সৌদীর চাইতে কাতারই মুসলিম উম্মাহর অধিক কল্যানকামী






 =======================================
••কাতারের অপরাধ কি ?
কাতারের সাথে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছে।
# কাতারের অপরাধ হলো তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী অকুতোভয় সংগঠন হামাসকে আর্থিক ও আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করছে।
# তারা মিশরসহ মধ্যেপ্রাচ্যের নির্যাতিত সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের পাশে দাঁড়িয়েছে।
# কাতার ইরানের সাথে অন্ধ বিদ্বেষ বজায় না রেখে সম্পর্ক রেখেছে।
# কাতার মুসলমানদের জন্য আলজাজিরার মত একটি স্ট্রং ভয়েস তৈরী করেছে। যেটি মাঝে মাঝে সিসি সহ মধ্যপ্রাচ্যের ডিক্টেটরদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
(উল্লেখ্য গত মে মাসের ২৪ তারিখে সৌদি ও মিশর আলজাজিরার ওয়েবসাইট ব্লক করে দেয় )
# কাতারের মত ছোট একটি দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৌদি/মিশর/দুবাই থেকে ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল তারাই আয়োজন করবে।
# গতকাল আলজাজিরা আমেরিকায় নিযুক্ত দুবাইয়ের রাষ্ট্রদূতের ইমেইল হ্যাকিংয়ের বরাত দিয়ে রিপোর্ট করে..যেখানে দেখা যায় সৌদি/দুবাই ইসরাইলের লবিং গ্রূপের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছে..ইরান ও কাতারের বিরুদ্বে বিভিন্ন সেক্টরে ব্যবস্থা নিতে আমেরিকা ও ইসরাইলকে উস্কানি দিচ্ছে।

এই কারণেই মূলত আমেরিকা ও ইসরাইলের এই ৪ পুতুল কাতারের বিরুদ্বে এক হয়ে মাঠে নেমেছে।
ট্রাম্পের সৌদি সফরের সময় কেনা অস্ত্র সৌদি জোটের ইয়েমেন হামলার পর এখন কাতারের উপরে ব্যবহার করার আশঙ্কা করছে অনেকে।
কাতারের মত একটি ছোট মুসলিম কান্ট্রি, আলজাজিরার মত একটি বড় নেটওয়ার্ক চালাতে পারলে সৌদি দুবাই এরা কি করে ?
কেউ কি বলতে পারবেন, মুসলিমদের বুদ্বিভিত্তিক/কালচারাল/মিডিয়ার উন্নয়নের জন্য গত কয়েক দশকে সৌদি, দুবাই বা মিশরের ভূমিকা কি ছিলো ?

2 ===========================================================


কাতার সঙ্কট! মুসলিম উম্মাহর জন্য অশনি সংকেত!
-------
উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র কাতারই এখনো কিছুটা ইসলামী ভাবাপন্ন। ধর্মেকর্মে এখনো কাতারিরা অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের নাগরিকদের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে। মধ্যপ্রাচ্যের আরব রাষ্ট্রগুলো নামে ইসলামী রাষ্ট্র হলেও অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের কর্মকাণ্ড, বিলাসিতা, নোংরামি পশ্চিমাদের ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে এক্ষেত্রে দুবাই অনেকটা এগিয়ে। দুবাইকে অনেকে মধ্যপ্রাচ্যের ইউরোপ মনে করে থাকে। সেখানে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সমস্ত অপকর্ম চলছে দ্বেদারচে। কিছুকিছু জায়গায় পথেঘাটে মসজিদের পাশাপাশি রয়েছে উন্মুক্ত পতিতালয়ও। যা কিছুতেই মেনে নেওয়ার মত নয়।
.
পশ্চিমারা দুবাইতে যত্রতত্র স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমোদপূর্তি করছে। পাঁচতারকা হোটেলে পশ্চিমাদের পার্টি বসছে নিত্যদিন। নানা কুকর্ম চলছে বাধাহীনভাবে। নানা কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের পছন্দের পর্যটন স্পট দুবাই। পর্যটন শিল্পে অন্যান্য মুসলিম দেশের তুলনায় দুবাই এগিয়ে। তারা পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী নানান সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। ফলে ভ্রমণবিলাসীরা সেখানে ভিড় জমাচ্ছে। কদিন পূর্বে শুনলাম দুবাই সরকার অভিশপ্ত ইসরাইলী নাগরিকদের ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই দুবাইতে অবাধ বিচরণের সুবিধা দিয়েছে। যা কিছুতেই মুসলিম বিশ্বের জন্য শুভ লক্ষণ হতে পারে না।
.
যে ইহুদীরা পৃথিবীজুড়ে অসহায় মুসলিমদের রক্ত নিয়ে হলি খেলছে, যারা পৃথিবীর প্রতিটি মুসলিম জনপদে অশান্তির বিষাক্ত বীজ বুনে দিচ্ছে তাদের সাথে এমন মাখামাখি মুসলিম উম্মাহ'র জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে নিশ্চিত। এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে গোটা মুসলিম বিশ্বকে। সৌদি সরকারও আজ আমেরিকা তথা পশ্চিমাদের নাচের পুতুল হয়ে গেছে। পশ্চিমারা যেভাবে নাচাচ্ছে তারা সেভাবে নাচছে। পশ্চিমাদের কথায় উঠবস করছে। অভিশপ্ত পশ্চিমাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে। যা ইসলামের সাথে স্পষ্ট গাদ্দারী। আর তাদের মাত্রাতিরিক্ত বিলাসিতাও উম্মাহ'র জন্য দুর্দিন ডেকে আনছে।
.
মূল প্রসঙ্গ -
কয়েকদিন পূর্বে সন্ত্রাসবাদে মদতদানের অভিযোগ এনে কাতারের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে সৌদি, দুবাই, মিশর ওমান সহ মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগের। এই কথিত অভিযোগে সম্পর্কচ্ছেদের ফলে লাভবান হবে না কেউই, পশ্চিমা তথা ইসলাম বিদ্বেষীরা ছাড়া। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গোটা ইসলামী দুনিয়া। সম্পূর্ণ হিংসার বশবর্তী হয়ে প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলো কাতারের ব্যাপারে এই জঘন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এর পিছনে কলকাঠি নেড়েছে অভিশপ্ত ট্রাম্প প্রশাসন। সপ্তাহ দু-এক পূর্বে সৌদিতে ট্রাম্পের সফরের ফলাফল সম্ভবত এটাই। ধরে নেওয়া যায় পশ্চিমাদের এবারের টার্গেট শান্তিপূর্ণ কাতার।
.
প্রশ্ন-
হঠাৎ কাতারের উপর শকুনের কুদৃষ্টি পড়ার কারণ কী? কারণ কাতার তুলনামূলক ইসলামী ভাবাপন্ন। তারা সাধ্যমতো মাজলুম মুসলিমদের সহায়তা করে আসছে। তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা মাজলুম ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নিয়েছে। তাদের প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল 'আল জাজিরা' টুকটাক নির্যাতিত মুসলিমের কথা বলছে। তারা অর্থনৈতিক উন্নতি অগ্রগতিতে দ্রুত প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে পিছনে ফেলছে। তারা বিশ্ব রাজনীতিতে দিনদিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ইত্যাদি...তাইতো দুবাই কাতারকে জাহান্নামের পরিণত করার কথা বলছে। নিজেদের চিরশত্রুর সাথে নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে হাত মিলাচ্ছে।
.
মোদ্দাকথা-
সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা এই ইস্যুতে যদি কাতার আক্রান্ত হয় আক্রান্ত হবে গোটা মুসলিম বিশ্ব। আক্রান্ত হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের লক্ষলক্ষ শ্রমিকদের জীবন বিপন্ন হবে। কারণ সৌদি আরবের পরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সম্ভবত কাতার। ইসলাম বিদ্বেষীরা মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসবাদের তাবিজ খাইয়ে দিয়ে ইতোপূর্বে যেভাবে নানান দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে ঠিক একইভাবে কাতারেও অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়। কাতারকেও ধ্বংস করতে চায়। আর তারা সেই পথে হাঁটা শুরু করেছে ভাইয়েভাইয়ে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দিয়ে। প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্রগুলোও না বুঝে সাম্রাজ্যবাদীদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে।
আল্লাহ কাতারকে হেফাজত করুন।
.
আমরা সম্পর্কচ্ছেদ চাই না, চাই সম্পর্কের মজবুতি। দৃঢ় হোক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। দূর হোক দূরত্ব, অনৈক্য।

3 =============================================================

কাতার ঃ ছোট দেশ, ভিশনারি নেতৃত্ব
১। ২০১৫ জুনে বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভোতে এক সপ্তাহের জন্য যাওয়া। আমাদের গাইড ছিলো সারায়েভোর স্থানীয় ছেলে ‘রিয়াদ’ । সারায়েভো ঘুরে ঘুরে আমাদের নানা ঐতিহ্যবাহী স্থান পরিচিত করাচ্ছিলো সে । এক পর্যায়ে নিয়ে গেল সারায়েভোর দুই পুরাতন পাবলিক লাইব্রেরীতে । ৪-৫'শ বছর পুরাতন লাইব্রেরী । সার্ব নরপশুরা যখন সারায়েভোয় আঘাত হানে প্রথম কয়েকদিনেই লাইব্রেরী দুইটি গোলার আঘাতে আগুন জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। কারন সেগুলোতে সেই মুসলিম শাসনের ( ওসমানী খেলাফত ) শুরুর দিকের অনেক মহামুল্যবান গ্রন্থ ছিলো। বিশেষ করে প্রচুর আরবী গ্রন্থ । সার্ব পশুদের ক্ষোভ যেন ছিলো সেই মহামুল্যবান লাইব্রেরী গুলোতে। সপ্তাহ খানেক ধরে জ্বলে সেই লাইব্রেরী পোড়ার আগুন। হারিয়ে যায় বসনিয়ার মুসলিম ঐতিহ্য, আর মানব জাতির মহামুল্যবান কিছু সম্পদ । লাইব্রেরী দুটির একটি পুনঃনির্মান করে দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আরেকটি কাতার । সারায়েভোর পুরোন বাজারে স্থাপিত সেই পুনঃনির্মিত লাইব্রেরী গেইটে লেখা ঃ সহযোগিতায় কাতার ফাউন্ডেশান ।
২। হারানো মুসলিম স্পেন 'আন্দালুসিয়া' দেখার সৌভাগ্য হয় সেই বছরের জুলাইতে। কর্ডভার মাত্র ৮ কিলোমিটার দুরে ছিলো মুসলিম খলিফার বাসভবন 'মদিনাতুল যাহরা' মানে 'আলোকিত শহর' । নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বেই ধ্বংস স্তূপে পরিনত হয় সেই শহর, ১০০০ শতাব্দীতেই । এর পর মাটি চাপা পড়েছিলো সেই মুল্যবান ঐতিহ্যটি বিগত এক হাজার বছর। ২০ শতকের শুরুর দিকে খনন করে আবার বের করা হয় 'মদিনাতুল যাহরা' নামের এককালের দুনিয়ার সেরা প্রাসাদ টি । কিন্তু মুসলিম ঐতিহ্যের দিকে স্পেন সরকারের আগ্রহ নেই তেমন । 'যেমন আছে তেমনই থাকুক' ভাব। ইদানীংকালে 'মদিনাতুল যাহরা' দেখতে আসে প্রচুর পর্যটক। পাশে গড়ে উঠেছে আধুনিক মিউজিয়াম। সেখানেই দেখছিলাম আন্দালুসিয়ার মুসলিম ইতিহাস নিয়ে তৈরি করা একটি ডকুমেন্ট্ররী। মাত্র ১৫-২০ মিনিটের অসাধারন ডুকে তুলে আনা হয়েছে আন্দালুসিয়ার সেই হারানো ইতিহাস । দেখার পর মনের আজান্তেই চোখের কোনে অশ্রু জমে আসবে আপনার । ডকুটির শেষে ভেসে আসবে' সহযোগিতায় কাতার ফাউন্ডেশান'
৩। দুনিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শাখায় এখন কাতারের রাজধানী দোহাতে ক্যাম্পাস আছে। দুনিয়ার অনেক গবেষককেই এখন গবেষণা ফান্ড দিচ্ছে 'কাতার ফাউন্ডেশান' । এর মাধ্যমে গবেষণায় ইতিমধ্যেই দেশটি সৃষ্টি করেছে এক বিশাল প্রভাব ।
৪। আল-জাজিরার কথা নাই বললাম। বিগত একশ' বছরে মূসলমানদের হাতে গড়া মানসম্পন্ন ও প্রফেশনাল প্রতিষ্টান যদি একটার নামও নেয়া হয় তাহলে কাতারের 'আল-জাজিরার' নাম চলে আসবে। আপনি যদি আজ-জাজিরার করা সর্বশেষ 'ক্রুসেড সিরিজটা' দেখেন তাহলে বিগত দেড় হাজার বছরের সভ্যতার দ্বন্দ্বটা পানির মতো পরিষ্কার হবে। মনে হবে কত মেহনত আর পরিকল্পনা নিয়ে করা এক অসাধারণ কাজ। তাই সৌদিরা প্রথমেই বন্ধ করে দিয়েছে আল-জাজিরা । কারন আলোকে অন্ধকারের মুর্খরা ভয় করবে, এটাই স্বাভাবিক ।
ছোট দেশ কাতার এসব করেছে মাত্র দুই-তিন দশকের মধ্যে । এর পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকায় আছে ভিশনারী নেতৃত্ব। মধ্য প্রাচ্যের 'পেট্র শেখদের' পশ্চিমা দুনিয়া গিয়ে সুন্দরী নারী বগল দাবা করার ঐতিহ্য থেকে কিছুটা হলেও কাতার ব্যতিক্রমী ধারা সৃষ্টি করেছে। আর সমস্যা এখানেই । সভ্যতা তো আর দোয়া, তাবিজ দিয়ে গড়া যায় না। দরকার প্লান, ভিশন আর মেহনত । কাতার যেন সেই দিকের যাত্রী ।
সভ্যতা বিনির্মানে কাতারের এই হাটি হাঁটি পা পা যেন তাদের সহ্যই হচ্ছে না ।
তাই 'ওকে' এখানেই থামাও। দুনিয়া এখন দেখবে 'সহীহ আকিদা'র খেলা।
হায়, আল্লাহ তুমি এ খেলা থেকে কবে আমাদের মুক্তি দেবে?

4 =========================================================================
 মাতৃভূমি পুনরুদ্ধারে ফিলিস্তিনের গাজায় সশস্ত্র লড়াই করে যাচ্ছে হামাস। আর ওদিকে রামাল্লায় আলোচনার টেবিলে বসে আঙুল চোষে ফাতাহ।
সৌদি আরবের বক্তব্য, হামাস জঙ্গি, ফাতাহ আমাদের সঙ্গী।
কাতার বলছে, হারানো ভূমি ফিরে পেতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের সশস্ত্র সংগ্রাম তাদের অধিকার। এ নিয়ে সৌদি ও কাতারের মধ্যে দ্বন্দ্ব অনেক দিনের পুরনো। গতকাল সৌদিআরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আলজুবাইল হামাসকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী আখ্যা দিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি-আমিরাতের জোটবদ্ধ অপপ্রচারে যখনই কাতারের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয়ের অভিযোগ তোলা হয়, তখনই টিভির পর্দায় এর প্রমাণ হিসেবে কাতারের আমির শেখ তামিমের সঙ্গে হামাস নেতা খালেদ মিশালের সাক্ষাতের ছবি দেখানো হয়।
সৌদি আরবের এই অন্ধ বিদ্বেষ বারবার আমাকে অবাক করে। হামাস কি ফিলিস্তিন ছাড়া অন্য কোনো দেশে সশস্ত্র তৎপরতা চালাচ্ছে যে তাদের জঙ্গি আখ্যা দিতে হবে! নিজেদের ভিটেমাটি উদ্ধারে যে লড়াই, সেটা যদি জঙ্গিবাদ হয় তবে পৃথিবীর সব মুক্তিযুদ্ধ জঙ্গিবাদ হতে বাধ্য। কাতার হামাসকে সমর্থন করে, কিন্তু তাই বলে হামাসবিরোধী ফাতাহকে এভাবে কোনোদিন অভিযুক্ত করেনি তারা।
বিধ্বস্ত গাজায় সুবিশাল নগরী নির্মাণ করে দিয়েছে কাতার। কিন্তু ফাতাহকে ভালোবেসে সৌদি-আমিরাত কী দিয়েছে রামাল্লায়? গাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের বেতন-বোনাস দিয়েছে কাতার। এসব যদি হয় জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা, তবে কি ইসরাইলের সঙ্গে কোলাকুলি করে শান্তির খাতায় নাম লেখাতে হবে সবাইকে!
এ পর্যন্ত সংঘটিত সবগুলো আরব বিপ্লবে কাতার গণমানুষের পক্ষে থেকেছে- এটাই কাতারের অপরাধ। সিরিয়ার জল্লাদ বাশার আল আসাদের পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছে আমিরাত, ইয়েমেনের পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট এবং হুথি নেতা আব্দুল্লাহ সালেহর পরিবার আমিরাতে, মোসাদের সব আরব গুপ্তচর থাকে আমিরাতে- এই হচ্ছে সৌদি-আমিরাতের শান্তি-সম্প্রীতির উদাহরণ।
যারা আজ কাতারকে অবরুদ্ধ করেছে, তারা শিগগিরই অনুতপ্ত হবে এমন ভ্রাতৃঘাতী অস্থির ও অন্যায্য সিদ্ধান্তের কারণে, কাতার চিরকাল মাথা উঁচু করে থাকবে আপন মহিমায়। আয়তনে বড় বলে আপনাকে মুরব্বি মানতে হবে- এই প্রথা অনেক আগেই ভেঙেছে কাতার।


5 ===============================================================

সৌদি আরব কাতারের কাছে তাদের দাবির খসড়া তৈরি করছে।
দাবিগুলোর তিনটি হলো :
১) আল জাজিরা চ্যানেল পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে । উল্লেখ্য আল জাজিরার মহাপরিচালক আহমদ মনসুর ইখওয়ানি ও নিজ দেশ থেকে বহিস্কৃত মিশরীয় ।
২ ) কাতরে হামাস এর বিদেশ বিষয়ক অফিস বন্ধ করতে হবে । মুসলিম ব্রাদারহুড ও হামাসের নেতাদের বের করে দিতে হবে ।
৩) কাতারে শায়খ আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভির রিসার্চ সেল বন্ধ করতে হবে এবং তাকে মিশরের সামরিক সরকারের হাতে তুলে দিতে হবে ।
সবাই বলেন মারহাবা !! মারহাবা !!!
খেলা হপে , খেলা চলবে , সহিহ আকিদার খেলা ।
- আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুসলিমদের স্মার্ট মিডিয়া হিসেবে যদি একটির নাম নেয়া হয়, তবে আল জাজিরাই হবে সেই নাম। গত এক দশকে পুরো পাশ্চাত্যকে একাই চ্যালেঞ্জ করেছে মুসলিমদের এই টিভি চ্যানেল। সৌদি চায় সেটি বন্ধ হোক। কেন?
- হামাস ফিলিস্তিনি সারা পৃথিবীর মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করছে ইহুদীসের সাথে যুদ্ধ করে। ইহুদীদেরকে পরাজিত করে ফিলিস্তিন মুক্ত করা ছাড়া হামাদের আর কোন এজেন্ডা পৃথিবীর কোথাও নেই। হামাস পৃথিবীতে মুসলিমদের সাথে যোগাযোগ করে তার বিদেশ বিষয়ক সেলের মাধ্যমে সৌদি চায় সেটা বন্ধ হোক। কেন?
- আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য উভয় স্থানেই ইসলামের ২১ শতকের উপযোগী দিক নির্দেশনা দিয়ে মুসলিম তরুন সমাজকে উজ্জীবিত করেছেন। তাই তাকে নিয়ে পাশ্চাত্যের অনেকে কাফির বুদ্ধিজীবীদের এলার্জি আছে। একজন ইখওয়ানী হিসেবে কোন এক্সট্রিমিজনের সাথেও তিনি জড়িত নন, বরং উগ্র জিহাদীরা তার যুগোপযোগী জনঘনিষ্ঠ ফতোয়ার কারনে বিব্রত। সৌদি আরবের তার প্রতি এলার্জি এবং মিশরের সামরিক সরকার সিসির প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আছে। সৌদি চায় কারযাভীকে সিসি জেলে ভরে রাখুক অথবা ফাসি দিয়ে দিক। কেন?
এই কেন'র উত্তর আছে "আমেরিকা আলজাজিরা, হামাস ও কারযাভীকে ঘৃনা করে"। আল সৌদ আমেরিকাকে ভালোবাসে।
রাসুল (স) বলেছেনঃ "যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে"।

6 ===============================================================================

কাতার সংকট :
মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা বিষয়ক কিছু কথা
_________________________________
※ বর্তমান বিশ্বের প্রধান শক্তিধর পরাশক্তির দেশ আমেরিকা৷ বিশ্বব্যাপি একচ্ছত্র কর্তৃত্ব করে যাচ্ছে এই দেশটি৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-বিগ্রহ পরিচালনা করে দেশটি নিজেদের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে বেশ হিমশিম খেতে হয়৷ নিজেদের অর্থনীতিকে সচল রাখতে আমেরিকার প্রধান ব্যবসা হল অস্ত্র-বাণিজ্য৷ ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দন্ধ এবং অস্থিরতায় সব থেকে বড় ফায়দাটা তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র৷ যেকোন উপায়ে মিডেল ইস্টের মুসলিম দেশগুলোকে পারস্পরিক লড়াইয়ে ব্যস্ত রাখতে পারলেই তাদের অস্ত্র বাণিজ্যে পূর্নতা পায়৷ পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বে রক্তক্ষরণের ধারাকে আরো তীব্র করে মুসলমানদের শক্তি, সামর্থ ও মানসিক শক্তিকে দূর্বল করে রাখা যায়৷ ফলে সব পক্ষের সাথেই ভিন্ন ভিন্ন চুক্তিতে অস্ত্রের বাণিজ্য চালাতে পারে৷
মধ্যপ্রাচ্য অস্থিরতার অন্যতম কারন সৌদি আরব৷
একে তো শিয়া-সুন্নী দন্ধের ফলে ইরান, সিরিয়া ও ইয়েমানের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক ভাল না৷ ইতিমধ্যে তারা ইয়েমানের সাথে যুদ্ধেও জড়িয়েছে৷ এখানেও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের একক স্বার্থ রয়েছে৷ আর ইরান ও সিরিয়ার সাথে লড়াই করার মত অস্ত্র এই মুহূর্তে সৌদির হাতে নেই৷ ফলে যেকোন উপায়ে আমেরিকার সাথে সৌদির সু-সম্পর্ক বাজায় থকাটা অতীব জরুরী৷ ইরান ও সিরিয়াকে টেক্কা দিতে চাইলে সৌদির যে অস্ত্রের প্রয়োজন পড়বে সেটাও কিনতে হবে আমেরিকার কাছ থেকেই৷ এবং ইতিমধ্যে আমেরিকার সাথে বিশ্বের সবচেয়ে বড় "অস্ত্র-চালান" চুক্তিও সম্পন্ন করে ফেলেছে সৌদি আরব৷
অন্যদিকে সৌদি আরবের রাজতন্ত্র মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি বড় অভিশাপ৷ তুর্কি খেলাফত ধ্বংসে যে রাজতন্ত্রের জন্ম তারা এখনো মধ্যপ্রাচ্যে যাতে ইসলামী শক্তির উত্থান না ঘটে সে প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে৷ বিশেষত স্বশস্ত্র সংগঠনগুলো যাতে সৌদিতে ঢুকতে না পারে এবং সাধারন জনগনের সমর্থন নিয়ে রাজ পরিবারের ক্ষমতায় কোন আঘাত করে না বসে সে লক্ষে নিজেদের সবকিছুর বিনিময়ে হলেও আমেরিকার সাথে সম্পর্ক ধরে রাখতে চায় সৌদি আরব৷ আর এটাও মধ্যপ্রাচ্য অস্থিরতার অন্যতম প্রধান কারন৷ কেননা আমেরিকার সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে সৌদি আরব অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর সাথে বৈরি ও অন্যায় আচরন করে৷ যা বিগত সময়ে দেখে আসছি৷
※ কাতারের নীতি-আদর্শ কী সে কথায় আসা যাকঃ
যে নীতি বা আদর্শের কারনে মুসলিম বিশ্বের প্রশংসা বা সমর্থন কুড়াচ্ছে কাতার সেটা হল- বর্তমান বাদশা তামিম বিন হামাদ মধ্যপ্রাচ্যের মজলুম জনগনেরর পাশে দাড়িয়েছেন সব সময়৷ এমনকি বিপুল পরিমান ত্রাণ সহায়তা দিয়ে আসছেন যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশগুলোতে৷ অল্প বয়সী তরুন আমীরের এটি একটি ব্যতিক্রমি ও প্রশংসনীয় নীতি৷
তবে এসব কিছু থেকে এটা ধারনা করার সুযোগ নেই যে, কাতার ইসলামি খেলাফতকে সমর্থন করছে, বা ভবিষ্যতে করবে৷ বরং নিজের দেশে যাতে ইসলামি শক্তির উত্থান না ঘটে সেজন্যও যথেষ্ট পদক্ষেপ রয়েছে কাতারের৷ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ ও সংগঠনগুলোকে কাতার যে সমর্থন করে এটাকে বড়জোর "গনতান্ত্রিক ইসলাম" টাইপ কিছু বলা যায়৷ আরো সহজ করে যদি বলি, আমাদের দেশের গনতান্ত্রিক যে দলটিকে "ইসলামীয়" বলে আলেমগন যেমন সমর্থন করেন তেমনি কাতারও বিশ্বের মুসলমানদের থেকে সে সমর্থনটা আদায় করে নিচ্ছে৷ আমরাও সমর্থন দিচ্ছি৷
অন্যদিকে আভ্যন্তরীণ এবং নীতিগত দিক থেকে কাতার ইউরোপ-আমেরিকারই প্রতিনিধিত্ব করে আসছে৷ পারস্য উপসাগরের পশ্চিম পাড়ে তেলের উপর ভাসমান এই কাতার ইউরোপে অনেক বড় বড় ইনবেস্টের মালিক৷ এছাড়া কাতারে রয়েছে আমেরিকার শক্তিশালী সামরিক বিমানঘাটি৷ যা ব্যবহার করে ইতিপূর্বে ইরাকের উপর আকাশ ঝড় নামিয়েছিল আমেরিকা৷
মানচিত্রে ইরাকের অবস্থান হল- পারস্য উপসাগরের ঠিক উত্তর পাড়ে৷ অর্থাৎ কাতারের পিছনে (দক্ষিণে) আরব আমিরাত, বামে (পশ্চিমে) সৌদি আরব, সামনে (উত্তরে) বাহরাইন, এরপর সৌদির উত্তর-পূর্ব কোণে কুয়েত৷ এর ঠিক পিছনে ইরাক৷ ইরাকের উপর সহজে বিমান আক্রমনের জন্য কাতারই ছিল উপযুক্ত কেন্দ্র৷ এখান থেকে পারস্য সাগরের উপর দিয়ে সহজেই ইারাকের উপর বিমান হামলা চালানো যায়৷ কাতারকে ব্যবহার করে আমেরিকা সেটাই করেছিল৷
※ প্রশ্ন হল- আমেরিকা যদি কাতারের মিত্র-ই হয়ে থাকে তাহলে এখন কেন এদের বিরোধিতা করছে? কেন-ই ট্রাম্প চলমান সংকট সৃষ্টির কৃতিত্ব নিজের বলে দাবি করছে? এর উত্তর হল- আমেরিকা এবং ইসরাইল কখনো চায় না অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ কাতার যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া, ফিলিস্তিন সহ অন্যান্য দেশগুলোর নিপীড়িত জনতার পাশে দাড়াক৷ নিজের দলের কেউ প্রতিপক্ষকে সাহায্য-সহযোগিতা করুক- এটা কেউ মেনে নিতে পারে না৷ আমেরিকাও পারে নি৷
ফলে কাতারের সাথে মিত্রতা সত্বেও "উগ্রবাদকে সহযোগিতার কথা" বলে এই টানাপড়েন সৃষ্টি করা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে সৌদি সহ ছয়টি মুসলিম দেশকে আমেরিকা ব্যবহার করেছে সু-কৌশলে, বিভিন্ন প্রলোবন কিংবা ভয় দেখিয়ে৷ ছয়টি দেশকে হয়তো "স্ব-শস্ত্র সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে" এমন ভয় দেখানো হয়েছে৷ এরমধ্যেই সৌদিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব সম্মেলনে "শিয়া-সুনী" ইস্যু নামক আগুনের উননে নতুন করে ঘি ঢেলেছেন ট্রাম্প৷
তবে বন্ধু প্রতিম কাতারে চলমান সংকট তৈরি করে ট্রাম্পের কৃতিত্ব দাবি করাটা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেউলিয়াত্বের বহিঃপ্রকাশ বৈ কিছু না৷
ওদিকে সৌদি রাজ পরিবারও নিজেদের রাজতন্ত্র রক্ষার জন্য সবকিছুর বিসর্জন দিয়ে হলেও আমেরিকার ফর্মূলা মেনে নিতে প্রস্তুত৷ ফলে উন্নত-সমৃদ্ধ প্রতিবেশি দেশটির সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন করতে কুন্ঠাবোধ করে নি৷
※ মানচিত্রে একবার দৃষ্টি দেয়া যাক-
পারস্য সাগরের ঠিক পশ্চিম পাড়ে সৌদি আরবের সাথে ঘেষে মানচিত্রের এক ফোঁটা ভূ-খন্ড "কাতার৷" কাতারের উত্তর পাশে ছোট্ট বাহরাইন, দক্ষিণে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ আর পূর্বে বিশাল বিস্তীর্ণ পারস্য উপসাগর৷ সাগরের পূর্ব পাড়েই ইরানের অবস্থান৷
সম্প্রতি কাতার বয়কটে তিন প্রতিবেশি (সৌদি, বাহরাইন ও আরব আমিরাত) অংশ নেয়ার ফলে কাতারের আকাশপথ পুরোপুরি বন্ধ বলা চলে৷ আন্তার্জাতিক সীমারেখা উন্মুক্ত থাকলেও সে রেখা ব্যবহার করে চলা কঠিন৷ কেননা সেক্ষেত্রে অনেক অর্থ ব্যয় হবে৷ টোটালি অর্থনৈতিকভাবে কঠিন ধ্বসের সম্মুখিন হতে পারে কাতার৷ এছাড়া ইরান হয়ে পারস্য সাগরের উপর দিয়ে বিমান পথ সচল রাখা আরও কঠিন৷ বিশাল অর্থ ব্যয় হয়ে যাবে৷ ফলে কাতারকে কুন্ঠাসা করতে প্রতিবেশি তিন দেশ বয়কটে অংশ নেয়াটা অতীব গুরুত্বপূর্ন ছিল বটেই৷
※ কাতার সংকটের নেপথ্য কি?
কাতর সংকটের নেপথ্য কারন খুজতে গিয়ে অনেকেই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও আঞ্চলিক বিষয়গুলোকেই তুলে আনার চেষ্টা করছেন৷ বস্তুতঃ এককভাবে কাতার সংকট বড় কিংবা বিশেষ কিছু না৷ এটা গোটা মুসলিম বিশ্বের একটি সংকট৷ এর গভীরে যে কারনটি রয়েছে সেদিক থেকে আমরা দৃষ্টি এড়িয়ে চলছি৷
সেটা হল- মুহাম্মদ সাঃ তাঁর সাহাবীদেরকে এ অঞ্চলে যে আদর্শিক নেতৃত্বের উপর রেখে গিয়েছেন সে রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে বিচ্যুত হওয়া৷ এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল- উসমানি খিলাফত পতনের সবচেয়ে বড় ব্যানিফিশিয়ারি সৌদ রাজ-পরিবার ও ইসরাইল এবং তাদের দোসর আরব আমিরাত নিজেদের রাজত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে মুসলমানদের চরম শত্রুদের লেজুড়বৃত্তি করে যাচ্ছে৷ যার পরিনতি হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের আজকের এই মহা সংকট৷ কাতার তো হল একটি উপসর্গ মাত্র৷ যাদেরকে "উগ্রবাদকে প্রশ্রয় দেয়ার কথা বলে" টার্গেটে পরিনত করা হয়েছে৷ ঠিক যেমন এর আগে ইরাককে টার্গেট করে ধ্বংস করা হয়েছিল এই কাতারকে ব্যবহার করেই৷ সহজ কথায়- এই মুহূর্তে কাতার সংকট নতুন কিছু নয়, বরং এটি মুসলিম বিশ্বের ধারাবাহিক সংকটেরই একটি নতুন অধ্যায়৷ এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের শ্বাসক গোষ্ঠির পাশ্চাত্য শক্তির পদলেহী নীতির পরিনতি৷
ইসলামি রাষ্ট্রের অবর্তমানে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী সৌদি রাজপরিবার ও ইসরাইল এবং তাদের অনুগামীদের একটি মাত্র চাওয়া- যেন আরব অঞ্চলের মানুষ আবার জেগে উঠতে না পারে এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠা না পায় "খিলাফাত আল- মিনহাজিন নবুওয়াহ!"
※ কাতারের ভবিষ্যৎ কোন পথে?
এখন পর্যন্ত তুরস্ক কাতারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট এরদুগান স্পষ্ট বলেছেন, তিনি তার মিত্রদের সাথে নিয়ে কাতারের পাশে থকবেন৷ উগ্রবাদকে আশ্রয় দেয়ার যে অভিযোগে কাতারকে বয়কট করা হয়েছে এরদুগান সেটাকে প্রত্যাখানও করেছেন৷
কাতারের এই দুঃসময়ে ইরাকের অবস্থান স্পষ্ট না৷ বাগদাদে ত্রি-পাক্ষীক আলোচনার কথা খবরে এলেও বর্তমান ইরাকের ভূমিকা কী থাকবে সেটা স্পষ্ট না৷ খবরে কুয়েত কর্তৃক মধ্যস্থতার কথাও এসেছে৷
এ অবস্থায় কাতারের উচিত হবে- মুসলিম দেশগুলোর কাছে সাহায্য চাওয়া৷ অন্যদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়িব এরদুগানও যদি তার মিত্র শক্তির দেশগুলোকে নিয়ে কাতারের পাশে দাড়িয়ে যায় তাহলে এই সংকট কাতারকে খুব ভোগাতে পারবে না৷ ইতিমধ্যে আঙ্কারার সংসদে ২৪০ ভোটে "কাতারে তুরস্কের সামরিক ঘাটি নির্মাণ" সংক্রান্ত একটি বিলও পাশ হয়েছে৷ ফলে একথা স্পষ্ট বলা যায়- তুরস্ক যদি সব শক্তি নিয়ে কাতারের পাশে দাড়ায় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ এবং বেকায়দায় পড়বে আমেরিকার ক্রিড়নক সৌদি রাজপরিবার৷
অন্যদিকে সাগরের পূর্বপাড় থেকে ইরান যদি নৌপথে পুরোদমে কাতারের পাশে এসে দাড়িয়ে যায় তাহলে সৌদি আরবের কপালেও আরো খারাপি আছে৷ অতএব সৌদি বাদশারা যদি উন্মাদনায় বুদ হয়ে না থাকে তাহলে এই মুহূর্তে কাতারে সামরিক আগ্রাসন চালানোর দুঃসাহসও দেখবে না৷
※ পুনশ্চঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে আমার জ্ঞানের পরিধি একেবারে কম৷ শূন্য বললেও ভুল হবে না৷ সম্প্রতি কাতার ইস্যুটি সামনে এলে আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে কিছু সময় ব্যয় করি৷ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সংকটের গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করি৷ এরপর আমার সামনে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে সেগুলো-ই এনালাইসিস আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি৷
পাঠক! প্রদর্শিত যুক্তির আলোকে আমার সাথে "হা" না বলে নিজেও ভাবার চেষ্টা করুন৷ তথ্যে কোন ভুল থাকলে, অথবা কোন কারেকশন থাকলে আমাকে জানিয়ে উপকৃত করবেন বলে আশা রাখি৷ আপনার কাছ থেকে সচেতন ও গবেষণামূলক মন্তব্যও আশা করি৷
আপনি কি কাতারের পাশে দাড়াবেন, নাকি বিপক্ষে দাড়াবেন সেটা আপনার ব্যাপার৷ চাইলে নিরপেক্ষও থাকতে পারেন৷ তবে মধ্যপ্রাচ্য অস্থিরতার মূল যে কারনটি তুলে ধরেছি সেটা নিয়ে ভাবার চেষ্টা করুন এবং উত্তরনের পথ খুঁজুন!

7 ====================================================================


"অবরুদ্ধ কাতার, সৌদি জোটের ভুল সমীকরণ"
...........................................Devid Hirst
____________________________________________
ভাষান্তর :: Muhammad Noman
(কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়,মিশর)
বিষয়টা নিয়ে না লেখলে বিবেকের দংশন থেকে পরিত্রান পাওয়া কঠিন হবে। তাই ঘটনার বর্ণনা না দিয়ে সংক্ষেপে এর পেছনের কারণগুলো নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল। এরই মধ্যে অনলাইন ভিত্তিক প্রসিদ্ধ সংবাদ মাধ্যম ‘আরবি ২১ ডট কম’ এ গতকাল ৮ ই জুন একটি লেখা নজরে পড়ে। লেখক ইংল্যান্ডের বিখ্যাত মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতি বিশ্লেষক David Hirst। “কাতারকে অবরুদ্ধ করার হিসবা-নিকাশ কি ব্যর্থ হবে?” শিরোনামের এই লেখায় লেখক আবরোধ আরোপকারী পক্ষগুলোর ভুলের জায়গাগুলো চিহ্নিত করেছেন। তাঁর কথাগুলো বেশ যৌক্তিক মনে হল তাই নতুনভাবে কিছু না লেখে তাঁর লেখাটির ভাবানুবাদ এখানে শেয়ার করা ভালো মনে করলাম। তবে বিষয়টি ভালো ভাবে উঠে আসার জন্য কিছু কিছু জায়গায় টিকাকারে কিছু কথা সংযুক্ত করা হয়েছে। সংযুক্ত কথাগুলো লেখকের মূল কথা থেকে আলাদা করার জন্য বন্ধনী () দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
_________________________________________
এটা অনেক পূর্ব থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, আইএস এবং আল কায়দাকে দমন করা সন্ত্রাসবিরুধী লড়াইয়ের প্রকৃত লক্ষ্য নয়; বরং সন্ত্রাস দমন ইস্যুটি অনেক ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সারির লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্বশক্তি ও স্থানীয় রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশই মৌলিক কারণ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।
সৌদি আরবের নেতৃত্বে কাতারের উপর সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের যে অপচেষ্টা করা হচ্ছে তা থেকে উপসাগরীয় অঞ্চলের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর প্রকৃত অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। উপসাগরীয় এলাকা থেকে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তির প্রস্থান প্রচেষ্টাই মূলতঃ স্থানীয় রাষ্ট্রগুলোর ঔদ্ধত্য অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা যে কোন মূল্যে পশ্চিমাদের ছেড়ে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণ করতে চায়।
মোট কথা, তিনটি স্থানীয় শক্তি মধ্যপ্রাচ্যের দখল নিতে মরিয়া।
#এক। ইরানের নেতৃত্বাধীন শিয়া শক্তি। এই গ্রুপে ইরানের সাথে রয়েছে সিরিয়া, ইরাক এবং হিজবুল্লাহসহ বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া গ্রুপ।
#দুই। উপসাগরীয় অঞ্চলের স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক শক্তি। এই ব্লকের রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে – সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন, জর্ডান এবং মিসর।
#তিন। অত্র অঞ্চলের পরিবর্তনকামী শক্তি। এই ব্লকের নেতৃত্বে রয়েছে তুরস্ক এবং কাতার, আরা তাদের সাথে রয়েছে ইখওয়ানুল মুসলিমীন, হামাসসহ ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গ্রুপগুলো এবং আরব বিপ্লবের পক্ষের শক্তিগুলো।
এই ত্রি-শক্তির উত্তপ্ত প্রতিযোগিতার কারণে উপসাগরীয় অঞ্চলসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য হয়ে উঠেছে অশান্ত। এই বিশৃঙ্খলার জন্য আমেরিকার শত্রুদের পাশাপাশি তার মিত্ররাও সমানভাবে দায়ী। এর সবচে বড় প্রমাণ হচ্ছে কাতারের বিরুদ্ধে সাউদী জোটের সাঁড়াশি আক্রমন।
কাতারের উপর অবৈধ বল প্রয়োগ করে নিজেদের ইচ্ছে চাপিয়ে দেয়ার হিসাব নিকাশে সাউদী জোট মারাত্মক ভুল করেছে। তারা মনে করেছিল কাতারের মতো একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রকে হজম করতে তাদের খুব বেশী বেগ পেতে হবে না। কিন্তু এটা করতে গিয়ে তারা উপসাগরীয় জোটের ঐক্যের ভীতকেই চিরতরে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই অঞ্চলের দেশগুলোর ঐক্যই এতদিন পর্যন্ত ইরানী প্রভাব মোকাবেলা করে আসছিলো। কিন্তু সৌদি –আমিরাতের অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ তাদের পরস্পরের ঐক্যে যে চিড় ধরিয়েছে এবং তাদের আস্থায় যে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে তা এই অঞ্চলে ইরানী প্রভাবকে আরও বেশী জোরদার করবে।
অন্যভাবে বলতে গেলে, ইরাক সিরিয়ায় ক্রমবর্ধমান ইরানী প্রভাব সৌদি এবং তুর্কি এই দুই ব্লককে যেভাবে পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল এখন কাতারের সাথে তাদের দ্বন্দ্ব ঠিক তার বিপরীত ফল বয়ে আনবে। বরং এমনও হতে পারে যে, এই ঘটনা তুরস্ক, ইরান এবং এই অঞ্চলের সুন্নি ইসলামিক রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে আসবে। যদি তা বাস্তবে ঘটে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে এই দুই শক্তির মধ্যে স্থায়ী মৈত্রী প্রতিষ্ঠা হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। বরং পরিস্থিতির চাপ উভয়ের মধ্যে অস্থায়ী এবং দ্বিপাক্ষিক স্বার্থকেন্দ্রিক মৈত্রী তৈরি করতে পারে। তার আলামত ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে। কাতারের উপর অবরোধ ঘোষণার পরপরই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারীফ তুরস্কে ছুটে যান এবং এরদোগানের সাথে সংকট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সৌদি আরব, আমিরাত, বাহরাইন এবং মিসর অবরোধ আরোপ করে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেনি এরই মধ্যে দুটি ঘটনা খেলার চক পাল্টে দেয় এবং কাতারের বিরুদ্ধে তাদের হামলার তীব্রতাকে চরমভাবে ব্যাহত কর।
প্রথমতঃ সৌদি – আমিরাতের মতি গতি বুঝতে পেরে প্রেসিডেন্ট এরদোগান কাতারে সৈন্য প্রেরণের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। তার নির্দেশে বুধবার সন্ধ্যার মধ্যেই তুরস্ক সরকার পার্লামেন্টের জরুরী অধিবশন ডেকে সৈন্য প্রেরণ সংক্রান্ত বিল পাশ করে।
দ্বিতীয়তঃ বুধবার ইরানের পার্লামেন্ট ভবন এবং খোমাইনির মাজারে জোড়া হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়। ঘটনার দায়িত্ব আইএস স্বীকার করলেও ইরান এর জন্য সরাসরি সৌদি আরবকে দায়ী করে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে চরম প্রতিশোধ গ্রহন করার হুমকি দেয়।
( ইরানী হুমকিকে সৌদি আরব খুব গুরুত্বের সাথে নেয়। এর প্রমাণ বিপ্লবী গার্ডের হুমকির পর সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনার পেছনে নিজেদের হাত থাকার কথা জোরালভাবে অস্বীকার করেন। )
একই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দুটি বড় শক্তির সৌদি আরবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া দেশটির জন্য স্বস্তিদায়ক সংবাদ নয়। বরং উল্টা তাকেই অবরুদ্ধ করে তুলতে পারে। সৌদি আরবের পক্ষে ক্ষুদ্র কোন রাষ্ট্রকে বশ করা হয়তো সম্ভব, কিন্তু বিশ্বশক্তিগুলোর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া বড় কোন শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা তাদের মোটেও নেই।
(সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব শক্তিগুলো সামরিক দিক দিয়ে কতোটা দুর্বল তার একটা উদাহরণ হচ্ছে ইয়ামেন যুদ্ধ। তিন বছর ধরে তারা সেখানে হাউছি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ফলাফল শুন্য। হাউছিদের মতো একটা মিলিশিয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে যারা তিন বছরেও বিজয় লাভ করতে পারেনা তাদের সামরিক সক্ষমতা কতোটুকু তা সহজেই অনুমেয়।)
এখানে আরেকটি বিষয় খুবই লক্ষ্যনীয়। সংকটের শুরু থেকেই মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য আসতে থাকে। ৫ ই জুন সৌদি জোটের পক্ষ থেকে কাতারের উপর অবরোধ আরোপের ঘোষণার পর প্রায় সাথে সাথেই পেন্টাগন কাতারকে সমর্থন করে বিবৃতি প্রদান করে। “কাতার এই অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে” বলে পেন্টাগন কাতারের প্রশংসা করে। বক্তব্যে কাতারে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি ‘আল উদায়দ’ এর কথা উল্লেখ করে বলা হয় – “সামরিক ঘাঁটির কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে”। পেন্টাগনের এই বক্তব্যকে কাতারের পক্ষে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছিলো। এর পর ট্রাম্পের টুইট বার্তা পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে তোলে। পরপর কয়েকটি টুইটের মাধ্যমে তিনি এই বার্তা পৌঁছাতে চেষ্টা করেন যে, তার ইশারা এবং সম্মতিতেই কাতারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং তিনি দাবী করেন যে, কিছুদিন পূর্বে রিয়াদে শেষ হওয়া আমেরিকান ইসলামিক সম্মেলনের প্রচেষ্টা কাঙ্খিত ফলাফল বয়ে আনছে। দৃশ্যতই তার এই বক্তব্য সৌদি জোটের জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক ছিল। ট্রাম্পের এই টুইটের পর পেন্টাগন পুনরায় কাতারকে সমর্থন করে বিবৃতি প্রদান করে। ইউরোপও পেন্টাগনের সাথে সুর মেলায়। তারা আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান খুঁজে বের করার প্রতি তাগিদ দেয়। এতে তারা দৃশ্যত কাতারের বিরুদ্ধে গৃহীত অবরোধ প্রক্রিয়াকে প্রত্যাখ্যান করে। শুধু তাই নয়, কোনকোন রাষ্ট্র এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল খুব চড়া সুরে বলেন- “এটা খুবই স্পষ্ট যে, কাতারকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করা এবং দেশটির অস্তিত্বকে চরমভাবে হুমকির মুখে ফেলাই উদ্দেশ্য। এই ধরণের ‘ট্রাম্পীয় সমাধান’ চতুরমুখি সমস্যায় জর্জরিত মধ্যপ্রাচ্যের জন্য খুবই ভয়ংকর।”
(সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল জুবায়ের অবরোধ আরোপের দিনই ইউরোপে দৌড়ে যান তাদের পদক্ষেপের প্রতি ইউরোপের সমর্থন লাভের আশায়। ইউরোপিয়ানদের প্রশ্নের কোন সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেন নি। পরে তিনি আসল কথা পাড়েন যে, ট্রাম্পের ইশারায় তা করা হয়েছে। এইটা তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ইউরোপিয়ানরা ট্রাম্পের নাম শুনতেই ক্ষেপে যায়। তাই জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোঁচা মেরে বলেন যে, “ট্রাম্পীয় সমাধান” কোন ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না।)
তবে মার্কিন প্রশাসনের ধোঁয়াশা বেশীক্ষণ থাকেনি। তুরস্কের সৈন্য প্রেরণের ঘোষণা ট্রাম্পের চৈতন্য ফিরিয়ে আনে। তুর্কি পার্লামেন্টে বিল তোলার সাথে সাথেই ট্রাম্প তড়িঘড়ি করে কাতারের আমীর শায়খ তামিম বিন হামাদের সাথে ফোনে আলাপ করে নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করার চেষ্টা করে সমস্যর সমাধান করার করার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। প্রয়োজনে সব পক্ষকে সাথে নিয়ে হোয়াইট হাউজে বসারও প্রতিশ্রুতি দেয়। মনে হয়েছে যেন, টুইটের ২৪ ঘণ্টা পরে তাঁর কাছে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের বার্তা পৌঁছে।
(আমেরিকায় ট্রাম্পের এমন বালখিল্যতার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠে। একজন মার্কিন রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ট্রাম্পকে উপহাস করে লেখেন- “মনে হচ্ছে কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির কথা ট্রাম্প জানেন না”)
নিশ্চিতভাবে সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত তাদের ক্ষুদ্র মুখে এতো বেশী পরিমাণ খাদ্য পুরে নিয়েছে যে তা চিবানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কাতারের উপর অবরোধ আরোপ করার ক্ষেত্রে তাদের ভুল হিসাব-নিকাশ বুমেরাং হতে বাধ্য। উল্টো তারাই মুসিবতে পড়বে।
তাদের #প্রথম_ভুল- ট্রাম্পের কথাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করা। তারা যখন ট্রাম্পের ঝুলিতে সাড়ে চারশো বিলিয়ন ডলার রাখছিল তখন ট্রাম্পের আশেপাশের পরিবেশটা একটু তাদের দেখে নেয়া উচিত ছিল। হাজারো সমস্যায় জর্জরিত ট্রাম্পের তরী যে দ্রুত ডুবছে তা তাদের বুঝা উচিত ছিল। মার্কিন জনমতের চাপে এখন তিনি দিশেহারা। মার্কিন প্রশাসনের উপর খুব দ্রুত প্রভাব হারাচ্ছেন। সিআইএ, এফবিআই, পেন্টাগন, পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, সিনেট, কংগ্রেস এবং বিচার বিভাগসহ প্রায় প্রত্যেকটি বিভাবগের সাথে তিনি বিরোধে জড়িয়েছেন। (গতকাল ট্রাম্পের বরখাস্তকৃত সাবেক এফবিআই প্রধান James Comey সিনেটে ট্রাম্পকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হাত থাকার কথা জোর দিয়ে বলেন। এই ঘটনার জের ধরে নিকট ভবিষ্যতে ট্রাম্প ক্ষমতাচ্যুতও হতে পারেন। কারণ এই ঘটনা যদি আরও জোরালো ভাবে প্রমাণিত হয় তাহলে তা ওয়াটারগেটের চেয়েও বড় আকার ধারণ করবে নিঃসন্দেহে।) অতএব, এমন একজন ব্যাক্তির পক্ষে যে তাদের জন্য খুব বেশী কিছু করা সম্ভব নয় এই সহজ কথাটি সৌদি জোটের বোঝা উচিত ছিল।
এর পরে আসছে আমেরিকায় আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ আল উতাইবার কথা। প্রায়ই আমেরিকার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয় লোকটি। আমেরিকায় চরম ডানপন্থী ইহুদী লবিগুলোর সাথে তার দহরম-মহরম সম্পর্ক। সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটসের মতো ব্যাক্তিকেও পকেটে পুরতে সক্ষম হয়। রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার এই সাফল্য তাকে আরও বেশী বেপরোয়া ও অপরিণামদর্শী করে তোলে। সে মনে করেছিল গেটসের মতো গোটা মার্কিন প্রশাসনকেও বাগে আনা তার পক্ষে সম্ভব হবে। এখানেই সে ভুল করে বসে। মার্কিন রাজনীতির সূক্ষ্মপাঠগুলো বোঝা তার পক্ষে সক্ষম হয়নি। ২০০৮ পর্যন্ত আমেরিকায় দায়িত্ব পালনকারী সাবেক রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত Sergey Kislyak কে ওয়াশিংটনে এযাবতকালের সবচে বেশী প্রভাবশালী বিদেশি কূটনীতিক হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমেরিকানরা তাকে মাটিতে নামিয়ে আনে তার মাত্রাতিরিক্ত অউদ্ধ্যত্যের কারণে। এইসব রাষ্ট্রগুলোর একটাই সমস্যা, তারা ব্যাক্তিগত কিছু প্রভাব এবং দুয়েকটি মার্কিন লবির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারাকে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সাথে মিলিয়ে ফেলে। অথচ, দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস।
(ইউসুফ আল উতাইবার কথা উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, এই লোকটি তার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিকে কাতারের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করার চেষ্টা করে। কাতারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উস্কানি মূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। কাতারের মার্কিন ঘাঁটি প্রত্যাহার করার জন্য লবিং করে। এমনকি তুরস্কের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানেও নিজের হাত থাকার কথা স্বীকার করে। এসব অপকর্মে সে ইসরাইলপন্থি লবিগুলোকে ব্যাবহার করে। চলতি মাসের তিন তারিখ একটি রাশিয়ান হ্যাকার গ্রুপ তার ইমেইল হ্যাক করে প্রায় পঞ্চান্ন পৃষ্ঠার মতো তার ইমেইল বার্তা ফাঁস করে। এই সব তথ্য তার ইমেইল বার্তায় উঠে আসে। আরব আমিরাত তার কোনটিই অস্বীকার করতে পারেনি।)
সৌদি জোটের #দ্বিতীয়_ভুল হচ্ছে- কাতারকে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র মনে করা। তাদের ধারণা ছিল এই ছোট্ট রাষ্ট্রটিকে সহজেই হজম করা যাবে। বড় কোন রাষ্ট্র তার সাহায্যে তেমন এগিয়ে আসবে না। তুরস্কের কথা যে তাদের মাথায় ছিল না তা নয়, তুরস্ককে নিয়ে তাদের ভিন্ন হিসাব ছিল। শেষ দিকে এসে সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত তুরস্কে বেশ মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ করে। তারা মনে করেছিল এর দ্বারা তারা তুরস্ককে কিনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এরদোগান একটু মৃদু-মন্দ প্রতিক্রিয়া দেখালেও নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থের দিকে তাকিয়ে তেমন কোন কড়া অবস্থান নিবেনা। কিন্তু তাদের হিসাব ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কারণ এরদোগানের বুঝতে কষ্ট হয়নি যে, কাতারের পতন ঘটে তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্ক সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়বে। তাই তিনি কোন ঝুঁকি নিতে চাননি। দ্রুত সৈন্য প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেন।
(এখানে এই কথাটি স্পষ্ট করা জরুরী যে, তুরস্কের সৈন্য প্রেরণের অর্থ সৌদি জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা নয়। তুরস্ক প্রাথমিকভাবে ৫০০০ সৈন্য প্রেরণের ঘোষণা দিয়েছে। এই পরিমাণ সৈন্য দিয়ে লড়াই করা সম্ভব নয়। এখানে তুরস্কের ম্যাসেজটি সামরিক নয়; বরং রাজনৈতিক। তুরস্ক বোঝাতে চেয়েছে যে, যেকোনো প্রতিকুল পরিস্থিতিতে তারা কাতারের পাশে থাকবে। কাতার তাদের সংকটে একা নয়। পাশাপাশি সৌদি আরবের শাসকদের প্রতি তিনি আস্থা রাখতে পারছিলেন না। কারণ বাদশা সালমান যদিও সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের প্রধান পরিচালক, কিন্তু এইসব কর্মকাণ্ডের পেছনে তাঁর ছেলে মুহাম্মাদ বিন সালমানের হাত বেশী। মুহাম্মাদ হচ্ছে অনভিজ্ঞ আবেগি একজন তরুন। তার উপর আবুধাবির শায়খ মুহাম্মাদ বিন জায়দ তার মাথাটা পুরাই নষ্ট করেছে। এই সব বিশৃঙ্খলার পেছনে এই দুই জনের সক্রিয় হাত। কাতার যদি শেষ পর্যন্ত বশ্যতা স্বীকার না করে তাহলে তারা সামরিক আগ্রাসনের মতো অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এধরণের কোন চিন্তা যেন মাথায় আনার সাহস না পায় সে জন্য তুরস্কের এই সিদ্ধান্ত।)
তাদের #তৃতীয়_ভুল- তারা তাদের গোপন উদ্দেশ্য লুকাতে পারেনি। কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদদ দেয়া এবং ইরানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ধাপ্পাবাজি। এগুলো যে আসল কারণ নয় তা বোঝার জন্য রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ যে ইরানের সাথে সম্পর্ক রাখার কারণে তারা কাতারকে শায়েস্তা করতে চায় সেই ইরানের সাথে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিশরসহ অবরোধ আরোপকারী প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের কূটনীতিক সম্পর্ক রয়েছে। শুধু তাই নয়, উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আরব আমিরাতই ইরানের সবচেয়ে বড় ব্যাবসায়িক অংশীদার। আমিরাতের দাবী অনুযায়ী তাদের তিনটি দ্বীপ এখনও ইরান দখল করে রেখেছে। তাহলে তো সবার আগে আমিরাতের উচিত ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা।
অতএব, মুখে তারা যা বলছে তা তাদের আসল অভিযোগ নয়। তাদের আসল দাবী ভিন্ন, যেগুলো তারা কুয়েতের আমিরের মাধ্যমে কাতারের কাছে পাঠিয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ইখওয়ানের এবং হামাসের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা। প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজীরা বন্ধ করে দেয়া। আরবি ভাষায় প্রকাশিত বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের অর্থায়ন বন্ধ করা, যেমন, ‘আরবি ২১’ ‘আল কুদস আল আরাবি’ ‘হাফিংটন পোষ্ট’ (আরবি সংস্করণ) ইত্যাদি। পাশাপাশি বিখ্যাত আরব চিন্তাবিদ আযমি বাশশারাকে কাতার থেকে বহিস্কার করা।
মধ্যপ্রাচ্যের এইসব স্বৈরশাসকগুলো জনগণের স্বাধীন মতপ্রকাশের শেষ মাধ্যমটুকুও কেড়ে নিতে চায়। এই সব গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রচারিত হয় তা তাদের জনগণের ঘুম ভেঙ্গে দিক তা তারা চায় না। তারা তাদের দেশের জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে তো গলা টিপে হত্যা করেছে, কিন্তু তাতেও তারা আশ্বস্ত হতে পারছেনা। এখন তারা তাদের সীমানার বাইরের গণমাধ্যমগুলোর টুটি চেপে ধরতে চায়। তাদের মসনদ টিকিয়ে রাখতে হলে এসব বেয়াড়া গণমাধ্যমগুলোর লাগাম অবশ্যই টেনে ধরতে হবে। আল জাজিরার মতো একটি চ্যানেলের বিরুদ্ধে চারটি রাষ্ট্র যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। যদি একটি মাত্র সংবাদ মাধ্যম তাদের ক্ষমতার ভীতকে এভাবে নাড়িয়ে দিতে পারে তাহলে বোঝাই যায় যে তারা কোন আগ্নেয়গিরির উপর তাদের স্বপ্নের প্রাসাদ সাজিয়েছে।
তাদের #চতুর্থ_ভুল- হামাসকে তাদের সংকটে টেনে নিয়ে আসা। প্রথম দিকে তারা হামাস ইস্যু তোলেনি। ইরান, শিয়া এইগুলো নিয়ে ডঙ্কা পেটাচ্ছিল। কিন্তু সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়র প্যারিস এবং বার্লিনে গিয়ে যখন বুঝতে পারলেন যে, ইউরোপিয়ানদেরকে ইরানী মোয়া গিলানো সম্ভব হচ্ছেনা, তখন ইসরাইলী এবং ইয়োরোপীয় সমর্থন লাভের আশায় সচেতনভাবে হামাস ইস্যুটি যুক্ত করে দেন এবং প্যারিস থেকে ঘোষণা দেন যে, কাতারকে ইখওয়ান এবং হামাসের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। ইসরাইল এবং আমেরিকার পরে এই প্রথম কোন আরব রাষ্ট্র হামাসকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করলো। এমনকি রাশিয়াও হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেনি। ক্ষমতার লিস্পা তাদেরকে কতো নিচে নামিয়ে এনেছে এটা তার একটিমাত্র উদাহরণ।
কিন্তু সৌদি আরবের এই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। তারা ইয়রোপিয়ানদেরকে তাদের অবৈধ আবরোধের যৌক্তিকতা বোঝাতে সক্ষম হয়নি। সৌদি জোটের বক্তব্যগুলোকে তারা মোটেও আমলে নেয়নি। গোটা ইয়োরোপ বিষয়টাকে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব হিসেবে ধরে নিয়েছে। জার্মানি এবং স্পেন আরও আগ বাড়িয়ে তাদের এই পদক্ষেপকে কাতারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বুধবার বার্লিনে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন কাতারকে সন্ত্রাসের মদদদাতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছিল তখন তার মুখের উপর জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য- “মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসের উৎস সম্পর্কে আমাদের ইয়োরোপীয় সরকারগুলোর হাতে নিখুঁত তথ্য আছে। আমাদের জানা মতে বহু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অর্থায়ন হয় রিয়াদ থেকে।” কথাটি শুনে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পুরা থতমত খেয়ে যান।
এখানে হামাসকে টেনে আনার কারণে তারা ইসরাইলী সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। নেতানিয়াহু এবং লিবারমেন কাতারের অবরোধকে সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক বলে আখ্যায়িত করে। নেতানিয়াহু বলেন- “এবার আরবদের বুঝে আসলো যে, তাদের শত্রু ইহুদীরা নয়; বরং ইসলামী জঙ্গিরাই হচ্ছে আরব এবং ইসরাইলের অভিন্ন শত্রু। এই ঘটনা আরব ইসরাইলের যৌথযাত্রার খুব ভালো একটি শুরু।”
নেতানিয়াহুর এই বক্তব্য রিয়াদ, আবুধাবি, কায়রো আর মানামার শাসকদের মুখে হয়তো এক চিলতে মুচকি হাসি ফুটিয়েছে, কিন্তু আরব জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে সে ব্যাপারে কি তাদের আদৌ কোন চিন্তা আছে?! ইখওয়ানের ব্যাপারে আরবদের মাঝে বেশ বিতর্ক আছে। কিন্তু হামাসের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান অভিন্ন। তারা হামাসকে এখনও পর্যন্ত ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য লড়াই করা একমাত্র খাঁটি সংগঠন মনে করে। সেই হামাসের গায়ে সন্ত্রাসের তকমা লাগিয়ে সৌদি রাজতন্ত্র কী রাজমুকুট হাসিল করতে চায় তা মোটেও বোধগম্য নয়।
তাদের #পঞ্চম_ভুল- কাতারকে ফিলিস্তিনের গাজা মনে করা। কাতার গাজা নয়। যদিও আয়তনে দেশটি বেশ ছোট কিন্তু তার মিত্রের সংখ্যা প্রচুর। সামরিকভাবে প্রথম সারির শক্তিগুলোর সাথে রয়েছে তাদের বিভিন্ন সামরিক চুক্তি। ২০১১ সালে যেভাবে সৌদি নেতৃত্বাধীন জেসিসির সৈন্যরা হুড়মুড় করে বাহরাইনে ঢুকে পড়তে সক্ষম হয়েছিল কাতারের ক্ষেত্রেও এরকম করা সম্ভব হবে এমনটি মনে করা ছিল মুহাম্মাদ বিন সালমান আর বিন যায়দের অপরিপক্ষ চিন্তাধারা।
তবে অবরোধ যে কাতারের কোন ক্ষতি করবেনা তা নয়; বরং অর্থনৈতিকভাবে তা কাতারকে খুব দুর্বল করবে। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন হুমকির মুখে পড়তে পারে। ডলারের বিপরীতে কাতারি রিয়ালের দ্রুত দরপতন ঘটতে পারে। জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রির যোগান দিতে সরকারকে বেশ বেগ পেতে হবে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতির সম্মুখীন হবে কাতার এয়ারলাইন্স। কারণ আকাশ পথের অবরোধের কারণে ইয়োরোপ আমেরিকা মুখী ফ্লাইটগুলো ইরান তুরস্কের আকাশ পথ ব্যাবহার করে অনেক ঘুর পথে যেতে হবে। আরও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হবে।
তবে ইতিবাচক দিক হচ্ছে দুর্বৃত্ত দেশগুলো কাতারকে কখনই বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করতে পারবেনা। কাতারের হাতে রয়েছে দুনিয়ার সবচে বড় গ্যাসের মজুদ। পাশাপাশি ৩৩৫ বিলিয়ন ডলারের Sovereign wealth fund, যা তাদের বৈশ্বিক বাণিজ্যকে অনেকটা নিরাপদ রাখবে। শেষ কথা, কাতার টিকে থাকবে। রাজনৈতিক দস্যুগিরির যুগ আমরা অনেক পেছনে ফেলে এসেছি।

8 =========================================================================

কাতার ক্রাইসিস, মরুঝড়ের পূর্বাভাস
From Jast Hasan.
কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এমন আকস্মিক পদক্ষেপ মোটেও স্বাভাবিক নয়। এই ঘটনা যেমন কাতারকে বিস্মিত করেছে, গোটা দুনিয়াকেও তা সমানভাবে আলোড়িত করেছে। কাতারের বিরুদ্ধে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কোন পর্যায়েই পড়েনা। দুনিয়ার বাঘা-বাঘা রাজনীতি বিশ্লেষকরাও এর হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে। তবে, প্রায় সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, কাতার ক্রাইসিসে এখনও পর্যন্ত যা ঘটেছে তা সূচনা মাত্র। আসল টার্গেট আরও সামনে এবং তা অকল্পনীয় ভয়ঙ্কর।
(১)
তুরস্ক-ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল “আজিল পোষ্ট” কাতার ক্রাইসিসকে নজিরবিহীন এবং অত্যন্ত ভয়ঙ্কর চক্রান্ত আখ্যায়িত করে লিখেছে-
কাতারের বিরুদ্ধে যা করা হচ্ছে তা রাজনীতির বিচারে কোনোভাবেই বোধগম্য নয়। কাতারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে সেগুলোকে সত্য হিসেবে ধরে নিলেও তা এমন পর্যায়ের কোন অপরাধ নয় যে, তার জন্য এমন অমানবিক পদক্ষেপ নেয়া যায়। এখন যা করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। কেবল যুদ্ধের নামটি মুখে নেয়া হচ্ছেনা। এর দ্বারা বোঝা যায় যে, কাতার সংকট সাগরের সারফেসে ভেসে উঠা বিশাল ডুবুচরের চূড়া মাত্র। তার গোঁড়া আরও অনেক গভীরে লুকায়িত। কাতার ভূমিকা মাত্র, আসল লক্ষ্য আরও অনেক বড় কিছু।
সংবাদ মাধ্যমটির পর্যবেক্ষণ মতে প্রকৃত টার্গেট ফিলিস্তিন। এটা ঘটনার শুরু থেকেই ইসরাইলী নেতাদের বক্তব্য বিবৃতি থেকে আঁচ করা গিয়েছিল। ইহুদীরা আরবদের মেরুদণ্ড ভাঙ্গার অপেক্ষায় ছিল। ২০১১ সাল থেকে নিয়ে ২০১৭ সাল পর্যন্ত, এই সময়ের মধ্যে আরবরা পরস্পর হানাহানি, যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে নিজেরকে যেভাবে পতনের দোরগোড়ায় নিয়ে গিয়েছে তা ইসরাইলের জন্য সুবর্ণ সুযোগ বয়ে আনে। ইসরাইল এখন আর কালক্ষেপণ করতে রাজি নয়। ৭০ বছর ধরে গলায় বিঁধে থাকা কাঁটাটি এখন তারা এক ঝটকায় সরিয়ে দিতে চায়। ট্রাম্পকে ক্ষমতায় আনার এটা একটা বড় কারণ হতে পারে। নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় লাভের পর থেকেই শুরু হয় মূল পরিকল্পনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনটি পক্ষ এক সাথে কাজ করবে। কয়েকটি আরব দেশ, ট্রাম্প এবং ইসরাইল। ট্রাম্পের বিজয়ের অল্প কয়েকদিনের ভেতর মিসরের আব্দুল ফাত্তাহ সিসি, জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ, আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ বিন যায়েদ এর সাথে হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের একান্ত বৈঠকগুলো তখনই সন্দেহের উদ্রেক করেছিল। জেনারেল সিসি আমেরিকা থেকে ফিরে এসে বলেছিলেন- ‘আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তির দোরগোড়ায় আছি। এটাকে (তার ভাষায়) “সাফকাতুল কারান” বা একুশ শতকের সবচেয়ে বড় চুক্তি আখ্যা দেয়া যেতে পারে।’ ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে বৈঠকে ট্রাম্প বলেছিলেন- “আমি ফিলিস্তিন ইস্যুর সমাধান বের করে ছাড়ব। তবে, এ জন্য ফিলিস্তিনিদেরকে কিছু “বেদনাদায়ক ছাড়” দিতে হবে। দ্বি-রাষ্ট্রের ধারণা আঁকড়ে ধরে রাখলে চলবে না।” তখন “বেদনাদায়ক ছাড়” বলতে ট্রাম্প কি বুঝিয়েছিলেন তা তখন স্পষ্ট না হলেও এখন তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের কাজ শুরু হবে গাজা দিয়ে। গাজার সর্বশেষ প্রতিরোধ বুহ্যকে তারা উপড়ে ফেলবে। ইসরাইলের প্রভাবশালী পত্রিকা Haaretz কিছুদিন পূর্বে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী “ইসরাইল গাজায় বেশ বড় ধরণের অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই হামলা আগের যেকোনো হামলা থেকে আলাদা হবে।” পূর্বের যুদ্ধগুলোতে তারা ১৫/২০ দিন ধরে হামলা করতো এবং ১০০০/২০০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ফিরে যেতো। এবার তারা সেরকম কিছু করতে রাজি নয়। এবার তারা ফিলিস্তিন নাটকের ইতি টানতে চায়।
তাদের কার্যক্রম হতে পারে এভাবে –
প্রথমে গাজার উপর প্রচণ্ড বিমান হামলা শুরু করবে। বেসামরিক জনগণকে টার্গেট করে হামলা করা হবে এবং জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করবে। উদ্দেশ্য সাধারণ জনগণের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া। এভাবে দু’একদিন চলার পর আমেরিকা শান্তির পায়রা হয়ে ছুটে আসবে এবং বেসামরিক জনগণকে রক্ষা করার জন্য আরব আর ইসরাইলকে চাপ দেবে। আমেরিকার নির্দেশে মিসর তার রাফা সীমান্ত খুলে দেবে এবং গাজার নাগরিকদেরকে মিসরে সরে আসার আহবান করবে। হামাস যদি তাতে বাধা দিতে চায় তাহলে তার বিরুদ্ধে বেসামরিক জনগণকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করার অভিযোগ তোলা হবে। সব বেসামরিক নাগরিক সরে আসার পর ইসরাইলী পদাতিক বাহিনী ট্যাঙ্কসহ অন্যনায় ভারী অস্ত্র নিয়ে গাজায় ঢুকবে এবং পুরা গাজাকে মানবশুন্য বধ্যভূমিতে পরিণত করবে।
এর পর শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব।
জাতিসঙ্গ এবং আমেরিকা বলবে যে, ফিলিস্তিন সমস্যার স্থায়ী সমাধান বের করার সময় হয়েছে। আর বেশী দিন এভাবে চলতে পারেনা। এবার বিশ্ব মোড়লরা ফিলিস্তিনের কফিনে সর্বশেষ পেরেক ঠুকে দেয়ার কাজটি সেরে ফেলবে। সিদ্ধান্ত হবে –
১. গাজাকে মিসরের হাতে সোপর্দ করা হবে।
২. পশ্চিম তীরের অল্প কিছু জায়গা জর্ডানের ভাগে দেয়া হবে। আর বাকীটা হবে অখণ্ড ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল। এভাবে কলমের এক খোঁচায় দ্বি-রাষ্ট্রের ধারণাকে চিরতরে দাফন করে দেয়া হবে।
তারপর কায়রো বা রিয়াদে আরব সম্মেলন আহবান করা হবে। সম্মেলনে আরব শাসকেরা কিছু লোক দেখানো মেকি আস্ফালন দেখাবে। কিন্তু শেষে ফিলিস্তিনিদের বৃহত্তর স্বার্থের দিকে তাকিয়ে (!) আন্তর্জাতিক মহলের সিদ্ধান্তকে মেনে নেবে। এভাবে হযরত ওমর আর সালাহউদ্দিনের ফিলিস্তিন ইতিহাসের গভীরে তলিয়ে যাবে। কর্ডোভা, ভ্যালেন্সিয়া, গ্রানাডার পাশে আরও কয়েকটি নাম যুক্ত হবে- কুদস, রামাল্লা, আসকালান, গাজা।
এগুলো আমার চিন্তাপ্রসূত কোন ধারণা নয়, বরং ইসরাইলী পত্রিকাগুলো প্রায় প্রতিদিনই এগুলো লিখছে। ট্রাম্পের স্পষ্ট বক্তব্য তো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউজের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা স্পষ্ট করে বলেন- “ফিলিস্তিন সমস্যরা সমাধানের ক্ষেত্রে আমেরিকা এখন আর দ্বি-রাষ্ট্র নীতিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেনা। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তা যত কঠিনই হোক না কেন।”
কিন্তু এই মহাপরিকল্পনার বেশ বড় কিছু বাধা আছে। হামাস, ইখওয়ান, আল-জাজিরা, কাতার, তুরস্ক এবং পাকিস্তান।
কাতার ক্রাইসিসের মাধ্যমে প্রথম চারটির যাত্রা শুরু হল। যদি তারা কাতারের ক্ষেত্রে সফল হয় তাহলে নাটকের দ্বিতীয় পর্ব শুরু করবে। কাতারের মতো অন্যান্য দেশগুলোর দিকে ধাবিত হবে। তালিকার প্রথমেই থাকবে তুরস্ক এবং পাকিস্তান।
(২)
গতকালের লেখায় মার্কিন প্রশাসনের অবস্থান সম্পর্কে যা বলা হয়েছিল তা মনে হয় পুরোপুরি সঠিক না। আগে ধারণা ছিল কাতার ইস্যু নিয়ে ট্রাম্প আর তার প্রশাসনের মধ্যে বিরোধ চলছে। কিন্তু বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক এই ধারণাকে নাকচ করে দিয়ে জোর দিয়ে বলেছেন যে, এটা তাদের একটা কৌশল। পেন্টাগন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং ট্রাম্প পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়ে কাতার এবং কাতারের পক্ষের শক্তিগুলোকে বিভ্রান্ত করতে চায়। উদ্দেশ্য কাতারকে কোন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে না দেয়া এবং এই ফাঁকে অবরোধকারী পক্ষগুলোকে তাদের অবরোধ আরও কঠোর করার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া। ট্রাম্পের গতকাল রাতের বক্তব্য থেকে তা স্পষ্ট হয়েছে। একদিন আগে কাতারের আমীরকে ফোন করে নিরপেক্ষ থাকার বার্তা দিয়েছিলেন, কিন্তু কালকে তিনি কাতারকে “সন্ত্রাসের ঐতিহাসিক অর্থায়নকারী” হিসেবে আখ্যা দিয়ে কাতারের কড়া সমালোচনা করেন। এগুলো ভুল বশত কিংবা ছেলেমানুষি কোন বক্তব্য নয়। এর বড় কোন তাৎপর্য অবশ্যই আছে। পর্যবেক্ষকদের ধারণা মতে কাতারের অবরোধের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের নয়, বরং পেন্টাগন আর পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দীর্ঘদিনের নিখুঁত পরিকল্পনা। তারা এক ঢিলে অনেকগুলো পাখী শিকার করতে চায়- হামাস ইখওয়ানকে ধ্বংস করে ইসরাইলের নিরাপত্তা আরও মজবুত করা বা ফিলিস্তিন ইস্যুকে চির তরে দাফন করা। কাতারকে শায়েস্তা করে অন্যান্য বেয়াড়া রাষ্ট্রগুলোকে এই বার্তা দেয়া যে, আমাদের গণ্ডির বাইরে গিয়ে খেলতে চাইলে কাতারের পরিণতি ভোগ করতে হবে। আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে তুরস্কের গড়ে উঠতে থাকা বানিজ্যিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ককে নষ্ট করে দিয়ে তুরস্কের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। কুর্দি ইস্যু নিয়ে এরদোগান ট্রাম্পকে বেশ কড়া কথা শুনিয়ে এসেছেন আমেরিকা সফরে গিয়ে। তখন ট্রাম্প হাসির আড়ালে ক্ষোভ লুকালেও তুরস্ককে জব্দ করার চিন্তা বাদ দেননি। এই কৌশলে তিনি একশো ভাগ সফল হয়েছেন। তুরস্ক কাতারের পক্ষে অবস্থান নেয়ার সাথে সাথেই স্কাই নিউজ, আল আরাবিয়া টেলিভিশন, সৌদি পত্রিকা ‘ওকাজ’সহ সৌদি-আমিরাতের প্রায় সবকটি গণমাধ্যমে তুরস্ককে নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা শুরু হয়েছে। এমনকি হুমকি ধমকিও দেয়া হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে তুর্কি পন্য বর্জন করার আহ্বান করা হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে এরদোগান সৌদিসহ আশপাশের আরব দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু কাতার-ঝড় তা এক ধাক্কায় উড়িয়ে নিয়ে গেলো। নিশ্চিতভাবেই এখন তুরস্ক আরব উপদ্বীপের বিশাল বাজার হারাতে যাচ্ছে। কিন্তু তুরস্ক এই ত্যাগ দিতে বাধ্য রাজনৈতিক কারণে। কারণ তুরস্কের নিরপেক্ষ নীতির কারণে যদি কাতারের পতন ঘটে তাহলে তার পরিণতি তুরস্কের জন্য আরও বেশী ভয়ানক হবে। তাই রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে অর্থনৈতিক স্বার্থকে বিসর্জন দিতে হচ্ছে। এরদোগান শুরু থেকে বেশ সংযমী আচরণ করেছেন। হুমকি ধমকি না দিয়ে বাদশাহ সালমানের সাথে ফোনে সংকট নিয়ে আলাপ করেছেন এবং আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। সব পক্ষ রাজি হলে তিনি মধ্যস্থতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কুয়েতের আমিরের সাথে দফায় দফায় ফোন করে আলোচনার আপডেট জেনে নিচ্ছেন। সরকারের কোন দায়িত্বশীল ব্যাক্তিকে উল্টাপাল্টা আবেগি কোন বক্তব্য দিতে কড়াভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন। তুরস্কের গণমাধ্যমকে তিনি কাতার সংকটকে খুব সতর্কতার সাথে কাভার করার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ, তিনি জানেন যে, এই খেলার আসল লক্ষ্য অনেক বড়। এই আগুন যদি সহজে নেভানো সম্ভব না হয় তাহলে তা শুধু কাতার তুরস্ককে নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে জ্বালিয়ে ছারখার করে দেবে।
(৩)
কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি জোটের এমন সর্বাত্মক অবরোধ এবং তাদের লাগাতার আস্ফালন দেখে মনে হচ্ছে তারা খুব আটঘাট বেঁধে নেমেছে। তারা পেছনে আসার জন্য এই খেলায় নামেনি। কিছুক্ষণ পরপর টুইটের মাধ্যমে ট্রাম্প তাদেরকে বেশ সাহস জুগিয়ে চলেছেন। এখন হয়তো কাতারকে তাদের কথা মেনে নিতে হবে আর না হয় দাঁতে দাঁত চেপে তাদের মোকাবেলা করে যেতে হবে। কাতার যদি শেষ পর্যন্ত তাদের কথায় না আসে তাহলে তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে এবং সরাসরি কাতারের আমীর পরবারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে। বরং বর্তমান দৃশ্যে যা দেখা যাচ্ছে তাতে আমার মনে হচ্ছে তারা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। এটা নতুন কিছু নয়। ১৯৯৬ সালে সৌদি আরব কাতারে বিদ্রুহ ঘটানোর চেষ্টা করেছিল। সবকিছু পাকাপাকি হয়ে গিয়েছিল। বিদ্রোহ শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে এসে বিদ্রোহ পরিকল্পনায় অংশগ্রহণকারী কিছু লোক ঘটনা ফাঁস করে দিয়ে রাষ্ট্রের কাছে ক্ষমা চায়। ঐ যাত্রায় কাতার বেচে যায়। এবার তারা তাদের সেই অসম্পূর্ণ কাজটি সেরে ফেলতে চাইতে পারে। কয়েকজন সৌদি নেতা তো তা সরাসরি ঘোষণাও করেছেন। একজন আমেরিকা থেকে বলেছেন – “আমরা জানি তামিম শেষ পর্যন্ত আমাদের সামনে নত হবে, আর না হলে তাকেও মুরসির পরিণতি বরণ করতে হবে।”
কাতার সরকারও এই হুমকিকে খুব গুরুত্বের সাথে দেখছে। এ জন্য কাতারের আমীর বাইরের সফরে বের হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন না। প্রভাবশালী বিভিন্ন গোত্রকে আমীরের প্রতি তাদের বাইআত এবং পূর্ণ আস্থার কথা জনসম্মুখে ঘোষণা করতে উৎসাহ করা হচ্ছে। সেনা ইউনিটগুলোকে অত্যন্ত সতর্কাবস্থায় রাখা হচ্ছে। এখানে তুরস্কে এবং পাকিস্তানের সেনা উপস্থিতির কথা আসতে পারে। তবে আমার মনে হয় তুর্কি এবং পাকিস্তানি সেনারা অভ্যুত্থান ঠেকাতে খুব বেশী কাজে আসবে বলে মনে হয়না। কারণ, তারা বিদেশি আগ্রাসন ঠেকাতে পারবে, কিন্তু অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সরাসরি দাঁড়াতে গেলে কাতারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে বলে আমেরিকা এবং সৌদি জোট তাদের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে এই চাপ তারা মোকাবেলা করতে পারবে। কারণ তারা একটি বৈধ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঠেকাতে সে দেশের সরকারকে সহযোগিতা করছে এমন যুক্তি দেখাতে পারে।যেমনটি সৌদি জোট ইয়ামেনে করছে।
উপরের কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হতাশা সৃষ্টি করা নয়; বরং যতোটুকু সম্ভব প্রকৃত ঘটনার সাথে পাঠককে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া। সত্য যতই অপ্রিয় ও বেদনাদায়ক হোক, তাকে জানার মধ্যেই কল্যান। উটপাখির মতো বালিতে মাথা ঢুকিয়ে বসে থাকা কোন সমাধান নয়। সংকট যেমন বড়, আল্লাহ তা মোকাবেলা করার মতো মানুষের ব্যাবস্থাও করেছেন, তাঁদের সংখ্যাটা যত কমই হোক না কেন। আমাদের দোয়া আর তাঁদের প্রচেষ্টা এক হলে আল্লাহর রহমত আসতে খুব বেশী দেরী লাগবেনা ইন শা আল্লাহ।
(৪)
সৌদি আরবের আলেমগনের বড় একটি অংশের ভুমিকা পুরা দুনিয়ার মুসলমানদেরকে হতাশ করেছে। তারা তাদের অবরুদ্ধ ভাইদের প্রতি নুন্যতম সহানুভূতি জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ভ্রাতৃঘাতী দ্বন্ধ নিরসনের তাদের কোন পদক্ষেপ আমাদের চোখে পড়েনি। উল্টো তাদের শাসকদের খুশী করতে তাদের বিভিন্ন ফোরাম থেকে বড় বড় আলেমদের সদস্যপদ বাতিল করছে। তারা তাদের সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করুক তা কেউ বলছেনা। কিন্তু তাদের শাসকদেরকে তো নাসিহাত করতে পারে।
কোন কোন ভাইকে দেখলাম আমাদের আকাবির ওলামায়ে কেরামের সাথে শাসকদের সম্পর্ক এবং ব্যাবহার কেমন ছিল সেই বিষয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখেছেন। পড়ে উপকৃতও হয়েছি। কিন্তু তাঁদের কথার সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একমত হওয়া গেলেও উপসংহারের সাথে একমত হওয়া কঠিন। কারণ ‘ফেতনা থেকে বাঁচার’ নামে নাসিহাত ছেড়ে দেওয়াকে ইসলাম সমর্থন করে বলে আমার জানা নেই। আর ‘সৃষ্টিকর্তার আবাধ্য হয়ে কারও আনুগত্য করা’ থেকে ইসলাম চরম ভাবে নিষেধ করেছে বলে জানি। আপনি সিরিয়ার পরিণতির কথা চিন্তা করে মুখ খুলতে রাজি নন, কিন্তু আপনার এই নীরবতা যে লাখ লাখ নিরাপরাধ মানুষের নুন্যতম অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, আরেকটি মুসলিম জনপদকে বিরান করে দিচ্ছে, আপনার নিরবতার সুযোগে আপনার শাসকগণ দুশমনদের সাথে উম্মাতের তাকদির নিয়ে সওদা করছে তাতে আল্লাহ আপনার উপর আপনার এই ‘হেকমতপূর্ণ নিরবতায়’ অনেক বেশী সন্তুষ্ট হবে বলে মনে করেন? স্পেনের পতন তো আমি নিজ চোখে দেখিনি। বইয়ের পাতায় পড়েছি। তাওায়েফী শাসকদের হাতে কিভাবে মুসলিম স্পেনের তরী ধীরে ধীরে ডুবেছিল তার বিশদ বর্ণনাও পড়েছি। সেখানে ‘দরবারী কবি’ আর ‘মুসাহেব আলেমদের’ যে বীভৎস রূপ দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে মুসলমানদের করুন পরিণতির জন্য শাসকদের আত্মকলহের পাশাপাশি তাদের ‘ভয়ঙ্কর নির্লিপ্ততা’ কোন অংশে কম দায়ী ছিলোনা। এই জন্যই বা-ইয়ুল উমারা ইমাম ইজ্জ ইবনে আব্দুসসালামকে খুব বেশী স্মরণ করি। তাঁর পথকেই সবচেয়ে সঠিক পথ বলে মনে করি। ইবনে তাইমিয়া রাহ তাঁর জীবনের বড় একটি অংশ কাটিয়েছিলেন জেলে বসে। শুধু শাসকদের সাথে আপোষ করেন নি বলে। তাদের মুখের উপর সবসময় সত্য কথা উচ্চারণ করতেন বলে। ‘রাফউল ইয়াদাইন’এর মাসালায় যদি তাঁর অনুসরন করতে পারি তাহলে ‘সত্য উচ্চারণের’ ক্ষেত্রে কেন নয়?!
আল্লাহ্‌ আমাদের হেফজত করুন।


9===========================================================================

ব্রিটিশরা চায়ের নেশা পেয়েছিল চীনাদের কাছ থেকে। এ এমন এক নেশা, ব্রিটিশদের রাজকোষ ফাঁকা হওয়ার জোগাড়। চীন রৌপ্যমুদ্রা ছাড়া অন্য কিছুর বিনিময়ে চা রপ্তানি করতে রাজি ছিল না। সাদা চোখে দেখলে--চীনারা বাক্স ভর্তি গাছের পাতার গুঁড়া দিচ্ছে, বিনিময়ে নিচ্ছে টনকে টন রূপা!
আমিই শুধু কিনব, তুমি কিছু কিনবা না, তা তো হবে না। আমার পকেটের টাকায় শুধু তোমার পকেট ভারী করব কেন? আমিও কিনি, তুমিও কেনো। তুমি যদি না কেনো, এমন সিস্টেম করব, কিনতে বাধ্য হবা।
ব্রিটিশদের মতো ধুরন্ধর ব্যবসায়িক বুদ্ধি আর কারও ছিল না। এই বুদ্ধি খাটিয়ে আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে ছোট একটা দেশ ইংল্যান্ড পৃথিবীর অর্ধেকটার মালিক হয়ে গিয়েছিল।
ব্রিটিশরা চীনাদের ধরিয়ে দিল আফিমের নেশা। এক ১৮৫৮ সালে চীনে সাড়ে ৪ হাজার টন আফিম রপ্তানি হয়েছিল, যা এখনকার হিসাবে সারা পৃথিবীতে ১০ বছর ধরে উৎপাদিত আফিমের সমান! এবার চীনের রাজকোষের রৌপ্যমুদ্রা জমতে থাকল ব্রিটেনে!
চা বনাম আফিমের নেশার এই বাণিজ্য চক্রটা বুঝলে পৃথিবীর এখনকার রাজনীতির হিসাবও সহজে বুঝতে পারবেন। বুঝতে পারবেন, ইসলাম, জঙ্গিবাদ এসব আসলে চোখের ঠুলি। পেছনে আছে কয়েক লাখ কোটি টাকার ব্যবসা!
৫ মিনিট লাগবে পুরোটা পড়তে। পড়বেন?
***
২০ শতকের মাঝামাঝিতে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল, পৃথিবীর মূল জ্বালানি হবে তেল। আর এই তেলের প্রচুর পরিমাণ মজুদ আছে মধ্যপ্রাচ্যে। ব্রিটেন-আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুধু তেল কিনবে আর বিনিময়ে ঢালবে ডলারের পর ডলার? রাজকোষ ফাঁকা করবে শুধু শুধু?
আরবদের নেশা ধরিয়ে দাও। যুদ্ধের নেশা। যে নেশা আফিমের নেশার চেয়েও ভয়াবহ!
গত বছর গ্রিনপিসের একটি প্রতিবেদন (Data: How guns and oil dominate UK-Saudi Arabia relationship) বলছে, ২০১৫ সালে ব্রিটেন সৌদি আরবের কাছ থেকে ৯০০ মিলিয়ন পাউন্ডের তেল কিনেছে। ওই বছর অক্টোবর পর্যন্ত অস্ত্র বিক্রি করেছে ৮৭২ মিলিয়ন পাউন্ড! কী অদ্ভুত ভারসাম্য!
***
‌'মধ্যপ্রাচ্যের সংকট' এই শব্দ দুটি শুনে শুনে বড় হওয়া প্রজন্ম আমরা। আরও কিছু শব্দ শুনতাম বিটিভির খবরে: পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় আজও বড় ধরনের সংঘর্ষের খবর...।
মধ্যপ্রাচ্যে এখনকার সংকটের সূচনা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষ থেকে। যার বীজটা রোপন করেছিল ব্রিটেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন জেরুজালেম ও এর সংলগ্ন অঞ্চলটা তিনটা পক্ষকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল! আরবদের বলেছিল, ভাই, এ তো তোমাদেরই জায়গা। তুমিই পাবা।
ইহুদীদের বলেছিল, আরেহ, তোমাদের স্বপ্নের স্বদেশভূমি তো এখানেই হবে। অবশ্যই তুমি পাবা।
আর ফ্রান্সকে বলেছিল, দোস্ত ভাগাভাগিতে তোমাকে দিলাম সিরিয়া, আর আমি এই দিকটা রাখলাম, কেমন।
সবকিছু ঠিকমতো চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ইউরোপ থেকে জাহাজে করে হাজার হাজার ইহুদী চলে আসতে থাকে এই অঞ্চলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যা কয়েক লাখে পৌঁছায়। এই ইহুদিদের সঙ্গী ছিল ইউরোপে ভয়াবহ বিভীষিকার শিকার হওয়ার টাটকা স্মৃতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিরা ৬০ লাখ ইহুদীকে মেরে ফেলেছিল।
নিজেদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি, একটা দেশের স্বপ্ন; একটা নিরাপদ মানচিত্র তাদের টেনে এনেছিল ইসরায়েল নামের নতুন গঠিত এই রাষ্ট্রে।
সেখানে হাজার হাজার বছর ধরে আরব-ইহুদীরা সুখে-শান্তিতেই ছিল, পাশাপাশি। প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝগড়া তখনই বাঁধে, যখন প্রতিবেশীর বাড়ির দেয়ালটা সরতে সরতে আপনার বাড়ির ভেতরে ঢুকতে থাকে। এই সহজ ব্যাপারটাই মধ্যপ্রাচ্যে জটিল আকার ধারণ করল।
নতুন ভিড় করা এই জনগোষ্ঠীর জন্য আরবদের বাধ্য করা হলো ছেড়ে দিতে। ফিলিস্তিনিদের ভিটেমাটি ছাড়া করা হলো। কোণঠাসা হতে হতে এখন তারা কেবল গাজা আর পশ্চিম তীরে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনিরা পাল্টা প্রতিরোধ হিসেবে শুরু করল গুপ্ত হামলা।
বিশ্বজুড়ে আজকের দুনিয়ার ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের পেছনে বড় ভূমিকা আছে এই অধ্যায়টির। যেটা কার্যত ছিল জমি-জমা নিয়ে বিরোধ, যার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্কই নেই। যার প্রমাণ মিলবে এই তথ্যে, ফিলিস্তিনিদের সেই আন্দোলনে শুরুর দিকে ছিল জমি হারানোর অনেক খ্রিষ্টানও!
সেই লড়াইটা বদলাতে বদলাতে আজ রূপ নিল।
কে করল? কারা করল? রাশিয়াকে ঠেকাতে আল কায়েদা তৈরি করেছিল কারা? অন্যায় ইরাক যুদ্ধের ফসল হিসেবে আইএস জন্ম যে নিল, এর দায় কাদের?
যাদের মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র বিক্রি করতে হবে।
ভাই তেল কি শুধু কিনেই যাব, তুমি কিছু কিনবা না? তোমার তেল সম্পদ, তোমার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে। যাকে ভাই ভাবছ, সে-ই তো তোমার আসল শত্রু। মনে নাই, ৩০০ বছর আগে সে তোমার দাদার দাদার দাদার দাদার দাদার....দাদাকে খুন করছিল। ভুলে কেন যাচ্ছ, তুমি সুন্নি, আর ও শিয়া। তোমরা কীভাবে এক হও! ও কখনোই তোমার বন্ধু হবে না। কাল যে তোমার দেশ আর তেলখনিগুলো দখল করে নিবে না, তুমি নিশ্চিত?
ইয়ে শোনো, আমার কাছে ভালো ফাইটার জেট আছে, দারুণ সব স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, মিসাইল, লঞ্চার, হেলিকপ্টার, ড্রোন, ট্যাংক...। কিনবা নাকি? তোমার জন্য একেবারে স্পেশাল প্রাইসে দিব, হাজার হোক তুমি আমার বন্ধু। তোমার সাথে কি আর বিজনেস করব? হে হে হে...।
***
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আলোচনা ও উদ্যোগের নামে যা কিছু আমরা শুনি, সব ভাঁওতাবাজি, ভন্ডামি। বরং বারবার উসকে দেওয়া হয় এই ক্ষত। অ্যান্ড্রু মারের হিস্ট্রি অব দ্য ওয়ার্ল্ড দেখার সময় এই পণ্ডিত মানুষটার একটা কথা আমাকে নাড়া দিয়েছিল। মার দেখিয়ে দিয়েছিলেন, পৃথিবী আসলে শান্তি চায় না, যুদ্ধ চায়। কারণ যুদ্ধই হচ্ছে আসল ব্যবসা। শান্তি জিনিসটা যে কেউ টাকা খরচ করে কিনতে চায় না!
সারা পৃথিবীতে যুদ্ধ বনাম শান্তি বনাম বাণিজ্যের এই যে অদ্ভুত এক চক্র; এ নিয়ে গবেষণায় সবচেয়ে বিখ্যাত সংস্থা হলো স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট। তাদের এক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ইউএসএ টুডে (10 companies profiting the most from war) দেখিয়েছিল, ২০১১ সালে পৃথিবীর বড় ১০০ অস্ত্র ব্যবসায়ী মিলে ৪১০ বিলিয়ন ডলারের (33050100000000 টাকা, হিসাব করে দেখেন কত) ব্যবসা করেছিল।
মাত্র ১০টি কোম্পানি পৃথিবীর অস্ত্র ব্যবসার ৫০ শতাংশ (২০৮ বিলিয়ন ডলার) নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে ৭টি কোম্পানি আমেরিকার (লকহিড মার্টিন, বোয়িং, জেনারেল ডায়নামিকস, রেথিওন ডায়নামিকস, নর্থ্রপ গ্রুমান, এলথ্রি কমিউনিকেশন, ইউনাইটেড টেকনোলজিস)। ব্রিটেনের বা ইউরোপের তিনটি (বিএই সিস্টেম, এয়ারবাস, ফিনমেকানিকা)।
এরা শুধু যুদ্ধের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে না, যুদ্ধও নিয়ন্ত্রণ করে। যুদ্ধ বাঁধায়। রাজনীতিবিদদের ব্যবহার করে। এই কোম্পানিগুলো ২০১০ সালে ১৬৬.৪ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে মার্কিন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে লবিয়িং বা ডোনেশন নামের ঘুষের পেছনে।
***
আজকের এই চেহারা, ইরাক, সিরিয়া, আইসিল...সবকিছুর মূলে বুশ প্রশাসনের চাপিয়ে দেওয়া ইরাক যুদ্ধ। এখন যেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, আল কায়দার সঙ্গে সাদ্দাম হোসেনের কল্পিত যোগসূত্র তৈরি করে ইরাক দখল করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। এর পেছনেও তেল আর যুদ্ধের ব্যবসা।
কীভাবে?
ইরাক যুদ্ধের সবচেয়ে বড় আর্থিক লাভজনক প্রতিষ্ঠানের নাম হলিবার্টন। সে সময় ৪০ বিলিয়ন ডলারের কন্ট্রাক্ট পেয়েছিল তারা। জর্জ বুশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এই হলিবার্টনের প্রধান নির্বাহী ছিলেন। ২০০১ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ায় সেই পদ ছাড়েন। যদিও সিএনএন পরে ফাঁস করে দেয়, চেনি ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ও বছরে দেড় লাখ ডলার হিসেবে পেতেন হলিবার্টনের কাছ থেকে!
এই চেনিই বুশ সিনিয়রের আমলে বলেছিলেন, ইরাক যুদ্ধে যাওয়া ঠিক হবে না। তার ফল হবে ভয়াবহ। মাঝখানে হলিবার্টনে চাকরি করলেন। ব্যস্‌, পাল্টে গেল তাঁর মত! চেনি আসলে কার স্বার্থ উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন?
মিস্টার চেনি, লাখ লাখ নিরীহ মানুষের রক্ত হাতে মেখে সেই হাতে খাবার খান কী করে আপনি! লাখ লাখ ঘূমন্ত শিশুর ওপর রাতের আঁধারে নেমে আসে যে বোমা; সেই রাতে কী করে ঘুমান আপনি!
***
ট্রাম্প একই পথে হাঁটছেন। গত কিছুদিন ধরে যা ঘটছে, তাতে মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় যুদ্ধের আলামতই পাচ্ছি।
মুসলিমদের গালিগালাজ করে ক্ষমতায় আসা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম রাষ্ট্রীয় বিদেশ সফর ছিল মুসলিম দেশ সৌদি আরবেই। সেখানে মুসলিম দেশগুলোর সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন। মধ্যপ্রাচ্য সংকট সমাধানে ওপর জোর দিয়ে বেশ গালভরা বক্তব্য দিয়েছেন। এরপর ১১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি ধরিয়ে দিয়েছেন সৌদি আরবকে।
লকহিড মার্টিনের সঙ্গে সৌদি সরকারের এই চুক্তির দর-কষাকষি করেছেন ট্রাম্পের জামাই জ্যারেড কুশনার (সিএনএন: Trump signs Kushner-negotiated $100B Saudi arms deal)।
***
ইউরোপে অস্ত্র বিক্রি কমছে। আর হু হু করে অস্ত্র বিক্রি বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে, আমাদের এশিয়ায়। গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে সৌদি আরবের অস্ত্র ক্রয় ২৭৫ শতাংশ বেড়েছে, ইউরোপীয় দেশগুলোতে কমেছে ৪১ শতাংশ। আর ২০১৫ সালের ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের একটি খবরের শিরোনাম: Sale of U.S. Arms Fuels the Wars of Arab States।
***
পৃথিবীতে শান্তি থাকলে অস্ত্র বিক্রি হবে না। পৃথিবীকে অশান্ত করা তাই খুব জরুরি। আরও অনেক হিসাব-নিকাশ আছে। আছে অনেক গুটি চালাচালি। অন্যের যুদ্ধে দূর থেকে কলকাঠি নাড়া। যাকে বলে প্রক্সি ওয়ার। যে অঞ্চলে যে ভাইরাস ছড়িয়ে দিলে কাজ হবে, সেখানেই তা-ই করা হচ্ছে। এক সময় পৃথিবীকে উত্তপ্ত করা হয়েছিল জাতীয়তাবাদের বড়ি খাইয়ে। মধ্যপ্রাচ্যে এই ব্যবসায়িরাই কাজে লাগাচ্ছে ধর্মকে!
যে মানুষটা জিহাদের জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করছে, সে জানছেও না, দাবার ছকে সে আসলে সামনের সারির গুটি। যাকে প্রথম দফায় স্যাক্রিফাইস করাই দাবা খেলার ছক!
***
জানি না এই দৃশ্যপট কবে বদলাবে। জানি না এই পৃথিবীতে আদৌ শান্তি আসবে কি না। মনস্টার ইঙ্ক নামের একটা অ্যানিমেশন সিনেমা অদ্ভুত একটা ধারণার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।
দৈত্যদের রাজ্যে মূল জ্বালানি হলো ভয়। বাচ্চাদের ভয় দেখালে যে এনার্জি তৈরি হয়, সেটা দিয়েই চলে দৈত্যদের কল-কারখানা; পুরো দেশ।
হঠাৎ একদিন জানা গেল, ভয় পেয়ে বাচ্চারা চিৎকার করে কাঁদলে যত বিদ্যুৎ তৈরি হয়, তার কয়েক শ গুণ বেশি বিদ্যুৎ তৈরি হয় বাচ্চারা খিলখিল করে হাসলে।
তখন থেকে মনস্টার ইঙ্ক নামের সেই কোম্পানিটি ভয়ের বদলে বাচ্চাদের হাসানোর প্রতিযোগিতায় নামল।
আমাদের পৃথিবীর বড় বড় মনস্টার ইঙ্করাও যদি কখনো বোঝে, অশান্তি নয়, শান্তিতেই তৈরি হয় সবচেয়ে বেশি এনার্জি...। এটুকুই শুধু আশা

10 ===================================================================================

অভিযুক্ত কাতার: কিছু সঙ্গত প্রশ্ন
Muhammad Noman
_______________________কাতার ট্র্যাজেডি নিয়ে আর কিছু লেখার ইচ্ছে ছিলনা। কিন্তু বেশ কয়েকটি লেখা দেখে মনে হল- নাহ, ব্যাপারটি আরও একটু খোলাসা করা দরকার। আপনি যদি মনে করে থাকেন যে, কাতারকে নিয়ে যা চলছে তা কয়েকটি উপসাগরীয় রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, আমাদের তাতে নাক গলানোর প্রয়োজন নেই, তাহলে আপনি ভুলের মধ্যে আছেন। তবে, আপনার এই ভুল বোধগম্য। আশা করি ভবিষ্যতে আপনার এই ভুল ভাঙবে। কিন্তু যদি আপনি রিয়াদ, আবুধাবি, দুবাই, মানামায় বসে আল আরাবিয়া আর স্কাই নিউজের বিষ গলাধঃকরণ করে কাতারের সাথে ইরানী কানেকশন খোঁজেন, হামাস – ইখওয়ানের সাথে সাফাভী কানেকশনের জিগির তোলেন- তাহলে তা আমার মতো লাখো মুসলমানকে খুব আহত করে। আর যখন দেখি যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন এক অর্বাচীনের তিন মিনিটের একটি ভিডিও দেখে আপনার বিবেকের তারগুলো ছিঁড়ে যায়, এক পাগলের প্রলাপ শুনে আপনার স্বাভাবিক চিন্তা শক্তি লোপ পায়- তখন আপনার উপর আর ‘ক্ষোভ’ থাকেনা; বরং ‘করুনা’ এসে তার স্থান দখল করে।
প্রকৃত সত্য হচ্ছে, উম্মাহর সর্বশেষ প্রতিরোধবুহ্যগুলো ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা চলছে। আরব রাজা বাদশাহদের গলায় গোলামীর জিঞ্জির পরানোর পর বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে গুটিকয়েক বাধা এখনো তাদেরকে ‘বিরক্ত’ করছে সেগুলো সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। উম্মাহর ঘাড়ে সর্বশেষ মরণ-কামড় দেয়ার ষড়যন্ত্র পুরোদমে এগিয়ে চলছে। হামাস – ইখওয়ানের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে আপনি উম্মাহর জীর্ণ শরীরে আরেকটি পেরেক ঠুকছেন। আপনি জেনেশুনে করছেন নাকি অজ্ঞতাবশতঃ করছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইবরাহীমের জন্য জ্বালানো আগুলে যদি আপনি ঘি ঢালেন তাহলে তা নমরুদকে নিশ্চিতভাবেই খুশী করবে। আপনি অজ্ঞতাবশতঃ কাজটি করেছেন আপনার এমন দাবী আপনার দায়মুক্তির জন্য মোটেও যথেষ্ট হবে না। ক্ষতি যা হবার তা হয়ে যাবে।
গায়ে সাদা জুব্বা চড়িয়ে, মাথায় গোলগাল চাক্কা লাগিয়ে আমেরিকার মিয়ামি বীচে স্বল্পবসনা শ্বেতাঙ্গ নারীদের সাথে যারা জলকেলিতে মত্ত থাকে, যারা বৃষ্টির মতো পেট্রো ডলার উড়িয়ে তামাটে রঙের ল্যাটিন রমণীদের দেঁতো হাসি দেখতে আটলান্টিক পাড়ি দেয় আর হাভানা চুরুটের বারটা বাজায় তাদের মগজে এই বিষয়গুলো না ঢুকাই স্বাভাবিক। উম্মাহর চিন্তা করে নির্ঘুম রাত কাটানোর চেয়ে প্যারিসের বিলাসবহুল নাইট ক্লাবে নীলনয়না ষোড়শীদের সাথে নৃত্য করা আর রাশান ভদকার বোতলে ঝড় তোলা তাদের জন্য অনেক বেশী শ্রেয়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো গরিব দেশের নাগরিক হয়ে রিয়াদ, দুবাই, আর মানামার আকাশচুম্বী ভবনগুলো দেখে আপনারও মতিভ্রম ঘটবে তা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে। একজন বাংলাদেশী হিসেবে আপনার জ্ঞ্যানের উপর অনেক আস্থা ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে- “দিল্লি হানূয দূর আসত”।
যদি আপনি বিষয়গুলো বোঝেও না বোঝার ভান ধরেন, অথবা বুঝতে না চান- তাহলে আপনার সাথে তর্ক এখানেই শেষ। আপনার জন্য দোয়া থাকবে। কিন্তু যদি আসলেই আপনি অজ্ঞতার মধ্যে থাকেন তাহলে আপনার প্রতি অনুরুধ থাকবে- দয়া করে একটু আসুন, কাতারের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো আপনাকে নিয়ে একটু খতিয়ে দেখি।
#এক.
ঘটনার শুরু হয় ২৪ শে মে থেকে। প্রায় মধ্য রাতের দিকে কাতারের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম QNA এর ওয়েবসাইটে একটি সংবাদ ভেসে উঠে। “কাতারের আমীর বলেছেন- ইরান আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র এবং এই এলাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। ইরানের সাথে শত্রুতা পোষণ করা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়। ইসরাইলের সাথেও আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।”
সংবাদটি QNA এর পেইজে ভেসে উঠার ঠিক ‘সাত’ মিনিটের মধ্যে সৌদি আরবের ‘আল- আরাবিয়া টেলিভিশন’ এবং আরব আমিরাতের ‘স্কাই নিউজ’ কাতারের উপর নজিরবিহীন আক্রমন শুরু করে। এই ‘সাত মিনিটের’ মধ্যেই তারা বিভিন্ন আলোচক জড়ো করে গরম টকশোর আয়োজন করে। শুরু হয় প্রচণ্ড মিডিয়া আক্রমণ। তারপর তাদের দেখা দেখি ওইসব দেশের অন্যান্য মিডিয়াও এক সুরে অগ্নি উদ্গিরন অব্যাহত রাখে। এই অল্প সময়ের মধ্যে কাতারের মিডিয়াগুলোও জানতে পারেনি যে, তাদের আমীর এইরকম বিবৃতি দিয়েছেন। তাহলে কি মানতে হবে যে, কাতারের সরকারী ওয়েবসাইট QNA কে কাতারের নাগরিকদের চেয়েও সৌদি আর আমিরাতের নাগরিকরা বেশী ফলো করে?
তারপর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই কাতারের পক্ষ থেকে সরকারীভাবে ঘোষণা করা হয় যে, তাদের সরকারী ওয়েবসাইট হ্যাক করা করা হয়েছে। অনেকক্ষণ ধরে তারা ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছেনা। আমীরের নামে যা প্রচার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া। এটা হ্যাকারদের কাজ। কাতারের আমীর এই ধরণের কোন বিবৃতি দেননি, এবং বিবৃতিতে যা বলা হয়েছে তা কাতারের পররাষ্ট্রনীতির সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। আল আরাবিয়া আর স্কাই নিউজে দাবী করা হচ্ছিলো যে, ওইদিন কাতারের আমীর পুলিশের নতুন একটি ব্যাসের প্রশিক্ষণ সমাপনি অনুষ্ঠানে ঐ কথা বলেন। কিন্তু তারা তার কোন অডিও বা ভিডিও ফুটেজ দেখাতে পারছিলনা। অথচ, বাস্তবে কাতারের আমীর ঐ অনুষ্ঠানে ভাষণই দেননি।
এবার প্রশ্ন-
মধ্যরাতে কাতারের একটি সরকারী ওয়েবসাইটে প্রাচিরত একটি সংবাদ মাত্র ‘পাঁচ মিনিটের’ মাথায় কিভাবে রিয়াদ আর আবুধাবিতে ঝড় তোলে? অথচ, কাতারের নাগরিকরাও তখন তা জানতে পারেনি। সরকারিভাবে কাতারের পক্ষ থেকে তাদের ওয়েবসাইট হ্যাক হওয়ার কথাটি বার বার জোর দিয়ে বলা হলেও কেন তাদের বক্তব্য আমলে না নিয়ে সৌদি আর আমিরাতের মিডিয়াগুলোতে কাতারের বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রাখা হয়? কাতার সরকার নিজেদের দাবী প্রমাণ করার জন্য আমেরিকার এফবিআই এর সহযোগিতা কামনা করে। কাতারের গোয়েন্দাসংস্থা এবং এফবিআই এর যৌথ তদন্তে প্রমাণিত হয় যে, রাশান হ্যাকারদের মাধ্যমে QNA কে হ্যাক করা হয়েছে। কিন্তু তবুও সৌদি আর আমিরাত তা মানতে রাজি হয়নি। তাদের জোচ্চুরি তারা অব্যাহত রাখে।
তাহলে প্রশ্ন জাগে-
কারা রাশিয়ানদের দিয়ে হ্যাক করে এই আগুন জ্বালাল? কেন কাতারের সরকারী বক্তব্যে কান না দিয়ে মিডিয়া আক্রমণ অব্যাহত রাখা হল? গভীর রাতে, ঘটনার মাত্র ‘সাত মিনিটের’ মধ্যে কিভাবে আল আরাবিয়া আর স্কাই নিউজ টকশোর আয়োজন কোরতে পারলো? তাহলে কি সবকিছু পূর্ব পরিকল্পিত?
প্রশ্ন আপনার বিবেকের কাছে। আপনি উত্তর খুঁজবেন।
#দুই
এবার আসুন তাদের অভিযোগগুলো একটু দেখি। প্রথম অভিযোগ কাতার ইরানের সাথে মৈত্রী প্রতিষ্ঠা করেছে। শিয়াদেরকে কাতার সহযোগিতা করছে। খুব ভালো কথা। তাহলে এবার আসুন, দেখা যাক যারা অভিযোগ করছে তাদের কি অবস্থা।
প্রথমে ইরানের সাথে ২০১০ সালের পর থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর বাৎসরিক বানিজ্যের খতিয়ানটা একটু দেখুন-
১. ইরানের সাথে সৌদি আরবের বাৎসরিক বানিজ্যের পরিমাণ- ৫০০ মিলিয়ন ডলার।
২. ওমানের ৪৭৭ মিলিয়ন ডলার। ওমানে ২৫৯ টি সরকারী রেজিস্ট্রিভুক্ত ইরানী কোম্পানি কাজ করে। ৩. বাহরাইনের ২০০ মিলিয়ন ডলার। ৪. কুয়েতের ১ মিলিয়ন ডলার। ৫. আরব আমিরাতের অর্থমন্ত্রী সুলতান আল মানসুরীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৪ সালে ইরানের সাথে আরব আমিরাতের বানিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৭ বিলিয়ন ডলার (মিলিয়ন না)। ২০১৩ সালে ছিল ১৭.৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১১ সালে ছিল ২৩ বিলিয়ন ডলার। ২০১০ সালে ২০ বিলিয়ন ডলার। গোটা উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরানের শতকরা ৮০ ভাগ বানিজ্যের অংশীদার আরব আমিরাত। আর বাকী ২০ ভাগ অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে। ইরানের গোটা বৈদেশিক বানিজ্যের হিসেবে আরব আমিরাত তার ৪ নং পার্টনার। (সূত্র কমেন্টে উল্লেখ থাকবে)। যখন বুশের আমলে আমেরিকা ইরানের উপর কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে তখন দুবাই-ই ইরানের বৈদেশিক বানিজ্যের একমাত্র মাধ্যম ছিল। ইরানকে আন্তর্জাতিক অবরোধের ধকল থেকে বাঁচাতে আরব আমিরাতই সবচেয়ে বেশী ভুমিকা পালন করে।
এবার কাতারের অবস্থান দেখেন-
"আলা মারকাজুল আরাবি লিল আবহাছ" নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে ইরানের সাথে কাতারের বাৎসরিক বানিজ্যের পরিমাণ হচ্ছে মাত্র ৩০০ মিলিয়ন ডলার। এবার ইরানের সাথে বানিজ্যের সূচক হিসেবে ক্রমিক আকারে একটি ছক আঁকা যাক-
১. আরব আমিরাত- ২৩ বিলিয়ন। গোটা গালফে ইরানী বানিজ্যের ৮০%। ইরানের পুরা বানিজ্যের হিসেবে ৪ নং পার্টনার।
২. সৌদি আরব- ৫০০ মিলিয়ন।
৩. ওমান – ৪৭৭ মিলিয়ন।
৪. কাতার – ৩০০ মিলিয়ন।
৫. বাহরাইন – ২০০ মিলিয়ন।
৬. কুয়েত – ১ মিলিয়ন।
যদি ইরানের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারণে কাতারকে বয়কট করতে হয় তাহলে তালিকার প্রথম তিন দেশের নাম আসছেনা কেন?
#এবার ইরানের সাথে কোন দেশের রাজনৈতিক মৈত্রী কেমন তা দেখা যাক। উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইরানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র হচ্ছে ওমান। ইরানের উপর এই পর্যন্ত যতগুলো অবরোধ আরোপ করা হয়েছে তার কোনটাতেই ওমান সায় দেয়নি। তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলার পর সবকটি উপসাগরীয় রাষ্ট্র ইরান থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে একমাত্র ওমান ছাড়া। ইয়েমেনে হাউছি শিয়াদের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটে ওমান অংশগ্রহণ করেনি। ২০১১ সালে বাহরাইনে শিয়া বিপ্লব ঠেকানোর জন্য সৌদির নেতৃত্বে জিসিসির সৈন্যরা যখন প্রবেশ করেছিল তখন সেখানে ওমান অংশগ্রহণ করেনি ইরান নাখোশ হবে এই ভয়ে। পরমানু ইস্যু নিয়ে ৬ বিশ্ব শক্তির সাথে ম্যারাথন আলোচনা ওমানের রাজধানী মাস্কাটে হয়েছিল।
এবার সৌদি আরবের অবস্থা দেখেন। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে বিক্ষুদ্ধ ইরানীরা হামলা করে। এই ঘটনার পর সৌদি আরব কেবল মাত্র রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করেছিল। ইরানের সাথে বানিজ্যক বা অন্যান্য সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। আরব আমিরাতের দাবী অনুযায়ী তাদের তিনটি দ্বীপ এখনও ইরান দখল করে রেখেছে। কিন্তু আরব আমিরাত তাদের ভুমি দখলকারী একটি দেশের বিরুদ্ধে সম্পর্ক ছিন্ন করা তো দূরে থাক, মধুর সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
এখন প্রশ্ন-
যদি ইরানী কানেকশনের কারণে কাতারের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে হয় তাহলে ওমান আর আরব আমিরাতের ব্যাপারে তারা চুপ কেন? এই দুই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তো যুদ্ধ ঘোষণা করা উচিত। সৌদি আরবের কথা না হয় না-ই বললাম।
#এবার দেখা যাক ইরানের বাইরের শিয়াদের সাথে কাদের সম্পর্ক কেমন? আরব রাষ্ট্রগুলোতে শিয়া প্রভাব ঠেকাতে কাতারের মতো কোন রাষ্ট্র অবদান রেখেছে বলে আমার জানা নেই। কাতারের কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতায় সিরিয়ায় বাশারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ‘জাবহাতুন নুসরাহ’ নামে সবচেয়ে চৌকস এবং কার্যকর একটি যোদ্ধাদল তৈরি করা হয়। আইএস এর আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত সিরিয়ার সরকারী বাহিনী, ইরানের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া দল এবং লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সবচেয়ে বেশী সফলতার পরিচয় দিয়েছে এই দলটি। এই ‘জাবহাতুন নুসরাহ’ গঠন করার কারণেই কাতারকে আজ সন্ত্রাসের মদদদাতা রূপে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। আশ্চর্যয়ের বিষয় হচ্ছে আমেরিকা, সিরিয়া আর ইরানের পাশাপাশি সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলোও এজন্য কাতারকে অভিযুক্ত করছে। ব্যাপারটা হল এমন যে, যার জন্য চুরি করি সেও বলে চোর, যার ঘরে চুরি করে সেও বলে চোর।
ইয়েমেনে সৌদির নেতৃত্বে শিয়া হাউছিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অন্যতম শরিক হচ্ছে কাতার। কাতারের আলা জাযিরা চ্যানেল যেভাবে সিরিয়া যুদ্ধকে দরদ দিয়ে কাভার করেছে তা দুনিয়ার অন্য কোন চ্যানেল করে নি। যদি আল জাযিরা না থাকতো তাহলে দুনিয়া জানতেই পারতোনা যে সিরিয়ায় কোন কেয়ামত ঘটছে।
এবার আরব আমিরাত ও মিসরের ভুমিকা দেখেন। বাশারের ফ্যামিলির বিভিন্ন সদস্য এখনও আমিরাতে নিরাপদে বসবাস করে বলে বিভিন্ন সংবাদে এসেছে। আরব আমিরাত দুনিয়ার একমাত্র দেশ যেখানে সিরিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে নিয়ে এই পর্যন্ত বাশার সরকারের বিরুদ্ধে একটি মিছিলও বের হতে পারেনি। ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বে আরব মিত্রবাহিনী যখন হাউছি মিলিশিয়া আর সাবেক স্বৈরশাসক আলী আব্দুল্লাহ সালেহের বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে তখন সালেহের বড় ছেলে, তার আমলে ইয়েমেনের সেনাপ্রধান আহমাদ ইবনে সালেহ আবুধাবিতে বসে শায়খ যায়দের ছেলেদের আতিথেয়তায় আয়েশের জিন্দেগী যাপন করছে। গত মাসে এই আহমাদ ইবনে সালেহের নেতৃত্বে হাউছী এবং সালেহের পক্ষের একটি যৌথ প্রতিনিধিদল কায়রো সফর করে জেনারেল সিসির সাথে সাক্ষাৎ করে। সাক্ষাতের পরে সৌদি আরবকে আগ্রাসী শক্তি আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এবার হাস্যকর বিষয় দেখেন- এই আমিরাত এবং মিসরই সৌদি আরবের সাথে যোগ দিয়ে কাতারের উপর অবরোধ দিয়েছে শিয়া প্রীতির ধুয়া তোলে। একজন আরব সাংবাদিক বিষয়টার দিকে ইঙ্গিত করে ব্যাঙ্গসুরে বলেছেন- “সৌদি, মিশর, আমিরাত আর বাহরাইনের রাষ্ট্রদূতরা তেহরানে বসে একসাথে ‘ইরানের সাথে সম্পর্ক রাখার অপরাধে’ কাতারের উপর অবরোধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।”
#তিন.
কাতারের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ- দেশটি ইখওয়ান এবং হামাসকে সহযোগিতা করছে। এই বিষয়টা নিয়ে লম্বা কিছু বলবনা। শুধু এটুকু বলবো যে, এই অভিযোগটি কাতারের জন্য অত্যন্ত সম্মানের এবং গৌরবের বিষয়। হামাসকে সহযোগিতা করে তারা গোটা উম্মাহর পক্ষ থেকে ফরজে কেফায়া আনজাম দিচ্ছে। ফিলিস্তিনের নিভু নিভু প্রদীপকে এখনও হামাস বুকের তপ্ত খুন দিয়ে প্রজ্বলিত রেখেছে। ৭০ বছর ধরে ইসরাইল আমেরিকা যে এখনো ফিলিস্তিনকে গিলতে পারেনি তা কাদের কারণে? আপনি কি মনে করেন যে, তা আরব রাষ্ট্রগুলোর ভয়ে করতে পারেনি?
ইখওয়ান নিয়ে তাদের এতো ভয় কেন? ভয় কি এই জন্য যে, যে ইখওয়ানের কারণে হুসনী মুবারকের ৩০ বছরের গদি উলটে গিয়েছিল তাদের কারণে যাতে রিয়াদ আবুধাবিতেও তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে? ইখওয়ানকে ঘায়েল করার জন্য তাদের বিরুদ্ধেও সেই “শিয়া কানেকশনের” ধুয়া তোলা হচ্ছে। বিষয়টা একটু খতিয়ে দেখা যাক।
মিশর ঐতিহাসিকভাবে শিয়াদের আরাধ্যভুমি। সরকারী হিসেব মতে মিসরে ৮ মিলিয়ন শিয়ার বসবাস। হযরত হুসাইন রাজিঃ এর মাথা মুবারাক এই কায়রোতেই দাফন করা হয়েছে। সে হিসেবে শিয়াদের দুটি কেবলার মধ্যে একটি হচ্ছে কায়রো আরেকটি হচ্ছে ইরাকের নাজাফ। কায়রো ছিল শিয়া ফাতেমি সালতানাতের রাজধানী। ফাতেনী শিয়ারা কায়রোয় বসে দুইশত বছর ধরে মক্কা মদিনা শাসন করেছে। এমন কি ‘কায়রো’ নামটিও শিয়াদের দেয়া। তার আগের নাম ছিল ‘ফুসতাত’। এমন একটি শিয়া প্রভাবাধীন রাষ্ট্রে বিগত একশো বছর ধরে ইখওয়ানরাই শিয়া প্রভাব মুকাবেলা করে আসছে। ইখওয়ানের দাওয়াত এবং সামাজিক প্রভাবের কারণেই মিসরে শিয়া বিস্ফোরণ ঘটতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট মুরসির বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে খ্রিষ্টানদের পাশাপাশি শিয়ারাও সিসির সাথে যোগ দিয়েছিল। মুরসি ক্ষমতায় থাকা কালে প্রায় সময় ইরানী মিডিয়ায় মুরসি এবং ইখওয়ানকে আক্রমণ করে সংবাদ প্রচার করা হতো। মুরসির বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের পর যে কয়েকটি রাষ্ট্র সিসিকে আভিনন্দন জানিয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি ইরান।
ইমাম হাসান আল বান্না কেন ইখওয়ান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা একটু দেখা যাক। ১৯২৩ সালে যখন তুরস্কে মুস্তাফা কামাল আতাতুর্কের হাতে উসমানী খেলাফাতের বিলুপ্তি ঘটে তখন গোটা মুসলিম দুনিয়ায় এই ঘটনার বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠে। খেলাফাতের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন মুসলিম দেশে দাবী উঠে। ব্রিটিশ ভারতে মাওলানা মুহাম্মাদ আলী জাওহার তাঁর ভাই শওকত আলীকে নিয়ে “Khilafat Movement” প্রতিষ্ঠা করেন। মিশরও তখন ব্রিটিশদের দখলে। কৌশলে তারা মিশরীয় সমাজে বস্তুবাদ এবং উন্নয়নের নামে বেলেল্লাপনা ছড়িয়ে দিচ্ছিল। খেলাফাতের বিলুপ্তি তাদেরকে আরও উদ্যমী করে তোলে। এই সময়ে হাসান আল বান্না খেলাফাত পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবীর পাশাপাশি মিসরে সামাজিকভাবে ব্রিটিশ প্রভাব মুকাবেলা করতে এবং খেলাফাতের শুন্যতা পূরণ করতে ‘ইখওয়ানুল মুসলিমীন’ প্রতিষ্ঠা করেন। খেলাফাতে উসমানীয়ার বিলুপ্তিতে সবচেয়ে বেশী খুশী হয়েছিল দুটি গ্রুপ। ইরানের সাফাভী শিয়ারা এবং হেজাজের মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের অনুসারীরা। কারণ উসমানীদের হাতে সাফাভীরা এবং মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের অনুসারীরা যেভাবে নাকানি চুবানি খেয়েছিল তা তারা কোন দিন ভুলতে পারবেনা। উসমানীরা না থাকলে ফাতেমীদের মতো সাফভীরাও ইরানের কূমে বসে আরও তিনশ বছর হেজায শাসন করতো। এবার প্রশ্ন- বান্নার সাথে বা ইখওয়ানের সাথে যদি সামান্য শিয়া কানেকশন থাকতো তাহলে শিয়াদের জানের দুশমন উসমানী খেলাফাত প্রতিষ্ঠার জন্য তারা কেন লড়াই করেছিলেন? খেলাফাত বিলুপ্ত হয়েছিল ১৯০২৩ সালে আর বান্না শহীদ হয়েছিলেন ১৯৪৯ সালে। খেলাফাতের বিলুপ্তির পরেও ২৬ বছর ধরে তিনি তুর্কি ফেজ টুপি পরেছেন খেলাফাতে উসমানীয়ার প্রতি আনুগত্য এবং ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ।
#চার.
কাতারের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ তারা আল জাযীরার মাধ্যমে ‘ফেতনা’ ছড়াচ্ছে। আরব রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। আরব জনগণের শান্তি বিনষ্ট করছে। এই বিষয়ে আগের পোষ্টগুলোতেও লেখা হয়েছে, তাই বেশী কিছু লেখার প্রয়োজন মনে করছিনা। কেবল সংক্ষেপে আল জাযীরা অত্র এলাকায় কি কি ‘ফেতনা’ ছড়াচ্ছে তার কিছু নমুনা দেখেন-
আবুধাবী আর দুবাইতে যখন ইসরাইলী জেনারেলরা ওখানকার শাসকদের সাথে গোপন বৈঠকে মিলিত হয় তখন তা আল জাযীরা জনসম্মুখে প্রচার করে দেয়। সৌদি আরবে যখন গাড়ি ড্রাইভ করার অপরাধে একজন নারীকে জেলে ঢুকানো হয় তখন আল জাযীরা সেই সংবাদ প্রচার করে তাদের পাহাড়সম ইজ্জতের গায়ে একটু আঁচড় দেয়। ফিলিস্তিনে ইসরাইলী ট্যাঙ্কের নিচে পিষ্ট হয়ে হয়ে যাওয়া শিশুটির থেতলে যাওয়া লাশটির ছবি আল জাযীরা প্রচার করে। সিরিয়ায় নুসাইরি শিয়াদের নাবালন বোমার আঘাতে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া শিশুটির ছবি আল জাযীরা প্রকাশ করে। এতে সমস্যা কি? সমস্যা হচ্ছে আল জাযীরার এসব ফালতু রিপোর্টগুলোর কারণে আরব জনগণের অন্তরে তাদের শাসকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ে। তাদের তখতে একটু হলেও কাঁপন ধরে। এই জন্য খাদেমুল হারামাইনসহ আরও তিনটি রাষ্ট্রের মহানায়করা আল জাযিরার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তাঁরা আল জাযীরা বন্ধ করে দিতে চান। কারণ তাদের চাওয়া হচ্ছে- ফিলিস্তিন আর সিরিয়ার শিশুটির মৃত্যুর গোঙানি তাদের জাতির কর্ণকুহরে না পৌঁছুক। কায়রোর অন্ধকার জিন্দানখানায় হাড় গুড়ো করার ঠুস-ঠাস শব্দগুলো আল জাযিরার মাধ্যমে লাউড হয়ে যেন তাদের জাতির ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে। কারণ পেট্রোডলারের নেশা আর ট্যাঙ্কের ব্যারেলের ভয়- কোনটাই স্থায়ী নয়। মিশর-তিউনিসিয়ার বিপ্লবের স্মৃতিই তাদের দুশ্চিন্তার বড় কারণ।
#পাঁচ.
আরব আমিরাতের ‘ইহুদী কানেকশানের’ চিত্র আরও ভয়ঙ্কর। ইসরাইলের সাথে হাত মিলিয়ে আমিরাতে হামাসের যত নেতা ছিল সবাইকে তারা হত্যা করে আর না হয় গুম করে। ২০১০ সালে দুবাইয়ে হামাসের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাভুহকে মোসাদের গোয়েন্দারা আমিরাতের প্রত্যক্ষ মদদে হত্যা করে। ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন ইহুদী অস্ত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আমিরাতের চুক্তি কারও অজানা নয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দুবাইতে বিশ্ব জ্বালানি সম্মেলনে ইসরাইলী মন্ত্রী সিল্ভান শ্যালোমের নেতৃত্বে ইসরাইলী প্রতিনিধিদল যোগদান করে এবং সম্মেলন কক্ষের বাইরে ইসরাইলী পতাকা উত্তোলন করা হয়। এই প্রথম উপসাগরীয় কোন রাষ্ট্রে ইসরাইলী পতাকা উড়েছে। আমেরিকার সকল ইহুদী লবির সাথে আমিরাতের সম্পর্ক। চলতি মাসের চার তারিখে আমেরিকায় আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ আল উতাইবার ইমেল ফাঁসের মাধ্যমে যা গোটা দুনিয়ার সামনে আসে। দুবাইয়ের পুলিশ প্রধান ‘দাহী খালফান’ তো হরহামেশাই বলে থাকেন যে, “ফিলিস্তিন ইহুদীদের বৈধ দেশ। সেখানে আরবদের কোন অধিকার নেই। ইহুদীরা আমাদের চাচার (ইসহাক আঃ এর) বংশধর।” এই কুলাঙ্গার ফিলিস্তিনকে ব্যাঙ্গ করে “ফিলস” (পয়সা) এবং “তীন” (মাটি) বলে। উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনিদেরকে ভিক্ষুকের জাতি বলা। এগুলো সে টুইট করে। কিন্তু এর কারণে এপর্যন্ত আমিরাতে তার বিরুদ্ধে কিছু হয়েছে বলে কোন নজির নাই। সে এখনও দিব্বি তার সরকারী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরাইলের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক আরব আমিরাতের মতো না হলেও যা আছে তাও কোন অংশে কম নয়। সৌদি আরবের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান আনোয়ার ইশকী ২০১৬ সালে ইসরাইল সফর করেন এবং ইসরাইলী প্রেসিডেন্টসহ সে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ এবং সেনা অফিসারদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। আমেরিকার মিডিয়ায় সংবাদ এসেছে যে, ট্রাম্পের সাথে সৌদি আরব অস্ত্র কেনার যে বিশাল চুক্তি করেছে তার অধিকাংশ অস্ত্র আসবে ইসরাইল থেকে। মানে ঐ অর্থ ইসরাইলী কোষাগারে যোগ হবে।
আর এখন সৌদির নেতৃত্বে কাতারের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে সবচেয়ে বেশী খুশী হয়েছে ইসরাইল। নেতানিয়াহু বলেছেন – “আরবদের সাথে আমাদের আর কোন শত্রুতা রইলো না।” ইসরাইলী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লিভারম্যানের বক্তব্য – “এতো দিন পরে আরবদের বুঝে আসলো যে আমদের আর তাদের শত্রু এক ও অভিন্ন।” সৌদি মিডিয়ায় হামাসের উপর যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে তা দেখে অধিকৃত পশ্চিম তীরের ইসরাইলী গভর্নর ‘মারদুখাঈ’ বলছেন- “হামাসের সন্ত্রাসের কথা আমরা এতো দিন আরবদের বোঝাতে পারিনি। কিন্তু সৌদি পত্রিকা ‘ওকাজ’ এবং ‘আল রিয়াদ’ তা খুব সুচারুরূপে আনজাম দিচ্ছে।”
ইমাম শাফেয়ী রাহঃ বলেছিলেন – “যদি তুমি হক এবং বাতিল কোনটি তা পার্থক্য করতে চাও তাহলে শত্রুর তীর কোথায় গিয়ে বিঁধছে তা দেখ।” শেরে বাংলা একে ফজলুল হক বলতেন- “হিন্দুরা যখন আমার প্রশংসা করে তখন আমি খুব বিচলিত হয়ে যাই। কারণ তখন আমার মনে হয় যে, আমি আমার স্বজাতি মুসমানদের বিরুদ্ধে কোন কিছু করেছি।”
#ছয়.
এখানে এই বিষয়টি খোলাসা করা খুবই দরকার যে, আরব দেশের সরকারগুলো তাদের দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেনা। আবার কোন দেশের সরকারের সমালোচনা করা মানে সে দেশের প্রতি অশ্রদ্ধা জ্ঞ্যাপন করা নয়। হেজাযের মুল্য আমাদের কাছে দুনিয়ার সব কিছুর চেয়ে বেশী। হেজায ইসলামের প্রাণকেন্দ্র। তার প্রেম ভালোবাসা আমাদের অন্তরে কোন দিন কমবে না। তবে তার মানে এই নয় যে, সেখানকার শাসকদের ভুলগুলো আমরা ধরতে পারবোনা। হেজায কারও বাপের সম্পত্তি নয়, এটি গোটা দুনিয়ার মুসলমানদের সম্পত্তি। অতএব, হেজায নিয়ে কথা বলার অধিকার আমাদের আছে। আর হেজায শাসন করার জন্য যে আল্লাহ তায়ালা সবসময় ফিরিশতা পাঠিয়েছেন তা নয়। ৬৩ হিজরিতে উমাইয়া খলীফা ইয়াজিদের নির্দেশে তিন দিন ধরে মদিনায় গনহত্যা চালানো হয়েছিল। মসজিদে নববীতে আযান দেওয়াও সম্ভব হয়নি। ৭৩ হিজরিতে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ মিঞ্জানিক দিয়ে পাথর মেরে কাবার দেয়াল গুড়ো করেছিল। ৩১৭ হিজরি থেকে নিয়ে ৩৬৩ হিজরি পর্যন্ত শিয়া ‘কারামিতা’ সম্প্রদায় হেজায শাসন করেছিল এবং কাবা থেকে হাজরে আসওয়াদ খুলে নিয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ ২২ বছর পরে তারা হাজরে আসওয়াদ ফিরিয়ে দিয়েছিল। ৩৩৬ হিজরি থেকে নিয়ে ৫৬৬ হিজরি পর্যন্ত দীর্ঘ ২০২ বছর ফাতেমী শিয়ারা হেজায শাসন করে। এখন কারামিতা আর ফাতেমীরা হেজায শাসন করেছে এই জন্য তাদের সমালোচনা করা যাবেনা এ কথা তো কেউ বলেনি। আর তাদের সমালোচনা করা মানে যে হেজাযবাসির অমঙ্গল কামনা করা তাও নিশ্চয়ই নয়। হেজাযের উপর যখন শকুনদের শ্যান দৃষ্টি পড়ে তখন তা আমাদেরকে বিচলিত করে। সেখানকার শাসকদের বিলাসিতা আর মসনদ প্রীতির কারণে যদি খায়বারের উপর ইহুদীরা আবার গরম নিঃশ্বাস ফেলার সাহস পায় তখন মুসলমান হিসেবে তা আমাদেরকে বিদ্রোহী করে তোলে।
সবশেষে একটি কাহিনী দিয়ে কাতার ট্র্যাজেডি শেষ করি-
একবার একদল শত্রু সেনা একটি গ্রামে হামলা করে। গ্রামের সব পুরুষকে হত্যা করে এবং নারীদেরকে সারা রাত ধরে ধর্ষণ করে। কিন্তু একটি ঘরে ঘটেছিলো ব্যাতিক্রম ঘটনা। ঐ ঘরে ছিল এক সাহসী যুবতী। সে তার ঘরে প্রবেশকারি সৈন্যটির সাথে লড়াই করে তাকে হত্যা করে। সকালে গ্রামের সব নারী যখন রাস্তায় বের হয়ে আসলো দেখা গেলো যে, সবার চুল এলোমেলো। পরনে ছেঁড়া কাপড়। মস্তক অবনত। কিন্তু তাদের মধ্যে একটি যুবতী মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর তার হাতে একটি ছিন্ন মস্তক। গ্রামের মেয়েরা তাকে দেখেই হিংসায় জ্বলে উঠলো। একজন বলল – এই শয়তানী তো আমাদের মাঝে মাথা উঁচু করবে চলবে আর আমাদেরকে সারা জীবন ধিক্কার দেবে। তখন তারা সবাই বুদ্ধি করে একসাথে চিৎকার করে উঠলো – ধর হারামজাদীকে, সে সন্ত্রাসী। বেচারা নিরীহ সৈনিকটিকে সে হত্যা করেছে।
আবেগি ভাষার জন্য ক্ষমা করবেন।

11 ==========================================================================

তপ্ত মরুভূমির দেশ কাতার
রাষ্ট্রীয় নাম ষ্টেট অব কাতার
আয়তন ১১,৪,৩৭ বর্গ কি:মি:
লোকসংখ্যা বর্তমান ২৬,৮০০০০
মাথাপিছু আয় ১,২৩,১,২৪ মার্কিন ডলার
সাক্ষরতার হার ৯৭%
গড় আয়ু ৭২ বছর
স্বাধীনতা লাভ ৩ রা সেপ্টেম্বর ১৯৭১
এখানে ৩০-৩৯ ডিগ্রী তাপমাত্রা নাথিং ব্যাপার!
৪০-৪৯ তাপমাত্রা নরমাল!
৫১-৫৯ সর্বোচ্চ /হাই।
৫৫ ডিগ্রী তাপমাত্রা অবস্থায় রাতেও রাস্তায় হাটা দুস্কর হয়ে পড়ে গরমে!
জিডিপির দিক দিয়ে বিশ্বের সবছে ধনী রাষ্ট্র ।
একমাত্র একটি বিমানবন্দর,যাহা বিশ্বের সেরা ১০ এর ৬ নাম্বার।
সেবার মান এত উন্নত যে,মালপত্র রেখে ২/৩ ঘন্টা বাহিরে যেয়ে ঘুরে এসে দেখবেন আপনার মালপত্র হুবাহু আগে মত ই আছে!
আরব বিশ্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যের সবছে নিরাপদ রাষ্ট্র কাতার।
হাইওয়ে/রোডের সাথে স্বর্ণের দোকানে মণকে মণ স্বর্ণ,কিন্তু কোন ক্যাসি গেইট বা পাহারাদারও নাই!
কিন্তু ডাকাতি করতে হলে কয়েক শত মায়ের দুধ খেতে হবে শিশুকালে!
পুলিশ কেমন সৎ হতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা কেমন হতে পারে,বিবেচনার দায়িত্ব আপনার?
শ্রমিকের প্রতি সরকার অসাধারন আন্তরিক।
সুপ্রিম ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে।
প্রেসিডেন্ট শেখ তামিম বিন হাম্মাদ আল থানি অসাধারন ভাল মানুষ।
কাতারের আজকে জন্ম নেওয়া শিশু ও কোটিপতি!
প্রত্যেক বিবাহিতের ব্যক্তিগত দেড় দুই কোটি টাকা দামের কয়েকটা গাড়ি!
এরা এত স্মাট যে,বাজার থেকে বিয়েতে নিয়ে যেতে পারবেন,কিন্তু পোষক পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না!
২০২২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে কাতারে।
খেলাকে কেন্দ্র করে যোগাযোগ ব্যবস্থা এত উন্নত করতে আছে যে,কর্মযজ্ঞ দেখে আমি হয়রান হয়ে যাই যে,যাহা আমি কল্পনাও করতে দুস্কর হয় !
নাগরিকদের সুযোগ সুবিধার কথা শুনলে কয়েক বার আসমান থেকে পড়বেন বিধায় বললাম না।

মন্তব্যসমূহ

  1. আলহামদুলিল্লাহ। বেশ ভাল লাগল। তথ্য তত্বপূর্ণ আলোচনা।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে

৭১ এর যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস