জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে কতিপয় মিথ্যা অভিযোগের জবাব

 



দেশে যে মাযহাবের
লোকংখ্যা বেশী সে মাযহাব অনুযায়ী
সেখানে শাসন ব্যবস্থা হওয়াই
স্বাভাবিক’ ।[ সাপ্তাহিক সোনার বাংলা
(ঢাকা) ৩১শে জানুয়ারী ১৯৮৬ প্রশ্নোত্তর
আসর; অধ্যাপক গোলাম আযম, প্রশ্নোত্তর
(ঢাকা: গ্রন্থমালঞ্চ ১৯৯৮) পৃঃ ১৮২।




২, - মদের লাইসেন্সের বিষয়ে মিথ্যাচারের নমুনা :

ফেসবুকে চরমোনাইর মুরিদদের নিয়ন্তনে কিছু পেজ তৈরি হয়েছে যাদের কাজ হলো জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে জারজ পোষ্ট পোষ্ট প্রসব করা। জারজ বলার কারণ হলো, এদের পোষ্টে আপনি কোন তথ্য সূত্র খুজে পাবেন না। যদিও বা কোন তথ্য সূত্র দেয় সেটাও খন্ডিত করে দিবে। কথার আগে পরে অংশ কেটে নিয়ে নিজেদের মতো করে একটি বাক্য তৈরি করে সেটাকে জামায়াত নেতাদের বক্তব্য বলে চালিয়ে দেবে। এরকম কয়েকটি পেজ আমার নজরে এসেছে। আমি তাদের কয়েকটিতে ব্লক হয়ে আছি কারণ তারা আমার লেখাকে অতিমাত্রায় ভয় পায়। তাদের এক মুরিদ আমার বিষয়ে মন্তব্য করে লিখেছে, আমি নাকি মওদূদীর থেকেও বেশি ভয়ংকর। অথচ তাদের লেখাগুলো পড়ার জন্য আমি উদগ্রিব হয়ে থাকতাম। গত কয়দিন আগে আমার এক ফেবু ফ্রেন্ড একটি লেখার তথ্য দিয়ে আমার কাছে জবাব আশা করে অনুরোধ করলো যে, আমি যেন তাদের কথার জবাব দেই। তাই এই বিষয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করছি। নতুবা তাদের খিস্তিখেউর নিয়ে অযাচিত ভাবনায় সময় নষ্ট করা জামায়াত শিবিরের ভাইদের নয়। সম্প্রতি তাদের কয়েকটি পেজ থেকে মিথ্যাচার করা হয়েছে মাওলানা নিজামী জোট সরকারের আমলে শিল্প মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে যমুনা গ্রুপকে মদের লাইসেন্স প্রদান করেছেন। একজন আলেম হিসেবে তার এই কাজের দায়িত্ব্য নেওয়া উচিত। তাদের মতে নিজামীরা টাকা আর ক্ষমতার জন্য যে কোন কাজ করতে পারে। এ জাতিয় মিথ্যাচারের আগে তারা যদি জোট সরকারের আমলে যমুনা গ্রুপের বিষয়ে নিজামীর ভূমিকা নিয়ে একটু ইতিহাস ঘাটাগাটি করার চেষ্টা করতো তাহলে নিজেদের মুখে চুন কালী দেওয়ার কষ্ট টুকো করতো না। একটি ইসলামী দলের নাম ধারন করে অন্য আরেকটি ইসলামী দলের আমীরের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যার বেশ্যাতি করার আগে তাদের আল্লাহকে ভয় করা উচিত ছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, এদের মাথায় বারো হাত পাগরি তো দেখা যায় কিন্তু অন্তরে আল্লাহর ভয় নুন্যতম আলামত খুজে পাওয়া যায় না। লোক দেখানো লেবাস স্বর্বস্ব ইসলামী দলের নাম ভাঙ্গিয়ে তারা দির্ঘ্যদিন ধরে এদেশের ইসলামী শক্তির অনৈক্যের ব্যাপারে ষোল আনা ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এবার আসা যাক মদের লাইসেন্স বিষয়ে আলোচনায়। কিছু দিন আগে মাসিক আদর্শ নারীর সম্পাদক এবং ইসলামী পত্রিকা পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি আবুল হাসান শামসাবাদী, সহ-সভাপতি আলহাজ মোস্তফা মঈন উদ্দীন খান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেন ও জয়েন্ট সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম কবির এক যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে বর্তমান মহাজোট সরকারের কাছে আবেদন করেছেন যমুনা গ্রুপকে মদের লাইসেন্স না দেওয়ার জন্য। কিন্তু মহাজোট সরকার যমুনা গ্রুপকে লাইসেন্স দিয়ে দেয় হাইকোর্টের দোহাই দিয়ে। যেখানে ইসলামী পত্রিকা পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হলো যমুনা গ্রুপকে লাইসেন্স না দেওয়ার জন্য সেখানে কোন ইলাহামের ভিত্তিতে মুরীদানরা দাবি করছে লাইসেন্স নিজামী দিয়েছেন ? উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ একবারের জন্য তাদের বিবৃতিতে দাবি করেন নি যে, নিজামী মদের লাইসেন্স দিয়েছে। তাহলে আসল গল্পটি কি ? আমি আগেই বলেছি তাদের চরিত্র হচ্ছে জামায়াত বিরোধীতার ট্রপিক নির্মানের উদ্ধেশে যে কোন ঘটনাকে বিকৃত করে অথবা বিকলাঙ্গ বানিয়ে প্রচার করে জাাময়াত কে হেয় করার চেষ্ট করা। কৃষিমন্ত্রী হিসেবে মাওলানা নিজামী যখন সফলতার দিকে দ্রুত ছুটে চলছিলেন এবং মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে শুরু করেছিলেন ঠিক তখনি বি এন পির মধ্যে গুপটি মেরে থাকা কিছু সুবিধা ভোগী ভাদাদের তদবিরে খালেদা জিয়া নিজামীকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে দেন। দায়িত্ব্য পাওয়ার পরে পুর্বের মন্ত্রীর কিছু নেতিবাচক স্বিদ্ধান্তকে তিনি চ্যালেঞ্চ জানান। এর মধ্যে ক্রাউন বেভারেজ কোম্পানীর কোমাল পানিয়র নামে মদ উৎপাদনের লাইসেন্স প্রদানের বিষয় একটি। নিজামী আপত্তি ও ক্রাউনের উৎপাদিত পন্যে অতি মাত্রায় মদের উপাদান খুজে পাওয়া এবং এই পন্যের বিষয়ে স্বারামন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তাদের মামলাটি দ্রুত বিচার আইনের আদালতে স্থানন্তর করা হয়। আমি নিজে একবার চাঁদপুরে নিজামী সাহেব কে প্রশ্ন করেছিলাম এই বলে যে, জমিয়াতুল মুদারেচ্ছিন সহ কয়েকটি দলের নেতারা দাবি করছেন যে, আপনি মদের অনুমোদন দিয়েছে, আসল ঘটনা কি ? তিনি বললেন যে, “২০০২ সালে বিনিয়োগ বোর্ডের লাইসেন্স নিয়ে গাজিপুরের কালিয়াকৈরে ক্রাউন ও হান্টার নামে পানীয় তৈরির প্লান্ট স্থাপন করে ক্রাউন বেভারেজ। পানীয় তৈরির জন্য বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমোদন থাকলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে লাইসেন্স নেয়া হয়নি। অনুমোদন না নিয়েই অবৈধভাবে মদ উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু করে যুমনা গ্রুপ। সে সময় হান্টার নামে যে পানীয় বাজারজাত করা হচ্ছিল তাতে যথাক্রমে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এলকোহল ছিল। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এরই প্রেক্ষিতে আমরা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সহযোগীতায় কারখানা সিলগালা করে ২০০৪ সালের ৩ মার্চ কালিয়াকৈর থানায় মামলা দায়ের করি। আমরা কোমল পানিয় উৎপাদনের অনুমোদন দিয়েছি অথচ তারা অতিমাত্রায় এলকোহল মিশ্রণ করে প্রায় মদের সমতুল্য পানীয় উৎপাদন করতে থাকলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতায় তাদের কারখানা বন্ধ করে দিয়ে সিলাগালা করে দেই এবং তাদের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা করে দেই যেটি এখনো বিচারাধিন আছে।” ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে ক্রাউন বেভারেজ। কিন্তু দেশের আইনের বাধ্যবাধকতা থাকায় সে সময় ক্রাউন বেভারেজকে মদ উৎপাদনের লাইসেন্স দেয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে ক্রাউন বেভারেজ কোম্পানি। ২০০৫ সালের ৩ মার্চ হাইকোর্ট এ মামলায় রায় দিয়ে যমুনা গ্রুপকে মদের লাইসেন্স দেয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সে সময় জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের সরকার থাকায় নিজামীর উদ্যোগে সরকারের পক্ষ থেকেহাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। ৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন হাইকোর্ট এ বিষয়ে আর কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। নিজামী মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে যমুনা গ্রুপের এই আপীল শুনানীও অনুষ্টিত হয়নি সেখানে তাদের লাইসেন্স দেওয়ার তো সুযোগই নেই। পরবর্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হাইকোর্ট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দায়ের করা সে আপিল খারিজ করে দেয় ২০০৮ সালের ২ ডিসেম্বর। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে ৩ তারিখ এ রায়ের উপর রিভিউ পিটিশন করা হয়। এ রিভিউ পিটিশনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৮ জুন কিছু সংশোধনী এনে যমুনা গ্রুপ মদ উৎপাদনের লাইসেন্স পায়। আর আদালতের দোহাই দিয়ে বর্তমান সরকার ২৯ জুন যমুনা গ্রুপকে মদ উৎপাদনের লাইসেন্স প্রদান করে। এই হলো যমুনা গ্রুপের মদের লাইসেন্স বিষয়ে বাস্তবতা। এখানে দুটি বিষয় মনে রাখা দরকার। বাংলাদেশে প্রথম মদের লাইসেন্স দেওয়া হয় জিয়াউর রহমানের শাষন আমলে ১৯৭৮ সালে। সেই লাইসেন্সের ওপর ভিত্তি করেই দির্ঘদিন যাবত এই দেশে মদের বিপনন চালু রয়েছিল। হটাৎ করে মদের লাইসেন্স কে নিজামীর কির্তী হিসেবে চরমোনাইর মুরিদানদের পক্ষ থেকে দাবি করার মধ্যে ইসলামের কোন কল্যাণটা নিহিত আছে সেটা কি তারা আামাদের কে একটু জানাবেন ? চরমোনাইর মুরিদরা তাদের চিরকালের অভ্যাস অনুযায়ী হলুদ মিডিয়ার জামায়াত বিরোধী রিপোর্টকে দলির করে জামায়াত বিরোধীতায় নামে। সেদিন সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যমুনা গ্রুপকে মদের লাইসেন্স দেওয়ার অজুহাত হিসেবে বিগত জোট সরকারের মিন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে দায়ী করে বক্তব্য রাখেন এবং যমুনা গ্রুপকে মদের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে সংসদকে অবহিত করেন। এইটুকো শুনেই বেচারা মুরিদদের লম্ফঝম্ফ। কিন্তু তারা জানতে পারেনি যে, পরের দিনই সংসদের দাড়িয়ে সাহারা খাতুন নিজের তথ্যকে ভুল হিসেবে আখ্যায়িত করে সেটা প্রত্যাহার করে নিয়ে আরো অনুসন্ধান করে এই বিষয়ে সংসদকে জানানো হবে বলে সময় নেন। অথচ বর্তমান সংসদ স্বিকার করে নিয়েছে যে, বিগত সরকার যমুনা গ্রুপকে কোন লাইসেন্স দেয়নি। তারা হারহামেশা দাবি করেন যে, তারা যা কিছু করেন, ইসলামের কল্যানের জন্যই করেন। আমরা প্রশ্ন হচ্ছে, একজনের আলেমের বিরুদ্ধে মদের মতো হারাম পন্যের পক্ষে দায়িত্ব্য নেওয়ার বিষয়ে অপবাদ দেওয়ার এই অজিফা তারা কোন কিতাব থেকে নিয়েছে, আর এতে ইসলামের কি কল্যাণ নিহীত রয়েছে ? ইসলাম তাদের কে এই অনুমতি প্রদান করে কিনা। একটি অনৈসলামিক রাষ্ট্রের গোটা সংবিধান যেখানে কুফরি আর হারামের ওপর প্রতিষ্টিত সেখানে তার দুচারটি ডাল পালাকে দলিল করে দিয়ে অন্য আরেকটি ইসলামী দলকে হেয় করার আগে আল্লাহর আজাবের ভয় কি তাদের অন্তরে আসলো না। ধিক এমন ইসলামের খাদেমদের কে ? আর কত মিথ্যাচার করলে পীরের মুরিদরা জামায়াত বিরোধীতায় তাদের কলিজার আগুন নিভাবে। তাদের এক চোখা, মিথ্যাচার আর জামায়াত বিরোধীতার নামে প্রতিহিংসার অনলের দাবানল দেখলে বুদ্ধিমান ব্যক্তিমাত্র বুঝতে সক্ষম হবেন যে, এদের অন্তরে জামায়াত বিরোধীতাকে ঈমানের পরেই স্থান করে দিয়েছে। ইসলামের নামে যা কিছু করা হচ্ছে তা মুলত জামায়াত কে হেয় করার জন্যই করা হচ্ছে। আওয়ামী নিরাপত্ত বেষ্টনিতে থাকা দলটি দির্ঘ্যদিন ধরে জামায়াত ইসলামী সম্পর্কে অত্যান্ত নেতিবাচক প্রচারনা চালিয়ে আসছে। মিথ্যাচারের গোটা ফেসবুকে তারা নোবেল পাওয়ার পর্যায়ে পৌছে গেছে। কিছু দিন আগেও তারা হেফাজত কে নিয়ে তির্যক মন্তব্য করে হেফাজত নেতাদের কে জামায়াতের কুটি টাকার গোলাম হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের জন্য মুনাফিক ট্যাগ কে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দেয়। মাওলানা রুহী, মুফতি ফযজুল্লাহ এবং হেফাজত আমীরের ছেলে আনাস মাদানীকে আঠারো দলের বিশেষ করে জামায়াতের গোপন দালাল ট্যাগ দিয়ে তাদের বহিস্কার নিয়ে কিসব মিথ্যাচার তারা করেছে তারা নমুনা আমরা দেখেছি। ইতিপুর্বে এসব বিষয়ে আমরা প্রমান ভিত্তিক লেখা দিয়েছি। তার কোনটারই প্রতিবাদ তারা করতে পারেনি।

মওদূদীর (র.) প্রচলিত ইলমি সনদ :

____________________________ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহিমাহুল্লাহ)

১.তাঁকে যাঁরা চিনতেন এবং তাঁর সাথে কাজ করতেন তাঁরা জানতেন তিনি একজন আলিম; এমনকি যাঁরা পরে তাঁর সংশ্রব থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন তাঁরাও তাঁর আলিম হওয়াকে অস্বীকার করতেন না। তাঁরা তাঁর সাথে অন্য বিষয়ে মতভেদ করতেন বলে দূরে সরে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু লোক যারা নিজেরা মূলত আলিম নয়, তারাই তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় এবং বলে যে তিনি আলিম ছিলেন না।

২.ইসলামে আলিম হবার নিয়ম কী? আলিম হবার নিয়ম হচ্ছে আপনি একজন আলিমের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট বিষয় অধ্যয়ন করবেন। এরপর আপনার উস্তাদ যখন নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনি পারঙ্গম হয়েছেন বলে নিশ্চিত হবেন তখন তিনি আপনাকে ইজাযাহ (সনদ) দান করবেন। এভাবে আপনি ঐ বিষয়ে আলিম হবেন। ইসলামে আলিম হবার এটাই হচ্ছে প্রচলিত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতেই আলিম হয়েছেন আমাদের আগের দিনের উলামারা - আয়িম্মায়ে আল-মুজতাহিদীন, মুহাদ্দিসীনগণ সবাই। এখনকার মাদ্রাসা বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি নেওয়াটা মূলত ঐ ইজাযাহ পদ্ধতি থেকে চলে আসা পথ।

৩.উস্তাদ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহিমাহুল্লাহ) মূলত সেই প্রচলিত ইসলামী ইজাযাহ পদ্ধতিতে গড়ে ওঠা আলিম। তিনি ইসলামের মৌলিক সবগুলো বিষয়ে তৎকালীন ভারতের প্রসিদ্ধ আলিমদের থেকে ইজাযাহ প্রাপ্ত। তাই তাঁকে যাঁরা চিনতেন তেমন বিরোধীরাও তাঁর আলিম হওয়া নিয়ে কথা বলতো না। তাঁর পরিবারের কাছে তাঁর ইজাযাহগুলো এখনও সংরক্ষিত। মুশকিল হচ্ছে তাঁর জীবনীকাররা তাঁর ইজাযাহগুলো সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে লিখেননি। এমনকি জামায়াতে ইসলামী থেকেও তাঁর যে সমস্ত জীবনী বের করা হয়েছে - যেমন আব্বাস আলী খানের লিখা "মাওলানা মওদূদী: একটী জীবন, একটি ইতিহাস" - সেগুলোতেও এগুলোর যথাযথ উল্লেখ নেই। এর কারণ সম্ভবত উস্তাদ মওদূদীর (রহিমাহুল্লাহ) আত্মপ্রচার প্রচারবিমুখতা।

৪.সে যাই হোক! আমি নিজে তাঁর সম্পর্কে পড়তে গিয়ে অল্প কয়েকটা বিষয়ে জানতে পারলাম। আল- আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ফকীহ এবং আলিম ড. সায়্যিদ আব্দুল হালিম মুহাম্মদ হুসাইন (হাফিজাহুল্লাহ) এর লেখা "নাযারাত ফী ফিকরি আবীল-আলা আল- মওদূদী কিতাবে আল্লামা মওদূদীর শিক্ষাগত যোগ্যতার যে বিবরণ তিনি দিয়েছেন তা থেকে আমি পাঠকদের জন্য উল্লেখ করছি।

(ক) আরবী ভাষা, নাহু, সরফ, আল-মা'ক্বুলাত ওয়াল-বালাগাহ ওয়াল মা'আনী: এগুলোতে তিনি ইজাজাহ লাভ করেছেন দিল্লীর দারুল উলুমে ভারতের প্রখ্যাত আলিম মাওলানা শায়খ আব্দুস-সালাম নিয়াজীর (রহিমাহুল্লাহ) কাছ থেকে।

(খ) হাদীস ও উলুম আল-হাদীস: শায়খ ইশফাক্বুদ্দীন কান্দাহলাবীর (রহিমাহুল্লাহ) কাছ থেকে এ বিষয়ে ইজাযাহ লাভ করেন তিনি।

(গ) ফিক্বহ, তাফসীর বায়দাওয়ী এবং আল- মাতূল ফী 'ইলম আল-মা'আনী ওয়াল- বালাগাহ: এ বিষয়গুলোতে তিনি ইজাযাহ লাভ করেন শায়খ শরীফুল্লাহর (রহিমাহুল্লাহ) কাছ থেকে।

(ঘ) ইংরেজী ভাষা: মৌলভী মুহাম্মদ ফাদিল এর হাতে মাত্র চার মাসে তিনি ইংরেজী ভাষা শিক্ষায় বুৎপত্তি লাভ করেন।

৫.ড. শায়খ আব্দুস-সালাম আযাদী নীচের মন্তব্যে উস্তাদ মওদূদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আরো লিখেছেন: উস্তাদ নাদীমুল্লাহ হাসনাইন ও শায়খ নিয়ায ফাতেহপুরীর কাছ থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। মুহাম্মাদ ফাদিল এর কাছে শুধু ইংরেজি ভাষা নয়, ইতিহাস, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান ও বিভিন্ন ধর্মের তুলনা মূলক আলোচনা পড়েছেন। তিনি মাওলানা ইশফাকুর রহমান কান্ধেল্ভীর কাছ থেকে হাদীস ফিকহ ও আরবী সাহিত্য পাঠদানের ইজাযাহ নেন ১৯২৭ সালে এবং তিরমিযি ও মুওয়াত্তা ইমাম মালিক শিক্ষা দানের ইজাযাত গ্রহন করেন ১৯২৮ সনে। এই দু বছর তিনি সম্পূর্ণ সময় ব্যয় করেছেন লেখা পড়ার পেছনে।

৬.দেওবন্দে আল্লামা মওদূদী তাদের পত্রিকা আলজামইয়্যাতের সম্পাদক তখনই হতে পেরেছেন যখন সেখানকার আলিমরা তাঁকে সার্টিফাই করেছেন। কিছু মুর্খ লোক বলে 'তিনি আলিম ছিলেন না'। তারা জানেন না মাওলানার অনেক বই বুঝতে হলে ছোটো-খাটো আলেম হলেও চলবে না।

৭.ইসলামে যখন কাউকে আলিম বলা হয় তখন মাদ্রাসা পাশ কাউকে বুঝায় না। আলিম একটা বিরাট ব্যাপার। সায়্যিদ মওদূদী মূলত আলিম শব্দটার যথার্থ অর্থেই আলিম।

ইসমতে আম্বিয়া (নবীদের নিস্পাপ হওয়া) সম্পর্কে মাওলানা মওদূদী (রহ) এর আকীদা !!!”

আমার ফেসবুক বন্ধুরা মাঝে মাঝে পেরেশানিতে পড়ে যান এবং ইনবক্সে প্রশ্ন পাঠান যে, ভাই অমুকে বলছে মাওলানা মওদূদী (রহ) সহ জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদে আকীদা হলো নবীরাও গোনাহ করতে পারেন। তারা দাবি করেন আমরা নবীদের ভূলত্রুটি হতে পারে বলে বিশ্বাস করলেও মওদূদীর ভুল ত্রটি স্বিকার করতে রাজী নই। এই বিষয়ে আপনার মতামত কি ? ”

আমি সোজা উত্তর দিয়ে দেই, আলহামদুলিল্লাহ ! মাওলানা মওদূদীর (রহ) যত আর্টিকেল আমি পড়েছি এবং এই বিষয়ে তিনি যত পাঠকের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তাতে তিনি স্পষ্টভাবে নিজের আকীদা বিশ্বাস বয়ান করেছেন। নবীদের প্রতি মানুষের আকীদা বিশ্বাস কেমন হওয়া উচিত সেটাও তিনি সঠিক ভাবে বিশ্লেষন করে বর্ণনা করে দিয়েছেন। আমাদের বিরুদ্ধে কেউ মিথ্যাচার করে এমন দাবী করলেই হবে না যে, আমরা নবীদের ইসমত নিয়ে সন্দেহ পোষন করি। তাকে প্রমাণ পেশ করতে হবে।

আলহামদুলিল্লাহ মাওলানা মওদূদী সহ প্রত্যেক জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের আকীদাও তাই যেটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতে আকীদা। তবে মাওলানা লেখা না পড়ে কেউ কেউ তার বক্তব্যের খন্ডিত ‍উদ্ধৃতি বা নিজেদের বিশ্লেষনকে মাওলানা বক্তব্য বলে চালিয়ে গিয়ে ফেতনাবাজী করে বেড়াচ্ছেন।

আজকে এমন একটটি উদাহারণ দেবো।

তরজমানুল কোরআনে একজন পাঠক প্রশ্ন করেন, নবীরা যে মা’সুম এটা স্বীকৃত ব্যাপার, কিন্তু হযরত আদম আ সম্পর্কে কোরআনের একটি আয়াত প্রমাণ করে যে, তিনি আল্লাহ পাকের হুকুম অমান্য করে গোনাহ করেছেন। এ সম্পর্কে আপনার গবেষণার ফলাফল জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তরে মাওলানা লিখেন-“নবীর মাসুম হওয়ার অর্থ এই নয় যে, ফেরেস্তাদের মতো তারও ভুল করার সম্ভাবনা বিলুপ্ত করা হয়েছে। বরঞ্চ এর প্রকৃত তাৎপর্য হচ্ছে,জেনে শুনে নবী কখনো নাফরমানী করেন না। আর তার দ্বারা কোন ভূল হয়ে গেলেও আল্লাহ তায়ালা তাকে সেই ভুলের ওপর কায়েম থাকতে দেন না। ( অহীর সাহায্যে তাকে সঠিক পথ দেখান)।”

এরপরে তিনি লিখেন, “সংক্ষিপ্ত কথায় নীতিগত ভাবে আপনি একথাটিই বুঝে নিন যে, নবীর নিস্পাপ হওয়াটা ফেরেস্তাদের নিস্পাপ হওয়ার মতো নয় যে, ভুল ত্রুটি ও গুনাহ খাতা করার শক্তিই তিনি লাভ করেননি। না তা নয়। বরঞ্চ এর অর্থ হলো, নবুওয়াতের দায়িত্বপুর্ণ পদে অভিষিক্ত করার পর আল্লাহ তায়ালা বিশেষ ভাবে তার হেফাজত ও তত্ত্ববধান করে থাকেন এবং তাকে ভুল ভ্রান্তি থেকে রক্ষা করে থাকেন। কোনো ছোটো খাটো পদস্থলন যদি তার দ্বারা হয়েও যায় তবে অহীর সাহায্যে সাথে সাথে সংশোধন করে দেন, যেনো তার ভ্রান্তি গোটা উম্মাতের গোমরাহীর কারণ না হয়ে দাড়ায়। (তরজমানুল কোরআন রজব-শাওয়াল-১০৬৩ হিঃ, জুলাই - অক্টোবর-১৯৪৪)”

ইসমতে আম্বিয়া সম্পর্কে এরকম দ্যার্থহীন বক্তব্য দেওয়ার পরেও যারা মাওলানার ওপর নবীদের নিস্পাপ হওয়ার আকীদা পোষনা না করার অভিযোগ এনে গোটা জামায়াত শিবিরের কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালান তারা অতি শিগ্রই এর প্রতিফল ভোগ করবেন। মিথ্যার বেশ্যাতি করে বেশি দিন সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না, এই মহাসত্যটি এসব ভদ্রলোকরা যত তাড়াতাড়ি উপলদ্ধি করতে পারবেন, ততই তাদের জন্য মঙ্গল, মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণকর।

নবীদের (আ) নিস্পাপ থাকা আর ফেরেস্তাদের নিস্পাপ হওয়ার মাঝে বিস্তর ফারাক রয়েছে এটা যারা মানেন না তারাই মাওলানা মওদূদী (রহ) এর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে বেড়ান যে, তিনি নবীদের (আ) নিস্পাপ মনে করেন না। কিন্তু আসল ঘটনা হচ্ছে তার উল্টো। তিনি তার তাযকিয়ায়ে দ্বীন গ্রন্থে স্পষ্ট করে বলেছেন, নবীরা ছাড়া অন্য কারো নিস্পাপ হওয়ার বিশ্বাস লালন করা নির্ভেজাল শীয়া চিন্তাধারা। আমি নবী ছাড়া কাউকে নিস্পাপ মনে করি না।

নবুওয়াতী দায়িত্ব্য পালণ কালে নবীরা (আ) ছোট খাটো সগিরা গুনাহ করতে পারেন মর্মে কয়েকজন ইমামের বক্তব্যকে মাওলানা মওদূদী মানতে অস্বিকৃতি জানিয়ে লিখেছেন, নবুওয়াতের পুর্বে হয়তো কেউ কেউ ছোট খাটো গোনাহ করতে পারেন, কিন্তু নবী হওয়ার পরে তাদের দ্বারা নুন্যতম গোনহা হওয়ার সম্ভবনা নেই। মাঝে মাঝে ছোট খাটো পদস্থলণ হলে তারা সেটাও ওপর কায়েম থাকেন না, অহির সাহায্যে তাদের পথ দেখানো হয়। ফলে ভূল সিদ্ধান্ত বা কর্ম থেকে তারা মাহফুজ থাকেন।

হযরত ইব্রাহিম (আ) এর পক্ষ নিয়ে বুখারীতে বর্ণিত একটি হাদিস- যাতে বলা হয়েছে যে, ইব্রাহিম (আ) জীবনে তিনবার মিথ্যা বলেছেন- তাকে বাতিল করে দিয়েছেন এটা বলে যে, ওটা বর্ণনাকারীর শুনার ভূল। তিনি দাবি করেন, কোন নবী গুনাহ করতে পারেন না, তাও আবার মিথ্যার মতো কদর্যতায় জড়ানোর তো প্রশ্নই আসে না। এ হাদিসের তাহকিক করে তাফহিমুল কোরআনে তিনি তিব্র প্রতিবাদ করেছেন। তাফহিমে তার গোটা আলোচনা মনোযোগ দিয়ে পড়ার পরে যে কোন মানুষ বুঝতে পারবেন যে, যে তিনটি ঘটনায় ইব্রাহিম (আ) এর ওপর মিথ্যা বলার অভিযোগ করা হয়, সেগুলো মোটেও সঠিক নয়।

মনে রাখা দরকার যে, হাদিসের দুটো অংশ, এক সনদ, দুই মতন। অনেক হাদিসের সনদ সহিহ হওয়ার পরেও মতনের বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপণ করা হয়েছে অন্যান্য সহিহ হাদিসের দলিল দিয়ে। ফলে সন্দেহযুক্ত সেই হাদিসটি স্বাভাবিক ভাবে শ্রোতার শুনার ভূল হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এরকম হাদিস কয়েকটি রয়েছে। আলোচনা দির্ঘ হওয়ার ভয় না থাকলে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করতাম। অন্য দিকে এসব হাদিসকে উদ্ধৃত করেই হাদিস অস্বিকারকারীরা গোটা হাদিস শ্রাস্ত্রকে বাতিল করে দেওয়ার যুদ্ধে নেমেছে। যেটার বিরুদ্ধে দির্ঘকাল মাওলানাকে কলম যুদ্ধ চালাতে হয়েছে।

যে ব্যক্তি একটি সহিহ হাদিস এ কারণে মানতে অস্বিকার করেন যে, এতে নবীদের ইসমতের ওপর অভিযোগ আসতে পারে, তাকে যদি বলা হয় তিনি নবীদের (আ) নিস্পাপ মনে করেন না, তাহলে বিষয়টি কেমন বেমানান হয়ে যায় না ? আসল ঘটনা হচ্ছে কুচক্রিরা মুফতিদের কাছে মাওলানার বিভিন্ন আলোনার ভিতর থেকে একটি বাক্য বা শব্দকে কেটে এনে ফতোয়া জানতে চাইতো, ফলে বিজ্ঞ মুফতিরাও সেই বাক্যের বিপরিতে ফতোয়া দিযে দিতেন, পুরো প্যারা বা আলোচনা দেখার দরকার মনে করতেন না। ফলে সম্মানিত বুজুর্গরা যেমন বিভ্রান্ত হতেন তেমনি আসল ঘটনার বিপরিত রায় দিয়ে দিতেন।

এসব কথায় কান দিয়ে অনেক ভদ্রলোক আমাদের প্রশ্ন করেন, আপনাদের জামায়াত শিবিরের লোকেরা নাকি নবীদের (আ) নিস্পাপ মনে করে না ? তখন হাসি দেওয়া ছাড়া কোন কথাই বলি না। চিন্তা করি, মাওলানা মওদূদীর (রহ) ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন মনমানসিতা নিয়ে তার কিতাব পত্র অধ্যায়ণ করলে জ্ঞানী ব্যক্তিদের এ জাতিয় অজ্ঞতার দরিয়ায় হাবুডুব খেতে দেখতে হতো না যে, দৃশ্যমান বিষয়ে অনর্থক প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে নিজের ওপর জুলুমের পাশাপাশি তার আরেক ভাইয়ের ওপরও সিমাহীন জুলুম করা থেকে বিরত থাকতো।

আল্লামা মওদুদীর ( রহ) বক্তব্যঃ "এটি একটি সূক্ষ রহস্য যে মহান আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করে প্রত্যেক নবী থেকে কোন না কোন সময় তাঁর হেফাজত উঠিয়ে নিয়ে দু'একটি ভুল ত্রুটি হতে দিয়েছেন যাতে মানুষ নবীদেরকে খোদা না বুঝে।" (তাফহীমাত ২/৪৩) মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর ( রহ) বক্তব্যঃ "কোন কোন সময় নবীদের থেকে ভুল ত্রুটি হওয়ার যে ঘটনাসমূহ কুরআনে উল্লেখিত হয়েছে এগুলো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর হেকমত ও রহমত। এর মধ্য এক বড় ফায়দা এও যে মানুষের মনে যেন নবীদের খোদা হওয়ার সন্দেহ না হয়।" (মাজালিসে হাকীমুল উম্মাতঃ মুফতী শফী, ৬৫ পৃষ্ঠা) প্রিয় পাঠক! আল্লামা মওদুদী আর মাওলানা থানবীর বক্তব্যের মাঝে কি অমিল পাওয়া গেছে? না, তবুও এই কারণে আল্লামা মওদুদী কাফের। কিন্তু মাওলানা থানবী কাফের নন ! উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা সুলাইমান নদভীর ( রহ) বক্তব্যঃ "মানুষ হিসেবে তাদের থেকেও ভুল ত্রুটি হতে পারে । কিন্তু আল্লাহ তাঁর ওহীর দ্বারা এসমস্ত ভুল ত্রুটিরও সংশোধন করে থাকেন।" (সিরাতুন্নবী ৪/৭০) আল্লামা নদভীকে কিন্তু এই কথা বলার কারণে কেউ কাফের বা ভ্রান্ত বলেনা। কিন্তু মওদুদী বললেই যত গাত্রদাহ ! ফারায়েয শাস্ত্রের ইমাম ফখরুদ্দীন রাযীর বক্তব্যঃ "আম্বিয়া কিরাম নবুওত প্রাপ্তির পর থেকে ইচ্ছাকৃত কবীরা ও সগীরা গুনাহ থেকে পবিত্র। কিন্তু ভুলবশতঃ কবীরা ও সগীরা গুনাহ হতে পারে।" (ইছমতে আম্বিয়া, ২৮ পৃষ্ঠা) "আদম (আঃ) অবাধ্য ছিলেন। আর অবাধ্য হওয়াকে আমরা কবীরা গুনাহ মনে করি।" (ইছমতে আম্বিয়া, ৩৬ পৃষ্ঠা) এই কথাটি মওদুদী বললে কেমন হত? আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাঃ "ভুলবশতঃ কবীরা গুনাহ হওয়ার ব্যপারে অধিকাংশ আলেমদের মত হলো তা জায়েয ও সম্ভব। এমনকি জমহুর উলামার মতে নবীদের থেকে ছগীরা গুনাহ ইচ্ছাকৃতও হতে পারে।" (কওমী ও আলীয়া মাদ্রাসায় পাঠ্য আকীদার কিতাব শরহে আকাঈদে নসফীঃ ইছমতে আম্বিয়া) ধৈর্যশীল পাঠক! চিন্তা করুন, মওদূদী ( রহ) বলেছেন ভুল হতে পারে। তাতেই তাঁকে ভ্রান্ত, কাফির ইত্যাদি বলা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে একশ্রেণীর কাওমী মূর্খ ও মিথ্যাবাদী আলেম অপবাদ দেয় তিনি নাকি নবীদেরকে নিস্পাপ মনে করেন নি! তাদের দলিলঃ উপরোল্লেখিত মওদূদীর বক্তব্য। অথচ যেসকল ইমামরা গুনাহ হতে পারে বলেছেন তাদেরকে কিছু বলা হয়না। এবার কি বুঝতে পেরেছেন সত্যটা ? হোসাইন আহমাদ মাদানী ( রহ) মওদূদীর ( রহ) এই বক্তব্যের জন্য বলেছেন "এবার বলুন জামায়াতে ইসলামী ও এর প্রতিষ্ঠাতা মুসলমান কিনা?" (মওদুদী দস্তর) এ থেকে বুঝা যায় মওদূদীর ( রহ) জ্ঞানের পরিধি হোসাইন মাদানীর (রহ) চেয়ে কত বেশী ছিল ! যারা এতদিন ভুলের মধ্য ছিলেন তারা কি সন্দেহমুক্ত হয়েছেন ? নাকি জামায়াত ইসলামী করা ই তার একমাত্র অপরাধ? নাকি প্রাণের নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনকে পূর্ণাঙ্গ ভাবে অনুসরণ করার চেষ্টায় তার ভূল ? নাকি অন্যান্য আলেমদের মত ইসলামের অর্ধেক মেনে নিয়ে অর্ধেক মেনে অর্ধেক মেনে না নিয়ে চলেন নি তাই তিনি বড় অপরাধী ?

# মন্তব্যঃ মওদুদী (রহঃ) এর একমাত্র অপরাধ হলো তিনি নিজেকে খানকার চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে পারেননি বরং দ্বীন কায়েমের জন্য রাজপথে নেমে এসেছেন। তাই খানকা ওয়ালারা তার বিরুদ্ধে হাজারো বানোয়াট বই লিখেছে।

শাইখুল ইসলাম অাওলাদে রাসুল

( সা) অাল্লামা সাইয়েদ অাবুল অা'লা

মওদূদীর ( রহ) বংশ পরম্পরা :

উর্ধমুখী :

----------------------------------------

সাইয়েদ অাবুল অা'লা মওদুদী

সাইয়েদ অাহমদ হাসান মওদুদী

সাইয়েদ হাসান মওদুদী

শাহ ওয়ারেশ অালী মওদুদী

শাহ অাব্দুল অাযিয মওদুদী

খাজা অাব্দুল ওয়ালী মওদুদী

খাজা অাব্দুল বারী মওদুদী

খাজা অাব্দুল্লাহ মওদুদী

খাজা অাব্দুস শাকুর মওদুদী

খাজা অাব্দুস সামাদ মওদুদী

খাজা অাব্দুল গনী মওদুদী

শাহ অাব্দুল অালী মওদুদী

শাহ অাবুল অা'লা মওদুদী চিশতী

খাজা মুহাঃ মহীউদ্দিন শাহ খাজগী চিশতী

খাজা নাজিমুদ্দিন অালী চিশতী

খাজা কুতুবুদ্দিন সানী চিশতী

খাজা মুহাঃ যাহেদ চিশতী

খাজা অাহমদ অাবু ইউসুফ সানী চিশতী

খাজা অালী অাবু অাহমদ সানী চিশতী

খাজা কুতুবুদ্দিন মুহাঃ মওদুদ চিশতী

খাজা নিজামুদ্দিন মওদুদ চিশতী

খাজা রুকুনুদ্দিন মওদুদ চিশতী

খাজা অাবু অাহমদ মওদুদী চিশতী

খাজায়ে খাজগান কুতুবুদ্দিন মওদুদ চিশতী

খাজা নাসিরুদ্দিন অাবু ইউসুফ চিশতী

মুহাম্মদ শায়মান চিশতী

সাইয়েদুশ সাদাত ইবরাহীমী

সাইয়েদুস সাদাত মুহাম্মদ

সাইয়েদুস সাদাত হুসাইন

সাইয়েদুস সাদাত অাব্দুল্লাহ অালী অাকবার

হযরত ইমাম মুহাম্মদ নকী

হযরত ইমাম মুহাম্মদ তকী

হযরত ইমাম মুসা অাল কাযেমী

হযরত ইমাম মুহাম্মদ জা'ফর সাদেক

হযরত ইমাম মুহাম্মদ অালবাফ

হযরত ইমাম জয়নুল অাবেদীন

( রহীমাহুল্লাহ অানহুম)

হযরত ইমাম হুসাইন শহীদ ( রা)

হযরত ফাতেমা ( রা)

সাইয়েদল মুরসালিন হজুর ( সা) ।

সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী (রঃ) কে?

পাকিস্তানীরা তাকে বলে আরবী লেভেলের অনেক

উচু মানের এক জন বড় আলেম। সউদীরা তাকে বলে শায়েখ। ইন্দোনেশিয়া তে তাকে উস্তাদ ছাড়া ডাকা হয় না।

আপনারা যারা মাদানী তারা হয়তবা জানেন না যে,

মউদুদী ছিলেন মদীনা ইউনিভারসিটির একজন প্রতিষ্ঠাতা। বেশির ভাগ প্রস্তাবনা ছিল তার। এবং

উনি ছিলেন Muslim World League (রাবিতা আল আলাম আল ইসলামি) এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন।

উনি ইসলামিক ইউনিভারসিটি অব মদীনার শরীয়া ডিপার্টমেন্ট এর দায়িত্তেও ছিলেন। উনার জানাযার নামাজ পড়িয়েছিলেন এখন ও তখনকার সময়ের মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে নন্দিত আলেম ইউসুফ আল কারজাবী।

বাদশাহ নাজ্জাশির পর কা'বার চত্তরে উনার জানাযার নামাজ পড়া হয়েছে।উনি মনে হয় এই দুনিয়ার একমাত্র আলেম যিনি সাহস করে নিজের লিখা কুরাআন শরীফের তাফসির একটি মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশ করেছেন।এইটা কিন্তু খুব সাহসী কাজ।

উনি তাবলীগ জামাতের প্রশংসা করতেন উনার লিখনীতে। উনার লেখা বই প্রায় ৫৭ টি ভাষাতে অনুদিত হয়েছে! তিনি একটা দল প্রতিষ্ঠা করেছেন যেটা মনে হয় একমাত্র দল, যারা কোনো ইসলামি

দলের ও দলের দায়ীত্বশীলদের বিরুদ্ধে কথা বলার কোন প্রমান নাই।

পাকিস্তানে,জামায়াত ইসলামি কে তাদের দেশের সৈনিকদের পর সবচেয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ দল বলা হয়।

সৈয়দ আবুল আলা মউদুদী ছিলেন কাদিয়ানিদের

বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনিই প্রথম তাদের বিরুদ্ধে লিখেছেন।

সে জন্য একবার সৈয়দ আবুল আলা মওদূদীর ফাসির রায়ও দেওয়া হয়েছিল। তার লেখনি

পাকিস্তান ভাগকে করেছিল তরান্নিত। তিনি আজীবন

ইসলামি হুকুমত কায়েমের চেষ্টা করেছেন। গিয়েছেন ফাসির প্রকষ্টেও।

তবুও হার মানেন নাই। উনিই মনে হয় দক্ষিন এশিয়ার

প্রথম রাজনিতিবীদ যিনি দলের প্রধানের পদ থেকে সেচ্চায় অবসর নিয়েছিলেন।উনি ছিলেন দলের লোকদের জন্য নিবেদিত।

একবার মঞ্চে বক্তব্য প্রদানরত অবস্থায় তাকে লক্ষ করে গুলি চলানো হচ্ছিল- এসময় তিনি বলেছিলেন

"আমি বসে পরলে দাড়িয়ে থাকবে কে?"।

তিনি ইসলামি অর্থনীতি সম্পর্কে দিয়েছেন খুব পরিষ্কার ধারনা।তিনি মনে হয় একমাত্র লোক যিনি

তার দল কে শিখাতে পেরেছিলেন যে মুসলমানদের

আদর্শ শুধু মাত্র রাসুল(সাঃ)

যেকারনে জামায়াতে ইসলামির প্রতিষ্ঠাতা হওয়া

সত্তেও তার কোন জন্ম বা মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয় না!

তারপরেও আপনারা কি সৈয়দ আবুল আলা মওদূদী রাহিমাহুল্লাহ কে মিথ্যা অপবাদ দিবেন..?সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী সেই মহান ব্যক্তি, বাদশা নাজ্জাশীর পরে তিনিই একমাত্র মানুষ যার গায়েবানা জানাজা হয়েছে পবিত্র কা'বা শরীফের চত্বরে।

★ সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী সেই মহান ব্যক্তি, খাজা মইনুদ্দিন চিশতি ছিলেন যার বংশানুক্রমিক দাদা। তারা উভয়েই ছিলেন একই বংশের দুই যুগে পৃথিবীতে আসা যুগশ্রেষ্ঠ দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র। তারা তাদের কৃত-কর্মের মাধ্যমে কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীব্যাপী আলো ছড়াবেন আর পৃথিবীর মানুষও কেয়ামত পর্যন্ত তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

★ সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী সেই ব্যক্তি, স্পেশাল ফ্লাইটে এসে যার জানাজার নামাজের ইমামতি করেছেন বর্তমান বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ আলেমে দ্বীন আল্লামা ইউসুফ আল-কারজাবী।

★ সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী সেই মহান ব্যক্তি, যার লেখা তাফসীর "তাফহিমুল কুরআন" মদিনা ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো হয় এবং পৃথিবীর ১৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর লিখিত গ্রন্থ পড়ানো হয়।

★ সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী সেই মহান ব্যক্তি, যিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মসজিদে নববীর পাশে অবস্থিত মদীনা ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন।

★ সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী সেই মহান ব্যক্তি, সৌদি আরবের সরকার যার সম্মানার্থে পবিত্র মক্কা নগরীতে একটা রাস্তার নাম রেখেছে "শা'রে আল-উস্তাদ আল মওদুদী"।

★ সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী সেই মহান ব্যক্তি, যিনি রচনা করেছেন যুগ-যামানার শ্রেষ্ঠ তাফসীর "তাফহীমুল কুরআন" সহ এক সুবিশাল সাহিত্য ভান্ডার। যার ফলে পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ যুবক তার লেখা তাফসীর ও বই পড়ে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে একটি স্বর্নালী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলন এর সন্ধান খুঁজে পেয়েছে।

★ আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহHappy এর বিস্ময়কর কিছু উক্তি :

একদা এক সমাবেশে আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহHappy বক্তব্য রাখছিলেন, এমন সময় ইসলামের শত্রুরা তার বক্তব্যের মঞ্চে গুলি চালালে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা তাকে বসার অনুরোধ করেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন "আমি বসে পড়লে দাঁড়িয়ে থাকবে কে?"।

★ কাদীয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলীম বলে বই লেখার কারণে সমগ্র পাকিস্তান জুড়ে কাদীয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার দাবীতে আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনে অনেক মানুষ নিহত হলে এর দায়ভার সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী এর উপর চাপিয়ে দিয়ে তার ফাঁসির রায় হয়েছিল, নিজের ফাঁসির সংবাদ শুনে তিনি অবলীলায় বলেছিলেন-

"মৃত্যুর ফয়সালা জমীনে নয়, আসমান থেকে আসে"। (ফাঁসির মঞ্চ পর্যন্ত তিনি গিয়েছিলেন, পরে অবশ্য জালেশাহীরা তাকে ফাঁসি দিতে পারেনি)।

★ সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী তার জীবনে ইসলামের জন্য যত বই লিখেছেন সে হিসাব করলে দেখা যায় তাঁর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হায়াতের জিন্দেগীতে প্রতিদিনই বই লিখেছেন গড়ে ৪৯ পৃষ্টা করে।


মন্তব্যসমূহ

  1. আল্লাহহু আকবার, আল্লাহতাকে জান্নাতের সু মহান আসনের মর্যাদা দান করুক,,আমিন

    উত্তরমুছুন
  2. পাকিস্তানের সাবেক একজন বিচারপতি মওদূদি সাহেবের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের জবাব দিয়ে একটি বই লিখেছেন। সেই বইটির নাম বললে উপকৃত হবো।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

শর্ষীনা, ফুরফুরা, জৌনপুরী, ফুলতলী, সোনাকান্দা সহ সকল বালাকোটি পীরগনের শেরেকী আকীদা