

Is Hadith Wahi of Allah_What does Quran say

যারা বলেন হাদীস রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের বহু বছর পর লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তাদের একথা সঠিক নয়।

মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করে স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবদ্দশায় যে শিক্ষায়তন গড়ে উঠেছিল সেখানে একদল বিশিষ্ট সাহাবী (আহলুস সুফফা) সার্বক্ষণিকভাবে কুরআন-হাদীস শিক্ষায় রত থাকতেন। হাদীস সংরক্ষণের জন্য যথাসময়ে যথেষ্ট পরিমাণে লেখনী শক্তিরও সাহায্য নেয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কুরআন মজীদ ব্যাতিত সাধারণত অন্য কিছু লিখে রাখা হত না। পরবর্তীকালে হাদীসের বিরাট সম্পদ লিপিবদ্ধ হতে থাকে। ‘হাদীস নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবদ্দশায় লিপিবিদ্ধ হয়নি, বরং তাঁর ইন্তেকালের শতাব্দী কাল পর লিপিবদ্ধ হয়েছে’ বলে যে ভুল ধারনা প্রচলিত আছে তাঁর আদৌ কোন ভিত্তি নেই। অবশ্য একথা ঠিক যে, কুরআনের সঙ্গে হাদীস মিশ্রিত হয়ে জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে- কেবল এই আশংকায় ইসলামী দাওয়াতের প্রাথমিক পর্যায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেনঃ “আমরা কোন কথাই লিখ না। কুরআন ব্যাতিত আমার নিকট থেকে কেউ অন্য কিছু লিখে থাকলে তা যেন মুছে ফেলে।” (মুসলিম) কিন্তু যেখানে এরূপ বিভ্রান্তির আশংকা ছিল না মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে সকল ক্ষেত্রে হাদীস লিপিবদ্ধ করে রাখতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেন।

আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, “হে আল্লাহ্‌র রাসূল ! আমি হাদীস বর্ণনা করতে চাই। তাই যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমি স্মরণশক্তির ব্যাবহারের সাথে সাথে লেখনীরও সাহায্য গ্রহণ করতে ইচ্ছুক।” তিনি বললেনঃ “আমার হাদীস কণ্ঠস্থ করার সাথে সাথে লিখেও রাখতে পার”(দারামী)। আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) আরও বলেন, “আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট যা কিছু শুনতাম, মনে রাখার জন্য তা লিখে নিতাম। কতিপয় সাহাবী আমাকে তা লিখে রাখতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন মানুষ, কখনও স্বাভাবিক অবস্থায় আবার কখনও রাগান্বিত অবস্থায় কথা বলেন।” এ কথা বলার পর আমি হাদীস লেখা থেকে বিরত থাকলাম, অতঃপর তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জানালাম। তিনি নিজ হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে স্বীয় মুখের দিকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ “ তুমি লিখে রাখ। যেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রান, এই মুখ দিয়ে সত্য ছাড়া অন্য কিছু বের হয় না” (আবূ দাঊদ, মুসনাদ আহমেদ, দারমী, হাকিম, বায়হাকী)। তাঁর সংকলনের নাম ছিল ‘সাহীফায়ে সাদিকা’। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “সাদিকা হাদীসের একটি সংকলন – যা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট শুনেছি” –(উলূমুল হাদীস, পৃ ৪৫)। এই সংকলনের এক হাজার হাদিস লিপিবদ্ধ ছিল।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এক আনসারী সাহাবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আরয করেলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসুল ! আপনি যা কিছু বলেন, আমার কাছে খুবই ভালো লাগে, কিন্তু মনে রাখতে পারি না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ “ তুমি ডান হাতের সাহায্য নাও।” তারপর তিনি হাত এর ইশারায় লিখে রাখার প্রতি ইঙ্গিত করলেন- (তিরমিযী)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাষণ দিলেন। আবূ শাহ ইয়ামানী (রাঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল ! এ ভাষণ আমাকে লিখে দিন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাষণটি তাঁকে লিখে দেওয়ার নির্দেশ দেন -(বুখারী, তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ)। হাসান ইবন মুনাব্বিহ (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাকে বিপুল সংখ্যক কিতাব (পাণ্ডুলিপি) দেখালেন। তাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস লিপিবদ্ধ ছিল ( ফাতহুল বারী)। আবূ হুরায়রা (রাঃ)-র সংকলনের একটি কপি ( ইবন তাইমিয়ার হস্তলিখিত) দামেশক এবং বার্লিনের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে।

আনাস ইবন মালিক (রাঃ) তাঁর (স্বহস্ত লিখিত) সংকলন বের করে ছাত্রদের দেখিয়ে বলেন, আমি এসব হাদীস নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট শুনে লিখে নিয়েছি। পরে তাঁকে তা পড়ে শুনিয়েছি (মুসতাদরাক হাকিম,৩য় খ, পৃ ৫৭৩) রাফি’ ইবন খাদীজা (রাঃ)-কে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস লিখে রাখার অনুমুতি দেন। তিনি প্রচুর হাদীস লিখে রাখেন (মুসনাদে আহমেদ)।

আলী ইবন আবূ তালিব (রাঃ) ও হাদীস লিখে রাখতেন। চামড়ার থলের মধ্যে রক্ষিত সঙ্কলনটি তাঁর সঙ্গেই থাকত। তিনি বলতেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট থেকে এ সহীফা ও কুরআন মজীদ ব্যাতিত আর কিছু লিখিনি। সংকলনটি স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লিখিয়ে ছিলেন। এতে যাকাত, রক্তপাত (দিয়াত), বন্দীমুক্তি, মদীনার হেরেম এবং আরও অনেক বিষয় সম্পর্কিত বিধান উল্লেখ ছিল (বুখারী, ফাতহুল বারী)। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রাঃ)-এর পুত্র আবদুর রহমান একটি পাণ্ডুলিপি নিয়ে এসে শপথ করে বললেন, এটা ইবন মাসঊদ (রাঃ)-এর সহস্তে লিখিত (জামি’বায়নিল ইলম, ১খ, পৃ ১৭)।

স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরত করে মদীনায় পৌঁছে বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে যে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন (যা মদীনার সনদ নামে খ্যাত), হুদায়বিয়ার প্রান্তরে মক্কার মুশারিকদের সাথে সন্ধি করেন, বিভিন্ন সুময়ে যে ফরমান জারি করেন, বিভিন্ন গোত্র-প্রধান ও রাজন্যবর্গের কাছে ইসলামের যে দাওয়াতনামা প্রেরন করেন এবং বিভিন্ন ব্যাক্তি ও গোত্রকে যেসব জমি, খনি ও কুপ দান করেন তা সবই লিপিবদ্ধ আকারে ছিল এবং তা সবই হাদীসরূপে গণ্য।

এসব ঘটনা থেকে পরিষ্কারভাবে প্রমানিত হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় থেকেই হাদীস লেখার কাজ শুরু হয়। তাঁর দরবারে বহু সংখ্যক লেখক সাহাবী সব সময় উপস্থিত থাকতেন এবং তাঁর মুখে যে কথাই শুনতেন, তা লিখে নিতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমলে অনেক সাহাবীর নিকট স্বহস্তে লিখিত সংকলন বর্তমান ছিল। উদাহরণস্বরূপ আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ)-এর সাহীফায়ে সাদিকা, আবূ হুরায়রা (রাঃ)-র সংকলিত সমাধিক খ্যাত।

সাহাবীগণ যেভাবেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট থেকে হাদীসের জ্ঞান লাভ করেন। তেমনিভাবে হাজার হাজার তাবিঈ সাহাবীগণের কাছে হাদীসের শিক্ষা লাভ করেন। একমাত্র আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর নিকট আটশত তাবিঈ হাদীস শিক্ষা করেন। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব, উরওয়া ইবনু জুবাইর, ইমাম যুহরী, হাসান বসরী, ইবন সিরীন, নাফি, ইমাম যয়নুল আবেদীন, মুজাহিদ, কাযী শুরাইহ, মাসরূহ, মাকহুল, ইকরিমা, আতা, কাতাদা, ইমাম শা’বী, আলকামা, ইবরাহীম নাখঈ (রহঃ) প্রমুখ প্রবীণ তাবিঈর প্রায় সকলে ১০ম হিজরীর পর জন্মগ্রহন করেন এবং ১৪৮ হিজরীর মধ্যে ইন্তিকাল করেন। অন্যদিকে সাহাবীগণ ১১০ হিজরীর মধ্যে ইন্তিকাল করেন। এদিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, তাবিঈগণ সাহাবীগণের দীর্ঘ সহচর্য লাভ করেন। একজন তাবিঈ বহু সংখ্যক সাহাবীর সঙ্গে সাক্ষাত করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনের ঘটনাবলি, তাঁর বানী, কাজ ও সিদ্ধান্তসমূহ সংগ্রহ করেন এবং তা তাঁদের পরবর্তীগণ অর্থাৎ তাবে-তাবিঈনের নিকট পৌঁছে দেন।

হিজরী দ্বিতীয় শতকের শুরু থেকে কনিষ্ঠ তাবিঈ ও তাবিঈ-তাবিঈনের এক বিরাট দল সাহাবা ও প্রবীণ তাবিঈনের বর্ণিত ও লিখিত হাদীসগুলো ব্যাপকভাবে একত্র করতে থাকেন। তাঁরা গোটা মুসলিম জাহানে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র উম্মতের মধ্যে হাদীসর জ্ঞান পরিব্যাপ্ত করে দেন। এ সময় ইসলাম বিশ্বের খলীফা উমর ইবন আবদুল্লাহ আযীয (রহঃ) দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকদের নিকট হাদীস সংগ্রহ করার জন্য রাজকীয় ফরমান প্রেরন করেন। ফলে সরকারী উদ্যোগ সংগৃহীত হাদীসের বিভিন্ন সংকলন রাজধানী দামেশক পৌঁছতে থাকে। খলীফা সেগুলর একাধিক পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দেশের সর্বত্র পাঠিয়ে দেন। এ কালের ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর নেতৃত্বে কূফায় এবং ইমাম মালিক (রহঃ) তাঁর মুত্তয়াত্তা গ্রন্থ এবং ইমাম আবূ হানীফার দুই সহচর ইমাম মুহাম্মদ ও আবূ ইউসুফ (রহঃ) ইমাম হানীফার রিওয়ায়াতগুলো একত্র করে ‘কিতাবুল আসার’ সংকলন করেন। এ যুগের আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হাদীস সংকলন হচ্ছেঃ জামি’ সুফইয়ান সাওরী, জামি’ইবনুল মুবারক, জামি’ইমাম আওযাঈ, জামি’ ইবন জুরাইজ ইত্যাদি।

হিজরী দ্বিতীয় শতকের শেষার্ধ থেকে চতুর্থ শতকের শেষ পর্যন্ত হাদীসের চর্চা আরও ব্যাপকতর হয়। এ সময়কালে হাদীসের প্রসিদ্ধ ইমাম-বুখারী, মুসলিম, আবূ ঈসা তিরমিযী, আবূ দাঊদ সিজিস্তানী, নাসাঈ ও ইবন মাজা (রহঃ)-এর আবির্ভাব হয় এবং তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও দীর্ঘ অধ্যবসায়ের ফলশ্রুতিতে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ছয়খানি হাদীস গ্রন্থ (সিহাহ সিত্তাহ) সংকলিত হয়। এ যুগেই ইমাম শাফিঈ (রহঃ) তাঁর কিতাবুল উম্ম ও ইমাম আহমেদ (রহঃ) তাঁর আল-মুসনাদ গ্রন্থ সংকলন করেন। হিজরীর চতুর্থ শতকে মুসতাদরাক হাকিম, সুনান দারি কুনতী, সহীহ ইবন হিব্বান, সহীহ ইবন খুযায়মা, তাবারানীর আল-মু’জাম, মুসান্নাফুত-তাহাবী এবং আরও কতিপয় হাদীস গ্রন্থ সংকলিত হয়। ইমাম বায়হাকীর সুনানু কুবরা ৫ম হিজরী শতকে সংকলিত হয়।

চতুর্থ শতকের পর থেকে এ পর্যন্ত সংকলিত হাদীসের মৌলিক গ্রন্থগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের সংকলন ও হাদীসের ভাষ্য গ্রন্থ এবং এই শাস্ত্রের সাখা-প্রশাখার উপর ব্যাপক গবেষণা ও বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হয়। বর্তমান কাল পর্যন্ত এ কাজ অব্যাহত রয়েছে। এসব সংকলের মধ্যে তাজরীদুস সিহাহ ওয়াস সুনান, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, আল-মুহাল্লা, মাসাবীহুস সুন্নাহ, নাইলুল আওতার প্রভৃতি সমাধিক প্রসিদ্ধ।

আহ্লুল কুরআন (হাদিস অস্বীকারকারী) সম্পর্কে দালিলিক পর্যালোচনা..

রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর উপর দু’টি

ওয়াহী অবতীর্ণ হয়েছিল

মহান আল্লাহ্ বলেন,

“আমি তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি কিতাব (কুরআন) এবং হিকমাহ্ (হাদিস)।” -সূরা নিসা, ৪/১১৩

“তোমাদের কাছে অবতীর্ণ করা হয়েছে কিতাব (কুরআন) এবং হিকমাহ্ (হাদিস)।” -সূরা বাক্বারাহ্, ২/২৩১

এই আয়াত দু’টি থেকে বুঝা গেল যে, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর উপর শুধুমাত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়নি, বরং আরো কিছু শারীয়াহ্’র হুকুমও অবতীর্ণ হয়েছিল। যা'কে আমরা হাদিস বলে জানি। মহান আল্লাহ্ বলেন,

“তুমি যখন মু’মিনদের বলেছিলে, তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের সাহায্যার্থে তোমাদের রব আকাশ থেকে তিন হাজার মালাইকাহ্ (ফেরেশতা) পাঠাবেন ?” -সূরা আলি-ইমরান, ৩/১২৪

এই আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, আয়াতটি নাযিল হওয়ার পূর্বেই রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) জানতেন যে, আল্লাহ্ মু’মিনদের জন্য তিন হাজার মালাইকাহ্ (ফেরেশতা) পাঠাবেন।

এখানে একটি বিষয় লক্ষ্য করুন, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর কাছে যদি শুধু কুরআনই ওয়াহী করা হতো তাহলে তিনি (সাঃ) এই আয়াতটি নাযিল হওয়ার পূর্বে কিভাবে জানলেন যে, আল্লাহ্ মু’মিনদের জন্য তিন হাজার মালাইকাহ্ পাঠাবেন !

এই আয়াতটি দিয়ে কি প্রমাণ হয় না যে, আল্লাহ্ কুরআন ছাড়াও আরো কিছু ওয়াহী করেছেন ? অবশ্যই প্রমাণ হয়েছে। যদি কুরআন ছাড়া আরো কিছু ওয়াহী না হত তাহলে মুহাম্মাদ (সাঃ) কখনই কুরআনের আয়াতটি আসার পূর্বে তিন হাজার মালাইকাহ্ আগমনের বার্তা জানতেন না। একারণেই

মহান আল্লাহ্ বলেছেন,

“আমি তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি কিতাব (কুরআন) এবং হিকমাহ্ (হাদিস)।” -সূরা নিসা, ৪/১১৩

মহান আল্লাহ্ আরো বলেন,

“তোমরা যে কিছু-কিছু খেঁজুর গাছ কেটে দিয়েছ এবং যেগুলো গোঁড়াসহ দাঁড়িয়ে থাকতে দিয়েছ, তা'তো আল্লাহ্’র আদেশেই...। -সূরা হাশ্র, ৫৯/৫

এই আয়াতে আল্লাহ্ বলছেন যে, তোমরা খেঁজুর গাছ কেটে দিয়েছ এবং কিছু গাছকে দাঁড়িয়ে থাকতে দিয়েছ তা'তো আল্লাহ্’র নির্দেশেই। এখন আমাদের জানা প্রয়োজন যে, কিছু খেঁজুর গাছ কাটার এবং কিছু খেঁজুর গাছ না কাটার যে হুকুমটি, সেটি কোন আয়াতে বা কোথায় রয়েছে ? কারণ, এই আয়াতটি বলছে যে, এই আয়াত আসার আগেই খেঁজুর গাছ কাটার নির্দেশ ছিল। পুরো কুরআন খুঁজে এমন কোনো আয়াত পাওয়া যাবে না যেখানে আল্লাহ্ কিছু খেঁজুর গাছ কাটতে এবং কিছু খেঁজুর গাছ রাখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাহলে এই নির্দেশটি কোথায় ছিল ? নিশ্চয় কুরআনের বাহিরে যে ওয়াহী হয়েছে সেখানেই রয়েছে।এজন্যই মহান আল্লাহ্ বলেছেন,

“আমি তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি কিতাব (কুরআন) এবং হিকমাহ্ (হাদিস)।” -সূরা নিসা, ৪/১১৩

শিক্ষা ঃ

১। রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর উপর দুটি ওয়াহী অবতীর্ণ হয়েছিল।

২। রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর উপর যে দু’টি ওয়াহী অবতীর্ণ হয়েছিল তাকে কুরআনের ভাষায় কিতাব ও হিকমাহ্ বলা হয়।

৩। হিকমাহকে মূলত আমরা হাদিস বা সুন্নাহ্ নামে অভিহিত করে থাকি।

রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কুরআনের

বাহিরেও হুকুম দিতেন

মহান আল্লাহ্ বলেন,

“আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূল যদি কোন বিষয়ে আদেশ দেন তাহলে মু’মিন নারী-পুরুষের এ অধিকার নেই যে, আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলের আদেশ বাদ দিয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার। যে কেউ আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলকে অমান্য করবে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।" -সূরা আহ্যাব, ৩৩/৩৬

এই আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, আদেশ শুধু আল্লাহ্’র কাছ থেকেই আসে না, বরং রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর কাছ থেকেও আসে। আর রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর আদেশগুলো কুরআনে পাওয়া যাবে না, তাঁর (সাঃ) হাদিসে পাওয়া যাবে। মহান আল্লাহ্ আরো বলেন,

“তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো যারা আল্লাহ্’র প্রতি ঈমান আনে না এবং আখিরাতের প্রতিও ঈমান আনে না এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম করে না...” -সূরা তাওবাহ্, ৯/২৯

এই আয়াতটি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে যে, হারাম শুধু আল্লাহ্’ই করেন না বরং রসূল (সাঃ) ও করেন। কারণ, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর উপর শুধু কুরআন-ই অবতীর্ণ হয়নি বরং আরো কিছু শারীয়াহ্’র জ্ঞানও অবতীর্ণ হয়েছিল। ঐ সকল জ্ঞানকে আমরা হাদিস বলেই জানি।

রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) শুধু কুরআন-ই শিক্ষা দিতেন না

বরং হাদিসও শিক্ষা দিতেন

মহান আল্লাহ্ বলেন,

“অবশ্যই আল্লাহ্ মু’মিনদের প্রতি দয়া করে তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে একজন (রসূল) পাঠিয়েছেন। তিনি তাদেরকে (আল্লাহ্’র) আয়াত পাঠ করে শোনান, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব (কুরআন) ও হিকামাহ্ (হাদিস) শিক্ষা দেন।” -সূরা আলি-ইমরান, ৩/১৬৪

“যেমন আমি পাঠিয়েছি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে একজন রসূল, যিনি তোমাদেরকে আমার আয়াতগুলো পাঠ করে শোনায়, তোমাদের পবিত্র করে এবং তোমাদেরকে কিতাব (কুরআন) এবং হিকমাহ্ (হাদিস) শিক্ষা দেন...” -সূরা বাক্বারাহ্, ২/১৫১

এই দু’টি আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) শুধু কুরআন-ই শিক্ষা দিতেন না। বরং হাদিসও শিক্ষা দিতেন। কারণ, তাঁর কাছে কুরআন ও হাদিস উভয়ই অবতীর্ণ হয়েছিল।

কুরআন তার বাহিরে থেকেও শারীয়াহ্’র শিক্ষা অর্জন করতে বলে

মহান আল্লাহ্ বলেন,

“যাঁরা প্রথম শ্রেণির মুহাজির ও আনসার এবং যাঁরা তাদেরকে (মুহাজির ও আনসারদেরকে) খাঁটিভাবে অনুসরণ করবে, তাদের প্রতি আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁরা আল্লাহ্’র প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাঁদেরকে এমন জান্নাত দিবেন যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত। সেখানে তাঁরা চিরকাল থাকবে। এটাই মহা-সাফল্য।” -সূরা তাওবাহ্, ৯/১০০

এই আয়াত থেকে বুঝা যায়, যাঁরা প্রথম শ্রেণির মুহাজির ও আনসারদেরকে মেনে চলবে অর্থাৎ যাঁরা প্রথম মাক্কাহ্ থেকে মাদীনায় হিজরত করেছিল এবং তাদেরকে প্রথম মাদীনা থেকে যারা সাহায্য করেছিল। তাদেরকে যাঁরা খাঁটিভাবে মেনে চলবে, তাঁদের প্রতি আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হবেন এবং তাঁদের চিরস্থায়ী জান্নাত দিবেন। এখন যদি প্রথম মুহাজির ও আনসারদের খাঁটিভাবে অনুসরণ করতে চাই তাহলে তাঁদের ইতিহাস আমাদের জানতে হবে। আর তাদের ইতিহাস যেহেতু কুরআনে পাওয়া যাবে না, তাই আমাদেরকে কুরআনের বাহিরে থেকে সহীহ্ সনদে যেখানে তাঁদের ইতিহাস রয়েছে সেই অনুযায়ী তাদের পথ অনুসরণ করতে হবে।

অতএব, এই আয়াত থেকে প্রমাণীত হয় যে, আল্লাহ্ শুধু কুরআন থেকেই শারীয়াহ্’র জ্ঞান নিতে বলেননি। বরং তাঁর বাহিরে থেকেও রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর সাহাবীগণদের শিক্ষাও মানতে বলেছেন, যা একমাত্র হাদিসেই পাওয়া সম্ভব।

মহান আল্লাহ্ বলেন,

“অবশ্যই তোমাদের জন্য রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর মাঝেই উত্তম আদর্শ রয়েছে।” -সূরা আহ্যাব, ৩৩/২১

এই আয়াতটি বলছে যে, তোমাদের জন্য রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর মাঝেই উত্তম আদর্শ রয়েছে অর্থাৎ রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কিভাবে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেছেন তা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। কিন্তু রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর পুরো জীবন কিভাবে অতিবাহিত করেছেন তার ইতিহাস কুরআনে নেই। বরং তাঁর (সাঃ) পুরো জীবন কিভাবে চলেছেন তার ইতিহাস হাদিসে রয়েছে। তাই আমাদেরকে হাদিস থেকে তাঁর (সাঃ) ইতিহাস জেনে বাস্তবে আ’মাল করতে হবে। তবেই আমরা আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি হাসিল করতে পারবো। অতএব, বুঝা গেল যে, এই আয়াতটি আমাদেরকে ইঙ্গিতে কুরআনের বাহিরে থেকেও শিক্ষা নিতে বলেছে।

সাহাবীদের ঘরে শুধু কুরআন-ই পাঠ করা হতো না হাদিসও পাঠ করা হতো

মহান আল্লাহ্ বলেন,

“স্মরণ করো, তোমাদের ঘরে যা পঠিত হয় আল্লাহ্’র আয়াত এবং হিকমাহ্ ।”-সূরা আহ্যাব, ৩৩/৩৪

এই আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর সাহাবীগণ শুধু কুরআন-ই পাঠ করতেন না। বরং রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর কাছে কুরআন ছাড়াও হিকমাহ্ নামে যে ওয়াহী রয়েছে তাও পাঠ করতেন। অর্থাৎ বুঝা গেল যে, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর কাছে শুধু কুরআন-ই অবতীর্ণ হয় নি, হাদিসগুলিও অবতীর্ণ হয়েছে।

সংশয়মূলক প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন (০১) ঃ মহান আল্লাহ্ বলেন,

“আমি তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি কিতাব (কুরআন) এবং হিকমাহ্ (হাদিস)।” -সূরা নিসা, ৪/১১৩

এই আয়াতে আল্লাহ্ হিকমাহ্ বলতে হাদিস বুঝান নি। বরং হিকমাহ্ বলতে কুরআনকেই বুঝিয়েছেন। যেমন- মহান আল্লাহ্ বলেন,

“বিজ্ঞানময় (হিকমাহ্) কুরআনের ক্বসম।” -সূরা ইয়াছিন, ৩৬/২

উত্তর ঃ এ ব্যাখ্যাটি সত্যিই হাস্যকর। কারণ, সূরা নিসার, ৪/১১৩নং আয়াতে হিকমাহ্ কথাটি দ্বারা যদি কুরআনকেই বুঝানো হয় তাহলে তার অর্থ হবে-

“আমি তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি কুরআন এবং কুরআন।"-সূরা নিসা, ৪/১১৩

এরকম হাস্যকর তরজমা করা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এই আয়াতে আল্লাহ্ কিতাব এবং হিকমাহ্ বলে দু’টি ভিন্ন বিষয় বলেছেন, একই বিষয় নয়। অতএব, সূরা নিসার, ৪/১১৩নং আয়াতে হিকমাহ্ শব্দটি দ্বারা কুরআনকে বুঝানো হয়নি বরং হাদিসকেই বুঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন (০২) ঃ মহান আল্লাহ্ বলেন,

“আমি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি কিতাব এবং হিকমাহ্।...” -সূরা নিসা, ৪/১১৩

এই আয়াতে আল্লাহ্ কিতাব এবং হিকমাহ্ বলতে আলাদা কোনো বিষয়কে বুঝাননি বরং একই বিষয়কে বুঝিয়েছেন। যদি বলা হয় “এবং”শব্দটি বলে কখনো একই বিষয়কে উল্লেখ করা হয় না, তাহলে তার উত্তরে বলা হবে, আপনাদের কথাটি সম্পূর্ণ ভূল। কারণ, কুরআনের অনেক আয়াতে “এবং”শব্দটি বলে আল্লাহ্ একই বিষয়কে উল্লেখ করেছেন। যেমন- মহান আল্লাহ্ বলেন,

“মালাইকাহ্ (ফেরেশতাগণ) ও রুহ্ (জিবরীল) আল্লাহ্’র দিকে উর্ধ্বগামী হয়...।”-সূরা মা’আরিজ, ৭০/৪

এই আয়াতে আল্লাহ্ প্রথম অংশে বলেছেন মালাইকাহ্গণ ও পরের অংশে “এবং”শব্দটি বলে উল্লেখ করেছেন রুহ্ অর্থাৎ জিবরীল আল্লাহ্’র দিকে উর্ধ্বগামী হয়। “এবং”শব্দটি বলে জিবরীলকে আলাদা করার কারণে কি আপানারা বলবেন যে, জিবরীল মালাক (ফেরেশতা) নয় ? নিশ্চয় এই ধরণের গোঁড়ামী আপনাদের মাঝে নেই ? অতএব, এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হলো “এবং”শব্দটি বলে পরের অংশে একই বিষয়কে উল্লেখ করা যায়। ঠিক তেমনি সূরা নিসা, ৪/১১৩নং আয়াতে কিতাব এবং হিকমাহ্ আলাদা উল্লেখ করার কারণে দু’টি আলাদা বিষয় দাবী করা ভূল। কারণ, আল্লাহ্ “এবং”শব্দটি বলে একই বিষয়কে আলাদা করে উল্লেখ করেছেন। তাহলে বুঝা গেল যে, কিতাব এবং হিকমাহ্ একই বিষয়, তাহচ্ছে কুরআন।

উত্তর ঃ এই ব্যাখ্যাটি সঠিক নয়। কারণ আল্লাহ কখনই “এবং”শব্দটি বলে সম্পূর্ণ একই জিনিসকে বুঝান না। বরং “এবং”শব্দের পূর্বের অংশের অংশ বিশেষকে “এবং”শব্দের পরে উল্লেখ করেন গুরুত্বের কারণে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন-

“আমি তোমাকে দিয়েছি বার বার পঠিত সাত আয়াত এবং মহান গ্রন্থ কুরআনও দান করেছি।” -সূরা হিজর- ১৫/৮৭

এই আয়াতে আল্লাহ বার বার পাঠিত সাত আয়াত বলতে সূরা ফাতেহাকে বুঝিয়েছেন ও পরের অংশে “এবং”বলে কুরআনকে উল্লেখ করেছেন। এখনকি আপনারা বলবেন যে, সূরা ফাতেহা-ই কুরআন ? নিশ্চয়ই না। বরং সূরা ফাতেহা কুরআনের একটি অংশ। তাহলে বুঝা গেল আল্লাহ “এবং”শব্দটি বলে “এবং”শব্দের পূর্বের অংশের অংশবিশেষ উল্লেখ করে থাকেন, পুরো অংশটাকে বুঝান না।

আপনার বোধগম্যতার জন্য আরও একটু বিস্তারিত বলছি। আপনি যে আয়াতটি উলেখ করেছেন ঐ আয়াতের প্রথম অংশে মালাইকাহ্ (ফেরেশতাগণ) ও পরের অংশে “এবং”শব্দের পরে রূহ্ অর্থাৎ জিবরীলকে বুঝানো হয়েছে। এখনকি আপনারা বলবেন যে, জিবরীল-ই সকল মালাইকাহ্ (ফেরেশতাগণ) ? নিশ্চয়ই না। বরং জিবরীল ফেরেশতাদের মাঝে একজন। গুরুত্বের কারণে আল্লাহ্ জিবরীলকে আলাদা উল্লেখ করেছেন। তাহলে আবারও বুঝা গেল যে, “আল্লাহ“এবং”শব্দ বলে “এবং”শব্দের পূর্বের অংশের অংশবিশেষ উল্লেখ করে থাকেন পুরো অংশটাকেই বুঝান না। এখন ভাই আপনি বলুনতো সূরা নিসার ৪/১১৩নং আয়াতে আল্লাহ কিতাব এবং হিকমাহ্ বলে দু’টি বিষয় উল্লেখ করেছেন, এই দু’টি বিষয়কে একটি বিষয় বুঝাতে হলে আপনাকে এমন আয়াতের দলিল দিতে হবে যেখানে আল্লাহ “এবং”শব্দটির পরে সম্পূর্ণ একই বিষয়কে বুঝিয়েছেন, এমন কোন আয়াত আপনারা কখনই নিয়ে আসতে পারবেন না, ইনশা-আল্লাহ্। যদি বলেন যে, হিকমাহ্ কুরআনের একটি অংশ হাদিস নয়। তাহলে ভাই বলুনতো কুরআনের কোন অংশটি হিকমাহ্ ? এর উত্তর আপনারা কখনই দিতে পারবেন না- ইনশা-আল্লাহ্। কারণ পুরো কুরআনকেই আল্লাহ সূরা ইয়াসিনের ৩৬/২নং আয়াতে হিকমাহ্ বলেছেন। শুধুমাত্র কুরআনের কোন অংশকে হিকমাহ্ বলে উল্লেখ করেননি।

আমরা আপনাদের আগেই বলেছি যে, আল্লাহ “এবং”শব্দটি বলে “এবং”শব্দের পূর্বের অংশের অংশ বিশেষ উল্লেখ করে থাকেন, যা দ্বারা পুরো অংশটাকেই বুঝান না।

অতএব সূরা নিসার ৪/১১৩নং আয়াতটিতে আল্লাহ কিতাব এবং হিকমাহ্ শব্দ দু’টিকে আলাদা উল্লেখ করার কারণে এই দু’টি একই বিষয় নয়, বরং কিতাব বলতে কুরআন এবং হিকমাহ্ বলতে হাদিসকে বুঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন (০৩) ঃ মহান আল্লাহ্ বলেন,

“তিনি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন কিতাব এবং হিকমাহ্ যা দ্বারা তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দান করেন।...” -সূরা বাক্বারাহ্, ২/২৩১

এই আয়াতে আল্লাহ্ কিতাব এবং হিকমাহ্ বলতে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আলাদা দু’টি বিষয় বুঝাননি, বরং একটি বিষয়কেই বুঝিয়েছেন। কারণ আয়াতের পরের অংশে আল্লাহ্ বলেছেন “যা দ্বারা”তিনি তোমাদের উপদেশ দান করেন। এই “যা দ্বারা”শব্দটি হচ্ছে “বিহী”। আর এই “বিহী”শব্দটি একবচন অর্থাৎ একটি বিষয়। যদি কিতাব এবং হিকমাহ্ দু’টি বিষয় হতো তাহলে আল্লাহ্ “বিহী”একবচনের পরিবর্তে “হুমা”দ্বিবচন ব্যবহার করতেন। কিন্তু আল্লাহ্ “হুমা”দ্বিবচন শব্দটি ব্যবহার না করে “হু”একবচন শব্দটি ব্যবহার করে প্রমাণ করে দিয়েছেন কিতাব এবং হিকমাহ্ একই বিষয় অর্থাৎ শুধুই কুরআন-আর কুরআন-ই অবতীর্ণ করেছেন।

উত্তর ঃ এই ব্যাখ্যাটি একেবারেই মনগড়া। যারা আরবী ব্যাকরণে অজ্ঞ তারাই মূলত এভাবে কুরআনের অপব্যাখ্যা করে থাকে। কারণ, আরবীতে সংক্ষেপ করার জন্য দ্বিবচনকে কখনো একবচন দেখানো হয়। যেমন, মহান আল্লাহ্ বলেন,

যারা স্বর্ণ এবং রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহ্’র পথে ব্যয় করেনা...” -সূরা তাওবাহ্, ৯/৩৪

এই আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা স্বর্ণ এবং রূপা দু’টি বস্তুর কথা বলেছেন। কিন্তু আয়াতের পরবর্তী অংশে এই দু’টি বস্তুকে “হা” একবচন ব্যবহার করে বলা হয়েছে তা আল্লাহ্’র পথে ব্যয় করেনা। এখন বুঝের বিষয় হচ্ছে দু’টি বস্তুকে বুঝানোর জন্য দ্বিবচন “হুমা”ব্যবহার না করে “হা”একবচন ব্যবহার হল কেন? মূলতঃ আরবী ব্যাকরণে দ্বিবচনকে কখনো একবচন দেখানো হয়।

অতএব, বুঝা গেল যে, কিতাব এবং হিকমাহ্ শব্দটিকে “হু” একবচন শব্দটি দ্বারা উল্লেখ করার কারণে কখনই এই দু’টি বিষয় এক নয়। বরং সংক্ষেপ করার জন্য তা একবচন দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ কিতাব বলতে কুরআন এবং হিকমাহ্ বলতে রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাহ্ অর্থাৎ হাদিসকেই বুঝায়।

প্রশ্ন (০৪) ঃ মহান আল্লাহ বলেন,

“আমি তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি কিতাব এবং হিকমাহ।”-সূরা নিসা, ৪/১১৩

এই আয়াতে আল্লাহ্ হিকমাহ্ শব্দটি হাদিস অর্থে ব্যবহার করেননি। বরং কৌশল অর্থে ব্যবহার করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ্ বলেন,

“তুমি তোমার রবের দিকে ডাকো হিকমাহ্ (কৌশল) ও উত্তম কথার মাধ্যমে।”-সূরা নাহল, ১৬/১২৫

উত্তর ঃ এই ব্যাখ্যাটি সঠিক নয়। কারণ মহান আল্লাহ্ বলেছেন,

“তোমরা স্মরণ কর তোমাদের ঘরে যা পাঠ করা হয় আল্লাহ্’র আয়াত এবং হিকমাহ্ থেকে।” -সূরা আহযাব, ৩৩/৩৪

এই আয়াতটি বলছে যে, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর স্ত্রীদের ঘরে হিকমাহ্ও পাঠ করা হতো। এখন হিকমাহ্ অর্থ যদি কৌশল হিসেবে বুঝ নেয়া হয় তাহলে বলুনতো কৌশল কি পাঠ করার বিষয়। আপনারা কি কৌশল পাঠ করেন ? নিশ্চয়ই না। অতএব, সূরা নিসার ১১৩নং আয়াতটিতে হিকমাহ্ শব্দটি হাদিস অর্থেই ব্যবহার হয়েছে কৌশল অর্থে নয়।

প্রশ্ন (৫) ঃ মহান আল্লাহ্ বলেন,

“নিশ্চয়ই আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, এবং আমি তা সংরক্ষণ করবো।” -সূরা হিজর, ১৫/৯

এই আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ্ শুধু কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু হাদিস সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ্ নিয়েছেন এমন কথা বলেননি। যেহেতু আল্লাহ্ হাদিস সংরক্ষণের দায়িত্ব নেননি, তাই বুঝে নিতে হবে যে, হাদিস আল্লাহ্’র ওয়াহী নয়। যদি হাদিস ওয়াহী হতো তাহলে আল্লাহ্ অবশ্যই তা সংরক্ষণ করতেন।

উত্তর ঃ এই বুঝটি সঠিক নয়। কারণ, উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ্ শুধুমাত্র কুরআনের কথা বলেননি, আরবীতে কুরআন শব্দটি নেই। বরং আরবীতে রয়েছে যিক্র। আয়াতটি লক্ষ্য করুন-

“নিশ্চয়ই আমি যিক্র অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই তার সংরক্ষক।”-সূরা হিজর, ১৫/৯

এখন দেখতে হবে, যিক্র দ্বারা আল্লাহ্ কি বুঝিয়েছেন। মহান আল্লাহ্ বলেন,

“অবশ্যই আমি কুরআনকে যিকিরের জন্য সহজ করেছি।” -সূরা ক্বামার, ৫৪/২২

এই আয়াতে আল্লাহ্ কুরআনকে যিকির বলে আখ্যায়িত করেছেন। ঠিক তেমনি অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন,

“আর অবশ্যই তোমার (মুহাম্মাদ (সাঃ) যিকিরকে (হাদিসকে) উপরে তুলবো।”-সূরা আল ইনশিরাহ্, ৯৪/৪

অতএব, এই দু’টি আয়াত থেকে বুঝা যায়, কুরআনও যিকির এবং হাদিসও যিকির। তাই প্রশ্নকারীর উল্লেখিত আয়াতটির অনুবাদ হবে-

“নিশ্চয়ই আমি যিক্র (কুরআন এবং হাদিস) অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই তার সংরক্ষক।” -সূরা হিজর, ১৫/৯

তাই বুঝা গেল, আল্লাহ্ কুরআন ও হাদিস উভয়েরই সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। এই কারণে, কোনো মিথ্যা কথা যদি রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর নামে হাদিস বলে চালিয়ে দেয়া হয় তখন-ই তা আমাদের কাছে প্রকাশ হয়ে যায় যে, হাদিসটি যঈফ বা জাল।

প্রশ্ন (০৬) ঃ মহান আল্লাহ্ বলেন,

“আমি তোমার উপর কিতাব (কুরআন) নাযিল করেছি যাতে সকল বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে।” -সূরা আন-নাহল ১৬/৮৯

এই আয়াতে আল্লাহ্ সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করছেন যে, কুরআনে সবকিছুর সমাধান রয়েছে। তাই বুঝে নিতে হবে যে, হাদিসের প্রয়োজন নাই। কারণ, কুরআনে-ই সবকিছুর সমাধান রয়েছে।

উত্তর ঃ এই ব্যাখ্যাটি চরম বিভ্রান্তিকর। কারণ, উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ্ এই দাবী করেননি যে, তিনি কুরআনের ভিতরে লিখে সকল সমস্যার সমাধান দিয়েছেন। যেমন- ফজর, যোহর, আস্র, মাগরিব, ঈশা উল্লেখিত পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের নিয়ম পদ্ধতি কুরআনে পাওয়া যাবে না। এটাও পাওয়া যাবে না যে, কত রাক’আত সলাত আদায় করতে হবে। তাহলে আমাদের জানতে হবে প্রশ্নকারীর উল্লেখিত সূরা আন-নাহল ১৬/৮৯নং বর্ণিত আয়াতে আল্লাহ্ কুরআনের ভিতরে সকল বিষয়ের সমাধান বলতে আল্লাহ্ কি বুঝিয়েছেন ? এ বিষয়টি বুঝতে হলে নিম্নে বর্ণিত আয়াতটি লক্ষ্য করুন-

“আমি তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি কিতাব (কুরআন) ও হিকমাহ্ (হাদিস)।”-সূরা নিসা, ৪/১১৩

এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন যে, আল্লাহ্ কুরআন হাদিস দু’টি বিষয় অবতীর্ণ করেছেন। তাই আমাদেরকে সকল সমস্যার সমাধান শুধু কুরআন থেকে খোঁজলেই হবে না। বরং হাদিসও দেখতে হবে। তাই প্রশ্নকারীর উল্লেখিত সূরা আন-নাহল ১৬/৮৯ নং আয়াতের বুঝ নিতে হবে এভাবে যে, কুরআন আমাদের শুধু কুরআন থেকেই শিক্ষা নিতে বলে নি। বরং হাদিস থেকেও শিক্ষা নিতে বলেছে। যদি কোনো বিষয়ের সমাধানের জন্য হাদিস দেখি তাহলে কুরআনেরই নির্দেশ অনুযায়ী দেখেছি। অর্থাৎ সকল বিষয়ের সমাধান কুরআন সরাসরি দেয়নি, বরং ইঙ্গিতে হাদিসের দিকেও যেতে বলেছে। যেমনিভাবে কত রাক’আত সলাত আদায় করতে হবে তা কুরআন সরাসরি সমাধান দেয়নি। বরং ইঙ্গিতে হাদিসের থেকে সমাধান নিতে বলেছে।

প্রশ্ন (০৭) ঃ মহান আল্লাহ্ বলেন,

“ব্যাভিচারী নারী ও ব্যাভিচারী পুরুষ এদের উভয়কে একশত করে বেত্রাঘাত করো।” -সূরা নূর, ২৪/২

এই আয়াতে আল্লাহ্ “ব্যাভিচারী নারী ও ব্যাভিচারী পুরুষ” বলে আমভাবে (ব্যাপক অর্থে) আখ্যায়িত করেছেন। বিবাহীত ও অবিবাহীত বলে কোনো পার্থক্য করেননি। অথচ হাদিসে পার্থক্য করেছে। হাদিসটি লক্ষ্য করুন-

উবাদা ইবনুস সামিত (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন,

“তোমরা আমার নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো-তোমরা আমার নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মহিলাদের জন্য একটি পন্থা বের করেছেন। যদি কোনো অবিবাহিত পুরুষ কোনো অবিবাহিত নারীর সাথে ব্যাভিচার করে তবে একশত বেত্রাঘাত করো এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন দাও। আর যদি কোনো বিবাহিত পুরুষ কোনো বিবাহিত নারীর সাথে ব্যাভিচার করে তবে প্রথমে তাদেরকে একশত বেত্রাঘাত করবে। এরপর রজম করবে (অর্থাৎ পাথর মেরে হত্যা করবে)। -মুসলিম, অধ্যায় ঃ ৩০, কিতাবুল হুদূদ, অনুচ্ছেদ ঃ ৩, ব্যাভিচারের শাস্তি, হাদিস # ১২/১৬৯০।

এই হাদিসটি কুরআনের আয়াতের বিরোধী হওয়ায় হাদিসটি বাতিল। এতে আরো বুঝা গেল যে, সহীহ্ সনদেও নাবীর নামে মিথ্যা কথা আসে। তাই, এই কথা স্বীকার করা ছাড়া কোনো পথ নেই যে, হাদিস আল্লাহ্’র ওয়াহী নয়। যদি তা আল্লাহ্’র ওয়াহী হতো তাহলে কখনই তা কুরআনের বিপরীত হতো না।

উত্তর ঃ এই ব্যাখ্যাটি চরমভাবে আপত্তিকর। কারণ, প্রশ্নকারীর উল্লেখিত সূরা নূরের ২৪/২ নং আয়াতটিতে ব্যাভিচারী কথাটি আমভাবে ব্যবহার হয়নি। যদি আয়াতটিকে আমভাবে ধরা হয় তাহলে আয়াতটির বুঝ হবে এরকম যে, ব্যাভিচারীনি ও ব্যাভিচারী বিবাহিত হতে পারে আবার অবিবাহিতও হতে পারে। ঠিক তেমনি ব্যাভিচারীনি ও ব্যাভিচারী দাস ও দাসী হতে পারে আবার দাস ও দাসী নাও হতে পারে। অর্থাৎ আয়াতটিকে আমভাবে বুঝলে এভাবেই ব্যাখ্যা আসবে। আর এভাবে ব্যাখ্যা নিলে নিম্নোক্ত আয়াতটি বিরুদ্ধে যায়। মহান আল্লাহ্ বলেন,

“তখন যদি তারা (দাসী) ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের শাস্তি স্বাধীন নারীর অর্ধেক।”-সূরা নিসা, ৪/২৫

এই আয়াতে আল্লাহ্ ব্যাভিচারীনি দাসীর শাস্তি স্বাধীন নারীর অর্ধেক বলে আখ্যায়িত করছেন। এখন প্রশ্নকারীর উল্লেখিত সূরা নূরের ২৪/২নং আয়াতটিকে যদি আমভাবে ধরা হয়, তাহলেতো সূরা নিসার ৪/২৫ নং আয়াতটি বিরোধ হয়। কারণ, সূরা নূরের ২৪/২ নং আয়াতে আল্লাহ্ সকল ব্যাভিচারীনিকে একশত করে বেত্রাঘাত করতে বলেছেন। আর সকল ব্যাভিচারীনিদের মধ্যে দাসীও অন্তর্ভূক্ত। আর সূরা নিসার ৪/২৫নং আয়াতে বলছেন যে, দাসীর শাস্তি স্বাধীন নারীর অর্ধেক। অর্থাৎ পঞ্চাশ বেত্রাঘাত। এই দু’টি আয়াতের বিরোধ মিমাংসা করতে হলে সূরা নুরের ২৪/২নং আয়াতটিকে আমভাবে ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ আয়াতটিতে ব্যাভিচারী ও ব্যাভিচারীনি বলতে “সকল প্রকারের ব্যাভিচারী ও ব্যাভিচারীনি বুঝ নেয়া যাবে না।” অর্থাৎ সূরা নূরের, ২৪/২নং আয়াতে ব্যাভিচারীনি বলতে দাসী উদ্দেশ্য নয়। তাহলেই দু’টি আয়াতের বিরোধ মিমাংসা সম্ভব হবে।

অতএব, সূরা নূরের ২৪/২নং আয়াতটি যেহেতু আমভাবে ব্যবহার হয়নি। তাই, বুঝে নিতে হবে যে, ব্যাভিচারী ও ব্যাভিচারিনী বলতে বিবাহিতরা উদ্দেশ্য নয়। এভাবে বুঝ নিলে রজমের হাদিসটিও বিরুদ্ধে যায় না বরং আয়াত এবং হাদিস সমন্বয় হয়।

প্রশ্ন (০৮) ঃ মহান আল্লাহ্ বলেন,

“তোমরা রাত্রি আগমণের পূর্ব পর্যন্ত সিয়াম পালন করো।”-সূরা বাক্বারাহ্, ২/১৮৭

এই আয়াতে আল্লাহ্ বলছেন যে, রাত্রির আগমণ পর্যন্ত সিয়াম পালন করতে। আর রাত্রিতো হয় অন্ধকার হলে। অথচ হাদিসে অন্ধকার হওয়ার আগেই সূর্য ডোবার পূর্ব পর্যন্ত সিয়াম পালন করতে বলেছে। হাদিসটি লক্ষ্য করুন-

“ওমার ইবনে খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন,

“যখন রাত সেদিক হতে ঘনিয়ে আসে ও দিন এদিক হতে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়। তখন সিয়াম পালনকারী ইফতার করবে (অর্থাৎ সিয়াম ভঙ্গ করবে)।” -বুখারী, অধ্যায় ঃ ৩০, কিতাবুস সিয়াম, অনুচ্ছেদ ঃ ৪৩, সায়িমের জন্য কখন ইফতার করা বৈধ, হাদিস # ১৯৫৪।

অর্থাৎ হাদিসটি কুরআনের বিপক্ষে যাওয়ার কারণে বাতিল। এটা দ্বারা আবারও প্রমাণ হলো হাদিস আল্লাহ্’র ওয়াহী নয়।

উত্তর ঃ এই ব্যাখ্যাটিও চরমভাবে ভুল হয়েছে। কারণ, অন্ধকার হওয়ার আগে রাত হয় না একথাটি ভিত্তিহীন। আরবরা কখন থেকে রাত হিসেব করে তা আগে আপনার জানার দরকার ছিল। এ সম্পর্কে আরবী টু আরবী ডিকশনারী মু’জামুল ওয়াসীতে রাত বলা হয়েছে,

অর্থ ঃ সূর্য ডুবার পর থেকে সূর্য উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত সময়কে।” এ সম্পর্কে কুরআনও একই কথা বলেছে। মহান আল্লাহ্ বলেন,

“শপথ রাতের যখন তাকে (সূর্য) ঢেকে ফেলে।” -সূরা শামস্, ৯১/৪

এই আয়াতটি সুস্পভাবে বলছে যে, সূর্য ডুবলেই রাত। তাহলে বুঝা গেল যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী রাত্রি আগমণের পূর্ব পর্যন্তই সিয়াম পালন করতে বলেছেন। যেহেতু সূর্য ডুবলেই রাত হয়, তাই তিনি (সাঃ) সূর্য ডোবার সাথে-সাথেই সিয়াম ভঙ্গ করতে

রাসুল সা.- বলেন, আমাকে কুরআন এবং অনুরুপ আরেকটি বস্তু দেয়া হয়েছে। অচিরেই একদল লোক আসবে ,যারা সোফাতে হেলান দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলবে, তোমরা শুধু কুরআন মানবে।

দেখুন:

১. আবু দাউদ, হা; ৪৬০৪।

২. জামেউল আহাদীস, হা/ ৪৬১৮।

৩.কানযুল উম্মাল, হা/ ৮৮০।

৪. মুসনাদুশ শাময়িইন, হা/ ১০৬১।

৫. মাআলিমুস সুনান, ৫/ ১০- ১২।

৬. আহমাদ, হা/ ১৭২১৩।

৭. ইবনু মাজাহ, হা/ ১২।

৮. তাবারানী, হা/ ৬৭০।

আরবি ভাষাজ্ঞান ছাড়া ক্কোরআন পরিপূর্ণরূপে হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব নয়।

~~~~~~~~~~~~~~

~~~~~~~~~~~~~~

একজন জেনারেল শিক্ষিত ভদ্রলোক ও

আর একজন আলেমের কথোপকথন।

ভদ্রলোককে আলেম সাহেব প্রশ্ন করলেন, সুরা ফাতেহার প্রথম অংশ

'الْحَمْدُ للّهِ'

থেকে আপনি কি বুঝেন?

তিনি বললেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আলেম সাহেব বললেন, আমি শুধু এতোটুকুই বুঝি না। বরং আমি এর থেকে এছাড়াও আরো যা যা বুঝি তা হলো, আল্লাহ তাআলা জীবিত। তার প্রসংশা সমূহ কারো প্রদত্ত নয় বরং অনাদি। এই প্রশংসা অস্থায়ী নয় বরং চিরস্থায়ী ইত্যাদি। তিনি বললেন, সেটা কিভাবে? বললাম, আরবিতে হামদ

(حَمْدُ)

শব্দটি এমন সত্তার জন্য ব্যবহার হয় যিনি জীবিত। মৃত কারো জন্য এটি ব্যবহার হয় না। তার জন্যে মাদাহ

(مُدحَ)

শব্দ রয়েছে। এমনি ভাবে এটি মূলত ছিল 'নাহমাদুল্লাহা'

(نحَمْدُ للّهِ)

বা আমরা আল্লাহর প্রশংসা করছি। এটাকে ফেয়েল

(فعَلَّ )

(verb) বা কর্ম থেকে সরিয়ে ইসিম

(اسم)

(noun) হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আরবি ব্যকরণে একে জুমলায়ে ইসমিয়ায়ে ফে'লিয়া

(جملة اسمية فعَلية)

বলে। ফলে প্রশংসাটা স্থায়ী রূপ পেয়েছে। কারণ কর্মের মধ্যে স্থায়ীত্ব পাওয়া যায় না। যে কোন কাজই কর্তা কিছুক্ষণ করার পর সাময়িকের জন্য হলেও বিরতি দেয়। ফলে তা স্থায়ী থাকে না। ক্ষণিকের জন্য হলেও তাতে ভাটা পড়ে। সুতরাং আয়াতে এভাবে প্রকাশের ফলে প্রসংশাটা আল্লাহর জন্য বিরতিহীন ভাবে সব সময়ের জন্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। এমনিভাবে হামদ শব্দটি বুঝায় যেসব কারণে তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন তা কারো প্রদত্ত নয়। বরং শুরু কাল থেকেই তার সেগুলো অর্জিত আছে।

কুরআনে নবীদের জন্য 'নাযির'

(نذيَرُ)

শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যার বাংলা অনুবাদ করা হয় ভীতি প্রদর্শনকারী। অথচ এর দ্বারা শব্দটির পূর্ণ মর্মার্থ সুস্পষ্ট হয় না। কারণ সাপ-বিচ্ছু ও সন্ত্রাসী-ডাকাতরাও আমাদের ভয় দেখায়। আবার মা-বাবা ও উস্তাদরাও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য ভয় দেখান। দুই প্রকার ভয়ের ধরন কি এক হল? আরবিতে কিন্তু প্রথম প্রকারের ভীতি প্রদর্শন কারীকে বলে

(مخيف)

মুখিফ। আর দ্বিতীয় প্রকারের ভীতি প্রদর্শনকারীকে বলে

(نذيَرُ)

নাযির। তারমানে নাযিরের মধ্যে যে ভীতি প্রদর্শন তার সাথে দয়া-মায়া এবং দরদ ও কল্যাণ কামিতা থাকে। এর দ্বারা নবিদের দাওয়াতের পদ্ধতিটাও আমাদের সামনে ফুটে উঠে। একটা শব্দ থেকেই এতো কিছু বুঝতে পারলাম। কিন্তু শব্দটার শুধু বাংলা অনুবাদ দিয়ে কি এতো কিছু বুঝা সম্ভব? কখনোই না। সেজন্যই আমি বলেছিলাম, আরবি ছাড়া কুরআন পরিপূর্ণরূপে হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব নয়। হয়ত সাময়িক কিছু জ্ঞান অর্জন হবে। তবে সেটাকে পরিপূর্ণ হৃদয়ঙ্গম বলা যায় না। তাছাড়া মুফাসসিরিনে কেরাম তাফসিরের জন্য যেসব শর্তারোপ করেছেন তারমধ্যে একটা হল, আরবি ভাষায় পারদর্শী হওয়া। শুধু অনুবাদ যথেষ্ট হলে তারা কখনোই এই শর্তারোপ করতেন না।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

৭১ এর যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস