মুসলিমদের ১ দল জান্নাতি ৭২ দল জাহান্নামী?

 




মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও ৭৩ ফিরকার হাদীস


আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এবং শান্তি ও বরকত নাযিল হোক মানবতার মহান দূত রাসূল (সঃ) এর প্রতি।


আজকের আলোচ্য বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং কঠিনও বটে। বিষয়টি আমাদের আবেগ-অনুভূতিকে নাড়া দেয়। প্রত্যেকের এই বিষয়ে আবেগময় মতামত আছে। আমি এই ব্যাপারে আমার অবস্থান পরিষ্কার করতে চাই। তাই আমি উক্ত বিষয়ে আপনাদেরকে মুক্ত মনে শোনার জন্য অনুরোধ করব এবং ভিন্ন মত পোষণের অনুমতি চাইব। আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করব আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি ভেবে দেখতে।


আজকের আলোচনায় আমি বহুল আলোচিত হাদিসটিতে চলে যাব। হাদীসে বর্ণিত, “আমার উম্মাহ্‌ ৭৩ দলে বিভক্ত হবে”। অবশ্য আমার বক্তব্যের পর ডঃ তারিক রমাদানেরও একটি বক্তব্য আছে। আমি উক্ত হাদীসটির উপর বিস্তারিত আলোচনা করব। হাদীসটি আমরা কিভাবে হৃদয়ঙ্গম করব তা আমি তুলে ধরব। এক্ষেত্রে উক্ত হাদীস নিয়ে আমাদের কর্মপদ্ধতি কী হবে, তা আলোচনা করে আমি ইতি টানব।


শুরুতে বলি, আমি একজন ধর্মতত্ত্ববিদ। আমার যোগ্যতা ও দক্ষতার ক্ষেত্র ইসলামিক ধর্মতত্ত্ব। মদিনা ইউনিভার্সিটি থেকে আমার মাস্টার্স এবং ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে আমার পিএইচডি ইসলামিক ধর্মতত্ত্বের বা আকীদার উপর করা।


উক্ত হাদীস আলোচনা করার পূর্বে একটি হতাশার কথা বলি। কিছু লোক বলে, “আকীদা নিয়ে কে মাথা ঘামায়? আপনার পুরো সাবজেক্টি সময় অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। আপনার বিশ্বাস নিয়ে কে চিন্তা করে?  আকীদা এমন একটা পাঠ্যবিষয় যেটা জনগণের মধ্যে বিভাজন ও তিক্ততা সৃষ্টি করে।’’ ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে উক্ত মন্তব্য একটু অপমানজনক বটে, কারণ আমার পুরো জীবনটা ইসলামিক ধর্মতত্ত্বের জন্য উৎসর্গকৃত।


আপনার গড়ে উঠার পরিবেশ যাইহোক, আপনার আকীদা যাইহোক এমন কিছু বিশ্বাস ও নীতি আছে যেগুলো আপনার বিশ্বাসের সীমা টপকে যায়। অতীতে মুসলিম জাতির ছোট একটা ফিরকা ছিল যারা বিশ্বাস করত, আল্লাহ পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের সর্দারের কাছে অবস্থান করেন। আর হেঁটে বেড়ানো এই ‘শেখটি’ ছিল আল্লাহ। এখন আপনারা বলেন আমাদের মধ্যে কে এই বিশ্বাসটি গ্রহণ করবে? অনুরূপভাবে, মুহাম্মাদ (সঃ) এর পরে এসে কেউ যদি নিজেকে নবী দাবি করে বা তার নিকট আরেকটি কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার কথা বলে, তাহলে তার দাবিটি আমাদের বিশ্বাসের সীমারেখার বাইরে।


শুরুতে আমাকে একটু দার্শনিক ভঙ্গিমায় বলতে হয়, সংজ্ঞানুসারে প্রতিটি সংজ্ঞার একটি সীমারেখা থাকতে হয়। আপনি বলতে পারেন আমি একজন মুসলিম; তখন ঐ প্রাচীন, উদ্ভট ফিরকাটি বলবে, “তার অর্থ আপনি আমাদের ‘শেখকে’ আল্লাহ বলে বিশ্বাস করেন, কেননা আমরাও মুসলিম”। আপনি তখন বলবেন, “না না না”। আমি আপনাদের ‘শেখকে’ আল্লাহ বলে বিশ্বাস করি না। সারকথা হলো এই, নিজেকে মুসলিম বলতে হলে অবশ্য আপনাকে কিছু সীমারেখা টানতে হয়।


কুরআন অনেক কাজকে সমালোচনা করে। যেমনঃ তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না, ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ো না মদপান করো না। আকীদার অনেক বিষয়ও কুরআন সমালোচনা করে। যেমনঃ ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা হিসেবে বিশ্বাস করো না, প্রতিমাসমূহ কখনো তোমাদের কল্যাণ করতে পারে না। সমালোচনার পাশাপাশি কুরআন অন্য ধর্মতত্ত্ব প্রচার করে। যেমনঃ আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ এক। অতএব, আকীদার গভীরে প্রবেশ করলে আপনাকে বিশ্বাসের সীমারেখায় নির্দিষ্ট, সূক্ষ্ম ও তীক্ষ্ম হতে হয়। এটা মানুষের ধর্ম।


আমার আলোচনার মূল বিষয় ‘৭৩ দলে বিভাজনের’ হাদিসটি নিয়ে। এই হাদিসটি ১৫ জনের বেশি সাহাবা কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আনাস ইবনে মালিক (রাঃ), জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ), আবু হুরাইরা (রাঃ) সহ প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আর উক্ত হাদিসটি বারোটিরও বেশি হাদিস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। যেমনঃ সুনানে আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযি, আল হাকিম, ইবনে হিব্বান, মুসনাদে ইমাম আহমদ সহ আরো অনেক গ্রন্থে তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।


উক্ত হাদিসের কিছু মতনে শুধুমাত্র এই কথা বলা আছে, “আমার উম্মাহ ৭৩ ফিরকায় বিভাজিত হবে”। কতিপয় হাদিসে এতটুকু বলা আছে, “আমার উম্মাহ পূর্ববর্তী উম্মত ইহুদী খ্রিষ্টানের মত বিভিন্ন দলে বিখণ্ডিত হবে”। অপর বর্ণনায় এসেছে, “এদের মধ্যে একটি দল ছাড়া বাকি দলগুলো পথভ্রষ্ঠ”। মোটকথা হলো উক্ত হাদিস বিভিন্ন বাক্যে, শব্দগুচ্ছে এসেছে। সুন্নী ধারার ইসলামিক জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যথাঃ ফিকাহ, হাদিস, আকায়েদ, ইতিহাস ইত্যাদির আলেম ও চিন্তাবিদরা উক্ত হাদিসকে বিশুদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ইবনে হাজার, আন-নাওয়ায়ী, ইবনে কুদামা, আয-যাহাবী, ইবনে তাইমিয়া সহ আরো অনেক আলেমগণই এই হাদীসকে সহীহ হাদীস হিসেবে গণ্য করতেন।


তবে দু-তিনজন আলেম একে জাল হাদীস হিসেবে মত দিয়েছেন। লেকচারের স্বার্থে আমি প্রধান অভিমতটি নিয়ে ব্যাখ্যা করব। আমি ব্যক্তিগতভাবে উক্ত হাদিসটি সহীহ হিসেবে মানি, কেননা এটা অনেক সাহাবায়ে কেরাম দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। তবে যুগে যুগে উক্ত হাদিসটির ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে এবং ভুলভাবে অনুধাবন করা হয়েছে। আমাদের পূর্ববর্তী শায়েখ, ফকীহ, মুহাদ্দিস এবং ওলামারা উক্ত হাদিসের অনেক বিতর্কিত, সমালোচিত ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। তারা উক্ত হাদিসকে কুরআন ও সুন্নাহর কষ্টি পাথরে ঝালাই করেছেন। আমি উক্ত হাদিসের পাঁচটি বড় ধরণের ভুল অনুধাবন ও অপব্যাখ্যা তুলে ধরব এবং পাশাপাশি আমার মতও তুলে ধরব।


প্রথমত, কতিপয় অপরিপক্ক লোক উক্ত হাদিসকে আক্ষরিক অর্থে ৭৩ ফিরকা হিসেবে বুঝেছেন। পরিষ্কারভাবে বলা যায়, এটা কখনো সঠিক মত নয়। অতীতের ইসলামি চিন্তাবিদরা হিসেব করে দেখেছেন, এই দলটি এক, এরপরে দুই, তারপরে তিন ... ইত্যাদি। যখনি উনি হিসেব শেষ করে ৭৩ এ উপনিত হয়েছেন, তখনি আরেকটি দলের আবির্ভাব ঘটে দলের সংখ্যা ৭৪ বা ৭৫ এ দাঁড়িয়েছে। অতএব আক্ষরিক অর্থে ৭৩ দল গ্রহণ করা কখনো শুদ্ধ নয়। আসল কথা হলো অনেক আলেমের মতে আরবীতে ৭, ৭০ কিংবা ৭০০ অধিক অর্থে বুঝানো হয়। যেমনটি কুরআনে এসেছে, “যদি আপনি তাদের মুনাফিকদের জন্য ৭০ বার ক্ষমা প্রার্থনা করেন তথাপি আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না”। তার মানে কি এই, রাসূল (সঃ) ৭১ বার বা ৭২ বার ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হতো? সারকথা হলো ৭৩ দল বলতে প্রায় ৭০ তথা অধিক ফিরকা সৃষ্টির বিষয়টি বুঝানো হয়েছে।


দ্বিতীয়ত, জ্ঞানীরা নয় বরং কতিপয় অল্প জ্ঞানের মুসলিমরা বলে, “৭৩ দলের মধ্যে এক দল হলো মুসলিম, আর বাকি ৭২ ফিরকা কাফিরদের অন্তর্গত”। এটা কখনোই সত্য নয়। রাসূল (সঃ) সরাসরি বলেছেন, “আমার উম্মাহ্‌”। বিভাজনটি ইসলাম ও কুফর এর মধ্যে নয় বরং ইসলামের অভ্যন্তরে। লক্ষ্যণীয়, উপদল ও ফিরকাগুলো হাদিসে বর্ণিত ‘আমার উম্মাহ’ এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ প্রত্যেক দলই রাসূলের উম্মাহ হওয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত। তবে যারা মুহাম্মদ (সা) এর পর যারা নবুয়াত দাবী করে কিংবা যারা বলে আল্লাহ পৃথিবীতে অবতরণ করেছেন “মানুষ” হিসেবে তারা এই ৭৩ ফিরকার তালিকার অন্তর্ভূক্ত নয়। এখান থেকে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ উসূল বের করা যায়। হাদিসে এক মুসলিমের উপরে অন্য মুসলিমের হকের কথা আলোচিত হয়েছে। তার মানে অন্য ফিরকার মানুষটিও সালাম পাওয়ার ও ফিরিয়ে দেওয়ার যোগ্য, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, মৃত্যুর পরে কবর জিয়ারত করা অপর মুসলিমের কর্তব্য। প্রত্যেক মুমিন ভাই ভাই। উপসংহার হলো এই বিভাজনটা ইসলামের অভ্যন্তরে, বাইরে নয়।


তৃতীয়ত, হাদীসের এক রেওয়ায়তে রাসূল (সঃ) বলেছেন, “৭৩ ফিরকার মধ্যে ৭২ ফিরকাই পথভ্রষ্ঠ হবে, আর শুধুমাত্র একটি দল সঠিক পথে থাকবে”। এই হাদিসটি আরো বড় ধরণের ভুল ব্যাখ্যার দিকে ধাবিত করে। ৭৩ দলের মধ্যে ৭২ দল, অর্থাৎ একটা বিশাল ভগ্নাংশ জাহান্নামে যাবে। সংক্ষেপে বললে, পুরো উম্মতের অতি সামান্য অংশ জান্নাতে যাবে। অথচ কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন আয়াত ও মতন উক্ত ব্যাখ্যার বিরোধিতা করে। যেমনটি হাদীসে এসেছে, “ইন্না উম্মাতি উম্মাতি মারহুমাহ - নিশ্চয় আমার উম্মাহ রহমতপ্রাপ্ত, আশীর্বাদপুষ্ট”। রাসূল (সঃ) আরো বলেছেন, “জান্নাতের এক বিশাল অংশ হবে আমার উম্মত থেকে। আমার উম্মাহ এত বিশাল হবে যে, কোন নবীর উম্মাহ সংখ্যায় এর ধারে কাছেও থাকবে না”। রাসূল (সা) এর শাফায়াত গোটা মুসলিম উম্মাহ্র জন্য।


তাহলে হাদীসটি আমরা কিভাবে অনুধাবন করব? ব্যাপারটা খুবই সহজ। উম্মাহর এক ক্ষুদ্র অংশ জাহান্নামে যাবে। এক্ষেত্রে আমি আপনাদের ‘জাহমিয়্যাহ’ নামক গত হওয়া এক ছোট্ট, উদ্ভট, আজগুবী দলের কথা বলব। আকীদার ছাত্র মাত্রই এই দল সম্পর্কে অবগত। এরা ছিল অত্যন্ত সক্রিয় একটি দল। মদীনা ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সে আমার ৮৫০ পৃষ্ঠার আরবীতে থিসিস ছিল এই ছোট্ট ফিরকা এবং এর প্রতিষ্ঠাতাকে কেন্দ্র করে। এই ফিরকা এখন আর নেই। কিন্তু প্রত্যেক আকীদার বইতেই এই দলটির উপর আলোচনা রয়েছে। আমি এই বিষয়ের উপর মাস্টার্স করেছি। এবং এই জাহমিয়্যাহ দলের মোট অনুসারীর সংখ্যা ছিল ৫০ এবং অন্য বর্ণনায় সর্বোচ্চ ১০০ জন। অথচ জ্ঞানের জগতে এদের ব্যাপারে সরব আলোচনা দেখে অনেকে মনে করতে পারে এরা সংখ্যায় অনেক বড়। এমনকি বুখারী খণ্ডের শেষ অধ্যায়টির নাম দেওয়া হয়েছে ‘কিতাবুত তাওহীদ ওয়ার রদ্দ আলাল জাহমিয়্যাহ’। ইমাম বুখারি জাহমিয়্যাহদের যুক্তি খণ্ডানোর বিষয়টি উক্ত অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন। আসলে ঐ পথভ্রষ্ঠ দলে অনুসারীর সংখ্যা ছিল অত্যন্ত নগণ্য। অতএব সরব আলোচনা সংখ্যাধিক্য নির্দেশ করে না। আর মুসলিম উম্মাহ্‌ ঐতিহাসিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিল।


সাধারণ মুসলমানেরা ঈমানের ৬টি মূল বিষয়ে বিশ্বাস করে, ইসলামের ৫টি স্তম্ভে বিশ্বাস করে। এটাই প্রকৃতপক্ষে ইসলাম এবং জটিল, দুর্বোধ্য আকীদা সাধারণ মুসলমানের অধ্যয়ন করা জরুরীও নয়। সুতরাং উম্মাহ্র অধিকাংশ মুসলমানই আল্লাহর রহমতপুষ্ট হবে। যেমনটি রাসূল (সা) বলেছেন, “ইন্না উম্মাতি উম্মাতি মারহুমাহ - নিশ্চয় আমার উম্মাহ রহমতপ্রাপ্ত, আশীর্বাদপুষ্ট”।


চতুর্থত, উক্ত হাদিসের একটি অংশের ভয়াবহ ইখতেলাফী ব্যাখ্যা উম্মাহর মধ্যে বিরাজমান। ঐ হাদিসের এক অংশে বর্ণিত, “উক্ত দলগুলোর প্রতিটিই জাহান্নামে যাবে, শুধুমাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে”। ইমাম আশ-শাওকানি হাদিসটির এই অংশটিকে বানোয়াট বলেছেন, আর ৭৩ দলের হাদিসটিকে বিশুদ্ধ হিসেবে মত দিয়েছেন। অন্যান্য মুহাদ্দিস ও বিশেষজ্ঞরা উক্ত অংশকেও বিশুদ্ধ বলেছেন। যদি উক্ত অংশ বিশুদ্ধও হয়, এরপরও কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। কিভাবে???


কারণ আমাদের আকীদা বা বিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহ যা কিছু পুরষ্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন, তা বাস্তবায়ন করা নিজের উপর আবশ্যক করে নিয়েছেন। আর আল্লাহ যেসব শাস্তির কথা বর্ণনা করেছেন তা বাস্তবায়ন করা আল্লাহর উপর আবশ্যক নয়। আমরা জানি, মহান রবের দয়া তাঁর হুঁশিয়ারি ও শাস্তির ভয়াবহতাকে অতিক্রম করে। দয়াময় আল্লাহ যদি কোন শাস্তির কথা বলে ও ক্ষমা করে দেন, তা আল্লাহর পূর্ণাঙ্গতা। ধরুণ, পিতা তার সন্তানকে বলল, “যদি তুমি এটা কর, আমি তোমাকে এই শাস্তি দেব”। ছেলে করে ফেলল এবং সুন্দর একটা ওযর দেখিয়ে পিতার কাছ থেকে ক্ষমা পেয়ে গেল। পিতা শাস্তির কথা বললে ও শাস্তি বাস্তবায়ন করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য নয়। এক্ষেত্রে পিতার শাস্তি না দেওয়াটা তার দুর্বলতা নয়। প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো বিবেচনার যোগ্য। কেউ মদ্যপান করলেই আল্লাহ শাস্তি দিবেন ব্যাপারটি এমন নয়, তিনি ক্ষমাও করে দিতে পারেন। সেজন্য আলেমদের মত আল্লাহ তাআলা বাকি ৭২ দলের প্রত্যেক ব্যক্তির ভাল কাজ ও খারাপ কাজ আলাদাভাবে হিসেব করবেন এবং সে অনুসারে পুরষ্কার ও শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।


উক্ত হাদিসের ব্যাপারে ইবনে তাইমিয়া কী বলেছেন জানেন? যারা ইবনে তাইমিয়াকে চিনেন তারা জানেন তিনি তার সিদ্ধান্তে খুবই কড়া এবং সোজাসাপটা ছিলেন। আপনি জানেন তিনি কি বলেছেন তাঁর মাজমু-আল-ফাতওয়া গ্রন্থে? তিনি বলেছেন,


“কেবল সঠিক দলে থাকার কারণে কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না কিংবা জান্নাতে সর্বোচ্চ আসন পাবে না। হতে পারে কোন ব্যক্তি ভুল ফিরকায় থাকার পরও ভাল কাজ এবং ইখলাসের কারণে জান্নাতে অধিকতর উচ্চ আসনে দাখিল হতে পারে আবার কেউ সঠিক দলে থেকেও গুনাহ এর কাজে লিপ্ত থাকলে বা অন্তরে অহংকারবোধ থাকলে সে জাহান্নামে যেতে পারে বা জান্নাতে নিম্নতর আসনে দাখিল হতে পারে।“


এটি খুবই মৌলিক একটি নীতি যা আমাদের বুঝা উচিত এবং প্রয়োগ করা উচিত। সংক্ষেপে বলতে গেলে, একটি বাক্যাংশ সমস্যাপূর্ণ বলে উম্মতের অধিকাংশ আল্লাহর অনুগ্রহ, রহমত থেকে বঞ্চিত হবে এটা বলা যায় না।


পঞ্চমত, ধর্মতত্ত্বে মতামতের ভিন্নতার কারণে বিবিধ ফিরকা গড়ে উঠতে পারে না। ইখতেলাফ মানে ভিন্ন দল তা হতে পারে না। সাধারণভাবে বলতে গেলে, ঐতিহাসিকভাবে মুসলিম উম্মাহ এক সুন্দর বৈচিত্রতার ঐতিহ্য লালন করেছে। ফিরকা-দলাদলির উপদ্রব বাড়িয়েছে কেবলমাত্র আকীদা, আমলের বড় বিষয়গুলো। উদাহরণস্বরুপ, তাক্‌দির নিয়ে উদ্ভব ঘটেছে দুটো ফিরকার। একদল তাক্‌দিরকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস  করে, আর অন্য দল তা করে না। মুসলিমরা ছোট ছোট বিষয়গুলোকে পরিণত করেছে আকীদা ও ধর্মতত্ত্বের বড় আলোচনায়। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, নামায কিভাবে পড়বেন, আমিন জোরে পড়বেন না আস্তে পড়বেন, তারাবিহ ৮ রাকাত না ২০ রাকাত, চাঁদ দেখা নিয়ে দ্বন্ধ ইত্যাদি। এক মহা মুশকিল। চাঁদ দেখা নিয়ে আলাদা সম্প্রদায় গড়ে উঠতে পারে না। দেখতে হবে কোন মত পার্থক্যগুলো বড় আর কোনগুলো ছোট বা অতি নগণ্য। তাহলে উপসংহার কি?


প্রথমত, মুসলিম উম্মাহর বিশাল অংশ আকায়েদ ও ফিক্‌হী ইখতেলাফের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামায় না। সাধারণ মুসলিমদের আকীদার সূক্ষ্ম বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করার দরকার ও নেই। গড়পড়তা মুসলিম যদি ইসলামের ছয়টি স্তম্ভ মানে, নামায পড়ার চেষ্টা করে, পাপ থেকে বিরত থাকার তদবির চালায়; তাহলে সে ভাল মুসলিম। অপরপক্ষে, যারা ইসলামিক ডিসিপ্লিন নিয়ে পড়াশুনা করেন, যারা মাদ্‌রাসায় পড়ালেখা করেন, যাদেরকে মসজিদে ভূমিকা রাখতে হয়; তাদেরকে অবশ্য যে কোন বিষয়ে একটা তাত্ত্বিক অবস্থান নিতে হয়। ওলামারা নয় বরং তাদের অনুসারীরা ফিরকাগত সহিংসতায় সবচে বেশি জড়ায়। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, এক দল বিশ্বাস করে সাহাবারা মুহাম্মদ (সা) এর পরে মুসলিম উম্মাহর সবচে ভাল মানুষ এবং উক্ত বিশ্বাস তাদের ধর্মের অংশ। অপরদিকে অন্য দল আছে যারা বলে, “সাহাবীদের মধ্যেও অনেকে ছিল যারা রাসূল (সা) কে মানত না এবং সাহাবীদের অনেকে রাসূলের অবাধ্য হয়েছিল”। তাহলে এ ব্যাপারে কি করা যায়?


দ্বিতীয়ত, আমরা আমাদের ভেতর অনেক বড় সমস্যা উপেক্ষা করতে পারি না। ইসনাকে আমি ধন্যবাদ জানাই তাদের সাহসের জন্য, এই ধরণের বিষয়ের খোলামেলা আলোচনার সুযোগ তৈরির জন্য। সংলাপে সমাধানের সম্ভাবনা লুকায়িত। কুরআন ও সুন্নাহ অন্য ফিরকার উপর নিজের আকীদা চাপানোর জন্য কখনো শারীরিকভাবে আঘাতের অনুমোদন দেয় নি। খুব পরিস্কারভাবেই বলি, আমি সুন্নি। আমার স্পেশেলাইজেশন আকীদার উপর। আমি সুন্নি মতাদর্শ মানি, প্রচার করি ও শিক্ষা দিই। আমি শিয়াদের আকীদার সাথে ভিন্ন মত পোষণ করি। তাই বলে আমি কখনো শিয়াদের উপর হামলা করা, তাদের মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়া বা বোমা হামলার অনুমতি দিতে পারি না। আমি যতই আমার আকীদার ব্যাপারে উৎসাহী হই না কেন আমি কারো উপর এই আকীদা জোর করে চাপানোর অনুমোদন দিতে পারি না, বোমা হামলা সমর্থন করতে পারি না। যারা বোমার সাহায্যে, তলোয়ারের সাহায্যে অন্যের উপর নিজের আকীদা চাপাতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমাকে সোচ্চার হতে হবে। আপনি যা বিশ্বাস করতে চান তা বিশ্বাস করুন। যখন যুক্তি-তর্কে করতে চান তাও করুন কিন্তু অন্য জন যা বিশ্বাস করতে চাই, তা তাকে বিশ্বাস করার স্বাধীনতা দিন।


তৃতীয়ত, সমাজের দা’য়ী, শাইখ, আয়াতুল্লাহ ও ওলামাদের অত্যন্ত সতর্কভাবে তাদের বক্তব্য পেশ করতে হবে। প্রত্যেক বিতর্কিত বিষয় আলোচনার একটা সময়, শ্রোতা, ভাষা ও পদ্ধতি আছে। যদিও ওলামারা সহিংসতা প্রচার না করে, তথাপি তাদের জ্বালাময়ী বক্তৃতা তাদের অনুসারীদেরকে শারীরিক হামলা চালাতে উস্কে দিতে পারে। ইসলামি চিন্তাবিদ ও ওলামাদের উচিত হিকমাহর সাথে তাদের আদর্শ প্রচার করা। ভাই ও বোনেরা, অতীত জীবনের ভুল থেকে আমিও প্রচুর শিখেছি। দুই দশক আগে আমি নিজেও বিদ্রোহাত্মক বক্তৃতার স্ফূলিঙ্গ ছড়াতাম। আমি যা বলেছি তার জন্য আমি আজও অনুতপ্ত। এসব ছিল তরুণ বয়সের কথা। আমি অজুহাত দিতে পারি এসব আমার ২০-২২ বছর বয়সের কথা কিন্তু তা আমার ভুল শুধরাবে না। ইস! আমি যদি আমার কথাগুলো ফিরিয়ে নিতে পারতাম!! দা’য়ী ইলাল্লাহ এবং ওলামাদের আদর্শ প্রচারে স্বাধীনতা থাকলেও ঘৃণা, বিদ্বেষ, সহিংসতা ও রেষারেষি ছড়ানোর অনুমতি ইসলামে নেয়।


চতুর্থত, একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যারা আকীদা নিয়ে উৎসাহী আমার মত তাদের মনে রাখা উচিত ইসলাম সবসময় মহৎ কোন উদ্দেশ্যে একে অপরকে সহযোগিতার তাগিদ দিয়েছে সে যেই দল, মত বা ধর্মেরই হোক। কোরআনের ভাষায়, “তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ব্যাপারে একে অপরকে সহযোগিতা করো, কিন্তু পাপাচার ও সীমালঙ্ঘনে মদদ দিয়ো না”। আপনার আকীদা ও সামাজিক পরিবেশ যাই হোক, বড় লক্ষ্যে একে অপরকে সহযোগিতা করা যায়। কিছু বিষয়ে আমাদের একে অপরকে সহযোগিতা করা উচিত। সহযোগিতার স্বার্থে সমজাতীয় হওয়া অত্যাবশ্যক নয়। একটু পিছনে ফিরে যায়, আমার পিতা ১৯৬৩ সালে টেক্সাসে আসেন। তিনি বলেন- অতীতে ১৯৬০ ও ৭০ এর দশকে আমেরিকার মুসলমানদের মধ্যে নিজেকে সুন্নি, শিয়া, বেরলভী, আহলে হাদিস পরিচয় দেওয়ার মত বিলাসিতা ছিল না। সকল আমেরিকান মুসলিম মিলে তখন তারা মসজিদ নির্মাণে ব্যস্ত ছিলেন। তখনকার অল্পকয়েক মুসলিমরা যদি ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত, তাহলে আর মসজিদ নির্মাণ করা সম্ভব হতো না।


এরপর ১৯৭০ সালে এবং ৮০ এর দশকের গোড়ায় আমেরিকায় মুসলিম অভিবাসির অনুপ্রবেশ বাড়তে লাগল এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভাজনও প্রকাশ পেতে শুরু করল। আলহামদুলিল্লাহ তখনও কোন সমস্যা হয় নি; মুসলিম ও শিয়া যে যার মত চলতে লাগল। কিন্তু সংকট তখনই তৈরি হয় যখন সরকার শরীয়া নিষিদ্ধ করতে চাই বা মুসলিমদের উপরে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত নেয়; তখন সকল মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য থাকা চাই, সম্মিলিত অবস্থানে সবার একটি কণ্ঠস্বর থাকা চাই। সময় ও স্থান বুঝে সকলকে হাতে হাত মিলানো প্রয়োজন। ভিন্ন ভিন্ন মসজিদ হলেও কোন সমস্যা নেই। ব্যবধানগুলো ভুলে এক হওয়া মানে এই নয় যে, মতের পার্থক্যগুলোকে ছোট করে দেখা হচ্ছে। বরং এর দ্বারা আমরা ছোট বিষয়ের উর্ধ্বে উঠে বড় বিষয় দেখবো।


শিয়া–সুন্নি সকলের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত সাহাবী হযরত আলী (রঃ) এর একটি উদাহরণ টেনে আমার বক্তব্য শেষ করব। আলী (রঃ) এর খেলাফতের আমলে একদল তাঁর আনুগত্য থেকে বের হয়ে গেল। ইতিহাস তাদেরকে খারেজি হিসেবে চিহ্নিত করে। আলী (রঃ) খারেজিদের সাথে যে আচরণ করেছিলেন, তা আমরা সকলে ধারণ করতে পারি। তিনি খারেজিদের কাছে ধর্মতত্ত্ববিদ ও জ্ঞানী ব্যক্তি ইবনে আব্বাসকে পাঠালেন, যাতে তাদের সাথে প্রকাশ্য বিতর্কে অংশগ্রহণ করতে পারে। ঐ বিতর্কে ইবনে আব্বাস তাদেরকে বুঝালেন এবং তৎক্ষণাৎ ওখানে খারেজিদের এক তৃতীয়াংশ মুসলিমদের দলে ফিরে আসল। বাকি দুই তৃতীয়াংশের কাছে আলী আবারো আরেকজন দূত পাঠালেন। তিনি তাদেরকে বলেছিলেন- আপনারা যে আকীদা বিশ্বাস করেন, তা আমরা করি না। আপনাদের উপরে আমাদের বিশ্বাস চাপানোর কোন অধিকার নেই। তবে আপনারা আমাদের উপর যতক্ষণ পর্যন্ত কোন ধরণের হামলা চালাবেন না ততক্ষণ পর্যন্ত আমরাও কোন ধরণের হামলা চালাবো না। আলী (রঃ) এর এই দর্শন আমাদের ভেতরে ধারণ, পালন ও লালন করতে হবে।


ভাই ও বোনেরা, মতানৈক্যের এই ধারা হাজার বছর ধরে চলে আসছে। মুসলিম উম্মাহর ভেতরকার এই ফিরকা ও দলাদলি কখনো সম্পূর্ণরূপে দূর হয়ে যাবে না। এখন কথা হলো, আমরা নিজেদের মধ্যে ঘৃণা ছড়াছড়ি করলে কী এই বিভাজন বিলীন হয়ে যাবে? একটু বাস্তবতা বুঝার চেষ্টা করুন। তার চেয়ে বরং আমরা নিজেদের কাজ নিজেরা করে যাই এবং পৃথিবীটাকে একটু ভাল অবস্থায় রেখে যায়। আল্লাহকে আমাদের কাজের বিচারক বানাই। এই দুনিয়ায় আমরা কিছু বিষয়ে একমত হতে পারি যেমনঃ আমরা একে অপরকে হত্যা করবো না বা শারীরিকভাবে আঘাত করবো না ইত্যাদি।


ভাই ও বোনেরা, অবশেষে বলতে চাই দলাদলি ও সাম্প্রদায়িকতার সবচে বড় ক্ষতির দিক অহমিকা বা আত্মম্ভরিতা। আল্লাহর চোখে অহংকার অত্যন্ত ভয়াবহ অপরাধ। যে কেউ তার আকীদা ও ধর্মতত্ত্ব সঠিক মনে করতে পারে। তার মানে যেন এই না হয়, যে আমার মতের সাথে যে ভিন্ন মত পোষণ করবে, আমি তার চেয়ে উত্তম। হতে পারে আমার বিশ্বাস সহীহ, কিন্তু আমি ব্যক্তি হিসেবে ভাল না। আকীদা ও ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা জরুরী। সঠিক পথে থাকার এই আত্ম-নিশ্চয়তা আমাকে জাহান্নামে ঠেলে দিতে পারে। আকীদার বিষয়ে বিনয়ী হওয়া বাঞ্চনীয়।


যদি আমি আর আপনি দুজনেই মনে করি নিজ নিজ অবস্থানে কেবল আমিই সঠিক তবে আমাদেরকে সেই কুরআনের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে যা রাসূল (সঃ) এর জীবনে বাস্তবায়িত হয়েছে, এমন সত্য যা বিনয়ের দিকে ধাবিত করে, অহংকার দূর করে। আমাদের সেই নিয়মে ফিরে যেতে হবে যা রাসূল (সা) ও ঈসা (আ) আমাদের শিখিয়েছেন, প্রত্যেক নবী শিখিয়েছেন- অন্যদের সাথে ঠিক ঐ রূপ আচরণ করুন, যেমনটি আপনি নিজে তাদের কাছ থেকে আশা করেন। এটিই স্বর্ণসূত্র, সেই নিয়ম যা আল্লাহ এবং তাঁর দূত মুহাম্মদ (সা) আমাদের জন্য দিয়েছেন এবং যা রহমত ও সহমর্মিতার নিয়ম।  


উম্মাহ তেহাত্তর দলে বিবক্ত হবে মর্মে বর্ণিত হাদীস প্রসঙ্গে:‎


যে হাদীসে বলা হয়েছে, উম্মাহ সত্তরটির অধিক দলে বিভক্ত হবে তার সবগুলো ‎জাহান্নামী হবে কেবল একটি ‎মাত্র দল মুক্তি পাবে। এ হাদীসটি প্রমাণিত কি না এবং তার ‎প্রকৃত তাৎপর্যই বা কি? সে ব্যাপারে অনেক কথা রয়েছে:‎

ক) এখানে যে বিষয়টি সর্বাগ্রে জেনে নেয়া দরকার তা হলো; এ হাদীসটির বিষয়বস্তু অত্যন্ত ‎‎গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্বেও তা ‎বুখারী মুসলিমের কোথাও বর্ণিত হয়নি। এর মানে হলো এ ‎হাদীসটি ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম কারো শর্তে উপনীত ‎হয় নি। ‎

এটা সত্য যে তারা দুজনেই সকল সাহীহ হাদীস বর্ণনা করেন নি। তবে এটাও সত্য যে, ‎তারা দুজনেই জ্ঞান যগতের এমন ‎কোন অধ্যায় নেই যা গুরুত্বপূর্ণ’ আর তাতে তারা কিছু ‎না কিছু এমন কি একটি হাদীসও বর্ণনা করার চেষ্টা করেন নি। ‎‎

খ) হাদীসটির কোন কোন বর্ণনায় একথা উল্লেখ করা হয় নাই যে, একটি মাত্র দল ব্যতীত ‎বাকি সকল দল জাহান্নামী ‎হবে। সে বর্ণনায় কেবল তারা নানা দলে বিভক্ত হবে আর দলের ‎সংখ্য উল্লেখ করা হয়েছে।  এটা হচ্ছে আবু হুরাইরা ‎হতে বর্নিত সে হাদীস যা আবু ‎‎দাউদ, তিরমিযী ইবন মাজাহ ইবন হিব্বান, ও হাকেম বর্ণনা করেছেন। তাতে বলা ‎হয়েছে, ‎‎‘ইহুদীরা একাত্তর বা বাহত্তর দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে ছিল। আর খ্রিস্টানরাও ‎একাত্তর বা বাহত্তর দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে ‎ছিল। আর আমার উম্মাত তেহাত্তর দলে বিভক্ত ‎হবে।’‎

এ হাদীস সম্পর্কে তিরমিযী যদিও মন্তব্য করেছেন যে, হাদীসটি হাসান সাহীহ। আর ইবন ‎হিব্বান ও হাকেম সাহীহ বলে ‎মন্তব্য করেছেন-হাদীসটির সূত্রের ভিত্তি হলো মুহাম্মদ ইবন ‎আমর ইবন আলকামা ওয়াক্কাস আল লাইসী। যারা ‘তাহযীবুত ‎তাহযীবে’ তার জীবনী ‎পড়েছেন তারা জানেন যে, লোকটির ম্মৃতি শক্তি সর্ম্পকে নানা কথা রয়েছে। তাছাড়া কেউ ‎তাকে ‎পূরোপুরী ভাবে নির্ভরযোগ্য বলে মন্তব্য করেন নাই। তারা যা উল্লেখ করেছেন তার ‎সার কথা হলো; তিনি তার চেয়ে ‎দুর্বলদের তুলনায় অগ্রধিকার প্রাপ্ত। একারণেই হাফেয ‎ইবন হাজর ‘তাকরীবুত তাহযীবে’ কেবল এতটুকু বলেছেন যে, তিনি ‎সত্যবাদী তবে তার ‎কিছু সন্দেহজনক ব্যাপার আছে। এ ধরণের ক্ষেত্রে কেবল সতবাদী হওয়া যথেষ্ট নয়, তার ‎সাথে ‎অবশ্যই প্রখর ম্মৃতির অধিকারী হওয়াও অবশ্যক। আর যদি তার সাথে সন্দেহজনক ‎ব্যাপার থাকে তা হলে কি করে তার ‎হাদীস গ্রহণযোগ্য হতে পারে? একথাও পরিজ্ঞাত যে ‎ইমাম তিরমিযী, ইবন হিব্বান ও হাকেম হাদীসের উপর হকুম দেয়ার ‎ব্যাপারে সহজনীতি ‎অবলম্বনকারীদের অর্ন্তভুক্ত। হাকেম সম্পর্কে বলা হয়েছে তিনি সাহীহ সাব্যস্ত করার ‎ব্যাপারে প্রচুর ভুল ‎করেছেন।‎

তিনি এ হাদীসটি সাহীহ মুসলিমের শর্তে উপনীত বলে মন্তব্য করেছেন। কারণ মুহাম্মদ ‎ইবন আমর এর হাদীস দ্বারা ‎ইমাম মুসলিম দলিল দিয়েছেন। তবে হাকেমের এ কথা ‎প্রত্যাখ্যান করেছেন আল্লামা যাহাবী এ কথা বলে যে, তিনি একক ‎রাবী হলে সে ক্ষেত্রে ‎ইমাম মুসলিম তার হাদীস গ্রহণ করেন নাই। বরং তার সাথে অন্য রাবী থাকলে কেবল ‎তখনই ‎গ্রহণ করেছেন (৬/১)। তাছাড়া এ হাদীসটি আবুহুরাইরার বর্ণনায় ‘কেবল একটি ‎‎দল ব্যতীত বাকি সকল দল জাহান্নামী ‎হবে’ এ অতিরিক্ত অংশটুকু নেই। অথচ এ ‎বাক্যটির উপরেই গোটা বিতর্ক /ব্যাপারটি নির্ভর করে। ‎

হাদীসটি এই অতিরিক্ত অংশ সহ বেশ কয়জন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। তাদের মাঝে ‎আছেন আব্দুল্লাহ ইবন আমর, ‎মুআবিয়া, আউফ ইবন মালেক, ও আনছ (র)। তবে সব ‎‎গুলো হাদীসের সনদই দুর্বল। তাই সবগুলো হাদীসকে পরস্পর ‎মিলিয়ে তবে তাকে সাহীহ ‎সাব্যস্ত করা হয়েছে।‎

আমি মনে করি অনেকগুলো সূত্রের উপর নির্ভর করে একটি হাদীসকে সাহীহ সাব্যস্ত করা ‎সর্বক্ষেত্রে সঠিক নয়। কারণ ‎এমন অনেক হাদীস আছে যার একাধীক সনদও আছে তবুও ‎হাদীসগুলোকে দুর্বল বলে মন্তব্য করা হয়েছে। তাখরীজ ও ‎ইলালের গ্রন্ত দেখলে তার প্রমাণ ‎মিলে। অনেকগুলো সনদ থাকলে একটি হাদীসকে সাহীহ সাব্যস্ত করে তখনই গ্রহণ করা ‎‎যায়; যখন তার বিরোধী কোন হাদীস না থাকে। আর অর্থ বা তাৎপর্য সম্পর্কেও কোন ‎সমস্যা না থাকে।  ‎

অথচ এক্ষেত্রে একটি বিরাট নমস্যাও রয়েছে। সেটি হলো; এক দিক থেকে ইহুদী ‎খ্রিস্টানদের চেয়ে বেশি দলে এ উম্মাহ ‎বিভক্ত হবে, আবার অন্য দিকে এ সকল দলের ‎মধ্যে একটি দল ব্যতীত বাকি সবগুলো দল ধ্বংস হবে ও জাহান্নামী হবে, ‎এমন  ধরণের ‎বিরাট সমস্যাও রয়েছে। এটা এমন একটি ব্যাপার যার কারণে সকল দল দাবি করছে যে, ‎তারাই একমাত্র ‎মুক্তি পাবে, আর বাকি সবাই ধ্বংস হবে। এটি এমন একটি দাবি যা ‎উম্মঠতকে দ্বিধা বিভক্ত করছে, এবং এক দল অপর ‎দলকে আঘাত ও আক্রমণ করছে। ‎যার ফলে গোটা উম্মাহ দুর্বল হয়ে পড়ছে, আর তার শত্রæরা শক্তিশালী হচ্ছে। এবং ‎‎উম্মাহকে আঘাত করার সাহস পাচ্ছে।‎

একারণেই আল্লামা ইবনুল ওয়াযীর সাধারণভাবে গোটা হাদীসটিইর উপর আর বিশেষভাবে ‎এই অতিরিক্ত অংশের উপর ‎আঘাত করেছেন। কারণ এর কারণে উম্মাহর এক অংশ ‎অপর অংশকে বিভ্রান্ত বলে অবহিত করছে। বরং এক অংশ ‎অপর অংশকে কাফের পর্যন্ত ‎বলছে।‎

তিনি তার ‘আল আওয়াসেম’ নামক গ্রন্থে এ উম্মাহর ফযিলত ও মর্যাদা এবং এর কাউকে ‎কাফের বলার বিপদ সম্পর্কে ‎সতর্ক করতে গিয়ে বলেন: ‘সাবধান ‘একটি দল ব্যতীত বাকি ‎সকল দল ধ্বংস হবে এমন কথা বলার মত ধোকায় ‎পড়বেন না। কারণ হাদীসের অতিরিক্ত ‎অংশটুকু সাহীহ নয়; ফাসিদ। তা মুল্হিদ নাস্তিকদের (হাদীসে অনু প্রবেশ কৃত) ‎বানানো ‎কথা হবার সম্ভবনা মুক্ত নয়।  ‎

তিনি আরো বলেন যে, ইবন হাযম থেকে বর্ণিত আছে যে, তার মতে ঐ অংশটুকু জাল, ‎মাওকুফও নয়; মারফুও নয়। ‎তেমনিভাবে কাদারিয়া মারজিয়া আশআরীয়া সর্ম্পকে যেসব ‎হাদীস বর্ণিত হয়েছে তাও দুর্বল শাক্তশালী নয়।‎ [‎ ‎‎আল ‎আওয়াসেম ওয়াল কাওয়াসেম, খ:১,পৃ:১৮৬‎]‎

গ) অতিত ও বর্তমান যুগের অনেক আলেম এ হাদীসটিকে সনদের দিক থেকে প্রত্যাখ্যান ‎করেছেন। আবার কেউ কেউ ‎মতন ও অর্থের দিক থেকেও প্রত্যাখ্যান করেছেন।‎ [ ‎এ হাদীসের মতন প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন যাগে। সেটি হলো এই যে, ‎আল্লাহ তাআলা যে উম্মতটিকে অন্যান্য ‎উম্মাতের উপর সাক্ষ্য হিসেবে মর্যাদা দান করলেন, যাদেরকে তিনি শ্রেষ্ট উম্মত ‎মানুষের কল্যানের জন্যই ‎তাদের সৃষ্টি বলে অবহিত করেছেন, তারা দলাদলির ক্ষেত্রে ইহুদী খ্রিস্টানের চেয়ে খারাপ, এমন কি ‎তারা ‎‎দলাদলির দিক থেকে ইহুদী খ্রিস্টানদের চেয়ে বেশি দলে বিবক্ত হবে, এ হাদীস থেকে এ ব্যপারটি অবশ্যক ‎হয়ে ‎পড়ে।‎

‎      অথচ আল কুরআন ইহুদীদের সম্পর্কে বলেছে, ‘আর আমি তাদের মধ্যে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত শত্রæতা ও ঘৃণা ‎‎‎ঢেলে দিয়েছি।’ [সূরা আল মায়েদা:৬৪] আর খ্রিস্টানদের সম্পর্কে বলেছে, ‘আর যারা বলে, ‘আমরা নাসারা’, ‎আমি তাদের ‎থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তার ‎একটি অংশ ভুলে গিয়েছে। ‎ফলে আমি তাদের মধ্যে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত শত্রæতা ও ঘৃণা উসকে দিয়েছি ‎এবং তারা যা করত সে সম্পর্কে অচিরেই ‎আল্লাহ তাদেরকে অবহিত করবেন।’[ সূরা আল মায়েদা:১৪] ‎

‎      আল কুরআনে মুসলিম উম্মাহ এ রূপ হতে পারে এ ধরণের কোন বক্তব্য আসে নাই। বরং তাতে এ উম্মাহকে ‎‎তাদের পূর্বের উম্মতেরা যেভাবে দলাদলি করে বিভক্ত হয়ে পড়ে ছিল সে রকম দলাদলি করে বিভক্ত হয়ে ‎পড়তে নিষেধ ‎করা হয়েছে। হাদীসটিতে আরো বলা হয়েছে যে, ‘সকল দল জাহান্নামী হবে কেবল একটি ‎মাত্র দল ব্যতীত’। এ বক্তব্যটি এ ‎উম্মাহর ফযিলত সম্পর্কে যেসব বক্তব্য হাদীসে আছে তার সাথে আদৌ ‎সংঘতিশীল নয়। যেমন: এ উম্মাহ রহমত প্রাপ্ত ‎দল, জান্নাতবাসীদের তিন ভাগের এক ভাগ বা দুই ভাগের ‎এক ভাগ তারাই হবেন, ইত্যাদি।‎

‎       তাছাড়া ইহুদী খ্রিস্টানরা সত্তেরের অধিক দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে ছিল এমন কথা তাদের উভয় সম্প্রদায়ের ‎‎ইতিহাস থেকে জানা যায় না। বিশেষত ইহুদীরা এত দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে ছিল তা তাদের ইতিহাস থেকে ‎‎মোটেও প্রমাণ ‎করা যায় না।] ‎

এই ‎‎যে আবু মুহাম্মদ ইবন হাযম তিনি যারা অকীদাগত কারণে-তার কিছু তিনি উল্লেখ ‎করেছেন- অন্যদেরকে কাফের ‎বলে ঘোষণা করে; তাদের চরমভাবে বিরোধিতা করেছেন। ‎আর তারা যে সব দলিলের উপর ভিত্তি করে এরূপ কাফের ‎বলার মত কাজ করে তার ‎মধ্যে হতে এমন দুটি হাদীসও উল্লেখ করেছেন যা তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ‎সাল্লাম ‎এর হাদীস বলে দাবী করে থাকেন। হাদীস দুটি হলো;‎

‎১.  ‘কদরীয়া ও মারজিয়ারা এ উম্মাহর মাজুসী বলে সাব্যস্ত।’‎

‎২. ‘এ উম্মাহ সত্তরের অধিক দলে বিভক্ত হবে, সকল দল জাহান্নামী হবে একটি দল ‎ব্যতীত, সেটি জান্নাতী হবে।’ ‎

আবু মুহাম্মদ আরো বলেন: ‘এ দুটি হাদীসের একটিও সনদের দিক থেকে আসলে সহীহ ‎নয়। আর  যে সব হাদীস ‎এরকম তা যারা খবরে ওয়াহেদ গ্রহণ করেন তাদের কাছেও ‎গ্রহণযোগ্য নয়, আর যারা গ্রহণ করেন না তাদের কাছে ‎কিরূপ হবে? (তাও অনুমেয়ে।)‎

ইয়ামেনী মুজতাহিদ ইমাম হাদীস শাস্ত্রের সেবক বুদ্ধিবৃত্তি ও হাদীস শাত্র উভয় রকম ‎জ্ঞানের অধিকারী মন্ত্রী মুহাম্মদ ইবন ‎ইবরাহীম তার ‘আল আওয়াসেম ওয়াল কাওয়াসেম’ ‎নামক গ্রন্থে মুআবিয়া (র) যে সব হাদীস বর্ণনা করেছেন তার ‎আলোচনা করতে গিয়ে তিনি ‎বলেন: তার মধ্যে (অষ্টম হাদীসটি হলো;) সত্তরের অধিক দলে এ উম্মাহ বিভক্ত হওয়া ‎এবং ‎তার মধ্যে একটি মাত্র দল ব্যতীত বাকি সবগুলা দল জাহান্নামী হওয়া সংক্রান্ত ‎হাদীসটি সম্বন্ধে বলেন: ‘এ হাদীসটির ‎সনদে একজন নাসেবী ‎ আছেন।[ নাসেবী হচ্ছে এমন একটি বিভ্রান্ত সম্প্রদায় যারা আলী (র)কে গালাগাল করত।‎] তার ‎‎হাদীসটি মুআবিয়া থেকে সাহীহ সাব্যস্ত হতে পারে না। ইমাম তিরমিযী আব্দুল্লাহ ইবন ‎আমর ইবন আস থেকে অনুরূপ ‎হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি তারপর বলেছেন: এটি ‎একটি গরীব হাদীস। তিনি তা কিতাবুল ঈমানে আফ্রিকীর সূত্রে ‎বর্ণনা করেছেন। তার ‎নাম হলো আব্দুর রহমান ইবন যিয়াদ। তিনি আব্দুল্লাহ ইবন ইয়াযীদ থেকে মুআবিয়া থেকে ‎‎হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর ইবন মাজাহও আউফ ইবন মালেকের সূত্রে আনাছ থেকে ‎অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ‎তিনি বলেন: এতে সাহীহ হাদীসের শর্তে উপনীত হয় ‎এমন একটি হাদীসও নেই। এ কারণেই বুখারী মুসলিম তার কোন ‎হাদীস বর্ণনা করেন ‎নি। তিরমিযী তার মধ্যে মুহাম্মদ ইবন আমর ইবন আল কামার সূত্রে আবু হুরাইরা থেকে ‎বর্ণিত ‎হাদীসটি সাহীহ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে সে হাদীসে ‘একটি দল ব্যতীত বাকি ‎সকল দল জাহান্নামী হবে’ এ কথাটি ‎নেই। ইবন হাযম থেকে উল্লখ আছে যে, এই ‎অতিরিক্ত অংশটুকু জাল। ‘বাদরুল মুনীরের’ লেখকও একথা বলেছেন।’ ‎‎[ইবনুল ওয়াযীর, আল আওয়াসেম ওয়াল কাওয়াসেম, সম্পাদনা শায়খ শোআইবর আরনূউত, (খ:৩,পৃ:১৭০-‎‎১৭২) তিনি ‎এখানে শায়খ নাসের উদ্দিন আলবানীর বক্তব্য খÐন করেছেন। নাসির উদ্দিন আলবানী তার ‘আস ‎সাহীহ’ এর প্রথম খÐ ‎৩য় অংশে (৩/১৯-২০) বলেছেন যে, ইবনুল ওয়াযীর হাদীসটি মতনের দিক থেকে ‎প্রত্যাখ্যান করেছেন, সনদের দিক ‎থেকে নয়। আমি জানি না তিনি একথা কি করে বললেন?‎]‎

হাফেয ইবন কাসীর তার তাফসীরে সূরা আল আনআমের‏﴿ أَوۡ يَلۡبِسَكُمۡ شِيَعٗا وَيُذِيقَ ‏بَعۡضَكُم بَأۡسَ بَعۡضٍۗ ﴾ [الانعام: ٦٥] ‏‎ আয়াতটির ‎তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‎আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে নানান সূত্রে বর্নিত এক হাদীসে আছে, তিনি বলেছেন: ‎‎‘এ ‎উম্মাহ অচিরেই তেহত্তর দলে বিভক্ত হবে। সবগুলো দল জাহান্নামী হবে কেবল একটি ‎মাত্র দল ব্যতীত।’ ‎ তিনি এর ‎পর আর কোন কথা বলেন নাই। তিনি এ আয়াতের ‎তাফসীরে আয়াত সংক্রান্ত হাদীস ও আছর উল্লেখ করে দীর্ঘ ‎আলোচনা করা সত্বেও ‎হাদীসটি সাহীহ না হাসান তেমন কোন কথা বলেন নাই।  ‎

ইমাম শাওকানী এ হাদীস সংক্রান্ত ইবন কাসীরের কথা উল্লেখ করার পর বলেন: আমি ‎বলেতে চাই ‘একটি মাত্র দল ‎ব্যতীত সবগুলো দল জাহান্নামী হবে’। এ অংশটুকু একদল ‎মুহাদ্দিস দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন। বরং ইবন হাযম তা জাল ‎বলেও মন্তব্য করেছেন।’ [‎

হাদীসটিকে তার একাধিক সূত্র থাকার কারণে কোন কোন আলেম হাসান বলে মন্তব্য ‎করলেও যেমন হাফেয ইবন হাজর, ‎আর কেউ কেউ সাহীহ বলে মন্তব্য করলেও যেমন ‎শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া এটা প্রমাণ করে না যে, এভাবে এবং ‎এত দলে এউম্মাহর ‎বিভক্ত হওয়া কেয়ামত পর্যন্ত অনিবার্য ও আবশ্যম্ভাভীভাবে হতেই থাকবে। কোন এক সময় ‎এভাবে ‎এত দলে উম্মাহ বিভক্ত হলেই হাদীসের বক্তব্য সঠিক বলে প্রমাণিত হবে।‎

এসব বাতিল দল কখনো কখনো দেখা যায়, আবার তাদের উপর হকপন্থীরা বিজয়ী হয়, ‎ফলে বাতিলরা চিরতরে বিদায় ‎হয়। আর কখনো ফিরে আসে না। অনেক বাতিল ফিরকার ‎‎ক্ষেত্রে কার্যতই এরূপ ঘটনা ঘটেছে। তাদের অনেকগুলা দল ‎ধ্বংস হয়েগেছে। সে সব ‎‎দলের অস্তিত্ব এখন আর বাকি নেই।‎

তাছাড়া এ হাদীসটি প্রমাণ করে যে, এসব দলের সবগুলোই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়া সাল্লাম এর উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত। ‎অর্থাৎ যারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন তাদের ‎অন্তর্ভূক্ত। কারণ হাদীসের বক্তব্য হচ্ছে ‘আমার উম্মাত’। এর মানে হচ্ছে ‎এসব দল ‎বিদাআতী হলেও মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যায় নাই। তারা মুসলিম উম্মাহর অংশ ‎হতেও বহির্গত নয়। ‎আর ‘তারা জাহান্নামী হবে’ মানে তারা কাফেরদের মত জাহান্নামে ‎চির স্থায়ী হবে না। বরং তাওহীদপন্থী গুনাহগাররা ‎যেমন জাহান্নামে যাবে এরাও তেমনি ‎জাহান্নামে যাবে।‎

হয়ত এদের জন্য কোন নবী বা ফিরিস্তা বা কোন মুমিন সুপারিশ করবে। হয়তবা তাদের ‎এমন কোন সৎকর্মও থাকতে ‎পারে যা তাদের অপরাধ মুচে দিবে। বা এমন আপদ বিপদ ‎‎থাকবে যার জন্য অপরাধ মুচে যাবে, ফলে তারা আযাব ‎থেকে মুক্তি পাবে।‎

হয়ত এমনও হতে পারে যে আল্লাহ তাআলা নিজ করুণা ও দয়ায় তাদের ক্ষমা করে ‎দিবেন। বিশেষত তারা যদি সত্য ‎জানার জন্য চেষ্টা করা সত্বেও তা না বুঝে বিপথগামী ‎হয়ে থাকে। আল্লাহ এ উম্মাতের ভুল-ভ্রান্তী এবং যে কাজ তারা ‎বাধ্য হয়ে করেছে তা ক্ষমা ‎করে দিবেন।‎

[ ড. ইউসুফ আল কারযাভী, শরীয়ত সম্মত মতদ্বন্দ্ব ও নিন্দিত দলাদলির কবলে ইসলামী জাগরণ]



মুহাদ্দিসগণের অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে

৭৩ ফেরকার হাদীসটি কতটুকু শুদ্ধ?

•••••

উম্মতে মুহাম্মদীর ৭৩ ফেরকায় বিভক্ত হবার একটি হাদীসের কথা বলে মুসলিম সম্প্রদায়গুলো বিশেষত সুন্নীদের বিভিন্ন গ্রুপ একে অপরকে জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করে। সেই সাথে তারা আহলে বায়েতকে এড়িয়ে সাহাবীদের অনুসরণের কথা বলে।

অথচ বাস্তবতা হলো হাদীসটি পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষত ৭২ দলের জাহান্নামী হওয়া ও সাহাবীদের পথে থাকার বাক্যটি। মুহাদ্দিসগণের অনেকে এটির সনদ ও মতন (বক্তব্য) নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ, এ হাদীসের মতনে যেমন গরমিল রয়েছে, তেমনি এর প্রতিটি সনদে প্রশ্নবিদ্ধ বর্ণনাকারী রয়েছে। বিশেষত সুনানে আবু দাউদ আমির মুয়াবিয়া থেকে বর্ণিত সনদে আযহার বিন আবু আবদুল্লাহ নামীয় একটি উগ্র নাসেবী রয়েছে, যে হযরত আলীকে (র.) প্রকাশ্যে গালি দিতো। 


তাছাড়া আনাস বিন মালেক থেকে বর্ণিত হওয়া হাদীসটির সনদগুলোতে অনেক দুর্বল রাবী রয়েছেন। যেমন ইয়াযীদ বিন আবান আর-রাকাশী, মুবারক বিন সাহীম, জিয়াদ আন-নুমাইরী, ইবনে লাহীআহ, সুলাইমান বিন তরীফ, নাজীহ বিন আবদুর রহমান ও সা‘দ বিন সাঈদ।  


আউফ বিন মালিক থেকে বর্ণিত হওয়া হাদীসটির সনদে রয়েছেন আব্বাদ বিন ইউসুফ নামের একজন দুর্বল রাবী, যিনি সবল রাবীদের বর্ণনার বিরোধী বর্ণনা এনেছেন। 


আবু উমামা থেকে বর্ণিত হওয়া হাদীসটির সনদে রয়েছেন আবু গালিব নামের একজন দুর্বল রাবী, যাকে ইমাম নাসাঈ ও ইমাম ইবনে হিব্বান দুর্বল বলে চিহ্নিত করেছেন। 


আর আবদুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত হওয়া হাদীসটির সনদে রয়েছেন আবদুর রহমান বিন জিয়াদ আফ্রিকী নামের একজন খুবই দুর্বল রাবী। 


হাদীস ও ইতিহাস বিশ্লেষকদের কেউকেউ বলেছেন: ৭৩ ফেরকার হাদীসটি যদি এতই সহীহ ও গুরুত্বপূর্ণ হতো, তাহলে সেটি নিশ্চয় ইমাম বোখারী ও ইমাম মুসলিমের দৃষ্টি এড়াতো না এবং নিশ্চয় উনারা সহীহাইনে সেটি উল্লেখ করতেন। অথচ ইমাম বোখারী বাগী দলের জাহান্নামী হওয়া ও সাহাবী আবদুল্লাহ বিন উমরকে আমির মুয়াবিয়ার হুমকি প্রদান সংক্রান্ত হাদীস উল্লেখ করেছেন। আর ইমাম মুসলিম সাকালায়েনের হাদীস, হযরত আলীকে ভালোবাসার অপরিহার্যতার হাদীস এবং আমির মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে হযরত আম্মার বিন ইয়াসিরের নিফাফের অভিযোগ, হযরত উবাদা বিন সামিতের সুদী লেনদেনের অভিযোগ ও তাবেয়ী আব্দু রব্বিল কা‘বার খুন ও হারাম ভক্ষণের অভিযোগ সম্বলিত বর্ণনা এনেছেন।  


গবেষক মুহাদ্দিসগণের মতে, ৭৩ ফেরকার এ হাদীসটির সনদগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র হযরত আবু হুরাইরা (র.) থেকে বর্ণিত সনদটিই গ্রহণযোগ্য, যেখানে একদল ছাড়া বাকি সব দল জাহান্নামী হওয়ার কথা যেমন নেই, তেমনি সাহাবীদের পথে থাকা বা জামাআহর (সরকারী দলের) সাথে থাকার কথাও নেই। 

দেখুন হযরত আবু হুরাইরা (র.) থেকে বর্ণিত হাদীসটির গ্রহণযোগ্য সেই সনদ ও মতন (ট্যাক্সট। 

১. সুনানে আবু দাউদের বর্ণনা:

حدثنا وهب بن بقية عن خالد عن محمد بن عمرو عن أبي سلمة عن أبي هريرة قَالَ ، قَالَ رسول الله -صلَّى الله عليه وآله وسلم-: «افْتَرَقَتْ الْيَهُودُ عَلَى إِحْدَى أَوْ ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً وَتَفَرَّقَتْ النَّصَارَى عَلَى إِحْدَى أَوْ ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً». أخرجه أبو داود (4/197 ، رقم 4596).

অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা (র.) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “ইহুদীরা ৭১ অথবা ৭২ ফেরকায় বিভক্ত হয়েছে। অনুরূপ খ্রিষ্টানেরাও ৭১ অথবা ৭২ ফেরকায় বিভক্ত হয়েছে। আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ ফেরকায়।” [সুনানে আবু দাউদ (৪৫৯৬)]।

লিঙ্ক - https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=36631

-

উল্লেখ্য, আলিমদের মতে, এখানে ৭১, ৭২ ও ৭৩ সংখ্যা দ্বারা ফেরকার আধিক্য বুঝানো হয়ছে, নির্দ্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নয়। অর্থাৎ, মুসলিম উম্মাহ একসময় বহু মত-পথে বিভক্ত হয়ে যাবে। আর তখন সব দল ও গোষ্ঠীতেই খাঁটি ও সৎ মুমিনগণ কমবেশি থাকবেন। বর্তমানে আমরা শিয়া ও সুন্নী উভয় গোষ্ঠীতেই ভালো-মন্দ উভয় ধরণের লোক দেখতে পাই। অনুরূপ এ দুই গোষ্ঠীর বাইরে যেসব ইসলামী গোষ্ঠী রয়েছে, তাদের মাঝেও ভালো ও মন্দ উভয় ধরণের লোক দেখা যায়। 

২. সুনানে তিরমিযীর বর্ণনা:

حدثنا الحسين بن حريث أبو عمار حدثنا الفضل بن موسى عن محمد بن عمرو عن أبي سلمة عن أبي هريرة أن رسول الله -صلَّى الله عليه وآله وسلم- قَالَ: «تَفَرَّقَتْ الْيَهُودُ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ أَوْ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً وَالنَّصَارَى مِثْلَ ذَلِكَ وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً». أخرجه الترمذى (5/25 ، رقم 2640) وقَالَ: حسن صحيح . 

অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা (র.) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “ইহুদীরা ৭১ অথবা ৭২ ফেরকায় বিভক্ত হয়েছে। অনুরূপ খ্রিষ্টানেরাও। আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ ফেরকায়।” [সুনানে তিরমিযী (২৬৪০)]।

লিঙ্ক - https://sunnah.com/tirmidhi:2640

-

২. সুনানে ইবনে মাজাহর বর্ণনা:

حدثنا أبو بكر بن أبي شيبة ثنا محمد بن بشر ثنا محمد بن عمرو عن أبي سلمة عن أبي هريرة قال: قال رسول الله -صلَّى الله عليه وآله وسلم-: «تَفَرَّقَتْ الْيَهُودُ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ فِرْقَةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً». أخرجه ابن ماجه (2/1321 ، رقم 3991).

অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা (র.) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “ইহুদীরা ৭১ ফেরকায় বিভক্ত হয়েছে। আর আমার উম্মত  বিভক্ত হবে ৭৩ ফেরকায়।” [সুনানে ইবনে মাজা (৩৯৯১)]।

লিঙ্ক - https://sunnah.com/ibnmajah:3991

-

এখানে মজার বিষয় হলো, ইমাম তিরমিযী হযরত আবু হুরাইরার এই হাদীসটির ব্যাপারে حديث أبي هريرة حديث حسن صحيح (আবু হুরাইরার হাদীসটি হাসান ও সহীহ) বাক্য দ্বারা উনার মতামত ব্যক্ত করলেও আবদুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত পরের হাদীস (নম্বর ২৬৪১), যেখানে ৭২ দলের জাহান্নামী হওয়া ও সাহাবীদের পথে থাকার কথা রয়েছে, সেটিকে অনেকটা নাকচ করে দিয়েছেন নিম্নোক্ত মন্তব্য করে:

هذا حديث مفسر غريب لا نعرفه مثل هذا إلا من هذا الوجه.

অর্থ: “এ হাদীসটি মুফাসসার (ব্যাখ্যা সংযোজিত) ও গরীব (সনদের কোনো স্তরে বর্ণনাকারী মাত্র একজন হয়ে যাওয়া হাদীস)। একমাত্র এ সনদ ছাড়া অন্য কোথাও হাদীসটি আমরা এভাবে দেখতে পাই না।”

অর্থাৎ, তিনি বলতে চেয়েছেন, এ হাদীসটি গরীব হবার পাশাপাশি ব্যাখ্যা সংযোজিতও, যা শুধুমাত্র একটি সনদে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু গরীব নয় এমন সনদে হাদীসটির বক্তব্য ভিন্ন (সেখানে জাহান্নাম, সাহাবী ও জামাআহর কথা নেই)। এর চেয়ে আরো বড় আপত্তির বিষয় হলো, এ সনদে আবদুর রহমান বিন জিয়াদ আফ্রিকী নামের একজন খুবই দুর্বল রাবী রয়েছেন। 

উল্লেখ্য, সুনানে আবু দাউদে আমির মুয়াবিয়া থেকে বর্ণিত হাদীসটিতে (নম্বর ৪৫৯৭) সাহাবা বা অন্য কারো পথে থাকার কথা নেই। তবে সেটিতে জামাআহ তথা সরকারী দলের লোকজন ছাড়া বাকি সব দলকে জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।


এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কিছু মুহাদ্দিস (যেমন আধুনিক যুগের শায়খ আলবানী) ৭২ দলের জাহান্নামী হওয়া ও সাহাবীদের পথে কিংবা সরকারী দলে থাকার বর্ণনাটিকে কিভাবে সহীহ বা হাসান বলেছেন? 

উত্তর হলো: এসব হাদীসে নাসেবী বা অন্য যেসব বিতর্কিত রাবী রয়েছে, তাদেরকে একদল মুহাদ্দিস অগ্রহণযোগ্য বললেও কতিপয় মুহাদ্দিস গ্রহণযোগ্য বলে মত প্রকাশ করেছেন।


তবে এখানে আসল কথা হলো, কোরআনের সঠিক ব্যাখ্যা বুঝা এবং হাদীসের শুদ্ধতা-অশুদ্ধতা ও যৌক্তিক ব্যাখ্যা বুঝার জন্য ক্ষমতার রাজনীতি বুঝার মত মস্তিষ্ক থাকতে হয়। কিন্তু ট্রেডিশনাল বা গতানুগতিক মুহাদ্দিসগণের অধিকাংশের মাঝে এমন মস্তিষ্ক আগেও ছিল না এবং বর্তমানেও নেই। আলবেনিয়ার বেদীন রাজার কবল থেকে থেকে পালিয়ে এসে মিলিটারি ডিক্টেটর শাসিত সিরিয়ার দামেস্কে বেড়ে উঠা শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানীর মাথায়ও এ মস্তিষ্ক ছিল না। যে কারণে তিনি রাজনীতি বিরোধী ছিলেন। এমনকি তিনি ফিলিস্তিনীদের জায়োনিস্ট বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধেরও বিরোধী ছিলেন। উনার মতে, যেখানে দীন পালনে সমস্যা দেখা দিবে, সেখান থেকে হিজরত করাই মুসলমানদের কর্তব্য (যুদ্ধ-সংগ্রামের কোনো দরকার নেই)।   

     

কোরআন ও হাদীসের পাশাপাশি ক্ষমতার রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝা গবেষক ও বিশ্লেষকদের দাবি হলো, সাকালায়েনের হাদীসটির বর্ণনায় যেমন কোথাও কোথাও কোরআনের পর ‘আহলে বায়েত’র স্থলে ‘সুন্নত’ শব্দটি জালিয়াতি করে বসানো হয়েছে, তেমনি ৭৩ ফেরকার হাদীসটিতেও নাসেবী ও আহলে বায়েত বিদ্বেষী রাবীগণ একদল ছাড়া বাকি সব দল জাহান্নামী হওয়া এবং সাহাবীদের পথে ও সরকারী দলভুক্ত থাকার কথা জালিয়াতি করে যোগ করেছে। 


যাই হোক, ৭৩ ফেরকার হাদীসটির সনদগুলোর সমস্যা ও বক্তব্য নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেছেন কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়া অনুষদের তাফসীর ও হাদীস বিভাগের অধ্যাপক ও রাজতন্ত্র বিরোধী কুয়েতী সালাফী স্কলার ডক্টর হাকেম আল-মুতাইরী। আরবী ভাষা জানা পাঠকদের জন্য নীচে উনার ওয়েবসাইট থেকে উনার সে গবেষণা পত্রটির লিঙ্ক দিলাম।

http://www.dr-hakem.com/portals/Content/?info=TmpJMEpsTjFZbEJoWjJVbU1RPT0rdQ==.jsp#:~:text=6%20%D9%80%20%D9%88%D8%AB%D8%A8%D8%AA%20%D8%A3%D9%8A%D8%B6%D8%A7%D9%8B%20%D8%A3%D9%86,%D8%B5%D9%84%D9%89%20%D8%A7%D9%84%D9%84%D9%87%20%D8%B9%D9%84%D9%8A%D9%87%20%D9%88%D8%B3%D9%84%D9%85%D8%8C%D9%81%D9%88%D9%87%D9%85



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে

শর্ষীনা, ফুরফুরা, জৌনপুরী, ফুলতলী, সোনাকান্দা সহ সকল বালাকোটি পীরগনের শেরেকী আকীদা