সম্মানিত ওলামায় দেওবন্দীদেরকে বলছি - কেন আপনারা জামায়াতে ইসলামকে সমর্থন করবেন




বাংলাদেশে কুরআনী আইন চালু করার একমাত্র যোগ্য দল হল জামাতে ইসলাম। গনতান্ত্রিক পন্থায় জনগণকে বুঝিয়ে সাথে নিয়ে তাদের ভোটেই কুরআনের আইন চালু করতে চায় ভারত উপমহাদেশের জামাতে ইসলাম, মিশরের ইখওয়ান আর তুরষ্কের একে পার্টি। আর এ পদ্ধতির বিরোধিতা কারী সবচাইতে বড় ইসলামি দল হল ওলামায় দেওবন্দ। তারা দাওয়াত-তাবলীগ ও জিহাদে বিশ্বাসী। তাদের জিহাদী কার্যক্রমের প্রতিনিধিত্ব করে আফগানিস্তানের তালেবান দল। কিন্তু এটি চরম বাস্তবতা যে, তালেবান খমতায় গিয়েও গার্লর্স স্কুল বন্ধ করে দেয়া, নারীদের চাকুরী বন্ধ করে দেয়া সহ কতিপয় অবিবেচক কর্মকান্ডের জন্য আফগান জনগনের সমর্থন হারায় এবং কুরআনী আইন চালু করতে অপারগ হয়। এখানে আমাদেরকে একটি কথা বুঝতে হবে যে, কুরআনী আইন মানি কি শুধুই কতিপয় ফৌজদারী দন্ডবিধির বাস্তবায়ন নাকি সামগ্রিক ভাবে আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা ? যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার প্রেক্ষাপট তৈরী করার জন্যই একবার দুর্ভিক্ষ কালে হযরত ওমর (র.) চুরির হাত কাটার কুরআনী বিধান কিছু দিনের জন্য স্থগিত রেখেছিলেন। তাই আমাদেরকে আগে কুরআনী আইন বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপট তৈরী করতে হবে। বেকার দের কর্মসংস্থান তৈরী করতে হবে, পতিতাদের সুস্থ জীবনের ব্যাবস্থা করতে হবে, তার আগে যেনার শাস্তিও কার্যকর করা যাবে না। যাই হোক এগুলো ইজতিহাদী ব্যাপার, যা ফুকাহায় কেরামগণ বিস্তারিত লিপিব্ধ করে গিয়েছেন, মূল কথা হলো আগে কুরআনী আইন প্রয়োগ করার আগে পয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। আর এ ক্ষেত্র প্রস্তুতের কাজেই আপাতত মনযোগ দিচ্ছে জামাতে ইসলাম সহ গনতান্ত্রিক পন্থায় ইসলামী আইন চালুর চেষ্টায় রত দল গুলো। আর সে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই তারা সম্পূর্ণ দূনীতি মুক্ত ভাবে সফলরুপে দুটি মন্ত্রনালয় পরিচালনা করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে, পাচবার দুর্নিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ান দেশকে দুর্নিতি মুক্ত সফল রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম একমাত্র জামাতে ইসলাম। আর কুরআনী ফৌজদারী আইনগুলো প্রয়োগ করার আগে দেশে এ রকম প্রেক্ষাপটই আগে তৈরী করতে হবে। আর এ দূরদক্ষিতার অভাবেই অনেকে জামাতের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক দম্ভেক্তি করে থাকে যে, জামাত শুধু ক্ষমতায় যাবার জন্যই রাজনীতি করে। আর আমাদের দেশের দেওবন্দী ওলামাগণ না পারেন বাংলা না পারেন ইংরেজী অতএব তাদের পক্ষে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্পূর্ণ অসম্ভব। আর যারা নিজেরাই চলেন যাকত ফেতরার দান সদকায় তারা কি করে দেশকে দারিদ্রতা মুক্ত সনির্ভব দেশে পরিনত করবেন ! বাংলদেশের চরম ভারতীয় আগ্রাসন এবং নাস্তিক্যবাদী হামলার সামন্য আচ উপলব্ধি করে মাদ্রাসা-মসজিদে থাকা এ দেওবন্দী ওলামাগণ অবশেষে হেফাজতে ইসলামরে ব্যানারে একবার মাত্র রাস্তায় নামতে সমর্থ হয়েছেন। কিন্তু তাদের সাংগঠিন বাস্তবতা এতটাই দূর্বল যে, ৫ মে তে কতজন শহিদ হয়েছেন তার একটি তালিকা পর্যন্ত তারা তৈরী করতে আজ অবধি সক্ষম হন নি। অতএব সাভাবিক ভাবেই বুঝাই যাচ্ছে ইসলামীর রাষ্ট্র পরিচালনায় তারা কতটা অযোগ্য। তাদের এ বোধদয় হওয়া প্রয়োজন যে, তাদের তের দফা কোন সরকার ই মানবেনা, একমাত্র জামাতে ইসলাম একক ভাবে ক্ষমতায় আসতে না পারলে। অতএব তাদের নিজেদের তেরদফা বাস্তবায়নের জন্য হয় তাদের নিজেদেরকেই রাজনীতিতে আসা বাধ্যতামূলক অথবা জামাতে ইসলাম কে সমর্থন করা তাদের জন্য ফরজ।

মৌদুদী প্রসঙ্গ :

কিন্তু যখনই জামাতে ইসলামকে সমর্থন করার কথা উঠে তখনই তারা মাওলানা মৌদুদীর প্রসঙ্গ টেনে এনে ঐক্যের পথে বাধা সৃষ্টি করে। অথচ তারা যেভাবে মুরব্বি চেতনায় উদ্ভুদ্ধ থাকে জামাত কখন সেভাবে মৌদুদীর নামটাও উচ্চারন করেনা তাদের কোন সভা-সমাবেশ বা সেমিনারে। জামাতের বাইশ দফার মাঝে কোথাও মৌদুদীর নামও উল্যেখ নেই। জামাতের মূল লক্ষ্য হলো দেশে কুরআনের আইন চালু করা। তাদের মুলনীতির বা মেনুফেষ্টার কোথাও মৌদুদীর নামও নেই। জামাতের প্রথম মূলনীতি দেশে আল্লাহর সারভোভৌমত্ব তথা আল্লাহর আইন চালু করার উল্লেখ থাকায় আওয়ামি নাস্তিক কোর্ট জামাতকে এ দেশের সংবিধান অস্বিকারকারী হিসেবে নিষিদ্ধ করার ঘোষনা দিয়েছে, তারপরেও কেউ যদি বলে যে জামাত ইসলামী দল নয়, তবে তার ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের মাত্র সহজেই অনুমেয়। জামাতের মূলনীতি গুলো হলো – ১. দেশের সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ। ২. দেশের আইন আলকুরআন ও আস্সুন্নাহর ভিত্তিতে রচিত হবে। ৩. রাষ্ট্র ইসলামী আদর্শ ও নীতিমালার উপর সংস্থাপিত হবে। ৪. রাষ্ট্র মা‘রুফ প্রতিষ্ঠা করবে এবং মুনকার উচ্ছেদ করবে। ৫. রাষ্ট্র মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য সম্পর্ক মজবুত করবে। ৬. রাষ্ট্র সকল নাগরিকের মৌলিক প্রয়োজন পূরণের গ্যারান্টি দেবে। ৭. রাষ্ট্র শারীয়াহর নিরিখে নাগরিকদের সকল অধিকার নিশ্চিত করবে। ৮. আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। ৯. স্বীকৃত মাযহাবগুলো আইনের আওতায় পরিপূর্ণ দীনী স্বাধীনতা ভোগ করবে। ১০. অমুসলিম নাগরিকগণ আইনের আওতায় পার্সোনাল ল’ সংরক্ষণ ও পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। ১১. রাষ্ট্র শারীয়াহ কর্তৃক নির্ধারিত অমুসলিমদের অধিকারগুলো নিশ্চিত করবে। ১২. রাষ্ট্রপ্রধান হবেন একজন মুসলিম পুরুষ। ১৩. রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হবে। ১৪. রাষ্ট্রপ্রধানকে পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি মাজলিসে শূরা থাকবে। ১৫. রাষ্ট্রপ্রধান দেশের শাসনতন্ত্র সাসপেন্ড করতে পারবেন না। ১৬. সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাষ্ট্রপ্রধানকে পদচ্যুত করা যাবে। ১৭. রাষ্ট্রপ্রধান তাঁর কাজের জন্য মাজলিসে শূরার নিকট দায়ী থাকবেন এবং তিনি আইনের ঊর্ধ্বে হবেন না। ১৮. বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন হবে। ১৯. সরকারী ও প্রাইভেট সকল নাগরিক একই আইনের অধীন হবে। ২০. ইসলামবিরোধী মতবাদের প্রচারণা নিষিদ্ধ হবে। ২১. দেশের বিভিন্ন অঞ্চল একই দেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক ইউনিট বলে গণ্য হবে। ২২. আলকুরআন ও আস্সুন্নাহর পরিপন্থী শাসনতন্ত্রের যেই কোন ব্যাখ্যা বাতিল বলে গণ্য হবে।

মাওলানা মওদুদী (রহ) এর ব্যপারে জামায়াত এর দৃষ্টিভংগি-১

নিজের ব্যপারে মাওলানা মওদুদীর অবস্থানঃ " পরিশেষে একটি কথা পরিষ্কার করে দিতে চাই, ফিকাহ ও ইলমে কালামের বিষয়ে, আমার নিজস্ব একটি তরিকা রয়েছে। আমার ব্যক্তিগত অনুসন্ধান, গবেষণার ভিত্তিতে আমি এটি নির্ণয় করেছি। গত আট বছর যারা "তারজামানুল কুরআন পাঠ করেছেন তারা একথা ভালোভাবেই জানেন। বর্তমানে এই সংগঠনের আমীরের পদে আমাকে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। কাজেই একথা পরিষ্কার ভাবে বলে দিতে হচ্ছে যে- ফিকাহ ও ইলমে কালামের ব্যপারে, ইতিপূর্বে আমি যা লিখেছি এবং ভবিষ্যতে যা লিখবো অথবা বলবো তা জামায়াতে ইসলামীর আমীরের ফয়সালা হিসেবে গন্য হবে না। বরং তা হবে আমার ব্যক্তিগত মত। এইসব বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত রায়কে,

জামায়াত এর অন্যান্য আলেম বা গবেষক দের উপর চাপিয়ে দিতে আমি চাইনা! এবং আমি এও চাই না যে, জামায়াত এর পক্ষ থেকে, আমার উপর এমন সব বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে যে, যার ফলে ইলমের ক্ষেত্রে, আমার গবেষণা করার এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া হবে। জামায়াতের সদস্যদের কে আমি আল্লাহর দোহাই দিয়ে অনুরোধ করছি যে,

ফিকাহ ও কালাম শাস্ত্র সম্পর্কিত আমার কথাকে, আপনারা কেউ অন্যের সম্মুখে প্রমান স্বরুপ পেশ করবেন না। অনুরুপ ভাবে আমার ব্যক্তিগত কার্যাবলীকেও, যেগুলোকে আমি নিজের অনুসন্ধান ও গবেষণার পর জায়েয মনে করেছি, অন্য কেউ যেন প্রমান স্বরুপ গ্রহন না করে, এবং নিছক আমি করেছি বলেই যেন বিনা অনুসন্ধান এ তার অনুসারী না হন।

এ ব্যপারে প্রত্যেকের পুর্ন স্বাধীনতা রয়েছে। উপরন্তু এ ব্যপারে আমার বিপরীত মত পোষন করার এবং নিজেদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রত্যেকের রয়েছে" -

(জামায়াতে ইসলামীর কার্যবিবরনী-১মখন্ড, ২৮ পৃষ্টা)

এর পরেও দেওবন্দী ওলামাগণ যদি জামাতকে ইসলামী দল নয় বলে গলাবাজি করেন তবে তারা যে আসলে ইসলামি রাষ্ট্র পরিচালনায় জামাতের সফলতা-দক্ষতায় নিজেদের নিদারুন অপারগতায় হিংসুক হয়েই এ মিথ্যার ফুলঝুরি ছোটান এটা বুঝতে বেশি জ্ঞানের প্রয়োজন হয় বলে মনে করি না।

জামায়াতে ইসলামী ও মাওলানা মওদুদী (রঃ) : ইকামাতে দ্বীনের উদ্দেশ্যে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করা উচিত কিনা তা যোগদানকারীর বিবেচনার বিষয়। এ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মওলানা সাইয়েদ আবুল আল মওদূদী (রঃ)। তিনি দুনিয়ায় এখন না থাকলেও যেহেতু তার তাঁর সাম্পর্কে নানা কথা প্রচলিত আছে,সেহেতু বর্তমান জামায়াতে ইসলামের সাথে মরহুমের কি সম্পর্ক সে বিষয়ে কিছু যরুরী কথা পেশ করছিঃ

একঃ মাওলানা সাইয়েদ আবুল আল মওদুদী (রঃ) আজীবন একথার উপর জোর দিয়েছেন যে,আল্লার রাসূল (সঃ) ছাড়া আর কোন ব্যক্তিকে অন্ধভাবে মানা উচিত নয়। একমাত্র রাসূলই ওহী দ্বারা পরিচালিত হবার করণে নির্ভূল। অন্য কেউ ভূলের ঊর্ধে নয়। সুতারাং মাওলানা আবুল আল মওদুদী (রঃ)কোন কথাকেই রাসূলের কষ্টি পাথরে যাচাই না করে আমি মানতে রাজি নই। কুরআন ও সুন্নার বিচারে তার মাতামত যতটুকু গ্রহনযোগ্য মনে হয় আমি ততটুকু গ্রহন করি। এটাই জামায়াতে ইসলামের নীতি। ১৯৪১ সালে যখন তিনি জামায়াতের আমীর নির্বাচিত হন তখনি তিনি নিন্মরূপ ঘোষনা দেনঃ “ পরিশেষে একটি কথা পরিষ্কার করে দিতে চাই। ‘ফিকাহ’ ও ইলমে কালামের বিষয়ে আমার নিজস্ব একটি তরীকা আছে। আমার ব্যক্তিগত অনুসন্ধান গবেষনার ভিত্তিতে আমি এটি নির্নয় করেছি। গত আট বছর যারা তারজুমানুল কুরআন’ পাঠ করেছেন তারা এ কথা ভালভাবেই জানেন। বর্তমানে এ জামায়াতের আমীর পদে আমাকে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। কাজেই এ কথা আমাকে পরিষ্কারভাবে বলে দিতে হচ্ছে যে,ফিকাহ ও কালামের বিষয়ে ইতিপূর্বে আমি যা কিছু লিখেছি একং ভবিষ্যতে যা কিছু লিখব অথবা বলবো তা জামায়াতে ইসলামীর আমীরের ফয়সালা হিসেবে গন্য হবে না বরং হবে আমার ব্যক্তিগত মত। এসব বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত রায়কে জামায়াতের অন্যান্য আলেম ও গবেষকদের উপর চাপিয়ে দিতে আমি চাই না এবং আমি এও চাইনা যে,জামায়াতের পাক্ষ থেকে আমার উপর এমন সব বিধি- নিষেধ আরোপ করা হবে যার ফলে ইলমের ক্ষেত্রে,আমার গবেষনা করার এবং মতামত প্রকাশ করার স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়া হবে। জামায়াতের সদস্যদেরকে (আরকান) আমি আল্লার দোহাই দিয়ে নির্দেশ দিচ্ছি যে,ফিকাহ ও কালাম শাস্ত্র সম্পর্কিত আমার কথাকে আপানারা কেউ অন্যের সম্মুখে প্রমান স্বরূপ প্রকাশ করবেন না। অনুরূপভাবে আমার ব্যক্তিগত কার্যাবলীকেও—- যেগুলোকে আমি নিজের অনুসন্ধান ও গবেষনার পর জায়েয মনে করেছি—-অন্য কেউ যেন প্রমান স্বরূপ গ্রহন না করেন এবং নিছক আমি করেছি এবং করেছি বলেই যেন বিনা অনুসন্ধানে তার অনুসারী না হন। এব্যপারে প্রত্যেকের পূর্ন স্বাধীনতা রয়েছে। যারা যারা ইলম রাখেন,তারা নিজেদের গবেষনা অনুসন্ধান মুতাবিক আর যারা ইলম রাখেন না,তারা যারা ইলমের উপর আস্থা রাখেন,তার গবেষনা অনুসন্ধান মুতাবিক কাজ করে যান। উপরোন্তু এ ব্যপারে আমার বিপরীত মত পোষন করার এবং নিজেদের মত প্রকাশ করার স্বাধীনতা প্রত্যেকের রয়েছে। আমরা প্রত্যেকেই ছোটখাট এবং খুঁটিনাটি ব্যপারে বিভিন্ন মতের অধিকারী হয়ে পরস্পরের মুকাবিলায় যুক্তি প্রমান পেশ করে এবং বিতর্কে অবতীর্ন হয়েও একই জামায়াতের অন্তর্ভূক্ত থাকতে পারি—যেমন সাহাবেয়ে কেরাম রাযিয়ল্লাহ আনহু ছিলেন।

দুইঃ জামায়াতে ইসলামীতে হানাফি মাযাহাব ও আহালে হাদীসের অনুসারী ব্যক্তির সমাবেশ রয়েছে। এ জামায়াতে আহালে সুন্নাহ আল জামায়াতের যে কোন মাযহাবের লোক শামিল হতে পারে। জামায়াতে ইসলামী একটি জামায়াত হিসেবে কোন এক মাযাকহাবের ফেকাহ মানতে বাধ্য করে না। যরা জামায়াতে যোগ দান করে তারা তাদের মাযহাবের অনুসরন করে। মাওলানা মওদূদী হানাফি মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু জামায়াতের মধ্যে আহলে হাদীসের লোকও রয়েছে।

তিনঃ জামায়াতের সবাই ইসলাম সম্পর্কে অতীত ও বর্তমান সকল লেখকের বই থেকে স্বাধীন ভাবে মতামত গ্রহন করার পূর্ন স্বাধীনতা রয়েছে। প্রচীন ও আধুনিক তাফসীর,হাদীস ও ফেকহ ইত্যাদি থেকে জ্ঞান অর্জন করতে গিয়ে প্রত্যেকের স্বাধীনভাবে আপন মতামত স্থির করার অধিকার রয়েছে। মওলানা মওদুদী (রঃ)চিন্তার স্বাধীনতার উপর এত গুরুত্ব দিয়েছেন বলেই তাকে অন্ধভাবে অনুসরনের কোন আশংকা নেই।

চারঃ জামায়াতে ইসলামী মওলানা মওদুদী (রঃ)-কে ফেকাহ বা আকায়েদের ইমাম মনে করে না। তাঁর ইজতেহাদকে মেনে নেয়াও জামায়াতের কোন নীতি নয়। জাময়াতে ইসলামীর নিকট মওলানা মওদুদী (রঃ)তিনটি কারনে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। (ক) এ যুগে মওলানা মওদুদীর সাহিত্য ইসলামকে একমাত্র পূর্ণংগ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে পেশ করে দ্বীন ইসলামের সঠিক মর্যাদা বহাল করেছেন। ইসলাম সুধু ধর্মীয় ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ বলে সমাজে যে ভূল ধারনা ছিল তা তাঁর লেখা বিপুল সংখ্যক বই পুস্তকের মাধ্যমে মানুষ বুঝতে শিখেছে। এ উপমহাদেশে ইসলামের এ ব্যপক ধারনা এমন স্পষ্ট ছিল না। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্রেই আল্লার দাসত্ব ও নবীর আনুগত্য করা যে ইসলামের দাবী একথা উপমহাদেশের মানুষের নিকট তিনিই স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। কুরআন ও সুন্নাহ যে গোটা মানব জীবনের জন্য একমাত্র সঠিক ব্যপক হেদায়াত একথা তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। (খ) দ্বীন ইসলামকে বাস্তবে মানব সমাজে কায়েম করা যে মুসলমানের প্রধান দ্বায়ীত্ব একথা মওলানা মওদুদী (রঃ) অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে পেশ করেছেন। শুধু তা-ই নয়,এ শতাব্দীতে তিনিই ইকামাতে দ্বীনের ডাক দিয়ে এ উপমহাদেশে পয়লা বাতিলের বিরূদ্ধে জামায়াতবদ্ধ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ইকামাতে দ্বীনের এ ডাকে যারা সাড়া দিয়েছেন এবং দিচ্ছে তারা আন্দোলনের গুরুত্ব অনুভব করেই যামায়াতবদ্ধ হওয়া ফরয মনে করছে। তিনি ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য এ জাতীয় আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বলেই গোটা উপমাহাদেশে ইসলাম আজ একটি বিপ্লবী আন্দোলনে পরিনত হয়েছে। এমনকি আধুনিক শিক্ষিত ও ছাত্র মহলে পর্যন্ত ইসলামী জাগরনের সাড়া পরে গেছে। (গ) মুসলিমদেরকে বিজ্ঞান সম্মত পন্থায় সুসংগঠিত করার জন্য মওলানা মওদুদী (রঃ) যে সাংগঠনিক প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন তা এ যুগে অতুলনীয়। আধুনিক যুগে বাতিল পন্থিদের মযবুত সংগঠনের সাথে পাল্লা দিয়ে মুসলমানদেরকে একটা সুশৃঙ্খল শক্তিতে পরিনত করার জন্য তিনি যে সাংগঠনিক কাঠামো ও কর্ম কৌশল দান করেছেন এর ফলে তার দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া সত্বেও সংগঠন কোন দিক দিয়ে দুর্বল হবার আশংকা নেই। জামায়াতে ইসলামী মাওলানা মওদূদী (রঃ)-কে অতি মানব বা এমন কোন সত্তা মনে করে না যা অন্ধভক্তির সৃষ্টি করতে পারে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে ভক্তির বাড়াবাড়ি খতম করার জন্য সারা জীবন তিনি যে চেষ্টা করে গেছেন তার ফলে তার মধ্যে বহু দুষ্প্রাপ্য গুনের সমাবেশ থাকা সত্বেও মাওলানাকে জামায়াত কোন প্রকার অতি ভক্তি মর্যাদা দেয়নি। অবশ্য মাওলানা মওদূদী (রঃ)-কে এ যুগের শ্রেষ্টতম ইসলামী চিন্তাবিদ,সাহিত্যিক ও মুজাহিদ হিসেবে এবং আধুনিক জাহিলিয়াত বা ইসলাম বিরোধি মতবাদের বলষ্ট প্রতিরোধকারী ব্যক্তিত্ব বলে দুনিয়ার চিন্তাশীল মহল অকুন্ঠভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ সত্বেও জামায়াতে ইসলাম মাওলানার ব্যক্তিত্বকে মানুষের কাছে বড় করে তুলে ধরা ইসলামী আন্দোলনের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন নি। মাওলানা এ বিষয়ে এত সজাগ ছিলেন যে,মাওলানার জন্ম দিবস পালন করতে তিনি অনুমতি দেননি। তার ইন্তেকালের পরও উপমহাদেশের কোথাও তার জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন করা হচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশ,ভারত,পকিস্তান ও শ্রীলংকায় জাময়াতি ইসলামী প্রকাশ্য সংগঠন হিসেবেই আছে। কিন্তু কোথাও মাওলানা মওদূদী (রঃ)- এর ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরা হচ্ছে না। মাওলানা মওদূদী (রঃ)আধুনিক যুগের সমস্যা ও মানব রচিত বিভিন্ন সমাধানের বিশ্লেষন করে কুরআন ও হাদীসের আলোকে ঐসব সমাধানের ত্রুটি স্পষ্টভাবে ধরিয়ে দিয়ে ইসলামের সমাধান যেরূপ যোগ্যতার সাথে পেশ করেছেন তাতে আমাদের মতো আধুনিক শিক্ষিত লোকের পক্ষে ইসলামকে বুঝা সহজ হয়েছে। এজন্য মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর রচিত ইসলামী সাহিত্য ছাড়া আধুনিক যুগে ইসলামী আন্দোলন করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তাই জামায়াতে ইসলামী তাঁর বই থেকে ফায়দা হাসিল করতে বাধ্য হচ্ছে। মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর প্রচার যদি উদ্দেশ্য হতো তাহলে তাঁর জন্ম ও মুত্যু দিবস অবশ্যই পালন করা হতো মাওলানা মওদূদী (রঃ) যাকে একমাত্র নেতা হিসেবে জীবনের সর্বক্ষেত্রে মেনে চলার শিক্ষা দিয়ে গেছেন সেই বিশ্ব নবীই জামায়াতে ইসলামীর আসল নেতা। মাওলানা মওদূদী (রঃ)যখন জামায়াতের আমীর ছিলেন তখন তাঁর প্রতি কখনও অতিভক্তি দেখান হয়নি। তার প্রকৃত মর্যাদা একমাত্র আল্লাহ পাকই দিতে পারেন। দুনিয়ায় তার মর্যাদা বাড়াবার কোন দায়ীত্ব জামায়াত গ্রহন করেনি। পাঁচঃ প্রায় সাত বছর আরব দুনিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশের বড় বড় ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরামের সাথে আমার সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে। আমি তাদের সবাইকে মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর অত্যন্ত ভক্ত পেয়েছি। মাওলানা মওদূদী (রঃ)-কে এ যুগের শ্রেষ্টতম ইসলামী চিন্তাবিদ বলেই সবাই স্বীকৃতি দিয়েছেন। পাক-ভারত- বাংলার বাইরে কোন ইসলামী ব্যক্তিত্বই মাওলানার লেখা সম্পর্কে কোন আপত্তি তুলেনি। অথচ মাওলানার সাহিত্য আরবী ও ইংরেজী ভাষায় ব্যপক অনুবাদ হয়েছে। বিশ্বের বড় বড় ইসলামী চিন্তাবিদও মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর সাহিত্যে ইসলামের একই ধরনের ব্যক্ষ্যা পড়ে আমার এ ধারনা সৃষ্টি হয়েছে যে,আমাদের দেশের যে কয়েকজন আলেম মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর বিরূদ্ধে ফতোয়া দিয়েছেন তারা সম্ভবত মাওলানার সাহিত্য ভালভাবে পড়েননি। অখন্ড ভারত বনাম পাকিস্তান আন্দোলনকে কেন্দ্রকরে এ শতাব্দীর ত্রিশ ও চল্লিশ দশকে মাওলানা মওদূদীর বলীষ্ট ইসলামী রাজনৈতিক চিন্তাধারা বহু বড় বড় ওলামার রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধী ছিল। তাদের পক্ষ থেকেই এসব ফতোয়া প্রচরিত হয়েছে। সুতারাং রাজনৈতিক কারনেই ফতোয়া দেয়া হয়েছে বলে মনে হয়। এসব ফতোয়ার কোন মযবুত দ্বীনি ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।

লেখক

(অধ্যাপক গোলাম আযম)

مودودیت کوی فِرقة ھی کوی نہی۔ مودودی صاحب رحمت اللہ علیہ نیک ادمی تھے اچھے عالم تھے۔ انہونے کوی الگ فرقة نہی بنایا۔ انہونے کوی فقہ نہی لکھی۔ کوی الگ اپنا اجتہاد نہی کیا۔ وہ پکے حنفی مسلمان تھے ۔اور حنفی عالم تھے ۔اور انکی بڑے خدمات ھے پڑھے لکھے تبقے کو دین سمجھانےکی ۔اور انکی بڑی خدمات ھے سوشل ازم کے خلاف قلم اٹھانےکی۔ انکی بڑی خدمات ھے منکرینے حدیث کے خلاف قدم اٹھانے کی۔مولانا طارق جمیل

মওদুদিয়াত কোনো ফেরকা নয়।মওদুদী রহঃ ভাল মানুষ ছিলেন,ভালো আলেম ছিলেন।তিনি কোনো আলাদা ফেরকা বানান নাই,তিনি কোনো ফেকাহ লিখেন নাই,কোনো আলাদা ইজতেহাদ করেন নাই।তিনি পাক্কা হানাফী মুসলমান ছিলেন এবং হানাফী আলেম ছিলেন।শিক্ষিত সমাজকে দ্বীন বুঝানোর ব্যাপারে তাঁর অনেক বড় অবদান রয়েছে।

সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কলম উঠিয়ে তিনি অনেক বড় অবদান রেখেছেন।

আর হাদিস অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে তিনি অনেক বড় ভুমিকা রেখেছেন।-মাওলানা তারেক জামিল(আমীর পাকিস্তান তাবলীগ জামাত)

https://www.youtube.com/watch?v=K2tuJAqMaW0&feature=youtu.be

জামায়াতে ইসলামী কোন ধরনের দল

জামায়াতে ইসলামী প্রচলিত অর্থে শুধুমাত্র ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক দল নয়। ইসলামে ধর্মীয় জীবনের গুরম্নত্ব আছে বলেই জামায়াত ধর্মীয় দলের দায়িত্ব পালন করে। রাজনৈতিক শক্তি ছাড়া ইসলামী আইন চালু হতে পারে না বলেই জামায়াত রাজনৈতিক ময়দানে কাজ করে। সমাজ সেবা ও সামাজিক সংশোধনের জোর তাকিদ ইসলাম দিয়েছে বলেই জামায়াত সমাজ সেবা ও সমাজ সংস্কারে মনোযোগ দেয়। এ অর্থেই জামায়াতে ইসলামী একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন।

জামায়াতের বুনিয়াদী আকিদা-বিশ্বাস

০১.আল্লাহ্‌ তা'আলাই মানব জাতির একমাত্র রব, বিধানদাতা ও হুকুমকর্তা।

০২. কুরআন ও সুন্নাহ্‌ই মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।

০৩.মহানবীই (সা.) মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য আদর্শ নেতা।

০৪. ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনই মুমিন জীবনের লক্ষ্য।

০৫. আল্লাহ্‌র সন্ত্মুষ্টি ও আখিরাতের মুক্তিই মুমিন জীবনের কাম্য।

নারী নেতৃত্ব :

১.নারীদের মধ্যেই নারী নেতৃত্ব বেশি উপযোগী:

(ক)নারীরা নারী অঙ্গনে ভালোভাবেই নেতৃত্ব দিতে পারে।

(খ)শুধু মহিলাদের মধ্যে একজন মহিলাকে ইমামও (বা নেতাও) নিযুক্ত করা যায়।

(গ)তবে সার্বিক পরিসরে পুরুষেরই নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, নেতৃত্বগুণ, শক্তি, দূরদর্শিতা, ঋতুস্রাব না হওয়া, গর্ভধারণ না করা, স্তন্যপান না করানোসহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক ও বাস্তব বিষয়ে পুরুষেরা নারীদের তুলনায় কিছুটা (বা অনেকটা) সুবিধাজনক অবস্থায় থাকে- যা বিচারবোধসম্পন্ন সকলেই স্বীকার করতে বাধ্য।

(ঘ)ইসলামের দৃষ্টিতে (পুরুষ ও নারীর সম্মিলিত ক্ষেত্রে) নারী নেতৃত্ব কাম্য নয়। কারণ, (বিজ্ঞান, বিবেক ও গবেষণাসহ) সার্বিক বিচারে (আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে) সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তি (সাধারণত) পুরুষই হয়ে থাকে।

(ঙ)এ বিষয়ে কুরআনের ঘোষণা হলো: “পুরুষরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল (কাউয়াম, কর্তা, পরিচালক, ব্যবস্থাপক, তত্ত্বাবধায়ক) এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের মধ্যে একজনকে (বা পুরুষকে) অপরের (অর্থাৎ নারীর) উপর (গুণগত) বৈশিষ্ট্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। (৪/সূরা আন নিসা:৩৪)।

২.স্ত্রী বা কণ্যা হবার কারণে নেতৃত্ব প্রাপ্য হওয়া উচিত নয়:

(ক)পিতার পরে কণ্যা নেত্রী হওয়াই যদি ইসলামের নিয়ম হতো তাহলে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ইন্তেকালের পরে হয়রত ফাতিমা (রা.) নেত্রী হতেন।

(খ)স্বামীর পরে স্ত্রী নেত্রী হবে এটাই যদি ইসলামের নিয়ম হতো তাহলে নবীজী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর হযরত আয়িশা (রা.) কে নেত্রী করা হতো।

(গ) বাস্তবে উপরিউক্ত কোনোটাই হয়নি। অর্থাৎ স্ত্রী বা কণ্যা হবার কারণে নেতৃত্বে আসীন হওয়ার রীতিটা ইসলামী পদ্ধতি নয়।

৩.ইসলামবিরোধী পুরুষ ইসলামভক্ত নারীর চেয়ে অধিক ক্ষতিকর:

(ক)নারী ও পুরুষ সকলের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামবিরোধী পুরুষই ইসলামভক্ত নারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর।

(খ)পুরুষ যদি নারীর তুলনায় অধিকতর ইসলামবিরোধী বলে প্রতীয়মান হয় তাহলে নারীর শাসনই কম ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হবে।

৪.আদর্শিক ও বৈজ্ঞানিক (তথা যুক্তিসঙ্গত) কারণেই কোনো ইসলামী দলই নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পক্ষে নয়:

(ক)বাংলাদেশের কোনো ইসলামী দল কোনো নারীকে দেশের প্রধান নির্বাচিত করেনি। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক (ইসলামকে না বুঝার কারণে বা না মানার কারণে) নারীকে নেত্রী নির্বাচিত করলে সে দোষ (বা দায়) কোনো ইসলামী দলের নয়।

(খ)ইসলামে সার্বিক পরিসরে (নারী ও পুরুষের সম্মিলিত কাঠামোতে) নারী নেতৃত্ব নেই। বাংলাদেশ যেহেতু এখনও ইসলামী রাষ্ট্র হয়নি সেহেতু এখানে নারী নেতৃত্ব বিদ্যমান থাকা (সহজ বা) সম্ভব হয়েছে।

(গ)পার্লামেন্টারী সিস্টেমে হয় ‘পজিশন’ না হয় ‘অপজিশন’ এ থাকতে হয়। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই নারীর প্রাধান্য থাকায় ইসলামী দলগুলো উভয় সংকটে পড়েছে (এ পক্ষেও নারী, ও পক্ষেই নারী)।

(ঘ)ইসলামী দলগুলো জোট গঠন না করলে যারা ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা ছিলো তাদেরও নেত্রী একজন নারী। সেজন্যই ইসলামী দলগুলো (ব্যতিক্রম বাদে) দুটো মন্দের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম মন্দ (যেটিকে ভেবেছে সেটিকে) গ্রহণ করেছে।

(ঙ)ইসলামী দলগুলো রাজনৈতিক জোটের প্রধানকে নিজ দলের প্রধান স্বীকার করে না। আর জোটের সকল দলও ইসলামী দলের নেতা (বা আমীর) কে নিজ দলের নেতা মনে করে না। কাজেই একথা বলা যায় না যে ইসলামী দল জোটপ্রধানকে নেত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছে। কাজেই ইসলামী দল নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেনি। একসাথে চলা মানেই (সর্বদা) নেতৃত্ব মেনে নেওয়া বুঝায় না।

(চ)জোটের প্রধান দলে যোগ্য যোগ্য পুরুষ থাকার পরও তারা যদি কোনো নারীকে দলীয় প্রধান নির্বাচন করে তবে সে দায়-দায়িত্ব ঐ দলের; সে দায় কোনো ইসলামী দলের নয়।

(ছ)আরেকটি বাস্তবতা হচ্ছে, শক্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশীয় সিস্টেমের বাইরে চলা কঠিন, কখনও কখনও অসম্ভবও বটে। বাস্তবতাকে অস্বীকার করা কোনো ধার্মিকতা নয়।

(জ)জনগণ ইসলামী দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে রায় দেওয়ার পরও যদি সংশ্লিষ্ট ইসলামী দল কোনো মহিলাকে রাষ্ট্রপ্রধান বা আমীর বানাতো কেবল তখনই বলা যেতো যে অমুক ইসলামী দল সার্বিক পরিসরে নারী নেতৃত্বের পক্ষে।

ইসলাম সমসাময়িক বিশ্বব্যবস্থাকে সবসময় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। এর জন্যে দুটি উদাহরণ আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। একঃ আপনারা সবাই জানেন কাবা ঘরে ৩৬০ টি মূর্তি ছিল। মহানবী (সঃ) এর মাক্কী জীবনের পুরোটা সময় এবং মক্কা বিজয় হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ৩৬০ টি মূর্তি কাবাঘরেই ছিল। মহানবী (সঃ) এর মূল দাওয়াতই ছিল এই মূর্তির বিরুদ্ধে তদুপরিও তিনি মক্কা থাকাকালীন সময়ে কোন সাহাবীকে মূর্তি ভাঙ্গার নির্দেশ দেন নি বরং সেই সকল মুর্তি কাবাঘরে বর্তমান থাকা অবস্থাতেও কাবার চত্ত্বরে মূর্তি রেখেই নামাজ আদায় করেছেন। দুইঃ দ্বিতীয় ঘটনাটি হুদাইবিয়া সন্ধির সময়। যখন কুরাইশরা সন্ধি করতে প্রস্তুত হলো এবং এ সম্পর্কে আলোচনা করার জন্যে সুহাইল বিন্ আমরকে দূত বানিয়ে পাঠালো। তার সঙ্গে দীর্ঘ সময়ব্যাপী আলোচনা হলো এবং শেষ পর্যন্ত সন্ধির শর্তাবলী স্থিরিকৃত হলো। সন্ধিপত্র লেখার জন্যে হযরত আলী (রা)-কে ডাকা হলো। সন্ধিপত্রে যখন লেখা হলো ‘এই সন্ধি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (স)-এর তরফ থেকে তখন কুরাইশ প্রতিনিধি সুহাইল প্রতিবাদ জানিয়ে বললো : ‘আল্লাহর রাসূল’ কথাটি লেখা যাবে না; এ ব্যাপারে আমাদের আপত্তি আছে।’ একথায় সাহাবীদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হলো। সন্ধিপত্র লেখক হযরত আলী (রা) কিছুতেই এটা মানতে রাযী হলেন না। কিন্তু হযরত (স) নানাদিক বিবেচনা করে সুহাইলের দাবি মেনে নিলেন এবং নিজের পবিত্র হাতে ‘আল্লাহর রাসূল’ কথাটি কেটে দিয়ে বললেন : ‘তোমরা না মানো, তাতে কি? কিন্তু খোদার কসম, আমি তাঁর রাসূল। এবার আসা যাক যে হাদিসটার মাধ্যমে নারী নেতৃত্বকে হারাম মনে করা হয় সেটি জেনে নেই। “যখন রাসুল (সাঃ) এর কাছে খবর পৌছাল যে পারসিয়ানরা সম্রাট খসরুর মেয়েকে তাদের শাষক হিসাবে নির্বাচিত করেছে তখন তিনি (রাসুল (সাঃ)) বলেছিলেন, যে জাতি তাদের রাষ্ট্রের কতৃত্ব একজন মহিলার হাতে ন্যস্ত করে তারা কখনও উন্নতি করতে পারে না" (বুখারী)। হাদিসে কোথাও বলা হয়নি নারী নেতৃত্ব হারাম, বলা হয়েছে অকল্যাণকর , তাই জামায়াতও আনুষ্ঠানিকভাবে কখোনো নারী নেতৃত্বকে হারাম ঘোষণা করেনি। তবে জামায়াত হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী নারী নেতৃত্বকে দেশ ও জাতির জন্য অকল্যাণকর জানে এবং মানে। দলীয়ভাবে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বে নারীর মনোনয়ন কিংবা নির্বাচনের কোন সুযোগ নেই। এবার আসুন উপরের ঘটনা দুটির সাথে হাদিসটি বিশ্লেষন করি। মহানবী (সঃ) বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কাবা শরীফে মুর্তি থাকা অবস্থায় নামাজ পড়েছেন অথচ ইসলামের মূল বিশ্বাস “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর সাথে সাংঘর্ষিক হচ্ছে মূর্তি। দ্বিতীয় ঘটনাটি ইসলামের দ্বিতীয় মূল বিশ্বাস “মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এর সাথে সাংঘর্ষিক। অথচ সয়ং রাসুলুল্লাহ (সঃ) সে সময়ের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবং সমসাময়িক বিশ্বব্যবস্থার কথা বিবেচনা করে এদুটি পদক্ষেপ নিয়েছেন। গুরুত্বের বিবেচনায় এবার আপনারাই বলুন উপরিউক্ত দুটি ঘটনার সাথে নারী নেতৃত্ব সংক্রান্ত হাদিসটি কতটা গুরুত্ব বহন করে? রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে জোটবদ্ধভাবে জামায়াত বিএনপির সাথে জোট করেছে এবং অতীতে আওয়ামী লীগের সাথে জোট করেছিল। বিএনপি কি আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে কে আছেন বা থাকবেন তা তো জামায়াত নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখেনা। জামায়াত দলের সাথে জোট করেছে এবং ঘটনাচক্রে সে দলের শীর্ষ ব্যক্তি মহিলা। রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে অনেকবারই ইসলামী দলগুলো নারী নেতৃত্বকে সমর্থন দিয়েছিল অধিকতর নিকৃষ্ট শাসকের হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে। বর্তমানে জামায়াতের অবস্থান তেমনই। প্রসঙ্গত, হযরত সুলাইমান আ. এর সাথে সাবার রানি বিলকিসের যোগাযোগের বিষয়টি তো সকলেরই জানা। এবার আসা যাক কোন প্রেক্ষাপটে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চার দলীয় ঐক্য হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে হিজাব পড়ে এবং পুর্বের ভুলভ্রান্তির ক্ষমা প্রার্থনা করে ক্ষমতা নেয়ার পরেই শেখ হাসিনা মাথার পট্টি খুলে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নেমে পড়েন। সে সময়ে শামসুর রহমান, হুমায়ুন আযাদ, শামসুল হক গং প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অশ্লীল সাহিত্য, কবিতা লিখতে থাকেন এবং সরকার তাদের পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা দিতে থাকে। অন্যদিকে ষাটোর্ধ্ব শাইখুল হাদিস আল্লামা আযিযুল হককে বিনা কারনে গ্রেফতার করে একমাস কারাগারে রাখে। ভারত তোষননীতি পূর্বের রেকর্ড ভঙ্গ করে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। বিভিন্ন জায়গায় তৈরী হয় গডফাদার। জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমান, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, তাহের উল্লেখযোগ্য। সন্ত্রাসের দৌড়াত্বে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠে। প্রতিদিন খুন, ধর্ষন ছিল পত্রিকার নিয়মিত খবর। এ অবস্থায় এ ইসলাম বিরোধী অপশক্তিকে রুখতে দেশব্যাপী বিরোধী দলগুলোর ঐক্য ছিল সময়ের দাবী। সে পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৯৯ সালে চারদলীয় জোট গঠিত হয়। বর্তমানে আবার ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামী লীগ যেভাবে নাস্তিকদের তোষণ করেছে তা তো আপনারা চোখের সামনেই দেখছেন। এ অবস্থায় এই ইসলামবিরোধী অপশক্তিকে রুখতে হলে যে ব্যাপক ভিত্তিক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজন সেটা সবাই বুঝতে পারছে। এবং দেশবাসী এটাই চাচ্ছে। সুতরাং ইসলাম রক্ষায়, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীদের হাত থেকে জনগণকে পরিত্রান দিতে বৃহৎ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। বাস্তবতার নীরিখে ইসলাম ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জামায়াতে ইসলামী এ ব্যাপারে রাসুল (সঃ) এর বাস্তব কর্মপন্থার আলোকেই এ বিষয়ে কিছুটা ছাড় দিয়েছে। জামায়াত যেদিন জনগণের আস্থা অর্জন করে রাষ্ট্রক্ষমতার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবে, সেদিন রাষ্ট্রের নেতৃত্বে একজন পুরুষই থাকবেন।

ভারতের ওলামায় হিন্দ বা দেওবন্দী আলেমগণও কিন্তু সোনিয়া গান্ধির নেতৃত্বাধিন কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়েছে। এমনকি তারা দেওবন্দ মাদ্রাসার বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিও বানাচ্ছেন এই মুশরিকাকে !!!

কেউ ইসলামী আন্দোলনের কাজ করলে দুনিয়ার যেখানে নারী নেতৃত্ব চলছে সবার বিরুদ্ধে কি জেহাদে নামতে হবে? কোরআনের কথা বলে এরকম ফালতু কথা বলা বড় মুর্খতা। যে কোন দেশের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা না করে যারা নারী নেতৃত্ব বিষয়ে ঢালাওভাবে কথা বলতে দ্বিধা-বোধ করেনা তারা জানেনা যে নেতৃত্বের পরিসর অনেক ব্যাপক। স্কুলের প্রধান, সংগঠনের প্রধান, কোম্পেনীর প্রধান, অফিসের ম্যনাজার সবাই তাদের আপন আপন স্থানে নেতৃত্বের পরিসরে। ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করেই কি বেছে বেছে সকল নারীদেরকে চাকুরিচুৎ করতে হবে না নেতৃত্বের বিভিন্ন পরিসর দেখতে হবে? না এ বিষয়ে বিবেচনা বা কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যাবার দরকার আছে? কেউ যদি কোথাও চাকুরী করেন এবং সেই স্থানের নেতৃত্ব যদি কোন মহিলার হাতে থাকে তবে কি তার চাকুরী ছেড়ে চলে যেতে হবে? স্বয়ং রাসুল (সHappy এর জিবনী কি শিক্ষা দেয়? তাঁকেও তো আল্লাহ এক মহিলার নেতৃত্বের ব্যবসায় চাকুরী করিয়েছেন।

সদালাপের সুপ্রিয় পাঠক ভাই বোনদের খেদমতে আমার এক পোষ্টের মন্তব্যে এম অহমেদ ভাই এ প্রসঙ্গে কিছু প্রশ্ন রেখে ছিলেন যা এখানে উল্লেখ করতে চাই,

"নেতৃত্ব কি কাওম-প্রধানের সাথের বাস্তবতা, না সর্বব্যাপী বাস্তবতা -এসব কথা আলোচিত হতে হবে। তাছাড়া যারা নারী নেতৃত্বের দেশে বসবাস করেন তারা সবাই সেই নেতৃত্বের আওতাধীন। তারা সেই নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্য যদি কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করে বসে বসে ফতোয়ার কথা বলেন এবং নির্বাচনের দিন নারী নেতৃত্বের বাক্সে ভোট দেন, তবে এর চেয়ে হাস্যকর অবস্থান আর কী হতে পারে? ‘ইসলামী রাষ্ট্রে নারী নেতৃত্ব নেই’ শুধু এতটুকু কারণেই এই প্রববক্তাদেরকে রাজনীতিতে নামতে হবে। কিন্তু তা না করে তারা যদি চুপসে চুপসে নারী নেতৃত্ব মেনে নেন তবে কিয়ামত পর্যন্ত পরিবর্তন আসবে না। এই বর্তমান সমাজের কিছু লোকের অবস্থান। তারা একদিকে নারী নেতৃত্বের বিপক্ষে বলবেন কিন্তু ভোটের দিন চুপসে নারীর বাক্সে ভোট দেবেন। এখানে যদি ধর্মীয় সমস্যা থেকে থাকে তবে এটা এই ধর্মের সকলের, কারো একার নয়।

জামাতের নেতা মৌ: দেলাওয়ার হুসেন সাঈদীকে বাংলা টিভিতে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি এবং আপনার দল নারী নেতৃত্বের বিপক্ষে অথচ আপনারা খালেদার সাথে একজোট -এটা কেমনে হয়? (এই ইন্টার্ভিউটা হয়ত এখনো ইউটিউবে পাওয়া যেতে পারে)। উত্তরে সাঈদী যা বলেন এবং যতটুকু আমি স্মরণ করতে পারি তার বর্ননা এরূপ: আমরা বিএনপি নামক একটি দলের সাথে জোট করেছি, যে দল একজন নারীকে তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচন করেছে, আমরা করিনি। জোট না বাঁধলেও তো বাংলাদেশে নারী নেতৃত্ব বিরাজিত, সবাই সেই বিরাজিত নেতৃত্বের অধীন। আমরা কিছু কমন উদ্দেশ্য সামনে রেখে এক সাথে কাজ করতে জোট করেছি। এর উদাহরণ ধরুন এমন যে আমরা এক স্থান থেকে আরেকটি স্থানে যেতে রাস্তায় নেমেছি। সেখানে আরও কিছু লোকজনকে পেয়েছি যারা সেই অভিলক্ষ্যে যাত্রা করছেন। এখন রাস্তায় যদি কিছু বাধা বিঘ্ন আসে, কিছু গাছ-বাঁশ সেই রাস্তা বন্ধ করে দেয়, তখন কী করা হবে? এমতাবস্থায় কার দলে নারী নেতৃত্ব আর কার দলে পুরুষ এই বাদাবাদিতে নেমে গেলে রাস্তার প্রতিবন্ধকতা দূর হবে না, কারো পক্ষে গন্তব্যে পৌঁছা সম্ভব হবে না। আমাদের জোট হচ্ছে এমনই অভিলক্ষ্যে। আমরা আলাদা দল, দেশের জনগণ আমাদের উদ্দেশ্য-বিধেয় জানেন। জোটের দলগুলো আলাদা আলাদা দল, আমরা সবাই একে অন্যের উদ্দেশ্য-বিধেয় জানি। তবে আমরা এটাও জানি এবং বুঝি আমাদের সকলের মধ্যে কিছু কিছু কাজ ও উদ্দেশ্য কমন রয়েছে যেগুলো আমরা সবাই মিলিতভাবে করতে পারি। আমাদের অবস্থানগত উদাহরণ এভাবেই।

দ্বিতীয় কুফুরি যুদ্ধ ও বিচার -একটি মন্তব্যব্লগ

ইসলাম কখনোই সমাজের কোন কোন ব্যাপারে মেয়েদের ভূমিকাকে অন্যদের তুলনায় সীমিত করেনি। সর্বপ্রথম যে ব্যাক্তিটি নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দাওয়াত কবুল করে ইসলাম ধর্ম কবুল করেছিলেন তিনি ছিলেন একজন নারী। ইসলামের প্রথম শহীদ ছিলেন একজন নারী, ঠিক তেমনি প্রথম মুহাজির ও ছিলেন একজন নারী। শত শত বছর ধরে নারীরা উচ্চ উচ্চ পদে দায়িত্তপালন করেছেন, তারা ছিলেন শাসক, বিচারক, যোদ্ধা, শিক্ষক, মুফতি, ইত্যাদি। ইসলামের ইতিহাসের যে কোন সৎ ছাত্রই এই সাক্ষী দেবে।

রাষ্ট্রের প্রধানের ব্যাপারে একটি হাদিস আছে যা পরোক্ষভাবে নারী নেতৃত্বকে নিষিদ্ধ করেছে, হাদিসে বলা হয়েছে, যেসব লোক কোন নারীকে তাদের নেতা নিয়োগ করে তারা উন্নতি করতে পারবে না( দেখুন টীকা-১) । অবশ্য, ইসলামের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে পঞ্চাশেরও বেশি নারী শাসক দেখা যায়, যেমন মিশরের সিত আল-মুলক, সিনায় রানী আসমা ও আরওয়া, আল-আন্দালুসে জায়নাব আল-নাফযাভিয়া, দিল্লিতে সুলতানা রাজিয়া, মিশরে শাজারাত আল-দুর ইত্যাদি। বিভিন্ন সামাজিক জীবনে, যুদ্ধে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, পুলিশে ( হিসবা), এবং বাজারে নারীদের অংশগ্রহনের ক্ষেত্রে রসুলুল্লাহর সম্মতির ব্যাপারে কোন বিতর্ক নাই।

উপরে উল্লেখিত হাদিসের কারনে, অনেক ইসলামিক স্কলাররা নারীদের রাষ্ট্র প্রধান হওয়াকে নিষিদ্ধ বলে মনে করেন। হানাফি মাজহাবে কিছুটা সীমিত পরিসরে নারীদের বিচারক হওয়াকে জায়েজ বলে মনে করা হয়। অবশ্য , নারীদের বিচারক ও রাষ্ট্র প্রধান হওয়াকে সম্পূর্ণ ভাবে জায়েজ বলে মত দিয়েছেন কেউ কেউ, যেমন ইবনে জারির আল-তাবারি, ইবনে হাজম আল-যাহিরি, আবু আল ফাতহ ইবনে তারার, ইবনে আল-কাসিম, ইত্যাদি।

এটা মনে রাখা খুবই গুরুত্ত পূর্ণ যে এই হাদিসটি একটি বিশেষ পরিপ্রেক্ষিতে ও অবস্থায় রসুলুল্লাহর উক্তি, যখন কিনা পারস্যবাসীরা শেষ উপায় ( কিসরা, ও তার ছেলের নিহত হওয়ার পর) হিসাবে একজন নারীকে (কিসরার কন্যাকে) তাদের প্রধান নিয়োগ করেছিলেন। নবীর এই হাদিসটি নির্দেশনা হিসাবে গ্রহন করা যাবে না, বরং ইহা পারস্যদের পতনের একটি ইঙ্গিত। আইনশাস্ত্রের মুলনীতিতে এটি পরিস্কার যে একটি বিশেষ ঘটনা (খাস) সর্ব অবস্থায় (আম) প্রয়োগ করা যায় না। অধিকন্তু, আল্লাহ্‌ নিজেই বিলকিস, শেবার রানী, এর যোগ্যতা ও বিচক্ষণতার প্রশংসা করেছেন কুর’আনে।

ইসলামে খলিফার উচ্চস্থান এবং সমসাময়িক রাষ্ট্রের প্রধানের মধ্যে যে বিশেষ পার্থক্য আছে সে বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে। খলিফা একটি ধর্মীয় পদ, যার অনেকগুলি দায়িত্তের একটি যা বর্তমান শাসকদের করতে হয়না তা হল মুসলিমদের নামাজের ইমামতি করা, এই শর্তটির ব্যাপারে সকল স্কলাররাই একমত। অন্যদিকে, সমসাময়িক রাষ্ট্রের প্রধানের পদটি একটি সরকারি পদ যেখানে সকল মুসলিম উম্মার প্রধান হওয়ার বিষয়টি নেই। সুতরাং, এই পদটিতে আসীন হওয়ার সকল অধিকার নারীদের আছে।

টীকা-১, এই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আবু বাকরাহ ( খলিফা আবু বকর (রাঃ) না) যিনি একটি ব্যাভিচারের বিচারে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়াতে হজরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাকে ৮০ বেত্রাঘাত করেন। আল্লাহ্‌ বলেছেন

আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ লাগায়, তারপর চারজন সাক্ষী আনে না , তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং তাদের সাক্ষ কখনো গ্রহণ করো না ৷ তারা নিজেরাই ফাসেক। (সূরা নূর, আয়াতঃ ৪)

তাহলে এই ব্যাক্তির বর্ণিত হাদিস গ্রহন করার সুযোগ কতটুকু? যদিও হাদিসটি বুখারী শরীফের অন্তর্ভুক্ত, তথাপি, ইবনে হাজম ও নাসির উদ্দিন আলবানী এই হাদিসটিকে গ্রহন করেন নি কেবল রাবীর কারনে। উল্লেখ্য, ইমান ইবনে বুখারী(রহঃ) একজন মানুষ ছিলেন তাই উনার ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

[ প্রকৃত সত্যা আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন]

[ উপরে উল্লেখিত ফাতওয়াটি সম্পূর্ণ রুপে মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি আলী গমা এর মত]

নেতৃত্ব কি??

নেতৃত্ব হল নেতার একটি বিশেষ গুণ, যার মাধ্যমে সে তার সকল কর্মীবাহিনীকে নিয়ন্ত্রন করে। অথবা, যে বাক্তির কথাই কোন একটি দল,কোন একটি সংগঠন, অথবা কোন একটি গোষ্ঠী পরিচালিত হয় তাকে নেতা বলে। আর নেতার সকল গুনাবলিই নেতৃত্ব।

সন্ধি কি?

বিশেষ কিছু শর্ত সাপেক্ষে কোন একটি জাতি, কোন একটি গোষ্ঠী, অথবা কোন একটি দলের সাথে একটি সময় সীমার জন্য চুক্তি করাই হল সন্ধি। সন্ধির শর্ত পুরন হয় কেবল কিছু সময় পর্যন্ত। পক্ষান্তরে নেতার নেতৃত্ব ততদিন মানতে হয় যতদিন সে নেতা থাকে। সুতারাং সন্ধির শর্ত পুরন করা আর নেতৃত্ব মানা এক নয়!

নারি নেতৃত্ব কি?

নারি নেতৃত্ব হল একটি দলের/গোষ্ঠীর সকল প্রকার ক্ষমতা নারির হাতে তুলে দেওয়া। নারি যেইভাবে বলবে সেই ভাবে পালন করা।

জামাআত-শিবির নারি নেতৃত্বকে হালাল মনে করে এবং নারি নেতৃত্ব মানে এই কথাটা সত্যিকিনা? নাকি এটা জামাআত-শিবিরের নামে অপবাদ??

আমি আগেই বলছি নেতৃত্ব মানা আর সন্ধির শর্ত মানা এক নয়! জামায়াত কি তাদের দলের সকল কার্যক্রম নারির হাতে তুলে দিয়েছে? জামায়াতের প্রোগ্রাম কি বি.এন.পি পরিচালনা করে? নাকি জামায়াতের প্রোগ্রাম জামায়াত পরিচালনা করে? জামায়াতের কোন মিছিলে কি বি.এন.পি যোগদান করে? বি.এন.পি এর কোন মিছিলে কি জামায়াত যোগদান করে? না করেনা!!!! বরং জামায়াত যেহেতু বি এন পি এর সাথে জোটবদ্ধ অথবা সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ সেহেতু জামায়াত সেই সকল প্রোগ্রাম অথবা মিছিলে উপস্থিত থাকে যা জোটের পক্ষ থেকে ডাকা হয়। যেহেতু বি এন পি এর সাথে জামায়াত জোটবদ্ধ, এবং বি এন পি এর নেতা নারি। সেহেতু জোটের নেতা হল খালেদা জিয়া। এখন কেউ যদি বলে জামায়াত খালেদার নেতৃত্ব মানে তাহলে আমি বলব সে একটি ভুল ধারনার মধ্যে আছে। বরং জামায়াত সেই সকল প্রোগ্রাম বা মিছিল বি.এন.পি এর সাথে একসাথে পালন করে যা জোটের সকল দলের অংশগ্রহনে সিদ্ধান্ত হয়। আর যেই সকল প্রোগ্রাম জামায়াতের দলীয় প্রোগ্রাম তা বাস্তবায়ন করে জামায়াত। সুতারাং জামায়াত যদি নারি নেতৃত্ব মানতো তাহলে সকল কাজ করার ক্ষেত্রে বি এন পি কে জিজ্ঞাসা করেই করত।

এখন কেউ যদি বলে জামায়াত যদি নারি নেতৃত্ব না মানে তাহলে জামায়াত কেন বি এন পি এর সাথে জোট করেছে?

তাদেরকে শুধু একটি কথা বলব যে জামায়াত এটা কুরআন থেকে শিক্ষা গ্রহন করেছে। এই প্রেক্ষিতে একটি প্রশ্ন করব যে রাসুল সঃ হুদাইবিয়ার সন্ধি কাদের সাথে করেছে?

কেন করেছে? কোন প্রেক্ষাপটে করেছে? রাসুলুল্লাহ সঃ কাফেরদের সাথে সন্ধি করছেন! যখন মুসলমানদের কে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে, দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে রাসুল সঃ কাফিরদের সাথে সন্ধি করেন। যার ফলে ইসলামের দাওয়াত দিক বিদিক ছুটে যায়। সকল মানুষের মাঝে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে যায়, ইসলামের শক্তি হাজার গুনে বৃদ্ধি হয়। এখন কেও যদি বলে, (নাউজুবিল্লাহ) রাসুলুল্লাহ সঃ যেহেতু কাফিরদের সাথে সন্ধি করেছেন সেহেতু তিনি কাফিরদের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছেন তা কি সঠিক? না সঠিক নয়!!! সুতারাং জামায়াত বি.এন.পি এর সাথে সন্ধি করার কারনে নারি নেতৃত্ব মেনে নিয়েছেন এই কথা কিভাবে সঠিক হয়???? যখন বাংলাদেশে আওয়ামিলীগ ইসলাম পন্থিদেরকে নির্যাতন করা শুরু করে, কুকুরের মাথাই টুপি পরাই, মসজিদের ভিতর জুতা নিয়ে প্রবেশ করে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণে সেঞ্চুরি করে মিষ্টি বিতরন করে, আলেম ওলামাদেরকে নির্যাতন করা শুরু করে, মাদ্রাসাকে জঙ্গিবাদের আখড়া বলে আক্ষায়িত করে, সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম বাদ দিয়ে দেই, সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ কে বাদ দিয়ে দেই, তখন বাংলাদেশের সকল মুসলমান এই জালিম সরকারের নির্যাতন থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, যাতে করে দেশের মানুষ জালিমের হাত থেকে রক্ষা পাই। আর তখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল ছিল বি.এন.পি এবং জামায়াত। জামায়াত দেখল যে, যদি জামায়াত ও বি এন পি আলাদা নির্বাচন করে তাহলে ভোট কাটা গিয়ে আওয়ামিলিগ আবারো ক্ষমতাই চলে আসবে। আর বি এন পি ও উপলব্ধি করল যে একা নির্বাচন করলে আওয়ামিলীগ কে হটানো যাবেনা। তখন দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ জামায়াতে-ইসলামী আওয়ামি সরকারকে হটানোর জন্য এবং ইসলামী আন্দোলনের বৃহত্তর কথা চিন্তা করে বি এন পি এর সাথে ৩ নিরবাচনের সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। সুতারাং চুক্তি শেষ হয়ে গেলে এবং ইসলামি আন্দোলনের/সংগঠনের শক্তি মজবুত হলেই জামায়াতে ইসলামী বি.এন.পি থেকে বের হয়ে এসে আলাদা নির্বাচন করবে। এটাই হল বাস্তব সত্য কথা।

জামাত কি নারী নেতৃত্বে পজেটিভ?? আমি যদি প্রমান করে দিতে পারি, জামাত নয়, বরং জামাত বিএনপি জোট নিয়ে যাদের চুলকানি আছে তারাই নারী নেত্রীত্বে পজেটিভ...

নারী নেতৃত্ব জায়েজ (পর্ব - ১)

ইসলামে নারী নেতৃত্ব

http://www.somewhereinblog.net/blog/neel_supto/29801633

পীর চর্মনাই এর নারী নেতৃত্ব সমর্থন:

চর্মনাই পীরের শিষ্যরা প্রায়ই বলে থাকে তাদের পীর নারী নেতৃত্ব বিরোধী। জামাত, ঐক্যজোট, খেলাফত মজিলসের মত তারা নারী নেতৃত্ব সমর্থন করেনা।নারীর সাথে তারা জোট বাঁধেনাই।ইত্যাদি ইত্যাদি।

আসলে তারা কতটুকু নারী নেতৃত্ব বিরোধী? নারী নেতৃত্বের সাথে কি তাদের কোন সম্পর্ক নেই? তারা কি নারী নেতৃত্ব সমর্থন করেনা?

একজন ওলিআল্লাহ বা পীর সাহেব উনার কথা ও কাজে উনি পরিপূর্নরূপে খাঁটি হবেন।

কিন্তু চর্মনাইর নামধারি পীর সাহেব কথা ও কাজে কি খাঁটি? চরমনাইর পীর নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বললেও সে তার কথা ও কাজে যে নারী নেতৃত্ব সমর্থনকারী তা নীচের আলোচনা থেকেই পরিষ্কার বুঝা যাবে ইনশাআল্লাহ।

চর্মনাইর পীর ২০০১ সালের নির্বাচনে এরশাদের সাথে জোট করে ইসলামি ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিল।তার এই ফ্রন্টেও রওশন এরশাদ, জিনাত মশাররফ ইত্যাদি নারী নেত্রী ছিল। এদের নেতৃত্ব মেনে নিয়েই চর্মনাই পীর তথাকথিত ইসলামি ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিল।

অত:পর নির্বাচনে যখন খালেদা জিতল তখন ২০০২ সালে মু্ক্তাঙ্গনের জনসভায় চর্মনাইর পীর বলেছিল, ” বর্তমান ক্ষমতাসীন নেত্রীর উচিত আমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা কারন গত নির্বাচনে আমি যদি এরশাদকে আমার সাথে না রাখতাম তাহলে এরশাদ বিরোধী দলীয় নেত্রীর সাথে যোগ দিত তাতে করে ক্ষমতাসীন নেত্রীর জয় এত সহজ হতোনা।”

তার এ বক্তব্য থেকে এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, ২০০১ এর সেই নির্বাচনে চর্মনাই পীর নারী নেতৃত্বের পক্ষেই কাজ করেছেন, তার নেত্রী যেন সহজে জয় লাভ করতে পারে সে ব্যাবস্থা করেছেন। কৌশলের মাধ্যমে নেত্রীর বিজয়ে ভূমিকা রেখেছেন। আসলে কি তাই? আসলে এটা হচ্ছে ধান্দাবাজ চর্মনাই পীরের আরেক ধান্দাবাজি বক্তব্য, ধান্দাবাজির আরেক নিকৃষ্ট উদাহরণ।যদিও তার এ বক্তব্য তাকে নারী নেতৃত্ব সমর্থনকারী প্রমাণ করে (যেটা তিনি নিজেই হারাম বলেন) তারপরও যদি কিছু সুবিধা পাওয়া যায় এই ধান্দায় তখন সে হারামের পক্ষেই বলা শুরু করেছে।

এরপর খুলনা শহিদ হাদিস পার্কে ১৭-০৫-২০০২ এক জনসভায় তিনি বলেন, ” ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসি চার দলীয় জোট বর্তমানে ক্ষমতায়” (দৈনিক ইনকিলাব ১৮ মে, ২০০২,পৃষ্ঠা ৩)

এখানেও তিনি নারী নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটকে ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসি বলে সাফাই গেয়ে হারাম নারী নেতৃত্বের পক্ষেই বলেছেন, নারী সমর্থন করেছেন।এটাও তার স্বার্থান্বেষী সুবিধাবাধি বক্তব্য।

এরপর মানবজমিন পত্রিকায় দেখা গেল চর্মনাই পীর খালেদাকে আট দফা শর্ত দিয়ে বলেন খালেদা আট দফা মানলে তিনি খালেদার সাথে যোগ দিবেন।কিন্তু খালেদার নিকট চর্মনাইকে তেমন কোন ফেক্টর বলে মনে হয়নাই বলে খালেদা তার আট দফায় কান দেয়নাই।তবে এর মাধ্যমে এই ভন্ড পীরের নারী নেতৃত্ব প্রীতিই জাহির হয়েছে।

এরপর বর্তমান পীর রেজাউল করিম সে যখন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হলো তখন সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ” আপনি মহিলা সদস্যাদের সাথে কিভাবে বৈঠক করবেন?” জবাবে সে বলেছে, “আমি মহিলাদের সাথে বৈঠক করতে কোন ইতস্তত করবনা, তাদেরকে বোরকা পরতে বলবনা, নারী নেতৃত্বের বিরোধীতা শীর্ষ পর্যায়ে করলেও তৃণমূল পর্যায়ে করবনা” (দৈনিক ভোরের কাগজ)- এ ভন্ড পীর বেপর্দা হতে কোন ইতস্ততই নাকি করবেনা আবার বলে তৃনমূল পর্যায়ে নারী নেতৃত্বের বিরোধীতা করবেনা, তৃনমূল পর্যায়ে কি নারী নেতৃত্ব জায়েজ?

অর্থাৎ এই পীর নিজেকে নারী নেতৃত্ব বিরোধী দাবি করলেও অনেকভাবেই সে নারী নেতৃত্ব সমর্থন করছে, নারী নেতৃত্বের পক্ষে সাফাই গেয়েছে, নারী নেত্রীর জন্য কাজ করেছে। কিঞ্চিৎ প্রমাণ এখানে দেয়া হলো।

জামায়াত একটি ব্যর্থ সংগঠন ?

১. কারণ বাংলাদেশের ফ্রন্ট লাইনের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো দল হওয়া সত্ত্বেও তারা এখনো গণমানুষের দলে পরিণত হতে পারে নি।

২. জামায়াত তার ৭৩ বছরের রাজনীতিতে এককভাবে কখনোই ক্ষমতার স্বাধ পায় নি।

৩. ৭৩ বছরে জামায়াত দু’বার নিষিদ্ধ হয়েছিল। এতে জামায়াতের অপরিপক্কতা প্রকাশিত হয়।

৪. ৭১ সালে জামায়াত ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

৫. এত বছর রাজনীতি করার পর তারা এখন তাদের সব মূল নেতাদের হারাতে বসেছে জঘন্য সব অপরাধের দায়ে।

এরকম আরো কারণ দেখিয়ে আপনি বলতেই পারেন জামায়াত ব্যার্থ।

কিন্তু আসলে কি তাই?

বস্তুত সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ভর করে উদ্দেশ্য-লক্ষ্যের উপর।

একটি দল হিসেবে জামায়াতের চূড়ান্ত লক্ষ্য কি?

সেটাই বলে দিবে জামায়াত কতটুকু ব্যর্থ।

আমাদের মূল ও চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জন।

আর সেই সন্তুষ্টি অর্জন হবে কুরআন হাদীস অনুসারে মানুষের সার্বিক জীবনের পূনর্বিন্যাস সাধনের মাধ্যমে।

জামায়াত যুগে যুগে উপমহাদেশে এমন সব জানবাজ মানুষ তৈরী করে যাচ্ছে যারা ইকামাতে দ্বীনের কাজে নিজের জীবন উৎসর্গকে সাফল্যের সিংহদ্বার মনে করে।

জামায়াতের আছে অনন্য সাতটি বৈশিষ্ট্য যা জামায়াত কে তার লক্ষ্য অর্জনকে সহজ করে দিচ্ছে।

১. জামায়াতের বিল্পবী দাওয়াত। জামায়াত দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মানুষকে আহ্বান করে না। দুনিয়ার কোন সফলতার লোভ দেখায় না।

একান্ত পরকালীন সাফল্যের কথা সামনে নিয়ে আসে, যেভাবে আল্লাহর রাসূল দাওয়াত দিয়েছেন।

২. ইসলামী সমাজ গঠনের উপযোগী ব্যক্তিগঠন পদ্ধতি। জামায়াত মনে করে ব্যক্তিগঠনের জন্য তিন ধরণের যোগ্যতা লাগবে। এক, ঈমানী যোগ্যতা।

দুই, ইলমী যোগ্যতা। তিন, আমলী যোগ্যতা। যোগ্যতা হাসিলে কঠোর প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছে সংগঠনটি।

৩. জামায়াত ইসলামীর তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি একটি তাকওয়া ভিত্তিক সংগঠন।

জামায়াত কোন লোককে দায়িত্ব প্রদানকালে তাকওয়ার বিষয়টি সামনে রাখে।

৪. জামায়াতের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে “নেতৃত্ব সৃষ্টির পদ্ধতি”। অসাধারণ এই পদ্ধতিতে নেতৃত্ব বা পদলোভীদের কোন স্থান নেই।

৫. ক্ষমতা দখলের রাজনীতি করে না জামায়াত। জামায়াত ইসলামী সূরা নূরের ৫৫ নং আয়াতকে সামনে রেখে বিশ্বাস করে, ইসলামী সরকার চালানোর যোগ্য কর্মীবাহিনী তৈরী হলে আল্লাহ পাক সরকারী দায়িত্ব দেয়ার পথ করে দিবেন।

৬. জামায়াতের অর্থের উৎস জামায়াতের দায়িত্বশীল, কর্মী এবং শুভাকাংখীরা। জামায়াত বাইরের অন্য কারো অর্থে চলে না। কারো ক্রীয়ানক হিসেবে কাজ করে না।

৭. বিরোধীদের প্রতি জামায়াতের আচরণ।

জামায়াত তার বিরোধীদের মধ্যে যারা অশালীন ও অভদ্র ভাষা প্রয়োগ করে তাদের করুণার পাত্র মনে করে। জামায়াতের দাওয়াত আদর্শ ও কর্মসুচীর বিরুদ্ধে বেচারাদের কিছু বলার সাধ্য নেই বলে বেসামাল হয়ে গালাগালি করে মনের ঝাল মেটানোর চেষ্টা করে। জামায়াত তাদের হিদায়াতের জন্য দোয়া করে।

আর যারা মিথ্যা সমালোচনা করে অপবাদ দেয়, জামায়াত প্রয়োজন মনে করলে সেই সমালোচনা যুক্তি দিয়ে খন্ডন করে।

সুতরাং যারা শুরুর কয়েকটি পয়েন্ট দেখিয়ে আমাদের ব্যর্থ বলতে চাইবেন তাদের প্রতি আমাদের বিনীত বার্তা, আপনারা যেগুলোকে সফলতা মনে করেন আমরা সেগুলোকে চূড়ান্ত সফলতা মনে করি না।

সেগুলো আমাদের মূল লক্ষ্যও নয়।

আর তাছাড়া আমরা এও বিশ্বাস করি, মুমিনের দুনিয়ার জীবনে ব্যর্থতা হল আল্লাহর আনুগত্য করতে না পারা।

আর কোন কিছুকেই ব্যর্থতা মনে করি না।

দুনিয়ার জীবনের কষ্ট, ক্ষমতা পাওয়া বা না পাওয়া সবগুলোকেই আমরা পরিক্ষা বলেই গন্য করি।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে রাখুন। আমিন।

খোলা চোখে বাংলাদেশের জন্য জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের মৌলিক অবদানঃ

১.পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে দেশের একনিষ্ঠ লড়াকু কর্মী হিসেবে গড়ে তোলাঃ

১৭৫৭ সালে অধিপত্যবাদী ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশ দখল করে নেয়ার সাথে সাথে প্রশাসনিক ও অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে ইংরেজী চালু করার কারনে আরবী, ফারসী, উর্দু ভাষা জানা হাজার হাজার আলেম (মাওলানা)প্রশাসনিক কাজের যোগ্যতা হারান ইংরেজী না জানার কারনে। তিনটি ভাষা পারা স্কলারগন হয়ে গেলেন অপাঙ্থেয়। তারা অহমিকা , আত্বসম্মানবোধ , দুরদৃষ্টির অভাবে ইংরেজী শিক্ষাকে হারাম বললেন। আর পিছিয়ে পড়লেন ৩০০ বছরের জন্য। তিনটি ভাষা রপ্ত করার মত যোগ্যতা সম্পন্নরা হয়ে গেলেন সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগন। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির এই পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে দেশের একনিষ্ঠ লড়াকু কর্মী হিসেবে পুনরায় গড়ে তোলে ব্রিটিশ পরাধীনতার গিনিপিগের দায় থেকে মুক্ত করেছে বাঙ্গালী জাতিকে।

২.ক্ষমতায় না গিয়ে কর্মসংস্থান তৈরী ও চুড়ান্ত সফলতা অর্জনঃ

বাংলাদেশে অন্যতম রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহন করেছে। বাংলাদেশের ডেভেলাপমেন্টের জন্য মৌলিক কি কাজ করেছে ?

অথচ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির এদেশে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গডে তুলেছে। স্কুল ,কলেজ,মাদরাসা , বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, বীমা , হাসপাতাল, দাতব্য প্রতিষ্ঠান,এনজিও, মাইক্রোফিন্যান্স , মাল্টিপারপাস, ফার্মাসিউটিক্যালস, রিয়েলস্টেট কোম্পানী, শিপিং কোম্পানী, ট্রান্সপোর্টে বিনিয়োগ , টিভি চ্যানেল , সংবাদপত্র সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও কর্মসংস্থান তৈরী করেছে। যা বাংলাদেশের ডেভেলেপমেন্টে সুনাম ও সফলতার সাথে কাজ করছে। ইসলামী ব্যাংক আজ ব্যাংক জগতের শীর্ষে অবস্থান করছে।

৩. করাপশান ফ্রি (দুর্নীতি মুক্ত) পেশাদারী প্রতিষ্ঠান তৈরীঃ

জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের ব্রেইন চাইল্ড ইসলামী ব্যাংক ১০০% করাপশান ফ্রি পেশাদারী প্রতিষ্ঠান। এখানে ইনভেস্টমেন্ট নীতে ঘুষ দিতে হয়না । কর্মকর্তা কর্মচারীরা ১০০% সৎ। বাংলাদেশে এমন করাপশান ফ্রি পেশাদারী প্রতিষ্ঠান কে তৈরী করতে পেরেছে।

করাপশান ফ্রি পেশাদারী প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারনে এই মাসে টোটাল ফরেন রেমিটেন্সের ৩৮ % ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা ইসলামী ব্যাংককে চরম বিশ্বাস করে ও ইসলামী ব্যাংক সফলতার সাথে সেই আস্থা ধরে রেখে দেশের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ইসলামী ডেভেলেপমেন্ট ব্যাংক(আইডিবি) এর মত প্রতিষ্ঠান ও ইসলামী ব্যাংক এর সাথে বেশী কাজ করতে ইচ্ছুক যে ব্যাংকটি জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের বলে আওয়ামীলীগ প্রায় চিৎকার করে উঠে।

৪. ইসলামী অর্থনীতি ও ইসলামী ব্যাংকিং জামায়াতে ইসলামীর ব্রেইন চাইল্ডঃ

ইসলামী ব্যাংকিং ও ইসলামী অর্থনীতি জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের ব্রেইন চাইল্ড। এই মডেল ওআইসিভূক্ত অনেক ইসলামী দেশে চলছে। সম্প্রতি নাইজেরিয়া সরকারী ভাবে আইডিবির পরামর্শে ইসলামী ব্যাংক থেকে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা হায়ার করেছে সে দেশে ইসলামী ব্যাংকিং চালু করার জন্য। সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রঃ) ও মাওলানা আবদুর রহীমের অনবদ্য গবেষনায় এটি সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে ৭ টি র্পূনাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক রয়েছে যা জামায়াত নেতাদেরই চিন্তার সাফল্য। প্রপিট লস শেয়ারিং মেথড পুরোবিশ্বের অর্থনীতির জন্য ত্রানকর্তা বিবেচিত হবে অচিরেই।

৫.তত্তাবধায়ক সরকারের র্ফমূলা দেয়াঃ

একটি মাইক্রো ক্রেডিটের আইডিয়া দিয়ে ও বাস্তবায়ন করে ডঃ ইউনুস সাহেব বাংলাদেশকে নোবেল প্রাইজ এনে দিয়েছে। ইউনুস সাহেবের যেমন হিলারীরা বন্ধু ঠিক তেমনি অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবেরও যদি পশ্চিমা বন্ধু থাকত তবে তত্তাবধায়ক সরকারের র্ফমূলা দেয়ার জন্য শান্তিতে আরেকটি নোবেল বাংলাদেশ পেত। রাষ্টবিজ্ঞানে অনন্য সংযোজন তত্তাবধায়ক সরকারের র্ফমূলা। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের দুর্যোগপূর্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এটি দারুন কার্যকরী হয়েছে। তত্তাবধায়ক সরকারের র্ফমূলার আবেদন এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে তীব্রভাবে বিদ্যামান। পৃথিবীর সকল দুর্বল গনতন্ত্রী দেশে তত্তাবধায়ক সরকারের র্ফমূলা আশার পথ দেখাবে অনেক দিন ধরে।

৬.আধিপত্যবাদ বিরোধী জনশক্তি তৈরীঃ

সরকার পরিবর্তন হলে আওয়ামীলীগের সোনার ছেলেদেরকে (ছাত্রলীগ/যুবলীগ) ক্ষমতায় থাকাকালীন করা অপকর্মের কারনে জনরোষের ভয়ে বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে দেখা যায়না ।

জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা পৃথিবীর ইতিহাসের স্মরনকালের ভয়াবহতম নির্যাতন উপেক্ষা করে রাজনৈতিক ময়দানে তীব্রভাবে সক্রিয়। সকল আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের অবদান রয়েছে। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও ৯৬ তত্তাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন সহ আধিপত্যবাদী ভারত ও আমেরিকা বিরোধী আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের ভূমিকা আছে। আধিপত্যবাদ বিরোধী নয় বিধায় আওয়ামীলীগকে দেশপ্রেমিক জনগন একদমই বিশ্বাস করেনা।

৭. আক্ষরিক স্বাধীনতার পরিবর্তে মানসিক স্বাধীনতার উপর গুরুত্বারোপ ও জন সেন্টিমেন্ট তৈরীঃ

জামায়াত ইসলামীকে নিয়ে একটি অভিযোগ হচ্ছে তারা ১৯৭১ এ স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। এই অভিযোগের উত্তরে জামায়াতে ইসলামীর উত্তর হচ্ছে "তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের ভয়ে পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাক চাননি" ।

আজকের বাস্তবতায় বাংলাদেশের জনগনকে যদি প্রশ্ন করা হয়

ক. ভারতীয় পন্য ছাড়া চলতে পারবে বাংলাদেশ?

খ. ভারতীয় টিভি চ্যানেল ও সিনেমা ছাড়া চলতে পারবে বাংলাদেশ?

গ. ভারতের সাথে বানিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারবে বাংলাদেশ ?

ঘ.ভারতের সাথে সামরিক শক্তিতে পারবে বাংলাদেশ?

ঙ.বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক ও অবস্থান বাংলাদেশের সাথে ভারতের হবে কি?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে

বেশিরভাগ জনগনের উত্তর হবে না।

ক. ভারতীয় পন্য ছাড়া চলতে পারবে বাংলাদেশ?

খ. ভারতীয় টিভি চ্যানেল ও সিনেমা ছাড়া চলতে পারবে বাংলাদেশ?

গ.ভারতের সাথে বানিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারবে বাংলাদেশ ?

এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর যদি জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের কাছে আপনি খুজেন তারা বলবে অবশ্যই পারবে বাংলাদেশ । ভারতীয় পন্য ছাড়া চলতে পারবে বাংলাদেশ।

ভারতীয় টিভি চ্যানেল ও সিনেমা ছাড়া চলতে পারবে বাংলাদেশ।

ভারতের সাথে বানিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারবে বাংলাদেশ । না পারলে প্রাচ্যমুখী বানিজ্যনীতি শুরু করতে হবে।

ঘ.ভারতের সাথে সামরিক শক্তিতে পারবে বাংলাদেশ?

ঙ.বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক ও অবস্থান বাংলাদেশের সাথে ভারতের হবে কি?

এই দুটি প্রশ্ন যদি জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে করা হয় তারা উত্তরে বলবে আল্লাহর উপর ভরসা ও দেশপ্রেমিক জনতার সহযোগিতায় আমরা স্বাধীন স্বত্তা নিয়ে বেচে থাকতে চাই। আর এটা প্রমানিত সত্য যে এদেশের মানুষকে যুদ্ধ করে পরাস্ত করার ইতিহাস খুবই কম আছে।

মানসিক ভাবে যদি বন্দী থাকেন তবে কখনোই আপনি স্বাধীন হতে পারবেন না। আগে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে "ইউ কেইন" আপনি পারবেন। তবেই আপনি পারবেন। জামায়াতে ইসলামী ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কেহ বিশ্বাস করেনা এখন স্বাধীন পররাষ্টনীতির কথা ।

আক্ষরিক স্বাধীনতার পরিবর্তে মানসিক স্বাধীনতার উপর জামায়াতে ইসলামী গুরুত্বারোপ করেছে ও জন সেন্টিমেন্ট তৈরী করেছে।

৮.নৈতিক চরিত্র বিকাশ সাধনের জন্য প্রচুর পরিমান সাহিত্য তৈরী ও অনুবাদঃ

জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির ও তার চিন্তাভাবনার জনশক্তিরা নৈতিক চরিত্র বিকাশ সাধনের জন্য প্রচুর পরিমান সাহিত্য রচনা করেছে ও বিদেশী সাহিত্য অনুবাদ করেছে।

৯.কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবি ফররুখ এর পর প্রচুর পরিমান ইসলামী গান তৈরীঃ

আজ অসংখ্য নতুন ইসলামী গান আপনি শুনতে পান । কখনো কি মনে প্রশ্ন জেগেছে এর লেখক , সুরকার এবং প্রকাশক কারা? জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির ও তার চিন্তাভাবনার জনশক্তিরা

কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবি ফররুখ এর পর প্রচুর পরিমান ইসলামী গান দেশের জনগনের খেদমতে পেশ করেছে।

দেশগঠনঃ

১. সংগঠন ও দেশ পরিচালনায় একসাথে সকল জনশক্তির মগজ ব্যবহারের ব্যতিক্রম মডেল উপস্থাপনঃ

আওয়ামীলীগ , বিএনপি ক্ষমতায় যায় । তাদের সকল স্তরের জনশক্তি কি দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়? অথবা দল পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা কি সকল জনশক্তির মগজ ব্যবহারে সক্ষম?

কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির পরামর্শ ব্যবস্থা রেখে দল পরিচালনায় অনন্য সক্ষমতায় ও সফলতার সাথে প্রত্যকটি জনশক্তির ব্রেইনকে দল ও দেশের জন্য ব্যবহার করছে । একজন তৃনমুল পর্যায়ের কর্মী দলের ও দেশের জন্য কি চিন্তা করছেন ম্যাক্সিমাম এক মাসের মধ্যে দলীয় প্রধানের নিকট রিপোর্ট আকারে মুলবক্তব্যটি পৌছে যায়। এছাড়া কোন সমর্থক কর্মী ইচ্ছা করলে লিখিত বা ফোন করে পরামর্শ যেকোন স্তরের নেতাকে পৌছাতে পারে। দেশ পরিচালনায় এমন সিস্টেম চালু করা গেলে দেশের চেহারা অসম্ভব দ্রুত গতিতে পাল্টাবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

২.প্রচুর পরিমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা , আদর্শ ও দক্ষ শিক্ষক সমাজ তৈরীঃ

পৃথিবীকে গড়তে হলে সবার আগে নিজেকে গড়। এই মূল মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে মেধাভিত্তিক দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য জামায়াত ১০০% শিক্ষিত নেতাকর্মী তৈরী করেছে। যার অধিকাংশ নেতাকর্মীরা উচ্চ শিক্ষিত। শুধু তাই নয় প্রচুর পরিমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা , আদর্শ ও দক্ষ শিক্ষক সমাজ তৈরী করেছে। যার সামান্য অবস্থান জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে অবস্থানের জানান দেয়।

৩. সমাজের নৈতিক মোটিভেশনের লক্ষ্যে বাকশক্তি সম্পন্ন অসংখ্য সাহসী ইমাম তৈরী করেছে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির।

৪. লেখক ও সংস্কৃতি কর্মী তৈরী করেছে। রমজানের সময় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ইসলামী অনুষ্ঠান ও টকশো তার প্রমান বহন করে।

৫.জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির এদেশে দেশপ্রেমিক প্রশাসনিক অফিসার তৈরী করেছে । যারা প্রশাসনের ভিতরে সৎ ও দেশপ্রেমিক হিসেবে পরিচিত। সাবেক এক স্বরাষ্ট সচিব ও ফেনীর সাবেক এক ডিসির কথা অনেকেরই মনে থাকার কথা।

৬. জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির ও তার চিন্তাভাবনার জনশক্তিরা এদেশে অসংখ্য হাসপাতাল,ক্লিনিক, দাতব্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে।

৭. সর্বপর্যায়ের জনশক্তিকে কার্যকরভাবে অধ্যয়নমুখী করা , ক্যরিয়ার সচেতনতা তৈরী , নিজ দরীয় নেতাকর্মীদের উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাতে পারা ও দেশ গঠনের কাজে লাগিয়ে দেয়া জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির এর অন্যতম অবদান। এক রেটিনা (মেডিকেল ভর্তি কোচিং) দিয়েই তো প্রচুর মেধা সম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের তৈরী করে সরকারী মেডিকেলে সাপ্লাই দিয়েছে ছাত্রশিবির । খ্রিষ্টান মিশনারী শিক্ষাপ্রতিষ্টানের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির ও তার চিন্তাভাবনার জনশক্তিদের অবদান সুবিধাভোগীরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরন করবে।

দলীয় ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনে ভূমিকাঃ

১ .জামায়াতে ইসলামী , ছাত্রশিবির ও তার চিন্তাভাবনার জনশক্তিরা বাংলাদেশে দলীয় কোন্দল মুক্ত সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করেছে । বাংলাদেশে বিদ্যামান অন্য দলগুলোতে খুনোখুনি পর্যায়ের দলীয় কোন্দল।

২.জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির তাদের দলীয় পরিবেশে অনুকরনীয় গনতন্ত্র চর্চা করে । বিএনপি ও আওয়ামীলীগে যা নেই।

৩. ১০০% ধুমপানমুক্ত সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির। যা বাংলাদেশের অন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলো কল্পনা করতে পারেন।

৪. তৃনমূল পর্যায় থেকে নেতা তৈরী ও বাছাই করে সর্বোচ্চ পর্যায়ে দায়িত্বপালনের সুযোগ প্রদান জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির । অন্য দলের নেতা কমীরা তা স্বপ্নে ভাবেন মাত্র।

৫. দলের নেতাদের প্রতি কর্মীদের আস্থা রয়েছে অগাধ। এই দলটি সৎ জনশক্তি তৈরী করতে পেরেছে ও সৎ জনশক্তিগন জনগনের আস্থা অর্জন করেছে। যার কারনে গত ব্যাংকিং বছরে ইসলামী ব্যাংক ৩২ % ফরেন রেমিটেন্স সংগ্রহ করতে পেরেছে। আর কে না জানে এই ব্যাংকে জামায়াতে ইসলামী , ছাত্রশিবির ও তার চিন্তাভাবনার জনশক্তিরা আছেন।

বাংলাদেশে যদি আওয়ামীলীগের তৃনমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আপনি প্রশ্ন করেন তাদের নেতারা কেমন? উত্তরে তারা বলবে "সব ধান্ধাবাজ , চোর ও পেট লীগ" । আর জামায়াতে ইসলামীর সকল সমর্থককে আপনি প্রশ্ন করে দেখেন যে "সাঈদী হুজুর কেমন?" উত্তরে তারা সবাই বলবে উনি খুবই ভাল লোক। কাছের মানুষের সাক্ষ্যই মানুষের ভাল হওয়ার প্রমান বহন করে। তাই নয় কি?

৬.জামায়াতে ইসলামী , ছাত্রশিবির কর্মীদের চাদাঁয় দল পরিচালনা করেন। এমন ত্যাগী মন মানসিকতার নেতাকর্মী তৈরী অন্যরা শুধু স্বপ্নে দেখে চমকে উঠবেন মাত্র।

ঈমানের পরীক্ষায় জামায়াত শিবিরের অবস্থান কতটুকু একটু মেপে নিনঃ

১. জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে মোট মামলা হয়েছে প্রায় ২৬,০০০টি, মোট আসামী প্রায় ৫,০০,০০০ জন। ২. মোট আহত প্রায় ১৫,০০০ জন, শুধু শিবিরের গ্রেফতার হয়েছে ১২,০০০ নেতাকর্মী। ৩. জামায়াত শিবির মিলে মোট শহীদ প্রায় তিনশতাধিক এর উপরে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হাতে নিহত হয়েছে ১১ জন। ৪. গুম হয়েছে ৪০ জন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির নেতা মুকাদ্দাস ও ওয়ালিউল্লাহ সহ এখনো খোজ পায়নি ৮নেতা কর্মীর। ৫. মোট চোখ নষ্ট হয়েছে ২৮ নেতাকর্মীর। ৬. গত চার বছরে হাত-পা নষ্ট হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে ৪৫ জন নেতা কর্মী। সেদিন পল্টনে গুলি খেয়েছে যে ভাইটি সেই ভাইটির অবস্থা খুব করুন। শরীরের নিচের দিকের কোন অংশ অবশিষ্ট নেই। যদি বেঁচেও যায় তবে হয়ে যাবে জীবন্ত শহীদ। ৭. সরকার শিবিরের কেন্দ্রীয় অফিস বন্ধ করে দিয়েছে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ থেকে। এই মূহুর্তে দেশের কোথাও কোন অফিস খোলা নেই। ৮. বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্রাবাস থেকে বের করে দিয়েছে এক লাখেরওবেশি ছাত্রশিবির কর্মী নেতা কর্মীদের। ৯. পরীক্ষার হল থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে প্রায় তিনশতাধিক। পরিক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারছেনা প্রায় কয়েকলাখ ছাত্র। ১০. শিবির সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয় হলের মধ্যে রাতভর নির্যাতন করেছে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে। ১১. কম্পিউটার ও লেপটপ হারানো গিয়েছে প্রায় ১০০০ টি। ১২. একাডেমিক সার্টিফিকেট পুরিয়ে দেয়া হয়েছে প্রায় ১০০০ জনের। ১৩. কেন্দ্রীয় সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদকসহ একডজন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার এবং ডিবি ও থানায় নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনি। ১৪. থানায় নিয়ে পুলিশ গুলি করে পঙ্গু করেছে ২০ জন। ১৫. সর্বশেষ ফাঁসির কাষ্ঠে শহীদ হয়েছেন একজন---- (4 mash ager porishongkhan)

গণতন্ত্র :

ইসলাম প্রতিষ্ঠার পদ্ধতিঃ গনতন্ত্র/সশস্ত্র বিপ্লব/সেনাবাহিনীর নুসরা/ নাকি সমন্বিত প্রচেষ্টাঃ

গণতন্ত্রঃ বর্তমানে যে গণতন্ত্র চালু আছে তার মূল কথা হচ্ছে সকল ক্ষমতার উত;স জনগণ(যদিও বান্তবে দেখা যায় সকল ক্ষমতার উতস শাসক গোষ্ঠী),এখানেই ইসলামের সাথে এর পার্থক্য,ইসলাম বলে সকল ক্ষমতার মালিক আল্লাহ,বিধান ও আইন দাতা তিনি এবং পুরো পৃথীবির মানুষ একমত হলেও আল্লাহর আইন পরিবর্তন করা যাবেনা। বর্তমান গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এক জন চোর,ডাকাত বা আল্লাহ্‌ দ্রোহীর মতের যে গুরুত্ব একজন খাটি মুসলিমের মতের গুরুত্বও তাই কারন এখানে সবাই একটাই ভোট দিতে পারে কিন্তু ইসলামে জনগনের মতের গুরুত্ব থাকলেও দেশের প্রধান তথা খলিফা নির্বাচনে তাদের মতই গ্রহন যোগ্য যারা ইসলামকে জীবন বিধান হিসেবে মেনে নেয় এবং সমাজে যারা তাকওয়া,জ্ঞান,ক্ষমতা ইত্যাদি কারনে প্রভাবশালী,তাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা দুরুহ ব্যাপার,তাছাড়া এখানে কিছু দিন পর পর নির্বাচন হয়,যদি ইসলামী শাসন জনগনের পছন্দ না হয় তাহলে আবার ইসলাম বিরোধীরা ক্ষমতায় আসতে পারে কিন্তু ইসলামে একবার খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর তিনে যদি প্রকাশ্যে আল্লাহর বিধানের বিরোধীতা না করেন এবং নামায কায়েম রাখেন তাহলে তার বিরোদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েজ নয় যদিও তিনি ব্যক্তিগতভাবে গুনাহর কাজ করেন ,তাই বর্তমান এই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি পরিবর্তনের নিয়ত ছাড়া এই পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।কিছু মানুষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচনে অংশ নেয়াই যাবেনা এমন দাবি করে কারন তারা মনে করে এটা হারাম এবং হারাম পদ্ধতিতে খিলাফাত কায়েম সম্ভব নয় এবং উচিত নয়,আমি আরো কিছু পরে এই ব্যাপারে বিস্তারিত লিখছি ইন শা আল্লাহ্‌।

...................................................................................................................

সশস্ত্র বিপ্লবঃ এই ব্যাপারে বেশ কিছু আলেম আপত্তি জানিয়েছেন কারন তাদের মতে জিহাদের( সশস্ত্র বিপ্লবের)ডাক একমাত্র খলিফাই দিতে পারে,আমি কুরান হাদীস পরে যা বুঝেছি তাহল রসূল(সঃ) ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে যুদ্ধ করেননি,আল্লাহ্‌ কুরানে ইবরাহীম,নূহ,মুসা বা ঈসা(আঃ) কে তাদের মূল শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রথমে জিহাদ করতে বলেননি,আমরা যদি মূসা(আঃ) এর ব্যাপারটা দেখি তাহলে দেখব আল্লাহ্‌ মূসা(আ) এবং বনী ঈসরাঈলকে ফেরাউনের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে বলেননি বরং তাদের মিশর থেকে হিজরত করতে বলেন,তবে মিশর থেকে বের হয়ে অন্য আরেকটি কওমের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে বলেন এবং মূসা(আঃ) এর মৃত্যুর পর তার প্রধান সাহাবী ইউসা ইবনে নুন এর নেতৃত্বে তারা বিজয়ী হয়(আমি যতদূর জানি),এথেকে আমরা বুঝতে পারি ফেরাউনের বিরুদ্ধে মুসলিমদের যুদ্ধ করার সামর্থ ছিলনা তাই আল্লাহ্‌ তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে বলেননি অন্য দিকে যে জাতির বিরুদ্ধে জিহাদ করতে বলার হয়েছের তাদের সামনে নিশ্চয় ইসলামকে তুলে ধরা হয়েছিল এবং তারা না মেনে নেওয়ার পরে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে বলা হয়েছিল(এটা একটা কমন বুঝার ব্যাপার কারন কুরান পড়ে আমরা বুঝতে পারি আল্লাহ্‌ তার দ্বীনের দাওয়াত পোছার আগে কাওকে শাস্তি দেননা)এখন আমরা যদি মেনে নেই যে সশস্ত্র বিপ্লব জায়েজ তাহলে কয়েকটি প্রশ্ন আমাদের সামনে আসে,১। আমরা যে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব তারা কি মুসলিম নাকি কাফির,যদি আমরা তাদের কাফের বলি এই কারনে যে, তারা আল্লাহর আইন মানছেনা তাহলে একই যুক্তিতে যারা তাদের ভোট দেই তারাও কাফের কারন তারা কাফের কে সমর্থন করছে,আর যদি শাসক গনকে মুসলিম বলে মনে করি কারন তারা ধর্ম সম্পর্কে তেমন ভাবে না জানার কারনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করছেনা তাহলে আমি যতটুকু জানি তাতে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে ফিকহির ভাষায় জিহাদ বলেনা ,বলে বিদ্রোহ ,তবে এই বিদ্রোহ জায়েজ,এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের কি ঐ পরিমাণ শক্তি সামর্থ আছে যা দিয়ে আমরা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারব?আমরা কিছু অস্ত্র হয়ত আনতে পারব তাও কাফেরদের থেকে কিনতে হবে,কিন্তু এই অস্ত্র যুদ্ধ করতে যথেষ্ট নয় আর আমরা ভারি অস্ত্র পাব কোথায়? কারন ভারি অস্ত্র আনতে হলে সীমান্ত দিয়ে বাইর থেকে আনতে হবে তা তো সম্ভব না,আর আমরা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাইলে আগে যুদ্ধের ঘোষনা দিতে হবে, ঘোষনা ছাড়া চোরা গুপ্তা হামলা ইসলাম অনুমোদন করেনা তাইতো হাদীস শুনে মুয়াবীয়া(রঃ) কে আক্রমন না করে ফিরে আসতে হয়েছিল,আর যদি ঘোষনা ছাড়া ইসলাম বিরোধীদের হত্যা করা শুরু করি তাহলে এটা একদিকে যেমন ইসলাম সমর্থন করেনা অন্যদিকে তারাও যদি র‍্যাব পুলিশকে সাথে নিয়ে দাড়ি,টুপি দেখলে গুলি করে।নামায রত অবস্হায় গুলি করে তাহলে তাদেরকে আমরা কি বলে দোষারুপ করতে পারি??

..........................................................................................

সেনাবাহীনির নুসরাঃ এটা ইসলাম বিরোধী নয় ,তবে কথা হচ্ছে এই রকম সেনাবাহিনী তো আসমান থেকে নাজিল হবেনা,তারা যদি ইসলামিক না হয় তাহলে কেন তারা এমন বিপ্লব ঘটাবে যাতে তাদের কোনো লাভ হবেনা?

সমন্বিত প্রচেষ্টাঃ উপরিউক্ত পদ্ধতি গুলো একটিও স্বয়ং সম্পূর্ণ নয় বলে আমি মনে করি,আমাদের প্রথমে যা করতে হবে তা হচ্ছে নিজের জীবনে,পরিবারে ইসলাম কে প্রতিষ্ঠা করতে হবে ,শুধু ফরজ পালন করা যথেষ্ঠ মনে করা উচিত হবেনা বরং রসূল(সঃ) এর সাহাবীরা যেমন প্রত্যেকটা ব্যাপারে আল্লাহর রসূল(সঃ) কে অনুসরণ করতে চেষ্টা করতেন আমাদেরও তেমন করতে হবে,সাহাবীরা সুন্নাত,নফল এতো গুলো বাচ বিছার করতেননা ,কোনো ব্যাপারে আল্লাহর রসূলের নির্দেশ পেলে সেটাই মানতে প্রাণপণ চেষ্টা করতেন তবে কেও যদি নফল কিছু আমল না করে আমরা তাকে দোষারুপ করে দল বা জামায়াত থেকে বেরও করে দিতে পারিনা,আমাদের পরিবারগুলোতে পর্দা পালন হতে হবে যেমন আমার স্ত্রীর সাথে আমার ভাই,আংকেল,ভাইপো বা অন্য কোনো না মাহরাম বিনা প্রয়োজনে দেখা সাক্ষাত করবেনা ,প্রয়োজন হলে পর্দার আড়াল থেকে কথা বলতে পারে,আমাদের পরিবার গুলোতে একজন আরেক জনের প্রবেশের ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়ার যেসব বিধান কুরান দিয়েছে তা পালন করা হবে ইত্যাদি,আমাদের প্রতিষ্ঠিত স্কুল,কলেজ।ইউনিভার্সিটি গুলো অর্থ উপার্জনের মাধ্যম না হয়ে বরং দাওয়াতী ক্ষেত্র হবে, উখান থেকে যারা বের হবে তাদের বেশির ভাগই দায়ী ইলাল্লাহ হয়ে বের হবে,অন্যরা দাওয়াতী কাজে এক্টিভ না হলেও কখনো ইসলাম বিরোধী হবেনা,এই রকম সিলেবাসই আমাদের তৈরি করতে হবে,যেমন ইন্ডিয়াতে ডাক্তার জাকির নায়েকরা করেছে,আমাদের হস্পিটাল গুলোতে পরিপুর্ণ ইসলামী শরীয়াহ তথা পর্দা মেনে চলা হবে যেমন ইন্ডিয়াতে ডাক্তার জাকির নায়েকরা পেরেছে,আমাদের টিভি চ্যানেল,পত্রিকা,ব্যাংক গুলোকে সম্পুর্ণ শরীয়াহ মেনে চলতে হবে,কেউ যদি মনে করে এটা সম্ভব না তাহলে আমি তাকে আল্লাহর প্রতি নতুন করে ঈমান আনতে বলব(তবে মনে রাখতে হবে বিশেষ পরিস্তিতিতে ইসলাম তার শরীয়ার সাধারন রুলের বাইরে কাজ করার অনুমতি দেই,যেমনঃ গর্ভপাত হারাম কিন্তু মায়ের জীবন যদি হুমকির মুখে পড়ে তাহলে ইসলাম গর্ভপাতের অনুমতি দেই,এটাও শরীয়াতের অংশ।) আমাদের এমন একটা দল থাকতে হবে যেখানে লোকেরা দীন শিখতে পারবে, যাদের সমস্ত কাজ হবে কুরান হাদীস অনুসারে,এখানে প্রত্যেকটা ব্যক্তির মনে দীন কায়েমের দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত থাকবে,আমাদের যেসব ভাই admin। এ চাকরি করবে তারা একেকজন হবে ইসলমের প্রতিনিধি,আমাদের পুলিশ,সেনাবাহিনীতে লোক ঢুকাতে হবে এবং তাদেরকে সাংগঠনিক পরিবেশে রাখতে হবে অর্থাৎ তাদের জন্য নিয়মিত প্রোগ্রামএর আয়োজন করতে হবে,শারীরিক ভাবে সম্ভব না হলে অনলাইনে করা যায়,যখন প্রয়োজন হবে তখন কেন্দ্রীয় আমীরের ঘোষণায় তারা যথাযথ ভূমিকা পালন করবে,মাঠে যে সব ভাই থাকবেন তাদের উন্নত চরিত্র ও ইসলামের আদর্শ প্রদর্শন করে ব্যাপক দাওয়াতী কাজ করতে হবে.

....................................................................................

গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ কি মোটেও জায়েজ নয়?ঃ কিছু ভাই বলেন যে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ মোটেও জায়েজ নয়,তারা একটা উদাহরণ দেই যে, মদ আপনি যে নিয়তেই খাননা কেন তা হারাম,তাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ হারাম,এই যুক্তিটি ঠিক নয় কারন মদ খাওয়ার কাজটাই হারাম কাজ কিন্তু পার্লামেন্টে যাওয়া হারাম নয়, ঐখানে আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে আইন করাই হারাম,তাই এই সিস্টেম পরিবর্তন করে খিলাফাত তথা ইসলামে কায়েমের নিয়ত নিয়ে নির্বাচনে যাওয়া জায়েজ,এটাই বেশির ভাগ উলামার ফাতওয়া।সত্য বলতে কি রসূল(সঃ) এই পদ্ধতি কেই বেচে নিয়েছিলেন,মদীনার লোকেরা ইসলাম কবুলের আগে ঠিক করেছিল তারা আব্দুল্লাই ইবনে উবাই(মুনাফিক সর্দার) কে তাদের নেতা বানাবে কিন্তু তারা ইসলাম গ্রহণের পর মুহাম্মাদ(সঃ) কে নেতা নির্বাচিত করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে,যদি এর পরেও কেউ বলে যে নির্বাচনে যাওয়া হারাম তাহলে তার যুক্তিতেই তাকে মানতে হবে যে, কুফরি,শিরকি মতবাদে পরিচালিত ভার্সিটিতে পড়া হারাম হবে,কুফরি আইনে পরিচালিত আদালতে জামিন চাওয়া হারাম হবে,হজে যাওয়ার জন্য ছবি তোলাও হারাম হবে।তাই ইসলাম বিরোধীদের খোলা মাঠে গোল দিতে দেওয়া মোটেই উচিত হবেনা এতে তারা আরো ইসলাম বিরোধী আইন করতে থাকবে।

আমি উপরে যা লিখলাম তা যদি করা সম্ভব হয় তাহলে এমন এক দিন আসবে ইন শা আল্লাহ,যে দিন আমরা দেশের ইসলাম প্রিয় জনতাকে সাথে নিয়ে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের দাবি তুলতে পারব,সরকার এই আন্দোলনকে প্রতিহত করতে পারবেনা কারন পুলিশ,সেনাবাহিনীর বিরাট অংশে আমাদের লোক থাকবে,এই ভাবে বিপ্লব হওয়ার পর একটা গণভোট নিয়ে বিশ্ববাসীকে দেখাতে হবে যে, এই দেশের লোকেরাই আল্লাহর আইন চাই,আর কোনো ব্যক্তি চরম ইসলাম বিরোধী না হলে আল্লাহর আইনের পক্ষে ভোট দিবেই,এর পর সংবিধান পরিবর্তন করে সকল ইসলাম বিরোধী দল নিষিদ্ধ করা হবে এবং তাদের কৃত অপরাধের বিচার করা হবে, একজন খলিফা নির্বাচন করা হবে এবং দেশে খিলাফাত কায়েম হবে। তবে অবশ্যই বাইরের দেশের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতে হবে তা না হলে তাদের সাথে যুদ্ধ করার মত সামর্থ্য প্রথম প্রথম আমাদের থাকবেনা।

"গণতন্ত্র কুফরী, গণতন্ত্র হারাম কিন্তু গণতন্ত্রের চর্বিতে খুব আরাম"

আমরা গণতন্ত্র মানিনা কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশের সব আইন কানুন মেনে দেশে বসবাস করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি গণতান্ত্রিকভাবেই নির্বাচিত হন। আমরা হারামের মধ্যে ছব্বিশ ঘন্টা ডুবে থাকি তবু হারাম আমাদের ছিটেফোঁটাও স্পর্শ করেনা। এটা কি করে সম্ভব? এটা সম্ভব কেবল "গণতন্ত্র কুফরী, গণতন্ত্র হারাম" এই জাতের স্লোগানদারীদের ক্ষেত্রে।

এরা গণতন্ত্রের বিপক্ষে কথা বলতে বলতে জিহ্বা ক্ষয় করে ফেললেও দেখবেন না কেউ গণতান্ত্রিক সরকারের ছায়া মাড়িয়ে দেশান্তরী হয়েছে। বরং এরা যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেত গিয়ে নিগৃহীত হয় তখন এরা বলে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এরা জেলে গিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে জামিন চায় বা খালাস চায় এবং গণতান্ত্রিক সরকারের নাগরিক সুবিধাাগুলোও চায়। মোদ্দা কথা এরা শুয়োরের মাংস খায় না কিন্তু শুয়োরের চর্বি খায়।

এরা খেলাফতের একটা রূপরেখাও দিতে পারেনা কিন্তু খেলাফতের কথা বলে গলা ফাটিয়ে ফেলে। এরা এক বিশ্বে এক নেতার আদর্শে বিশ্বাসী। কিন্তু এরা রাসূলুল্লাহর (সাঃ) জীবনী থেকে কর্মপদ্ধতি গ্রহন করে না।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মক্কার জীবনে ইসলামের প্রাথমিক কাজগুলো করেছেন কিন্তু তিনি কি মক্কাতে সরকার কায়েম করেছেন? তিনি কি মক্কাতে জিহাদের ডাক দিতে পারতেন না? বরং মক্কার জুলুম নির্যাতন সইতে না পেরে আল্লাহর নির্দেশে মদীনায় হিজরত করেছেন। সেখানেই প্রথম খেলাফত কায়েম করেছিলেন রাসূল (সাঃ)। কিন্তু আমাদের খিলাফতের দাবীদারেরা দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে হিজরত করেছে এমন নজীর একটাও কেউ দেখাতে পারবেন?

এরা হিজরত করতে গেলেও আবার গণতান্ত্রিক সরকারের অনুমতি নিয়ে পাসপোর্ট ভিসা গ্রহন করতে হবে। পারবে এরা এ পথ অবলম্বন করা ছাড়া?

পৃথিবীর কোথাও এরা প্রকৃত শরীয়ত কায়েম করেছে এমন একটা নাজির কেউ দেখাতে পারবেন? আর এদের কথিত শরীয়ত কায়েমের এলাকায় সংঘাত ছাড়া আর কোন কিছু আছে? অথচ আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মদীনায় ইসলাম কায়েমের পর সেখানকার মানুষ মুক্তি পেয়েছিলো। আর এরা ইসলাম কায়েমের এলাকায় নরকে পরিণত করেছে। যেমনটা দেখছি আমরা আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে।

ইসলামের সাথে ইসলামের আদর্শের সাথে ইসলামের শিক্ষার সাথে যাদের দূরতম সম্পর্ক নেই তাদের ইসলামের নামে ধ্বংশাত্মক কর্মকান্ড সম্পর্কে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের এই গজব থেকে রক্ষা করুন (আমীন)

মতামতের ভিত্তিতে শাসন বা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনঃ

ইসলামে মতামতের ভিত্তিতে শাসনের কথা বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করা আছে। এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ষোল কোটি মানুষের মতামত যাছাই করা হবে? আর মতামতের ভিত্তিতে বা পরামর্শ ছাড়া শাসনভার গ্রহন বা পরিচালনা যেহেতু শরীয়ত সম্মত নয় সেহেতু অবশ্যই পরামর্শভিত্তিক সরকার ব্যবস্থা গঠন করতে হবে। নির্বাচন পরামর্শভিত্তিক নেতৃত্ব নির্বাচনের একটা মাধ্যম মাত্র। যারা নির্বাচন হারাম হারাম বলে গলা ফাটাচ্ছে তারা মূলত রাসূলের সুন্নাতকেই অবজ্ঞা করছে। নিচে কুরআন হাদীসের কিছু রেপারেন্স দিলাম আশাকরি উগ্র চরমপন্থা পরিহার করে ইসলামী সমাজ বিনির্মানে আপনি সহায়ক ভুমিকা পালন করবেন।

"নিজেদের যাবতীয় সামগ্রিক ব্যাপার নিজেদের পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন করে।" (আশ শূরা: ৩৮)

"বিভিন্ন কার্যক্রমে তাদের পরামর্শ নাও, তাদের সাথে মতমত বিনিময় কর।" (আলে ইমরান: ১৫৯)

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "যখন তোমাদের নেতারা হবেন ভাল মানুষ, ধনীরা হবেন দানশীল এবং তোমাদের কার্যক্রম চলবে পরামর্শের ভিত্তিতে তখন মাটির নিচের ভাগ উপরের ভাগ থেকে উত্তম হবে। আর যখন তোমাদের নেতারা হবে খারাপ লোক, ধনীরা হবে কৃপণ এবং নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব যাবে নারীদের হতে তখন পৃথিবীর উপরের অংশের চেয়ে নীচের অংশ হবে উত্তম" (তিরমিযী)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি মুসলমানদের পরামর্শ ছাড়াই আমীর হিসেবে বাইয়াত গ্রহণ করবে, তাদের বাইয়াতও বৈধ হবে না" (মুসনাদে আহমাদ)।

"যে ব্যক্তি পরামর্শ নিয়ে কাজ করে তাকে কখনও লজ্জিত হতে হয় না। আর যে বা যারা ভেবে চিন্তে ইস্তেখারা করে কাজ করে তাকে ঠকতে হয় না।" (মু'জামুস সগীর)

"যে পরামর্শ করে কাজ করে সে নিরাপদ থাকে।"(আবু দাউদ)

"আল্লাহ যখন কোন আমীরের ভাল চান তাহলে তাঁর সত্যবাদী উজির নির্বাচিত করেন, আমীর কিছু ভুলে গেলে তিনি তাকে তা স্মরণ করিয়ে দেন, শামীল কোন কাজ করতে চাইলে সে কাজে কাজে তাকে সহযোগীতা করেন। আল্লাহ যদি আমীরের অমঙ্গল ‘চান তাহলে তার জন্যে মিথ্যাবাদী উজির নিয়োগ করেন, তিনি কোন কাজ ভালভাবে তাকে স্মরণ করিয়ে দেন না, আমীর কোন কাজ করতে ইচ্ছে করলে তিনি তার সহযোগী হয় না।" (আবু দাউদ)

প্রসঙ্গ : গণতন্ত্র ও ইসলাম।

প্রশ্ন : আপনারা কুফরী মতবাদ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোন বক্তব্য দেন না কেন?

জবাব: গণতন্ত্র কুফরীর মতবাদ এমন ঢালাওভাবে বলা ঠিক নয়। গণতন্ত্র মানে সহজভাবে এইটুকু যেঃ

(১) যেই সরকার গঠিত হবে তা জনগণের নির্বাচিত সরকার হবে। কেউ গায়ের জোরে এসে গদিতে বসতে পারবে না। দেশের জনগণের রায় নিয়েই ক্ষমতায় বসতে হবে।

(২) সরকার পরিবর্তনও হবে জনগণের রায় অনুযায়ী।

(৩) একবার কাউকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসানোর পরে তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে আর তার প্রতিবাদ করা যাবে না, বাধা দেয়া যাবে না তা নয়। বাধা দেয়া যাবে, প্রতিবাদ করা যাবে, তাদের দোষ-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়া যাবে।

এসব হচ্ছে গণতন্ত্রের পরিচয়। এর সঙ্গে ইসলামের কোন বিরোধ নেই। ইসলামের সাথে প্রচলিত গণতন্ত্রের বিরোধ যেই পয়েন্টে তা হচ্ছে, “সার্বভৌমত্ব কার হাতে?” আমরা বলি “আল্লাহর হাতে”, আর তারা বলে “জনগণের হাতে”। ‘জনগণের হাতে সার্বভৌমত্ব’ এই পয়েন্টেই তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ, গণতন্ত্রের বাকি তিনটা পয়েন্টের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই।

মুহাম্মদ সা. যখন দুনিয়া থেকে বিদায় হলেন, তিনি কি তখন পরবর্তী ক্ষমতায় কে আসবেন নমিনেশন দিয়ে গেছেন কাউকে? বা উত্তরাধিকার সূত্রে কেউ কি হয়েছে? কিভাবে হয়েছে? জনগণ যাকে চেয়েছে, তিনিই খলিফা হয়েছেন। জনগণের সেই ভোট কিভাবে নেয়া হবে সেই সিস্টেম এর পার্থক্য থাকতে পারে। এখন যেমন ব্যালট পেপার হয়, একটা বয়স ঠিক করা হয়, ভোটার লিস্ট করা হয় ইত্যাদি। এই সিস্টেম তখনো গড়ে উঠেনি। কিন্তু হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা.কে জনগণই ক্ষমতায় বসিয়েছে। খলিফাগণ কেউই নিজের গায়ের জোরে, নিজে চেষ্টা করে গদিতে বসে যাননি, জনগণই ক্ষমতায় বসিয়েছে। জনগণের রায় নেওয়ার পদ্ধতি ইনডাইরেক্ট ডেমোক্রেসিও আছে, ইনডাইরেক্ট ভোটিংও আছে। সুতরাং ‘গণতন্ত্র কুফরী’ - এত বড় ফতোয়া দেয়া উচিত নয়।

আমি জিজ্ঞাসা করি যে, সরকার গঠন করা, সরকার পরিবর্তন করা, সরকারের সমালোচনা করা এইগুলি ইসলাম অনুযায়ী জায়েজ না নাজায়েজ? সবই জায়েজ। তাহলে কুফরী হলো কিভাবে? শুধু এইটুকু কুফরী যে, ‘সার্বভৌমত্ব আল্লাহর হাতে নয়, জনগণের হাতে’। সার্বভৌমত্ব অর্থ কি? সার্বভৌমত্ব মানে হচ্ছে আইন দেওয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা যার। তাই, সকলে মিলেও পার্লামেন্টে যদি বলে যে, মদ হালাল তবুও এটা হারামই থাকবে। আল্লাহর এ আইন বদলানো যাবে না। এটাই হচ্ছে ‘আল্লাহর সার্বভৌমত্ব’। আল্লাহর আইনের অধীনে যত খুশি আইন বানানো যাাবে, আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে কোন আইন বানানো যাবে না, কারণ, “আল্লাহ সার্বভৌম”। আর পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের কথা হলো, পাবলিক প্রতিনিধিরা ধর্মের ব্যাপার সহ সব ব্যাপারেই যে রায় দিবে সবাইকে সেটাই গ্রহণ করতে হবে। যেমন, ১৯২০ সালে আমেরিকা তাদের শাসনতন্ত্র সংশোধন করে সংশোধনীর দ্বারা মদকে নাজায়েজ করেছে। মদ অবৈধ, ইল্লিগ্যাল; এর দ্বারা মানুষের ক্ষতি হচ্ছে, তাই তারা এ আইন করে শাসনতন্ত্র সংশোধন করলো। ১৩ বছর পরে, ১৯৩৭ এ আবার তারা বললো, না, ‘মদ জায়েজ, মদ বৈধ’। তারা আগের সংশোধন বাতিল করে নতুন সংশোধন করলো। অর্থাৎ তারা যেটাকে খুশি বৈধ করবে, যেটাকে খুশি অবৈধ করবে। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে যদি মদ অবৈধ হয়ে থাকে তাহলে যখন বৈধ বলা হয়েছে তখনও অবৈধই ছিল। আর যখন অবৈধ বলা হয়েছে তখনও অবৈধই। ইসলামে এ রকম ভাবে আল্লাহর আইন বদলাবার কোন এখতিয়ার কারও নাই। এদিক দিয়েই পার্থক্য। গণতন্ত্র ইসলামের সঙ্গে ওই একটি পয়েন্ট ছাড়া বিরোধী নয়।

কিছু লোক প্রচার করছে যে, বিপ্লব করতে হবে। কিন্তু বিপ্লব কি? কেমন করে বিপ্লব করবে? শক্তি প্রয়োগ করা, জোর করে ক্ষমতা দখল করা, এটা কোন নবী করেছেন? তাহলে? নবীগণ জনগণের কাছে দাওয়াত দিয়েছেন। জনগণের সম্মতি যেখানে না হয়েছে, জনগণ যেখানে সাড়া দেয়নি, সেখানে ইসলাম বিজয়ী হয়নি, ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম হয়নি। মক্কায় ১৩ বছর পর্যন্ত দাওয়াতি কাজ করার পরও জনগণ সাড়া দেয়নি বলে প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলামি রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হয়নি। মদিনার জনগণ সাড়া দেওয়ায় সেখানে ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

তবে, “গণতন্ত্র” শব্দটির চেয়ে ভাল অর্থবোধক কোন শব্দ/ পরিভাষা ব্যবহার করা গেলে হয়তো ভাল হতো। যদি ‘ডেমোক্রেসি’র বদলে আর কোন পরিভাষা আমরা বানাতে পারতাম, তাহলে সুবিধা হতো। সে হিসেবে একটা পরিভাষা হতে পারে “খেলাফত”। এটা আমরা চিন্তা করে দেখতে পারি, পরামর্শ করে দেখতে পারি। ডেমোক্রেসির জায়গায় আমরা বলবো ‘খেলাফত’। কোন এক ব্যক্তির রাজতন্ত্র নয়, কোন অধিকারকৃত নয় Ñ ‘খেলাফত’ আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব। আল্লাহর আইন চালু করবে জনগণের প্রতিনিধিরা - তারা আল্লাহরও খলিফা, জনগণেরও খলিফা। এ খেলাফত শব্দ দিয়ে ডেমোক্রেসির বিকল্প শব্দ বানানো যায়। মুসলিম জনগণ যদি গ্রহণ করে তাহলে এটা হতে পাবে। যেমন রেড ক্রস এর জায়গায় রেড ক্রিসেন্ট মুসলমানরা গ্রহণ করেছে, এটা চালু হয়ে গেছে। সকল মুসলমান যখন রেড ক্রস এর জায়গায় রেড ক্রিসেন্ট ব্যবহার করতে রাজি হলো, এটা সম্ভব হলো। আমরা যদি সর্বসম্মতভাবে ‘ডেমোক্রেসি’র জায়গায় ‘খেলাফত’ শব্দটি ব্যবহার করি, এটাও হতে পারে। এটা আমি আপনাদের চিন্তার জন্য পরামর্শ দিলাম।

প্রশ্নোত্তর থেকে।

-মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম (রহ

>……ধর্মীয় রাজনীতি বিষয়ে কতিপয়

ইসলামীক আলোচকদের উদ্বৃতি--

>"ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাজনীতি ধর্মের অন্যতম বিধান-মাওলানা আজিজুল হক"

>"যারা মনে করেন রাষ্ট্র ছাড়া শরীয়তের পূর্ণাঙ্গতা হয়,তাদের এ ধারনা ভুল- মাওলানা আবুবকর আব্দুল হাই পীর সাহেব,ফুরফুরা"

>ইসলামের জীবন বিধান থেকে রাজনীতিকে আলাদা করার উপায় নেই-মতিউর রহমান নিজামী"

>"ইসলামে ধর্ম ও রাষ্ট্র ,দেহ ও প্রাণের মতই অবিচ্ছেদ্য-আল্লামা ইকবাল"

>"ইসলামী রাজনীতির বিরোধীতা,অগ্গতাই বড় সমস্যা-আবুল আসাদ"

>"কিছু রাম ও বামশক্তি মিলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের নামে ইসলাম ও দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র লিপ্ত- মাওলানা কুতুব উদ্দিন,পীর সাহেব,বায়তুশ শরফ"

>"যারা ইসলাম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করতে চায়,দেশকে তারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শাসন শোষনের ক্ষেত্রে পরিণত করতে সচেষ্ট-মাওলানা মুহিউদ্দীন খান"

>"স্বঙ্গানে ইসলাম থেকে রাজনীতি আলাদা করার চেষ্টাকারীদের ঈমান নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়-মুফতি ফজলুল হক আমিনী"

>ধর্মের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিয়ে ধর্মহীন করাই তাদের উদ্দেশ্য-মাওলানা ইসহাক"

>"ইসলাম থেকে রাজনীতিকে সঙ্গানভাবে আলাদাকারীরা মুসলমান দাবি করার অধিকার রাখে না-

মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফ"

>"ধর্মকে বাদ দিয়ে জীবনের কোন নীতিই চলেনা,সুতরাং রাজনীতিও চলে না-

ডঃ কাজী দীন মুহম্মদ"

>"ইসলাম বিদ্ধেষী চিহ্নিত চক্রটি উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চায়-

মাওলানা রেজাউল করীম,পীর সাহেব,চরমোনাই"

সুতরাং বলা যায় -শেকড়ছাড়া যেমন গাছের অস্থিত্ব কল্পনা করা যায় না,তেমনি ধর্মছাড়া মানুষের রাজনীতি তথা জীবনব্যবস্থা হতে পারে না- যারা শেকড়বিহীন বৃক্ষের কাল্পনিক অস্তিস্ত চিন্তা করে তাদের মস্তিস্কের সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে!!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

শর্ষীনা, ফুরফুরা, জৌনপুরী, ফুলতলী, সোনাকান্দা সহ সকল বালাকোটি পীরগনের শেরেকী আকীদা

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে