পীরবাদ ও ওয়াহ্হাবী আন্দলন




হাদীসের নামে জালিয়াতি ও জাল হাদীসের কবলে সুফিবাদ

http://www.firstbd.net/blog/blogdetail/detail/4803/TrueIslam/66781#.VqULZsunodU

==

‪#‎পীর‬ শব্দটি ফারসী শব্দ। এটি আরবী শব্দ নয় কুরআন হাদিসের পরিভাষার অন্তর্ভুক্ত কোন শব্দও নয় ।

ব্যবহারিকভাবে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পুংলিঙ্গ বনা স্ত্রীলিঙ্গ উভয়কেই পীর বলা হয় ।

পারস্যের অগ্নিপূজারীদের পুরোহিতকে বলা হয় পীরে মুগাঁ।

মুগঁ এর বহুবচন মুগাঁ-মানে অগ্নিপূজারীগণ। পীর্ব মুগাঁ মানে ‪#‎অগ্নিপূজারীদের‬ পীর।

ফারসী অভিধানে পীরে মুগাঁর অর্থ করা হয়েছে “আতাশ পোরস্তুকা মুরশেদ’’অর্থাৎ অগ্নিপূজারীদের পীর ।

তবে মুগাঁরা যখন তাদের পীরকে ডাকে তখন পীরে মুগাঁ বলে ডাকে না, পীর বলেই ডাকে।

অন্যদিকে পানশালার মদ বিক্রেতাকেও ‘পীরে মুগাঁ বলা হয়।

কারণ সুফীবাদীরা আধ্যাতিক প্রেমকে রূপকভাবে মদ রূপে অভিহিত করে,

উক্ত প্রেমরস-পরিবেশককে পীর বা ‘শুড়ী মশাই’ নামে অভিহিত করে থাকেন।

যেমনঃ ফারসী কবিতায় বলা হয়েছে- “ বমায়ে শাজ্জাদাহ রঙ্গীন কুন গিরাত পীরে মুগাঁ গোয়াদ,

সে সালেক বেখবর নাবুদ যে রাহে রাসমো মানযিলহা।”

অর্থাৎ- পীরে মুগাঁ বা শুড়ী মশাই যদি বলেন, তাহলে তুমি জায়নামাযকে মদের দ্বারা রাঙিয়ে তুলো।

কেননা পথের সন্ধান গুরুজী ভালোভাবেই অবগত আছেন । এ কবিতায় শুড়ী মশাইকে ‘পীরে মুগাঁ বলা হয়েছে ।

★★ ( পীর তন্ত্রের আজবলীলা, পৃষ্ঠা- ৫ আবু তাহের বর্ধ্মানী। তাওহীদ প্রেস এন্ড পাঃ )★★

‪#‎খৃস্টানদের‬ প্রিষ্ঠ, হিন্দুদের পুরোহিত বৌদ্ধদের এবং ভিক্ষু বলতে যা বুঝায় পীর বলতে ঠিক তা-ই বুঝায়।

আপীর, পুরোহিত, প্রিষ্ঠ, ভিক্ষু-এ জাতীয় শব্দের কোন প্রতিশব্দ কুরআন হাদিসে নেই।

মুসলিমদের কোন ইমাম,খতিব, নায়েবে নবী বা নেতার শানে এ পীর শব্দ ব্যবহার করতে হবে,

এ প্রমাণ কুরআন হাদিসে মিলে না।

প্রকৃত বিষয় হল, মানুষের কার্যাবলী দ্বারাই তার পদবী বিবেচিত হয়।

এক ব্যক্তি শিক্ষকতা করার কারণে সে শিক্ষক হিসেবে বিবেচিত হয়।

অন্যজন চাকুরী করার কারণে তাকে কেহ শিক্ষক বলে ডাকে না।

একইভাবে হিন্দুদের যে পুরোহিত, খৃস্টানদের প্রিষ্ঠ, বৌদ্ধদের ভিক্ষু তাদের যে কার্যাবলী ও ধ্যান-ধারণা

আর মুসলিমদের পীরের যে কার্যাবলী ও ধ্যান ধারণা এ উভয়ের মাঝে যথেষ্ট সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় ( যার আলোচনা সামনে আসছে ইনশাআল্লাহ)

এবং এ জাতীয় কার্যাবলী ও ধ্যান-ধারণা ইসলামের মধ্যে মোটেই খুঁজে পাওয়া যায় না।

======================



আবু বকর রা.উমার রা. উসমান রা. এবং আলী রা. প্রমুখ সাহাবীগণও কেউ কোনদিন পীর বলে দাবী করেননি ।

সাহাবী ও তাবেঈদের যুগেও পীরের অস্তিত্ব ছিল না ।

======================



ইমাম আবু হানিফা রহ.

ইমাম মালিক রহ.

ইমাম বুখারী রহ.

ইমাম মুসলিম রহ.

ইমাম আবু দাউদ রহ.

ইমাম নাসাঈ রহ.

ইমাম তিরমিযি রহ.

ইমাম ইবনে মাজা রহ. প্রমুখ মহামতি ইমামগণও কোনদিন পীরগীরি করেননি

======================

‪#‎অত্যন্ত‬ গভীর ও সূক্ষ্ণ ষড়যন্ত্রের ফসল হিসাবে পারস্যের অগ্নিপূজারীদের সেই পীর তাওহীদবাদী মুসলিম সমাজে ইসলামের নামাবলী গায়ে জড়িয়ে অনুপ্রবেশ করে, ইসলামের মধ্যে ঘটিয়েছে বিকৃতি,উন্মুক্ত করে দিয়েছে শিরক ও বিদআতের পথ এবং ফাটল ধরিয়েছে মুসলিম ঐক্যের

সুফিবাদ (mysticism) এবং আকিদায় শিয়া বিশ্বাস থেকে।শিয়াদের মধ্যে প্রায় ছোট বড় ১৮ রকমের ভাগ আছে। যাদের কেও ১, ৩, ৫, ৯ ,১১ বিভিন্ন ইমামদের প্রাধান্য দিয়ে শিরক করে থাকেন । আর সুফিবাদ হচ্ছে একটি খ্রস্টানীয় আবিষ্কার (ফাদার , ব্রাদার ,সিস্টার, [যারা সংসার করতেন না ] । এর আরও একটি নাম হচ্ছে সাধুবাদিতা (free will) ।মুসলমান দের মধ্যে এর আবিষ্কারক Sausan নামের একজন পাদ্রি ,যিনি কিছু কালের জন্য খ্রিস্টান জাজক থেকে মুসলমান (মুসলমান নাম "ইরাকি" ছিল ) হয়েছিলেন, পরবর্তীতে আবার খ্রিস্টান জাজক হয়ে যান । তার সুযোগ্য অনুসারি ছাত্র ছিলেন মা'বাদ ইবনে খালিদ((৬৮৫-৭০৫ খ্রি ব্দ) । যিনি Sausan এর সুফি/ সাধু/ ফকীরি শিক্ষা চালু রাখেন ।(যত পর্যন্ত উমাইয়াদ খালিফাত তাকে কতল না করেন ।) এর পর ঘাইলাম ইবন মুসলিম এই শিক্ষা নিয়ে আবার প্রচার শুরু করেন । (উনাকে-ও পরবর্তী খলিফা হিসাম ইবন আব্দুল মালিক ৭২৪-৭৪৩ খ্রিস্টাব্দ কতল করেন।) এর পর আসেন আল জা'দ । উনাকে- ও জন সন্মুখে কতল করা হয় । কিন্তু এর পরবর্তীতে উমাইয়াদ শাষন ব্যবস্থা দুর্বল ও কলুষিত হয়ে পরলে সুফি বাদ আবার প্রচার প্রসার লাভ করে । এর প্রভাব দেখা যায় ইবন আরাবি, আব্দুল কাদির জিলানি, জালাল আদ দিন রুমি , এবং শেখ সাদি , শাঈ বাবা , বাংলাদেশে লালন, বায়জিদ বস্তামি, শাহ জালাল, ও আরও গাউস কুতুব , হাসন রাজা , ...(এই লিস্ট শেষ হবে না ) বর্তমানে ভারতিয় উপমহাদেশে আমরা এর দ্বারা চরম ভাবে প্রভাবিত ।

খেয়াল করে দেখবেন এরা অলি ( saint) ভুমিকায় ছিলেন । লন্ডনে এখনো আছে sain Pauls , saint Joseph , saint Gregory . উনারা সন্ন্যাস জীবনে ছিলেন । সব কিছুই খোদা এটা এক ধরনের ভ্রান্ত আকিদা । ইবন আরাবি (১১৬৫-১২৪০ খ্রিষ্টাব্দ ) শেষ দিকে নিজেকে খতমে আওলিয়া দাবি করেন । এবং নবীদের থেকে নিজের স্থান উঁচুতে দাবি করেন। যা তৎকালীন সকল মুসলিম স্কলারদের দ্বারা চরম ভাবে প্রত্যাখিত । (খলিফাত দুর্বল থাকায় বেঁচে গেসেন )।

) ইবনে আরাবী তার কবিতায় বলেছেঃ বান্দাই প্রভু আর প্রভুই বান্দা। আফসোস! যদি আমি জানতাম, শরীয়তের বিধান কার উপর প্রয়োগ হবে। যদি বলি আমি তাঁর বান্দা তাহলে তো ঠিকই। আর যদি বলি আমিই রব তাহলে শরীয়ত মানার প্রয়োজনীয়তা কোথায়? ২) ইবন আরাবী আরও বলেনঃ সূফী হলেন পরিপূর্ণ বোধসম্পন্ন সে-ই, যিনি উপাসনার প্রতিটি বস্তুতে সত্য (আল্লাহর) প্রকাশ দেখেন, যার কারনে এটি উপাসিত হয়। তাই, তারা সবাই এর নির্দিষ্ট নামের সঙ্গে একে প্রভু বলে ডাকে-- তা সেটি পাথর, বৃক্ষ, জন্তু- জানোয়ার, ব্যাক্তি বিশেষ, নক্ষত্র বা ফেরেশতা যা-ই হোক। ৩) ইবনে আরাবীর মতেঃ পরিপূর্ণ মারেফত হাসিলকারীর দৃষ্টিতে আল্লাহর এবাদত ও মূর্তিপূজা একই জিনিস। ৪) ইবন আরাবীর নিকট ‘বিলায়াত’ তথা বুজুর্গি নবুয়ত এবং রিসালাতের চাইতেও উত্তম। ইবন আরাবী বলেনঃ নবুয়তের স্থান মধ্যম পর্যায়ের, বিলায়াতের নিচে ও রিসালাতের উপরে।

আবদুর রাক্বীব মাহ্দী * ইবন আরাবী, আল-ফুতুহাত আল-মাক্কিয়াহ ২য় খণ্ড; পৃষ্ঠা নঃ ৬০৪ * আব্দুর রাহমান আল-ওয়াকিল, হাযিহী হিয়া আস-সুফীয়াহ পৃষ্ঠা নঃ ৩৫ * আল-ফুসুস (১/১৯৫),আল ওয়াকিলঃ হাযিহী হিয়াস-সুফীয়াহ পৃষ্ঠা নঃ ৩৮ * মাওসু'আতুর রাদ্দি আলাছ সুফিয়াহ ৬৮/৭১ * আব্দুর রাহমান দেমাস্কি, আন-নাকশবান্দিয়া; পৃষ্ঠা নঃ ৬২ * উসুলুল ফিরাক ওয়াল আদইয়ান ওয়াল মাযাহিবুল ফিকরিয়া; পৃষ্ঠা নঃ ৮৫ * শরীয়ত ও তরীক্বত; পৃষ্ঠা নঃ ১১৮ # ফাতাওয়া-ই- রাহিমিয়ার ১ম খণ্ড; পৃষ্ঠা নঃ ৩৮ * বিলাল ফিলিপস, তাওহীদের মুল নীতিমালা; পৃষ্ঠা নঃ ১৫৩ * সূফীবাদের স্বরূপ- শায়েখ জামিল যাইনু; পৃষ্ঠা নঃ ১৩ * সূফীবাদ; দ্য ইসলামিস্ট- আব্দুল্লাহ শাহেদ আল মাদানি * মোস্তাফিজুর রহমান- বড় শিরক ও ছোট শিরক; পৃষ্ঠা নঃ ৩০ * তাবলীগ জামা’আত ও দেওবন্দিগন- সাজিদ আবদুল কাইউম; পৃষ্ঠা নঃ ৩৫ * মাসিক তাওহীদের ডাক, মার্চ-এপ্রিল ২০১৪; পৃষ্ঠা নঃ ৭-৮ * মুযাফফর বিন মুহসিন- ভ্রান্তির বেড়াজালে ইসলাম পৃষ্ঠা নঃ ৯৮-১০১

ইবন আরাবী ‘ওয়াহদাতুল ওযুদ’ অর্থাৎ সর্বেশ্বরবাদে বিশ্বাসী। যার ফলে তাদের নিকট ‘’মাখলুক তথা সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাঝে কোন পার্থক্য নেই- সবাই সৃষ্টি, সবই উপাস্য‘’

দ্বাদশ শতাব্দিতে এই মারাত্মক কুফুরী আকীদার সর্বপ্রথম প্রচলন করে দামেশকে দাফনকৃত মহিউদ্দিন ইবন আরাবী (১১৬৫-১২৪০ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি স্পেনের মারসিয়ায় জন্মগ্রহন করেন ও দামেস্কে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সূফীবাদের মুখ্য বুজুর্গদের একজন ছিলেন, যিনি পৃথিবীর সকল সূফীদের দ্বারা সম্মানিত। তিনি বিশ্বাস করতেন ‘’স্রষ্টা মানুষের মাঝেই বিদ্যমান’’

ইবন আরাবী, আল-ফুতুহাত আল-মাক্কিয়াহ ২য় খণ্ড; পৃষ্ঠা নঃ ৬০৪; আব্দুর রাহমান আল-ওয়াকিল, হাযিহী হিয়া আস-সুফীয়াহ পৃষ্ঠা নঃ ৩৫; বিলাল ফিলিপস, তাওহীদের মুল নীতিমালা; পৃষ্ঠা নঃ ১৫৩;

ওয়াহ্‌দাতুল ওজুদের এর তাৎপর্য হচ্ছেঃ

সূফীবাদের মতে স্রষ্টা এবং সৃষ্টি একই জিনিস। অর্থাৎ সৃষ্টি জীব এবং স্রষ্টা আল্লাহ তা'আলার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, উভয়ই এক ও অভিন্ন। ইবনে আরাবী এ মতেরই সমর্থক ছিল। তার মতে পৃথিবীতে যা আছে সবই মাবুদ। অর্থাৎ সবই সৃষ্টি এবং সবই মাবুদ। এ অর্থে কুকুর, শুকর, বানর এবং অন্যান্য নাপাক সৃষ্টিও মাবুদ হতে কোন বাঁধা নেই। সুতরাং তার মতে যারা মূর্তি পূজা করে তারা আল্লাহরই ইবাদত করে (নাউযুবিল্লাহ)।

এক নজরে ইবন আরাবীর কুফুরী বক্তব্যঃ

১) ইবনে আরাবী তার কবিতায় বলেছেঃ বান্দাই প্রভু আর প্রভুই বান্দা। আফসোস! যদি আমি জানতাম, শরীয়তের বিধান কার উপর প্রয়োগ হবে। যদি বলি আমি তাঁর বান্দা তাহলে তো ঠিকই। আর যদি বলি আমিই রব তাহলে শরীয়ত মানার প্রয়োজনীয়তা কোথায়?

২) ইবন আরাবী আরও বলেনঃ সূফী হলেন পরিপূর্ণ বোধসম্পন্ন সে-ই, যিনি উপাসনার প্রতিটি বস্তুতে সত্য (আল্লাহর) প্রকাশ দেখেন, যার কারনে এটি উপাসিত হয়। তাই, তারা সবাই এর নির্দিষ্ট নামের সঙ্গে একে প্রভু বলে ডাকে-- তা সেটি পাথর, বৃক্ষ, জন্তু- জানোয়ার, ব্যাক্তি বিশেষ, নক্ষত্র বা ফেরেশতা যা-ই হোক।

৩) ইবনে আরাবীর মতেঃ পরিপূর্ণ মারেফত হাসিলকারীর দৃষ্টিতে আল্লাহর এবাদত ও মূর্তিপূজা একই জিনিস।

৪) ইবন আরাবীর নিকট ‘বিলায়াত’ তথা বুজুর্গি নবুয়ত এবং রিসালাতের চাইতেও উত্তম। ইবন আরাবী বলেনঃ নবুয়তের স্থান মধ্যম পর্যায়ের, বিলায়াতের নিচে ও রিসালাতের উপরে।

দেওবন্দি আলেমগন কুফুরী আকীদার ইবন আরাবীকে একজন মহান সুফী-সন্ত মনে করেনঃ

দেওবন্দিদের নিকট তাদের উচ্চমানের ফতওয়ার কিতাব ফাতাওয়া-ই-রাহিমিয়াতে মুফতি আব্দুর রহমান লাজপুরি সাহেব ইবন আরাবী সম্পর্কে একটি ফতওয়া দিতে গিয়ে তাকে আশ-শাইখ আল-আকবার (অর্থাৎ মহামতি শাইখ) বলে উল্লেখ করেছেন। ফাতাওয়া-ই- রাহিমিয়া ১ম খণ্ড; পৃষ্ঠা নঃ ৩৮

আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের বিরাট সংখ্যক মুসলিম ওয়াহ্‌দাতুল ওজুদ-এ বিশ্বাসীঃ

তাবলীগী নিসাব ফাযায়েলে আমাল বইয়ে গাঙ্গুহী তার মোরশেদ হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মক্কীর খেদমতে লিখিত এক চিঠিতে বলেনঃ “অধিক লেখা বে-আদবী মনে করিতেছি। হে আল্লাহ! ক্ষমা কর, হজরতের আদেশেই এই সব লিখিলাম, মিথ্যাবাদী, কিছুই নই, শুধু তোমরাই ছায়া, আমি কিছুই নই, আমি যাহা কিছু সবই তুমি” (দেখুনঃ ফাযায়েলে আমাল, দ্বিতীয় খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা)

ওয়াহদাতুল ওজুদ একটি নিকৃষ্ট আকীদাহঃ

তাসাউফ বা সুফীবাদ তথা আধ্যাত্মিক দর্শনের একটি মৌলিক আকিদাহ হলো ওয়াহদাতুল ওজুদ। এটা তাদের নিকট পুর্ণ তাওহীদ হিসেবে পরিগণিত। ওয়াহদাতুল ওজুদ বলতে বুঝায় একমাত্র আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্বই বিদ্যমান। কারন আল্লাহ তায়ালা হলেন অনাদি-অনন্ত, চিরস্থায়ী অস্তিত্বের অধিকারী, আর সৃষ্টি নিতান্তই ক্ষনকালীন। তাই এগুলোর অস্তিত্ব মোটেই ধর্তব্য নয়।

মাওলানা রুমী বলেন,"জুমলা মাশুকাস্তও আশেক পর্দায়ে, জেন্দা মাশুকাস্তও আশেক মুর্দায়ে"অর্থাৎ সবকিছুর অস্তিত্বই অ-ধর্তব্য, অস্তিত্ববান একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, সৃষ্টিজগত তো শুধু বাহ্যিক দৃষ্টিতে অস্তিত্ববান। সেমতে শুধু আল্লাহ অস্তিত্ববান হওয়ার অধিকারী, আর সমস্ত সৃষ্টি জগত অস্তিত্বহীন। (কালীদে মসনবী)

যেমন পর্দার মধ্যে বিভিন্ন নকশা ও কারুকাজ পর্দার গুণ নয় পর্দাকারকের গুন, তেমনি সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান গুণাবলী সৃষ্টির নয়, আল্লাহর গুনাবলীরই বিকাশ মাত্র। (নাউযুবিল্লাহ)

আশরাফ আলী থানবীর পীর হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মাক্কি ওয়াহদাতুল ওজুদ সম্পর্কে তার অনুভূতি ও ভাবধারা ব্যক্ত করে বলেনঃ "যে দিকে যে বস্তুর প্রতিই দৃষ্টি করি, তাতে তোমাকেই দেখতে পাই, অন্য আর কিছু দেখিনা।"(নাউযুবিল্লাহ)

তাই মাওলানা রুমীর কবিতার ব্যাখ্যা এভাবে করা যায়ঃ "সর্বত্রই মহান প্রেমাস্পদ আল্লাহ তায়ালার বিকাশ; আর সৃষ্টি সবই পর্দাস্বরূপ। সে হিসেবে আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান।"

ওহাহদাতুল ওজুদ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে মানুষ, এরূপ হয়ে যায় সে শুধু আল্লাহকেই দেখে। তার দৃষ্টিতে নিজের গুণ-গরিমা থাকেনা, এমনকি নিজের সত্তাও তার দৃষ্টিতে থাকে না। যেমন আয়নার ভিতরে আলো জ্বলতে দেখলে দূর থেকে শুধু আলোই দেখা যায় আয়না দেখা যায়না এভাবে ওয়াহদাতুল ওজুদ বিশ্বাসের প্রভাবে মানুষ এক হয়ে যায়, তার নিজের গুন-গরিমা এমনকি অস্তিত্বেও আল্লাহ তায়ালার গুনাবলীর বিকাশ এতই প্রকট হয়ে যায় যে নিজের গুন-গরিমার সাথে সম্পর্ক ক্ষীণ হয়ে পড়ে এবং নিজের কিঞ্চিতকর অস্তিত্ব তার দৃষ্টিতে ধরাই পড়ে না। তার দৃষ্টি শুধু আল্লাহর প্রতিই নিবদ্ধ থাকে। এ ভাবাবেগের কারনে কেই নিজের অস্তিত্ব অস্বীকার করে আনাল হক বা আমি খোদা উক্তি করে বসে। হুসেইন বিন মনসূর হাল্লাজের 'আনাল হক' বলার তাৎপর্য এটাই। (আশরাফ আলী থানবীর ব্যাখ্যা সম্বলিত মসনবী শরীফ থেকে নেয়া। সংক্ষেপিত)

দেওবন্দীদের নিকট 'আশ-শাইখ আল-আকবার (অর্থাৎ মহামতি শাইখ)' হিসাবে পরিচিত কুফুরী আকীদার ইবন আরাবীকে যারা তাকফির করেছেনঃ

১. হাফিজ ইবনে হাজার আসকালী (রহঃ) বলেন, "আমি আমার উস্তাদ সিরাজ উদ্দীন আল-বালকাইয়ানী (রহঃ)-কে ইবনে আরাবী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম তিনি সাথে সাথে উত্তর দিলেনঃ সে কাফের" (লিসানুল মীযান, ৪/৩১৩)

২. হাফিজ ইবনে দাকীক আল-ইদ, আইজুদ্দীন আব্দুল আজিজ বিন আব্দুস সালাম আস-সিমলি আদ-দামাসকী রহ. (মৃ. ৬৭০ হি)-কে ইবনে আরাবী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বললেনঃ "জঘন্য, মিথ্যুক, সত্য থেকে বহু দূরে অবস্থানকারী, সময়কে বৃদ্ধ এবং অপরের গুপ্তাঙ্গকে হারাম মনে করতেন না" (আল ওয়াফাহ বাল-ওয়াফইয়াত, ৪/১২৫)

৩. হাফিজ ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেনঃ (ইবনে আরাবীর লিখিত) ফুসূস আল-হিকাম বইতে বহু বিষয় রয়েছে যা নিশ্চিত কুফরকে নির্দেশ করে। (বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ১৩/১৬৭)

৪. মুহাদ্দিস বাকা'ঈ লিখেছেনঃ "আমাদের উস্তাদ ইবনে হাজার ও ইবনে আল-আমীন নামে এক ব্যক্তি মাঝে ইবনে আরাবীকে নিয়ে মুবাহিলা হল। লোকটি বলল যদি ইবনে আরাবী পথভ্রষ্ট হয় তাহলে আমাকে অভিশপ্ত করুন। ইবনে হাজার রহ. বলেন হে আল্লাহ! ইবনে আরাবী পথভ্রষ্ট না হয়, তাহলে আমাকে অভিশপ্ত করুন। কয়েক মাসের মধ্যে লোকটি অন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন"(তামবিয়াতুল ঘাবী, ১৩৬-১৩৭ পৃ)

৫. আবূ হাইয়ান মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ আন্দালূসী রহ. (মৃ. ৭৪৫ হি.) বলেনঃ “যে সমস্ত কাফের ইত্তিহাদ এবং ওয়াহদাতুল ওজুদ কে দৃঢ়তার সাথে সত্যায়ন করেছে তারা হল....... ইবনে আরাবী” (তাফসীর বাহার আল-মুহীত, ৩/৪৬৪-৪৬৫)

৬. ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. লিখেছেন, “ঈমান ও এলেম সম্পন্ন কেউ আল-হীরাহ এর অর্থ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেননি, তবে কাফিরদের একদল করেছেন, যেমন 'ফুসূস আল-হিকাম'- এর লেখক ইবনে আরাবী এবং তার মতো অন্যান্য কাফেররা” (মাজমুওয়া ফাতাওয়া, ১১/৩৮৫)

৭. কাযী তাকীউদ্দীন আলী বিন আব্দুল কাফী আস-সুবকী রহ. শারহ মিনহাজ এর আল-ওয়াসাইয়াহ অধ্যায়ে লিখেছেনঃ “পরবর্তী সূফীরা যেমন ইবনে আরাবী এবং অন্যান্যরা ছিল মূর্খ, পথভ্রষ্ট এবং ইসলামের পথে থেকে বিচ্যূত” (তামবিইয়াতুল গাবিঈ ইলা তাকফীর ইবনে আরাবী, পৃ: ১৪৩)

৮. শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ আল-ইয়াইজরী রহ. ইবন আরাবীর ফুসূস আল-হিকাম বই সম্পর্কে তার বই ‘আল-ফাতওয়া আল-মুনতাশিরাহ’-তে লিখেছেনঃ “বিদ্বানগণ বলেন এই বইতে যা আছে, তার সবই কূফর এবং এই বইয়ের সবকিছুই ইত্তিহাদের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে” (তামবিইয়াতুল গাবিঈ ইলা তাকফীর ইবনে আরাবী, পৃ: ১৫২)

৯. মুল্লা আলী কারী রহ. বলেনঃ “সুতরাং আপনি যদি সত্যিকার মুসলিম এবং ঈমানদার হন, তবে ইবনে আরাবী এবং তার দলের কূফর সম্পর্কে সন্দেহ করবেন না এবং তাদের পথভ্রষ্টতা এবং অজ্ঞ পথভ্রষ্ট দলের মধ্যে আবদ্ধ হবেন না। যদি প্রশ্ন করা হয় তাদেরকে কি আগে সালাম দেওয়া জায়েয? আমি বলবো, না এবং তাদের সালামের উত্তর দেওয়াও জায়েয না। বরং আলাইকুম পর্যন্ত বলবেন না, কারণ তাদের শয়তানী ইহুদী ও খ্রীস্টানদের চাইতেও মারাত্মক, এবং তাদের সম্পর্কে ফাতাওয়া হলো তারা পাষন্ড কাফেরের দল। যে সমস্ত বই তারা লিখেছে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা ওয়াজিব এবং তাদের শয়তানী এবং ভন্ডামী সবার নিকট প্রকাশ করা উচিত। তাদের সম্পর্কে বিদ্ধানদের নিরবতা এবং কিছু বর্ণনাকারীর মতোবিরোধ এই ফিতনার কারণ হয়ে গেছে” (রাদ আলাল ক্বাআ’লীন বি-ওয়াহদাতুল ওজুদ, পৃ: ১৫৫-১৫৬)

বুরহানুদ্দীন আল-বিকাই তার বই “তাহবিহুল গাবিঈ ইলা তাকফিরি ইবনে আরাবী” বইয়ের ১৩৫ পৃষ্ঠা থেকে ১৮৩ পৃষ্ঠায় যারা ইবনে আরাবীর কুফরের কথা বলেছেন তাঁদের বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন -

১. যয়নুদ্দীন ইরাকী রহ.

২. আবূ জুরাই ভালিউদ্দীন আহমাদ ইবনে যয়নুদ্দীন রহ.

৩. ইমাম মিজ্জি রহ.

৪. ইমাম আবূ আলী ইবনে হালিল আস-সাকুতি রহ.

৫. ইজ্জ্ ইবনে আব্দুস সালাম রহ.

৬. ইবনে আবুল কাসিম আস-সুলামি রহ.

৭. শিহাবুদ্দীন আহমাদ ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে আবূ হাজল আত-তালামসানি আল-হানাফী রহ.

৮. বদরুদ্দীন হুসাইন ইবনুল আহদাল সাইফুদ্দীন ইবনে আব্দুল লতিফ ইবনে বালাবান আস-সুওদি আস-সুফি রহ.

৯. ইবন দাক্বীক আল-ঈদ রহ.

১০. আবুল ফাতখ আল-ইয়ামুরি রহ.

১১. আস-সালাহ হালিল আস-সাফদি রহ.

১২. আবুল ফাতখ ইবনে সায়েদুন্নাস রহ.

১৩. মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে ইউসুফ ইবনুল জাযারি আশ-শাফেয়ী রহ.

১৪. ইবনে কাসীর রহ.

১৫. তাকীউদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবনে আব্দিল কাফি আস-সুবকী রহ.

১৬. কুতুবউদ্দীন ইবনে কাসতালানি রহ.

১৭. ইমামউদ্দীন ইবনে আহমাদ ইবনে ইব্রাহীম আল-ভাসিতি রহ.

১৮. বুরহাদুদ্দীন ইব্রাহীম ইবনে মুদাদ আল-জুবারি রহ.

১৯. যয়নুদ্দীন উমার ইবনে আবেল হারাম আল-কিত্তানী আশ-শাফেয়ী রহ.

২০. মুফাসসির আবু আয়ান মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ আল-আনদালুসি রহ.

২১. আত-তাকিলাই আল-হিসনি রহ.

২২. তাকিয়াতদীন আল-ফাসি রহ.

২৩. বাহাউদ্দীন আস-সুবকি রহ.

২৪. শামছুদ্দীন মুহাম্মাদ আল-আইযেরি আশ-শাফেয়ী রহ.

২৫. শরাফুদ্দীন ইসা ইবনে মাসুদ আজ-যাভাভী আল-মালিকী রহ.

২৬. নুরুদ্দীন আলী ইবনে ইয়াকুব আল-বাকরি আশ-শাফেয়ী রহ.

২৭. মুহাম্মাদ ইবনে আকিল আল-বালিসি আশ-শাফেয়ী রহ.

২৮. জামালউদ্দীন আবদুল্লাহ ইউসুফ ইবনে হিশাম রহ.

২৯. লিসানুদ্দীন মুহীব ইবনুল হাতিব আল-আনদালুসি আল-মালিকী রহ.

৩০. আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ আল-মাওসিলি আশ-শাফেয়ী রহ.

৩১. মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আল বিসাতি আল মালেকী রহ.

৩২. ইবনে হাজার আসকালানী রহ.

৩৩. ইবনে হাজার আসকালানী রহ. এর শিক্ষক ইমাম বুলকিনি,

৩৪. বুরহানুদ্দীন সেকাফিসি রহ.

৩৫. ইমাম যাহাবী রহ.

৩৬. ইবনুল মাজদ আলী আল-হারিরি রহ.

৩৭. ইবনে তাইমিয়াহ রহ.

৩৮. তাজ আল-বারানবারানি রহ.

৩৯. আবূ যাইদ আব্দুর রহমান ইবনে হালদূন রহ.

৪০. ইব্রাহীম আর-রাক্কী রহ.

৪১. ইবনুল হায়াত আশ-শাফেয়ী রহ.

৪২. আলাউদ্দীন আল-বুহারি আল-হানাফী রহ.

৪৩. আহমাদ ইবনে আলী আন-নাশিরি রহ.

তথ্যসূত্রঃ

* ইবন আরাবী, আল-ফুতুহাত আল-মাক্কিয়াহ ২য় খণ্ড; পৃষ্ঠা নঃ ৬০৪

* আব্দুর রাহমান আল-ওয়াকিল, হাযিহী হিয়া আস-সুফীয়াহ পৃষ্ঠা নঃ ৩৫

* আল-ফুসুস (১/১৯৫),আল ওয়াকিলঃ হাযিহী হিয়াস-সুফীয়াহ পৃষ্ঠা নঃ ৩৮

* মাওসু'আতুর রাদ্দি আলাছ সুফিয়াহ ৬৮/৭১

* আব্দুর রাহমান দেমাস্কি, আন-নাকশবান্দিয়া; পৃষ্ঠা নঃ ৬২

* উসুলুল ফিরাক ওয়াল আদইয়ান ওয়াল মাযাহিবুল ফিকরিয়া; পৃষ্ঠা নঃ ৮৫

* শরীয়ত ও তরীক্বত; পৃষ্ঠা নঃ ১১৮ # ফাতাওয়া-ই- রাহিমিয়ার ১ম খণ্ড; পৃষ্ঠা নঃ ৩৮

* বিলাল ফিলিপস, তাওহীদের মুল নীতিমালা; পৃষ্ঠা নঃ ১৫৩

* সূফীবাদের স্বরূপ- শায়েখ জামিল যাইনু; পৃষ্ঠা নঃ ১৩

* সূফীবাদ; দ্য ইসলামিস্ট- আব্দুল্লাহ শাহেদ আল মাদানি

* মোস্তাফিজুর রহমান- বড় শিরক ও ছোট শিরক; পৃষ্ঠা নঃ ৩০

* তাবলীগ জামা’আত ও দেওবন্দিগন- সাজিদ আবদুল কাইউম; পৃষ্ঠা নঃ ৩৫

* মাসিক তাওহীদের ডাক, মার্চ-এপ্রিল ২০১৪; পৃষ্ঠা নঃ ৭-৮

* মুযাফফর বিন মুহসিন- ভ্রান্তির বেড়াজালে ইসলাম পৃষ্ঠা নঃ ৯৮-১০১

যে সমস্ত পথভ্রষ্ট সুফীদেরকে আমাদের দেশে 'আল্লাহর ওলী' (!) মনে করা হয় তাদের কুফুরী আকিদাঃ

সূফীরা ‘ওয়াহদাতুল ওযুদ’ বা সবকিছুতেই আল্লাহর উপস্থিতি বিশ্বাস করে। সূফীরা স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে কোন পার্থক্য করে না। তারা আরও বিশ্বাস করে স্রষ্টা সবকিছুতেই বিরাজমান। তারা আরও বিশ্বাস করে কোন ব্যাক্তি যখন সূফীবাদের চরম উন্নতি সাধন করে তাকে আর শরীয়তের বিধি-বিধান পালন করা লাগে না, কারন সে আল্লাহর মাঝে বিলীন হয়ে যায়।সূফীরা বলে থাকেঃ ‘’নিশ্চয়ই যে ব্যাক্তি আল্লাহ তায়ালাকে চিনতে পারবে, তার উপর থেকে শরীয়তের হুকুম রহিত হয়ে যাবে’’ আল-ফাসল ফিল মিলাল ৪/১৪৩ সুত্রঃ মাসিক তাওহীদের ডাক, মার্চ-এপ্রিল ২০১৪; পৃষ্ঠা নঃ ৭

সূফীদের উপরোক্ত ভ্রান্ত দাবীর প্রেক্ষিতে আমরা শুধুমাত্র একটি আয়াত উল্লেখ করবো ইন শা আল্লাহ। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ''আর তোমার রবের ইবাদত করতে থাকো সুনিশ্চিত ক্ষণের (অর্থাৎ মৃত্যুর) আগমন পর্যন্ত’’ হিজর ১৫/৯৯

সূফীরা ‘ওয়াহদাতুল ওযুদ’ অর্থাৎ সর্বেশ্বরবাদে বিশ্বাসী হওয়ার ফলে তাদের নিকট ‘’মাখলুক তথা সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাঝে কোন পার্থক্য নেই; সবাই সৃষ্টি, সবাই উপাস্য।‘’ বলা হয়ে থাকে দ্বাদশ শতাব্দিতে এই মারাত্মক কুফুরি আকিদার সর্বপ্রথম প্রচলন করে দামেশকে দাফনকৃত মহিউদ্দিন ইবন আরাবী (১১৬৫-১২৪০ খ্রিস্টাব্দ); তিনি স্পেনের মারসিয়ায় জন্মগ্রহন করেন ও দামেস্কে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সূফীবাদের মুখ্য বুজুর্গদের একজন ছিলেন, যিনি পৃথিবীর সকল সূফীদের দ্বারা সম্মানিত। তিনি বিশ্বাস করতেন ‘’স্রষ্টা মানুষের মাঝেই বিদ্যমান’’

সূফীবাদের মতে স্রষ্টা এবং সৃষ্টি একই জিনিস। অর্থাৎ সৃষ্টি জীব এবং স্রষ্টা আল্লাহ তাআলার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, উভয়ই এক ও অভিন্ন। ইবনে আরাবী এ মতেরই সমর্থক ছিল। তার মতে পৃথিবীতে যা আছে সবই মাবুদ। অর্থাৎ সবই সৃষ্টি এবং সবই মাবুদ। এ অর্থে কুকুর, শুকর, বানর এবং অন্যান্ন নাপাক সৃষ্টিও মাবুদ হতে কোন বাঁধা নেই। সুতরাং তার মতে যারা মূর্তি পূজা করে তারা আল্লাহরই ইবাদত করে (নাউযুবিল্লাহ)

ইবনে আরাবীর কুফুরী আকিদাঃ

১- ‘’বান্দাই প্রতিপালক আর প্রতিপালকই বান্দা। হায়! তাহলে কিভাবে জানা যাবে কে কার বাধ্য? যদি বলি বান্দা তাহলেও ঠিক হয় কিংবা যদি বলি প্রতিপালক- তবুও ঠিক, তাহলে কিভাবে কাকে বাধ্য করা যাবে?’’

২- ‘’সূফী হলেন পরিপূর্ণ বোধসম্পন্ন সে-ই, যিনি উপাসনার প্রতিটি বস্তুতে সত্য (আল্লাহর) প্রকাশ দেখেন, যার কারনে এটি উপাসিত হয়। তাই, তারা সবাই এর নির্দিষ্ট নামের সঙ্গে একে প্রভু বলে ডাকে; তা সেটি পাথর, বৃক্ষ, জন্তু- জানোয়ার, ব্যাক্তি বিশেষ, নক্ষত্র বা ফেরেশতা যা-ই হোক’’

৩- সুফীদের নিকট ‘বিলায়াত’ তথা বুজুর্গি নবুয়ত এবং রিসালাতের চাইতেও উত্তম''

৪- ‘’নবুয়তের স্থান মধ্যম পর্যায়ের, বিলায়াতের নিচে ও রিসালাতের উপরে’’

দেওবন্দি আলেমগন কুফুরি আকিদার ইবন আরাবীকে একজন মহান সুফী-সন্ত মনে করেন। দেওবন্দিদের নিকট তাদের উচ্চমানের ফতওয়ার কিতাব ফাতাওয়া-ই- রাহিমিয়ার ১ম খণ্ড ৩৮ পৃষ্ঠায় মুফতি আব্দুর রহমান লাজপুরি ইবন আরাবী সম্পর্কে একটি ফতওয়া দিতে গিয়ে তাকে আশ-শাইখ আল-আকবার (অর্থাৎ মহামতি শাইখ) বলে উল্লেখ করেছেন।

বায়েজিদ বোস্তামি- ইরানের বিশিষ্ট সূফী (মৃত ২৬১ হিজরি) যাকে অনেকেই আল্লাহর ওলী মনে করে থাকেন। দেখুন তার কুফুরি আকিদাঃ

তিনি বলেছেনঃ

১- ‘’আমি ষাট বছর যাবৎ আল্লাহকে খুঁজছি, এখন দেখছি আমি নিজেই আল্লাহ’’

২- ''আমি মহা পবিত্র, আমি মহা পবিত্র, আমার মর্যাদা কতই না বড়''

৩- ‘সমস্ত অপূর্ণতা থেকে আমি বহু দূরে, আমার অবস্থা কত মহান’’

৪- ‘’আমাকে একবার দেখা, আল্লাহ তায়ালাকে এক হাজার বার দেখার চাইতেও উত্তম’’

৫- কেউ বায়েজিদ বোস্তামিকে ডাক দিলে তিনি বাড়ির ভিতর থেকে বলতেনঃ ''বাড়িতে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই''

৬- ‘’বায়েজিদ বোস্তামি নিজেকে ‘সুবহানী মা’-আযাম-শা’নী’ অর্থাৎ ‘সমস্ত অপূর্ণতা থেকে আমি বহু দূরে, আমার অবস্থা কত মহান’ বলে দাবী করতেন’

বায়েজিদ বোস্তামি শুধু আল্লাহর শানে বেয়াদবি করেই ক্ষান্ত হননি, নাবী ও রাসুলদেরও তুচ্ছ- তাচ্ছিল্য করেছেন। দেখুন নাবী ও রাসুলদের ব্যাপারে তার চরম ধৃষ্টতাঃ

১- ''আমি (মারেফতের) সাগরে ডুব দিয়েছি, অথচ নবীরা আশ্চর্য হয়ে তীরে দাঁড়িয়ে আছে''

২- ''আমার পতাকা কিয়ামতের দিন মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর পতাকার চাইতেও অনেক উচু হবে, আমার পতাকা হবে নুরের, যার নিচে থাকবে সকল নাবী ও রাসুলগন''

হুসেইন বিন মানসুর হাল্লাজের কুফুরী আকিদাঃ

১- সে জাদুবিদ্যা চর্চা করতো।

২- সে প্রথমে নিজেকে নবী দাবী করেছে।

৩- তারপর আল্লাহ বলে দাবী করেছে।

৪- সে আরও বলতো,আমার জুব্বার মাঝে যে স্বত্বা রয়েছে তা আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কেউ না। أنا الحق - আমি আল্লাহ্‌ ইত্যাদি । এবং সে চিঠি লিখত নিজেকে 'রাহমানির রাহিম' হিসাবে পরিচয় দিয়ে। সে আরও বলতো আমিই আল্লাহ্। এক ইলাহ আকাশে, আরেক ইলাহ জমীনে।

৫- তুমি আমাকে দেখার অর্থ তাঁকে (আল্লাহ্‌) দেখাআর তাঁকে (আল্লাহ্‌) দেখার অর্থ আমাকে দেখা।

৬- নিঃসন্দেহে আমি হচ্ছি তুমি (আল্লাহ্‌), তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করা আমারই পবিত্রতা ঘোষণা করা

তোমার তাওহীদ ঘোষণা করা আমারই তাওহীদ ঘোষণা করা।

তোমার নাফরমানী করা আমারই নাফরমানী করা।

আমি তোমার দ্বীনের সাথে কুফরী করেছি, কারণ কুফরী আমার জন্য ওয়াজিব হয়েছে। যদিও মুসলিমদের নিকটে তা নিন্দনীয়।

তোমার আত্মা আমার আত্মার সাথে মিশে গেছে যেরূপে মদ সুপেয় পানির সাথে মিশে যায়।

তোমাকে কিছু স্পর্শ করলে তা আমাকে স্পর্শ করে ,কারণ সর্বাবস্থায় আমিই তো তুমি।

৭- হাল্লাজ তার স্ত্রী ও সন্তানদেরকে তাকে সিজদা করার নির্দেশ দিত।

৮- হাল্লাজের ইচ্ছা হল তার সাথে সহবাস করার ইচ্ছা করলে তার স্ত্রীর উপর উঠে বলতো এসো নামাজ পরি।

হুসেইন বিন মানসুর হাল্লাজের কুফুরী আকিদার কারনে তৎকালীন সময়ের সমস্ত হকপন্থী আলেমদের ফতওয়া অনুযায়ী তাকে মুরতাদ ঘোষণা করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এই মুরতাদ মানসুর হাল্লাজকে দেওবন্দী আলেমরা 'আল্লাহর ওলী' মনে করেন। যেমন চরমনাই পীর ও নুরুল ইসলাম ওলীপুরী।

তথ্যসূত্রঃ

# ইবন আরাবী, আল-ফুতুহাত আল-মাক্কিয়াহ ২য় খণ্ড; পৃষ্ঠা নঃ ৬০৪

# আব্দুর রাহমান আল-ওয়াকিল, হাযিহী হিয়া আস-সুফীয়াহ পৃষ্ঠা নঃ ৩৫

# আল-ফুসুস (১/১৯৫),আল ওয়াকিলঃ হাযিহী হিয়াস-সুফীয়াহ পৃষ্ঠা নঃ ৩৮

# মাওসু'আতুর রাদ্দি আলাছ সুফিয়াহ ৬৮/৭১

# আব্দুর রাহমান দেমাস্কি, আন-নাকশবান্দিয়া; পৃষ্ঠা নঃ ৬২

# উসুলুল ফিরাক ওয়াল আদইয়ান ওয়াল মাযাহিবুল ফিকরিয়া; পৃষ্ঠা নঃ ৮৫

# শরীয়ত ও তরীক্বত; পৃষ্ঠা নঃ ১১৮

# ফাতাওয়া-ই- রাহিমিয়ার ১ম খণ্ড; পৃষ্ঠা নঃ ৩৮

# বিলাল ফিলিপস, তাওহীদের মুল নীতিমালা; পৃষ্ঠা নঃ ১৫৩

# সূফীবাদের স্বরূপ- শায়েখ জামিল যাইনু; পৃষ্ঠা নঃ ১৩

# সূফীবাদ; দ্য ইসলামিস্ট- আব্দুল্লাহ শাহেদ আল মাদানি

# মোস্তাফিজুর রহমান- বড় শিরক ও ছোট শিরক; পৃষ্ঠা নঃ ৩০

# তাবলীগ জামা’আত ও দেওবন্দিগন- সাজিদ আবদুল কাইউম; পৃষ্ঠা নঃ ৩৫

# মাসিক তাওহীদের ডাক, মার্চ-এপ্রিল ২০১৪; পৃষ্ঠা নঃ ৭-৮

# মুযাফফর বিন মুহসিন- ভ্রান্তির বেড়াজালে ইসলাম পৃষ্ঠা নঃ ৯৮-১০১

হুসেইন বিন মানসুর হাল্লাজ কি সত্যিই আল্লাহর ওলী ???

হুসেইন বিন মানসুর হাল্লাজ---- যে নিজেকে 'খোদা' দাবী করেছিল এবং তৎকালীন সময় সমস্ত আলেমদের ফতওয়া অনুযায়ী ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক যাকে মুরতাদ ঘোষণা করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল।

ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ইবনে কাসীর (রঃ) প্রণীত আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খতীব বাগদাদী (রঃ) এর তারিখে বাগদাদ, ইবনুল জাওজী (রঃ)-এর আল মুন্তাজেম ও ইমাম আয যাহাবী (রঃ)-এর সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ইত্যাদি নির্ভর যোগ্য গ্রন্থে হাল্লাজের আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মজীবনের উপর আলোচনা এসেছে । সেখান থেকে সামান্য আলোকপাত করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ্‌ ।

হুসাইন বিন মানছূর বিন মানসুর হাল্লাজ (২৪৪-৩০৯ হিঃ/৮৪৮-৯২২ খৃঃ) ইরানের বায়যা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। ওয়াসিত্বে বড় হন। পরে বাগদাদে চলে আসেন। তিনি ভারতে যান ও সেখানে জাদু বিদ্যা শিখেন। বাগদাদে ফিরে তিনি প্রথমে ‘নবী’ দাবী করেন। অতঃপর সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টার অবস্থান সংক্রান্ত অদ্বৈতবাদী দর্শনের প্রচার শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে নিজেকে ‘আনাল হক্ব’ (أنا الحق) বলে অর্থাৎ নিজেকে‘ আল্লাহ’ দাবী করেন। তাকে কারাদন্ড দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও কয়েদীদের মধ্যে এই কুফরী আক্বীদা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ফলে খলীফা মুক্বতাদির বিল্লাহর সময়ে (২৯৫-৩২০হিঃ/৯০৭-৯৩২খৃঃ) দেশের সর্বোচ্চ বিদ্বানমন্ডলীর মতামত ও বিচারকদের রায়ে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। এভাবে ৯ বছর বিভিন্ন কারাগারে বন্দী থাকার পর ৩০৯ হিজরীর ৯ই যুলক্বা‘দাহ মঙ্গলবার প্রকাশ্যে তার হাত-পা ও মাথা কেটে ব্রীজের উপর ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং দেহকে আগুনে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হয়।

তার দাদা পারস্যের অধিবাসী ও একজন অগ্নি উপাসক ছিল। সে ইরাকের ওয়াসেত শহরে জীবনের একটি অংশ অতিবাহিত করার পর বাগদাদে গমন করে। হজ্জ পালনের জন্য কয়েকবার মক্কায়ও গমন করে । বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত, সে যাদু শিখার জন্য ভারতে আসে। সে বলতঃ أدعو به الى الله –আমি যাদুর মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহ্‌র দিকে দাওয়াত দেই ।

ইবনুল জাওযী বলেন, মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার নানা কৌশল তার আয়ত্তে ছিল। সে তার বেশভূষা পরিবর্তন করে এক শহর থেকে অন্য শহরে যেত । মানুষ তার ব্যপারে দ্বিধা -বিভক্ত ছিল।

হাল্লাজ তার খাস মুরিদদের মাধ্যমে পাহাড়ী এলাকার সহজ-সরল মূর্খ মানুষদের প্রতারিত করে হাজার হাজার স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা উপার্জন করেছে। তার মিথ্যা কারামতির কৌশল জেনে ফেলায় একজনকে গুপ্ত ঘাতক পাঠিয়ে হত্যার হুমকিও দিয়েছে । এসব প্রতারণার কাহিনী ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে উল্লেখ করেছেন।

হাল্লাজের হুলুল ও ইত্তেহাদের আকিদাঃ

খৃষ্টানরা ঈসা (আঃ) সম্পর্কে এরকমই বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা ঈসা আলাইহিস সালামের মধ্যে প্রবেশ করেছেন। হাল্লাজ ঐশী সত্তা ও মানবিক সত্তার কথা বলেছিল যেমনটি খ্রিস্টানরা বলে থাকে।

সে হুলুল ও ইত্তেহাদের কথা বলতো। অর্থাৎ সে বলতোঃ ''আল্লাহ তার মধ্যে প্রবেশ করেছে, ফলে আল্লাহ্ ও সে একই সত্ত্বা হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে তার উল্লেখযোগ্য কবিতা হলোঃ

“ঐ সত্ত্বা কতই মহান, যিনি তার গোপন প্রদিপ্ত ঐশী সত্তাকে মানবিক সত্তায় প্রকাশ করেছে।

অতঃপর সে তার সৃষ্টিতে প্রকাশিত হলেন, খাদ্যগ্রহণকারী ও পানকারীরূপে”

যখন ইবন খাফীফ নামক সুফীদের মধ্য থেকে একজন সুফী এ কবিতা শুনলেন তখন বললেন: এ কথার বক্তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ পতিত হোক। অতঃপর তাকে বলা হলোঃ এটি হাল্লাজের কবিতা। তখন তিনি বললেন, যদি এটি তার বিশ্বাস হয় তাহলে সে কাফির।

হাল্লাজের ওয়াহদাতুল ওজুদের আকিদাঃ

সে সর্বেশ্বরবাদ ও পারস্যবাসীর অগ্নি উপাসনার ধর্ম ইত্যাদি দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল । সে সূফীবাদী দর্শন হুলুল (আল্লাহ্‌ তায়ালা কোন ব্যক্তি বিশেষের মাঝে প্রবিষ্ট হওয়া ) ও ওয়াহদাতুল ওজুদ (স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে কোন পার্থক্য নেই, স্রষ্টার আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই, সকল সৃষ্টির মাঝে তাঁর অস্তিত্ব বিরাজমান) এর অন্যতম প্রবক্তা।

ওয়াহদাতুল ওজুদ তথা একক অস্তিত্ব এই দর্শনে প্রভাবিত হয়ে সে বলতঃ ما في جبتيي الا الله.- আমার জুব্বার মাঝে যে স্বত্বা রয়েছে তা আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কেউ না। أنا الحق - আমি আল্লাহ্‌ ইত্যাদি । এবং সে চিঠি লিখত নিজেকে 'রাহমানির রাহিম' হিসাবে পরিচয় দিয়ে।

মানুষকে সম্বোধন করে হাল্লাজ বলছেঃ তুমি আমাকে দেখার অর্থ তাঁকে (আল্লাহ্‌) দেখাআর তাঁকে (আল্লাহ্‌) দেখার অর্থ আমাকে দেখা ।

আল্লাহকে সম্বোধন করে বলছেঃ

নিঃসন্দেহে আমি হচ্ছি তুমি (আল্লাহ্‌), তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করা আমারই পবিত্রতা ঘোষণা করা।

তোমার তাওহীদ ঘোষণা করা আমারই তাওহীদ ঘোষণা করা।

তোমার নাফরমানী করা আমারই নাফরমানী করা।

আমি তোমার দ্বীনের সাথে কুফরী করেছি, কারণ কুফরী আমার জন্য ওয়াজিব হয়েছে। যদিও মুসলিমদের নিকটে তা নিন্দনীয়।

তোমার আত্মা আমার আত্মার সাথে মিশে গেছে যেরূপে মদ সুপেয় পানির সাথে মিশে যায়।

তোমাকে কিছু স্পর্শ করলে তা আমাকে স্পর্শ করে ,কারণ সর্বাবস্থায় আমিই তো তুমি।

হাল্লাজ তার স্ত্রী ও সন্তানদেরকে তাকে সিজদা করার নির্দেশ দিতঃ

আবু জুর’য়া আত তাবারী বলেনঃ আমি আবু ইয়াকুব আল আকতা’য় কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ হাল্লাজের প্রতি মুগ্ধ হয়ে আমি আমার বোনকে তার সাথে বিবাহ দেই। কিছু দিন পর আমার নিকট পরিষ্কার হয়ে যায়, সে একজন যাদুকর, প্রতারক, খবীস ও কাফের।

হাল্লাজের এইসমস্ত বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা আরও স্পষ্ট করার জন্য সুলাইমানের মেয়ে (হাল্লাজের স্ত্রী)-কে উপস্থিত করা হল। তখন সে হাল্লাজের আরও অনেক দোষ-ত্রুটির কথা বলেন। সে বলল আমি একদিন ঘুমন্ত অবস্থায়, সে আমার উপর বসে বলল নামাজের জন্য উঠ, হাল্লাজের ইচ্ছা হল তার সাথে সহবাস করবে। এবং হাল্লাজ তার মেয়েকে নির্দেশ দিল যে, সে যেন হাল্লাজকে সিজদা করে। তখন তার স্ত্রী তাকে বলল মানুষ কি মানুষকে সিজদা করে? তখন হাল্লাজ বলল হ্যাঁ, আমিই আল্লাহ্। এক ইলাহ আকাশে, আরেক ইলাহ জমীনে।

হাল্লাজ কুরআনের মতো অনুরুপ রচনা করার অধিকারী দাবী করতো ও তার শিস্যদের নাবী- রাসুলদের নামে ডাকতোঃ

আব্দুর রহমান সুলামী আমর বিন উসমানের সূত্রে বর্ণনা করেনঃ আমর বলেন, হজ্জের মৌসুমে আমি হাল্লাজের সাথে মক্কার এক গলিতে হাঁটছিলাম আর কোরআন তেলাওয়াত করছিলাম। হাল্লাজ আমার তেলাওয়াত শুনে বললঃ আমার পক্ষেও এই ধরণের কথা বলা সম্ভব । একথা শুনে আমি তার সঙ্গ ত্যাগ করলাম।

আমর বিন উসমান হাল্লাজকে লানত করত আর বলত, আমার ক্ষমতা থাকলে তাকে নিজ হাতে কতল করতাম।

সে বলতঃ নবী-রাসূলদের আত্মা তার সঙ্গী-সাথী ও ছাত্রদের শরীরে ফিরে এসেছে। আর এ কারণেই তাদের একজনকে সে বলতোঃ তুমি নূহ, অন্য একজনকে বলতোঃ তুমি মূসা, অন্যজনকে বলতোঃ তুমি মুহাম্মাদ।

হাল্লাজ নিজেকে 'রাহমানির রাহিম' হিসাবে পরিচয় দিতঃ

আব্দুর রহমান সুলামী আমর বিন উসমানের সূত্রে বর্ণনা করেনঃ আবু বকর বিন মিনশাদের নিকট এক ব্যক্তি আসল। যার সাথে একটি থলে ছিল। রাতে-দিনে কক্ষনো সে থলেটি নিজের কাছ থেকে দূরে রাখত না। লোকেরা কারণ অনুসন্ধানের জন্য থলেটি খুললে মানসুর হাল্লাজ প্রেরিত একটি চিঠি পেল। যার শিরোনাম ছিল- من الرحمن الرحيم الى فلان ابن فلان- রাহমান রাহীমের পক্ষ হতে .........।

হাল্লাজ চিঠিটির সত্যতা স্বীকার করল। লোকেরা তাকে প্রশ্ন করল, তুমি কি নিজেকে আল্লাহ্‌ দাবী কর? জবাবে সে বললঃ না, তবে আল্লাহ্‌ ও আমি তো একই সত্ত্বা।

================

হোসাইন বিন মানসুর হাল্লাজ যে নিজেকে 'খোদা' দাবী করেছিল এবং তৎকালীন সময় সমস্ত আলেমদের ফতওয়া অনুযায়ী ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক যাকে মুরতাদ ঘোষণা করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। বাগদাদের আলেমরা হাল্লাজ কাফের ও মুরতাদ হওয়া ও তাকে হত্যার ব্যপারে একমত পোষণ করেন । তখন বাগদাদ ছিল পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় আলেমদের আবাস। ৩০৯ হিঃ/৯২২ খ্রিস্টাব্দে হাল্লাজকে মৃত্যু দণ্ড দেওয়া হয় ।

ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ যে আকীদা পোষণ করার কারণে হাল্লাজকে হত্যা করা হয়েছে, সেই আকীদা যদি কেউ পোষণ করে সে মুসলিমদের ঐক্যমত অনুযায়ী কাফের ও মুরতাদ । মুসলিমরা হুলুল, ওয়াহদাতুল ওজুদ ইত্যাদি আকীদা পোষণ করার কারণে তাকে হত্যা করেছে । যেমন সে বলতঃ আমি আল্লাহ্‌, আসমানে এক প্রভু রয়েছে ও জমিনে আরেক প্রভু রয়েছে । তার কিছু যাদুকরী ক্ষমতা ছিল । যাদুর উপর কয়েকটি বইও লিখেছিল। তিনি আরও বলেনঃ আমি মুসলিমদের কোন আলেম ও মাশায়েখ সম্পর্কে জানিনা, যারা হাল্লাজ সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখে । তবে কিছু লোক হাল্লাজের আকীদা সম্পর্কে না জানার কারণে তার প্রশংসা করেছে।

সহায়ক গ্রন্থঃ

খতীব আল-বাগদাদী, তারীখু বাগদাদ, খ. ৮, পৃ. ১১২-১৪১;

ইবনুল জাওযী, আল-মুনতাযাম, খ. ১৩, পৃ. ২০১-২০৬;

আয-যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা’, খ. ১৪, পৃ. ৩১৩-৩৫৪;

ইবন কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, খ. ১১, পৃ. ১৩২-১৪৪

ডঃ আমিনুল ইসলাম, ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম দর্শন পৃঃ ১২২-১২৩

তাযকিরাতুল আউলিয়া।

ইবন তাইমিয়া, মাযমুউল ফাতাওয়া খ. ২, পৃ. ৪৮০-৪৮৩

এবং বিভিন্ন আলেমদের লেকচার ও অনেক দ্বীনী ভাইদের লেখার সাহায্য নেয়া হয়েছে।

=======================

এমনই এক কুখ্যাত ও প্রকাশ্য কুফুরীতে অটল থাকা ব্যাক্তিকে আশ্চর্যজনকভাবে আমাদের উপমহাদেশে আল্লাহর ওলী(!) হিসাবে বিশ্বাস করা হয়। এমনকি অনেক আলেম সমাজ মুরতাদ হুসেইন বিন মানসুর হাল্লাজকে ''আল্লাহর ওলী' হিসেবে তাদের লেখনীতে ও ওয়ায নাসীহাতে উল্লেখ করে থাকেন। এই অনেকের মাঝে আমাদের দেশের অন্যতম 'হক্কানি পীর' (!) বলে পরিচিত চরমনাইি পীর ও নুরুল ইসলাম ওলীপুরি সাহেব অন্যতম। চরমনাই পীরের কিতাবে হুসেইন বিন মানসুর হাল্লাজ সম্পর্কে উল্লেখ করা করেছেঃ

''মানসুর হাল্লাজ আশেক মাওলার মহব্বতের জোশে ‘’আমিই খোদা’’ বলিয়া চির অমর হইয়া রহিয়াছেন''

''দোস্তের গালিও মজা লাগে। মানসুর হাল্লাজ যখন ‘’আনাল হক, আমিই খোদা’’ বলিয়াছিল তখন মানসুরের খোদায়ী দাবীর কথা শুনিয়া আল্লাহ্‌ পাক গোস্বা হন নাই বরং খোশ হইয়াছিলেন।

''মানসুর হাল্লাজ শরীয়তের হুকুম অমান্য করিয়াছেন সত্য, কিন্তু ‘’আমিই খোদা’’ বলা পরিত্যাগ করেন নাই। মানসুর হাল্লাজ যে আল্লাহ্‌র খাস ওলী ইহাতে সন্দেহ নাই''

[আশেক মাশুক বা এস্কে ইলাহী- সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; পৃষ্ঠা নঃ ৪২-৪৪; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স; বাংলাবাজার প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭]

আবার ওলীপুরি সাহেব মানসুর হাল্লাজকে আল্লাহর ওলী হিসেবে উল্লেখ করে বলেনঃ ''ফেরাউনের আমি খোদা বলার উপর হাজার বার আল্লাহর লানত আর মানসুর হাল্লাজের আমি খোদা বলার উপর হাজার বার আল্লার রহমত''

নুরুল ইসলাম ওলীপুরী সাহেবের বক্তব্য দুঃখজনক লেগেছে। হুসাইন বিন মানসুর হাল্লাজের ‘’আনাল হক’’ (আমি খোদা) উক্তির অর্থ, তার চিঠি ‘মিনার রাহমানির রাহীম ইলা’ (রাহমানির রাহীম থেকে উমুকের কাছে) এর ব্যাখ্যা যেভাবে করেছেন তাতে মনে হয় যেন মানুষ যা বলে তার প্রচলিত ও আভিধানিক অর্থ কিছু না। বরং সে যা বুঝাতে চায় তা-ই।

এর অর্থ হয় এই যে, কেউ কাউকে গালি দিয়ে যদি বলে আমি তোমার প্রশংসা করেছি তাই মেনে নিতে হবে!

কেউ স্ত্রীকে তালাক দিয়ে যদি বলে তোমাকে আসলে ভালবাসা জানিয়েছি তাই ধরে নিতে হবে! এটা কি ব্যাখ্যা না পাগলের পাগলামি?

এরকম ব্যাখ্যা করলে তো আর শিরক তাওহীদ বলতে কিছু থাকবেনা। গালমন্দ মিথ্যাচার এসব ডিকশনারি থেকে উঠিয়ে দিতে হবে।

‘স্লিপ অফ টাং’ বলে একটা কথা আছে যা ক্ষেত্র বিশেষে স্বীকার করে নেওয়া হয়। কিন্তু হুসাইন বিন মানসুর হাল্লাজ তো তার ঐ সব উক্তি স্লীফ অব টাং বলে স্বীকার করেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। আর যারা তার ঐ সব উক্তিকে তাওহীদের স্বপক্ষে ব্যাখ্যা করেন তারা কি মানসুর হাল্লাজের দিলের মধ্যে অবস্থান নিয়ে লুকিয়ে ছিলেন?

এই সব গাঁজাখুরি কথা একজন দীনি আলেমের মুখে মোটেও মানায় না। এসব নিরেট মূর্খতার পরিচয় বহন করে।

লোকের বাহ্যিক অবস্থা ও কার্যকলাপের ভিত্তিতে বিধান প্রয়োগ করা হবে এবং তাদের আভ্যন্তরীণ অবস্থা আল্লাহ্‌কে সঁপে দেয়া হবেঃ

মানুষের বিচার করা হবে তার বাহ্যিক কার্যাবলীর ভিত্তিতে। কার মনে কি আছে, তা বিবেচনা করে কাউকে অপরাধী বা নিরাপরাধ সাব্যস্ত করার কোনো বিধান ইসলামে নেই। অন্তরের খবর সম্পর্কে আমাদের কোনো জ্ঞানই নেই, এই জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার। সুতরাং অন্তরের বিষয়ে আল্লাহ যথাযথ বিচারের ভার একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার।

দলীল নঃ ১

উসামা ইবন যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সঃ) আমাদেরকে জুহাইনা গোত্রের এক শাখা হুরাকার দিকে পাঠালেন। অতঃপর আমরা সকাল সকাল পানির ঝর্নার নিকট তাদের উপর আক্রমণ করলাম। (যুদ্ধ চলাকালীন) আমি ও একজন আনসারী তাদের এক ব্যক্তির পিছনে ধাওয়া করলাম। যখন আমরা তাকে ঘিরে ফেললাম, তখন সে ‘’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ বলল। আনসারী থেমে গেলেন, কিন্তু আমি তাকে আমার বল্লম দিয়ে গেঁথে দিলাম। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করে ফেললাম।

অতঃপর আমরা যখন মদিনা পৌঁছলাম, তখন নাবী (সঃ) এর নিকট এই খবর পৌঁছল। তিনি বললেন ‘’হে উসামা! তার ‘’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ বলার পরেও কি তুমি তাকে হত্যা করেছ?’’ আমি বললাম ‘’হে আল্লাহ্‌র রাসুল! সে প্রান বাঁচানোর জন্য এরূপ করেছে।’’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ বলার পরেও কি তুমি তাকে খুন করেছ?’’ তিনি আমার সামনে একথা বারবার বলতে লাগলেন। এমনকি আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম যে, যদি আজকের পূর্বে আমি ইসলাম গ্রহন না করতাম (অর্থাৎ, এখন আমি মুসলমান হতাম)।

অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসুল (সঃ) বললেন, সে কি ‘’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ বলেছে এবং তুমি তাকে হত্যা করেছ?’’ আমি বললাম, ‘’হে আল্লাহ্‌র রাসুল! সে কেবলমাত্র অস্ত্রের ভয়ে এই (কলেমা) বলেছে’’। তিনি বললেন, ‘’তুমি কি তার অন্তর চিরে দেখেছিলে যে, সে এই (কলেমা) অন্তর থেকে বলেছিল কি না?’’ অতঃপর একথা পুনঃ পুনঃ বলতে থাকলেন। এমনকি আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম যে, যদি আমি আজ মুসলমান হতাম। বুখারি ৪২৬৯,৬৮৭২মুসলিম ৯৬আবু দাউদ ২৬৪৩আহমাদ ২১২৩৮,২১২৯৫রিয়াদুস স্বলেহিন ৩৯৮

দলীল নঃ ২

আবদুল্লাহ ইবন উতবাহ ইবন মাসউদ বলেন, আমি উমার ইবন খাত্তাবকে বলতে শুনেছি, ‘’রাসুল (সঃ) এর যুগে কিছু লোককে ওহী দ্বারা পাকড়াও করা হতো। কিন্তু ওহী এখন বন্ধ হয়ে গেছে। (সুতরাং) এখন আমরা তোমাদের বাহ্যিক কার্যকলাপ দেখে তোমাদেরকে পাকড়াও করব। অতঃপর যে ব্যক্তি আমাদের জন্য ভাল কাজ প্রকাশ করবে, তাকে আমরা নিরাপত্তা দেব এবং তাকে আমরা নিকটে করব। আর তাদের অন্তরের অবস্থার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহ্‌ই তার অন্তরের হিসাব নিবেন। আর যে ব্যক্তি আমাদের জন্য মন্দ কাজ প্রকাশ করবে, তাকে আমরা নিরাপত্তা দেব না এবং তাকে সত্যবাদীও মনে করব না; যদিও সে বলে আমার ভিতর (নিয়ত) ভাল’’ বুখারি ২৬৪১আবু দাউদ ৪৫৩৭ নাসাঈ ৪৭৭৭আহমাদ ২৮৮রিয়াদুস স্বলেহিন ৪০০

শেষ কথাঃ উপরোক্ত দলীল প্রমান উল্লেখ করার পরও কেউ যদি হুসেইন বিন মানসুর হাল্লাজকে 'ওলী' হিসাবে সাব্যস্ত করতে চায় তাহলে আমরা দ্বিমত না করে শুধু এটুকু যোগ করে বলবোঃ হা, সে অবশ্যই 'ওলী', তবে আল্লাহর নয়, শয়তানের।

ভারত উহাপদেশে যত পীর আছে তারা মূলত দু দলে বিভক্ত। ১. রেজভী ২. ব্রেলভী। তবে দেওবন্দীদের মাঝেও কিছু হক্ক পীর আছেন। এই রেজভী এবং ব্রেলভীদের মাজার ব্যাবসার মূল হাতিয়ার হলো আল্লাহ তায়ালাকে গালি দেয়া। আর সে গালিটি হল ওহাবী। তাদের শের্ক-বেদাত কর্ম কান্ডের যারাই বিরোধীতা করবে তাদেরকেই তারা ওহাবী নামে গালি দিবে। সে হিসেবে তারা দেওবন্দী, জামাতে ইসলাম এবং আহলে হাদীস এ তিন দলকেই ওহাবী বলে গালি দিয়ে থাকে। এ গালি দেয়ার সময় তারা তিনটি ভুল করে থাকে।

১. ওহাবী বলে কোন শব্দই নেই।

২. তারা যে মহান মুজাদ্দিদকে গালি দিতে চেয়েছে তার নাম হল মুহাম্মদ কিন্তু তারা বাবার নাম হল আব্দুল ওয়াহ্হাব। এতএব তাদের এ ওহাবী শব্দের সাথে সে ব্যাক্তির কোন সম্পর্কই নেই। আল্লাহর পবিত্র নামের সাথে মানুষ মিলাইয়া যে নাম রাখে, তার পুরা নামই বলতে হবে। যেমন আব্দুল গফুরকে আব্দুল গফুরই বলতে হবে। শুধু গফুর বললে শিরক হবে। যেমন আব্দুচ্ছালামকে ছালাম বলা যাবে না।

আব্দুচ্ছাত্তারকে ছাত্তার বলা যাবে না।

আব্দুল্লাহকে আল্লাহ বলা যাবে না।

আব্দুল ওয়াহ্হাবকে ওয়াহ্হাব বলা যাবে না।

এখন যারা ওয়াহাবি বলে ডাকে, এই সম্মোধনটা কার দিকে নেসবত করে করে ? যদি এই নেসবতটা মহান রাব্বুল আলামিনের দিকে করে, তাহলে

ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ কারণ ওয়াহাবী অর্থ আল্লাহ ওয়ালা। আর যদি এই পবিত্র নামকে কোন বান্দার দিকে তথা মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব নজদির দিকে নেসবত করে, তাহলে তারা নিশ্চিত মুশরিক। আল্লাহর পবিত্র নামে কাউকে ডাকাও যায় না, গালিও দেয়া যায় না। যারা আল্লাহর পবিত্র নামকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে অপমান করে, তারা আর যাই হোক মুসলমান হতে পারে না।

৩. তাদের মাঝেওতো কিছু আরবী জানা লোক রয়েছে। তবে তারা এতবড় একটি জিহালতি কিভাবে করতে পারল ? আসলে ভুলটা তারা করেনি। শের্ক-বেদাত এর বিরুদ্ধে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব (র.) এর এ তাওহিদী আন্দোলনকে সর্বপ্রথম ওহাবী আন্দলন বলে নাম করণ করেছে ইউরোপিয়ান ঐতিহাসিকগণ। কোন মুসলিম করলে এতবড় ভুল হত না। আসলে আল্লাহ পাক ই চেয়েছিলেন যেন মিথ্যা বাদীদের মিথ্যার অসাড়তা এভাবেই যেন প্রকাশ হয়ে পড়ে, তাই তারা এতবড় ভুল করে একটি ইসলামী আন্দলনকে আল্লাহ পাকের নামে নাম করন করে। ১৪০০ বছরের ইসলামের ইতিহাসে ইসলামি কোন আন্দলনকে আল্লাহর নামে নামকরন করার কোন ইতিহাস নেই। আর এ খৃষ্টান ঐতিহাসিকদের পদলেহন করে ও তাদের অন্ধ তাকলীদ করে আজ অবধী শিয়া এবং মাজার ব্যাবসায়ীরা তাদের বাদে বাদ বাকী মুসলিম বিশ্বকে ওহাবী বলে গালি দিতে গিয়ে আল্লাহকেই গালি দিয়ে যাচ্ছে ।

বিগত দু’শত বছরের ইসলামী ইতিহাসে ওয়াহ্হাবী আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। অথচ ইতিহাসে এ আন্দোলন যেমন একটি ইতিবাচক সংস্কারবাদী আন্দোলন হিসাবে নন্দিত হয়েছে, তেমনি শুরু থেকে অদ্যাবধি এ আন্দোলন মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে একটি বড় অংশের তীব্র বিরোধিতা ও শত্রুতার শিকার হয়েছে। একদিকে একদল নামধারী মাযহাবী, পীরপন্থী আলেম-ওলামা এ আন্দোলনকে ইসলাম বহির্ভূত প্রমাণ করার জন্য প্রাণান্ত সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে; অন্যদিকে পশ্চিমারা ও তাদের খুদ-কুড়ো খাওয়া এক শ্রেণীর মুসলমান তাদের ‘মুক্তবুদ্ধি’ দর্শনের জন্য বিপজ্জনক চিহ্নিত করে। এ আন্দোলনকে পশ্চাদমুখী, চরমপন্থী, মৌলবাদী, জঙ্গীবাদী ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে মুসলিম বিশ্বকে এর প্রভাবমুক্ত রাখার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে। অধুনা পশ্চিমা বিশ্বের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যু্দ্ধে’র প্রধান টার্গেট হ’ল এই আন্দোলনের ভাবানুকূল বিশ্বের বিভিন্ন আদর্শিক আন্দোলনসমূহ। যাকে তারা ‘ওয়াহ্হাবীজম’ ও ‘সালাফীজম’ বলে আখ্যায়িত করে। এসকল প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে আলোচ্য নিবন্ধে এ আন্দোলনের পরিচিতি ও মুসলিম বিশ্বে এর প্রভাব আলোচনা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, একে মানুষের চোখে হীনকরভাবে দেখানোর জন্য বিরুদ্ধবাদীদের পক্ষ থেকে এ আন্দোলনকে ‘ওয়াহ্হাবী’১০

আন্দোলন নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যা পরে ইউরোপীয়দের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায় (একই উদ্দেশ্যে এ নামটি পাক-ভারত উপমহাদেশের ‘তরীকায়ে মুহাম্মাদিয়া’ আন্দোলনের সাথেও জুড়ে দেয়া হয়েছিল)। এতদসত্ত্বেও সমধিক প্রসিদ্ধির কারণে বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে প্রচলিত এই নামটিই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

ওয়াহহাবী আন্দোলনের পরিচয় :

নামকরণ :

আগেই বলা হয়েছে, ‘ওয়াহ্হাবী আন্দোলন’ নামকরণটি এ আন্দোলনের উদ্গাতা মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব বা তাঁর অনুগামীদের প্রবর্তিত নয়। পরবর্তী ঐতিহাসিকরা ভুলক্রমে হোক কিংবা বিদ্বেষবশতঃ হোক এ আন্দোলনকে এই নামে পরিচিত করে তুলেছেন। এটা মূলতঃ এ আন্দোলনের বিরোধীদের পক্ষ থেকে গালি স্বরূপ ব্যবহার করা হয়। হাসান বিন আব্দুল্লাহ আলে শায়খ এ সম্পর্কে বলেন, ‘ওয়াহ্হাবিয়্যাহ বিশেষণটি এ আন্দোলনের অনুগামীরা সৃষ্টি করেনি। বরং তাদের বিরুদ্ধবাদীরা তাদেরকে পৃথক করার জন্য এটা ব্যবহার করে যেন মানুষ তাদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকে এবং শ্রোতারা মনে করে যে, এ আন্দোলন প্রচলিত বড় বড় চারটি মাযহাবের বিপরীতে পঞ্চম একটি মাযহাব নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। তবে এ আন্দোলনের কর্মীরা নিজেদেরকে ‘সালাফী’ এবং তাদের দাওয়াতকে ‘সালাফী দাওয়াত’ বলে আখ্যায়িত করাকেই অধিক পসন্দ করতেন।’’১১

এই ঐতিহাসিক ‘ভুল’ অথবা ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ অভিধাটি সারাবিশ্বে আজও পাকাপোক্তভাবে বিদ্যমান। ফলে দেখা যায়, বর্তমান বিশ্বের যে দেশেই ইসলামী সংস্কারবাদী আন্দোলন তথা নিখাদ তাওহীদের দিকে প্রত্যাবর্তনের আহবানকারী আন্দোলন পরিদৃষ্ট হয়, সেখানেই বিরুদ্ধবাদীরা তাদেরকে পথভ্রষ্ট ও বিচ্ছিন্ন দল হিসাবে দেখানোর জন্য ‘ওয়াহ্হাবী’ ট্যাগ লাগিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালায়।

বর্তমান ওবামা প্রশাসনের কাউন্টার টেরোরিজম উপদেষ্টা Quintan Wiktorowicz তাঁর সাম্প্রতিক গবেষণা পেপার Anatomy of the Salafi Movement-এ লিখেছেন, ‘সালাফী মতবাদের বিরোধীরা প্রায়ই এ মতবাদকে বহিরাগত প্রভাবজাত মতবাদ হিসাবে চিহ্নিত করার জন্য ‘ওয়াহ্হাবী’ বলে সম্বোধন করে। তাদের উদ্দেশ্য এই মতাবলম্বীদেরকে ‘মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবের অনুসারী’ হিসাবে পরিগণিত করা। সাধারণতঃ যেসব দেশে সালাফীগণ সংখ্যায় স্বল্প এবং স্থানীয় অধিবাসীরা ধীরে ধীরে তাদের মতবাদের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে, সেসব দেশে তাদেরকে ‘ওয়াহ্হাবী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।১২

অনুরূপভাবে A. J. Arberry, George Rentz প্রমুখ প্রাচ্যবিদের গবেষণায় এবং স্বীকৃত কয়েকটি বিশ্বকোষে এই ষড়যন্ত্রের কথা স্বীকার করা হয়েছে।১৩

প্রকৃতপক্ষে এ আন্দোলনের বিশেষ কোন নাম ছিল না। তবে সালাফে ছালেহীনের অনুসৃত পথের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের আহবানকারী হিসাবে এটি পরবর্তীতে ‘সালাফী আন্দোলন’ নামে খ্যাতি লাভ করেছে।

১০. এটি একটি অপপ্রয়োগ (misnomer)। কেননা আন্দোলনের উদ্গাতা মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবের নামেই যদি এই নামকরণ করা হয়ে থাকে, সে হিসাবে বড় জোর একে ‘মুহাম্মাদী আন্দোলন’ বলা যেত। কিন্তু অযৌক্তিকভাবে তাঁর পিতার নামানুসারে ‘ওয়াহ্হাবী আন্দোলন’ নামকরণ করা হয়েছে। মাসউদ আলম নাদভীর মতে, প্রথম এ ভুলটি করেন John Lewis Burkhardt (১৭৮৪-১৮১৭ খৃঃ) নামক এক ইউরোপীয় পর্যটক। এরপর তা বিভিন্ন লেখকদের মাধ্যমে জনসমাজে প্রচার পায় (দ্রঃ মাসঊদ আলম নাদভী, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব : মুছলিহুন মাযলূমূন ও মুফতারা আলাইহ, উর্দূ থেকে আরবী অনুবাদ: আব্দুল আলীম আল-বাসতুভী (রিয়াদ : ১৪২০ হিঃ) পৃঃ ১৯৪; এ.জেড.এম শামসুল আলম, প্রবন্ধ : ‘মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব ও ওয়াহ্হাবী মতবাদ’, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, ঢাকা : ৪৪ বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা, এপ্রিল-জুন ২০০৫, পৃঃ ২১০।

১১. হাসান বিন আব্দুল্লাহ আলে শায়েখ, প্রবন্ধ : আল-ওয়াহ্হাবিয়াহ ওয়া যাঈমুহা মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব, গৃহীত : ফরীদ ওয়াজদী, দায়েরাতু মা‘আরিফিল ক্বারনিল ইশরীন (বৈরূত : দারুল মা‘রিফাহ, ৩য় প্রকাশ), পৃঃ ৮/৮২১।

১২. Quintan Wiktorowicz, "Anatomy of the Salafi Movement" in "Studies in Conflict & Terrorism" USA, Vol. 29, Issue. 3 (2006), P. 235.

১৩. Encyclopedia of Islam and the Muslim World, Editor in Chief Richard C. Martin, V-2 (New York : Macmillan Referance, 2004), P. 727.

মধ্য আরবের প্রাচীন উচ্চভূমি অঞ্চল ‘নাজদ’। অষ্টাদশ শতকে এ ভূখন্ডে ঘটে যায় এক অসাধারণ ইসলামী বিপ্লব। ইসলাম আগমনের পূর্বে অজ্ঞতার তিমির প্রহেলিকা আরবজাতিকে যেমন আচ্ছাদিত করে রেখেছিল, ঠিক তেমনি আববাসীয় শাসনামলের পতনের পর থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী অবধি পুনরায় খোদ ‘অহি-র অবতরণস্থল’ আরবের বুকে ধীরে ধীরে জমাট বেঁধেছিল জাহেলিয়াতের গাঢ় তমিস্রা। শিরক-বিদ‘আতের ভয়াবহ আগ্রাসনে অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছিল ইসলামের ব্যক্তি, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির আদিকাঠামো। এমনই এক ক্রান্তিলগ্নে বলা যায় ইসলামের পুনর্জন্মবার্তা নিয়েই ‘ওয়াহ্হাবী আন্দোলন’ তথা ইসলামের বিশুদ্ধ রূপের দিকে প্রত্যাবর্তনবাদী ও সংস্কার-অনুবর্তী এই আন্দোলনের জন্ম হয়। বৈশিষ্ট্যগত কারণে এ আন্দোলনকে সালাফী আন্দোলন বা মুওয়াহ্হিদীন আন্দোলন বলে আখ্যা দেয়া হয়। এ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব বিন সালমান বিন আলী আত-তায়মী (১৭০৩-১৭৬১ খৃঃ) রাহিমাহুল্লাহ। অহী নাযিলের পবিত্র ভূমি আরবের বুকে এই মহান যুগসংস্কারক কেবল রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের পুনরুজ্জীবনই ঘটাননি; বরং নাজদ থেকে এমন এক ইসলামী সমাজের উত্থান ঘটান যা খুলাফায়ে রাশেদীনের পর অহি-র প্রাণকেন্দ্রে পুনরায় তাওহীদ ও সুন্নাতের উপর ভিত্তিশীল একটি বৃহত্তর আরব রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হয়েছিল। যার বিকীর্ণ আলোকচ্ছটা আরব মরুর দিকচক্রবাল পেরিয়ে পরবর্তীতে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

এ আন্দোলন ছিল মুসলিম বিশ্বে শিরক, বিদ‘আত অর্থাৎ ইসলামী শরী‘আতের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট নবসৃষ্ট বিধি-বিধান, বিজাতীয় সংস্পর্শ থেকে আগত যাবতীয় শিরকী ও বিদ‘আতী রসম-রেওয়াজ ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম একটি সংগঠিত ও সফল আন্দোলন, যা মধ্যযুগীয় অবক্ষয়কালীন দুর্যোগ কাটিয়ে ইসলামের নবতর বিকাশের জন্য এক যুগান্তকারী মাইলফলকে পরিণত হয়। আধুনিক যুগের সকল ইসলামী সংস্কারবাদী আন্দোলনের আদর্শিক প্রেরণা এই আন্দোলন। সৈয়দ আব্দুল কুদ্দূস যথার্থই বলেন, ‘আধুনিক যুগে ইসলামী রেঁনেসার উৎপত্তি মূলতঃ অষ্টাদশ শতকের ‘ওয়াহ্হাবী’ আন্দোলন থেকে। দার্শনিক ও আদর্শগত দিক থেকে এই রেঁনেসার ইতিহাস মূলতঃ ওয়াহ্হাবী আন্দোলনেরই ধারাবাহিকতা’।১

মহাকবি ইকবাল এই আন্দোলনকে আখ্যা দিয়েছেন- ‘‘The first throb of life in modern Islam" অর্থাৎ ‘আধুনিক ইসলামের প্রথম হৃদস্পন্দন’ হিসাবে।২

আল্লামা যিরিকলী বলেন, ‘এই দাওয়াত ছিল সমগ্র মুসলিম বিশ্বের আধুনিক নবজাগরণে সর্বপ্রথম বিচ্ছুরিত আলোকধারা। যার প্রভাবে ভারত, মিসর, ইরাক ও সিরিয়ার সংস্কারবাদীগণ উদ্বুদ্ধ হন’।৩

মুহাম্মাদ যিয়াউদ্দীন আর-রীস বলেন, ‘এ আন্দোলন এমন দু’টি মূলনীতিকে ধারণ করেছিল, মুসলিম বিশ্বের অগ্রযাত্রায় যার প্রভাব সর্বাধিক। এক. পবিত্র কুরআন ও হাদীছ- এই দু’টি মূলসূত্রের উপর নির্ভরতা এবং সালাফে ছালেহীনের অনুসৃত নীতিমালার দিকে প্রত্যাবর্তনের আহবান ও দুই. ইজতিহাদের নীতি প্রবর্তন। এই দু’টি নীতি হ’ল মুসলিম সমাজে আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক জাগরণের ভিত্তি। বলা বাহুল্য, এই দু’টি নীতি অবধারণের জন্য ঊনবিংশ শতাব্দীতে আবির্ভূত হওয়া প্রাচ্যের সকল সংস্কারবাদী আন্দোলনই ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের কাছে সর্বৈব ঋণী। এ আন্দোলনের সাথে অন্যান্য সব আন্দোলন দৃঢ়ভাবে সম্পর্কিত, হয় সরাসরি গ্রহণের মাধ্যমে অথবা অনুসরণের মাধ্যমে, নতুবা অন্ততঃ প্রভাবিত হওয়ার মাধ্যমে।৪

মুসলিম সমাজে এ আন্দোলনের প্রভাব কিরূপ ছিল সে সম্পর্কে মরক্কোর স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা প্রখ্যাত শল্যবিদ ও দার্শনিক আব্দুল করীম আল-খাত্বীব (১৯২১-২০০৮ খৃঃ) বলেন,والذي لا شك فيه، أن الدعوة الوهابية كانت أشبه بالقذيفة الصارخة، تنفجر في جوف الليل والناس نيام- كانت صوتا قويا رائدا أيقظ المجتمع الإسلامي كله، وأزعج طائر النوم المحوم علي أوطانهم منذ أمد بعيد- ‘নিঃসন্দেহে ওয়াহ্হাবী আন্দোলন ছিল এক প্রচন্ড নিনাদসম্পন্ন মিসাইলের মত; যা বিস্ফোরিত হয়েছিল এক গভীর রাতের অমানিশার মাঝে, যখন মানুষ ছিল নিদ্রামগ্ন। এর আওয়াজ ছিল এমনই তীব্র ও সুদূরপ্রসারী যে তা সমগ্র মুসলিম সমাজকে জাগিয়ে তুলেছিল এবং তা যেন সুদীর্ঘকাল পর নিদ্রাচ্ছন্ন বুভুক্ষ পাখীকে আপন বাসস্থানে চঞ্চল করে তুলেছিল’।৫

ড. আমীনুল ইসলাম বলেন, এ আন্দোলন আরবদের শুধু আত্মসমালোচনা ও আত্মানুসন্ধানের জন্যই সজাগ করে দেয়নি, একই সঙ্গে তাদের জাগিয়ে দিয়েছে সেই মোহনিদ্রা থেকে, যা কিনা নিহিত ছিল তাদের অবক্ষয়ের মূলে। এ আন্দোলন তাদের মনে যে শক্তি ও গতি সঞ্চার করে, সেটিই তাদের উদ্বুদ্ধ করেছিল একাধিক সংস্কারধর্মী কর্মসূচি গ্রহণে।’৬

ইয়াহইয়া আরমাযানী বলেন, ‘উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়ার দিক থেকে এ আন্দোলন ৭ম শতাব্দীতে পরিচালিত নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আন্দোলনের সাথে এমনই সাদৃশ্যপূর্ণ যে, কেউ কেউ একে ইসলামের দ্বিতীয় আবির্ভাব বলে বিবেচনা করে থাকেন।৭

এ আন্দোলনের যুগান্তকারী প্রভাবকে খৃষ্টসমাজের প্রটেস্ট্যান্টদের৮

উত্থানের সাথে তুলনা করে T.P.Huges বলেন, ‘ওয়াহ্হাবীজমকে কখনও কখনও ইসলামের প্রটেস্ট্যানিজম বলা হয়; আর বাস্তবিকই তাই, যদিও এখানে বড় পার্থক্য হ’ল খৃষ্টান প্রটেস্ট্যান্টরা তাদের পবিত্র গ্রন্থগুলোকে যথাযথ সম্মান করলেও প্রথাগত ধর্মীয় রীতিনীতিকে স্বীকার করে না। আর ওয়াহ্হাবীজম পবিত্র কুরআনের সাথে হাদীছের শিক্ষাকেও দৃঢ়ভাবে ধারণ করে’।৯

১. Syed Abdul Quddus, The Challenge of Islamic Renaissance, (Dehli : Adam Publishers, 1990), P. 17.

২. প্রাগুক্ত, ১৭ পৃঃ।

৩. খায়রুদ্দীন আয-যিরিকলী, আল-আ‘লাম (বৈরূত : দারুল ইলম লিল মালায়ীন, ১৫তম প্রকাশ : ২০০২ খৃঃ), ৬/২৫৭ পৃঃ।

৪. আহমাদ বিন হাজার আলে বুত্বামী, শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব, আক্বীদাতুহুস সালাফিয়্যাহ ওয়া দা‘ওয়াতুহুল ইছলাহিয়্যাহ ওয়া ছানাউল উলামা আলাইহে (কুয়েত : আদ-দারুস সালাফিয়্যাহ, ৪র্থ প্রকাশ, ১৯৮৩ খৃঃ), পৃঃ ১৩৫।

৫. প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৩৫।

৬. ড. আমীনুল ইসলাম, ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম দর্শন (ঢাকা : উত্তরণ, ১ম প্রকাশ, ২০০৪ ইং) পৃঃ ২৩০।

৭. ইয়াহইয়া আরমাজানী, মধ্যপ্রাচ্য অতীত ও বর্তমান, মূল : Middle East past and present, মুহাম্মাদ ইনাম-আল-হক অনূদিত (ঢাকা : জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন, ২০০০), পৃঃ ২৬০।

৮. প্রটেস্টানিজম হ’ল ষোড়শ শতকে ইউরোপীয় খৃষ্টসমাজে পরিচালিত একটি বিখ্যাত ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন, যা খ্যাতনামা সংস্কারক মার্টিন লুথার কিং তৎকালীন ক্যাথলিক চার্চের পোপদের দুর্নীতি ও তাদের প্রবর্তিত ভ্রান্ত রীতি-নীতির বিরুদ্ধে শুরু করেছিলেন। ১৫১৭ সালে শুরু হয়ে ১৬৪৮ সাল পর্যন্ত সারা ইউরোপ জুড়ে ছিল এ আন্দোলনের ব্যাপ্তি, যাতে এক বিরাট ধর্মীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

৯. Thomas Patric Huges, Dictionary of Islam (Delhi : Rupa & Co. 1988), P. 661.

১৭০৩ খৃষ্টাব্দে আরব উপদ্বীপের কেন্দ্রভূমি নাজদ অঞ্চলে জন্ম নিয়েছিলেন ক্ষণজন্মা যুগসংস্কারক মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব (রহঃ)। আরবের বুকে দীর্ঘকালব্যাপী জেঁকে বসা শিরক ও বিদ‘আতের বিপুল আস্ফালনকে রুখে দিয়ে অমাবস্যা রাতে ধূমকেতুর মতই চমক জাগিয়ে তিনি যে দুঃসাহসী আন্দোলন শুরু করেছিলেন; তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল আরবের বুকে আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাত এবং সালাফে ছালেহীনের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের ভিত্তিতে রাসূল (ছাঃ)-এর রেখে যাওয়া নির্ভেজাল ইসলামের পুনর্জাগরণ ঘটান এবং একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাদান। স্মর্তব্য যে, এটি আকস্মিক আবির্ভূত কোন আন্দোলন ছিল না; বরং ইসলামের ইতিহাসে অনুরূপ আন্দোলনের দৃষ্টান্ত অনেক। ইরাকে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (৭৮০-৮৫৫ খৃঃ), সিরিয়াতে ইমাম আহমাদ ইবনে তায়মিয়া (১২৬৩-১৩২৮ খৃঃ), মিসরে ইয্ বিন আব্দুস সালাম (১১৮১-১২৬১ খৃঃ), মরক্কো ও স্পেনে ইমাম শাত্বেবী (১৩৮৮ খৃঃ), ইয়ামনে ইমাম ছান‘আনী (১৬৮৮-১৭৬৮ খৃঃ) প্রমুখ মহান যুগসংস্কারকবৃন্দ প্রত্যেকেই হক্ব প্রতিষ্ঠার জন্য অনুরূপ আন্দোলন-সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলেন এবং খারেজী, মু‘তাযিলীসহ পথভ্রষ্ট আক্বীদাসমূহের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।

মুসলিম বিশ্বে যুগান্তকারী প্রভাব বিস্তারের কারণে এ আন্দোলন বিশ্ববাসীর নযরে বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে। মুসলিম-অমুসলিম, শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে জ্ঞানী মহল এ আন্দোলনের উপর বিশেষ গবেষণা চালিয়েছেন। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হ’ল, সংস্কারধর্মী ও বিশুদ্ধবাদী বৈশিষ্ট্যের কারণে এ আন্দোলনের উপর পাশ্চাত্যের সেক্যুলার বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহে নেতিবাচক বা ইতিবাচক যত গবেষণা হয়েছে, সম্ভবতঃ মুসলিম বিশ্বের ইসলামী কেন্দ্রগুলোতেও তত হয়নি। নিম্নে এ আন্দোলনের পরিচয় সম্পর্কে কয়েকজন বিখ্যাত পন্ডিতের বক্তব্য তুলে ধরা হ’ল-

১- মিসরীয় পন্ডিত ড. ত্বহা হুসাইন (১৮৮৯-১৯৭৩ খৃঃ) বলেন, ‘এই নতুন মাযহাবটি বাহ্যত নতুন মনে হ’লেও মর্মগতভাবে এটি সনাতনই। অর্থাৎ সমকালীন পেক্ষাপটে নবীন হ’লেও মৌলিকত্বের দিক থেকে এটি প্রাচীন। কেননা এ দাওয়াত ছিল বিশুদ্ধ, অবিমিশ্র এবং শিরক ও পৌত্তলিকতামুক্ত আদি ইসলামের দিকে ফিরে যাওয়ার এক শক্তিশালী দাওয়াত। ... এটি ছিল স্বয়ং ইসলামের দিকেই দাওয়াত, যে দাওয়াত নিয়ে নবী করীম (ছাঃ) আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দুনিয়ার বুকে আগমন করেছিলেন। আল্লাহ ও বান্দার মাঝে শীর উঁচু করে থাকা যাবতীয় তথাকথিত মাধ্যমসমূহ উচ্ছেদের লক্ষ্যে। এ দাওয়াত পরিচালিত হয়েছিল আরবীয় ইসলামকে পুনরুজ্জীবন দান এবং অজ্ঞতা-মূর্খতা ও অনারব সংস্পর্শের প্রভাবজাত সৃষ্ট যাবতীয় ময়লা-আবর্জনাকে পরিশোধনের জন্য’।১৪

২- লেবাননী লেখক আমীর শাকীব আরসালান (১৮৬৯-১৯৪৬ খৃঃ) বলেন, ‘এই আন্দোলন ছিল সঠিক আক্বীদা, সালাফে ছালেহীনের নীতিমালা এবং রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবাদের পদাংক অনুসরণের দিকে প্রত্যাবর্তনে আহবানকারী একটি আন্দোলন। যা কুসংস্কার, বিদ‘আত, গায়রুল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা বা আনুগত্য প্রকাশ, কবরের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান, আওলিয়ায়ে কেরামের অবস্থানস্থলে ইবাদত করা ইত্যাকার কার্যকলাপকে সর্বতোভাবে প্রত্যাখ্যান করে।১৫

৩- আমেরিকান পন্ডিত লোথ্রোব স্টোডার্ড (১৮৮৩-১৯৫০ খৃঃ) চমৎকারভাবে এর পরিচয় দিয়েছেন, ‘ওয়াহ্হাবী দাওয়াত একটি বিশুদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গ সংস্কারবাদী দাওয়াত। যার উদ্দেশ্য ছিল অলৌকিকতার ধারণাকে পরিশুদ্ধ করা, যাবতীয় অস্পষ্টতা, সন্দেহ ও কুসংস্কারের অবসান ঘটান। মধ্যযুগে ইসলামের মধ্যে তথাকথিত মুসলিম পন্ডিতরা যেসব বৈপরিত্যপূর্ণ ব্যাখ্যা ও পরস্পর বিরোধী সংযোজন ঘটিয়েছিলেন তা নাকচ করা এবং যাবতীয় বিদ‘আতী কর্মকান্ড ও ওলী-আওলিয়ার উপাসনাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করা। সর্বোপরি ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন করা এবং আদি ও মৌলিক উৎসগুলোর মাধ্যমে ইসলামকে ধারণ করার আহবানই ছিল ওয়াহ্হাবী দাওয়াতের সারনির্যাস।

৪. ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের উপর প্রথম তথ্যসমৃদ্ধ বর্ণনাদাতা সুইস পর্যটক জন লুইস বারখাডট (John Lewis Burkhardt) তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্তে লিখেছেন, ‘ওয়াহ্হাবীদের ধর্মীয় বিশ্বাসসমূহ নব্য কোন ধর্মবিশ্বাস ছিল না।...তাদের এবং সুন্নী তুর্কীদের মধ্যে পার্থক্য ছিল এই যে, ওয়াহ্হাবীরা শরী‘আতকে কঠোরভাবে অনুসরণ করত, যখন অন্যরা তা অবহেলা করত অথবা পূর্ণাঙ্গভাবে তা অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকত’।১৬

মোটকথা প্রাচ্য-পাশ্চাত্য নির্বিশেষে সর্বত্র একথা সাধারণভাবে স্বীকৃত যে, ওয়াহ্হাবী আন্দোলন মূলতঃ এমন একটি সংস্কারপন্থী ও বিশুদ্ধবাদী আন্দোলন, যা শিরককে সর্বতোভাবে বর্জনের মাধ্যমে নির্ভেজাল তাওহীদের প্রতিষ্ঠাদানে সফল সংগ্রাম চালিয়েছিল এবং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছভিত্তিক প্রকৃত ইসলামী শিক্ষাকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পরিমন্ডলে যথার্থভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছিল। যদিও নামধারী আলেম-ওলামা এবং বিদ্বেষী মহল প্রথম থেকেই হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এ আনেদালনের বিরূদ্ধে কদর্যপূর্ণ অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। তবুও এ আন্দোলনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কর্মসূচীকে তারা বিন্দুমাত্র প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেনি। বরং এ আন্দোলন বিগত তিন শতকে ইসলামকে শিরক ও বিদ‘আতের অশুভ ছায়া থেকে উদ্ধার এবং আদি ইসলামের বিশুদ্ধ শিক্ষাকে পুনরায় বিশ্বের বুকে জাগ্রত করার এক অনন্য দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে। সারা বিশ্বের বুকে এ আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়েছে নির্ভেজাল তাওহীদ তথা অভ্রান্ত সত্যের একমাত্র উৎস পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনাবিল সুবাতাস। বাতিলের কোটি কণ্ঠের সমবেত গর্জন, শত বাধার বিন্ধ্যচল এর অগ্রযাত্রায় যে কোনরূপ বাধা হ’তে পারেনি সেটাই সতত দৃশ্যমান।

১৪. ত্বহা হুসাইন, আল-হায়াতুল আরাবিয়্যাহ ফি জাযীরাতিল আরাব (দামেশক : ১ম প্রকাশ, ১৯৩৫ খৃঃ), পৃঃ ১৩। গৃহীত : প্রবন্ধ ‘‘হাক্বীকাতুশ শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব’’, ড. মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আস-সালমান, মাজাল্লাতুল বুহূছ আল-ইসলামিয়াহ (রিয়াদ : ১৪০৮ হিঃ, ২১ তম সংখ্যা), পৃঃ ১২৭।

১৫. হাযেরুল ‘আলামিল ইসলামী, আরবী অনুবাদ : উজাজ নুয়াইহিয, সম্পাদনা : আমীর শাকীব আরসালান, মূল ইংরেজী : Lothrob Stoddard, The New World of Islam (P.1921) (বৈরূত : দারুল ফিকর, ৪র্থ প্রকাশ, ১৯৮৩ইং), ১/২৬৪ পৃঃ।

১৬. John Lewis Burckhardt, Notes on the Bedouins and Wahabys, (London : 282 Henry Colburn and Richard Bentley, 1830), P.275. গৃহীত : ‘আশ-শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব হায়াতুহু ওয়া দা‘ওয়াতাহু ফির রু’য়াতিল ইসতিশরাক্বিয়া, নাছের বিন ইবরাহীম আত-তাওভীম (রিয়াদ : ১ম প্রকাশ, ২০০২ খৃঃ), পৃঃ ২৬।

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক, গোলাম আহমদ মোর্তজা রচিত “চেপে রাখা ইতিহাস” ১৮০ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে ‘প্রথমে ওহাবী জিনিসটা কি সে সম্পর্কে সামান্য

আলোচনা করছি।

আরবদেশে ১৭০৩ খ্রীষ্টাব্দে আব্দুল ওহাবের ছেলে মুহাম্মদের জন্ম হয়। আরব দেশের নিয়মানুযায়ী এ নাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব বলে বর্ণিত হয়।

জন্মস্থানের নাম ছিল নজদ। এ ওহাবী আন্দোলনের নায়কের নাম আসলে মুহাম্মদ।

ইংরেজদের কারসাজিতে ছেলেদের পরিবর্তে বাপের নামেই ইতিহাস তৈরি হয়েছে, তাঁদের রাখা এ নাম হল ওহাব।

‘তিনি ১৭৯ নং পৃষ্ঠায় আরো লিখেছেন ‘ওহাবি নেতাদের “ওহাবী” বলা মানে তাঁদের

শ্রদ্ধা করা তো নয়ই বরং নিশ্চিতভাবে গালি দেয়াই হয়, যেহেতু সে মহান বিপ্লবীরাই

তাঁদেরকে “ওহাবী” নামে আখ্যায়িত করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।’

তিনি ১৮০ নং পৃষ্ঠায় আরো লিখেছেন ‘আরবদেশ যখন শিরিক, বিদয়াত ও অধর্মীয়

আচরণে ছেয়ে গিয়েছিল তখন তা রুখতে এ ওহাবের পুত্র মুহাম্মদ প্রতিবাদী দল গড়ে তোলেন।

ক্রমে ক্রমে তা রাজনৈতিক সংঘর্ষের রূপ নেয়। ১৭৪৭ সনে রিয়াদের শেখের সাথে সংঘর্ষ হয়।

১৭৭৩ সনে রিয়াদের শাসন দাহহাম আব্দুল ওহাবের পুত্র মুহাম্মদের কাছে ভীষণভাবে পরাজিত হন। আরববাসীরা এ ঘটনার পর দলে দলে তাঁর পতাকা তলে সমবেত হয়। অবশেষে ১৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দে তিনি মারা যান।

‘জাস্টিস আব্দুল মওদূদ “ওহাবী আন্দোলন” পুস্তকের ১১৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন ‘ইবনে আব্দুল ওহাবের ধর্মীয় শিক্ষা ও মতবাদের আলোচনায় প্রথমেই বলে রাখা ভাল, আরবদেশে ওহাবী নামাঙ্কিত কোনো মাযহাব বা অস্তিত্ত নেই।

এ সংজ্ঞাটির প্রচলন আরবদেশের বাহিরে এবং এ মতানুসারীদের বিদেশী দুশমন, বিশেষত তুর্কীদের ও ইউরোপিয়দের দ্বারা ‘ওহাবী’ কথাটির অর্থ এবং তাদের মধ্যেই প্রচলিত।

কোনো কোনো ইউরোপীয় লেখক, যেমন নীবর Neibuhr আব্দুল ওহাবকে পয়গম্বর বলেছেন। এসব উদ্ভট চিন্তারও কোনো যুক্তি নেই।

‘ জাস্টিস আঃ মওদূদ আরো লিখেছেন ‘প্রকৃতপক্ষে ইবনে আব্দূল ওহাব কোনো মাজহাবও সৃষ্টি করেননি, চার ইমামের অন্যতম ইমাম হাম্বলের মতানুসারী ছিলেন তিনি।

তাঁর প্রযত্ম ছিল, বিশ্বনবী এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে ইসলামের যে রূপ ছিল সে আদিম সহজ সরল ইসলামে প্রত্যাবর্তন করা।’ {প্রগুক্ত ১১৬, চেপে রাখা ইতিহাস ১৮০}।

ভারত উপমহাদেশে ১৮২২ খ্রীষ্টাব্দের পূর্বে ‘ওহাবী’ নামটির কোনো অস্তিত্তই ছিল না। সর্বপ্রথম এটি ইংরেজদের প্ররোচনায় এ দেশে আমদানী হয়। যাতে লোহা দিয়ে লোহা কাটার পথ সুগম হয়ে যায়।

গোলাম মোর্তজা লিখেছেন ‘ব্রেলভীরসৈয়দ আহমদ শহীদ রহঃ নিহত হওয়ার

পর যেসব আন্দোলন, বিদ্রোহ বা সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল, সেগুলোকে বিকৃত করে তাঁদের নাম পাল্টে কোনোটাকে বলা হয়েছে সিপাহী বিদ্রোহ, কোনোটাকে বলা হয়েছে ওহাবী আন্দোলন, ফারায়েজী আন্দোলন, মুহাম্মদী আন্দোলন, আবার কোনোটাকে হিন্দু মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।’ পৃষ্ঠা নং ১৭৯।

মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহেবের জীবনী

মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব সৌদি আরবের অন্তর্গত নজদ এলাকায় ওয়াইনাহ নামক স্থানে ১১১৫ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। ১০ বছরে পদার্পণ করার পূর্বেই পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেন। নিজ পিতার - যিনি হাম্বলী মাযহাবের একজন বিশেষ

আলেম ছিলেন- নিকট হতে ফিকাহ শিখেন। তারপর বিভিন্ন ওস্তাদের নিকট হাদিস ও তাফসীর শাস্ত্রে শিক্ষা লাভ করেন। বিভিন্ন এলাকায় বিশেষত: মদিনা শরিফ গিয়ে কোরআন হাদিসের উপর বিশেষভাবে গবেষণার মাধ্যমে তাওহিদের জ্ঞান লাভ করেন। শৈশব থেকেই নিজ এলাকাতে যে সব শিরক বিদআত ও কুসংস্কার প্রচলিত ছিল সেগুলো খুব খেয়াল রাখেন। যেমন, কবরকে পবিত্র ও বরকতময় জ্ঞান করে পূজা করা, যা ছিল সত্যিকারের ইসলাম পরিপন্থী। মাঝে মাঝে শুনতেন তার এলাকার মেয়েরা পুরুষ খেজুর গাছের কাছে ওছীলা চেয়ে বলত : হে পালের গোদা, বছর পূর্ণ হবার পূর্বে যেন স্বামী পাই। এ ছাড়া হেজাজে দেখতে পান বিভিন্ন সাহাবি ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশধরদের কবর

পূজা করা হচ্ছে। মদিনা শরিফে শুনতেন, লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরে গিয়ে আল্লাহকে ছেড়ে তাঁর নিকট বিপদ মুক্তি চাচ্ছে। আল্লাহকে ছেড়ে তাঁকে ডাকাডাকি করছে। এ সবই ছিল কোরআন ও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার বিপরীত। কারণ রাব্বুল আলামীন বলেন : ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺪْﻉُ ﻣِﻦْ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻟَﺎ ﻳَﻨْﻔَﻌُﻚَ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻀُﺮُّﻙَ ﻓَﺈِﻥْ ﻓَﻌَﻠْﺖَ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺇِﺫًﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ ﴿ﻳﻮﻧﺲ 106 ﴾‘অর্থাৎ, আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না, যা তোমার উপকার

করতে পারে না এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে না। অতএব তুমি যদি কর, তাহলে নিশ্চয় তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।(সূরা ইউনুস: আয়াত ১০৬)

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা ইবনে আব্বাসকে রা. বললেন : ﺇﺫﺍ ﺳَﺄَﻟْﺖَ ﻓَﺎﺳْﺄَﻝِ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺍﺫﺍ ﺍﺳْﺘَﻌَﻨْﺖَ ﻓﺎﺳْﺘَﻌِﻦْ ﺑﺎﻟﻠﻪِ ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻭﻗﺎﻝ ﺣﺴﻦ ﺻﺤﻴﺢ ) অর্থাৎ, যখন চাইবে কেবল আল্লাহর কাছেই চাইবে আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে কেবল আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে। (তিরমিযি, হাসান সহিহ)। এতসব দেখে তিনি তার এলাকাবাসীদেরকে তাওহিদ ও এক আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার দিকে ডাকতে শুরু করলেন।

যুক্তি দিয়ে বললেন, তিনিই শ্রষ্টা এবং এবং তিনিই দাতা।

অন্যরা কারও কোনো কষ্ট দুর করতে সমর্থ নয়, এমনকি নিজেদেরও না। নেককারদের সাথে ভালবাসার অর্থ হল তাদের অনুসরণ করা, তাদেরকে আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী বানানো নয়। আল্লাহকে ছেড়ে তাদের কাছে কোনো জিনিস চাওয়া নয়। ১-তাঁর এ সব তাওয়াতি কর্মসূচী দেখে বাতিল পন্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে খাড়া হয়ে গেল। তিনি তাওহিদের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন আর বিদআতীরা তার

বিরুদ্ধে খাড়া হল। এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন একত্ববাদের দাওয়াত নিয়ে তৈরী হলেন তখন মক্কার কাফেররা আবাক হয়ে বলেছিল:

ﺃَﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟْﺂَﻟِﻬَﺔَ ﺇِﻟَﻬًﺎ ﻭَﺍﺣِﺪًﺍ ﺇِﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﻟَﺸَﻲْﺀٌ ﻋُﺠَﺎﺏٌ ﴿ﺹ5 ﴾ অর্থাৎ, সে কি সমস্ত মাবুদকে এক মাবুদ বানাতে চায়, এটাত সত্যই খুব অবাক হওয়ার কথা। ( সূরা সোয়াদ : আয়াত ৫) তখন তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়ে গেল তুমুলভাবে। তাঁর সম্বন্ধে নানা ধরণের মিথ্যা কথার প্রচার শুরু হল- যাতে তাঁর দাওয়াত কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু মহান আল্লাহ দাওয়াতের হিফাযত করলেন। এ কাজের জন্য এমন এক দল লোক

তৈরী করে দিলেন, যারা সে দাওয়াতের কাজ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ল সারা হেজাজসহ অন্যান্য ইসলামি দেশগুলোয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত অনেক লোকই তাঁর সম্বন্ধে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, তিনি পঞ্চম মাযহাবের প্রতিষ্ঠা করেছেন। আসলে তিনি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। তারা বলে: ওয়াহাবিরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- কে ভালবাসে না। তাঁর উপর দরূদ পাঠ করে না। অথচ তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনী গ্রন্থ জাদুল মায়াদকে সংক্ষিপ্ত করেছেন। এ ধরণের আরো বহু অপবাদ দেয়া হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এসব

অপবাদের বিচার করবেন কিয়ামত দিবসে। যদি তারা তার বইপত্র পাঠ করত তাহলে দেখত- সেগুলো কোরআন, হাদিস

ও সাহাবাদের কথায় পূর্ণ। ২-হাদীসে আছে : ﺍﻟﻠّﻬُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻟَﻨَﺎ ﻓِﻰ ﺷَﺎﻣِﻨَﺎ ﻭَ ﻓِﻰ ﻳَﻤَﻨِﻨَﺎ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻭَﻓِﻰ ﻧَﺠْﺪِﻧَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻫُﻨَﺎﻟِﻚَ ﺍﻟﺰِّﻻﺯِﻝُ ﻭَﺍﻟْﻔِﺘَﻦُ ﻭَ ﺑِﻬَﺎ ﻳَﻄْﻠَﻊُ ﻗَﺮْﻥُ ﺍﻟﺸًّﻴْﻄَﺎﻥِ (ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) অর্থাৎ, হে আল্লাহ! বরকত দাও আমাদের শামে এবং ইয়ামানে। লোকেরা বলল : আমাদেরনজদে। তিনি বললেন : ওখান ভূমিকম্প ও বিভিন্ন ফেতনা হবে। সেখানে শয়তানের শিং উঠবে। ( বুখারি ও মুসলিম)। এ হাদিসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইবনে হাজার আসকালানী ও অন্যান্য আলেমরা বলেছেন : হাদীসে যে নজদের কথা বলা হয়েছে তার অবস্থান ইরাকে। কারণ সেখান থেকেই ফিতনা শুরু হয়েছে। যেখানে হোসাইন রা. কে শহীদ

করা হয়। কিন্তু কিছু লোক মনে করে বর্ণিত নজদ হল হেজাজের নজদ। অথচ ইরাকে যে ধরণের ফিতনা প্রকাশ পেয়েছে সে রকম কোনো ফিতনা সৌদি আরবের নজদ

থেকে প্রকাশ পায় নি। হেজাজের নজদ থেকে প্রকাশ পেয়েছে সে তাওহিদ যার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিশ্ব জগতকে সৃষ্টি করেছেন, এবং সমস্ত রাসূলদের প্রেরণ করেছেন। ৩- কিছু ন্যায় পরায়ণ আলেম বলেছেন, তিনি হিজরী ১১ শতাব্দীর মোজাদ্দেদ। তারা তার সম্বন্ধে গ্রন্থ লিখেছেন। যেমন শায়খ আলী আল- তানতাভী রহ. যিনি বড় বড় ব্যক্তিত্বদের সম্বন্ধেও বহু বই লিখেছেন। শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব রহ. নামক বইতে তিনি লিখেছেন, হিন্দুস্তান ও অন্যান্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে একত্ববাদের ধ্যান-ধারণা পৌছেঁছে মুসলিম হাজীদের দ্বারা, যারা মক্কা থেকে এই সম্বন্ধে ধারণা নিয়েছেন। ফলে ইংরেজ ও ইসলামের অন্যান্য শত্রুরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করল। কারণ, একমাত্র তাওহিদই মুসলিমদেরকে নিজ

শত্রুদের বিরুদ্ধে একত্রিত করে । ফলে, তারা এমন অবস্থা সৃষ্টি করল, যে ব্যক্তিই তাওহীদের দিকে মানুষকে ডাকে তাকেই তারা ওহাবি নামে আখ্যায়িত করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমরা যেন সে তাওহিদ থেকে সরে যায় যে তাওহিদ এক আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার শিক্ষা দেয়। তাওহিদ ও শিরকের দ্বন্দ্ব ১। তাওহদি ও শিরকের দ্বন্দ্ব বহু পুরাতন। নূহ আ.-এর যুগ থেকেই এর সূচনা। যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে মূর্তি পূজা ছেড়ে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডেকেছিলেন তখন থেকেই এটি শুরু হয়। তিনি সাড়ে নয়শত বছর পর্যন্ত তাদেরকে তাওহিদের দাওয়াত দেন। কিন্তু তারা তাঁকে অমান্য করে ও তাঁর বিরাদ্ধাচরণ করে। সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন : ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻟَﺎ ﺗَﺬَﺭُﻥَّ ﺁَﻟِﻬَﺘَﻜُﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺬَﺭُﻥَّ ﻭَﺩًّﺍ ﻭَﻟَﺎ ﺳُﻮَﺍﻋًﺎ ﻭَﻟَﺎ

ﻳَﻐُﻮﺙَ ﻭَﻳَﻌُﻮﻕَ ﻭَﻧَﺴْﺮًﺍ ﴿23 ﴾ ﻭَﻗَﺪْ ﺃَﺿَﻠُّﻮﺍ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ (ﻧﻮﺡ 24 ) আর তারা বলে, ‘তোমরা তোমাদের উপাস্যদের বর্জন করো না; বর্জন

করো না ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক ও নাসরকে’।বস্ত্তত তারা অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে। (সূরা নূহ: আয়াত ২৩ ও ২৪)

বুখারি শরিফে ইবনে আব্বাস রা. থেকে এই আয়াতের

তাফসিরে বলা হয়েছে: এঁরা ছিলেন নূহ আ.-এর সমপ্রদায়ের মধ্যে ভাল ও নেককার লোক। তারা মারা গেলে শয়তান তাদের গোত্রের লোকদের কাছে গোপনে বলল, তারা যেখানে বসতেন সেখানে তাদের প্রতিমূর্তি তৈরী কর এবং এগুলোকে তাঁদের নামে বিভূষিত কর। তারা তাই করল। কিন্তু তখনও পর্যন্ত তাদের ইবাদত করা হত না। যখন এরা মারা গেল তখন কেন যে মূর্তিগুলি বানান হয়েছিল মতা পরবর্তী লোকেরা ভুলে গেল। ফলে, তখন থেকেই মূর্তি ও পাথরের পূজা শুরু

হয়ে গেল। ২। এরপর থেকে (অর্থাৎ নূহ আ.- এর পর) যত

রাসূল আগমন করেছেন তাদের প্রত্যেকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডাকতে শুরু করলেন এবং আল্লাহ ব্যতীত সকল বাতেল- অযোগ্য মাবুদদের ত্যাগ করতে বললেন। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআন ভরপুর।

আল্লাহ বলেনঃ ﻭَﺇِﻟَﻰ ﻋَﺎﺩٍ ﺃَﺧَﺎﻫُﻢْ ﻫُﻮﺩًﺍ ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﻗَﻮْﻡِ ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﺎ ﻟَﻜُﻢْ

ﻣِﻦْ ﺇِﻟَﻪٍ ﻏَﻴْﺮُﻩُ ﺃَﻓَﻠَﺎ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ ﴿ :65ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ ﴾ অর্থাৎ, আর (প্রেরণ করলাম) আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হূদকে। সে বলল,

হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না? (সূরা আরাফ : আয়াত ৬৫)

অন্যত্র বলেন : ﻭَﺇِﻟَﻰ ﺛَﻤُﻮﺩَ ﺃَﺧَﺎﻫُﻢْ ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﻗَﻮْﻡِ ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﺎ ﻟَﻜُﻢْ

ﻣِﻦْ ﺇِﻟَﻪٍ ﻏَﻴْﺮُﻩُ ( ﻫﻮﺩ : 61 ) অর্থাৎ, আর সামূদ জাতির নিকট

(পাঠিয়েছিলাম) তাদের ভাই সালেহকে। সে বলল, হে আমার কওম, তোমার আল্লাহর ইবাদত কর,

তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই। (সূরা হূদ : আয়াত ৬১) আরও ইরশাদ হচ্ছে : ﻭَﺇِﻟَﻰ ﻣَﺪْﻳَﻦَ ﺃَﺧَﺎﻫُﻢْ ﺷُﻌَﻴْﺒًﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﻗَﻮْﻡِ ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﺎ

ﻟَﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﺇِﻟَﻪٍ ﻏَﻴْﺮُﻩُ (ﻫﻮﺩ 84 ) অর্থাৎ, আর মাদইয়ানে আমি (পাঠিয়েছিলাম) তাদের ভাই শুআইবকে। সে বলল,

হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই। (সূরা হূদ: আয়াত ৮৪)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন : ﻭَﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢُ ﻟِﺄَﺑِﻴﻪِ ﻭَﻗَﻮْﻣِﻪِ ﺇِﻧَّﻨِﻲ ﺑَﺮَﺍﺀٌ ﻣِﻤَّﺎ ﺗَﻌْﺒُﺪُﻭﻥَ ﴿ 26﴾ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻓَﻄَﺮَﻧِﻲ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺳَﻴَﻬْﺪِﻳﻦِ ﴿ﺍﻟﺰﺧﺮﻑ27 ﴾

অর্থাৎ, আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম স্বীয় পিতা ও তার কওমকে বলেছিল, তোমরা যেগুলুর ইবাদত কর, নিশ্চয় আমি তাদের থেকে সম্পূর্ণমুক্ত। তবে (তিনি ছাড়া) যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অত:পর নিশ্চয় তিনি আমাকে শীঘ্রই হেদায়াত

দিবেন। (সূরা যুখরুফ : আয়াত ২৬ ও ২৭)

মুশরিকরা সকল নবীরই বিরোধিতা করত এবং অহঙ্কারের সাথে মুখ ঘুরিয়ে নিত। আর তাদের আনিত দাওয়াত উপেক্ষা করত। একে বাধাগ্রস্ত করার জন্য সকল শক্তি প্রয়োগ করত।

৩। আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি নবুয়ত পাওয়ার আগে নিজ জাতির কাছে আল আমীন তথা বিশ্বাসী বলে পরিচিত ছিলেন। এ নামেই সকলের কাছে সমাদৃত ছিলেন। কিন্তু যখনই তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডাকলেন এবং বাপ দাদাদের অনুসৃত মূর্তি পূজা ত্যাগের আহ্বান জানালেন। তখনই তাঁর সত্যবাদিতা ও

আমানতদারীতার কথা ভুলে গেল। বরং উল্টো বলতে লাগল :

তিনি মিথ্যবাদী, যাদুকর। পবিত্র কোরআন তাদের বিরোধিতা করে বর্ণনা করছে : ﻭَﻋَﺠِﺒُﻮﺍ ﺃَﻥْ ﺟَﺎﺀَﻫُﻢْ ﻣُﻨْﺬِﺭٌ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُﻭﻥَ ﻫَﺬَﺍ ﺳَﺎﺣِﺮٌ ﻛَﺬَّﺍﺏٌ ﴿4 ﴾ ﺃَﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟْﺂَﻟِﻬَﺔَ ﺇِﻟَﻬًﺎ ﻭَﺍﺣِﺪًﺍ ﺇِﻥَّ ﻫَﺬَﺍ

ﻟَﺸَﻲْﺀٌ ﻋُﺠَﺎﺏٌ ﴿ﺹ 5: ﴾ অর্থাৎ, আর তারা বিস্মিত হল যে, তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকেই একজন সতর্ককারী এসেছে এবং কাফেররা বলে, এ তো যাদুকর, মিথ্যাবাদী। সে কি সকল

উপাস্যকে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? নিশ্চয় এ তো এক আশ্চর্য বিষয়। (সূরা সোয়াদ : আয়াত ৪ ও ৫) অন্যত্র বলেন :

ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻣَﺎ ﺃَﺗَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻠِﻬِﻢْ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝٍ ﺇِﻟَّﺎ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺳَﺎﺣِﺮٌ ﺃَﻭْ ﻣَﺠْﻨُﻮﻥٌ ﴿52 ﴾ ﺃَﺗَﻮَﺍﺻَﻮْﺍ ﺑِﻪِ ﺑَﻞْ ﻫُﻢْ ﻗَﻮْﻡٌ ﻃَﺎﻏُﻮﻥَ ﴿

ﺍﻟﺬﺭﻳﺎﺕ 53: ﴾ অর্থাৎ, এভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্য

থেকে যে রাসূলই এসেছে, তারা বলেছে, এ তো একজন যাদুকর অথবা উন্মাদ। তারা কি একে অন্যকে এ বিষয়ে ওসিয়ত করেছে? বরং এরা সীমালঙ্ঘনকারী কওম। (সূরা যারিয়াত: আয়াত ৫২ ও ৫৩)। এটিই হচ্ছে সকল নবী-রাসূলের

তাওহিদের প্রতি দাওয়াত দেয়ার পরের অবস্থা। এটিই তাঁদের মিথ্যাবাদী কওম ও অপবাদ দানকারীদের ভূমিকা। ৪। আমাদের বর্তমান সময়ে কোনো মুসলিম তার অপর মুসলিম ভাইদেরকে চরিত্র সংশোধন, সততা ও আমানতদারীতা রক্ষা করার প্রতি দাওয়াত দিলে তাকে কোনোরূপ বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয় না। কিন্তু যখনই তাওহিদ তথা এক

আল্লাহকে ডাকা ও বিপদ- মুসিবতে কেবল তাঁর নিকটই সাহায্য

প্রার্থনা করার প্রতি দাওয়াত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত নবী, আওলিয়াদের দ্বারস্থ হতে নিষেধ করে _সকল নবীই

যা করে গিয়েছেন_ তখনই মানুষ তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়

এবং নানা অপবাদে জর্জরিত করে ফেলে। বলে ইনি ওহাবি, রাসূলের দুশমন ইত্যাদি- যাতে মানুষ তার দাওয়াত

থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর কোরআনে তাওহিদের বক্তব্য সম্বলিত কোনো আয়াত আসলে তাদের কেউ কেউ

বলে, এটি ওহাবিদের আয়াত। আর হাদিস যখন বলে : যখন সাহায্য চাইবে এক আল্লাহর কাছেই চাইবে, তখন কেউ কেউ

বলে, এ হল ওহাবিদের হাদিস। কোনো মুসল্লী বুকের উপর হাত বাঁধলে, আত্তাহিয়্যাতুতে তর্জনি নাড়লে _যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা করতেন_ বলে: এ তো ওহাবি হয়ে গেছে। আজ অবস্থাটা হয়ে গেছে এমন যে, কেউ একত্ববাদের কথা বললে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুসরণ করলে তাকে ওহাবি বলা হয়। বিভিন্নভাবে তিরস্কার করা হয়। ৫। তাওহিদের প্রতি আহ্বানকারী দলকে অবশ্যই ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করতে হবে। যাঁকে তাঁর রব

বলেছেন : ﻭَﺍﺻْﺒِﺮْ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻭَﺍﻫْﺠُﺮْﻫُﻢْ ﻫَﺠْﺮًﺍ ﺟَﻤِﻴﻠًﺎ ﴿ 10ﺍﻟﻤﺰﻣﻞ﴾ অর্থাৎ, তারা যা বলে তা তুমি সহ্য কর এবং তাদেরকে সুন্দরভাবে পরিত্যাগ কর। (সূরা মুযযাম্মিল: আয়াত ১০) অন্য ইরশাদ হচ্ছে : ﻓَﺎﺻْﺒِﺮْ ﻟِﺤُﻜْﻢِ ﺭَﺑِّﻚَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻄِﻊْ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﺁَﺛِﻤًﺎ ﺃَﻭْ ﻛَﻔُﻮﺭًﺍ ﴿

ﺍﻟﺪﻫﺮ24: ﴾ অর্থাৎ, অতএব তোমার রবের হুকুমের জন্য ধৈর্য্য ধারণ কর এবং তাদের মধ্য থেকে কোনো পাপিষ্ঠ বা অস্বীকারকারীর আনুগত্য করো না। (সূরা দাহার : আয়াত ২৪)

৬। তাওহিদের দিকে দাওয়াত দেয়া হলে তা কবূল করা এবং দাওয়াত দানকারীকে ভালবাসা সকল মুসলিমের উপর ফরজ। কারণ, তাওহিদের দাওয়াত দেয়া ছিল রাসূলদের কাজ, আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ কাজ করে গেছেন, লোকদের তাওহিদের প্রতি ডেকে গেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি নবীজীকে ভালবাসবে অবশ্যই সে তাঁর দাওয়াতকে ভলবাসবে। আর যে তাওহিদকে ঘৃণা করল সে যেন নবীকেই ঘৃণা করল। কোনো মুসলিমই কি এ কাজ করতে রাযী হবে?

ওহাবী আন্দোলন খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর আরবের একটি সংস্কার আন্দোলন। এ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহহাব (১৭০৩-১৭৯২ খ্রি.) একজন ধর্মীয় আলেম এবং সংস্কারক ছিলেন। তিনি আমাদের এ ভারতীয় উপমহাদেশের বিপ্লবী আলেম মাওলানা শাহ ওলিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভীর সমসাময়িক ছিলেন। সে যুগে যে ব্যাপকভাবে পীরপূজা, গোরপূজা, ব্যক্তিপূজা শুরু হয়ে গিয়েছিল এবং তুর্কী সুলতানরা ইসলামী আদর্শ থেকে দূরে সরে যেভাবে আয়েশী রাজা-বাদশাহর জীবন যাত্রা শুরু করেছিলেন, তিনি ছিলেন তার ঘোর সমালোচক। তিনি সর্বপ্রথম নজদ প্রদেশকে এবং পরে মক্কা-মদীনাসহ গোটা হেজাজ তথা আরব উপদ্বীপে তাঁর অনুসারীদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং এভাবে তুর্কী সুলতানদের শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন সুন্নী চারটি প্রধান মাযহাবের অন্যতম হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। ইসলামের ইতিহাসের শুরু থেকে সুন্নীদের প্রতিপক্ষরূপে চলে আসছিল শিয়া পন্থীরা-যারা ইসলামের খিলাফতী ধারণার বিপক্ষে ‘ইমামতে’র ধারণায় বিশ্বাসী। বিশ্বের প্রায় দেড়শ কোটি মুসলমানদের মধ্যে ৫/৬ কোটি শিয়া ছাড়া অপর সকলেই সুন্নী। এমনকি যারা কোন নির্দিষ্ট মাযহাবের অনুসারী নন, হাদীসের অনুসারীরূপে নিজেদেরকে আহলে হাদীস বলে পরিচয় দেন, তাঁরাও এ অর্থে সুন্নী। তাঁরাও আমাদেরই মত শিয়াদেরকে ভ্রান্ত বলে বিশ্বাস করেন। এমতাবস্থায় মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহহাবের অনুসারীদেরকে সুন্নীদের প্রতিপক্ষরূপে দাঁড় করিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হওয়াটা ছিল একান্তই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ গরজটা তুর্কী সুলতানরা খুব বেশি অনুভব করেছিলেন, ঠিক যেভাবে ৬ দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আইয়ুব-ইয়াহইয়া খান তথা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার দুর্নাম করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল এবং সর্বপ্রকার দমন পীড়নের ব্যবস্থা অবলম্বন করেছিলেন। মক্কা-মদীনার হারামাইন যেহেতু তুর্কী শাসকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল আর আমাদের ধর্মপ্রাণ হাজী সাহেবগণ মক্কা-মদীনায় যিয়ারতে গিয়ে সে সব প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে পড়তেন, তাই এ উপমহাদেশেও ওহাবী বিরোধী প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ে। এ প্রচারণা যেহেতু ব্যাপকভাবে হয়েছিল তাই ব্রিটিশ আমলে বৃটিশ সরকার সে অস্ত্রটি আমাদের আজাদী সংগ্রামের সংগ্রামী আলেমগণের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে। তারা আজাদী সংগ্রামের পথিকৃত বালাকোটের শহীদ মাওলানা সৈয়দ আহমদ বেরলভী ও শাহ ইসমাঈল শহীদকে সাথে সাথে গোটা মুজাহিদ আন্দোলন ও আজাদী সংগ্রামকে ‘ওহাবী আন্দোলন’ বলে অভিহিত করে। সাথে সাথে আমাদের বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা নিসার আলী ওরফে তীতুমীর এবং হাজী শরীয়তুল্লাহর ফরায়েজী আন্দোলন সবই বৃটিশ ঐতিহাসিক ও আমলা ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার প্রমুখ কর্তৃক (ওহাবী) বলে অভিহিত হয়। হান্টারের ভাষ্যমতে, সৈয়দ আহমদ বেরলভী মক্কায় গিয়ে ওহাবী আন্দোলনে দীক্ষিত হয়ে আসেন, অথচ তিনি বা আমাদের তীতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহ প্রমুখ বীরপুরুষগণ যখন ১৮২০ সালের দিকে হজে যান তখন মক্কা-মদীনায় সুদৃঢ় তুর্কী শাসন চলছিল এবং ঐ সব পবিত্র নগরীতে ওহাবী আন্দোলনের নামটি উচ্চারণ করাও ছিল গুরুতর অপরাধ। এর এক দশক পূর্বেই তুর্কী সুলতানরা ১২৪৪ হিজরীতে/১৮১৩ খ্রি. ওহাবীদেরকে হটিয়ে মুক্ত করে ফেলেছিলেন। সুতরাং ওটা ছিল নেহাৎই রাজনৈতিক প্রচারণা এবং অসত্য বিবরণ। তাই ১৮৬৪ সালে ‘গ্রেট ওহাবী ট্রায়াল’ নামে উপমহাদেশীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে ‘কোলকাতা হাইকোর্টে’ সরকারী মামলা হয়েছিল-যার ভিত্তিতে অনেকেরই ফাঁসি ও দ্বীপান্তরের শাস্তি হয়েছিল। সে মামলার অভিযুক্তগণ আদালতে তাদেরকে ওহাবী বলে অভিহিত করার প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, আমরা ওহাবী নই, মুহাম্মাদী তরীকার অনুসারী।’ তারা ওহাবীর পরিবর্তে তাদেরকে সুন্নী বলে অভিহিত করার দাবী করেছিলেন। স্বয়ং হান্টার লেখেন, কার্যত ওহাবীরা হচ্ছে সুন্নী সম্প্রদায়ের একটি অগ্রগামী অংশ এবং ইসলামের শুদ্ধাচারপন্থী অংশ। বাংলা ও উত্তর পশ্চিম ভারতের প্রায় সকল মুসলমানই সুন্নী সম্প্রদায়ভুক্ত। (ইন্ডিয়ান মুসলিমস পৃ. ৪৫-৪৬)

ভারতবর্ষে ওহাবী-সুন্নী দ্বন্দ্বের সূচনা

১. এল বিভান জোনস লেখেন, গোঁড়া মৌলবীরা সাইয়েদ আহমদ শহীদের অনুসারীদের কট্টর সংস্কার আন্দোলনকে ওহাবীটজম বলে কুৎসা রটায়। (Nicknamed them Wahhabies) The people of the mosque, p. 206 (London 1932)

২. ঐতিহাসিক পি হার্ডি লেখেন, The follwers of Syed Ahmad Barelvi Continued to maintain an active guerrilla war on the North West frontier in the region of Black mountain ... . the Ulama were a potential political force and that it was necessary to divided them politically from the supporters of Syed Ahmad Brelvi

অর্থাৎ সৈয়দ আহমদ বেরলভীর অনুসারীরা ভারতবর্ষের উত্তর সীমান্তের কালোপাহাড় এলাকায় একটি গেরিলাযুদ্ধ অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছিল। ... আলেমসমাজ আরো একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তিরূপে বিরাজমান ছিল। তাই তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত করে সাইয়েদ আহমদ বেরলভীর অনুসারীদের থেকে সরিয়ে আনাটা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। (দি মুসলিমস অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া পৃ. ২৬৮)

৩. দেওবন্দী আলেমগণ ক্রমাগত ব্রিটিশ শাসন বিরোধী ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছিলেন। পি হার্ডি বলেন,

The collection of fatwas by Deobandi ulama are of immence importance for understanding the pre-ocopations of Indian Muslims.

অর্থাৎ দেওবন্দী আলেমগণের ফতোয়া সংকলনগুলো পরাধীন ভারতের মুসলমানদের মন ও মনন গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হত। (প্রাগুক্ত পৃ. ১৭১)

৪. এমতাবস্থায় বৃটিশ সরকারের জন্যে যা অত্যন্ত দরকারী হয়ে পড়েছিল তা হচ্ছে-

For every Alim who issued a fatwa that India was Dar-ul-Harb there would be one who declared that it was Dar-ul-Islam. Deoband represented the first response.

অর্থাৎ এমন প্রত্যেক আলেম যিনি বলেন হিন্দুস্তান দারুল হরব বা শত্রুকবলিত রাষ্ট্র, তার জবাবে আরো একজন করে আলেম থাকা অপরিহার্য যিনি বলবেন, না, হিন্দুস্তান দারুল ইসলাম। দেওবন্দ ছিল প্রথমোক্ত দলের প্রতিনিধিত্বকারী।

৫. পক্ষান্তরে আহমদ রেযা খান ঐ দ্বিতীয় অপ্রিয় দায়িত্বটি গ্রহণ করলেন। হার্ডির ভাষায়-

Ahmad Reza Khan of Barilvi issued a fatwa declaring India to be Dar-ul-Islam, marking it a sin to associate with infidels.

অর্থাৎ আহমদ রেযা খান ভারতবর্ষকে দারুল ইসলাম বলে ঘোষণা করে বিধর্মীদের (হিন্দুদের) সঙ্গে মিলে চলা (স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা) কে পাপ বলে ঘোষণা দেন। (প্রাগুক্ত পৃ. ২৬৮)

এ-ই হল ভারতীয় উপমহাদেশে ওহাবী-সুন্নী দ্বন্দ্বের ইতিহাস। যাদের জন্যে বেদাতী আলেমরা এ মহান জিহাদ (?) শুরু করেছিলেন সেই ইংরেজ জাতির ঐতিহাসিকরা তা ধরিয়ে দিয়েছেন। ঐ যুগে তিনি আজীবন যালেম বিজাতীয় বিদেশী সরকারের সমর্থন অব্যাহতভাবে যুগিয়ে গেছেন। এমনকি তার মৃত্যুর বছর ১৯২১ সালে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকার পরে আলেমরা একটি সম্মেলন আহবান করেছিলেন।

ফ্রান্সিস রবিনসন এ তথ্যটি ফাঁস করে দিয়ে মন্তব্য করেন-

He had considerable influence with the masses but was not favoured by educated Muslims.

সাধারণ মানুষের উপর তার বেশ প্রভাব ছিল, কিন্তু শিক্ষিত মুসলমানরা তাকে পসন্দ করতেন না। (সেপারিটিজম এমাঙ ইন্ডিয়ান মুসলিমস, পৃ. ৪২২)

সে যুগে আহমদ রেযা খানের সাথে আবদুল মজীদ বদায়ূনী ও আবদুল হামিদ বদায়ূনী নামক দুই ভাই-যাদের প্রথমোক্তজন সরকারী ‘শামসুল উলামা’ খেতাব এবং ১৯২২ সালে গভর্ণর হারকোট বাটলারের দরবার থেকে একটি তমঘা ও সম্মানসূচক তরবারী লাভ করেছিলেন। (প্রাগুক্ত, পৃ. ২৭২)

গেইল মেনান্ট লেখেন, সরকারী মোসাহেবীর পুরস্কার স্বরূপ আবদুল মজীদ লক্ষ্ণৌর সরকার সমর্থক ক্যানিং কলেজের অধ্যাপকের চাকুরি এবং আবদুল হামিদ লক্ষ্ণৌ ঈদগাহর ইমামতি লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। (দি খিলাফত মুভমেন্ট দিল্লী অক্সফোর্ড ফ্রেম ১৯৮২, পৃ. ২৭২)

বর্তমানে ‘ওহাবী তত্ত্ব’ পুনঃআবিষ্কারকারীগণ সেই নোংরা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করে জানান দিলেন, ব্রিটিশ বেনিয়ারা ৬৫ বছর পূর্বেই এদেশ থেকে পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হলেও তাদের নিমক হালাল অনুগামীরা এখনো বেঁচে আছেন এবং যে কোন বাতিল শক্তিকেই তারা মদত যোগাতে সদা প্রস্ত্তত! সাধু সাবধান!!

মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুুল ওহাব নজদীর একটি চিঠি ও কিছু প্রশ্ন:

===================================

মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী তার একটি চিঠিতে লিখেছেন,

" আপনার কাছি বিষয়টি গোপন নয় যে, সুলাইমান ইবনে সুহাইম এর চিঠি আপনার কাছে পৌছেছে। বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। আপনার ওখানের কিছু বিজ্ঞ আলেম এগুলো সত্যায়ন করেছে এবং তা বিশ্বাসও করেছে। আল্লাহ তায়ালা অবগত রয়েছেন যে, লোকটি আমার নামে অপবাদ রটিয়েছে এবং আমার নামে এমন কথা বলেছে, যা আমি বলিনি। এর অধিকাংশের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

তার কিছু মিথ্যাচার হলো,

১.আমি চার মাজহাবের কিতাবসমূহ বাতিল করে দিয়েছি। আর আমি বলেছি, ছয় শ' বছর যাবৎ মুসলামনরা হকের উপর ছিলো না। আমি না কি ইজতেহাদের দাবী করেছি। সে এও বলেছে যে, আমি তাকলীদ করি না।

২. আমি না কি বলেছি যে, আলেমদের মতানৈক্য অভিশাপ।

৩. বুজুর্গদের ওসিলা করে যারা দুয়া করে তাদেরকে না কি আমি কাফের বলেছি।

৪. আমি না কি ইমাম বুসিরী রহ.কে কাফের বলেছি, তিনি রাসূল স. কে ইয়া আকরামাল খালকি (হে সবচেয়ে সম্মানিত সৃষ্টি) বলার কারণে।

৫.আমি না কি বলেছি, আমার পক্ষে যদি সম্ভব হতো তাহলে আমি রাসূল স. এর কবরের গম্বুজ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতাম।

৬. আমার পক্ষে সম্ভব হলে আমি কা'বার মিজাব পরিবর্তন করে কাঠের মিজাব নির্মাণ করতাম।

৭.আমি না কি রাসূল স. এর কবর জিয়ারতকে হারাম বলেছি। আর আমি পিতা-মাতা ও অন্যান্যদের কবর জিয়ারতকে অস্বীকার করি।

৮. আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম খেলে আমি না কি তাকে কাফের বলেছি।

৯. "আমি না কি ইবনে ফারেজ ও ইবনে আরাবীকে কাফের বলেছি। "

১০. আমি না কি দালাইলুল খাইরাত ও রওজুর রয়্যাহিন নামক কিতাব দুটি পুড়িয়েছি। এবং রওজুর রয়্যাহিন এর নাম রেখেছি রওজুশ শায়াতিন।

"এসব মাসআলা সম্পর্কে আমার উত্তর হলো, আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, নিশ্চয় এগুলো মারাত্মক অপবাদ। "

[আদ-দুরারুস সুন্নিয়া, খ.১, পৃ.৩৩-৩৪]

মূল বইয়ের ডাউনলোড লিংক:

http://archive.org/download/WAQ41814/01_41814.pdf

http://www.waqfeya.com/book.php?bid=7836

—- ত্রয়োদশ শতক এবং তার পরে ইসলামি আইনে অতীত ইতিহাসের প্রতি অন্ধ শ্রদ্ধার জন্য যে অতি সংগঠনের প্রবণতা দেখা গিয়েছিল, যা ছিল ইসলামের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের বিরোধী; পরিণতিতে আহ্বান করেছিল ইবনে তাইমিয়ার প্রতিক্রিয়া, ইসলামের অক্লান্ত লেখক এবং ধর্মপ্রচারক, যার জন্ম হয়েছিল ১২৬৩ খৃ: বাগদাদের পতনের পাচ বছর পর। ইবনে তাইমিয়া নিজের জন্য ইজতিহাদের স্বাধীনতা দাবি করে এই গোষ্ঠীসমূহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ উত্থাপন করেন, এবং নতুন করে শুরু করার উদ্দেশ্যে প্রথম নীতিতে ফিরে গিয়েছিলেন, ইবনে হাজামের মত যিনি জাহিরি আইনের প্রতিষ্ঠাতা হানাফি মাযহাব এর উদাহরণ এবং ইজমার দ্বারা বিচার পদ্ধতি বাতিল করেছিলেন। কারণ তিনি ভেবেছিলেন চুক্তি কুসংস্কারের ভিত্তি এবং নি:সন্দেহে তার সময়ের জরাজীর্ণ নৈতিক এবং বৌদ্ধিক পরিস্থিতি বিচার করে তিনি ঠিকই করেছিলেন। ষোড়শ শতাব্দীতে সুয়ূতী ইজতিহাদের একই একই সুবিধা দাবি করেন যার সাথে তিনি যুক্ত করেছিলেন প্রত্যেক শতাব্দীর শুরুতে নবীয়কারকের ধারণা। ইবনে তাইমিয়ার শিক্ষার মূলকথা প্রকাশ পায় বিশাল সম্ভাবনাযুক্ত এক বিপ্লবে যার শুরু হয়েছিল অষ্টাদশ শতকে নজদেও বালুকা থেকে; ম্যাকডোনাল্ড বর্ণনা করেছিলেন, “ক্ষয়শীল ইসলাম জগতে পরিচ্ছন্নতম স্থান” এটি ছিল প্রকৃতপক্ষে আধুনিক ইসলাম জীবনে প্রথম হৃদস্পন্দন, এই বিপ্লবের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনুপ্রেরণা ছিল এশিয়া এবং আফ্রিকায় সমস্ত বৃহৎ মুসলিম বিপ্লব যেমন, সেনুসী বিপ্লব, প্যান-ইসলামিক বিপ্লব, কবি বিপ্লব, যা কেবলমাত্র আরবীয় প্রগতিবাদের পার্সি পতিক্রিয়া। বিখ্যাত পিউরিটান সংস্কারক মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী, যিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৭০০ খৃ: শিক্ষা লাভ করেছিলেন মদীনায় এবং ভ্রমন করেছিলেন পার্সিয়াতে, শেষ পর্যন্ত সমগ্র ইসলাম জগতে তার আত্মার আগুন ছড়িয়ে দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন গাজ্জালীর শিষ্য মুহাম্মদ ইবনে তুমারাত এরম ত, যিনি ছিলেন ইসলামের বার্বার পিউরিটান সংস্কারক, মুসলিম স্পেনের ধ্বংসের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তাকে নতুন অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। ———(ইসলামে ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন - আল্লামা ইকবাল রহ.)

RAND কর্পোরেশন হলো আমেরিকার একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান এবং এর কাজ হলো আমেরিকার সমরনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, কৌঁসুলি ও অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণী বা থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে গবেষণা করা। এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত তর্কবিতর্কের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের মার্কিন নীতি বা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

RAND Corporation-এর ইসলাম নিয়ে মহাপরিকল্পনার একটা নথি থেকে তুলে দেয়া লেখাটা পড়লেই যে কেউ বুঝতে পারবেন, সুফিবাদীরা কার হয়ে কাজ করছেন। :

"Encourage those with a greater affinity to modernism, such as the Hanafi law school, versus others. Encourage them to issue religious opinions and popularize these to weaken the authority of backward Wahhabi inspired religious rulings. This relates to funding: Wahhabi money goes to the support of the conservative Hanbali school. It also relates to knowledge: More-backward parts of the Muslim world are not aware of advances in the application and interpretation of Islamic law.

— Encourage the popularity and acceptance of Sufism."

There is no question that contemporary Islam is in a volatile state, engaged in an internal and external struggle over its values, its identity, and its place in the world. Rival versions are contending for spiritual and political dominance. This conflict has serious costs and economic, social, political, and security implications for the rest of the world. Consequently, the West is making an increased effort to come to terms with, to understand, and to influence the outcome of this struggle.

Clearly, the United States, the modern industrialized world, and indeed the international community as a whole would prefer an Islamic world that is compatible with the rest of the system: democratic, economically viable, politically stable, socially progressive, and follows the rules and norms of international conduct. They also want to prevent a “clash of civilizations” in all of its possible variants—from increased domestic unrest caused by conflicts between Muslim minorities and “native” populations in the West to increased militancy across the Muslim world and its consequences, instability and terrorism. It therefore seems judicious to encourage the elements within the Islamic mix that are most compatible with global peace and the international community and that are friendly to democracy and modernity. However, correctly identifying these elements and finding the most suitable way to cooperate with them is not always easy.

Islam’s current crisis has two main components: a failure to thrive and a loss of connection to the global mainstream. The Islamic world has been marked by a long period of backwardness and comparative powerlessness; many different solutions, such as nationalism, pan-Arabism, Arab socialism, and Islamic revolution, have been attempted without success, and this has led to frustration and anger. At the same time, the Islamic world has fallen out of step with contemporary global culture, an uncomfortable situation for both sides. Muslims disagree on what to do about this, and they disagree on what their society ultimately should look like. We can distinguish four essential positions:

x Civil Democratic Islam: Partners, Resources, and Strategies

• Fundamentalists reject democratic values and contemporary Western culture. They want an authoritarian, puritanical state that will implement their extreme view of Islamic law and morality. They are willing to use innovation and modern technology to achieve that goal.

• Traditionalists want a conservative society. They are suspicious of modernity, innovation, and change.

• Modernists want the Islamic world to become part of global modernity. They want to modernize and reform Islam to bring it into line with the age.

• Secularists want the Islamic world to accept a division of church and state in the manner of Western industrial democracies, with religion relegated to the private sphere. These groups hold distinctly different positions on essential issues that have become contentious in the Islamic world today, including political and individual freedom, education, the status of women, criminal justice, the legitimacy of reform and change, and attitudes toward the West.

The fundamentalists are hostile to the West and to the United States in particular and are intent, to varying degrees, on damaging and destroying democratic modernity. Supporting them is not an option, except for transitory tactical considerations. The traditionalists generally hold more moderate views, but there are significant differences between different groups of traditionalists. Some are close to the fundamentalists. None wholeheartedly embraces modern democracy and the culture and values of modernity and, at best, can only make an uneasy peace with them. The modernists and secularists are closest to the West in terms of values and policies. However, they are generally in a weaker position than the other groups, lacking powerful backing, financial resources, an effective infrastructure, and a public platform. The secularists, besides sometimes being unacceptable as allies on the basis of their broader ideological affiliation, also have trouble addressing the traditional sector of an Islamic audience.

Traditional orthodox Islam contains democratic elements that can be used to counter the repressive, authoritarian Islam of the fundamentalists, but it is not suited to be the primary vehicle of democratic Islam. That role falls to the Islamic modernists, whose effectiveness, however, has been limited by a number of constraints, which this report will explore.

To encourage positive change in the Islamic world toward greater democracy, modernity, and compatibility with the contemporary international world order, the United States and the West need to consider very carefully which elements, trends, and forces within Islam they intend to strengthen; what the goals and values of their various potential allies and protégés really are; and what the broader consequences of advancing their respective agendas are likely to be. A mixed approach composed of the following elements is likely to be the most effective:

Summary xi

• Support the modernists first:

— Publish and distribute their works at subsidized cost.

— Encourage them to write for mass audiences and for youth.

— Introduce their views into the curriculum of Islamic education.

— Give them a public platform.

— Make their opinions and judgments on fundamental questions of religious interpretation available to a mass audience in competition with

those of the fundamentalists and traditionalists, who have Web sites, publishing houses, schools, institutes, and many other vehicles for disseminating their views.

— Position secularism and modernism as a “counterculture” option for disaffected Islamic youth.

— Facilitate and encourage an awareness of their pre- and non-Islamic history and culture, in the media and the curricula of relevant countries.

— Assist in the development of independent civic organizations, to promote civic culture and provide a space for ordinary citizens to educate themselves about the political process and to articulate their views.

• Support the traditionalists against the fundamentalists:

— Publicize traditionalist criticism of fundamentalist violence and extremism; encourage disagreements between traditionalists and fundamentalists.

— Discourage alliances between traditionalists and fundamentalists.

— Encourage cooperation between modernists and the traditionalists who are closer to the modernist end of the spectrum.

— Where appropriate, educate the traditionalists to equip them better for debates against fundamentalists. Fundamentalists are often rhetorically superior, while traditionalists practice a politically inarticulate “folk Islam.” In such places as Central Asia, they may need to be educated and trained in orthodox Islam to be able to stand their ground.

— Increase the presence and profile of modernists in traditionalist institutions.

xii Civil Democratic Islam: Partners, Resources, and Strategies

— Discriminate between different sectors of traditionalism. Encourage those with a greater affinity to modernism, such as the Hanafi law school, versus others. Encourage them to issue religious opinions and popularize these to weaken the authority of backward Wahhabi inspired religious rulings. This relates to funding: Wahhabi money goes to the support of the conservative Hanbali school. It also relates to

knowledge: More-backward parts of the Muslim world are not aware of advances in the application and interpretation of Islamic law.

— Encourage the popularity and acceptance of Sufism.

• Confront and oppose the fundamentalists:

— Challenge their interpretation of Islam and expose inaccuracies.

— Reveal their linkages to illegal groups and activities.

— Publicize the consequences of their violent acts.

— Demonstrate their inability to rule, to achieve positive development of their countries and communities.

— Address these messages especially to young people, to pious traditionalist populations, to Muslim minorities in the West, and to women.

— Avoid showing respect or admiration for the violent feats of fundamentalist extremists and terrorists. Cast them as disturbed and cowardly, not as evil heroes.

— Encourage journalists to investigate issues of corruption, hypocrisy, and immorality in fundamentalist and terrorist circles.

— Encourage divisions among fundamentalists.

• Selectively support secularists:

— Encourage recognition of fundamentalism as a shared enemy, discourage secularist alliance with anti-U.S. forces on such grounds as nationalism and leftist ideology.

— Support the idea that religion and the state can be separate in Islam too and that this does not endanger the faith but, in fact, may strengthen it. Whichever approach or mix of approaches is chosen, we recommend that it be done with careful deliberation, in knowledge of the symbolic weight of certain issues; the meaning likely to be assigned to the alignment of U.S. policymakers with particular positions on these issues; the consequences of these alignments for other Islamic actors, including the risk of endangering or discrediting the very groups and people we are seeking to help; and the opportunity costs and possible unintended consequences of affiliations and postures that may seem appropriate in the short term.

বই: সংস্কারধর্মী ওহহাবী আন্দোলন সম্পর্কিত এক ঐতিহাসিক ভ্রান্তির নিরসন - http://i-onlinemedia.net/archives/4423

নজদ থেকে শয়তানেরে শিং বের হবে হাদীসের ব্যাখ্যা -

Reply to Najd Hadith: East refers to IRAQ Not Saudi Arabia

http://www.systemoflife.com/articles/refutation/364-reply-to-najd-hadith#i

https://www.youtube.com/watch?v=R2-RVln1BDY

http://www.markajomar.com

https://www.facebook.com/pages/Principal-NurunNabi/226066450926065?fref=ts

https://www.facebook.com/salam78/videos/802643573082296/

প্রচলিত জাল হাদীস-বই

য’ইফ ও জাল হাদীস সিরিজ (বই)

সুন্নাত ও বিদ'আত (বই)

হাদিসের নামে জালিয়াতী

বুখারী ও মুসলিম শরীফও কি জ্বাল হাদীস মুক্ত নয় ? - https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=1596037837329036&id=100007685058871&pnref=story

কুরআন ও সহিহ হাদিসের মানদন্ডে সুফীবাদ

ইসলামী রাষ্ট্র বিহীন ইসলাম কোন ইসলামই নয় : পর্ব-০৫ - ভারসাম্যহীন সুফী মতবাদের অনুপ্রবেশhttp://www.somewhereinblog.net/blog/sohel007/29777401

https://www.facebook.com/notes/md-asad/%E0%A6%AA%E0%A7%80%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0-vs-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE/1075749049123786

ইত্তিহাদ মায়াল ইখতিলাফ (সকল ইসলামী দলের ঐক্য চাই)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে

৭১ এর যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস