সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !







ছবির উৎস: t.ly/VTMPc



ছবিতে শার্টপরা যুবক হলেন পবিত্র কা'বা শরীফের সম্মানিত ইমাম ও খতীব 'তরুণ শায়খ' ড. ইয়াসির আদ-দাওসারি। আজকে মসজিদ আল-হারামে তিনিই ঈদের নামায পড়িয়েছেন এবং খুতবা দিয়েছেন। তিনি একজন প্রখ্যাত ক্বারী। রেডিও-টিভিতে হামেশা তিলাওয়াত করেন। নানা ক্বিরাআত প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন মুহাম্মদ বিন সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, তুলনামূলক আইনশাস্ত্রে। ১৯৮১ সালে রিয়াদে জন্মগ্রহণ করা ড. ইয়াসির আদ-দাওসারি অক্টোবর ২০১৯-এ মসজিদ আল-হারামের সর্বকনিষ্ঠ ইমাম ও পরে খতীব হিসেবে নিযুক্ত হন। তাঁর কুরআন তিলাওয়াতে এক ধরণের স্বকীয় মাধুর্য রয়েছে, ফলে দুনিয়ার অসংখ্য মুসলমান তাঁর সুর অনুকরণ করতে চেষ্টা করেন। 

কাবার মশহুর মুয়াজ্জিন






হানাফি মাযহাবের কিছু উজ্জ্বল নক্ষত্র এদের দাড়ির অবস্থা দেখুন 

১) শাইখুশ শাম মুসনাদুশ শাম ইমাম মুহাম্মদ সালেহ আল ফারফুর 
২) সানিয়ে ইমামে আযম ইমাম আব্দুর রাজ্জাক হালাভি 
৩) শাইখুল ইসলাম ইমামুল মুতাকাল্লিমিন ইমাম মুহাম্মদ আল কাওসারি 
৪) হুজ্জাতুল ইসলাম উসমানি শাইখুল ইসলাম ইমাম মুস্তফা সাবরি এফেন্দি হানাফি নকশবন্দি 
৫) মুহাক্কিকুল হানাফিয়া ইমাম মুহাম্মদ সিরাজ এফেন্দি হানাফি নকশবন্দি 
৬) ইমামু মাশাইখিল হানাফিয়্যাহ ইমাম আবু জাহরা আল মিসরি 
৭) ইমামুল আসর শাইখ আওয়ামাহ
৮) ইমামু মুহাদ্দিসিল হানাফিয়া শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ 
৯) হানাফি মাযহাবের উলামা তলাবাদের আদর্শ যিনি শাইখ আব্দুল কাদির হুসাইন 
১০) ইমামুল মুতাকাল্লিমিন ফিল হানাফিয়্যহ সাইয়্যিদ আহমদ শরিফ আল আজহারি 

হানাফি মাযহাবের, আহলুস সুন্নাহর মুখপাত্র এত বড় বড় আলিম দের, কারোর দাড়িই এক মুস্টি নয় 

















হানাফী মাযহাবের বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী দাড়ি ছোট করার কোন নির্দিষ্ট সীমা নাই। ইমাম আবু ইউসুফ রহিমাহুল্লাহ যিনি আবু হানিফার প্রধান ছাত্র এবং হানাফী মাযহাবের রূপকারদের একজন তিনি এই বিষয়ে স্পষ্ট করেই লিখেছেন তার কিতাবুল আসারে!

ইউসুফ তার পিতা আবু ইউসুফ থেকে, তিনি আবু হানীফা থেকে, তিনি হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহিম নাখই থেকে বর্ণনা করেন,

"দাড়ি ছোট করায় কোন সমস্যা নেই যতক্ষণ মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা হচ্ছে না।"

সূত্র: ইমাম আবু ইউসুফ রচিত কিতাবুল আসার, পৃষ্ঠা ২৩৫, রেওয়ায়াত নং ১০৪২।

বর্ণনার এই সনদকে যদি কেউ অস্বীকার করে তবে সে গোটা হানাফী মাযহাবকেই অস্বীকারকারী কেননা আবু ইউসুফ আবু হানীফা থেকে, আবু হানীফা হাম্মাদ থেকে, হাম্মাদ ইব্রাহিম থেকে, ইব্রাহিম কুফার তাবেঈদের থেকে, তারা সাহাবী আবদুল্লাহ বিন মাসউদ থেকে। এটাই হলো হানাফী মাযহাবের সনদ। 
عنوان الكتاب: كتاب الآثار (ط. العثمانية)
 المؤلف: أبو يوسف يعقوب بن إبراهيم الأنصاري
 المحقق: أبو الوفا الأفغاني
হানাফি মাযহাব অনুযায়ী দাড়ি রাখার বিধান - শায়খ ফারায রাব্বানি আল হানাফি ১. হানাফি মাযহাব অনুযায়ী দাড়ি রাখা সুন্নাতে আদাতের অংশ, সুন্নাতে হেদায়াত নয়। ২. আদব, শিষ্টাচারের ক্ষেত্রে নবিজির আদেশ মুস্তাহাব বা উৎসাহ নির্দেশ করে, ওয়াজিব বা বাধ্যতা নয়। ৩. হানাফি মাযহাব অনুযায়ী এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নয়, বরং সুন্নাতে আদত। সুতরাং এটা ওয়াজিব নয়, বরং মুস্তাহাব। ৪. ভারতীয় উপমহাদেশের হানাফিরা দাড়ির ক্ষেত্রে যে মত পোষণ করে, সেটা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের হানাফি আলেমদের বোঝাপড়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং হানাফি মাযহাবের উসুল অনুযায়ী এই মত প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য। ৫. দাড়ির মাসআলা একটি ইখতেলাফি মাসআলা। শাফেয়ী মাযহাবে দাড়ি রাখা বাধ্যতামূলক নয়। ৬. চার মাযহাবের মধ্যকার যে কোন শুদ্ধ মত কেই গ্রহণ করলে, তার নিন্দা-সমালোচনা করা যাবে না। এটা মূলধারার ইসলামের প্রতিষ্ঠিত নীতিবিরোধী। ৭. কেউ চাইলে তার নিজ মতের দিকে মানুষকে আহ্বান করতে পারে। পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু ভিন্নমত পালনকারীর ব্যাপারে খারাপ ধারণা রাখার সুযোগ কারো নাই। https://youtu.be/waSDq6vTS8A শায়েখ সালাহ আবুল হাজ্জ, জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয়ে কুল্লিয়াতু ফিকহি হানাফি এর ডীন। উপমহাদেশের আলেমদের দাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ির কারন ও ইতিহাস আলোচনা করেছেন। হানাফি মাযহাব অনুযায়ী দাড়ি রাখার বিধান — শায়খ ফারায রাব্বানি ইউটিউব: https://www.youtube.com/watch?v=FzH9ffevF6E আল্লামা তাহিরুল কাদরী https://youtu.be/NEoiQUVZfVw দাড়ির মাসআলায় এই কায়েদার প্রয়োগ বুঝতে এটা দেখুন। https://www.youtube.com/watch?v=ASeUPqiFDHM&t=33s ইবনুল জাওযি নির্বোধ ও উন্মাদদের পরিচিতি ও বিবরণ নিয়ে একটি বই লিখেছেন। নাম রেখেছেন "আখবারুল হামকা ওয়াল মুগাফফালিন" (নির্বোধ ও উদ্ভ্রান্তদের খবরাখবর)। বইতে তিনি নির্বোধ চেনার একটি লক্ষ্মণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তার দীর্ঘ ও লম্বা দাড়ি। ইবনুল জাওযি লেখেন, وقال الأحنف بن قيس: إذا رأيت الرجل عظيم الهامة طويل اللحية فاحكم عليه بالرقاعة ولو كان أمية بن عبد شمس. আহনাফ বিন কায়েস বলেন, "যদি কোন লোককে দেখ তার বিরাট মাথা ও লম্বা দাড়ি, তবে তাকে নির্বোধ বলে বিবেচনা কর, যদিও সে উমাইয়া বিন আব্দে শামস হয়।" وقال معاوية لرجل عتب عليه: كفانا في الشهادة عليك في حماقتك وسخافة عقلك، ما نراه من طول لحيتك. আমিরে মুয়াবিয়ার ব্যাপারে এক লোক আপত্তি জানালে তিনি বলেন, "তোমার বেকুবি ও নির্বুদ্ধিতার ব্যাপারে সাক্ষ্য হিসেবে তোমার যেই লম্বা দাড়ি আমরা দেখছি তাই যথেষ্ট।" وقال عبد الملك بن مروان: من طالت لحيته فهو كوسجٌ في عقله. উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান বলেন, "যার দাড়ি লম্বা হয়, তার আকল পাতলা হয়।" দাড়ি নিয়ে আবু তালেব আল মাক্কি তার "কুতুল কুলুব" বইতে লেখেন, وكان إبراهيم النخعي ومثله من السلف يقول: عجبت لرجل عاقل طويل اللحية كيف لا يأخذ من لحيته فيجعلها بين لحيتين فإن التوسط في كل شيء حسن ইব্রাহিম নাখই ও তার মত সালাফরা বলতেন, "বুদ্ধিমান লোকের কীভাবে লম্বা দাড়ি থাকতে পারে এই নিয়ে আমি আশ্চর্য হই। সে কেন তার দাড়ি কেটে দুই থুতনির মাঝে রাখে না? নিশ্চয়ই প্রত্যেক বিষয়ে মধ্যমপন্থাই সুন্দর।" একইভাবে হানাফি মাযহাবের বিখ্যাত বই "আল বাহরুর রায়েক" এ ইবনে নুজাইম অতিদীর্ঘ দাড়িকে নির্বোধ চেনার একটি পদ্ধতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ويستدل على صفته من حيث الصورة بطول اللحية "চেহারা-সুরতের দিক থেকে (আহমক) চেনার একটি পদ্ধতি হল তার দীর্ঘ দাড়ি।" মালিকি মাযহাবের বিখ্যাত গ্রন্থ ইবনে আবি যায়দ আল কায়রোয়ানির লেখা "রিসালা"। এর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখেছেন ইমাম নাফরাওয়ি "আল ফাওয়াকিহুদ দাওয়ানি" নামে। তিনি বলেন, (قَالَ مَالِكٌ (وَلَا بَأْسَ بِالْأَخْذِ مِنْ طُولِهَا إذَا طَالَتْ) طُولًا (كَثِيرًا) بِحَيْثُ خَرَجَتْ عَنْ الْمُعْتَادِ لِغَالِبِ النَّاسِ فَيُقَصُّ الزَّائِدُ لِأَنَّ بَقَاءَهُ يَقْبُحُ بِهِ الْمَنْظَرُ، وَحُكْمُ الْأَخْذِ النَّدْبُ فَلَا بَأْسَ هُنَا لِمَا هُوَ خَيْرٌ مِنْ غَيْرِهِ وَالْمَعْرُوفُ لَا حَدَّ لِلْمَأْخُوذِ، وَيَنْبَغِي الِاقْتِصَارُ عَلَى مَا تَحْسُنُ بِهِ الْهَيْئَةُ ইমাম মালিক বলেন, "দাড়ি যদি বেশি লম্বা হয়ে যায় তবে তা কেটে ফেলতে সমস্যা নেই।" বেশি লম্বা বলতে অধিকাংশ মানুষ যতটুকু লম্বা রেখে অভ্যস্থ তার চেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতে হবে কেননা এটা রেখে দিলে দেখতে খারাপ দেখায়। দাড়ি কাটার হুকুম হল এটা মানদুব (উত্তম)। সুতরাং এক্ষেত্রে যেটা অন্যটার চেয়ে ভালো সেটা করতে সমস্যা নেই। জ্ঞাতব্য যে, কতটুকু কাটতে হবে এই ব্যাপারে কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই। তবে আকৃতিতে যতটুকু সুন্দর ততটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকা উচিৎ।


রাসুলুল্লাহ (সাঃ) লম্বা দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিকে দেখে বললেন, "কেনো তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেকে বিকৃত করে?" [মাসাইলে আবি দাউদ]

এটিকে ইমাম মুজাহিদ মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ইমাম যাহাবী বলেন, তার মুরসালকে জায়্যিদ (সঠিক ও গ্রহণযোগ্য) হিসাবে গণ্য করা হয়।


দাড়ি লম্বা করার শরয়ী বিধান
----------------------------------------------
ইবনু ‘উমার সূত্রে নাবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, 
خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ وَفِّرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا حَجَّ أَوْ اعْتَمَرَ قَبَضَ عَلَى لِحْيَتِهِ فَمَا فَضَلَ أَخَذَهُ.
"তোমরা মুশরিকদের উল্টো করবেঃ দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে।" ইবনু ‘উমার যখন হাজ্জ বা ‘উমরাহ করতেন, তখন তিনি তাঁর দাড়ি মুষ্টি করে ধরতেন এবং মুষ্টির বাইরে যতটুকু বেশি থাকত, তা কেটে ফেলতেন। (সহীহ বুখারী হাঃ ৫৮৯২; সহীহ মুসলিম হাঃ ২৫৯, সুনান নাসায়ী হাঃ ৫০৪৬; মুসনাদর আহমাদ হাঃ ৪৬৫৪)

দাড়ি রাখার হাদীসগুলো থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) লম্বা করতে বা ছেড়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এর কোনো সীমা নির্দিষ্ট করে দেননি। তাই এ ব্যাপারে সালফে সালেহীনদের মধ্যে তিন মতামত পাওয়া যায়। 
১. যতই লম্বা হোক দাড়ি কাটা যাবে না। দাড়ির যে কোনো অংশ কর্তন করা হারাম।
২. এক মুষ্ঠি দাড়ি রাখা ওয়াজিব। অতিরিক্ত অংশ কর্তন করা জায়েয।
৩. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দাড়ি রাখার কোন সীমা বা পরিমাণ নির্ধারণ করে দেননি। তাই দাড়ি এ পর্যন্ত ছাটা জায়েজ, যে পর্যন্ত লোক সমাজের প্রচলিত রীতি বহির্ভূত না হয়।

যেসব সাহাবায়ে কেরাম দাড়ি রাখার হাদীস বর্ণনা করেছেন তাঁরা নিজেরাই অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) দাড়ি কর্তন করেছেন। (সহীহ বুখারী হাঃ ৫৮৯২; উমদাতুল ক্বারী শারহে সহীহুল বুখারী ১৮/৯০-৯১) হারাম কাজ হলে তাঁরা দাড়ি কর্তন করতেন না। সুতরাং প্রথম মত গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বিতীয়তঃ সাহাবীদের কেউ বলেননি, এক মুষ্ঠি দাড়ি রাখা ওয়াজিব, যদিও তাঁদের কেউ এক মুষ্ঠি রেখে অতিরিক্ত অংশ মাঝে মধ্যে কর্তন করতেন। সুতরাং দ্বিতীয় মতেরও দলিল নেই। কারণ দাড়ি ব্যাপারে নবী (সাঃ) কোন পরিমাণ নির্ধারণ করেন নি। তিনি শুধু এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, দাড়ি বাড়াতে হবে। তাই অন্তত এতটুকু দাড়ি জরুরী, সমাজের সাধারণ পরিভাষায় তাকে দাড়ি রাখা বলে গণ্য করা যায়। এটি হচ্ছে তৃতীয় মত। এ মতের পক্ষে রয়েছেন ইমাম আবু হানিফার উস্তাদ ইবরাহীম নাখাঈ, ইমাম মালেক, শাফেয়ী মাযহাবের ফকিহ ইমাম তাবারী, ইমাম কাজী ইয়াজ, হানাফি মাযহাবের ফকিহ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী, আল্লামা ইবনু বাত্তাল, আল্লামা মওদুদী, শায়েখ শুয়াইব আরনাঊত, শায়েখ ইউসুফ আল কারযাভী সহ বেশ কিছু আলিম।

উল্লেখ্য যে, কোনো হাদীসেই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দাড়ির কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করে দেননি। অথবা অন্তত এতটুকু বলেননি, আমি যতটুকু দাড়ি রেখেছি তোমরাও ততটুকু রাখো। দাড়ি বিষযক হাদীস বর্ণনাকারী ও দাড়ি কর্তনকারী সাহাবী ইবনে ওমর, আবু হুরায়রা (রাঃ) এ কথা বলেননি যে, আমরা যেভাবে এক মুষ্ঠি দাড়ি রেখে অতিরিক্ত অংশ কর্তন করেছি, সেই ভাবে কর্তন করে এক মুষ্ঠি দাড়ি রাখা ওয়াজিব। তাই হাদীসের আলোকে ইমামগণ ইজতিহাদ করতে বাধ্য হয়েছেন এবং ইজতিহাদ করতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই মতভেদের উদ্ভব হয়েছে। 
সালফে সালেহীনগণ যেসব বিষয়ে মতভেদ করেছেন তার যেকোনো একটিকে প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বাতিল বলে উড়িয়ে দিয়ে কাউকে ফাসিক বা গোমড়া বলা যেতে পারে না এবং এ বিষয়কে কেন্দ্র করে কারো ঈমানের উপর হামলা করা চরম ধৃষ্টতা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এমন ধৃষ্টতা আমাদের কাওমী ঘরনার আলিমরা দেখিয়েছেন। এমনকি শায়েখ আবদুল মালেকের মত আলিমও এ নিকৃষ্ট পন্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারননি।

মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক বলেন, "দাড়ি কামানো বা এক মুষ্ঠি থেকে ছোট রাখা এমন গোনাহ, যা মানুষের সঙ্গে সর্বদা সংযুক্ত থাকে এবং এমন একটা গোনাহ, যা গোপন করার কোন উপায় নেই। এটা একটা প্রকাশ্য গোনাহ, যা খুবই ভয়াবহ। এসব সত্ত্বেও দাড়ির সঙ্গে এই আচরণটা করা হয় সুন্নতের প্রতি অনীহা এবং অনৈসলামিক ফ্যাশনের প্রতি আকর্ষণের কারণে। এ অবস্থায় তো ঈমানের ব্যাপারেই শঙ্কিত হতে হয়।" (প্রচলিত ভুল, পৃঃ ১৪২)
দেখুন, এখানে তিনি দাড়ি কামানো ও এক মুষ্ঠি থেকে কম দাড়ি রাখাকে একই ধরণের অপরাধ বলে ফতোয়া দিয়েছেন। আর এখানেই তিনি ক্ষান্ত হননি, বরং তিনি আরো এক ধাপ এগিয়ে ঈমানের উপর হামলা করেছেন। (নাউজুবিল্লাহ) বর্তমান জামানার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও হানাফি ফকিহ শায়েখ শুয়াইব আরনাঊত (রাহঃ) এক মুষ্ঠির কম দাড়ি রেখেছিলেন। তাহলে কি এখন আমরা সবাই তাঁর ঈমানের উপর হামলা করব?

দেখুন মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব শায়েখ শুয়াইব আরনাঊত (রাহঃ) সম্পর্কে কি বলেছেন। তিনি বলেন,
"শায়েখ শুয়াইবের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় তাঁর তাহকীককৃত কিতাব ‘সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা’র মাধ্যমে। যখন জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া বিন্নুরী টাউন করাচিতে আমরা উলূমুল হাদীস বিভাগের তালিবে ইলম। সূচীপত্রসহ পঁচিশ খণ্ডের এই সুবৃহৎ গ্রন্থখানি তাঁর তাহকীকে  (নিরীক্ষণ ও সম্পাদনায়) ছেপে প্রকাশিত হয়। কী সূক্ষ্ম সম্পাদনা! কী চমৎকার তাহকীক! এত বিশাল কলেবর হওয়া সত্ত্বেও সম্পাদনা কিংবা ছাপার ভুল খুব সামান্য। সেই সঙ্গে কিতাবটির বিভিন্ন স্থানে পাদটীকায় যুক্ত হয়েছে কত দামী-দামী নোট! আর ছাপাও সে কী সুন্দর! দৃষ্টিনন্দন!

তাহকীকুত তুরাছের কাজ তো করছেন অনেকেই। কিন্তু ইখলাছ ও ইতকান এবং নিষ্ঠা ও নিপুণতার সাথে এই কাজ সম্পাদন করেন- এমন মুহাক্কিক ও বিশ্বস্ততা রক্ষাকারী দায়িত্বশীল আলিম একবারেই নগণ্য সংখ্যক। শায়েখ শুয়াইব আরনাউত সেই হাতেগোনা ব্যক্তিত্বদেরই একজন ছিলেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা এই মহৎ গুণাবলী দান করেছেন এবং যারা আল্লাহ প্রদত্ত এই গুণ ও যোগ্যতাকে ইলমে দ্বীনের সেবায়, বিশেষ করে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সংকলিত ইলমী উত্তরাধিকারের সংরক্ষণ ও তার প্রচার-প্রসারে উজাড় করে দিয়েছেন। এভাবে তিনি সে সকল কীর্তিমান পুরুষদের কাতারে শামিল হয়ে গেছেন, ধরণীপৃষ্ঠ থেকে যাদের চিহ্ন মুছে দেওয়া কোনোদিনই সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক কালের উত্তরসূরীদের মাঝে তাদের পূর্বসূরীদের নমুনা পয়দা করে দিন এবং কিয়ামত পর্যন্ত উম্মতের হেফাযত ও সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।" (লিংক কমেন্টে)

দেখুন, এক মুষ্ঠির কম দাড়ি রাখার পরও মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব শায়েখ শুয়াইব আরনাঊত রাহঃ এর ঈমানের উপর হামলা না করে বরং প্রশংসা করেছেন। তাহলে অন্যদের বেলায় হামলা কেন? আসলে এ ক্ষেত্রে আল্লামা মওদুদী রাহঃ বা শায়েখ শুয়াইব আরনাঊত রাহঃ একা নন; বরং এদের এ মতের সাথে রয়েছেন সালফে সালেহীনদের এক বড় দল।

ইমাম ইবরাহীম নাখঈ (রাহঃ) বলেন, 
لا بأس أن يأخذ الرجل من لحيته، ما لم يتشبه بأهل الشرك.
যতটুকু দাড়ি রাখলে মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য না হয়, ততটুকু দাড়ি রেখে বাকি অংশ ছেঁটে ফেলতে কোন দোষ নেই। (আবু ইউসুফ, আল আছার হাঃ ১০৪২)

কাজী ইয়াজ রাহঃ বলেন, 
يكره حلق اللحية وقصها وتحذ بفها.
দাড়ি একেবারে ছেটে ফেলা কিংবা মুড়ে ফেলা মাকরুহ। তবে চতুর্দিক থেকে ছেঁটে নেওয়া উত্তম।
তিনি আরো বলেন যে, দাড়ির পরিমাণ সম্পর্কে সালফে সালেহীনদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন শরীয়তের কোন পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয় নি, তবে অতিরিক্ত লম্বা করা ঠিক নয় বরং ছেটে ফেলাই বাঞ্ছনীয়। ইমাম মালেক অতিরিক্ত লম্বা দাড়ি মাকরুহ মনে করতেন। আবার কেউ কেউ মুষ্টির বাহিরে দাড়ি রাখা পছন্দ করতেন না। (নববী, শারহে সহীহুল মুসলিম ৩/১৫১)

বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস, সহীহ বুখারীর প্রসিদ্ধ ভাষ্যকার, হানাফি মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফকিহ, শ্রদ্ধেয় ইমাম, হাফেজে হাদীস, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রাহঃ) ও সহীহ বুখারীর অপর ভাষ্যকার ইবনু বাত্তাল (রাহঃ) দাড়ি রাখা বিষয়ক হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শাফিয়ী মাযহাবের ফকিহ, ইমাম তাবারী রাহিমাহুল্লাহ এর বরাত দিয়ে লেখনঃ
قدثبت الحجة عن رسول الله صلي الله عليه وسلم علي خصوص هذا الخبر ان اللحية محظور اعفاءما واجب قصها علي اختلاف من السلف في قدر ذلك وحده فقال بعضهم حذ ذلك ان يزاد علي قدر القبضة طولا وان ينتشر عرضا فيقبح ذالك وقال اخرون يأخذه من طولها وعرضها مالم يفحش اخذه ولم يجدوا في ذلك حذا.
"রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে এ কথা প্রমাণ আছে যে, (দাড়ি লম্বা করা সম্পর্কিত) হাদীসের অর্থ একেবারেই ছেড়ে দেওয়া নয় বরং এর মধ্যে একটা সীমাবদ্ধতা আছে। দাড়ি স্বতঃস্ফূর্তভাবে লম্বা হতে দেয়া নিষিদ্ধ। বরং তা কাটছাট করে সাইজমত রাখা ওয়াজিব। তবে এতে সালফে সালেহীনদের মধ্যে এ সম্পর্কে মতভেদ বিদ্যমান রয়েছে। কেউ বলেছেন, দাড়ির দৈর্ঘ্য এক মুঠোর চেয়ে লম্বা হবে এবং প্রস্থে এমন ভাবে যেন ছড়িয়ে না পড়ে যাতে দৃষ্টিকটু মনে হয়। অন্যান্য সালফে সালেহীনগণ বলেছেন যে, দৈর্ঘ্য প্রস্থ ছাটবে কিন্তু খুব বেশি খাটো করবে না। তবে তাঁরা এ ব্যাপারে কোন সীমা নির্ধারণ করেন নি।" (উমদাতুল ক্বারী শারহে সহীহুল বুখারী ১৮/৯০-৯১; ইবনু বাত্তাল, শারহে সহীহুল বুখারী ৯/১৪৬-১৪৭)

অতঃপর আল্লামা আইনী (রাহঃ) বলেনঃ
غيران معني ذلك عندي مالم يخرج من عرف الناس-
"আমার মতে এর অর্থ হলো দাড়ি এ পর্যন্ত ছাটা জায়েজ, যে পর্যন্ত লোক সমাজের প্রচলিত রীতি বহির্ভূত না হয়।" (উমদাতুল ক্বারী শারহে সহীহুল বুখারী ১৮/৯১)


নবীর অনুসরণে খোদ দাড়ি রাখাই সুন্নত। এটার ওপর আবার "সুন্নতি" নামক তকমা যোগ করা অর্থহীন। দাড়ির সংজ্ঞা হলো দুই চোয়ালের হাড়ের ওপর যে চুল গজায়। যারা এই চুলকে গজাতে দেয় তারাই সুন্নতের অনুসারী। একে যদি আবার মনগড়া কোন বৈশিষ্ট্য দিয়ে সুন্নতি বানাতে চান সেটা হবে দ্বীন নিয়ে খেলতামাশা। সুবহের ফরজ নামাজের দুই রাকাত নামাজ পড়া সুন্নত। যে এটা পড়েছে সেই সুন্নত আদায় করেছে। এখানে যেমন সুন্নতি স্টাইলে সুন্নত নামায পড়তে হবে বলার সুযোগ নাই, তেমনি দাড়ি রাখার খোদ সুন্নত আমলকে সুন্নতি স্টাইলে রাখতে বলার অর্থ নাই। তবে হ্যাঁ, নবীজী যখন সুন্নত নামাজ আদায় করতেন তখন যেমন বিভিন্ন অতিরিক্ত বিষয়ের পাবন্দী করতেন (খুশু, খুজু ইত্যাদি), তেমনি দাড়ি রাখার সুন্নত আমল করার সময়ও নবীজীর অনুকরণে দাড়ি পরিপাটি রাখা, সুন্দর করা এসব বিষয়ও যুক্ত হবে। নবীজী দাড়ির দৈর্ঘ নির্ধারণ করে দিয়ে যান নি। এই দৈর্ঘ্যের হিসাব নানান অনুমানের ভিত্তিতে বের করা হয়েছে যার কোনটাই অকাট্য না। সাহাবীদের কেউ কেউ এক মুষ্টির পর কেটে ফেলতেন কারণ নিজের হাতে নিজে দাড়ি কাটতে হলে এক হাতে মুষ্টি করে ধরতে হয়, আরেক হাতে কাঁচি দিয়ে কাটতে হয়। এই সহজতার কারণেই এক মুষ্টির আলোচনা এসেছে। খোদ নবীজী কিংবা সাহাবীদের কেউ এক মুষ্টিকে বাধ্যতামূলক ভাবতেন বলে একটা শব্দও কোথাও বর্ণিত নাই।
কোনো হাদীসেই রাসুলুল্লাহ (ﷺ) দাড়ির কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করে দেননি। অথবা অন্তত এতটুকু বলেননি, আমি যতটুকু দাড়ি রেখেছি তোমরাও ততটুকু রাখো। দাড়ি বিষযক হাদীস বর্ণনাকারী ও দাড়ি কর্তনকারী সাহাবী ইবনে ওমর, আবু হুরায়রা (রাঃ) এ কথা বলেননি যে, আমরা যেভাবে এক মুষ্ঠি দাড়ি রেখে অতিরিক্ত অংশ কর্তন করেছি, সেই ভাবে কর্তন করে এক মুষ্ঠি দাড়ি রাখা ওয়াজিব। তাই হাদীসের আলোকে ইমামগণ ইজতিহাদ করতে বাধ্য হয়েছেন এবং ইজতিহাদ করতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই মতভেদের উদ্ভব হয়েছে। 
সালফে সালেহীনগণ যেসব বিষয়ে মতভেদ করেছেন তার যেকোনো একটিকে প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বাতিল বলে উড়িয়ে দিয়ে কাউকে ফাসিক বা গোমড়া বলা যেতে পারে না এবং এ বিষয়কে কেন্দ্র করে কারো ঈমানের উপর হামলা করা চরম ধৃষ্টতা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এমন ধৃষ্টতা আমাদের কাওমী ঘরনার আলিমরা দেখিয়েছেন। 

কাজী ইয়াজ (রাহঃ) বলেন, 
يكره حلق اللحية وقصها وتحذ بفها.
দাড়ি একেবারে চেঁচে/কেটে ফেলা কিংবা মুড়ে ফেলা মাকরুহ। তবে চতুর্দিক থেকে ছেঁটে নেওয়া উত্তম।
তিনি আরো বলেন যে, দাড়ির পরিমাণ সম্পর্কে সালফে সালেহীনদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন শরীয়তের কোন পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয় নি, তবে অতিরিক্ত লম্বা করা ঠিক নয় বরং ছেটে ফেলাই বাঞ্ছনীয়। ইমাম মালেক অতিরিক্ত লম্বা দাড়ি মাকরুহ মনে করতেন। আবার কেউ কেউ মুষ্টির বাহিরে দাড়ি রাখা পছন্দ করতেন না। (নববী, শারহে সহীহুল মুসলিম ৩/১৫১)

বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস, সহীহ বুখারীর প্রসিদ্ধ ভাষ্যকার, হানাফি মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফকিহ, শ্রদ্ধেয় ইমাম, হাফেজে হাদীস, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রাহঃ) ও সহীহ বুখারীর অপর ভাষ্যকার ইমাম ইবনু বাত্তাল (রাহঃ) দাড়ি রাখা বিষয়ক হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শাফিয়ী মাযহাবের ফকিহ, ইমাম তাবারী (রাহঃ) এর বরাত দিয়ে লেখনঃ
قدثبت الحجة عن رسول الله صلي الله عليه وسلم علي خصوص هذا الخبر ان اللحية محظور اعفاءما واجب قصها علي اختلاف من السلف في قدر ذلك وحده فقال بعضهم حذ ذلك ان يزاد علي قدر القبضة طولا وان ينتشر عرضا فيقبح ذالك وقال اخرون يأخذه من طولها وعرضها مالم يفحش اخذه ولم يجدوا في ذلك حذا.
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) থেকে এ কথা প্রমাণ আছে যে, (দাড়ি লম্বা করা বা ছেড়ে দেওয়া সম্পর্কিত) হাদীসের অর্থ একেবারেই ছেড়ে দেওয়া নয় বরং এর মধ্যে একটা সীমাবদ্ধতা আছে। দাড়ি স্বতঃস্ফূর্তভাবে লম্বা হতে দেয়া নিষিদ্ধ। বরং তা কাটছাট করে সাইজমত রাখা ওয়াজিব। তবে এতে সালফে সালেহীনদের মধ্যে এ সম্পর্কে মতভেদ বিদ্যমান রয়েছে। কেউ বলেছেন, দাড়ির দৈর্ঘ্য এক মুঠোর চেয়ে লম্বা হবে এবং প্রস্থে এমন ভাবে যেন ছড়িয়ে না পড়ে যাতে দৃষ্টিকটু মনে হয়। অন্যান্য সালফে সালেহীনগণ বলেছেন যে, দৈর্ঘ্য প্রস্থ ছাটবে কিন্তু খুব বেশি খাটো করবে না। তবে তাঁরা এ ব্যাপারে কোন সীমা নির্ধারণ করেন নি।" (উমদাতুল ক্বারী শারহে সহীহুল বুখারী ১৮/৯০-৯১; ইবনু বাত্তাল, শারহে সহীহুল বুখারী ৯/১৪৬-১৪৭)

অতঃপর আল্লামা আইনী (রাহঃ) বলেনঃ
غيران معني ذلك عندي مالم يخرج من عرف الناس-
"আমার মতে এর অর্থ হলো দাড়ি এ পর্যন্ত ছাটা জায়েজ, যে পর্যন্ত লোক সমাজের প্রচলিত রীতি বহির্ভূত না হয়।" (উমদাতুল ক্বারী শারহে সহীহুল বুখারী ১৮/৯১)


দাড়ি - اللحية

ফুকাহারা দাড়ির হুকুমের ব্যাপারে মতবিরোধ করেছেন। 

এটি একটি ফিকহী বিষয় (من المسائل الفقهية الفرعيَّة) যার উপর মতানৈক্য বৈধ এবং এতে আমাদের বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়। 

(১) রাসূল সাঃ বলেছেন:
خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ، وَفِّرُوا اللِّحَى، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ
মুশরিকদের বিরোধিতা করো। দাড়ি লম্বা করো এবং মোছ (গোঁফ) ছোট করো। [সহীহ বুখারী: ৫৮৯২]

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন:

এই হাদীসটি পানির মতো স্বচ্ছ। কেউ কিভাবে এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করতে পারে?

বেশ, তবে এই শব্দগুলি দ্বারা ওয়াজিব, মুস্তাহাব, উপদেশ ইত্যাদি হিসেবে বোঝা যেতে পারে। 

উদাহরণস্বরূপ:

(২) রাসূল সাঃ একই শব্দগুলি দ্বারা এটাও বলেছেন:
إِنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى لاَ يَصْبُغُونَ فَخَالِفُوهُمْ 
ইহুদি এবং খ্রিস্টানরা তাদের চুলে রঙ করে না, সুতরাং তারা যা করে তার বিপরীত করো। [সহীহ বুখারী: ৫৮৯৯]

কেউ বলে না যে, চুলে রং করা ওয়াজিব... যদিওবা উভয় হাদীসে একই শব্দগুলি বর্ণিত হয়েছে। 

(৩) হাদীসে আরও এসেছে:

حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ يَحْيَى ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْعَلَاءِ بْنِ زَبْرٍ ، حَدَّثَنِي الْقَاسِمُ قَالَ : سَمِعْتُ أَبَا أُمَامَةَ يَقُولُ : خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى مَشْيَخَةٍ مِنَ الْأَنْصَارٍ بِيضٌ لِحَاهُمْ فَقَالَ : يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ حَمِّرُوا وَصَفِّرُوا ، وَخَالِفُوا أَهْلَ الْكِتَابِ . قَالَ : فَقُلْنَا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنَّ أَهْلَ الْكِتَابِ يَتَسَرْوَلَونَ وَلْا يَأْتَزِرُونَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : تَسَرْوَلُوا وَائْتَزِرُوا وَخَالِفُوا أَهْلَ الْكِتَابِ . قَالَ : فَقُلْنَا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنَّ أَهْلَ الْكِتَابِ يَتَخَفَّفُونَ وَلَا يَنْتَعِلُونَ . قَالَ : فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : فَتَخَفَّفُوا وَانْتَعِلُوا وَخَالِفُوا أَهْلَ الْكِتَابِ . قَالَ : فَقُلْنَا : يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَهْلَ الْكِتَابِ يَقُصُّونَ عَثَانِينَهُمْ وَيُوَفِّرُونَ سِبَالَهُمْ . قَالَ : فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : قُصُّوا سِبَالَكُمْ وَوَفِّرُوا عَثَانِينَكُمْ وَخَالِفُوا أَهْلَ الْكِتَابِ
আবু উমামাহ বর্ণনা করেন যে, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের একদল বৃদ্ধ লোকের কাছে আসলেন যাদের দাড়ি ছিল সম্পূর্ণ সাদা।
তিনি তাদেরকে বললেন: “হে আনসার সম্প্রদায়, তোমরা তোমাদের দাড়ি লাল বা সোনালী করে নাও এবং (এভাবে) আহলে কিতাবদের থেকে আলাদা হয়ে যাও।”
আবূ উমামাহ বলেন: আমি জিজ্ঞেস করলাম: “হে নবী আহলে কিতাবরা প্যান্ট জাতীয় পোশাক পরিধান করে এবং কটি মোড়ানো এড়িয়ে চলে... আমাদের কি করা উচিত?
নবী (সাঃ) বললেন: “তোমরা প্যান্ট পরিধান করো এবং কটি মুড়ে [এভাবে] আহলে কিতাবদের থেকে আলাদা হও।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম: “হে নবী, আহলে কিতাবরা খালি পায়ে চলাফেরা করে এবং জুতা পরিধান থেকে বিরত থাকে, আমাদের কি করা উচিত?”
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “তোমরা খালি পায়ে হাঁটবে এবং জুতাও পরিধান করবে এবং আহলে কিতাবদের থেকে আলাদা হবে।”
অতঃপর আমরা জিজ্ঞেস করলাম: “হে নবী, আহলে কিতাবরা তাদের দাড়ি ছোট রাখে এবং তাদের গোঁফ লম্বা করে, আমাদের কি করা উচিত?”
নবী বললেন: “তোমরা গোঁফ ছেঁটে দাও এবং দাড়ি লম্বা করো এবং [এভাবে] আহলে কিতাবদের থেকে আলাদা হও।” [মুসনাদে আহমাদ: ২১৭৮৯; সনদ সহীহ]

END QUOTE.

খালি পায়ে হাঁটা কি ওয়াজিব?
কটি কাপড় পরা কি বাধ্যতামূলক?
উত্তর হলো: না। এসব করা ওয়াজিব নয়। কেউ এগুলোকে ওয়াজিব বলে নি। 

তাহলে শুধুমাত্র দাড়ির ক্ষেত্রে ওয়াজিব কেনো? যদিওবা দাড়িও একই তালিকাভুক্ত।

জুতা পরে নামাজ পড়া সম্পর্কেও অনুরূপ বর্ণনা আছে:
  https://sunnah.com/abudawud/2/262

রমজানে সেহরী খাওয়া মর্মেও অনুরূপ বর্ণনা বর্ণিত হয়েছে:
 https://sunnah.com/muslim/13/56

তথাপি- কেউ বলে না জুতা পরে নামাজ পড়া বা সেহরির জন্য জেগে থাকা ওয়াজিব।

কিন্তু আহলে কিতাবের বিপরীত করার প্রেক্ষাপটেই এসব হুকুম এসেছে।

আমি শুধুমাত্র দেখানোর চেষ্টা করছি যে, কেনো ফুকাহারা মতবিরোধ করেছেন - যাতে আপনি এ বিষয়ে মতপার্থক্য উপলব্ধি করতে পারেন। 

এবং দ্বিতীয়ত:

যদি দাড়ি রাখা ওয়াজিব হতো.. তাহলে মোছ (গোঁফ) ছোট করাও ওয়াজিব হতো, কারণ দুটোই একত্রে উল্লেখিত হয়েছে। 

হয় দুটোই ওয়াজিব, আর না হয় দুটোই ওয়াজিব নয় - কারণ দুটোই একত্রে উল্লেখিত হয়েছে। 

উভয়েই কারণ (علة) কিন্তু একই। خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ

তথাপি, কেউ বলে না যে মোছ বড় করা পাপ।

আবারও বলছি - শুধুমাত্র দাড়ি রাখাই ওয়াজিব কেনো?

-------------------------------

দাড়ি বিষয়ে চার মাযহাবের মতামত:

সকল পণ্ডিতগণ একমত যে, একটু হলেও দাড়ি রাখা বাঞ্ছনীয় এবং কারোর জন্য এই সুন্নাহকে উপহাস করার অনুমতি নেই।

(১) ইবনে হুমাম হানাফী একমত যে, দাড়ি রাখা ওয়াজিব এবং মুণ্ডন করা (কামানো) হারাম। 

(২) প্রথম যুগের হাম্বলীরা দাড়ি কামানোকে অপছন্দনীয় (মাকরুহ) বলেছেন। ইবনে তাইমিয়াহই সর্বপ্রথম বলেন যে, দাড়ি কামানো হারাম। এবং তার পরে আজ পর্যন্ত হাম্বলী উলামারা এই মতের উপরেই স্থির। 

(৩) মালেকীদের মুতামাদ অভিমত হলো, দাড়ি রাখা ওয়াজিব এবং মুণ্ডন করা হারাম। তবে কিছু মালিকি বলেছেন, মুণ্ডন করা (কামানো) মাকরুহ। 

(৪) দাড়ি বিষয়ে শাফেয়ীদের দুটি অভিমত পাওয়া যায়। এবং মুতামাদ অভিমত হলো, দাড়ি রাখা মুস্তাহাব এবং দাড়ি কামানো অপছন্দনীয়। 

শাস্ত্রীয় (উসুলি) ফুকাহারা এই দৃষ্টিভঙ্গি ধরে রেখেছেন এবং শতাব্দী ধরে আলোচনা করেছেন - এটি কিছু আধুনিকতাবাদী মতামত নয়। (অর্থাৎ, বিচ্ছিন্ন বা শায নয় )

এটা হলো সেই অভিমত যা বর্তমান সময়ের দেওয়া ফতুয়ার সাথে মিল খায় না। তবে এটা গুরুত্বপুর্ণ যে, মানুষ জানুক:

ইমাম শাফেয়ী বলেছেন:
وَهُوَ وَإِنْ كَانَ فِي اللِّحْيَةِ لَا يَجُوزُ
দাড়ি মুণ্ডন করা (কামানো) জায়েজ নয়। [আল উম্ম: ৬/৮৮]

এ থেকে কিছু শাফেয়ী ফকীহ বুঝ নিয়েছেন যে, দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম। তবে অধিকাংশ শাফেয়ী ফুকাহাদের বুঝ হলো: এর দ্বারা দাড়ি কামানো থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে দাড়ি কামানো হারাম নয়। 

(১) শায়খ সালিম বাহিরি বলেছেন:

 أن الشافعي ما نصَّ على التحريم كما يتوهمه بعض الشافعية ، وإنما نصَّ على عدم الجواز ، وهناك فرق يعرفه الشافعية بين قول الشافعي : (ويحرم) وقوله : (لا يجوز) .
ولذا قال الشافعي : (لا يجوز ترك صلاة الكسوف) ، ومراده : لا يباح .

ইমাম শাফেয়ী এর অর্থ এই নয় যে, এটি (দাড়ি কামানো) হারাম... যেমন কিছু শাফেয়ী ভুলভাবে এটি বুঝেছিলেন, তবে তিনি বলতে চেয়েছিলেন যে এটি অনুমোদিত নয়।
 ইমাম শাফেয়ীর শব্দের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে যখন তিনি বলেন “নিষিদ্ধ” এবং “অনুমোদিত নয়” এবং শাফেয়ীরা এই পার্থক্য সম্পর্কে জানেন।
 একইভাবে, ইমাম শাফেয়ী বলেছেন: “গ্রহণের সালাত ত্যাগ করার অনুমতি নেই।”
এখানে, অনুমতি নেই বলতে তিনি জায়েজ (মুবাহ) (এবং এটা পাপ নয় বুঝিয়েছেন।)

(২) আর-রামলি বলেছেন:
قال الرملي الشافعي في فتاواه (4|69): «حلق لحية الرجل ونتفها مكروه لا حرام
পুরুষদের জন্য দাড়ি কামানো মাকরুহ। তবে হারাম নয়। [ফাতাওয়া: ৪/৬৯]

(৩) ইবনে হাজার হায়তামি বলেছেন:
(فرع) ذكروا هنا في اللحية و نحوها خصالا مكروهة ، منها: نتفها ، وحلقها وكذا الحاجبان.
[ফুরুই বিষয়গুলি]: এখানে তারা (আলেমগণ) দাড়ি এবং অনুরূপ কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন যেগুলি অপছন্দনীয়, তন্মধ্যে দাড়ি কাটা ও মুণ্ডন করা এবং সেই সাথে ভ্রু প্লাকিং করা। [তুহফাতুল মুহতাজ: ৯/৩৭৫]

(৪) আদ-দিম্যাতি বলেছেন:
المعتمد عند الغزالي وشيخ الإسلام وابن حجر في التحفة والرملي والخطيب وغيرهم: الكراهة.
আল-গাজ্জালী, শায়খুল ইসলাম জাকারিয়া আল-আনসারী, ইবনে হাজার, আল-রামলি এবং আল-খতিব (আল-শিরবিনি) এবং অন্যান্যদের উপর নির্ভরশীল মতামত অনুসারে: দাড়ি কামানো অবাঞ্ছিত [মাকরূহ]।

(৫) শায়খুল ইসলাম জাকারিয়া আনসারী বলেছেন:
 ويكره نَتْفُهَا أَيْ اللِّحْيَةِ 
দাড়ি কাটা মাকরুহ। 

(৬) ইমাম নববি বলেছেন:
وَالصَّحِيحُ كَرَاهَةُ الْأَخْذِ مِنْهَا مُطْلَقًا بَلْ يَتْرُكُهَا عَلَى حَالِهَا كَيْفَ كَانَتْ لِلْحَدِيثِ الصَّحِيحِ وَاعْفُوا اللحي
দাড়ি কাটা মাকরুহ। 

(৭) ইবনুল কাসিম আল আব্বাদী বলেন:
قال الشيخان يكره حلق اللحية
শাইখাইন (নববি এবং রাফেই) বলেছেন যে, দাড়ি কামানো মাকরুহ। 

(৮) আল বুজাইরিমি বলেছেন:
 إن حلق اللحية مكروه حتى من الرجل وليس حراماً 
পুরুষদের জন্য দাড়ি কাটা মাকরুহ, এবং এটা হারাম নয়।



দাড়ি রাখা কি ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত?

দাড়ি রাখা ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত মর্মে কোনো সহীহ মারফু হাদীস নেই। বরং সহীহ বুখারীতে যে বর্ণনা বর্ণিত হয়েছে যে, “পাঁচটি জিনিস ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত” তন্মধ্যে দাড়ির উল্লেখ করা হয় নি। দাড়ি রাখা ফিতরাত মর্মে সকল বর্ণনা মুহাদ্দিসীনদের উসুলে সন্দেহজনক। 

এই মর্মে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হাদীস ‘সহীহ মুসলিমে’ হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটির ভাষ্য কিছুটা নিম্নরূপ:

“দশটি জিনিস ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। তন্মধ্যে দাড়ি লম্বা করাও অন্তর্ভুক্ত।”

এই বর্ণনা বেশকিছু কারণে জুমহুর মুহাদ্দিসীন দূর্বল বলেছেন। 

* এই বর্ণনা ইমাম মুসলিম তার সহীহ মুসলিমে এনেছেন। কিন্তু ইমাম আবু নুয়াইম আসবাহানি ‘মুস্তাখরাজ আলা সহীহ মুসলিমে’ ইমাম মুসলিমের রদ করে এই বর্ণনাকে দূর্বল হওয়ার ইশারা করেছেন। এছাড়াও, এই বর্ণনাকে ইমাম তিরমিযী ‘হাসান’ বলেছেন। কিন্তু ইমাম তিরমিযী তাসাহুলের ক্ষেত্রে মুতাসাহিল। *

এই হাদীসের রাবি মুসআব বিন শাইবা দূর্বল, এবং হাদীসে সে পরিত্যাজ্য। তার উপর ইমাম আহমাদ, নাসাঈ, ইমাম আবু হাতেম এবং ইমাম দারাকুতনি প্রমুখের কালাম রয়েছে। 

মুসআব রেওয়ায়াত বর্ণনা করায় তার চেয়ে সিকাহ রাবি সুলাইমান এবং আবু বিশরের বিরোধিতা করেছেন। তিনি এটাকে মারফু বর্ণনা করেছেন, যেখানে তার চেয়ে সিকাহ রাবিরা এটাকে তলক বিন হাবিবের কওল হিসেবে বর্ণনা করেছেন... যিনি একজন সগীর তাবেয়ী। তাই এই বর্ণনা মুরসাল বরং মাকতু।

নিম্নোক্ত মুহাদ্দিসীন এই বর্ণনাকে দূর্বল বলেছেন:

(১) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল [দুয়াফা লিল উকাইলি: ১৭৭৫]
(২) ইমাম নাসাঈ [আল কুবরা: ৯২৪৩]
(৩) ইমাম দারাকুতনি [আস সুনান: ৩১৫; আত তাতাব্বু: পৃষ্ঠা ৩৩৯; আল ইলাল: ৩৪৪৩]
(৪) আবু নুয়াইম আসবাহানি [মুস্তাখরাজ আলা সহীহ মুসলিম: ৬০৪]
(৫) ইবনে আব্দিল বার [আত তামহিদ: ২১/৬৫]
(৬) ইবনে আব্দুল হাদী [আল মুহাররির ফিল হাদীস: ৯৬]
(৭) হাফিজ আল ইরাকী [তাখরিজু আহাদিস আহ্হিয়াহ: ১/৩৫৭]
(৮) ইমাম জাইলাই [নাসাবুর রাই: ১/৭৬]
(৯) হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী ফাতহুল বারিতে যদিও এই হাদীসের দিফা করেছেন,তবে অন্য জায়গায় এটাকে দূর্বল বলেছেন। [আত তালখিস: ১/২৫৯] যার দ্বারা জ্ঞাত হয় যে, ইবনে হাজারের রায়ও জুমহুরের সমর্থনে। 
(১০) মুহাদ্দিছ আবু ইসহাক আল হুয়াইনি [বাজলুল এহসানি বি তাকরিবি সুনান নাসাঈ আবী আব্দুর রহমান: ১/১২৮] তিনি এই হাদীস সম্পর্কে জবরদস্ত ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছেন। 
(১১) মুহাদ্দিছ আব্দুল্লাহ ইউসুফ আল জুদাই [আল লাহিয়াতু দীরাসাতুল হাদীস: ৮১]
(১২) শায়খ মুকবিল বিন হাদী [আল ইলজামাত ওয়াত তাতাব্বু: ৩৪০]
(১৩) মুহাদ্দিছ শুয়াইব আল-আরনাউত,
প্রমুখ।


দাড়ি রাখা ওয়াজিব নাকি সুন্নাত? (একটি উসুলি আলোচনা।)

জুমহুর উলামায়ে ইসলামের নিকটে দাড়ি রাখা ফরজ নয় বরং সুন্নাত। তবে কিছু উলামা দাড়ি রাখা ওয়াজিব বলেছেন। তবে আইম্মায়ে আরবা কিংবা সালাফদের কোনো ইমাম থেকে কোনো নস প্রমাণিত নেই যে, দাড়ি রাখা ওয়াজিব। 

হাম্বলীদের মধ্যে ইবনে তাইমিয়াহ’র (রহ.) পূর্বে কেউ দাড়ি রাখা ওয়াজিব বলেন নি। বরং ইবনে মুফলীহ হাম্বলী তো ইবনে হাজমের ঐক্যমতের দাবি নকল করে এর খন্ডন করেছেন। 

শাফেয়ীদের নিকটে আজ পর্যন্ত মুতামাদ রায় হলো, দাড়ি রাখা ওয়াজিব নয়। তবে মালেকী ও হানাফী মুতাআখখিরিন আলেমদের মধ্যে দাড়ি রাখা ওয়াজিব কওল মজুদ রয়েছে। কাজী ইয়াজ মালেকী ও অন্যান্য পশ্চিমা মালেকী উলামারা মাকরুহ ও মাকরুহ নয় বলেছেন। 

এবং আইম্মায়ে আহনাফদের মধ্যে ইবনে হুমাম হানাফীর পূর্বে কেউ দাড়ি রাখা ওয়াজিব বলেন নি। বরং ইবনে হুমামের আলোচনা থেকেও বুঝা যায় যে, এতে মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম সারখাসি, আইনি প্রমুখ দাড়ি রাখাকে সুন্নাত এবং মান্দুব বলেছেন। 
.
আদেশসূচক ক্রিয়ার পর্যালোচনা:

বলা হয়ে থাকে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুকুম দিয়েছেন দাড়ি রাখার জন্য। আর হুকুম ওয়াজিব সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট।

জ্বি, হুকুম ওয়াজিব সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট... এটা পূর্ণ কথা নয়। কারণ আদেশ যদি শিষ্টাচারের অধ্যায়ে বর্ণিত হয়, তাহলে তা জুমহুরের নিকটে অবশ্যই কাম্য হিসেবে গণ্য হয়। 

কেউ যদি এটা মানতে নারাজ হয়, তাহলে বলা হবে:

রাসুলুল্লাহ সাঃ সাহুর খেতে এবং আহলে কিতাবিদের বিরোধিতা করতে হুকুম দিয়েছেন। তাহলে কি সাহুর খাওয়া ফরজ বা ওয়াজিব? অর্থাৎ, যে সাহুর না খেয়ে রোজা রাখবে.. সে কি ফরজ তরককারী হবে কিংবা তার রোজা হবে না?

রাসুলুল্লাহ সাঃ ইহুদীদের বিরোধিতা করেছেন এবং জুতা পরে নামাজ পড়তে হুকুম দিয়েছেন। তাহলে কি জুতা পরে নামাজ পড়া ফরজ? অথবা যে জুতা না পরে নামাজ পড়বে সে গুনাহগার হবে এবং ইহুদীদের অনুকরণ করবে?

জুমহুর আইম্মায়ে উসুলি এবং ফুকাহাদের নিকটে শিষ্টাচারের অধ্যায়ে বর্ণিত আদেশ এবং নিষেধ গায়রে ওয়াজিব, মান্দুব এবং মাকরুহ বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। 

রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন:
তোমাদের মধ্যে কেউ যেন, এক পায়ে জুতা পরে চলাচল না করে। হয় দুই পা খালি রাখবে, কিংবা দুই পায়েই জুতা পরবে। [সহীহ বুখারী ইত্যাদি]

এর ব্যাখ্যায় ইমাম আবু বাকর ইবনুল আরাবী [মৃত্যু: ৫৩৪হি ] বলেন:

আমাদের পণ্ডিতগণ বলেছেন: এটি তাদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে শিষ্টাচার ও নির্দেশনার নিষেধ - এবং আল্লাহই ভাল জানেন - যে তিনি যদি এক জুতা পরে হাঁটেন তবে জুতা তার জন্য হারাম নয়, এবং তিনি জুমহুরের মতে অবাধ্য (গুনাহগার) নন, যদিও তিনি নিষেধ জানেন।

আর আহলে জাহির বলেন: যদি কোন ব্যক্তি নিষেধ সম্পর্কে অবগত হয় তবে সে গুনাহগার। 
(المسالِك شرح موطا المالك ٧/٢٩٧).

ইমাম কুরতুবী (মৃত্যু: ৬৫৬ হি.) এটাই বলেছেন যে, এই অধ্যায়ে হুকুম ও নিষেধগুলো আচার-আচরণের জন্য, আলেমদের নির্ভরযোগ্য মতামত অনুযায়ী ফরজ ও নিষিদ্ধতার জন্য নয়।
(المفهم لما أشكل من تلخيص كتاب مسلم ٥/ ٤١٦)

এই কারণে দাড়িও শিষ্টাচারের অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইমাম তিরমিযী তার সুনানে এই বর্ণনাকে কিতাবুল আদবে এনেছেন:
سنن الترمذي،  كتاب الأدب ، باب ما جاء في إعفاء اللحية

তাছাড়াও তোমরা দাড়ি ছেড়ে দাও.... হাদীসের সঠিক বুঝ হলো এক মুষ্টি পর্যন্ত দাড়ি রাখা। - 


.মুযানি বলেন: আমি ইমাম শাফেয়ীর চাইতে সুন্দর চেহারার কাউকে দেখি নি... তার দাড়ি এক মুষ্টির বেশি ছিল না।

তিনি আরো বলেন:
আমি একদিন ইমাম শাফেয়ীকে একটি কবিতা আবৃত্তি করতে শুনেছি:
قوم يرون النبل تطويل اللحا * لا علم دين عندهم ولا تقى
এই লোকেরা মনে করে দাড়ি বড় করার মধ্যেই সম্মান ও মর্যাদা নিহীত... অথচ,
তাদের কাছে দ্বীনের ইলম বা তাকওয়া কোনোটিই নেই।

[তারিখে দিমাশক, ৫১/২৮০-২৮১]

শায়খ আলবানি বলেন:
‘সালাফদের মাঝে এক মুষ্টি পর্যন্ত দাড়ি ছাঁটাই করা সুপরিচিত ছিল।’
[আস সিলসিলাহ আয যঈফাহ (৫/৩৭৫)]

‘তোমরা দাড়ি ছেড়ে দাও’ - এই হাদীছের বুঝ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.) যেমনটি নিয়েছিলেন।

খল্লাল বলেন:

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) কে এক মুষ্টি দাড়ি রেখে বাকি অংশ কেটে ফেলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জবাব দেন যে: ‘ইবনে উমার তা কাটতেন। যেন ইমাম আহমাদও একই বিষয়ে বিশ্বাসী ছিলেন।’

আবার প্রশ্ন করা হলো: দাড়ি ছেড়ে দেওয়া কী?
 ইমাম আহমাদ জবাব দিলেন: দাড়ি ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ থেকে বর্ণনা আছে। অতএব, ইবনে উমার এর নিকটে এটা দাড়ি ছেড়ে দেওয়ায় ছিল। (অর্থাৎ, ইবনে উমার এর নিকটে এক মুষ্টি দাড়ি রেখে বাকি অংশ কেটে ফেলাই ছিল ‘দাড়ি ছেড়ে দাও’ হাদীছের বুঝ।)

[আল ওয়াকুফ ওয়াত তারজুল মিনাল জামিঈ লি মাসায়িলিল ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল‚ পৃ:১২৯]

أخبرني حربٌ قال: سُئل أحمدُ عن الأخذ من اللِّحية؟ قال: إنَّ ابن عمر يأخذُ منها ما زاد على القبضةِ، وكأنَّه ذهب إليه، قلتُ: ما الإعفاءُ: قال: يُروى عن النبي صلَّى الله عليه وسلم، قال: كأنَّ هذا عنده الإعفاءُوجمهور العلماء على أن إعفاء اللحية سنة ، وأن حلقها مكروه ) ( وشذ جماعة فقالوا بوجوب الإعفاء اللحية وتحريم حلقها
জুমহুর উলামাদের নিকটে দাড়ি রাখা সুন্নাত এবং দাড়ি কামানো (কাটা) মাকরুহ। এবং একটি জামায়াত শায মত গ্রহণ করেছে... তারা দাড়ি রাখাকে ওয়াজিব এবং কামানোকে হারাম বলে। 
فتح المنعم شرح صحيح مسلم







" ইসলামে কোন ইউনিফর্ম নেই। সমাজের মানুষ সতর ঢেকে যেধরণের পোশাকই পরবে তাই ইসলামসম্মত। পাঞ্জাবি-পায়জামার নামে যে কালচার আমাদের উপমহাদেশে তৈরি হয়েছে তা একটি নিকৃষ্ট বিদআত। কেননা এখানে এমন একটি কাজকে ধর্মের অংশ মনে করা হচ্ছে যা অকাট্যভাবেই ধর্মের অংশ নয়। মূলত এই ইউনিফর্ম কালচারের মাধ্যমে মোল্লাতন্ত্রের কুশীলবরা নিজেদেরকে স্পেশাল ও প্রকৃত মুসলিম বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চান এবং সমাজের মানুষ থেকে ভিন্ন এক এলিট কাল্টের সদস্য হিসেবে নিজেদের জাহির করতে চান। যেই কাল্টের মেম্বার হতে হলে আপনাকে একটা নির্দিষ্ট ড্রেসকোড ফলো করতে হবে। নির্দিষ্ট কিছু রিচুয়াল মেইনটেইন করতে হবে। এই অশুভ মানসিকতার দ্রুত অবসান ঘটবে এটাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। সহিহুল বুখারিতে ইবনে আব্বাসের সুত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, كل ما شئت ، والبس ما شئت ، ما أخطأتك اثنتان : سرف ومخيلة তোমার যা ইচ্ছা হয় খাও, যা ইচ্ছা হয় পরিধান কর যতক্ষণ তোমাকে অপচয় ও অহংকারের ভ্রান্তি গ্রাস না করে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়্যাহ বলেছেন, وليس لأولياء الله شيء يتميزون به عن الناس في الظاهر من الأمور المباحات فلا يتميزون بلباس دون لباس إذا كان كلاهما مباحاً، ولا بحلق شعر أو تقصيره أو ظفره إذا كان مباحاً، كما قيل‏:‏ كم من صديق في قباء وكم من زنديق في عباء "বৈধ বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে আল্লাহর ওলিদের এমন কোন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নেই যার মাধ্যমে তারা বাহ্যিকভাবে অন্যান্য মানুষ থেকে ভিন্নতা অবলম্বন করে থাকে। অর্থাৎ তাদের এমন কোন বিশেষ পোশাক নেই যেটা তারা অন্যান্য পোশাকের পরিবর্তে পরিধান করে, যখন এই সবগুলো পোশাকই বৈধ হয়। তারা চুল মুণ্ডন করে কিংবা ছোট করে কিংবা ঝুঁটি করেও অন্যান্য মানুষ থেকে ভিন্নতা গ্রহণ করেন না, যখন এই সবগুলো পদ্ধতিই বৈধ। প্রবাদে আছে : "আছে কত সিদ্দিক কোবার আড়ালে, আছে কত যিন্দিক আবায়ার মোড়কে।" তিনি আরো বলেন, وكذلك اللباس كان يلبس القميص والعمامة ويلبس الإزار والرداء ويلبس الجبة والفروج وكان يلبس من القطن والصوف وغير ذلك . لبس في السفر جبة صوف وكان يلبس مما يجلب من اليمن وغيرها وغالب ذلك مصنوع من القطن وكانوا يلبسون من قباطي مصر وهي منسوجة من الكتان . فسنته في ذلك تقتضي أن يلبس الرجل ويطعم مما يسره الله ببلده من الطعام واللباس . وهذا يتنوع بتنوع الأمصار . "পোশাকের ক্ষেত্রেও নবির এই আদর্শ ছিল। তিনি কামিস পরেছেন, পাগড়ি পরেছেন। লুঙ্গি পরেছেন, চাঁদর পরেছেন। তিনি জুব্বা পরেছেন। ফাররুজ পরেছেন। পশমের পোশাক পরেছেন। তুলার তৈরি কাপড় পরেছেন। সফরে তিনি পশমি জোব্বা পরেছেন। ইয়েমেন ও অন্যান্য দেশ থেকে নিয়ে আসা পোশাক তিনি পরতেন। এর অধিকাংশই ছিল তুলার তৈরি। সাহাবিরা মিসরের কপ্টিকদের বিশেষ পোশাকও পরেছেন। যা ছিল কাত্তান খচিত। সুতরাং পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুলের সুন্নাত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, একজন ব্যক্তি তার দেশের প্রচলিত ও সহজলভ্য পোশাক ও খাদ্য ব্যবহার করবে। আর এটা একেক দেশে একেকরকম হবে।" হাম্বলি মাযহাবের নির্ভরকৃত গ্রন্থ 'কাশশাফুল ক্বিনা' তে বলা হয়েছে, (وَيُكْرَهُ لُبْسُ مَا فِيهِ شُهْرَةٌ) أَيْ: مَا يَشْتَهِرُ بِهِ عِنْدَ النَّاسِ وَيُشَارُ إلَيْهِ بِالْأَصَابِعِ، لِئَلَّا يَكُونَ ذَلِكَ سَبَبًا إلَى حَمْلِهِمْ عَلَى غِيبَتِهِ، فَيُشَارِكُهُمْ فِي إثْمِ الْغِيبَةِ. (وَيَدْخُلُ فِيهِ) أَيْ: فِي ثَوْبِ الشُّهْرَةِ (خِلَافُ) زِيّهِ (الْمُعْتَادِ "প্রসিদ্ধি লাভের পোশাক পরা মাকরুহ। অর্থাৎ এমন কোন পোশাক পরা যা পরলে মানুষের মাঝে তার খ্যাতি তৈরি হয় এবং লোকে তাকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে। কেননা এমন ব্যতিক্রমী পোশাক পরিধান করার ফলে মানুষ তাকে নিয়ে গীবত শুরু করবে আর সেই এই পোশাক পরে মানুষকে গীবতে প্ররোচিত করে গীবতের গুনাহে শরিক হবে। একই হুকুমের অন্তর্ভূক্ত হবে সে ব্যক্তি যে তার অঞ্চলের লোকদের প্রচলিত পোশাকের বিপরীত পোশাক পরিধান করে।" আল মাওসুয়াতুল কুয়েতিয়্যাহ ফিকহ বিশ্বকোষে বলা হয়েছে, لبس الألبسة الّتي تخالف عادات النّاس مكروه لما فيه من شهرةٍ، أي ما يشتهر به عند النّاس ويشار إليه بالأصابع "সমাজের মানুষের প্রথা-প্রচলনের বিপরীত পোশাক পরিধান করা মাকরুহ কেননা এর মাধ্যমে প্রসিদ্ধি অর্জন হয় অর্থাৎ মানুষের মাঝে তার প্রসিদ্ধি তৈরি হয় এবং লোকজন দূর থেকে তার দিকে আঙ্গুল তাক করে।" নবিয়ে করিম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই লোকদের ব্যাপারে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, «مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ أَلْبَسَهُ اللَّهُ ثَوْبَ مَذَلَّةٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» "যে ব্যক্তি প্রসিদ্ধির পোশাক পরবে আল্লাহ তাকে রোজ কেয়ামতে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন।" আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজা ইবনে ওমরের সুত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। হাদিসটি হাসান। وَكَانَ الْحَسَنُ يَقُولُ: إنَّ قَوْمًا جَعَلُوا خُشُوعَهُمْ فِي اللِّبَاسِ، وَشَهَرُوا أَنْفُسَهُمْ بِلِبَاسِ الصُّوفِ، حَتَّى أَنَّ أَحَدَهُمْ بِمَا يَلْبَسُ مِنْ الصُّوفِ أَعْظَمُ كِبْرًا مِنْ صَاحِبِ الْمُطرفِ بِمُطرفِهِ. "হাসান বসরি বলেছেন, এক দল লোক তৈরি হয়েছে যারা তাদের খুশু-খুযুকে পোশাকে সীমিত করেছে, পশমি পোশাক পরে মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি তৈরি করেছে। রেশমি চাঁদর পরেও মানুষ এতটা অহংকারী হয় না যতটা অহংকারী পশমি পোশাক পরা এই লোকগুলোর একেকটা হয়।" (ইবনে আবিদ দুনিয়া, আত তাওয়াদ্বউ ওয়াল খুমুল) وَقَالَ ابْنُ رُشْدٍ الْمَالِكِيُّ: كَانَ الْعِلْمُ فِي صُدُورِ الرِّجَالِ فَانْتَقَلَ إلَى جُلُودِ الضَّأْنِ قُلْتُ: وَالْآنَ إلَى جُلُودِ السَّمُّورِ "ইবনে রুশদ আল মালেকি বলেন, ইলম একসময় মানুষের অন্তরে ছিল, এখন সেটা গিয়ে ঠেকেছে ভেড়ার চামড়ায়। ইমাম বুহুতী বলেন, আর আমাদের যুগে গিয়ে ঠেকেছে নকুলের চামড়ায়।" কাশশাফ আল ক্বিনা'তে আরো বলা হয়েছে, (وَيُكْرَهُ) لُبْسُ (خِلَافِ زِيِّ) أَهْلِ (بَلَدِهِ وَ) لُبْسُ (مُزْرٍ بِهِ) لِأَنَّهُ مِنْ الشُّهْرَةِ (فَإِنْ قَصَدَ بِهِ الِارْتِفَاعَ وَإِظْهَارَ التَّوَاضُعِ حَرُمَ لِأَنَّهُ رِيَاءٌ) "দেশের প্রচলিত পোশাকের বিপরীত পোশাক পরা মাকরুহ। ছেঁড়াফাটা পোশাক পরাও মাকরুহ। কেননা এগুলোর মাধ্যমে প্রসিদ্ধি অর্জন হয়। কিন্তু যদি এসব পরিধানের মাধ্যমে সম্মান লাভের চেষ্টা করে কিংবা নিজেকে বিনয়ী হিসেবে জাহের করার নিয়ত থাকে, তবে এটি হারাম কাজ। কেননা এটি রিয়া বা লোকদেখানো।" আধুনিক পোশাক পরা এবং প্রাচীন পোশাক পরিত্যাগ করার বিধান। ইমাম ইবনে আবিদ দুনিয়া তার 'আত তাওয়াদ্বু ওয়াল খুমুল' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, عن عدي بن الفضل قال : قال لي أيوب : " اُحْذُ نعلين على نحو حذو نعل رسول الله صلى الله عليه وسلم . قال : ففعلت ، فلبسها أياما ثم تركها ، فقلت له في ذلك فقال : لم أر الناس يلبسونها "আদী বিন ফযল বলেন, আমাকে তাবেয়ী আইউব সুখতিয়ানি বললেন, রাসুল যেভাবে স্যান্ডেল পরতেন সেভাবেই স্যান্ডেল পর। আমি তার কথামত কাজ করলাম। কিছুদিন পর আইউবকে দেখলাম যে তিনি এভাবে স্যান্ডেল পরা ছেড়ে দিয়েছেন। আমি এই বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এভাবে আর কাউকে পরতে দেখি নি।" মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাতে বর্ণিত আছে, وعن الحصين قال : كان زبيد اليامي يلبس برنسا ، قال : فسمعت إبراهيم النخعي عابه عليه ، قال : فقلت له : إن الناس كانوا يلبسونها ، قال : أجل ! ولكن قد فني من كان يلبسها ، فإن لبسها أحد اليوم شهروه وأشاروا إليه بالاصابع . "হুসাইন বলেন, যায়দ আল-ইয়ামী বুরনুস (হুডিবিশিষ্ট আলখেল্লা) পরতেন। আমি একদিন তাবেয়ি ইব্রাহিম নাখয়িকে শুনলাম তার এই বিষয়টিকে সমালোচনা করছেন। আমি বললাম, সাহাবিদের সময়কার মানুষজন তো এই পোশাক পরত। ইব্রাহিম বললেন, তা ঠিক। কিন্তু যারা এই পোশাক পরত তারা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। আজ যদি কেউ এই পোশাক পরিধান করে তবে সে প্রসিদ্ধি লাভ করবে এবং মানুষ তার দিকে আঙ্গুল তাক করবে।" 

 উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ এককথায় যেসব পরিবেশে জুব্বা, টুপি, পাঞ্জাবি, কোর্তা পরার প্রচলন নেই, সেখানে এই জাতীয় পোশাক পরা মাকরুহ। কেউ যদি নিজেকে জাহের করার জন্য এই ধরণের পোশাক পরে তবে এটি হারাম।

 আরো স্পষ্ট হল যে, জুব্বা ও পাঞ্জাবির যে ইউনিফর্ম আমাদের দেশের "হুজুর সম্প্রদায়" চালু করে রেখেছেন সেটা রাসুলের সুন্নাতের খেলাফ কারণ সমাজের মানুষ ধর্মীয় উৎসব ও অনুসর্গ ছাড়া এই পোশাকগুলো পরে না। তবে মাদ্রাসার শিক্ষাকক্ষে কিংবা মসজিদের খুতবা প্রদানের সময় যেহেতু এই পোশাক পরা রীতিতে পরিণত হয়েছে, তাই এই সকল স্থানে এই পোশাকগুলো বজায় রাখাই সমীচীন। 


 ধর্মের নামে তথ্যসন্ত্রাসের বিস্তর তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছে লেবাসুত তাকওয়া শব্দের অপব্যাখ্যা। তারা দাবি করে বেড়াচ্ছে যে, তাদের মাদ্রাসার ইউনিফর্ম যারা পরে না তারা তাকওয়াবিহীন মানুষ। জুব্বার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে না পারলে ডেসপারেশন থেকে তারা আরো অনেক রকমের অপব্যাখ্যা নিয়েই আপনাদের সামনে উপস্থিত হবে এই কুশীলবরা। তথ্যসন্ত্রাসের ফাঁদে পা দেয়ার আগেই তাই জেনে নিন এই আয়াত সম্পর্কে ইসলামের শ্রেষ্ঠ মুফাসসিরে কোরআন ইমাম ইবনুল জারীর তাবারী'র (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ব্যাখ্যা। কুরতুবি, ইবনে কাসির, বাগাভি সহ সকল তাফসির গ্রন্থে ইবনে জারিরের তাফসিরের কথাগুলোই পূনরাবৃত্তি করা হয়েছে। তাই ইমাম ইবনে জারিরের তাফসির জানার পর আপনি আর কোন নতুন তাফসির খুঁজে পাবেন না। সুরা আরাফের ২৬ নং আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا ۖ وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ "হে আদমসন্ত্রান! তোমাদের জন্য আমি নাযিল করেছি গোপনীয়তা ঢাকার পোশাক, জীবিকা। আর তাকওয়ার পোশাকই হল অধিকতর উত্তম পোশাক। এটা আল্লাহর নিদর্শনগুলোর একটি যদি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে!" শ্রেষ্ঠ মুফাসসির ইমাম আবু জাফর আত তাবারি বলেন : يقول جل ثناؤه للجهلة من العرب الذين كانوا يتعرَّون للطواف، اتباعًا منهم أمرَ الشيطان، وتركًا منهم طاعةَ الله, فعرفهم انخداعهم بغروره لهم، حتى تمكن منهم فسلبهم من ستر الله الذي أنعمَ به عليهم, حتى أبدى سوءاتهم وأظهرها من بعضهم لبعض, مع تفضل الله عليهم بتمكينهم مما يسترونها به, وأنهم قد سار بهم سيرته في أبويهم آدم وحواء اللذين دلاهما بغرور حتى سلبهما ستر الله الذي كان أنعم به عليهما حتى أبدى لهما سوءاتهما فعرّاهما আরবের লোকেরা কাবা ঘর তাওয়াফ করত উলঙ্গ হয়ে। আল্লাহর অবাধ্য হয়ে শয়তানকে মান্য করত। আল্লাহ এই জাহেল লোকদের উদ্দেশ্যে বলছেন যে তারা শয়তানের প্ররোচনায় আত্মপ্রবঞ্চনায় মজেছে। এমনকি শয়তান তাদের উপর এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছে যে, খোদাপ্রদত্ত শরীর আবৃত করার পোশাক থেকে তাদের উলঙ্গ করেছে এবং একে অন্যের সামনে তাদের গোপনীয়তাকে উন্মোচন করেছে। অথচ আল্লাহ তাদেরকে পোশাকের মাধ্যমে একে ঢেকে রাখার অনুগ্রহপ্রাপ্ত করেছিলেন। কিন্তু তারা শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে তাদের আদি পিতা-মাতার ভুলেরই পূনরাবৃত্তি করেছে। আদম ও হাওয়াকে শয়তান ভ্রান্তিতে ফেলেছিল। আল্লাহ তাদের গোপনাঙ্গকে তাঁর অনুগ্রহবশত ঢেকে রেখেছিলেন, কিন্তু শয়তান এটা তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যায় এবং তাদের একে অন্যের সামনে তাদের গোপনাঙ্গকে প্রকাশ করে দেয়। তাদেরকে উলঙ্গ করে দেয়। القول في تأويل قوله : وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ তাকওয়ার লেবাস কথার ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা। قال أبو جعفر: اختلف أهل التأويل في تأويل ذلك. فقال بعضهم: " لباس التقوى "، هو الإيمان. ذكر من قال ذلك: عن قتادة: (ولباس التقوى)، هو الإيمان. عن السدي: (ولباس التقوى)، الإيمان. عن ابن جريج: (ولباس التقوى)، الإيمان. ইমাম আবু জাফর আত তাবারি বলেন, এই কথাটির ব্যাখ্যা নিয়ে কোরআনের ব্যাখ্যাকারদের একাধিক মত রয়েছে। কারো মতে তাকওয়ার লেবাস অর্থ হল ঈমান। এই তাফসির যারা করেছেন তাদের বিবরণ - কাতাদা বলেন, লেবাসুত তাকওয়া হল ঈমান। সুদ্দি বলেন, লেবাসুত তাকওয়া হল ঈমান। ইবনে জুরাইজ বলেন, লেবাসুত তাকওয়া হল ঈমান। وقال آخرون: هو الحياء. ذكر من قال ذلك: , عن معبد الجهني في قوله: (ولباس التقوى)، الذي ذكر الله في القرآن، هو الحياء. কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ লজ্জাশীলতা। এমনটি যারা বলেছেন - মা'বাদ আল জুহানি বলেন, লেবাসুত তাকওয়া বলে আল্লাহ কোরআনে যা বুঝিয়েছেন তা হচ্ছে লজ্জাশীলতা। وقال آخرون: هو العمل الصالح. ذكر من قال ذلك: عن ابن عباس: (ولباس التقوى ذلك خير)، قال: لباس التقوى: العمل الصالح. কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ হচ্ছে নেক আমল। যেমন - ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লেবাসুত তাকওয়া হচ্ছে নেক আমল। وقال آخرون: هو خشية الله. ذكر من قال ذلك: عروة بن الزبير يقول: (لباس التقوى)، خشية الله. কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ আল্লাহভীতি। যেমন - উরওয়া বিন যুবায়ের বলেছেন, লেবাসুত তাকওয়া হল আল্লাহর ভয়। وقال آخرون: (لباس التقوى)، في هذه المواضع، ستر العورة. ذكر من قال ذلك: قال ابن زيد في قوله: (ولباس التقوى)، يتقي الله، فيواري عورته, ذلك " لباس التقوى ". অন্যান্যরা বলেছেন, এই আয়াতে তাকওয়ার লেবাস বলে বোঝানো হয়েছে আওরাত সতর করা (শরীরের গোপনীয় স্থান ঢেকে রাখা)। যেমন - ইবনে যায়দ বলেন, লেবাসুত তাকওয়া বলে বোঝানো হয়েছে, আল্লাহকে ভয় করা এবং নিজের আওরাতকে গোপন রাখা। ইমাম ইবনে জারির পুরো আলোচনাটি গুছিয়ে এনেছেন তার নিম্নোক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে - هذا الذي أنـزلنا عليكم من اللباس الذي يواري سوءاتكم, والريش, ولباس التقوى خير لكم من التعرِّي والتجرد من الثياب في طوافكم بالبيت, فاتقوا الله والبسوا ما رزقكم الله من الرياش, ولا تطيعوا الشيطان بالتجرد والتعرِّي من الثياب, فإن ذلك سخرية منه بكم وخدعة, كما فعل بأبويكم آدم وحواء، فخدعهما حتى جرّدهما من لباس الله الذي كان ألبسهما بطاعتهما له، في أكل ما كان الله نهاهما عن أكله من ثمر الشجرة التي عصَياه بأكلها "তোমরা যা পরে তোমরা লজ্জাস্থান গোপন কর, এবং তোমাদের এই যে জীবিকা এগুলো আমারই নাযিল করা। আর তাকওয়ার লেবাস পরিধান করা তোমাদের জন্য উলঙ্গ ও নগ্ন শরীরের কাবার তাওয়াফ করার চাইতে অধিক উত্তম। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের তিনি যে জীবিকা দিয়েছেন তার মধ্য থেকে পোশাক পরিধান করো। শয়তানকে মান্য করে উলঙ্গ ও নগ্ন হয়ে যেও না। কেননা সে তোমাদের সাথে প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি করছে। যেমনটি তোমাদের আদি পিতামাতা আদম-হাওয়ার সাথে করেছিল। শয়তান তাদেরকে ধোঁকা দিয়ে তাদেরকে পোশাক থেকে নগ্ন করেছে, যেই পোশাক আল্লাহ তাদের পরিয়েছিলেন। আল্লাহ তাদের যে গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন শয়তান তাদেরকে ধোঁকা দিয়ে তা খাইয়ে দেয়, ফলে তারা আল্লাহর অবাধ্য হয়ে যায়।" আয়াতে কারিমার পূর্ণাঙ্গ এই ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রতীয়মান হল যে, এই আয়াত থেকে যারা জুব্বা, পাগড়ি পরার দলিল বের করে তারা লোকঠকানো ও প্রতারণার দিক থেকে দূঃখজনকভাবে শয়তানের ভূমিকা পালন করছে। তাদের কেউ কেউ জেনেবুঝে আয়াতের অপব্যাখ্যা করছে, আর কেউ কেউ না বুঝে। আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুন। আল্লাহ তা'আলা আমাদের উক্ত আয়াতের উপর আমল করার তৌফিক দিন এবং সকল অপব্যাখ্যাকারী ধর্মব্যবসায়ীদের কুচক্র থেকে দেশ ও জাতিকে নাজাত দিন। 


টুপি পরা সুন্নত?

জনাব মৌলভী Muhammad Qasim প্রশ্ন করেছেন, মাসিক আল কাউসারে প্রকাশিত "টুপি পরা সুন্নত" বিষয়ক আর্টিকেলের ব্যাপারে আমার মতামত কী? লিংক - https://www.alkawsar.com/bn/article/1006/ 

উত্তর: আর্টিকেলটি লেখকের উসুলুল ফিকহ সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক। আল কাউসার পত্রিকায় এমন লেখা প্রকাশ কওমি অঙ্গনে ইলমী অবক্ষয়ের ইঙ্গিতবাহী, যা সত্যিই দুঃখজনক।

শরিয়তের হুকুম ৫টি। ওয়াজিব, মুস্তাহাব, মুবাহ, মাকরুহ, হারাম। টুপি পরা হয়ত ওয়াজিব হবে, নয়ত মুস্তাহাব (সুন্নত) হবে, নয়ত মুবাহ হবে, নয়ত মাকরুহ অথবা হারাম। ওয়াজিব, হারাম যে হবে না এটা জানা কথা। বাকি থাকল তিনটা। আমরা কোন ক্যাটাগরিতে তাহলে একে ফেলব? 

আর্টিকেল লেখক অনেকগুলো আছার একত্র করেছেন যার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে টুপি পরা আমভাবে রাসুল, সাহাবি, তাবেয়ি ও সালাফের যুগে প্রচলিত ছিল। এটা ছিল সুবিদিত ও সুপ্রতিষ্টিত একটি প্র্যাকটিস। মুতাওয়াতির সুত্রে এটি প্রমাণিত। জি, অনেক ধন্যবাদ। আপনি এত এত সময় ও শ্রম ক্ষেপন করে "তাহসিলুল হাসিল" বৈ কিছু করতে পারেন নি। টুপি পরার রেওয়াজ যে সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীর আরব্য রেওয়াজ সেটা এত এত রেওয়ায়াত ও আছার একাট্টা না করলেও আমরা মেনে নিতাম।  

আমরা চাইলে এই লেখার চাইতে কয়েকগুণ বড় লেখা তৈরি করতে পারব যেখানে দেখানো যাবে যে, সাহাবিরা ভাত খেতেন না, খেজুর ও খুবজ খেতেন। ডাল খেতেন না, সারিদ খেতেন। মুরগির মাংস খেতেন না, মাছ খেতেন না। উটের ও ভেড়ার মাংস খেতেন। খেজুর, খুবজ, উট, ভেড়া তো আমরা খাই না। তাই বলে কি আমরা নবির সুন্নত পরিত্যাগ করেছি? না করলে কেন করি নি? নবী ও সাহাবিদের যুগে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে এটাই তো ছিল স্ট্যান্ডার্ড। এই নিয়ে কোন সন্দেহ করার অবকাশ তো নেই। 

আর্টিকেল লেখক যদি ফকিহ হতেন তাহলে তিনি সিহহত-সুবুত (বিশুদ্ধতা ও সাব্যস্ততা) দিয়ে ক্ষান্ত হতেন না, দালালত-ইকতিদ্বা (তাৎপর্য ও চাহিদা) নিয়েও কথা তুলতেন। ঠিক আছে, টুপি পরার বিষয়টি মুতাওয়াতির ও মুতাওয়ারিস সুত্রে সুসাব্যস্ত ও বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত। কিন্তু এর তাৎপর্য বা চাহিদা কী? এ থেকে কী প্রমাণ হয়? 

কোন একটি বিষয় রাসুলের যুগে সাবেত-সাব্যস্ত হওয়াই কি সেটা মুস্তাহাব হবার জন্য যথেষ্ট? রাসুল বাথরুম করার পর কোনদিন সাবান দিয়ে হাত ধুঁয়েছেন? তিনি কীভাবে হাত পরিষ্কার করতেন? আমরা যে এখন সেভাবে হাত পরিষ্কার করছি না, এর ফলে কি আমরা মুস্তাহাব-সুন্নত তরক করছি? না করলে, কেন করছি না? এখানে কি কর্মের সুবুত নিয়ে প্রশ্ন নাকি দালালত নিয়ে? 

রাসুল ও সাহাবিদের থেকে বহু কাজ সাবেত আছে। কিন্তু সেই কাজগুলো দুই প্রকারের - ১) তাআব্বুদি, ২) আদাত-অভ্যাস। তাআব্বুদি মানে সে কাজটি তারা ইবাদত মনে করে করতেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে আদেশকৃত বা উৎসাহিত বিষয় মেনে করতেন। কোন কাজকে তাআব্বুদি প্রমাণ করার জন্য কেবল সেই কাজের সুবুত প্রমাণ করা যথেষ্ট না। বরং সেই কাজটি করাই যে শরিয়তের দাবি সেটাকে ভিন্ন দলিল দ্বারা প্রমাণ করতে হবে। 

সাহাবিরা খেজুর-খুবজ খেতেন, ডান হাত দিয়ে খেতেন। এর মধ্যে প্রথমটি মুস্তাহাব নয়, কারণ এটা তাআব্বুদি নয়। কিন্তু ডান হাত দিয়ে খাওয়া মুস্তাহাব, কেননা এটা তাআব্বুদি। আর কীভাবে এটা তাআব্বুদি হয়েছে? শরিয়তপ্রণেতার পক্ষ থেকে আগত তাকলিফি খিতাবের মাধ্যমে। অর্থাৎ শরিয়তপ্রণেতা এমন কিছু বলেছেন যার দ্বারা প্রমাণ হয়েছে যে এই কাজটি করতে আমাকে শরয়িভাবে আদেশ কিংবা উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে খেজুর-খুবজ খেতে যেহেতু তাকলিফি আদেশ আসে নি, তাই সেটা মুস্তাহাব হয় নি। বরং কেবল আদাত-অভ্যাস হিসেবেই রয়ে গেছে। যদি এমন কোন হাদিসও পাওয়া যায় যেখানে খেজুর খেতে আদেশ কিংবা উৎসাহ দেয়া হয়েছে, তবে সেখানে কারায়েন (আনুষাঙ্গিক প্রমাণাদি) দ্বারা অনুসন্ধান করে দেখতে হবে যে, এই আদেশটা কি তাশরিয়ি/তাকলিফি কিনা। কেবলমাত্র তাশরিয়ি-তাকলিফি আদেশ কিংবা উৎসাহ থাকলেই কোন কাজ মুস্তাহাব হতে পারে। 

এটা একটা দিক। কিন্তু আলোচনার অন্য একটা দিকও আছে। সেটা হচ্ছে মুরুআত ও দানাআতের আলোচনা। মুরুআত হল রুচিশীলতা। দানাআত হল রুচিহীনতা। এটা একটা স্থান-কাল-পাত্রের উপর নির্ভরশীল আপেক্ষিক ও সামাজিক বিষয়। 

المروءَة هي المحافظَةُ على فِعْل ما تَرْكُه من مُباحٍ يُوجِبُ الذَّمَّ عُرْفًا... وعلى ترْك ما فعلُه من مُباحٍ يوجبُ ذَمَّه عُرْفًا... 

ইমাম ইবনে আরাফা বলেন, “রুচিশীলতা (মুরুআত) হল এমন বিষয় পালন করা যা স্বয়ং মুবাহ; কিন্তু পরিত্যাগ করলে সামাজিকভাবে নিন্দা করা হয় এবং এমন বিষয় পরিত্যাগ করা যা স্বয়ং মুবাহ; কিন্তু তা করলে সামাজিকভাবে নিন্দা করা হয়।”

এই কায়েদার অধীনেই আমরা বলি - যে সমাজে টুপি পরাই রুচিশীলতার পরিচায়ক সেখানে টুপি পরতে হবে। মুরুআত রক্ষা করার কারণে তার জন্য টুপি পরা মুস্তাহাব হবে। আর যে সমাজে টুপি পরার প্রচলন নেই, সেই সমাজে টুপি পরা হবে মাকরুহ। কেননা তখন এটি লিবাসুস শুহরত এর হুকুমের অধীন হবে। নবি ও সাহাবিরা যে টুপি পরেছেন, কিংবা ওমর রাঃ যে অন্যকে টুপি পরতে উৎসাহিত করেছেন, সেটা মূলত এই সামাজিক রুচিশীলতা রক্ষা করতেই। ইমাম আহমদ তার কিতাবুয যুহদে ওমর রা. থেকে সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন - 

إياكم وزي الأعاجم ونعيمه 

"অনারবদের পোশাক-আশাক ও তাদের মনোরোম বিষয়াবলি থেকে সাবধান থাকো!" 

হাম্বলি মাযহাবের কাশশাফ আল কিনা' গ্রন্থে বলা হয়েছে, 

يكره للرجل لبسه زي الأعاجم للنهي عن التشبه بالأعاجم 

"কোন ব্যক্তির জন্য অনারবদের পোশাক পরা মাকরুহ, কেননা অনারবদের সাদৃশ্য গ্রহণ করতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।" 

যেকোন আকলসম্পন্ন ব্যক্তি বুঝবে যে, এই বক্তব্যটি আরবদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমরা যারা অনারব আছি, আমাদেরকে কি কোনদিন বলা সম্ভব যে অনারবদের সাদৃশ্য গ্রহণ করো না! কোন বাঙালিকে বলা সম্ভব বাঙালিদের মত হয়ো না? 

আর একারণেই এই কিতাবেই পরের লাইনে বলা হয়েছে, 

ويكره لبس خلاف زي أهل بلده 

"নিজ দেশের লোকদের প্রচলিত পোশাকের বিপরীত পোশাক পরা মাকরুহ" 

গিযাউল আলবাব কিতাবে আছে, 

رأى الإمام أحمد -رحمه الله- رجلاً لابساً بُرداً مخططاً , بياضاً وسواداً , فقال: (ضع هذا , والبس لباسَ أهلِ بلدك) وقال: (ليس هو بحرام , ولو كنتَ بمكة أو المدينة , لم أعب عليك) 

"ইমাম আহমদ একদিন এক লোককে সাদাকালো ডোরাকাটা চাঁদর পরিহিত দেখে বললেন, এটা ছাড়ো এবং নিজ অঞ্চলের পোশাক পরো। তুমি যা পড়েছ তা হারাম নয়। তবে তুমি যদি মক্কা কিংবা মদিনায় এটা পরতে আমি তোমার সমালোচনা করতাম না।" 

ইবনে বাত্তাল বলেছেন সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেছেন, 

الذي ينبغي للرجل: أن يتزيا في كل زمان بِزِيِّ أهله , ما لم يكن إثماً , لأن مخالفة الناس في زِيِّهِمْ ضَرْبٌ من الشهرة 

"সকল যুগের মানুষের কর্তব্য হচ্ছে সমাজের মানুষের পোশাক অনুযায়ী পোশাক পরা। যতক্ষণ সেটি গুনাহের বিষয় না হচ্ছে। কেননা পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে সমাজের মানুষের বিপরীত করা হচ্ছে এক প্রকার খ্যাতি অর্জন।" 

আর্টিকেল লেখক সাহেবকে বলব তিনি যেন লম্বা লম্বা লেখা প্রকাশ করার আগে উসুলুল ফিকহ পড়েন। উসুল বিনা হাদিসচর্চা জ্ঞানের পরিবর্তে সংশয়ই বৃদ্ধি করে। 

আল বাহরুল মুহিত গ্রন্থে আছে, ইমাম ইবনু দাকিক আল ইদ বলেছেন,

 أصولُ الفقهِ هو الذي يَقضِي ولا يُقضَى عليهِ 

“উসুলুল ফিকহ দিয়েই অন্যসব বিচার করা হবে। উসুলুল ফিকহকে অন্য কিছু দিয়ে বিচার করা যাবে না।” 

আল ফুরুক কিতাবে ইমাম কারাফি বলেছেন, 

فالشريعة من أولها إلى آخرها مبنيةٌ على أصول الفقه 

“শরিয়তের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই উসুলুল ফিকহের উপর দাঁড়িয়ে আছে।”

এত বড় আর্টিকেল লেখার আগে লেখক যদি একটু খোঁজাখুঁজি করে ইমাম শাতেবির এই বক্তব্যটা দেখে নিতেন! 

আল মুয়াফাকাত কিতাবে ইমাম শাতেবি বলেন, 

العوائد المستمرة ضربان: أحدهما: العوائد الشرعية التي أقرها الدليل الشرعي أو نفاها...، 

والضرب الثاني: هي العوائد الجارية بين الخلق بما ليس في نفيه ولا إثباته دليل شرعي...ومنها: ما يكون متبدلا في العادة من حسن إلى قبح، وبالعكس، مثل كشف الرأس، فإنه يختلف بحسب البقاع في الواقع، فهو لذوي المروءات قبيح في البلاد المشرقية، وغير قبيح في البلاد المغربية، فالحكم الشرعي يختلف باختلاف ذلك، فيكون عند أهل المشرق قادحا في العدالة، وعند أهل المغرب غير قادح 

“প্রচলিত আদত-অভ্যাস দুই প্রকারের।
প্রথম প্রকার হল সেসব শরিয়তের আওতাভূক্ত অভ্যাস যার ব্যাপারে শরয়ি দলিল হয়ত অনুমতি দিয়েছে অথবা নিষেধ করেছে।
দ্বিতীয় প্রকার হল সেসব আদত-অভ্যাস যা সমাজে প্রচলিত আছে এবং যার ব্যাপারে শরিয়তের কোন আদেশ কিংবা নিষেধজ্ঞাপক দলিল নেই। এদের মধ্যে অনেক বিষয় আছে যা পরিবর্তনশীল। কোন সমাজে হয়ত প্রশংসনীয় অন্য সমাজে তাই নিন্দনীয়। যেমন মাথা খোলা রাখা। এই বিষয়টা বর্তমানে একেক অঞ্চলে একেক রকম। প্রাচ্যের দেশগুলোতে মাথা খোলা রাখা মন্দ বিষয়। কিন্তু পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এটি মন্দ নয়। সুতরাং এই বিষয়ে শরিয়তের হুকুমও সমাজ অনুযায়ী ভিন্ন হবে। তাই পূর্বদেশের কোন মানুষ এই কাজ করলে তার আদালত (সাক্ষ্য প্রদানের যোগ্যতা) নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কিন্তু পশ্চিমদেশে একই কাজ করলে কোন প্রশ্ন উঠবে না।”

– আল মুওয়াফাকাত, ২/৪৮৯। 

মুরুআত যে সম্পূর্ণই একটি আঞ্চলিক বিষয় তার স্বপক্ষে আমি ইমাম নববীর একটি বক্তব্য দিয়ে শেষ করছি। যেখানে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন যে, মাথা খোলা রাখা মুরুআতের খেলাফ নাকি না সেটা অঞ্চলভেদে ভিন্ন হবে। 

والمروءة تخلق بخلق أمثاله في زمانه ومكانه، فالأكل في سوق والمشي مكشوف الرأس وقبلة زوجة وأمة بحضرة الناس وإكثار حكايات مضحكة ولبس فقيه قباء وقلنسوسة حيث لا يعتاد وإكباب على لعب الشطرنج أو غناء أو سماعه وإدامة رقص يسقطها، والأمر فيه يختلف بالأشخاص والأحوال والأماكن. اهـ. 

“মুরুআত (রুচিশীলতা) হচ্ছে নিজ যুগের ও নিজ অঞ্চলের সমপর্যায়ের মানুষদের অনুরূপ আচরণ করা। রাস্তায় খাওয়া, খালি মাথায় ঘোরা, স্ত্রী কিংবা দাসীকে জনসম্মখে চুমু খাওয়া, অনেক বেশি ঠাট্টা-রসিকতা করা, জুব্বা ও টুপির প্রচলনবিহীন সমাজে ফকিহ বা আলেমের এগুলো পরা, দাবা খেলা কিংবা গান শোনা ও গাওয়াতে মজে থাকা, দীর্ঘ সময়ের জন্য নাচা — এসবের মাধ্যমে মুরুআতের স্খলন হবে কিনা তা স্থান, কাল, পাত্র ও পরিবেশ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন।”

— ইমাম নববি, মিনহাজুত তালেবিন। 

টুপি পরা যদি তাআব্বুদি কোন সুন্নত হত, তবে ইমাম নববি একে মুরুআতের আলোচনার অধীনে না এনে সরাসরি সুন্নত বলে দিতেন। 

আরেকজন উসুলির স্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে সমাপ্ত করি। 

ইমাম কুরতুবী তার তাফসীর গ্রন্থে সুরা কাসাসের ২৩ নং আয়াতের আলোচনায় বলেন, 

وأما المروءة فالناس مختلفون في ذلك، والعادة متباينة فيه، وأحوال العرب فيه خلاف أحوال العجم، ومذهب أهل البدو غير مذهب الحضر 

“মুরুআত (রুচিশীলতা) মানুষ ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। মানুষের আদত ও অভ্যাসও এক্ষেত্রে পৃথক। আরবদের অবস্থা এক্ষেত্রে অনারবদের থেকে ভিন্ন। শহুরে লোকদের অবস্থা গ্রামবাসী কিংবা যাযাবরদের থেকে ভিন্ন।”

দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে কওমিরা আজ উসুলুল ফিকহ বর্জন করে আহলে হাদিসে পরিণত হয়েছে। দেওবন্দী বনাম আহলে হাদীস বিতর্কে আহলে হাদীসই তাই প্রকৃত বিজয়ী। কারণ তারা আবু হানিফার অনুসারীদেরকে উসুলবর্জিত হাশাবি বানিয়ে ছেড়েছে।


 ইসলাম যদি সত্য ধর্ম হয় তবে কেন মুসলিমদের মাঝে হক্কুল ইবাদ পালন এর গুরুত্ব কম ? প্রতিটি মুসলিম দেশে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, ভেজালে সয়লাব আর অধিকাংশ অমুসলিম উন্নত দেশগুলোই এ হক্কুল ইবাদ পালনে ১০০% সফল কাম ? হক্কুল্লাহ এর চাইতে হক্কুল ইবাদ এর গুরুত্ব কোটি গুন বেশী, তবে কেন এ আসল ফরযিয়্যাত আদায়ে সত্য ধর্মের অনুসারীরা ব্যার্থ হল এবং মিথ্যা ধর্মের অনুসারীরা সফলকাম হল ? এর একমাত্র কারনই হল আমাদের দেওবন্দী ওলামাগণ (যেহুতু তাদের দাবী মতে তারাই দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের একমাত্র হক্কদার) হক্কুল্লাহ প্রতিপালনের দাওয়াত দেন কিন্তু হক্কুল ইবাদের গুরুত্ব তাদের কাছে নেই। এ জন্যই তারা জামাতে ইসলামের ভুল ধরেন তাদের দারি নাই সুন্নতী পোষাক নাই তারা আবার রাষ্ট্রীয় ভাবে ইসলাম কায়েম কিভাবে করবে ? ভাই ইসলামে হক্কুল ইবাদ পালনের কাছে দারি-টুপির গুরুত্ব ১০০:১ ও না। জামাত দুটি মন্ত্রনালয় সম্পূর্ণ দূর্নীতি মুক্তভাবে চালিয়ে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে পর পর পাচ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান দেশকে সনির্ভর দুর্নিতিমুক্ত আসল ইসলামী রাষ্ট্র (হক্কুল ইবাদ প্রিতিপালনে সক্ষম) হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার যোগ্য দল একমাত্র জামাতে ইসলাম ই। আজকে নাস্তিকতার এত সয়লাভ কেন ? তরুন প্রজন্মকে বুঝানো হচ্ছে ইসলামে মানবিকতার জায়গা খুবই কম। এ ধর্ম মূলত নামাজ-কালাম-পোষাক-আশাকের ধর্ম, মানবিকতার চর্চা এ ধর্মে খুবই নগন্য, অপরের হক আদায়ের ব্যাপারে এ ধর্মের বাধ্যবাধকতা সিমীত, এ জন্যই মুসলিম দশেগুলো দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হচ্ছে আর অমুসলিম দেশগুলো দুর্নীতিমুক্ত স্বনির্ভর আত্ম-মর্যাদাশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, এ জন্যেই এ ধর্মে মাদার তেরেষাদের আবির্ভাব খুব কমই হয়। এ সকল বুঝ দিয়ে নাস্তিকরা মানবধর্ম তৈরী করেছে। তাদের দাবী ইসলামে যেহেতু হক্কুল ইবাদের গুরুত্ব কম, সকল মানুষের প্রতি মানবিক হতে হবে মানব ধর্মের সদস্যদের। নাস্তিকদের এ নতুন ধর্মের উত্থানের পিছনে একমাত্র কারন এ দেওবন্দী ওলামাগণ। কারন তারা ঐ টুপি-দারি নিয়েই থাকে আর হক্কুল ইবাদের গুরুত্ব তাদের কাছে কম। আর এ জন্যই তারা জামাতে ইসলামের বিরোধীতা করে। তাই সকলের নিকট সবিনয় আবেদন হক্কুল ইবাদরে গুরুত্ব যদি আসলেই ইসলামে বেশী হয়ে থাকে তবে আপনারা জামাতে ইসলামকে সমর্থন দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত স্বনির্ভর আত্ম-মর্যাদাশীল দেশ ও জাতি গঠনে এগিয়ে আসুন। ইসলামকে আর উপহাসের পাত্র বানাবেন না। নিজেদের কুপমন্ডুকতার কারনে নাস্তিকতার উত্থান হতে পরক্ষ সহায়তা করবেন না। লম্বা জুব্বা আবু-জাহেল-আবু লাহাবরাও পরত, এখনও আরবের অমুসলিমরাও পরে. মরুময় ধুলো-বালি থেকে বাচার জন্য আইয়্যামে জাহেলিয়াত হতে আজ অবধি এ পোষাক হল আরবদের জাতিয় পোষাক। মনে রাখবেন রাসূল (স.) যুদ্ধের সেনাপতি কিন্তু ফকিহ সাহাবাগণকে বানাতেন না, যারা যুদ্ধে ভাল পারদর্শি ছিলেন তাদেরকেই যুদ্ধের সেনাপতি বানাতেন। ঠিক তেমনি খুলাফায় রাশেদীন দেশ পরিচালনায় যোগ্যদেরকেই বিভিন্ন গভর্ণর নিয়োগ দিয়েছেন। ফকিহ/কারীদেরকে নয়। দেশ পরিচালনা আর ইলম চর্চা এক বিষয় নয়। জামাতরে মত যোগ্য ইসলামী দল যেদিন আপনারা তৈরী করতে পারেন সেদিন আপনারা তাদেরকে ক্ষমতায় পাঠাবেন। জামাত ক্ষমতায় গেলে আপনাদের পরামর্শ দিয়েই শরীয়াহ ভিত্তিক দেশ চালাবে আপানাদেরকে ফেলে দিয়ে নয়। কারন আপনারাই ইলমে দ্বীনের চর্চা করেন, আর জামাত দেশ পরিচালনায় যোগ্য নেতৃত্ব পয়দা করে। অতএব আর বিরোধীতা নয়, আর শহীদি শাপলা চত্ত্বরের জন্ম নয়, সেকুলার আওমিলিগকে ইসলামের শত্রু নয় বলে আর অসহায় ফতোয়া নয়, আসুন জামাতকে সমর্থন দিয়ে এ দেশ থেকে ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্রকে দমিয়ে দিয়ে কুরআনের আইন চালু করি। আল্লাহ আমাদেরকে বিচক্ষনতা দান করুন। আমীন

রাসূলে পাক (স.) এর জীবনাদর্শের উপর চলা যদি সুন্নত হয়ে থাকে তবে তিনি যখন যেটা করেছেন সে প্রেক্ষাপটে আমাদেরকে সেটাই করতে হবে, সেটাই সুন্নাত। তিনি মক্কী জীবনে যে ভাবে দাওয়াতের কাজ করেছেন, মানবতার সেবা করেছেন আমাদেরকেও পোষাকী সুন্নাতের বাড়াবাড়ি বাদ দিয়ে সেভাবেই কাজ করতে হবে, কারন এখন এ দেশে মক্কী জীবনের অবস্থাই বিরাজমান। তাই যারা বলেন, গনতন্ত্র হারাম, জামাতের সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম নেই তাদের দাবীগুলো নিতান্তই হাস্যকর ও অযৌক্তিক। জনগণকে ইসলামী শাসন বুঝিয়ে তাদের দ্বারা তাদের মাধ্যমেই ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে হবে, তাদের কল্লা কেটে নয়, এটিই সুন্নাতে নববী। সাড়ে তিন হাত বডির ইসলামের আগে মানবতার সেবা করা বেশী গুরুত্বপূর্ন, হক্কুল ইবাদ প্রতিপালন ও প্রতিষ্ঠা করা বড় ফরজ আর এটিই জামাত করে যাচ্ছে।

ইসলামী দলগুলো মানব সেবায় হাজার মাইল দূরে অবস্থান করে, সাধারন জনগণের সাথে না মিশে নিজ নিজ বলয়, দল, মাদ্রাসা, মসজিদ, খানকা, ওয়াজ, মাহফিল নিয়েই ব্যাস্ত থাকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোন বিপদাপদে সাধারন মানুষের সেবাই এই হুজুরেরা এগিয়ে আসেন না, তাই এ দেশের ৯০% জনগন মুসলিম হয়েও তারা ইসলামী দলগুলোকে ভোট না দিয়ে ভোট দেয় সেকুলারিষ্ট আওমিলিগ ও বিএনপিকে। কারন তারা যানে মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্তই। যতদিন পর্যন্ত হুজুরেরা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জন না করবে এবং মানবতার সেবায় এগিয়ে না আসবে ততদিন পর্যন্ত তারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশেও অপাংতেয় হয়েই থাকবেন। ইসলামী হুকুমত কায়েম করা তো দূরের কথা।

আমাদের মুসলমানিত্ব এবং কামড়া-কামড়ির রকমফের

নবী সাঃ নবুয়ত পাইবার পরই প্রথম মুসলিম হিসাবে ইসলামপ্রচার শুরু করিলেন, যদিও তাহাকে আল্লাহর নিকটই ঈমান গ্রহণ করিতে হইয়াছে । কিন্তু কাহাকেও তাহার মতের পক্ষে আনিতে কখনোই তিনি জোর-জবরদস্তি করেন নাই। বরং তাহার এবং নওমুসলিমদের চরিত্র এবং সদ্ব্যবহার দেখিয়াই কাফির-মুশরিকগণ ইসলামগ্রহন করিতে লাগিলেন। ইহাই প্রকৃত ইতিহাস, ইহাই বাস্তবতা। কিন্তু এখন আমরা কী দেখি? আমরা কি নিজেদের তদ্রূপ পবিত্র চরিত্রগঠন করিতে পারিয়াছি; নাকি নিজেদের শুধরাইবার লক্ষে্ নিয়মিত আত্মসমালোচনাও করিয়া থাকি?

ইসলাম কি শরীরে ধারণ করিবার কোনো বস্তু!

ইসলাম হইলো দৃঢ় আস্থা, বিশ্বাস আর বাস্তব কর্মের অপর নাম। নবী করীম সাঃ নবী হইবার পূর্বে নামাজ-রোজা, হজ্জ, যাকাতের বিধান কিছুই পান নাই বলিয়া তাহা পালনও করেন নাই বটে; তবে দলমত-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে মানবতা বা মানুষের সেবা করিতে তিনি আদৌ পিছুপা হন নাই। নবী হইয়াও নামাজ-রোজা কিছুই রাখেন নাই–ইহা শুনিতে কেমন লাগে অতি ঈমানদারদের, বলুন তো!! এমনকি তাহার সঙ্গী সাহাবারাও তো মিরাজের পূর্বে নামাজ নাজিল হইবার পূর্বে ৫ ওয়াক্ত নামাজের নামও শোনেন নাই, তাহা আদায় করিবার প্রশ্নও কি আসে? তাহা হইলে আলেমগণ ইহার কী ব্যাখ্যা দিবেন? নবীসহ তাহাদের কি অমুসলিম বা জাহান্পানামী বলিয়া সস্তা ফতোয়া দিয়া বসিতে হিম্মত রাখিবেন!

এমনকি নবুয়ত পাইবার পরেও তিনি শুধু কলেমার দাওয়াত প্রদান করিতে করিতে কিংবা ইসলামী আন্দোলনের নামে মানবসেবার দায়িত্ব ভুলিয়া নিজেকে বড় মুসলিম ভাবিয়া সময় কাটান নাই। বরং নবুয়তপূর্ব জীবনের মতো সমান্তরালভাবে মানবতার সেবাও করিয়া গিয়াছেন যেমন বর্তমানে খ্রিষ্টান মিশনারীরা করিয়া থাকে। এমনকি তিনি তাহার সাড়ে তিনহাত শরীরে পোশাকী ইসলাম কায়েমের চেষ্টাও করিয়াছেন বলিয়া ইতিহাসে কোনো তথ্য এই অভাগা অন্তত খুঁজিয়া পান নাই। তাহা হইলে ঈমানের আগে ও পরে ইসলামের ৫টি ভিত্তিরও আগেই কি হক্কুল ইবাদ পালন করাই সব চাহিতে বড় ফরজ নহে? কিন্তু আমরা কী করিতেছি, ভাবুনতো?

শিশু ইসলামের যুগে কিংবা অপূর্ণাঙ্গ ইসলামের জমানায় তিনি এই ধরণের দাঁড়িটুপি, পোশাক, সুন্নত-নফল ইত্যাদি পালনের কোনো হাদিসও বলিয়া যান নাই কিংবা এই বিষয়ে অযথা সময়ও নষ্ট করেন নাই। তাহা হইলে এই বর্তমান জাহিলিয়াতের যুগে আমরা কি নবীর চাহিতেও বড় মুসলিম হইয়া গিয়াছি? অথচ নবুয়ত পাইবার আগেই সেই অন্ধকার যুগে তিনি আল আমীন (বিশ্বস্ত), আস সাদিক (সত্যবাদী) ইত্যাদি উপাধীর অধিকারী হইয়াছিলেন, যাহা আমরা কল্পনাও করিতে পারি কি? তখন তিনি পোশাক-আশাক, দাঁড়ি-টুপি নিয়া টুঁশব্দও করেন নাই, কিন্তু কেনো তাহা জানেন কি? কারন আল্লাহ তাহার গড়া এই দুনিয়ায় মহাঠাণ্ডা এবং মহাগরমের পরিবেশে আর বহু সূর্যোদয়-বহু সূর্যাস্তের মাঝখানে নির্দিষ্ট কোনো পোশাকের নমুনা ঠিক করিয়া দেওয়া বেওকুবী বলিয়া মনে করিয়াছেন এমনকি হরমোনজনিত সমস্যার কারণে দাঁড়ী-নিদাঁড়ী মানুষ সৃষ্টি হইবে বলিয়া তাহা ফরজ করিয়া দেন নাই!! তাহা না হইলে নবী সাঃ আর মক্কার কাফিররা একই পোশাক পরিয়া কবরে চলিয়া যাইতেন কি? সেইজন্যই ইসলাম কী জিনিস, তাহা তিনি কথায় নহে স্রেফ কাজের মাধ্যমেই বুঝাইয়া দিয়াছেন। কিন্তু আমাদের অবস্থা হইলো গিয়া উল্টা বুঝিলো রাম এর মতোই আরকি!!

অসহায়ের সেবা করা আর বিধর্মীর বকরীর দুধ দোহাইয়া দেওয়ার মতো কাজও অবলীলায় তিনি করিয়া দেখাইয়া গিয়াছেন যে, মুসলিমকে এমনই চরিত্রের হইতে হয়। পোশাকে যে ইসলামের আসল রূপ প্রকাশিত হয়না বরং কাজেই তাহার আসল পরিচয়, তাহা তিনিই আমাদের প্রমাণ দিয়াছেন। তাই বলিতে হয়, ইসলাম শরীরে ধারণ করিবার মতো বস্তু নহে বরং সমাজে, রাষ্ট্রে আচারে-ব্যবহারে প্রমাণ করিবার ও ধারণ করিবার জিনিস!

সাড়ে তিনহাত শরীরে ইসলাম কায়েম?

আসলে ইসলাম হইলো একটা ধারাবাহিক আন্দোলন এবং পদ্ধতির নাম, যাহা আস্তে আস্তে পর্যায়ক্রমে পরিপূর্ণ বিধান হিসাবে আত্মপ্রকাশিত হইয়াছে। নবী সাঃ এবং তাহার মহান সাহাবীদের মাধ্যমে তাহা দীর্ঘ ২৩ বছরেই বাস্তবায়িত হইয়াছে। ২৩ বছরে পর্যায়ক্রমে নাজিল হওয়া এমন পরিপূর্ণ একটা জীবনবিধান কি কাহারও পক্ষে একেবারে এবং একসাথে ধারণ করা কখনোই সম্ভবপর? ইহা কোনো বস্তু বা পোশাক নহে যে, তাহা তাৎক্ষনিকভাবে হাতে ধারণ করিলেই বা গায়ে পরিলেই দায়িত্ব পালন হইয়া গেলো। নবীও তাহা করিতে পারেন নাই, সাহাবীরাও পারেন নাই। এমনকি তাহারা আমরণ নিজেদের আদর্শ হিসাবে ইসলামকে পালন করিতেই চেষ্টা করিয়াছেন এবং নিজেদের পরিপূর্ণ মুসলিম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করিবারই অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাইয়াছেন মাত্র। তবুও কেহই কখনো নিজেকে পরিপূর্ণ মুসলিম হিসাবে দাবী করিবার সাহস প্রদর্শন করেন নাই। হাদিস এবং ইতিহাস হইতে ইহাই জানা যায়। নবীর হাদীসে আছে-যখন দেখিবে ইসলামের কাজ করিতে তুমি মনে আনন্দ পাইতেছো, তখন বুঝিবে তুমি খাটি মুসলিম। আর আল্লাহ তো বলিয়াই দিয়াছেন–হে মুমিনগণ তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো। অথবা হে মুমিনগণ তোমরা মুসলিম না হইয়া কখনোই মৃত্যুবরণ করিও না।

তাহা হইলে বর্তমান জাহিলিয়াতের যুগেও নিজেকে কেহ কি পরিপূর্ণ মুসলিম হিসাবে দাবী করিতে পারেন নাকি সম্ভবপরও? অথচ আহাম্মক অনেকের মুখেই কতো যে বাহাদুরী শুনিতে পাই। তাহারা নিজেকে সঠিক ইসলামের দাবীদার জাহির করিয়া অন্য আলিম বা মুসলিম কিংবা ইসলামী আন্দোলনকারীকেও ভ্রান্ত, ভণ্ড বা কাহারো দালাল বলিয়া থাকেন এই ভাষায় যে, যাহার সাড়ে তিনহাত শরীরে ইসলাম নাই বা ইসলাম কায়েম করেন নাই তিনি বা তাহারা কিভাবে ইসলাম কায়েম করিবেন?

তাহাদের কথা শুনিয়া আমার শুধু হাসি পায় যে, তাহারা কতোবড় বোকা !! আসলে তাহারা লম্বা কোর্তা, দাঁড়ি-টুপি বা পাগড়িপরাকেই শুধু পরিপূর্ণ ইসলামপালন বলিয়া ভ্রম করিয়া থাকেন বলিয়া এই নালায়েকের ধারণা। কেননা আমি ইতিহাস হইতে জানিয়াছি যে, আবু জেহেল আর নবী সাঃ, আবুবকর রাঃসহ আরবের সবাই তখন কোর্তাজাতীয় একই লম্বা পোশাক পরিতেন। এখনও তাহাই পরিয়া থাকেন এমনকি মুসলিমদের মতো দাঁড়িও অনেক কাফিরের ছিলো এবং এখনও আছে। তাই বলিয়া আবু জেহেলদের কেহই কিন্তু কখনোই মুসলিম হিসাবে চিহ্নিত করেন নাই!! ইসলামী পোশাক বলিয়া কোনো নমুনা থালে তিনি কি তাহা বলিয়া যাইতেন না?

আমার বড়ই দুঃখ হয়, চারিদিকের বেশুমার মদ-জুয়া, সুদ-ঘুষ, ধর্ষণ, হারাম, অশ্লীলতা আর পাপাচারের বিষাক্ত বাতাসের সমুদ্রে বসবাস করিয়া আমাদের অনেকেই কী না মহা আত্মতৃপ্তিতেই আছেন আর নিজেকে খাটি মুসলিম ভাবিয়া বেশ প্রসাদ লাভ করিতেছেন? আর ফতোয়াবাজী করিয়া ক্ষেত্রবিশেষে জোরে আমিন আর আস্তে আমিন বলা বা নাভীর ওপরে হাতবাঁধা নাকি নাভীর নিচে হাতবাঁধার ঝগড়ায় লিপ্ত হইয়া ভাইয়ে ভাইয়ে রক্তারক্তিও করিয়া থাকেন?

নিজেদের পাশেই মানবতার লাশ কিংবা কান্না দেখিয়াও চক্ষু বুঝিয়া অথবা অনাহারে-অর্ধাহারে অপুষ্ট মা-শিশুর কাতরানি কিংবা নারী-শিশুদের ধর্ষণের বিরুদ্ধেও কোনো প্রতিবাদ না করিয়া জীবন কাটাইতেছেন। বরং নিজেরা একে অন্যের নিন্দা-গীবত গাহিয়া কিংবা শুধু অতীত ইসলামের উজ্জ্বল ইতিহাসের কিচ্ছা রোমন্থন করিয়া আত্মপ্রসাদ লাভ করিয়া যাইতেছেন!!

সাড়ে তিনহাত শরীরে ইসলাম কায়েমের অর্থ আছে কি?

জ্বী আছে, কিন্তু তাহা কিভাবে সম্ভবপর হইবে? আসলে হুজুররা যেইভাবে সহজভাবে বলেন, সেইভাবে কি সাড়ে তিনহাত শরীরে ইসলাম কায়েম করা সম্ভব, অন্তত বর্তমানের এই চরম ইসলামবিরোধী পরিবেশে? নাহ, সম্ভব নহে যদি না চার খলিফার মতোন ইসলামী সমাজব্যবস্থা কায়েম থাকে!!

যেই সমাজে বিদেশ হইতে চড়াসুদে আমদানিকৃত সকল কিছুই যেমনঃ আপনার পরিহিত জুব্বা-কোর্তার কাপড়, খাদ্য-বস্থু, ব্যবহৃত ও ভোগ্য জিনিসপত্র আমরা ভোগ করিয়া থাকি এমনকি মসজিদ-মাদ্রাসায় প্রাপ্ত টাকা বা বেতনের সহিতও সুদ-ঘুষের টাকার সম্পর্ক রহিয়াছে এবং কুরআন নির্দেশিত পন্থায় এখন পর্দারক্ষা করা আদৌ সম্ভবপর নহে, যেইখানে অসহায় ধর্ষিতাদের আপনি ইসলামী বিধানে সুরক্ষা দিতে ১০০% ব্যর্থ এবং ধর্ষক, চোর-ডাকাত, সরকারি-বেসরকারি লুটেরা, জুয়াড়ু-মদারুদের আপনি সংশোধনী কিংবা ইসলামী পন্থায় শাস্তি দিতেও অক্ষম; সেইখানে কী করিয়া আপনি আপনার সাড়ে তিনহাত বডিতে ইসলাম ধারণ করিবেন, তাহাতো আমার মতোন অর্ধশিক্ষিত বান্দারও বুঝেই আসিতেছে না!! তবে আপনার কিভাবে সমঝে আসিলো কিছুই বুঝিলাম না।

নোংরা-পচা সমুদ্রসদৃশ এই সমাজে বা বিষাক্ত-দুষিত বাতাসের সাগরে নিজের শরীর ডুবাইয়া রাখিয়া কিংবা নাপাক পানিতে অজু করিয়া আপনি কিভাবে বলিতে পারেন যে, আপনি পাক-পবিত্র আছেন এবং আপনার শরীরে হারামখাদ্য ঢুকিয়া যায় নাই, আপনার পর্দা আপনি রক্ষা করিতে পারিতেছেন? আপনার ইবাদত-বন্দেগী সঠিক হইতেছে কিনা, আপনার আমার মতোন দায়িত্ব-জ্ঞানহীনের প্রার্থনা মহান বিবেচক আল্লাহর কাছে কবুলই হইতেছে কিনা–সেইটাই আগে ভাবিবার বিষয়। তাহার পরেই না আপনি অন্যের খুঁত ধরা কিংবা অন্য ইসলপন্থীদের সমালোচনার জাবর কাটিতে পারেন মাত্র!!

আপনার শরীরে হারাম রক্ত আছে কিনা, আপনার পোশাক পবিত্র কিনা, আপনার ক্রয়করা জায়নামাজ নির্ভেজাল কিনা, আপনার খাদ্য হালাল কিনা, আপনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করিতেছেন কিনা, চার খলিফার মতোন আপনিও আল্লাহর আইনমতে ”আকিমুদ্দিন” অর্থাৎ সমাজ-রাষ্ট্র হইতে সকল খারাবী দূর করিয়া ন্যায়প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলাম কায়েমের চেষ্টা করিতেছেন কিনা–পরকালে মুক্তির জন্য ইহাই হইলো আসল বিবেচ্য বিষয়। কেননা হাদীসে এইকথাও লিখা আছে যে, ইসলাম বা দ্বীন কায়েমের চিন্তা ব্যতীত যে মৃত্যুবরন করিলো, তাহার মরণ হইলো জাহিলিয়াতের মৃত্যু। এখন ভাবুন–আমরা কেমন ধারার মুসলিম হিসাবে বড়াই করিয়া যাইতেছি!!

সুতরাং কাঁদার ভিতরের পিচ্ছিল বাইম বা গছিমাছ হইয়া বাঁচিলেই কিন্তু পবিত্রতার দোহাই দিয়া আমরা পরকালে রক্ষা পাইবোনা।।



হক্কুল্লাহ এর চাইতে হক্কুল ইবাদ এর গুরুত্ব বেশী :


1- আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল স. ইরশাদ করেন, যে ব্যাক্তি আল্লারহ পথে শহীদ হয়েছে তার সকল গুনাহ মাফ হবে, কিন্তু হৃন মাফ হবে না। (মুসলিম শরীফ)

2- রাসূল স. বলেন, আল্লাহ পাক বলেছেন (হাদীসে কুদসী) আমি কেয়ামতের দিন তিন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবো। ১. যে ব্যাক্তি আমার নাম নিয়ে কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হয় এবং তা ভংগ করে, ২. যে ব্যাক্তি কোন সম্ভ্রান্ত ও স্বাধীন ব্যাক্তিকে অপহরণ করে বিক্রি করে দেয় এবং তার পন্যের অর্থ আত্মসাৎ করে, ৩. যে ব্যাক্তি কোন শমিককে নিয়োগ করলো, তার কাছ থেকে পুরো কাজ আদায় করল, অতপর কাজ আদায় করার পর তাকে মজুরি দিল না। (বুখারী)

3- আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল (স.) বলেন, কোন পুরুষ ও নারী একাধারে ষাট বছর কোন গুনাহ ব্যাতিতই আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়ে দেযার পরও যদি মৃত্যুর সমেয় এমন ওসিয়ত করে যায়, যাতে উত্তরাধিকারীদের ক্ষতি হয়, তবে সেই পুরুষ ও নারীর জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যায়(মুসনাদে আহমদ)

4- যে ব্যাক্তি উত্তরাধিকারীদের প্রপ্য অংশ থেকে বঞ্জিত করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের উত্তরাধিকারী থেকে বঞ্চিত করবেন (ইবনে মাজাহ)

5- হযরত আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল স. এরশাদ করেন, তোমরা কি জান, নি:স্ব কে ? সাহাবাগন বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ স. আমাদের মধ্যে নি:স্ব সেই ব্যাক্তি যার কাছে কোন সম্পদ নেই। রাসূল স. বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সেই প্রকৃত নি:স্ব, যে কেয়ামতের দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে নামায, রোজা, হজ্জ, যাকাত সাথে নিয়ে এলেও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আসবে যে, কাউকে গালি, কারো সম্পদ লুট, কাউকে প্রহার, কারো সম্ভ্রম হানী এবং কাউকে জখম করে এসেছে, অবশেষে তার নেক কাজ গুলো তাদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে। এ প্রক্রিয়ায় অত্যাচারিতের ক্ষতিপুরন হবার পূর্বেই যদি জালিমের নেক আমল সমূহ নি:ষেষ হয়ে যায়, তবে মজলুমের বদ আমলগুলো তার ঘাড়ে চাপানো হবে, অতপর তাকে জাহান্নামে ফেলে দেয়া হবে। (সিহাহ সিত্তার সকল কিতাবে এ হাদীসটি রয়েছে)

6- হযরত আবু উমামা রা. বর্ণনা করেন, কেয়ামতের দিন অত্যাচারী যখন পুলসিরাতে আরোহন করবে, অমনি যাদের উপর সে অত্যাচার করেছিল, তারা এসে ক্ষতিপুরণ বাবদ তার নেক আমল সমূহ ভাগ করে নিয়ে যাবে ।তার কাছে পর্যাপ্ত নেক আমল না থাকলে কৃত অত্যাচারের পরিমাণ মজলুমের পাপ তার ঘাড়ে পাচানো হবে। পরিশেষে তাকে জাহান্নামের অতল তলে ফেলে দেয়া হবে। (তাবরানী)

7- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উনাইস রা. বলেন : রাসূল (স.) কে আমি বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন আল্লাহর বান্দাদেরকে খালি পায়ে ও বিনা খতনা অবস্থায় সমবেত করা হবে। এ সময় এত জোরে একটি আওয়ায ধ্বনিত হবে, যা কাছের ও দূরের সকলেই সমভাবে শুনতে পাবে। ঘোষণা দেয়া হবে : আমি সূক্ষ্ণ প্রতিফল প্রদানকারী রাজাধিরাজ। কোন জান্নাতীর পক্ষ্যে সম্ভব নয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করে এবং কোন জাহান্নামীর পক্ষেও সম্ভন নয় সে জাহান্নামে যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না মজলুমের প্রতিশোধ না নেব, এমনকি তা যদি একটি চড় থাপ্পড় অথবা তার চেয়েও ছোট কোন বিষয় হয়। তোমার পালনকর্তা কারো উপর সামান্য পরিমানও অত্যাচার করবেন না। (বোখারী, আহমদ, তাবরানী)

8- কেয়ামতের দিন সকল পাওনাদারের পাওনা আদায় করে দেয়া হবে। এমনকি একটি শিংবিহীন ছাগলকে আর একটি শিংযুক্ত ছাগলের শিং দিয়ে অত্যাচারের (গুতা মারার) প্রতিশোধও আদায় করে দেয়া হবে। (মুসলিম, তিরমিযি)

9- সেদিন কোন আর্থিক জরিমানা করে বিরোধ মিটানো হবে না। বরং মজলুমকে জালিমের নেক আমলগুলো দিয়ে দেয়া হবে এবং মজলুমের বদ আমলসমূহ জালিমের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হবে। অবশেষে প্রতাপশালী অহংকারী অত্যাচারীদেরকে লোহার জিঞ্জির পেচিয়ে হাযির করা হবে। অনন্তর বলা হবে তাদেরকে দাবড়িয়ে জাহান্নামে নিয়ে যাও। (তাবরানী)

সুন্নাত কাকে বলে

সুন্নাত কাকে বলে- এ বিষয়টি অনেকের কাছে পরিষ্কার নয়। তাই মিশকাত এর ভূমিকা থেকে কিছু তথ্য উল্লেখ করছি- মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর নবী ও রাসূল ছিলেন। সেই সাথে তিনি মানুষও ছিলেন। তাঁর নবী জীবনের কার্যাবলীকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা- ১.যা তিনি নবী ও রাসূল পদের দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য করেছেন এবং ২.যা তিনি অপর মানুষের ন্যায় মানুষ হিসেবে করেছেন। যেমন- খাওয়া, পরা ইত্যাদি। প্রথম শ্রেণীয় কার্যাবলী সমস্তই আল্লাহতাআলার নিয়ন্ত্রণাধীনে সম্পাদিত হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেনীর কার্যাবলী অবশ্য এমন নয়। এ প্রসঙ্গে শাহ ওলীউল্লাহ দেহলভী (র.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদীস প্রধানত দুই প্রকার: প্রথম প্রকার: যাতে তাঁর নবুওয়াত ও রিসালাতের (নবী ও রাসূল পদের) দায়িত্ব সম্পর্কিত বিষয়সমূহ রয়েছে। নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ এর অন্তর্ভুক্ত। ১.যাতে এমন সকল জনকল্যাণকর বাণী ও নীতি-কথাসমূহ রয়েছে, যেসকলের জন্য কোনো সীমা বা সময় নির্ধারিত করা হয়নি। অর্থাৎ যা সার্বজনীন ও সর্বকালীন। যেমন আখলাক ও চরিত্র বিষয়ক কথা। ২.যাতে কোনো আমল বা কাজ অথবা কাজের ফযীলত বা মহত্বের কথা আছে। এর কোনোটির উৎস ওহী আর কোনোটির উৎস তার ইজতিহাদ। ৩.যাতে পরকালে বা উর্ধ্ব জগতের কোনো বিষয় রয়েছে। তার উৎস ওহী। ৪.যাতে ইবাদাত ও বিভিন্ন স্তরের সমাজব্যবস্থার নিয়ম-শৃঙ্খলার বিষয় আছে। এর কোনোটির উৎস ওহী আর কোনোটির উৎস স্বয়ং রাসূলুল্লাহর ইজতিহাদ। কিন্তু রাসূলুল্লাহর ইজতিহাদ ওহীর সমপর্যায়। কেননা, আল্লাহতাআলা তাঁকে শরীয়ত সম্পর্কে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত হতে রক্ষা করেছেন। দ্বিতীয় প্রকার: যাতে তাঁর নবুওয়াত ও রিসালাতের দায়িত্বের অন্তর্গত নয়, এরূপ বিষয়াবলী রয়েছে। নিম্নলিখিত বিষয়াবলী এর অন্তর্ভুক্ত। ১.যাতে আরবদের মধ্যে প্রচলিত কাহিনীসমূহের মধ্যে তাঁর কোনো কাহিনী বর্ণনার কথা রয়েছে। যেমন- উম্মে-জারা ও খোয়াফার কাহিনী। ২.যাতে সার্বজনীন নয়, বরং সমকালীন কোনো বিশেষ মুছলেহাতের কথা রয়েছে। যেমন- সৈন্য পরিচালনার কৌশল। ৩.যাতে তাঁর কোনো বিশেষ ফায়সালা বা বিচার-সিদ্ধান্তের কথা আছে। এসকলের মধ্যে কোনোটির উৎস তাঁর অভিজ্ঞতা, কোনোটির উৎস ধারণা, কোনোটির উৎস আদত-অভ্যাস, কোনোটির উৎস দেশ-প্রথা আর কোনোটির উৎস সাক্ষ্য-প্রমাণ। যথা- বিচার-সিদ্ধান্ত। ৪.যাতে চাষাবাদ জাতীয় কোনো কথা রয়েছে। যেমন তাবীরে নখলের কথা। ৫.যাতে চিকিৎসা বিষয়ক কোনো কথা আছে। ৬.যাতে কোনো বস্তু বা জন্তুর গুণাগুণের কথা রয়েছে। যথা- ঘোড়া নিতে গাঢ় কালো রং ও সাদা কপাল দেখে ক্রয় করবে। ৭.যাতে সে সকল কাজের কথা রয়েছে যে সকল কাজ তিনি ইবাদাতরূপে নয়, বরং অভ্যাসবশত অথবা সংকল্প ছাড়া ঘটনাক্রমে করেছেন। প্রথম প্রকার সুন্নাহর অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক এবং দ্বিতীয় প্রকার সুন্নাহর মধ্যে যা তাঁর অভ্যাসপ্রসূত বা যাকে তিনি পছন্দ করতেন তাও আমাদের জন্য অনুকরণীয়। (অনেক আলেম দ্বিতীয় প্রকার কাজগুলোকে মূল সুন্নাহ বলে স্বীকার করেন না। তাদের মতে সেগুলো রাসূলের (সা.) অভ্যাস বা পছন্দ। কেউ চাইলে তা বরকতপূর্ণ মনে করে গ্রহণ করতে পারে আবার কেউ না চাইলে শরীয়তের হালালের বা জায়েযের সীমার মধ্যে থেকে তা বর্জনও করতে পারে) আল্লাহর রাসূল ভাত খাননি রুটি খেয়েছেন। এখানে আল্লাহর রাসূল তার পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে খাবার খেয়েছেন। এখন কেউ যদি বলে- রুটি খাওয়া সুন্নাত তাহলে এটা সুন্নাতের মনগড়া ব্যাখ্যা হবে। এখানে দেখতে হবে- রাসূল (সা.) খাওয়ার সময় কিভাবে খেতেন এবং কি কি কাজ করতেন খাবার আগে বা পরে। তবে, রাসূল যদি রুটি খেতে আদেশ করতেন তাহলে সেটাকে সুন্নাত ভাববার কারণ হতো। কেউ কেউ খেজুর পাতার মুসজিদ বানিয়ে সুন্নাতী মসজিদ নাম দিয়েছেন। এটা হচ্ছে সুন্নাহ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকার ফল। রাসূল (সা.) শুধু মাত্র আরব সম্প্রদায়ের নবী ছিলেন না তিনি হলেন বিশ্বনবী। আর বিশ্বনবীর জন্য শোভনীয় নয় যে তিনি কেবল তার (বা আরব) জাতির সংস্কৃতিকে সুন্নাত বানিয়ে নেবেন। তাছাড়া রাসূল (সা.) উম্মতকে এটাও বলেছেন যে, জাগতিক (বা পেশা সংক্রান্ত) বিষয়ে তোমরা ভালো বুঝ। মজলুমের সাহায্য করা, সমাজের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা, সমাজের অভুক্ত অনাহারী মানুষের জন্য কিছু করা, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দেয়া, ক্ষুদার্থ কে খাবার দেয়া ইত্যাদি রাসুলের (সা.) এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ যা কোথাও কোথাও ওয়াজিব হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আমাদের মাঝে যারা প্রয়োজনাতিরিক্ত সুন্নাতের চর্চা করা পছন্দ করেন বা ঢোল পিটিয়ে বলতে থাকেন অমুকের মাঝে অমুক সুন্নাত নেই, তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন যে, উপরে উল্লিখিত সুন্নাহ গুলো পালনের কোন সুযোগ তারা নিজেরা পান কিনা। চোখের সামনে খোদার বান্দাদের লাঠি পেটা করে মেরে ফেললেও যারা চোখ তুলে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করেন না, বরং চোখ নামিয়ে চলার ফতোয়া দিয়ে দেন, তারা বড় সুন্নাত বাদ দিয়ে কোন মুখে ঐচ্ছিক (বা পরিহারযোগ্য) সুন্নাতের কথা বলে! ১০০ টাকা চুরি করে ১০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া কি ভন্ডামী নয়? যে সব সুন্নাত পালন করলে আবু জাহেলদের (মতো অপশক্তির) মুখোমুখি হতে হবে, সেই সব সুন্নাতকে (বা ফরযকে) ফিতনা আখ্যায়িত করে লাউ/কদু খাওয়ার সুন্নাত পালনে ব্যাস্ত রয়েছি (কারণ তাতে ব্যক্তিস্বার্থ আছে, মজা লাগে)। সুন্নাতের নামে অতি মাত্রায় বাড়াবাড়ি আর আসল দায়িত্বকে এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতাই কি মুসলমানদের এই দুর্দশার কারণ নয়? সুন্নাতের সংক্ষিপ্ত কথা: ১.রাসূল (সা.) যা আদেশ করেছেন তা করতে হবে। যা নিষেধ করেছেন তা বর্জন করতে হবে। তিনি যেগুলোতে উৎসাহ দিয়েছেন তা করা ভালো। তিনি যাতে নিরুৎসাহিত করেছেন তা বর্জন করা ভালো। ২.তিনি যা নবী ও রাসূল হিসেবে করেছেন তা (ব্যতিক্রম বাদে) করা উচিত (ব্যতিক্রম: বিরতিহীন নামায-রোযা করা যাবে না, পুরুষরা ৪ টার বেশি বিয়ে করতে পারবে না..)। আর রাসূল সা. যা আরবের লোক হিসেবে, ষষ্ঠ শতাব্দীর লোক হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে বা নবী ও রাসূল হওয়া ভিন্ন অন্য কারণে তিনি করেছেন তা সুন্নাত নয়। যেমন: আরবের লোক হিসেবে তিনি আরব খাদ্যশস্য খেয়েছেন, আরব পোশাক পরেছেন, বালুময় রাস্তায় হেটেছেন, ষষ্ঠ শতাব্দীর লোক হিসেবে তিনি হেটে হজ করেছেন, তরবারি ব্যবহার করেছেন, মানুষ হিসেবে তিনি বিশেষ ধরণের চিকিৎসা নিতেন। এ কাজগুলো নবী ও রাসূল হওয়ার কারণে তাঁর বিশেষ কাজ ছিল না বলে সেগুলো সুন্নাত নয়; ক্ষেত্রবিশেষে গ্রহণযোগ্য বা জায়েয (যেমন: পাগড়ী ব্যবহার- যা কাফিররাও পরতো); ক্ষেত্রবিশেষে বর্জণীয় বা অসম্ভব (যেমন: ট্যাঙ্ক কামানের মোকাবেলায় তরবারি ব্যবহার, হুবহু রাসূলের পদ্ধতিতে চিকিৎসা..) ৩.রাসূল (সা.) যেগুলোর অনুমতি বা সম্মতি দিয়েছেন সেগুলো কখনো সুন্নাত আবার কখনও জায়েয মাত্র।


নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি কাজ ও ব্যবহারকে সুন্নাহ বলা একটি চরম বিভ্রান্তি। সুন্নাহ হল এমন কাজ যা শরীয়ত অনুযায়ী উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনুসরণীয় এবং ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু নবীজির সব কাজ এভাবে সুন্নাহ নয়। কিছু কাজ তার ব্যক্তিগত অভ্যাস, কিছু কাজ আরব সংস্কৃতি অনুসারে, আবার কিছু কাজ সেই সময়ের পরিস্থিতির কারণে ছিল।

১. সুন্নাহর সংজ্ঞা ও প্রকৃতি

ইসলামী পরিভাষায় সুন্নাহ বলতে বোঝায়—
✅ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই কাজ, কথা ও সমর্থন, যা শরীয়তের অংশ এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে মুসলিমদের জন্য অনুসরণীয়।

ইমাম আশ-শাতিবী (রহ.) বলেন:
السنة هي الطريقة المتبعة في الدين، التي يجب الاقتداء بها شرعًا
“সুন্নাহ হল দ্বীনের সেই পথ, যা শরীয়ত অনুসারে অনুসরণ করা আবশ্যক।”
(আল-ইতিসাম, ১/৮০)

২. ঢাল-তলোয়ার ব্যবহার কি সুন্নাহ?

নবীজির যুগে যুদ্ধের জন্য তলোয়ার, ঢাল, বর্শা, তীর-ধনুক ব্যবহার হতো, কারণ সেটিই ছিল সেই সময়ের প্রচলিত অস্ত্র। কিন্তু এটি শরীয়তের বিধান নয়, বরং একটি যুগসাপেক্ষ বিষয়।

যদি কেউ বলে যে, ঢাল-তলোয়ার ব্যবহার করা সুন্নাহ,
যুগ উপযোগী পরমাণু বোমা দিয়ে যুদ্ধ করা সুন্নাত
নয়৷৷

  তাহলে জাহেলদের বলতে হবে—
➡️ নবীজির উটের উপর চড়াও সুন্নাহ
➡️ নবীজির হাতে বানানো চামড়ার জুতা পরাও সুন্নাহ
➡️ তিনি সৃষ্টিগত কারণে যেভাবে হাঁটতেন প্রত্যেককে হুবহু এক‌ইভাবে হাঁটতে হবে।
➡️ নবীজি যেভাবে চিঠি লিখতেন (চামড়া বা কাগজে কালি দিয়ে), সেভাবেই লিখতে হবে

এটি ইসলামের মূল শিক্ষার পরিপন্থী। কারণ ইসলাম এক বিশেষ যুগ বা সংস্কৃতির সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা সকল যুগের জন্য প্রযোজ্য।

৩. নবীজি কবে কোন কাজ ব্যক্তিগতভাবে করেছেন?

নবীজির কিছু কাজ তার ব্যক্তিগত পছন্দ বা সামাজিক পরিবেশের কারণে ছিল। যেমন:
✅ উট বা ঘোড়ায় চড়া
✅ হাতে বানানো চামড়ার জুতা পরা
✅ ঢাল ও তলোয়ার ব্যবহার
✅ সেই সময়ের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ

এই বিষয়গুলো নবীজির অনুসরণীয় সুন্নাহ নয়, বরং ঐতিহাসিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রযোজ্য ছিল।

৪. প্রকৃত সুন্নাহ কী?

✅ ইবাদত বিষয়ক সুন্নাহ (যেমন: নামাজ, রোযা, দোয়া, ইবাদতের নিয়ম)
✅ আখলাক ও চরিত্রগত সুন্নাহ (যেমন: বিনয়ী হওয়া, সত্য কথা বলা, অন্যের প্রতি দয়া করা)
✅ শরীয়ত নির্দেশিত সুন্নাহ (যেমন: সালামের আদব, মিসওয়াক করা, দোয়া পড়া)

তাই ঢাল-তলোয়ার ব্যবহারকে সুন্নাহ বলা অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তি ছাড়া কিছু নয়।
 

ইসলাম ধর্মীয় পোশাক!!!!!!!!!!

=======================

.

ইসলাম ধর্মীয় পোশাক আসলে কী?

ভারতীয় উপমহাদেশে পড়া পাঞ্জাবী পায়জামা ও টুপি?

আরব অঞ্চলে পড়া থোব-ইশমাগ?

ইন্দোনেশীয় মুসলিমদের পড়া ফাতাওয়া – লুঙ্গি – বাহারি টুপি?

মাদ্রাজ-কেরালায় পড়া শার্ট-পেন্ট?

সুদানিদের বিশাল ঢিলা-ঢালা জুব্বা?

ইরিত্রিয়া-নাইজেরীয়দের পড়া বাহারি রঙ্গের জুব্বা - টুপি?

ফিলিপিনো মুসলিমদের মতো জিন্স-টি শার্ট?

.

আসল কথা হচ্ছে- ইসলামে ধর্মীয় পোশাকের সুনির্দিষ্ট আকৃতি নেই। কিন্তু আছে পোশাকের মূলনীতি! অর্থাৎ Dress Code.

সেই মূলনীতি মেনে আপনি জিন্স টি-শার্ট, লম্বা জোব্বা, শার্ট, লুঙ্গি, কাবলী যাই পড়েন না কেন তা আপনার পোশাক ধর্মীয় পোশাকের অন্তর্ভুক্ত হবে। বাঙ্গালী প্রথাগত টুপি না পড়ে নেপালী বাহারি টুপি পড়লেও আপনার মাথা ঢাকার কাজ হয়ে যাবে!

.

কাজেই; সুনির্দিষ্ট আকৃতির ভিতরে না ঢুকে বরং মূলনীতির ভিতর ঢুকে পড়ুন।

=======================================================

.

.

.

ইসলামের পোশাকের মূলনীতি বা Dress Code হচ্ছে-

১। পুরুষের সত্বর হচ্ছে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকতে হবে। মেয়েদের জন্য সমস্ত শরীর ঢাকতে হবে।

.

২। যে পোশাক পরিধান করবে, সেটাই যেন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সৌন্দর্যময় ও দৃষ্টি-আকর্ষী না হয়।

.

৩। পোশাকটি যেন এমন পাতলা না হয়, যাতে কাপড়ের উপর থেকেও সত্বর দেখা না যায়।

.

৪। পোশাক যেন এমন আঁট-সাঁট (টাইটফিট) না হয়, যাতে দেহের উঁচু-নিচু গড়ন ব্যক্ত হয়। এটা পুরোপুরি নগ্নতার চেয়ে আরো বেশি দৃষ্টি-আকর্ষী। পোশাকটি এত আঁট-সাঁট (টাইটফিট) হবে না যাতে উঠতে, বসতে, পেশাব করতে, রুকু, সিজদাহ করতে কষ্ট হয়।

.

৫। পোশাকটি যেন কোন অবিশ্বাসী/কাফেরদের ধর্মীয় পোশাকের অনুকৃত না হয়।

.

৬। পোশাকটি যেন বিপরীত লিঙ্গের পোশাকের অনুরূপ না হয়। বিপরীত লিঙ্গের বেশ-ভূষা ধারন করাও হারাম। যেমনঃ পুরুষ হয়ে মহিলাদের মত লম্বা চুল রাখা, হাতে-পায়ে মেহেদী মাখা, (পুরুষরা চুলে ও দাড়িতে মেহেদী মাখতে পারবে), কানে দুল পরা, হাতে চুড়ি বা এই জাতীয় লেডিস সাজ গ্রহণ করা ইত্যাদি।

.

৭। পুরুষের জন্য পরিধেয় কাপড় যেন পায়ের টাখনুর নীচে ঝুলানো না হয়।-- এটা কঠিনতম পাপ।

পুরুষের জন্য রেশম বা সিল্ক এবং স্বর্ণ পরিধান করা হারাম। -- এগুলোও কঠিনতম পাপ।
 যারা বলে, পাঞ্জাবী-জুব্বা পড়া সুন্নাত আর প্যান্টশার্ট পড়া বিদয়াত; - আপনি তো হাদীসে পড়েছেন, নবীজী(সা) আরবীতে কথা বলতেন; তারমানে কী আরবীতে কথা বলাটা সুন্নাত? বাংলা/ইংলিশ/ আরবি ছাড়া অন্য যার যার মাতৃভাষায় কথা বলা কী বিদয়াত??
.নবী মক্কাতে জন্মেছিলেন; এখন কী মক্কাতে জন্ম নেয়া সুন্নাত? বাংলাদেশ/মেরিকায় জন্ম নেয়া বিদয়াত??
নবী(সাঃ) জীবনেও ভাত খাননি; তিনি মাংস ও রুটি খেয়েছেন। তারমানে কী মাংস-রুটি খাওয়া সুন্নাত?? আর ভাত খাওয়া বিদয়াত??
নবী(সা) দিনের পর দিন অভুক্ত থাকতেন, তারমানে কী উম্মতের জন্যঅভুক্ত থাকাটায় সুন্নাত??
নবীজী মাত্র ২ টি কাপড় ছিল; একটা কাপড়ই বেশি ব্যবহার করতেন; তবে দূরের আগন্তুক বা জুমাতে অন্য ড্রেসটি পড়তেন; তারমানে কী ২টি ড্রেস থাকা সুন্নাত?? এরবেশি থাকা বিদয়াত?? আপনাদের হুজুররা কী এটা আমল করে নাকি??
নবীজী উহুদ, বদর জিহাদ করেছিলেন; তারমানে কী এখনও উহুদ, বদর যুদ্ধ করা সুন্নাত??
নবীজী উট/গাধা/খচ্ছরে চড়ে ভ্রমণ/হজ্জ করেছে। তারমানে কী উট/গাধা/খচ্ছরে চড়া সুন্নাত?? প্লেন বা বিমানে চড়ে হজ্জ করা কী তাহলে বিদয়াত??
নবীজী মাটির দেয়াল/মেঝের মসজিদে সালাত পড়েছেন, তারমানে কী মাটির ফ্লোরযুক্ত মসজিদে সালাত পড়া সুন্নাত আর ইট-পাথর, টাইলসের মসজিদে সালাত পড়া বিদয়াত??
নবীজী পড়ালেখা জানতেন না; স্কুল/মাদ্রাসা/বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি; তারমানে কী পড়ালেখা না করাটায় সুন্নাত??
____________নবীজী পৃথিবীর শেষ্ট মানুষ, এমনকি আরবের মাঝেও তিনি শ্রেষ্ট। ঐ সময় আরবরা যা স্বাভাবিক জাতীয় কৃষ্টি ছিল সেটা নবীজীও মেনেছেন; তবে ওহী হবার পর আরবের যে সংস্কৃতি ওহী বিরোধী হয়েছে সেটা ত্যাগ করেছে; তদ্রুপ, জুব্বা/পাগড়ী এটা ঐ আরবদের পুরনো রীতি। এমনকি ওহী নাযিলের পরও সেটা অব্যাহত আছে। বরং ড্রেস পড়ার জন্য নবীজী হাদীসের কিছু ক্লো আছে। সেই ক্লোর সাথে যা মিলে যাবে সেই কাপড়ই পড়া যাবে, হোক পাঞ্জাবী-জুব্বা কিংবা হোক প্যান্টশার্ট।.

 প্যান্ট-শার্ট, কোর্ট, কোর্তা, কাবুলি পড়া কী সুন্নাহ্?
.
জ্বী। অবশ্যই সুন্নাহ হবে যদি উক্ত পোশাকে নবীজীর বেঁধে দেওয়া নীতি থাকে। যেমনঃ রাসূলের সর্বদা নীতি ছিল মেসওয়াক করা। নবী ও সাহাবীরা পিলু বা খেজুর ডাল দিয়ে মেসওয়াক করত। তারমানে এই নয় পিলু বা খেজুর ডালে মেসওয়াক করা সুন্নাত। বরং মেসওয়াক করা সুন্নাত এ নীতির উপর ব্যক্তি যে কোনও গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করলেই তা হবে।
তদ্রুপ, পোশাকও। পোশাকের উপর নবীজীর বেঁধে দেওয়া নীতি অনুসরণ করে পড়লে তাও সুন্নাহ; হোক তা পাঞ্জাবি, জুব্বা, শার্ট-প্যান্ট, কোর্ট, কোর্তা, কাবুলি ইত্যাদি ইত্যাদি।
যেমনঃ নবীজী(সাঃ) এর নীতি ছিল সফরে হেঁটে, উট, গাদা, খচ্চরে চরে হজ্জ পালন করা। সাহাবীরা বৈজ্ঞানিক ছিলেন না যে তারা নবীর সেই নীতি জেনে তাদের বোঝ দিয়ে হ্যালিকপ্টার/ প্লেন বানাবে। বরং তাদের আয়ত্ত বোঝ দিয়েই অনুসরণ করেছেন। উনারা সেভাবেই সফলকাম হয়েছেন। তারমানে এটা বলা কী ঠিক হবে পায়ে হেঁটে, গাধা, উট কিংবা খচ্চরে চরে হজ্জ পালন করাটায় সুন্নাহ? অবশ্যই না। কিন্তু বর্তমানে তো এভাবে পায়ে হেটে, গাদা-উটে চরে হজ্জ করতে হবে না। বরং নবীর নীতি ফলোহ করে প্লেনে চরে হজ্জে গেলেই সেটা সুন্নাহ হবে। এটায় বর্তমান সমসাময়িক বোঝ।
তদ্রুপ, সাহাবীরা নবীজীর প্রতিটি নীতি বোঝসহ চলিতেন। উনারা বর্তমানের এত শান-শওকত জীবনে অবস্থ ছিলেন না। তা আমাদের চলাফেরায় কোর্ট, প্যান্ট-শার্ট পড়তে হয়। অতএব, এগুলোও যদি নবীজীর নীতির বোঝের মাঝে পড়ে এগুলোও সুন্নাহ্।
টুপি পরা সুন্নত?

জনাব মৌলভী Muhammad Qasim প্রশ্ন করেছেন, মাসিক আল কাউসারে প্রকাশিত "টুপি পরা সুন্নত" বিষয়ক আর্টিকেলের ব্যাপারে আমার মতামত কী? লিংক - https://www.alkawsar.com/bn/article/1006/ 

উত্তর: আর্টিকেলটি লেখকের উসুলুল ফিকহ সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক। আল কাউসার পত্রিকায় এমন লেখা প্রকাশ কওমি অঙ্গনে ইলমী অবক্ষয়ের ইঙ্গিতবাহী, যা সত্যিই দুঃখজনক।

শরিয়তের হুকুম ৫টি। ওয়াজিব, মুস্তাহাব, মুবাহ, মাকরুহ, হারাম। টুপি পরা হয়ত ওয়াজিব হবে, নয়ত মুস্তাহাব (সুন্নত) হবে, নয়ত মুবাহ হবে, নয়ত মাকরুহ অথবা হারাম। ওয়াজিব, হারাম যে হবে না এটা জানা কথা। বাকি থাকল তিনটা। আমরা কোন ক্যাটাগরিতে তাহলে একে ফেলব? 

আর্টিকেল লেখক অনেকগুলো আছার একত্র করেছেন যার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে টুপি পরা আমভাবে রাসুল, সাহাবি, তাবেয়ি ও সালাফের যুগে প্রচলিত ছিল। এটা ছিল সুবিদিত ও সুপ্রতিষ্টিত একটি প্র্যাকটিস। মুতাওয়াতির সুত্রে এটি প্রমাণিত। জি, অনেক ধন্যবাদ। আপনি এত এত সময় ও শ্রম ক্ষেপন করে "তাহসিলুল হাসিল" বৈ কিছু করতে পারেন নি। টুপি পরার রেওয়াজ যে সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীর আরব্য রেওয়াজ সেটা এত এত রেওয়ায়াত ও আছার একাট্টা না করলেও আমরা মেনে নিতাম।  

আমরা চাইলে এই লেখার চাইতে কয়েকগুণ বড় লেখা তৈরি করতে পারব যেখানে দেখানো যাবে যে, সাহাবিরা ভাত খেতেন না, খেজুর ও খুবজ খেতেন। ডাল খেতেন না, সারিদ খেতেন। মুরগির মাংস খেতেন না, মাছ খেতেন না। উটের ও ভেড়ার মাংস খেতেন। খেজুর, খুবজ, উট, ভেড়া তো আমরা খাই না। তাই বলে কি আমরা নবির সুন্নত পরিত্যাগ করেছি? না করলে কেন করি নি? নবী ও সাহাবিদের যুগে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে এটাই তো ছিল স্ট্যান্ডার্ড। এই নিয়ে কোন সন্দেহ করার অবকাশ তো নেই। 

আর্টিকেল লেখক যদি ফকিহ হতেন তাহলে তিনি সিহহত-সুবুত (বিশুদ্ধতা ও সাব্যস্ততা) দিয়ে ক্ষান্ত হতেন না, দালালত-ইকতিদ্বা (তাৎপর্য ও চাহিদা) নিয়েও কথা তুলতেন। ঠিক আছে, টুপি পরার বিষয়টি মুতাওয়াতির ও মুতাওয়ারিস সুত্রে সুসাব্যস্ত ও বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত। কিন্তু এর তাৎপর্য বা চাহিদা কী? এ থেকে কী প্রমাণ হয়? 

কোন একটি বিষয় রাসুলের যুগে সাবেত-সাব্যস্ত হওয়াই কি সেটা মুস্তাহাব হবার জন্য যথেষ্ট? রাসুল বাথরুম করার পর কোনদিন সাবান দিয়ে হাত ধুঁয়েছেন? তিনি কীভাবে হাত পরিষ্কার করতেন? আমরা যে এখন সেভাবে হাত পরিষ্কার করছি না, এর ফলে কি আমরা মুস্তাহাব-সুন্নত তরক করছি? না করলে, কেন করছি না? এখানে কি কর্মের সুবুত নিয়ে প্রশ্ন নাকি দালালত নিয়ে? 

রাসুল ও সাহাবিদের থেকে বহু কাজ সাবেত আছে। কিন্তু সেই কাজগুলো দুই প্রকারের - ১) তাআব্বুদি, ২) আদাত-অভ্যাস। তাআব্বুদি মানে সে কাজটি তারা ইবাদত মনে করে করতেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে আদেশকৃত বা উৎসাহিত বিষয় মেনে করতেন। কোন কাজকে তাআব্বুদি প্রমাণ করার জন্য কেবল সেই কাজের সুবুত প্রমাণ করা যথেষ্ট না। বরং সেই কাজটি করাই যে শরিয়তের দাবি সেটাকে ভিন্ন দলিল দ্বারা প্রমাণ করতে হবে। 

সাহাবিরা খেজুর-খুবজ খেতেন, ডান হাত দিয়ে খেতেন। এর মধ্যে প্রথমটি মুস্তাহাব নয়, কারণ এটা তাআব্বুদি নয়। কিন্তু ডান হাত দিয়ে খাওয়া মুস্তাহাব, কেননা এটা তাআব্বুদি। আর কীভাবে এটা তাআব্বুদি হয়েছে? শরিয়তপ্রণেতার পক্ষ থেকে আগত তাকলিফি খিতাবের মাধ্যমে। অর্থাৎ শরিয়তপ্রণেতা এমন কিছু বলেছেন যার দ্বারা প্রমাণ হয়েছে যে এই কাজটি করতে আমাকে শরয়িভাবে আদেশ কিংবা উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে খেজুর-খুবজ খেতে যেহেতু তাকলিফি আদেশ আসে নি, তাই সেটা মুস্তাহাব হয় নি। বরং কেবল আদাত-অভ্যাস হিসেবেই রয়ে গেছে। যদি এমন কোন হাদিসও পাওয়া যায় যেখানে খেজুর খেতে আদেশ কিংবা উৎসাহ দেয়া হয়েছে, তবে সেখানে কারায়েন (আনুষাঙ্গিক প্রমাণাদি) দ্বারা অনুসন্ধান করে দেখতে হবে যে, এই আদেশটা কি তাশরিয়ি/তাকলিফি কিনা। কেবলমাত্র তাশরিয়ি-তাকলিফি আদেশ কিংবা উৎসাহ থাকলেই কোন কাজ মুস্তাহাব হতে পারে। 

এটা একটা দিক। কিন্তু আলোচনার অন্য একটা দিকও আছে। সেটা হচ্ছে মুরুআত ও দানাআতের আলোচনা। মুরুআত হল রুচিশীলতা। দানাআত হল রুচিহীনতা। এটা একটা স্থান-কাল-পাত্রের উপর নির্ভরশীল আপেক্ষিক ও সামাজিক বিষয়। 

المروءَة هي المحافظَةُ على فِعْل ما تَرْكُه من مُباحٍ يُوجِبُ الذَّمَّ عُرْفًا... وعلى ترْك ما فعلُه من مُباحٍ يوجبُ ذَمَّه عُرْفًا... 

ইমাম ইবনে আরাফা বলেন, “রুচিশীলতা (মুরুআত) হল এমন বিষয় পালন করা যা স্বয়ং মুবাহ; কিন্তু পরিত্যাগ করলে সামাজিকভাবে নিন্দা করা হয় এবং এমন বিষয় পরিত্যাগ করা যা স্বয়ং মুবাহ; কিন্তু তা করলে সামাজিকভাবে নিন্দা করা হয়।”

এই কায়েদার অধীনেই আমরা বলি - যে সমাজে টুপি পরাই রুচিশীলতার পরিচায়ক সেখানে টুপি পরতে হবে। মুরুআত রক্ষা করার কারণে তার জন্য টুপি পরা মুস্তাহাব হবে। আর যে সমাজে টুপি পরার প্রচলন নেই, সেই সমাজে টুপি পরা হবে মাকরুহ। কেননা তখন এটি লিবাসুস শুহরত এর হুকুমের অধীন হবে। নবি ও সাহাবিরা যে টুপি পরেছেন, কিংবা ওমর রাঃ যে অন্যকে টুপি পরতে উৎসাহিত করেছেন, সেটা মূলত এই সামাজিক রুচিশীলতা রক্ষা করতেই। ইমাম আহমদ তার কিতাবুয যুহদে ওমর রা. থেকে সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন - 

إياكم وزي الأعاجم ونعيمه 

"অনারবদের পোশাক-আশাক ও তাদের মনোরোম বিষয়াবলি থেকে সাবধান থাকো!" 

হাম্বলি মাযহাবের কাশশাফ আল কিনা' গ্রন্থে বলা হয়েছে, 

يكره للرجل لبسه زي الأعاجم للنهي عن التشبه بالأعاجم 

"কোন ব্যক্তির জন্য অনারবদের পোশাক পরা মাকরুহ, কেননা অনারবদের পোশাক পরতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।" 

যেকোন আকলসম্পন্ন ব্যক্তি বুঝবে যে, এই বক্তব্যটি আরবদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমরা যারা অনারব আছি, আমাদেরকে কি কোনদিন বলা সম্ভব যে অনারবদের পোশাক পরো না! 

আর একারণেই এই কিতাবেই পরের লাইনে বলা হয়েছে, 

ويكره لبس خلاف زي أهل بلده 

"নিজ দেশের লোকদের প্রচলিত পোশাকের বিপরীত পোশাক পরা মাকরুহ" 

গিযাউল আলবাব কিতাবে আছে, 

رأى الإمام أحمد -رحمه الله- رجلاً لابساً بُرداً مخططاً , بياضاً وسواداً , فقال: (ضع هذا , والبس لباسَ أهلِ بلدك) وقال: (ليس هو بحرام , ولو كنتَ بمكة أو المدينة , لم أعب عليك) 

"ইমাম আহমদ একদিন এক লোককে সাদাকালো ডোরাকাটা চাঁদর পরিহিত দেখে বললেন, এটা ছাড়ো এবং নিজ অঞ্চলের পোশাক পরো। তুমি যা পড়েছ তা হারাম নয়। তবে তুমি যদি মক্কা কিংবা মদিনায় এটা পরতে আমি তোমার সমালোচনা করতাম না।" 

ইবনে বাত্তাল বলেছেন সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেছেন, 

الذي ينبغي للرجل: أن يتزيا في كل زمان بِزِيِّ أهله , ما لم يكن إثماً , لأن مخالفة الناس في زِيِّهِمْ ضَرْبٌ من الشهرة 

"সকল যুগের মানুষের কর্তব্য হচ্ছে সমাজের মানুষের পোশাক অনুযায়ী পোশাক পরা। যতক্ষণ সেটি গুনাহের বিষয় না হচ্ছে। কেননা পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে সমাজের মানুষের বিপরীত করা হচ্ছে এক প্রকার খ্যাতি অর্জন।" 

আর্টিকেল লেখক সাহেবকে বলব তিনি যেন লম্বা লম্বা লেখা প্রকাশ করার আগে উসুলুল ফিকহ পড়েন। উসুল বিনা হাদিসচর্চা জ্ঞানের পরিবর্তে সংশয়ই বৃদ্ধি করে। 

আল বাহরুল মুহিত গ্রন্থে আছে, ইমাম ইবনু দাকিক আল ইদ বলেছেন,

 أصولُ الفقهِ هو الذي يَقضِي ولا يُقضَى عليهِ 

“উসুলুল ফিকহ দিয়েই অন্যসব বিচার করা হবে। উসুলুল ফিকহকে অন্য কিছু দিয়ে বিচার করা যাবে না।” 

আল ফুরুক কিতাবে ইমাম কারাফি বলেছেন, 

فالشريعة من أولها إلى آخرها مبنيةٌ على أصول الفقه 

“শরিয়তের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই উসুলুল ফিকহের উপর দাঁড়িয়ে আছে।”

এত বড় আর্টিকেল লেখার আগে লেখক যদি একটু খোঁজাখুঁজি করে ইমাম শাতেবির এই বক্তব্যটা দেখে নিতেন! 

আল মুয়াফাকাত কিতাবে ইমাম শাতেবি বলেন, 

العوائد المستمرة ضربان: أحدهما: العوائد الشرعية التي أقرها الدليل الشرعي أو نفاها...، 

والضرب الثاني: هي العوائد الجارية بين الخلق بما ليس في نفيه ولا إثباته دليل شرعي...ومنها: ما يكون متبدلا في العادة من حسن إلى قبح، وبالعكس، مثل كشف الرأس، فإنه يختلف بحسب البقاع في الواقع، فهو لذوي المروءات قبيح في البلاد المشرقية، وغير قبيح في البلاد المغربية، فالحكم الشرعي يختلف باختلاف ذلك، فيكون عند أهل المشرق قادحا في العدالة، وعند أهل المغرب غير قادح 

“প্রচলিত আদত-অভ্যাস দুই প্রকারের।
প্রথম প্রকার হল সেসব শরিয়তের আওতাভূক্ত অভ্যাস যার ব্যাপারে শরয়ি দলিল হয়ত অনুমতি দিয়েছে অথবা নিষেধ করেছে।
দ্বিতীয় প্রকার হল সেসব আদত-অভ্যাস যা সমাজে প্রচলিত আছে এবং যার ব্যাপারে শরিয়তের কোন আদেশ কিংবা নিষেধজ্ঞাপক দলিল নেই। এদের মধ্যে অনেক বিষয় আছে যা পরিবর্তনশীল। কোন সমাজে হয়ত প্রশংসনীয় অন্য সমাজে তাই নিন্দনীয়। যেমন মাথা খোলা রাখা। এর বিষয়টা একেক অঞ্চলে একেক রকম। প্রাচ্যের দেশগুলোতে মাথা খোলা রাখা মন্দ বিষয়। কিন্তু পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এটি মন্দ নয়। সুতরাং এই বিষয়ে শরিয়তের হুকুমও সমাজ অনুযায়ী ভিন্ন হবে। তাই পূর্বদেশের কোন মানুষ এই কাজ করলে তার আদালত (সাক্ষ্য প্রদানের যোগ্যতা) নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কিন্তু পশ্চিমদেশে একই কাজ করলে কোন প্রশ্ন উঠবে না।”

– আল মুওয়াফাকাত, ২/৪৮৯। 

মুরুআত যে সম্পূর্ণই একটি আঞ্চলিক বিষয় তার স্বপক্ষে আমি ইমাম নববীর একটি বক্তব্য দিয়ে শেষ করছি। যেখানে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন যে, মাথা খোলা রাখা মুরুআতের খেলাফ নাকি না সেটা অঞ্চলভেদে ভিন্ন হবে। 

قال الإمام النووي في المنهاج: 
والمروءة تخلق بخلق أمثاله في زمانه ومكانه، فالأكل في سوق والمشي مكشوف الرأس وقبلة زوجة وأمة بحضرة الناس وإكثار حكايات مضحكة ولبس فقيه قباء وقلنسوسة حيث لا يعتاد وإكباب على لعب الشطرنج أو غناء أو سماعه وإدامة رقص يسقطها، والأمر فيه يختلف بالأشخاص والأحوال والأماكن. اهـ. 

“মুরুআত (রুচিশীলতা) হচ্ছে নিজ যুগের ও নিজ অঞ্চলের সমপর্যায়ের মানুষদের অনুরূপ আচরণ করা। রাস্তায় খাওয়া, খালি মাথায় ঘোরা, স্ত্রী কিংবা দাসীকে জনসম্মখে চুমু খাওয়া, অনেক বেশি ঠাট্টা-রসিকতা করা, জুব্বা ও টুপির প্রচলনবিহীন সমাজে ফকিহ বা আলেমের এগুলো পরা, দাবা খেলা কিংবা গান শোনা ও গাওয়াতে মজে থাকা, দীর্ঘ সময়ের জন্য নাচা — এসবের মাধ্যমে মূরুআতের স্খলন হবে কিনা তা স্থান, কাল, পাত্র ও পরিবেশ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন।”

— ইমাম নববি, মিনহাজুত তালেবিন। 

টুপি পরা যদি তাআব্বুদি কোন সুন্নত হত, তবে ইমাম নববি একে মুরুআতের আলোচনার অধীনে না এনে সরাসরি সুন্নত বলে দিতেন। 

আরেকজন উসুলির স্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে সমাপ্ত করি। 

ইমাম কুরতুবী তার তাফসীর গ্রন্থে সুরা কাসাসের ২৩ নং আয়াতের আলোচনায় বলেন, 

وأما المروءة فالناس مختلفون في ذلك، والعادة متباينة فيه، وأحوال العرب فيه خلاف أحوال العجم، ومذهب أهل البدو غير مذهب الحضر 

“মুরুআত (রুচিশীলতা) মানুষ ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। মানুষের আদত ও অভ্যাসও এক্ষেত্রে পৃথক। আরবদের অবস্থা এক্ষেত্রে অনারবদের থেকে ভিন্ন। শহুরে লোকদের অবস্থা গ্রামবাসী কিংবা যাযাবরদের থেকে ভিন্ন।”

দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে কওমিরা আজ উসুলুল ফিকহ বর্জন করে আহলে হাদিসে পরিণত হয়েছে। দেওবন্দী বনাম আহলে হাদীস বিতর্কে আহলে হাদীসই তাই প্রকৃত বিজয়ী। কারণ তারা আবু হানিফার অনুসারীদেরকে উসুলবর্জিত হাশাবি বানিয়ে ছেড়েছে।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শর্ষীনা, ফুরফুরা, জৌনপুরী, ফুলতলী, সোনাকান্দা সহ সকল বালাকোটি পীরগনের শেরেকী আকীদা

৭১ এর যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস