মৌদুদীবাদ কী ?

https://najibullahbd.blogspot.com/2024/12/blog-post.html?m=1

দেশে যে মাযহাবের
লোকংখ্যা বেশী সে মাযহাব অনুযায়ী
সেখানে শাসন ব্যবস্থা হওয়াই
স্বাভাবিক’ ।[ সাপ্তাহিক সোনার বাংলা
(ঢাকা) ৩১শে জানুয়ারী ১৯৮৬ প্রশ্নোত্তর
আসর; অধ্যাপক গোলাম আযম, প্রশ্নোত্তর
(ঢাকা: গ্রন্থমালঞ্চ ১৯৯৮) পৃঃ ১৮২।



মৌদুদী রহ. সহ কোনো ইমামকেই জামায়াত ভুলের উর্ধে মনে করে না (নবি কারীম স. বাদে সকলেই ভুল করেছেন ও করবেন - ইমাম শাফেয়ী) তাই জামায়াত মৌদুদী রহ সহ কোনো ইমামেরই একক তাকলীদ,করেনা, এটি মওদুদী রহ. নিজেই নিষেধ করে দিয়ে গেছেন, এমতাবস্থায় ওলামায় দেওবন্দ যদি জামায়াতকে মওদুদীবাদ নামে নাম করণ করে থাকেন সেটি কি একটি মিত্থা তোহমত নয়? জামাতের লক্ষ উদ্দেশ্য মওদুদী/কোনো একক ইমামের ভুল/শুদ্ধ কোনো কিছুকে রাষ্ট্রিয় ভাবে প্রতিষ্ঠা করা নয় বরং হানাফী মাজহাব দিয়ে দেশ পরিচালনা করাই জামায়াতের একমাত্র উদ্দেশ্য, যাকে তারা ইকামতে দীন বলে থাকে ও ওলামায় দেওবন্দ খেলাফত কায়েম বলে অভিহিত করে থাকে, এমতাবস্থায় জামায়াতের ইকামতে দীনের বিরোধীতা করার জন্য জামাত কে মওদুদীবাদ নামে নামকরণ করা কি মুসলিম জনগনকে খেলাফত কায়েমের আন্দলন থেকে দুরে রাখার মুনাফিকী নয়?
মওদূদী মতবাদ বলার আগে আল্লাহকে ভয় করুন!! 
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দলোনে, তিনি মুসলমানদের জন্য আলাদা স্বাধীন ভূখন্ডের দাবীতে   সংগ্রাম করেছেন, যার ফলশ্রুতিতে পাকিস্তানের জন্ম হয়,  এটাই   কি মওদুদী মতবাদ? 
তিনি পাকিস্তানের সংবিধান হিসেবে আল্লাহর কুরআনকে চেয়েছেন, এটা কি মওদূদী মতবাদ? 
তিনি যখন দেখেছেন, মুসলিম লীগের নেতৃত্বে স্বাধীন মুসলিম দেশ পাকিস্থান হলেও  তাদের দ্বারা  পাকিস্তানে দ্বীন কায়েমের কোনই সম্ভাবনা নেই, তখন তিনি জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠা করেন, এটাই কি মওদুদী মতবাদ? 
তিনি ইসলামের প্রায় প্রতিটি দিক ও বিভাগের  উপর বই রচনা করেন। তিনিই  প্রথম কাদিয়ানীদেরকে নবী ও ইসলামের দুশমন হিসেবে চিহ্নিত করে বই রচনা করেন, যার কারণে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ওনাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিলো।  মুসলিম দেশের নেতাদের কঠিন প্রতিবাদের মুখে সেই ফাঁসি রহিত করতে বাধ্য হয়, এটাই কি মওদুদী মতবাদ? 
তিনিই একমাত্র ইসলামিক স্কলার, যিনি  ইসলামের আলোকে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার রূপরেখা প্রদান করেন, যে আলোকে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বহু দেশে , এ পর্যন্ত বহু ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়, এটাই কি মওদুদী মতবাদ? ইক্বামাতে দ্বীনের কাজে  উপমহাদেশের মুসলিম উম্মাহকে তিনিই জাগিয়ে তুলেছেন। তিনিই  কিং সৌদের অনুরোধে, মদীনা  বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক রূপরেখা প্রদান করেন,  এগুলো কি মওদুদী মতবাদ?  আরও আছে অনেক, যা  এখানে বলে শেষ করার মতো নয়।

জামায়াতে ইসলাম ও মাওলানা মৌদুদী :

(১)

দেওবন্দীদের মধ্যে সবচাইতে বড় আলেম এবং চিন্তাবিদ ছিলেন সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.), তিনি তার প্রতিটি বইতে যে দার্শনিকের কবিতা লিপিবদ্ধ করেছেন এবং যার একান্ত ভক্ত ছিলেন তিনি হলেন ভারত উপমহাদেশের সবচাইতে বড় ইসলামী দার্শনিক আল্লামা ইকবাল (র.) আর মুসলিমদের গৌরব এ ইকবাল (র.) কার ভক্ত ছিলেন যানেন ? তিনি আর কেউ নন হযরত সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী (র.)। এবং আল্লামা ইকবাল (র.) তার সম্পদের একটি বড় অংশ দান করেছেন জামায়াতে ইসলামীতে। উল্যেখ্য যে মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত সর্বচ্চে সম্মানের পুরুষ্কার বাদশাহ ফয়সাল পুরুষ্কার সর্বপ্রথম পেয়েছেন মাওলানা মৌদুদী (র.)। এবং এ পুরুষ্কার সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.)ও পেয়েেছেন। এখন কথা হল মাওলানা মৌদুদী (র.) যদি এত বড় আলেমই হন তবে তাকে দেওবন্দী বর্তমান আলেমগণ গোমরাহ বলেন কেন ? দেওবন্দীদের সাথে মাওলানা মৌদূদীর প্রথম বিরোধ বাধে ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান আন্দোলন নিয়ে। দেওবন্দ মাদ্রাসার একমাত্র মুখপাত্র তাদের মাসিক পত্রিকার সম্পাদকের মহান গুরু দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মাওলানা মওদুদীকে (র.) কে। কিন্তু যখন দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হুসাইন আহমদ মাদানী সাহেব পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধীতা করে ফতোয়া দিলেন যে, হিন্দু-মুসলিম এক জাতি, ভারত ভাগ করে মুসলিমদের আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা জায়েজ হবে না, তখন ই তার এ ফতোয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক যুগোপোযোগি ফতোয়া দেন মাওলানা মওদূদী (র.) এবং আল্লামা ইকবাল (র.)। আর তখন ই বেধেগেল মাওলানা মওদূদী (র.) এর সাথে হুসাইন আহমদ মাদানাী (র.) এর বিরোধ। তখন তিনি মাওলানা মওদুদীর বিরোদ্ধে বই লিখেন। তার পরবর্তীতে যত দেওবন্দী আলেম ই মাওলানা মওদুদী (র.) এর বিরোদ্ধে কিতাব লিখেছেন তারা আসলে মাওলানা মওদূদীর কিতাব পড়েই দেখেন নাই, তারা হুসাইন আহমদ মাদানী সাহেবের বইকেই কপি পেষ্ট করে গেছেন এবং সবাই সতর্ক বানী করে গেছেন খবরদার গোমরাহ মওদূদীর কিতাব পড়াও যাবেনা, এখন বলুন আপনি কারো কিতাব না পড়েই তার ভুল ধরতে পারেন ? রাসূল স. এ ব্যাপারে হুসিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন , তুমি মিথ্যাবাদী হবার জন্য এটাই যথেষ্ট যে যা শুন তাই বলে বেড়াও। (বুখারী শরীফ)। পরবর্তীতে মাওলানা মওদূদীর নামে জঘন্য জঘন্য মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে এই দেওবন্দীদের পক্ষ্য থেকে। তার একটি বক্তব্যকে কাট-ছাট করে আংশিক ভাবে বিকৃত করে উপস্থাপন করেছেন তারা। যেমন ভন্ড মারেফতি পীরেরা বলে আল্লাহ বলেছেন- তোমরা নামাজের কাছেও যেও না (আল-কুরআন) কিন্তু তার পরের অংশ নেশাগ্রস্থ অবস্থায় এটা আর বলেনা। তাই আপনাকে মাওলানা মওদূদী (র.) এর ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে হলে তার বই পড়তে হবে। তার ব্যাপারে যে সকল অভিযোগ করা হয় তা জানতে হলে সেই ব্যাপারে তার পূর্ন বক্তব্য কি ছিল তা জানতে হবে, নইলে এ ভাবে এক-দুই লাইন বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করে কুরআন-হাদীস-সলফে সালেহীন সবার নামেই মথ্যাচার করা সম্ভব।

(২)

যখন ঐক্যের কথা বলা হয় তখন দেওবন্দীগণ দাবী করেন মাওলানা মওদূদীর সকল কিতাব বাদ দিতে হবে। যদিও ধরে নেই মাওলানা মওদুদী (র.) তার কিছু কিছু কিতাবে ভুল করেছেন তবে সকল কিতাব বাদ দিতে হবে এটা কেমন অযৌক্তিক দাবী ? ইমাম বুখারী বুখারী শরীফ ছাড়াও আরো কিতাব লিখেছেন যাতে অনেক জাল হাদীস আছে, এখন কি বুখারীকেও বাদ দিতে হবে ? এমন কোন ইমাম, আলেম মুজতাহিদ আছেন যার কোন কিতাবেই ভুল নাই ? জামাত মওদূদী (র.) কিতাব বাদ দিতে পারেনা এ জন্য যে, তিনি আধুনিক জাহেলিয়্যাত তথা বর্তমান ইসলাম বিরোধী যে সকল পাশ্চাত্য চিন্তু-দর্শন ও মতবাদ রয়েছে যেমন সেকুলারিজম, কমিউনিজম, সোসালিজম, কেপিটালিজম ইত্যাদি এ সকল অমুসলিম জীবন দর্শনের বিরুদ্ধে ইসলাম কে সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ পূর্নাঙ্গ জীবন দর্শন হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছেন মাওলানা মওদূদী (র.) এজন্যই দেওবন্দী আলমদের চাইতেও মাওলানা মওদূদীর বড় শত্রু হল ইহুদী-খৃষ্টান ও নাস্তিকেরা। তাই মাওলানা মওদূদীর এ সকল কিতাব বাদ দেয়ার তো প্রশ্নই উঠেনা বরং এ সকল বই ছাড়া বর্তমানে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের মোকাবেলা করাই অসম্ভব।

এখন কথা হল ইসলামের আভ্যন্তরীন ইখতেলাফি ব্যাপারগুলো নিয়ে মাওলানা মওদুদী যে সকল মত পোষণ করতেন যেমন মাজহাব, সুফিবাদ ইত্যাদী ব্যাপারে এ সকল ব্যাপারে জামাতের অবস্থান কি ? এ ব্যাপারে জামায়াত স্পষ্ট ভাবেই জানিয়ে দিয়েছে যে এগুলো তার ব্যাক্তিগত ইজতিহাদ ও মত এগুলো জামায়াতের উপরে চাপিয়ে দেয়া হয় নাই। তাই জামায়াতে কোন ফেরকাবাজি-ফেতনাবজি নেই। মাজহাবী-লা মাজহাবী-সুফিবাদী-সালাফি সবার জন্যই জামায়াতের দরজা খোলা। যারাই এ দেশের নাস্তিক্যবাদী শক্তির বিলোপ চায় এবং কুরআনের আইন দ্বারা দেশ চালাতে চায় তাদের সবার জন্যই জামায়াতের দরজা খোলা। আর এ কারনেই জামায়াতে সকল মত-পথ ও ফেরকার লোকগণ রয়েছেন। নিচে এ ব্যাপারে জামায়াতের অবস্থান বিস্তারিত ভাবে দলীল সহ দেয়া হল।

যখনই জামাতে ইসলামকে সমর্থন করার কথা উঠে তখনই তারা মাওলানা মৌদুদীর প্রসঙ্গ টেনে এনে ঐক্যের পথে বাধা সৃষ্টি করে। অথচ তারা যেভাবে মুরব্বি চেতনায় উদ্ভুদ্ধ থাকে জামাত কখন সেভাবে মৌদুদীর নামটাও উচ্চারন করেনা তাদের কোন সভা-সমাবেশ বা সেমিনারে। জামাতের বাইশ দফার মাঝে কোথাও মৌদুদীর নামও উল্যেখ নেই। জামাতের মূল লক্ষ্য হলো দেশে কুরআনের আইন চালু করা। তাদের মুলনীতির বা মেনুফেষ্টার কোথাও মৌদুদীর নামও নেই। জামাতের প্রথম মূলনীতি দেশে আল্লাহর সারভোভৌমত্ব তথা আল্লাহর আইন চালু করার উল্লেখ থাকায় আওয়ামি নাস্তিক কোর্ট জামাতকে এ দেশের সংবিধান অস্বিকারকারী হিসেবে নিষিদ্ধ করার ঘোষনা দিয়েছে, তারপরেও কেউ যদি বলে যে জামাত ইসলামী দল নয়, তবে তার ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের মাত্র সহজেই অনুমেয়। জামাতের মূলনীতি গুলো হলো – ১. দেশের সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ। ২. দেশের আইন আলকুরআন ও আস্সুন্নাহর ভিত্তিতে রচিত হবে। ৩. রাষ্ট্র ইসলামী আদর্শ ও নীতিমালার উপর সংস্থাপিত হবে। ৪. রাষ্ট্র মা‘রুফ প্রতিষ্ঠা করবে এবং মুনকার উচ্ছেদ করবে। ৫. রাষ্ট্র মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য সম্পর্ক মজবুত করবে। ৬. রাষ্ট্র সকল নাগরিকের মৌলিক প্রয়োজন পূরণের গ্যারান্টি দেবে। ৭. রাষ্ট্র শারীয়াহর নিরিখে নাগরিকদের সকল অধিকার নিশ্চিত করবে। ৮. আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। ৯. স্বীকৃত মাযহাবগুলো আইনের আওতায় পরিপূর্ণ দীনী স্বাধীনতা ভোগ করবে। ১০. অমুসলিম নাগরিকগণ আইনের আওতায় পার্সোনাল ল’ সংরক্ষণ ও পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। ১১. রাষ্ট্র শারীয়াহ কর্তৃক নির্ধারিত অমুসলিমদের অধিকারগুলো নিশ্চিত করবে। ১২. রাষ্ট্রপ্রধান হবেন একজন মুসলিম পুরুষ। ১৩. রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হবে। ১৪. রাষ্ট্রপ্রধানকে পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি মাজলিসে শূরা থাকবে। ১৫. রাষ্ট্রপ্রধান দেশের শাসনতন্ত্র সাসপেন্ড করতে পারবেন না। ১৬. সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাষ্ট্রপ্রধানকে পদচ্যুত করা যাবে। ১৭. রাষ্ট্রপ্রধান তাঁর কাজের জন্য মাজলিসে শূরার নিকট দায়ী থাকবেন এবং তিনি আইনের ঊর্ধ্বে হবেন না। ১৮. বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন হবে। ১৯. সরকারী ও প্রাইভেট সকল নাগরিক একই আইনের অধীন হবে। ২০. ইসলামবিরোধী মতবাদের প্রচারণা নিষিদ্ধ হবে। ২১. দেশের বিভিন্ন অঞ্চল একই দেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক ইউনিট বলে গণ্য হবে। ২২. আলকুরআন ও আস্সুন্নাহর পরিপন্থী শাসনতন্ত্রের যেই কোন ব্যাখ্যা বাতিল বলে গণ্য হবে।

মাওলানা মওদুদী (রহ) এর ব্যপারে জামায়াত এর দৃষ্টিভংগি-১

নিজের ব্যপারে মাওলানা মওদুদীর অবস্থানঃ
" পরিশেষে একটি কথা পরিষ্কার করে দিতে চাই, ফিকাহ ও ইলমে কালামের বিষয়ে, আমার নিজস্ব একটি তরিকা রয়েছে। আমার ব্যক্তিগত অনুসন্ধান, গবেষণার ভিত্তিতে আমি এটি নির্ণয় করেছি। গত আট বছর যারা "তারজামানুল কুরআন পাঠ করেছেন তারা একথা ভালোভাবেই জানেন। বর্তমানে এই সংগঠনের আমীরের পদে আমাকে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। কাজেই একথা পরিষ্কার ভাবে বলে দিতে হচ্ছে যে- ফিকাহ ও ইলমে কালামের ব্যপারে, ইতিপূর্বে আমি যা লিখেছি এবং ভবিষ্যতে যা লিখবো অথবা বলবো তা জামায়াতে ইসলামীর আমীরের ফয়সালা হিসেবে গন্য হবে না। বরং তা হবে আমার ব্যক্তিগত মত। এইসব বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত রায়কে,

জামায়াত এর অন্যান্য আলেম বা গবেষক দের উপর চাপিয়ে দিতে আমি চাইনা! এবং আমি এও চাই না যে, জামায়াত এর পক্ষ থেকে, আমার উপর এমন সব বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে যে, যার ফলে ইলমের ক্ষেত্রে, আমার গবেষণা করার এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া হবে। জামায়াতের সদস্যদের কে আমি আল্লাহর দোহাই দিয়ে অনুরোধ করছি যে,

ফিকাহ ও কালাম শাস্ত্র সম্পর্কিত আমার কথাকে, আপনারা কেউ অন্যের সম্মুখে প্রমান স্বরুপ পেশ করবেন না। অনুরুপ ভাবে আমার ব্যক্তিগত কার্যাবলীকেও, যেগুলোকে আমি নিজের অনুসন্ধান ও গবেষণার পর জায়েয মনে করেছি, অন্য কেউ যেন প্রমান স্বরুপ গ্রহন না করে, এবং নিছক আমি করেছি বলেই যেন বিনা অনুসন্ধান এ তার অনুসারী না হন।

এ ব্যপারে প্রত্যেকের পুর্ন স্বাধীনতা রয়েছে। উপরন্তু এ ব্যপারে আমার বিপরীত মত পোষন করার এবং নিজেদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রত্যেকের রয়েছে" -

(জামায়াতে ইসলামীর কার্যবিবরনী-১মখন্ড, ২৮ পৃষ্টা)

'আমি মহান আল্লাহর খাতিরে জামায়াতের রুকনদের এ উপদেশ দিচ্ছি যে, কোনো ব্যক্তিই যেন ফিকহি বা আকিদাগত বিষয়াবলিতে আমার কথাকে অন্যদের সামনে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন না করে। একইভাবে আমার ব্যক্তিগত আমলকেও কেউ যেন দলিল হিসেবে পেশ না করে।' [রোয়েদাদে জামায়াতে ইসলামি : ১/৩৪]
 
'আমি এ বিষয়টি স্পষ্ট করে দিতে চাই, আমি না কোনো ধর্মীয় অবস্থান দাবি করছি আর না আমার নিজের ব্যক্তিসত্তার দিকে কোনো প্রকার আহ্বান করছি। এ কারণে শুরু থেকেই আমার নিজের ওপর বিশ্বাস স্থাপনকারী কোনো ব্যক্তি নেই।' [রাসায়েল ও মাসায়েল : ৪/২৯৭]
  


জামায়াতে ইসলামী ও মাওলানা মওদুদী (রঃ) :
ইকামাতে দ্বীনের উদ্দেশ্যে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করা উচিত কিনা তা যোগদানকারীর বিবেচনার বিষয়। এ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মওলানা সাইয়েদ আবুল আল মওদূদী (রঃ)। তিনি দুনিয়ায় এখন না থাকলেও যেহেতু তার তাঁর সাম্পর্কে নানা কথা প্রচলিত আছে,সেহেতু বর্তমান জামায়াতে ইসলামের সাথে মরহুমের কি সম্পর্ক সে বিষয়ে কিছু যরুরী কথা পেশ করছিঃ

একঃ মাওলানা সাইয়েদ আবুল আল মওদুদী (রঃ) আজীবন একথার উপর জোর দিয়েছেন যে,আল্লার রাসূল (সঃ) ছাড়া আর কোন ব্যক্তিকে অন্ধভাবে মানা উচিত নয়। একমাত্র রাসূলই ওহী দ্বারা পরিচালিত হবার করণে নির্ভূল। অন্য কেউ ভূলের ঊর্ধে নয়। সুতারাং মাওলানা আবুল আল মওদুদী (রঃ)কোন কথাকেই রাসূলের কষ্টি পাথরে যাচাই না করে আমি মানতে রাজি নই। কুরআন ও সুন্নার বিচারে তার মাতামত যতটুকু গ্রহনযোগ্য মনে হয় আমি ততটুকু গ্রহন করি। এটাই জামায়াতে ইসলামের নীতি। ১৯৪১ সালে যখন তিনি জামায়াতের আমীর নির্বাচিত হন তখনি তিনি নিন্মরূপ ঘোষনা দেনঃ “ পরিশেষে একটি কথা পরিষ্কার করে দিতে চাই। ‘ফিকাহ’ ও ইলমে কালামের বিষয়ে আমার নিজস্ব একটি তরীকা আছে। আমার ব্যক্তিগত অনুসন্ধান গবেষনার ভিত্তিতে আমি এটি নির্নয় করেছি। গত আট বছর যারা তারজুমানুল কুরআন’ পাঠ করেছেন তারা এ কথা ভালভাবেই জানেন। বর্তমানে এ জামায়াতের আমীর পদে আমাকে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। কাজেই এ কথা আমাকে পরিষ্কারভাবে বলে দিতে হচ্ছে যে,ফিকাহ ও কালামের বিষয়ে ইতিপূর্বে আমি যা কিছু লিখেছি একং ভবিষ্যতে যা কিছু লিখব অথবা বলবো তা জামায়াতে ইসলামীর আমীরের ফয়সালা হিসেবে গন্য হবে না বরং হবে আমার ব্যক্তিগত মত। এসব বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত রায়কে জামায়াতের অন্যান্য আলেম ও গবেষকদের উপর চাপিয়ে দিতে আমি চাই না এবং আমি এও চাইনা যে,জামায়াতের পাক্ষ থেকে আমার উপর এমন সব বিধি- নিষেধ আরোপ করা হবে যার ফলে ইলমের ক্ষেত্রে,আমার গবেষনা করার এবং মতামত প্রকাশ করার স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়া হবে। জামায়াতের সদস্যদেরকে (আরকান) আমি আল্লার দোহাই দিয়ে নির্দেশ দিচ্ছি যে,ফিকাহ ও কালাম শাস্ত্র সম্পর্কিত আমার কথাকে আপানারা কেউ অন্যের সম্মুখে প্রমান স্বরূপ প্রকাশ করবেন না। অনুরূপভাবে আমার ব্যক্তিগত কার্যাবলীকেও—- যেগুলোকে আমি নিজের অনুসন্ধান ও গবেষনার পর জায়েয মনে করেছি—-অন্য কেউ যেন প্রমান স্বরূপ গ্রহন না করেন এবং নিছক আমি করেছি এবং করেছি বলেই যেন বিনা অনুসন্ধানে তার অনুসারী না হন। এব্যপারে প্রত্যেকের পূর্ন স্বাধীনতা রয়েছে। যারা যারা ইলম রাখেন,তারা নিজেদের গবেষনা অনুসন্ধান মুতাবিক আর যারা ইলম রাখেন না,তারা যারা ইলমের উপর আস্থা রাখেন,তার গবেষনা অনুসন্ধান মুতাবিক কাজ করে যান। উপরোন্তু এ ব্যপারে আমার বিপরীত মত পোষন করার এবং নিজেদের মত প্রকাশ করার স্বাধীনতা প্রত্যেকের রয়েছে। আমরা প্রত্যেকেই ছোটখাট এবং খুঁটিনাটি ব্যপারে বিভিন্ন মতের অধিকারী হয়ে পরস্পরের মুকাবিলায় যুক্তি প্রমান পেশ করে এবং বিতর্কে অবতীর্ন হয়েও একই জামায়াতের অন্তর্ভূক্ত থাকতে পারি—যেমন সাহাবেয়ে কেরাম রাযিয়ল্লাহ আনহু ছিলেন।

দুইঃ জামায়াতে ইসলামীতে হানাফি মাযাহাব ও আহালে হাদীসের অনুসারী ব্যক্তির সমাবেশ রয়েছে। এ জামায়াতে আহালে সুন্নাহ আল জামায়াতের যে কোন মাযহাবের লোক শামিল হতে পারে। জামায়াতে ইসলামী একটি জামায়াত হিসেবে কোন এক মাযাকহাবের ফেকাহ মানতে বাধ্য করে না। যরা জামায়াতে যোগ দান করে তারা তাদের মাযহাবের অনুসরন করে। মাওলানা মওদূদী হানাফি মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু জামায়াতের মধ্যে আহলে হাদীসের লোকও রয়েছে।

তিনঃ জামায়াতের সবাই ইসলাম সম্পর্কে অতীত ও বর্তমান সকল লেখকের বই থেকে স্বাধীন ভাবে মতামত গ্রহন করার পূর্ন স্বাধীনতা রয়েছে। প্রচীন ও আধুনিক তাফসীর,হাদীস ও ফেকহ ইত্যাদি থেকে জ্ঞান অর্জন করতে গিয়ে প্রত্যেকের স্বাধীনভাবে আপন মতামত স্থির করার অধিকার রয়েছে। মওলানা মওদুদী (রঃ)চিন্তার স্বাধীনতার উপর এত গুরুত্ব দিয়েছেন বলেই তাকে অন্ধভাবে অনুসরনের কোন আশংকা নেই।

চারঃ জামায়াতে ইসলামী মওলানা মওদুদী (রঃ)-কে ফেকাহ বা আকায়েদের ইমাম মনে করে না। তাঁর ইজতেহাদকে মেনে নেয়াও জামায়াতের কোন নীতি নয়। জাময়াতে ইসলামীর নিকট মওলানা মওদুদী (রঃ)তিনটি কারনে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। (ক) এ যুগে মওলানা মওদুদীর সাহিত্য ইসলামকে একমাত্র পূর্ণংগ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে পেশ করে দ্বীন ইসলামের সঠিক মর্যাদা বহাল করেছেন। ইসলাম সুধু ধর্মীয় ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ বলে সমাজে যে ভূল ধারনা ছিল তা তাঁর লেখা বিপুল সংখ্যক বই পুস্তকের মাধ্যমে মানুষ বুঝতে শিখেছে। এ উপমহাদেশে ইসলামের এ ব্যপক ধারনা এমন স্পষ্ট ছিল না। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্রেই আল্লার দাসত্ব ও নবীর আনুগত্য করা যে ইসলামের দাবী একথা উপমহাদেশের মানুষের নিকট তিনিই স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। কুরআন ও সুন্নাহ যে গোটা মানব জীবনের জন্য একমাত্র সঠিক ব্যপক হেদায়াত একথা তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। (খ) দ্বীন ইসলামকে বাস্তবে মানব সমাজে কায়েম করা যে মুসলমানের প্রধান দ্বায়ীত্ব একথা মওলানা মওদুদী (রঃ) অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে পেশ করেছেন। শুধু তা-ই নয়,এ শতাব্দীতে তিনিই ইকামাতে দ্বীনের ডাক দিয়ে এ উপমহাদেশে পয়লা বাতিলের বিরূদ্ধে জামায়াতবদ্ধ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ইকামাতে দ্বীনের এ ডাকে যারা সাড়া দিয়েছেন এবং দিচ্ছে তারা আন্দোলনের গুরুত্ব অনুভব করেই যামায়াতবদ্ধ হওয়া ফরয মনে করছে। তিনি ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য এ জাতীয় আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বলেই গোটা উপমাহাদেশে ইসলাম আজ একটি বিপ্লবী আন্দোলনে পরিনত হয়েছে। এমনকি আধুনিক শিক্ষিত ও ছাত্র মহলে পর্যন্ত ইসলামী জাগরনের সাড়া পরে গেছে। (গ) মুসলিমদেরকে বিজ্ঞান সম্মত পন্থায় সুসংগঠিত করার জন্য মওলানা মওদুদী (রঃ) যে সাংগঠনিক প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন তা এ যুগে অতুলনীয়। আধুনিক যুগে বাতিল পন্থিদের মযবুত সংগঠনের সাথে পাল্লা দিয়ে মুসলমানদেরকে একটা সুশৃঙ্খল শক্তিতে পরিনত করার জন্য তিনি যে সাংগঠনিক কাঠামো ও কর্ম কৌশল দান করেছেন এর ফলে তার দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া সত্বেও সংগঠন কোন দিক দিয়ে দুর্বল হবার আশংকা নেই। জামায়াতে ইসলামী মাওলানা মওদূদী (রঃ)-কে অতি মানব বা এমন কোন সত্তা মনে করে না যা অন্ধভক্তির সৃষ্টি করতে পারে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে ভক্তির বাড়াবাড়ি খতম করার জন্য সারা জীবন তিনি যে চেষ্টা করে গেছেন তার ফলে তার মধ্যে বহু দুষ্প্রাপ্য গুনের সমাবেশ থাকা সত্বেও মাওলানাকে জামায়াত কোন প্রকার অতি ভক্তি মর্যাদা দেয়নি। অবশ্য মাওলানা মওদূদী (রঃ)-কে এ যুগের শ্রেষ্টতম ইসলামী চিন্তাবিদ,সাহিত্যিক ও মুজাহিদ হিসেবে এবং আধুনিক জাহিলিয়াত বা ইসলাম বিরোধি মতবাদের বলষ্ট প্রতিরোধকারী ব্যক্তিত্ব বলে দুনিয়ার চিন্তাশীল মহল অকুন্ঠভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ সত্বেও জামায়াতে ইসলাম মাওলানার ব্যক্তিত্বকে মানুষের কাছে বড় করে তুলে ধরা ইসলামী আন্দোলনের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন নি। মাওলানা এ বিষয়ে এত সজাগ ছিলেন যে,মাওলানার জন্ম দিবস পালন করতে তিনি অনুমতি দেননি। তার ইন্তেকালের পরও উপমহাদেশের কোথাও তার জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন করা হচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশ,ভারত,পকিস্তান ও শ্রীলংকায় জাময়াতি ইসলামী প্রকাশ্য সংগঠন হিসেবেই আছে। কিন্তু কোথাও মাওলানা মওদূদী (রঃ)- এর ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরা হচ্ছে না। মাওলানা মওদূদী (রঃ)আধুনিক যুগের সমস্যা ও মানব রচিত বিভিন্ন সমাধানের বিশ্লেষন করে কুরআন ও হাদীসের আলোকে ঐসব সমাধানের ত্রুটি স্পষ্টভাবে ধরিয়ে দিয়ে ইসলামের সমাধান যেরূপ যোগ্যতার সাথে পেশ করেছেন তাতে আমাদের মতো আধুনিক শিক্ষিত লোকের পক্ষে ইসলামকে বুঝা সহজ হয়েছে। এজন্য মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর রচিত ইসলামী সাহিত্য ছাড়া আধুনিক যুগে ইসলামী আন্দোলন করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তাই জামায়াতে ইসলামী তাঁর বই থেকে ফায়দা হাসিল করতে বাধ্য হচ্ছে। মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর প্রচার যদি উদ্দেশ্য হতো তাহলে তাঁর জন্ম ও মুত্যু দিবস অবশ্যই পালন করা হতো মাওলানা মওদূদী (রঃ) যাকে একমাত্র নেতা হিসেবে জীবনের সর্বক্ষেত্রে মেনে চলার শিক্ষা দিয়ে গেছেন সেই বিশ্ব নবীই জামায়াতে ইসলামীর আসল নেতা। মাওলানা মওদূদী (রঃ)যখন জামায়াতের আমীর ছিলেন তখন তাঁর প্রতি কখনও অতিভক্তি দেখান হয়নি। তার প্রকৃত মর্যাদা একমাত্র আল্লাহ পাকই দিতে পারেন। দুনিয়ায় তার মর্যাদা বাড়াবার কোন দায়ীত্ব জামায়াত গ্রহন করেনি। পাঁচঃ প্রায় সাত বছর আরব দুনিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশের বড় বড় ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরামের সাথে আমার সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে। আমি তাদের সবাইকে মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর অত্যন্ত ভক্ত পেয়েছি। মাওলানা মওদূদী (রঃ)-কে এ যুগের শ্রেষ্টতম ইসলামী চিন্তাবিদ বলেই সবাই স্বীকৃতি দিয়েছেন। পাক-ভারত- বাংলার বাইরে কোন ইসলামী ব্যক্তিত্বই মাওলানার লেখা সম্পর্কে কোন আপত্তি তুলেনি। অথচ মাওলানার সাহিত্য আরবী ও ইংরেজী ভাষায় ব্যপক অনুবাদ হয়েছে। বিশ্বের বড় বড় ইসলামী চিন্তাবিদও মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর সাহিত্যে ইসলামের একই ধরনের ব্যক্ষ্যা পড়ে আমার এ ধারনা সৃষ্টি হয়েছে যে,আমাদের দেশের যে কয়েকজন আলেম মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর বিরূদ্ধে ফতোয়া দিয়েছেন তারা সম্ভবত মাওলানার সাহিত্য ভালভাবে পড়েননি। অখন্ড ভারত বনাম পাকিস্তান আন্দোলনকে কেন্দ্রকরে এ শতাব্দীর ত্রিশ ও চল্লিশ দশকে মাওলানা মওদূদীর বলীষ্ট ইসলামী রাজনৈতিক চিন্তাধারা বহু বড় বড় ওলামার রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধী ছিল। তাদের পক্ষ থেকেই এসব ফতোয়া প্রচরিত হয়েছে। সুতারাং রাজনৈতিক কারনেই ফতোয়া দেয়া হয়েছে বলে মনে হয়। এসব ফতোয়ার কোন মযবুত দ্বীনি ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।

-লেখক (অধ্যাপক গোলাম আযম)



দারুল উলুম দেওবন্দের সাবেক শাইখুল হাদিস উসতাজে মুহতারাম মাওলানা মুফতি সাইদ আহমাদ পালনপুরি কুদ্দিসা সিররুহু সারাজীবন    মওদুদিবাদ তথা জামাতে ইসলামিকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বাইরের মনে করতেন, এ ব্যাপারে তার বক্তব্য ও লিখনও রয়েছে। কিন্তু ওফাতের বছর মানে গত বছর দরসে এ মত থেকে সরে আসেন। শেষজীবনে তিনি তাদেরকে সুন্নাত জামাতের অন্তর্ভুক্ত মনে করতেন, কারণ তারা দালায়ে আরবআ তথা কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসে বিশ্বাসী।  যেমটা মনে করতেন শাইখুল ইসলাম মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানি কুদ্দিসা সিররুহু। মরহুম মাদানিই সর্বপ্রথম মরহুম মাওলানা মওদুদি সাহেবের বিরুদ্ধে যবানে-কলমে অবস্থান নেন, কিন্তু পরে তাকে সুন্নাত জামাতের অন্তর্ভুক্ত মনে করেছেন। যেমনটা উসতাজজি এখানে উল্লেখ করেছেন, তবে মাদানি কুদ্দিসা সিররুহুর কথার কোনো রেফারেন্স আমার জানা নাই।

প্রকাশ থাকে যে, মওদুদিবাদ তথা জামাতে ইসলামি ভাইদের সাথে আমাদের মাসলাক তথা মতাদর্শের মতানৈক্য, ধর্মের নয়। আর মতাদর্শের মতভিন্নতার ব্যাপারে উলামায়ে দেওবন্দের নীতি হল, মতভেদপূর্ণ বিষয়গুলোর সমালোচনা জনসম্মুখে না করা, বরং উলামায়ে কেরামের মজলিসে এবং মাদরাসার দরসে সীমাবদ্ধ রাখা। যেমনটা মাওলানা আবুল হাসান আলি নদভি কুদ্দিসা সিররুহু 'শতবার্ষিকী সম্মেলনে' উল্লেখ করেছেন। [দেখুন নদভিকৃত 'মাসিরুল হায়াত' এবং মাওলানা উবায়দুল্লাহ আসআদি দামাত বারাকাতুহুমকৃত 'দারুল উলুম দেওবন্দ' বইয়ের শুরুর দিক।]

উল্লেখ্য, উসতাজে মুহতারাম মাওলানা মুফতি আমিন সাহেব পালনপুরি জিদা মাজদুহু (মরহুম পালনপুরির ছোট ভাই এবং দারুল উলুম দেওবন্দের মুহাদ্দিস) লিখিত  'হায়াতে সাইদ' আমার অনুবাদে এবং মুহিউদ্দিন কাসেমির সম্পাদনায় শীঘ্র আসছে।



পাকিস্তান তাবলীগ জামাত এর আমীর মাওলানা তারেক জামিল সাহেব এর অভিমত :

مودودیت کوی فِرقة ھی کوی نہی۔ مودودی صاحب رحمت اللہ علیہ نیک ادمی تھے اچھے عالم تھے۔ انہونے کوی الگ فرقة نہی بنایا۔ انہونے کوی فقہ نہی لکھی۔ کوی الگ اپنا اجتہاد نہی کیا۔ وہ پکے حنفی مسلمان تھے ۔اور حنفی عالم تھے ۔اور انکی بڑے خدمات ھے پڑھے لکھے تبقے کو دین سمجھانےکی ۔اور انکی بڑی خدمات ھے سوشل ازم کے خلاف قلم اٹھانےکی۔ انکی بڑی خدمات ھے منکرینے حدیث کے خلاف قدم اٹھانے کی۔مولانا طارق جمیل

মওদুদিয়াত কোনো ফেরকা নয়।মওদুদী রহঃ ভাল মানুষ ছিলেন,ভালো আলেম ছিলেন।তিনি কোনো আলাদা ফেরকা বানান নাই,তিনি কোনো ফেকাহ লিখেন নাই,কোনো আলাদা ইজতেহাদ করেন নাই।তিনি পাক্কা হানাফী মুসলমান ছিলেন এবং হানাফী আলেম ছিলেন।শিক্ষিত সমাজকে দ্বীন বুঝানোর ব্যাপারে তাঁর অনেক বড় অবদান রয়েছে।

সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কলম উঠিয়ে তিনি অনেক বড় অবদান রেখেছেন।

আর হাদিস অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে তিনি অনেক বড় ভুমিকা রেখেছেন।-মাওলানা তারেক জামিল(আমীর পাকিস্তান তাবলীগ জামাত)

https://www.youtube.com/watch?v=K2tuJAqMaW0&feature=youtu.be

মাওলানা মওদূদীর উষ্ণ প্রশংসা করার পর মওদূদী বিদ্বেষী মৌলভীদের পশু বলে আখ্যায়িত করলেন মাওলানা তারিক জামিল (পাকিস্তান)।

 https://www.facebook.com/565108593848701/posts/1094818607544361/

জামায়াতে ইসলামী কোন ধরনের দল

জামায়াতে ইসলামী প্রচলিত অর্থে শুধুমাত্র ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক দল নয়। ইসলামে ধর্মীয় জীবনের গুরম্নত্ব আছে বলেই জামায়াত ধর্মীয় দলের দায়িত্ব পালন করে। রাজনৈতিক শক্তি ছাড়া ইসলামী আইন চালু হতে পারে না বলেই জামায়াত রাজনৈতিক ময়দানে কাজ করে। সমাজ সেবা ও সামাজিক সংশোধনের জোর তাকিদ ইসলাম দিয়েছে বলেই জামায়াত সমাজ সেবা ও সমাজ সংস্কারে মনোযোগ দেয়। এ অর্থেই জামায়াতে ইসলামী একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন।

জামায়াতের বুনিয়াদী আকিদা-বিশ্বাস

০১.আল্লাহ্‌ তা'আলাই মানব জাতির একমাত্র রব, বিধানদাতা ও হুকুমকর্তা।

০২. কুরআন ও সুন্নাহ্‌ই মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।

০৩.মহানবীই (সা.) মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য আদর্শ নেতা।

০৪. ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনই মুমিন জীবনের লক্ষ্য।

০৫. আল্লাহ্‌র সন্ত্মুষ্টি ও আখিরাতের মুক্তিই মুমিন জীবনের কাম্য।

মাওলানা মওদূদী (র.) এর ব্যাপারে বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ আলেম ও চিন্তাবিদদের অভিমত জানতে হলে নিচের পোষ্ট গুলো পড়ুন।

মাওলানা মওদুদি (রহঃ) এর উপর অারোপিত অভিযোগের তাত্ত্বিক অালোচনা,অনেক ভিক্তিহীন অভিযোগের জবাব
http://www.pathagar.com/index.php?/book/detail/530
"১০ টাকায় ব্যক্তিত্ব বিক্রয়কারী ভন্ড আলেম ব্যতিত প্রকৃত দেওবন্ধীরা আল্লামা মওদূদী রহঃ এর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে না" দেওবন্ধী ও কওমীরা মওদূদীর যে ভুল গুলো ধরেছেন সে ভুল গুলো মওদূদী সাহেব দেবন্ধের তৎকালীন প্রকাশিত পত্রিকার সম্পাদক থাকা কালীন লিখেছিলেন এবং মেনেও নিয়েছিল দেওবন্ধীরা। কিন্তু যখনই মওদূদী সাহেব মুসলিমদের জন্য আলাদা মুসলিম রাষ্ট্রের দাবী তুললেন তখনই দেওবন্ধের আলেমগন দেখলেন যে মুসলিমদের আলাদা রাস্ট্র হলে তাদের নেতাগিরী বা মোড়লিপনা কমে যেতে পার, তখনই দেওবন্ধীরা নেতাজী, মহাত্মা গান্ধী ও বল্লভ ভাই পাতেলের সুরে সুর মিলিয়ে রাষ্ট্রীয় কিছু সুবিধার লোভে অখন্ড ভারত মাতার দাবী তোলে ভারতকে যারা ভাগ করে আলাদা মুসলিম রাষ্ট্রের দাবী করেছিল তাদের বিরোধীতা শুরু করে এবং এরই অংশ হিসেবে একসময়ের দেওবন্ধীদের নয়ন মনি মওদূদীরও বিরোধীতা শুরু করে। এখনও এই অন্ধ বিরোধীতা করে যাচ্ছে, তার প্রমান দেখা যায় কওমী মাদরাসার সিলেবাসে, যেখানে মওদূদীর ভ্রান্ত আকিদা নামে একটি বিষয়ও পড়ানো হয়। অথচ মওদূদীর বইগুলোকে খোলেও দেখেনি বর্তমানের এই কওমী আলেম সমাজ। আর যারাই মওদূদী সাহেবের বই একবার পড়ে দেখেছে ভুল ধরার জন্য বরং তাদের নিজের ভুলই ভেঙ্গে যাচ্ছে। এখন কাওমী আলেমরা নতুন ফতুয়া দিচ্ছে যে, যেকোন লিখকের বই পড়া যাবেনা। ঈমান চলে যাবে। তাদের হুজুরদের বই শুধু পড়তে হবে। ডা.জাকির নায়েকের মত দায়ী'র বিরোধীতা করেছে ভারতের এই দেওবন্ধী আলেম সমাজ এবং বাংলাদেশের কওমী আলেমরা, এমনকি কওমী আলেম গন বর্তমানে বক্তাদের জনপ্রিয়তায় নিয়েও ইর্ষান্বিত হয়ে হাফিজুর রহমান সাহেব মামুনুল কহককে হুমকীধমকী দিচ্ছে এমন ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। এতে প্রমানিত হয় যে কওমীর বড় বড় আলেমরা নিজেদের মধ্যেই কতটা ইর্ষাপরায়ন ও সংকীর্ন মনা।অথচ বিগত ৩০০ বছরে দেওবন্ধীরা ডা.জাকির নায়েকের মত একজন দা'য়ী তৈরী করতে পারেনি। শুধু স্বার্থের জন্যই মুসলিম হয়ে মুসলমানদের বিরোধীতা করে তারা। নিজের স্বার্থের জন্য একজন মুসলমানের ছোটখাট ভুল নিয়ে ফালাও ভাবে মানুষকে ভুল বুঝানো কতটুকু ইসলামিক এই প্রশ্নটা দেওবন্ধী ভাইদের প্রতি রইলো। হিংসাই যদি না ছাড়তে পারেন তবে কিসের মুসলমান আপনারা, আলেম হওয়া তো দূরের কথা। মনে রাখবেন আবু জাহেলও যথেষ্ট জ্ঞানী ছিল কিন্তু শুধু ঈমান ছিল না। এত হিংসা মনে রেখে অন্তত আলেম হওয়া যায় না। ডাঃ জাকির নায়েকের কারনে বহু অমুসলিম ইসলামে ধাবিত হয়েছে। বিশ্ব মানের একজন ইসলামী স্কলার। নাস্তিকরা কোরআনের অনেক গুলো ব্যাকরনগত ভুল যখন ধরেছিল আর এই ভুলগুলো নিয়ে কথা বলা তো দূরের কথা টু শব্দটি করার মত আলেম সারা দুনিয়ার একজনও ছিল না। ঐ দিন দেওবন্ধি ও কওমীরা মুখে কুলুপ এঁটেছিল।ঐ কঠিন প্রশ্নের জবাব এক মাত্র ডা.জাকির নায়েকই দিয়ে ছিল। অথচ আজ ভারতে যখন তার টিভি চ্যানেল পিস টিভি বন্ধ করে দেওয়া হল তার প্রতিবাদ তো দূরের কথা বরং আনন্দিতই হয়েছিল। এমন কি বাংলাদেশে যেদিন পিস টিভি বন্ধ করা হয়ে ছিল সে দিন আমি স্বচক্ষে দেখেছি কওমীরা কত আনন্দিত হয়েছিল। অনেক কওমী মাদরাসায় মিষ্টি বিতরন পর্যন্ত করেছিল। শুধু তাই না, বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে এই কওমী হুজুররা ডা.জাকির নায়েকে কে ইহুদিদের দালাল বলে গালি দিত এমন কি কাফেরও বলত। অথচ এত এত ইসলাম বিরোধী টিভি চ্যানেল দুনিয়ায় আছে কিন্তু ঐগুলোর বিরোদ্ধে কোন কথা নাই। যখনই স্বার্থে আঘাত লাগে তখনই ওরা অন্ধ বিরোধীতা করে। এখন ঐক্যের দরকার, বিবাদের সময় না।বিবাদ করে সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে,এটাও বুঝর ক্ষমতা রাখে না। তার পরও বিষয়টি খোলাসা করার জন্য কিছু প্রমান পেশ করলাম। দেওবন্দ বা কওমী মাদ্রাসা থেকে ফারেগ হওয়া সকলকে বিনীত ভাবে বলতে চাই যে, দেওবন্দের কিছু কংগ্রেস পন্থী ওলামারা যদি রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত হিংসার বশে মওদূদীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে, তাহলে আপনি কিসের প্রয়োজনে সে ফতোয়াকে যাচাই বাছাই ছাড়াই প্রচার করছেন?দেওবন্দ বা কওমী মাদ্রাসা থেকে দ্বীন শিখার পরিবর্তে যদি মুরব্বি পূজাই শিখে এলেন, তবে সেটা কি কল্যাণকর হতে পারে? যদি মাওলানা মওদুদী আলেমই না হবেন তাহলে তাকে দেওবন্দের মুখপাত্র, মাসিক ইসলামী পত্রিকার সম্পাদক বানানো হলো কেন? মাওলানা মওদুদী ছিলেন সহজ সরল একজন আলেম ও সাংবাদিক। তার লেখার ধরন এবং যুক্তি প্রমান ও জ্ঞানের গভীরতা সকল আলেম সমাজের লোকের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। এ কারনে দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত, দেওবন্দ ওলামাদের সংগঠন জমিয়তে আল ইসলামের মাসিক মুখপাত্র ‘ আল-জমিয়াত’ প্রত্রিকার সম্পাদক হিসেবে মাওলানাকে নিয়োগ দেয়া হলো। যারা বর্তমানে মওদূদীকে আলেম মানতে নারাজ তাদের কাছে আমার প্রশ্ন হলো, বর্তমান হাটহাজারী থেকে প্রকাশিত মাসিক মুইনুল ইসলামের সম্পাদক কি একজন জাহেল বা আধুনীক শিক্ষিত কে বানানেরা কল্পনাও কেউ করতে পারেন? অথবা বর্তমান আল কাওসার পত্রিকার সম্পাদক কি একজন জাহেল হতে পারেন? তখনকার দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত কোন দ্বীনি প্রত্রিকার সম্পাদক কোন আলেম ছিলেন না এমন দাবি যারা করেন তারা মুলত তাদের আকাবারদের কে মুর্খ এবং জাহেল হিসেবে ঘোষনা করছেন। কেননা তারা তো এত মুর্খ ছিলেন যে, শত শত ওলামাদের মুখপাত্র এবং তাদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রত্রিকার সম্পাদক এমন একজন কে বানানো হয়েছিল যিনি আলেম ছিলেন না, সাধারন শিক্ষিত ছিলেন। দেওবন্দ ওলামাদের একমাাত্র সংগঠন জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের মুখপাত্র আল জমিয়ত পত্রিকার সম্পাদনার ভার পড়ল মাওলান মওদূদীর ওপর। আল জমিয়ত পত্রিকাটি মুলত দেওবন্দ আলেমদের সংগঠন জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের কর্মসূচি প্রচার প্রশার করার জন্য ছাপানো হতো। তৎকালীন দেওবন্দের বেশির ভাগ নেতৃত্বস্থানীয় আলেমরা কংগ্রেসের কট্টর সমর্থক ছিলেন এবং জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ ছিল কংগ্রেসের সহযোগী সংগঠন। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে কংগ্রেসের লেজুর বৃত্তি করাই ছিল এই ওলামা সংগঠনটির একমাত্র কাজ। আজকের বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের যেই রাজনৈতিক এবং নৈতিক পজিশান, তৎকালিন জমিয়াতে ওলামায়ে হিন্দেরও সেই একই ভূমিকা ছিল। কংগ্রেসের লেজুর বৃত্তি করাটা যেন জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের দায়িত্ব হয়ে গিয়েছিল। এখনো এই দলটির ইশারায় বাংলাদেশের কিছু ইসলামী দল আলেম ওলামাদের মধ্যে বিভেদ তৈরিতে ভুমিকা রাখছেন। উল্লেখ্য না করলে ভূল হবে যে, তৎকালে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ছিলেন মুসলমানদের চরম দুশমন হিসেবে চিহ্নিত মহাত্মা গান্ধী। গান্ধীর অহিংস আন্দোলন ছিল মুসলমানদের জিহাদের বিপরিতে প্রপাগান্ডা মুলক এক চরম বিদ্ধেষ ভাবাপন্ন সাম্প্রদায়িক আন্দোলন, যদিও তা অহিংস শব্দের আড়ালে ঢেকে রাখা হয়েছিল। এই আন্দোলন চলাকালে এক মুসলমান কতৃক তাদের এক নেতাকে -যার নাম ছিল শ্রদ্ধানন্দ -হত্যার অপরাধে সারা ভারত জুরে যে দাঙ্গা হয়েছিল তার ভিতর ঘি ঢেলেছিল গান্ধির,সেই নিকৃষ্ট উক্তি-” মুসলমানদের ইতিহাস থেকে তলোয়ার আর রক্তের গন্ধ ভেসে আসে।” অবাক করা বিষয় হচ্ছে তখন কিন্তু জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের দায়িত্বে ছিলেন এমন সব ওলামারা যাদের তাকওয়া আর বুজুর্গীর ডংকা সারা ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে বাজত। তাদের মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য ছিলেন, মাওলানা আশরাফ আলি থানবি, মুফতি মোহাম্মদ শাফী, মাওলানা আহমেদ হুসাইন মাদানী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ রহঃ সহ দেওবন্দের বিশিষ্ট আলেম গন। জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের তৎকালীন সভাপতি ছিলেন মাওলানা হুসাইন আহমেদ মাদানী এবং সেক্রেটারি হিসেবে ছিলেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। কিন্তু আশ্চর্য্যরে বিষয় হচ্ছে মহাত্মা গান্ধীর এই নিকৃষ্ট উক্তির পরে যখন ব্যাপক হারে মুসলমান হত্যা করা শুরু হলো এবং ইসলামী জিহাদের অপব্যাখ্যা করে জিহাদকে সন্ত্রাস আখ্যা দেওয়া হতে লাগল, তখন এই বুজুর্গদের কারো অন্তরে আল্লাহর দ্বীনের জন্য কোন মায়া লাগেনি এবং তারা কংগ্রেস ত্যাগ করার দরকারও মনে করেননি। কংগ্রেসের সাথে সংযুক্ত থাকা যাদের কাছে বৈধ ছিল, আজকের যুগে তাদের খলিফাদের কাছে নারী নেতৃত্ব্য আরো খারাপ হয়ে গেছে। আবার শাপলা চত্বরে তাদের কর্মীদের হত্যার পর লাশ গুম করেও নারী নেত্রীরা এখন কওমী জননী উপাধি পায় শুধু মাত্র সরকারের হালুয়া রুটি আর কয়েক শতক জমির বিনিময়ে। যদিও হিন্দু নেতার নেতৃত্বে আন্দোলন করতে কোন সমস্যা হয়নি।এদের অতীত ও বর্তমান ইতিহাসে কোন ফারাক নাই। স্বার্থের জন্য ওরা সবই পারে। মহাত্মা গান্ধীর কংগ্রেসের পরিচালিত অহিংস আন্দোলন ছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি প্রকাশ্য যুদ্ধ কিন্তু দেওবন্দ কংগ্রেস পন্থী আলেমদের কাছে তা ছিল একেবারে সহনীয় কারন তাদের কাছে দেওবন্দ মাদ্রাসার হেফাজত এবং নিরাপত্তাই মুখ্য ছিল। মুসলমানদের অধিকার বা ইজ্জত তখন প্রধান্য পায়নি। আমাদের বর্তমান মুরব্বিদের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে একজন হিন্দুর নেতৃত্বে দল করা বা তার দলের অংগ সহযোগী হয়ে আন্দোলন করার সময় কি এসব ফতোয়া মনে ছিল যা তারা আজকে বলছেন নারী নেতৃত্বের সাথে জোট বদ্ধ হয়ে স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলন নাজায়েজ? জিহাদের বিরুদ্ধে যখন সারা ভারত জুড়ে এক ধরনে প্রপাগান্ডা চলতে লাগল ঠিক তখনি দিল্লী জামে মসজিদের খতিব তার জুমার খোতবায় আক্ষেপের সুরে বলছিলেন যে, মুসলমানদের মধ্যে এমন কোন নওজোয়ান আল্লাহর সৈনিক কি নেই যে মুশরিকদে এই প্রপাগান্ডার দাঁত ভাংগা জবাব দিতে পারে। মাওলানা মওদূদী বলেন, আমি সেই মসজিদে তখন অবস্থান করছিলাম এবং আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, কেউ করুক আর না করুক আমি এই দায়িত্ব পালন করবো। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাওলানা লিখে ফেললেন তার প্রথম বই- জিহাদ ফিল ইসলাম। মহাত্মাগান্ধীর প্রচারিত অহিংস আন্দোলন যে ইসলামের শিক্ষার বিপরীত তার দাঁত ভাঙ্গা জবাব ছিল জিহাদ ফিল ইলসলাম। গ্রন্থটি প্রকাশ হওয়াতে দুটো কাজ হলো। প্রথম হচ্ছে মুশরিকদের প্রচারনার প্রকৃত জবাব দেয়া হলো এবং জিহাদ সম্পর্কে সঠিক মাসয়ালা বের হয়ে এলো। পুরো গ্রন্থটি পত্রিকার মাধ্যমে ধারাবাহিক ভাবে প্রচার করা হয়েছিল। অন্যদিকে এই বই রচনা করতে গিয়ে যে মাওলানা মওদূদীকে শত শত কিতাব পড়তে হয়েছিল। এনহিসেবে তার কাছে গোটা ইসলামের চিত্র ফুটে উঠলো। ইসলামকে তিনি নতুন ভাবে জানার সুযোগ পেলেন। তার জ্ঞান রাজ্যের সীমানায় নতুন এক রাজত্ব্য ঠাঁই করে নিল। তিনি মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তিনি তার কলমের ব্যবহার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। নিজের বড় ভাইর সাথে পরামর্শ করে বললেন যে, মুসলমানদের সামনে যে মস্তবড় বিপদ আসছে সেই বিপদ থেকে তাদের সাবধান করা জরুরী। যে মহা প্লাবনের সংকেত আমি পাচ্ছি তা থেকে একজন মুসলমানকে যদি হেফাজত করতে পারি তাহলেও আমার প্রচেষ্টা র্স্বাথক হবে। উল্লেখ্য যে, পাকিস্তান আন্দোলন এবং তার পরবর্তী দিনের মুসলমানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি যে আগাম ঘোষনা করেছিলেন তা অক্ষরে অক্ষরে সত্যে পরিণত হয়েছে। আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান কায়েম হয়েছে ঠিকই কিন্তু যে ইসলামের নাম নিয়ে তাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, সেই ইসলামী রাষ্ট্র আর ইসলামী বিধান কে খোদ মুসলমানরাই অস্বীকার করে এবং পাশ্চাত্যের অনুকরনে একটি সংবিধান কায়েম করা হয়। পাকিস্তানের মধ্যে যে অস্থিরতা আজ বিরাজমান, তা সেদিনের সেই পাপের ফল। এ কারনে মাওলানা মওদূদী সেদিন ঘোষনা করে দেন যে,আজকে থেকে আমার কলম যদি কোন একটি অক্ষরও লেখে তাও আল্লাহর কালাম এবং তার দ্বীনের প্রতিনিধিত্ব করবে আর তা কেবল আল্লাহর জন্যই হবে। কংগ্রেসের সমস্ত সমর্থকদের কাছে এমন কি কংগ্রেস পন্থী আলেমদের কাছেও মাওলানা মওদূদী অত্যান্ত বিপদ জনক ছিলেন। কারণ তারা দেখেছেন যে, মওদূদীর লেখার ধরন প্রমান করছে যে, তিনি তার কলমের কাচি থেকে ইসলামের নামে প্রচলিত জাহেলীয়াতের একটি অংশকেও ছাড় দেবেন না। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, ইসলামী জিহাদের ওপর এমন প্রমান্য কিতাব মুসলিম জাহানে দ্বিতীয়টি লেখা হয়নি। সেই থেকে শুরু মাওলানার লেখার কাজ। মাওলানা নিজে স্বীকার করেছেন যে, উক্ত কিতাবটি লেখার পরে আমি ভিতর থেকে অনুভব করতে লাগলাম যে আল্লাহ হয়তো আমার ভিতর কিছু প্রতিভা দিয়েছেন এবং আমাকে এ কাজ অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে। উক্ত কিতাবটি লেখার পরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের দেয়া অপবাদ সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গেল ঠিক কিন্তু তারা অপেক্ষা করছিল মোক্ষম সুযোগের যাতে এর বদল তারা নিতে পারে। এরই মাঝে শুরু হয়ে গেল পাকিস্তান কায়েমের আন্দোলন।হিন্দুদের অত্যাচার নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে মুসলমানরা নিজেদের আলাদা আবাস ভুমির দাবি করে বসল এবং পাকিস্তান কায়েমের আন্দোলন একটা অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হলো মুসলমানরা এক যোগে এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করতে লাগল। মাওলানা মওদূদী যদিও জানতেন যে, যারা ইসলামের নামে পাকিস্তান কায়েমের আন্দোলন করছে তারা কখনোই পাকিস্তানে ইসলাম কায়েম করবে না তবুও তিনি নৈতিক ভাবে এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। আন্দোলনে যোগ দেয়ার আরো একটি কারন হিসেবে মাওলানা নিজেই বলছেন যে, কোন এক জায়গা থেকে ট্রেনে আসার পথে তিনি দেখলেন যে, হিন্দু জমিদার দের কে মুসলমানরা মাথা নিচু করে প্রনাম করে যা একেবারে সিজদার মতো। তিনি তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন যে, যে করেই হোক মুসলমানদের জন্য আলাদা আবাস ভুমি অবশ্যই থাকতে হবে এবং জিন্নাহর মুসলীম লীগের কার্যক্রমে তিনি সরাসারি যুক্ত না হলেও কথা আর লেখার মাধ্যমে তার সমর্থন করে যেতে লাগলেন। পাকিস্তান কায়েমের আন্দোলনে মুসলমানদের কে বিভ্রান্ত করতে হিন্দু কংগ্রেস নেতারা ব্যবহার করলেন মুসলমানদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ দেওবন্দ মাদ্রাসা মোহতামিম কে। একদিন দিল্লীর জামে মসজিদে নামাজ পড়াতে গিয়ে দেওবন্দের মোহতামিম, জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা আহমেদ হুসাইন মাদানী জুমার খুতবায় অত্যান্ত স্পষ্ট করে বললেন যে, মুসলমানদের আলাদা আবাস ভূমির দাবি করা একটি মারাত্মক ভুল এবং তিনি এও বললেন যে, হিন্দু মুসলমান এক জাতী হয়ে এই উপমহাদেশে বাস করতে পারে। এ বিষয়ে তিনি একটি বড় ভাষন প্রদান করেন। মাওলানার সেই ভাষন প্রথমে লিফলেট পড়ে বই আকাড়ে প্রকাশ করা হয়। মাদানীর এই বক্তব্য লিফলেট আকারে হিন্দুরাও প্রচার করতে লাগল। মহাত্মা গান্ধীর কংগ্রেসের এই চালে জিন্নাহর মুসলীম লীগ কোনাঠাসা হয়ে পড়ল। যেহেতু আহমেদ হুসাইন মাদানী মাওলানা শফীর মত উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত আলেম তাই তার কথায় মুসলমানরা পেরেশান হয়ে পরল কিন্তু কেউ এর প্রতিবাদ করার সাহস করলনা। কারন দেওবন্দের মোহতামিমের বিরুদ্ধে কথা বলার স্পষ্ট অর্থ হচ্ছে নিজেকে ফতোয়ার বানে জর্জরিত করা। ইতিহাসের পাতায় এ ঘটনাকে ওয়ান নেশন এন্ড টু নেশন থিউরি নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। যারা ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ রাখেন তারা এ বিষয়ে ভালো করেই জানেন। মাওলানা মওদূদীকে জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের পক্ষ থেকে বলা হলো, আল- জমিয়াত পত্রিকা মারফত এই হিন্দু মুসলমান এক জাতি তত্ত্বের ওপর লেখা লেখনীর মাধ্যমে প্রচারনা চালানোর জন্য। মাওলানা মুওদূদী সাফ জবাব দিয়ে দিলেন যে, আল্লাহ তাকে যদি সামান্য পরিমান মেধা শক্তি দিয়ে থাকেন তাহলে তা কেবলমাত্র মুসলমানদের উপকারের জন্য দিয়েছেন এবং জীবন বাকি থাকতে তিনি মুসলমানদের স্বার্থ্যরে বিরুদ্ধে এক কলম লিখার জন্য প্রস্তুত নন। জমিয়তের এই ঘোষনা শুনার পর তাদের পত্রিকায় আর এক মুহুর্ত্য কাজ করা সমীচিন মনে করেননি। তিনি আল জমিয়তের কাজ ছেড়ে দিয়ে তরজমানুল কোরআন পত্রিকার দায়িত্ব্য নেন এবং শর্ত দিয়ে দেন যে, ইসলাম প্রচারে তাকে কোন প্রকার বাধা দেয়া যাবেনা। পরবর্তিতে এই একটি পত্রিকা ভারত উপমহাদেশেরবইতিহাসে ইসলাম আর মুসলমানদের মুখপাত্র হিসেবে স্বিকৃতি পেয়ে যায়। মাওলানা আহমেদ হোসাইন মাদানির বক্তব্য যখন পাকিস্তান কায়েমের আন্দোলনে বিরাট বাঁধা হয়ে দাড়াল, এ পর্যায়ে মাওলানা মওদূদীও তার স্বভাব সুলভ কারনে চুপ থাকতে পারলেন না। এ বিষয়ে আল্লাহর সুন্নাত হচ্ছে যখন দায়িত্ব্যশীলরা কোন কাজ আঞ্জাম দিতে ব্যর্থ হন, তখন আল্লাহ সেই জনপদে অন্যকোন ব্যক্তি বা জাতীকে উত্থীত করেন যে, মানুষকে ভয় না পেয়ে আল্লাহর ইচ্ছা পুরন করবেন এবং নিজ দায়িত্ব্য পালন করবেন। এটাই হচ্ছে আল্লহর ফিতরাত। ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে আমরা সেই সত্যের মঞ্চায়ন হতে দেখেছি। যে কাজ করার কথা ছিল বড় বড় বুঝুর্গ দাবি ওয়ালাদের অথচ তারা সবাই মহাত্মা গান্ধির নৌকায় চড়ে হাওয়া খাচ্ছিলেন আর সে কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য আল্লাহ পছন্দ করে নিলেন আরেক জনকে। যাহোক, যে চিন্তা সেই কাজ, মাওলানা হুসাইন আহমেদ মাদানীর লিফলেটের জবাবে মাওলানা মওদূদী লিখে ফেললেন তার অমর এক গ্রন্থ মাসালায়ে কওমীয়াত বা জাতীয়তা বাদ সমস্যা। এই বইতে মাওলানা মওদুদী নাম ধরে হোসাইন আহমেদ মাদানীর যুক্তির সমালোচনা করে কোরআন হাদিসের অসংখ্য দলিল দিয়ে প্রমান করে দেন যে, হিন্দু মুসলমান এক জাতী নয়, বরং তারা দুটি পরস্পর বিরোধী আলাদ দুটি জাতি। তাদের সভ্যতা এবং সংস্কৃতি সম্পর্ন আলাদা। তাদরে মাঝে মুসলমানরা কেবল সংখ্যা লগু হয়ে নির্যাতন সইতে হবে নতুবা নিজেদের আমলের পরিবর্তন করতে হবে। হিন্দু জমিদার দের হাত থেকে রেহাই পেতে মুসলমানদের জন্য নিজস্ব সংস্কৃতি গড়ে তোল ছাড়া কোন উপায় নাই। তাছারা তিনিও এও প্রমান করলেন যে, হিন্দু মুসলমানকে এক জাতি বলা একটি সুস্পষ্ট কুফরি কেননা ভাষার ভিত্তিতে জাতীয়তা হয়না। আমরা মাওলানা হোসাইন আহমেদ মাদানীর কিছু বক্তব্য তার বই থেকে কোড করছি। এক জাতিতত্বের পক্ষে তিনি কিভাবে আদা জল খেয়ে নেমেছিলেন তার কিছু নমুনা পাঠকরা উপলদ্ধি করতে পারবেন। মাদানী রহ লিখেন-“ মাওলানা মাদানী লিখেন- এক জাতিতত্বের বিরুদ্ধে এবং এটাকে ন্যায় নীতির বিপরিত প্রমান করার,জন্য যা কিছু লেখা হয়েছে এবং হচ্ছে তার ভূল ত্রুটি দেখিয়ে দেওয়া জরুরী মনে করছি। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে তিনি বলেন- একজাতীয়তা যদি এতই অভিশপ্ত এবং নিকৃষ্ট হয়, তবুও ইউরোপীয়রা যেমন এই অস্ত্র ব্যবহার করে মুসলমানদের বাদশাহী ও ওসমানীয়া খেলাফতের মুলচ্ছেদ করেছে, তাই এই হাতিয়ারকেই বৃটিশদের মুলচ্ছেদের কাজে ব্যবহার। করা মুসলমানদের কর্তব্য। মাওলানা মওদূদী মাদানীর এই বক্তব্যের জবাবে যে,,বিপ্লবী গ্রন্থ লেখেন, তার প্রারম্ভে তিনি লেখেন- দারুল উলুম দেওবন্দের প্রিন্সিপাল জনাব মাওলানা হুসাইন আহমেদ মাদানীর “একজাতিতত্ত্ব ও,ইসলাম” নামে একটি পুস্তক,রচনা করেছেন। একজন সুপ্রসিদ্ধ আলেম এবং পাক-ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের লিখিত এই বইটি জটিল জাতি সত্ত্বার সরল বিশ্লেষন এবং প্রকৃত ইসলামী দৃষ্টি ভংগির পূর্ন অভিব্যাক্তি হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু এই বইটি পাঠ করে আমাদের কে নির্মমভাবে হতাশ হতে হয়েছে এবং বইটি লেখকের পদমর্যাদার পক্ষে হানিকর বলে মনে হচ্ছে। বর্তমান যুগে অসংখ্য ইসলাম বিরোধী মতবাদ ইসলামের মুলতত্ত্বের ওপর প্রবল আক্রমন চালাতে উদ্যত, ইসলাম আজ তার নিজের ঘরেই অসহায়। স্বয়ং মুসলমান গন দুনিয়ার ঘটনাবলী এবং সমস্যাবলী খালেস ইসলামী দৃষ্টিতে যাচাই করে না। বলাবাহুল্য নিছক অজ্ঞতার কারনে তারা এমনটি করছে। উপরন্তু জাতীয়তার বিষয়টি এতই জটিল যে, তাকে সুস্পষ্ট রুপে হৃদয়ঙ্গম করার উপরেই একটি জাতির জীবন মরন নির্ভর করে। কোন জাতি যদি নিজ জতীয়তার ভিত্তিসমূহের সাথে সম্পূর্ণ ভিন্ন মুলনীতির সংমিশ্রণ করে, তবে সে জাতি হিসাবে দুনিয়ার বুকে বাচঁতে পারবে না। এই জটিল বিষয়ে লেখনী ধারন করতে গিয়ে মাওলানা হোসাইন আহমেদ মাদানীর মতো ব্যক্তিত্ত্বের নিজের দায়িত্ব্য সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থাকা বাঞ্চনীয় ছিল। কারণ তার কাছে রাসূলের আমানত গচ্ছিত আছে।” এই বইয়ে আরেক জায়গায় মাওলানা মওদূদী লিখেন- আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ওলামায়ে হিন্দের কাছে কাউন্সিল ও এসেম্বলীতে যোগ দেয়া একদিন হারাম এবং অন্যদিন হালাল বলে ঘোষনা করা একেবারে পুতুল খেলার শামিল হয়ে গেছে। গান্ধীজির একটি শব্দই তাদের ফতোয়াদানের ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু আমি ইসলামের শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয় নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে বলছি- আল্লাহ ও রাসুল ফয়সালা করেছেন এমন কোন বিষয়ে নতুন করে ফয়সালা করার নিরংকুশ অধিকার মানুষকে দেয় যেসব সামগ্রিক প্রতিষ্ঠান- মুসলমানদের পক্ষে তা সমর্থন করা এক চিরন্তন অপরাধ সন্দেহ নাই।.......। মাওলানা মওদুদী জাতিয়তার ভিত্তি বর্ননা করে বলেন-“ যেসব গন্ডীবদ্ধ, জড় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও কুসংস্কারপূর্ণ ভিত্তির ওপর দুনিয়ার জাতীয়তার প্রসাদ গড়ে উঠেছে আল্লাহ ও তার রাসুল (স) তা চূর্ন বিচূর্ণ করে দেন।” জাতীয়তা ভাষা বা দেশের ভিত্তিতে হয়না, হয় আদর্শের ভিত্তিতে। আমরা মুসলীম জাতি। ইসলাম আদর্শ। পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের একজন মুসলমান আমার ভাই। যদি আমার ঘরের আপন ভাইও ইসলামী আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়, তাহলে সেও আমার ভাই নয়। সে আমার জাতির অন্তর্ভূক্ত নয়। যারা এ বিষয়ে বিস্তারিত পড়তে চান তারা জাতীয়তা সমস্যা নামক বইটি পড়ে দেখতে পারেন। আলোচনার সুবিধার্থে আমরা কয়েক লাইন কোড করলাম যাতে পাঠকরা নিরেপক্ষ মন নিয়ে বিচার করতে পারেন শুরু থেকেই কারা হক্বের পক্ষ নিয়েছিল। মাওলানা মওদূদীর প্রতি মাওলানা মাদানীর আক্রোশের এটাই কারণ।। আক্রোশকে ভিত্তি করেই মাওলানা মাদানী পরবর্তিকালে মাওলানা মওদূদীর ওপর আমরন ফতোয়াবাজীরবমেশিন গান থেকে অমুলক, ভিত্তিহীন ও বিদ্ধেষমুলক অভিযোগ টেনে রোষানল প্রজ্জলিত ফতোয়ার গোলা বর্ষন করেছেণ। এর চেয়েও অধিক পরিতাপের বিষয় হলো মাওলানা মাদানীর অনেক শিষ্য; সাগরেদ, যারা ‘ওলামায়ে দ্বীন’ বলে পরিচিত, ওস্তাদের অনুকরনে তারাও মাওলানা মওদূদীর অন্ধ বিরোধীতায় মেতে উঠেন। এ কারনে আমরা যদি লক্ষ করি তাহলে দেখবো যে, কেবল মাত্র কংগ্রেস সমর্থক বা মহাত্মা গান্ধীর অনুসারী মাওলানা হোসাইন আহমেদ মাদানীর শিষ্য, সাগরেদ বা তার খলীফারা ছাড়া অন্য কেউই মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। যতগুলো বই মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে এ যাবত লেখা হয়েছে, তার সবগুলোই এই হোসাইন আহমেদ মাদানীর খলীফা বা কোন কোন পর্যায়ের ভক্ত অনুশারীর দ্বারা লিখিত। কওমী আলেমদের মাঝে মুরব্বিদের আনুগত্যের একটি সংজ্ঞা চালু আছে। সংজ্ঞাটি হলো মুরব্বির ভুল ধরাও ভূল। অথচ মওদূদীর মতো একজন সাধারন আলেম এত বড় মুরব্বির সমালোচনা করলেন এবং তার কথাকে স্পষ্ট ভাষায় অনৈসলামীক এবং ভ্রান্ত বলে রায় দিলেন, এতো বড় অপরাধ কি সহজে ক্ষমা পাওয়ার মতো। এসব কারনে দেওবন্দের,একাংশের কাছে মাওলানা মওদূদীর লেখা বিষতুল্য মনে হলো। মাদানী সাহেব বললেন- ইয়্যে লেড়কা বেয়াদব হ্যাঁয়। শুধু কি তাই। তারা ঘোষনা করলো মওদূদীর বই পড়লে সাধারন ছাত্রও মুরব্বিদের সাথে বেয়াদবী করা শিখবে।” এভাবেই মাওলানা মওদূদীর লিখিত বই জাতীয়তা সমস্যা বা মাসালায়ে কওমীয়াত লেখার কারনেই মওদূদীকে হোসাইন আহমেদ মাদানীর ফতোয়ার বানে জর্জরিত হতে হয়েছে। কি সব অবাস্তব মিথ্যাচার তারা করেছেন তার নমুনা একটু পরেই আমরা দেখাতে পারবো। এই বইটি যখন তরজমানুল কোরআনে প্রকাশ হতে লাগল, মুসলিম লীগের সমর্থক সহ সকল মুসলামনরা যেন চাঁদ হাতে পেল। তারাও হিন্দুদের প্রচারিত মাওলানা হুসাইন আহমেদ মাদানীর বক্তৃতার লিফলেটের জবাবে মাওলানা মুওদূদীল লিখিত তরজামানুলের কপি বিলি করতে লাগলেন। এদিকে আল্লামা ইকবাল শুরু থেকেই মাওলানার চরম ভক্তদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনিও সব পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছিলেন। মাওলানা হোসাইন আহমেদ মাদানী যখন এক জাতী তত্ত্ব ঘোষনা করে বক্তৃতা করলে, তখন সাথে সাথে আল্লামা ইকবাল তার সমালোচনা করে একটি কবিতা লিখে ফেললেন। কবিতাটির অনুবাদ দেয়া হলো। “ আজমিয়া আল্লাহর দ্বীনের হাকিকত বুঝিতে পারেনি, তাই যদি না হতো তাহলে দেওবন্দের মাওলানা হুসাইন আহমেদ মাদানী মিম্বরে দাড়িয়ে এমন ধরনের কথা কিছুতেই বলতে পারতেন না যে, দেশের ভিত্তিতে জাতী হয় ( কলেমার ভিত্তিতে নয়) আফসোস, এরা আরবি মোহাম্মদের (স) মতাদর্শ আদৌ বুঝতে পারেনি।” আল্লামা ইকবাল এই ধরনের একজন প্রসিদ্ধ আলেমের এক জাতী তত্ত্বের পক্ষে ওকালতি দেখে এতই মর্মাহত হয়েছিলেন যে, তিনি তার কবিতার মাধ্যমে মনের ব্যথা প্রকাশ করেছিলেন। ইতিপুর্বে যে মওদূদীর জ্ঞান গরিমার কারনে তারা তাকে তাদের নিজস্ব পত্রিকার সম্পাদনার ভার দিয়েছিলেন এবং যার প্রশংসায় তারা ছিলেন পঞ্চমুখ, তারাই এবার তার বিরুদ্ধে আদা জল খেয়ে মাঠে নামলেন। মাওলানার সকল লেখাকে আঁতশী কাঁচ দিয়ে পরীক্ষা করতে লাগলেন। যদি কোন সামান্য বানানে ভূল ধরা পরে সাথে সাথে তা পত্রিকা মারফত জানানো হতে লাগল। এভাবেই শুরু হয়ে গেল মাওলানা মওদূদীর সাথে আহমেদ হোসাইন মাদানীর প্রকাশ্য শত্রুতা। এবং এই শত্রুতার জের ধরে তিনি বলেছিলেন যে,ইয়ে লেরকা বেয়াদব হ্যায়- এই ছেলেটি বেয়াদব। কওমী ঘরনার কোন ব্যক্তি একথা কল্পনাওব করতে পারেন না যে, তিনি তার উস্তাদের ভুল ধরিয়ে দিবেন। বরং চোখ বন্ধ করে মেনে নেয়াটাই ভদ্রতার আর শিষ্টাাচার হিসেবে গন্য হয়। আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানী এই যে, এই ঘটনার পর দেওবন্দের আরেক বিখ্যাত বুজুর্গ মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওসমানী কংগ্রেস আলেমদের ভুল ত্রুটি সঠিক সময়ে উপলদ্ধি করে অসংখ্য আলেমদের সাথে নিয়ে কংগ্রেস আলেমদের সঙ্গ ত্যাগ করে তার দল বল নিয়ে মুসলিম লীগে যোগদান করেন। পরবর্তিতে তার ভ্রাতুস্পুত্র ও জামাতা মাওলানা আমের ওসমানী দেওবন্দ হতে প্রকাশিত তাজাল্লী পত্রিকার মারফত মুওদূদীর বিরুদ্ধে আনিত মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে জবাব দিতে থাকেন। তার নেতৃত্বে দেওবন্দ জামায়াত অত্যান্ত শক্তী শালী অবস্থানে ছিল। বর্তমানে তিনি জিবীত নাই দেওবন্দ জামায়াতের অবস্থান অনেক ভালো। ইর্ষা পরায়ন কিছু আলেম ব্যক্তিগত স্বার্থে মাওলানা মুওদূদীর বিরুদ্ধে যে সকল ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করেছেন তার অধিকাংশের জবাব বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জন দিয়েছেন এবং এই বিষয়ে বিশাল কিতাবের ভান্ডার রয়েছে। ইচ্ছা করলে যে কেহ তা সংগ্রহ করে পরে দেখতে পারেন। কিন্তু যারা মুরব্বি পুজায় লিপ্ত, মুরব্বিদের কথাকে কোরআনের চাইতেও বেশি মুল্যায়ন করেন, তারা মওদূদীর পক্ষে লিখিত এ সকল বই পড়ে কোন ফায়দা পাবেন না। এবং এটা বই পড়ার বিজ্ঞান সম্মত কোন পদ্ধতি নয়। যারা খোলা মন নিয়ে শুধু মাত্র সত্যকে জানার জন্য অধ্যায়ন করেছেন তারাই কেবল মাত্র কোরআন থেকে হেদায়েত পেয়েছেন। কেননা কোন ব্যক্তির জন্য এটা হেদায়েতের কিতাব নয় যে ব্যাক্তির মনে আল্লাহর কোন ভয় নাই। অতএব যারা আল্লাহকে ভয় করে পথ চলেন তারা যেন পরিচ্ছন্ন মন নিয়ে কোরআন অধ্যায়ন করে তারাই কেবল মাত্র কোরআন থেকে হেদায়েত পেতে পারে। সব শেষে বলব এই কওমী ও দেওবন্দীদের কিছু কিছু ভাল আলেম থাকলেও ৯৫% আলেমই লেনাস ধারী, চরম পর্যায়ের হিংসুক, স্বার্থপর, ফেতরা খোর, গীবতকারী, ফতোয়া ব্যবসায়ী ও ১০টাকায় আদর্শ বিক্রয় কারী। দেখেন নাই মাওলানা আহমেদ শফি সাহেব সরকারী জমির লোভে শাপলা চত্বরের শহীদদের রক্তের সাথে কি বেইমানীটাই করেছে? আবার কয়েকদিন যাবত তারেক জামিল নামের এক লেবাস ধারী হিংসুটে আলেম কিভাবে মওদূদীর সমালোচনা শুরু করেছে? এদের পুঁজিই গীবত। এরা নির্লজ্জ ও বেহায়া না হলে কিভাবে আফতাব স্মরনিকা মামলায় মুচলেকা দেওয়ার পরও বেশ্যা নারীর মত আচরন করে বার বার একই আচরন করে মওদূদীর উপর মিথযা তহোমত দিচ্ছে। এদের লজ্জা শরম নাই, ওরা ১০টাকায় বিক্রি হয়। খুলাফায় রাশেদীন গণ যাদেরকে বিভিন্ন এলাকার গর্ভনর নিয়োগ দিয়েছিলেন তাদের চাইতেও অনেক সাহাবারই এলেম-আমল-তাকওয়া-দরবেশী বেশী ছিল, রাসূল (স.) ও যুদ্ধের সেনাপতি নির্বাচন করতেন নেতৃত্বের পারদর্শিতার উপর নির্ভর করে, ইলেম ও তাকওয়ার উপর নয়। তাই ইসলামিক রাষ্ট্র পরিচালনা করা এক ব্যাপার আর ইলমে দ্বীনের খেদমত করা ও তাসাউফ এর শিক্ষা দেয়া অন্য ব্যাপার। যে যেই কাজের যোগ্য তারা সেই কাজের ই আঞ্জাম দিবে। জামাতে ইসলাম রাষ্ট্র পারিচালনা করবে, ওলামায় দেওবন্দ ইলমে দ্বীনের দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করবে আর হক্ক পীর গন তাসাউফের খেদমত করবে। কেউ কারো বিরোধী নন, একে অন্যের মুখাপেক্ষী, সবাইকে নিয়েই ইসলামী ব্যাক্তি, ইসলামী সমাজ এবং ইসলামী রাষ্ট্র বিনির্মিত হবে। দরকার শুধু মাত্র হিংসা-বিদ্বেষ-অহংকার দুর করে অপরের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার। পাকিস্তানের সকল ইসলামী দল (দেওবন্দী, জামায়াতে ইসলাম, পীর, শীয়া) যদি ইত্তিহাদ মায়াল ইখতিলাফের সাথে এক হতে পারে তবে আমরাও পারব ইনশাআল্লাহ।


"আল জামিয়াতুল ইসলা‌মিয়া দারুল উলুম" বরুড়া, কু‌মিল্লা থে‌কে ২০০৩ সা‌লে প্রকাশিত "আফতাব স্মর‌ণিকায়" মাওলানা ম‌ওদূদী রহ.-এর নামে বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দিলে সেটা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। যিনি বাদী হয়ে এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং মামলার রায় ও ঘটনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আজ স্বয়ং সেই বাদী বরেণ্য আলিমের মুখে শুনুন বিস্তারিত কাহিনী।






মন্তব্যসমূহ

  1. মওদূদীবাদ জামাত শিবিরের বইয়ে নবী সাহাবা দ্বীন ধর্মের অপবেখ্যা থাকায় মওদূদী সাহেবের অনুসারীদেরকে মওদূদীবাদ বলা হয়।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

শর্ষীনা, ফুরফুরা, জৌনপুরী, ফুলতলী, সোনাকান্দা সহ সকল বালাকোটি পীরগনের শেরেকী আকীদা

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে