ইসলাম ও গনতন্ত্র







আমাদের দেশে গণতন্ত্রের ইসলামাইজেশান নিয়ে বহু যুগ ধরে বিতর্ক চলে আসছে। এ বিতর্ক ইথিক্যালী কতটুকু লিগ্যাল সেই আলাপে না গিয়ে যে প্রশ্নটি আমাদের সামনে বারবার আসে তা হল, আমাদের তার্কিক ভাইদের কয়জনই বা গণতন্ত্র সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী তা জানেন। অনেককেই তো এ বিষয়ে শুধু কিছু ভাসাভাসা ধারণা নিয়ে তর্কের ময়দানে ঘোড় সওয়ারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায়। অথচ বর্তমানে গণতন্ত্র হল পশ্চিমা লিবারলিজমের রাজনৈতিক আধিপত্যের সবচে' বড় হাতিয়ার। কিন্তু এ মতবাদের মোকাবেলায় আমাদের সার্বজনীন কোন দৃশ্যমান প্রস্তুতি নাই। 

গত কয়েক শতাব্দী ধরে পশ্চিমা ও আরব এবং এশিয়ার ট্রাডিশনাল আলিমগণের মাঝে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সবচে' আলোচিত যে বিষয়টি নিয়ে বিস্তর ইখতিলাফ দেখা যায়, তা নিঃসন্দেহে ডেমোক্রেসি। এদেশে ইসলামিষ্টরা দীর্ঘদিন ধরে ইসলামী রাজনীতির কথা বলে আসছেন, অথচ তাঁদের অনেকের নিকট ইসলামী রাজনীতির কর্মপন্থা ও তা সফলভাবে বাস্তবায়নের মৌলিক ফর্মুলাও পরিষ্কার নয়। এক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রান্তিকতা পরিদৃষ্ট হয়। তাই গণতান্ত্রিক কোন দেশে ইসলামী রাষ্ট্রের রূপরেখা কী হতে পারে সে বিষয়ে এরকম একটি বই কিছুটা হলেও সহায়কের ভূমিকা রাখতে পারে। 

গণতন্ত্র সম্পর্কে আধুনিক আলিমগণের লেখালেখি : 

গণতন্ত্র সম্পর্কে আমি আরব আজমের বহু আলিমের লেখা বইপুস্তক পড়েছি। গণতন্ত্র সম্পর্কে কলম ধরেছেন এরকম আলিমগণের মধ্যে শাইখ ইউসুফ কারাদ্বাভি, আবদুল্লাহ আযযাম, মাকদিসী, শাইখ বিন বায, মুফতি শফী, মুফতি তাকী উসমানি, মাওলানা আবদুর রহীম, মাওলানা আবদুল মালেক ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর প্রমুখের লেখা প্রবন্ধ নিবন্ধ পড়ার চেষ্টা করেছি। প্রত্যেকের রকমফের চিন্তার প্যাটার্ন নিয়েও ঘাটাঘাটি করেছি। সর্বশেষ ড. আহমদ আলী বিরচিত এই বইটি আমি আদ্যোপান্ত দুইবার পড়েছি। যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত সমৃদ্ধ একটি গবেষণাগ্রন্থ বলা যায় এটিকে। 

গণতন্ত্রের সমর্থন ও বিরোধীতা : 

গণতন্ত্র সম্পর্কে যারা উম্মাহকে দিকনির্দেশনা দিতে চেষ্টা করেছেন সে সকল আলিমগণকে আমি মোটাদাগে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করে থাকি। (১) যারা ইসলামচর্চার জন্য গণতন্ত্রকে প্রায় শর্তহীন গ্রহণ করার পক্ষে মত ব্যক্ত করেন। (২) যাঁরা গণতন্ত্রের শতভাগ বিরোধী। গণতন্ত্রকে যাঁরা কুফরী একটি মতাদর্শ মনে করেন। খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তারা গণতন্ত্রকে শক্ত প্রতিবন্ধকতা মনে করেন। (৩) যারা শর্তসাপেক্ষে গণতন্ত্রকে গ্রহণের প্রবক্তা। তাঁরা মনে করেন, পূর্ব থেকে গণতন্ত্র অধ্যুষিত অঞ্চলে ইসলাম চর্চাকে তরান্বিত করার উদ্দেশ্যে কৌশলীভাবে গণতন্ত্রের ইতিবাচক দিকগুলোকে সাময়িক গ্রহণ করা যেতে পারে। 

আমাদের আলোচ্য বইয়ে লেখক তৃতীয় মতের প্রবক্তা আলিমগণের বক্তব্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আধুনিক যুগের আলিমগণের মধ্যে শাইখ ইউসুফ কারাদ্বাভি রহ. এ মতের জোরালো সমর্থক। 

গণতন্ত্রের মাধ্যমে আদৌ কি ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব?  

অনেকের মতো লেখকও এটিকে একটি ইজতিহাদী বিষয় মনে করেন। প্রচলিত ভোটগ্রহণ পদ্ধতি কিংবা নির্বাচন, এগুলো  গণতন্ত্রেরই অংশ। দেওবন্দী আলিমগণের কেউকেউ ইজতিহাদের ভিত্তিতে প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন। মুফতি শফীর (রহ.) লেখালেখি আছে এ বিষয়ে। তবে তাঁদের কারো বক্তব্যে এ কথা নেই যে, প্রচলিত নির্বাচন বা ভোটাভুটিতে অংশ নিলে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে। বরং তারা এটাকে সাময়িক কৌশল হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলেছেন। কারণ গণতন্ত্রের চোরাবালিতে পা দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা অলীক কল্পনা বৈ কিছুই নয়। গত দুইশ বছরে সমগ্র দুনিয়ায় গণতান্ত্রিক ইসলামিস্ট মুভমেন্টগুলো একটিও কি প্রকৃত খিলাফাত বা অন্তত মজবুত কোন ইসলামী রাষ্ট্রকাঠামো উম্মাহকে উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে? মিসর, আলজেরিয়া কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর প্রসিদ্ধ গণতান্ত্রিক ইসলামপন্থী দলগুলো অংকুরে বিনষ্ট না হলেও নানা ঘাতপ্রতিঘাতে সারভাইব করে গেলেও দীর্ঘমেয়াদী কোন সুফল বয়ে আনতে পারেনি। 

প্রকৃত গণতন্ত্রের সবচে' বড় শত্রু পশ্চিমারাই :  

কোন ইসলামী রাষ্ট্র  যখন গণতন্ত্রের প্রকৃত চর্চাক্ষেত্র হয়ে উঠতে চায়, তখন সেইক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে খোদ গণতন্ত্রের তথাকথিত ধ্বজাধারী পশ্চিমারা। বিগত শতকে আলজেরিয়া এবং বর্তমান শতকে মিসরে আমরা এর বাস্তব নজীর দেখেছি। এ ব্যাপারে লেখক তাঁর বইয়ের ৭৭ নং পৃষ্ঠার একটি ফুটনোটে লিখেছেন, " যেমন আলজেরিয়ার কথা ধরুন, সেখানে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্টের প্রথম পর্যায়ের নির্বাচনে ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট ২২৮টি আসনের মধ্যে ১৮৮টি আসনে জয়লাভ করার পর তাদের ক্ষমতায় যেতে দেয়া তো দূরের কথা; বরং সেখানকার সেনাবাহিনীর সমর্থনপুষ্ট সরকার পশ্চিমা শক্তির সহযোগিতায় আধা সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয়। অধিকন্তু, ইসলামী জাগরণকে বন্ধ করে দেয়ার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ওপর নানারূপ নির্যাতন চালাতে থাকে। অনুরূপভাবে আধুনিক মিসরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মুহাম্মাদ মুরসিকে সাম্রাজ্যবাদের মদদপুষ্ট সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করা হয় এবং মিসরের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করা হয়।"

গণতন্ত্রের পক্ষবিপক্ষ : বিতর্কের সমাধান কী?

যেকোন ইজতিহাদী বিষয়ে আলিমগণের মধ্যে একাডেমিক্যালী ভিন্নমতের চর্চা মোটের উপর নিন্দনীয় নয়। যদি তা ফিকহী বিষয়ে হয়। ইসলামাইজড গণতন্ত্র নিয়েও আজ শতাব্দীকাল ধরে সারা দুনিয়ায় আলিমগণের মধ্যে ইখতিলাফ দেখা যায়। এই ইখতিলাফের সামারি বলতে বললে আমরা এভাবেই বলতে পারি, গণতন্ত্রপন্থী ইসলামিষ্টরা গণতন্ত্রের ঘোর বিরোধীদেরকে গোড়াপন্থী এবং উগ্রবাদী হিসেবে তুলে ধরে। আবার অন্যদিকে শর্তসাপেক্ষে গণতন্ত্রের সমর্থক আলিমরা বা চিন্তকরা বিরোধীদের পক্ষ থেকে মডারেট এমনকি পশ্চিমা প্রভাবিত শাইখ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকেন। এই উভয় চিন্তাকেই আমি প্রান্তিকতাবাদী মনোভাব মনে করি। 

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামী সমাজের রূপরেখা : 

গণতন্ত্রে চর্চিত কিছু বিশ্বাস ইসলামী আকিদা বিশ্বাসের সাথে তীব্র সাংঘর্ষিক এবং ইসলামী চেতনার দৃষ্টিকোণে সেসব বিষয় প্রচণ্ড আপত্তিকর। বিশেষকরে গণতন্ত্রে সার্বভৌমত্বের যে চিরাচরিত ধারণা তাতে সামান্যতম বিশ্বাসও একজন মুসলিমের তাওহীদি চিড় ধরাতে সক্ষম। এ বিশ্বাস যে কুফরী তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ বা ব্যাখ্যারও কোন অবকাশ নেই। কেউ যদি গণতন্ত্রের সার্বভৌমত্বের ধারণাকে ( সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ) কোন ব্যাখ্যার অজুহাতে চর্চাপোযোগী করার প্রয়াস চালায়, আমরা তাকে দ্বীনের স্বীকৃত আকিদা- বিশ্বাসের একজন সুস্পষ্ট মুহাররিফ তথা বিকৃতকারী বলে মনে করবো। গণতান্ত্রিক সমাজে ইসলাম চর্চার রূপরেখা কী হতে পারে সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য আলিমগণের সমন্বিত ইজতিহাদকে মূল্যায়ন করতে হবে। 

ফিকহের দৃষ্টিকোণে গণতন্ত্র : 

গণতন্ত্রের কিছু বিষয় ইসলামের দৃষ্টিকোণে সাংঘর্ষিক বা সাংঘাতিক কিছু নয়। এ বিষয়গুলো মূলত সামাজিক চর্চিত কিছু বিষয়, আকিদা সংশ্লিষ্ট নয়। আমরা অনেকে জানি, আরবের জাহিলিয়্যাহর যুগে প্রচলিত কিছু সামাজিক অবস্থাকে রাসূল (সা্:) কতিপয় প্রয়োজনীয় মডিফাই করে আপন অবস্থায় বহাল রেখেছিলেন। এগুলোকে উসুলুল ফিকহের পরিভাষায় ফকিহগণ উরফ বলে থাকেন। গণতন্ত্রের সাধারণ কিছু ধারণা বা মূল্যবোধ যেসবের সাথা আকিদার কোন সম্পর্ক নেই, সেগুলো যদি সমাজে উরফ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় যায়, তাহলে শর্তসাপেক্ষে তা গ্রহণ করা দোষণীয় নয়। এ ব্যাপারে বইয়ের ৭৫ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত লেখকের এই বক্তব্যটি এখানে উল্লেখযোগ্য ;"বস্তুতপক্ষে ইসলাম যে গণতন্ত্র সমর্থন করে, তা কোনো দেশের সংবিধান বা চেতনা থেকেই সংগ্রহ করতে হবে, তা নয়; বরং তা নিতে হবে ইসলামের সাধারণ চেতনা থেকে। ইসলামে গণতন্ত্রের ধারণা এবং আধুনিক গণতন্ত্রের ধারণার মধ্যে পার্থক্য হলো, ইসলামের গণতন্ত্র এমন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ধারণা, যার মধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ বিদ্যমান রয়েছে।" 

বইটির সারাংশ : 

ড. আহমদ আলী লিখিত 'গণতন্ত্র : ইসলামী দৃষ্টিকোণ' বইটিতে লেখক ইসলাম গণতন্ত্রকে কী চোখে দেখে সেই বিষয়ে একটি পরিচ্ছন্ন ধারণা দিতে চেষ্টা করেছেন। গণতন্ত্রের পরিচয়, উদ্ভব, সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, রাষ্ট্রকাঠামোতে গণতন্ত্রের সুফল কুফল, রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে গণতন্ত্রের সমালোচনা, গণতন্ত্রের ইতিবাচক দিকের সাথে ইসলামের মিল এবং নেতিবাচক দিকগুলির সাথে ইসলামের বৈরি সম্পর্ক ইত্যাকার বিষয়ে বিস্তারিত ও সুবিন্যস্তভাবে কলম ধরেছেন। 

কোন অঞ্জলে গণতন্ত্রের ইতিবাচক দিকগুলি পূর্ব থেকে প্রতিষ্ঠিত থাকলে ইসলামচর্চার সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক প্রয়োজনকে সামনে রেখে কৌশলগত কারণে সামায়িকভাবে উরফ হিসেবে সে সকল বিষয়ের সাথে সমঝোতা করতে অসুবিধা নাই। তবে তা নিশ্চয়ই কোন দ্বীনি স্বার্থের অধীন হতে হবে। উম্মাহর কোন না কোন মাসলাহাহ তাতে নিহিত থাকতে হবে। নিছক দলীয় কিংবা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ইসলামের নামে গণতন্ত্রের বৈধতা দেয়া যাবেনা।" 



পদ্ধতিগত (নির্বাচনী) গণতন্ত্রের চর্চা: ইসলামী সরকার বা ইসলাম প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ও বাস্তবতা:


গণতন্ত্র বিরুদ্ধে এক দল আলিমের একটি বড়ো আপত্তি হলো- 
প্রচলিত গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামী সরকার গঠন করা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। কেননা, গণতান্ত্রিক নির্বাচনব্যবস্থা বলতে গেলে কার্যত টাকার খেলা, প্রভাব-প্রতিপত্তির খেলা, ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের খেলা, ব্যালট বাক্সে জাল ভোট ভর্তির খেলা, ...। এসব খেলা কোনো ইসলামী আদর্শবাদী লোকেরা খেলতে পারে না। অতএব, তাদের পক্ষে ব্যাপকভাবে বিজয়ী হওয়া এবং দলগতভাবে জয় লাভ করা, অন্তত সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
 
তদুপরি গণতন্ত্রে যেহেতু বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতবাদের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিতে হয় এবং সেখানে তাদেরকে তাদের নিজস্ব মত, চিন্তা ও মতাদর্শ লালন ও প্রচারের অধিকারও মেনে নিতে হয়, তাই গণতন্ত্রের মাধ্যমে কোনোভাবেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। 

এ আপত্তির মধ্যে দুটি প্রসঙ্গ রয়েছে। এক. গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামী সরকার গঠন এবং ইসলামপন্থীদের পক্ষে বিজয়লাভ ও ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়। দুই. গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

প্রথম প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য হলো-
আমরা মনে করি, এ কথাটি যদিও কোনো কোনো দেশে গণতন্ত্র চর্চার অবস্থার নিরিখে সঠিক মনে হয়; কিন্তু গণতন্ত্রের মূল ধারণা, আদর্শ ও লক্ষ্যের ভিত্তিতে তা যুক্তিযুক্ত নয়। আমরা মুসলিম বিশ্বের এমন অনেক দেশ (যেমন: সুদান, আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, মিসর ও মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশ) সম্পর্কে জানি, যেখানে গণতন্ত্র সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারলে অল্প সময়ের মধ্যেই ইসলামপন্থার অনুসারীরাই সরকার গঠন করবেন। তাই এসব দেশে যাতে ইসলামপন্থার অনুসারীরা সরকার গঠন করতে না পারেন, এ কারণে মুসলিমবিদ্বেষী বিশ্বমোড়লরা সেসব দেশে গণতন্ত্রের চর্চাকে নানা উপায়ে বাধাগ্রস্ত করে চলছে। 

মূল কথা হলো- 
বর্তমান গণতান্ত্রিক নির্বাচনব্যবস্থা ইসলামী সরকার গঠনের জন্য বড়ো বাধা নয়। ইসলামী সরকার গঠনের জন্য সবচেয়ে বড়ো প্রয়োজন হলো, ইসলামী সরকার গঠনের পক্ষে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলা। আর এজন্য ইসলামপন্থিদের জনমত সৃষ্টির যুগোপযোগী মাধ্যমগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে ইসলামী শাসনব্যবস্থার পক্ষে নিয়ে আসতে হবে। এতদুদ্দেশ্যে দাওয়াহ ও তারবিয়াহ কার্যক্রম বাড়াতে হবে, শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে হবে এবং শিক্ষা ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটাতে হবে। 

বলার অপেক্ষা রাখে না, যে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ইসলামী সরকার প্রত্যাশা করবে, তাতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনব্যবস্থা_ যদি তা সুষ্ঠুভাবে বিকশিত করা যায়_  ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠার করার পথকে বাধাগ্রস্ত তো করবেই না; বরং অধিকতর প্রশস্ত ও সুগম করে দেবে। জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে যেকোনোভাবে জোরজবরদস্তিমূলক ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে ইসলামও সমর্থন করে না। আর এভাবে কোনোক্রমে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলেও বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে তা টিকিয়ে রাখা একেবারেই সম্ভব নয়।

অনেকেই ‘গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামী সরকার আদৌ কায়েম করা সম্ভব নয়’- এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিককালের মিসর ও আলজেরিয়াকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করে থাকেন। আলজেরিয়ায় ইসলামপন্থার অনুসারীগণ নির্বাচনে জিতেও ক্ষমতায় যেতে পারেনি এবং মিসরে ক্ষমতায় গিয়েও টিকে থাকতে পারেনি। আমরা মনে করি, এটা গণতন্ত্রের ত্রæটি নয়। সেই দেশদুটিতে কিছু সময়ের জন্য হলেও গণতন্ত্রের সুবাতাস প্রবাহিত হয়েছিল বলেই তারা নির্বাচনে জিতেছিল এবং ক্ষমতায়ও যেতে পেরেছিল। আর তাদের যা ব্যর্থতা (অর্থাৎ ক্ষমতায় যেতে না পারা কিংবা ক্ষমতায় টিকতে না পারা) তার মূল কারণ ছিল বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ষড়যন্ত্র ও অপরাজনীতি এবং সেনাবাহিনীর উচ্চাভিলাষ। বিশ্লেষকদের মতে, মিসরে মুরসীর পতনের পেছনে মূল কারিগর ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল; সৌদি আরবও গোপনে নানাভাবে ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিল। তারা মিসরে ইখওয়ানের উত্থানকে নিজেদের অস্তিত্ব ও মধ্যপ্রাচ্যে খবরদারির জন্য হুমকি মনে করেছিল। 

উল্লেখ্য, গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামপন্থীরা ক্ষমতায় গেলেই এবং সরকার গঠন করলেই যে পরিপূর্ণ ইসলাম কায়েম হয়ে যাবে_ তা নয়। কারণ, ইসলাম একটি বিপ্লবের নাম; আমূল পরিবর্তনের নাম; ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সকল দিক ও বিভাগের পরিবর্তনের নাম; দু/চারটি বিধান কার্যকর করার নাম ইসলাম প্রতিষ্ঠা নয়; বরং ইসলাম প্রতিষ্ঠার অর্থ হলোÑ ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাস থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে ইসলামী নীতির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ও প্রতিষ্ঠা।  

বলার অপেক্ষা রাখে না, গণতন্ত্রের মাধ্যমে পরিপূর্ণ ইসলাম প্রতিষ্ঠা, এরূপ আমূল পরিবর্তন প্রায় দুরূহ বলা চলে। কারণ, ইতঃপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, গণতন্ত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতবাদের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিতে হয় এবং সেখানে তাদেরকে তাদের নিজস্ব মত, চিন্তা ও মতাদর্শ প্রচারের অধিকারও মেনে নিতে হয়, যদিও তা স্পষ্টত ইসলাম ও উম্মাহর স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়। অথচ সত্যিকার ইসলামী রাষ্ট্রে বাকস্বাধীনতার অধিকারের কথা বলে ইসলাম ও তার শিক্ষার বিরুদ্ধে প্রচারণার কোনো সুযোগ নেই।

এ কথা স্বীকার্য যে, 
সমাজের যে কোনো বড়ো ধরনের পরিবর্তন, বিশেষ করে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন, স্বৈরাচারী সরকারের পতন, কোনো মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি সহজেই নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে খুব কমই সংঘটিত হয়। এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক জনমত তৈরি ও গণজাগরণ। পৃথিবীতে যতবারই বড়ো ধরনের পরিবর্তন হয়েছে তা গণজাগরণের মাধ্যমে হয়েছে। 

সাম্প্রতিককালে চীনের সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা বলুন, রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের পতন বলুন, ইরানের বিপ্লব বলুন, আফগানিস্তানে ইমারতে ইসলামিয়্যাহর প্রতিষ্ঠা বলুন- কোনো পরিবর্তনই ভোটের মাধ্যমে হয়নি; গণজাগরণের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছে। এমনকি, বাংলাদেশে দু হাজার নব্বইয়ের দশকে আর দু হাজার চব্বিশে স্বৈরাচারের পতনও ভোটের মাধ্যমে হয়নি; গণজাগরণের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছে। মোটকথা, রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পক্ষে যদি ব্যাপক জনমত গড়ে তোলা যায় এবং ইসলামের চাহিদাকে গণদাবিতে পরিণত করা যায়, তখনই গণজাগরণের মাধ্যমে ইসলামী ব্যবস্থা পরিপূর্ণরূপে কায়েম করা সম্ভব হতে পারে। 

ইতঃপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, এমন অনেক মুসলিম দেশ রয়েছে, সেগুলোতে যদি গণতন্ত্র সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারে, তবে অল্প সময়ের মধ্যে সেসব দেশে ইসলামপন্থীরা সরকার গঠন করতে পারবে; তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে ক্ষমতায় গিয়েও পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের বিধিবিধান চালু করা প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। 

তারা আপাতত সেসব দেশে- যদি ইসলামী সরকার গঠিত হয়- যেসব কর্মসূচি নিয়ে এগুতে পারে তা হলো- সামাজিক সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে পারে এবং সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে ধীরে ধীরে- যতটা সম্ভব- ইসলামী বিধানগুলো কার্যকর করার পদক্ষেপ নিতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, একযোগে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের বিধিবিধান চালু করার উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে; ক্ষেত্রবিশেষে তা মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, এ অবস্থায় নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। 

উল্লেখ্য, সকল নবী ও রাসূলই নিজ নিজ জাতিকে সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াত পেশ করেছেন। যখন কোনো জাতি এ দাওয়াত কবুল করতো, তখনই তাদেরকে ধীরে ধীরে অন্যান্য বিধানের প্রতি দাওয়াত দেওয়া হতো। মুসলিম উম্মাতের ওপর আল্লাহ তা‘আলার একটি বড় অনুগ্রহ হচ্ছে, তিনি শরীয়তের সকল বিধান একযোগে নাযিল করেননি; বরং ক্রমাগতভাবে শরীয়তের বিধানগুলো জারি করেছেন। তদুপরি অনেক বিষয়ের চূড়ান্ত বিধি-নিষেধ এক দিনেও কার্যকর করেননি। 

ইসলামের আবির্ভাবের সময় মদ্যপান ছিল তৎকালীন আরবের তথা গোটা পৃথিবীর মানুষের সাধারণ অভ্যাস এবং তারা মদ্যপানকে কোনোরূপ অপরাধযোগ্য কর্ম মনে করতো না। অনুরূপভাবে যিনাও ছিল তৎকালীন সমাজে বহুল প্রচলিত একটি সাধারণ চরিত্র। কিন্তু ইসলামে মদ্যপান, যিনা প্রভৃতি মারাত্মক দÐনীয় অপরাধ। তবে মানুষের এই চিরাচরিত অভ্যাস ও চরিত্র পরিবর্তন সাধনে ইসলাম ধীর পদক্ষেপে পর্যায়ক্রমে অগ্রসর হয়েছে। কেননা, এসব বিষয়কে যদি হঠাৎ করে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হতো তাহলে তা মেনে চলা তখনকার লোকদের পক্ষে খুবই কষ্টকর হয়ে পড়তো। অনেকেই হয়তো তা গ্রাহ্যই করতো না। 

এ প্রসঙ্গে উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রা) বলেছেন,
‘‘.. কুরআনের প্রথম অবতীর্ণ সূরাগুলোর মধ্যে জান্নাত ও জাহান্নামের উল্লেখ রয়েছে। তারপর যখন লোকেরা দলে দলে ইসলামে দীক্ষিত হতে লাগলো তখন হালাল-হারামের বিধান সম্বলিত সূরাগুলো নাযিল হয়েছে। যদি শুরুতেই নাযিল হতো যে, তোমরা মদ পান করো না, তাহলে তারা অবশ্যই বলতো যে, আমরা কখনো মদপান ত্যাগ করবো না। যদি শুরুতেই নাযিল হতো যে, তোমরা ব্যভিচার করো না, তাহলে তারা অবশ্যই  বলতো যে, আমরা কখনো অবৈধ যৌনাচার বর্জন করবো না।...” (বুখারী)

সাইয়িদুনা ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
 ‘‘আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মদ (সা:)-কে পাঠালেন, এই দাওয়াত দেওয়ার জন্য যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্যিকার ইলাহ নেই। মুমিনরা যখন এই কথার স্বীকৃতি দিলো তখন তাদের ওপর সালাত ফরয করা হলো। যখন তারা সালাত বাস্তবায়ন করলো তখন তাদের ওপর সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো। যখন তারা সিয়াম পালন করলো তখন তাদের ওপর যাকাত ফরয করা হলো। যখন যাকাতের বিধান পালন করলো তখন হজ্জের বিধান দেওয়া হলো। যখন হজ্জের বিধান পূর্ণ করলো তখন জিহাদের বিধান প্রদান করা হলো। এরপর এই আয়াত অবর্তীণ করা হলো-  আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।” (তাফসীরে তাবারী) 

এসব রিওয়ায়াতে গুরুত্ব অনুযায়ী দাওয়াতের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষার শিক্ষা রয়েছে। তাই আমাদেরও ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় রাখতে হবে। 

খলীফা উমর ইবনু আবদিল আযীয (রাহ.) সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, খলীফা হবার পর তিনি শরীয়তের কিছু কিছু বিধান কার্যকর করতে সময় নিচ্ছিলেন। তখন তাঁর ছেলে আবদুল মালিক (রাহ.) এসব বিধানের দ্রæত বাস্তবায়নের কামনা পেশ করলে তিনি বলেন, 
“হে স্নেহের পুত্র! তাড়াহুড়া করো না!  কারণ, আল্লাহ তা‘আলাও পবিত্র কুরআনে প্রথম দুবার মদের নিন্দা করেছেন, তৃতীয়বারে হারাম করেছেন। আমার আশঙ্কা হয় যে, আমি যদি সকল লোককে একসাথে সকল সত্য মেনে চলতে নির্দেশ  দেই, তাহলে তারা সকলেই মিলে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং এতে ফিতনা সৃষ্টি হবে।” (আল মুওয়াফাকাত) 

বর্তমানে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, বর্তমানে বিশ্ব মোড়লরা আন্তর্জাতিকতাবাদ ও বিশ্বায়নের কঠিন ফাঁদে ফেলে মুসলিম দেশগুলোকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে যেভাবে শাসন-শোষণ করছে, তাদের ওপর নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে, তাতে মুসলিম দেশগুলোতে ইসলামপন্থীদের ক্ষমতায়ন বা ইসলামী রাষ্ট্র কায়িম করা তো দূরের কথা, বরং স্বাধীনভাবে তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করাও এখন দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এ অবস্থায় বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বড়ো ধরনের কোনো পরিবর্তন সূচিত না হলে নিকট-ভবিষ্যতে প্রায় সকল দেশেই- গণতন্ত্র বলেন, গণজাগরণ বলেন বা সশস্ত্র জিহাদ বলেন- কোনো পদ্ধতিতেই ইসলামপন্থীদের পক্ষেÑ ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও- ক্ষমতায় যাওয়া কঠিন, আবার কোথাও কোনোভাবে গেলেও স্বাধীনভাবে টিকে থাকা অনেক চ্যালিঞ্জিং ব্যাপার, যা মোকাবেলা করার মতো ইসলামী নেতৃত্ব ও মুসলিমমানস আজও মুসলিম দুনিয়ায় খুব একটা গড়ে ওঠেনি। 

সুতরাং এ বৈশ্বিক রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক মুসলিম দেশগুলোতে ইসলামপন্থীদের গণতন্ত্রের চর্চা, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই নয়; বরং নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা ও অবস্থান উত্তরোত্তর দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করার উদ্দেশ্যেও হতে পারে। এরূপ প্রতিকূল রাজনৈতিক অবস্থায় ইসলামপন্থীগণ অন্তত গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে-যতটুকু সুযোগ পাওয়া যায় তার যথার্থ ব্যবহার করে- ক্ষমতার দৃশ্যপটে বরাবরই একটি বড়ো প্রেসার গ্রুপ/ইন্টারেস্ট গ্রুপ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন এবং এ প্রক্রিয়ায় দীন ও মিল্লতের স্বার্থ ও কল্যাণ- যতটা সম্ভব- আদায় করে নিতে পারেন। 

পক্ষান্তরে এ অবস্থায় যদি ইসলামপন্থীগণ মোটেরওপর গণতন্ত্রের চর্চা ত্যাগ করেন, নির্বাচন ব্যবস্থা বর্জন করেন, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে তারা ক্ষমতার দৃশ্যপট থেকে সম্পূর্ণ হারিয়ে যেতে বাধ্য হবেন এবং এর ফলে ক্রমে তাদের অস্তিত্ব ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা, সম্মানজনক অবস্থান ধরে রাখাও অনেকখানি কঠিন হয়ে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ কথাটি আরও উত্তমভাবে প্রযোজ্য। সমকালীন বৈশি^ক রাজনীতি ও বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, বিশেষ করে বর্তমান ভারতের পেটে বসে ইসলামপন্থীদের ক্ষমতায়ন বা ইসলামী রাষ্ট্র/খিলাফত কায়িম করা তো দূরের কথা; বরং স্বাধীনভাবে নিজেদের টিকে থাকা এবং সগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোই এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। 

এমনকি, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে  দেশে ইসলামী শক্তির পক্ষে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে কোনো সরকার গঠন করার কিংবা রাষ্ট্র তৈরি করার বা সমহিমায় টিকে থাকার চিন্তা করা যে একটা অপরিণামদর্শী ও অবাস্তব চিন্তাÑ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কাজেই আপাতত ইসলামী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয়ে নিজেদের অবস্থান- যতটা পারা যায়- সুসংহত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, যতদিন না বৈশি^ক ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে আশানুরূপ কোনোরূপ পরিবর্তন আসে। 

তবে এর মানে কখনো এ নয় যে, আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্র/খিলাফত কায়েমের প্রচেষ্টা একেবারে ছেড়ে দেবো; বরং সার্বিক পরিস্থিতির প্রতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সময়োচিত ও বাস্তবসম্মত কর্মসূচি ও পরিকল্পনা নিয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাবো, আমাদের প্রচেষ্টা প্রতিনিয়ত চালিয়ে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলাÑ চাহেন তোÑ যেকোনো মুহূর্তে অবস্থা পরিবর্তন করে দিতে পারেন!! 

আমাদের কেউ কেউ আফগানিস্তানের উদাহরণ টানেন। তাদের কথা হলো, সেখানে যদি বিপ্লবের মাধ্যমে ‘ইমারতে ইসলামিয়্যাহ’ প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে বাংলাদেশে বা অন্য দেশগুলোতে পারা যাবে না কেন?! আমরা মনে করি, আফগানিস্তানের ইতিহাস ও এর ভৌগোলিক অবস্থার সাথে আমাদের ইতিহাস ও ভৌগোলিক অবস্থার ঢের পার্থক্য রয়েছে। 
প্রথমত, আফগানরা প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বিশে^র পরাশক্তিগুলোর সাথে লড়াই করে নিজেদের সক্ষমতার অনন্য নজীর স্থাপন  করেছেন; এ দীর্ঘ সময় ধরে তারা প্রচুর ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং চরম ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছেন। বলতে গেলে, এ সময়ের মধ্যে আফগান শিশুরা মায়ের পেট থেকে বের হয়েছে বোমার আওয়াজ শুনে, যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্যে দিয়েই তারা বেড়ে ওঠেছে। এভাবে ক্রমে তারা এক ধরনের অজেয় শক্তিতে পরিণত হন এবং দেশটি পরিচয় লাভ করে ‘সা¤্রাজ্যবাদের কবরস্থান’রূপে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশে^র সব পরাশক্তি দীর্ঘসময় সামরিক অভিযান পরিচালনার পরও আফগান জনগণকে নিজেদের করতলে আনতে সক্ষম হয়নি এবং শেষাবধি ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছে।  

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যাসবি বলেন, 
‘‘যদি বস্তুনিষ্ঠভাবে দেখা হয়, আফগানিস্তান একটি কঠিন জায়গা। এটি এমন এক জটিল দেশ, যেখানে অস্থিতিশীল অবকাঠামো, খুব সীমিত উন্নয়ন এবং অঞ্চলটির চারদিকে রয়েছে বিস্তৃত ভূমি। .. সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন বা যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের সঙ্গে কোনো নমনীয়তা দেখায়নি। তারা নিজেদের পথে যেতে চেয়েছিল, অনেকদূর এগিয়েও যায়, কিন্তু তারা কখনও আফগানিস্তানের জটিলতা বুঝতে পারেনি।” 

বলতে গেলে আফগানিস্তান বর্তমানে এমন এক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে, মনে হয় না যে, এখন অন্য কোনো শক্তি কথিত ওই কবরস্থানে আক্রমণের ঝুঁকি নেবে।

দ্বিতীয়ত, তাদের ভৌগোলিক অবস্থানও আমাদের তুলনায় অনেক সুবিধাজনক; এটি  প্রায়ই মুসলিম দেশগুলোর মধ্যস্থলে অবস্থিত, এর সীমানায় রয়েছে ইরান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান প্রভৃতি দেশ। ওই সব দেশ থেকে বিভিন্ন সময় তারা নানাভাবে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও রসদ প্রভৃতি সহযোগিতা পেয়েছে।
  
তৃতীয়ত, সেখানে জনসংখ্যার প্রায় ৯৯ শতাংশই হলো মুসলিম। ফলে দেশের অভ্যন্তরে সংখ্যালঘু কর্তৃক কোনোরূপ ষড়যন্ত্র তৈরির সম্ভাবনাও ছিল না বললেই চলে। 

আমাদের বাংলাদেশের অবস্থা ঠিক বিপরীত। কারণ, 
প্রথমত, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তিগুলোর সাথে দীর্ঘ সময় ধরে মোকাবেলা করে টিকে থাকার মতো দৃঢ় মানসিকতাসম্পন্ন ত্যাগী জানবাজ লোক আজও এ দেশে খুব বেশি তৈরি হয়নি। 

দ্বিতীয়ত, প্রশ্ন হলোÑ দীর্ঘ সময় ধরে কোনো বড়ো শক্তির সাথে যুদ্ধ-সংগ্রাম চালিয়ে যাবার মতো প্রয়োজনীয় শক্তি-সামর্থ্য-রসদ-সরঞ্জাম আমাদের কতটা আছে?! ভারত যেভাবে বিভিন্ন দিক থেকে আমাদের বেষ্টন করে রেখেছে সেই অবস্থায় থেকে বাইরের সহযোগিতা পাওয়াও আমাদের জন্য অনেক কঠিন ব্যাপার। 

তৃতীয়ত, আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ আজও ইসলামী বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত নয়। তারা ইসলামকে ভালোবাসলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হোক- তা আন্তরিকভাবে কামনা করে না এবং এ কারণে এতদুদ্দেশ্যে বড়ো ধরনের কোনো ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত নয়। 

চতুর্থত, বাংলাদেশ যদিও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য ভূমি; তবুও আমাদের পাশর্^বর্তী রাষ্ট্র ভারত তার স্বার্থে প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘুদের একটি শ্রেণিকে দিয়ে নতুন নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। 

পঞ্চমত, আমাদের ইসলামী শক্তিগুলো সুসংহত ও ঐক্যবদ্ধ নয়। নিজেরা নানা দল-উপদল ও শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত এবং প্রায়ই নিজেদের অভ্যন্তরীণ কলহ-বিবাদে লিপ্ত থাকে। তদুপরি সামাজিক ও সেবামূলক কার্যক্রমে তাদের অন্তর্ভুক্তিও আশানুরূপ নয়। এ অবস্থায় আমাদের জনগণ তাদেরকে কোনোভাবেই রাষ্ট্রপরিচালনায় আস্থায় নিতে পারছে না। 

কাজেই প্রত্যেকটি দেশকে তার নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, শক্তি-সামর্থ্য ও অবস্থান দিয়েই মূল্যায়ন করতে হবে; অন্য দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, শক্তি-সামর্থ্য ও অবস্থান দিয়েই নয়। 

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, 
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষেত্রবিশেষে ইসলামপন্থীদের পক্ষে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব, এমনকি সরকারও গঠন করা যেতে পারে; তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, এ পদ্ধতিতে সমাজ ও রাষ্ট্রে পরিপূর্ণরূপে ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তবে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় কিছু সুবিধা লাভ করা যায়, যা অন্য কোনো শাসনব্যবস্থায় (যেমন- রাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র প্রভৃতি) লাভ করা দুরূহ। নিম্নে এ সুবিধাগুলো উল্লেখ করা হলো-

ক. ইসলামের পক্ষে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলা যায়
গণতন্ত্রে যেহেতু কথা বলার স্বাধীনতা থাকে, সভা-সমাবেশের অধিকার থাকে, অবাধ প্রচারণা চালাবার অধিকার থাকে, তাই এ সুবাদে সেখানে স্বাধীনভাবে ইসলামের প্রচারণা চালানো যায়, তার পক্ষে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলা যায়।
খ. ইসলামপন্থীদের ভিত্ মজবুত করা যায়
গণতন্ত্রে যেহেতু সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা দল, সংগঠন ও সমিতি গড়ে তোলা যায় এবং নির্বিঘেœ দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়, তাই এই সুবাদে ইসলামপন্থীরাও সেখানে নিজেদের বিভিন্ন দল ও সংগঠন গড়ে তুলতে পারে এবং নির্বিঘেœ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। এভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাদের ভিত্ মজবুত করা যায়। 
গ. রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা যায় 
গণতন্ত্রে যেহেতু সকলেই সমান অধিকার ভোগ করে, রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিক তার সামর্থ্য ও যোগ্যতা অনুসারে প্রযোজ্য যে কোনো পদে অধিষ্ঠিত হবার অধিকার লাভ করে, তাই সেই সুবাদে ইসলামপন্থীদের পক্ষে সেখানে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে নিজেদের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করা সহজ হয়। 
ঘ. সহজেই গণঅভ্যুত্থান ঘটানো যায়
গণতন্ত্রে যেহেতু নাগরিকরা স্বাধীনভাবে সভা-সম্মেলন-শোডাউন-মিছিল ইত্যাদি করতে পারে, তাই সেই সুবাদে সেখানে সহজেই গণঅভ্যুত্থান ঘটানো যায়, বিপ্লব ঘটানো যায়।   
ঙ. ইসলামবিরোধী সরকার পরিবর্তন করা যায়
গণতন্ত্রে যেহেতু নির্দিষ্ট মেয়াদ অন্তর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পায়, তাই সেই সুবাদে জনমতের ভিত্তিতে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলাম-বিরোধী সরকার পরিবর্তন করা যায়, এমনকি কখনও ইসলামপন্থীরা সরকারও গঠন করতে পারে।






ইসলামী শাসনব্যবস্থা কি হবে এব্যাপারে মুসলিমদের কোন একমাত্র মত কিংবা ঐক্যমত নেই। আল্লাহর রসূল (সাঃ) এঁর ইন্তেকালের পর মুসলিমরা যে শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে নিজেদেরকে পরিচালনা করা আরম্ভ করে সেটা ছিলো একটা ‘তাড়াহুড়োমূলক কাজ।’ উমার (রাঃ) বলেনঃ ‘এটা ছিলো সত্যিকার অর্থেই তাড়াহুড়োমূলক কাজ এবং আল্লাহ্ তায়ালা আমাদেরকে এরকম অন্যকোন তাড়াহুড়োমূলক কাজ থেকে রক্ষা করুন। যদি পূর্বের সেই পরিস্থিতিতে তোমরা পতিত হও, তবে আমাদের মতো তাড়াহুড়ো করো না। সবসময়ই মজলিসে শূরাকে প্রাধান্য দিও।’ এই মজলিসে শূরার অর্থ হলো আলোচনাসভা নির্ধারণ করা। গণতন্ত্র এমন একটি বস্তু যার মূল প্রোথিত আছে প্রাচীন গ্রিসে। গণতন্ত্রের কি মুসলিমদের সাথে সমন্বয় হতে পারে? মুসলিমরা কিন্তু কোন একটি একক দল নয়। আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত যত মুসলমান আছে তারা ভিন্নভাবে চিন্তা করে, তাদের পরিবেশ পরিস্থিতি ভিন্ন, তাদের প্রয়োজনাদিও ভিন্ন ভিন্ন। প্রত্যেকটা জাতিরই তাদের উদ্দেশ্যগুলো পূরণ করে এমন একটি শাসনব্যবস্থা নিয়ে আসা প্রয়োজন। এই কারণে লোকেরা শূরার মাধ্যমে পরামর্শ পূর্বক যে ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে সেটিই ইসলামী শাসনব্যবস্থা বলে গণ্য। ইসলাম যেটা করে সেটা হলো স্বৈরাচার, অত্যাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ইসলাম কারো প্রতি অবিচারের অনুমতি প্রদান করে না। যে শাসনব্যবস্থায় আল্লাহর আইনের প্রবর্তন করা হয় এবং সে অনুযায়ী শাসনকার্য চালানো হয় সেটাই ইসলামী শাসন। ইসলামের নিজস্ব কোন শাসনপদ্ধতি নেই। কেউ যদি বলে যে, এই এই শাসনব্যবস্থা হলো ইসলামী শাসনব্যবস্থা সেগুলো হলো বিভিন্ন ঐতিহাসিক পরিস্থিতি যেগুলো মুসলমানদের মধ্যে উদ্ভব হয়েছিলো এবং মুসলিমরা উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবেলায় এইসমস্ত কৌশল নিয়েছিলেন। আমি তোমাদের সাথে সাইয়্যেদুনা উমার (রাঃ) যে উক্তিটি শেয়ার করলাম সেটা সহীহ আল বুখারী থেকে যার প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত। মুসলিমরা তাড়াহুড়ো করেই আবু বকর (রাঃ)কে বাইয়াত দেন। আবু বকরের পর উমার (রাঃ) আসেন। তিনি আবু বকর (রা) দ্বারাই নিয়োগ পেয়েছিলেন। সাইয়েদুনা উমার চাননি এই পদ্ধতি চলমান থাকুক, তিনি ছয়জন সাহাবার একটি দলকে নির্বাচন করেন এবং এই ছয়জনের মধ্যেই একজনকে অন্যদের সম্মতির দ্বারা খলীফা নির্বাচিত করা হয়েছিলো। স্বৈরশাসন এবং উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া শাসন ব্যতীত মুসলমানরা যে শাসনব্যবস্থাকেই নিজেদের জন্যে উপযুক্ত মনে করে, সেটাই আদতে ইসলামী শাসনব্যবস্থা। 


গণতন্ত্রের সাথে মিল- অমিল ঃ যারা ইসলামী গণতন্ত্রের কথা বলেন তারা ফাংশনালিটি বা কার্যক্রমের সাথে মিল রেখে ইসলামী গণতন্ত্রের কথা বলেন। যারা এইটার সাথে একমত হন ; তারা এইটা সাপোর্ট করেন ; যারা দ্বিমত পোষণ করেন তারা আলাদা থাকেন ; নিষ্ক্রিয় থাকেন ; সমালোচনা করেন বা ভিন্ন রাজনৈতিক পন্থা অবলম্বন করেন। মিলের জায়গাঃ ১. প্রশাসনিক বিভাজন ঃ প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য ইসলাম শাসনকৃত অঞ্চলকে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করাকে নিন্দনীয় হারাম মনে করে না ; বরং সমর্থন করে। খাইরুল কুরুনের যুগে শাসনকৃত অঞ্চলকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা ছিলো এর সাথে বর্তমানে মিলাইতে পারেন ৩০০ সংসদীয় আসন, ৬৪ জেলা, উপজেলায় বিভক্তিকরণ ইত্যাদি। ২. প্রতিনিধি নির্বাচন ঃ আল্লাহর রাসূলের সময়কালে গোত্রপ্রথা ছিলো । গোত্রীয় লোকেরা অবশ্যই কোনো না কোনো ভূমিতেই বাস করতো। অতএব, এইটা বলা যায় তারা যে অঞ্চলে ছিলো তা একটা ভৌগোলিক এরিয়ার মধ্যেই ছিলো রাসূলের সময় "গোত্রপ্রধানরা সমগ্র গোত্রের প্রতিনিধি" হয়ে রাসূল (সা) কাছে বায়াত দিয়েছেন ; এবং রাসূল (সা) এর অধীনে থেকে তার গোত্রগুলাকে পরিচালনা করেছেন। তারা আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেন নি ; অধীনস্থদেরও আল্লাহর রাসূলের নির্দেশের দিকেই অনুসরণ করায়েছেন। তিনি গোত্রগুলার নেতৃত্বে পরিবর্তন আনেন নি কারণ এর ফলে সংঘাতের সৃষ্টি হত। প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আলাদা প্রতিনিধি/ প্রশিক্ষক দল পাঠাতেন। উনারা রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব করতেন না কিন্তু এখন, তিনশ সংসদীয় আসনে বসবাসকারী "লোকেদের প্রতিনিধি" হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন। এমপি গোত্রপ্রধানের ভূমিকায় ; স্থানীয় জনগণ গোত্রের অধীন জনগোষ্ঠীর ভূমিকায়। প্রাচীন আরবে গোত্রপ্রধান বাকিদের প্রতিনিধিত্ব করতো কিন্তু তার মানে গোত্রের বাকিদের মধ্যে ভিন্নমত ছিলো না এমনটা কিন্তু নয়। কোনো সমাজেই সম্ভব না। ইসলামগ্রহণের শুরু, মধ্যবর্তী যুগ এমনকি মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত সাহাবীরাই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ । অর্থাৎ, গোত্রপতিরা ইউনানিমাস সিদ্ধান্ত দিতো না । অমিলের জায়গাঃ অমিলের জায়গাটা হচ্ছে আকায়েদী । ক্ষমতার উৎস জনগণ আর ক্ষমতার উৎস আল্লাহ। আল্লাহ মুলক সমূহের মালিক। আল্লাহ যাকে খুশি তাকে ক্ষমতা দান করেন। ক্ষমতার উৎস জনগণ এইটা কোনো এবস্যুলিউট স্টেটমেন্ট না তবে এইখানে (পিউর ) গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অনেক বড় সত্য লুকায়িত আছে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের সমর্থন লাগে এই সমর্থন নট নেসেসারিলি মোর দ্যান ৫০% হইতে হবে ; তবে অন্যদের চেয়ে বেশি হইতে হবে । হতে পারে সেটা ৩৫%, ৪০% আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে যেকোনো প্রক্রিয়ায়ই ক্ষমতা দান করতে পারেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া উচ্ছেদ করে রাতারাতি ক্যু হইতে পারে, সামরিক শাসন আসতে পারে, সামরিক শাসক নতুন শাসক হইতে পারে বা সামরিক বাহিনীর সমর্থনে অন্য কেউও রাষ্ট্র চালাইতে পারে। আবার, বিপ্লবের/আন্দোলনের মাধ্যমে শাসন ক্ষমতা চেঞ্জ হয়ে নতুন কারো কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হইতে পারে । সশস্ত্রপন্থায়ও হইতে পারে সবগুলাই ক্ষমতা পরিবর্তনের নানা রকম প্রক্রিয়া সবগুলা প্রক্রিয়া/ সিস্টেমই হচ্ছে ট্যুলের মতো । ছুড়ি দিয়ে মানুষের হাত কাটা যায় ; ডাক্তাররা ছুড়ি দিয়ে অপারেশন করে রোগগ্রস্ত অংশ দূর করেন। দোষ বা গুণ ছুড়ির না। বরং ছুড়ির ব্যবহারের উপর। কোন শাসনতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই হালাল বা হারাম না। সেই শাসনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কিভাবে তার দায়িত্ব পালন করে সেটার উপর ডিপেন্ড করে সেটা হালাল না হারাম। ভালো না মন্দ। ১. একনায়কতন্ত্র হালাল হইতে পারে যদি সে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী দেশ চালায়, তাকওয়াবান হয়। তখন সে হয়ে যাবে ন্যায়পরায়ণ শাসক, সুলতান/ খলীফা একনায়কতন্ত্র হারাম হবে যদি সে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী দেশ না চালায় ; জনগণের উপর নির্যাতন করে ; জনগণের উপর এমন মত চাপায়ে দেয় যা জনগণ মেনে নিতে প্রস্তুত না । বা জনগণ অপ্রস্তুত অবস্থায় তাদের জন্য কঠিন কোনো আদেশ চাপায়ে দেওয়ার কারণে বিদ্রোহ করে বসে বা এরকম। ২. সামষ্টিকতন্ত্রও হালাল বা হারাম হইতে পারে। উপরের মতো করেই। ৩. গোষ্ঠীতন্ত্রও হালাল হইতে পারে । উপরের মতো করেই। ৪. মেরিটোক্রেসি, ওলিগার্কি বা অন্য যেকোনোক্রেসিই হালাল বা হারাম হইতে পারে উপরের মতো করেই। ৫. গণতন্ত্রও হালাল বা হারাম হইতে পারে উপরের মতো করেই। গণতন্ত্রে যদি ৫০% এর বেশি ইসলামবিরুদ্ধ পথ অবলম্বন করে তখন তা হারাম। গণতন্ত্রে যদি ৫০% এর বেশি ইসলামের পক্ষে থাকে তখন তা হালাল। প্রথমাবস্থায় যারা ৫০% এর চেয়ে কম হারা অপোজিশনে থেকে এর বিরোধিতা করবেন এবং ইসলামের দৃষ্টিতে তাদের অবস্থানই সঠিক। যদিও তারা সংখ্যালঘু। তারা তাদের অবস্থানের জন্য আল্লাহর কাছে এর উপযুক্ত প্রতিদান পাবেন যদিও তারা তাদের অবস্থান বাস্তবায়ন করতে পারেন নাই। আর দ্বিতীয়াবস্থায়, ইসলামপন্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় যারা বিরোধিতা করতেসে তারা কিন্তু হালাল হয়ে যাচ্ছে না ; তাদের অবস্থান ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম ; ইসলামবিরুদ্ধ। তারা তাদের অবস্থানের জন্য আল্লাহর কাছে এর উপযুক্ত প্রতিদান পাবেন যদিও তারা তাদের অবস্থান বাস্তবায়ন করতে পারেন নাই। (পিউর) গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সবচেয়ে চমৎকার বা ভয়াবহ দিক হচ্ছে এইটা খুবই স্টেবল একটা প্রক্রিয়া। স্থিতিশীল এবং অনেকটা ধীরগতির। যেমন ঃ (পিউর)  গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়   বিভিন্ন সেট অফ লিডারশীপ তৈরি হতে থাকে বা হতে থাকার কথা । যেমন ঃ ৪৫০০০ মেম্বারের সেট অফ লিডারশীপ, ৫০০০ চেয়ারম্যানের সেট অফ লিডারশীপ,  ৫০০ উপজেলা চেয়ারম্যানের সেট অফ লিডারশীপ,  ৩০০ এম্পির সেট অফ লিডারশীপ + একই পজিশনে বিরোধীদলীয় নেতাদের সেট অফ লিডারশীপ। ৩০০ (যোগ্যতম) এমপি থেকে ১ জন প্রধানমন্ত্রী। যেহেতু,এই প্রক্রিয়ায়  লিডারশীপ তৈরী হতে থাকে একারণে এইটা অনেকটা স্টেবল এবং ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলতে হয় বলে রেডিক্যাল চেঞ্জের সুযোগটা কম ; একারণে এ প্রক্রিয়া ধীরপ্রকৃতির। ম্যানিপুলেশন ঃ প্রত্যেকটা সিস্টেমই ম্যানিপুলেট করা যায়। ১. একনায়কতন্ত্রে হওয়ার কথা একক ব্যক্তির মনমর্জি শাসন। যে যা চায় তাই হওয়ার কথা । কিন্তু, সেও ক্ষমতা সুসংহত করতে জনগণের জন্য কিছু না কিছু করে এইটা এক ধরনের ম্যানিপুলেশন। গুড ম্যানিপুলেশন। ২. মেরিটোক্রেসি, শূরা,  অলিগার্কি বা এরকম যেকোনো সিস্টেমই ম্যানিপুলেট করা যায়। ম্যানিপুলেশনের প্রকৃতির উপর ডিপেন্ড করবে সেইটা ভালো না খারাপ ; হালাল না হারাম। ৩. গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারেও ম্যানিপুলেট করা যায়। উপরে যেমন সেট অফ পিপলস লিডারশীপ তৈরী হওয়ার কথা। এখন কোনো ব্যবসায়ী টাকা দিয়ে কোনো পপুলার দলের মনোনয়ন কিনে ; লোকদের ভোট কিনে এমপি হইলে এইটা এই প্রক্রিয়ার ম্যানিপুলেশন। এরকম এই প্রক্রিয়ার ম্যানিপুলেশন হইতে পারে মিডিয়া, সিভিল সোসাইটি,  সাংস্কৃতিক কর্মী, বহিঃশক্তির মাধ্যমে। ম্যানিপুলেশন ভালো বা খারাপ হইতে পারে  ; হালাল বা হারাম হইতে পারে। মুসলিম হিসেবে ইসলামের পক্ষে হইলে আমরা ঐটা গ্রহণ করতে পারিই বলে মনে হয় আর ইসলামের বিপক্ষে হইলে বর্জন এবং বিরোধিতা । অর্থাৎ,  জনগণ যদি রাতারাতি কোন পরিবর্তনে অভ্যস্ত না হয় তবে যে সিস্টেম ব্যবহার করে আমরা ইসলামের দৃষ্টিতে খারাপ থেকে ভালোর দিকে নিয়ে যেতে পারি (ইসলামের অল্পকিছু শাশ্বত বিধান অনুসরণ করে) সেটাই হালাল সেই সিস্টেমের নাম যাই দেওয়া হোক না কেন। গণতন্ত্র নাম দেন, একনায়কতন্ত্র নাম দেন, মেরিটোক্রেসি,  অলিগার্কি বা সেক্যুলারিজম। যে সিস্টেম আমাদের ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো থেকে খারাপের দিকে নিয়ে যায়  সেটাই হারাম বা খারাপ সেই সিস্টেমের নাম যাই দেওয়া হোক না কেন। গণতন্ত্র নাম দেন, একনায়কতন্ত্র নাম দেন, মেরিটোক্রেসি,  অলিগার্কি বা সেক্যুলারিজম। তুরস্কের এরদোয়ানের সেক্যুলারিজমকে আমরা সমর্থন করতেসি কারণ সে সেক্যুলারিজমের মোড়কে আস্তে আস্তে ইসলামের দিকে নিয়ে যাচ্ছে  বা ইসলামী বিধান পালনের বিষয়াবলি সহজ করতেসে । হাসিনার সেক্যুলারিজমকে খারাপ বলতেসি কারণ সে খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে । আমরা বৃহৎ ভারতীয় রাষ্ট্রপ্রকল্পের অংশ হয়ে যাচ্ছি যা হিন্দুত্ব প্রভাবিত। ফেতুল্লাহ গুলেনের সামরিক ক্যু খারাপ যদিও সে হুজুর কারণ তার ক্যুর ফলে তুরস্কের ইসলামের দিকে ছুটে চলাটা থমকে দাঁড়াইতে পারতো। আর জিয়াউর রহমানের সামরিক ক্যু ভালো কারণ তা ভারত রাষ্ট্র প্রকল্প থেকে বের করে আমাদের মুসলিম জাতিসত্তার দিকে টেনে নিয়ে গেসে। একেপার্টির গণতান্ত্রিক মেজোরিটি ইসলামী গণতন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে পেশ করতে পারি যদিও তারা পিউরলি ইসলাম কায়েম করতে পারে নাই কিন্তু ইসলাম পালনের জন্য পরিবেশ সহজ করতেসে আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক মেজোরিটি সেক্যুলার ডেমোক্রেসির উদাহরণ যেটা হারাম বা খারাপ। ঠিক তেমনিভাবে ন্যাশনালিজমকেও ডিফাইন করা যায় আপনি চোখ বন্ধ করে জাতীয়তাবাদকে হারাম বলতেসেন কারণ হাদীসে পাইসেন আসাবিয়াত/ জাতীয়তাবাদ হারাম কিন্তু বিপরীতে আপনি উম্মাহ চেতনা লালন করেন। মুসলিম জাতিকে এক দেহের মতো মনে করেন। বিশ্বের কোথাও মুসলিমরা আক্রান্ত হইলে মনে কষ্ট অনুভব করেন তাইলে জাতীয়তাবাদী চেতনা আর উম্মাহ চেতনার মধ্যে পার্থক্য কি? কোন জাতীয়তাবাদ হারাম ঃ যে জাতীয়তাবাদ আপনার বৃহত্তর মুসলিম জাতিসত্তা থেকে আপনারে আলাদা হয়ে থাকার প্রেরণা জোগায়, যে জাতীয়তাবাদ আপনার ইসলাম পালনের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ; যে জাতীয়তাবাদের কারণে আপনি ইসলামী বিধিবিধান নিজে পালন করতে সংকোচবোধ করেন বা আপনার ইসলাম পালনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সেই জাতীয়তাবাদ হারাম। আর যেই জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ ইণ্ডিভিজুয়াল মাজলুম ব্যক্তির জন্য ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধ হয়ে দাঁড়ায় সেই জাতীয়তাবাদও হারাম। আল্লাহর রাসূল (সা) বিচারের ক্ষেত্রে চোখ বুঁজে মুসলমানের পক্ষ নেন নাই ; অমুসলিম ইহুদীর পক্ষে রায় দেন। বাংলাদেশের আশেপাশে স্বতন্ত্র কোনো স্বাধীন মুসলিম ভূখন্ড নেই। ৪৭ এ এ অংশের মুসলমানরা মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে আলাদা দেশ কায়েম করে যার ফলে স্বতন্ত্র মুসলিম জাতিসত্তা রক্ষা করে জীবনযাপন করার সুযোগ হয় ; এই মুসলিম জাতীয়তাবাদ অবশ্যই হালাল, হারাম না ৭১ পরবর্তীকালে এই মুসলিম জাতীয়তাবাদের লিগ্যাসি বহন করে চলেছে ক্ষুদ্র পরিসরে ইসলামপন্থীরা ; বৃহত্তর পরিসরে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদীরা (এটলিস্ট ২০০৬ বা তার পরের কোন একসময় পর্যন্ত) এই দুইটাও হারাম হওয়ার কারণ দেখি না। কারণ এর বিপরীতে যে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ আছে তা বৃহত্তর ভারত রাষ্ট্রপ্রকল্পের প্রতি স্বেচ্ছায় অনুগত, বাঙ্গালি সংস্কৃতির নামে হিন্দুয়ানী কালচার অনুসরণ করে এবং প্রচলনের পক্ষপাতী । এই সমস্যা দূর করতে পারলে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদও হালাল হইতে পারে আন্দাজে চোখ বুঁজে কোন কিছু হালাল হারাম কয়ে দিলেই তো হইলো না নসও দিবেন ; সাথে নস বিদ্যমান বাস্তবতার সাথে মিল খায় কি না সেইটাও দেখবেন। নাইলে সেন্সিবল কোন স্ট্যান্ড নিতে পারবেন না পলিটিক্যালি ফিকহেত বই না পড়ে আল্লাহর রাসূলের সীরাত পইড়েন বেশি করে দেখবেন কতটা সেন্সিবোলি রাষ্ট্র পরিচালনা করসেন।

খিলাফতই কি একমাত্র ইসলামী শাসনব্যবস্থা?

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ইসলামের মাঝে খিলাফত একটি সর্বোচ্চ আইডল এবং নমুনা। সাথে সাথে একথাও জেনে রাখতে হবে যে, ইসলামী হুকুমত খিলাফাতের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। 

যেমন ফাক্বাহাতের ক্ষেত্রে ইমাম আবূ হানীফা রহঃ আমাদের সর্বোত্তম একটি নমুনা, যেমন মুহাদ্দিস হবার ক্ষেত্রে ইমাম বুখারী রহঃ আমাদের জন্য উত্তম নমুনা ও আইডল। 
কিন্তু তারপরও ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস হওয়া তাদের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। অন্য কেউও হতে পারে। 
হযরত মুয়াবিয়া রাঃ যদিও খলীফায়ে রাশেদের মাঝে গণ্য নন। কিন্তু তিনি ইসলামী শাসক এবং ন্যায়পরায়ন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। 

ইদ্রিস কান্ধলবী রহঃ লিখেন:
ইমাম হাসান রাঃ ও আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ এর মাঝে ১৫ই জুমাদাল উলা ৪১ হিজরীতে সন্ধিচুক্তি সংঘটিত হয়। যার দ্বারা খেলাফাতে রাশেদার ত্রিশ বছরের সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। আর তারপর আমারাত এবং হুকুমত তথা সুলতানী এবং বাদশাহী শুরু হয়। এ কারণেই আহলে সুন্নাতের আকীদা হলো যে, এ সন্ধিচুক্তির পর হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ ইসলামের প্রথম বাদশা ছিলেন। খলীফা নন। [খেলাফাতে রাশেদাহ, ইদ্রীস কান্ধলবী, মৃত্যু ১৯৭৪ ঈসাব্দ, পৃষ্ঠা ২০৭]

তিনি আরো বলেন:
ইসলাম হুকুমত কায়েম করতে আদেশ করেছে। কিন্তু তার কোন বিশেষ সূরত নির্দিষ্ট করেনি। ইসলাম তার অনুসারীদের আদেশ করেছে যে, তোমরা আল্লাহ তাআলা আহকামুল হাকিমীনের নামে একটি হুকুমত কায়েম কর। আর আল্লাহ তাআলা যে কানূনে শরীয়ত তথা কুরআন ও সুন্নাহ যা তার আখেরী নবীর উপর নাজিল করেছেন, তার মুতাবিক রাষ্ট্র পরিচালনা করো। চাই তা রাজতন্ত্রের পদ্ধতিতে হোক, অথবা গণতন্ত্রের পদ্ধতিতে হোক, চাই বাদশা হও, চাই প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রাধান হিসেবে হও। যা চাও হতে পারে। সর্বাবস্থায় কানূনে শরীয়তের আনুগত্য তোমাদের উপর আবশ্যক। [দস্তুরে ইসলাম, ইদ্রীস কান্ধলবী, মৃত্যু ১৯৭৪, পৃষ্ঠা ৯৬-৯৭]

মাওলানা জাহেদ রাশেদী বলেন:
ইসলামের রাজনৈতিক নিযামের বিষয়ে আমার তালেবানা রায় হলো, কুরআন ও সুন্নাতে নববীতে কতিপয় মৌলিক মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের সীমা ও পদ্ধতি নির্ধারিত হয়। কিন্তু রাজনৈতিক নিযামের কোন স্পষ্ট পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়নি। উম্মতের প্রতিটি সময়ের অবস্থান এবং প্রয়োজনের উপর তা ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যা অনেক বড় হিকমতের কথা। কুরআনে পাক ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ ও আমল দেখে ইসলামী রাষ্ট্রের আমরা তিনটি মৌলিক বিষয় পাই। যথা-
১ রাষ্ট্রপ্রদান হবে জনগনের মর্জি মুতাবিক। 
২ খলীফা সর্ববিষয়ে স্বাধীন হবে না। বরং কুরআন ও সুন্নাহের আহকামের পাবন্দ হবে।
৩ কুরআন ও সুন্নাহের পরিস্কার বিধানের বিপরীতে জনতার রায়ের কোন মূল্য থাকবে না। 
খলীফা নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্র পরিচালনা এবং জনগণের জবাবদিহীতার সকল বিষয়গুলো পরিস্থিতির উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। 
এ কারণেই প্রতিটি যুগে পরিস্থিতি এবং জরুরত অনুপাতে যেকোন পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। এ কারণেই উম্মতের চৌদ্দশত বছরের ইতিহাসে রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন পদ্ধতির সাপোর্ট সাধারণ মানুষ এবং ইলমী মহলের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়। [আছরে হাজের মে ইজতিহাদ: চান্দ ফিকরী ও আমলী মাবাহেছ, মাওলানা জাহেদ রাশেদী, ১৬৩-১৬৬]

মুফতী  তাকী উসমানী দা:বা: বলেন:
الذى يتبين من دراسة احكام السياسة الشرعية، وما ورد فى القرآن والسنة فى هذا المجال، ان الاسلام لم يحدد شكلا خاصا للحكومة، .... ولا عين لها منهجا خاصا بجميع تفاصيله الجزية، وانما شرع لنا أصولا، ومبادئ، وأحكاما لابد من رعايتها والمحافظة عليها فى كل زمان ومكان (تكملة فتح الملهم، كتاب الامارات-3/273)
শরয়ী রাজনীতির বিধিবিধান পঠন ও পাঠনের মাধ্যমে এবং কুরআন ও সুন্নাতে এ বিষয়ে যা কিছু উল্লেখ আছে এর দ্বারা একথা পরিস্কার হয় যে, ইসলাম রাষ্ট্রপরিচালনা বিষয়ে না কোন বিশেষ পদ্ধতি নির্দিষ্ট করেছে, না সমস্ত বিষয় সবিস্তারে বর্ণনা করে কোন একটি পদ্ধতি নির্দিষ্ট করেছে। অবশ্য কিছু উসূল, মূলনীতি এবং বিধান নির্দিষ্ট করেছে। যার খেয়াল ও পাবন্দী করা প্রতিটি যুগে এবং এলাকায়  জরুরী।  [তাকমীলা ফাতহুল মুলহিম, তাকী উসমানী, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৭৩]

সুতরাং বুঝা গেল ইসলামের রাষ্ট্র পরিচালনা পদ্ধতি শুধুমাত্র খিলাফাতের সাথে খাস নয়। যদিও তা সর্বোত্তম পদ্ধতি। বরং অন্যান্য সুরত এখতিয়ার করারও সুযোগ রাখা আছে। যারা খিলাফতকেই একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার পদ্ধতি মনে করেন এটা তাদের সুষ্পষ্ট ভুল ধারণা। 

তবে কুরআন ও সুন্নাহের স্পষ্ট বিধানের উল্টো পদ্ধতি যেমন অনুসরণ করা যাবে না, তেমনি রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য কুরআন ও সুন্নাহের উল্টো বিধান আরোপ করা বা প্রয়োগ করার অধিকার থাকবে না। 
কায়েম করবে ইসলামী আইন। কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন পদ্ধতি শুধুমাত্র খিলাফতের পদ্ধতি হওয়া জরুরী নয়।



আল্লাহ তা'য়ালা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সকল বাতিল দ্বীনের উপর আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য প্রেরণ করেছেন (সূরা তাওবা ৯/৩৩; ফাতাহ ৪৮/২৮; সফ ৬১/০৯)। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান কায়েম করার জন্য আসমানী গ্রন্থ পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﻟِﺘَﺤْﻜُﻢَ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﺭَﺍﻙَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ۚ.
(হে রাসূল) নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে বিচার শাসন প্রতিষ্ঠা কর, সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন।(সূরা নিসাঃ ৪/১০৫)

মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকেও দ্বীন কায়েমর নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা শুরা ৪২/১৩)। কিন্তু আমরা বর্তমান যুগে গণতান্ত্রিক পরিবেশে কিভাবে দ্বীন কায়েম করব? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দ্বীন কায়েমের উপকরণ হিসাবে গ্রহণ করব কি না- এ বিষয়ে আলোরণ সৃষ্টিকারী প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহঃ বলেন,
"(ক) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহর দীনের জন্য দাওয়াত দিয়েছেন। এক পর্যায়ে যখন মদীনার অধিকাংশ মানুষ ইসলামের ছায়া তলে চলে আসেন তখন সেখানে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহর ওহীর নির্দেশনা মুতাবেক রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইসলামী শাসন -ব্যবস্থা অনুযায়ী রাষ্ট্র শাসন করেন এবং জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের ও মুসলমানদের সংরক্ষণ করেন।
(খ) খেলাফতে রাশেদার পরে সাহাবীগণ, তাবেঈগণ ও তাবে-তাবেঈগণ ইসলামী রাষ্ট্রের মধ্যে অনেক ধরণের ব্যাতিক্রম, অন্যায় ও ইসলাম বিরোধীতা কর্মকান্ড দেখতে পান। এ সকল ক্ষেত্রে তাদের পদ্ধতি ছিল কথা বার্তা, লিখনি ইত্যাদির মাধ্যমে শাসকগণকে পরিপূর্ণ ইসলামী পদ্ধতিতে শাসন করতে এবং জনগণ কে পরিপূর্ণ ইসলামী জীবনব্যবস্থার মধ্যে চলতে আহ্বান করা।
(গ) যিনি শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন তাঁর জন্য পরিপূর্ণ ইসলাম অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করা ফরয। আলেম, ফকিহ ও সমাজের দায়িত্ববানদের জন্য শাসকের শাসন কার্যে সহযোগীতা করা, তাঁর কোন ভুল হলে তাকে সংশোধনের পথ দেখানো ও সঠিক পথে শাসন পরিচালনা করতে আহ্বান করা।
(ঘ) পূর্বের যুগগুলিতে যুদ্ধবিগ্রহ বা রক্তাক্ত বিল্পব ছাড়া 'সরকার পরিবর্তন' এর কোন সুযোগ ছিল না। এজন্য সাহাবী তাবেঈগণের যুগ থেকে পরবর্তী যুগে আলেম, ফকিহ ও সমাজ সংস্কারকগণ সাধারণত সরকার পরিবর্তন করার প্রচেষ্টাকে নিরুৎসাহিত করেছেন। তাঁরা সর্বদা 'সরকারকে সংশোধন' করতে চেষ্টা করেছেন।
(ঙ) বর্তমান যুগে আমরা একটি বিষেশ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি, যা তাঁদের যুগে ছিল না। একদিকে আমরা অনেকে এমন সমাজ ও রাষ্ট্রে বাস করি যেখানে সামান্য কিছু ইসলামী ব্যবস্থার পাশাপাশি সর্বস্তরে অনৈসলামিক পরিবেশ ও ব্যবস্থা বিদ্যমান। এগুলোর প্রতিবাদ করা ও পরিবর্তনের চেষ্টা করা আমাদের উপর ফরয। অপর দিকে আগের যুগে নির্বিঘ্ন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ ছিল না। বর্তমানে তা আছে। তার মাধ্যম হচ্ছে আধুনিক গণতান্ত্রিক দলীয় রাজনীতি।"

প্রশ্ন হলো: আমরা এখন কী ভাবে (দীন প্রতিষ্ঠার) কাজ করব? শুধু মাত্র শাসক ও জনগণকে ইসলামের দিকে আহ্বান, আদেশ, নিষেধ ইত্যাদির মধ্যেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখব? না কি এই আধুনিক (গণতান্ত্রিক) পদ্ধতি গ্রহণ করব?

বর্তমান মুসলিম বিশ্বে অনেক আলেম, ফকিহ, চিন্তাবিদ ও ধার্মিক মানুষ আধুনিক দলীয় ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নন। কারণ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বা সমাজে ইসলাম বিরোধী কাজ রোধে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ), তাঁর সাহাবীগণ, তাবেঈগণ, তাবে তাবেঈগণ কখনোই রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রগণের জন্য দল গঠন, নির্বাচন ইত্যাদি করেন নি। তাঁরা শাসক ও জনগণ কে ইসলাম মতো চলতে আহ্বান করেতেন, শাসকের ভুলগুলো তাকে বলে তাকে সংশোধিত হওয়ার আহ্বান করতেন এবং ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধ প্রচারে সাধ্যমত চেষ্টা করতেন। কাজেই আমাদেরও সেভাবে চলা উচিত।

এখানে সমস্যা হলো ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত বর্জনের পার্থক্য না করা। প্রথম যুগের মুসলিমগণ দলীয় রাজনীতি করেননি বা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তন করে ভালো সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেননি তার কারণ হলো এই ব্যবস্থা তাঁদের যুগে ছিল না। তাঁদের রাষ্ট্রের শাসককে শান্তিপূর্ণ ভাবে পরিবর্তন করা যেত না। তাই তারা সাধারণত শাসক পরিবর্তনের চেষ্টা না করে সংশোধনের চেষ্টা করতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে সে সুযোগ আছে। আমরা যদি তা ব্যবহার না করি তবে দুই দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবো:
প্রথমত, সৎকাজে আদেশ ও সমাজে ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড পরিবর্তন করে পরিপূর্ণ ইসলাম প্রতিষ্ঠার একটি বড় মাধ্যম আমরা হারাব।
দ্বিতীয়ত, বর্তমানে সমাজে যারা ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার ও প্রতিষ্ঠা চান না, তারা এই (গণতান্ত্রিক) মাধ্যম ব্যবহার করে ইসলামী মূল্যবোধের বিকাশ রোধ করবেন। এ কারণে ইসলামের বিরুদ্ধে সকল প্রচেষ্টার মোকাবিলা করাও আমাদের দায়িত্ব।

এ জন্য গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে একটি নব উদ্ভাবিত উপকরণ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে এবং প্রয়োজনে ইসলামী শরীয়তের শিক্ষার আলোকে শরীয়ত সম্মত ভাবে সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ ইত্যাদি ইসলামের সুনির্দিষ্ট ইবাতদ পালনের মাধ্যম হিসাবে একে ব্যবহার করতে হবে।
আল্লাহ তা'য়ালা ইসলামকে সকল যুগের, সকল জাতির, সকল মানুষের পালন ও অনুসরণ যোগ্য করে প্রেরণ করেছেন। জাগতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, জনকল্যাণমূলক ও প্রাকৃতিক কর্মকান্ডের মধ্যে ইসলামেখুবই প্রশস্ততা রাখা হয়েছে। যেন প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক জাতির মানুষ তাদের সমাজের প্রচলিত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় রীতিনীতির মধ্য থেকেই পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করতে পারে। এরই একটি দিক হলো রাষ্ট্র পরিচালনার দিক।
মহিমাময় আল্লাহ ও তাঁর মহান রাসূল (ﷺ) রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণের পরামর্শ গ্রহণের এবং ন্যায়নীতি ও ইনসাফের সাথে শাসনের নির্দেশনা প্রদান করেছেন।"যেমন, আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
ﻭَﺷَﺎﻭِﺭْﻫُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﻣْﺮِ ۖ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻋَﺰَﻣْﺖَ ﻓَﺘَﻮَﻛَّﻞْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ۚ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﺘَﻮَﻛِّﻠِﻲﻥَ.
আর (হে নবী সা.) কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরার্মশ করুন (তথা জনগণের মতাম নিন)। অতঃপর যখন (কোন কাজ সম্পাদন করার) সংকল্প করবেন তখন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে ভালবাসেন।(সূরা আলি ইমরানঃ ৩/১৫৯)

আমীরুল মু'মিনীন খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত উমার (রাঃ) বলেন,
فَمَنْ بَايَعَ أَمِيرًا عَنْ غَيْرِ مَشُورَةِ الْمُسْلِمِينَ فَلَا بَيْعَةَ لَهُ وَلَا بَيْعَةَ لِلَّذِي بَايَعَهُ.
যে ব্যক্তি মুসলিম জনগণের পরামর্শ ও মতামত ছাড়াই (রাষ্ট্রের) আমীর হিসাবে বায়াত নেয় তার বায়াত বৈধ হবে না। আর যারা তার ইমারতের বায়াত গ্রহণ করবে তাদের বায়াতও বৈধ হবে না।(মুসনাদে আহমদ হাঃ ৩৯৩)

কিন্তু (ইসলাম) পরামর্শ গ্রহণের পদ্ধতি নির্দিষ্ট করে দেননি। যেন সকল যুগের ও সকল দেশের মানুষ নিজ নিজ দেশের সামাজিক কাঠামোর মধ্য থেকে ইসলামী অনুশাসনের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণের পরামর্শ ও মতামত গ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারে। ফলে অতীত যুগে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত গোত্রীয় বা রাজতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে ইসলামের এই নির্দেশ পালন সম্ভব ছিল। এ জন্য কোন সামাজিক বিশৃঙ্খলার প্রয়োজন ছিল না। তেমনি বর্তমান গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকেও একই ভাবে আল্লাহর এই নির্দেশ পালন করা সম্ভাব। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণের পরামর্শ গ্রহণের একটি নব উদ্ভাবিত উপকরণ ও পদ্ধতি হলো গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি। যেখানে এই পদ্ধতি ব্যবহারের সুযোগ আছে সেখানে মুসলিমগণ শরীয়তের নির্দেশনার ভিতরে তা ব্যবহার করবেন।(ড.খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, এহ্ইয়াউস সুনান, ৫ম অধ্যায়, পৃঃ৪৬৬-৪৬৯ দ্রঃ)


বর্তমানে গণতন্ত্রের বিকল্প অপশন না দেখিয়ে ঢালাওভাবে গণতন্ত্র, নির্বাচন কুফরি, হেনতেন বলার মারেফত কি? আইন আদালত, অর্থনীতি, সমাজ নীতি এমনকি জরুরী পারিবারিক আইনগুলি পর্যন্ত কুফরী। তথাপি গণতান্ত্রিক দেশে বসে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কুফরী ফতোয়া কেন? হিজরত করে ফেললেই পারেন!

গণতন্ত্রের মাধ্যমে কেউ ইসলাম প্রতিষ্টার কথা বলেছে বলে তো আমার জানা নেই। গণতন্ত্রের সুবিধা চাচ্ছি, মানে আমার মতামত, বক্তব্য সাধারণ জনগোষ্ঠীর সামনে উপস্থাপন করতে চাই। এই অধিকার ভোগ করতে পারছি আমরা?

যদি পারতাম তাহলে বহু আগেই দ্বীন ক্বায়েম হতো। কেউ যদি মনে করেন গণতান্ত্ৰিক পন্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামী দলগুলো পারফেক্টলী শরঈয়া রাষ্ট্র কায়েম করতে চাচ্ছে তাহলে তাকে পরামর্শ দেব গুহা থেকে বের হন। ভৌগলিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুন। মানুষের ঈমান আকীদার হালত চেখে দেখুন! তারপরে আওয়াজ তুলুন, করনীয় বিকল্প দেখান।

আমরা বিশ্বাস করি, ইসলামী দলগুলো পাচঁটি বছর শাসন ক্ষমতায় থাকতে পারলে পরের বছর সাধারণ জনগণ নির্বাচন নামের তামাশার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামবে। বিলুপ্ত হবে গোলামীর দস্তখত সংসদীয় ব্যবস্থা। এই লক্ষ্যে নির্বাচনে অংশ নিলে দুটি কাজ হয়!

একঃ কাজের রেজাল্ট দেখা যায়, জনমতের কি পরিমান পরিশুদ্ধি এসেছে সেটা বুঝতে পারা যায়।
দুইঃ নিজ বলয়ে প্রতিপক্ষ ইসলাম বিদ্বেষী চক্রের সব ধরনের ষরযন্ত্র, অত্যাচার, নির্যাতন ভোগ করে ময়দানে দাড়িয়ে আদর্শের জয়গান গাওয়ার মতো ঈমানী শক্তির পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হয়।

অরাজনৈতিক ভাবে আপনি যত উচুঁতে উঠুন না কেন এই পরীক্ষায় পড়ার সম্ভাবনা নেই। কেবলমাত্র রাজনৈতিক বলয়ে শক্তিমত্তা দেখাতে পারলেই মানুষ শয়তান আপনাকে তার হিসেবে গনায় ধরবে। রাজনৈতিক শক্তির জানান দেওয়ার বৈধ পন্থাই হলো নির্বাচনে অংশ নেওয়া!

অন্যদিকে ভিন্ন পথ অবলম্বন করার পরিনতি আমরা দেখেছি। জনমতের পরিবর্তন না করে রাস্তা ঘাটে, আদালত চত্বরে বো&*মা হা*%ামলা করে যারা ইসলামী দলগুলোর চলার পথ কর্দমাক্ত করেছেন তারা উম্মাহর নৈতিক, চারিত্রিক এবং দ্বীনি জজবা সৃষ্টিতে কোন ভূমিকা রাখতে পেরেছে?

আপনি খেলাফতের কথা বলছেন, সেই পন্থার কথা বলছেন কিন্ত আধুনিক জাতী রাষ্ট্রের কবলে পড়ে বিক্ষিপ্ত, দুর্বল, ক্ষমতা হারা জাতীর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অপশন দিচ্ছেন না। আকীদা বিশ্বাসে বিভ্রান্তে, আমল থেকে পলায়নরত জাতীর ইসলাহে, সংঘবদ্ধ করার স্কিম দেখাতে পারেননি।

বুদ্ধিবৃত্তিক আক্রমণে পর্যুদস্ত জাতীর ইলমি হালত ঠিক করতে তাজদ্বীদের কাজ আঞ্জাম দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এসব কাজ সাহস, হেকমত আর পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্ভব। জজবাতী বয়ান দিয়ে আসল সমস্যা থেকে মুখ ফিরাচ্ছেন নাকি অজান্তে বহুজাতীক চক্রান্তে পা দিয়ে ইসলামী মূল্যবোধের ধাবমান বিপ্লবী পথচলার পথে পানি ঢালছেন! ভাবুন!

সেক্যুলারিজমের সংজ্ঞা দিয়ে গণতন্ত্রকে কুফুরী বলা এটা কোন ধরণের শিক্ষাগত যোগ্যতা। গণতন্ত্র হচ্ছে শাসক নির্ধারণের একাধিক পদ্ধতির মধ্যে একটি আর সেক্যুলারিজম হচ্ছে রাষ্ট্রকে এবং রাষ্ট্রের আইনকে ধর্ম থেকে পৃথক করে ফেলা। তাই সেক্যুলারিজম নিঃসন্দেহে ১০০% বর্জনীয় তবে গণতন্ত্র নয়।

ক্ষমতা বা হুকুমাত দুইভাবে বৈধ হয়।

১) যদি আল্লাহ নিজে কাউকে বাছাই করেন। যেমন- হজরত দাউদ (আ), সুলাইমান (আ) এবং আমাদের প্রানপ্রিয় রাসূল (স)।

২) যাদের উপর হুকুমাত করা হবে যদি সেই আওয়াম সেই হুকুমাতকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেন।

দাউদ (আ), সুলাইমান (আ) এবং আল্লাহর রাসূল (স) প্রথম পদ্ধতিতে এবং ইসলামের চার খলিফা নীতিগতভাবে দ্বিতীয় পদ্ধতিতে শাসক হিসেবে নির্ধারিত বা নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ইসলাম ও গণতন্ত্র

ইসলাম-ধর্ম পরকালের জগতকে সামনে রেখে এই দুনিয়ায় পরিশুদ্ধ জীবন যাপনের নির্দেশনা দেওয়ার জন্যই এসেছে। রাষ্ট্র ও রাজনীতির ক্ষেত্রেও পরিশুদ্ধ জীবনের জন্য যতটুকু বিধান দেওয়ার দরকার ইসলাম ততটুকু বিধান দিয়েছে। 

রাষ্ট্রের কাঠামো তৈরি, রাষ্ট্রের সরকার গঠন ও পরিচালনার ব্যাপারে ইসলামের প্রথম নির্দেশনা হচ্ছে-- 'তাদের ব্যবস্থাপনা চলে তাদের পারস্পরিক মতামতের ভিত্তিতে'। [সূরা শূরা ৪২ : ৩৮]

এখান থেকে অত্যন্ত পরিষ্কার যে, রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনাগত বিষয় পুরোটাই জনগণের মতামতের উপর নির্ভরশীল। এখানে কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণির কথা বলা হয় নি, বরং ব্যাপকভাবে বলা হয়েছে-- 'তাদের পারস্পরিক মতামতের ভিত্তিতে'। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক মুসলমানের অধিকার সমান। 
খুলাফায়ে রাশিদীনের শাসনব্যবস্থা তার উজ্জ্বল নমুনা।

গণতন্ত্র এ কথাই বলে, ভিন্ন কিছু নয়। জনগণের সার্বভৌমত্বের অর্থ এখানে এটাই যে, জনগণের মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রকাঠামো তৈরী হবে, জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হবে, জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সরকার পরিচালিত হবে, জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সরকারের পতনও হতে পারে। 

ইসলামের নির্দেশনাও তো এটিই। এই বিষয়টি হারাম বা কুফরি হয় তাহলে কীভাবে? আপনি কি তাহলে ইসলামের নামে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করতে চাচ্ছেন? 

কুরআনের যেসব আয়াতে আল্লাহ একমাত্র তাঁর কর্তৃত্ব ও রাজত্বের কথা বলেছেন, কনটেক্সটকে সামনে রেখে এসব আয়াতকে দেখলে খুব সহজেই বোঝা যাবে যে, এসব আয়াতে বস্তুজগতের ঊর্ধ্বে আল্লাহ তাঁর অতিপ্রাকৃতিক কর্তৃত্ব ও রাজত্বের কথা বলছেন। পৌত্তলিকরা যেহেতু এ বিষয়ে আল্লাহর সঙ্গে তাদের দেবতাদের শরিক করত তাই  বারবার এ বিষয়টির অবতারণা করা হয়েছে। 

বলবেন, গণতন্ত্র তো জনগণকে বা জনপ্রতিনিধিদেরকে যেসব ব্যাপারে আল্লাহর বিধান আছে সেখানে আল্লাহর বিধানের বিপরীতে বিধান রচনা করার স্বাধীনতা দিয়ে দেয়। তাহলে তো এটা কুফরিই। 

আমি বলব, এটা সেক্যুলারিজমের সংজ্ঞা সেক্যুলারিজম হচ্ছে রাষ্ট্রকে এবং রাষ্ট্রের আইনকে ধর্ম থেকে পৃথক করে ফেলা। তাই সেক্যুলারিজম নিঃসন্দেহে ১০০% বর্জনীয় তবে গণতন্ত্র নয়।

খলিফা নির্বাচনের বিষয়ে আল্লাহর রাসূলের ফয়সালা: "খিলাফত ও নেতৃত্বের ব্যাপারে সকলেই কুরাইশের অনুগত থাকবে। (কারণ) মুসলিমগণ তাদের মুসলিমদের অনুগত এবং কাফিররা তাদের কাফিরদের অনুগত।"  

[বুখারী আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৪৯৫]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (খিলাফাতের) এই বিষয়টি সব সময় কুরাইশদের মধ্যেই থাকবে, যতদিন তাদের থেকে দু’জন লোকও অবশিষ্ট থাকবে।  

[বুখারী আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১৪০]

অর্থাৎ কুরাইশ থেকে আমির নিযুক্ত হলে সকল মুসলিম এবং আরবরা তা মেনে নিবে। অন্যথায় বিশৃঙ্খলা ঘটবে।  

খলিফা নির্বাচনের বিষয়ে হযরত উমার (রা) এর ফয়সালা: যে কেউ মুসলিমদের পরামর্শ ব্যতিরেকে কোন ব্যাক্তির হাতে বায়আত করবে, তার অনুসরণ করা যাবে না এবং ঐ ব্যাক্তিরও না, যে তার অনুসরন করবে। কেননা উভয়েরই হত্যার শিকার হওয়ার আশংকা রয়েছে। 

আল্লাহর কসম! আমরা সে সময়কার জরুরী বিষয়াদির মধ্যে আবূ বকরের বায়আতের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন কিছুকে মনে করি নি। আমাদের ভয় ছিল যে, যদি বায়আতের কাজ অসম্পূর্ণ থাকে, আর এ জাতি থেকে পৃথক হয়ে যাই তাহলে তারা আমাদের পরে তাদের কারো হাতে বায়আত করে নিতে পারে। তারপর হয়ত আমাদেরকে নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের অনুসরণ করতে হত, না হয় তাদের বিরোধিতা করতে হত, ফলে তা মারাত্বক ফ্যাসাদের কারণ হয়ে দাঁড়াত। অতএব যে ব্যাক্তি মুসলিমদের পরামর্শ ব্যাক্তিরেকে কোন ব্যাক্তির হাতে বায়আত করবে তার অনুসরণ করা যাবে না। আর ঐ ব্যাক্তিরও না, যে তার অনুসরণ করবে। কেননা, উভয়েরই হত্যার শিকার হওয়ার আশংকা বিদ্যমান।

[বুখারী আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮৩০]

অতএব আল্লাহ তায়ালা কিছু লোককে এই ক্ষমতা দেননি যে তারা এমন লোককে মুসলিমদের খলিফা করবেন যাকে মুসলিমরাই খলিফা হিসেবে চাননা। পরবর্তীতে হজরত উমর (রা) ও কোনো শূরা করে দিয়ে যাননি। সেই ছয়জন ছিল খলিফা পদপ্রার্থী।  

আল্লাহ বলেছেন____ 

'তাদের (মুসলমানদের) ব্যবস্থাপনা চলে তাদের (মুসলমানদের) পারস্পরিক মতামতের ভিত্তিতে'। [সূরা শূরা ৪২ : ৩৮]

এখান থেকে অত্যন্ত পরিষ্কার যে, রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনাগত বিষয় পুরোটাই জনগণের মতামতের উপর নির্ভরশীল। এখানে কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণির কথা বলা হয় নি, বরং ব্যাপকভাবে বলা হয়েছে-- 'তাদের পারস্পরিক মতামতের ভিত্তিতে'। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক মুসলমানের অধিকার সমান। 

খুলাফায়ে রাশিদীনের শাসনব্যবস্থা তার উজ্জ্বল নমুনা।

ঈসা (আ) এর জামানার ইহুদী রাবাইদের অন্ধ অনুসারীদের মতো বর্তমান অনেক অন্ধ অনুসারীদের বুঝানোই যাচ্ছে না যে, সেক্যুলারিজম না থাকলে অধিকাংশ কেন দেশের শতভাগ মানুষেরও এই এখতিয়ার থাকবে না যে তারা আল্লাহর আইনের বাহিরে গিয়ে কোনো আইন তৈরী করবে।  এই অন্ধ অনুসারীরা কি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বা গণতান্ত্রিক ইরানকে দেখে না অথবা মোটামোটিভাবে সফল ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানকে দেখে না। 

রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র বা গণতন্ত্র যে কোনো তন্ত্র থেকেই সেক্যুলারিজমকে মাইনাস করলে মুসলিম সমাজে আল্লাহর আইনের বিপক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। 

গণতন্ত্র কি?

গণতন্ত্র হল এমন এক ধরনের সরকার যেখানে জনগণের ইচ্ছাকৃতভাবে আইন প্রণয়নের এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার বা তা করার জন্য শাসক কর্মকর্তাদের বেছে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

গণতন্ত্র দুই প্রকার:

১) প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র। 
২) প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র। 

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র: এটি গণতন্ত্রের একটি রূপ যেখানে সরকার দ্বারা আরোপিত সমস্ত আইন ও নীতি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা নয় বরং জনগণের দ্বারা নির্ধারিত হয়।

প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র: প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র, যা পরোক্ষ গণতন্ত্র নামেও পরিচিত, এটি এমন এক ধরনের গণতন্ত্র যেখানে নির্বাচিত ব্যক্তিরা প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের বিপরীতে জনগণের একটি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। প্রায় সমস্ত আধুনিক বিশ্বের গণতন্ত্র প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র হিসাবে কাজ করে।

প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র দুই প্রকার:

1) সংসদীয় ব্যবস্থা
2) রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা

সেক্যুলারিজম : সেক্যুলারিজম সাধারণত নাগরিক বিষয় এবং রাষ্ট্র থেকে ধর্মের বিচ্ছিন্নতা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় এবং যেকোন জনক্ষেত্রে ধর্মের ভূমিকাকে অপসারণ বা হ্রাস করা হতে পারে। রাজনৈতিক পরিভাষায়, সেক্যুলারিজম হল ধর্ম ও সরকারকে পৃথকীকরণের একটি আন্দোলন, যাকে প্রায়ই গির্জা ও রাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতা বলা হয়। এটি একটি সরকার এবং একটি রাষ্ট্রীয় ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক হ্রাস, ধর্মগ্রন্থ ভিত্তিক আইনগুলিকে নাগরিক আইনের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন।


যারা মনে করে গণতন্ত্র একটি আলাদা ধর্ম, আলাদা জীবন বিধান- তাদের বুঝ শক্তি অপরিপক্ব! গণতন্ত্র কোন সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ, পূঁজিবাদ, জাতীয়তাবাদ কিংবা দীন ইসলামের মত জীবন বিধান নয় এবং এসব মতবাদ বা জীবন বিধানের প্রতিপক্ষও নয়। বরং গণতন্ত্র হলো যে কোন মতবাদ বা শাসন- বিধান প্রতিষ্ঠা করার উপকরণ মাত্র। গণতন্ত্রের মাধ্যমে যেমন ধনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ, জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করা যায় ঠিক তেমনই ইসলামের বিধানও প্রতিষ্ঠা ও কার্যকারী করা যায়। গণতন্ত্র যেমন সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ, জাতীয়তাবাদের বিরোধী নয় ঠিক তেমনই ইসলামেরও বিরোধী নয়। বরং আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা ও কার্যকরী করার উপকরণ হিসাবে বর্তমান অবস্থায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করা জায়েজ আছে। এ বিষয়ে সৌদিআরব সহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রসিদ্ধ আলেমগণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দীন ইসলাম কায়েম করার জন্য মত দিয়েছেন

 ইক্বামতে দ্বীন ও বাংলাদেশে চলমান ইসলামী দলগুলো নিয়ে আহলে হাদিসদের অপব্যাখ্যার সুষ্ঠু জবাব দিচ্ছেন পীস টিভি বাংলার স্বনামধন্য লেকচারার ডক্টর আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ, মুফতী কাজী ইব্রাহিম,শায়খ কামালুদ্দীন জাফরী, সৌদির আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটির আলেমরা অর্থাৎ ইবনে বায, ইবনে উসাইমীন, আব্দুল্লাহ গুদইয়ান, আব্দুর রাজ্জাক আফিফিসহ মূলধারার আহলে হাদিস ও সালাফীগন। Let's Enjoy IT. <><><><><><><><><><> ১) নির্বাচনে অংশগ্রহন করে রাষ্ট্রে দ্বীন প্রতিষ্ঠার পক্ষে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটির ফতোয়া। সরাসরি লিঙ্ক https://islamqa.info/bn/107166 ২) শাইখ কামালুদ্দীন জাফরী ইসলামী রাজনীতির পক্ষে যা বললেন, https://m.youtube.com/watch... ৩) ইসলাম ও রাজনীতি নিয়ে শাইখ মুফতী কাজী ইব্রাহিমের আপডেট জুমার খুতবার লেকচার https://m.youtube.com/watch?v=hpgzVnG8Uss ৪) ইসলাম ছাড়া কোন রাজনীতিই বৈধ নেই-- মুফতি কাজী ইব্রাহিম https://m.youtube.com/watch?v=f_YJuxFsIkk ৫) ইসলামী রাজনীতি করা ফরয - বলেছেন, মুফতী কাজী ইব্রাহিম https://m.youtube.com/watch?v=WdOsKOjsK_0 ৬) ইসলামী রাজনীতি নিয়ে ডক্টর আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ এর বক্তব্য https://m.youtube.com/watch?v=EpadJSMtI8g ৭) ভোট দেওয়া সম্পর্কে ডক্টর আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর যা বলেছেন, ইসলাম একটি জনগনতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা https://m.youtube.com/watch?v=atZpAE1NYLk 

সৌদি আরবের প্রসিদ্ধ শাইখগণের দৃষ্টিতে দ্বীন কায়েমের উপকরণ হিসাবে 'গণতন্ত্র':-
-------------------------------------
প্রশ্নঃ মোহতারাম,
السلام عليكم ورحمة الله
.
গণতন্ত্রকে সমর্থন দিয়ে ইসলামি রাজনীতি করা কি জায়েয?
গণতন্ত্র তো কুফরি মতবাদ এটা সমর্থন দেয়া কি ঠিক হবে?
ইসলামি খিলাফত কিভাবে কায়েম করতে হবে?
.
জবাবঃ
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته.
.
আপনার প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত জবাব হলো:
০১. গণতন্ত্র বলতেই কুফুরি-এমন ধারনা সঠিক নয়। গণতন্ত্রের বহুরূপ রয়েছে। এর কুফুরি এবং শিরকি রূপও রয়েছে। আবার কুফর এবং শিরকবিহীন রূপও রয়েছে। অনেক দেশ নিজেদের চাহিদা মতো নিজ নিজ দেশে গণতন্ত্রের নতুন নতুন রূপায়ন করেছে।
.
০২. ইসলাম সমর্থিত গণতন্ত্র হলো, জনগণের/ইসলামি জনগণের ভোট বা মতামতের ভিত্তিতে তাদের নেতা ও প্রতিনিধিগণ নির্বাচিত হবেন। আবার তাদের সমর্থন হারালে নেতা/ প্রতিনিধিগণ পদচ্যুত হবেন। কিন্তু রাষ্ট্র বা দল পরিচালিত হবে কুরআন-সুন্নাহর মূলনীতির ভিত্তিতে। মূলনীতির ভিত্তিতে নেতা ও প্রতিনিধিগণ জনগণের পরামর্শও গ্রহণ করবেন।
.
০৩. ইসলামি রাষ্ট্র ও দলকে এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই পরিচালিত হতে হবে। তা নাহলে তা হবে স্বৈরতন্ত্র এবং জুলুমতন্ত্র। এই প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিকে কেউ গণতন্ত্র না বলে অন্য কিছুও বলতে পারে-তাতে কিছু যায় আসেনা। কিন্তু মূলনীতি, নির্বাচন পদ্ধতি এবং মতামত গ্রহণ প্রক্রিয়া থাকতে হবে।
.
০৪. এটা মনে রাখা দরকার, গণতন্ত্র বলতেই আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্র বুঝা যায়না। তাছাড়া গণতন্ত্র কোনো জড় পদার্থও নয় যে, তা পরিবর্তনযোগ্য নয়।
.
০৫. ইসলামি খিলাফত কায়েমের উত্তম পদ্ধতি হলো রসূলুল্লাহ সা. প্রদর্শিত পদ্ধতি। তাহলো:
এক. জনগণের চিন্তার পরিবর্তন (ইসলামের দিকে)।
দুই. জনগণের চরিত্রের পরিবর্তন (ইসলামের দিকে)।
তিন. নতুন (ইসলামি) সমাজের প্রবর্তন।
চার. ইসলামি খিলাফত হতে হবে এই নতুন সমাজের দাবি ও চাহিদার ভিত্তিতে।
.
তবে যে ব্যক্তি এ পদ্ধতির অধীনে নিজেকে কিংবা অন্য কাউকে এ জন্য নির্বাচিত করে যাতে করে এ আইনসভাতে ঢুকে এর বিরোধিতা করা যায়, এ পদ্ধতির বিপক্ষে দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়, সাধ্যানুযায়ী অকল্যাণ ও দুর্নীতি রোধ করা যায় এবং যেন গোটা ময়দান দুর্নীতিবাজ ও নাস্তিকদের হাতে চলে না যায়, যারা জমিনে দুর্নীতি ছড়িয়ে দেয়, মানুষের দ্বীন ও দুনিয়ার সমূহ কল্যাণ নস্যাৎ করে দেয়— তবে এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কল্যাণের দিক বিবেচনা করে ইজতিহাদ করার তথা বিবেক-বিবেচনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ রয়েছে। বরং কোন কোন আলেম মনে করেন, এ ধরনের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা ফরজ।
.
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীনকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাবে বলেন:
আমি মনে করি এ নির্বাচনগুলোতে
অংশ নেয়া ফরজ। আমরা যাকে ভাল
মনে করি তাকে সহযোগিতা করা ফরজ। কারণ ভাল লোকেরা যদি ঢিলেমি করে তাহলে এ স্থানগুলো কে দখল করবে? খারাপ লোকেরাই দখল করবে কিংবা এমন লোকেরা দখল করবে যাদের কাছে না আছে ভাল; না আছে খারাপ; যারা সুবিধাবাদী। তাই আমাদের উচিত যাকে যোগ্য মনে করি তাকে নির্বাচিত করা।
.
যদি কেউ বলেন: আমরা যাকে নির্বাচিত করলাম আইনসভার অধিকাংশ সদস্য তার বিপক্ষে।
আমরা জবাবে বলব: কোন অসুবিধা নেই। এই একজনের মধ্যে আল্লাহ বরকত দিতে পারেন। তিনি যদি আইনসভার সামনে হক কথা বলতে পারেন তাহলে অবশ্যই এর প্রভাব থাকবে, প্রভাব থাকতেই হবে। তবে যে ক্ষেত্রে আমাদের কসুর হয় সেটা হচ্ছে আল্লাহর সাথে বিশ্বস্ত হওয়া। আমরা শুধু বৈষয়িক বিষয়ের উপর নির্ভর করি আল্লাহর বাণী এর দিকে তাকাই না। সুতরাং আপনি যাকে ভাল মনে করেন তাকে নির্বাচিত করুন; এরপর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করুন।
[শাইখ মুহাম্মাদ বিন উসাইমীন, লিকাআতুল বাব আল-মাফতুহ]
.
সৌদি আরবের ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:
নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দেয়া ও ভোট দেয়া জায়েয আছে কি? উল্লেখ্য, আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থা আল্লাহর নাযিলকৃত আইনে নয়।
জবাবে তাঁরা বলেন: যে সরকার আল্লাহর নাযিলকৃত আইন দিয়ে শাসন করে না, শরিয়া আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে না কোন মুসলমানের জন্য সে সরকারে যোগ দেয়ার প্রত্যাশায় নিজেকে মনোনীত করা জায়েয নয়। তাই এ সরকারের সাথে কাজ করার জন্য কোন মুসলমানের নিজেকে কিংবা অন্য কাউকে নির্বাচিত করা জায়েয নেই। তবে কোন মুসলমান যদি এ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয় কিংবা অন্যকে নির্বাচিত করে যে, এর মাধ্যমে এ শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করবে, নির্বাচনে অংশ গ্রহণকে তারা বর্তমান শাসনব্যবস্থার উপর আধিপত্য বিস্তার করার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে সেটা জায়েয। তবে, সে ক্ষেত্রেও যে ব্যক্তি প্রার্থী হবেন তিনি এমন কোন পদ গ্রহণ করতে পারবেন না যা ইসলামী শরিয়ার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
ফতোয়া দিয়েছেন-
১. শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায,
২. শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি,
৩. শাইখ আব্দুল্লাহ গুদইয়ান,
৪. শাইখ আব্দুল্লাহ কুয়ুদ।
[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র থেকে সংকলিত (২৩/৪০৬, ৪০৭)]
.
স্থায়ী কমিটিকে আরও জিজ্ঞেস করা হয় যে, আপনারা জানেন, আমাদের আলজেরিয়াতে “আইনসভার নির্বাচন” অনুষ্ঠিত হয়। কোন দল আছে যারা ইসলামী হুকুমত কায়েমের দিকে আহ্বান করে। আর কোন দল আছে যারা ইসলামী হুকুমত চায় না। এখন যে ব্যক্তি এমন কাউকে ভোট দেয় যে প্রার্থী ইসলামী হুকুম চায় না সে ব্যক্তির হুকুম কি হবে; তবে এ ব্যক্তি নামায আদায় করে?
জবাবে তাঁরা বলেন: যে সব দেশে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক শাসনব্যবস্থা চালু নাই সেসব দেশের মুসলমানদের উপর ফরজ ইসলামী হুকুমত ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা নিয়োজিত করা এবং যে দল ইসলামী হুকুমত বাস্তবায়ন করবে বলে তারা ধারনা করেন সে দলকে একজোটে সবাই মিলে সহযোগিতা করা। পক্ষান্তরে, যে দল ইসলামী শরিয়া বাস্তবায়ন না করার প্রতি আহ্বান জানায় সে দলকে সহযোগিতা করা নাজায়েয। বরং এ ধরনের সহযোগিতা ব্যক্তিকে কুফরের দিকে ধাবিত করে।
দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণী:
.
وَأَنِ ٱحْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَآءَهُمْ وَٱحْذَرْهُمْ أَن يَفْتِنُوكَ عَنۢ بَعْضِ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ إِلَيْكَۖ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَٱعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ أَن يُصِيبَهُم بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْۗ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ ٱلنَّاسِ لَفَٰسِقُونَ. أَفَحُكْمَ ٱلْجَٰهِلِيَّةِ يَبْغُونَۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ .
.
আর তাদের মধ্যে তার মাধ্যমে ফয়সালা কর, যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাক যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার কিছু থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করবে। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রাখ যে, আল্লাহ তো কেবল তাদেরকে তাদের কিছু পাপের কারণেই আযাব দিতে চান। আর মানুষের অনেকেই ফাসিক। তারা কি জাহেলিয়াতের বিধান কামনা করে? যারা (আল্লাহর প্রতি) একীন রাখে তাদের কাছে আল্লাহর চেয়ে উত্তম বিধানদাতা কে?”
[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৪৯-৫০]
.
এ কারণে যারা ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে না আল্লাহ তাদেরকে কাফের হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْكَٰفِرُونَ
.
আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে ফয়সালা করে না, তারাই কাফির।
(সূরা মায়িদাঃ৪৪)
তাদের সাথে সহযোগিতা করা থেকে, তাদেরকে মিত্র হিসেবে গ্রহণ করা থেকে সাবধান করেছেন। যদি মুমিনগণ প্রকৃত ঈমানদার হয় তাদেরকে তাকওয়া অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন:
.
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّخِذُوا۟ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِّنَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ مِن قَبْلِكُمْ وَٱلْكُفَّارَ أَوْلِيَآءَۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
.
হে মুমিনগণ, তোমরা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যারা তোমাদের দীনকে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করেছে, তাদের মধ্য থেকে তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও কাফিরদেরকে। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক।
[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৫৭]
.
আল্লাহই তাওফিকদাতা, আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক।
.
গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি
১. শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায,
২. শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি,
৩. শাইখ আব্দুল্লাহ গুদইয়ান
৪. শাইখ আব্দুল্লাহ কুয়ুদ।
[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১/৩৭৩)]



 শাইখ ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহঃ) এর মতে দীন কায়েমের উপকরণ হিসাবে গণতন্ত্র:
-------------------------------------------
রাসূলুল্লাহ (সা) কে প্রেরণ করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ
.
তিনি সেই সত্তা, যিনি নিজ রাসূলকে হিদায়াত এবং দীনুল হক্ব (তথা নির্ভুল জীবন বিধান) সহকারে প্রেরণ করেছেন, যেন ওকে অন্যান্য সকল দীনের উপর (তথা বিধানের উপর) বিজয়ী করে দেন।
(সূরা তওবাঃ৩৩, সূরা ফাতাহঃ২৮, সূরা সফঃ০৯)
.
অর্থাৎ আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর রাসূল (সা) কে সকল মানব রচিত ও শয়তান প্রদত্ত বিধানের উপরে দীন ইসলামের বিধানকে বিজয়ী করার জন্য প্রেরণ করেছেন। আর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত ইসলামের বিধানকে অন্যান্য বিধানের উপর বিজয়ী করা সম্ভাব নয়। তাই রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর নবুওয়াতী জীবনে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে দীন কায়েম করেন এবং দীন ইসলামকে বিজয়ী করেন। বর্তমানেও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত দীন কায়েম করা এবং দীন ইসলামকে অন্যান্য মানব রচিত বিধানের উপর বিজয়ী করা সম্ভব নয়।
তবে আমরা বর্তমান যুগে কিভাবে দীন কায়েম করব, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দীন কায়েমের উপকরণ হিসাবে গ্রহণ করব কি না- এ বিষয়ে আলোরণ সৃষ্টিকারী প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
.
"(ক) রাসূলুল্লাহ (সা) আল্লাহর দীনের জন্য দাওয়াত দিয়েছেন। এক পর্যায়ে যখন মদীনার অধিকাংশ মানুষ ইসলামের ছায়া তলে চলে আসেন তখন সেখানে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহর ওহীর নির্দেশনা মুতাবেক রাসূলুল্লাহ (সা) ইসলামী শাসন -ব্যবস্থা অনুযায়ী রাষ্ট্র শাসন করেন এবং জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের ও মুসলমানদের সংরক্ষণ করেন।
.
(খ) খেলাফতে রাশেদার পরে সাহাবীগণ, তাবেঈগণ ও তাবে-তাবেঈগণ ইসলামী রাষ্ট্রের মধ্যে অনেক ধরণের ব্যাতিক্রম, অন্যায় ও ইসলাম বিরোধীতা কর্মকান্ড দেখতে পান। এ সকল ক্ষেত্রে তাদের পদ্ধতি ছিল কথা বার্তা, লিখনি ইত্যাদির মাধ্যমে শাসকগণকে পরিপূর্ণ ইসলামী পদ্ধতিতে শাসন করতে এবং জনগণ কে পরিপূর্ণ ইসলামী জীবনব্যবস্থার মধ্যে চলতে আহ্বান করা।
.
(গ) যিনি শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন তাঁর জন্য পরিপূর্ণ ইসলাম অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করা ফরয। আলেম, ফকিহ ও সমাজের দায়িত্ববানদের জন্য শাসকের শাসন কার্যে সহযোগীতা করা, তাঁর কোন ভুল হলে তাকে সংশোধনের পথ দেখানো ও সঠিক পথে শাসন পরিচালনা করতে আহ্বান করা।
.
(ঘ) পূর্বের যুগগুলিতে যুদ্ধবিগ্রহ বা রক্তাক্ত বিল্পব ছাড়া 'সরকার পরিবর্তন' এর কোন সুযোগ ছিল না। এজন্য সাহাবী তাবেঈগণের যুগ থেকে পরবর্তী যুগে আলেম, ফকিহ ও সমাজ সংস্কারকগণ সাধারণত সরকার পরিবর্তন করার প্রচেষ্টাকে নিরুৎসাহিত করেছেন। তাঁরা সর্বদা 'সরকারকে সংশোধন' করতে চেষ্টা করেছেন।
.
(ঙ) বর্তমান যুগে আমরা একটি বিষেশ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি, যা তাঁদের যুগে ছিল না। একদিকে আমরা অনেকে এমন সমাজ ও রাষ্ট্রে বাস করি যেখানে সামান্য কিছু ইসলামী ব্যবস্থার পাশাপাশি সর্বস্তরে অনৈসলামিক পরিবেশ ও ব্যবস্থা বিদ্যমান। এগুলোর প্রতিবাদ করা ও পরিবর্তনের চেষ্টা করা আমাদের উপর ফরয। অপর দিকে আগের যুগে নির্বিঘ্ন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ ছিল না। বর্তমানে তা আছে। তার মাধ্যম হচ্ছে আধুনিক গণতান্ত্রিক দলীয় রাজনীতি।"
.
প্রশ্ন হলো: আমরা এখন কী ভাবে (দীন প্রতিষ্ঠার) কাজ করব? শুধু মাত্র শাসক ও জনগণকে ইসলামের দিকে আহ্বান, আদেশ, নিষেধ ইত্যাদির মধ্যেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখব? না কি এই আধুনিক (গণতান্ত্রিক) পদ্ধতি গ্রহণ করব?
.
বর্তমান মুসলিম বিশ্বে অনেক আলেম, ফকিহ, চিন্তাবিদ ও ধার্মিক মানুষ আধুনিক দলীয় ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নন। কারণ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বা সমাজে ইসলাম বিরোধী কাজ রোধে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে রাসূলুল্লাহ (সা), তাঁর সাহাবীগণ, তাবেঈগণ, তাবে তাবেঈগণ কখনোই রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রগণের জন্য দল গঠন, নির্বাচন ইত্যাদি করেন নি। তাঁরা শাসক ও জনগণ কে ইসলাম মতো চলতে আহ্বান করেতেন, শাসকের ভুলগুলো তাকে বলে তাকে সংশোধিত হওয়ার আহ্বান করতেন এবং ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধ প্রচারে সাধ্যমত চেষ্টা করতেন। কাজেই আমাদেরও সেভাবে চলা উচিত।
.
এখানে সমস্যা হলো ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত বর্জনের পার্থক্য না করা। প্রথম যুগের মুসলিমগণ দলীয় রাজনীতি করেননি বা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তন করে ভালো সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেননি তার কারণ হলো এই ব্যবস্থা তাঁদের যুগে ছিল না। তাঁদের রাষ্ট্রের শাসককে শান্তিপূর্ণ ভাবে পরিবর্তন করা যেত না। তাই তারা সাধারণত শাসক পরিবর্তনের চেষ্টা না করে সংশোধনের চেষ্টা করতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে সে সুযোগ আছে। আমরা যদি তা ব্যবহার না করি তবে দুই দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবো:
.
প্রথমত, সৎকাজে আদেশ ও সমাজে ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড পরিবর্তন করে পরিপূর্ণ ইসলাম প্রতিষ্ঠার একটি বড় মাধ্যম আমরা হারাব।
.
দ্বিতীয়ত, বর্তমানে সমাজে যারা ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার ও প্রতিষ্ঠা চান না, তারা এই (গণতান্ত্রিক) মাধ্যম ব্যবহার করে ইসলামী মূল্যবোধের বিকাশ রোধ করবেন। এ কারণে ইসলামের বিরুদ্ধে সকল প্রচেষ্টার মোকাবিলা করাও আমাদের দায়িত্ব।
.
এ জন্য গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে একটি নব উদ্ভাবিত উপকরণ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে এবং প্রয়োজনে ইসলামী শরীয়তের শিক্ষার আলোকে শরীয়ত সম্মত ভাবে সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ ইত্যাদি ইসলামের সুনির্দিষ্ট ইবাতদ পালনের মাধ্যম হিসাবে একে ব্যবহার করতে হবে।
.
আল্লাহ তা'য়ালা ইসলামকে সকল যুগের, সকল জাতির, সকল মানুষের পালন ও অনুসরণ যোগ্য করে প্রেরণ করেছেন। জাগতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, জনকল্যাণমূলক ও প্রাকৃতিক কর্মকান্ডের মধ্যে ইসলামেখুবই প্রশস্ততা রাখা হয়েছে। যেন প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক জাতির মানুষ তাদের সমাজের প্রচলিত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় রীতিনীতির মধ্য থেকেই পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করতে পারে। এরই একটি দিক হলো রাষ্ট্র পরিচালনার দিক।
.
মহিমাময় আল্লাহ ও তাঁর মহান রাসূল (সা) রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণের পরামর্শ গ্রহণের এবং ন্যায়নীতি ও ইনসাফের সাথে শাসনের নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
[আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
وَشَاوِرْهُمْ فِى ٱلْأَمْرِۖ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُتَوَكِّلِينَ
.
আর কার্য সম্বন্ধে তাদের সাথে পরামর্শ কর; অতঃপর তুমি যখন সংকল্প কর তখন আল্লাহর প্রতি নির্ভর কর; এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর উপর ভরসাকারীগণকে ভালবাসেন।
(সূরা আলি ইমরানঃ১৫৯)
.
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,
.
من بايع اميرا عن غير مشورة المسلمين فلا بيعة له. (مسند احمد)
.
যে ব্যক্তি মুসলিমদের পরামর্শ ছাড়াই আমীর হিসাবে বাইয়াত নেই তার বাইয়াত বৈধ হবে না।
(মুসনাদে আহমদ)]
.
কিন্তু পরামর্শ গ্রহণের পদ্ধতি নির্দিষ্ট করে দেননি। যেন সকল যুগের ও সকল দেশের মানুষ নিজ নিজ দেশের সামাজিক কাঠামোর মধ্য থেকে ইসলামী অনুশাসনের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণের পরামর্শ ও মতামত গ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারে। ফলে অতীত যুগে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত গোত্রীয় বা রাজতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে ইসলামের এই নির্দেশ পালন সম্ভব ছিল। এ জন্য কোন সামাজিক বিশৃঙ্খলার প্রয়োজন ছিল না। তেমনি বর্তমান গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকেও একই ভাবে আল্লাহর এই নির্দেশ পালন করা সম্ভাব। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণের পরামর্শ গ্রহণের একটি নব উদ্ভাবিত উপকরণ ও পদ্ধতি হলো গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি। যেখানে এই পদ্ধতি ব্যবহারের সুযোগ আছে সেখানে মুসলিমগণ শরীয়তের নির্দেশনার ভিতরে তা ব্যবহার করবেন।"
(ড.খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, এহ্ইয়াউস সুনান, ৫ম অধ্যায়, পৃঃ৪৬৬-৪৬৯ দ্রঃ)
https://www.youtube.com/watch?v=mtAStok49dc&itct=CBAQpD&app=desktop

দীন কায়েমে ইসলামী রাষ্ট্রের গুরুত্বঃ
-------------------------------------
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ (دين) জীবন ব্যবস্থা। মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلْإِسْلَٰمُۗ.
.
নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র (গ্রহণযোগ্য দীন) জীবন ব্যবস্থা।
(সূরা আলি ইমরানঃ১৯)
.
অর্থাৎ ইসলামের প্রত্যেকটি বিষয় দীনের অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম কোন বিধানই দীনের বহির্ভূত নয়। সুুতরাং দীন কায়েম বলতে ইসলামের প্রত্যেকটি বিধান কায়েম করাকে বুঝায়।
ধর্মীয় জীবন থেকে শুরু করে ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, আন্তর্জাতিক জীবন এক কথায় মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগ সম্পর্কে ইসলামে রয়েছে সুস্পষ্ট আইন ও বিধান। জীবনের এমন কোন দিক বা বিভাগ উল্লেখ করা যেতে পারে না, যে বিষয়ে ইসলামের কোন নির্দেশ পাওয়া যায় না। আল্লাহ তা'য়ালা ইসলামের প্রধান সংবিধান কুরাআন মাজীদে বলেনঃ
.
مَّا فَرَّطْنَا فِى ٱلْكِتَٰبِ مِن شَىْءٍۚ.
.
আমি কিতাবে কোন বিষয়ই লিপিবদ্ধ করতে বাদ রাখিনি।
(সূরা আনআমঃ৩৮)
.
মুসলিম জাতি শুধু ধর্মীয় জীবনে আল্লাহর দাসত্ব ও গোলামী করবে আর অন্যান্য দিক ও বিভাগে তারা স্বাধীন, যে কোন নীতি বা বিধান গ্রহণ করতে পারবে- এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত এবং এর পরিণতি জাহান্নাম। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ ٱلْإِسْلَٰمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِى ٱلْءَاخِرَةِ مِنَ ٱلْخَٰسِرِينَ
.
আর যে কেহ ইসলাম ব্যতীত অন্য দীন (জীবন বিধান) অন্বেষণ করে তা কখনই তার নিকট হতে গৃহীত হবেনা এবং পরলোকে সে (জাহান্নামে) ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(সূরা ইমরানঃ৮৫)
.
আল্লাহ তা'য়ালা পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামের সকল বিধান মেনে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ
.
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱدْخُلُوا۟ فِى ٱلسِّلْمِ كَآفَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا۟ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَٰنِۚ إِنَّهُۥ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
.
হে মু’মিনগণ! তোমরা পরিপূর্ণ রূপে ইসলামে প্রবিষ্ট হও এবং শাইতানের পদাংক অনুসরণ করনা, নিশ্চয়ই সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু।
(সূরা বাকারাঃ২০৮)
.
শয়তানের বিধান না মেনে পরিপূর্ণ রূপে ইসলামের বিধান মানতে হলে ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র কায়েম করা অপরিহার্য।
.
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা) কে প্রেরণ করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
ﻫُﻮَ ﭐﻟَّﺬِﻯٓ ﺃَﺭْﺳَﻞَ ﺭَﺳُﻮﻟَﻪُۥ ﺑِﭑﻟْﻬُﺪَﻯٰ ﻭَﺩِﻳﻦِ ﭐﻟْﺤَﻖِّ ﻟِﻴُﻈْﻬِﺮَﻩُۥ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﺪِّﻳﻦِ ﻛُﻠِّﻪِۦ
.
তিনি সেই সত্তা, যিনি নিজ রাসূলকে হিদায়াত এবং দীনুল হক্ব (তথা নির্ভুল জীবন বিধান) সহকারে প্রেরণ করেছেন, যেন ওকে অন্যান্য সকল দীনের উপর (তথা বিধানের উপর) বিজয়ী করে দেন।
(সূরা তওবাঃ৩৩, সূরা ফাতাহঃ২৮, সূরা সফঃ০৯)
.
অর্থাৎ আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর রাসূল (সা) কে
সকল মানব রচিত ও শয়তান প্রদত্ত বিধানের উপরে দীন ইসলামের বিধানকে বিজয়ী করার জন্য প্রেরণ করেছেন। আর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত ইসলামের বিধানকে অন্যান্য বিধানের উপর বিজয়ী করা সম্ভাব নয়। তাই রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর নবুওয়াতী জীবনে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে দীন কায়েম করেন এবং দীন ইসলামকে বিজয়ী করেন। বর্তমানেও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত দীন কায়েম করা এবং দীন ইসলামকে অন্যান্য মানব রচিত বিধানের উপর বিজয়ী করা সম্ভব নয়।
.
এছাড়াও ইসলামের এমন অনেক আইন বিধান রয়েছে যা কার্যকারী করতে হলে রাষ্ট প্রতিষ্ঠা করা ব্যতীত সম্ভব নয়। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মানুষের পরস্পরের বিচার ফায়সালা করা, ইসলামী ফৌজদারি দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার নির্দেশ রয়েছে কুরাআন হাদীসে। কিন্তু রাষ্ট্র যতক্ষণ পর্যন্ত এ কাজ না করবে ততক্ষণ কোন ব্যক্তি বা সমাজের সাধারণ মানুষের পক্ষে তা করা কিছুতেই সম্ভবপর হতে পারে না। এজন্যই জনগণের উপর আল্লাহর আইন কার্যকারী করার ক্ষমতাসম্পন্ন রাষ্ট্র-ব্যবস্থা একান্তই জরুরী। এ কথাটি বুঝাতে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেছেনঃ
.
ان ولاية امر الناس اعظم واجبات الدين بل لاقيام للدين الا بها ولان الله تعالي اوجب الامر بالمعروف و النهي عن المنكر ونصرة المظلوم وكذلك ساءر ما اوجبه من الجهاد والعدل واقامة الحدود لا تتم الا بالقوة والامارة.
.
"জনগণের যাবতীয় ব্যাপার সুসম্পন্ন করা তথা শাসন-ব্যবস্থা কায়েম করা দীনের প্রধান দায়িত্ব। বরং শাসন-ব্যবস্থা (রাষ্ট্র) ছাড়া দীন প্রতিষ্ঠা হতেই পারে না। আরো কথা এই যে, আল্লাহ তা'য়ালা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ এবং মজলুমদের সাহায্য করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন। এ ভাবে তিনি জিহাদ, ইনসাফ ও আইন-শাসন প্রভৃতি যেসব কাজ ওয়াজিব করে দিয়েছেন তা রাষ্ট্রশক্তি ও শাসন-ব্যবস্থা ছাড়া কিছুতেই হতে পারে না।"
(আস-সিয়াসাতুশ শরইয়্যাহ, পৃষ্ঠাঃ ১৭২-১৭৩)
.
অতএব শরীয়তের আইন বিধান জারী ও কার্যকারী করার জন্যে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা একটি অপরিহার্য জরুরী কর্তব্য, যা শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহর আলোচনা থেকেও পরিষ্কার হয়ে গেছে।
সুুতরাং যারা 'দীন কায়েম করার জন্য রাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই' বলে রাষ্ট্রীয় ভাবে আল্লাহর আইন কে পদদলিত করে তাগুতের আইন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মেনে নিচ্ছে তারা মূলত তাগুতেরই গোলাম।


নির্বাচন ও ভোট বিষয়ে শরয়ী
দৃষ্টিকোণ:
-------------------------------------
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
.
বর্তমান জামানার কথিত আহলে হাদীস আধুনিক দলীয় ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নন। কারণ তাদের দাবী ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বা সমাজে ইসলাম বিরোধী কাজ রোধে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে রাসূলুল্লাহ (সা), তাঁর সাহাবীগণ, তাবেঈগণ, তাবে তাবেঈগণ কখনোই রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণের জন্য দল গঠন, নির্বাচন ইত্যাদি করেন নি।
.
এখানে সমস্যা হলো ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত বর্জনের পার্থক্য না করা। প্রথম যুগের মুসলিমগণ দলীয় রাজনীতি করেননি বা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তন করে ভালো সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেননি তার কারণ হলো এই ব্যবস্থা তাঁদের যুগে ছিল না। তাঁদের রাষ্ট্রের শাসককে শান্তিপূর্ণ ভাবে পরিবর্তন করা যেত না। তাই তারা সাধারণত শাসক পরিবর্তনের চেষ্টা না করে সংশোধনের চেষ্টা করতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে সে সুযোগ আছে। আমরা যদি তা ব্যবহার না করি তবে দুই দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবো:
.
প্রথমত, সৎকাজে আদেশ ও সমাজে ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড পরিবর্তন করে পরিপূর্ণ ইসলাম প্রতিষ্ঠার একটি বড় মাধ্যম আমরা হারাব।
.
দ্বিতীয়ত, বর্তমানে সমাজে যারা ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার ও প্রতিষ্ঠা চান না, তারা এই (গণতান্ত্রিক) মাধ্যম ব্যবহার করে ইসলামী মূল্যবোধের বিকাশ রোধ করবেন। এ কারণে ইসলামের বিরুদ্ধে সকল প্রচেষ্টার মোকাবিলা করাও আমাদের দায়িত্ব।
.
এ জন্য গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে একটি নব উদ্ভাবিত উপকরণ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে এবং প্রয়োজনে ইসলামী শরীয়তের শিক্ষার আলোকে শরীয়ত সম্মত ভাবে সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ ইত্যাদি ইসলামের সুনির্দিষ্ট ইবাতদ পালনের মাধ্যম হিসাবে একে ব্যবহার করতে হবে।
.
আল্লাহ তা'য়ালা ইসলামকে সকল যুগের, সকল জাতির, সকল মানুষের পালন ও অনুসরণ যোগ্য করে প্রেরণ করেছেন। জাগতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, জনকল্যাণমূলক ও প্রাকৃতিক কর্মকান্ডের মধ্যে ইসলামেখুবই প্রশস্ততা রাখা হয়েছে। যেন প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক জাতির মানুষ তাদের সমাজের প্রচলিত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় রীতিনীতির মধ্য থেকেই পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করতে পারে। এরই একটি দিক হলো রাষ্ট্র পরিচালনার দিক।
.
ভোট দেয়া জরুরী:
----------------
প্রত্যেক ব্যক্তির স্বীয় সাধ্যানুযায়ী দ্বীন ইসলামের প্রচার প্রসার ও বাস্তবায়ন এবং গোনাহ ও জুলুমকে রুখে দেয়ার তাকীদ কুরআনও হাদীসে এসেছে। তাই জাতিকে জুলুম ও নিপীড়ণ থেকে বাঁচাতে, সেই সাথে ইসলাম ও মুসলমানদের জালিম ও ইসলাদ্রোহীর হাত থেকে রক্ষা করতে এবং সকল বাতিল মতবাদের উপর দ্বীন ইসলাম কে বিজয়ী করতে ভোট প্রদান করা আবশ্যক। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা) কে দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য পাঠানো হয়েছে। কুরআনের ভাষায় -
.
هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ.
.
তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্যদ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীন তথা সকল মতবাদ ও শাসন -ব্যবস্থার উপর তা বিজয়ী করে দেন।
(দেখুনঃ- সূরা তওবাঃ৩৩, সূরা ফাতাহঃ২৮, সূরা সফঃ০৯)
.
তাছাড়া আল্লাহর আইন পরিত্যাগ করে তাগুতী শাসন -ব্যবস্থার মাধ্যমে বিচার ফায়সালা করা মারাত্মক জুলুম। দেখুনঃ-
.
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ
.
আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করবে না, তারাই যালিম।
(সূরা মায়িদাঃ৪৫)
.
জুলুম ও ইসলাম বিদ্বেষী কাজ থেকে একদম হাত গুটিয়ে বসে থাকার ব্যাপারে হাদীসে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। যেমন-
ﻭَﺇِﻧَّﺎ ﺳَﻤِﻌْﻨَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻘُﻮﻝُ: ‏«ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻭُﺍ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻢَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺄْﺧُﺬُﻭﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻳَﺪَﻳْﻪِ، ﺃَﻭْﺷَﻚَ ﺃَﻥْ ﻳَﻌُﻤَّﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻌِﻘَﺎﺏ«ٍ
.
হযরত আবু বকর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন। যদি লোকেরা জালিম ব্যক্তিকে দেখেও তাকে বাঁধা না দেয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাদের সবার উপর আযাব নাজিল করে দিতে পারেন। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৩৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৫৩, সুনানে তিরমিজী, [বাশশার] হাদীস নং-২১৬৮, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩০৫}
.
নিজের চোখের সামনে জালিম ও ইসলাম বিদ্বেষী নির্বাচিত হয়ে এসে জুলুমের ষ্টীমরোলার মুসলমানদের উপর চালালে, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে, যে ব্যক্তি নির্বিকার বসে থেকে, মাজলুমের সহায়তা করে জালিমের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ না করে থাকে, উক্ত ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে লাঞ্ছিত হবে। হাদীসে ইরশাদ হচ্ছে-
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺃُﻣَﺎﻣَﺔَ ﺑْﻦِ ﺳَﻬْﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﻨَﻴْﻒٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺎﻝَ: ‏«ﻣَﻦْ ﺃُﺫِﻝَّ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﻨْﺼُﺮْﻩُ، ﻭَﻫُﻮَ ﻳﻘَﺪِﺭُ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﺼُﺮَﻩُ ﺃَﺫَﻟَّﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﺀُﻭﺱِ ﺍﻟْﺨَﻠَﺎﺋِﻖِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ »
.
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তির সামনে কোন মুমিনকে অপমান করা হয়, অথচ তাকে সহায়তা করার ক্ষমতা উক্ত ব্যক্তির থাকা সত্বেও সে তাকে যদি সাহায্য না করে, তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে সবার সামনে লাঞ্ছিত করবেন।
{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৯৮৫, আলমুজামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস নং-৫৫৫৪}
.
ভোট না দিয়ে বসে থাকা জায়েজ নয়:
--------------------------------- জালিম ও ইসলামদ্রোহী শক্তিকে রুখে দেয়ার শক্তি থাকা বা কর্মপদ্ধতি থাকা সত্বেও বসে থাকা জায়েজ নয়। যেমনটি উপরে বর্ণিত হাদীস দ্বারা স্পষ্ট হয়েছে। সুতরাং আমাদের দেশে যেহেতু নির্বাচনকালীন সময়ে ভোটের দ্বারাই দেশের নিয়ন্ত্রকদের জুলুম ও ইসলাম বিদ্বেষী মানসিকতা রুখে দেয়া অনেকাংশে সম্ভব হয়ে থাকে। তাই এ পদ্ধতিকে ব্যাবহার না করে বসে থাকা জায়েজ হবে না। ভোট দিয়ে সাধ্যানুযায়ী বাতিল শক্তির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করতে হবে।
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻜْﺘُﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺸَّﻬَﺎﺩَﺓَۚ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻜْﺘُﻤْﻬَﺎ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺁﺛِﻢٌ ﻗَﻠْﺒُﻪُۗ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻤَﺎ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ﻋَﻠِﻴﻢٌ
.
তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে কেউ তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে। তোমরা যা কর, আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে জ্ঞাত।
(সূরা বাকারা-২৮৩)
.
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ‏«ﻣَﻦْ ﻛَﺘَﻢَ ﺷَﻬَﺎﺩَﺓً ﺇِﺫَﺍ ﺩُﻋِﻲَ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﻓَﻬُﻮَ ﻛَﻤَﻦْ ﺷَﻬِﺪَ ﺑِﺎﻟﺰُّﻭﺭِ »
.
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তিকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ডাকা হয়, কিন্তু সে তা দেয় না, তাহলে সে যেন অন্যায়ের পক্ষে সাক্ষ্য দিল।
{মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১৯৪২, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৪১৬৭}
.
ﻋَﻦْ ﺯَﻳْﺪِ ﺑْﻦِ ﺧَﺎﻟِﺪٍ ﺍﻟْﺠُﻬَﻨِﻲِّ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ: ‏«ﺃَﻟَﺎ ﺃُﺧْﺒِﺮُﻛُﻢْ ﺑِﺨَﻴْﺮِ ﺍﻟﺸُّﻬَﺪَﺍﺀِ؟ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺄْﺗِﻲ ﺑِﺸَﻬَﺎﺩَﺗِﻪِ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳُﺴْﺄَﻟَﻬَﺎ »
.
হযরত জায়েদ বিন খালেদ জুহানী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আমি কি তোমাদের বলবো না যে, উত্তম সাক্ষ্য কে? ঐ ব্যক্তি যে, চাওয়া ছাড়াই সাক্ষ্য দিয়ে দেয়।
{সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭১৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২১৬৮৩, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৯৬}
.
ভোট একটি আমানত:
-------------------
ভোট একটি আমানত। এটাকে যথেচ্ছা প্রয়োগকারী আমানতের খেয়ানতকারী সাব্যস্ত হবে। তার জন্য রয়েছে আখেরাতে ভয়াল শাস্তি। কাউকে ভোট দেয়া কোন আবেগ বা দলীয় বিষয় নয়। বরং এটি একটি ধর্মীয় বিষয়ও। যাকে তাকে ভোট দেয়া ইসলাম সম্মত নয়। ইসলাম বিদ্বেষী, দেশ ও ইসলামের জন্য ক্ষতিকর ব্যক্তিকে ভোট দেয়া মারাত্মক গোনাহের কাজ।
মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
وَتَعَاوَنُوا۟ عَلَى ٱلْبِرِّ وَٱلتَّقْوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُوا۟ عَلَى ٱلْإِثْمِ وَٱلْعُدْوَٰنِۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلْعِقَابِ
.
তোমরা সৎ কাজ করতে ও সংযমী হতে পরস্পরকে সাহায্য কর। তবে পাপ ও শক্রতার ব্যাপারে তোমরা একে অপরকে সাহায্য করনা। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।
(সূরা মায়িদাঃ০২)
তাই বুঝে শুনে, চিন্তা-ভাবনা করে ভোট দিতে হবে। দলীয় আবেগ, ব্যক্তির প্রতাপ, আত্মীয় বা প্রতিবেশি হওয়া ভোট পাওয়ার যোগ্যতার অন্তর্ভূক্ত নয়। ভোট পাওয়ার যোগ্য ঐ ব্যক্তিই হবে যিনি উক্ত পদে যোগ্য। দেশ ও ইসলামের পক্ষের শক্তি। যার দ্বারা দেশের সম্পদ লুণ্ঠিত হবে না। সমাজে বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়বে না। যার দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতি সাধিত হবে না। এমন ব্যক্তিকে ভোট দেয়া শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে আবশ্যক। আর অযোগ্য, ইসলাম বিদ্বেষী, আল্লাহর আইন বিরোধী, নাস্তিকপ্রিয়, দেশদ্রোহী, লুটতরাজকে ভোট দেয়া শরীয়ত গর্হিত কাজ।
.
শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট:
---------------------
ইসলামী শরীয়তে ভোট দেয়ার চারটি অবস্থা রয়েছে। যথা-
১- স্বাক্ষ্য দান।
২- ওকীল নিযুক্তকরণ বা অর্পিত দায়িত্ব পালন।
৩- সুপারিশকরণ।
৪- আমানত
.
সাক্ষ্যদান:
---------
কোন পদের প্রার্থীকে উক্ত পদের জন্য ভোট দেয়ার মানে হল, ভোটার এ স্বাক্ষ্য প্রদান করছে যে, প্রার্থী যে পদের আশা করছে, ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সে পদের উপুযুক্ত উক্ত প্রার্থী। সুতরাং যদি উক্ত প্রার্থী প্রার্থিত পদের যোগ্য না হয়, বরং ক্ষমতায় বসে শরীয়ত বিরোধী কাজ করে, তাহলে ভোটার মারাত্মক গোনাহগার হবে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗُﻠْﺘُﻢْ ﻓَﺎﻋْﺪِﻟُﻮﺍ ﻭَﻟَﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﺫَﺍ ﻗُﺮْﺑَﻰٰۖ.
.
যখন তোমরা কথা বল, তখন সুবিচার কর, যদিও সে আত্মীয় হয়।
(সূর আনআম-১৫২)
.
ﻓَﺎﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﺍﻟﺮِّﺟْﺲَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﻭْﺛَﺎﻥِ ﻭَﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﻗَﻮْﻝَ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ ‏[ ٢٢ :٣٠ ]
.
সুতরাং তোমরা মূর্তিদের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাক।
(সূরা হজ্ব-৩০)
.
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
ﻋَﻦْ ﺧُﺮَﻳْﻢِ ﺑْﻦِ ﻓَﺎﺗِﻚٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﺻَﻠَّﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺻَﻠَﺎﺓَ ﺍﻟﺼُّﺒْﺢِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺍﻧْﺼَﺮَﻑَ ﻗَﺎﻡَ ﻗَﺎﺋِﻤًﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ‏«ﻋُﺪِﻟَﺖْ ﺷَﻬَﺎﺩَﺓُ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ ﺑِﺎﻟْﺈِﺷْﺮَﺍﻙِ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ‏» ﺛَﻠَﺎﺙَ ﻣِﺮَﺍﺭٍ ،
.
হযরত খুরাইম বিন ফাতিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ একদা ফজর নামায শেষে দাঁড়িয়ে তিনবার বললেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া আল্লাহর সাথে শিরক সমতুল্য অপরাধ।
{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৯৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৬০৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৩৭২}
.
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺑَﻜْﺮَﺓَ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﻻَ ﺃُﺧْﺒِﺮُﻛُﻢْ ﺑِﺄَﻛْﺒَﺮِ ﺍﻟﻜَﺒَﺎﺋِﺮِ؟ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﺑَﻠَﻰ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻗَﺎﻝَ : ﺍﻹِﺷْﺮَﺍﻙُ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﻋُﻘُﻮﻕُ ﺍﻟﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻦِ، ﻭَﺷَﻬَﺎﺩَﺓُ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ ﺃَﻭْ ﻗَﻮْﻝُ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ
.
হযরত হযরত আবু বাকরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আমি কি তোমাদের সবচে’ বড় কবীরাগোনাহ সম্পর্কে বলে দিবো না? সাহাবাগণ বললেন, অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন রাসূল সাঃ বললেন, আল্লাহ তাআলার সাথে শিরক করা, পিতা-মাতার নাফরমানী করা। আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। বা মিথ্যা কথা
বলা।
{সুনানে তিরমিজী [বাশশার], হাদীস নং-২৩০১, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৯৭৬, ৫৬৩১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪৩}
.
ওকীল নিযুক্ত করণ বা দায়িত্বপালন:
-------------------------------
ভোটের সময় ভোটারের ভোট পুরো জাতির পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। ভোটার তার ভোট দেয়ার মাধ্যমে জাতির প্রতিনিধি নির্বাচনে পুরো জাতির পক্ষ থেকে যিম্মাদার হিসেবে রায় পেশ করে থাকে। পুরো জাতির যিম্মাদার হিসেবে উক্ত রায় পেশ করার সময় যদি দলীয় সংকীর্ণতা, স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি, আর কারো প্রতাপের সামনে নতি স্বীকার করে তুলনামূলক যোগ্য ও ইসলামপ্রিয় প্রার্থীকে রেখে অযোগ্য বা দেশ ও ইসলামের জন্য ক্ষতিকর প্রার্থীকে ভোট প্রদান করে, তাহলে জাতির পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালনে লোকটি খেয়ানতকারীরূপে সাব্যস্ত হবে। আর যিম্মাদারের দায়িত্বে অবহেলা তথা স্বেচ্ছাচারিতার ব্যাপারে হাদীসে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে।
.
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﻭَﻣَﻦْ ﺗَﻮَﻟَّﻰ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَﺮَﺍﺀِ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻓَﺎﺳْﺘَﻌْﻤَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﺃَﻥَّ ﻓِﻴﻬِﻢْ ﻣَﻦْ ﻫُﻮَ ﺃَﻭْﻟَﻰ ﺑِﺬَﻟِﻚَ ﻭَﺃَﻋْﻠَﻢُ ﻣِﻨْﻪُ ﺑِﻜِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺳُﻨَّﺔِ ﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ، ﻓَﻘَﺪْ ﺧَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻭَﺟَﻤِﻴﻊَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ، ﻭَﻣَﻦْ ﺗَﺮَﻙَ ﺣَﻮَﺍﺋِﺞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻟَﻢْ ﻳَﻨْﻈُﺮِ ﺍﻟﻠﻪُ ﻓِﻲ ﺣَﺎﺟَﺘِﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻘْﻀِﻲَ ﺣَﻮَﺍﺋِﺠَﻬُﻢْ ﻭَﻳُﺆَﺩِّﻱ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ ﺑِﺤَﻘِّﻬِﻢْ ،
.
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মুসলমানদের পক্ষ থেকে কোন বিষয়ে যিম্মাদার নিযুক্ত হয়, তারপর সে তাদের উপর কোন ব্যক্তিকে (কোন কাজের) কর্মকর্তা নিযুক্ত করে, অথচ সেজানে যে, মানুষদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও আছে, যে তার চেয়েও অধিক যোগ্য এবং কুরআনও হাদীসের অধিক জ্ঞান রাখে, তবে সে অবশ্যই আল্লাহ ও তার রাসূল এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে খেয়ানত করল। আর যে ব্যক্তি মানুষের প্রয়োজনকে পূর্ণ করল না, আল্লাহ তাআলা উক্ত ব্যক্তির প্রয়োজনও পূর্ণ করবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না উক্ত ব্যক্তি মানুষের প্রয়োজন পূর্ণ করে এবং তাদের হক আদায় করে দেয়।
{আলমুজামুল কাবীর লিততাবারানী-১১২১৬}
.
সুপারিশকরণ:
------------
ভোটার তার স্বীয় ভোট কোন প্রার্থীকে দেয়ার মানে হল, ভোটার উক্ত ব্যক্তির প্রার্থিত পদের ব্যাপারে যোগ্য বলে সুপারিশ করছে। তার সাফাই গাইছে। সুতরাং প্রার্থী যদি অযোগ্য হয়, আল্লাহর আইন অমান্য করে মানব রচিত আইন অনুযায়ী সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করে তাহলে অন্যায় কাজে সুপারিশ করার কারণে সুপারিশকারী তথা ভোটার গোনাহগার হবে। এমনকি উক্ত ভোটের কারণে নির্বাচিত হয়ে প্রার্থী যত শরীয়ত বিরোধী কাজ করবে, খারাপ কাজ করবে এর গোনাহের ভাগিদারও ভোটার ব্যক্তি হবে। তাই ভেবে-চিন্তে ভোট দিতে হবে।
এ বিষয়ে আল্লাহ তা'য়ালা নিজেই বলেনঃ
.
ﻣَّﻦ ﻳَﺸْﻔَﻊْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺔً ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻳَﻜُﻦ ﻟَّﻪُ ﻧَﺼِﻴﺐٌ ﻣِّﻨْﻬَﺎۖ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺸْﻔَﻊْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺔً ﺳَﻴِّﺌَﺔً ﻳَﻜُﻦ ﻟَّﻪُ ﻛِﻔْﻞٌ ﻣِّﻨْﻬَﺎۗ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻰٰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻣُّﻘِﻴﺘًﺎ ‏[ ٤ : ٨٥ ]
.
যে লোক সৎকাজের জন্য কোন সুপারিশ করবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক সুপারিশ করবে মন্দ কাজের জন্যে সে তার বোঝারও একটি অংশ পাবে। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।
(সূরা নিসা-৮৫)
.
আমানত:
--------
ভোটারের ভোটটি একটি আমানত। পুরো জাতির পক্ষ থেকে তা সঠিক ও যোগ্য স্থানে প্রয়োগের জন্য তা সংরক্ষিত আমানত। তা অযোগ্য, আল্লাহদ্রোহী ও ইসলাম বিরোধী ব্যক্তিকে দেয়া মানে হল আমানতের খিয়ানত করা। খুবই মারাত্মক গোনাহের কাজ। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﺄْﻣُﺮُﻛُﻢْ ﺃَﻥْ ﺗُﺆَﺩُّﻭﺍ ﺍﻟْﺄَﻣَﺎﻧَﺎﺕِ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻫْﻠِﻬَﺎ
.
নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আদেশ দিয়েছেন আমানতকে তার সঠিক হকদারের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য।
(সূরা নিসা-৮৫)
.
হাদীসে এসেছে
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ‏«ﺍﻟْﻤُﺴْﺘَﺸَﺎﺭُ ﻣُﺆْﺗَﻤَﻦ«ٌ
.
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হবে উক্ত ব্যক্তির বিশ্বস্ততা রক্ষা করতে হবে।
{সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৭৪৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫১২৮}
.
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺫَﺭٍّ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﺖُ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺃَﻟَﺎ ﺗَﺴْﺘَﻌْﻤِﻠُﻨِﻲ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻀَﺮَﺏَ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻨْﻜِﺒِﻲ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻳَﺎ ﺃَﺑَﺎ ﺫَﺭٍّ، ﺇِﻧَّﻚَ ﺿَﻌِﻴﻒٌ، ﻭَﺇِﻧَّﻬَﺎ ﺃَﻣَﺎﻧَﺔُ، ﻭَﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺧِﺰْﻱٌ ﻭَﻧَﺪَﺍﻣَﺔٌ، ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﻦْ ﺃَﺧَﺬَﻫَﺎ ﺑِﺤَﻘِّﻬَﺎ، ﻭَﺃَﺩَّﻯ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓِﻴﻬَﺎ »
.
হযরত আবু জর গিফারী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল সাঃ এর কাছে আরজ করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে কোন স্থানে হাকীম বা ওলী কেন বানিয়ে দেন না? রাসূল সাঃ (মোহাব্বতের সাথে) তার স্বীয় হাত আমার কাঁধের উপর রাখলেন। আর বললেন, আবু জর! তুমি নরম মনের মানুষ। আর এটি হল একটি বড় আমানত। (যা আদায় করা খুবই জরুরী।) নতুবা কিয়ামতের দিন তা লজ্জায় ফেলে দিবে। তবে যে ব্যক্তি এটি পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করতে পারে এবং তা আদায় করতে পারে তার বিষয়টি ভিন্ন।
{সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৫২৫}
.
কাকে ভোট দিবেন?:
-----------------
যে ব্যক্তি যে পদের অধিক যোগ্য, ইসলাম ও মুসলমানদের বন্ধু এবং তাগুতী শাসন -ব্যবস্থা উৎখাত করে আল্লাহ প্রদত্ত শাসন -ব্যবস্থা কায়েম করতে চায় এমন ব্যক্তিদের ভোট দিয়ে খিলাফাত কায়েমের জন্য এগিয়ে আসা জরুরি। যদি এমন যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি নাও পাওয়া যায় তবুও তুলনামূলক এ গুণ যার মধ্যে কম তার থেকে ভোট পাওয়ার অধিক যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এটাই মূলনীতি বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোট দেয়ার। যিনি দেশ ও জাতির এবং ইসলামের জন্য অধিক উপকারী ব্যক্তি বলে সাব্যস্ত হবেন, তাকে ভোট দেয়ার দ্বারা স্বীয় দায়িত্ব আদায় হবে ইনশাআল্লাহ। বাকি সর্বদা চেষ্টা করতে হবে যেন পরিপূর্ণ ইসলামী খিলাফত কায়েম করা যায়।
.
কুরআনে ইরশাদ হচ্ছেঃ
.
ﻭَﻗَﺪْ ﻓَﺼَّﻞَ ﻟَﻜُﻢ ﻣَّﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﺍﺿْﻄُﺮِﺭْﺗُﻢْ ﺇِﻟَﻴْﻪِۗ ‏[ ٦ :١١٩
.
যেগুলোকে তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন;কিন্তু সেগুলোও তোমাদের জন্যে হালাল,যখন তোমরা নিরূপায় হয়ে যাও। (সূরা আনআমঃ ১১৯)
.
মৃত জীব, রক্ত, শুকরের গোস্ত এবং গাইরুল্লাহ নামে জবাইকৃত পশু হারাম হওয়া সত্বেও তীব্র প্রয়োজনের সময় তা ভক্ষণ করার অনুমতি প্রদান করে ইরশাদ হচ্ছেঃ
.
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻴْﺘَﺔَ ﻭَﺍﻟﺪَّﻡَ ﻭَﻟَﺤْﻢَ ﺍﻟْﺨِﻨﺰِﻳﺮِ ﻭَﻣَﺎ ﺃُﻫِﻞَّ ﺑِﻪِ ﻟِﻐَﻴْﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِۖ ﻓَﻤَﻦِ ﺍﺿْﻄُﺮَّ ﻏَﻴْﺮَ ﺑَﺎﻍٍ ﻭَﻟَﺎ ﻋَﺎﺩٍ ﻓَﻠَﺎ ﺇِﺛْﻢَ ﻋَﻠَﻴْﻪِۚ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻏَﻔُﻮﺭٌ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ ‏[ ٢ : ١٧٣ ]
.
তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন,মৃত জীব,রক্ত,শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়,তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।
(সূরা বাকারা-১৭৩)
.
আরেক আয়াতে কারীমায় এসেছেঃ
.
ﻗُﻞ ﻟَّﺎ ﺃَﺟِﺪُ ﻓِﻲ ﻣَﺎ ﺃُﻭﺣِﻲَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣُﺤَﺮَّﻣًﺎ ﻋَﻠَﻰٰ ﻃَﺎﻋِﻢٍ ﻳَﻄْﻌَﻤُﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻣَﻴْﺘَﺔً ﺃَﻭْ ﺩَﻣًﺎ ﻣَّﺴْﻔُﻮﺣًﺎ ﺃَﻭْ ﻟَﺤْﻢَ ﺧِﻨﺰِﻳﺮٍ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺭِﺟْﺲٌ ﺃَﻭْ ﻓِﺴْﻘًﺎ ﺃُﻫِﻞَّ ﻟِﻐَﻴْﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑِﻪِۚ ﻓَﻤَﻦِ ﺍﺿْﻄُﺮَّ ﻏَﻴْﺮَ ﺑَﺎﻍٍ ﻭَﻟَﺎ ﻋَﺎﺩٍ ﻓَﺈِﻥَّ ﺭَﺑَّﻚَ ﻏَﻔُﻮﺭٌ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ ‏[ ٦ :١٤٥ ]
.
(হে নবী!) আপনি বলে দিনঃ যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ
করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ; যবেহ করা জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়। অতপর যে ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে (তা ভক্ষণ করে) এমতাবস্থায় যে অবাধ্যতা করে না এবং সীমালঙ্গন করে না, নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা ক্ষমাশীল দয়ালু।
(সূরা আনআম-১৪৫)
.
উপরোক্ত আয়াতে কারীমা পরিস্কার হারাম বস্তুও তীব্র প্রয়োজন দেখা দিলে সাময়িক হালাল হবার কথা দ্ব্যার্থহীন ভাষায় প্রকাশ করছে। যা আমাদের একটি মূলনীতি শিক্ষা দিচ্ছে যে, তীব্র প্রয়োজন দেখা দিলে হারাম বস্তুও সাময়িকভাবে জায়েজ হয়ে যায়।
.
ইসলামী ফিক্বহের কয়েকটি মূলনীতি এ বিষয়ে জেনে নেয়া ভাল। যেমন-
.
ﺍﻟﻀﺮﻭﺭﺍﺕ ﺗﺒﻴﺢ ﺍﻟﻤﻈﻮﺭﺍﺕ
তীব্র প্রয়োজন নিষিদ্ধ বিষয়কে বৈধ করে দেয়।
{শরহুল কাওয়ায়িদিল ফিক্বহ লিজ জারক্বা, কায়দা নং-২০}
.
ﺍﻟﻀﺮﺭ ﻳﺪﻓﻊ ﺑﻘﺪ ﺍﻹﻣﻜﺎﻥ
যথা সম্ভব ক্ষতিকর বস্তুকে বিদূরিত করা হবে।
{শরহুল কাওয়ায়িদিল ফিক্বহ লিজ জারক্বা, কায়দা নং-৩০}
.
ﺍﻟﻀﺮﺭ ﺍﻷﺷﺪ ﻳﺰﺍﻝ ﺑﺎﻟﻀﺮﺭ ﺍﻷﺧﻒ
তুলনামূলক অধিক ক্ষতিকর বস্তুকে কম ক্ষতিকর বস্তু দিয়ে হলেও বিদূরিত করা হবে।
{শরহুল কাওয়ায়িদিল ফিক্বহ লিজ জারক্বা, কায়দা নং-২৬}
.
ﻳﺘﺤﻤﻞ ﺍﻟﻀﺮﺭ ﺍﻟﺨﺎﺹ ﻟﺪﻓﻊ ﺿﺮﺭ ﻋﺎﻡ
ব্যাপক ক্ষতি দূর করতে ব্যক্তিগত ক্ষতিকে মেনে নেয়া হবে।
{শরহুল কাওয়ায়িদিল ফিক্বহ লিজ জারক্বা, কায়দা নং-২৫}
.
ﺩﺭﺀ ﺍﻟﻤﻔﺎﺳﺪ ﺍﻭﻟﻰ ﻣﻦ ﺟﻠﺐ ﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻊ
উপকার অর্জনের চেয়ে ক্ষতিরোধ করা উত্তম। {শরহুল কাওয়ায়িদিল ফিক্বহ লিজ
জারক্বা, কায়দা নং-২৯}
.
ﺍﺫﺍ ﺗﻌﺎﺭﺽ ﻣﻔﺴﺪﺗﺎﻥ ﺭﻭﻋﻰ ﺃﻋﻈﻤﻬﻤﺎ ﺿﺮﺭﺍ ﺑﺈﺭﺗﻜﺎﺏ ﺃﺧﻔﻬﻤﺎ
যখন দুটি ক্ষতিকর বস্তু পরস্পর মুখোমুখি হবে, তখন ছোটটি মেনে বড়টিকে দূর করা হবে।
{শরহুল কাওয়ায়িদিল ফিক্বহ লিজ জারক্বা, কায়দা নং-২৭}
.
ভোটের প্রচারণা করা:
-------------------
যে ব্যক্তিকে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে ভোট দেয়া জায়েজ বা উত্তম উক্ত ব্যক্তির পক্ষে ভোটের প্রচারণা করাও জায়েজ। আর যাকে ভোট দেয়া জায়েজ নয় তার পক্ষে ভোটের প্রচারণা করাও জায়েজ নয়। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
ﻭَﺗَﻌَﺎﻭَﻧُﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺒِﺮِّ ﻭَﺍﻟﺘَّﻘْﻮَﻯٰۖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻌَﺎﻭَﻧُﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺈِﺛْﻢِ ﻭَﺍﻟْﻌُﺪْﻭَﺍﻥِۚ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَۖ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺷَﺪِﻳﺪُ ﺍﻟْﻌِﻘَﺎﺏِ
.
সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা।
(সূরা মায়িদা-২)
তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য করতে হবে
যেন, এতে করে কারো কোন কষ্ট না হয়।

গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ কি মোটেও জায়েজ নয়?ঃ কিছু ভাই বলেন যে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ মোটেও জায়েজ নয়,তারা একটা উদাহরণ দেই যে, মদ আপনি যে নিয়তেই খাননা কেন তা হারাম,তাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ হারাম,এই যুক্তিটি ঠিক নয় কারন মদ খাওয়ার কাজটাই হারাম কাজ কিন্তু পার্লামেন্টে যাওয়া হারাম নয়, ঐখানে আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে আইন করাই হারাম,তাই এই সিস্টেম পরিবর্তন করে খিলাফাত তথা ইসলামে কায়েমের নিয়ত নিয়ে নির্বাচনে যাওয়া জায়েজ,এটাই বেশির ভাগ উলামার ফাতওয়া।সত্য বলতে কি রসূল(সঃ) এই পদ্ধতি কেই বেচে নিয়েছিলেন,মদীনার লোকেরা ইসলাম কবুলের আগে ঠিক করেছিল তারা আব্দুল্লাই ইবনে উবাই(মুনাফিক সর্দার) কে তাদের নেতা বানাবে কিন্তু তারা ইসলাম গ্রহণের পর মুহাম্মাদ(সঃ) কে নেতা নির্বাচিত করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে,যদি এর পরেও কেউ বলে যে নির্বাচনে যাওয়া হারাম তাহলে তার যুক্তিতেই তাকে মানতে হবে যে, কুফরি,শিরকি মতবাদে পরিচালিত ভার্সিটিতে পড়া হারাম হবে,কুফরি আইনে পরিচালিত আদালতে জামিন চাওয়া হারাম হবে,হজে যাওয়ার জন্য ছবি তোলাও হারাম হবে।তাই ইসলাম বিরোধীদের খোলা মাঠে গোল দিতে দেওয়া মোটেই উচিত হবেনা এতে তারা আরো ইসলাম বিরোধী আইন করতে থাকবে।
"গণতন্ত্র কুফরী, গণতন্ত্র হারাম কিন্তু গণতন্ত্রের চর্বিতে খুব আরাম"
আমরা গণতন্ত্র মানিনা কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশের সব আইন কানুন মেনে দেশে বসবাস করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি গণতান্ত্রিকভাবেই নির্বাচিত হন। আমরা হারামের মধ্যে ছব্বিশ ঘন্টা ডুবে থাকি তবু হারাম আমাদের ছিটেফোঁটাও স্পর্শ করেনা। এটা কি করে সম্ভব? এটা সম্ভব কেবল "গণতন্ত্র কুফরী, গণতন্ত্র হারাম" এই জাতের স্লোগানদারীদের ক্ষেত্রে।
এরা গণতন্ত্রের বিপক্ষে কথা বলতে বলতে জিহ্বা ক্ষয় করে ফেললেও দেখবেন না কেউ গণতান্ত্রিক সরকারের ছায়া মাড়িয়ে দেশান্তরী হয়েছে। বরং এরা যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেত গিয়ে নিগৃহীত হয় তখন এরা বলে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এরা জেলে গিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে জামিন চায় বা খালাস চায় এবং গণতান্ত্রিক সরকারের নাগরিক সুবিধাাগুলোও চায়। মোদ্দা কথা এরা শুয়োরের মাংস খায় না কিন্তু শুয়োরের চর্বি খায়।
এরা খেলাফতের একটা রূপরেখাও দিতে পারেনা কিন্তু খেলাফতের কথা বলে গলা ফাটিয়ে ফেলে। এরা এক বিশ্বে এক নেতার আদর্শে বিশ্বাসী। কিন্তু এরা রাসূলুল্লাহর (সাঃ) জীবনী থেকে কর্মপদ্ধতি গ্রহন করে না।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মক্কার জীবনে ইসলামের প্রাথমিক কাজগুলো করেছেন কিন্তু তিনি কি মক্কাতে সরকার কায়েম করেছেন? তিনি কি মক্কাতে জিহাদের ডাক দিতে পারতেন না? বরং মক্কার জুলুম নির্যাতন সইতে না পেরে আল্লাহর নির্দেশে মদীনায় হিজরত করেছেন। সেখানেই প্রথম খেলাফত কায়েম করেছিলেন রাসূল (সাঃ)। কিন্তু আমাদের খিলাফতের দাবীদারেরা দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে হিজরত করেছে এমন নজীর একটাও কেউ দেখাতে পারবেন?
এরা হিজরত করতে গেলেও আবার গণতান্ত্রিক সরকারের অনুমতি নিয়ে পাসপোর্ট ভিসা গ্রহন করতে হবে। পারবে এরা এ পথ অবলম্বন করা ছাড়া?
পৃথিবীর কোথাও এরা প্রকৃত শরীয়ত কায়েম করেছে এমন একটা নাজির কেউ দেখাতে পারবেন? আর এদের কথিত শরীয়ত কায়েমের এলাকায় সংঘাত ছাড়া আর কোন কিছু আছে? অথচ আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মদীনায় ইসলাম কায়েমের পর সেখানকার মানুষ মুক্তি পেয়েছিলো। আর এরা ইসলাম কায়েমের এলাকায় নরকে পরিণত করেছে। যেমনটা দেখছি আমরা আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে।
ইসলামের সাথে ইসলামের আদর্শের সাথে ইসলামের শিক্ষার সাথে যাদের দূরতম সম্পর্ক নেই তাদের ইসলামের নামে ধ্বংশাত্মক কর্মকান্ড সম্পর্কে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের এই গজব থেকে রক্ষা করুন (আমীন)
মতামতের ভিত্তিতে শাসন বা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনঃ
ইসলামে মতামতের ভিত্তিতে শাসনের কথা বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করা আছে। এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ষোল কোটি মানুষের মতামত যাছাই করা হবে? আর মতামতের ভিত্তিতে বা পরামর্শ ছাড়া শাসনভার গ্রহন বা পরিচালনা যেহেতু শরীয়ত সম্মত নয় সেহেতু অবশ্যই পরামর্শভিত্তিক সরকার ব্যবস্থা গঠন করতে হবে। নির্বাচন পরামর্শভিত্তিক নেতৃত্ব নির্বাচনের একটা মাধ্যম মাত্র। যারা নির্বাচন হারাম হারাম বলে গলা ফাটাচ্ছে তারা মূলত রাসূলের সুন্নাতকেই অবজ্ঞা করছে। নিচে কুরআন হাদীসের কিছু রেপারেন্স দিলাম আশাকরি উগ্র চরমপন্থা পরিহার করে ইসলামী সমাজ বিনির্মানে আপনি সহায়ক ভুমিকা পালন করবেন।
"নিজেদের যাবতীয় সামগ্রিক ব্যাপার নিজেদের পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন করে।" (আশ শূরা: ৩৮)
"বিভিন্ন কার্যক্রমে তাদের পরামর্শ নাও, তাদের সাথে মতমত বিনিময় কর।" (আলে ইমরান: ১৫৯)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "যখন তোমাদের নেতারা হবেন ভাল মানুষ, ধনীরা হবেন দানশীল এবং তোমাদের কার্যক্রম চলবে পরামর্শের ভিত্তিতে তখন মাটির নিচের ভাগ উপরের ভাগ থেকে উত্তম হবে। আর যখন তোমাদের নেতারা হবে খারাপ লোক, ধনীরা হবে কৃপণ এবং নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব যাবে নারীদের হতে তখন পৃথিবীর উপরের অংশের চেয়ে নীচের অংশ হবে উত্তম" (তিরমিযী)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি মুসলমানদের পরামর্শ ছাড়াই আমীর হিসেবে বাইয়াত গ্রহণ করবে, তাদের বাইয়াতও বৈধ হবে না" (মুসনাদে আহমাদ)।
"যে ব্যক্তি পরামর্শ নিয়ে কাজ করে তাকে কখনও লজ্জিত হতে হয় না। আর যে বা যারা ভেবে চিন্তে ইস্তেখারা করে কাজ করে তাকে ঠকতে হয় না।" (মু'জামুস সগীর)
"যে পরামর্শ করে কাজ করে সে নিরাপদ থাকে।"(আবু দাউদ)
"আল্লাহ যখন কোন আমীরের ভাল চান তাহলে তাঁর সত্যবাদী উজির নির্বাচিত করেন, আমীর কিছু ভুলে গেলে তিনি তাকে তা স্মরণ করিয়ে দেন, শামীল কোন কাজ করতে চাইলে সে কাজে কাজে তাকে সহযোগীতা করেন। আল্লাহ যদি আমীরের অমঙ্গল ‘চান তাহলে তার জন্যে মিথ্যাবাদী উজির নিয়োগ করেন, তিনি কোন কাজ ভালভাবে তাকে স্মরণ করিয়ে দেন না, আমীর কোন কাজ করতে ইচ্ছে করলে তিনি তার সহযোগী হয় না।" (আবু দাউদ)
প্রসঙ্গ : গণতন্ত্র ও ইসলাম।
প্রশ্ন : আপনারা কুফরী মতবাদ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোন বক্তব্য দেন না কেন?
জবাব: গণতন্ত্র কুফরীর মতবাদ এমন ঢালাওভাবে বলা ঠিক নয়। গণতন্ত্র মানে সহজভাবে এইটুকু যেঃ
(১) যেই সরকার গঠিত হবে তা জনগণের নির্বাচিত সরকার হবে। কেউ গায়ের জোরে এসে গদিতে বসতে পারবে না। দেশের জনগণের রায় নিয়েই ক্ষমতায় বসতে হবে।
(২) সরকার পরিবর্তনও হবে জনগণের রায় অনুযায়ী।
(৩) একবার কাউকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসানোর পরে তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে আর তার প্রতিবাদ করা যাবে না, বাধা দেয়া যাবে না তা নয়। বাধা দেয়া যাবে, প্রতিবাদ করা যাবে, তাদের দোষ-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়া যাবে।
এসব হচ্ছে গণতন্ত্রের পরিচয়। এর সঙ্গে ইসলামের কোন বিরোধ নেই। ইসলামের সাথে প্রচলিত গণতন্ত্রের বিরোধ যেই পয়েন্টে তা হচ্ছে, “সার্বভৌমত্ব কার হাতে?” আমরা বলি “আল্লাহর হাতে”, আর তারা বলে “জনগণের হাতে”। ‘জনগণের হাতে সার্বভৌমত্ব’ এই পয়েন্টেই তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ, গণতন্ত্রের বাকি তিনটা পয়েন্টের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই।
মুহাম্মদ সা. যখন দুনিয়া থেকে বিদায় হলেন, তিনি কি তখন পরবর্তী ক্ষমতায় কে আসবেন নমিনেশন দিয়ে গেছেন কাউকে? বা উত্তরাধিকার সূত্রে কেউ কি হয়েছে? কিভাবে হয়েছে? জনগণ যাকে চেয়েছে, তিনিই খলিফা হয়েছেন। জনগণের সেই ভোট কিভাবে নেয়া হবে সেই সিস্টেম এর পার্থক্য থাকতে পারে। এখন যেমন ব্যালট পেপার হয়, একটা বয়স ঠিক করা হয়, ভোটার লিস্ট করা হয় ইত্যাদি। এই সিস্টেম তখনো গড়ে উঠেনি। কিন্তু হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা.কে জনগণই ক্ষমতায় বসিয়েছে। খলিফাগণ কেউই নিজের গায়ের জোরে, নিজে চেষ্টা করে গদিতে বসে যাননি, জনগণই ক্ষমতায় বসিয়েছে। জনগণের রায় নেওয়ার পদ্ধতি ইনডাইরেক্ট ডেমোক্রেসিও আছে, ইনডাইরেক্ট ভোটিংও আছে। সুতরাং ‘গণতন্ত্র কুফরী’ - এত বড় ফতোয়া দেয়া উচিত নয়।
আমি জিজ্ঞাসা করি যে, সরকার গঠন করা, সরকার পরিবর্তন করা, সরকারের সমালোচনা করা এইগুলি ইসলাম অনুযায়ী জায়েজ না নাজায়েজ? সবই জায়েজ। তাহলে কুফরী হলো কিভাবে? শুধু এইটুকু কুফরী যে, ‘সার্বভৌমত্ব আল্লাহর হাতে নয়, জনগণের হাতে’। সার্বভৌমত্ব অর্থ কি? সার্বভৌমত্ব মানে হচ্ছে আইন দেওয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা যার। তাই, সকলে মিলেও পার্লামেন্টে যদি বলে যে, মদ হালাল তবুও এটা হারামই থাকবে। আল্লাহর এ আইন বদলানো যাবে না। এটাই হচ্ছে ‘আল্লাহর সার্বভৌমত্ব’। আল্লাহর আইনের অধীনে যত খুশি আইন বানানো যাাবে, আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে কোন আইন বানানো যাবে না, কারণ, “আল্লাহ সার্বভৌম”। আর পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের কথা হলো, পাবলিক প্রতিনিধিরা ধর্মের ব্যাপার সহ সব ব্যাপারেই যে রায় দিবে সবাইকে সেটাই গ্রহণ করতে হবে। যেমন, ১৯২০ সালে আমেরিকা তাদের শাসনতন্ত্র সংশোধন করে সংশোধনীর দ্বারা মদকে নাজায়েজ করেছে। মদ অবৈধ, ইল্লিগ্যাল; এর দ্বারা মানুষের ক্ষতি হচ্ছে, তাই তারা এ আইন করে শাসনতন্ত্র সংশোধন করলো। ১৩ বছর পরে, ১৯৩৭ এ আবার তারা বললো, না, ‘মদ জায়েজ, মদ বৈধ’। তারা আগের সংশোধন বাতিল করে নতুন সংশোধন করলো। অর্থাৎ তারা যেটাকে খুশি বৈধ করবে, যেটাকে খুশি অবৈধ করবে। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে যদি মদ অবৈধ হয়ে থাকে তাহলে যখন বৈধ বলা হয়েছে তখনও অবৈধই ছিল। আর যখন অবৈধ বলা হয়েছে তখনও অবৈধই। ইসলামে এ রকম ভাবে আল্লাহর আইন বদলাবার কোন এখতিয়ার কারও নাই। এদিক দিয়েই পার্থক্য। গণতন্ত্র ইসলামের সঙ্গে ওই একটি পয়েন্ট ছাড়া বিরোধী নয়।
কিছু লোক প্রচার করছে যে, বিপ্লব করতে হবে। কিন্তু বিপ্লব কি? কেমন করে বিপ্লব করবে? শক্তি প্রয়োগ করা, জোর করে ক্ষমতা দখল করা, এটা কোন নবী করেছেন? তাহলে? নবীগণ জনগণের কাছে দাওয়াত দিয়েছেন। জনগণের সম্মতি যেখানে না হয়েছে, জনগণ যেখানে সাড়া দেয়নি, সেখানে ইসলাম বিজয়ী হয়নি, ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম হয়নি। মক্কায় ১৩ বছর পর্যন্ত দাওয়াতি কাজ করার পরও জনগণ সাড়া দেয়নি বলে প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলামি রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হয়নি। মদিনার জনগণ সাড়া দেওয়ায় সেখানে ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
তবে, “গণতন্ত্র” শব্দটির চেয়ে ভাল অর্থবোধক কোন শব্দ/ পরিভাষা ব্যবহার করা গেলে হয়তো ভাল হতো। যদি ‘ডেমোক্রেসি’র বদলে আর কোন পরিভাষা আমরা বানাতে পারতাম, তাহলে সুবিধা হতো। সে হিসেবে একটা পরিভাষা হতে পারে “খেলাফত”। এটা আমরা চিন্তা করে দেখতে পারি, পরামর্শ করে দেখতে পারি। ডেমোক্রেসির জায়গায় আমরা বলবো ‘খেলাফত’। কোন এক ব্যক্তির রাজতন্ত্র নয়, কোন অধিকারকৃত নয় Ñ ‘খেলাফত’ আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব। আল্লাহর আইন চালু করবে জনগণের প্রতিনিধিরা - তারা আল্লাহরও খলিফা, জনগণেরও খলিফা। এ খেলাফত শব্দ দিয়ে ডেমোক্রেসির বিকল্প শব্দ বানানো যায়। মুসলিম জনগণ যদি গ্রহণ করে তাহলে এটা হতে পাবে। যেমন রেড ক্রস এর জায়গায় রেড ক্রিসেন্ট মুসলমানরা গ্রহণ করেছে, এটা চালু হয়ে গেছে। সকল মুসলমান যখন রেড ক্রস এর জায়গায় রেড ক্রিসেন্ট ব্যবহার করতে রাজি হলো, এটা সম্ভব হলো। আমরা যদি সর্বসম্মতভাবে ‘ডেমোক্রেসি’র জায়গায় ‘খেলাফত’ শব্দটি ব্যবহার করি, এটাও হতে পারে। এটা আমি আপনাদের চিন্তার জন্য পরামর্শ দিলাম।
প্রশ্নোত্তর থেকে।
-মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম (রহ
>……ধর্মীয় রাজনীতি বিষয়ে কতিপয়
ইসলামীক আলোচকদের উদ্বৃতি--
>"ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাজনীতি ধর্মের অন্যতম বিধান-মাওলানা আজিজুল হক"
>"যারা মনে করেন রাষ্ট্র ছাড়া শরীয়তের পূর্ণাঙ্গতা হয়,তাদের এ ধারনা ভুল- মাওলানা আবুবকর আব্দুল হাই পীর সাহেব,ফুরফুরা"
>ইসলামের জীবন বিধান থেকে রাজনীতিকে আলাদা করার উপায় নেই-মতিউর রহমান নিজামী"
>"ইসলামে ধর্ম ও রাষ্ট্র ,দেহ ও প্রাণের মতই অবিচ্ছেদ্য-আল্লামা ইকবাল"
>"ইসলামী রাজনীতির বিরোধীতা,অগ্গতাই বড় সমস্যা-আবুল আসাদ"
>"কিছু রাম ও বামশক্তি মিলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের নামে ইসলাম ও দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র লিপ্ত- মাওলানা কুতুব উদ্দিন,পীর সাহেব,বায়তুশ শরফ"
>"যারা ইসলাম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করতে চায়,দেশকে তারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শাসন শোষনের ক্ষেত্রে পরিণত করতে সচেষ্ট-মাওলানা মুহিউদ্দীন খান"
>"স্বঙ্গানে ইসলাম থেকে রাজনীতি আলাদা করার চেষ্টাকারীদের ঈমান নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়-মুফতি ফজলুল হক আমিনী"
>ধর্মের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিয়ে ধর্মহীন করাই তাদের উদ্দেশ্য-মাওলানা ইসহাক"
>"ইসলাম থেকে রাজনীতিকে সঙ্গানভাবে আলাদাকারীরা মুসলমান দাবি করার অধিকার রাখে না-
মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফ"
>"ধর্মকে বাদ দিয়ে জীবনের কোন নীতিই চলেনা,সুতরাং রাজনীতিও চলে না-
ডঃ কাজী দীন মুহম্মদ"
>"ইসলাম বিদ্ধেষী চিহ্নিত চক্রটি উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চায়-
মাওলানা রেজাউল করীম,পীর সাহেব,চরমোনাই"
সুতরাং বলা যায় -শেকড়ছাড়া যেমন গাছের অস্থিত্ব কল্পনা করা যায় না,তেমনি ধর্মছাড়া মানুষের রাজনীতি তথা জীবনব্যবস্থা হতে পারে না- যারা শেকড়বিহীন বৃক্ষের কাল্পনিক অস্তিস্ত চিন্তা করে তাদের মস্তিস্কের সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে!!
মানুষের মৌলিক চাহিদা যেগুলো অন্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা তথা(অর্থনৈতিক স্বাবলম্বি) এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা এগুলোই মাকাসিদে শরীয়াহ এবং ইসলামী খেলাফতের মূল উদ্দেশ্য। এখন সে উদ্দেশ্য যদি গণতন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা হয়ে যায় বা রাজতন্ত্রের মাধ্যমে হয়, বা একনায়কতন্ত্রের মাধ্যমে হয় যেভাবেই হোক এগুলো কায়েম হলেই বুঝে নিতে হবে ইসলাম কায়েম হয়েছে।
শরীয়া আইন শব্দটা শোনার সাথে সাথে আপনার আইসিস এর কথা মনে পড়েছে। শরীয়া আইন শোনার পরই মনে হয়েছে "চোরের সাজা হাত কাটা"। "জেনার সাজা পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড।"
যারা আজকের ফেইসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সেীদি আরবের কল্লা কাটার ছবি দেখেছেন, বা সংবাদ পড়েছেন, শরীয়া আইন কথাটা শোনার পর পরই তাদের চোখে সে চিত্রটা ভেসে উঠেছে হয়তোবা, কিংবা কেউ যদি আইসিসের সেই সাংবাদিক হত্যার ভিডিও ক্লিপ দেখে থাকেন, শরীয়া আইন শোনার পর পর হয়তোবা সে চিত্রটা ভেসে এসেছে। তাহলে আপনার এই ধারণা কতটুকু সত্য, কিংবা কোন কোন প্রেক্ষাপটে সত্য, কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কিভাবে প্রযোজ্য, কতটুকু প্রযোজ্য ?
তবে তার আগে, শরীয়া আইন বলতে আমি বুঝি নিরিহ অসহায় মানুষের অন্ন বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত করা। শরীয়া আইন বলতে প্রথমেই আমার মাথায় আসে, রাসুল সাঃ এর সে হাদীস, "কোন ব্যাক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না, যতক্ষণ না, মুমিন হবে, পরষ্পরকে ভালবাসবে।" আমি যদি বলি, শরীয়া আইন শুনলেই আমার মাথায় আসে রাসূল (সাঃ) সে হাদীস "যে ব্যাক্তি নিজে পেট পুরে খায়, অথচ তার প্রতিবেশী উপোষ করে, সে মুমিন হতে পারবে না।"
আমি যখন কোরঅান পড়ি, আল্লাহ পাক বলেছেন, "হে মুমিনগন! যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন বার্তা নিয়ে আসে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে যাতে অজ্ঞতা বশত তোমরা কো সম্প্রদায়কে কষ্ট না পেীঁছাও, যাতে পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হয়ে যাও"
কোরআনে যখন দেখি আল্লাহ স্পষ্ট বলেছেন, কেউ যেন অপরকে বিদ্রুপ না করে, একে অপরকে দোষারোপ না করে, একে অপরকে মন্দ নামে না ডাকে।
কোরআনে আমি যখন পড়ি, হে মুনিমগন তোমরা বেশী বেশী ধারণা এবং অনুমান করা থেকে বিরত থাকো, কারণ কোন কোন ধারণা এবং অনুমান পাপ, তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না, অপরের পশ্চাতে নিন্দা করোনা।
আপনি হয়তো আমার উপর চটে গিয়ে বলে বসতে পারেন, "তাহলে কি আল্লাহ কোরআনে যে, চোরের সাজা হাত কাটা বলেছেন, সেটার কথা কি বলবো।" বা সারা জীবন আমাদের মাওলানা সাহেব হুজুররা যা বলে গেলেন সেগুলো কি শরীয়া আইন নয়? আমি আগেই বলেছি, সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন।
তার আগে আমি আমার ব্যখ্যাটা দিয়ে দেই, শরীয়া আইনের মধ্যে আমি আবার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান শিক্ষা, চিকিৎসা এসব দুনিয়াবী বিষয় জড়ালাম কিভাবে?
ইমাম শাতেবী নামে একজন বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ছিলেন তিনি বড় একটা কিতাব লিখেছেন তাঁর সেই কিতাবের নাম "আল মুয়াফাক্কাত", সে কিতাবের একটা বড় অধ্যায় লিখেছেন যার নাম দিয়েছেন "মাক্কাসিদ আল শরীয়া"। অর্থাৎ শরীয়া আইনের মকসুদ বা উদ্দেশ্য কি? মাক্কাসিদ আশ শারে' বা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেহেতু এই শরীয়া আইন আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন আল্লাহ পাকের উদ্দেশ্যইটাই বা কি? সেই বিখ্যাত বিশাল গ্রন্থে ইমাম শাতেবী অনেক ব্যাপক আলোচনার কিছু বিষয়ের মধ্যে ইমাম শাতেবী একটা উল্ল্যেখযোগ্য আলোচনা করেছেন শরীয়া আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের সমস্যার সমাধান করা, প্রয়োজন পুরণ করা। সেখানে তিনি আলোচনা করেছেন মানুষের প্রয়োজনটাই বা কি। মানুষের প্রয়োজন আলোচনা করতে গিয়ে তিনি তিন ধরনের প্রয়োজনের কথা বলেছেন তাঁর ভাষায় (১) জরুরীয়াত বা অবশ্যম্ভাবী প্রয়োজনীয় (২) হাজ্জীয়াত (প্রয়োজন তবে না হলেও চলে) (৩) তাহসিনিয়াত সেীন্দর্যবর্ধণ বা বিলাসীতা
সে জরুরীয়াত বা অবশ্যম্ভাবী প্রয়োজনগুলোর মধ্যে তিনি ৫টি মেীলিক চাহিদার কথা উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে তা হলো (১)জীবনের নিরাপত্তা (হিফজ আল নাফস), (২) সম্পদের নিরাপত্তা বা (হিফজ আল মাল), (৩) বিশ্বাস বা ঈমানের নিরাপত্তা (হিফজ আদ দ্বীন) (৪) মুক্তবুদ্ধি বা মুক্তচিন্তার নিরাপত্তা (হিফজ আল আক্কল) (৫) পরিবারের নিরাপত্তা (হিফজ আল নসল)
ইমাম শাতেবীর এই ৫টি মেীলিক চাহিদাকে প্রায় সকল ইমামরাই সমর্থন করেছেন।
এই ৫টি চাহিদা পুরণ করা যে শরীয়া আইনের প্রধাণ লক্ষ্য এ ব্যাপারে কোন ইমামই দ্বিমত করেন নি। তবে এই ৫ টি প্রয়োজনের ক্রমধারা নিয়ে ইমামদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। ইমাম বায়জাবী রঃ মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে ১ নং প্রয়োজন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তেমনিভাবে ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ, ইমামর রাজী, ইমাম যারকাশী, ইমাম ক্বারাফী জীবনের নিরাপত্তাকে ১ নং বা প্রথম প্রয়োজন হিসেবে গুরুত্ব দিয়েছেন।
ইমাম গাজালীর দুটি অভিমত পাওয়া যায়, এক অভিমতে তিনি জীবনের নিরাপত্তাকে ১ নং অপর অভিমতে তিনি বিশ্বাসের নিরাপত্তা বা হিফজুদ্দীনকে ১নং হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইমাম সুবকী ও বিশ্বাসের নিরাপত্তাকে ১নং হিসেবে স্থান দিয়েছেন।
উপরোক্ত ৫ টি মেীলিক চাহিদা পুরনের বাইরে ইমাম গাজালী ইসলামী শরীয়ার প্রধান উৎসের মধ্যে আরেকটি প্রধান পরিভাষা ব্যাবহার করেছেন সেটা হলো "মাসলাহা আল মুরসালাহ" বা জনকল্যাণ। ইমাম গাজালীর মতে জনকল্যাণমুলক নয় এমন কিছু ইসলামী শরীয়ার অংশ হতেই পারে না। ইমাম গাজালী রঃ এব্যাপারে আরো বিস্তারিত আলোচনার প্রেক্ষাপটে ইলম বা জ্ঞানার্জনকে দু ভাগে ভাগ করেছেন। (১)কল্যানকর জ্ঞান (২) অকল্যাণকর জ্ঞান
কল্যাণকর জ্ঞান হিসেবে ইমাম গাজালী বলেছেন যে জ্ঞান একজন মানুষকে সৃষ্টিকর্তাকে চেনায়, আত্নার উন্নয়ন করে, বা মানব কল্যানের জন্য ব্যবহৃত হয়, বা কমপক্ষে মানুষের কোণ ক্ষতি করে না সেটাই কল্যাণকর জ্ঞান। আর যে জ্ঞান মানুষকে সৃষ্টিকর্তৃাবিমুখ করে দেয়, বা যে জ্ঞান মানুষের ক্ষতি করার জন্য ব্যবহৃত হয় সে জ্ঞান অল্যাণকর জ্ঞান।
ইমাম গাজালীর ব্যাবহৃত এই মাসলাহা আল মুরসালাহ অনেক ইমাম এবং ফক্কীহগন আলোচনা করেছেন এবং সমর্থন করেছেন।
ইমাম আবু হানীফা একই অর্থে আরেকটি নতুন পরিভাষা ব্যবহার করেছেন সেটা হলো "ইসতিহসান" বা কল্যান কামনা করা। অন্য অর্থে ইমাম আবু হানিফার দৃষ্টিতে ইসলামী শরীয়াতের কোন আইনই প্রণীত হতে পারে না যদি না সে আইনের মধ্যে মানুষের কল্যান কামনা করা না হয়।
ইমাম শাফেয়ী আবার ইমাম আবু হানীফা রঃ এর ব্যাবহৃত এই পরিভাষা "ইসতিহসান" এর বিরোধীতা করেছেন। তিনি আরেকটি নতুন পরিভাষা ব্যবহার করেছেন সেটা হলো "ইসতিসলাহ" বা যার বাংলা অনুবাদ হতে পারে সমস্যা সমাধান করা। ইমাম শাফেয়ী রঃ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ আর রিসালাহ তে ইসতিসলাহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
এই ছিলো আমার প্রাথমিক কথা যে, আমি কেন বললাম যে, শরীয়া আইন পরিভাষা শুনলে আমার মাথায় আসে মানুষের মেীলিক সমস্যার সমাধানের কথা। বলার অপেক্ষা রাখে না, উপরে উল্লেখিত ইমাম শাতেবীর (রঃ) মাক্কাসিদ আশ শারিয়া বা ইমাম গাজালীর রঃ ব্যাবহৃত পরিভাষা মাসলাহা আল মুরসালাহ বা ইমাম আবু হানিফা রঃ ব্যাবহৃত ইসতিহসান বা ইমাম শাফেয়ীর ইসতিসলাহ প্রতিটি পরিভাষাই এক একটি থিসিস আলোচনা দাবী রাখে, এবং এ ব্যপারে তাঁদের প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ব্যবহৃত পরিভাষা বিশাল আকারে কিতাবাদি রয়েছে এবং অন্যন্য ইমাম বা ইসলামিক পন্ডিতদের যারা তাঁদের পরিভাষাকে সমর্থন করেছেন বা অসমর্থন করেছেন তাদের বিস্তারিত আলোচনা সমালোচনা রয়েছে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় ইমাম শাফেয়ী রঃ শুধুমাত্র ইসতিসলাহ নামে নিজের ফরমুলা দিয়েই ক্ষান্ত হন নাই তিনি ইমাম আবু হানিফা রঃ প্রদত্ত ফরমুলা ইসতিহসানের কড়া সমালোচনা করেছেন তাঁর বিখ্যাত আর রিসালাহ গ্রন্থে।
অপরদিকে শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী তিনি যদিও হানাফী মাজহাবের অনুসারী একজন বড় পন্ডিত ছিলেন, তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ গ্রন্থে আরেকটি পরিভাষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন সেটা হলো " 'ইল্লাহ" বা যুক্তি বু্দ্ধি। যেটাকে ইংরেজীতে বলা যায় "রেশনালিটি বা রিজনিং"।
ইসলাম সর্ম্পকে খুব সাধারণ জ্ঞান যারা রাখেন সবাই জানেন, ইসলামী আইন বা শরীয়ার উৎস মুলত ৪টি (১)কোরআন (২) সুন্নাহ বা হাদীস (৩) ইজমা (৪) ক্কিয়াস
উপরে যে পরিভাষাগুলো ব্যাবহার করেছি, অর্থাৎ ইমাম গাজালীর ব্যবহৃত মাসলাহা আল মুরসালাহ, ইমাম আবু হানিফার পরিভাষা ইসতিহসান, ইমাম শাফেয়ীর ইসতিসলাহ এর সবগুলোই ক্কিয়াসের সাথে সম্পৃক্ত। অতি সম্প্রতি ডঃ আহমদ আল রাইসুনি নামক একজন পন্ডিত ২০১৪ সালে প্রকাশিত "আল তাজদীদ আল উসুলী" নামক একটি গ্রন্থে 'মাসলাহা আল মুরসালাহ' ক্বিয়াসের পরে বা ৫ম উৎস হিসেবে ব্যাবহার করেছেন।
উসুলে ফিকাহতে বিভিন্ন ইমামরা আরো কিছু পরিভাষা ব্যাবহার করেছেন যেগুেলো উপরোক্ত ব্যবহৃত পরিভাষাগুলোর সাথে সম্পৃক্ত। যেমন ইজতিহাদ, আক্কল, ইল্লাহ, ফিতরাহ, ও হ্যাঁ, ইমাম ইবনে তাইমিয়া এই ফিতরাহ পরিভাষা ব্যবহার করেছেন। ফিতরাহ শব্দের অর্থ হলো মানুষের সহজাত প্রকৃতি। এ ছাড়া ও আরো একটি পরিভাষা ব্যবহৃত হয়েছে শরীয়া আইনের ক্ষেত্রে সেটা হলো তাজরাবাহ বা পর্যবেক্ষণ। শরীয়া আইনের ক্ষেত্রে গভীর পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিভাষা যদিও বিচ্ছিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে সেটা হলো "ওরফ" বা ঐতিহ্য। আমরা জানি ব্রিটেনে কাস্টম বা ট্রেডিশন হলো আইনের একটা প্রধান উৎস। মনে করুন। যে কোন একটা বিষয় যদি এখন প্রচলিত না থাকলেও কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে যে এটা ব্রিটেনে একসময় সামাজিক রীতি বা কাস্টম হিসেবে প্রচলিত ছিল তাহলে সেটাও আইনে পরিণত হতে পারে। তেমনিভাবে ইসলামী শরীয়া আইনে ব্যবহৃত হয়েছে "ওরফ" পরিভাষা। এই ওরফ সবেচে বেশী প্রসিদ্ধি লাভ করেছে বা এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সফলকাম হয়েছে আধুনিক তুর্কিস্তানে।
টার্কি বা তুর্কিস্তানের বর্তমান অবস্থার পেছনে ছিল গুলেন আন্দোলন বা আবদুল্লাহ গুলেনের ভুমিকার পাশাপাশি এই ওরফ এবং ঐতিহ্য একটা বিরাট ভুমিকা রাখে।
আমাদের দেশের কতিপয় দেওবন্দী আলেম ও তালেবে এলেমগণন মনে করেন গণতান্ত্রিক পন্থায় ইসলামী আন্দলন করা হারাম। যদিও আযিযুল হক, মুফতি আমিনী, পাকিস্তানের তকি ওসমানি, এমপি ফজলুর রহমান ভারতরে আবুল হাসান আলী নদভী, সোলায়মান নদভী সহ দেওবন্দী অনেক মশহুর দিকপালই গণতান্ত্রিক ইসলামী আন্দলন এর পক্ষ্যে ছিলেন এবং করতেছেন । তবে যারা বিরোধীতা করছেন তাদের মানহাজ যেই সমস্ত শায়েখগণের মাসলাকের উপরে রচিত তারা হলেন হুসাইন আহমদ মাদানী, আশ্রাফ আলী থানবী, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি, মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী, ইলিয়াস মেওয়াতী তাদের মত হল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে তিন উপায়ে তাবলীগ, তাযকিয়াহ (পীর-মুরিদী) ও জিহাদ তাই তাদের অনুসারীরা গণতন্ত্রের বিরোধী। আর বর্তমানে যে সকল দেওবন্দী তালেবে এলেমগণ রয়েছেন তারা মনে করেন তাদের মাসলাকের আলেমগণ ই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম (ইনারা আবার মাজহাবের তাকলীদের পক্ষ্যে অনেক খেদমত করতেছেন)। আর বর্তমান কিতালীদের মুরব্বি হলেন শায়েখ আব্দুল্লাহ আযযাম। আর তারা অজ্ঞতাবশত মনে করেন গণতান্ত্রিক ইসলামী দল জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী যেহেতু বিতর্কিত তাই তাদের মাঝে কোন ভাল আলেম নেই। অথচ বস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত। দেওবন্দী ঐ সকল পীর বুযর্গদের চাইতে কোটি গুণ বেশী এলেমের অধিকারী অনেক মুজতাহিদ রয়েছেন যারা গণতান্ত্রিক ইসলামী আন্দলনের পক্ষ্যে। যেমন আল্লামা ইকবাল, শাইখ ড. মোস্তফা হুসনি আস-সিবাই, ড.ইউসুফ আল-কারদাভী, বদীউযযামান সাইদ নুরসী, রশীদ ঘানুসী, তারিক রামাদান সহ অনেক বড় বড় মুজতাহিদ। তাদের ইজতিহাদী খেদমত সম্পর্কে বাংলা ভাষায় সমান্ন কিছু জানতে পারবেন নিচের সাইট গুলো থেকে -
১. http://cscsbd.com/
২. http://shoncharon.com/
৩. http://imbdblog.com/
৪. http://imbd.blog.com/
৫. http://www.iiitbd.org/publication/bengali-books-of-biit/
৬. http://www.icsbook.info/highersyllabus
৭.http://ohilibrary.blogspot.com/
৮. http://ibanaway.com/
৯. http://muslim.zohosites.com/
১০. https://sites.google.com/site/islamictune/
১১.http://lovemuslim.yolasite.com/
১২. http://www.islam.net.bd/
ভারত উপমহাদেশের কতিপয় আলেম যারা গণতান্ত্রিক ইসলামী আন্দলন করে গেছেন :
(সাইয়েদ কুতুব*, হাসান আল বাননা* মোহাম্মদ কুতুব - আরবীয়), মাওলানা ইসলাহী, মাওলানা জালাল উদ্দীন উমরী*, আল্লামা মোনওয়ার হোসেন*, ইসরার আহমেদ, হাফিজ সাঈদ, সাইয়েদ আলী শাহ গীলানী, মালিক গুলাম আলী , তুফাইল মুহাম্মাদ, *হাফেজ্জী হুজুর *, মাওলানা এ কে এম ইউসুফ*, আল্লামা কামাল উদ্দীন জাফরি, *মূফতী ইজহার, আবুল কালাম আজাদ
সন্ত্রাস জিহাদ নয়
======================
রাসূল সা: সে সময়ে যে সিস্টেম বা যে ব্যবস্থা কায়েম ছিল, তার ভেতরেই কাজ করেন। তিনি মক্কায় দাওয়াতের মাধ্যমে কাজ করেন, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নয়। কারণ বাস্তবতার দাবি ছিল শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করা। এ কারণেই মুসলিম বিশ্বের মূল স্রোতের ইসলামি দলগুলো মধ্যপন্থী। তারা গণতান্ত্রিক পথে তথা জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সম্মতিতে পরিবর্তন চান।
হিজরতের পর মদিনায় গিয়ে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে মদিনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। ইহুদিদের সাথে চুক্তি করেন। সেই চুক্তির মাধ্যমেই ঐক্য সৃষ্টি হয় এবং রাষ্ট্র স্থাপিত হয়। রাসূল সা:-এর ইন্তেকালের পর খেলাফতে রাশেদার সবাই নির্বাচিত হন। তৃতীয় খলিফা নির্বাচনের সময় জনমত যাচাই করা হয়। জনমত যাচাইয়ে দেখা যায়, হজরত উসমান রা:-এর সমর্থন বেশি। তিনি খলিফা হন। জনমত যাচাই কেবল মদিনায় হয়। দেশব্যাপী নির্বাচন তখন বাস্তব ছিল না। এখনকার পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই দেশের সবার মতামত নিতে হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সিস্টেমের ভেতরে কাজ করতে হবে। যতটুকু সম্ভব ততটুকুই করতে হবে। বাকিটুকু ভবিষ্যতের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।
কিছু মানুষ মুসলিম বিশ্বে শক্তির জোরে পরিবর্তন করতে চায়, রক্তপাত ঘটায়, আত্মঘাতী হামলা করে। এদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এদের বিরুদ্ধে গোটা মুসলিম উম্মাহকে দাঁড়াতে হবে। শ্রেষ্ঠ আলেমদের দায়িত্ব হচ্ছে এদের বোঝানো। প্রয়োজনে তাদের শক্তির মাধ্যমেই মোকাবেলা করতে হবে এবং নিরস্ত্র ও আটক করতে হবে। যেভাবেই হোক তাদের দমন করতে হবে। এই পরিস্থিতির সুযোগে কিছু মহল মূলধারার ইসলামি দলগুলোকে, ইসলামকে অভিযুক্ত করতে পারে। তা করা অন্যায় হবে। এ প্রসঙ্গে আমি ড. ইউসুফ আল কারজাবির অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘ফিকহুজ জিহাদ’ বা জিহাদের বিধানে দেয়া জিহাদ সম্পর্কিত নীতিমালা নিচে উল্লেখ করছি।
ড. ইউসুফ আল কারজাবির শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলোর একটি হচ্ছে ‘ফিকহুজ জিহাদ’ বা জিহাদের বিধান। এটি এখনো ইংরেজি বা বাংলায় অনূদিত হয়নি। তবে বইয়ের সার সংক্ষেপ ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। এ গ্রন্থের ওপর আরেকজন বড় ইসলামি চিন্তাবিদ তিউনিসিয়ার ড. রশিদ আল ঘানুসি ২০০৯ সালে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ পাঠ করেন। এটিও ইন্টারনেটে পাওয়া যায়।
ড. কারজাবি জিহাদ সম্পর্কে গবেষণা করতে যে পদ্ধতি অবলম্বন করেন তা নিম্নরূপ :
১. কুরআন ও সম্পূর্ণভাবে নির্ভুল সুন্নাহর ওপর নির্ভর করা। দুর্বল কোনো প্রমাণ গ্রহণ না করা।
২. ইসলামের ব্যাপক ফিকাহ সাহিত্যের সাহায্য নেয়া। কোনো বিশেষ মাজহাবের প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করা। এরপর সবচেয়ে উপযুক্ত মত গ্রহণ।
৩. ইসলামের সাথে অন্যান্য ধর্মের এবং আইনব্যবস্থার তুলনামূলক অধ্যয়ন করা।
৪. দাওয়া, শিক্ষাদান, রিসার্চ, ফতোয়া, সংস্কার ও পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে ‘ওয়াসতিয়া’ বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। সমকালীন সমস্যার সমাধানে ইজতিহাদকে ব্যবহার করা; যেমন পূর্বকালের ফকিহরা তাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে করেছিলেন।
জিহাদের বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, জিহাদ ও কিতালের (যুদ্ধ) মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। মক্কাতেই জিহাদের আয়াত নাজিল হয়, কিন্তু তখন কিতাল ছিল না। তখন জিহাদ ছিল দাওয়ার। ড. কারজাবি ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র ইবনুল কাইয়িমকে উল্লেখ করে বলেন, কিতাল ছাড়াও জিহাদের ১৩টি পর্যায় রয়েছে। জিহাদ বিল নাফসের চারটি পর্যায়, শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদের দু’টি পর্যায়, মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদের চারটি পর্যায় এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে জিহাদের তিনটি পর্যায় (হাত দিয়ে, মুখ দিয়ে এবং অন্তর দিয়ে) রয়েছে।
ড. কারজাবি আধুনিককালে পার্টি, পার্লামেন্ট, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে অত্যাচার বন্ধ করার প্রচেষ্টাকেও জিহাদ বলেছেন। তিনি নানা পদ্ধতিতে সাংস্কৃতিক জিহাদের কথাও বলেছেন (ইসলামি সেন্টার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি)।
জিহাদের লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ইসলাম আত্মরক্ষামূলক জিহাদের কথা বলেছে। যদিও আগে আক্রমণাত্মক জিহাদের পক্ষেও অনেকে বলেছেন। তিনি মনে করেন, আমাদের আগের ফকিহরা যে আক্রমণাত্মক জিহাদের কথা বলেছেন, তার ভিত্তি কুরআন বা সুন্নাহ নয়, বরং তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থা। তখন সব রাষ্ট্র পরস্পর সঙ্ঘাতে লিপ্ত ছিল। কোনো সর্বস্বীকৃত আন্তর্জাতিক আইন ছিল না।
তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন :
১. সূরা তাওবায় মুশরিকদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে, তা সাধারণ আদেশ ছিল না। সেটা ছিল আরব মুশরিকদের একটি দলের বিরুদ্ধে।
২. সামরিক জিহাদ সালাত ও সিয়ামের মতো সবার ওপর ব্যক্তিগত ফরজ নয়। ব্যক্তিগত জিহাদের কথা সূরা বাকারা, সূরা আনফাল, সূরা মুমিনুন, সূরা রাদ, সূরা লোকমান, সূরা ফুরকান বা সূরা জারিয়াতে মুত্তাকিদের গুণাবলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
৩. যদি মুসলিমরা নিরাপদ থাকে, তাহলে অমুসলিম রাষ্ট্রকে আক্রমণ করা বৈধ নয়।
৪. ইসলাম ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতা স্বীকার করে।
৫. ইসলাম আন্তর্জাতিক আইনের প্রণয়ন, জাতিসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাকে স্বাগত জানায়। মুসলিমরা আন্তর্জাতিক আইন স্বীকার করে নেয়ায় এখন অন্য কোনো রাষ্ট্রের ওপর হামলার কোনো বৈধতা নেই।
ড. কারজাবি বলেন, বর্তমান অমুসলিম বিশ্বকে দারুল আহাদ (চুক্তিবদ্ধ দেশ) মনে করতে হবে। কেননা সব দেশই এখন জাতিসঙ্ঘের আওতায় নানা চুক্তিতে আবদ্ধ। ড. কারজাবি আরো বলেন, ইরহাব বা সন্ত্রাস আর জিহাদ এক নয়। সব ধরনের সন্ত্রাস ইসলামে নিষিদ্ধ। এর ব্যতিক্রম শুধু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রাম বা এ ধরনের স্বাধীনতা সংগ্রাম।
এরপর তিনি ইসলামে জিহাদ বা যুদ্ধে যেসব নৈতিক নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে, তার আলোচনা করেন :
১. যুদ্ধে অবৈধভাবে শত্রুকে প্রলোভিত করার জন্য অবৈধ পন্থা; যেমন মদ বা যৌনতা ব্যবহার করা যাবে না।
২. প্রথমে আক্রমণ করা যাবে না; যেমন- কুরআনের ২:১৯০ আয়াতে বলা হয়েছে।
৩. চুক্তি রক্ষা করতে হবে।
৪. দালানকোঠা নষ্ট করা এবং গাছ ও ফসল কাটা যাবে না।
৫. আণবিক ও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ; কেননা এতে যারা যোদ্ধা নন তারাও নিহত হন।
আশা করি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে জিহাদের বিভিন্ন দিক এ লেখায় সুস্পষ্ট হয়েছে।
========================================================

গণতান্ত্রীক পদ্বতিতে ইসলাম প্রতিষ্টা করা কি কূফুরী???
বড় পোস্ট কিন্তু একটু কষ্ট করে সবাইকে পড়ার অনুরোধ রইল।
আমি যুক্তি সংগত কিছু বিষয় উপস্থাপন করলাম।
গণতান্ত্রীক পদ্বতিতে ইসলাম প্রতিষ্টা করা কূফুরী বলে ফতোয়া দেন, তাদের প্রতি উদাত্ত্ব আহবান রইল! এই স্ট্যাটাসটি পড়ে একটি বার সেই ফতোয়াটি নিজের দিকে ঘুরান! প্রথমে যারা বলে গণতন্ত্র কুফরি/হারাম। তাদের জিজ্ঞেস করবেন গণতন্ত্র কেন কুফরি/হারাম? শিওর থাকেন ওদের বেশিরভাগই এই প্রশ্নের কোন নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারবে না। random কিছু কথাবার্তা বলবে। আমি আপনাকে বলি গণতন্ত্র কুফরি এর মূল কারণ দুইটা- ১) গণতন্ত্রে বলা হয়ে থাকে যে ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’ যেটা সুস্পষ্ট কুফরি কথা। ২) গণতন্ত্রের পার্লামেন্টে সংখ্যাধিক্য ফলো করে। ফলে সংখ্যাধিক্যের জোরে হালালের হারাম হয়ে যাওয়া কিংবা হারামের হালাল হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন ধরুন সমকামিতার মতো বিষয়গুলি। মূলত এই দুটি বিষয় ছাড়া গণতন্ত্রের সাথে ইসলামের ব্যাপক মিল আছে। গণতন্ত্র মানুষের মৌলিক অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়,অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে শেখায়, বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা দেয়, শাসকদের স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করে, জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করে। এই বিষয়গুলিতে ইসলামের আপত্তি নেই বরং এই বিষয়গুলির প্রতি ইসলাম যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছে। যেমন বলা যায় মজলিশে শূরার কথা। এখন দেখা যাক গণতন্ত্রের কুফরি অংশগুলো আমরা কিভাব দূর করবোঃ গণতন্ত্র ব্যবস্থার দুটো component হলো- ১) voting system এ দলের ক্ষমতায় যাওয়া ২) সংবিধান ও পার্লামেন্ট ১ নং পয়েন্টের ব্যাপারে বলা যায় voting নিয়ে ইসলামের আপত্তি নেই। খুলাফায়ে রাশেদিন ও তৎপরবর্তী যুগের ন্যায়পন্হী খলিফারা (রাজতান্ত্রিকরা নয়) জনগণের ভোটেই ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন যদিও প্রকৃতিগত পার্থক্য ছিল। ঐ সময় জনগণ যার হাতে বাইয়াত নিতেন সেই খলিফা হতেন। অর্থাৎ জনগণের মতামত গণ্য করা হতো। দেখতে পারেন উমার ইবনে আবদুল আজিজের (রহ) খিলাফাতের ঘটনা। যারা এর বিরোধিতা করে তাদের জিজ্ঞেস করেন তাদের কথিত খলিফা কিভাবে নিযুক্ত হবেন, জোরপূর্বক নাকি অহীর মাধ্যমে? একটি আপত্তি তোলা হয়ে থাকে যে জনগণ অজ্ঞতার কারণে বা অন্য কোন কারণে সঠিক ব্যক্তিকে vote নাও দিতে পারেন। এর উত্তরে আমরা বলবো- ক)দাওয়াতি কাজতো এ জন্যই, জনগণকে ইসলাম বুঝানোর জন্য, সতর্ক করার জন্য খ)প্রচলিত ব্যবস্থায়ও রাষ্ট্রপ্রধান ও সদস্য প্রার্থীদের প্রার্থীতার উপর বিভিন্ন শর্তারোপ করা হয়ে থাকে যেমন বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সম্পত্তি। প্রার্থীতার উপর কিছু দ্বীনি criteria (যেমন দ্বীনি ইলম, আমল, আখলাক) সংযুক্ত করা যেতে পারে গ) অনুরূপভাবে ভোটারদের ক্ষেত্রেও কিছু দ্বীনি শর্তারোপ করা যেতে পারে ঘ)শিক্ষাব্যবস্থার ইসলামীকরণ করা এবং ইসলামী রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা, রাষ্ট্র ও জনগণের ভূমিকা ও অবহেলার পরিণামের মতো বিষয়গুলো সংযুক্ত করা আরো একটি অভিযোগ করা হয়ে থাকে যে voting system এ তো একটি ইসলামী দল বারবার পরাজিত হতে পারে বা সফল নাও হতে পারে। আমি বলি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমেও একই ঘটনা ঘটতে পারে এবং ঘটার সম্ভাবনাই বেশি।
আবার বলা হয় voting এ ইসলামপন্থীরা একবার ক্ষমতায় এসে পাঁচবছর পর ক্ষমতাচ্যুত হতে পারে। আমি বলি সশস্ত্র বিপ্লবের পদ্ধতিতেতো ৫ বছরের আগেই ক্ষমতাচ্যুত হতে পারে এবং এর সম্ভাবনাই বেশি, ইতিহাস এ কথারই সাক্ষ্য দেয়। একবার ভাবুনতো সশস্ত্র বিপ্লব ঘটাতে গিয়ে আপনি ব্যর্থ হলেন কিংবা বিপ্লব ঘটিয়ে পরবর্তীতে একটি কুফরি শক্তির কাছে পরাজিত হলেন, ভাবুনতো কী ঘটতে পারে?? ২ নং পয়েন্টে আসি। ইসলামপন্থীরা বিজয়ী হলে সংবিধানে প্রথমেই উল্লেখ করবে- “আল্লাহ সকল ক্ষমতার মালিক এবং উৎস।” ফলে কুফরির অভিযোগের ১ম পয়েন্ট দূর হলো। কুফরির অভিযোগের ২য় পয়েন্টটা হলো পার্লামেন্টে সংখ্যাধিক্যের জোরে হারাম হালাল হয়ে যাওয়া। এই সমস্যার সমাধানের জন্য just সংবিধানে একটি অতিরিক্ত ধারা যোগ করতে হবে যাতে উল্লেখ থাকবে- “কুরআন সুন্নাহ বিরোধী যেকোন আইন সর্বান্তক্রমে বাতিল হবে, এমনকি ১০০% সাংসদ ঐ বিধানের পক্ষে থাকলেও।” এতে করে সংসদ কার্যত making of law থেকে অব্যাহতি পাবে। ফলত দেখা যাচ্ছে যে কুফরির অভিযোগের দুটি পয়েন্টই কার্যত invalid হবে। ***[এই article এর সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ৮টি পয়েন্ট উল্লেখ করা হল। MUST READ] গুরুত্বপূর্ণ সংযুক্তিঃ ১) উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, আমরা যে ব্যবস্থার কথা বলছি তাকে ঠিক গণতন্ত্র না বললেও চলে। উস্তাদ মওদুদী (রহ) তাঁর ‘ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদ’ গ্রন্থে এই ব্যবস্থাকে অভিহিত করেছিলেন ‘Theo Democracy’ বলে। অনেকে আবার Islamic Democracy পরিভাষা নিয়ে ঘোর আপত্তি তোলেন, ”কুফরি শব্দের সাথে ইসলাম তওবা তওবা!” উনারাই আবার অহরহ ইসলামী সংগীত শব্দটা ব্যবহার করেন। কেউ কেউ গণতন্ত্রকে হারাম প্রমাণ করতে আব্রাহাম লিংকন প্রদত্ত সংজ্ঞাটা আওড়ানো শুরু করেন। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলি গণতন্ত্রের কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, নির্দিষ্ট রূপও নেই আর অনেক সমাজবিজ্ঞানী গণতন্ত্রের এরূপ সংজ্ঞা দিয়েছেন যাতে শিরকের লেশমাত্রও নেই। মনে রাখতে হবে যে বস্তুর কার্য এবং বৈশিষ্ট থেকেই সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়, সংজ্ঞা থেকে বৈশিষ্ট্য বা কার্য আবির্ভূত হয় না। মুফতি সাহেবানদের যখন জিজ্ঞেস করা হয় সংগীত হালাল কিনা, তখন উনারা উত্তর দেন, “বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার না করা হলে সংগীত হালাল।” অথচ সংগীতের বহুল প্রচলিত সংজ্ঞা হল, “গীত বাদ্য ও নৃত্য – এই তিন কলার একত্র সমন্বয়কে সংগীত বলে”। আপনি এখন চাইলে গোঁ ধরে বসে থাকতে পারেন যে সংগীতের সংজ্ঞাতেই তো বাদ্য থাকবে।
শুধুমাত্র পরিভাষা নিয়ে যারা প্যাঁচাতে চায় তাদের জন্য একটা শিক্ষণীয় ঘটনাঃ আরব খৃষ্টান গোত্র বনু তাগলিবের লোকেরা জিজিয়ার পরিবর্তে দ্বিগুণ যাকাত প্রদানের জন্য উমার (রাঃ) কাছে অনুমতি চাইলো। উমার (রাঃ) সম্মত হলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন লোকেরা নির্বোধ, তারা কাজ মেনে নেয় কিন্তু নাম অস্বীকার করে। ২) অনেক ভাই ইসলামের বিজয়ের পূর্বেই ইসলামী বিধান চেয়ে বসছেন। এ ধরনের দাবী নিছক আবেগ ব্যতিত কিছুই নয়। আপনাকে আগে ইসলামকে বিজয়ী করতে হবে। তারপরেই আপনি সংবিধান তথা রাষ্ট্রীয় মূলনীতি চেন্জ করতে পারবেন। যেকোন আদর্শকে বিজয়ী করার জন্য আপনার জন্য তিনটা পদ্ধতি খোলা আছে- ১.voting ২.সশস্ত্র যুদ্ধ ৩গণ অভ্যুত্থান এই তিনটার যেকোন একটি দিয়েই আপনাকে যেতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ বৈধ কিনা, এ যুগে এ পদ্ধতির সফলতার সম্ভাবনা কতটুকু আর এভাবে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের স্থায়িত্বই বা কতটুকু তা পৃথক নোটে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। বাকি রইলো গণ অভ্যুত্থান। গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলে বুঝা যাবে যে voting হচ্ছে এক ধরনের নীরব গণ অভ্যুত্থান। আর আরেকটা বিষয় হলো আধুনিক যুগে যেকোন গণ অভ্যুত্থান আলটিমেটলি সশস্ত্র যুদ্ধে রূপ নিবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা কিন্তু গণ অভ্যুত্থানের দ্বার বন্ধ করে দেইনি। কেননা আমরা অব্যাহতভাবে মানুষের মাঝে দাওয়াতি কাজ করে যাচ্ছি। আর নিরবচ্ছিন্ন দাওয়াতি কাজই হল গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম ও প্রধান শর্ত। ৩) পদার্থ বিজ্ঞানে আছে সূর্যই পৃথিবীতে সব শক্তির উৎস। আরো আছে শক্তির অবিনাশিতাবাদ। এগুলো কুফরি কথা। তাহলে কি আপনে পদার্থবিজ্ঞান পড়বেন না? পরীক্ষার খাতায় অবিনাশিতাবাদ লিখবেন না? যারা লিখবেন তারা কি কাফির যদিও তারা ব্যক্তিগত ভাবে এগুলোর স্বীকৃতি দেয় না?? যারা এই বইগুলো যারা লিখেছেন তাদের অনেকেই নাস্তিক নন। ‘সূর্যই পৃথিবীর সকল শক্তির উৎস’ এর দ্বারা তারা সূর্যকে খোদায়ী শক্তি অর্পণ করতে চান নি? তারা যেটা বুঝাতে চেয়েছেন সেটা হলো পৃথিবীতে শক্তির উৎসের আপাত/বাহ্যিক/­immediate cause হলো সূর্য। এই বাক্যটি ultimate cause কি সে সম্পর্কে আলোকপাত করে নি। আর এটা যে immediate cause কে ফোকাস করেছে ultimate cause কে নয়, তা ছাত্র শিক্ষক সকলেই জানে। এরপরেও কেউ পদার্থবিজ্ঞানকে কুফরি ফাতওয়া দিয়ে পড়া বাদ দিতে চাইলে তাকে স্বাগতম। এখন আসা যাক ‘জনগণ সকল শক্তির উৎস’ এই বিষয়ে। এটা একটা রাজনৈতিক প্রতীকী বাক্যমাত্র। এরদ্বারা এটা বুঝায় না যে জনগণ খোদায়ী ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়েছে। তাহলে এই বাক্যের সঠিক তাৎপর্য কি? আমাদের জানতে হবে কোন প্রেক্ষাপটে এই কথাটি চালু হয়। এই কথাটি চালু হয় ভয়ানক রকমের স্বৈরতান্ত্রিক পরিবেশে, যেখানে স্বৈরশাসক যা খুশি তাই করার চেষ্ট করত, জনগণকে তোয়াক্কা করার চিন্তা করত না। এর against এ এই কথাটি চালু হয় যাতে দাবী করা হয় যে জনগণই শক্তির উৎস। এখানে আসলে mean করতে চাওয়া হয়েছে যে শাসকের চেয়ে জনগণ শক্তিশালী। এখানে সৃষ্টিকর্তার ভূমিকার ইঙ্গিত দেওয়া হয় নি। অর্থাৎ এটাও immediate cause সংক্রান্ত। একটি উদাহরণ দেওয়া যায়, এক ব্যক্তি বলল যে এই জমির মালিক আমি। এর অর্থ সে এটা বুঝাতে চাচ্ছে যে এখন এই জমি সে ভোগ করবে। এটাকে ‘সবকিছুর মালিক আল্লাহ’ এই উক্তির বিপরীতে স্থাপনের চেষ্টা নিছক মূর্খতা। তারপরেও আমরা স্বীকার করছি যে এটা একটা ত্রুটি এবং এটার পরিবর্তন দরকার। এরজন্য চাই ইসলামের বিজয়। ৪) বর্তমান সংবিধানের কিছু অংশ ত্রুটিপূর্ণ সেটা আমরাও স্বীকার করি। সরকারকে আমরা এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় নছীহতও করে আসছি। এই ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা চেন্জ করে ইসলামী ভাবধারা প্রবর্তনের জন্যই আমাদের সামগ্রিক দাওয়াতি কাজ, আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম, আমাদের বিজয়ের প্রচেষ্টা। আমরা কি করতে চাচ্ছি তা আমাদের বিরোধীরা ভালো করেই জানে, যে কারনেই আমাদের উপর এত অত্যাচার নির্যাতন ও মিথ্যা অপবাদ। আমরা ব্যক্তিগতভাবে ঐসব ইসলাম বিরোধী ঐসব মূলনীতিকে বিশ্বাস করি না। তাহলে কি শুধুমাত্র এই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন করলে আমাদের কুফরির ফাতওয়া দেওয়া হবে?? আল্লাহর রাসূল (সঃ) ইসলামের বিজয়ের পূর্বে পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছুই করেছেন। যেমন- ১) তিনি মূর্তির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন কিন্তু ইসলামের বিজয়ের পূর্বে কাবা চত্বরে মূর্তি থাকা সত্ত্বেও সালাত আদায় করেছেন। ২) হুদাইবিয়ার সন্ধিতে বৃহত্তর স্বার্থের কারণে ‘আল্লাহর রাসূল’ শব্দটি নিজ হাতে কেটে দিয়েছেন যদিও সাহাবীরা এতে আপত্তি তুলেছিল। ৩) হাদীসে আছে মুসলিম তার ভাইকে শত্রুদের মুখে ঠেলে দিতে পারে না। কিন্তু হুদাইবিয়ার সন্ধিতে এর উল্টোটা করা হয়। ৪) মক্কায় থাকা অবস্থায় তিনি সেখানের সমাজপতিদের তিন বছর নির্বাসন মেনে নিয়েছেন। কিন্তু ইসলাম বিজয়ের পর তিনি সব মূর্তি কাবা চত্বর থেকে উৎখাত করেছেন।
প্রচলিত সমাজে অবস্থান করে, এর ভ্রান্তনীতির বিরুদ্ধে কথা বলে জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে অতপর সেইভ্রান্ত নীতি পরিবর্তন করাই রসূল (সঃ) এর আন্দোলনের কর্মপন্থা ছিল। অনেক আলেম গণতন্ত্রের বর্তমান ব্যবস্থার সমালোচনা করা সত্ত্বেও ‘আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার’, সাধ্যানুযায়ী দুর্নীতি কমানো এবং ইসলামের পক্ষে কথা বলার জন্য পার্লামেন্টে অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন- “But as for the one who nominates himself or nominates others in this system in order to join the parliament and enjoin good and forbid evil, and establish proof against them, and reduce its evil and corruption as much as he can, so that people of corruption and disbelievers in Allaah will not have free rein to spread mischief in the land and spoil people’s worldly interests and religious commitment, this is a matter that is subject to ijtihaad, according to the interests that it is hoped will be served by that.” -Mawsoo’at al-Adyaan wa’l-Madhaahib al-Mu’aasirah (2/1066, 1067) Some scholars are even of the view that getting involved in these elections is obligatory. Shaykh Muhammad ibn ‘Uthaymeen(শায়খ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহঃ) was asked about the ruling on elections, and he replied: I think that elections are obligatory; we should appoint the one who we think is good, because if the good people abstain, who will take their place? Evil people will take their place, or neutral people in whom there is neither good nor evil, but they follow everyone who makes noise. So we have no choice but to choose those who we think are fit. If someone were to say: We chose someone but most of the parliament are not like that, We say: It does not matter. If Allaah blesses this one person and enables him to speak the truth in this parliament, he will undoubtedly have an effect. But what we need is to be sincere towards Allaah and the problem is that we rely too much on physical means and we do not listen to what Allaah says. So nominate the one who you think is good, and put your trust in Allaah. End quote. From Liqaa’aat al-Baab al-Maftooh, no. 210 এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) এর দুটি ফাতওয়া ড. ইউসুফ আল কারযাভী তাঁর Priorities of Islamic Movement বইতে উল্লেখ করেছেন। আগ্রহীরা বইটি দেখতে পারেন। অলরেডি বইটির বাংলা অনুবাদও বের হয়েছে। ৫) সংবিধানে কুফরি কথা আছে, এই অজুহাতে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণকে কুফরি বলেন, পার্লামেন্টের সদস্য হওয়াকে কুফরি বলেন, তাদের উদ্দেশ্যে- সরকার বলতে শুধু পার্লামেন্ট বুঝায় না। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার তিনটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলঃ ক) পার্লামেন্ট বা সংসদ খ) শাসন বিভাগ গ) বিচার বিভাগ পার্লামেন্টে অংশগ্রহণ যদি কুফরি হয়। তাহলে- 1. বিচারবিভাগে অংশগ্রহণ কুফরি হবে না কেন?? মনে রাখতে হবে যে বিচারপতিগণ সংবিধানকে সমুন্নত রাখার শপথ নিয়েই বিচারক হন। আর আইনজীবীরা সংবিধানের আলোকেই তাদের যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করেন। 2. শাসন বিভাগে অংশগ্রহণ কুফরি হবে না কেন?? এক্ষেত্রেও জেনে নেওয়া দরকার যে, রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের লোক, এমনকি গ্রাম্য চৌকিদার পর্যন্ত শাসন বিভাগ বিস্তৃত। 3. কুফরি সংবিধান বহালকারী সরকারকে tax দেওয়া কুফরি কিনা জানতে চাই। 4. পুলিশ ছাড়া বিচার বিভাগ অচল। আবার পুলিশ , বিচার বিভাগ , সেনাবাহিনী ছাড়া সরকার অচল। কুফরি সংবিধান টিকিয়ে রাখার একনিষ্ঠ প্রহরী হল পুলিশ ও সেনাবাহিনী। সুযোগ পেলে উনাদের শপথবাক্যগুলো পড়ে দেখবেন। এখন প্রশ্ন হল পুলিশ এবং সেনাবাহিনীতে চাকরি করা কুফরি কিনা? 5. বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, স্কুল কলেজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানী, কল-কারখানা, গণমাধ্যম, সংবাদপত্র, প্রকাশনা সংস্থা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে দেশের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং দেশের প্রচলিত আইনানুসারেই। কোন সংবাদপত্র যদি ঘোষণা দেয় যে, আমরা দেশের সংবিধান অস্বীকার করি। তাহলে তারা কি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে? যেসব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সংবিধানের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা কুফরি কিনা?? 5. বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, সমাজকল্যাণ সংস্থা, স্কুল কলেজ, এমনকি মসজিদ মাদরাসাও সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। আর এসব অনুদানের সাথে সুদ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখন প্রশ্ন হল এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কোন সেবা নেওয়া জায়েয কিনা??
এখন প্রশ্ন হল এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কোন সেবা নেওয়া জায়েয কিনা?? সরকারী হাসপাতালের টিকিটে “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত” এই কথাটি অবশ্যই উল্লেখ থাকে। এই টিকিট দিয়ে চিকিৎসা সেবা নেওয়া কুফরি কিনা?? 7. জমি ক্রয় বিক্রয়ের জন্য যে বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ ও স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয় তাতে “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার” কথাটি উল্লেখ থাকে। এই দলিলে জমি ক্রয় বিক্রয় কুফরি কিনা?? 8. বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে কাগজী নোট এবং ধাতব মুদ্রা বের করা হয় তাতে স্পষ্ট করে লেখা থাকে, “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রবর্তিত”। এই নোট ব্যবহার করা কুফরি কিনা?? হেঃ হেঃ মোরা ঐ কুফরি নোটের স্বীকৃতি দেই না, তয় ঐ নোটখানা হাতে পাবার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলি! এই আরকি!! 9. পড়ালেখা, চাকুরী, ব্যবসা বাণিজ্য, এমনকি বিয়ে নিবন্ধনের জন্যও সরকারী সনদপত্র, সার্টিফিকেট দরকার পড়ে। তাতেও ঐ কুফরি কথাটি লেখা থাকে। কুফরি কথাযুক্ত সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য এত পরিশ্রম কেন, আর সার্টিফিকেট লেমিনেটিং করে সযত্নে ট্রাঙ্কে রাখাই বা কেন আমার বুঝে আসে না। কওমি সনদের স্বীকৃতির জন্য আলেমদের এত লম্ফ ঝম্প কেন তাও জানা দরকার। 10. দেশের সংবিধান না মেনে নাগরিত্বের সনদপত্র পাওয়া যাবে না, পাসপোর্ট ও পাওয়া যাবে না, হজ্জেও যাওয়া যাবে না। আবার পাসপোর্টেও উক্ত কুফরি কথাটি সংযুক্ত থাকে। এখন যে ব্যক্তি procedure maintain করে হজ্জ্বে যাবে সে কুফরি করেছে কিনা? 11. স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি অফিস, আদালতের বিভিন্ন ফর্মে জাতীয়তা(Nationality­) র জন্য যে ঘর থাকে, তা আপনারা পূরণ করেন কিনা? বিভিন্ন online account খোলার সময় এ জাতীয় অপশন পূরণ করা কুফরি কিনা জাতি জানতে চায়। এত সব সমস্যার সমাধান দুইটা- ক) প্রচলিত ব্যবস্থার অধীনে থেকে এই ব্যবস্থা চেন্জ করার চেষ্টা করা।
খ) আফ্রিকার জঙ্গলের মতো জায়গায় চলে যাওয়া যেখানে কোন তন্ত্র মন্ত্রের বালাই নেই অথবা নির্ভেজাল ইসলামী কোন রাষ্ট্রে হিজরত করা। অবশ্য নির্ভেজাল কোন ইসলামী রাষ্ট্র আছে কিনা সেটা আপনারাই খুঁজে দেখবেন। আর কুফরি সরকারের অনুমোদন ছাড়া, কুফরি কথা সংবলিত পাসপোর্ট ছাড়া আপনারা কিভাবে দেশত্যাগ করবেন সেটাও আপনারাই ভেবে দেখবেন। আমার বিন্দুমাত্রও আগ্রহ নেই। (এখানের ১ম কয়েকটা পয়েন্টের থিম Muhsin Abdullah ভাইয়ের কাছ থেকে নেওয়া) ৬) আমরা একটা বিষয় উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি। আমাদের কাছে Democracy হলো voting, counselling এবং জবাবদিহিতার একটা system/কাঠামো, এটা রাষ্ট্র পরিচালনার কোন মতাদর্শ নয়। অনেকে কমিউনিজম, সেক্যুলারিজম কিংবা ন্যাশনালিজমের মতো democracy কে রাষ্ট্রপরিচালনার আদর্শ ভাবেন। অথচ এধারণা সঠিক নয়। নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রকে দুইভাগে ভাগ করা যায় একটা হচ্ছে গণতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র। আর সমাজতন্ত্র, ধনতন্ত্র, সেক্যুলারিজম এগুলো হলো মতাদর্শ যার ভিত্তিতে democratic বা স্বৈরতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। একটা হলো কাঠামো/system আর একটা হলো মতাদর্শ। Democratic System অথবা কাঠামোতে আপনি চাইলে কম্যুনিজম বা সেক্যুলারিজম কে Ideology রূপে গ্রহণ করতে পারেন, আবার চাইলে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন, এমনকি চাইলে সুবিধাবাদও গ্রহণ করতে পারেন। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে ইসলামে কি শুধু Ideology আছে, system/কাঠামো নেই? উত্তর হলো ইসলামে অবশ্যই system আছে। ইসলামী system এর আধুনিক রূপই হলো democracy যার প্রমাণ হলো বাইয়্যাত (আধুনিক রূপ voting) এবং মজলিশে শূরা ও জবাবদিহিতা (আধুনিক রূপ parliament)। আর ইসলাম স্বৈরতন্ত্রকে সমর্থন করে না। অবশ্য প্রচলিত democratic system এর কিছু ত্রুটি আছে যেগুলো সংশোধনযোগ্য। ৭) ”যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথামত চল তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা তো শুধু অনুমানের ভিত্তিতে কথা বলে।” [সূরা আনআম : ১১৬] এই আয়াতটিকে অনেকে democracyর বিরোধী মনে করেন। কিন্তু আমি তাতে দ্বিমত করি। কেননা parliament ব্যবস্থায় টোটাল জনগণের মতামত নেওয়া হয় না। বরং শুধুমাত্র প্রতিনিধিদের মতামত নেওয়া হয়। আর আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে voting প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থী ও ভোটারদের উপর বিভিন্ন দ্বীনি শর্ত আরোপ করা যায়। ফলে সবধরনের লোক (যেমন কাফির মুনাফিক) প্রতিনিধিও হতে পারবে না, ভোটাধিকারও পাবে না। ‘গণতন্ত্র মানে সার্বজনীন’ ভোটাধিকার কথাটি সঠিক নয়। প্রচলিত ব্যবস্থায়ও ১৮ বছর বয়সের কম থাকলে ভোটার হওয়া যায় না, পাগলকেও ভোটার করা হয় না। এক সময় নিগ্রোদের ভোটাধিকার ছিল না, নারীদের ভোটাধিকার ছিল না। তখনও ঐ ব্যবস্থাকে democracy বলেই অভিহিত করা হতো। আসলে গণতন্ত্রের নির্দিষ্ট কোন রূপ নেই, দেশে দেশে যুগে যুগে গনতন্ত্রের রূপ বিভিন্ন। কাজেই একটি আদর্শবাদী রাষ্ট্রে যদি ঐ আদর্শকে ভোটাধিকারের শর্ত বানানো হয়, তাহলেও তা democracy ই থাকবে। অন্তত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটাকে গণতন্ত্রই বলবে। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচনে কিন্তু সমর্থক, কর্মী, সাথী সকলে ভোট দিতে পারে না, শুধুমাত্র সদস্যরা ভোট দেয়। ৮) আরো একটা বিষয় হলো বিরোধী দল এবং রাষ্ট্রপ্রধানের মেয়াদ। অনেকে রাষ্ট্রপ্রধানের নির্দিষ্ট মেয়াদে নির্বাচিত হওয়াকে ইসলাম সম্মত মনে করে না। অথচ এটা ইসলাম বিরোধী হওয়ার কোন কারণ নেই। কেননা এটা রাষ্ট্রপ্রধানের স্বেচ্ছাচারিত রোধ, দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি এবং জবাবদিহিতার একটা উপায় মাত্র। এখনকার রাষ্ট্র আয়তনে বৃহৎ, কাজের পরিধি অনেক বেশি, এছাড়া রয়েছে নিরাপত্তাজনিত জটিলতা। ফলে দূরবর্তী অঞ্চলের এক নাগরিকের পক্ষে রাষ্ট্রপ্রধানকে সরাসরি জবাবদিহিতার সম্মুখীন করা বেশ কঠিন। খুলাফায়ে রাশেদীনের পরবর্তী যুগে বিভিন্ন ধরনের যুলুম নির্যাতনের অন্যতম কারণ ছিলো এই ধরনের দায়িত্বানুভূতির অভাব এবং আজীবন মেয়াদের ক্ষমতা। যে আপত্তি তোলা হয় যে পুনরায় অনৈসলামিক দল ক্ষমতায় আসতে পারে। এরূপ ভয় দূরীকরনের উপায় মূল নোটেই আলোচনা করা হয়েছে। অনেকে বলতে চান খুলাফায়ে রাশেদীন আজীবন খলিফা ছিলেন। আর হাদীসে খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ আঁকড়ে ধরতে বলা হয়েছে। অথচ হাদীসে প্রথমে রাসূলের সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরতে বলা হয়েছে। খয়বরের যুদ্ধের পর নবী (সঃ) যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সৈনিকদের মাঝে বন্টন করে দেন। কিন্তু উমার (রাঃ) ইরাকের পল্লী অঞ্চল জয়ের পর তা করেন নি। এর কারণস্বরূপ তিনি বলেন, “আমি সম্পদকে বর্তমান ও ভবিষ্যত মানুষদের জন্য যথেষ্ট মনে করছি।
আপনি কি চান আগামী প্রজন্ম এমন অবস্থায় পড়ুক যে তাদের জন্য কিছুই রাখা হয় নি”। ইবনে কুদামা (রহ) এর ব্যাখ্যায় বলেন, “তারা উভয়ে সেটাই করেছেন যা তাদের সময়ের সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত মনে হয়েছে”। এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে পূর্ববর্তীদের যেকোন প্রথা পরবর্তীদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। মনে রাখতে হবে যে দ্বীনের মাঝে কিছু উদ্ভাবন বিদআত কিন্তু দ্বীনি উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোন way/means/device উদ্ভাবন বিদআত নয়। এরপর আসে বিরোধীদল প্রসঙ্গ। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কার্যত বিরোধীদলের প্রয়োজন নেই। কেননা এখানে প্রত্যেকেরই ( both member of parliament & general person) উচিত ন্যায়সঙ্গত কাজে সরকারকে সাহায্য করা এবং অন্যায় কাজে সরকারের ভুল ধরিয়ে দেওয়া, সংশোধন করা। তারপরেও বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটে সমালোচনা দায়িত্বশীলতা এবং জবাবদিহিতা বৃদ্ধির জন্য বিরোধীদলের প্রয়োজনীয়তা আছে। সেক্ষেত্র ‘বিরোধীদল’ শব্দটির পরিবর্তে ‘সহায়ক দল’ শব্দটি ব্যবহার করা যেতে পারে। কেননা ইসলামে “অসঙ্গত বিরোধিতা হারাম”(সূরা আ’রাফ : ৩৩)। এছাড়া সংবিধানে কুরআন সুন্নাহর সার্বভৌমত্ব বিষয়ক অতিরিক্ত ধারার ফলে বহুলাংশে সহায়ক দলের তৎপরতা নিয়ন্ত্রিত হবে এবং সে ক্ষেত্রে গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করা যায়।
=================================================================

ইসলাম কেন মধ্যমপন্থী ধর্ম
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন মনোনীত ধর্ম ইসলাম মানজাতির ইহলৌকিক ও পালৌকিক শান্তি ও কল্যাণের জন্য আবির্ভূত হয়েছে। ইসলাম-পূর্ব যুগগুলোতেও অনেক ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছিল। কালের বিবর্তনে সেসব ধর্ম বিকৃতির কবলে পড়ে তাদের মৌলিক চরিত্র ও যুগোপযোগিতা হারিয়ে ফেলে। এ পরিস্থিতিতে একটি পূর্ণাঙ্গ, সর্বজনীন ও শাশ্বত ধর্মের প্রয়োজনকে সামনে রেখেই ইসলামের আবির্ভাব। সর্বশেষ ধর্ম হিসেবে ইসলাম মানবজাতিকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান দিয়েছে, যাতে রয়েছে এ পৃথিবীতে জীবন ধারণের সব রকম দিক-নির্দেশনা। ইসলাম মানুষের স্বভাবগত ধর্ম যাতে জাগতিকতার সাথে রয়েছে আধ্যাত্মিকতার এক অপূর্ব সমন্বয়। জাগতিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় রেখে কিভাবে পরজাগতিক মুক্তি আসবে ইসলাম সেই দিকনির্দেশনাই দেয়। তাইতো ইসলামে যেমন বৈরাগ্যবাদ নেই, তেমনি নেই অতি-ভোগবাদীতা। আবার ইসলাম কার্পণ্যকে যেমন নিষেধ করে, তেমনি অমিতব্যয়িতাকে অনুমোদন করে না। ইসলাম দানশীলতা ও মিতব্যয়িতকে উৎসাহিত করে। এ ধর্মে আল্লাহ্ মানুষের ওপর তার সাধ্যাতীত কোন বিধান বা দায়িত্ব চাপিয়ে দেন নাই। বরং তিনি সবক্ষেত্রে এমন এক মধ্যমপন্থী নীতি অবলম্বনের তাকিদ দিয়েছেন যাতে নেই কোন চরম পন্থা বা বাড়াবাড়ির স্থান। আল্লাহ্ তাঁর উত্তম নিয়ামতসমূহ তাঁর নির্ধারিত হালাল-হারামের সীমারেখার মধ্যে থেকে ভোগ করার অধিকার মানুষকে দিয়েছেন, কিন্তু সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করেছেন (৫:৮৭-৮৮)। ইসলামের এ বাস্তবধর্মীতাই একে এক সরল ও স্বাভাবিক মানবধর্মে পরিণত করেছে। তাই ইসলামের পথ সহজ সরল পথ, এতে নেই কোন বক্রতা ও জটিলতা। আর প্রতিটি মুসলিম তার প্রতিদিনের নামাযে বারবার সরল পথ প্রদর্শনের প্রার্থনা জানায় আল্লাহর দরবারে।
ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকে চৌদ্দ শত বছর যাবৎ আল্লাহর কিতাব আল-কুরআন ও আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) মুখ নিঃসৃত বাণী আল-হাদীস এ ধর্মের সমুজ্জ্বল আলোবর্তিকা হিসেবে মানবজাতিকে শান্তির দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। ইসলাম যে একটি শান্তিপূর্ণ মধ্যমপন্থী ধর্ম তা ইসলামের প্রকৃত ইতিহাসের দিকে নজর দিলেই উপলব্ধী করা যাবে। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে মুসলমানদেরকে এক মধ্যমপন্থী উত্তম জাতি হিসেবে অভিহিত করে বলেন, "তোমরাই (এই দুনিয়ায়) সর্বোত্তম জাতি, সমগ্র মানব জাতির (কল্যাণের) জন্যই তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। (তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে) তোমরা দুনিয়ার মানুষদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে, নিজেরাও তোমরা আল্লাহর ওপর (পুরোপুরি) ঈমান আনবে (৩:১১০)।" ইসলামের প্রচারক মহান আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) সময় থেকেই শান্তিপূর্ণ মৌলনীতির ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়েছে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। তাই ইসলামকে বিচার করতে হলে এর প্রচারক নবী মুহাম্মদ (সাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগকেই আদর্শ হিসেবে গণ্য করতে হবে। এরপর থেকে ইসলামী নীতি অনুযায়ী দেশের শাসন কাজ পরিচালনায় শিথিলতা ও ব্যত্যয় ঘটতে শুরু করে। পরবর্তীকালের মুসলিম শাসকগণ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে নয়, বরং বংশতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেদের রাষ্ট্র সীমানা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধির জন্যই তাদের শাসন কাজ পরিচালনা করেছিলেন। তাই এ নিবন্ধের আলোচনা মূলত ইসলামের প্রাথমিক আদর্শিক যুগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে যে ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় নীতিমালা তখন অনুসরণ করা হতো সেগুলোই নীচে আলোচিত হলো।
ইসলামের শান্তিপূর্ণ নীতিমালাঃ
o ইসলামে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হলো ঈমান ও সৎকর্ম। বংশ-মর্যাদা, ঐশ্বর্য, শক্তিমত্তা, সুন্দর চেহারা বা গায়ের উজ্জ্বল রঙ, এর কোনটিই আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠত্বের মানদন্ড হিসেবে গণ্য নয়। ঈমান ও সৎকর্ম ব্যতীত অন্য কোন প্রকার ভেদাভেদ দ্বারা মানুষের মর্যাদা নির্ধারণের বিধান ইসলামে নেই। আল্লাহর আইনে সব মানুষই সমান, আর এ আইন ন্যায়নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, "আমি আমার রসুলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে (৫৭:২৫)।" আপন-পর, ধনী-গরীব, সবল-দুর্বল, জাতপাত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বত্র ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার জোর নির্দেশ এসেছে কুরআন ও হাদীস থেকে।
o বিদায় হজ্বের ভাষণে নবী করিম (সাঃ) বলেন, "হে মানবমন্ডলী! আল্লাহ্ বলেছেন, ‘হে মানুষ, আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি একজন মানব ও একজন মানবী থেকে এবং গোত্র ও জাতিতে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পার। নিশ্চয় আল্লাহর দৃষ্টিতে তোমাদের মধ্যে সে-ই সবচেয়ে মর্যাদবান যে সবচেয়ে বেশী খোদা-ভীরু।’ সকল মানুষ আদমের বংশধর এবং আদম মাটি থেকে তৈরী। অনারবের ওপর আরবের, আরবের ওপর অনারবের, কালোর ওপর সাদার অথবা সাদার ওপর কালোর কোনই শ্রেষ্ঠত্ব নেই শুধুমাত্র পরহেজগারী ছাড়া।"
o ইসলাম কখনই হত্যা, সংঘাত ও হানাহানিকে প্রশ্রয় দেয় না। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেছেন: “আর ধর্মের ব্যাপারে ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহাপাপ (২:২১৭)”, “ধর্মের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই (২:২৫৬)”, “যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে (৫:৩২)”। জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ্ ইচ্ছে করলেই সব সম্প্রদায়কে একই জাতি সত্তার অন্তর্ভূক্ত করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা চাননি (১১:১১৮)। তিনি যেমন মানুষকে মতভেদ করার স্বাধীনতা দিয়েছেন, তেমনই সঠিক দিক-নির্দেশনাও দিয়েছেন। এরপরও যারা পথভ্রষ্ট হবে তারা তা নিজ দায়িত্বেই হবে। কিয়ামতের পর বিচার দিবসে আল্লাহ্ এ মতভেদের ফয়সালা করবেন। আল্লাহর এসব বাণীই হলো ইসলামের শান্তিপূর্ণ নীতির ভিত্তি। তাই ইসলামের ইতিহাসে ধর্মীয় কারণে গণহত্যার কোন নজীর নেই।
o মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসে কুদসীতে রসুল (সাঃ) বলেন, “আল্লাহ্ বলেছেন, জুলুম করা আমি আমার নিজের জন্য অবৈধ করেছি, তেমনই আমার বান্দাদের জন্যও অবৈধ করেছি।” জুলুম, পারস্পরিক হানাহানি বা অশান্তি নয়, বরং মানবজাতির কল্যাণ ও শান্তি অর্জনই ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। এক হাদীসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, প্রতিবেশী যে ধর্মেরই হোক তাকে অভুক্ত রেখে পেটপুরে খেলে ঈমানদার হওয়া যায় না। প্রতিবেশীর সুখ-দুঃখ, অভাব ও কষ্টকে ভাগ করে নিতে ইসলাম নির্দেশ দেয়। প্রতিবেশীর অধিকারের ব্যাপারে ইসলাম অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও ভালবাসাপূর্ণ সমাজই ইসলামের কাম্য। তাঁরই প্রণীত ‘মদীনা সনদ’ মদীনায় বসবাসরত সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়কে নিয়ে এক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে।
o মন্দকে মন্দ পন্থায় মোকাবিলা করা ইসলামের নীতি নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর নির্দেশ হলো: “(হে নবী) ভালো আর মন্দ কখনোই সমান হতে পারে না, আপনি ভালো’র দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করুন, তাহলেই আপনার মধ্যে এবং যার সাথে আপনার শত্রুতা - তার মধ্যে এমন (অবস্থার সৃষ্টি) হয়ে যাবে যেন সে আপনার অন্তরঙ্গ বন্ধু। আর এ (অবস্থা) শুধু তাদেরই (ভাগ্যে লেখা) থাকে যারা ধৈর্য ধারণ করে এবং এসব লোক তারাই হয় যারা সৌভাগ্যের অধিকারী (৪১:৩৪-৩৫)।” অন্যত্র মহান আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর নবীকে (সাঃ) বলেছেন, “মন্দকে প্রতিহত করুন সর্বোত্তম পন্থায় (২৩:৯৬)।” রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় এ সর্বোত্তম পন্থাটিই অনুসরণ করেছেন। পবিত্র কুরআনের এসব নির্দেশনা ও উদার নীতি শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় বিরাট অবদান রেখেছে। যার ফলে ইসলাম দ্রুত গতিতে সারা বিশ্বে প্রসার লাভ করতে পেরেছে।
ইসলামের অনুসৃত মধ্যমপন্থা সংঘাতয় বিশ্ব ও বিপন্ন মানবতার জন্য এক বিরাট আশীর্বাদস্বরূপ। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁর নবী হযরত মুহাম্মদকে (সাঃ) ’রাহমাতুল্লিল আলামীন’ অর্থাৎ সৃষ্টিকুলের রহমতস্বরূপ এ দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। তিনি ছিলেন শান্তির প্রতীক এবং শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রচারে তাঁর ছিল শান্তিপূর্ণ বলিষ্ঠ ভূমিকা। মক্কাবাসী কোরেশদের অত্যাচার-নিপীড়নে অতিষ্ট হয়ে তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে নিয়ে মদীনায় হিজরত করলেন। সেখানকার মুসলিম জনগণ সসম্মানে তাঁকে ও তাঁর অনুসারীগণকে সৌভ্রাতৃত্বের মর্যাদায় অভিষিক্ত করলেন। মদীনার সকল গোত্র, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিয়ে তিনি একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে একটি সাম্প্রদায়িক সহ-অবস্থানের নীতিমালা সম্বলিত সংবিধান রচনা করলেন যা ইতিহাসে ’মদীনা সনদ’ নামে পরিচিত। তৎকালীন সময়ে তাঁর এ সনদটি ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাসে এক বিস্ময়কর অবদান। বিশ্বাসে, কথায় ও কাজে একই সরল রৈখিক অবস্থানে থেকে তিনি প্রমাণ করেছেন ইসলাম মধ্যমপন্থী ও শান্তিপূর্ণ ধর্ম এবং এতে নেই কোন বক্রতার অবকাশ।
মদীনা সনদ ও সাম্প্রদায়িক সহ-অবস্থানের নীতিমালাঃ
o ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক নবী মুহাম্মদ (সাঃ) চৌদ্দ শত বছর পূর্বে মদীনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়, গোত্র ও জনগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে 'মদীনা সনদ' নামে যে জাতীয় ঐক্য চুক্তি সম্পাদন করেন তা বিশ্ব ইতিহাসে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অমূল্য দলিল হিসেবে চির ভাস্বর হয়ে আছে। এ সনদে সকল নাগরিকের ধর্মীয় অধিকার, জীবন ও সম্পদ রক্ষার অধিকার এবং ন্যায় বিচার লাভের অধিকার সুরক্ষিত করা হয়েছিল।
o মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিম যারা জিম্মী নামে পরিচিত, তারা ছিল রাষ্ট্রের পবিত্র আমানত। আল্লাহ্ ও তাঁর নবীর (সাঃ) নামের শপথ দ্বারা তাদের জীবন ও সম্পদ ছিল সুরক্ষিত। ন্যায় বিচার লাভে ছিল তাদের পূর্ণ অধিকার। এ ধরনের ভূরিভূরি দৃষ্টান্ত রয়েছে সে সময়ের ইতিহাসে। পবিত্র হাদীসে নবী করিম (সাঃ) সতর্ক করে বলেছেন, "কেহ কোন জিম্মিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করলে বেহেশতের গন্ধও শুঁকতে পাবে না (নাসায়ী)।" অন্য হাদীসে আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেন, "নিষ্ঠুরতা ও অন্যায়কে পরিহর করে চলো, ..... এবং লোভ ও কার্পণ্য থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করো, কারণ এগুলোই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে (রিয়াদুস সালেহীন)।"
o ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রাঃ) যখন নামাযে ইমামতি করছিলেন তখন একজন অমুসলিম বিষ-মাখা ছুরি দিয়ে তাঁকে আহত করে। এ অবস্থায় তাঁর মৃত্যু আসন্ন হয়ে পড়ে। মৃত্যু শয্যায় তিনি অমুসলিমদের ওপর প্রতিশোধের আশংকায় উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, "ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত যে জনগোষ্ঠী (অমুসলিম জিম্মিী) আল্লাহ্ ও তাঁর নবীর (সাঃ) নামে সুরক্ষাপ্রাপ্ত তাদের পক্ষ থেকে আমি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি যে, তাদের ব্যাপারে আমাদের শপথ পালন করতেই হবে, তাদের রক্ষার ব্যাপারে আমাদেরকে লড়াই করতে হবে, এবং তাদের ওপর সাধ্যাতীত কোন বোঝা চাপানো যাবে না।" সপ্তম শতাব্দীতে ইসলাম জাহানের খলীফা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যাপারে উদারতার যে পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছিলেন তারই বিপরীত দৃশ্যটি দেখা যায় বিংশ শতাব্দীতে। এক শিখ দেহরক্ষীর হাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকান্ডের পরবর্তী প্রতিশোধমূলক নৃশংস ঘটনায় সংখ্যালঘু শিখ সম্প্রদায়ের তিন হাজার মানুষ সরকারী ছত্রছায়ায় গণহত্যার শিকার হয়েছিল। মুসলিম সংখ্যালঘুরাও ভারতে প্রতি নিয়ত একই ধরনের হত্যার শিকার হচ্ছে। সংখ্যলঘুদের ব্যাপারে ইসলামের উদারতা ইতিহাসের পাতায় চিরদিন এক সমুজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
o খৃষ্টান, ইহুদী ও অন্যান্য জনগোষ্ঠী মুসলমান সাম্রাজ্যে শত শত বছর এক সাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করেছে। তারা ধর্মীয় স্বাধীনতার সাথে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সুযোগ পেয়েছে। ইসলামের নামে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কাউকে হত্যা করার অনুমোদন কখনও ছিল না। ভারত সাম্রাজ্যে আট শত বছর মুসলিম শাসন বিরাজ করলেও মুসলমানরা সব সময় সংখ্যালঘুই ছিল। খৃষ্টান ধর্মীয়-যুদ্ধারা (crusaders) ১০৯৯ সালে যখন জেরুযালেম মুসলিমদের নিকট থেকে দখল করে তখন তারা সেখানে গণহত্যা চালিয়ে সব মুসলিম ও ইহুদী জনগোষ্ঠীকে হত্যা করে। অথচ ১৪৫৩ সালে ওটোমান সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ যখন খৃষ্টান শাসিত কন্সটান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তাম্বুল) জয় করেন তখন সকল খৃষ্টান নাগরিককে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করেছিলেন।
o ইসরাইলী সাংবাদিক, মানবতাবাদী ও ইসরাইলী সংসদ 'নেসেটের' প্রাক্তন সদস্য ইউরি এভনারী দুইটি উদ্ধৃতি প্রমাণ করে ইসলাম অমুসলিমদের ব্যাপারে কতটা উদার ও মানবতাবাদী ছিল। স্পেনে মুসলিম শাসনামলে অন্য ধর্মাবলম্বীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, "মুসলিম স্পেন ছিল ইহুদীদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য, এবং মুসলিম বিশ্বে ইহুদী হত্যাযজ্ঞ (Holocaust) কখনও সংঘটিত হয়নি। এমনকি হত্যাকান্ডের ঘটনাও ছিল খুবই নগণ্য। মুহাম্মদের (সাঃ) নির্দেশ ছিল আহলে-কিতাবদের (কিতাবধারী ইহুদী ও খৃষ্টান সম্প্রদায়) সাথে সহিষ্ণু আচরণ করতে হবে এমন সব শর্তাধীনে যা ছিল অতুলনীয় ও আধুনিক ইউরোপীয় আচরণের তুলনায় বেশী উদার। মুসলমানেরা কখনোই ইহুদী ও খৃষ্টানদের ওপর তাদের ধর্ম জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়নি, বরং বাস্তবে দেখা গেছে, ক্যাথলিক স্পেন থেকে যেসব ইহুদীদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তারা মুসলিম দেশগুলোতে বসতি স্থাপন করেছে এবং সেখানে সমৃদ্ধি লাভ করেছে।" অপর একটি নিবন্ধে তিনি বলেন, "প্রতিটি সৎ ইহুদী যিনি তার জাতির ইতিহাস জানেন, ইসলামের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা অনুভব না করে পারবেন না এ জন্য যে, ইসলাম ইহুদীদেরকে পঞ্চাশ প্রজন্ম পর্যন্ত সুরক্ষা দিয়েছে, যেখানে খৃষ্টান জগৎ বহুবার 'তরবারীর দ্বারা' ইহুদীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে যাতে তারা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস পরিত্যাগ করে (মুহাম্মদʼস সোর্ড : সেপ্টেম্বর ২৭, ২০০৬) ।" এর বিপরীতে অকৃতজ্ঞ ইহুদী জাতি ফিলিস্তিনের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর যে নির্মম ও বর্বর নিপীড়ন ও হত্যাকান্ড চালাচ্ছে তাতে বিশ্ববাসী হতবাক।
ইসলাম কখন যুদ্ধের অনুমতি দেয়ঃ
o ইসলাম ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও আত্মরক্ষার্থে যুদ্ধ অনুমোদন করেছে। তাও সেটা করা হয়েছে সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে। মক্কার বুকে ইসলাম প্রচারের প্রথম তেরোটি বছর ছিল আল্লাহর নবী (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীগণের ওপর কাফেরদের চরম অত্যাচার, নিগৃহ ও নির্যাতনের কালো অধ্যায়। অত্যাচার-নিপীড়নে অতিষ্ট হয়ে মুসলমানদের একটি দল আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন এবং অপর একটি দল মদীনায় হিজরত করেন। নবী করিম (সাঃ) যখন জানতে পারলেন কোরেশদের একটি দল তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে তখন বাধ্য হয়ে তিনিও মদীনায় হিজরত করলেন। সেখানেও ওরা তাঁদেরকে শান্তিতে থাকতে দিল না। মদীনা আক্রমণের জন্য তারা সিরিয়া থেকে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আসল। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহ্ জিহাদের নির্দেশ জারী করলেন। তবে নবীকে (সাঃ) সতর্ক করে বললেন, "যদি তোমরা তাদের শাস্তি দাও, তবে ঠিক ততটুকুই শাস্তি দেবে যতটুকু অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে। কিন্তু যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর তবে সেটাই হচ্ছে ধৈর্যশীলদের জন্য সর্বোত্তম পন্থা (১৬:১২৬)।" প্রতিপক্ষের মোকাবেলায় ক্ষমা ও ন্যায়নীতি অবলম্বন করতে এবং সীমা লঙ্ঘন না করতে আল্লাহ্ তাঁর নবীকে এভাবে নির্দেশ দিলেন।
o ".........তোমাদিগকে মসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা দেওয়ার কারণে কোন সম্প্রদায়ের প্রতি তোমাদের ক্রোধ তোমাদেরকে যেন কখনই সীমালঙ্ঘনে প্ররোচিত না করে। সৎকর্ম ও আল্লাহ্ভীতির ব্যাপারে সবার সাথে সহযোগিতা করো এবং গুনাহ ও সীমালংঘনের কাজে কাউকে সহযোগিতা করো না। আল্লাহ্কে ভয় করো। তাঁর শাস্তি বড়ই কঠোর। (৫:২)।" মহান আল্লাহর এ নির্দেশটিই প্রমাণ করে ইসলাম কতটা উদার ও সহনশীল ধর্ম। ইসলাম সব সময়ই সীমালঙ্ঘন ও বাড়াবাড়ির ব্যাপারে মুসলমানদেরকে সতর্ক করে দিয়েছে।
o যুদ্ধক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংযম ও মানবিকতা প্রদর্শনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে যাতে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মত কোন ঘটনা না ঘটে। এখানে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক মুসলিম সৈন্যদের জন্য প্রণীত যুদ্ধের নীতিমালা উল্লেখ করা হলো: ১. কোন শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিকে হত্যা কর না (হাদীস গ্রন্থ: আবু দাউদ), ২. বিশ্বাসঘাতকতার আশ্রয় নিও না বা মৃতদেহ বিকৃত কর না (আল মুয়াত্তা), ৩. খেজুর বৃক্ষ উৎপাটন কর না বা ফলবতী বৃক্ষ কর্তন কর না (আল-মুয়াত্তা), খাওয়ার প্রয়োজন ব্যতীত কোন প্রাণী হত্যা কর না (আল-মুয়াত্তা), ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোন সাধুকে হত্যা কর না এবং উপাসনালয়ের ভিতরে অবস্থানরত কোন ব্যক্তিকেও হত্যা কর না (মুসনাদ আহমদ ইবনে হাম্বল), কোন গ্রাম/শহর ধ্বংস কর না, কোন ফসলী জমি/বাগান নষ্ট কর না এবং এবং পশুরপাল হত্যা কর না (সহীহ বুখারী/সুনান আবু দাউদ)।
o নবী হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) রণনীতি, সন্ধি চুক্তি, যুদ্ধবন্দীদের সাথে আচরণের নীতিমালা ছিল মানবিকতায় পরিপূর্ণ । কোন কায়েমী বৈষয়িক স্বার্থে, মিথ্যাচারের মাধ্যমে, ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে, প্রতিহিংসার বশে কিংবা গণহত্যা ও বিধ্বংসী নির্মমতার দ্বারা তিনি কখনও তাঁর নীতিকে কলুষিত হতে দেননি। শান্তিপূর্ণ পন্থায় মক্কা বিজয়ের পর তাঁর অনুসৃত ক্ষমা ও উদার মানবিক আচরণ ইসলামের মহানুভবতাকে বিশ্ববাসীর নিকট এক সমুজ্জ্বল নজীর হিসেবে স্থাপন করেছে। চৌদ্দশত বছর পূর্বের সেই মানবিকতা সমৃদ্ধ ইসলামী যুদ্ধনীতিমালা বর্তমান কালের মানবাধিকারকেও হার মানিয়েছে। তরবারীর দ্বারা নয়, বরং শান্তিপূর্ণ নীতিমালার দ্বারাই ইসলাম শত্রুর মন জয় করেছে।
পরিশেষে বলতে চাই, বর্তমান বিশ্বে পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ ইসলামকে একটি উগ্রবাদী জঙ্গীধর্ম বলে চিহ্নিত করার দুরভিসন্ধি করছে। আইএস, আল-কায়েদা, ইত্যাদি নামের জঙ্গীবাজরা যে তাদেরই সৃষ্ট এটা এখন বিশ্ববাসী জানে। তাদের এ ভাওতাবাজী ও ধোকায় পড়ে যাতে কেহ বিভ্রান্ত না হয় সে জন্য মুসলিম উম্মাহকে আরো বেশী সোচ্চার হতে হবে।


“খিলাফতই একমাত্র সমাধান।”

.

মুসলিম ইতিহাসে পলিটিক্যালি সবচেয়ে সেরা সময় ছিলো আবু বকর, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার শাসনকাল। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনকালের মাঝখান থেকেই শুরুই হয় আভ্যন্তরীণ সমস্যা, যার পরিণতিতে তাঁকে হত্যা করা হয়। 

আমরা শুধুমাত্র ভালো শাসকের কথা শুনি। কিন্তু, শাসন ব্যবস্থা কতোটা স্ট্যাবল থাকবে, শাসক কতোটা ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন সেটা অনেকটা নির্ভর করছে জনগণের ওপর। 

আবু বকর, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার শাসনকাল সর্বোত্তম, আদর্শ হবার পেছনে তাঁদের যোগ্যতা, দক্ষতা, শরীয়াহর আলোকে রাষ্ট্রপরিচালনা যেমন ছিলো, তেমনি যেই ফ্যাক্টর আমরা ভুলে যাই সেটা হলো- তারা কাদের ওপর শাসন করেন?

তাঁদের জনগণ ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বোত্তম মানুষ। ঐ জেনারেশনের মানুষের মতো দ্বীনদার এবং আনুগত্যশীল (আল্লাহর প্রতি এবং খলিফার প্রতি) মানুষ পৃথিবীর ইতিহাসে আগে কখনো ছিলো না, কখনো আসবেও না। 

প্রথম দুই খলিফার শাসনকালে আপনি ‘বিরোধী দল’ পাবেন না। হ্যাঁ, তাঁদের কোনো মতামতের সাথে কারো দ্বিমত ছিলো, তারা বুঝানোর পর বাকিরা মেনে নিয়েছে। কিন্তু, ইসলামি রাজনীতিতে বিরোধী দলের উত্থান হয় উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর সময়। বিরোধী দলের উত্থান হওয়াটা উসমান-আলী-হাসান-মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুমের দুর্বলতা বা অযোগ্যতা না; এটার জন্য তারা দায়ী নন।

উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে ছিলেন বেশ সফট। এটাই তাঁর স্বাভাবিক ন্যাচার ছিলো। কিন্তু, মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর সময় চ্যালেঞ্জ ছিলো সবচেয়ে বেশি। তিনি খারেজীদের মোকাবিলা করেছিলেন বেশ শক্তহাতে। সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় তিনি ক্ষমতায় ছিলেন (৪০ বছর; ২০ বছর গভর্নর, ২০ বছর খলিফা) তাঁর মেধা, প্রজ্ঞার কারণে। 

অনেকেই মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর সমালোচনা করে তাঁর ২-৩টি সিদ্ধান্তের কারণে। কিন্তু, একটি সত্য সবাইকেই স্বীকার করতে হবে যে, মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর পরবর্তী মুসলিম ইতিহাসে যতো শাসক এসেছিলেন, কেউই তাঁর মতো এতো লম্বা সময় ধরে, এতোটা ইনসাফের সাথে, এতোটা দক্ষতার সাথে মুসলিমদের নেতৃত্ব দেননি।

আমরা যখন মুসলিম ইতিহাস, খিলাফত এসব নিয়ে ভাবি, তখন মনের অজান্তেই তৈরি হয়ে একধরনের ফ্যান্টাসি। মনে হয়- খিলাফত থাকলেই বুঝি সব সমস্যার সমাধান। 

এটা সত্য যে, খিলাফত থাকাবস্থায় মুসলিমরা তুলনামূলক ভালো অবস্থায় ছিলো, মানসিক শক্তি ছিলো। যেই কারণে ভঙ্গুর উসমানি খিলাফত টিকিয়ে রাখার জন্য উপমহাদেশের মুসলিমরা নানান চেষ্টা করেছে। এমনকি একটি ‘বিখ্যাত বিয়ে’ অনুষ্ঠিত হয়। 

কিন্তু, পুরো মুসলিম ইতিহাস যদি দেখেন, দেখবেন খিলাফতই সব সমস্যার সমাধান ছিলো না। মধ্যযুগে বাগদাদে ছিলো আব্বাসী খিলাফত, স্পেনে ছিলো উমাইয়্যা খিলাফত, মিসরে ছিলো শিয়াদের ফাতেমি খিলাফত। ভারত উপমহাদেশে মুসলিমরা কয়েকশো বছর শাসন করলেও সেটা আদতে কোনো কেন্দ্রীয় খিলাফতের ‘নিয়ন্ত্রণে’ ছিলো না। এখানকার কোনো ডিসিশন আব্বাসী, উমাইয়্যা, উসমানি খলিফাগণ দিতেন না। 

উপমহাদেশের রাজনীতির ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে উপমহাদেশের মুসলিম শাসকদের দ্বারা। কখনো সুলতানি শাসক, কখনো মোঘল শাসক, কখনো মুসলিম লীগ। তারা এই অঞ্চলের বাস্তবতা অনুযায়ীই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। 

পৃথিবীটা আসলে এতো বড়ো, পুরো পৃথিবী একইসাথে শাসন করেছে, আমার জানামতে এমন কোনো শাসক ছিলেন না, কোনো সিস্টেম ছিলো না। 

মুসলিম খিলাফত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু পর্যন্ত ছিলো পুরোটাই কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে। তখন পর্যন্ত কোন এলাকার কে গভর্নর হবেন সেটা মদীনা থেকে নিয়ন্ত্রিত হতো। কোথাও অনাচার হলে সরাসরি খলিফার কাছে আসলে বিচার পাওয়া যেতো; সেটা গভর্নরের বিরুদ্ধে হলেও। যেমনটা আমরা দেখতে পাই মিশরের আমর ইবনুল আ’স রাদিয়াল্লাহু আনহুর ছেলের বিচার উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু করেন। 

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফা হবার পর পুরো মুসলিম বিশ্ব তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিলো না। বলা যেতে পারে, তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিলো ৬০%। 

১৪০০ বছরে মুসলিমরা নিজেদের অঞ্চলের রাজনৈতিক ভাগ্য নিজেরাই ঠিক করেছে, পরিবর্তন এনেছে। 

খিলাফত থাকা সত্ত্বেও মোঙ্গলদের হামলা, ক্রুসেডারদের হামলা মোকাবিলা করা মুসলিমদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। সেই অযোগ্যতা ছিলো মুসলিম ইতিহাসের রাজনৈতিক পালাবদলের অন্যতম কারণ। অযোগ্য আব্বাসিদের থেকে কেন্দ্রীয় শাসন চলে যায় মামলুকদের হাতে, আইয়ূবীদের হাতে। আরেক রাজনৈতিক পরিক্রমায় আবির্ভাব ঘটে উসমানিদের। 

উসমানিরা ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও পতন ঘটে স্পেনের মুসলিম শাসনের; মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে ট্র্যাজেডি ছিলো স্পেন পতন এবং স্পেনের মুসলিমদের অবস্থা। 

উসমানিরা ক্ষমতায় থাকাবস্থায়ই উপমহাদেশ কলোনিয়াল আগ্রাসনের শিকার হয় এমনকি ইংরেজরা দখল করে নেয়। উপমহাদেশের মুসলিমদের রেসকিউ করার জন্য উসমানি খিলাফতের কার্যকর কোনো উদ্যোগ ছিলো না। আসল কথা হলো, সেটা প্রত্যাশিতও না। 

দূরবর্তী কোনো অঞ্চলে মুসলিমরা যখন বিপদে পড়েছে, নিশ্চিহ্ন হয়েছে, তখন মুসলিম খিলাফত থেকে উদ্যোগ নিয়ে রেসকিউ করতে যাওয়া হয়েছে সেটা খুবই রেয়ার। 

আমরা যে স্লোগান দিই, খিলাফত হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, সেটা শুনতে ভালো লাগলেও ইতিহাসের আলোকে যেমন তা কোনোদিন বাস্তব ছিলো না, বর্তমান বাস্তবতায়ও সেটা ঠিক না। 

আমরা যেখানে বসবাস করি, যেই গ্রাম, যেই উপজেলা, যেই দেশ, সেখানকার বাস্তবতায় আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে একজন মুসলিম হিসেবে, যে কিনা ইসলামকে বিজয়ী হিসেবে দেখতে চায়, সে কী করতে পারে। 

এই স্বপ্ন দেখার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা হলো (শুনতে তিতা লাগলেও) ‘খিলাফত ফ্যান্টাসি’।  

সাহাবী পরবর্তী মুসলিম শাসকদের মধ্যে কেউ ছিলেন ভালো, কেউ ছিলেন নিকৃষ্ট। সেই নিকৃষ্ট শাসকরাও ছিলেন ‘খলিফা’ যাদের কারণে মুসলিম ইতিহাসে হাজার-হাজার আলেম কারাবরণ করেন, যাদের কারণে হাজার হাজার মুসলিমকেও হত্যা করা হয়। 

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, খিলাফতও মানুষের শাসন। এটা এমন কোনো শাসনব্যবস্থা না যে, এটা কায়েম হবার পর সুইচ চাপলেই ন্যায়-ইনসাফ সব চলে আসবে; অটোম্যাটিক সবকিছু ‘ইসলামি’ হয়ে যাবে।

মন্তব্যসমূহ

  1. বাতিল । বিভ্রান্ত করার চেষ্টা ।
    “যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথামত চল, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে।” (সূরা আনআম : ১১৬)“তুমি বল হে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ্! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান কর এবং যার নিকট থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নাও।” (সূরা আল ইমরান : ২৬)

    উত্তরমুছুন
  2. প্রতিটি লেখা আলাদা আলাদা করে শিরোনামগুলো বোর্ড করে দিলে এবং লেখক এর নাম উল্লেখ করলে ভালো হতো । তবে অনেকগুলো লেখা মিলে জগাখিচুড়ি হলেও লেখাটা বেশ তথ্যবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জাযাকুমুল্লাহ ।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে

শর্ষীনা, ফুরফুরা, জৌনপুরী, ফুলতলী, সোনাকান্দা সহ সকল বালাকোটি পীরগনের শেরেকী আকীদা