ইসলাম হাদীসের উপর নির্ভরশীল নয়



সহীহ হাদীস (খবরে ওয়াহেদ) আকীদার দলীল নয়





দীস সংকলনের সীমাবদ্ধতা ও মধ্যমপন্থা

হাদীস অস্বীকার কিংবা হাদীসকে কোরআনের সমকক্ষ বানানো দুটোই সমস্যাজনক




হাদীস সংকলন একইসাথে মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে বড় এক অর্জন এবং নানান সমস্যা ও অসংলগ্নতা দ্বারা জর্জরিত একটি প্রয়াস। বড় অর্জন কারণ উম্মাহ এই হাদীস সংকলন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নবীর সুন্নাতকে সংরক্ষণের চেষ্টা করেছে। সমস্যাযুক্ত কারণ এই পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে ছোট একটি দলের মাধ্যমে।


একটু খোলাসা করা প্রয়োজন। হাদীস বর্ণনাকারীদের সংখ্যা বলতে গেলে অসংখ্য ও অগণিত। বর্তমানে প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থগুলোতে যেই বর্ণনাকারীদের পাওয়া যায় তার সংখ্যা কয়েক হাজারের ওপরে হবে। কিন্তু হাদীস সংকলন কিন্তু ভিন্ন বিষয়। সংকলন অর্থ প্রচলিত হাদীসগুলোর মধ্য থেকে নানান বাছবিচারের পর সেগুলো বইতে সংকলন করা। এই কাজটা কিন্তু অল্প কয়েকজন মানুষ করেছেন।


দ্বিতীয়ত, এই বাছবিচারের মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন হাতে গোনা অল্প কয়েকজন মানুষ। হাদীসের বর্ণনাকারীদের কাকে গ্রহণ করা যাবে, কাকে করা যাবে না এগুলো তারা ঠিক করেছে সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত বিচার অনুযায়ী। এগুলো বিনা তর্কে মেনে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। ইয়াহিয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান ছিলেন ইমাম বুখারীর শিক্ষকদের শিক্ষক। তিনি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর নাতির নাতির ছেলে জাফর সাদেককে নির্ভরযোগ্য মনে করতেন না, আর এই কারণে বুখারী তার সহিহ‘তে ইমাম জাফর সাদেকের কোন হাদীস বর্ণনা ত্যাগ করেছিলেন। অথচ তিনি তার উস্তায কাত্তানের কথায় ভরসা করে বইতে বাহয বিন আসাদ ও সাওর বিন ইয়াযীদের হাদীস বর্ণনা করেছেন যারা দুইজনেই ছিল নাসেবি (হযরত আলীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী)। ইয়াহিয়া বিন মাইনও বুখারির শিক্ষক ছিলেন, তিনি সাওর বিন ইয়াযীদের হাদীস লিখতে নিষেধ করতেন। কিন্তু বুখারী ইয়াহিয়া বিন মাইনের কথা শোনেন নি, শুনেছেন ইয়াহিয়া বিন সাঈদ আল কাত্তানের কথা। কেন তিনি এটা করলেন এটা আমরা জানি না। জানার কোন উপায়ও নেই। বুখারীর তাকলীদ করা ছাড়া এখানে অন্য কোন সুযোগও রাখা হয় নি।


এই জারহ-তাদীলের সাথে যুক্ত যারা ছিলেন, যাদের আহলে হাদীস বলা হতো সেই যুগে, তারা ছোট্ট একটা সিন্ডিকেটের মত কাজ করতেন। আর এই সিন্ডিকেট ইমাম আবু হানিফার প্রতি ছিল প্রচণ্ড বিদ্বেষী। হাফেযে মাগরিব খ্যাত ইমাম ইবনে আব্দুল বার তার আল ইনতিকা বইতে লিখেছেন,


كانَ يَحْيى بْنُ مَعِينٍ يُثْنِي عَلَيْهِ ويُوَثِّقُهُ وأمّا سائِرُ أهْلِ الحَدِيثِ فَهُمْ كالأعْداءِ لأبِي حَنِيفَةَ وأصْحابِهِ


ইয়াহিয়া বিন মাইন আবু হানিফার প্রশংসা করতেন এবং তাকে নির্ভরযোগ্য ভাবতেন। কিন্তু বাদবাকি সকল আহলে হাদীস ছিল আবু হানিফা ও তার সঙ্গীদের প্রতি শত্রুস্বরূপ।


আর এই শত্রুদের তালিকায় শীর্ষস্থানে ছিলেন ইমাম বুখারী। ইমাম ইবনে আব্দুল বার একই বইতে লিখেছেন,


فَمِمَّنْ طَعَنَ عَلَيْهِ وجرحه أبُو عبد الله مُحَمَّدُ بْنُ إسْماعِيلَ البُخارِيُّ فَقالَ فِي كِتابِهِ فِي الضُّعَفاءِ والمَتْرُوكِينَ أبُو حَنِيفَةَ النُّعْمانُ بْنُ ثابِتٍ الكُوفِيُّ قالَ نُعَيْمُ بْنُ حَمّادٍ نا يَحْيى بْنُ سَعِيدٍ ومُعاذُ بْنُ مُعاذٍ سَمِعا سُفْيانَ الثَّوْرِيَّ يَقُولُ قِيلَ اسْتُتِيبَ أبُو حَنِيفَةَ مِنَ الكُفْرِ مَرَّتَيْنِ


আবু হানিফাকে আক্রমণকারীদের মাঝে ছিলেন আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন ইসমাইল আল বুখারী। তিনি তার “দুর্বল ও পরিত্যাজ্য” (আদ দুয়াফা ওয়াল মাতরুকিন) বইতে বলেন, আবু হানিফা হলেন নোমান বিন সাবেত আল কুফী। নুয়াইম বিন হাম্মাদ বলেন, ইয়াহিয়া বিন সাঈদ ও মুয়াজ বিন মুয়াজ বলেছেন, সুফিয়ান সাওরী বলেছেন, আবু হানিফাকে দুইবার কুফর থেকে তওবা করানো হয়।


আহলে হাদীস নামক এই সিন্ডিকেট যাদের ক্যানসেল করতে চাইত তাদের নামে এই জাতীয় বানোয়াট গল্প ছড়িয়ে বেড়াত। তাদের সকল হাদীস পরিত্যাগ করত। ইমাম আহমদ ছিলেন এই ক্যানসেল কালচার সিন্ডিকেটের প্রধান ব্যাক্তি। কোরআন সৃষ্ট নাকি অসৃষ্ট এই নিয়ে বিতর্কের আগে তিনি নিজে বলতেন কোরআন আল্লাহর কালাম। এরপর কথা বাড়াতেন না। কিন্তু মুতাজিলাদের সাথে বিতর্কের পর তিনি একটি পক্ষ নিতে বাধ্য হন। অথচ এই তর্কের আগে সাহাবী ও তাবেঈদের যুগে এই অতিরিক্ত অংশ বাড়ানো হতো না। কিন্তু মুতাজিলাদের সাথে তার শত্রুতার কারণে তিনি কেবল কোরআনকে সৃষ্ট বলার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন নি, যারা সালাফের অনুসরণে এই অতিরিক্ত কথার ব্যাপারে চুপ থাকত তাদের বিরুদ্ধেও অবস্থান নেন এবং বিদআতী আখ্যা দিয়ে ক্যানসেল করা শুরু করেন। এর অন্যতম উদাহরণ হলো ইসহাক বিন আবু ইসরাইল। ইমাম যাহাবী তার সিয়ারু আলামিন নুবালা গ্রন্থে তার ব্যাপারে বলেন,


الإمامُ، الحافِظُ، الثِّقَةُ.


ইমাম। হাফেজ। সিকাহ।


তিনি বলতেন,


فَقالَ: لَمْ أقُلْ عَلى الشَّكِّ، ولَكِنِّي أسكُتُ كَما سَكَتَ القَوْمُ قَبْلِي


আমি সন্দেহের কারণে চুপ থাকি না। আমি চুপ থাকি কারণ আমার পূর্বে যারা ছিলেন তারা চুপ থাকতেন এই বিষয়ে।


তিনি ইমাম আহমদের বয়জ্যেষ্ঠ ছিলেন। তিনি বলতেন,


هَؤُلاَءِ الصِّبْيانُ يَقُولُونَ: كَلاَمُ اللهِ غَيْرُ مَخْلُوقٍ، ألاَ قالُوا: كَلاَمُ اللهِ، وسَكَتُوا؟ ويُشِيرُ إلى دارِ الإمامِ أحْمَدَ.


এই বাচ্চাগুলো বলে কোরআন আল্লাহর কালাম, গায়রে মাখলুক। তারা কি কেবল আল্লাহর কালাম বলে চুপ থাকতে পারত না? তিনি ইমাম আহমদের ঘরের দিকে ইশারা করে এটা বলতেন।


এই চুপ থাকার কী পরিণতি হয়?


وقالَ زَكَرِيّا السّاجِيُّ: كانَ صَدُوقًا، تَرَكُوهُ لِمَوْضِعِ الوَقفِ


যাকারিয়া সাজি বলতেন, তিনি সত্যবাদী ছিলেন। কিন্তু তার চুপ থাকার কারণে তাকে পরিত্যাগ করা হয়।


ইমাম যাহাবী ব্যাখ্যা করে বলেন,

مَعْنى قَوْلِهِ: أعْرَضُوا عَنِ الأخْذِ عَنْهُ، لاَ أنَّ حَدِيثَهُ فِي حَيِّزِ المَتْرُوكِ المُطَّرَحِ.

পরিত্যাগ অর্থ তাকে উপেক্ষা করা। তার বর্ণিত হাদীস বর্জনীয় ও পরিত্যাজ্য হয়ে গেছে এটা নয়।

وقالَ أبُو حاتِمٍ: وقَفَ فِي القُرْآنِ فَوَقَفْنا عَنْ حَدِيثِهِ، ولَقَدْ تَرَكَهُ النّاسُ حَتّى كُنْتُ أمُرُّ بِمَسْجِده وهُوَ وحِيدٌ لاَ يَقرَبُهُ أحَدٌ بَعْدَ أنْ كانَ النّاسُ إلَيْهِ عَنَقًا واحِدًا.

আবু হাতেম বলেন, তিনি কোরআনের ব্যাপারে কিছু বলা থেকে বিরত থাকেন, তাই আমরাও তার হাদীস গ্রহণ থেকে বিরত থাকি। মানুষ (আহলে হাদীস) তাকে বর্জন করে এমনকি আমি তার মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতাম তিনি একা বসে আছেন, কেউ তার কাছে ঘেঁষে না। অথচ একসময় সবাই তার দিকে গলা বাড়িয়ে রাখত।

এই আলোচনার উদ্দেশ্য হাদীস সংকলনকে ডিসমিস করে দেওয়া নয়, কারণ হাদীস সংকলন না করা হলে নবীজীর বহু বিশুদ্ধ বক্তব্য সংরক্ষণ সম্ভব হতো না। কিন্তু এটা সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, এই হাদীস সংকলন যারা করেছেন তারা আমাদের মতই মানুষ। তাদের ব্যক্তিগত পক্ষপাত ও ভুলত্রুটি থেকে এই সংকলন মুক্ত নয়। হাদীস সংকলনের এই সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়ে কথা না বলার কারণে মানুষের মাঝে হাদীস নিয়ে গোড়ামি তৈরি হয়। হাদীস গ্রন্থগুলোকে তারা নির্ভুল এবং এই গ্রন্থগুলোর লেখকদের মাসুম ভাবতে শুরু করে। আর এটা সমস্যাজনক। কোন হাদীসকে সহিহ বলা একটা ইজতিহাদ। মানুষ এতটুকু বোঝে যে, আবু হানিফা কোন একটা বিষয়কে জায়েয বললে সেটা অন্ধভাবে মেনে নেওয়া আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক না। কিন্তু তাদের এটাও বোঝা উচিত বুখারী কোন হাদীসকে সহিহ বললেই সেটা সহিহ হিসেবে মেনে নেওয়া কারো জন্য বাধ্যতামূলক না। কারণ আবু হানিফা কিংবা বুখারি কেউই ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে না। যেকোন হাদীসকে বিচারবিশ্লেষণ করে দেখতে হবে সেটা সহিহ কিনা, চাই সেটা বুখারির হাদীস হউক না কেন।

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বিয়ের বয়স নিয়ে বুখারি হিশাম বিন উরওয়ার সূত্রে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন, সেটার সনদ সমস্যাযুক্ত। এছাড়াও নবীজীর পিতামাতা জাহান্নামে যাবে এই হাদীসের মতন সমস্যাযুক্ত। গারকাদ ইহুদীদের গাছ এটা কাব আল আহবারের ইসরাইলি বর্ণনা, নবীজীর হাদীস নয়। আদমের উচ্চতা ৬০ হাত ছিল এবং মানুষের উচ্চতা প্রতিনিয়ত কমছে এটা হাম্মাম বিন মুনাব্বিহের নিজস্ব সংযোজন। টিকটিকি ইব্রাহিম নবীর আগুনে ফুঁ দিয়েছিল তাই টিকটিকি মেরে ফেলতে হবে এটাও নবীর কথা নয়, এক রাবির নিজস্ব অভিমত। নবীজী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এটা হজরত আয়েশার নয়, যুহরির মন্তব্য। এরকম আরো বহু ত্রুটিবিচ্যুতি বুখারীতে আছে। এগুলো সত্ত্বেও বুখারি মুয়াত্তার পর সবচেয়ে বিশুদ্ধ হাদীসের বই। মুয়াত্তা গ্রন্থে ইমাম মালিক যেভাবে হাদীস উল্লেখ করে তাতে সমস্যা থাকায় পরিত্যাগ করতেন, আমরা বুখারীর ক্ষেত্রেও অভিন্ন নীতি গ্রহণ করব। এটা হলো মধ্যমপন্থা এবং এই বিষয়ে কারো সমস্যা থাকা সমস্যাজনক।



আহাদ হাদিসের যদি আমলের ব্যাকআপ না থাকে, তবে সেই হাদিস কোন দিন "ইলম" প্রদান করতে পারে না। এই পোস্টটা আমি সবার বোধগম্য ভাষায় লিখতে চাচ্ছি। তাই পরিভাষাগুলো ব্যাখ্যা করি প্রথমে।


১. আহাদ হাদিস = হাদিস মানে তো বক্তব্য। তবে আমরা হাদিস বলে মূলত নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য বুঝিয়ে থাকি। এখন নবীজীকে আমরা কেউ দেখি নি, দেখেছেন সাহাবীরা। তাই কোন কথা আসলেই নবীর হাদিস কিনা এটা নিশ্চিত হতে হলে আমাদের নবীজী পর্যন্ত সনদ বা বর্ণনাসূত্র লাগবে। যেমন: ইমাম মালিক বর্ণনা করেছেন তার শিক্ষক নাফে' থেকে, নাফে' তার শিক্ষক আব্দুল্লাহ বিন ওমর থেকে, তিনি সরাসরি নবীজী থেকে। যখন কোন হাদিসের একটি, দুইটি কিংবা মুষ্টিমেয় কিছু বর্ণনাসূত্র থাকে, তখন সেটাকে আহাদ (একক) হাদিস বলে। এর বিপরীত হল মুতাওয়াতির হাদিস। এটা হল নবীজীর এমন কথা যা প্রত্যেক প্রজন্মের মুসলিমরা গণহারে তাদের পরের প্রজন্মের কাছে বর্ণনা করেছে।


২. আমল = নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইমাম মালিক দেখেন নি। তিনি নবীর সাহাবীদেরও দেখেন নি। কিন্তু সাহাবীদের পরের প্রজন্মের (তাবেঈ) মাঝে তিনি বড় হয়েছেন। মদিনায় ইমাম মালিক বহু শরিয়তের বহু প্র্যাক্টিস প্রচলিত দেখেছেন; যেমন নামায পড়ার পদ্ধতি, যাকাত প্রদানের নিয়ম, আযান ও ইকামতের বাক্য। এসব আমল তাবেঈরা নিজেদের মনমত তৈরি করে নি। তারা এটা তাদের পূর্বের প্রজন্মের কাছ থেকে গণহারে শিখেছে। এটা নিছক ছাত্র-শিক্ষকের মত একক সূত্রের শিক্ষা না। বরং এটা মুতাওয়াতির পর্যায়ের শিক্ষা। গোটা এক প্রজন্ম তাদের পূর্বের প্রজন্মের কাছ থেকে সামগ্রিকভাবে শিখেছে। এটা হল আমলে মুতাওয়াতির ও মুতাওয়ারাস।


৩. ইলম বা জ্ঞানের সংজ্ঞা দেওয়া কঠিন। কারণ এটা মৌলিক একটি কনসেপ্ট। আর মৌলিক কনসেপ্টকে যত ব্যাখ্যা দিতে যান, তত সেটা দূর্বোধ্য হয়ে যায়। তারপরও আমি কেতাবি সংজ্ঞাটা উল্লেখ করব—কোন বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে সেভাবেই অবগত হওয়া যেভাবে সেটি বাস্তবে বিদ্যমান আছে (إدراك الشيء على ما هو عليه) ইলম যেন ডিলুশন না হয়, তাই একটা শর্ত হল এর পক্ষে দলিল থাকা।


ওকে, ডান। পরিভাষা ব্যাখ্যা শেষ। এবার কিছু ইতিহাস।


হিজরি দ্বিতীয় শতকে আহলুল হাদিস সম্প্রদায়ের সূচনা হয়, যারা সনদের ভিত্তিতে হাদিস বর্ণনা করাকে নিজেদের মূল পেশা বানিয়ে নেয়। আমাদের ইমাম, মালিক বিন আনাস, নিজে এই গোষ্ঠীর সর্দার ছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে ইমাম মালিকের চাইতে জনপ্রিয় ও শ্রেষ্ঠ কোন মুহাদ্দিস আসে নাই। তৃতীয় শতকের বুখারী? প্রশ্নই আসে না। বুখারীকে জিজ্ঞেস করে দেখেন ইমাম মালিক সম্পর্কে কী বলে।


দ্বিতীয় শতকের আহলুল হাদিসদের সাথে তৃতীয় শতকের আহলুল হাদিসের প্রধান একটা পার্থক্য আছে। সেটা হল ফিকহ ও হাদিসের সমন্বয়। প্রথম যুগের আহলুল হাদিসগণ, যেমন ইমাম মালিক, সুফিয়ান সাওরি, সুফিয়ান বিন উয়াইনা, লাইস বিন সা'দ, আওযাঈ প্রমুখ ছিলেন ফকিহ। যারা হাদিসের সাথে ফিকহকে সমন্বয় করেছিলেন। আর তাদের প্রত্যেকের সাথে ছিল "আমল"। ইমাম মালিকের ছিল মদিনার আমল, সুফিয়ান সাওরির কুফার আমল, সুফিয়ান বিন উয়াইনার মক্কার আমল, লাইস বিন সা'দের মিসরের আমল, আওযাঈর শামদেশের আমল। বিপরীতে দ্বিতীয় শতকের শেষের দিকে তৈরি হওয়া আহলুল হাদিস—আহমদ বিন হাম্বল, ইসহাক বিন রাহাওয়াইহ, বুখারি, মুসলিম প্রমুখ— তাদের সাথে কোন "আমল" নামক লেগেসি ছিল না। অনেকটা বাড়িঘর ছাড়া উদ্বাস্তু পথিকের মত।


দ্বিতীয় শতকের আহলুল হাদীসের প্রত্যেকের "আমল" ও "রায়" ছিল। আমি যাদের নাম উল্লেখ করলাম, তাদের প্রত্যেকেই আহলুল হাদিস হবার পাশাপাশি আহলুর রায় ছিলেন। কিন্তু তৃতীয় শতকের আহলুল হাদীসের "আমল"ও ছিল না, "রায়"ও না। ইমাম শাফেয়ী এই আহলুল হাদীস গোষ্ঠীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং আমল ছাড়াও কেবল হাদীসের ভিত্তিতে কীভাবে রায় তৈরি করা যায় সেই মর্মে উসুল প্রবর্তন করেন। এই উসুলের কিছু কিছু এই নব্য আহলুল হাদীস সম্প্রদায় গ্রহণ করে। তবে সবটুকু গ্রহণ করে নি। যারা গ্রহণ করেছিল তাদের মধ্যে আহমদ বিন হাম্বল ও তার অনুসারীরা উল্লেখ্য; যারা নিজেরা পরবর্তীতে একটি মাযহাবের আকার ধারণ করে। কিন্তু "রায়" তৈরি করার সিনাআত বা শিল্প যারা একদমই রপ্ত করতে পারে নি কিংবা চায় নি, তারা নাম-ঠিকানা বিহীন এতিমের মত লা-মাযহাবি আহলুল হাদীস হিসেবে থেকে যায়। বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশে যে আহলুল হাদীস ঘরানা আছে, সেটা মূলত এই প্রাচীন লা-মাযহাবি আহলুল হাদীসের নতুন সংস্করণ, যেটা শাহ ওয়ালিউল্লাহ ও তার নাতি এই উপমহাদেশে আমদানিজাত করেন।


ওকে। ইতিহাসও শেষ। এবার পোস্টের শিরোনামে ফিরি।


আমল ও রায় বিহীন সেকেন্ড-ওয়েভ আহলুল হাদিস সম্প্রদায়ের নবীজীর সুন্নাহ সম্পর্কে জানার জন্য হাদীস ছাড়া অন্য কোন উপায় খোলা ছিল না, যেটা ফার্স্ট-ওয়েভের ছিল। এই কারণে তারা পূর্ববর্তীদের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে হাদিস-সর্বস্ব হয়ে যায় এবং কেবলমাত্র আহাদ-হাদিসকে কেন্দ্র করেই গোটা ইসলামকে বোঝার দর্শন তৈরি করে। হ্যাঁ, শাফেয়ী হলেন এই দর্শনের কারিগর। তবে শাফেয়ী নিজে হাদীস ও রিজাল (বর্ণনাকারী) ব্যাপারে "মুতকিন", "নাকেদ", "হাফেয" ছিলেন না। শাফেয়ীর রেওয়ায়াত আছে। কিন্তু তাকে আহমদ বিন হাম্বল কিংবা বুখারীর মত আহলুল হাদীস হিসেবে বিবেচনা করা কঠিন। তবে যেমনটা বললাম। এই আহলুল হাদীসদের উসুলগুলো নির্মানে তার ভূমিকা আছে। এগুলো তো বিশদ বিস্তৃত আলোচনা। আমি কেবল আজকে সবচাইতে সহজ একটা উসুল নিয়ে কথা বলব—সহিহ হাদিস নির্ণয়ের পদ্ধতি এবং এই পদ্ধতিতে বিদ্যমান গোঁজামিল।


সহিহ হাদীস চেনার জন্য আহলুল হাদীসগণ নিচের শর্ত তৈরি করেছেন।


১. সনদ - হাদীসের সনদ থাকতে হবে,

২. ইত্তেসাল - সনদ মুত্তাসিল বা অবিচ্ছিন্ন হতে হবে (অর্থাৎ বর্ণনাকারীদের সবাই একে অন্য থেকে হাদীসটি শুনেছেন বা শক্তিশালী সম্ভাবনা আছে (আনআনা) এটা নিশ্চিত করতে হবে)

৩. আদালাত - রাবীদের (বর্ণনাকারী) সবাইকে আদেল হতে হবে। আদেল হল ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি, যে মিথ্যা বলে না, কোন প্রশ্নবিদ্ধ কাজেও জড়িত না।

৪. দ্ববত - রাবীদের স্মৃতিশক্তি ও সংরক্ষণ শক্তিও ভালো হতে হবে, যাতে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, হাদিস বলতে গিয়ে তিনি ভুল করেন নি।

৫. ইল্লত না থাকা ও শায না হওয়া- আহলুল হাদীস সম্প্রদায় আবিষ্কার করল যে উপরের ৪টা শর্ত মেইনটেইন করার পরেও বহু ভুল-ভাল হাদীস ফিল্টারের ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়ছে। তাই তারা একটা "ইল্লত ও শায থেকে মুক্ত থাকা" নামক বায়বীয় শর্ত যোগ করে।


বর্তমান যুগের সকল সালাফি ও আহলুল হাদিস এই শর্তগুলো বিশ্বাস করে। আর এই শর্তের ওপর ভিত্তি করে তারা আহলুর রায় ওয়াল ফিকহ সম্প্রদায়ের (মালিকি ও হানাফিরা যার অংশ) সমালোচনা করে। অথচ তাদের এই শর্তগুলোর মধ্যেই যে কত চিচিংফাঁক আছে সেগুলো সম্পর্কে তারা ওয়াকিফ-হাল না।


প্রত্যেকটা শর্ত নিয়ে সমালোচনা করা সম্ভব। তবে আলোচনা সংক্ষিপ্ত ও আমার মূল পয়েন্ট সহজবোধ্য রাখার জন্য কেবল ২ ও ৪ নিয়ে কথা বলি।


আহলুল হাদিস সম্প্রদায় বিশ্বাস করে কোন একটা বক্তব্য বিশ্বাস করতে হলে বক্তব্যটি অবিচ্ছিন্নভাবে যার ব্যাপারে বক্তব্য তার পর্যন্ত ট্রেস-ব্যাক করা যাবে। আরো সহজ ভাষায়, কথা বলতে গেলে সনদ দিতে হবে; নাহলে মানব না। আচ্ছা। ঠিক আছে। সুন্দর। কিন্তু আপনারা নিজেরা কি এই উসুলে কনসিস্টেন্ট? এই যে ৩ ও ৪ নং শর্তে আপনারা বর্ণনাকারীদের যখন ভালো-মন্দ বলেন (জারহ-তাদীল) তখন আপনারা আহমদ, নাসাঈ, বুখারী, ইবনে হিব্বান প্রমুখের মতামত উল্লেখ করেন যে, অমুক রাবী মিথ্যুক ছিল কিংবা তার স্মৃতিশক্তি খারাপ ছিল কিংবা অমুক সমস্যা ছিল? না তো। তারা তো কোন সনদ ছাড়াই এসব দাবি করেন। কিন্তু তারপরেও আপনারা এগুলো তাকলিদের ভিত্তিতে মেনে নেন? কেন নেন? কারণ আপনারা বলেন, যেহেতু এই ইমামদের পেশাই ছিল হাদিসের রাবীদের পর্যালোচনা করা, তাই তারা যখন কোন রাবীর ব্যাপারে ভাল-মন্দ বলেন, সেটা তার জেনেশুনেই বলেন, যদিও সেই মন্তব্যের পক্ষে তারা কোন দলিল উল্লেখ না করেন। অর্থাৎ দিনশেষে আপনারাও দলিল ছাড়া জারহ-তাদীলের ইমামদের মন্তব্য মেনে নিচ্ছেন। এখানে কিন্তু মুত্তাসিল সনদের দাবি তুলছেন না। এই যদি আপনাদের দশা হয়, তাহলে কীভাবে আপনারা ইমাম মালিক কিংবা আবু হানিফাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন? তারাও তো যথাক্রমে মদিনা ও কুফার লেগেসির ধারক-বাহক। তারা যখন বলেন এটাই ছিল আমাদের অঞ্চলে সাহাবিদের জারি করা পদ্ধতি। তখন তো সেটা সেভাবেই মেনে নেওয়ার কথা, যেভাবে আপনারা আহমদ কিংবা বুখারির কথা রাবীদের জারহ-তাদীলে মেনে নেন!


৪নং পয়েন্ট হল বর্ণনাকারীর সংরক্ষণ শক্তি নিয়ে প্রশ্ন। অর্থাৎ আপনারাও স্বীকার করেন যে, কেবল আদেল হওয়া যথেষ্ট না, যদি বর্ণনাকে সংরক্ষণ করতে না পারে, তাহলেও সমস্যা। তাহলে আপনারা হানাফিদের "রাবীকে ফকিহ হতে হবে" এই উসুলের ওপর আপত্তি তোলেন কেন? তারা তো একই কথা বলেছেন। ইমাম মালিক অবশ্য এভাবে বলেন না। তিনি বলেন, এই হাদিসের ওপর আমল নাই। তাই নিব না। ইমাম মালিকের কাছে সনদ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু সনদই সবকিছু ছিল না। ইমাম মালিক তার মুয়াত্তাতে সনদ ছাড়াই বহু হাদিস (বালাগাত) উল্লেখ করেছেন। তিনি বলতেন, شهرة هذا الحديث في بلدنا يغني عن إسناده "আমাদের শহরে এই হাদিসের প্রখ্যাতি সনদের প্রয়োজনীয়তা দূর করে দিয়েছে।"


আপনাদের আমরা চাইলে ৫নং শর্তে আরো ভাল করে পাকড়াও করতে পারি। গোপন ত্রুটি সনদেও যেমন হয়, মতনেও হয়। সনদের ব্যাপারটা না হয় আপনারা রিজাল শাস্ত্র দিয়ে প্রুফ করে দিতে পারেন। মতনের ব্যাপারটা? বুখারী যে আবু হুরায়রার "আল্লাহ শনিবার কাঁদামাটি সৃষ্টি করেছে" হাদীসটা কাব আল-আহবারের হাদিস বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, সেটা কি সনদের ভিত্তিতে ছিল নাকি মতনের ভিত্তিতে? আপনারা আবু হানিফার দোষ দেন তিনি রায়ের ভিত্তিতে হাদিস ত্যাগ করতেন। তাহলে বুখারির ব্যাপারে কী বলবেন? তিনিও তো অনুমান করেই একটা "সহিহ" হাদিস প্রত্যাখ্যান করলেন? এটা গোঁজামিল না?


হাদীস বর্ণনায় ভুলভ্রান্তি যে কত ভাবে হতে পারে তার কোন শেষ নাই।


لا نهاية لمواقع إمكان الغلطات في الروايات


— কাজী আবু বকর আল বাকিল্লানী আল মালিকি।



হাদিসকে যারাই কোরআন, আমল ও আকল থেকে আলাদা করে বুঝতে যাবে তারাই বিভ্রান্তি ও গোঁজামিলের দুনিয়ার বাসিন্দা হবে।




ইমাম মালিকের নাম ব্যবহার করে আহলুল হাদীস সম্প্রদায় আবু হানীফাকে কাফের, ইসলামে জন্ম নেওয়া জঘন্যতম ব্যক্তি ইত্যাদি কুরুচিপূর্ণ যেসব উক্তি বর্ণনা করেছে তার বাস্তবতা কী? ইমাম মালিক যদি এগুলো না বলে থাকেন, তাহলে এই মিথ্যাগুলো বানালো কারা? এগুলো তো সনদ সহ আছে। তাহলে সনদে উল্লিখিত রাবিগণ কি মিথ্যা তৈরিতে জড়িত? কিন্তু তাদের তো ভালো মানুষ বলে আমরা জানি। তাহলে এই মিথ্যাচার করা কিভাবে তাদের দ্বারা সম্ভব হলো?


বাস্তবতা হলো হাদীস বর্ণনাকারীদের জন্য মিথ্যা বলা খুবই স্বাভাবিক বিষয় ছিল। মিথ্যা তাদের মুখ দিয়ে নদীর স্রোতের মত প্রবাহিত হতো। মিথ্যা তাদের জন্য এতটাই অবাধ ও অনর্গল ছিল যে, তারা যে মিথ্যা কথা বলছে সেই বোধটুকুও তারা হারিয়ে ফেলত। ক্লিনিক্যাল পরিভাষায় একে প্যাথলজিক্যাল লাইয়ার সিনড্রোম বলা হয়।


হাদীস বর্ণনাকারীদের এই স্বরূপ উন্মোচন করে ইমাম মুসলিম তার সহিহ মুসলিম গ্রন্থের ভূমিকায় বলেন,


• وحدثني محمد بن أبي عتاب ،  قال: حدثني عفان ،  عن محمد بن يحيى بن سعيد القطان ،  عن أبيه قال: «لم نر الصالحين في شيء أكذب منهم في الحديث». قال ابن أبي عتاب :  فلقيت أنا محمد بن يحيى بن سعيد القطان ،  فسألته عنه: فقال عن أبيه :  لم تر أهل الخير ⦗١٤⦘ في شيء أكذب منهم في الحديث، .


আমাকে মুহাম্মদ বিন আবি আত্তাব বলেছেন, তিনি বলেন, আমাকে আফফান বলেছেন, তিনি মুহাম্মদ বিন ইয়াহিয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান থেকে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন—


"আমি নেককার ভালো মানুষদের হাদীসের ক্ষেত্রে যত মিথ্যা বলতে দেখেছি এমন আর অন্য কোথাও দেখি নি।"


ইবনে আবি আত্তাব বলেন, আমি সরাসরি মুহাম্মদ বিন ইয়াহিয়া বিন সাঈদের কাছে গিয়ে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, "হাদীসের ক্ষেত্রে ভালো মানুষগণ যতটা মিথ্যা বলেন এমনটা আমি আর অন্য কোথাও দেখিনি।"


قال مسلم :  يقول: يجري الكذب على لسانهم ولا يتعمدون الكذب


ইমাম মুসলিম বলেন, "তাদের মুখ দিয়ে মিথ্যা প্রবাহিত হয়, যদিও তারা মিথ্যা বলার উদ্দেশ্য রাখে না।"


সহিহ হাদিস কোনটা বুঝার উপাই কি?


১. প্রথমত দেখতে হবে এই হাদীস এর কতগুলো সূত্র আছে। যত বেশি সূত্র তত ভুল হবার সম্ভাবনা কম।


২. তারপর দেখতে হবে এই হাদীস মোতাবেক আমল হয়েছে কিনা। মদীনাবাসীর আমল এখানে উল্লেখযোগ্য।


৩. তারপর দেখতে হবে, এই হাদীসের বর্ণনাকারী গণ ফকিহ কিনা। অন্যথায় তারা মুখে কী বলে সেটাতে তালগোল পাকিয়ে ফেলতে পারে।


৪. তারপর দেখতে হবে, এই হাদীস প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহর বিপরীতে যায় কিনা।


৫. হাদীসের মতনে কোন গোপন ত্রুটি বা ইল্লত আছে কিনা।


এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে হাদীসের শুদ্ধতা অধিকাংশক্ষেত্রেই নিশ্চিত করা যায়।



ইবনে ওয়াহব বলেন,


لولا أن الله أنقذني بمالك والليث لضللت. فقيل له : كيف ذلك؟ قال : أكثرت من الحديث فحيرني. فكنت أعرض ذلك على مالك والليث، فيقولان لي: خذ هذا ودع هذا. 


আল্লাহ যদি আমাকে মালিক ও লাইস দ্বারা উদ্ধার না করতেন আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যেতাম। জিজ্ঞেস করা হলো কেন? তিনি বললেন, আমি এত বেশি হাদীস পড়েছি যে আমি বিভ্রান্ত দিশেহারা হয়ে যাই। আমি সেগুলো মালিক ও লাইস এর কাছে পেশ করলে বলতেন, এটা রাখ, ওটা বাদ দাও।


ইবনে ওয়াহব মুহাদ্দিস ছিলেন। মালিক ও লাইস ছিলেন ফকিহ। তারা ফিকহের আলোকে জানতেন কোন হাদীস নিতে হবে কোন হাদীস ছাড়তে হবে।


সুফিয়ান বিন উয়াইনা বলেন,


الحديث مضلة إلا للفقهاء


"হাদীস পথভ্রষ্ট করে কেবল ফুকাহাদের বাদে।"


মূলত এই কারণেই আহলুল ফিকহ নয় এমন আহলুল হাদীস ঘরানার বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়।


আবু হানিফাকে আহলুল হাদীস গোষ্ঠীর অপছন্দ করার কারণ কেবল একটি-দুইটি না। বহু কারণ তাদের আছে। যেমন আহলুল হাদীস গোষ্ঠী খুলাফায়ে রাশেদা, আশারায়ে মুবাশশারা, সাবেকিনে আউয়ালিন মুহাজির আনসারদের ইলম সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের নির্ভর করতে হয়েছে আমিরে মুয়াবিয়ার পক্ষ থেকে নিযুক্ত মুহাদ্দিস আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-র রেওয়ায়াত এর উপর; তার রেওয়ায়াত-সমূহে দ্ববত, ইতকান না থাকা এবং প্রচুর ইদ্বতিরাব থাকা সত্ত্বেও। এদিকে আবু হানিফার শহর—আবদুল্লাহ বিন মাসুউদের স্মৃতিবিধৌত কুফা নগরীর কাছে ছিল ইলমের আরো বিশুদ্ধ ও মজবুত উৎস। আবু হুরায়রা—যাকে হাদীস বর্ণনায় ভুলভ্রান্তির কারণে হযরত আয়েশা সমালোচনা করেছেন, হযরত ওমর যাকে হাদীস বর্ণনা করতে নিষিদ্ধ করেছিলেন—স্বাভাবিকভাবে তিনি ইলমের উৎস হিসেবে আবু হানিফা ও তার পূর্বসূরীদের কাছে দুর্বল হবেন। ইমাম ইব্রাহিম নাখই কুফার তাবেঈদের মূলনীতি উল্লেখ করতে গিয়ে যা বলেন তার সারকথা — কুফাবাসী তাবেঈ ও তাবে তাবেঈগণ আবু হুরায়রাকে দুর্বল রাবি ভাবতেন; যার আদালত নিয়ে কোন প্রশ্ন না থাকলেও দ্ববত নিয়ে আছে। তাই কেবল ফাযায়েলে আমলে তার হাদীস তারা গ্রহণ করতেন। ফিকহি কোন হুকুমের ভিত্তিপ্রস্তর হতে পারে এমন হাদীসের ক্ষেত্রে না। তারিখে ইবনে আসাকির থেকে রেওয়ায়াতগুলো কমেন্টে দেখুন। আমার এই কথাগুলো যদি হজম করতে কষ্ট হয় তাহলে ইমাম আবু বকর আল-জাসসাসের "আল ফুসুল ফিল উসুল" পড়ে নিন যা তিনি আবু হানিফার ছাত্র মুহাম্মদ শায়বানির ছাত্র ঈসা বিন আবানের লিখিত প্রথম হানাফী উসুলে ফিকহ বইয়ের ব্যাখ্যায় লিখেছেন। জাসসাস শুধু হানাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করে ক্ষান্ত হন নি, এই বিষয়ে আহলুল হাদীস গোষ্ঠীর সকল জবাব খণ্ডন করেছেন।


আবু হুরায়রা আহলুল হাদীসের গোষ্ঠীর কাছে ইসলামকে বোঝার সবচাইতে শক্তিশালী উৎস। ইমাম মালিক আবু হুরায়রার হাদীস গ্রহণ করতেন; আবু হুরায়রা ফকিহ নাকি ফকিহ না এসব তিনি বিবেচনা করতেন না। কারণ হাদীস ফিল্টার করার মানদণ্ড তার কাছে ছিল মদিনার আমল। এই আমলের ব্যতিক্রম হলে তিনি জগতের সর্বোচ্চ বিশুদ্ধ সনদকেও, যাকে বুখারী স্বর্ণের তৈরি সনদ বলতেন, ত্যাগ করেছেন। মুয়াত্তা খুলে দেখে নিন। 


مَالِكٌ ،  عَنْ نَافِعٍ ،  عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ ؛  أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ: «الْمُتَبَايِعَانِ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا بِالْخِيَارِ عَلَى صَاحِبِهِ. مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا. إِلَاّ بَيْعَ الْخِيَارِ». 


قَالَ مَالِكٌ :  وَلَيْسَ لِهذَا عِنْدَنَا حَدٌّ مَعْرُوفٌ. وَلَا أَمْرٌ مَعْمُولٌ بِهِ فِيهِ.

 ইসরাইলি বর্ণনা  বলতে বোঝায় এমন কোন বর্ণনা যা আমাদের হাদিস, তাফসির, ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত হয়েছে আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদি, খ্রিস্টানদের সোর্স থেকে। অনেক সময় এই বর্ণনাগুলো মুসলিমদের কাছে এসেছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী সাবেক ইহুদি-খ্রিস্টান বিদ্বানদের মাধ্যমে। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন ওয়াহব বিন মুনাব্বেহ, কাব আহবার। সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন সালামও আছেন। অনেক সাহাবি তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন কথা শুনে বর্ণনা করেছেন যে কথাগুলো মূলত জুডেও-ক্রিশ্চান স্কলাস্টিক ট্র্যাডিশন থেকে এসেছে। আমাদের যেমন হাদিস, তাফসির ও এদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের শাস্ত্র আছে, আহলে কিতাবেরও ছিল। তাওরাত, তালমুদ, তাওরাতের ব্যাখ্যা মিদরাশ ইত্যাদি। এছাড়াও সাহাবিদের অনেকে সরাসরি আহলে কিতাবের বইপত্র থেকে বর্ণনা করতেন। সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস সম্পর্কে ইবনে কাসির আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া তে লিখেন: 


كَانَ وَجَدَ يَوْمَ الْيَرْمُوكِ زَامِلَتَيْنِ مَمْلُوءَتَيْنِ كُتُبًا مِنْ عُلُومِ أَهْلِ الْكِتَابِ فَكَانَ يُحَدِّثُ مِنْهُمَا بِأَشْيَاءَ كَثِيرَةٍ مِنَ الْإِسْرَائِيلِيَّاتِ مِنْهَا الْمَعْرُوفُ وَالْمَشْهُورُ وَالْمَنْكُورُ وَالْمَرْدُود


“আব্দুল্লাহ বিন আমর ইয়ারমুক যুদ্ধে দুই উট বোঝাই আহলে কিতাবের জ্ঞান-বিদ্যার বই লাভ করেন। তিনি এখান থেকে বহু ইসরাইলি বিষয় বর্ণনা করতেন, যার কিছু মা'রুফ (জ্ঞাত ও স্বীকৃত), কিছু মাশহুর (খ্যাত), কিছু আপত্তিকর এবং কিছু পরিত্যাজ্য।”


ইসরাইলি বর্ণনার এই ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে মাঝেমাঝে রাসুলের হাদিসের সাথে এগুলো সংমিশ্রিত হয়ে যেত।


ইমাম মুসলিম তার  আত তাময়িয  গ্রন্থে বুসর বিন সাইদ থেকে বর্ণনা করেন :


 اتقوا الله ، وتحفظوا من الحديث ، فوالله ! لقد رأيتنا نجالس أبا هريرة ، فيحدث عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ، ويحدثنا عن كعب الأحبار ثم يقوم ، فأسمع بعض من كان معنا يجعل حديث رسول الله صلى الله عليه وسلم عن كعب ، وحديث كعب عن رسول الله صلىالله عليه وسلم


আল্লাহকে ভয় কর, হাদিসের ব্যাপারে সতর্ক হও। আল্লাহর কসম করে বলছি! আমার মনে আছে আমরা আবু হুরায়রার মজলিসে বসতাম। তিনি আমাদের আল্লাহর রাসুল থেকে হাদিস বলতেন। আবার কাব আহবার থেকেও বর্ণনা করতেন। এরপর উঠে যেতেন। তখন আমি আমাদের সাথে মজলিসে বসা অনেককে শুনতাম যারা আল্লাহর রাসুলের হাদিসকে কাবের বর্ণনা এবং কাবের বর্ণনাকে আল্লাহর রাসুলের হাদিস বানিয়ে ফেলত। 


ইসরাইলি বর্ণনার কবলে পড়া এমন একটি হাদিস হচ্ছে সহিহ মুসলিমের “হাদিসুত তুরবাহ” বা কাদামাটির মাটির। এসম্পর্কে আমরা মুহাদ্দিস আলেমদের বক্তব্য দেখব।


শায়খুল ইসলাম ইবন তায়মিয়্যাহ  মাজমু'উল ফাতাওয়াতে বলেন :

وَمِمَّا قَدْ يُسَمَّى صَحِيحًا مَا يُصَحِّحُهُ بَعْضُ عُلَمَاءِ الْحَدِيثِ وَآخَرُونَ يُخَالِفُونَهُمْ فِي تَصْحِيحِهِ فَيَقُولُونَ: هُوَ ضَعِيفٌ لَيْسَ بِصَحِيحِ مِثْلَ أَلْفَاظٍ رَوَاهَا مُسْلِمٌ فِي صَحِيحِهِ وَنَازَعَهُ فِي صِحَّتِهَا غَيْرُهُ مَنْ أَهْلِ الْعِلْمِ إمَّا مِثْلَهُ أَوْ دُونَهُ أَوْ فَوْقَهُ فَهَذَا لَا يُجْزَمُ بِصِدْقِهِ إلَّا بِدَلِيلِ


وَمِثْلُهُ حَدِيثُ مُسْلِمٍ: {إنَّ اللَّهَ خَلَقَ التُّرْبَةَ يَوْمَ السَّبْتِ وَخَلَقَ الْجِبَالَ يَوْمَ الْأَحَدِ وَخَلَقَ الشَّجَرَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَخَلَقَ الْمَكْرُوهَ يَوْمَ الثُّلَاثَاءِ وَخَلَقَ النُّورَ يَوْمَ الْأَرْبِعَاءِ وَبَثَّ فِيهَا الدَّوَابَّ يَوْمَ الْخَمِيسِ وَخَلَقَ آدَمَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ} فَإِنَّ هَذَا طَعْنٌ فِيهِ مَنْ هُوَ أَعْلَمُ مِنْ مُسْلِمٍ مِثْلَ يَحْيَى بْنِ مَعِينٍ وَمِثْلَ الْبُخَارِيِّ وَغَيْرِهِمَا وَذَكَرَ الْبُخَارِيُّ أَنَّ هَذَا مِنْ كَلَامِ كَعْبِ الْأَحْبَارِ وَطَائِفَةٌ اعْتَبَرَتْ صِحَّتَهُ مِثْلَ أَبِي بَكْرٍ ابْنِ الْأَنْبَارِيِّ وَأَبِي الْفَرَجِ ابْنِ الْجَوْزِيِّ وَغَيْرِهِمَا وَالْبَيْهَقِي وَغَيْرُهُ وَافَقُوا الَّذِينَ ضَعَّفُوهُ وَهَذَا هُوَ الصَّوَابُ؛ لِأَنَّهُ قَدْ ثَبَتَ بِالتَّوَاتُرِ أَنَّ اللَّهَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَثَبَتَ أَنَّ آخِرَ الْخَلْقِ كَانَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَيَلْزَمُ أَنْ يَكُونَ أَوَّلُ الْخَلْقِ يَوْمَ الْأَحَدِ وَهَكَذَا هُوَ عِنْدَ أَهْلِ الْكِتَابِ وَعَلَى ذَلِكَ تَدُلُّ أَسْمَاءُ الْأَيَّامِ وَهَذَا هُوَ الْمَنْقُولُ الثَّابِتُ فِي أَحَادِيثَ وَآثَارٍ أُخَرَ وَلَوْ كَانَ أَوَّلُ الْخَلْقِ يَوْمَ السَّبْتِ وَآخِرُهُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ لَكَانَ قَدْ خُلِقَ فِي الْأَيَّامِ السَّبْعَةِ وَهُوَ خِلَافُ مَا أَخْبَرَ بِهِ الْقُرْآنُ مَعَ أَنَّ حُذَّاقَ أَهْلِ الْحَدِيثِ يُثْبِتُونَ عِلَّةَ هَذَا الْحَدِيثِ مِنْ غَيْرِ هَذِهِ الْجِهَةِ وَأَنَّ رِوَايَةَ فُلَانٍ غَلَطٌ فِيهِ لِأُمُورِ يَذْكُرُونَهَا وَهَذَا الَّذِي يُسَمَّى مَعْرِفَةَ عِلَلِ الْحَدِيثِ بِكَوْنِ الْحَدِيثِ إسْنَادُهُ فِي الظَّاهِرِ جَيِّدًا وَلَكِنْ عُرِفَ مَنْ طَرِيقٍ آخَرَ: أَنَّ رَاوِيَهُ غَلِطَ فَرَفَعَهُ وَهُوَ مَوْقُوفٌ أَوْ أَسْنَدَهُ وَهُوَ مُرْسَلٌ أَوْ دَخَلَ عَلَيْهِ حَدِيثٌ فِي حَدِيثٍ وَهَذَا فَنٌّ شَرِيفٌ وَكَانَ يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْأَنْصَارِيُّ ثُمَّ صَاحِبُهُ عَلِيُّ بْنِ الْمَدِينِيّ ثُمَّ الْبُخَارِيُّ مِنْ أَعْلَمِ النَّاسِ بِهِ وَكَذَلِكَ الْإِمَامُ أَحْمَد وَأَبُو حَاتِمٍ وَكَذَلِكَ النَّسَائِي وَالدَّارَقُطْنِي وَغَيْرُهُمْ. وَفِيهِ مُصَنَّفَاتٌ مَعْرُوفَةٌ


“এমন কিছু বর্ণনা আছে যেগুলোকে কোন কোন আলেমের তাসহিহ অর্থাৎ সহিহ হিসেবে চিহ্নিত করার ভিত্তিতে "সহিহ" নাম দেয়া হয়; অথচ অন্যান্য আলেমরা তার এই তাসহিহের বিরোধিতা করেছেন এবং বলেছেন: এই বর্ণনা দূর্বল, সহিহ নয়। উদাহরণত - সহিহ মুসলিমে ইমাম মুসলিম এমন কিছু কথা বর্ণনা করেছেন যার বিশুদ্ধতা নিয়ে তার অন্যান্য আলেমরা সাথে মতভেদ করেছেন। এই আলেমদের কেউ তার সমস্তরের, কেউ তার নিম্নস্তরের এবং কেউ কেউ তার চেয়ে উপরের স্তরের। কোন হাদিসের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি যখন এমনই হয়, তখন কোন দলিল ছাড়া সেই হাদিসের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না। ...


এমন হাদিসের উদাহরণ হচ্ছে মুসলিমের বর্ণিত এই হাদিস: " আল্লাহ শনিবার কাঁদামাটি সৃষ্টি করেছেন, রবিবার পাহাড়, সোমবার গাছাপালা, অপছন্দনীয় বিষয়গুলো মঙ্গলবার, বুধবার সৃষ্টি করেছেন আলো, বৃহস্পতিবার যমিনে পশুপাখি ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং শুক্রবার আদমকে সৃষ্টি করেছেন। " এই হাদিসকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন এমন অনেকে যারা মুসলিমের চাইতে অধিক জ্ঞানী যেমন – ইয়াহইয়া বিন মাঈন, বুখারি প্রমুখ।  বুখারি বলেছেন – এই হাদিস মূলত কাব আহবারের বর্ণনা।  তবে কেউ কেউ এই হাদিসকে সহিহ বলে বিবেচনা করেছেন যেমন – আবু বকর আম্বারি, আবু ফারাজ ইবনুল জাওযি। বায়হাকি প্রমুখ তাদের সাথে একমত হয়েছেন যারা এই হাদিসকে দূর্বল সাব্যস্ত করেছেন। আর এই মতটিই সঠিক। কেননা মুতাওয়াতির সুত্রে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ আসমান-যমিন এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। এছাড়াও প্রমাণিত হয়েছে যে, সৃষ্টি শেষ হয়েছে শুক্রবারে। ফলাফল দাঁড়াচ্ছে যে, সৃষ্টির সূচনা হয়েছিল রবিবার (আরবিতে ইয়াওমুল আহাদ – অর্থ প্রথম দিন)। আহলে কিতাবও এমন মনে করে, তাদের সপ্তাহের দিনগুলোর নামকরণ থেকে এটা বোঝা যায়। সৃষ্টির সূচনা রবিবারে হয়েছে – এটাই অন্যান্য হাদিস ও আছার থেকে প্রমাণিত বক্তব্য। যদি সৃষ্টির সূচনা শনিবারে হত আর শেষ হত শুক্রবার হত, তাহলে সৃষ্টি হত সাতদিন ব্যাপী। আর এটা কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক। এছাড়াও হাদিস শাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা অন্যান্য দিক থেকেও এই হাদিসের মাঝে ইল্লত (গোপন ত্রুটি) রয়েছে বলে সাব্যস্ত করেছেন। ইল্লত সাব্যস্ত করা হচ্ছে এমন বলা – অমুক ব্যক্তির বর্ণনায় ভুল আছে এই এই কারণে। একে বলা হয় মা'রিফাতু ইলালিল হাদিস (হাদিসের গোপন ত্রুটি সম্পর্কে অবগতি) শাস্ত্র। এ সব হাদিস বাহ্যিকভাবে উৎকৃষ্ট সনদে বর্ণিত থাকে কিন্তু অন্য কোন পদ্ধতিতে জানা যায় যে, কোন বর্ণনাকারী এখানে ভুল করেছে, ফলে সে মাওকুফ হাদিসকে (সাহাবির বক্তব্য) মারফু (রাসুলের বক্তব্য) বানিয়ে দিয়েছে কিংবা মুরসাল হাদিসকে মুসনাদ বানিয়ে দিয়েছে কিংবা এক হাদিসকে আরেক হাদিসের সাথে সংমিশ্রিত করে দিয়েছে।  এই শাস্ত্র অত্যন্ত উচ্চস্তরের শাস্ত্র। ইয়াহইয়া বিন সাইদ, অতঃপর তার সঙ্গী আলি বিন মাদিনি, অতঃপর বুখারি ছিলেন এই শাস্ত্রে সবচেয়ে জ্ঞানবান। একইভাবে ইমাম আহমদ, আবু হাতেম। এছাড়াও আছেন – নাসাই, দারাকুতনি প্রমুখ। এই বিষয়ে প্রসিদ্ধ বইপত্র রয়েছে।”

সুত্র : মাজমু’উল ফাতাওয়া ১৮/১৮-১৯।

হাফেয ইবন কাসির আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া  তে বলেন:
وَقَدْ تَكَلَّمَ فِي هَذَا الْحَدِيثِ عَلِيُّ بْنُ الْمَدِينِيِّ، وَالْبُخَارِيُّ، وَالْبَيْهَقِيُّ، وَغَيْرُهُمْ مِنَ الْحُفَّاظِ قَالَ الْبُخَارِيُّ فِي التَّارِيخِ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ عَنْ كَعْبٍ، وَهُوَ أَصَحُّ يَعْنِي أَنَّ هَذَا الْحَدِيثَ مِمَّا سَمِعَهُ أَبُو هُرَيْرَةَ وَتَلَقَّاهُ مِنْ كَعْبِ الْأَحْبَارِ فَإِنَّهُمَا كَانَا يَصْطَحِبَانِ وَيَتَجَالَسَانِ لِلْحَدِيثِ فَهَذَا يُحَدِّثُهُ عَنْ صُحُفِهِ، وَهَذَا يُحَدِّثُهُ بِمَا يُصَدِّقُهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَانَ هَذَا الْحَدِيثُ مِمَّا تَلْقَّاهُ أَبُو هُرَيْرَةَ، عَنْ كَعْبٍ، عَنْ صُحُفِهِ فَوَهِمَ بَعْضُ الرُّوَاةِ فَجَعَلَهُ مَرْفُوعًا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَكَّدَ رَفْعَهُ بِقَوْلِهِ: " أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِي ". ثُمَّ فِي مَتْنِهِ غَرَابَةٌ شَدِيدَةٌ فَمِنْ ذَلِكَ أَنَّهُ لَيْسَ فِيهِ ذِكْرُ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ، وَفِيهِ ذِكْرُ خَلْقِ الْأَرْضِ، وَمَا فِيهَا فِي سَبْعَةِ أَيَّامٍ، وَهَذَا خِلَافُ الْقُرْآنِ لِأَنَّ الْأَرْضَ خُلِقَتْ فِي أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ

এই হাদিসের ব্যাপারে আলি বিন মাদিনি, বুখারি, বায়হাকি সহ অন্যান্য হাফেযগণ সমালোচনা করেছেন। বুখারি তার “তারিখ” গ্রন্থে লিখেছেন: কেউ কেউ এটি কাব আহবার সুত্রে বর্ণনা করেছেন, আর এটাই বিশুদ্ধতর। অর্থাৎ এই হাদিস আবু হুরায়রা কাব আহবার থেকে নিয়েছেন। তারা দুইজন একে অন্যের সঙ্গী ছিলেন, একে অন্যের সাথে মজলিস করতেন। কাব আহবার আবু হুরায়রাকে নিজের (ইসরাইলি) সহিফা থেকে বর্ণনা করতেন, আর আবু হুরায়রা তাকে সেই উক্ত বর্ণনাকে সত্যায়ন করে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন কোন হাদিস বর্ণনা করতেন। বস্তুত  এই হাদিস আবু হুরায়রা কাব থেকে শুনেছেন। কিন্তু বর্ণনাকারীদের কেউ কেউ ভ্রমে লিপ্ত হয়েছে এবং মারফুসুত্রে নবির হাদিস হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং একে নবির হাদিস প্রমাণে জোর দিতে এই কথা (যোগ করে) বলেছে: "আল্লাহর রাসুল আমার হাত ধরে বলেছেন"। এছাড়াও হাদিসের মতনে প্রচণ্ড অদ্ভুত বক্তব্য আছে – যেমন এতে আসমান সৃষ্টির বিবরণ নেই, এছাড়াও এতে যমিন ও এতে অন্তর্ভূক্ত বিষয়গুলো সাতদিনে সৃষ্টির কথা আছে, যা কোরআনের বিপক্ষে যায়। কারণ যমিন চারদিনে সৃষ্টি করা হয়েছে।”

এছাড়াও এই হাদিসের মতনে (মূল বক্তব্য) প্রচণ্ড আপত্তিজনক কথা রয়েছে যেমন - এতে আসমান সৃষ্টির কোন বিবরণ নেই, এছাড়াও এতে বলা হয়েছে যমিন ও যমিনে যা আছে তা সাতদিনে সৃষ্টি হয়েছে। আর এটা কোরআনের খেলাফ।

সুত্র : আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ১/৩২-৩৩।

ইমাম তাবারি তার  তারিখ  গ্রন্থে বলেন :
وأولى القولين في ذلك عندي بالصواب قول من قال: اليوم الذي ابتدأ الله تعالى ذكره فيه خلق السموات والأرض يوم الأحد؛ لإجماع السلف من أهل العلم على ذلك.

“আমার কাছে দুই মতের যেটি সবচেয়ে সঠিক বলে মনে হয়, তা হচ্ছে আল্লাহ তা'আলা আসমান-যমিন সৃষ্টি সূচনা করেছেন রবিবার দিন। আর এই মতের উপর সালাফ ও আহলুল ইলমের ইজমা রয়েছে।”

প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য যে, কোন হাদিস নবির নামে জাল কিংবা ভুলভাবে বর্ণনা করা হয়েছে কিনা তার একটি লক্ষ্মণ হচ্ছে হাদিসে বাস্তবজ্ঞান ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞান বিরোধী বক্তব্য থাকবে। অর্থাৎ এমন বক্তব্য থাকবে যাকে আমরা ইন্দ্রিয়গত পর্যবেক্ষণ দ্বারা ভুল হিসেবে জানি। এই হাদিসে বলা হচ্ছে, গাছপালা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন আলো সৃষ্টির পূর্বে। অথচ আমরা জানি গাছপালার জন্য আলো প্রয়োজন। অর্থাৎ এই হাদিসে আমাদের বাস্তবজ্ঞান বিরোধী বক্তব্য আছে।

ইবনুল কাইয়্যিম আল মানারুল মুনীফ  গ্রন্থে বলেন :
ومنها تكذيب الحس له “হাদিস জাল হবার একটি চিহ্ন হচ্ছে - ইন্দ্রিয় একে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করবে” ومنها أن يكون الحديث مما تقوم الشواهد الصحيحة على بطلانه “আরেকটি চিহ্ন হচ্ছে – হাদিসটি ভিত্তিহীন প্রমাণ হয় এমন বিশুদ্ধ সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকবে।”

এই আলোচনার উদ্দেশ্য পাঠককে হাদিসের ইল্লত বা গোপন ত্রুটি সম্পর্কে সতর্ক করা এবং ইসরাইলি বিবরণের সংমিশ্রণের হয়েছে কিনা সেই ব্যাপারে সজাগ থাকতে উদ্বুদ্ধ করা। বুখারি ও মুসলিমে এমন বহু ইল্লতযুক্ত হাদিস আছে। যা উদঘাটন করার জন্য হাদিসের সনদের পাশাপাশি মতন নিয়ে সার্বিক আলোচনা করা প্রয়োজন। হাদিস শাস্ত্রে ইল্লত নামক একটি পৃথক শাখা আছে। দুঃখজনভাবে, ইল্লতে হাদিস নিয়ে আমাদের ধর্মীয় পরিমণ্ডলে আলোচনা হয় না। মানুষকে কেবল ‘সহিহ’ হাদিসের বই পড়তে উৎসাহ দেয়া হয়। অথচ এই সহিহ কথাটার মাঝেও যে কত জটিলতা আছে, তা নিয়ে মানুষকে অবগত করা হয় না। ফলে বহু মানুষ হাদিসের বই পড়ে বিভ্রান্তির শিকার হয়। আবার, অন্য দিকে হাদিসের বইতে পাওয়া এসব ঘটনাকে পুঁজি করে অনেকে গোটা হাদিস শাস্ত্রকেই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে ফেলার চেষ্টা করেন, কিংবা কোন রকম শাস্ত্রীয় আলাপে না গিয়ে কিছু আবেগপূর্ণ কথা বলে হাদিসকে ডিসমিস করে দেয়ার চেষ্টা করেন। এই উভয় পদ্ধতিই ভ্রান্তিপূর্ণ

সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত কথাগুলোর একটি হচ্ছে, টিকটিকি মারলে সওয়াব হয়। এর পক্ষে অনেকে বুখারির একটি হাদিসকে উল্লেখ করে থাকে, যাতে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ‘ওয়াযাগ’ প্রাণী ইব্রাহিম নবির অগ্নিকুণ্ডে ফুঁ দিয়ে আগুনের দাবদাহ বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। ‘ওয়াযাগ’ মূলত মরুভূমির একটি সরীসৃপ। কেউ এর অনুবাদ করে গিরগিটি, কেউ টিকটিকি। অনুবাদ এখানে মূল বিষয় না। মূল বিষয় হচ্ছে –

কোন প্রজাতির একটি প্রাণী, ধরা যাক একটা টিকটিকি ইব্রাহিম নবীকে আগুনে ফেলার পর সেই আগুনে ফুঁ দিয়ে আগুনের প্রাবল্য বাড়িয়েছে। তাই বলে এক টিকটিকির অপরাধে হাজার হাজার টিকটিকি নিধন তো ন্যায়সঙ্গত বা যৌক্তিক কথা নয়।

ভালমন্দ কিংবা শত্রুমিত্র বোঝার মত জ্ঞানবুদ্ধি কি টিকটিকির মত প্রাণীর আছে? ইব্রাহিম নবির বিরুদ্ধে শত্রুতা করার মত কিইবা কারণ একটা টিকটিকির থাকতে পারে? তাছাড়া টিকটিকির উপর তো আল্লাহ শরিয়ত নাযিল করেন নি, হালাল-হারামের বাধ্যবাধকতা তো টিকটিকির নেই।

আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছিলাম যে, বুখারি, মুসলিমের অধিকাংশ হাদিস বিশুদ্ধ হলেও এতে বেশ কিছু গোপন ত্রুটিযুক্ত ও আপত্তিকর হাদিস আছে। দলিল-প্রমাণ সহকারে পর্যালোচনা করলে এই ত্রুটিগুলো বেরিয়ে আসে। বুখারিতে বিদ্যমান এমন একটি ত্রুটিযুক্ত হাদিস হচ্ছে – বানরের পরকীয়া করা ও সেই পরকীয়ার শাস্তি বিষয়ে একটি গল্প। বুখারিতে আছে,

عمرو بن ميمون قال : رَأَيْتُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ قِرْدَةً اجْتَمَعَ عَلَيْهَا قِرَدَةٌ ، قَدْ زَنَتْ ، فَرَجَمُوهَا ، فَرَجَمْتُهَا مَعَهُمْ

“আমর বিন মায়মুন থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাহেলি যুগে দেখলাম এক বানরের বিরুদ্ধে অন্যান্য বানরের একদল একত্রিত হয়ে পাথর ছুড়ে মারছে। কারণ সেই বানরটি ব্যভিচার করেছিল। আমিও সেই বানরদের সাথে পাথর নিক্ষেপ করায় অংশ নেই।

এই বর্ণনার সমস্যা হচ্ছে - বানরের মাঝে তো কোন বিয়েশাদীর ধারণা নেই, তাই পরকীয়া বলেও কিছু থাকা সম্ভব না। বানরের উপর কোন শরীয়ত নাযিল হয় নি। আর বানরের এত বুদ্ধিমত্তাও নেই যে তারা নিজেরা একটা আইনি কাঠামো ও বিচার ব্যবস্থা দাঁড় করিয়ে ফেলবে এবং দণ্ডবিধি মোতাবেক নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অপরাধের শাস্তি কার্যকর করবে।

অনেকেই আছে, যারা এই যৌক্তিক আপত্তিগুলো অগ্রাহ্য করে থাকে এবং বুখারি-মুসলিম গ্রন্থের প্রতি পরম ভক্তি থেকে বিনা দ্বিধায় এগুলো বিশ্বাস করে নেয়। সঠিক জ্ঞানচর্চার অভাবে তাদের অনেকেই বুখারি ও মুসলিম গ্রন্থ দুইটিকে মাসুম ও ত্রুটিবিচ্যুতির ঊর্ধ্বে বলে ভাবা শুরু করে।

ইমাম ইবনে আব্দুল বার (১০৭১খ্রিস্টাব্দ) আল ইস্তি'আব ফি মারিফাতিল আসহাব কিতাবে বলেন :
هذا عند جماعة أهل العلم منكر : إضافة الزنا إلى غير مكلف ، وإقامة الحدود في البهائم

“আলেমদের একটি দল এই হাদীসকে মুনকার বা আপত্তিকর বলেছেন। কেননা এতে শরীয়ত মানতে দায়বদ্ধ নয় এমন প্রাণীর সাথে ব্যভিচারের সংযোগ করা হয়েছে এবং অবুঝ প্রাণীর উপর হদ-শাস্তি প্রয়োগের উল্লেখ আছে।”

ক্লাসিকাল স্কলারদের সবাই একমত যে, এটা না রাসুলের সমর্থন করা কথা, না কোন সাহাবীর। কারণ আমর বিন মায়মুন রাসুলকে কোনদিন দেখেন নি। কিন্তু এরপরেও ইমাম বুখারী এই বর্ণনাটি তার কিতাবে নিয়ে এসেছেন এটা প্রমাণ করতে যে আমর বিন মায়মুন দীর্ঘ জীবন পেয়েছিলেন এবং জাহেলি যুগের অভিজ্ঞতা তার আছে।

বিখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ আলবানি এই হাদীসের ব্যপারে বলেছেন,
هذا أثرٌ منكرٌ ، إذ كيف يمكنُ لإنسان أن يعلم أن القردة تتزوج ، وأن مِن خُلقهم المحافظةَ على العرضِ ، فمن خان قتلوهُ ؟! ثم هبّ أن ذلك أمرٌ واقعٌ بينها ، فمن أين علم عمرو بن ميمون أن رجمَ القردةِ إنما كان لأنها زنت

“এটা এক আপত্তিকর আসার (বর্ণনা)। কীভাবে একজন মানুষ জানতে পারল যে ঐ বানর বিয়ে করেছে? আর বানরদের চারিত্রিক নৈতিকতার ধারণা আছে যা লঙ্ঘন করলে হত্যা করতে হয়, এটাই বা কীভাবে তিনি বুঝলেন? চল ধরে নেই যে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা আসলেই ঘটেছে। কিন্তু আমর বিন মায়মুন কীভাবে বুঝলেন যে পরকীয়ার শাস্তি হিসেবে এটা ঘটেছে?”

এবার ওয়াযাগ হত্যা সংক্রান্ত হাদিসগুলোর সনদ নিয়ে একটা তাহকিকি আলোচনা দেখা যাক।

“যে প্রথম আঘাতে ওয়াযাগ হত্যা করবে ...” শীর্ষক হাদিসটি কি মুস্তাহাব নাকি ওয়াজিব হুকুম নির্দেশ করে? “ওয়াযাগ ইব্রাহিমের আগুনে ফুঁ দিয়েছিল” কথাটি কি রাসুলের দিকে সম্পৃক্ত করা শুদ্ধ?

তিনি উত্তরে বলেন:

মুসলিম হাদিসটি (২২৪০) খালেদ বিন আব্দুল্লাহ ও সুফিয়ান সাওরির সুত্রে সুহাইল < তার পিতা < আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন,

“যে প্রথম আঘাতে কোন গিরগিটি হত্যা করবে তার জন্য এত এত সওয়াব। যে দ্বিতীয় আঘাতে হত্যা করবে তার জন্য এত এত সওয়াব, তবে প্রথম বারের চাইতে কম। যদি তৃতীয় আঘাতে হত্যা করে, তবে এত এত সওয়াব, তবে দ্বিতীয় বারের তুলনায় কম।”

এই হাদিস উল্লেখ করার পর মুসলিম হাদিসটির গোপন ত্রুটি স্পষ্ট করেছেন। কারণ তিনি হাদিসটি ইসমাইল বিন যাকারিয়্যার সুত্রে সুহাইল < তার বোন < আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সা. বলেছেন,

“প্রথম আঘাতে সত্তর নেকি ..”

আবু দাউদও (৫২৬৪) একইভাবে এটি ইসমাইল বিন যাকারিয়্যা সুত্রে সুহাইল থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, “আমাকে আমার ভাই কিংবা বোন বলেছেন ...।” আর এটা মুনকাতি’ হাদিস অর্থাৎ এর বর্ণনাসুত্রে ছেদ রয়েছে। ইবন আদী তার কিতাবুদ দ্বু’আফায় (৪/৫২৪) এই হাদিসকে সুহাইল থেকে বর্ণিত মুনকার (আপত্তিকর) হাদিসের তালিকায় উল্লেখ করেছেন।

যাহাবী তার সিয়ারু আ'লামিন নুবালায় (৫/৪৫৯) বলেছেন:

“সুহাইলের অদ্ভুত-অপরিচিত (গরীব) হাদিসের একটি হচ্ছে সুহাইল < তার পিতা < আবু হুরায়রা সুত্রে বর্ণিত হাদিস, “যে গিরগিটি হত্যা করবে ...”

সুহাইলের স্মৃতিশক্তি নিয়ে মুহাদ্দিসরা সমালোচনা করেছেন। মুহাদ্দিসদের একটি দল তাকে দূর্বল সাব্যস্ত করেছেন। একারণে বুখারি তাকে পরিত্যাগ করেছেন। এছাড়াও এই হাদিসের বর্ণনাসুত্র (সনদ) ও বক্তব্যে (মতন) ইদতেরাব (অসংলগ্নতা) রয়েছে। তিনি এটি তার ভাই অথবা তার বোন থেকে বর্ণনা করেছেন। আর তাদের কেউই আবু হুরায়রার সাক্ষাত পান নি। সুতরাং মুনকাতি' বা এটি বিচ্ছেদযুক্ত বর্ণনা। একারণেই মুসলিম এই ত্রুটিগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করেছেন। এছাড়াও তিনি এককভাবে এই হাদিস বর্ণনা করেছেন। যার কারণে ইবন আদী ও যাহাবী একে আপত্তিকর (মুনকার) ও অদ্ভূত (গরীব) সাব্যস্ত করেছেন

সব মিলিয়ে এই বর্ণনায় ৪টি ত্রুটি রয়েছে।

সুহাইলের একক বর্ণনা (তিনি ছাড়া কেউ এটি বর্ণনা করেন নি)

সুহাইলের স্মৃতিশক্তির দূর্বলতা, যা এই এই একক বর্ণনা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক।

বর্ণনাসুত্রে অসংলগ্নতা।

বর্ণনাসুত্রে বিচ্ছেদ। যা এখানে স্পষ্ট।

ওয়াযাগ হত্যার ব্যাপারে বিশুদ্ধ হচ্ছে সেই হাদিসটি যা মুসলিম এই পরিচ্ছেদে সবার আগে রেখেছেন। ( ইমাম মুসলিম কোন পরিচ্ছেদে একাধিক হাদিস থাকলে সবার প্রথমে সেই বিষয়ে সবচেয়ে শুদ্ধ হাদিসটি উল্লেখ করেন, আর সবার শেষে উল্লেখ করেন সবচেয়ে দূর্বল হাদিস। ) এটি হচ্ছে উম্মে শুরাইকের হাদিস,

“তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর কাছে দুইটি ওয়াযাগ হত্যার ব্যাপারে হুকুম জানতে চাইলে নবিজি তাকে হত্যার আদেশ দেন।”

উম্মে শুরাইক থেকে বুখারী (৩৩০৭) ও মুসলিম এটি এভাবে বর্ণনা করেছেন,

“নবীজি তাকে গিরগিটি হত্যার আদেশ দেন।”

সঠিক বক্তব্য হচ্ছে, উম্মে শুরাইক ঘরে রাখা খাবারে ব্যাপারে গিরগিটির ক্ষয়ক্ষতির আশংকা থেকে নবির সা. কাছে গিরগিটি হত্যার অনুমতি চান। কেননা সুবিদিত যে গিরগিটি বিষাক্ত প্রাণী। ফলে নবি সা. তাকে অনুমতি দিয়েছেন যেভাবে তিনি অন্যান্য ফুওয়ায়সিক বা অনাচারী প্রাণী যেমন ইঁদুর, সাপ, বিচ্ছুর ন্যায় ক্ষতিকর প্রাণী হত্যার অনুমতি দিয়েছেন।

আর ইবন জুরাইজ < আব্দুল হামীদ বিন জুবায়র < সা'ইদ বিন মুসাইয়্যাব < উম্মু শুরাইক সুত্রে বর্ণিত হাদিসের শেষে উবায়দুল্লাহ বিন মুসা যে অতিরিক্ত কথা যোগ করেছেন, তা বুখারীতে (৩৩৫৯) এভাবে রয়েছে -

“গিরগিটি হত্যার আদেশ দেন। তিনি(?) বলেছেন, এটি ইব্রাহিমের আগুনে ফুঁ দিত।”

উম্মু শুরাইকের এই হাদিসে গিরগিটি হত্যার কারণ হিসেবে উল্লিখিত এই অতিরিক্ত অংশ “ইব্রাহিমের আগুনে ফুঁ” ব্যাপারে কথা হচ্ছে যে, এটি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য নয়। বরং এটি ইবন জুরাইজের বক্তব্য। আর একারণেই বর্ণনাকারী পুনরায় ‘তিনি বলেছেন’ শব্দ উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ ইবন জুরাইজ বলেছেন। এটা বোঝা যায় কারণ ইবন জুরাইজের ন্যায় ইবন উয়াইনাহ ও অন্যরাও আব্দুল হামীদ থেকে এই হাদিস বর্ণনা করেছেন, কিন্তু ইবন জুরাইজের ন্যায় এই অতিরিক্ত অংশ উল্লেখ করেন নি। এমনকি উবায়দুল্লাহ বিন মুসা বাদে ইবন জুরাইজ থেকে অন্য যারা এই হাদিস বর্ণনা করেছেন যেমন ইয়াহিয়া বিন সাইদ আল কাত্তান, ইবন বকর, রওহ তারাও এই অতিরিক্ত অংশ উল্লেখ করেন নি। আহমদ (২৭৩৬৫) ও দারিমি (২০৪৩) আবু আসেম থেকে ইবন জুরাইজের যে বর্ণনা উল্লেখ করেছেন তাতেও এই অতিরিক্ত অংশ পাওয়া যায় না। যা কেবল উবায়দুল্লাহ বিন মুসার বর্ণনায় পাওয়া যায়।

এছাড়াও বুখারি এই হাদিসের সনদে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন আমাদের উবায়দুল্লাহ বিন মুসা জানিয়েছেন কিংবা ইবন সালাম উবায়দুল্লাহ বিন মুসা থেকে জানিয়েছেন যে ইবন জুরাইজ বলেছেন ... অর্থাৎ বুখারির সন্দেহ রয়েছে যে এই হাদিসটি তিনি ঠিক কার কাছে শুনেছেন।

“ইব্রাহিমের আগুনে ফুঁ দিত” এই অতিরিক্ত অংশটি ইবন জুরাইজ মূলত আয়েশার একটি হাদিস থেকে বর্ণনা করেছেন যা মুসনাদে আহমদে (২৫৬৪৩) রয়েছে –

আমাদের মুহাম্মদ বিন বকর বলেছেন, তাকে ইবন জুরাইজ জানিয়েছেন, তাকে আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান বিন আবু উমাইয়্যা বলেছেন, তাকে ইবনে উমারের দাস নাফে’ বলেছেন, তাকে আয়েশা জানিয়েছেন যে, “নবীজি বলেছেন: ওয়াযাগ হত্যা কর। কেননা এটি ইব্রাহিমের আগুনে ফুঁ দিত।” নাফে' বলেছেন, “আয়েশা ওয়াযাগ হত্যা করতেন।”

শুদ্ধ হচ্ছে যে, নাফে' এটি ফাকিহা বিন মুগিরার বাদী সায়েবা থেকে বর্ণনা করেছেন যে,


“সায়েবা আয়েশার ঘরে প্রবেশ করেন এবং সেখানে বর্শা দেখতে পান। তিনি বলেন: হে উম্মুল মুমিনিন! এই বর্শা দিয়ে কী করবেন? আয়েশা বলেন: আমরা ওয়াযাগ মারব। কেননা নবি সাঃ আমাদের জানিয়েছেন যে গিরগিটি ইব্রাহিমের আগুনে ফুঁ দিত।”


এভাবেই নাফে' থেকে জারির বিন হাযেম এটি বর্ণনা করেছেন যা রয়েছে আহমদ (২৪৫৩৪, ২৪৭৮০), ইবন মাজাহ (৩২৩১), ইবন হিব্বান (৫৬৩১) গ্রন্থে। 


জারির বিন হাযেমের এই বর্ণনাকে দারাকুতনি তার “আল ইলাল” গ্রন্থে (৩৭৮৯) অগ্রগণ্য রেখেছেন। এই সায়েবা সম্পর্কে কথা হচ্ছে যে, তিনি একজন অজ্ঞাত দাসী। নাফে’ ছাড়া কেউই এটি বর্ণনা করেন নি। আর আয়েশা থেকে এটি কেবল সায়েবাই বর্ণনা করেছেন। সায়েবা যদি পরিচিত হতেন তবুও তার থেকে এমন একক বর্ণনা গ্রহণ করা হত না। আর সেখানে তিনি একজন অজ্ঞাতপরিচয় বর্ণনাকারী!


আয়েশা থেকে সায়েবার এই বর্ণনা যে শুদ্ধ নয় তা আমরা আরো নিশ্চিত হতে পারি বুখারি ও মুসলিমে উল্লিখিত আয়েশার হাদিস থেকে যা তিনি সরাসরি নবি থেকে বর্ণনা করেছেন। মালিক < ইবন শিহাব < উরওয়াহ বিন যুবাইর (আয়েশার ভাগ্নে) থেকে, আয়েশা বলেন,


“আল্লাহর রাসুল গিরগিটিকে ফুয়াইসিক বা দুর্বৃত্ত ডেকেছেন। তবে আমি তাকে গিরগিটি হত্যা করার আদেশ দিতে শুনি নি।”


সায়েবার সুত্রে যা বর্ণিত হয়েছে তার তুলনায় এটি বিশুদ্ধতর। ফলে দাঁড়াচ্ছে যে, সহিহাইনের বর্ণনা অনুযায়ী আয়েশা রাসুলকে গিরগিটি হত্যার আদেশ দিতে শোনেন নি, কিন্তু সায়েবা বর্ণনা অনুযায়ী শুনেছেন। ইবন হাজার তার ফাতহুল বারীতে এই পরস্পর সাংঘর্ষিক দুই বর্ণনার ব্যাপারে সমঝোতা করতে গিয়ে বলেছেন –


“সহিহ বুখারিতে যেটা এসেছে সেটাই বিশুদ্ধতর। তবে (সায়েবার বর্ণনার ব্যাপারে বলা যায় যে) হয়ত আয়েশা এটি নিজে না শুনে অন্যান্য সাহাবিদের কাছ থেকে শুনেছেন। আর “রাসুল আমাদের বলেছেন” কথাটি রূপক অর্থে বলেছেন, আক্ষরিক অর্থে নয়।”


এ সম্পর্কে বলব, ইবন হাজার এখানে বিশুদ্ধ একটি সনদের সাথে দূর্বল একটি সনদের সমঝোতা আনার অপ্রয়োজনীয় চেষ্টা করেছেন।


উত্তরটি লেখা হয়েছে – রোজ সোমবার ৫ই মহররম ১৪৩৭ মোতাবেক ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে।


হাকিম আল মুতাইরির বক্তব্য এ পর্যন্তই। তার আলোচনার সারকথা হচ্ছে, ওয়াযাগ আগুনে ফুঁ দিয়েছিল, তাই একে হত্যা করলে নেকি আছে – এগুলো শুদ্ধ নয়। এটা ইসরাইলি সংমিশ্রণ যা আবু হুরায়রা, কা’ব আল আহবার কিংবা অনুরূপ বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে প্রচার লাভ করেছে এবং হাদিসের বর্ণনাকারীরা রাসুলের হাদিস উল্লেখের পাশাপাশি এগুলোও শ্রোতাদের কাছে উল্লেখ করতেন। যেটা আমরা বুখারিতে বর্ণিত ইবনে জুরাইজের হাদিসে তিনি বলেছেন নিয়ে আলোচনায় দেখলাম। মূলত, মরুভূমির বিষাক্ত প্রাণী ওয়াযাগের কারণে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হত, আর তাই নবি একে অনাচারী প্রাণী আখ্যা দিয়েছিলেন, আর ক্ষয়ক্ষতির আশংকা থাকলে একে হত্যা করার অনুমতি দিয়েছিলেন, কিন্তু তৎকালীন সময়ে ইসরাইলি বর্ণনার প্রাদুর্ভাবের কারণে অনেক হাদিস বর্ণনাকারী অসতর্কতাবশত ইব্রাহিমের আগুনে ফুঁ দেয়া এবং ওয়াযাগ হত্যা করলে ইব্রাহিমের প্রতিশোধ নেয়ার কারণে সওয়াব হওয়া জাতীয় ভিত্তিহীন আপত্তিকর বক্তব্য রাসুলের কথার সাথে মিশ্রিত করে ফেলেছিলেন।


এই আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারছি কেন হাদিসচর্চা করার জন্য রিজাল, জারহ-তা’দীল, ‘ইলালুল হাদিস প্রভৃতি শাখায় পারদর্শিতা প্রয়োজন এবং কেন প্রক্ষিক্ষণহীন পাঠকের জন্য সরাসরি হাদিসের বই, চাই সেটা বুখারি কিংবা মুসলিম হোক, বিপজ্জনক।

প্রশ্নবিদ্ধ হাদিসের ৩৫টি উদাহরণ 

(১) লেখার অযোগ্য - নোংরা যৌন পর্নোগ্রাফিক হাদিস - বুখারী ৭ম খন্ড হাদিস ১৭৩, ১৭৪, 

(২) লেখার অযোগ্য - নবীর (সা) যৌনতার অত্যন্ত আপত্তিকর বিবরণ - সহি বুখারী ১ম খন্ড হাদিস ২২৯, ২৪৯, ২৬০,  ৫ম খন্ড হাদিস ২০০,

(৩) লেখার অযোগ্য - নারীর শরীর নিয়ে নোংরা কেয়ামতের আলামত - বুখারী ৯ম খন্ড হাদিস ২৩২,  

(৪) হযরত মুসা কলিমুল্লাহ (আ) জনাকীর্ণ রাস্তায় লোকজনের সামনে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে দৌড়াচ্ছেন -  বুখারী ১ম খন্ড হাদিস ২৭৭, ৪র্থ খন্ড হাদিস ৬১৬,

(৫) আমাদের নবীজি (সা) লোকজনের সামনে নগ্ন হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। বর্ণনাকারী জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা) বলছেন -  এরপরে আর কোনদিন তাঁকে নগ্ন দেখা যায়নি -   বুখারী ১  খন্ড হাদিস ৩৬০, 

(৬) এক বানরী পরকীয়া করেছে বলে বানরের দল ও সাহাবী বানরীকে পাথর মেরেছেন -  বুখারী ৫ম খন্ড হাদিস ১৮৮, 

(৭) মাটি প্রতিটি আদম সন্তানের হাড় খেয়ে ফেলবে মেরুদন্ড ছাড়া, যা থেকে কেয়ামতে তার শরীর আবার বানানো হবে - মুসলিম ৭০৫৬ (৭০৫৫ ও ৭০৫৭। (আসলে কবরে মেরুদন্ড সহ সব হাড় শেষ পর্যন্ত ভঙ্গুর হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়),

(৮)  কোরানের দুটো আয়াত ছাগলে খেয়ে গেছে বলে সেগুলো আমাদের কোরানে নেই -  ইবনে মাজাহ ৩খন্ড হাদিস ১৯৪৩, ১৯৪৪,

(৯) জাহান্নামের আগুণ আল্লাহ’র কাছে অভিযোগ করল,"হে আমার প্রতিপালক,আমার বিভিন্ন অংশ পরস্পরকে খেয়ে ফেলছে!  তিনি তাকে দুইবার শ্বাস নেয়ার অনুমতি দিলেন, একটি শীতকালে অন্যটি গ্রীষ্মকালে. এবং এটাই (গ্রীষ্মকলে) প্রখর গরম ও (শীতকালে) তীব্র শীতের কারণ - বুখারী ৪র্থ খন্ড হাদিস ৪৮২,    

(১০) কোনো মুসলিম কোন অমুসলিমকে খুন করলে মুসলিম খুনির প্রাণদণ্ড হবে না - ইবনে মাজাহ হাদিস ২৬৫৯, 

(১১) পিতা পুত্রকে খুন করলে খুনির মৃত্যুদণ্ড হবে না - তিরমিজি  হাদিস ১৪০৫, ১৪০৬। শারিয়া আইনে এটাকে -মা দাদা-দাদী নানা-নানি পর্যায়ক্রমে পুত্রকন্যা নাতি-নাতনিকে খুন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে,

(১২) আমরা জানি নবুয়তের ২৩ বছরে নবী (সা) মক্কায় ছিলেন ১৩ বছর ও মদিনায় ১০ বছর। কিন্তু হাদিস বলছে উনি মক্কায় ছিলেন:- (ক) ১৫ বছর - মুসলিম ৫০৮৫ ,  (খ) ১০ বছর - বুখারী ৪র্থ খন্ড হাদিস ৭৪৭, ৭৪৮, ৬ষ্ঠ খন্ড হাদিস ৫০২ ও ৭ম খন্ড হাদিস ৭৮৭, এবং  (গ) ১৩ বছর - বুখারী ৫ম খন্ড হাদিস ১৯০, ২৪২, ২৪৩, কোনটা সত্যি? 

(১৩) 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বললে চোর এবং ধর্ষকও বেহেশতে যাবে - বুখারী ৭ম খন্ড হাদিস ৭১৭, ৯ম খন্ড হাদিস ৫৭৯, মুসলিম ১৭২,

(১৪) জ্বর আসে জাহান্নামের তাপ থেকে! সুতরাং,জ্বরকে পানি দ্বারা প্রশমিত কর! বুখারী ৭ম খন্ড হাদিস ৬২১,

(১৫),"যদি কারো পানিতে মাছি পড়ে মাছিটিকে পানিতে চুবিয়ে তারপর পান কর! কারণ,মাছির এক ডানায় আছে রোগ, অন্য ডানায় প্রতিকার" – বুখারী ৪র্থ খন্ড হাদিস ৫৩৭, 

(১৬) কালোজিরা মৃত্যু ব্যতিত সর্বরোগের ঔষধ- বুখারী ৭ম খন্ড ৫৯১, তাহলে আমরা হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে যাই কেন, 

(১৭) খাবার পর নিজে হাত চাটতে হবে বা অন্যের দ্বারা চাটিয়ে নিতে হবে - বুখারী ৭ম খন্ড হাদিস ৩৬৬

 (১৮) দাজ্জালের :- (ক) ডান চোখ অন্ধ হবে –  মুসলিম হাদিস ০৩২৪, ০৩২৫, ৭০০৫, (খ) বাম চোখ অন্ধ হবে – মুসলিম হাদিস ৭০১০, ইবনে মাজাহ ৪০৭১,   

(১৯) 'মুগীরা বিন সুবা'র এক বালক রসুলের (সা) পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি বললেন; - 'এই বালক দীর্ঘায়ু হলে সে বৃদ্ধ হবার আগেই কেয়ামত হবে"- সহিঃ মুসলিম হাদিস ৭০৫৩, একই হাদিস আছে, ৭০৫১, ৭০৫২-তেও,

(২০) কেউ সঠিকভাবে ওযু করে জামাতে দুই ওয়াক্তের ফরজ নামাজ পড়ে তবে আল্লাহ তার মাঝখানের সময়টুকুর সব গুনাহ মাফ করবেন - বুখারী ১ম খণ্ড হাদিস ১৬১,

(২১) পশুর সাথে যৌনকর্মের শাস্তি নেই -  আবু দাউদ- হাদিস ৪৪৫০

(২২) গরুর মানুষের সাথে কথা বলে -  বুখারী ৪র্থ খন্ড হাদিস ৬৭৭

(২৩) কেউ ইমামের সামনে মাথা তুললে সে গাধার আকৃতি হতে পারে - বুখারী ১ম খন্ড হাদিস ৬৬০,  

(২৪) নামাজের সময় ওপর দিকে তাকালে হারাবে চোখ বা দৃষ্টিশক্তি - মুসলিম, হাদিস ৮৬২ ও ৮৬৩,

(২৫)  বুখারী ৭ম খন্ড হাদিস ৩৫৬:- “যে ব্যক্তি প্রতি সকালে ৭টি আজওয়া খেজুর খায়,তার ওপর বিষ ও জাদু কোন প্রভাব ফেলতে পারেনা"।  

১ -. দেয়াল দিয়ে কেউ কোন জমি ঘিরে দিলেই সেই জমির মালিক হয়ে যাবে - আবু দাউদ ৩০৭১, 

২ -. জয়নাব (রা) নবীর মাথা থেকে খুঁটিয়ে উকুন তুলছিলেন, আবু দাউদ ৩০৭৪ (সমার্থক বুখারী ৪র্থ খণ্ড হাদিস ৪৭, ৯ম খণ্ড হাদিস ১৩০),

৩ -. আয়েশা (রা) বলেছেন নবীজি (সা) একবার যাদুটোনার কবলে পড়েছিলেন যাতে তিনি যা করেননি তা করেছেন বলে মনে করতেন, ( সমর্থনে বুখারী ৪র্থ খণ্ড হাদিস ৪৯০, ৭ম খণ্ড হাদিস ৬৫৮, ৬৬০, ৮ম খণ্ড হাদিস ৪০০),

৪ -. নবী (সা) বলেছেন সাহাবীদের মধ্যে ১২ জন মুনাফেক আছে যাদের ৮জন বেহেশতে যাবে না (অর্থাৎ ৪জন মুনাফেক বেহেশতে যাবে)- সহিঃ মুসলিম ৬৬৮৮ (সমার্থক ৬৬৮৯),

৫ -. নবী (সা)- এর বাড়ি দেখাশুনাকারী সাহাবী কারকারা গনিমত থেকে চাদর চুরি করেছিলেন - বুখারী ৪র্থ খণ্ড হাদিস ৩০৮,

৬ -. কোরআনের আয়াত হারিয়ে গেছে (ক) একটি আয়াত - বুখারী ৪র্থ খণ্ড হাদিস ৬৯, (খ) ২টি আয়াত - ইবনে মাজাহ ৩য় খণ্ড হাদিস ১৯৪৩, ১৯৪৪, (গ) একটি বিশেষ সদকার আয়াত - মওলানা মুহিউদ্দিন খানের অনুদিত বাংলা-কোরান পৃষ্ঠা ১৩৪৭, (ঘ) সূরা আহযাবের ২১৩টি আয়াত - তফসির ইবনে কাসীর - অনুবাদ ড. মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান- ১৫ খন্ডের পৃষ্ঠা ৭৩৩,

৭ -. কুয়াতে নারীর মাসিকের কাপড়, মৃত কুকুর ও দুর্গন্ধময় জিনিস ফেললেও সেই কুয়ার পানিতে ওযু করা যাবে - আবু দাউদ ৬৬,

৮ -. নারীর মাসিকের কাপড়, মৃত কুকুর ও মলমূত্র ফেললেও কুয়ার পানি অপবিত্র হবে না - আবু দাউদ ৬৭, 

৯ -. মাহরাম বানানোর উদ্দেশ্যে নারীর (সুলায়হা'র) প্রতি বয়স্ক গায়ের মাহরামকে (সলিম'কে) স্তন্যপান করানোর আদেশ (যা সুলায়হা পালন করেছিল) - মুসলিম ৩৪২১, ৩৪২২, ৩৪২৪, ৩৪২৫, ৩৪২৬, ৩৪২৭ & ৩৪২৮, ইবনে মাজাহ ৩য় খণ্ড হাদিস ১৯৪৩, ১৯৪৪, .

১০ -. নবী (সা) বলেছেন - নারী ও শিশুদের বিপদ হলেও রাতের অন্ধকারে শত্রুকে আক্রমণ কর, কারণ ওরা সবাই এক - বুখারী ৪র্থ খণ্ড হাদিস ২৫৬। এই হিংস্রতা নবীজি (সা)-এর মূল্যবোধের বিরুদ্ধে যায় - গাজওয়া যুদ্ধের মধ্যেই তিনি হুকুম দিয়েছেন নারী ও শিশুদের হত্যা করা যাবে না - বুখারী ৪র্থ খণ্ড হাদিস ২৫৭, ২৫৮, ইবনে মাজাহ ৪র্থ খণ্ড ২৮৪১, সীরাত পৃষ্ঠা ৪৮২ ও ৬৭৩। 



সহীহ বুখারী, তিরমিযী, ইবন মাজাহ ও অন্যান্য প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থের মধ্যে বিদ্যমান জাল হাদীস প্রসঙ্গে মাওলানা রুহুল আমীন বশীরহাটি ফুরফুরাভী রহ.  বলেন: ‘‘জাল হাদিছ কাহাকে বলে? যে হাদিছটা মিথ্যাবাদী লোক কর্ত্তৃক কথিত হইয়াছে। উহাকে জাল হাদিছ বলা হয়। এমাম এবনো-হাজার আস্কালানি ফতহোল বারির মোকদ্দমার লিখিয়াছেন যে, ছহিহ বোখারির কতকগুলি এরূপ রাবি আছে যাহাদিগকে বিদ্ধানগণ মিথ্যাবাদী স্থির করিয়াছেন। এমাম বোখারি, নাইম বেনে হাম্মাদ (نُعَيْم بن حَمَّاد) হইতে ছহিহ বোখারিতে এই হাদিছটা উ&&ল্লখ করিয়াছেন: আমর বেনে ময়মুন বলিয়াছেন, আমি জাহেলিয়তের সময় একটি বানরকে দেখিয়াছিলাম যে, সেই বানরটা ব্যভিচার (জেনা) করিয়াছিল এবং সমস্ত বানর সমবেতভাবে উক্ত বানরকে প্রস্তরাঘাত করিয়াছিল। ইহাতে আমিও তাহাদের সহিত উহাকে প্রস্তরাঘাত করিয়াছিলাম। আহমদী প্রেসে মুদ্রিত ছহিহ বোখারি, ১-৫৪৩ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। এমাম বোখারি এই হাদিছটি উল্লেখ করতঃ বন্য পশুর জেনা ও উহাদের উপর হদ জারি করার মত সমর্থন করিয়াছেন। কিন্তু ইহা নইম বেনে হাম্মাদের জাল কথা। মিজানোল-এতেদাল, ৩-২৪১ পৃষ্ঠা: (এমাম) আজদি বলিয়াছেন যে, নইম বেনে হাম্মাদ হাদিছ প্রস্ত্তত করিত এবং (এমাম আবু হানিফা) নোমানের অপবাদের উদ্দেশ্যে মিথ্যা গল্প প্রস্ত্তত করিত। এই নইম বর্ণনা করিয়াছে যে, খোদাতায়ালা একটি যুবকের ন্যায় আকৃতি-ধারী, তাঁহার পদদ্বয় সবুজ রঙ্গের ফলকে আছে এবং উহাতে সুবর্ণের দুখানা পাদু্কা (জুতা) আছে। ... (আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী রচিত) আজবোয়া ফাজেলা ৪৫-৪৬ পৃষ্ঠা: এবনো মাজার মধ্যে কতকগুলি জাল হাদিছ আছে। এইরূপ ছেহাহ-ছেত্ত্বার অন্যান্য কেতাবগুলির অবস্থা অনুমান করুন। ছোনানে দারুকুৎনি ও ছোনানে বয়হকি ইত্যাদিতে অনেক জাল হাদিছ আছে।’’


 (মাওলানা মুহাম্মদ  রুহুল আমিন বশিরহাটী রহ. রচিত এজহারোল-হক বা কদমবুছির ফতোয়া পৃ ৪-৫ এবং পৃ- ১০-১১ এবং ‘সালাতুল ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর’ গ্রন্থদয়)


ইসরাইলি বর্ণনা  বলতে বোঝায় এমন কোন বর্ণনা যা আমাদের হাদিস, তাফসির, ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত হয়েছে আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদি, খ্রিস্টানদের সোর্স থেকে। অনেক সময় এই বর্ণনাগুলো মুসলিমদের কাছে এসেছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী সাবেক ইহুদি-খ্রিস্টান বিদ্বানদের মাধ্যমে। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন ওয়াহব বিন মুনাব্বেহ, কাব আহবার। সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন সালামও আছেন। অনেক সাহাবি তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন কথা শুনে বর্ণনা করেছেন যে কথাগুলো মূলত জুডেও-ক্রিশ্চান স্কলাস্টিক ট্র্যাডিশন থেকে এসেছে। আমাদের যেমন হাদিস, তাফসির ও এদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের শাস্ত্র আছে, আহলে কিতাবেরও ছিল। তাওরাত, তালমুদ, তাওরাতের ব্যাখ্যা মিদরাশ ইত্যাদি। এছাড়াও সাহাবিদের অনেকে সরাসরি আহলে কিতাবের বইপত্র থেকে বর্ণনা করতেন। সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস সম্পর্কে ইবনে কাসির আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া তে লিখেন: 
كَانَ وَجَدَ يَوْمَ الْيَرْمُوكِ زَامِلَتَيْنِ مَمْلُوءَتَيْنِ كُتُبًا مِنْ عُلُومِ أَهْلِ الْكِتَابِ فَكَانَ يُحَدِّثُ مِنْهُمَا بِأَشْيَاءَ كَثِيرَةٍ مِنَ الْإِسْرَائِيلِيَّاتِ مِنْهَا الْمَعْرُوفُ وَالْمَشْهُورُ وَالْمَنْكُورُ وَالْمَرْدُود
“আব্দুল্লাহ বিন আমর ইয়ারমুক যুদ্ধে দুই উট বোঝাই আহলে কিতাবের জ্ঞান-বিদ্যার বই লাভ করেন। তিনি এখান থেকে বহু ইসরাইলি বিষয় বর্ণনা করতেন, যার কিছু মা'রুফ (জ্ঞাত ও স্বীকৃত), কিছু মাশহুর (খ্যাত), কিছু আপত্তিকর এবং কিছু পরিত্যাজ্য।”
ইসরাইলি বর্ণনার এই ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে মাঝেমাঝে রাসুলের হাদিসের সাথে এগুলো সংমিশ্রিত হয়ে যেত।
ইমাম মুসলিম তার  আত তাময়িয  গ্রন্থে বুসর বিন সাইদ থেকে বর্ণনা করেন :
 اتقوا الله ، وتحفظوا من الحديث ، فوالله ! لقد رأيتنا نجالس أبا هريرة ، فيحدث عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ، ويحدثنا عن كعب الأحبار ثم يقوم ، فأسمع بعض من كان معنا يجعل حديث رسول الله صلى الله عليه وسلم عن كعب ، وحديث كعب عن رسول الله صلىالله عليه وسلم
আল্লাহকে ভয় কর, হাদিসের ব্যাপারে সতর্ক হও। আল্লাহর কসম করে বলছি! আমার মনে আছে আমরা আবু হুরায়রার মজলিসে বসতাম। তিনি আমাদের আল্লাহর রাসুল থেকে হাদিস বলতেন। আবার কাব আহবার থেকেও বর্ণনা করতেন। এরপর উঠে যেতেন। তখন আমি আমাদের সাথে মজলিসে বসা অনেককে শুনতাম যারা আল্লাহর রাসুলের হাদিসকে কাবের বর্ণনা এবং কাবের বর্ণনাকে আল্লাহর রাসুলের হাদিস বানিয়ে ফেলত।
ইসরাইলি বর্ণনার কবলে পড়া এমন একটি হাদিস হচ্ছে সহিহ মুসলিমের “হাদিসুত তুরবাহ” বা কাদামাটির মাটির। এসম্পর্কে আমরা মুহাদ্দিস আলেমদের বক্তব্য দেখব।
শায়খুল ইসলাম ইবন তায়মিয়্যাহ  মাজমু'উল ফাতাওয়াতে বলেন :
وَمِمَّا قَدْ يُسَمَّى صَحِيحًا مَا يُصَحِّحُهُ بَعْضُ عُلَمَاءِ الْحَدِيثِ وَآخَرُونَ يُخَالِفُونَهُمْ فِي تَصْحِيحِهِ فَيَقُولُونَ: هُوَ ضَعِيفٌ لَيْسَ بِصَحِيحِ مِثْلَ أَلْفَاظٍ رَوَاهَا مُسْلِمٌ فِي صَحِيحِهِ وَنَازَعَهُ فِي صِحَّتِهَا غَيْرُهُ مَنْ أَهْلِ الْعِلْمِ إمَّا مِثْلَهُ أَوْ دُونَهُ أَوْ فَوْقَهُ فَهَذَا لَا يُجْزَمُ بِصِدْقِهِ إلَّا بِدَلِيلِ
وَمِثْلُهُ حَدِيثُ مُسْلِمٍ: {إنَّ اللَّهَ خَلَقَ التُّرْبَةَ يَوْمَ السَّبْتِ وَخَلَقَ الْجِبَالَ يَوْمَ الْأَحَدِ وَخَلَقَ الشَّجَرَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَخَلَقَ الْمَكْرُوهَ يَوْمَ الثُّلَاثَاءِ وَخَلَقَ النُّورَ يَوْمَ الْأَرْبِعَاءِ وَبَثَّ فِيهَا الدَّوَابَّ يَوْمَ الْخَمِيسِ وَخَلَقَ آدَمَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ} فَإِنَّ هَذَا طَعْنٌ فِيهِ مَنْ هُوَ أَعْلَمُ مِنْ مُسْلِمٍ مِثْلَ يَحْيَى بْنِ مَعِينٍ وَمِثْلَ الْبُخَارِيِّ وَغَيْرِهِمَا وَذَكَرَ الْبُخَارِيُّ أَنَّ هَذَا مِنْ كَلَامِ كَعْبِ الْأَحْبَارِ وَطَائِفَةٌ اعْتَبَرَتْ صِحَّتَهُ مِثْلَ أَبِي بَكْرٍ ابْنِ الْأَنْبَارِيِّ وَأَبِي الْفَرَجِ ابْنِ الْجَوْزِيِّ وَغَيْرِهِمَا وَالْبَيْهَقِي وَغَيْرُهُ وَافَقُوا الَّذِينَ ضَعَّفُوهُ وَهَذَا هُوَ الصَّوَابُ؛ لِأَنَّهُ قَدْ ثَبَتَ بِالتَّوَاتُرِ أَنَّ اللَّهَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَثَبَتَ أَنَّ آخِرَ الْخَلْقِ كَانَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَيَلْزَمُ أَنْ يَكُونَ أَوَّلُ الْخَلْقِ يَوْمَ الْأَحَدِ وَهَكَذَا هُوَ عِنْدَ أَهْلِ الْكِتَابِ وَعَلَى ذَلِكَ تَدُلُّ أَسْمَاءُ الْأَيَّامِ وَهَذَا هُوَ الْمَنْقُولُ الثَّابِتُ فِي أَحَادِيثَ وَآثَارٍ أُخَرَ وَلَوْ كَانَ أَوَّلُ الْخَلْقِ يَوْمَ السَّبْتِ وَآخِرُهُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ لَكَانَ قَدْ خُلِقَ فِي الْأَيَّامِ السَّبْعَةِ وَهُوَ خِلَافُ مَا أَخْبَرَ بِهِ الْقُرْآنُ مَعَ أَنَّ حُذَّاقَ أَهْلِ الْحَدِيثِ يُثْبِتُونَ عِلَّةَ هَذَا الْحَدِيثِ مِنْ غَيْرِ هَذِهِ الْجِهَةِ وَأَنَّ رِوَايَةَ فُلَانٍ غَلَطٌ فِيهِ لِأُمُورِ يَذْكُرُونَهَا وَهَذَا الَّذِي يُسَمَّى مَعْرِفَةَ عِلَلِ الْحَدِيثِ بِكَوْنِ الْحَدِيثِ إسْنَادُهُ فِي الظَّاهِرِ جَيِّدًا وَلَكِنْ عُرِفَ مَنْ طَرِيقٍ آخَرَ: أَنَّ رَاوِيَهُ غَلِطَ فَرَفَعَهُ وَهُوَ مَوْقُوفٌ أَوْ أَسْنَدَهُ وَهُوَ مُرْسَلٌ أَوْ دَخَلَ عَلَيْهِ حَدِيثٌ فِي حَدِيثٍ وَهَذَا فَنٌّ شَرِيفٌ وَكَانَ يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْأَنْصَارِيُّ ثُمَّ صَاحِبُهُ عَلِيُّ بْنِ الْمَدِينِيّ ثُمَّ الْبُخَارِيُّ مِنْ أَعْلَمِ النَّاسِ بِهِ وَكَذَلِكَ الْإِمَامُ أَحْمَد وَأَبُو حَاتِمٍ وَكَذَلِكَ النَّسَائِي وَالدَّارَقُطْنِي وَغَيْرُهُمْ. وَفِيهِ مُصَنَّفَاتٌ مَعْرُوفَةٌ
“এমন কিছু বর্ণনা আছে যেগুলোকে কোন কোন আলেমের তাসহিহ অর্থাৎ সহিহ হিসেবে চিহ্নিত করার ভিত্তিতে "সহিহ" নাম দেয়া হয়; অথচ অন্যান্য আলেমরা তার এই তাসহিহের বিরোধিতা করেছেন এবং বলেছেন: এই বর্ণনা দূর্বল, সহিহ নয়। উদাহরণত - সহিহ মুসলিমে ইমাম মুসলিম এমন কিছু কথা বর্ণনা করেছেন যার বিশুদ্ধতা নিয়ে তার অন্যান্য আলেমরা সাথে মতভেদ করেছেন। এই আলেমদের কেউ তার সমস্তরের, কেউ তার নিম্নস্তরের এবং কেউ কেউ তার চেয়ে উপরের স্তরের। কোন হাদিসের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি যখন এমনই হয়, তখন কোন দলিল ছাড়া সেই হাদিসের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না। ... এমন হাদিসের উদাহরণ হচ্ছে মুসলিমের বর্ণিত এই হাদিস: " আল্লাহ শনিবার কাঁদামাটি সৃষ্টি করেছেন, রবিবার পাহাড়, সোমবার গাছাপালা, অপছন্দনীয় বিষয়গুলো মঙ্গলবার, বুধবার সৃষ্টি করেছেন আলো, বৃহস্পতিবার যমিনে পশুপাখি ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং শুক্রবার আদমকে সৃষ্টি করেছেন। " এই হাদিসকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন এমন অনেকে যারা মুসলিমের চাইতে অধিক জ্ঞানী যেমন – ইয়াহইয়া বিন মাঈন, বুখারি প্রমুখ।  বুখারি বলেছেন – এই হাদিস মূলত কাব আহবারের বর্ণনা।  তবে কেউ কেউ এই হাদিসকে সহিহ বলে বিবেচনা করেছেন যেমন – আবু বকর আম্বারি, আবু ফারাজ ইবনুল জাওযি। বায়হাকি প্রমুখ তাদের সাথে একমত হয়েছেন যারা এই হাদিসকে দূর্বল সাব্যস্ত করেছেন। আর এই মতটিই সঠিক। কেননা মুতাওয়াতির সুত্রে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ আসমান-যমিন এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। এছাড়াও প্রমাণিত হয়েছে যে, সৃষ্টি শেষ হয়েছে শুক্রবারে। ফলাফল দাঁড়াচ্ছে যে, সৃষ্টির সূচনা হয়েছিল রবিবার (আরবিতে ইয়াওমুল আহাদ – অর্থ প্রথম দিন)। আহলে কিতাবও এমন মনে করে, তাদের সপ্তাহের দিনগুলোর নামকরণ থেকে এটা বোঝা যায়। সৃষ্টির সূচনা রবিবারে হয়েছে – এটাই অন্যান্য হাদিস ও আছার থেকে প্রমাণিত বক্তব্য। যদি সৃষ্টির সূচনা শনিবারে হত আর শেষ হত শুক্রবার হত, তাহলে সৃষ্টি হত সাতদিন ব্যাপী। আর এটা কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক। এছাড়াও হাদিস শাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা অন্যান্য দিক থেকেও এই হাদিসের মাঝে ইল্লত (গোপন ত্রুটি) রয়েছে বলে সাব্যস্ত করেছেন। ইল্লত সাব্যস্ত করা হচ্ছে এমন বলা – অমুক ব্যক্তির বর্ণনায় ভুল আছে এই এই কারণে। একে বলা হয় মা'রিফাতু ইলালিল হাদিস (হাদিসের গোপন ত্রুটি সম্পর্কে অবগতি) শাস্ত্র। এ সব হাদিস বাহ্যিকভাবে উৎকৃষ্ট সনদে বর্ণিত থাকে কিন্তু অন্য কোন পদ্ধতিতে জানা যায় যে, কোন বর্ণনাকারী এখানে ভুল করেছে, ফলে সে মাওকুফ হাদিসকে (সাহাবির বক্তব্য) মারফু (রাসুলের বক্তব্য) বানিয়ে দিয়েছে কিংবা মুরসাল হাদিসকে মুসনাদ বানিয়ে দিয়েছে কিংবা এক হাদিসকে আরেক হাদিসের সাথে সংমিশ্রিত করে দিয়েছে।  এই শাস্ত্র অত্যন্ত উচ্চস্তরের শাস্ত্র। ইয়াহইয়া বিন সাইদ, অতঃপর তার সঙ্গী আলি বিন মাদিনি, অতঃপর বুখারি ছিলেন এই শাস্ত্রে সবচেয়ে জ্ঞানবান। একইভাবে ইমাম আহমদ, আবু হাতেম। এছাড়াও আছেন – নাসাই, দারাকুতনি প্রমুখ। এই বিষয়ে প্রসিদ্ধ বইপত্র রয়েছে।”
সুত্র : মাজমু’উল ফাতাওয়া ১৮/১৮-১৯।
হাফেয ইবন কাসির আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া  তে বলেন:
وَقَدْ تَكَلَّمَ فِي هَذَا الْحَدِيثِ عَلِيُّ بْنُ الْمَدِينِيِّ، وَالْبُخَارِيُّ، وَالْبَيْهَقِيُّ، وَغَيْرُهُمْ مِنَ الْحُفَّاظِ قَالَ الْبُخَارِيُّ فِي التَّارِيخِ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ عَنْ كَعْبٍ، وَهُوَ أَصَحُّ يَعْنِي أَنَّ هَذَا الْحَدِيثَ مِمَّا سَمِعَهُ أَبُو هُرَيْرَةَ وَتَلَقَّاهُ مِنْ كَعْبِ الْأَحْبَارِ فَإِنَّهُمَا كَانَا يَصْطَحِبَانِ وَيَتَجَالَسَانِ لِلْحَدِيثِ فَهَذَا يُحَدِّثُهُ عَنْ صُحُفِهِ، وَهَذَا يُحَدِّثُهُ بِمَا يُصَدِّقُهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَانَ هَذَا الْحَدِيثُ مِمَّا تَلْقَّاهُ أَبُو هُرَيْرَةَ، عَنْ كَعْبٍ، عَنْ صُحُفِهِ فَوَهِمَ بَعْضُ الرُّوَاةِ فَجَعَلَهُ مَرْفُوعًا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَكَّدَ رَفْعَهُ بِقَوْلِهِ: " أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِي ". ثُمَّ فِي مَتْنِهِ غَرَابَةٌ شَدِيدَةٌ فَمِنْ ذَلِكَ أَنَّهُ لَيْسَ فِيهِ ذِكْرُ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ، وَفِيهِ ذِكْرُ خَلْقِ الْأَرْضِ، وَمَا فِيهَا فِي سَبْعَةِ أَيَّامٍ، وَهَذَا خِلَافُ الْقُرْآنِ لِأَنَّ الْأَرْضَ خُلِقَتْ فِي أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ
এই হাদিসের ব্যাপারে আলি বিন মাদিনি, বুখারি, বায়হাকি সহ অন্যান্য হাফেযগণ সমালোচনা করেছেন। বুখারি তার “তারিখ” গ্রন্থে লিখেছেন: কেউ কেউ এটি কাব আহবার সুত্রে বর্ণনা করেছেন, আর এটাই বিশুদ্ধতর। অর্থাৎ এই হাদিস আবু হুরায়রা কাব আহবার থেকে নিয়েছেন। তারা দুইজন একে অন্যের সঙ্গী ছিলেন, একে অন্যের সাথে মজলিস করতেন। কাব আহবার আবু হুরায়রাকে নিজের (ইসরাইলি) সহিফা থেকে বর্ণনা করতেন, আর আবু হুরায়রা তাকে সেই উক্ত বর্ণনাকে সত্যায়ন করে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন কোন হাদিস বর্ণনা করতেন। বস্তুত  এই হাদিস আবু হুরায়রা কাব থেকে শুনেছেন। কিন্তু বর্ণনাকারীদের কেউ কেউ ভ্রমে লিপ্ত হয়েছে এবং মারফুসুত্রে নবির হাদিস হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং একে নবির হাদিস প্রমাণে জোর দিতে এই কথা (যোগ করে) বলেছে: "আল্লাহর রাসুল আমার হাত ধরে বলেছেন"। এছাড়াও হাদিসের মতনে প্রচণ্ড অদ্ভুত বক্তব্য আছে – যেমন এতে আসমান সৃষ্টির বিবরণ নেই, এছাড়াও এতে যমিন ও এতে অন্তর্ভূক্ত বিষয়গুলো সাতদিনে সৃষ্টির কথা আছে, যা কোরআনের বিপক্ষে যায়। কারণ যমিন চারদিনে সৃষ্টি করা হয়েছে।”
এছাড়াও এই হাদিসের মতনে (মূল বক্তব্য) প্রচণ্ড আপত্তিজনক কথা রয়েছে যেমন - এতে আসমান সৃষ্টির কোন বিবরণ নেই, এছাড়াও এতে বলা হয়েছে যমিন ও যমিনে যা আছে তা সাতদিনে সৃষ্টি হয়েছে। আর এটা কোরআনের খেলাফ।
সুত্র : আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ১/৩২-৩৩।
ইমাম তাবারি তার  তারিখ  গ্রন্থে বলেন :
وأولى القولين في ذلك عندي بالصواب قول من قال: اليوم الذي ابتدأ الله تعالى ذكره فيه خلق السموات والأرض يوم الأحد؛ لإجماع السلف من أهل العلم على ذلك.
“আমার কাছে দুই মতের যেটি সবচেয়ে সঠিক বলে মনে হয়, তা হচ্ছে আল্লাহ তা'আলা আসমান-যমিন সৃষ্টি সূচনা করেছেন রবিবার দিন। আর এই মতের উপর সালাফ ও আহলুল ইলমের ইজমা রয়েছে।”
প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য যে, কোন হাদিস নবির নামে জাল কিংবা ভুলভাবে বর্ণনা করা হয়েছে কিনা তার একটি লক্ষ্মণ হচ্ছে হাদিসে বাস্তবজ্ঞান ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞান বিরোধী বক্তব্য থাকবে। অর্থাৎ এমন বক্তব্য থাকবে যাকে আমরা ইন্দ্রিয়গত পর্যবেক্ষণ দ্বারা ভুল হিসেবে জানি। এই হাদিসে বলা হচ্ছে, গাছপালা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন আলো সৃষ্টির পূর্বে। অথচ আমরা জানি গাছপালার জন্য আলো প্রয়োজন। অর্থাৎ এই হাদিসে আমাদের বাস্তবজ্ঞান বিরোধী বক্তব্য আছে।
ইবনুল কাইয়্যিম আল মানারুল মুনীফ  গ্রন্থে বলেন :
ومنها تكذيب الحس له “হাদিস জাল হবার একটি চিহ্ন হচ্ছে - ইন্দ্রিয় একে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করবে” ومنها أن يكون الحديث مما تقوم الشواهد الصحيحة على بطلانه “আরেকটি চিহ্ন হচ্ছে – হাদিসটি ভিত্তিহীন প্রমাণ হয় এমন বিশুদ্ধ সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকবে।”
এই আলোচনার উদ্দেশ্য পাঠককে হাদিসের ইল্লত বা গোপন ত্রুটি সম্পর্কে সতর্ক করা এবং ইসরাইলি বিবরণের সংমিশ্রণের হয়েছে কিনা সেই ব্যাপারে সজাগ থাকতে উদ্বুদ্ধ করা। বুখারি ও মুসলিমে এমন বহু ইল্লতযুক্ত হাদিস আছে। যা উদঘাটন করার জন্য হাদিসের সনদের পাশাপাশি মতন নিয়ে সার্বিক আলোচনা করা প্রয়োজন। হাদিস শাস্ত্রে ইল্লত নামক একটি পৃথক শাখা আছে। দুঃখজনভাবে, ইল্লতে হাদিস নিয়ে আমাদের ধর্মীয় পরিমণ্ডলে আলোচনা হয় না। মানুষকে কেবল ‘সহিহ’ হাদিসের বই পড়তে উৎসাহ দেয়া হয়। অথচ এই সহিহ কথাটার মাঝেও যে কত জটিলতা আছে, তা নিয়ে মানুষকে অবগত করা হয় না। ফলে বহু মানুষ হাদিসের বই পড়ে বিভ্রান্তির শিকার হয়। আবার, অন্য দিকে হাদিসের বইতে পাওয়া এসব ঘটনাকে পুঁজি করে অনেকে গোটা হাদিস শাস্ত্রকেই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে ফেলার চেষ্টা করেন, কিংবা কোন রকম শাস্ত্রীয় আলাপে না গিয়ে কিছু আবেগপূর্ণ কথা বলে হাদিসকে ডিসমিস করে দেয়ার চেষ্টা করেন। এই উভয় পদ্ধতিই ভ্রান্তিপূর্ণ।



মুসলিম শরীফের একটি জাল হাদীস



দাজ্জাল,  ইমাম মাহদী ও গাজওয়ায় হিন্দ বিষয়ক বুখারী মুসলিম সহ সিহাহ সিত্তার জাল হাদীস সমুহ






সকল হাদীস ই কি গ্রহণযোগ্য



বুখারী ও মুসলিম শরীফ এর জ্বাল হাদীস !!!




মন্তব্যসমূহ

  1. আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হাদিস অস্বীকার কারীরা অবশ্যই মিথ্যাবাদি এবং সুস্পষ্ট কাফের ৷ একই সাথে আরও স্বাক্ষ্য দিচ্ছি তারা কোরআনকেও অস্বীকারকারী ৷

    হাদিস অস্বীকার কারিদের প্রতি অনুরোধ রইলো ২ পর্বের ভিডিও পুরো দেখে থাকলে তবেই চ্যালেঞ্জ করবেন ৷ কারণ ভিডিওটি করা হয়েছে আপনার বিশ্বাসের মৌলিকত্ব নিয়ে, কারণ মৌলিকত্ব ছাড়া সবই ভিত্তিহীন, চাল ছাড়া ভাতের মত ৷

    আশা করি, আপনারা সুবদ্ধির পরিচয় দেবেন ৷৷ আর উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন বোকামি হওয়ারই যোগ্য ৷ কারণ যে ক্লাস ২ এর অঙ্ক বুঝে না, তার সাথে বীজগণিত নিয়ে কথা বলা অযৌক্তিক ৷


    বিস্তারিত দেখুন গতানুগতিক ও শাস্ত্রীয় আলোচনার ধারা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে এবং তাদের মাথামোটা প্রশ্নের তুলকালাম জবাব নিয়ে সাজানো নিচের বিষয়ভিত্তিক ভিডিও ২টিতে

    ১ম পর্ব, কিতাবের বাইরেও মুহাম্মদ (صلي الله عليه وسلم) ও অন্যান্য নবীদের ভিন্ন কোন ওহী দিয়েছেন কি ? কোরআন এই ব্যাপারে কি বলছে ?

    লিংক : https://youtu.be/hpTvJVHWeI8?si=YyUKO_pdMr-9yBfu

    ২য় পর্ব: হাদিস কি মানবরচিত নয়

    লিংক:
    https://youtu.be/hpTvJVHWeI8?si=7lL9Aig4bZYSIqaw


    বি:দ্র: উক্ত চ্যানেলটি সম্পূর্ণভাবে মনিটাইজমুক্ত ও অলাভজনক চ্যানেল ৷

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে

শর্ষীনা, ফুরফুরা, জৌনপুরী, ফুলতলী, সোনাকান্দা সহ সকল বালাকোটি পীরগনের শেরেকী আকীদা