মওদূদী রহ ওপর আনিত সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনার অভিযোগের জবাব-১
আলোচনার শুরুতে একটি বিষয় পরিস্কার হওয়া দরকার। সাহাবাদের সম্মলিত
জামায়াতের সম্মান, মর্যাদা, মহত্ব্য ইতিহাসের বরাত দিয়ে নির্ণয় করা যায় না।
কারণ ইতিহাস ও হাদিসের কিতাবগুলো পর্যালোচনা করলে তাদের দু একজনের
ব্যতিক্রমি দু চারটি পদস্থলন লক্ষ করা যায়। এই হিসেবে কোন কোন মুজতাহিদ
ইমাম খেলাফত থেকে রাজতেন্ত্রর উত্তরনের জন্য আমীরে মুয়াবীয়া রা এর কিছু ভুল
ভ্রান্তির দিকে আঙ্গুলী নির্দেশ করেন। সেই সাথে সাথে তারা এও বলেন যে,
সাহাবাদের হাজারো গুনাহ, অন্যায় সব মাপ কারণ তারা নবী করিম স কে জীবনের
থেকেও বেশি ভালোবাসতেন এবং তার অনুশরণে কোন ত্রুটি করতেন না। দ্বীনের
হেফাজত তাদের দ্বারাই হয়েছে। হুজুরের কঠিন সময়ে এই সাহাবারাই তাকে সাহায্য
করেছেন। যে কয়টা সামান্য পদস্থলন দেখা যায় সেগুলো মানবিক দুর্বলতা বৈ কিছুই
নয়। এই হিসেবে কোন সাহাবাকে গাল মন্দ করা বা তার সাথে শত্রুতা রাখা কুফরী।
তাদের বিষয়ে আমরা কোরআনের বর্ণনাকেই আমলে নিবো। এটা ইমামদের মত।এই মতটিই
অধিক বিশুদ্ধ। কিন্তু একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, সেই সব ইমামরাই আবার
সাহাবাদের পারস্পরিক যুদ্ধ বিগ্রহ এবং বিভিন্ন কর্মকান্ডের চুল চেরা
বিশ্লেষণ করেছেন। একারনে কোন সাহাবা ভুল করেছেন বা অন্যায় করেছেন শুনলেই
যেন তাদের কে নিয়ে বাজে মন্তব্য না করি। বিষয়টি অধিক গুরুত্ব্যপূর্ণ। এই
বিষয়ে মাওলানা মওদূদীও তরজমানুল কোরআনের এক জায়গায় বলেন, সাহাবাদের কে
গালমন্দ করা, তাদের শত্রুতা করা নিঃসন্দেহে মারাত্নক গুনাহ, আমি বলবো
দ্বীনকে অস্বিকার করার সমপর্যাযের অপরাধ। প্রশ্ন হতে পারে তাহলে মওদূদী
নিজেই কেন সাহাবাদের কে সমালোচনার পাত্র বানালেন ? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে
হলে আমাদের আগামী পর্বগুলোর সাথে থাকুন। প্রাথমিক ভাবে কেবল এটুকো জেনে
রাখূন যে, গবেষকরা ইতিহাস গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে নিজেদের কিতাবে স্বাধীন
রায় দিয়েছেন, তাদের কেউই সাহাবাদের কে সমালোচনার পাত্র বানাননি। ঠিক তেমনি
মওদূদীও সাহাবাদের সমালোচনা করেছেন বলা ইতিহাসের মিথ্যে অধ্যায়ন হবে।
এবার আসা যাক আলোচনায়।
মাওলানা ত্বকি ওসমানী সাহেব তার মুয়াবিয়া আওর তারিখে হাকাইক কিতাবের ৪৫ পৃষ্টায় লিখেন-আইনের শাষন ভুলন্ঠিত শিরোনামের হযরত মুয়াবিয়া রা এর বিরুদ্ধে মওদূদীর আরেকটি অভিযোগ এই যে,-“ আরো ঘৃণ্য একটি বিদয়াত হযরত মুয়াবিয়ার রা শাসনকালে শুরু হলো। তিনি স্বয়ং এবং তার নির্দেশে সকল আঞ্চলিক প্রশাসক মসজিদের মিম্বরে বসে জুমু’আর খুতবায় হযরত আলীর রা বিরুদ্ধে গালমন্দের ঝড় বইয়ে দিতেন। এমনকি মসজিদে নববীতে রাসূলুল্লাহর (স) মিম্বরে বসে রওজা শরীফকে সামনে রেখে তারই প্রিয়তম পাত্রকে গালমন্দ করা হতো। শরিয়াত মাথায় থাকুক, নিছক নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও কারো মৃত্যুর পর তাকে গালমন্দ করা হৃদয়হীন অমানবিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষ করে জুম’আর পবিত্র কে খুতবাকে এভাবে ক্লেদাক্ততা দ্বারা অপবিত্র করা তো চরমতম ঘৃণ্য আচরণ। হযরত ওমর বিন আব্দুল অযীয উমাইয়া পরিবারের অন্যান্য অপকর্মের মত এটিরও অবশান ঘটান এবং খোতবায় হযরত আলীর প্রতি গালাগালের পরিবর্তে এ আয়াত পড়ার নির্দেশ প্রদান করেন। ( আল্লাহ তোমাদের কে আদল ইহসান করার হুকুম দিচ্ছেন)। ইবনুল আছিরের (খঃ ত পৃঃ ৮০), তাবারী (খঃ ৪ পৃঃ ১৮০)
মাওলানা কিতাবের সমালোচনায় তিনি যতগুলো অভিযোগের জবাব দিয়েছেন তার বেশির ভাগে অবস্থা হলো তিনি এমন ভাবে বর্ণনা গ্রহণ করার পক্ষপাতি ছিলেন যাতে হযরত মুয়াবিয়া রা এর গায়ে একটি দাগও না লাগে। এই কারনে তিনি মওদূদীর রহ এর রেওয়াতের সূত্র কে সরাসরি মিথ্যা না বলে শীয়া বর্ণনা দোষে দুষ্ট প্রমানে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এই অভিযোগটির জবাব দিতে গিয়ে তিনি পূর্বের মতো এবার আর মাওলানা মওদূদীর সংগ্রহিত ঐতিহাসিক রেওয়াতগুলো কে শীয়া বর্ণনা দোষে দুষ্ট করা দিকে না গিয়ে তিনি সরাসরি রেওয়াতগুলো কে অস্বিকার করে বসলেন। তিনি দাবি করলের বিস্তর ঘাটাঘাটি করার পরেও তিনি কোন রেওয়াত পাননি। তিনি কেন এমন বিভ্রান্তী ছড়ালেন সেটা আল্লাহ পাক ভালো বলতে পারেন। রেওয়াতের চুল চেড়া বিশ্লেষন না করে তিনি মওদূদীর ওপর মিথ্যা ইতিহাস রচনার অভিযোগ করেন এভাবে যে, মওদূদী অসত্য ভাষন দিয়েছে। তিনি লিখেন-সবকটি বরাতগ্রন্থ বিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি করেও এমন কোন তথ্যের খোজ আমরা পাইনি, যাতে হযরত মুয়াবীয়া রা স্বয়ং এ ঘৃণ্য বিদয়াতে জড়িত ছিলেন বলে ধারণা করা যেতে পারে। কিন্তু অভিযোগ যেহেতু সুনির্দিষ্ঠ এবং মাওলানা সাহেব অসত্য বলেছেন এমনটি কল্পনা করাও কষ্টকর, তাই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই অন্যান্য উৎস-গ্রন্থও চষে ফেললাম। কিন্তু বিশ্বাস করুন; মাওলানাকে “অসত্য ভাষণের” লজ্জা থেকে বাচাঁনোর কোন উপায় আমাদের নাগালে আসে নি। এমনকি শীয়া ঐতিহাসিদের বর্ণনাবলীতেও তাকে খুশীরকরার মতো কোন মশলা খুজে পাওয়া যায়নি।
এরপরে তিনি অবশ্য স্বিকার করে নেন যে, মুয়াবীয়া রা দুজন গভর্ণর হযরত আলী রা কে বদদোয়া করতেন, মুয়াবীয়ার রা এই কাজে নুন্যতম সম্পৃক্ততা নেই , গালাগাল করতেন বলে কোন প্রমান নেই, যে কয়টি আছে সেগুলো শীয়াদের বর্ণনা। বদদোয়া করা বা আলী রা সমালোচনার করার যে বর্ণনা পাওয়া যায় সেটা কে তিনি শীয়া বর্ণনা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং এর বর্ণনাকারী মিহনাফ কে শীয়া এবং তার বর্ণনা পরিত্যাজ্য বলে ঘোষণা করে দিয়েছেন। অথচ তারই পিতা ইতিহাস বর্ণনায় এই মিনহাফ কে সহিহ বলেছেন এবং উক্ত বইতে ত্বকি ওসমানী নিজেই মিনহাফের বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। এগুলো পড়ে আলোচনা হবে। আসুন বিভিন্ন রেওয়াতের মধ্যে তুলনা মুলক বিশ্লেষন করার আগে জেনে নেই যে, আসলেই কি মওদূদী রহ নিজের কিতাবে মিথ্যা ঘটনা বর্ণনা করে ইতিহাসের কিতাবের হাওয়া দিয়েছেন। এরকম মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া একজন স্বনামধন্য গবেষক, আলেম (ত্বকি ওসমানী সাহেবের দৃষ্টিতে) মাওলানা মানুষের পক্ষে কি করে সম্ভব হতে পারে ? নাকি মওদূদী সাহেব কে মিথ্যাবাদী, সাহাবা বিদ্ধেষী প্রমান করার জন্যই হযরতগন এই কষ্টটুকো করেছেন এবং অসত্য তথ্য প্রদানের চোরাবালিতে নিজেদের অজান্তে পা দিয়েছেন।। আল্লাহ মা’লূম।
প্রথমত বলে রাখা দরকার যে, বিষয়টি অত্যান্ত নাজুক। কারণ এই মুহুর্ত্যে আমরা আসল ঘটনাবলী সম্পর্কে কেবল ঐতিহাসিক বর্ণনার ওপরই নির্ভর করতে পারি। আমরা বলতে পারি এমন ঘটনা ঘটেছিল। কোন হালতে ঘটেছে সেটার বিচার বিশ্লেষন করা অবশ্য ভিন্ন বিষয়। মওদূদী নিজেও সেই ধরনের কোন অভিযোগ করেননি যে, মুয়াবীয়া রা শত্রুত বা নফসের খায়েশের কারনে হযরত আলী রা কে গালাগাল করেছেন। তিনি বরং ইতিহাস গ্রন্থের সহিহ রেওয়াতগুলো কে এক করে বুঝাতে চেয়েছেন যে, খেলাফত ব্যবস্থার নামে যে নেয়ামত মুসলমানরা ভোগ করছিল, রাজতন্ত্রের পবিরর্তেনর সাথে সাথে কি সব মৌলিক পরিবর্তন তাতে সাধিত হয়েছে। ত্বকি ওসমানী সাহেব অবশ্য আমীরে মুয়াবিয়া রা এর কিছু কর্মকান্ডকে তার ইজতেহাদী ভূল বলে স্বিকার করে নিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ইজতিহাদ করার জন্য শরীয়াত কিছু সীমা রেখে যে টেনে দিয়েছে সেটা ত্বকি ওসমানী সাহেব থেকেও হযরত মুয়াবিয়া রা অনেক বেশি জানতেন কিনা ? শরীয়াত কোন ব্যক্তিকে ইজতিহাদ করার সুযোগ দেয় যখন কোরআন এবং সুন্নাহর প্রামান্য কোন দলির তার সামনে না থাকে। এটা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেহেতু ত্বকি ওসমানী সাহেব জেনেশুনে হোক অথবা অজ্ঞাতসারেই হোক মওদূদীর ওপর হযরত মুয়াবিয়ার রা ওপর মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের বিশাল ফিরিস্তি টেনে তুলেছেন সেহেতু আমাদের কে বাধ্য হয়েই এসব বিষয়ে ইতিহাস ও হাদিস গ্রন্থ্যের সাহায্য নিতে হবে।
প্রথমে দেখা যাক হযরত মুয়াবিয়া রা নিজে হযরত আলী রা কে গালাগাল করার ব্যপারে কতটা নিরাপদ ছিলেন। আমরা বলবো তিনি কতটা নিরপেক্ষ ছিলেন যেহেতু ত্বকি ওসমানী সাহেব চ্যালেঞ্জ করেছেন এমন কোন রেওয়াত তিনি পাননি। তাই বাধ্য হয়েই সর্ব প্রথম এই বিষয়ে যাচাই করার দরকার। আমরা মনে হয় এই কাজে আমাদের বেশিদুর যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে রেওয়াত করলে হয়তো শীয়া বর্ণনাকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হতে পারে তাই আমরা প্রথমে মুসলিম শরীফের একটি হাদিস দিয়েই আলোচনা শুরু করতে চাই। ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন-
“হযরত আ’মীর রা তার পিতা হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস রা থেকে বর্ণনা করেন, হযতর মুয়াবীয়া রা হযরত সা’দ রা কে বলেন কোন জিনিস আপনাকে “ আবু তুরাব” কে গালাগাল করতে বাধা দিচ্ছে ? হযরত সা’দ রা বলেন, আলী রা ব্যাপারে রাসুলুল্লা (স) এর তিনটি ইরশাদের কথা স্মরন করি, তখন কোন ক্রমেই তাকে গালমন্দ দিতে পারি না। ও গুলোর মধ্যে থেকে একটি ইরশাদও যদি আমার সম্পর্কে হত, তাহলে তা আমার কাছে লাল রংগের উটের চাইতেও অধিক প্রিয় হতো।.................................।( মুসলিম শরীফ, ফাযায়েলে আলী অধ্যায়)। খেয়াল করুন হযরত মুয়াবীয়া রা আলী রা কে আবু তুরাব বলে সম্বোধন করেছেন। এটা কে আলীর রা আহাল ভালো ভাবে নিতো না এবং তারা এটাকে গালি হিসেবেই বিবেচনা করতেন।
অন্য আরেক বর্ণনায় হযরত সা’দ রা বলেন, হযরত মুয়াবিয়া রা একবার হজ্ব উপলক্ষে এলে হযরত সাদ তার সাথে দেখা করেন। প্রসঙ্গক্রমে হযরত আলীর রা এর ব্যাপারে আলোচনা এলে হযরত মুয়াবীয়া তার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেন। এতে হযরত সাদ রা রাগান্বিত হন............এরপরে হযরত সাদ হযরত আলী রা তিনটি ফজিলত বর্ণনা করেন যা মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে। ( ইবনে মাজা, ফাযায়েলে আসহাবে রাসুল (স)।
তিরমিজি শরীফেও এ ধরনের বর্ণনা এসেছে। আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজর আসকালানী রহ মুসনদে আবি ইয়া’লার হাওয়ালায় বর্ণনা করেন যে, যখন হযরত মুয়াবিয়া রা হযরত সাদ রা কে হযরত আলী রা কে গালমন্দ দেবার জন্য বললেন তখন হযরত সাদ রা বলেন, যদি হযরত আলী রা কে গালমন্দ করার জন্য আমার মাথার ওপর করাতও রাখা হয়, তবুও কখনো হযরত আলী রা কে গালাগাল করবো না। ( ফতহুল বারী, বাবু মানাকিবে আলী রা)
মুসনাদের আহমাদে বর্ণিত হয়েছে যে, উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালমা রা যখন কোন এক সাহাবীকে বললেন, আপনাদের এখানে কি মিম্বরে দাড়িয়ে রাসুলুল্লাহ (স) কে গালাগাল করা হয় ? তখন সাহাবারা বললেন, এটা কিভাবে সম্ভব ? তিনি উত্তর দিলেন, এখানে কি আলী রা ও তার আহাল কে গালাগাল করা হয়না ? আমি স্বাক্ষ দিচ্ছি যে, রাসুলুল্লাহ (স) আলীকে ভালোবাসতেন। এভাবে কি রাসুলুল্লাহ (স) কে গালাগাল করা হচ্ছে না ? ( মুসনাদে আহমাদ)
এগুলো হচেছ হাদিসে বিশুদ্ধ রেওয়াতগুলোর অন্যমত। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচেছ যে, হযরত মুয়াবীয়া রা নিজে কিভাবে হযরত আলী রা কে গালাগাল করার জন্য অন্যদের কে হুকুম করছিলেন। মদিনার মিম্বরে দাড়িয়ে কিভাবে তার প্রশাসকরা হযরত আলী রা ও তার আহালদের কে গালাগাল করতেন এবং তার প্রভাব কি ছিলো তার বিবরনও উম্মুল মুমিনীন সালমা রা এর জবানীতে জানা গেল। এগুলো কি মওদূদীর নিজের তৈরি করা অথবা তার কোন শীয়া বন্ধুর রচনা ? আমি জানিনা এই রেওয়াত গুলো কেও কি শীয়া বর্ণনা বলে উড়িয়ে দেওয়া হবে কিনা। নাকি ত্বকি উসমানী সাহেবের খলিফারা এই সব বর্ণনাকে কোন কিতাবে খুজে না পাওয়ার দাবি করবেন। মওদূদীর বিরুদ্ধে তাদের অন্তরের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ প্রশমনের জন্য আরো বহু ক্ষেত্র ছিলো কিন্তু জ্বলন্ত সত্যকে ধামা চাপা দিয়ে তাকে মওদূদীর ঘারে চাপানোর এই ব্যর্থ চেষ্টা কেন তার মারেফাত উদঘাটন হওয়া সময়ের দাবি।
তারা মাওলানাকে হেয় করার জন্য কিছু হেয়ালীপনা, আর বক্রতার দারস্থ হয়েছেন। তারা হাদিসের যেসব বর্ণনায় গালাগাল শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তারা এর অনুবাদ গ্রহণ করছেন দোষত্রুটির জন্য তিরস্কার করা। তাসাব্বু শব্দের অর্থ যদি দোষত্রুটি বর্ণনা হয় তাহলে কোরআন এবং হাদিসের বহু আয়াতকে সম্পুর্ণ বদলে ফেলতে হবে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ
আর ( হে ঈমানদারগণ!) এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিয়ো না। কেননা, এরা শিরক থেকে আরো খানিকটা অগ্রসর হয়ে অজ্ঞতাবশত যেন আল্লাহকে গালি দিয়ে না বসে। সুরা আন’আম-১০৮।
এখানে তাদের অর্থ অনুযায়ী আয়াতে অর্থ হবে, তোমরা মুর্তিগুলোর দোষত্রুটি বর্ণনা করো না। জানা কথা যে, মুর্তির তো দোষত্রুটি বর্ণনার সুযোগই নেই।
হাদিস শরীফে এসেছে, মুমিনকে গালি দেওয়া ফাসেকী। একই শব্দের অর্থ কেবল এক জায়গায় এসে দোষত্রুটি বর্ণনা হয়ে যায় তার কারণ কি ? ধরে নেওয়া হলো আলী রা ও তার আহালদের কে গালাগাল করা হয়না, বরং দোষত্রুটি বর্ণনা করা হয়। তাহলে যেসকল গর্ভণরগন মসজিদের নববীর মিম্বরে দাড়িয়ে নবীর আহাল কে দোষারোপ করে তার প্রতিকার হিসেবে খেলাফত থেকে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ? এই মর্মে ইতিহাসের পাতায় একটি অক্ষরও নেই । মৃত কোন ব্যক্তির দোষত্রুটি বর্ণনা করা তাও এমন ভাবে যে, উম্মুল মুমিনীনকেও এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এটা সাহাবাপ্রেমী হযরত ত্বকি ওসমানীর দৃষ্টিতে তেমন কোন বিষয় ছিলো না, তিনি এটা কে মৃদকম্পন বলে তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন অথচ মওদূদী বর্ণনা করেন যে, গালাগালের ঝড় বইয়ে দেওয়া হতো। উম্মুল মুমিনীন হযরত সালমা রা এর বর্ণনা এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক দের দেয়া তথ্য কিন্তু সেই কথাই বলে। আগামী কিস্তিতে আমরা দেখবো খোদ দেওবন্দের পুর্ববর্তি আকাবার গন তাদের স্বস্ব কিতাবে হযরত আলী রা ও তার আহালকে গালাগাল করার বিষয়ে কি কি বর্ণনা গ্রহণ করেছেন, যেটা হযরত ত্বকি ওসমানীর চোখে ধরা পড়েনি। কবি বলেন- দিনের বেলায় চামচিকা যদি দেখতে না পায় তাহলে সূর্যের কি দোষ। (চলবে)
এবার আসা যাক আলোচনায়।
মাওলানা ত্বকি ওসমানী সাহেব তার মুয়াবিয়া আওর তারিখে হাকাইক কিতাবের ৪৫ পৃষ্টায় লিখেন-আইনের শাষন ভুলন্ঠিত শিরোনামের হযরত মুয়াবিয়া রা এর বিরুদ্ধে মওদূদীর আরেকটি অভিযোগ এই যে,-“ আরো ঘৃণ্য একটি বিদয়াত হযরত মুয়াবিয়ার রা শাসনকালে শুরু হলো। তিনি স্বয়ং এবং তার নির্দেশে সকল আঞ্চলিক প্রশাসক মসজিদের মিম্বরে বসে জুমু’আর খুতবায় হযরত আলীর রা বিরুদ্ধে গালমন্দের ঝড় বইয়ে দিতেন। এমনকি মসজিদে নববীতে রাসূলুল্লাহর (স) মিম্বরে বসে রওজা শরীফকে সামনে রেখে তারই প্রিয়তম পাত্রকে গালমন্দ করা হতো। শরিয়াত মাথায় থাকুক, নিছক নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও কারো মৃত্যুর পর তাকে গালমন্দ করা হৃদয়হীন অমানবিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষ করে জুম’আর পবিত্র কে খুতবাকে এভাবে ক্লেদাক্ততা দ্বারা অপবিত্র করা তো চরমতম ঘৃণ্য আচরণ। হযরত ওমর বিন আব্দুল অযীয উমাইয়া পরিবারের অন্যান্য অপকর্মের মত এটিরও অবশান ঘটান এবং খোতবায় হযরত আলীর প্রতি গালাগালের পরিবর্তে এ আয়াত পড়ার নির্দেশ প্রদান করেন। ( আল্লাহ তোমাদের কে আদল ইহসান করার হুকুম দিচ্ছেন)। ইবনুল আছিরের (খঃ ত পৃঃ ৮০), তাবারী (খঃ ৪ পৃঃ ১৮০)
মাওলানা কিতাবের সমালোচনায় তিনি যতগুলো অভিযোগের জবাব দিয়েছেন তার বেশির ভাগে অবস্থা হলো তিনি এমন ভাবে বর্ণনা গ্রহণ করার পক্ষপাতি ছিলেন যাতে হযরত মুয়াবিয়া রা এর গায়ে একটি দাগও না লাগে। এই কারনে তিনি মওদূদীর রহ এর রেওয়াতের সূত্র কে সরাসরি মিথ্যা না বলে শীয়া বর্ণনা দোষে দুষ্ট প্রমানে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এই অভিযোগটির জবাব দিতে গিয়ে তিনি পূর্বের মতো এবার আর মাওলানা মওদূদীর সংগ্রহিত ঐতিহাসিক রেওয়াতগুলো কে শীয়া বর্ণনা দোষে দুষ্ট করা দিকে না গিয়ে তিনি সরাসরি রেওয়াতগুলো কে অস্বিকার করে বসলেন। তিনি দাবি করলের বিস্তর ঘাটাঘাটি করার পরেও তিনি কোন রেওয়াত পাননি। তিনি কেন এমন বিভ্রান্তী ছড়ালেন সেটা আল্লাহ পাক ভালো বলতে পারেন। রেওয়াতের চুল চেড়া বিশ্লেষন না করে তিনি মওদূদীর ওপর মিথ্যা ইতিহাস রচনার অভিযোগ করেন এভাবে যে, মওদূদী অসত্য ভাষন দিয়েছে। তিনি লিখেন-সবকটি বরাতগ্রন্থ বিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি করেও এমন কোন তথ্যের খোজ আমরা পাইনি, যাতে হযরত মুয়াবীয়া রা স্বয়ং এ ঘৃণ্য বিদয়াতে জড়িত ছিলেন বলে ধারণা করা যেতে পারে। কিন্তু অভিযোগ যেহেতু সুনির্দিষ্ঠ এবং মাওলানা সাহেব অসত্য বলেছেন এমনটি কল্পনা করাও কষ্টকর, তাই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই অন্যান্য উৎস-গ্রন্থও চষে ফেললাম। কিন্তু বিশ্বাস করুন; মাওলানাকে “অসত্য ভাষণের” লজ্জা থেকে বাচাঁনোর কোন উপায় আমাদের নাগালে আসে নি। এমনকি শীয়া ঐতিহাসিদের বর্ণনাবলীতেও তাকে খুশীরকরার মতো কোন মশলা খুজে পাওয়া যায়নি।
এরপরে তিনি অবশ্য স্বিকার করে নেন যে, মুয়াবীয়া রা দুজন গভর্ণর হযরত আলী রা কে বদদোয়া করতেন, মুয়াবীয়ার রা এই কাজে নুন্যতম সম্পৃক্ততা নেই , গালাগাল করতেন বলে কোন প্রমান নেই, যে কয়টি আছে সেগুলো শীয়াদের বর্ণনা। বদদোয়া করা বা আলী রা সমালোচনার করার যে বর্ণনা পাওয়া যায় সেটা কে তিনি শীয়া বর্ণনা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং এর বর্ণনাকারী মিহনাফ কে শীয়া এবং তার বর্ণনা পরিত্যাজ্য বলে ঘোষণা করে দিয়েছেন। অথচ তারই পিতা ইতিহাস বর্ণনায় এই মিনহাফ কে সহিহ বলেছেন এবং উক্ত বইতে ত্বকি ওসমানী নিজেই মিনহাফের বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। এগুলো পড়ে আলোচনা হবে। আসুন বিভিন্ন রেওয়াতের মধ্যে তুলনা মুলক বিশ্লেষন করার আগে জেনে নেই যে, আসলেই কি মওদূদী রহ নিজের কিতাবে মিথ্যা ঘটনা বর্ণনা করে ইতিহাসের কিতাবের হাওয়া দিয়েছেন। এরকম মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া একজন স্বনামধন্য গবেষক, আলেম (ত্বকি ওসমানী সাহেবের দৃষ্টিতে) মাওলানা মানুষের পক্ষে কি করে সম্ভব হতে পারে ? নাকি মওদূদী সাহেব কে মিথ্যাবাদী, সাহাবা বিদ্ধেষী প্রমান করার জন্যই হযরতগন এই কষ্টটুকো করেছেন এবং অসত্য তথ্য প্রদানের চোরাবালিতে নিজেদের অজান্তে পা দিয়েছেন।। আল্লাহ মা’লূম।
প্রথমত বলে রাখা দরকার যে, বিষয়টি অত্যান্ত নাজুক। কারণ এই মুহুর্ত্যে আমরা আসল ঘটনাবলী সম্পর্কে কেবল ঐতিহাসিক বর্ণনার ওপরই নির্ভর করতে পারি। আমরা বলতে পারি এমন ঘটনা ঘটেছিল। কোন হালতে ঘটেছে সেটার বিচার বিশ্লেষন করা অবশ্য ভিন্ন বিষয়। মওদূদী নিজেও সেই ধরনের কোন অভিযোগ করেননি যে, মুয়াবীয়া রা শত্রুত বা নফসের খায়েশের কারনে হযরত আলী রা কে গালাগাল করেছেন। তিনি বরং ইতিহাস গ্রন্থের সহিহ রেওয়াতগুলো কে এক করে বুঝাতে চেয়েছেন যে, খেলাফত ব্যবস্থার নামে যে নেয়ামত মুসলমানরা ভোগ করছিল, রাজতন্ত্রের পবিরর্তেনর সাথে সাথে কি সব মৌলিক পরিবর্তন তাতে সাধিত হয়েছে। ত্বকি ওসমানী সাহেব অবশ্য আমীরে মুয়াবিয়া রা এর কিছু কর্মকান্ডকে তার ইজতেহাদী ভূল বলে স্বিকার করে নিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ইজতিহাদ করার জন্য শরীয়াত কিছু সীমা রেখে যে টেনে দিয়েছে সেটা ত্বকি ওসমানী সাহেব থেকেও হযরত মুয়াবিয়া রা অনেক বেশি জানতেন কিনা ? শরীয়াত কোন ব্যক্তিকে ইজতিহাদ করার সুযোগ দেয় যখন কোরআন এবং সুন্নাহর প্রামান্য কোন দলির তার সামনে না থাকে। এটা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেহেতু ত্বকি ওসমানী সাহেব জেনেশুনে হোক অথবা অজ্ঞাতসারেই হোক মওদূদীর ওপর হযরত মুয়াবিয়ার রা ওপর মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের বিশাল ফিরিস্তি টেনে তুলেছেন সেহেতু আমাদের কে বাধ্য হয়েই এসব বিষয়ে ইতিহাস ও হাদিস গ্রন্থ্যের সাহায্য নিতে হবে।
প্রথমে দেখা যাক হযরত মুয়াবিয়া রা নিজে হযরত আলী রা কে গালাগাল করার ব্যপারে কতটা নিরাপদ ছিলেন। আমরা বলবো তিনি কতটা নিরপেক্ষ ছিলেন যেহেতু ত্বকি ওসমানী সাহেব চ্যালেঞ্জ করেছেন এমন কোন রেওয়াত তিনি পাননি। তাই বাধ্য হয়েই সর্ব প্রথম এই বিষয়ে যাচাই করার দরকার। আমরা মনে হয় এই কাজে আমাদের বেশিদুর যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে রেওয়াত করলে হয়তো শীয়া বর্ণনাকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হতে পারে তাই আমরা প্রথমে মুসলিম শরীফের একটি হাদিস দিয়েই আলোচনা শুরু করতে চাই। ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন-
“হযরত আ’মীর রা তার পিতা হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস রা থেকে বর্ণনা করেন, হযতর মুয়াবীয়া রা হযরত সা’দ রা কে বলেন কোন জিনিস আপনাকে “ আবু তুরাব” কে গালাগাল করতে বাধা দিচ্ছে ? হযরত সা’দ রা বলেন, আলী রা ব্যাপারে রাসুলুল্লা (স) এর তিনটি ইরশাদের কথা স্মরন করি, তখন কোন ক্রমেই তাকে গালমন্দ দিতে পারি না। ও গুলোর মধ্যে থেকে একটি ইরশাদও যদি আমার সম্পর্কে হত, তাহলে তা আমার কাছে লাল রংগের উটের চাইতেও অধিক প্রিয় হতো।.................................।( মুসলিম শরীফ, ফাযায়েলে আলী অধ্যায়)। খেয়াল করুন হযরত মুয়াবীয়া রা আলী রা কে আবু তুরাব বলে সম্বোধন করেছেন। এটা কে আলীর রা আহাল ভালো ভাবে নিতো না এবং তারা এটাকে গালি হিসেবেই বিবেচনা করতেন।
অন্য আরেক বর্ণনায় হযরত সা’দ রা বলেন, হযরত মুয়াবিয়া রা একবার হজ্ব উপলক্ষে এলে হযরত সাদ তার সাথে দেখা করেন। প্রসঙ্গক্রমে হযরত আলীর রা এর ব্যাপারে আলোচনা এলে হযরত মুয়াবীয়া তার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেন। এতে হযরত সাদ রা রাগান্বিত হন............এরপরে হযরত সাদ হযরত আলী রা তিনটি ফজিলত বর্ণনা করেন যা মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে। ( ইবনে মাজা, ফাযায়েলে আসহাবে রাসুল (স)।
তিরমিজি শরীফেও এ ধরনের বর্ণনা এসেছে। আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজর আসকালানী রহ মুসনদে আবি ইয়া’লার হাওয়ালায় বর্ণনা করেন যে, যখন হযরত মুয়াবিয়া রা হযরত সাদ রা কে হযরত আলী রা কে গালমন্দ দেবার জন্য বললেন তখন হযরত সাদ রা বলেন, যদি হযরত আলী রা কে গালমন্দ করার জন্য আমার মাথার ওপর করাতও রাখা হয়, তবুও কখনো হযরত আলী রা কে গালাগাল করবো না। ( ফতহুল বারী, বাবু মানাকিবে আলী রা)
মুসনাদের আহমাদে বর্ণিত হয়েছে যে, উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালমা রা যখন কোন এক সাহাবীকে বললেন, আপনাদের এখানে কি মিম্বরে দাড়িয়ে রাসুলুল্লাহ (স) কে গালাগাল করা হয় ? তখন সাহাবারা বললেন, এটা কিভাবে সম্ভব ? তিনি উত্তর দিলেন, এখানে কি আলী রা ও তার আহাল কে গালাগাল করা হয়না ? আমি স্বাক্ষ দিচ্ছি যে, রাসুলুল্লাহ (স) আলীকে ভালোবাসতেন। এভাবে কি রাসুলুল্লাহ (স) কে গালাগাল করা হচ্ছে না ? ( মুসনাদে আহমাদ)
এগুলো হচেছ হাদিসে বিশুদ্ধ রেওয়াতগুলোর অন্যমত। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচেছ যে, হযরত মুয়াবীয়া রা নিজে কিভাবে হযরত আলী রা কে গালাগাল করার জন্য অন্যদের কে হুকুম করছিলেন। মদিনার মিম্বরে দাড়িয়ে কিভাবে তার প্রশাসকরা হযরত আলী রা ও তার আহালদের কে গালাগাল করতেন এবং তার প্রভাব কি ছিলো তার বিবরনও উম্মুল মুমিনীন সালমা রা এর জবানীতে জানা গেল। এগুলো কি মওদূদীর নিজের তৈরি করা অথবা তার কোন শীয়া বন্ধুর রচনা ? আমি জানিনা এই রেওয়াত গুলো কেও কি শীয়া বর্ণনা বলে উড়িয়ে দেওয়া হবে কিনা। নাকি ত্বকি উসমানী সাহেবের খলিফারা এই সব বর্ণনাকে কোন কিতাবে খুজে না পাওয়ার দাবি করবেন। মওদূদীর বিরুদ্ধে তাদের অন্তরের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ প্রশমনের জন্য আরো বহু ক্ষেত্র ছিলো কিন্তু জ্বলন্ত সত্যকে ধামা চাপা দিয়ে তাকে মওদূদীর ঘারে চাপানোর এই ব্যর্থ চেষ্টা কেন তার মারেফাত উদঘাটন হওয়া সময়ের দাবি।
তারা মাওলানাকে হেয় করার জন্য কিছু হেয়ালীপনা, আর বক্রতার দারস্থ হয়েছেন। তারা হাদিসের যেসব বর্ণনায় গালাগাল শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তারা এর অনুবাদ গ্রহণ করছেন দোষত্রুটির জন্য তিরস্কার করা। তাসাব্বু শব্দের অর্থ যদি দোষত্রুটি বর্ণনা হয় তাহলে কোরআন এবং হাদিসের বহু আয়াতকে সম্পুর্ণ বদলে ফেলতে হবে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ
আর ( হে ঈমানদারগণ!) এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিয়ো না। কেননা, এরা শিরক থেকে আরো খানিকটা অগ্রসর হয়ে অজ্ঞতাবশত যেন আল্লাহকে গালি দিয়ে না বসে। সুরা আন’আম-১০৮।
এখানে তাদের অর্থ অনুযায়ী আয়াতে অর্থ হবে, তোমরা মুর্তিগুলোর দোষত্রুটি বর্ণনা করো না। জানা কথা যে, মুর্তির তো দোষত্রুটি বর্ণনার সুযোগই নেই।
হাদিস শরীফে এসেছে, মুমিনকে গালি দেওয়া ফাসেকী। একই শব্দের অর্থ কেবল এক জায়গায় এসে দোষত্রুটি বর্ণনা হয়ে যায় তার কারণ কি ? ধরে নেওয়া হলো আলী রা ও তার আহালদের কে গালাগাল করা হয়না, বরং দোষত্রুটি বর্ণনা করা হয়। তাহলে যেসকল গর্ভণরগন মসজিদের নববীর মিম্বরে দাড়িয়ে নবীর আহাল কে দোষারোপ করে তার প্রতিকার হিসেবে খেলাফত থেকে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ? এই মর্মে ইতিহাসের পাতায় একটি অক্ষরও নেই । মৃত কোন ব্যক্তির দোষত্রুটি বর্ণনা করা তাও এমন ভাবে যে, উম্মুল মুমিনীনকেও এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এটা সাহাবাপ্রেমী হযরত ত্বকি ওসমানীর দৃষ্টিতে তেমন কোন বিষয় ছিলো না, তিনি এটা কে মৃদকম্পন বলে তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন অথচ মওদূদী বর্ণনা করেন যে, গালাগালের ঝড় বইয়ে দেওয়া হতো। উম্মুল মুমিনীন হযরত সালমা রা এর বর্ণনা এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক দের দেয়া তথ্য কিন্তু সেই কথাই বলে। আগামী কিস্তিতে আমরা দেখবো খোদ দেওবন্দের পুর্ববর্তি আকাবার গন তাদের স্বস্ব কিতাবে হযরত আলী রা ও তার আহালকে গালাগাল করার বিষয়ে কি কি বর্ণনা গ্রহণ করেছেন, যেটা হযরত ত্বকি ওসমানীর চোখে ধরা পড়েনি। কবি বলেন- দিনের বেলায় চামচিকা যদি দেখতে না পায় তাহলে সূর্যের কি দোষ। (চলবে)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন