সাহাবাগণ সত্যবাদী, সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত এবং জান্নাতি তবে সত্যের মাপকাঠি নন। সত্যের মাপকাঠি একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা) :
সত্যের মাপকাঠি: জামায়াতে ইসলামী বনাম ওলামায়ে দেওবন্দীঃ
------------------------------------
জামায়াতে ইসলামী'র গঠনতন্ত্রে লিপিবদ্ধ আছে যে, "রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছাড়া অপর কোনো মানুষকে সত্যের মাপকাঠি মানবে না এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছাড়া কাউকে যাচাই বাছাই এর ঊর্ধে মনে করবে না। কারো মানসিক গোলামীতে নিমজ্জিত হবেনা। আল্লাহর নির্ধারিত এক পূর্ণাঙ্গ মাপকাঠিতে প্রত্যেককে যাচাই করবে ও পরখ করে নিবে। এ মাপকাঠির বিচারে যে যে মর্যাদায় পড়বে, তাকে ঐ মর্যাদা দান করবে।" (জামায়াতের গঠনতন্ত্রঃ-ধারা: ৩ উপধারা: ৬)
.
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যোগ্য উত্তরসূরী, ইকামতে দ্বীনের স্বপ্নদ্রষ্টা ও বীর মুজাহিদ, মুহতারাম উস্তাদ আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী (রাহঃ) এর এ কথাটি জামায়াতে ইসলামী'র গঠনতন্ত্রে প্রকাশ পেতেই একশ্রেণীর আলেম মূল্যবান এ কথাটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য উপলব্ধি করা এবং এর ব্যতিক্রম পন্থায় ইসলামের ক্ষতির দিকটি চিন্তা না করেই সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে হৈ চৈ শুরু করে দেন।
তখন আল্লামা মওদূদী রাহঃ চিন্তা করলেন জাহেলদের কথার একটা জওয়াব দেয়া দরকার। মূলত জাহেলদের কে শিক্ষা দেয়া না, নিজের কথার ব্যাখ্যা জারী রাখা। কারণ তিনি উদ্ভট এবং মূর্খতায় পরিপূর্ণ কোন কথা বা প্রশ্নের উত্তর দিতেন না। আপনারা যারা উঁনার রাসায়েল ও মাসায়েল এবং তাফহিমাত পড়েছেন তারা দেখবেন যে তিনি কোন অর্বাচীন, মূর্খ, গোঁয়ারের কথার উত্তর দিতেন না। পরিষ্কার বলতেন যে, এগুলো সম্মন্ধে আলোচনার দরকার নেই। কারণ তারা এগুলো বুঝেনা। তো, তিনি চাইলেন গঠনতন্ত্রের এই ধারাগুলোর ব্যাখ্যা করতে।
.
সুপ্রিয় বন্ধুগণ! তিনি এর যে ব্যাখ্যা দেন তা তরজমানুল কোরআন, রাসায়েল ও মাসায়েল, জিলদ ৫৬-সংখ্যা: ৫ এ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, "আমরা সত্যের মাপকাঠি বলতে ঐ বস্তুকে বুঝাই যার সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করা সত্য (হক) এবং যার পরিপন্থী হওয়া মিথ্যা (বাতিল) বলে সাব্যস্ত হয়। এই দৃষ্টিতে সত্যের মাপকাঠি আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসুল (সাঃ) সুন্নাত। সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি নন। বরং তারা তাঁর কিতাব ও সুন্নাতের মাপকাঠিতে পুরাপুরি উত্তীর্ণ প্রমাণিত হয়েছেন।"
তিনি আরোও বলেন, "কিতাব ও সুন্নাতের আলোকে যাচাই করে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছি যে, সাহাবীদের মহান দলটি পুরোপুরি সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত এজন্যই তাদের ইজমা(সম্মিলিত মত) আমাদের নিকট শরীয়তের অন্যতম দলিল। কেননা আমাদের মতে কিতাব ও সুন্নাতের সামান্যতম বিরোধী কোনো বিষয়ে একমত হয়ে যাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়।" অতপর এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, "তানকীদ শুধু অর্থ দোষচর্চা করা বা ছিদ্রান্বেষণ করা- এটা কোনো মূর্খ ব্যক্তি বলতে পারে কিন্তু যিনি প্রকৃত আলেম তিনি তানকীদ মানে এ অর্থ বুঝবেন না। আসলে সমালোচনা অর্থ-মূল্যায়ন করা, পরীক্ষা করা, যাচাই-বাছাই করা, পরখ করা।"
.
কিন্তু এরপরেও আমাদের কতিপয় দেওবন্দী ভাইয়েরা আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর বিরোধীতায় জিদ ধরে আছে। অথচ স্বয়ং দেওবন্দীদের বাঘা বাঘা আলেমগণই (যারা ওলিপুরীর মত চুনাপুঁটি নন, তাঁরাই) আল্লামা মওদুদী (রাহঃ)-এর এ মতকে প্রতিষ্ঠা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দেখুনঃ -
.
(১) নুদওয়াতুল মুসান্নিফিন -এর সদস্য এবং দেওবন্দের বিশিষ্ট আলেম উস্তাদ মাওলানা বদরে আলম মদনী (রাহঃ) তাঁর গ্রন্থ তরজুমানুস সুন্নাহ-তে বলেন, "রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ফায়সালা ছাড়া আর কারো ফায়সালাকে আল্লাহর ফায়সালা বা হুকুম বলা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কথা ছাড়া অপর কোনো মানুষের ফায়সালা সমালোচনার ঊর্ধে হতে পারে না। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছাড়া প্রতিটি লোকের সিদ্ধান্তকে সর্বান্তকরণে স্বীকার করে নেওয়া অনিবার্য রূপে গণ্য করা সম্ভব নয়।" (তরজুমানুস সুন্নাহ, খন্ড ৩য়, পৃঃ ৪২৬)
.
(২) শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী বলেনঃ "যখন এটা সাহাবীদের কর্ম, তখন সেটা হুজ্জাহ/দলীল নয়।" (তাকারীর শাইখুল হিন্দ পৃঃ৩০) তিনি আরো বলেনঃ "এটা একটি সাহাবীর কথা, এটি হানাফীদের জন্য দলীল হতে পারে না।" (তাকারির শাইখুল হিন্দ পৃঃ৪৩)
.
(৩) আল্লামা যাফর আহমেদ থানভী দেওবন্দী বলেনঃ "(রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাওল) মারফূ হাদীসের মুকাবিলায় সাহাবীদের কওল দলীল হয় না।" (ইলাউস সুনান:১/৪৬৩)
.
(৪) সায়েদেনা আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) ফজরে দোয়ায়ে কুনুত পড়ত , তো এ ব্যাপারে শাইখুল হাদীস ত্বকী উসমানী দেওবন্দী বলেনঃ "এই রেওয়াত মওকূফ সুতরাং এ দ্বারা দলীল হবে না।" (দারসে তিরমিযী ২/১৬৯)
.
(৫) ত্বকী উসমানী সাহেব আরো বলেনঃ "প্রথমত এটা আবু হুরাইরা (রাঃ) এর ব্যাক্তিগত ইজতেহাদি আমল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মারফু হাদীসের সামনে এটি হুজ্জাত নয়।" (দারসে তিরমিযী ২/৮৪)
.
(৬) ত্বকী উসমানী দেওবন্দী বলেনঃ "এবার রয়ে গেলো শুধু হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর আছার। এর জবাব হলো, প্রথমতো এতে প্রচন্ড ইজতেরাব রয়েছে। দ্বিতীয়ত যদি এটাকে সূত্রগতভাবে সহীহ মেনেও নেওয়া হয় তবুও এটি একজন সাহাবীর ইজতিহাদ হতে পারে, যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মারফূ হাদীসের বিপরীতে প্রমাণ নয়।" (দারসে তিরমিযী ১/২৮৩)
.
(৭) তিনি আরো বলেনঃ "বাকি রইলো দ্বিতীয় সূত্রটি। সেটিও সহীহ। তবে এর দ্বারাও শাফেয়ি মতাবলম্বী প্রমুখের মাজহাবের ওপর কোনো স্পষ্ট মারফু দলিল প্রতিষ্ঠিত হয় না। কেনো না, এটা হজরত উবাদা (রাঃ) এর নিজস্ব ইজতিহাদ। অর্থাৎ তিনি لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ. বিশিষ্ট হাদীসটিকে ইমাম এবং মুক্তাদীর উভয়ের জন্য ব্যাপক মনে করেছেন। এর ফলে এই হুকুম উৎসারণ করেছেন যে, মুক্তাদির উপর সূরা ফাতেহা পড়া আবশ্যক। তবে তার এ উৎসারণ মারফু হাদীসগুলোর বিপরীতে দলীল হতে পারে না।" (দারসে তিরমিযী ২/৭৫)
.
(৮) সারফারায খান সাফদার দেওবন্দী সাহেব লেখেনঃ "(রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর) মারফু হাদীসের বিরোধীতায় (সাহাবাগণ এর) মাওকূফ হাদীস কোনো দলীল নয়।" (খাযাইন আস-সুন্নাহ (১/১৭৯)
.
(৯) ইমাম বুখারী (রহঃ) সায়েদেনা আনাস (রাঃ), হাসান বসরী এবং কাতাদা (রহঃ) এর কওল নকল করেছেন যে সেজদা সাহু এর পরে তাশাহুদ হবে না। দেখুন, (সহীহ বুখারী খন্ড ১ পৃঃ ১৬৩)।
কিন্তু সারফারায সাফদার দেওবন্দী সাহেব বলেনঃ "ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এই ইস্তেদলাল খুবই দুর্বল কারণ এটা মাউকূফ এবং (রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে) তার বিরোধীতায় সারীহ, সহীহ, মারফু রেওয়াত আছে, এগুলোর বিরোধীতায় (সাহাবাগণ এর) মঊকূফ রেওয়াত দিয়ে কি হবে?" (খাযাইন আস-সুনান ২/১৪৩)
.
(১০) খলীল আহমেদ সাহারানপুরী দেওবন্দী বলেনঃ "আর এটা একজন সাহাবীর মাযহাব (মত, রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর মত নয়) যেটা একজন ব্যাক্তির জন্যও দলীল নয়। (বাযলুল মাযহুদ ৫ম খন্ড, পৃঃ ৩৯)
.
প্রিয় পাঠক! এখানে লক্ষ্য করুন, দেওবন্দী আলেমগণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছাড়া সাহাবাগণকেউ যাচাই-বাছাই এর ঊর্ধে মনে করেননি। তাই তো রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মতের সাথে না মিলার কারণে নির্দ্বিধায় তারা সাহাবাগণ (রা) এর মতের সমালোচনা করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রশ্ন হল- যাদের কথা দলিল হতে পারে না, যাদের কে যাচাইবাচাই করা হয় রাসূলুল্লাহ (সা) এর ভিত্তিতে, যাদের আমল মারফু হাদীসের বিরুদ্ধে গেলে মানা হয় না, তারা কি করে সত্যের মাপকাঠি হতে পারে? সুুতরাং দেওবন্দী আলেমগণের দৃষ্টিতেও সাহাবাগণ (রা) সত্যের মাপকাঠি নয় বরং সত্যের মাপকাঠি একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)। আর তাই তারা রাসূলুল্লাহ (সা) এর বাণী মারফু হাদীস কে প্রাধান্য দিয়েছেন, সাহাবাগণ (রা) এর বাণী মারফু হাদীসের বিরোধী বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
.
আমাদের দৃষ্টিতেও একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)-ই সত্যের মাপকাঠি, তিনি ছাড়া আর কোন ব্যাক্তি সত্যের মাপকাঠি হতে পারে না। কারণ 'মিয়ারে হক বা সত্যের মাপকাঠি বলতে আমরা সেই বস্তুকেই বুঝি, যার অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যে হক বা সত্য নিহিত আছে এবং যার অবাধ্যতার মধ্যে বাতিল বা অসত্য নিহিত আছে।' এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখো যায় যে, আল্লাহর রাসূল (সা)-ই হচ্ছে একমাত্র সত্যের মাপকাঠি। সাহাবীগণ সত্যের মাপকাঠি নন, বরং তারা হচ্ছেন আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের (সা) সুন্নাতের মাপকাঠি অনুসারে সত্যপন্থী জামা'য়াত। কেননা আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻟِﻤُﺆْﻣِﻦٍ ﻭَﻟَﺎ ﻣُﺆْﻣِﻨَﺔٍ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﻀَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُۥٓ ﺃَﻣْﺮًﺍ ﺃَﻥ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻟَﻬُﻢُ ﭐﻟْﺨِﻴَﺮَﺓُ ﻣِﻦْ ﺃَﻣْﺮِﻫِﻢْۗ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻌْﺺِ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُۥ ﻓَﻘَﺪْ ﺿَﻞَّ ﺿَﻠَٰﻠًﺎ ﻣُّﺒِﻴﻨًﺎ.
"আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিনা নারীর সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবেনা। কেহ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সেতো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট।" (সূরা আহযাবঃ ৩৩/৩৬)
.
আল্লাহ তা'য়ালা আরো বলেনঃ
ﻟَّﺎ ﺗَﺠْﻌَﻠُﻮﺍ۟ ﺩُﻋَﺎٓﺀَ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﻛَﺪُﻋَﺎٓﺀِ ﺑَﻌْﻀِﻜُﻢ ﺑَﻌْﻀًﺎۚ ﻗَﺪْ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺘَﺴَﻠَّﻠُﻮﻥَ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﻟِﻮَﺍﺫًﺍۚ ﻓَﻠْﻴَﺤْﺬَﺭِ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺨَﺎﻟِﻔُﻮﻥَ ﻋَﻦْ ﺃَﻣْﺮِﻩِۦٓ ﺃَﻥ ﺗُﺼِﻴﺒَﻬُﻢْ ﻓِﺘْﻨَﺔٌ ﺃَﻭْ ﻳُﺼِﻴﺒَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ.
"রাসূলের আহবানকে তোমরা একে অপরের প্রতি আহবানের মত গণ্য করনা; তোমাদের মধ্যে যারা চুপি চুপি সরে পড়ে আল্লাহ তাদেরকে জানেন। সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর কঠিন শাস্তি।" (সূরা নূরঃ ২৪/৬৩)
.
কিন্তু কোনো সাহাবা (রাঃ) এর আদেশ বা মতের বিরোধীতা করলে পথভ্রষ্ট হবে কিংবা আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো শাস্তি কারো উপর আপতিত হবে- এমন কোনো দলিল আল্লাহ তা'য়ালা নাজিল করেননি। তাই তো রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মতের সাথে না মিলার কারণে নির্দ্বিধায় দেওবন্দী আলেমগণও সাহাবাগণ (রা) এর মতের সমালোচনা করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। সুুতরাং সর্বসম্মতিক্রমে এ কথা প্রমাণিত হলো যে, সত্যের মাপকাঠি সাহাবাগণ নয় বরং সত্যের মাপকাঠি একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)। আল্লাহ আমাদের সকল কে দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুক।
আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর দৃষ্টিতে সাহাবায়ে কিরাম (রা) এর ঈমান ও তাকওয়া:
------------------------------------
পবিত্র কুরআনের ১৮শ পারায় আল্লাহ তা'য়ালা সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেনঃ
------------------------------------
পবিত্র কুরআনের ১৮শ পারায় আল্লাহ তা'য়ালা সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেনঃ
لَّقَدْ أَنزَلْنَآ ءَايَٰتٍ مُّبَيِّنَٰتٍۚ وَٱللَّهُ يَهْدِى مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٰطٍ مُّسْتَقِيمٍ وَيَقُولُونَ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلرَّسُولِ وَأَطَعْنَا ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٌ مِّنْهُم مِّنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَۚ وَمَآ أُو۟لَٰٓئِكَ بِٱلْمُؤْمِنِينَ وَإِذَا دُعُوٓا۟ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِّنْهُم مُّعْرِضُونَ. وَإِن يَكُن لَّهُمُ ٱلْحَقُّ يَأْتُوٓا۟ إِلَيْهِ مُذْعِنِينَ.أَفِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌ أَمِ ٱرْتَابُوٓا۟ أَمْ يَخَافُونَ أَن يَحِيفَ ٱللَّهُ عَلَيْهِمْ وَرَسُولُهُۥۚ بَلْ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ ٱلْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوٓا۟ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَن يَقُولُوا۟ سَمِعْنَا وَأَطَعْنَاۚوَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَخْشَ ٱللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْفَآئِزُونَ
.
অবশ্যই আমি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করেছি। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল সঠিক পথ দেখান। লোকেরা বলে, ‘আমরা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমরা আনুগত্য করেছি’, তারপর তাদের একটি দল এর পরে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর তারা মুমিন নয়। আর যখন তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এ মর্মে আহবান করা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচারমীমাংসা করবেন, তখন তাদের একটি দল মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু যদি সত্য তাদের পক্ষে থাকে, তাহলে তারা তার কাছে একান্ত বিনীতভাবে ছুটে আসে। তাদের অন্তরে কি ব্যাধি রয়েছে? নাকি তারা সন্দেহ পোষণ করে, না তারা ভয় করে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদের উপর যুলম করবেন? বরং তারাই তো যালিম। মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এ মর্মে আহবান করা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচার, মীমাংসা করবেন, তাদের কথা তো এই হয় যে, তখন তারা বলে: ‘আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম।’ আর তারাই সফলকাম। আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই কৃতকার্য।
(সূরা নূরঃ৪৬-৫২)
.
আয়াতগুলো পেশ করার পর আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
"এ আয়াতসমূহে ঈমানের যে পরিচয় দেওয়া হয়েছে আপনারা তা একটু বিষেশ ভাবে বুঝতে চেষ্টা করুন। বস্তুতঃ নিজেকে আল্লাহর কিতাব ও রাসূল (সা) এর হেদায়াতের সামনে সোপার্দ করে দেওয়ার নামই হচ্ছে ঈমান। সেখান হতে যে হুকুম আসে তার সামনে মাথা নত করে দাও। এর বিরোধী কোন কথা শুনবে না- না নিজের মনের কথা, না বংশ ও পরিবারের কথা আর না দুনিয়ার লোকদের কথা। যে ব্যক্তির মনের মধ্যে এ গুণ বর্তমান থাকবে প্রকৃতপক্ষে সেই হবে মু'মিন ও মুসলিম। আর যার মধ্যে এ গুণ থাকবে না তাকে মুনাফিক ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।"
(ইসলামের হাকীকত, পৃঃ১৭-১৯)
.
এরপর সাহাবাগণ (রা) এর ঈমান ও তাকওয়া কত মজমুত ও দৃঢ় ছিল তার উপমা পেশ করতে গিয়ে আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
"আপনারা হয়তো শুনেছেন যে, আরব দেশে মদ পান করার প্রথা বেশি প্রচলিত ছিল। নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ সকলেই মদের জন্য একেবারে পাগল প্রায় ছিল। আসলে মদের প্রতি তাদের অন্তরে গভীর আকর্ষণ বিদ্যমান ছিল। মদের জন্য প্রাণ দিতেও তারা প্রস্তুত হতো। এ কথাও আপনারা জানেন যে, একবার মদের নেশা লাগলে তা দূর হওয়া বড়ই মুশকিল। মদখোর ব্যক্তিরা মদের জন্য প্রাণ দিতে পারে কিন্তু মদ ত্যাগ করতে পারে না। কোন মদখোর যদি মদ না পায় তাবে তার অবস্থা কঠিন রোগীর অপেক্ষাও খারাপ হয়ে যায়।
.
কিন্তু যখন মদ নিষিদ্ধ হওয়ার আয়াত নাজিল হয়েছিল তখন কি অবস্থা হয়েছিল তা কি আপনারা শুনে ছিলেন? মদের জন্য পাগল জান দিতে প্রস্তুত সেই আরব (সাহাবা)'গণই এ হুকুম পাওয়ার সাথে সাথে নিজেদের হাতেই মদের বড় বড় পাত্র ভেঙে ফেলেছিল। মদীনার অলিতে গলিতে বৃষ্টির পানির মত মদ বয়ে গিয়েছিল। একটি মজলিশে কয়েক জন (সাহাবা) লোক একত্রে বসে মদ পান করছিল। হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর ঘোষণাকারী যখন তাদের কাছাকাছি গিয়ে বলল যে, মদ নিষিদ্ধ হয়েছে, তখন যার হাত যেখানে ছিল তা সেখানেই থেমে গেল আর একটুও অগ্রসর হলো না। যার হাতের পেয়ালা মুখের সাথে লেগেছিল, সে তখনই তা সরিয়ে নিলো। তারপর আর এক বিন্দু মদ তার উদরে প্রবেশ করতে পারেনি। এটাই হচ্ছে সত্যিকার ঈমানের পরিচয়। আর এটাকেই বলা হয় আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সা) এর আনুগত্য।"
(ইসলামের হাকীকত, পৃঃ১৯)
.
সাহাবাগণ (রা) এর ঈমান কত খাঁটি ছিল, তাকওয়া কত প্রখর ছিল, সে বিষয়ে উপমা দিয়ে আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
"ইসলামের ব্যভিচারের শাস্তি কত কঠিন ছিল তা তো আপনাদের অজানা নয়। তা হচ্ছে পিঠে একশত চাবুক। বস্তুতঃ এর কল্পনা করলেও মানুষের শরীর শিউরে ওঠে। আর ব্যভিচারী বিবাহিত হলে তো তাকে একেবারে পাথর মেরে হত্যা করা হয়। এ কঠিন শাস্তির নাম শুনলেই মানুষ ভয়ে কেঁপে ওঠে। কিন্তু যেসব লোকের খাঁটি ঈমান ছিল, অথচ ভুল বশত তাদের দ্বারা কোন ব্যভিচারের কাজ হয়েছিল, তাদের অবস্থা কি রূপ ছিল, তা কি আপনারা জানেন?
.
একজন (সাহাবী) লোক শয়তানের প্রতারণায় পড়ে ব্যভিচার করে বসলো। তার সাক্ষী কেউ ছিল না, আদালতে ধরে নিয়ে যাবারও কেউ ছিল না, পুলিশ কে খবর দেওয়ার মতো লোকও ছিল না। কিন্তু তার মনের মধ্যে ছিল খাঁটি ঈমান। আর সেই ঈমান তাকে বললো- আল্লাহর আইনকে ভয় না করে তুমি নফসের খাহেশ পূর্ণ করেছ তখন তার নির্দিষ্ট আইন মতে শাস্তি নিবার জন্য প্রস্তুত হও। কাজেই সে নিজেই হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর খেদমতে এসে হাযির হলো এবং নিবেদন করলোঃ 'হে আল্লাহর রাসূল (সা)! আমি ব্যভিচার করেছি, আমাকে এর শাস্তি দিন।' হযরত মুহাম্মাদ (সা) তখন অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সেই ব্যক্তি আবার সেই দিেক গিয়ে শাস্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলো এবং বললো, আমি যে পাপ করেছি আমাকে তার উপযুক্ত শাস্তি দিন। এটাকেই বলে ঈমান। এ ঈমান যার মধ্যে বর্তমান থাকবে, খোলা পিঠে একশত চাবুকের ঘা নেয়া এমন কি পাথরের আঘাত খেয়ে মরে যাওয়াও তার পক্ষে সহজ; কিন্তু আল্লাহর নাফরমানি করে আল্লাহর সামনে হাযির হওয়া তার পক্ষে বড়ই কঠিন ব্যাপার।"
(ইসলামের হাকীকত, পৃঃ ১৯-২০)
.
সাহাবাগণ (রা) এর ঈমানের বন্ধন এতোটাই মজমুত ছিল যে, রক্তের বন্ধনও সেই ঈমানের বন্ধন ছিন্ন করতে পারে নি বরং ইসলামের সার্থে তাঁরা তাঁদের রক্তের বন্ধন কে ছিন্ন করতে পিছুপা হননি। এ বিষয়ে আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
"আপনারা এটাও জানেন যে, দুনিয়ার মানুষের কাছে তার আত্মীয় স্বজনই অতিশয় প্রিয়পাত্র হয়ে থাকে। বিষেশ করে পিতা-পুত্র-ভাই মানুষের এত প্রিয় যে, তাদের জন্য সব কিছু ত্যাগ করতেও মানুষ প্রস্তুত হয়। কিন্তু আপনে একবার বদর ও ওহোদের যুদ্ধের কথা চিন্তা করে দেখুন যে, তাতে কে কার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। বাপ মুসলমানদের দলে, ছেলে কাফেরদের দলে, ছেলে এক দিকে, পিতা অন্য দিকে, এক ভাই ইসলামের পক্ষে অন্য ভাই দুশমনদের পক্ষে। একেবারে নিকটতম আত্নীয়গণ দু' দলে বিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আর এমন ভাবে যুদ্ধ করছে, যেন তারা কেউ কাউকে (রক্তের সম্পর্ক হিসাবে) চিনেই না। কোনো টাকা পয়সা কিংবা জায়গা জমি অথবা কোন ব্যাক্তিগত শত্রুতার জন্য তারা যুদ্ধ করেনি। তারা নিজেদের রক্ত দান করে আত্নীয় স্বজনের বিরুদ্ধে শুধু আল্লাহ ও রাসূল (সা) এর খাতিরেই যুদ্ধ করেছে। আর আল্লাহ ও রাসূল (সা) এর জন্য বাপ-ভাই-ছেলে এবং বংশের সকলকেই অকাতরে কুরবান করার মত প্রচন্ড মনোবল তাদের মধ্যে বর্তমান ছিল।"
(ইসলামের হাকীকত, পৃঃ২০)
.
সাহাবাগণ (রা) এর ঈমান ও তাকওয়া কত নিখুঁত, মজমুত ও শক্তিশালী ছিল সে বিষয়ে উদাহরণ পেশ করতে গিয়ে আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ আরো বলেনঃ
"যারা আল্লাহ ও রাসূল (সা) এর প্রতি ঈমান এনেছিল, তখন তারা কিভাবে কাজ করেছিল তা কি আপনারা জানেন? শত শত বছর ধরে যেসব মুর্তিকে তারা এবং তাদের বাপ-দাদারা পূঁজা করেছে, যেসবের সামনে নানা প্রকারের ভেট ও ভোগ হাযির করেছে এবং যেগুলোর সামনে মাথা ঠেকিয়ে সিজদা করেছে, ঈমানদার ব্যক্তি (সাহাবাগণ) তা নিজেদের হাতেই এক একটা করে চূর্ণ করে ফেলেছে। শত শত বছর ধরে যেসব বংশীয় রীতিনীতি ও রসম-রেওয়ায চলে আসছিল তা সবই তারা পরিত্যাগ করেছিল; যেসব জিনিস কে তারা মহান ও পবিত্র বলে ধারণা করতো, আল্লাহর হুকুম পেয়েই তারা তাকে পায়ের তলে দলিত করলো। যেসব জিনিস তারা ঘৃণা করতো আল্লাহর হুকুম পাওয়া মাত্রই তাকে ভালো মনে করে গ্রহণ করতে লাগলো। চিরকাল যেসব জিনিস কে পাক ও পবিত্র মনে করা হতো, আল্লাহর বিধান মতো সেসব কে অপবিত্র মনে করতে শুরু করলো। আর যেসব জিনিসকে অপবিত্র মনে করতো, সহসা তা পবিত্র হয়ে গেল। যেসব কাফেরী চালচলনে তারা আরাম ও সুখ মনে করতো, আল্লাহর হুকুম পাওয়া মাত্রই তা সবই ছেড়ে দিয়েছিল এবং ইসলামের যেসব হুকুম পালন করা মানুষের পক্ষে কষ্টকর বলে মনে হতো তারা সেসব কে সানন্দে কবুল করে নিলো। এরই নাম ঈমান এবং একেই বলা হয় ইসলাম।"
(ইসলামের হাকীকত, পৃঃ ২১)
.
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
অবশ্যই আমি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করেছি। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল সঠিক পথ দেখান। লোকেরা বলে, ‘আমরা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমরা আনুগত্য করেছি’, তারপর তাদের একটি দল এর পরে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর তারা মুমিন নয়। আর যখন তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এ মর্মে আহবান করা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচারমীমাংসা করবেন, তখন তাদের একটি দল মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু যদি সত্য তাদের পক্ষে থাকে, তাহলে তারা তার কাছে একান্ত বিনীতভাবে ছুটে আসে। তাদের অন্তরে কি ব্যাধি রয়েছে? নাকি তারা সন্দেহ পোষণ করে, না তারা ভয় করে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদের উপর যুলম করবেন? বরং তারাই তো যালিম। মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এ মর্মে আহবান করা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচার, মীমাংসা করবেন, তাদের কথা তো এই হয় যে, তখন তারা বলে: ‘আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম।’ আর তারাই সফলকাম। আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই কৃতকার্য।
(সূরা নূরঃ৪৬-৫২)
.
আয়াতগুলো পেশ করার পর আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
"এ আয়াতসমূহে ঈমানের যে পরিচয় দেওয়া হয়েছে আপনারা তা একটু বিষেশ ভাবে বুঝতে চেষ্টা করুন। বস্তুতঃ নিজেকে আল্লাহর কিতাব ও রাসূল (সা) এর হেদায়াতের সামনে সোপার্দ করে দেওয়ার নামই হচ্ছে ঈমান। সেখান হতে যে হুকুম আসে তার সামনে মাথা নত করে দাও। এর বিরোধী কোন কথা শুনবে না- না নিজের মনের কথা, না বংশ ও পরিবারের কথা আর না দুনিয়ার লোকদের কথা। যে ব্যক্তির মনের মধ্যে এ গুণ বর্তমান থাকবে প্রকৃতপক্ষে সেই হবে মু'মিন ও মুসলিম। আর যার মধ্যে এ গুণ থাকবে না তাকে মুনাফিক ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।"
(ইসলামের হাকীকত, পৃঃ১৭-১৯)
.
এরপর সাহাবাগণ (রা) এর ঈমান ও তাকওয়া কত মজমুত ও দৃঢ় ছিল তার উপমা পেশ করতে গিয়ে আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
"আপনারা হয়তো শুনেছেন যে, আরব দেশে মদ পান করার প্রথা বেশি প্রচলিত ছিল। নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ সকলেই মদের জন্য একেবারে পাগল প্রায় ছিল। আসলে মদের প্রতি তাদের অন্তরে গভীর আকর্ষণ বিদ্যমান ছিল। মদের জন্য প্রাণ দিতেও তারা প্রস্তুত হতো। এ কথাও আপনারা জানেন যে, একবার মদের নেশা লাগলে তা দূর হওয়া বড়ই মুশকিল। মদখোর ব্যক্তিরা মদের জন্য প্রাণ দিতে পারে কিন্তু মদ ত্যাগ করতে পারে না। কোন মদখোর যদি মদ না পায় তাবে তার অবস্থা কঠিন রোগীর অপেক্ষাও খারাপ হয়ে যায়।
.
কিন্তু যখন মদ নিষিদ্ধ হওয়ার আয়াত নাজিল হয়েছিল তখন কি অবস্থা হয়েছিল তা কি আপনারা শুনে ছিলেন? মদের জন্য পাগল জান দিতে প্রস্তুত সেই আরব (সাহাবা)'গণই এ হুকুম পাওয়ার সাথে সাথে নিজেদের হাতেই মদের বড় বড় পাত্র ভেঙে ফেলেছিল। মদীনার অলিতে গলিতে বৃষ্টির পানির মত মদ বয়ে গিয়েছিল। একটি মজলিশে কয়েক জন (সাহাবা) লোক একত্রে বসে মদ পান করছিল। হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর ঘোষণাকারী যখন তাদের কাছাকাছি গিয়ে বলল যে, মদ নিষিদ্ধ হয়েছে, তখন যার হাত যেখানে ছিল তা সেখানেই থেমে গেল আর একটুও অগ্রসর হলো না। যার হাতের পেয়ালা মুখের সাথে লেগেছিল, সে তখনই তা সরিয়ে নিলো। তারপর আর এক বিন্দু মদ তার উদরে প্রবেশ করতে পারেনি। এটাই হচ্ছে সত্যিকার ঈমানের পরিচয়। আর এটাকেই বলা হয় আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সা) এর আনুগত্য।"
(ইসলামের হাকীকত, পৃঃ১৯)
.
সাহাবাগণ (রা) এর ঈমান কত খাঁটি ছিল, তাকওয়া কত প্রখর ছিল, সে বিষয়ে উপমা দিয়ে আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
"ইসলামের ব্যভিচারের শাস্তি কত কঠিন ছিল তা তো আপনাদের অজানা নয়। তা হচ্ছে পিঠে একশত চাবুক। বস্তুতঃ এর কল্পনা করলেও মানুষের শরীর শিউরে ওঠে। আর ব্যভিচারী বিবাহিত হলে তো তাকে একেবারে পাথর মেরে হত্যা করা হয়। এ কঠিন শাস্তির নাম শুনলেই মানুষ ভয়ে কেঁপে ওঠে। কিন্তু যেসব লোকের খাঁটি ঈমান ছিল, অথচ ভুল বশত তাদের দ্বারা কোন ব্যভিচারের কাজ হয়েছিল, তাদের অবস্থা কি রূপ ছিল, তা কি আপনারা জানেন?
.
একজন (সাহাবী) লোক শয়তানের প্রতারণায় পড়ে ব্যভিচার করে বসলো। তার সাক্ষী কেউ ছিল না, আদালতে ধরে নিয়ে যাবারও কেউ ছিল না, পুলিশ কে খবর দেওয়ার মতো লোকও ছিল না। কিন্তু তার মনের মধ্যে ছিল খাঁটি ঈমান। আর সেই ঈমান তাকে বললো- আল্লাহর আইনকে ভয় না করে তুমি নফসের খাহেশ পূর্ণ করেছ তখন তার নির্দিষ্ট আইন মতে শাস্তি নিবার জন্য প্রস্তুত হও। কাজেই সে নিজেই হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর খেদমতে এসে হাযির হলো এবং নিবেদন করলোঃ 'হে আল্লাহর রাসূল (সা)! আমি ব্যভিচার করেছি, আমাকে এর শাস্তি দিন।' হযরত মুহাম্মাদ (সা) তখন অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সেই ব্যক্তি আবার সেই দিেক গিয়ে শাস্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলো এবং বললো, আমি যে পাপ করেছি আমাকে তার উপযুক্ত শাস্তি দিন। এটাকেই বলে ঈমান। এ ঈমান যার মধ্যে বর্তমান থাকবে, খোলা পিঠে একশত চাবুকের ঘা নেয়া এমন কি পাথরের আঘাত খেয়ে মরে যাওয়াও তার পক্ষে সহজ; কিন্তু আল্লাহর নাফরমানি করে আল্লাহর সামনে হাযির হওয়া তার পক্ষে বড়ই কঠিন ব্যাপার।"
(ইসলামের হাকীকত, পৃঃ ১৯-২০)
.
সাহাবাগণ (রা) এর ঈমানের বন্ধন এতোটাই মজমুত ছিল যে, রক্তের বন্ধনও সেই ঈমানের বন্ধন ছিন্ন করতে পারে নি বরং ইসলামের সার্থে তাঁরা তাঁদের রক্তের বন্ধন কে ছিন্ন করতে পিছুপা হননি। এ বিষয়ে আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
"আপনারা এটাও জানেন যে, দুনিয়ার মানুষের কাছে তার আত্মীয় স্বজনই অতিশয় প্রিয়পাত্র হয়ে থাকে। বিষেশ করে পিতা-পুত্র-ভাই মানুষের এত প্রিয় যে, তাদের জন্য সব কিছু ত্যাগ করতেও মানুষ প্রস্তুত হয়। কিন্তু আপনে একবার বদর ও ওহোদের যুদ্ধের কথা চিন্তা করে দেখুন যে, তাতে কে কার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। বাপ মুসলমানদের দলে, ছেলে কাফেরদের দলে, ছেলে এক দিকে, পিতা অন্য দিকে, এক ভাই ইসলামের পক্ষে অন্য ভাই দুশমনদের পক্ষে। একেবারে নিকটতম আত্নীয়গণ দু' দলে বিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আর এমন ভাবে যুদ্ধ করছে, যেন তারা কেউ কাউকে (রক্তের সম্পর্ক হিসাবে) চিনেই না। কোনো টাকা পয়সা কিংবা জায়গা জমি অথবা কোন ব্যাক্তিগত শত্রুতার জন্য তারা যুদ্ধ করেনি। তারা নিজেদের রক্ত দান করে আত্নীয় স্বজনের বিরুদ্ধে শুধু আল্লাহ ও রাসূল (সা) এর খাতিরেই যুদ্ধ করেছে। আর আল্লাহ ও রাসূল (সা) এর জন্য বাপ-ভাই-ছেলে এবং বংশের সকলকেই অকাতরে কুরবান করার মত প্রচন্ড মনোবল তাদের মধ্যে বর্তমান ছিল।"
(ইসলামের হাকীকত, পৃঃ২০)
.
সাহাবাগণ (রা) এর ঈমান ও তাকওয়া কত নিখুঁত, মজমুত ও শক্তিশালী ছিল সে বিষয়ে উদাহরণ পেশ করতে গিয়ে আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ আরো বলেনঃ
"যারা আল্লাহ ও রাসূল (সা) এর প্রতি ঈমান এনেছিল, তখন তারা কিভাবে কাজ করেছিল তা কি আপনারা জানেন? শত শত বছর ধরে যেসব মুর্তিকে তারা এবং তাদের বাপ-দাদারা পূঁজা করেছে, যেসবের সামনে নানা প্রকারের ভেট ও ভোগ হাযির করেছে এবং যেগুলোর সামনে মাথা ঠেকিয়ে সিজদা করেছে, ঈমানদার ব্যক্তি (সাহাবাগণ) তা নিজেদের হাতেই এক একটা করে চূর্ণ করে ফেলেছে। শত শত বছর ধরে যেসব বংশীয় রীতিনীতি ও রসম-রেওয়ায চলে আসছিল তা সবই তারা পরিত্যাগ করেছিল; যেসব জিনিস কে তারা মহান ও পবিত্র বলে ধারণা করতো, আল্লাহর হুকুম পেয়েই তারা তাকে পায়ের তলে দলিত করলো। যেসব জিনিস তারা ঘৃণা করতো আল্লাহর হুকুম পাওয়া মাত্রই তাকে ভালো মনে করে গ্রহণ করতে লাগলো। চিরকাল যেসব জিনিস কে পাক ও পবিত্র মনে করা হতো, আল্লাহর বিধান মতো সেসব কে অপবিত্র মনে করতে শুরু করলো। আর যেসব জিনিসকে অপবিত্র মনে করতো, সহসা তা পবিত্র হয়ে গেল। যেসব কাফেরী চালচলনে তারা আরাম ও সুখ মনে করতো, আল্লাহর হুকুম পাওয়া মাত্রই তা সবই ছেড়ে দিয়েছিল এবং ইসলামের যেসব হুকুম পালন করা মানুষের পক্ষে কষ্টকর বলে মনে হতো তারা সেসব কে সানন্দে কবুল করে নিলো। এরই নাম ঈমান এবং একেই বলা হয় ইসলাম।"
(ইসলামের হাকীকত, পৃঃ ২১)
.
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمْ خَيْرُ ٱلْبَرِيَّةِ جَزَآؤُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّٰتُ عَدْنٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًاۖ رَّضِىَ ٱللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا۟ عَنْهُۚ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَشِىَ رَبَّهُۥ
.
.
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে তারাই সৃষ্টির সর্বোৎকৃষ্ট। তাদের রবের কাছে তাদের পুরস্কার হবে স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা থাকবে স্থায়ীভাবে। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট হয়েছে। এটি তার জন্য, যে স্বীয় রবকে ভয় করে।
(বাইয়্যেনাহঃ৭-৮)
.
.
رَبَّنَا ٱغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلْإِيمَٰنِ وَلَا تَجْعَلْ فِى قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
.
হে আমাদের রব! আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু।
(সূরা হাশরঃ১০)
(বাইয়্যেনাহঃ৭-৮)
.
.
رَبَّنَا ٱغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلْإِيمَٰنِ وَلَا تَجْعَلْ فِى قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
.
হে আমাদের রব! আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু।
(সূরা হাশরঃ১০)
সাহাবীগনকে সত্যের মাপকাঠি না মানা নিয়ে মাওঃ মওদুদীর বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগের তাত্ত্বিক পর্যালোচনা
মাওলানা মওদুদী (রহ: ) “সত্যের মাপকাঠি এবং যাচাই বাছাই” সম্পর্কে যে আলোচনা রাখেন, সেটা তৎকালীন পাকিস্তান জামায়া’তে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের ৩নং ধারার ৬ নং উপধারায় লিখিত আছে । মাওলানার আলোচনাটি নিন্মরূপ :-
“আল্লাহর রাসুল (স: ) ছাড়া অন্য কোন মানুষকে সত্যের মাপকাঠি বানাবেনা ।কাউকে যাচাই বাছাইয়ের উর্ধে মনে করবেনা । কারো অন্ধ গোলামীতে নিমজ্জিত হবে না, বরং আল্লাহর দেয়া এ পূর্ণ মাপ কাঠির মাধ্যমে যাচাই ও পরখ করবে ‘এবং এ মাপকাঠির দৃষ্টিতে যার যে মর্যাদা হতে পারে, তাকে সে মর্যাদাই দেবে’।”
মাওলানার এ আলাচনা থেকে দুটি কথা স্পষ্টত: জানতে পারা যায়:
১।আল্লাহর রাসুল (স: ) ছাড়া কেউ সত্যের মাপকাঠি নয় ।
২।আল্লাহর রাসুল (সা: ) ছাড়া কেউ যাচাই বাছাইয়ের উর্ধে নয় ।
মাওলানার উল্লিখিত কথাগুলোর উপর কোন কোন মহল অভিযোগ করে বলেছেন যে, যদি এ কথাগুলো মেনে নেওয়া যায় তা হলে সাহাবায়ে কিরাম (রা: ) সত্যের মাপকাঠি হচ্ছেন না এবং তাদের উপর তানকী’দ বা যাচাই বাছাই বৈধ হয়ে যায় । অথচ কো’রআন ও হাদীসে তাদের অনেক মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে । আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে বলেছেন رضى الله عنهم و رضوا عنه অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি সন্ত্তষ্ট হয়েছেন এবং তারাও সন্ত্তষ্ট হয়েছেন আল্লাহর প্রতি ।
আর রাসুলে করীম (স: ) বলছেন اصحابي كالنجوم باىهم اقتدىتم اهتدىتم
অর্থাৎ আমার সাহাবীগণ তারকা সদৃশ, তোমরা তাদের মধ্য থেকে যার অনুসরণ করবে হেদায়েত পাবে ।অতএব যারা এ আকীদা পোষণ করবে যে সাহাবায়ে কিরাম (রা: )সত্যের মাপকাঠি নন এবং যাচাই বাছাইয়েরও উর্ধে নন, তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বহির্ভূত।
সন্মানিত পাঠকবৃন্দ।আসুন, আমরা কোরআন ও হাদীসের আলোকে আলোচনা করে দেখি সত্যিই কি মাওলানা মওদুদী (রাহ ) এ কথাগুলো বলার কারণে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত থেকে বহির্ভূত হওয়ার যোগ্য, না নিছক ,একটা অপবাদ মাত্র ।
কোরআন শরীফের আলোকে মিয়ারে হক :
আল্লাহ তায়ালা কোরআন শরীফে এরশাদ করেছেন :
ذالك خير واحسن تاويلا – فان تنازعتم فى شئ فردوه الى الله والرسول ان كنتم تؤمنون بالله واليوم الاخر
“যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মত বিরোধ হয় তাহলে উহা আল্লাহ ও তার রসুলের দিকে ফিরিয়ে দাও । যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখ । উহাই উত্তম এবং পরকালের দিক দিযেও মঙ্গলজনক”।(সূরা নিসা , আয়াত নং-৫৯)
এ আয়াতে একটি কথা লক্ষণীয় যে, আল্লাহ তায়ালা “তোমরা” বলে যে সম্মোধন করেছেন এর মধ্যে সাহাবায়ে কিরাম (রা: ) ও রয়েছেন । সুতরাং স্পষ্টত: বুঝা গেল সাহাবায়ে কিরাম (রা: )সহ কিয়ামত পর্যন্ত আগত মুমিনদের একে অন্যের সাথে মত বিরোধ হতে পারে । একজন সাহাবীর সাথে যেমন অন্য একজন সাহাবীর মত বিরোধ হতে পারে ,তেমনি একজন সাহাবীর সাথে এমন ব্যক্তি যিনি সাহাবী নন তারও মত বিরোধ হতে পারে । কিন্ত এমতাবস্থায় ফয়সালাকারী হবে আল্লাহর কিতাব ও সুন্নতে রাসুল (স: )।
অতএব বুঝা গেল মিয়ারে হক বা সত্যের মাপকাঠি আল্লাহর কিতাব ও সুন্নতে রাসুল (স: )। যদি সাহাবায়ে কিরাম (রা: )সত্যের মাপকাঠি হতেন তাহলে গায়রে সাহাবী (যিনি সাহাবী নন) তো দুরের কথা একজন সাহাবীর অন্য সাহাবীর সাথে মতবিরোধের কোন অধিকার থাকত না, কিংবা মত বিরোধের সময় প্রত্যেক সাহাবী নিজ নিজ মতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার হুকুম হত, এবং গায়ের সাহাবীকে বিনা দ্বিধায় সাহাবীর মতকে গ্রহণ করার উপর বাধ্য করা হত।
অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন মতবিরোধের সময় কেউ কারো মত গ্রহণ না করে বরং আল্লাহর কিতাব ও সুন্নতে রাসুল (স: ) যে ফয়সালা দেয় উভয় পক্ষ তা মেনে নিতে হবে । সুতরাং সত্যের মাপকাঠি একমাত্র আল্লাহর কিতাব কোরআনে করীম এবং সুন্নতে রাসুল (স: )।সাহাবায়ে কিরাম বা অন্য কেউ নন । কারণ মিয়ারে হক বলতে এ জিনিষকেই বুঝায় যার অনুসরণ ও অনুকরণ উহার সত্য হওয়ার প্রমান এবং যার বিরোধিতা উহার বাতিল হওয়ার পরিচয় বহন করে । আর এটা ঐ জিনিসই হতে পারে যা নিশ্চিত সত্য এবং বাতিল হওয়ার এতে কোনরূপ আশাংকা নেই।এবং এটা প্রকাশ্য যে, নিশ্চিত সত্য মাত্র দুটি জিনিষ, আল্লাহ তায়ালার কিতাব কোরআনে কারীম এবং রাসুলে করীম (স: ) এর সুন্নত । সুতরাং মিযারে হক শুধুমাত্র এ দুটোকেই মানতে হবে । অন্য কাউকে নয় ।
মাওলানা মওদুদী (রহ: )কে মিয়ারে হক সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি ঠিক একথাটাই বলেছেন:-
“মিয়ারে হক বলতে আমরা সেই বস্তুকেই বুঝি , যার অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যে হক বা সত্য নিহিত আছে এবং যার অবাধ্যতার মধ্যে বাতিল বা অসত্য নিহিত আছে।এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখো যায় যে, আল্লাহর কিতাব ও রাসুলে করীম (স: ) এর সুন্নতই হচ্ছে একমাত্র সত্যের মাপকাঠি।সাহাবীগণ মাপকাঠি নন , বরং তারা হচ্ছেন আল্লাহর কিতাব ও রসুলের সুন্নতের মাপকাঠি অনুসারে সত্যের পূর্ণ অনুসারী।কোরআন ও হাদীসের মাপকাঠিতে পরখ করে আমরা এরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হযেছি যে, সাহাবাদের জামায়াত একটি সত্যপন্থি জামায়াত । তাদের ইজমা অর্থাৎ সর্ব সম্মত সিদ্ধান্তকে আমরা শরীয়তের প্রামান্য দলীল রূপে এজন্যে মেনে থাকি যে, কোরআন ও হাদীসের সাথে সামান্যতম বিরোধমুলক বিষয়েও সকল সাহাবাদের একমত হযে যাওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব। দেখুন-(তরজমানুল কোরআন, জিলদ ৫৬, সংখ্যা ৫)
হাদীসের আলোকে মিয়ারে হক :
عن ملك بن انس رض قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تركت فيكم امرين لن تفعلوا ماتمسكتم بهما كتاب الله وسنة رسوله
“হযরত মালিক বিন আনাস (রা: ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলে করীম (স: ) বলেছেন, “আমি তোমাদের মাঝে দুটো জিনিস রেখে গেলাম । যতক্ষন তোমরা এ দুটো জিনিসকে শক্ত ভাবে ধারণ করবে ততক্ষণ তোমরা কখনও পথভষ্ট হবে না । এ দুটো জিনিস হচ্ছে আল্লfহর কিতাব তথা কোরআন শরীফ এবং তার রাসুলের সুন্নত”।
উক্ত হাদীস দ্বারা স্পষ্টত: বুঝা যাচ্ছে যে সত্য, ন্যায় ও সঠিক পথে থাকতে হলে মানুষকে কেবল মাত্র এ দুটোই শক্ত ভাবে ধারণ করতে হবে। এ দুটির অনুসরণের মধ্যেই সত্য নির্হিত এবং বিরোধিতার মধ্যে বাতিল নিহিত । সুতারং মিয়ারে হক শুধুমাত্র আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাতে রাসুল (স: )। সাহাবায়ে কিরাম (রা: ) ও যদি মিয়ারে হক হতেন, তাহলে উক্ত হাদীসে রাসুল (স: ) কিতাব ও সুন্নাহ উল্লেখ করার পর পরই তাদের কথা উল্লেখ করতেন ।
তা ছাড়া সাহাবায়ে কিরাম (রা: ) যদি মিয়ারে হক হতেন তাহলে তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত কথা বা অভিমত শরিয়তের মধ্যে দলীল হিসেবে গণ্য হত।অথচ তাদের ব্যক্তিগত অভিমত শরিয়তে দলীল হিসেবে গণ্য হয়না । এ ব্যাপারে আইম্মায়ে মুজতাহিদীন এবং নির্ভর যোগ্য উলামায়ে কিরামদের অভিমত নিন্মরূপ:
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ ইমাম সারাখসীর অভিমত :
وانما كان الاجماع حجة باعتبار ظهور وجه الصواب فيه بالاجماع عليه وانما يظهر هذا فى قول الجماعة لافى قول الواحد الاترى ان قول الواحد لايكون موجبا للعلم وان لم يكن بمعا بلته جماعة يخالفونه
(كتاب الاصول)
“সাহাবাদের ইজমা (ঐক্যমত) এজন্যই দলীল হিসাবে গৃহীত হয়ে থাকে যে, সবাই একটি ব্যাপারে একমত হওয়াতে এর সত্যতা নির্ভূলভাবে প্রতীয়মান হয় , কিন্ত একজনের কথায় তা হয় না । তুমি কি দেখোনা , একজনের কথায় সঠিক জ্ঞান অর্জিত হয় না, যদিও এর কেউ বিরোধীতা না করে । (দেখুন-কিতাবুল উসুল ১ম খন্ড, সাহবাদের ইজমা সম্পর্কীয় আলোচনা। )
ইমাম সারাখসী আরও বলেন :
“অভিমত হিসেবে কোন সাহাবার কাছ থেকে কোন ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে এবং এটা এমন স্পষ্ট কথা যা অস্বীকার করা যায় না । আর অভিমত অনেক সময় ভূল হয়ে থাকে । অতএব সাহাবীদের একজনের ব্যক্তিগত মত ভূল কিংবা নির্ভূল হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এ ধরণের অভিমত বিরোধী মতও ত্যাগ করা যাবে না , যেমনিভাবে কোন তাবেয়ীর কথায় কিয়াসকে ত্যাগ করা যায় না । দেখুন: কিতাবুল উসুল ২য় খন্ড পৃষ্টা নং-১০৫
দার্শনিক ইমাম গাযযালীর অভিমত :
ইমাম গাযযালী المستصفى গ্রন্থের ১৩৫ পৃষ্টায় কাওলে সাহাবী সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন : অনেকের কাছে সাহাবীর মাযহাব স্বাভাবিকভাবে দলীলের সূত্র । আর অনেকের মতে কিয়াস বহির্ভূত মাসআলায় তা দলীল হিসাবে গণ্য এবং অনেকের কাছে আবু বকর (রা: ) ও উমর (রা: ) এর কথা দলীল হিসেবে গৃহীত । অত:পর তিনি বলেন :
আমাদের কাছে এসব কথা বাতিল বলে গণ্য।যে ব্যক্তির ভূল হবার সম্ভাবনা আছে এবং যার নিস্পাপ ও নির্ভূল হবার কোন প্রামান্য দলীল নেই । তার দলীল রূপে গৃহীত হতে পারেনা।কাজেই সাহাবীদের ব্যক্তিগত কথা কিভাবে দলীল হতে পারে ? অথচ তাদের ভূলের সম্ভাবনা আছে । আর দলীলে মুতাওয়াতির বা আসামানী দলীল ছাড়া কিভাবে তাদের নিস্পাপ হওয়ার দাবি করা যেতে পারে ? তাদের মধ্যে মত পার্থক্য বিদ্যমান থাকা সত্তেও কিরূপে তাদের দলকে নিস্পাপ বলে ধারণা করা যায়? আর দুজন মাসুম বা নিস্পাপ ব্যক্তিদের মধ্যে মতপার্থক্য সম্ভব হয় কেমন করে ? তা ছাড়া সাহাবারা নিজেরাই তো তাদের মধ্যে মত পার্থক্য বৈধ হবার ব্যাপারে একমত।আবু বকর ও উমর (রা: ) পর্যন্ত তাদের বিরোধীমতের ইজতেহাদকারীদের অস্বীকার করেননি , বরং মুজতাহিদ যেন ইজতেহাদী মাসআলায় তার ইজতেহাদের অনুসরণ করে এটা অবশ্য পালনীয় করে দিয়েছেন । সুতরাং সাহাবাদের নিস্পাপ হওয়ার দলীল না থাকা , তাদের পরস্পরের বিরোধীতা করা বৈধ এবং তাদের নিজেদেরই একথা বলে দেয়া যে, তাদের বিরোধিতা করা বৈধ– এ তিনটি কথাই আমাদের আকাট্য দলীল।
এরপর ইমাম গাযযালী (রহ: ) ইমাম শাফিযীর দুটি কথার উদ্ধৃতি দিয়েছেন।প্রথমটি হলো যদি কোন সাহাবীর কথা প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং কারো বিরুদ্ধে কোন মত পাওয়া না যায় , তাহলে এর অনুসরণ করা জায়েয , ওয়াজিব নয় । পরবর্তীতে তিনি নূতন মত ব্যক্ত করে বলেন :- لا ىقلد العالم صحابىا كما لا ىقلد عالما اخر
অর্থাৎ কোন আলেম যেমন অন্য আলেমের তাকলীদ বা অনুসরণ করেন না ঠিক তেমনি কোন সাহাবীরও যেন তাকলীদ না করেন ।
ইমাম গাযযালী (রাহ: ) আরও বলেন :-
وهو الصحيح المختار عندنا ادكل ماول على تحريم تقليد العالم للعالم لايفرق فيه بين الصحابى وغيره
এইটিই আমাদের কাছে সহীহ ও গ্রহণ যোগ্য কথা । কারণ যে সমস্ত দলীলের ভিত্তিতে এক আলেমের জন্য অন্য আলেমের তাকলীদ হারাম প্রমানিত হলো, সেগুলোর ব্যাপারে একজন সাহাবীও একজন গায়রে সাহাবীর মধ্যে কোনরূপ পার্থক্য সৃষ্টি করা যাবেনা।
যারা সাহাবীদের ফযীলত সম্পর্কীয় আয়াত ও হাদীস দ্বারা তাদের অনুসরণ করা জাযেয় ও কর্তব্য বলে দলীল পেশ করেন , সে সব দলীলের জবাবে ইমাম গাযাযলী (রাহ: )বলেন:-
قلنا هذا كله ثناء يوجب حسن الاعتقاد فى عملهم ودنيهم ومحلهم عند الله تعالى ولايوجب تقليدهم لاجوازا ولاوجوبا
আমরা সাহাবীদের ফযীলত সম্পর্কিত আয়াত ও হাদীস সমূহকে তাদের প্রশংসা জ্ঞাপক দলীল হিসেবে মনে করি। সেগুলো দ্বারা তাদের আমল, দ্বীনদারী এবং আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা সম্পর্কে সুধারনা পোষন করা কর্তব্য বলে প্রমাণিত হয ।কিন্ত এসবের মাধ্যমে তাদের অন্ধ অনুসরণ করা জায়েয ও কর্তব্য বলে প্রমানিত হয় না । জবাবের শেষাংশে তিনি বলেন :- كل ذالك ثناء لايوجب الاقتداء اصلا
এসব প্রশংসা ও মর্যাদা জ্ঞাপক দলীল এর দ্বারা অনুসরণ করা কর্তব্য এটা প্রমাণিত হয় না।
ইমাম শাফিয়ীর অভিমত :
وقال الشافعى فى قوله الجديد لايقلد احدمنهم اى لايكون قوله دليلا وان كان لايدرك بالقياس
ইমাম শাফিয়ীর সর্বশেষ মতামত এই যে, সাহাবীদের কারও অনুসরণ করা যাবেনা , অর্থাৎ তাদের ব্যক্তিগত কথা শরীয়তের মধ্যে কোন দলীল নয় । ঐ সমস্ত মাসআলায়ও যে গুলোতে কিয়াসের কোন দখল নেই ।
দেখুন –(مقدمت فتح الملهم)
ইমাম শওকানীর অভিমত:
ইমাম শওকানী ارشاد الفحول গ্রন্থের الاستدلال নামক সপ্তম অধ্যায়ের পঞ্চম অনুচ্ছেদে কাওলে সাহাবী সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন :
সত্য কথা হলো সাহাবীর ব্যক্তিগত কথা শরীয়তের কোন দলীল নয় । কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতের প্রতি মুহাম্মদ (স: ) ছাড়া অন্য কাউকে প্রেরণ করেননি।তিনি আমাদের একমাত্র রাসুল (স: ) আর কিতাব ও আমাদের জন্য মাত্র একটি।সমস্ত উম্মতকে আল্লহর কিতাব ও তার নবীর সুন্নত অনুসরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপার সাহাবী ও গায়রে সাহাবীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।প্রত্যেকই শরীয়তী বিধানের আওতাধীন এবং কিতাব ও সুন্নত অনুসরণে সমান ভাবে আদিষ্ট । যারা বলেন যে, আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের সুন্নত ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে দলীল কায়েম হতে পারে, তারা দ্বীনের ব্যাপারে একটি প্রমানহীন কথা বলেন ।
শাহ ওলিউল্লাহর অভিমত :
শাহ ওলিউল্লাহ (রহ: ) তার রচিত হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ গ্রন্থের প্রথম খন্ডের শেষাংশে التنبىه على مسائل শিরোনামের একটি পরিচ্ছেদে বলেন :
قد صحّ اجماع الصحابة كلهم اولهم عن اخرهم واجماع التابعين اولهم عن اخرهم واجماع تابعى التابعين اولهم عن اخرهم على الامتناع والمنع من ان يقصد منهم احد الى قول انسان منهم اوممن قبلهم فياخذه كله
সাহাবী , তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীনদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকলের ঐক্যমতে প্রমানিত যে, তাদের কোন একজনের পক্ষে ও তাদের মধ্য থেকে কিংবা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তির কথা দ্বিধাহীন ভাবে ও অকুন্ঠ চিত্তে গ্রহণ করা বৈধ নয়।অত:পর তিনি বিভিন্ন ইমামগণের অভিমত পেশ করেণ :
ইমাম মালেকের অভিমত :
مامن احد الا وهو ماخوذ من كلامه ومردود عليه الا رسول الله
একমাত্র রাসুল (স: ) ছাড় এমন কোন লোক নেই , যার কথা কিছু গ্রহণ যোগ্য ও কিছু বর্জন যোগ্য হবে না ।
ইমাম শাফিয়ীর অভিমত :
لا حجة فى قول احد دون رسول الله صلى الله عليه وسلم وان كثروا
“রাসুল ছাড়া অন্য কারো কথা দলীল হতে পারে না । যদি ও তারা সংখ্যায় বেশী হন ।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের অভিমত :
ليس لا حد مع الله ورسوله كلام
“কারো কথা আল্লাহ ও তার রাসুলের কথার সমান হতে পারে না ।
মওলানা মওদূদী (রহ: )এ প্রতিপক্ষের দলীলের অসরতা :
যারা সাহাবায়ে কিরাম (রা: ) কে মিয়ারে হক বলে দাবী করেন , তারা নিন্মের হাদীসটি দলীল হিসেবে পেশ করেন : قال رسول الله صلى الله علىه و سلم اصحابي كالنجوم باىهم اقتدىتم اهتدىتم
“রাসুল (স: )বলেছেন আমার সাহাবীগণ তারকা সদৃশ, তোমরা তাদের মধ্য থেকে যাকেই অনুসরণ করবে হেদয়াত পাবে ।
এ হাদীসটি আসলে একটি জয়ীফ বা দুর্বল হাদীস । আর জয়ীফ হাদীস কখন ও দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যায় না । এটা সর্বসম্মত কথা ।
হাদীসটি সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনে কিরামের অভিমত নিন্মরূপ:
বিখ্যাত মুহাদ্দিস হাফেয ইবনে আব্দুল বার তার লিখিত
“جامع بيان العلم” নামক কিতাবে এ হাদীসটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন :
هذا اسناد لاتقوم به حجة
অর্থাৎ এ হাদিসটির সনদ এমন যার উপর ভিত্তি করে কোন বিষয়ের দলীল হিসেবে এটাকে পেশ করা যায় না ।
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে হাযম বলেন :
هذه رواية ساقطة خبر مكذوب موضوع باطل لم يصح قط
এটি হচ্ছে একটি পরিত্যাক্ত বর্ণনা একটি মিথ্যে মন গড়া জালিয়াতি পূর্ণ এবং অসারতা পূর্ণ বাতেল খবর । এর সত্যতা কোন কালেই প্রমানিত হয়নি ।
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী বলেন : এ হাদিসটির যাবতীয় সনদই দুর্বল। (দেখুন- تخريج كشاف)
ইমাম শওকানী বলেন :
فيه مقال معروف
অর্থাৎ এ হাদিসটির সনদ সম্পর্কে বিশেষ কথাবার্তা ও মন্তব্য রয়েছে ।
(দেখুন – ارشاد الفحول)
তিনি আরো বলেন , এর একজন রাবী অত্যন্ত দুর্বল এবং ইবনে মুঈনের মতে মিথ্যাবাদী। ইমাম বুখারীর নিকট সবোর্তভাবে পরিত্যাজ্য । ইমাম বুখারী এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন : انه منكر الحديث অর্থাৎ নিশ্চয়ই তিনি হাদীস শাস্ত্রে অপরিচিত ব্যক্তি।
ইমাম আবু হাতেম (রহ: ) এ হাদিসের একজন বর্ণনাকারী সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন : ضعيف جدا অর্থাৎ সে খুবই দুর্বল । বিখ্যাত হদিস বিশারদ ইয়াইয়া ইবনে মুঈন এ হাদীসের বর্ণনা কারী সম্পকে বলেছেন: لا يساوى فلسا অর্থাৎ এ হাদীসটির বর্ণনা কারীর মূল্য এক পয়সারও সমান হতে পারে না ।
হাফেজ ইবনে কাইয়্যুম :
علام الموقعين নামক গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডে القول فى التقليد অধ্যায়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন যে, এ রেওয়ায়তটি মোটেই শূদ্ধ নহে ।
এ ছাড়াও মাওলানার প্রতিপক্ষরা সাহাবায়ে কিরামদের ফযিলত সম্পর্কিত কোরআন শরীফের বিভিন্ন আয়াত ও হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন।এ গুলো সম্পর্কে ইমাম গাযযালীর জওয়াব একটু আগেই বর্ণনা করেছি।পাঠক ভাইদেরকে তাদের দৃষ্টি একটু পছনে নিয়ে ঐ জওয়াবটি দেখে নেয়ার অনুরোধ জানাই ।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ এ দীর্ঘ আলোচনা থেকে আশাকরি বুঝতে পেরেছেন যে, আল্লাহর রাসুল ছাড়া কেউই সত্যের মাপকাঠি নয় । কারো ব্যক্তিগত কথা কিংবা অভিমত অবশ্য পালনীয় নয়। সুতরাং মাওলানা মওদূদী(রহ: ) এর কথা “আল্লাহর রাসুল ছাড়া কাউকে সত্যর মাপকাঠি বানাবে না “ এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদার বিরোধী কোন কথা নয়, এবং একথা বলার কারণে মাওলানা মাওদুদী (রহ: ) আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত থেকে বেরও হননি।বরং মাওলানার কথাই যর্থাথ কথা । যারা সাহাবায়ে কিরামদেরকে সত্যের মাপকাঠি বলে দাবী করেন তারা প্রকৃত পক্ষে অনুসরণের ক্ষেত্রে সাহাবা (রা: ) কে রাসুল (স: ) এর সম মর্যাদায় নিয়ে যান ।
উপমহাদেশের উজ্জল নক্ষত্র আল্লামা জাফর আহমদ উসমানীর ফতোয়া:
কালিমায়ে ইসলামের দ্বিতীয় অংশ محمد رسول الله এর অর্থ এই যে, এখন একমাত্র আল্লাহর রাসুল ছাড়া অন্য কেউ সত্যের মাপকাঠি নয় । এ জন্য উক্ত ধারণা প্রত্যেক মসুলমান মাত্রের আকিদা হওয়া উচিত। ইমাম মালিক (রহ: ) রাসুলে করীস (স: ) এর কবরের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন , এই কবরে যে মহান ব্যক্তি শায়িত আছেন, তিনি ছাড়া অন্য সবার কথা যাচাই বাছাই করে দেখতে হবে।একথা পরিষ্কার যে, ইমাম মালিকের এ কথার অর্থ নবী ছাড়া অন্য সবাই ।এ থেকে অহেতুক নবী ওলিদের অবমাননা বের করা যুলুম । (দেখুন,৮০ জন উলামার দৃষ্টিতে জামায়াতে ইসলামী )
তাফসীরে মাজেদীর লেখক মাওলানা আব্দুল মাজিদ দরিয়াবাদীর অভিমত :
আপনি মৌলিক আকিদা সম্পর্কীয় যে উদ্ধতিটি পাঠিয়েছেন , তা সম্পূর্ণ সঠিক।এবং প্রত্যেক মসুলমানের এই আকিদা হওয়া উচিত। আল্লাহর রাসুলকে সত্যের মাপকাঠি স্বীকার করার ভিতর দিয়ে অন্যান্য নবীদের স্বীকৃতিও এসে গেছে। প্রশ্নকারীর সম্ভবত: তানকীদ(যাচাই) এবং তাওহীন(অসম্মান) এর মধ্যে ব্যবধান জানা নেই।মুহাদ্দিসীনরা হাদীস বর্ণনাকারীরদের কি কঠোর ভাবে যাচাই বাছাই করেছেন , এত কি তারা সাহাবায়ে কিরামদের অসম্মান কারী হয়ে গেলেন ?
অনুরূপভাবে প্রশ্নকারীর সম্ভবত : অনুসরণ ও অন্ধ অনুকরণের পার্থক্য জানা নেই । অনুসরণ তো উস্তাদ, পিতা –মাত এবং বুজুর্গ ব্যক্তিদের করা হয়ে থাকে আর অন্ধ অনুকরণ একমাত্র নিষ্পাপ রাসুল ছাড়া অন্য কারো হয় না ।
“আল্লাহর রাসুল (স: ) ছাড়া অন্য কোন মানুষকে সত্যের মাপকাঠি বানাবেনা ।কাউকে যাচাই বাছাইয়ের উর্ধে মনে করবেনা । কারো অন্ধ গোলামীতে নিমজ্জিত হবে না, বরং আল্লাহর দেয়া এ পূর্ণ মাপ কাঠির মাধ্যমে যাচাই ও পরখ করবে ‘এবং এ মাপকাঠির দৃষ্টিতে যার যে মর্যাদা হতে পারে, তাকে সে মর্যাদাই দেবে’।”
মাওলানার এ আলাচনা থেকে দুটি কথা স্পষ্টত: জানতে পারা যায়:
১।আল্লাহর রাসুল (স: ) ছাড়া কেউ সত্যের মাপকাঠি নয় ।
২।আল্লাহর রাসুল (সা: ) ছাড়া কেউ যাচাই বাছাইয়ের উর্ধে নয় ।
মাওলানার উল্লিখিত কথাগুলোর উপর কোন কোন মহল অভিযোগ করে বলেছেন যে, যদি এ কথাগুলো মেনে নেওয়া যায় তা হলে সাহাবায়ে কিরাম (রা: ) সত্যের মাপকাঠি হচ্ছেন না এবং তাদের উপর তানকী’দ বা যাচাই বাছাই বৈধ হয়ে যায় । অথচ কো’রআন ও হাদীসে তাদের অনেক মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে । আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে বলেছেন رضى الله عنهم و رضوا عنه অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি সন্ত্তষ্ট হয়েছেন এবং তারাও সন্ত্তষ্ট হয়েছেন আল্লাহর প্রতি ।
আর রাসুলে করীম (স: ) বলছেন اصحابي كالنجوم باىهم اقتدىتم اهتدىتم
অর্থাৎ আমার সাহাবীগণ তারকা সদৃশ, তোমরা তাদের মধ্য থেকে যার অনুসরণ করবে হেদায়েত পাবে ।অতএব যারা এ আকীদা পোষণ করবে যে সাহাবায়ে কিরাম (রা: )সত্যের মাপকাঠি নন এবং যাচাই বাছাইয়েরও উর্ধে নন, তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বহির্ভূত।
সন্মানিত পাঠকবৃন্দ।আসুন, আমরা কোরআন ও হাদীসের আলোকে আলোচনা করে দেখি সত্যিই কি মাওলানা মওদুদী (রাহ ) এ কথাগুলো বলার কারণে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত থেকে বহির্ভূত হওয়ার যোগ্য, না নিছক ,একটা অপবাদ মাত্র ।
কোরআন শরীফের আলোকে মিয়ারে হক :
আল্লাহ তায়ালা কোরআন শরীফে এরশাদ করেছেন :
ذالك خير واحسن تاويلا – فان تنازعتم فى شئ فردوه الى الله والرسول ان كنتم تؤمنون بالله واليوم الاخر
“যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মত বিরোধ হয় তাহলে উহা আল্লাহ ও তার রসুলের দিকে ফিরিয়ে দাও । যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখ । উহাই উত্তম এবং পরকালের দিক দিযেও মঙ্গলজনক”।(সূরা নিসা , আয়াত নং-৫৯)
এ আয়াতে একটি কথা লক্ষণীয় যে, আল্লাহ তায়ালা “তোমরা” বলে যে সম্মোধন করেছেন এর মধ্যে সাহাবায়ে কিরাম (রা: ) ও রয়েছেন । সুতরাং স্পষ্টত: বুঝা গেল সাহাবায়ে কিরাম (রা: )সহ কিয়ামত পর্যন্ত আগত মুমিনদের একে অন্যের সাথে মত বিরোধ হতে পারে । একজন সাহাবীর সাথে যেমন অন্য একজন সাহাবীর মত বিরোধ হতে পারে ,তেমনি একজন সাহাবীর সাথে এমন ব্যক্তি যিনি সাহাবী নন তারও মত বিরোধ হতে পারে । কিন্ত এমতাবস্থায় ফয়সালাকারী হবে আল্লাহর কিতাব ও সুন্নতে রাসুল (স: )।
অতএব বুঝা গেল মিয়ারে হক বা সত্যের মাপকাঠি আল্লাহর কিতাব ও সুন্নতে রাসুল (স: )। যদি সাহাবায়ে কিরাম (রা: )সত্যের মাপকাঠি হতেন তাহলে গায়রে সাহাবী (যিনি সাহাবী নন) তো দুরের কথা একজন সাহাবীর অন্য সাহাবীর সাথে মতবিরোধের কোন অধিকার থাকত না, কিংবা মত বিরোধের সময় প্রত্যেক সাহাবী নিজ নিজ মতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার হুকুম হত, এবং গায়ের সাহাবীকে বিনা দ্বিধায় সাহাবীর মতকে গ্রহণ করার উপর বাধ্য করা হত।
অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন মতবিরোধের সময় কেউ কারো মত গ্রহণ না করে বরং আল্লাহর কিতাব ও সুন্নতে রাসুল (স: ) যে ফয়সালা দেয় উভয় পক্ষ তা মেনে নিতে হবে । সুতরাং সত্যের মাপকাঠি একমাত্র আল্লাহর কিতাব কোরআনে করীম এবং সুন্নতে রাসুল (স: )।সাহাবায়ে কিরাম বা অন্য কেউ নন । কারণ মিয়ারে হক বলতে এ জিনিষকেই বুঝায় যার অনুসরণ ও অনুকরণ উহার সত্য হওয়ার প্রমান এবং যার বিরোধিতা উহার বাতিল হওয়ার পরিচয় বহন করে । আর এটা ঐ জিনিসই হতে পারে যা নিশ্চিত সত্য এবং বাতিল হওয়ার এতে কোনরূপ আশাংকা নেই।এবং এটা প্রকাশ্য যে, নিশ্চিত সত্য মাত্র দুটি জিনিষ, আল্লাহ তায়ালার কিতাব কোরআনে কারীম এবং রাসুলে করীম (স: ) এর সুন্নত । সুতরাং মিযারে হক শুধুমাত্র এ দুটোকেই মানতে হবে । অন্য কাউকে নয় ।
মাওলানা মওদুদী (রহ: )কে মিয়ারে হক সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি ঠিক একথাটাই বলেছেন:-
“মিয়ারে হক বলতে আমরা সেই বস্তুকেই বুঝি , যার অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যে হক বা সত্য নিহিত আছে এবং যার অবাধ্যতার মধ্যে বাতিল বা অসত্য নিহিত আছে।এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখো যায় যে, আল্লাহর কিতাব ও রাসুলে করীম (স: ) এর সুন্নতই হচ্ছে একমাত্র সত্যের মাপকাঠি।সাহাবীগণ মাপকাঠি নন , বরং তারা হচ্ছেন আল্লাহর কিতাব ও রসুলের সুন্নতের মাপকাঠি অনুসারে সত্যের পূর্ণ অনুসারী।কোরআন ও হাদীসের মাপকাঠিতে পরখ করে আমরা এরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হযেছি যে, সাহাবাদের জামায়াত একটি সত্যপন্থি জামায়াত । তাদের ইজমা অর্থাৎ সর্ব সম্মত সিদ্ধান্তকে আমরা শরীয়তের প্রামান্য দলীল রূপে এজন্যে মেনে থাকি যে, কোরআন ও হাদীসের সাথে সামান্যতম বিরোধমুলক বিষয়েও সকল সাহাবাদের একমত হযে যাওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব। দেখুন-(তরজমানুল কোরআন, জিলদ ৫৬, সংখ্যা ৫)
হাদীসের আলোকে মিয়ারে হক :
عن ملك بن انس رض قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تركت فيكم امرين لن تفعلوا ماتمسكتم بهما كتاب الله وسنة رسوله
“হযরত মালিক বিন আনাস (রা: ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলে করীম (স: ) বলেছেন, “আমি তোমাদের মাঝে দুটো জিনিস রেখে গেলাম । যতক্ষন তোমরা এ দুটো জিনিসকে শক্ত ভাবে ধারণ করবে ততক্ষণ তোমরা কখনও পথভষ্ট হবে না । এ দুটো জিনিস হচ্ছে আল্লfহর কিতাব তথা কোরআন শরীফ এবং তার রাসুলের সুন্নত”।
উক্ত হাদীস দ্বারা স্পষ্টত: বুঝা যাচ্ছে যে সত্য, ন্যায় ও সঠিক পথে থাকতে হলে মানুষকে কেবল মাত্র এ দুটোই শক্ত ভাবে ধারণ করতে হবে। এ দুটির অনুসরণের মধ্যেই সত্য নির্হিত এবং বিরোধিতার মধ্যে বাতিল নিহিত । সুতারং মিয়ারে হক শুধুমাত্র আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাতে রাসুল (স: )। সাহাবায়ে কিরাম (রা: ) ও যদি মিয়ারে হক হতেন, তাহলে উক্ত হাদীসে রাসুল (স: ) কিতাব ও সুন্নাহ উল্লেখ করার পর পরই তাদের কথা উল্লেখ করতেন ।
তা ছাড়া সাহাবায়ে কিরাম (রা: ) যদি মিয়ারে হক হতেন তাহলে তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত কথা বা অভিমত শরিয়তের মধ্যে দলীল হিসেবে গণ্য হত।অথচ তাদের ব্যক্তিগত অভিমত শরিয়তে দলীল হিসেবে গণ্য হয়না । এ ব্যাপারে আইম্মায়ে মুজতাহিদীন এবং নির্ভর যোগ্য উলামায়ে কিরামদের অভিমত নিন্মরূপ:
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ ইমাম সারাখসীর অভিমত :
وانما كان الاجماع حجة باعتبار ظهور وجه الصواب فيه بالاجماع عليه وانما يظهر هذا فى قول الجماعة لافى قول الواحد الاترى ان قول الواحد لايكون موجبا للعلم وان لم يكن بمعا بلته جماعة يخالفونه
(كتاب الاصول)
“সাহাবাদের ইজমা (ঐক্যমত) এজন্যই দলীল হিসাবে গৃহীত হয়ে থাকে যে, সবাই একটি ব্যাপারে একমত হওয়াতে এর সত্যতা নির্ভূলভাবে প্রতীয়মান হয় , কিন্ত একজনের কথায় তা হয় না । তুমি কি দেখোনা , একজনের কথায় সঠিক জ্ঞান অর্জিত হয় না, যদিও এর কেউ বিরোধীতা না করে । (দেখুন-কিতাবুল উসুল ১ম খন্ড, সাহবাদের ইজমা সম্পর্কীয় আলোচনা। )
ইমাম সারাখসী আরও বলেন :
“অভিমত হিসেবে কোন সাহাবার কাছ থেকে কোন ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে এবং এটা এমন স্পষ্ট কথা যা অস্বীকার করা যায় না । আর অভিমত অনেক সময় ভূল হয়ে থাকে । অতএব সাহাবীদের একজনের ব্যক্তিগত মত ভূল কিংবা নির্ভূল হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এ ধরণের অভিমত বিরোধী মতও ত্যাগ করা যাবে না , যেমনিভাবে কোন তাবেয়ীর কথায় কিয়াসকে ত্যাগ করা যায় না । দেখুন: কিতাবুল উসুল ২য় খন্ড পৃষ্টা নং-১০৫
দার্শনিক ইমাম গাযযালীর অভিমত :
ইমাম গাযযালী المستصفى গ্রন্থের ১৩৫ পৃষ্টায় কাওলে সাহাবী সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন : অনেকের কাছে সাহাবীর মাযহাব স্বাভাবিকভাবে দলীলের সূত্র । আর অনেকের মতে কিয়াস বহির্ভূত মাসআলায় তা দলীল হিসাবে গণ্য এবং অনেকের কাছে আবু বকর (রা: ) ও উমর (রা: ) এর কথা দলীল হিসেবে গৃহীত । অত:পর তিনি বলেন :
আমাদের কাছে এসব কথা বাতিল বলে গণ্য।যে ব্যক্তির ভূল হবার সম্ভাবনা আছে এবং যার নিস্পাপ ও নির্ভূল হবার কোন প্রামান্য দলীল নেই । তার দলীল রূপে গৃহীত হতে পারেনা।কাজেই সাহাবীদের ব্যক্তিগত কথা কিভাবে দলীল হতে পারে ? অথচ তাদের ভূলের সম্ভাবনা আছে । আর দলীলে মুতাওয়াতির বা আসামানী দলীল ছাড়া কিভাবে তাদের নিস্পাপ হওয়ার দাবি করা যেতে পারে ? তাদের মধ্যে মত পার্থক্য বিদ্যমান থাকা সত্তেও কিরূপে তাদের দলকে নিস্পাপ বলে ধারণা করা যায়? আর দুজন মাসুম বা নিস্পাপ ব্যক্তিদের মধ্যে মতপার্থক্য সম্ভব হয় কেমন করে ? তা ছাড়া সাহাবারা নিজেরাই তো তাদের মধ্যে মত পার্থক্য বৈধ হবার ব্যাপারে একমত।আবু বকর ও উমর (রা: ) পর্যন্ত তাদের বিরোধীমতের ইজতেহাদকারীদের অস্বীকার করেননি , বরং মুজতাহিদ যেন ইজতেহাদী মাসআলায় তার ইজতেহাদের অনুসরণ করে এটা অবশ্য পালনীয় করে দিয়েছেন । সুতরাং সাহাবাদের নিস্পাপ হওয়ার দলীল না থাকা , তাদের পরস্পরের বিরোধীতা করা বৈধ এবং তাদের নিজেদেরই একথা বলে দেয়া যে, তাদের বিরোধিতা করা বৈধ– এ তিনটি কথাই আমাদের আকাট্য দলীল।
এরপর ইমাম গাযযালী (রহ: ) ইমাম শাফিযীর দুটি কথার উদ্ধৃতি দিয়েছেন।প্রথমটি হলো যদি কোন সাহাবীর কথা প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং কারো বিরুদ্ধে কোন মত পাওয়া না যায় , তাহলে এর অনুসরণ করা জায়েয , ওয়াজিব নয় । পরবর্তীতে তিনি নূতন মত ব্যক্ত করে বলেন :- لا ىقلد العالم صحابىا كما لا ىقلد عالما اخر
অর্থাৎ কোন আলেম যেমন অন্য আলেমের তাকলীদ বা অনুসরণ করেন না ঠিক তেমনি কোন সাহাবীরও যেন তাকলীদ না করেন ।
ইমাম গাযযালী (রাহ: ) আরও বলেন :-
وهو الصحيح المختار عندنا ادكل ماول على تحريم تقليد العالم للعالم لايفرق فيه بين الصحابى وغيره
এইটিই আমাদের কাছে সহীহ ও গ্রহণ যোগ্য কথা । কারণ যে সমস্ত দলীলের ভিত্তিতে এক আলেমের জন্য অন্য আলেমের তাকলীদ হারাম প্রমানিত হলো, সেগুলোর ব্যাপারে একজন সাহাবীও একজন গায়রে সাহাবীর মধ্যে কোনরূপ পার্থক্য সৃষ্টি করা যাবেনা।
যারা সাহাবীদের ফযীলত সম্পর্কীয় আয়াত ও হাদীস দ্বারা তাদের অনুসরণ করা জাযেয় ও কর্তব্য বলে দলীল পেশ করেন , সে সব দলীলের জবাবে ইমাম গাযাযলী (রাহ: )বলেন:-
قلنا هذا كله ثناء يوجب حسن الاعتقاد فى عملهم ودنيهم ومحلهم عند الله تعالى ولايوجب تقليدهم لاجوازا ولاوجوبا
আমরা সাহাবীদের ফযীলত সম্পর্কিত আয়াত ও হাদীস সমূহকে তাদের প্রশংসা জ্ঞাপক দলীল হিসেবে মনে করি। সেগুলো দ্বারা তাদের আমল, দ্বীনদারী এবং আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা সম্পর্কে সুধারনা পোষন করা কর্তব্য বলে প্রমাণিত হয ।কিন্ত এসবের মাধ্যমে তাদের অন্ধ অনুসরণ করা জায়েয ও কর্তব্য বলে প্রমানিত হয় না । জবাবের শেষাংশে তিনি বলেন :- كل ذالك ثناء لايوجب الاقتداء اصلا
এসব প্রশংসা ও মর্যাদা জ্ঞাপক দলীল এর দ্বারা অনুসরণ করা কর্তব্য এটা প্রমাণিত হয় না।
ইমাম শাফিয়ীর অভিমত :
وقال الشافعى فى قوله الجديد لايقلد احدمنهم اى لايكون قوله دليلا وان كان لايدرك بالقياس
ইমাম শাফিয়ীর সর্বশেষ মতামত এই যে, সাহাবীদের কারও অনুসরণ করা যাবেনা , অর্থাৎ তাদের ব্যক্তিগত কথা শরীয়তের মধ্যে কোন দলীল নয় । ঐ সমস্ত মাসআলায়ও যে গুলোতে কিয়াসের কোন দখল নেই ।
দেখুন –(مقدمت فتح الملهم)
ইমাম শওকানীর অভিমত:
ইমাম শওকানী ارشاد الفحول গ্রন্থের الاستدلال নামক সপ্তম অধ্যায়ের পঞ্চম অনুচ্ছেদে কাওলে সাহাবী সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন :
সত্য কথা হলো সাহাবীর ব্যক্তিগত কথা শরীয়তের কোন দলীল নয় । কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতের প্রতি মুহাম্মদ (স: ) ছাড়া অন্য কাউকে প্রেরণ করেননি।তিনি আমাদের একমাত্র রাসুল (স: ) আর কিতাব ও আমাদের জন্য মাত্র একটি।সমস্ত উম্মতকে আল্লহর কিতাব ও তার নবীর সুন্নত অনুসরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপার সাহাবী ও গায়রে সাহাবীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।প্রত্যেকই শরীয়তী বিধানের আওতাধীন এবং কিতাব ও সুন্নত অনুসরণে সমান ভাবে আদিষ্ট । যারা বলেন যে, আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের সুন্নত ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে দলীল কায়েম হতে পারে, তারা দ্বীনের ব্যাপারে একটি প্রমানহীন কথা বলেন ।
শাহ ওলিউল্লাহর অভিমত :
শাহ ওলিউল্লাহ (রহ: ) তার রচিত হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ গ্রন্থের প্রথম খন্ডের শেষাংশে التنبىه على مسائل শিরোনামের একটি পরিচ্ছেদে বলেন :
قد صحّ اجماع الصحابة كلهم اولهم عن اخرهم واجماع التابعين اولهم عن اخرهم واجماع تابعى التابعين اولهم عن اخرهم على الامتناع والمنع من ان يقصد منهم احد الى قول انسان منهم اوممن قبلهم فياخذه كله
সাহাবী , তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীনদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকলের ঐক্যমতে প্রমানিত যে, তাদের কোন একজনের পক্ষে ও তাদের মধ্য থেকে কিংবা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তির কথা দ্বিধাহীন ভাবে ও অকুন্ঠ চিত্তে গ্রহণ করা বৈধ নয়।অত:পর তিনি বিভিন্ন ইমামগণের অভিমত পেশ করেণ :
ইমাম মালেকের অভিমত :
مامن احد الا وهو ماخوذ من كلامه ومردود عليه الا رسول الله
একমাত্র রাসুল (স: ) ছাড় এমন কোন লোক নেই , যার কথা কিছু গ্রহণ যোগ্য ও কিছু বর্জন যোগ্য হবে না ।
ইমাম শাফিয়ীর অভিমত :
لا حجة فى قول احد دون رسول الله صلى الله عليه وسلم وان كثروا
“রাসুল ছাড়া অন্য কারো কথা দলীল হতে পারে না । যদি ও তারা সংখ্যায় বেশী হন ।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের অভিমত :
ليس لا حد مع الله ورسوله كلام
“কারো কথা আল্লাহ ও তার রাসুলের কথার সমান হতে পারে না ।
মওলানা মওদূদী (রহ: )এ প্রতিপক্ষের দলীলের অসরতা :
যারা সাহাবায়ে কিরাম (রা: ) কে মিয়ারে হক বলে দাবী করেন , তারা নিন্মের হাদীসটি দলীল হিসেবে পেশ করেন : قال رسول الله صلى الله علىه و سلم اصحابي كالنجوم باىهم اقتدىتم اهتدىتم
“রাসুল (স: )বলেছেন আমার সাহাবীগণ তারকা সদৃশ, তোমরা তাদের মধ্য থেকে যাকেই অনুসরণ করবে হেদয়াত পাবে ।
এ হাদীসটি আসলে একটি জয়ীফ বা দুর্বল হাদীস । আর জয়ীফ হাদীস কখন ও দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যায় না । এটা সর্বসম্মত কথা ।
হাদীসটি সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনে কিরামের অভিমত নিন্মরূপ:
বিখ্যাত মুহাদ্দিস হাফেয ইবনে আব্দুল বার তার লিখিত
“جامع بيان العلم” নামক কিতাবে এ হাদীসটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন :
هذا اسناد لاتقوم به حجة
অর্থাৎ এ হাদিসটির সনদ এমন যার উপর ভিত্তি করে কোন বিষয়ের দলীল হিসেবে এটাকে পেশ করা যায় না ।
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে হাযম বলেন :
هذه رواية ساقطة خبر مكذوب موضوع باطل لم يصح قط
এটি হচ্ছে একটি পরিত্যাক্ত বর্ণনা একটি মিথ্যে মন গড়া জালিয়াতি পূর্ণ এবং অসারতা পূর্ণ বাতেল খবর । এর সত্যতা কোন কালেই প্রমানিত হয়নি ।
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী বলেন : এ হাদিসটির যাবতীয় সনদই দুর্বল। (দেখুন- تخريج كشاف)
ইমাম শওকানী বলেন :
فيه مقال معروف
অর্থাৎ এ হাদিসটির সনদ সম্পর্কে বিশেষ কথাবার্তা ও মন্তব্য রয়েছে ।
(দেখুন – ارشاد الفحول)
তিনি আরো বলেন , এর একজন রাবী অত্যন্ত দুর্বল এবং ইবনে মুঈনের মতে মিথ্যাবাদী। ইমাম বুখারীর নিকট সবোর্তভাবে পরিত্যাজ্য । ইমাম বুখারী এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন : انه منكر الحديث অর্থাৎ নিশ্চয়ই তিনি হাদীস শাস্ত্রে অপরিচিত ব্যক্তি।
ইমাম আবু হাতেম (রহ: ) এ হাদিসের একজন বর্ণনাকারী সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন : ضعيف جدا অর্থাৎ সে খুবই দুর্বল । বিখ্যাত হদিস বিশারদ ইয়াইয়া ইবনে মুঈন এ হাদীসের বর্ণনা কারী সম্পকে বলেছেন: لا يساوى فلسا অর্থাৎ এ হাদীসটির বর্ণনা কারীর মূল্য এক পয়সারও সমান হতে পারে না ।
হাফেজ ইবনে কাইয়্যুম :
علام الموقعين নামক গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডে القول فى التقليد অধ্যায়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন যে, এ রেওয়ায়তটি মোটেই শূদ্ধ নহে ।
এ ছাড়াও মাওলানার প্রতিপক্ষরা সাহাবায়ে কিরামদের ফযিলত সম্পর্কিত কোরআন শরীফের বিভিন্ন আয়াত ও হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন।এ গুলো সম্পর্কে ইমাম গাযযালীর জওয়াব একটু আগেই বর্ণনা করেছি।পাঠক ভাইদেরকে তাদের দৃষ্টি একটু পছনে নিয়ে ঐ জওয়াবটি দেখে নেয়ার অনুরোধ জানাই ।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ এ দীর্ঘ আলোচনা থেকে আশাকরি বুঝতে পেরেছেন যে, আল্লাহর রাসুল ছাড়া কেউই সত্যের মাপকাঠি নয় । কারো ব্যক্তিগত কথা কিংবা অভিমত অবশ্য পালনীয় নয়। সুতরাং মাওলানা মওদূদী(রহ: ) এর কথা “আল্লাহর রাসুল ছাড়া কাউকে সত্যর মাপকাঠি বানাবে না “ এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদার বিরোধী কোন কথা নয়, এবং একথা বলার কারণে মাওলানা মাওদুদী (রহ: ) আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত থেকে বেরও হননি।বরং মাওলানার কথাই যর্থাথ কথা । যারা সাহাবায়ে কিরামদেরকে সত্যের মাপকাঠি বলে দাবী করেন তারা প্রকৃত পক্ষে অনুসরণের ক্ষেত্রে সাহাবা (রা: ) কে রাসুল (স: ) এর সম মর্যাদায় নিয়ে যান ।
উপমহাদেশের উজ্জল নক্ষত্র আল্লামা জাফর আহমদ উসমানীর ফতোয়া:
কালিমায়ে ইসলামের দ্বিতীয় অংশ محمد رسول الله এর অর্থ এই যে, এখন একমাত্র আল্লাহর রাসুল ছাড়া অন্য কেউ সত্যের মাপকাঠি নয় । এ জন্য উক্ত ধারণা প্রত্যেক মসুলমান মাত্রের আকিদা হওয়া উচিত। ইমাম মালিক (রহ: ) রাসুলে করীস (স: ) এর কবরের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন , এই কবরে যে মহান ব্যক্তি শায়িত আছেন, তিনি ছাড়া অন্য সবার কথা যাচাই বাছাই করে দেখতে হবে।একথা পরিষ্কার যে, ইমাম মালিকের এ কথার অর্থ নবী ছাড়া অন্য সবাই ।এ থেকে অহেতুক নবী ওলিদের অবমাননা বের করা যুলুম । (দেখুন,৮০ জন উলামার দৃষ্টিতে জামায়াতে ইসলামী )
তাফসীরে মাজেদীর লেখক মাওলানা আব্দুল মাজিদ দরিয়াবাদীর অভিমত :
আপনি মৌলিক আকিদা সম্পর্কীয় যে উদ্ধতিটি পাঠিয়েছেন , তা সম্পূর্ণ সঠিক।এবং প্রত্যেক মসুলমানের এই আকিদা হওয়া উচিত। আল্লাহর রাসুলকে সত্যের মাপকাঠি স্বীকার করার ভিতর দিয়ে অন্যান্য নবীদের স্বীকৃতিও এসে গেছে। প্রশ্নকারীর সম্ভবত: তানকীদ(যাচাই) এবং তাওহীন(অসম্মান) এর মধ্যে ব্যবধান জানা নেই।মুহাদ্দিসীনরা হাদীস বর্ণনাকারীরদের কি কঠোর ভাবে যাচাই বাছাই করেছেন , এত কি তারা সাহাবায়ে কিরামদের অসম্মান কারী হয়ে গেলেন ?
অনুরূপভাবে প্রশ্নকারীর সম্ভবত : অনুসরণ ও অন্ধ অনুকরণের পার্থক্য জানা নেই । অনুসরণ তো উস্তাদ, পিতা –মাত এবং বুজুর্গ ব্যক্তিদের করা হয়ে থাকে আর অন্ধ অনুকরণ একমাত্র নিষ্পাপ রাসুল ছাড়া অন্য কারো হয় না ।
মুহাম্মদ (সা) হলেন মানুষের মাঝে পার্থক্যের মাপকাঠি:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى.
.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে।
(সহীহ বুখারী হাঃ৭২৮০; আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩)
.
ُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ يَقُولُ جَاءَتْ مَلاَئِكَةٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ نَائِمٌ فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ فَقَالُوا إِنَّ لِصَاحِبِكُمْ هَذَا مَثَلاً فَاضْرِبُوا لَهُ مَثَلاً فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ فَقَالُوا مَثَلُهُ كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى دَارًا وَجَعَلَ فِيهَا مَأْدُبَةً وَبَعَثَ دَاعِيًا فَمَنْ أَجَابَ الدَّاعِيَ دَخَلَ الدَّارَ وَأَكَلَ مِنْ الْمَأْدُبَةِ وَمَنْ لَمْ يُجِبْ الدَّاعِيَ لَمْ يَدْخُلْ الدَّارَ وَلَمْ يَأْكُلْ مِنْ الْمَأْدُبَةِ فَقَالُوا أَوِّلُوهَا لَهُ يَفْقَهْهَا فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ فَقَالُوا فَالدَّارُ الْجَنَّةُ وَالدَّاعِي مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم فَمَنْ أَطَاعَ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَى مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَقَدْ عَصَى اللهَ وَمُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم فَرْقٌ بَيْنَ النَّاسِ.
.
.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে।
(সহীহ বুখারী হাঃ৭২৮০; আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩)
.
ُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ يَقُولُ جَاءَتْ مَلاَئِكَةٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ نَائِمٌ فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ فَقَالُوا إِنَّ لِصَاحِبِكُمْ هَذَا مَثَلاً فَاضْرِبُوا لَهُ مَثَلاً فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ فَقَالُوا مَثَلُهُ كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى دَارًا وَجَعَلَ فِيهَا مَأْدُبَةً وَبَعَثَ دَاعِيًا فَمَنْ أَجَابَ الدَّاعِيَ دَخَلَ الدَّارَ وَأَكَلَ مِنْ الْمَأْدُبَةِ وَمَنْ لَمْ يُجِبْ الدَّاعِيَ لَمْ يَدْخُلْ الدَّارَ وَلَمْ يَأْكُلْ مِنْ الْمَأْدُبَةِ فَقَالُوا أَوِّلُوهَا لَهُ يَفْقَهْهَا فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ فَقَالُوا فَالدَّارُ الْجَنَّةُ وَالدَّاعِي مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم فَمَنْ أَطَاعَ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَى مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَقَدْ عَصَى اللهَ وَمُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم فَرْقٌ بَيْنَ النَّاسِ.
.
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদল ফেরেশ্তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন। তিনি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। একজন ফেরেশ্তা বললেন, তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ঘুমিয়ে আছেন। অন্য একজন বললেন, চক্ষু ঘুমিয়ে বটে, কিন্তু অন্তর জেগে আছে। তখন তারা বললেন, তোমাদের এ সাথীর একটি উদাহরণ আছে। সুতরাং তাঁর উদাহরণ তোমরা বর্ণনা কর। তখন তাদের কেউ বলল- তিনি তো ঘুমন্ত, আর কেউ বলল, চক্ষু ঘুমন্ত তবে অন্তর জাগ্রত। তখন তারা বলল, তাঁর উদাহরণ হল সেই লোকের মত, যে একটি বাড়ী তৈরি করল। তারপর সেখানে খানার আয়োজন করল এবং একজন আহবানকারীকে (লোকদের ডাকতে) পাঠাল। যারা আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিল, তারা ঘরে প্রবেশ করে খানা খাওয়ার সুযোগ পেল। আর যারা আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিল না, তারা ঘরেও প্রবেশ করতে পারল না এবং খানাও খেতে পারল না। তখন তারা বললেন, উদাহরণটির ব্যাখ্যা করুন, যাতে তিনি বুঝতে পারেন। তখন কেউ বলল, তিনি তো ঘুমন্ত, আর কেউ বলল, চক্ষু ঘুমন্ত, তবে অন্তর জাগ্রত। তখন তারা বললেন, ঘরটি হল জান্নাত, আহবানকারী হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করল, তারা আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবাধ্যতা করল, তারা আসলে আল্লাহরই অবাধ্যতা করল। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মানুষের মাঝে পার্থক্যের মাপকাঠি।
(সহীহ বুখারী হাঃ৭২৮১; আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৪)
(সহীহ বুখারী হাঃ৭২৮১; আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৪)
সাহাবাগণ সত্যের মাপকাঠি না কি শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা) সত্যের মাপকাঠি
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জীবদ্দশায় কোনো সাহাবী অন্য কোনো সাহাবীর বর্ণিত হাদীসের নির্ভুলতার বিষয়ে সন্দীহান হলে রাসূলুল্লাহ (সা) কে প্রশ্ন করে নির্ভুলতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতেন। কেননা, সাহাবাগণ নিজেকে বা অন্য সাহাবা কে সত্যের মাপকাঠি মনে করতেন না। বিভিন্ন হাদীসে এ বিষয়ক অনেক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলোঃ
.
১. জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রা) বিদায় হজ্জের বর্ণনার মধ্যে বলেন:
.
وَقَدِمَ عَلِيٌّ مِنَ الْيَمَنِ ... فَوَجَدَ فَاطِمَةَ مِمَّنْ حَلَّ وَلَبِسَتْ ثِيَابًا صَبِيغًا وَاكْتَحَلَتْ فَأَنْكَرَ ذَلِكَ عَلَيْهَا فَقَالَتْ إِنَّ أَبِي أَمَرَنِي بِهَذَا قَالَ فَكَانَ عَلِيٌّ يَقُولُ بِالْعِرَاقِ فَذَهَبْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ مُحَرِّشًا عَلَى فَاطِمَةَ لِلَّذِي صَنَعَتْ مُسْتَفْتِيًا لِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ فِيمَا ذَكَرَتْ عَنْهُ فَأَخْبَرْتُهُ أَنِّي أَنْكَرْتُ ذَلِكَ عَلَيْهَا فَقَالَ صَدَقَتْ صَدَقَتْ".
.
(বিদায় হজ্জের পূর্বে রাসূলুল্লাহ ﷺ আলী (রা) কে ইয়ামানের প্রশাসক রূপে প্রেরণ করেন। ফলে) আলী (রা) ইয়ামান থেকে মক্কায় হজ্জে আগমন করেন। তিনি মক্কায় এসে দেখেন যে, ফাতিমা (রা) উমরা পালন করে ‘হালাল’ হয়ে গিয়েছেন। তিনি রঙিন সুগন্ধময় কাপড় পরিধান করেছেন এবং সুরমা ব্যবহার করেছেন। আলী এতে আপত্তি করলে তিনি বলেন: আমার আববা আমাকে এভাবে করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আলী বলেন: আমি ফাতিমার বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে অভিযোগ করলাম, সে যে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নির্দেশের কথা বলেছে তাও বললাম এবং আমার আপত্তির কথাও বললাম। ... তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: ‘‘সে ঠিকই বলেছে, সে সত্যই বলেছে।’’[1]
.
এখানে আমরা দেখতে পাই যে, আলী (রা) ফাতেমার (রা) বর্ণনার যথার্থতার বিষয়ে সন্দীহান হন। তিনি তাঁর সত্যবাদীতায় সন্দেহ করেন নি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা) ছাড়া আর কাউকে সত্যের মাপকাঠি বলে গ্রহণ করেননি। এজন্য তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে প্রশ্ন করে নির্ভুলতা যাচাই করেন।
.
২. উবাই ইবনু কা’ব বলেন,
.
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَرَأَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ تَبَارَكَ وَهُوَ قَائِمٌ فَذَكَّرَنَا بِأَيَّامِ اللَّهِ وَأَبُو الدَّرْدَاءِ أَوْ أَبُو ذَرٍّ يَغْمِزُنِي، فَقَالَ: مَتَى أُنْزِلَتْ هَذِهِ السُّورَةُ؟ إِنِّي لَمْ أَسْمَعْهَا إِلا الآنَ. فَأَشَارَ إِلَيْهِ أَنِ اسْكُتْ. فَلَمَّا انْصَرَفُوا قَالَ: سَأَلْتُكَ مَتَى أُنْزِلَتْ هَذِهِ السُّورَةُ فَلَمْ تُخْبِرْنِي؟ فَقَالَ أُبَيٌّ: لَيْسَ لَكَ مِنْ صَلاتِكَ الْيَوْمَ إِلا مَا لَغَوْتَ. فَذَهَبَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ وَأَخْبَرَهُ بِالَّذِي قَالَ أُبَيٌّ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: "صَدَقَ أُبَيٌّ".
.
একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ জুমু‘আর দিনে খুতবায় দাঁড়িয়ে সূরা তাবারাকা (সূরা ২৫- আল-ফুরকান) পাঠ করেন এবং আমাদেরকে আল্লাহর নেয়ামত ও শান্তি সম্পর্কে ওয়ায করেন। এমতাবস্থায় আবু দারদা বা আবু যার আমার দেহে মৃদু চাপ দিয়ে বলেন: এ সূরা কবে নাযিল হলো, আমি তো এখনই প্রথম সূরাটি শুনছি। তখন উবাই তাঁকে ইশারায় চুপ করতে বলেন। সালাত শেষ হলে তিনি (আবু যার বা আবু দারদা) বলেন: আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, সূরাটি কখন নাযিল হয়েছে, অথচ আপনি আমাকে কিছুই বললেন না! তখন উবাই বলেন: আপনি আজ আপনার সালাতের কোনোই সাওয়াব লাভ করেন নি, শুধুমাত্র যে কথাটুকু বলেছেন সেটুকুই আপনার (কারণ খুতবার সময়ে কথা বললে সালাতের সাওয়াব নষ্ট হয়)। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে যেয়ে বিষয়টি বলেন: তিনি বলেন: ‘‘উবাই সত্য কথাই বলেছে।’’[2]
.
৩. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রা) বলেন:
.
حُدِّثْتُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ صَلاةُ الرَّجُلِ قَاعِدًا نِصْفُ الصَّلاةِ قَالَ فَأَتَيْتُهُ فَوَجَدْتُهُ يُصَلِّي جَالِسًا فَوَضَعْتُ يَدِي عَلَى رَأْسِهِ فَقَالَ مَا لَكَ يَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو قُلْتُ حُدِّثْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَّكَ قُلْتَ صَلاةُ الرَّجُلِ قَاعِدًا عَلَى نِصْفِ الصَّلاةِ وَأَنْتَ تُصَلِّي قَاعِدًا قَالَ أَجَلْ وَلَكِنِّي لَسْتُ كَأَحَدٍ مِنْكُمْ
.
‘‘আমাকে বলা হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: কোনো ব্যক্তি বসে সালাত আদায় করলে তা অর্ধেক সালাত হবে। তখন আমি তাঁর কাছে গমন করলাম। আমি দেখলাম যে, তিনি বসে সালাত আদায় করছেন। তখন আমি তাঁর মাথার উপর আমার হাত রাখলাম। তিনি বললেন: হে আব্দুল্লাহ ইবনু আমর, তোমার বিষয় কি? আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে বলা হয়েছে যে, আপনি বলেছেন, কোনো ব্যক্তি বসে সালাত আদায় করলে তা অর্ধ-সালাত হবে, আর আপনি বসে সালাত আদায় করছেন। তিনি বললেন: হ্যাঁ, (আমি তা বলেছি), তবে আমি তোমাদের মত নই।’’[3]
.
এভাবে অনেক ঘটনা আমরা হাদীসে দেখতে পাই যে, কারো বর্ণিত হাদীসের যথার্থতা বা নির্ভুলতার বিষয়ে সন্দেহ হলে সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সা)-কে প্রশ্ন করে যথার্থতা যাচাই করতেন। তাঁরা বর্ণনাকারীর সততার বিষয়ে প্রশ্ন না তুলেও রাসূলুল্লাহ (সা) কে ছাড়া অন্য কাউকে সত্যের মাপকাঠি মনে করতেন না। যদি সাহাবাগণ কে সত্যের মাপকাঠি মনে করতেন তাহলে রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে গিয়ে, জেনে নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার কোন মানেই হয় না।
--------------------------
[1] মুসলিম, আস-সহীহ ২/৮৮৬-৮৯২। [2] ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ১/৩৫২-৩৫৩; বুসীরী, আহমাদ ইবনু আবী বাকর (৮৪০হি), যাওয়াইদ ইবনি মাজাহ, পৃ: ১৭৩; আলবানী, সহীহু সুনানি ইবনি মাজাহ ১/৩২৯। [3] মুসলিম, আস-সহীহ ১/৫০৭।
.
১. জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রা) বিদায় হজ্জের বর্ণনার মধ্যে বলেন:
.
وَقَدِمَ عَلِيٌّ مِنَ الْيَمَنِ ... فَوَجَدَ فَاطِمَةَ مِمَّنْ حَلَّ وَلَبِسَتْ ثِيَابًا صَبِيغًا وَاكْتَحَلَتْ فَأَنْكَرَ ذَلِكَ عَلَيْهَا فَقَالَتْ إِنَّ أَبِي أَمَرَنِي بِهَذَا قَالَ فَكَانَ عَلِيٌّ يَقُولُ بِالْعِرَاقِ فَذَهَبْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ مُحَرِّشًا عَلَى فَاطِمَةَ لِلَّذِي صَنَعَتْ مُسْتَفْتِيًا لِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ فِيمَا ذَكَرَتْ عَنْهُ فَأَخْبَرْتُهُ أَنِّي أَنْكَرْتُ ذَلِكَ عَلَيْهَا فَقَالَ صَدَقَتْ صَدَقَتْ".
.
(বিদায় হজ্জের পূর্বে রাসূলুল্লাহ ﷺ আলী (রা) কে ইয়ামানের প্রশাসক রূপে প্রেরণ করেন। ফলে) আলী (রা) ইয়ামান থেকে মক্কায় হজ্জে আগমন করেন। তিনি মক্কায় এসে দেখেন যে, ফাতিমা (রা) উমরা পালন করে ‘হালাল’ হয়ে গিয়েছেন। তিনি রঙিন সুগন্ধময় কাপড় পরিধান করেছেন এবং সুরমা ব্যবহার করেছেন। আলী এতে আপত্তি করলে তিনি বলেন: আমার আববা আমাকে এভাবে করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আলী বলেন: আমি ফাতিমার বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে অভিযোগ করলাম, সে যে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নির্দেশের কথা বলেছে তাও বললাম এবং আমার আপত্তির কথাও বললাম। ... তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: ‘‘সে ঠিকই বলেছে, সে সত্যই বলেছে।’’[1]
.
এখানে আমরা দেখতে পাই যে, আলী (রা) ফাতেমার (রা) বর্ণনার যথার্থতার বিষয়ে সন্দীহান হন। তিনি তাঁর সত্যবাদীতায় সন্দেহ করেন নি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা) ছাড়া আর কাউকে সত্যের মাপকাঠি বলে গ্রহণ করেননি। এজন্য তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে প্রশ্ন করে নির্ভুলতা যাচাই করেন।
.
২. উবাই ইবনু কা’ব বলেন,
.
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَرَأَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ تَبَارَكَ وَهُوَ قَائِمٌ فَذَكَّرَنَا بِأَيَّامِ اللَّهِ وَأَبُو الدَّرْدَاءِ أَوْ أَبُو ذَرٍّ يَغْمِزُنِي، فَقَالَ: مَتَى أُنْزِلَتْ هَذِهِ السُّورَةُ؟ إِنِّي لَمْ أَسْمَعْهَا إِلا الآنَ. فَأَشَارَ إِلَيْهِ أَنِ اسْكُتْ. فَلَمَّا انْصَرَفُوا قَالَ: سَأَلْتُكَ مَتَى أُنْزِلَتْ هَذِهِ السُّورَةُ فَلَمْ تُخْبِرْنِي؟ فَقَالَ أُبَيٌّ: لَيْسَ لَكَ مِنْ صَلاتِكَ الْيَوْمَ إِلا مَا لَغَوْتَ. فَذَهَبَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ وَأَخْبَرَهُ بِالَّذِي قَالَ أُبَيٌّ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: "صَدَقَ أُبَيٌّ".
.
একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ জুমু‘আর দিনে খুতবায় দাঁড়িয়ে সূরা তাবারাকা (সূরা ২৫- আল-ফুরকান) পাঠ করেন এবং আমাদেরকে আল্লাহর নেয়ামত ও শান্তি সম্পর্কে ওয়ায করেন। এমতাবস্থায় আবু দারদা বা আবু যার আমার দেহে মৃদু চাপ দিয়ে বলেন: এ সূরা কবে নাযিল হলো, আমি তো এখনই প্রথম সূরাটি শুনছি। তখন উবাই তাঁকে ইশারায় চুপ করতে বলেন। সালাত শেষ হলে তিনি (আবু যার বা আবু দারদা) বলেন: আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, সূরাটি কখন নাযিল হয়েছে, অথচ আপনি আমাকে কিছুই বললেন না! তখন উবাই বলেন: আপনি আজ আপনার সালাতের কোনোই সাওয়াব লাভ করেন নি, শুধুমাত্র যে কথাটুকু বলেছেন সেটুকুই আপনার (কারণ খুতবার সময়ে কথা বললে সালাতের সাওয়াব নষ্ট হয়)। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে যেয়ে বিষয়টি বলেন: তিনি বলেন: ‘‘উবাই সত্য কথাই বলেছে।’’[2]
.
৩. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রা) বলেন:
.
حُدِّثْتُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ صَلاةُ الرَّجُلِ قَاعِدًا نِصْفُ الصَّلاةِ قَالَ فَأَتَيْتُهُ فَوَجَدْتُهُ يُصَلِّي جَالِسًا فَوَضَعْتُ يَدِي عَلَى رَأْسِهِ فَقَالَ مَا لَكَ يَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو قُلْتُ حُدِّثْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَّكَ قُلْتَ صَلاةُ الرَّجُلِ قَاعِدًا عَلَى نِصْفِ الصَّلاةِ وَأَنْتَ تُصَلِّي قَاعِدًا قَالَ أَجَلْ وَلَكِنِّي لَسْتُ كَأَحَدٍ مِنْكُمْ
.
‘‘আমাকে বলা হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: কোনো ব্যক্তি বসে সালাত আদায় করলে তা অর্ধেক সালাত হবে। তখন আমি তাঁর কাছে গমন করলাম। আমি দেখলাম যে, তিনি বসে সালাত আদায় করছেন। তখন আমি তাঁর মাথার উপর আমার হাত রাখলাম। তিনি বললেন: হে আব্দুল্লাহ ইবনু আমর, তোমার বিষয় কি? আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে বলা হয়েছে যে, আপনি বলেছেন, কোনো ব্যক্তি বসে সালাত আদায় করলে তা অর্ধ-সালাত হবে, আর আপনি বসে সালাত আদায় করছেন। তিনি বললেন: হ্যাঁ, (আমি তা বলেছি), তবে আমি তোমাদের মত নই।’’[3]
.
এভাবে অনেক ঘটনা আমরা হাদীসে দেখতে পাই যে, কারো বর্ণিত হাদীসের যথার্থতা বা নির্ভুলতার বিষয়ে সন্দেহ হলে সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সা)-কে প্রশ্ন করে যথার্থতা যাচাই করতেন। তাঁরা বর্ণনাকারীর সততার বিষয়ে প্রশ্ন না তুলেও রাসূলুল্লাহ (সা) কে ছাড়া অন্য কাউকে সত্যের মাপকাঠি মনে করতেন না। যদি সাহাবাগণ কে সত্যের মাপকাঠি মনে করতেন তাহলে রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে গিয়ে, জেনে নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার কোন মানেই হয় না।
--------------------------
[1] মুসলিম, আস-সহীহ ২/৮৮৬-৮৯২। [2] ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ১/৩৫২-৩৫৩; বুসীরী, আহমাদ ইবনু আবী বাকর (৮৪০হি), যাওয়াইদ ইবনি মাজাহ, পৃ: ১৭৩; আলবানী, সহীহু সুনানি ইবনি মাজাহ ১/৩২৯। [3] মুসলিম, আস-সহীহ ১/৫০৭।
সাহাবাগণ সত্যবাদী, সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত এবং জান্নাতি তবে সত্যের মাপকাঠি নন। সত্যের মাপকাঠি একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা) :
সাহাবাগণ সত্যবাদী এবং সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং জান্নাতি কিন্তু তাঁরাই সত্যের মাপকাঠি নয়। কারণ, তাঁরা সত্যবাদী ও সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত এবং জান্নাতি এই জন্য যে, তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সা) উপরে ঈমান এনে তাঁর আনুগত্য করেছেন। আর আবূ জেহেল, আবূ লাহাব, উতবা, শায়বা, আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এরা কেউ সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত নয় বরং বাতিল পন্থী এবং জাহান্নামি কারণ তারা রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপরে ঈমান আনেনি, আনুগত্য করে নি।
.
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى.
.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে।
(সহীহ বুখারী হাঃ৭২৮০; আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩)
.
সুুতরাং সত্যের মাপকাঠি একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা) আর কেউ নন। এমন কি সাহাবাগণ যে সাহাবা হওয়ার মর্যাদা পেয়েছেন সেটাও রাসূলুল্লাহ (সা) এর আনুগত্য করার কারণে, কেননা সত্যের মাপকাঠি শুধু রাসূলুল্লাহ (সা)।
.
কে বা কারা সাহাবী আর কারা সাহাবী ছিলেন না সেটাও নির্ণয় করা হয় রাসূলুল্লাহ (সা) এর মাধ্যমে। অন্য কোন মাধ্যমে নয়। যাঁরা রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপরে ঈমান এনে তাঁর আনুগত্য করেছেন শুধু তাঁরাই সাহাবী কিন্তু যারা তা করেন নি তাদের কেউ সাহাবী বলে গণ্য করেন না, সাহাবা তো দূরের কথা তারা সাধারণ মুমিনও নয়। বরং কাফের মুনাফিক হিসাবে পরিচিত। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
.
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى.
.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে।
(সহীহ বুখারী হাঃ৭২৮০; আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩)
.
সুুতরাং সত্যের মাপকাঠি একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা) আর কেউ নন। এমন কি সাহাবাগণ যে সাহাবা হওয়ার মর্যাদা পেয়েছেন সেটাও রাসূলুল্লাহ (সা) এর আনুগত্য করার কারণে, কেননা সত্যের মাপকাঠি শুধু রাসূলুল্লাহ (সা)।
.
কে বা কারা সাহাবী আর কারা সাহাবী ছিলেন না সেটাও নির্ণয় করা হয় রাসূলুল্লাহ (সা) এর মাধ্যমে। অন্য কোন মাধ্যমে নয়। যাঁরা রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপরে ঈমান এনে তাঁর আনুগত্য করেছেন শুধু তাঁরাই সাহাবী কিন্তু যারা তা করেন নি তাদের কেউ সাহাবী বলে গণ্য করেন না, সাহাবা তো দূরের কথা তারা সাধারণ মুমিনও নয়। বরং কাফের মুনাফিক হিসাবে পরিচিত। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا۟ فِىٓ أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا۟ تَسْلِيمًا
.
অতএব তোমার রবের শপথ! তারা কখনই মুমিন হতে পারবেনা, যে পর্যন্ত তোমাকে তাদের সৃষ্ট বিরোধের বিচারক না করে, অতঃপর তুমি যে বিচার করবে তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করে এবং ওটা সন্তষ্ট চিত্তে কবূল না করে।
(সূরা নিসাঃ৬৫)
.
আমরা সাহাবাগণ কে সাহাবা হিসাবে সম্মান করি কেন, কারণ তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সা) এর আনুগত্য করেছেন। আবার আবূ জেহেল, আবূ লাহাব, উতবা, শায়বা, আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এদের সাহাবা হিসাবে সম্মান করি না কেন, কারণ তারা রাসূলুল্লাহ (সা) কে দেখলেও তাঁর প্রতি ঈমান এনে আনুগত্য করেন নি। কারণ একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)ই সত্যের মাপকাঠি। তিনিই মানুষের মাঝে সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী!
.
ُ فَمَنْ أَطَاعَ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَى مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَقَدْ عَصَى اللهَ وَمُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم فَرْقٌ بَيْنَ النَّاسِ.
.
যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করল, তারা আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবাধ্যতা করল, তারা আসলে আল্লাহরই অবাধ্যতা করল। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মানুষের মাঝে পার্থক্যের মাপকাঠি।
(সহীহ বুখারী হাঃ৭২৮১;
আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৪)
.
কোন সাহাবার আনুগত্যের উপর ভিত্তি করে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'য়ালা মানুষ কে বিভক্ত করবেন না। বরং হযরত মুহাম্মদ (সা) আনুগত্যের উপর ভিত্তি করে মানুষ কে বিভক্ত করা হবে। কে বা কারা হযরত আলী (রা) আনুগত্য করেছেন আর কে বা কারা মুয়াবিয়া (রা) এর পক্ষে লড়াই করেছেন এর ভিত্তিতে সে দিন মানুষ বিভক্ত হবে না। বরং মানুষকে বিভক্ত করা হবে রাসূলুল্লাহ (সা) আনুগত্যের উপর ভিত্তি করে। কারণ সত্যের মাপকাঠি সাহাবাগণ নয় মুহাম্মদ (সা)।
.
মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
অতএব তোমার রবের শপথ! তারা কখনই মুমিন হতে পারবেনা, যে পর্যন্ত তোমাকে তাদের সৃষ্ট বিরোধের বিচারক না করে, অতঃপর তুমি যে বিচার করবে তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করে এবং ওটা সন্তষ্ট চিত্তে কবূল না করে।
(সূরা নিসাঃ৬৫)
.
আমরা সাহাবাগণ কে সাহাবা হিসাবে সম্মান করি কেন, কারণ তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সা) এর আনুগত্য করেছেন। আবার আবূ জেহেল, আবূ লাহাব, উতবা, শায়বা, আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এদের সাহাবা হিসাবে সম্মান করি না কেন, কারণ তারা রাসূলুল্লাহ (সা) কে দেখলেও তাঁর প্রতি ঈমান এনে আনুগত্য করেন নি। কারণ একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)ই সত্যের মাপকাঠি। তিনিই মানুষের মাঝে সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী!
.
ُ فَمَنْ أَطَاعَ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَى مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَقَدْ عَصَى اللهَ وَمُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم فَرْقٌ بَيْنَ النَّاسِ.
.
যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করল, তারা আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবাধ্যতা করল, তারা আসলে আল্লাহরই অবাধ্যতা করল। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মানুষের মাঝে পার্থক্যের মাপকাঠি।
(সহীহ বুখারী হাঃ৭২৮১;
আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৪)
.
কোন সাহাবার আনুগত্যের উপর ভিত্তি করে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'য়ালা মানুষ কে বিভক্ত করবেন না। বরং হযরত মুহাম্মদ (সা) আনুগত্যের উপর ভিত্তি করে মানুষ কে বিভক্ত করা হবে। কে বা কারা হযরত আলী (রা) আনুগত্য করেছেন আর কে বা কারা মুয়াবিয়া (রা) এর পক্ষে লড়াই করেছেন এর ভিত্তিতে সে দিন মানুষ বিভক্ত হবে না। বরং মানুষকে বিভক্ত করা হবে রাসূলুল্লাহ (সা) আনুগত্যের উপর ভিত্তি করে। কারণ সত্যের মাপকাঠি সাহাবাগণ নয় মুহাম্মদ (সা)।
.
মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ ٱللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلْيَوْمَ ٱلْءَاخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرًا
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ ٱللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلْيَوْمَ ٱلْءَاخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرًا
.
অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।
(সূরা আহযাবঃ২১)
অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।
(সূরা আহযাবঃ২১)
'সত্যের মাপকাঠি' এর দলিল হিসাবে বহুল প্রচলিত একটি ভিত্তিহীন হাদীস: আমার সাহাবীগণ নক্ষত্রতুল্য:
মুসলিম সমাজে অত্যন্ত প্রচলিত একটি ‘হাদীস’:
.
أَصْحَابِيْ كَالنُّجُوْمِ بِأَيِّهِمْ اقْتَدَيْتُمْ اهْتَدَيْتُمْ
.
‘‘আমার সাহাবীগণ নক্ষত্রতুল্য, তাঁদের যে কাউকে অনুসরণ করলেই তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হবে।’’
.
হাদীসটি আমাদের মধ্যে এত প্রসিদ্ধ যে, সাধারণ একজন মুসলিম স্বভাবতই চিন্তা করেন যে, হাদীসটি বুখারী, মুসলিমসহ সিহাহ সিত্তা ও সকল হাদীগ্রন্থেই সংকলিত। অথচ প্রকৃত বিষয় হলো, সিহাহ সিত্তা তো দূরের কথা অন্য কোনো প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থে এ হাদীসটি নেই। যয়ীফ ও জালিয়াত রাবীগণের জীবনী গ্রন্থে, কয়েকটি ফিকহী গ্রন্থে ও অপ্রসিদ্ধ দুই একটি হাদীসের গ্রন্থে এ বাক্যটি এবং এ অর্থের একাধিক বাক্য একাধিক সনদে বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেক সনদেরই একাধিক রাবী জালিয়াত হিসেবে প্রসিদ্ধ অথবা অত্যন্ত দুর্বল এবং মিথ্যা বলায় অভিযুক্ত। এজন্য আবূ বাকর বায্যার আহমাদ ইবনু আমর (২৯২হি), ইবনু হায্ম যাহিরী আলী ইবনু আহমাদ (৪৫৬), যাহাবী মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ (৭৪৮হি) ও অন্যান্য মুহাদ্দিস এ হাদীসটিকে জাল ও ভিত্তিহীন বলে গণ্য করেছেন।
.
দেখুনঃ আবদ ইবনু হুমাইদ, আল-মুসনাদ, পৃ. ২৫০; ইবনু হায্ম, আল-ইহকাম ৬/২৪৪; ইবনুল মুলাক্কিন (৮০৪হি), খুলাসাতুল বাদরিল মুনীর ১/২৫০; যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল ২/১৪১-১৪২, ৩৭৯, ৮/৭৩; ইবনু হাজার, লিসানুল মীযান ২/১৩৭; সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ. ৪৯-৫০; আজলূনী, কাশফুল খাফা ১/১৪৭; ইবন আবিল ইজ্জ হানাফী, শারহুল আকীদাতিত তাহাবিয়্যাহ পৃ: ৪৬৭-৪৭১, আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীসিস যাঈফাহ ১/১৪৪-১৫২, নং ৫৮-৬১।
.
আশ্চর্যের বিষয় হলো কেই কেউ এ জাল হাদীসটি 'সাহাবাগণ সত্যের মাপকাঠি'র দলিল হিসাবে পেশ করেন। অচথ সকল আহলে ইলম জানেন, সব সাহাবাগণ (রা) সব আমল অনুসরণ যোগ্য নয় বরং পরিত্যাজ্য। কেননা 'কুরআন হাদীস' থেকে আমরা জানতে পারি যে, কিছু কিছু বিষয়ে কিছু সাহাবা (রা) ভুল করেছেন এমনকি কেউ মারাক্তক ভুলের স্বীকার হয়েছেন, যার কারণে রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁদের ভর্ৎসনা করেছেন, শাসন করেছেন। এমন্তাবস্থায় যদি আপনে ঐ সাহাবীর (রা) ঐ আমল গ্রহণ করেন, তাহলে সুপথ প্রাপ্ত হওয়া সম্ভাব নয়। পক্ষান্তে কোন ক্ষেত্রে সাহাবাগণ (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) কে ভর্ৎসনা করেছেন বা শাসন করেছেন এমন কোন নজির নাই। কেননা সাহাবাগণ (রা) নিজেরাও জানতেন সত্যের মাপকাঠি তাঁরা নয়।
.
সুুতরাং সাহাবাগণ (রা) কখনোই সত্যের মাপকাঠি নন, যদিও তারা সত্যপন্থী। সত্যের মাপকাঠি শুধু রাসূলুল্লাহ (সা) যিনি ওহী দ্বারা পরিচালিত। যার সিদ্ধান্তের উপর কোন সাহাবা (রা) সিদ্ধান নেননি। যার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে আমরা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নেই। যার সিদ্ধান্তের উপরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন অধিকার কোন মুমিনের নাই। যারা এমন অধিকার দেখাবে তারা পথভ্রষ্ট বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহর ভাষায় -
.
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْۗ وَمَن يَعْصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَٰلًا مُّبِينًا
.
আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।
(সূরা আহযাবঃ৩৬)
.
أَصْحَابِيْ كَالنُّجُوْمِ بِأَيِّهِمْ اقْتَدَيْتُمْ اهْتَدَيْتُمْ
.
‘‘আমার সাহাবীগণ নক্ষত্রতুল্য, তাঁদের যে কাউকে অনুসরণ করলেই তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হবে।’’
.
হাদীসটি আমাদের মধ্যে এত প্রসিদ্ধ যে, সাধারণ একজন মুসলিম স্বভাবতই চিন্তা করেন যে, হাদীসটি বুখারী, মুসলিমসহ সিহাহ সিত্তা ও সকল হাদীগ্রন্থেই সংকলিত। অথচ প্রকৃত বিষয় হলো, সিহাহ সিত্তা তো দূরের কথা অন্য কোনো প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থে এ হাদীসটি নেই। যয়ীফ ও জালিয়াত রাবীগণের জীবনী গ্রন্থে, কয়েকটি ফিকহী গ্রন্থে ও অপ্রসিদ্ধ দুই একটি হাদীসের গ্রন্থে এ বাক্যটি এবং এ অর্থের একাধিক বাক্য একাধিক সনদে বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেক সনদেরই একাধিক রাবী জালিয়াত হিসেবে প্রসিদ্ধ অথবা অত্যন্ত দুর্বল এবং মিথ্যা বলায় অভিযুক্ত। এজন্য আবূ বাকর বায্যার আহমাদ ইবনু আমর (২৯২হি), ইবনু হায্ম যাহিরী আলী ইবনু আহমাদ (৪৫৬), যাহাবী মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ (৭৪৮হি) ও অন্যান্য মুহাদ্দিস এ হাদীসটিকে জাল ও ভিত্তিহীন বলে গণ্য করেছেন।
.
দেখুনঃ আবদ ইবনু হুমাইদ, আল-মুসনাদ, পৃ. ২৫০; ইবনু হায্ম, আল-ইহকাম ৬/২৪৪; ইবনুল মুলাক্কিন (৮০৪হি), খুলাসাতুল বাদরিল মুনীর ১/২৫০; যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল ২/১৪১-১৪২, ৩৭৯, ৮/৭৩; ইবনু হাজার, লিসানুল মীযান ২/১৩৭; সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ. ৪৯-৫০; আজলূনী, কাশফুল খাফা ১/১৪৭; ইবন আবিল ইজ্জ হানাফী, শারহুল আকীদাতিত তাহাবিয়্যাহ পৃ: ৪৬৭-৪৭১, আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীসিস যাঈফাহ ১/১৪৪-১৫২, নং ৫৮-৬১।
.
আশ্চর্যের বিষয় হলো কেই কেউ এ জাল হাদীসটি 'সাহাবাগণ সত্যের মাপকাঠি'র দলিল হিসাবে পেশ করেন। অচথ সকল আহলে ইলম জানেন, সব সাহাবাগণ (রা) সব আমল অনুসরণ যোগ্য নয় বরং পরিত্যাজ্য। কেননা 'কুরআন হাদীস' থেকে আমরা জানতে পারি যে, কিছু কিছু বিষয়ে কিছু সাহাবা (রা) ভুল করেছেন এমনকি কেউ মারাক্তক ভুলের স্বীকার হয়েছেন, যার কারণে রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁদের ভর্ৎসনা করেছেন, শাসন করেছেন। এমন্তাবস্থায় যদি আপনে ঐ সাহাবীর (রা) ঐ আমল গ্রহণ করেন, তাহলে সুপথ প্রাপ্ত হওয়া সম্ভাব নয়। পক্ষান্তে কোন ক্ষেত্রে সাহাবাগণ (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) কে ভর্ৎসনা করেছেন বা শাসন করেছেন এমন কোন নজির নাই। কেননা সাহাবাগণ (রা) নিজেরাও জানতেন সত্যের মাপকাঠি তাঁরা নয়।
.
সুুতরাং সাহাবাগণ (রা) কখনোই সত্যের মাপকাঠি নন, যদিও তারা সত্যপন্থী। সত্যের মাপকাঠি শুধু রাসূলুল্লাহ (সা) যিনি ওহী দ্বারা পরিচালিত। যার সিদ্ধান্তের উপর কোন সাহাবা (রা) সিদ্ধান নেননি। যার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে আমরা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নেই। যার সিদ্ধান্তের উপরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন অধিকার কোন মুমিনের নাই। যারা এমন অধিকার দেখাবে তারা পথভ্রষ্ট বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহর ভাষায় -
.
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْۗ وَمَن يَعْصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَٰلًا مُّبِينًا
.
আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।
(সূরা আহযাবঃ৩৬)
দেওবন্দী ওলামায়ে কেরামগণের দৃষ্টিতে সাহাবাগণ (রা) কি সত্যের মাপকাঠি:
১. শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী বলেনঃ যখন এটা সাহাবীদের কর্ম, তখন সেটা হুজ্জাহ/দলীল নয় ।
(তাকারীর শাইখুল হিন্দ পৃঃ৩০)
.
২. তিনি আরো বলেনঃ
এটা একটি সাহাবীর কথা, এটি হানাফীদের জন্য দলীল হতে পারে না। (তাকারির শাইখুল হিন্দ পৃঃ৪৩)
.
৩. যাফর আহমেদ থানভী দেওবন্দী বলেনঃ
মারফূ হাদীসের মুকাবিলায় সাহাবীদের কওল দলীল হয় না।
( ইলাউস সুনান:১/৪৬৩)
.
৪. সায়েদেনা আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) ফজরে দোয়ায়ে কুনুত পড়ত , তো এ ব্যাপারে শাইখুল হাদীস তকী উসমানি দেওবন্দি বলেনঃ
এই রেওয়াত মওকূফ সুতরাং এ দ্বারা দলীল হবে না।
( দারসে তিরমিযি ২/১৬৯)
.
৫. তকি উসমানি সাহেব আরো বলেনঃ
প্রথমত এটা আবু হুরাইরা (রাঃ) এর ব্যাক্তিগত ইজতেহাদি আমল, রাসূল সা এর মারফু হাদীসের সামনে এটি হুজ্জাত নয়।
(দারসে তিরমিযি ২/৮৪)
.
৬. ত্বকী উসমানী দেওবন্দী বলেনঃ
এবার রয়ে গেলো শুধু হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর আছার। এর জবাব হলো, প্রথমতো এতে প্রচন্ড ইজতেরাব রয়েছে। দ্বিতীয়ত যদি এটাকে সূত্রগতভাবে সহীহ মেনেও নেওয়া হয় তবুও এটি একজন সাহাবির ইজতিহাদ হতে পারে, যা মারফূ হাদীসের বিপরীতে প্রমান নয়। (দারসে তিরমিযী ১/২৮৩)
.
৭. তিনি আরো বলেনঃ
বাকি রইলো দ্বিতীয় সূত্রটি। সেটিও সহীহ। তবে এর দ্বারাও শাফেয়ি মতাবলম্বী প্রমুখের মাজহাবের ওপর কোনো স্পষ্ট মারফু দলিল প্রতিষ্ঠিত হয় না। কেনোনা, এটা হজরত উবাদা (রাঃ) এর নিজস্ব ইজতিহাদ।
অর্থাৎ তিনি ----- বিশিষ্ট
হাদিসটীকে ইমাম এবং মুক্তাদির উভয়ের জন্য ব্যাপক মনে করেছেন। এরফলে এই হুকুম উৎসারণ করেছেন যে, মুক্তাদির উপর সূরা ফাতেহা পড়া আবশ্যক ।
তবে তার এ উৎসারণ মারফু হাদীসগুলোর বিপরীতে দলীল
হতে পারে না।
(দারসে তিরমযী ২/৭৫)
.
৮. সারফারায খান সাফদার দেওবন্দী সাহেব লেখেনঃ
মারফু হাদীসের বিরোধিতায় মাওকূফ কোনো দলীল নয় !
(খাযাইন আস-সুন্নাহ (১/১৭৯)
.
৯. ইমাম বুখারী (রহঃ) সায়েদেনা আনাস (রাঃ), হাসান বসরী এবং কাতাদা (রহঃ) এর কওল নকল করেছেন যে সেজদা সাহু এর পরে তাশাহুদ হবে না। দেখুন, (সহীহ বুখারী খন্ড ১ পৃঃ১৬৩)।
কিন্তু সারফারায সাফদার দেওবন্দী সাহেব বলেনঃ
কিন্তু ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এই ইস্তেদলাল খুবি দুর্বল কারন এটা মাউকূফ এবং তার বিরোধিতায় সারিহ, সহীহ মারফু রেওয়াত আছে, এগুলোর বিরোধিতায় মঊকূফ রেওয়াত দিয়ে কি হবে?!
( খাযাইন আস-সুনান ২/১৪৩)
.
১০.খলীল আহমেদ সাহারানপুরী দেওবন্দী বলেনঃ
এবং এটা একজন সাহাবীর মাযহাব যেটা একজন ব্যাক্তির
জন্যও দলীল নয়।
বাযলুল মাযহুদ ৫ম খন্ড ৩৯ পৃঃ
.
মন্তব্য: যাদের কথা দলিল হতে পারে না, যাদের কে যাচাইবাচাই করা হয় রাসূলুল্লাহ (সা) এর ভিত্তিতে, যাদের আমল মারফু হাদীসের বিরুদ্ধে গেলে মানা হয় না তারা কি সত্যের মাপকাঠি হতে পারে? সুুতরাং দেওবন্দী আলেমগণের দৃষ্টিতেও সাহাবাগণ (রা) সত্যের মাপকাঠি নয় বরং সত্যের মাপকাঠি একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা) যে কারণে তারা রাসূলুল্লাহ (সা) এর বাণী মারফু হাদীস কে প্রাধান্য দিয়েছেন, সাহাবাগণ (রা) এর বাণী মারফু হাদীসের বিরোধী বলে গ্রহণ করেননি।
.
আমাদের দৃষ্টিতেও একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)-ই সত্যের মাপকাঠি, তিনি ছাড়া আর কোন ব্যাক্তি সত্যের মাপকাঠি হতে পারে না। কারণ 'মিয়ারে হক বা সত্যের মাপকাঠি বলতে আমরা সেই বস্তুকেই বুঝি, যার অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যে হক বা সত্য নিহিত আছে এবং যার অবাধ্যতার মধ্যে বাতিল বা অসত্য নিহিত আছে।' এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখো যায় যে, আল্লাহর রাসূল (সা)-ই হচ্ছে একমাত্র সত্যের মাপকাঠি। সাহাবীগণ সত্যের মাপকাঠি নন, বরং
তারা হচ্ছেন আল্লাহর কিতাব ও রসুলের (সা) সুন্নতের মাপকাঠি অনুসারে সত্যপন্থী জামা'য়াত। কেননা আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْۗ وَمَن يَعْصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَٰلًا مُّبِينًا
.
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিনা নারীর সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবেনা। কেহ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সেতো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট।
(সূরা আহযাবঃ৩৬)
সাহাবাগণ (রা) সত্যের মাপকাঠি হলে আল্লাহ তা'য়ালা এমন কথা বলতেন না।
.
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ
«مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيهِ أمرُنا فَهُوَ رَدٌّ».
.
যে ব্যাক্তি এমন কোন আমল (কাজ) করল, যাতে আমার কোন নির্দেশ নেই, তা বর্জনীয়।
(সহীহ মুসলিম)
.
আল্লাহ তা'য়ালা আরো বলেনঃ
.
لَّا تَجْعَلُوا۟ دُعَآءَ ٱلرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَآءِ بَعْضِكُم بَعْضًاۚ قَدْ يَعْلَمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمْ لِوَاذًاۚ فَلْيَحْذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
.
রাসূলের আহবানকে তোমরা একে অপরের প্রতি আহবানের মত গণ্য করনা; তোমাদের মধ্যে যারা চুপি চুপি সরে পড়ে আল্লাহ তাদেরকে জানেন। সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর কঠিন শাস্তি।
(সূর নূরঃ৬৩)
.
সুুতরাং সর্বসম্মতিক্রমে এ কথা প্রমাণিত হলো যে, সত্যের মাপকাঠি সাহাবাগণ নয় বরং সত্যের মাপকাঠি একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)। আল্লাহ আমাদের সকল কে দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুক।
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺁﻣﻴﻦ
(তাকারীর শাইখুল হিন্দ পৃঃ৩০)
.
২. তিনি আরো বলেনঃ
এটা একটি সাহাবীর কথা, এটি হানাফীদের জন্য দলীল হতে পারে না। (তাকারির শাইখুল হিন্দ পৃঃ৪৩)
.
৩. যাফর আহমেদ থানভী দেওবন্দী বলেনঃ
মারফূ হাদীসের মুকাবিলায় সাহাবীদের কওল দলীল হয় না।
( ইলাউস সুনান:১/৪৬৩)
.
৪. সায়েদেনা আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) ফজরে দোয়ায়ে কুনুত পড়ত , তো এ ব্যাপারে শাইখুল হাদীস তকী উসমানি দেওবন্দি বলেনঃ
এই রেওয়াত মওকূফ সুতরাং এ দ্বারা দলীল হবে না।
( দারসে তিরমিযি ২/১৬৯)
.
৫. তকি উসমানি সাহেব আরো বলেনঃ
প্রথমত এটা আবু হুরাইরা (রাঃ) এর ব্যাক্তিগত ইজতেহাদি আমল, রাসূল সা এর মারফু হাদীসের সামনে এটি হুজ্জাত নয়।
(দারসে তিরমিযি ২/৮৪)
.
৬. ত্বকী উসমানী দেওবন্দী বলেনঃ
এবার রয়ে গেলো শুধু হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর আছার। এর জবাব হলো, প্রথমতো এতে প্রচন্ড ইজতেরাব রয়েছে। দ্বিতীয়ত যদি এটাকে সূত্রগতভাবে সহীহ মেনেও নেওয়া হয় তবুও এটি একজন সাহাবির ইজতিহাদ হতে পারে, যা মারফূ হাদীসের বিপরীতে প্রমান নয়। (দারসে তিরমিযী ১/২৮৩)
.
৭. তিনি আরো বলেনঃ
বাকি রইলো দ্বিতীয় সূত্রটি। সেটিও সহীহ। তবে এর দ্বারাও শাফেয়ি মতাবলম্বী প্রমুখের মাজহাবের ওপর কোনো স্পষ্ট মারফু দলিল প্রতিষ্ঠিত হয় না। কেনোনা, এটা হজরত উবাদা (রাঃ) এর নিজস্ব ইজতিহাদ।
অর্থাৎ তিনি ----- বিশিষ্ট
হাদিসটীকে ইমাম এবং মুক্তাদির উভয়ের জন্য ব্যাপক মনে করেছেন। এরফলে এই হুকুম উৎসারণ করেছেন যে, মুক্তাদির উপর সূরা ফাতেহা পড়া আবশ্যক ।
তবে তার এ উৎসারণ মারফু হাদীসগুলোর বিপরীতে দলীল
হতে পারে না।
(দারসে তিরমযী ২/৭৫)
.
৮. সারফারায খান সাফদার দেওবন্দী সাহেব লেখেনঃ
মারফু হাদীসের বিরোধিতায় মাওকূফ কোনো দলীল নয় !
(খাযাইন আস-সুন্নাহ (১/১৭৯)
.
৯. ইমাম বুখারী (রহঃ) সায়েদেনা আনাস (রাঃ), হাসান বসরী এবং কাতাদা (রহঃ) এর কওল নকল করেছেন যে সেজদা সাহু এর পরে তাশাহুদ হবে না। দেখুন, (সহীহ বুখারী খন্ড ১ পৃঃ১৬৩)।
কিন্তু সারফারায সাফদার দেওবন্দী সাহেব বলেনঃ
কিন্তু ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এই ইস্তেদলাল খুবি দুর্বল কারন এটা মাউকূফ এবং তার বিরোধিতায় সারিহ, সহীহ মারফু রেওয়াত আছে, এগুলোর বিরোধিতায় মঊকূফ রেওয়াত দিয়ে কি হবে?!
( খাযাইন আস-সুনান ২/১৪৩)
.
১০.খলীল আহমেদ সাহারানপুরী দেওবন্দী বলেনঃ
এবং এটা একজন সাহাবীর মাযহাব যেটা একজন ব্যাক্তির
জন্যও দলীল নয়।
বাযলুল মাযহুদ ৫ম খন্ড ৩৯ পৃঃ
.
মন্তব্য: যাদের কথা দলিল হতে পারে না, যাদের কে যাচাইবাচাই করা হয় রাসূলুল্লাহ (সা) এর ভিত্তিতে, যাদের আমল মারফু হাদীসের বিরুদ্ধে গেলে মানা হয় না তারা কি সত্যের মাপকাঠি হতে পারে? সুুতরাং দেওবন্দী আলেমগণের দৃষ্টিতেও সাহাবাগণ (রা) সত্যের মাপকাঠি নয় বরং সত্যের মাপকাঠি একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা) যে কারণে তারা রাসূলুল্লাহ (সা) এর বাণী মারফু হাদীস কে প্রাধান্য দিয়েছেন, সাহাবাগণ (রা) এর বাণী মারফু হাদীসের বিরোধী বলে গ্রহণ করেননি।
.
আমাদের দৃষ্টিতেও একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)-ই সত্যের মাপকাঠি, তিনি ছাড়া আর কোন ব্যাক্তি সত্যের মাপকাঠি হতে পারে না। কারণ 'মিয়ারে হক বা সত্যের মাপকাঠি বলতে আমরা সেই বস্তুকেই বুঝি, যার অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যে হক বা সত্য নিহিত আছে এবং যার অবাধ্যতার মধ্যে বাতিল বা অসত্য নিহিত আছে।' এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখো যায় যে, আল্লাহর রাসূল (সা)-ই হচ্ছে একমাত্র সত্যের মাপকাঠি। সাহাবীগণ সত্যের মাপকাঠি নন, বরং
তারা হচ্ছেন আল্লাহর কিতাব ও রসুলের (সা) সুন্নতের মাপকাঠি অনুসারে সত্যপন্থী জামা'য়াত। কেননা আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْۗ وَمَن يَعْصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَٰلًا مُّبِينًا
.
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিনা নারীর সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবেনা। কেহ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সেতো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট।
(সূরা আহযাবঃ৩৬)
সাহাবাগণ (রা) সত্যের মাপকাঠি হলে আল্লাহ তা'য়ালা এমন কথা বলতেন না।
.
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ
«مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيهِ أمرُنا فَهُوَ رَدٌّ».
.
যে ব্যাক্তি এমন কোন আমল (কাজ) করল, যাতে আমার কোন নির্দেশ নেই, তা বর্জনীয়।
(সহীহ মুসলিম)
.
আল্লাহ তা'য়ালা আরো বলেনঃ
.
لَّا تَجْعَلُوا۟ دُعَآءَ ٱلرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَآءِ بَعْضِكُم بَعْضًاۚ قَدْ يَعْلَمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمْ لِوَاذًاۚ فَلْيَحْذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
.
রাসূলের আহবানকে তোমরা একে অপরের প্রতি আহবানের মত গণ্য করনা; তোমাদের মধ্যে যারা চুপি চুপি সরে পড়ে আল্লাহ তাদেরকে জানেন। সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর কঠিন শাস্তি।
(সূর নূরঃ৬৩)
.
সুুতরাং সর্বসম্মতিক্রমে এ কথা প্রমাণিত হলো যে, সত্যের মাপকাঠি সাহাবাগণ নয় বরং সত্যের মাপকাঠি একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)। আল্লাহ আমাদের সকল কে দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুক।
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺁﻣﻴﻦ
সাহাবাগণ (রা) 'সত্যের মাপকাঠি' এর দলিল পর্যালোচনাঃ
আল্লাহ তা'য়ালা মুনাফিকদের বিষয়ে বলেনঃ
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ ءَامِنُوا۟ كَمَآ ءَامَنَ ٱلنَّاسُ قَالُوٓا۟ أَنُؤْمِنُ كَمَآ ءَامَنَ ٱلسُّفَهَآءُۗ أَلَآ إِنَّهُمْ هُمُ ٱلسُّفَهَآءُ وَلَٰكِن لَّا يَعْلَمُونَ
.
এবং যখন তাদেরকে বলা হয়ঃ লোকে যেরূপ বিশ্বাস করেছে তোমরাও তদ্রুপ বিশ্বাস স্থাপন কর, তখন তারা বলেঃ নির্বোধেরা যেরূপ বিশ্বাস করেছে আমরাও কি সেইরূপ বিশ্বাস করব? সাবধান! নিশ্চয়ই তারাই নির্বোধ, কিন্তু তা তারা অবগত নয়।
(সূরা বাকারাঃ১৩)
.
ইহুদীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
এবং যখন তাদেরকে বলা হয়ঃ লোকে যেরূপ বিশ্বাস করেছে তোমরাও তদ্রুপ বিশ্বাস স্থাপন কর, তখন তারা বলেঃ নির্বোধেরা যেরূপ বিশ্বাস করেছে আমরাও কি সেইরূপ বিশ্বাস করব? সাবধান! নিশ্চয়ই তারাই নির্বোধ, কিন্তু তা তারা অবগত নয়।
(সূরা বাকারাঃ১৩)
.
ইহুদীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
فَإِنْ ءَامَنُوا۟ بِمِثْلِ مَآ ءَامَنتُم بِهِۦ فَقَدِ ٱهْتَدَوا۟ۖ وَّإِن تَوَلَّوْا۟ فَإِنَّمَا هُمْ فِى شِقَاقٍۖ فَسَيَكْفِيكَهُمُ ٱللَّهُۚ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ
.
অনন্তর তোমরা যেরূপ বিশ্বাস স্থাপন করেছ, তারাও যদি তদ্রুপ বিশ্বাস স্থাপন করে তাহলে নিশ্চয়ই তারা সুপথ প্রাপ্ত হবে; এবং যদি তারা ফিরে যায় তাহলে তারা শুধু বিরুদ্ধাচরণেই ফিরে যাবে; অতএব অচিরেই আল্লাহ তাদের প্রতিকূলে তোমাকেই যথেষ্ট করবেন এবং তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
(সূরা বাকারাঃ১৩৭)
.
এ সকল আয়াত দিয়ে বর্তমান জামানার কতিপয় লোক সাহাবাদের প্রত্যেককে এক একটি সত্যের মাপকাঠি বলে দাবী করেন। আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি।-
.
অনন্তর তোমরা যেরূপ বিশ্বাস স্থাপন করেছ, তারাও যদি তদ্রুপ বিশ্বাস স্থাপন করে তাহলে নিশ্চয়ই তারা সুপথ প্রাপ্ত হবে; এবং যদি তারা ফিরে যায় তাহলে তারা শুধু বিরুদ্ধাচরণেই ফিরে যাবে; অতএব অচিরেই আল্লাহ তাদের প্রতিকূলে তোমাকেই যথেষ্ট করবেন এবং তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
(সূরা বাকারাঃ১৩৭)
.
এ সকল আয়াত দিয়ে বর্তমান জামানার কতিপয় লোক সাহাবাদের প্রত্যেককে এক একটি সত্যের মাপকাঠি বলে দাবী করেন। আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি।-
১. যখন এসব আয়াত নাজিল হয় তারপরেও অনেক ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহণ করে সাহাবীর মর্যাদা লাভ করেছেন। তাহলে এসব আয়াতের উপরে ভিত্তি করে সাহাবাগণ (রা) কে দুই শ্রেণিত ভাগ করা যায়। যেমনঃ-
১ম শ্রেণীর সাহাবা, যারা এসব আয়াত নাজিল হওয়ার আগে ঈমান এনেছেন।
আর ২য় শ্রেণীর সাহাবা, যারা এসব আয়াত নাজিল হওয়ার পরে ১ম শ্রেণীর সাহাবাগণ এর মত করে ঈমান এনে সাহাবীর মর্যাদা লাভ করেছেন।
.
২. এ আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা ১ম শ্রেণীর সাহাবা মত ঈমান আনতে বলছেন, কিন্তু যারা পরে ঈমান আনলেন, আগের সাহাবীদের মত তারা তো সত্যের মাপকাঠি হচ্ছে না, তাদের যুক্তি অনুযায়ী! কারণ এখানে ১ম শ্রেণী সাহাবীগণ এর মত ঈমান আনতে বলা হয়েছে। তাই এসব আয়াত নাজিল হওয়ার পরে যেসব সাহাবী (রা) ঈমান এনেছেন (তাদের যুক্তি মেনে নিলেও) তাঁরা সত্যের মাপকাঠি নন।
.
৩. মূল কথা হলো এখানে সাহাবাগণ কে সত্যের মাপকাঠি বানানো হয় নি, নমুনা বা উদাহরণ হিসাবে বলা হয়েছে। কারণ ঈমান তো আনতে হবে আল্লাহ তা'য়ালা ও রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপরে এবং রাসূলুল্লাহ (সা) এর আনীত বিধানের উপরে। তাই তাদের নমুনা বানানো হয়েছে, সত্যের মাপকাঠি নয়।
এখানে তো আল্লাহ তা'য়ালা এভাবে বলতে পারেন না যে, 'তোমরা রাসূল (সা) এর মত ঈমান আনো'। কেননা এভাবে বললে কাফির, মুনাফিকগণ বলে ওঠবে, তাহলে রাসূলুল্লাহ (সা) মত আমাদের উপরেও ওহী করা হোক! আমাদেরও রাসূল বানিয়ে দেওয়া হোক! এ কারণে আল্লাহ তা'য়ালা ১ম শ্রেণী সাহাবাগণ এর মত (যারা এ আয়াত নাজিল হওয়ার আগেই ঈমান এনে সাহাবীর মর্যাদা লাভ করেছেন) ঈমান আনতে বলেছেন।
.
৪. সাহাবাগণ যেভাবে ঈমান এসেছেন, সেভাবে নিষ্ঠার সাথে ঈমান আনতে বলা হয়েছে অর্থাৎ ঈমান আনয়নের ক্ষেত্রে তারাদের নমুনা বানানো হয়েছে। আর নমুনা ও মাপকাঠি এক জিনিস নয় বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। চালের নমুনা দেখালে দোকানী মাপকাঠি দাঁড়িপল্লা দ্বারা ওজন করে দেয় নমুনা দ্বারা নয়। তাই সাহাবীগণ (রা) এর মধ্য কোন বিষয়ে ইখতিলাফ হলে আমরা সেইটা গ্রহণ করি, যেটার পক্ষে মারফু হাদীস তথা রাসূলুল্লাহ (সা) বাণী রয়েছে। কারণ আমরা সত্যের মাপকাঠি হিসাবে শুধু রাসূলুল্লাহ (সা) কে মানি, সাহাবাগণ (রা) কে সত্যের মাপকাঠি মানলে মারফু হাদীস ও মাওকুফ হাদীস একই মনে করতাম। বরং অনেক সময় মাউকুফ হাদীস দিয়ে মারফু হাদীস রদ করতাম, যেমনঃ- অনেক ক্ষেত্রে এক সাহাবীর (রা) বাণী কে অন্য সাহাবীর (রা) বাণী দ্বারা রদ করা হয়। কিন্ত আমরা এমটা করি না, কারণ শুধু মাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)-ই সত্যের মাপকাঠি।
.
৫. এখানে মুনাফিক ও ইহুদীদের তথা অমুসলিমদের উদ্দেশ্য করে সাহাবাগণ এর মত ঈমান আনতে বলা হয়েছে, কোন মুমিন মুসলিম কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়নি। এতে সাহাবাগণ আমাদের জন্য সত্যের মাপকাঠি বলে প্রমাণ হয় না। যেমনঃ- কোন কোম্পানির মালিক যদি নতুন কর্মচারীদের এ শর্তে নিয়োগ দেন যে, আপনাদেরকে আমার পূর্ববর্তী কর্মচারীর মত (নিষ্ঠার সাথে) কাজ করতে হবে, এতে পূর্ববর্তী কর্মচারী তাদের কাজ করার মানদন্ড বা মাপকাঠি হতে পারে না। মালিক এখানে কর্মচারীদের মাপকাঠি হিসাবে পেশ করেন নি বরং উদাহরণ বা নমুনা হিসাবে পেশ করেছেন। কেননা পূর্ববর্তী কর্মচারী যদি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এমন কোন কাজ করে যা কোম্পানির জন্য ক্ষতিকর, আর পূর্ববর্তী কর্মচারীও যদি সেটাই করে তাহলে এমন্তাবস্থায় মালিক তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন, এমনকি এর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারেন। পূর্ববর্তী কর্মচারীর দোহায় দিয়ে তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে না।
.
৬. রাসূলুল্লাহ (সা) কে কেন্দ্র করে তাঁরই মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষা ও হেদায়াত গ্রহণ করাকে ঈমান বলে। ঈমানের সংজ্ঞায় ও আরকানে রাসূলুল্লাহ (সা) এর নাম আছে, সাহাবাগণ এর নাম নাই। সুুতরাং তাঁদেরকে ঈমানের মাপকাঠি বলা নিতান্তই ভুল। ঈমান, ইসলাম ও আমলের দিক দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা)-ই একমাত্র সত্যের মাপকাঠি এবং এটা রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিয়ে আশা শিক্ষা ও হেদায়াত। সাহাবাগণ (রা) সহ সকল মুসলিমদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
ْۚ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمْ عَنْهُ فَٱنتَهُوا۟ۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلْعِقَاب.
.
রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।
(সূরা হাশরঃ০৭)
.
৭. মজার বিষয় হলো, এ সকল আয়াত দ্বারা সাহাবাগণ (রা) কে ঈমান ও সত্যের মাপকাঠি প্রমাণ করার সমর্থনে সালফে সালেহীন তথা সাহাবা, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈগণের নিকট থেকে কোন তাফসীর বর্ণিত হয়নি। পূর্ববর্তী কোন মুফাচ্ছির কোন ফকিহ, মুজতািহদ ও ইমামগণ এ সকল আয়াত সাহাবাগণ (রা) 'সত্যের মাপকাঠি' প্রমাণে পেশ করেননি। অথচ বর্তমানে কিছু ব্যাক্তি সাহাবাগণ সত্যের মাপকাঠি প্রমাণে পেশ করছে। আফসোসের বিষয়!!!
.
৮. রাসূলুল্লাহ (সা) এর পাশাপাশি সাহাবাগণ কে সত্যের মাপকাঠি বলা এটা একটা অবাস্তব দাবী। কারণ সাহাবা হওয়াই নির্ভর করে রাসূলুল্লাহ (সা) ওর উপর। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা) এর রাসূল হওয়া সাহাবাগণ এর উপর নির্ভর করে না। বেশ কিছু লোক রাসূলুল্লাহ (সা) এর প্রতি ঈমান এনে সাহাবার মর্যাদা লাভ করে পরে আবার রাসূলুল্লাহ (সা) এর বিরোধীতা করে, তাঁর আনীত বিধানের প্রতি অস্বীকার করে মুরতাদ হয়ে যায়। তাহলে সাহাবা হওয়া না হওয়া সম্পূর্ণ নির্ভর করছে রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপর, কারণ সত্যের মাপকাঠি সাহাবাগণ নয় বরং সত্যের মাপকাঠি শুধু মাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
১ম শ্রেণীর সাহাবা, যারা এসব আয়াত নাজিল হওয়ার আগে ঈমান এনেছেন।
আর ২য় শ্রেণীর সাহাবা, যারা এসব আয়াত নাজিল হওয়ার পরে ১ম শ্রেণীর সাহাবাগণ এর মত করে ঈমান এনে সাহাবীর মর্যাদা লাভ করেছেন।
.
২. এ আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা ১ম শ্রেণীর সাহাবা মত ঈমান আনতে বলছেন, কিন্তু যারা পরে ঈমান আনলেন, আগের সাহাবীদের মত তারা তো সত্যের মাপকাঠি হচ্ছে না, তাদের যুক্তি অনুযায়ী! কারণ এখানে ১ম শ্রেণী সাহাবীগণ এর মত ঈমান আনতে বলা হয়েছে। তাই এসব আয়াত নাজিল হওয়ার পরে যেসব সাহাবী (রা) ঈমান এনেছেন (তাদের যুক্তি মেনে নিলেও) তাঁরা সত্যের মাপকাঠি নন।
.
৩. মূল কথা হলো এখানে সাহাবাগণ কে সত্যের মাপকাঠি বানানো হয় নি, নমুনা বা উদাহরণ হিসাবে বলা হয়েছে। কারণ ঈমান তো আনতে হবে আল্লাহ তা'য়ালা ও রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপরে এবং রাসূলুল্লাহ (সা) এর আনীত বিধানের উপরে। তাই তাদের নমুনা বানানো হয়েছে, সত্যের মাপকাঠি নয়।
এখানে তো আল্লাহ তা'য়ালা এভাবে বলতে পারেন না যে, 'তোমরা রাসূল (সা) এর মত ঈমান আনো'। কেননা এভাবে বললে কাফির, মুনাফিকগণ বলে ওঠবে, তাহলে রাসূলুল্লাহ (সা) মত আমাদের উপরেও ওহী করা হোক! আমাদেরও রাসূল বানিয়ে দেওয়া হোক! এ কারণে আল্লাহ তা'য়ালা ১ম শ্রেণী সাহাবাগণ এর মত (যারা এ আয়াত নাজিল হওয়ার আগেই ঈমান এনে সাহাবীর মর্যাদা লাভ করেছেন) ঈমান আনতে বলেছেন।
.
৪. সাহাবাগণ যেভাবে ঈমান এসেছেন, সেভাবে নিষ্ঠার সাথে ঈমান আনতে বলা হয়েছে অর্থাৎ ঈমান আনয়নের ক্ষেত্রে তারাদের নমুনা বানানো হয়েছে। আর নমুনা ও মাপকাঠি এক জিনিস নয় বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। চালের নমুনা দেখালে দোকানী মাপকাঠি দাঁড়িপল্লা দ্বারা ওজন করে দেয় নমুনা দ্বারা নয়। তাই সাহাবীগণ (রা) এর মধ্য কোন বিষয়ে ইখতিলাফ হলে আমরা সেইটা গ্রহণ করি, যেটার পক্ষে মারফু হাদীস তথা রাসূলুল্লাহ (সা) বাণী রয়েছে। কারণ আমরা সত্যের মাপকাঠি হিসাবে শুধু রাসূলুল্লাহ (সা) কে মানি, সাহাবাগণ (রা) কে সত্যের মাপকাঠি মানলে মারফু হাদীস ও মাওকুফ হাদীস একই মনে করতাম। বরং অনেক সময় মাউকুফ হাদীস দিয়ে মারফু হাদীস রদ করতাম, যেমনঃ- অনেক ক্ষেত্রে এক সাহাবীর (রা) বাণী কে অন্য সাহাবীর (রা) বাণী দ্বারা রদ করা হয়। কিন্ত আমরা এমটা করি না, কারণ শুধু মাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)-ই সত্যের মাপকাঠি।
.
৫. এখানে মুনাফিক ও ইহুদীদের তথা অমুসলিমদের উদ্দেশ্য করে সাহাবাগণ এর মত ঈমান আনতে বলা হয়েছে, কোন মুমিন মুসলিম কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়নি। এতে সাহাবাগণ আমাদের জন্য সত্যের মাপকাঠি বলে প্রমাণ হয় না। যেমনঃ- কোন কোম্পানির মালিক যদি নতুন কর্মচারীদের এ শর্তে নিয়োগ দেন যে, আপনাদেরকে আমার পূর্ববর্তী কর্মচারীর মত (নিষ্ঠার সাথে) কাজ করতে হবে, এতে পূর্ববর্তী কর্মচারী তাদের কাজ করার মানদন্ড বা মাপকাঠি হতে পারে না। মালিক এখানে কর্মচারীদের মাপকাঠি হিসাবে পেশ করেন নি বরং উদাহরণ বা নমুনা হিসাবে পেশ করেছেন। কেননা পূর্ববর্তী কর্মচারী যদি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এমন কোন কাজ করে যা কোম্পানির জন্য ক্ষতিকর, আর পূর্ববর্তী কর্মচারীও যদি সেটাই করে তাহলে এমন্তাবস্থায় মালিক তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন, এমনকি এর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারেন। পূর্ববর্তী কর্মচারীর দোহায় দিয়ে তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে না।
.
৬. রাসূলুল্লাহ (সা) কে কেন্দ্র করে তাঁরই মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষা ও হেদায়াত গ্রহণ করাকে ঈমান বলে। ঈমানের সংজ্ঞায় ও আরকানে রাসূলুল্লাহ (সা) এর নাম আছে, সাহাবাগণ এর নাম নাই। সুুতরাং তাঁদেরকে ঈমানের মাপকাঠি বলা নিতান্তই ভুল। ঈমান, ইসলাম ও আমলের দিক দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা)-ই একমাত্র সত্যের মাপকাঠি এবং এটা রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিয়ে আশা শিক্ষা ও হেদায়াত। সাহাবাগণ (রা) সহ সকল মুসলিমদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
ْۚ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمْ عَنْهُ فَٱنتَهُوا۟ۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلْعِقَاب.
.
রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।
(সূরা হাশরঃ০৭)
.
৭. মজার বিষয় হলো, এ সকল আয়াত দ্বারা সাহাবাগণ (রা) কে ঈমান ও সত্যের মাপকাঠি প্রমাণ করার সমর্থনে সালফে সালেহীন তথা সাহাবা, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈগণের নিকট থেকে কোন তাফসীর বর্ণিত হয়নি। পূর্ববর্তী কোন মুফাচ্ছির কোন ফকিহ, মুজতািহদ ও ইমামগণ এ সকল আয়াত সাহাবাগণ (রা) 'সত্যের মাপকাঠি' প্রমাণে পেশ করেননি। অথচ বর্তমানে কিছু ব্যাক্তি সাহাবাগণ সত্যের মাপকাঠি প্রমাণে পেশ করছে। আফসোসের বিষয়!!!
.
৮. রাসূলুল্লাহ (সা) এর পাশাপাশি সাহাবাগণ কে সত্যের মাপকাঠি বলা এটা একটা অবাস্তব দাবী। কারণ সাহাবা হওয়াই নির্ভর করে রাসূলুল্লাহ (সা) ওর উপর। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা) এর রাসূল হওয়া সাহাবাগণ এর উপর নির্ভর করে না। বেশ কিছু লোক রাসূলুল্লাহ (সা) এর প্রতি ঈমান এনে সাহাবার মর্যাদা লাভ করে পরে আবার রাসূলুল্লাহ (সা) এর বিরোধীতা করে, তাঁর আনীত বিধানের প্রতি অস্বীকার করে মুরতাদ হয়ে যায়। তাহলে সাহাবা হওয়া না হওয়া সম্পূর্ণ নির্ভর করছে রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপর, কারণ সত্যের মাপকাঠি সাহাবাগণ নয় বরং সত্যের মাপকাঠি শুধু মাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا۟ فِىٓ أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا۟ تَسْلِيمًا
.
অতএব তোমার রবের শপথ! তারা কখনই বিশ্বাস স্থাপনকারী হতে পারবেনা, যে পর্যন্ত তোমাকে তাদের সৃষ্ট বিরোধের বিচারক না করে, অতঃপর তুমি যে বিচার করবে তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করে এবং ওটা সন্তষ্ট চিত্তে কবূল না করে।
(সূরা নিসাঃ৬৫)
.
৯. যারা সাহাবাগণ (রা) কে সত্যের মাপকাঠি বলে রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাতার দাড় করাতে চায়, সাহাবাগণ (রা) এর কথা ও কাজকে রাসূলুল্লাহ (সা) এর কথা ও কাজের মত মূল্যায়ন করতে চায়, তারা একটু ভেবে দেখুন আল্লাহর বাণী:
.
অতএব তোমার রবের শপথ! তারা কখনই বিশ্বাস স্থাপনকারী হতে পারবেনা, যে পর্যন্ত তোমাকে তাদের সৃষ্ট বিরোধের বিচারক না করে, অতঃপর তুমি যে বিচার করবে তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করে এবং ওটা সন্তষ্ট চিত্তে কবূল না করে।
(সূরা নিসাঃ৬৫)
.
৯. যারা সাহাবাগণ (রা) কে সত্যের মাপকাঠি বলে রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাতার দাড় করাতে চায়, সাহাবাগণ (রা) এর কথা ও কাজকে রাসূলুল্লাহ (সা) এর কথা ও কাজের মত মূল্যায়ন করতে চায়, তারা একটু ভেবে দেখুন আল্লাহর বাণী:
لَّا تَجْعَلُوا۟ دُعَآءَ ٱلرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَآءِ بَعْضِكُم بَعْضًاۚ قَدْ يَعْلَمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمْ لِوَاذًاۚ فَلْيَحْذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
.
রাসূলের আহবানকে তোমরা একে অপরের প্রতি আহবানের মত গণ্য করনা; তোমাদের মধ্যে যারা চুপি চুপি সরে পড়ে আল্লাহ তাদেরকে জানেন। সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর কঠিন শাস্তি।
(সূরা নূরঃ৬৩)
.
১০. মুমিন কারা এ বিষয়ে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
রাসূলের আহবানকে তোমরা একে অপরের প্রতি আহবানের মত গণ্য করনা; তোমাদের মধ্যে যারা চুপি চুপি সরে পড়ে আল্লাহ তাদেরকে জানেন। সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর কঠিন শাস্তি।
(সূরা নূরঃ৬৩)
.
১০. মুমিন কারা এ বিষয়ে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَإِذَا كَانُوا۟ مَعَهُۥ عَلَىٰٓ أَمْرٍ جَامِعٍ لَّمْ يَذْهَبُوا۟ حَتَّىٰ يَسْتَـْٔذِنُوهُۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسْتَـْٔذِنُونَكَ أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۚ فَإِذَا ٱسْتَـْٔذَنُوكَ لِبَعْضِ شَأْنِهِمْ فَأْذَن لِّمَن شِئْتَ مِنْهُمْ وَٱسْتَغْفِرْ لَهُمُ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
তারাই মু’মিন যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনে এবং রাসূলের সঙ্গে সমষ্টিগত ব্যাপারে একত্র হলে তার অনুমতি ব্যতীত তারা সরে পড়েনা; যারা অনুমতি প্রার্থনা করে তারাই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলে বিশ্বাসী; অতএব তারা তাদের কোন কাজে বাইরে যাবার জন্য তোমার অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তুমি অনুমতি দিবে এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে; আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(সূরা নূরঃ৬২)
.
যারা জ্ঞানী তারাই বুঝতে পারবেন, এ আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা কাকে সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড সাব্যস্ত করেছেন।
(সূরা নূরঃ৬২)
.
যারা জ্ঞানী তারাই বুঝতে পারবেন, এ আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা কাকে সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড সাব্যস্ত করেছেন।
সাহাবাগণ (রা) কি একে অপরকে সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড হিসাবে মানতেন, না কি শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা) কে সত্যের মাপকাঠি/মানদন্ড হিসাবে মানতেন:
সাহাবাগণ (রা) সত্যের মাপকাঠি হলে তাঁরা কখনোই কোন বিষয়ে বিরোধ করতেন না! কারণ সবাই সত্যের মাপকাঠি বিরোধ হবে কার সাথে? আর বিরোধ করলেও তারা তার সমাধানের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট যেতেন না।
কারণ তারাই তো সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড, তাঁদের নিজ নিজ মতামত নির্ভুল কি না তা পরিমাপ করতে রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট যেতেন না।
.
কিন্তু যারা আহলে ইলম তারা সবাই জানেন যে, কোন বিষয়ে তাঁদের মতের অমিল হলে নিজ নিজ মতামত পরিমাপ করতে (সমাধানের জন্য) সাহাবাগণ (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিটক যেতেন এবং তিনি যে সমাধান দিতেন তা তাঁরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মেনে নিতেন! যেমনঃ-
.
عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ الْأَحْزَابِ لَا يُصَلِّيَنَّ أَحَدٌ الْعَصْرَ إِلَّا فِيْ بَنِيْ قُرَيْظَةَ فَأَدْرَكَ بَعْضُهُمْ الْعَصْرَ فِي الطَّرِيْقِ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لَا نُصَلِّيْ حَتَّى نَأْتِيَهَا وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلْ نُصَلِّيْ لَمْ يُرِدْ مِنَّا ذَلِكَ فَذُكِرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلَمْ يُعَنِّفْ وَاحِدًا مِنْهُمْ.
.
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাব যুদ্ধের দিন (যুদ্ধ শেষে) বললেন, বনূ কুরাইযায় না পৌঁছে কেউ ‘আসরের সালাত আদায় করবে না। তাদের একাংশের পথিমধ্যে আসরের সালাতের সময় হয়ে গেলে কেউ কেউ বললেন, আমরা সেখানে পৌঁছার আগে সালাত আদায় করব না। আবার কেউ কেউ বললেন, আমরা এখনই সালাত আদায় করব, সময় হলেও রাস্তায় সালাত আদায় করা যাবে না উদ্দেশ্য তা নয়। বিষয়টি নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বলা হলে তিনি তাদের কোন দলের প্রতিই অসন্তুষ্টি ব্যক্ত করেননি। (সহীহ বুখারী হাঃ৪১১৯ আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৮১৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৮১৬)
এ হাদীস থেকে জানা গেল সাহাবাগণ (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) আর কাউকে সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড মানতেন না। তাঁরা নিজেদের সত্যের মাপকাঠি মানে করলে তাঁদের মতামত নির্ভুল কি না তা পরিমাপ করতে রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট যেতেন না।
.
এছাড়া নিম্নের হাদীসটিতে বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করা হয়েছে:
কারণ তারাই তো সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড, তাঁদের নিজ নিজ মতামত নির্ভুল কি না তা পরিমাপ করতে রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট যেতেন না।
.
কিন্তু যারা আহলে ইলম তারা সবাই জানেন যে, কোন বিষয়ে তাঁদের মতের অমিল হলে নিজ নিজ মতামত পরিমাপ করতে (সমাধানের জন্য) সাহাবাগণ (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিটক যেতেন এবং তিনি যে সমাধান দিতেন তা তাঁরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মেনে নিতেন! যেমনঃ-
.
عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ الْأَحْزَابِ لَا يُصَلِّيَنَّ أَحَدٌ الْعَصْرَ إِلَّا فِيْ بَنِيْ قُرَيْظَةَ فَأَدْرَكَ بَعْضُهُمْ الْعَصْرَ فِي الطَّرِيْقِ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لَا نُصَلِّيْ حَتَّى نَأْتِيَهَا وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلْ نُصَلِّيْ لَمْ يُرِدْ مِنَّا ذَلِكَ فَذُكِرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلَمْ يُعَنِّفْ وَاحِدًا مِنْهُمْ.
.
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাব যুদ্ধের দিন (যুদ্ধ শেষে) বললেন, বনূ কুরাইযায় না পৌঁছে কেউ ‘আসরের সালাত আদায় করবে না। তাদের একাংশের পথিমধ্যে আসরের সালাতের সময় হয়ে গেলে কেউ কেউ বললেন, আমরা সেখানে পৌঁছার আগে সালাত আদায় করব না। আবার কেউ কেউ বললেন, আমরা এখনই সালাত আদায় করব, সময় হলেও রাস্তায় সালাত আদায় করা যাবে না উদ্দেশ্য তা নয়। বিষয়টি নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বলা হলে তিনি তাদের কোন দলের প্রতিই অসন্তুষ্টি ব্যক্ত করেননি। (সহীহ বুখারী হাঃ৪১১৯ আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৮১৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৮১৬)
এ হাদীস থেকে জানা গেল সাহাবাগণ (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) আর কাউকে সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড মানতেন না। তাঁরা নিজেদের সত্যের মাপকাঠি মানে করলে তাঁদের মতামত নির্ভুল কি না তা পরিমাপ করতে রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট যেতেন না।
.
এছাড়া নিম্নের হাদীসটিতে বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করা হয়েছে:
عَنْ عَلِىٍّ قَالَ بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- سَرِيَّةً وَاسْتَعْمَلَ عَلَيْهِمْ رَجُلاً مِنَ الأَنْصَارِ وَأَمَرَهُمْ أَنْ يَسْمَعُوا لَهُ وَيُطِيعُوا فَأَغْضَبُوهُ فِى شَىْءٍ فَقَالَ اجْمَعُوا لِى حَطَبًا. فَجَمَعُوا لَهُ ثُمَّ قَالَ أَوْقِدُوا نَارًا. فَأَوْقَدُوا ثُمَّ قَالَ أَلَمْ يَأْمُرْكُمْ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ تَسْمَعُوا لِى وَتُطِيعُوا قَالُوا بَلَى. قَالَ فَادْخُلُوهَا. قَالَ فَنَظَرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ فَقَالُوا إِنَّمَا فَرَرْنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- مِنَ النَّارِ. فَكَانُوا كَذَلِكَ وَسَكَنَ غَضَبُهُ وَطُفِئَتِ النَّارُ فَلَمَّا رَجَعُوا ذَكَرُوا ذَلِكَ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَوْ دَخَلُوهَا مَا خَرَجُوا مِنْهَا إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِى الْمَعْرُوفِ
.
“আলী (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা:) একটি সেনাদল যুদ্ধাভিযানে প্রেরণ করলেন। এক আনসারী ব্যক্তিকে তাদের সেনাপতি নিযুক্ত করলেন। এবং সাহাবীদেরকে তার কথা শুনা ও মানার জন্য নির্দেশ দিলেন। অতপর তাদের কোন আচরণে সেনাপতি রাগ করলেন। তিনি সকলকে লাকড়ি জমা করতে বললেন। সকলে লাকড়ি জমা করলো এরপর আগুন জ্বালাতে বললেন। সকলে আগুন জ্বালালো। তারপর সেনাপতি বললো রাসূলুল্লাহ (সা:) কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করার এবং আমার কথা শুনা ও মানার নির্দেশ দেন নাই? সকলেই বললো, হ্যা। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সকলেই আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়। সাহাবীগণ একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলেন। এবং বললেন, আমরাতো আগুন থেকে বাঁচার জন্যই রাসূলুল্লাহ (সা:) এর কাছে এসেছি। এ অবস্থায় কিছুক্ষন পর তার রাগ ঠান্ডা হলো এবং আগুনও নিভে গেল। যখন সাহাবারা মদীনায় প্রত্যাবর্তণ করলেন তখন বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সা:) এর কাছে উপস্থাপন করা হলো। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন ‘তারা যদি আমীরের কথা মতো আগুনে ঝাঁপ দিতো তাহলে তারা আর কখনোই তা থেকে বের হতে পারতো না। প্রকৃতপক্ষে আনুগত্য কেবল ন্যায় এবং সৎ কাজেই।”
(সহীহ মুসলিম হা:নং: ৪৮৭২, সহীহ বুখারী হা: নং: ৪৩৪০, সহীহ মুসলিম বাংলা; ইসলামিক ফাউন্ডেশন কতৃক তরজমা; হা: নং: ৪৬১৫।)
.
“আলী (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা:) একটি সেনাদল যুদ্ধাভিযানে প্রেরণ করলেন। এক আনসারী ব্যক্তিকে তাদের সেনাপতি নিযুক্ত করলেন। এবং সাহাবীদেরকে তার কথা শুনা ও মানার জন্য নির্দেশ দিলেন। অতপর তাদের কোন আচরণে সেনাপতি রাগ করলেন। তিনি সকলকে লাকড়ি জমা করতে বললেন। সকলে লাকড়ি জমা করলো এরপর আগুন জ্বালাতে বললেন। সকলে আগুন জ্বালালো। তারপর সেনাপতি বললো রাসূলুল্লাহ (সা:) কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করার এবং আমার কথা শুনা ও মানার নির্দেশ দেন নাই? সকলেই বললো, হ্যা। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সকলেই আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়। সাহাবীগণ একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলেন। এবং বললেন, আমরাতো আগুন থেকে বাঁচার জন্যই রাসূলুল্লাহ (সা:) এর কাছে এসেছি। এ অবস্থায় কিছুক্ষন পর তার রাগ ঠান্ডা হলো এবং আগুনও নিভে গেল। যখন সাহাবারা মদীনায় প্রত্যাবর্তণ করলেন তখন বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সা:) এর কাছে উপস্থাপন করা হলো। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন ‘তারা যদি আমীরের কথা মতো আগুনে ঝাঁপ দিতো তাহলে তারা আর কখনোই তা থেকে বের হতে পারতো না। প্রকৃতপক্ষে আনুগত্য কেবল ন্যায় এবং সৎ কাজেই।”
(সহীহ মুসলিম হা:নং: ৪৮৭২, সহীহ বুখারী হা: নং: ৪৩৪০, সহীহ মুসলিম বাংলা; ইসলামিক ফাউন্ডেশন কতৃক তরজমা; হা: নং: ৪৬১৫।)
এ হাদীস থেকে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, সাহাবাগণ (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) ছাড়া অন্য কোন সাহাবী (রা) কে সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড মনে করতেন না। তাই তাঁরা তাঁদের আমীরের নির্দেশ শরীয়ত সম্মত নয় ভেবে আনুগত্য করেননি। এবং এই সিদ্ধান্ত কতটুকু নির্ভুল হয়েছে তা জানার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিটক বিষয়টি উপস্থাপন করেন। আর রাসূলুল্লাহ (সা) নিজেও সাহাবাগণ (রা) কে সত্যের মাপকাঠি সাব্যস্ত করে বলেননি, তোমরা তো সবাই সত্যের মাপকাঠি যার কাছে যেটা ভালো লাগে তাই সেটাই করবে, তাহলে নিরাপদে জান্নাতে যেতে পারবে!
বরং তিনি সাহাবাগণ (রা) কে সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড সাব্যস্ত না করে বলেনঃ "তারা যদি আমীরের কথা মতো আগুনে ঝাঁপ দিতো তাহলে তারা আর কখনোই তা থেকে বের হতে পারতো না। প্রকৃতপক্ষে আনুগত্য কেবল ন্যায় এবং সৎ কাজেই।"
.
সুুতরাং 'সাহাবাগণ (রা) সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড' এ কথা না সাহাবাগণ (রা) মনে করতেন, আর না রাসূলুল্লাহ (সা) তাদের সত্যের মাপকাঠি হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন। সাহাবাগণ (রা) যদি সত্যের মাপকাঠি হতেন, তাহলে তারা রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে তাঁদের মতামত পরিমাপ করতে, নির্ভুল সমাধান নিতে যেতেন না। সুুতরাং সত্যের মাপকাঠি সাহাবাগণ (রা) নন, যদিও তাঁরা সত্যবাদী, সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত। আর রাসূলুল্লাহ (সা) ছাড়া অন্য কোন উম্মতকে সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড এর দাবী করার অর্থই হলো তাঁদের রিসালাতের আসনে বসানো।
বরং তিনি সাহাবাগণ (রা) কে সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড সাব্যস্ত না করে বলেনঃ "তারা যদি আমীরের কথা মতো আগুনে ঝাঁপ দিতো তাহলে তারা আর কখনোই তা থেকে বের হতে পারতো না। প্রকৃতপক্ষে আনুগত্য কেবল ন্যায় এবং সৎ কাজেই।"
.
সুুতরাং 'সাহাবাগণ (রা) সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড' এ কথা না সাহাবাগণ (রা) মনে করতেন, আর না রাসূলুল্লাহ (সা) তাদের সত্যের মাপকাঠি হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন। সাহাবাগণ (রা) যদি সত্যের মাপকাঠি হতেন, তাহলে তারা রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে তাঁদের মতামত পরিমাপ করতে, নির্ভুল সমাধান নিতে যেতেন না। সুুতরাং সত্যের মাপকাঠি সাহাবাগণ (রা) নন, যদিও তাঁরা সত্যবাদী, সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত। আর রাসূলুল্লাহ (সা) ছাড়া অন্য কোন উম্মতকে সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড এর দাবী করার অর্থই হলো তাঁদের রিসালাতের আসনে বসানো।
সুওয়াল-জাওয়াব: সত্যের মাপকাঠি প্রসঙ্গে:
১. সত্যের মাপকাঠি এর সংজ্ঞা কি?
.
২. সত্যের মাপকাঠি হওয়ার শর্ত কি কি?
.
৩. যিনি সত্যের মাপকাঠি হবেন, তাঁর কোন নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যাওয়া যাবে কি না?
.
৪. যিনি সত্যের মাপকাঠি হবেন তাঁকে বা তাঁর কোন মতামতকে অন্য কোন মহান ব্যাক্তির কথা বা কাজ দ্বারা পরিমাপ করা যাবে কি না?
.
৫. যিনি সত্যের মাপকাঠি তাঁর অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যে হক বা সত্য নিহিত আছে কি না? এবং তাঁর কোন অবাধ্যতার মধ্যে বাতিল বা অসত্য নিহিত আছে কি না?
.
৬. কেউ যদি সত্যের মাপকাঠি'র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যুদ্ধ করে, এমনকি হত্যা করে তাহলে কি ঐ ব্যাক্তি মুমিন মুসলিম বলে গণ্য হবেন?
.
জাওয়াবঃ
১. মিয়ারে হক বা সত্যের মাপকাঠি শব্দের অর্থ হলো নির্ভুল পরিমাপক, নিখুঁত তুলাদণ্ড, নির্ভুল মানদণ্ড ইত্যাদি। সত্যের মাপকাঠি বা মিয়ারে হক বলতে বুঝায়, যার অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যে হক বা সত্য নিহিত আছে এবং যার অবাধ্যতার/বিরোধীতার মধ্যে বাতিল বা অসত্য নিহিত আছে।
.
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَصَدُّوا۟ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَشَآقُّوا۟ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ ٱلْهُدَىٰ لَن يَضُرُّوا۟ ٱللَّهَ شَيْـًٔا وَسَيُحْبِطُ أَعْمَٰلَهُمْ
.
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে, আল্লাহর পথে বাধা দিয়েছে এবং তাদের নিকট হিদায়াতের পথ সুস্পষ্ট হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করেছে, তারা আল্লাহর কোনই ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। আর শীঘ্রই তিনি তাদের আমলসমূহ নিষ্ফল তথা #বাতিল করে দেবেন।
(সূরা মুহাম্মদঃ৩২)
.
রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে সাহাবাগণ (রা) কে তুলনা করা হারাম। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
২. সত্যের মাপকাঠি হওয়ার শর্ত কি কি?
.
৩. যিনি সত্যের মাপকাঠি হবেন, তাঁর কোন নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যাওয়া যাবে কি না?
.
৪. যিনি সত্যের মাপকাঠি হবেন তাঁকে বা তাঁর কোন মতামতকে অন্য কোন মহান ব্যাক্তির কথা বা কাজ দ্বারা পরিমাপ করা যাবে কি না?
.
৫. যিনি সত্যের মাপকাঠি তাঁর অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যে হক বা সত্য নিহিত আছে কি না? এবং তাঁর কোন অবাধ্যতার মধ্যে বাতিল বা অসত্য নিহিত আছে কি না?
.
৬. কেউ যদি সত্যের মাপকাঠি'র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যুদ্ধ করে, এমনকি হত্যা করে তাহলে কি ঐ ব্যাক্তি মুমিন মুসলিম বলে গণ্য হবেন?
.
জাওয়াবঃ
১. মিয়ারে হক বা সত্যের মাপকাঠি শব্দের অর্থ হলো নির্ভুল পরিমাপক, নিখুঁত তুলাদণ্ড, নির্ভুল মানদণ্ড ইত্যাদি। সত্যের মাপকাঠি বা মিয়ারে হক বলতে বুঝায়, যার অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যে হক বা সত্য নিহিত আছে এবং যার অবাধ্যতার/বিরোধীতার মধ্যে বাতিল বা অসত্য নিহিত আছে।
.
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَصَدُّوا۟ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَشَآقُّوا۟ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ ٱلْهُدَىٰ لَن يَضُرُّوا۟ ٱللَّهَ شَيْـًٔا وَسَيُحْبِطُ أَعْمَٰلَهُمْ
.
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে, আল্লাহর পথে বাধা দিয়েছে এবং তাদের নিকট হিদায়াতের পথ সুস্পষ্ট হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করেছে, তারা আল্লাহর কোনই ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। আর শীঘ্রই তিনি তাদের আমলসমূহ নিষ্ফল তথা #বাতিল করে দেবেন।
(সূরা মুহাম্মদঃ৩২)
.
রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে সাহাবাগণ (রা) কে তুলনা করা হারাম। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
لَّا تَجْعَلُوا۟ دُعَآءَ ٱلرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَآءِ بَعْضِكُم بَعْضًاۚ قَدْ يَعْلَمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمْ لِوَاذًاۚ فَلْيَحْذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
.
তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো রাসূলকে সেভাবে ডেকো না; তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন। অতএব যারা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সা. এর) নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে।
(সূরা নূরঃ৬৩)
.
২. সত্যের মাপকাঠি হওয়ার প্রধান শর্ত তিনি ওহী প্রাপ্ত হবেন, তিনি মাসূম হবেন এবং তাঁর আদেশ মান্য করাই আল্লাহর আদেশ পালন করা বলে গণ্য হবে। আল্লাহর ভাষায়
.
وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلْهَوَىٰٓ
إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْىٌ يُوحَىٰ
.
আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়।
(সূরা নাজমঃ২-৩)
.
তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো রাসূলকে সেভাবে ডেকো না; তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন। অতএব যারা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সা. এর) নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে।
(সূরা নূরঃ৬৩)
.
২. সত্যের মাপকাঠি হওয়ার প্রধান শর্ত তিনি ওহী প্রাপ্ত হবেন, তিনি মাসূম হবেন এবং তাঁর আদেশ মান্য করাই আল্লাহর আদেশ পালন করা বলে গণ্য হবে। আল্লাহর ভাষায়
.
وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلْهَوَىٰٓ
إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْىٌ يُوحَىٰ
.
আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়।
(সূরা নাজমঃ২-৩)
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا
.
যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি।
(সূরা নিসাঃ৮০)
.
৩. যিনি সত্যের মাপকাঠি হবেন তাঁর কোন নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যাওয়ার অধিকার কোন মুমিন মুসলিমের নাই।
.
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْۗ وَمَن يَعْصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَٰلًا مُّبِينًا
.
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিনা নারীর সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবেনা। কেহ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সেতো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট।
(আহযাবঃ৩৬)
.
৪. যিনি সত্যের মাপকাঠি হবেন তাকে বা তাঁর কোন মতামতকে কোন ব্যাক্তির কথা বা কাজ দ্বারা পরিমাপ করা যাবে না বরং সকল ব্যাক্তির কথা বা কাজ তাঁকে দিয়ে পরিমাপ করতে হবে। ُ عِمْرَانَ بْنَ حُصَيْنٍ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " الْحَيَاءُ لاَ يَأْتِي إِلاَّ بِخَيْرٍ ". فَقَالَ بُشَيْرُ بْنُ كَعْبٍ مَكْتُوبٌ فِي الْحِكْمَةِ إِنَّ مِنَ الْحَيَاءِ وَقَارًا، وَإِنَّ مِنَ الْحَيَاءِ سَكِينَةً. فَقَالَ لَهُ عِمْرَانُ أُحَدِّثُكَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَتُحَدِّثُنِي عَنْ صَحِيفَتِكَ.
.
ইমরান ইবনু হুসায়ন হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লজ্জাশীলতা কল্যাণ ছাড়া কোন কিছুই নিয়ে আনে না। তখন বুশায়র ইবনু কা’ব বললেনঃ হিকমাতের পুস্তকে লিখা আছে যে, কোন্ কোন্ লজ্জাশীলতা ধৈর্যশীলতা বয়ে আনে। আর কোন্ কোন লজ্জাশীলতা এনে দেয় শান্তি ও সুখ। তখন ‘ইমরান বললেনঃ আমি তোমার কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছি। আর তুমি কিনা (তার স্থলে) আমাকে তোমার পুস্তিকা থেকে বর্ণনা করছ।
(সহীহ বুখারী হাঃ৬১১৭, মুসলিম১/১২, হাঃ ৩৭, আহমাদ ২০০১)
.
৫. যিনি সত্যের মাপকাঠি তাঁর অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যো হক বা সত্য নিহিত আছে এবং তাঁর কোন অবাধ্যতার/বিরোধীতার মধ্যে বাতিল বা অসত্য নিহিত আছে। আল্লাহ তাঁর রাসূল (সা) কে বলেনঃ
قُلْ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلْكَٰفِرِينَ
.
বল, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর’। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না।
(সূরা ইমরানঃ৩২)
.
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُۥ كَانَت تَّأْتِيهِمْ رُسُلُهُم بِٱلْبَيِّنَٰتِ فَقَالُوٓا۟ أَبَشَرٌ يَهْدُونَنَا فَكَفَرُوا۟ وَتَوَلَّوا۟ۚ وَّٱسْتَغْنَى ٱللَّهُۚ وَٱللَّهُ غَنِىٌّ حَمِيدٌ
.
এটি এ জন্য যে, তাদের রাসূলগণ তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আসত, অথচ তারা বলত, মানুষই কি আমাদের পথ প্রদর্শন করবে? অতঃপর তারা কুফরী করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল। আর আল্লাহ বে-পরওয়াই দেখালেন এবং আল্লাহ অভাবমুক্ত পরম, প্রশংসিত।
(সূরা তাগাবুনঃ৬)
.
৬. কেউ যদি সত্যের মাপকাঠি'র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যুদ্ধ করে কিংবা হত্যা করে তাহলে ঐ ব্যাক্তি মুমিন মুসলিম হিসাবে গণ্য হবে না। এতদূর নয়, কেউ সত্যের মাপকাঠি'র কোন রায় বা সিদ্ধান্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে না নেয় তাহলে ঐ ব্যাক্তি মুমিন বলে গণ্য হবে না। আল্লাহর ভাষায়
.
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا۟ فِىٓ أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا۟ تَسْلِيمًا
.
অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।
(সূরা নিসাঃ৬৫)
.
বি.দ্রঃ পূর্বের একটি পোস্টে এ প্রশ্নগুলো করেছিলাম কিন্তু কেউ এর সঠিক জবাব দিতে না পারায় আমি সুওয়াল জাওয়াব শিরনামে এই পোস্টটি করলাম। কারো নিকট কোন প্রশ্নের জবাব ভুল বলে মনে হলে তা দলিলসহ ধরে দিতে পারেন। সংশোধন করে নিব।
.
مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا
.
যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি।
(সূরা নিসাঃ৮০)
.
৩. যিনি সত্যের মাপকাঠি হবেন তাঁর কোন নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যাওয়ার অধিকার কোন মুমিন মুসলিমের নাই।
.
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْۗ وَمَن يَعْصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَٰلًا مُّبِينًا
.
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিনা নারীর সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবেনা। কেহ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সেতো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট।
(আহযাবঃ৩৬)
.
৪. যিনি সত্যের মাপকাঠি হবেন তাকে বা তাঁর কোন মতামতকে কোন ব্যাক্তির কথা বা কাজ দ্বারা পরিমাপ করা যাবে না বরং সকল ব্যাক্তির কথা বা কাজ তাঁকে দিয়ে পরিমাপ করতে হবে। ُ عِمْرَانَ بْنَ حُصَيْنٍ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " الْحَيَاءُ لاَ يَأْتِي إِلاَّ بِخَيْرٍ ". فَقَالَ بُشَيْرُ بْنُ كَعْبٍ مَكْتُوبٌ فِي الْحِكْمَةِ إِنَّ مِنَ الْحَيَاءِ وَقَارًا، وَإِنَّ مِنَ الْحَيَاءِ سَكِينَةً. فَقَالَ لَهُ عِمْرَانُ أُحَدِّثُكَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَتُحَدِّثُنِي عَنْ صَحِيفَتِكَ.
.
ইমরান ইবনু হুসায়ন হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লজ্জাশীলতা কল্যাণ ছাড়া কোন কিছুই নিয়ে আনে না। তখন বুশায়র ইবনু কা’ব বললেনঃ হিকমাতের পুস্তকে লিখা আছে যে, কোন্ কোন্ লজ্জাশীলতা ধৈর্যশীলতা বয়ে আনে। আর কোন্ কোন লজ্জাশীলতা এনে দেয় শান্তি ও সুখ। তখন ‘ইমরান বললেনঃ আমি তোমার কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছি। আর তুমি কিনা (তার স্থলে) আমাকে তোমার পুস্তিকা থেকে বর্ণনা করছ।
(সহীহ বুখারী হাঃ৬১১৭, মুসলিম১/১২, হাঃ ৩৭, আহমাদ ২০০১)
.
৫. যিনি সত্যের মাপকাঠি তাঁর অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যো হক বা সত্য নিহিত আছে এবং তাঁর কোন অবাধ্যতার/বিরোধীতার মধ্যে বাতিল বা অসত্য নিহিত আছে। আল্লাহ তাঁর রাসূল (সা) কে বলেনঃ
قُلْ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلْكَٰفِرِينَ
.
বল, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর’। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না।
(সূরা ইমরানঃ৩২)
.
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُۥ كَانَت تَّأْتِيهِمْ رُسُلُهُم بِٱلْبَيِّنَٰتِ فَقَالُوٓا۟ أَبَشَرٌ يَهْدُونَنَا فَكَفَرُوا۟ وَتَوَلَّوا۟ۚ وَّٱسْتَغْنَى ٱللَّهُۚ وَٱللَّهُ غَنِىٌّ حَمِيدٌ
.
এটি এ জন্য যে, তাদের রাসূলগণ তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আসত, অথচ তারা বলত, মানুষই কি আমাদের পথ প্রদর্শন করবে? অতঃপর তারা কুফরী করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল। আর আল্লাহ বে-পরওয়াই দেখালেন এবং আল্লাহ অভাবমুক্ত পরম, প্রশংসিত।
(সূরা তাগাবুনঃ৬)
.
৬. কেউ যদি সত্যের মাপকাঠি'র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যুদ্ধ করে কিংবা হত্যা করে তাহলে ঐ ব্যাক্তি মুমিন মুসলিম হিসাবে গণ্য হবে না। এতদূর নয়, কেউ সত্যের মাপকাঠি'র কোন রায় বা সিদ্ধান্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে না নেয় তাহলে ঐ ব্যাক্তি মুমিন বলে গণ্য হবে না। আল্লাহর ভাষায়
.
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا۟ فِىٓ أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا۟ تَسْلِيمًا
.
অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।
(সূরা নিসাঃ৬৫)
.
বি.দ্রঃ পূর্বের একটি পোস্টে এ প্রশ্নগুলো করেছিলাম কিন্তু কেউ এর সঠিক জবাব দিতে না পারায় আমি সুওয়াল জাওয়াব শিরনামে এই পোস্টটি করলাম। কারো নিকট কোন প্রশ্নের জবাব ভুল বলে মনে হলে তা দলিলসহ ধরে দিতে পারেন। সংশোধন করে নিব।
সত্যের মাপকাঠির হাকীকত:
ব্রেহলবীরা রাসূলুল্লাহ (সা) কে হাজির নাজির, ইলমে গাইবের অধিকারী মনে রাসূলুল্লাহ (সা) কে আল্লাহর আসনে বসিয়ে দিয়েছন, আর তাদের এই শিরকি আকিদার বিরোধীতা করলে, প্রতিবাদ করলে নবীর দুশমন বলে ফতুয়া দেয়। ঠিক তেমনি দেওবন্দীরা সাহাবাগণ (রা) কে সত্যের মাপকাঠি মনে করে রিসালাতের আসনে বসিয়ে দিয়েছেন। তাদের এই ভ্রান্ত, কুফরী আকিদার বিরোধীতা করলে, তাদের এই ভ্রান্ত আকিদা খন্ডন করলে সাহাবী বিদ্বেষী বলে ফতুয়া দেয়।
.
এর মূল হাকীকত হলোঃ দেওবন্দীরা শুধু মাত্র সাহাবাগণ (রা) কে সত্যের মাপকাঠি বলে তাঁদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা) এর রিসালাতের আসনে বসাইনি বরং তারা সাহাবাগণ (রা) এর পরবর্তী প্রজন্মকেও সত্যের মাপকাঠি বলে রিসালাতের আসনে বসিয়ে দিয়েছেন!
.
আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর সমালোচনা করতে গিয়ে দেওবন্দী আলেম ইউসুফ বিন্নোরী বলেনঃ
فاذا لم يكن اصحاب رسول الله (ص) معيار للحق و ميزانا لادين فمن الناس بعدهم .
"রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাহাবাগণ যদি দ্বীন ইসলামের মাপকাঠি ও সত্যের মানদন্ড না হন তাহলে তাদের পর আর কোন লোকগুলো দ্বীনের ও সত্যের মাপকাঠি হবে?"
(আল উস্তাজুল মাওদুদী, পৃঃ৪৫)
.
দেখুন, যাঁরা (সাহাবা) দ্বীন ইসলামের অনুসারী ছিলেন, তাঁদেরকে সত্যের মাপকাঠি বলেই শান্ত হননি বরং তাঁদের পরবর্তীদেরও সত্যের মাপকাঠি বলে রিসালাতের আসনে বসিয়ে দিয়েছেন! নাউযূবিল্লাহ!!
.
শুধু এতোটুকুই নয় বরং এই দেওবন্দীগণ নিজেদেরকেই সত্যের মাপকাঠি, তাদের ইত্তেবার উপরই সফলতা, তারাই মানদন্ড বলে দাবি করে থাবেন! দেওবন্দীদের গুরু রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী বলেন,
"মনযোগ দিয়ে শোন! সত্য তা-ই যা রশীদ আহমদের মুখ থেকে বের হয়। আমি শপথ করে বলছি, আমি কিছুই না, কিন্তু এ যুগের সৎপথ প্রাপ্তি এবং সফলতা নির্ভর করে আমার ইত্তিবার উপর।"
(তাযকিরাত আর-রশীদ, ২য় খন্ড, পৃঃ১৭; তাবলীগ জামাআত ও দেওবন্দীগণ, পৃঃ২২২)
.
নিজের ইত্তিবার উপরই সফলতা নির্ভর করে- এমন দাবি কি সাহাবাগণ (রা) করেছেন? কখনোই না। যে দাবি রাসূলুল্লাহ (সা) ছাড়া আর কেউ করেন নি, সে দাবি দেওবন্দীগণ করে কি তারা নিজেদের রিসালাতের আসনে বসিয়ে দিচ্ছেন না?
.
রাসূলুল্লাহ (সা) ব্যতীত আর কোন ব্যক্তিই সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড নন। এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত এর সহীহ ও নির্ভুল আকিদা। রাসূলুল্লাহ (সা) এর প্রতি ঈমান এনে তাঁর আনুগত্য করার উপরেই হক-বাতিল, সফলতা-ব্যর্থতা, জান্নাত-জাহান্নাম নির্ভর করে। এ বিষয়ে শতাধিক দলিল কুরআন হাদীসে রয়েছে।
.
عن جابر رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "مثلي ومثلكم كمثل رجل أوقد ناراً فجعل الجنادب والفراش يقعن فيها وهو يذبهن عنها وأنا آخذ بحجزكم عن النار، وأنتم تفلتون من يدي" (رواه مسلم).
.
জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার ও তোমাদের উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মত যে আগুন প্রজ্জ্বলিত করল। অতঃপর তাতে উচ্চুঙ্গ ও পতঙ্গ পড়তে আরম্ভ করল, আর সে ব্যক্তি তা হতে তাদেরকে বাধা দিতে লাগল। আমিও তোমাদের কোমর ধরে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাচ্ছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে গিয়ে (জাহান্নামের আগুনে) পতিত হচ্ছ।’’
.
এর মূল হাকীকত হলোঃ দেওবন্দীরা শুধু মাত্র সাহাবাগণ (রা) কে সত্যের মাপকাঠি বলে তাঁদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা) এর রিসালাতের আসনে বসাইনি বরং তারা সাহাবাগণ (রা) এর পরবর্তী প্রজন্মকেও সত্যের মাপকাঠি বলে রিসালাতের আসনে বসিয়ে দিয়েছেন!
.
আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর সমালোচনা করতে গিয়ে দেওবন্দী আলেম ইউসুফ বিন্নোরী বলেনঃ
فاذا لم يكن اصحاب رسول الله (ص) معيار للحق و ميزانا لادين فمن الناس بعدهم .
"রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাহাবাগণ যদি দ্বীন ইসলামের মাপকাঠি ও সত্যের মানদন্ড না হন তাহলে তাদের পর আর কোন লোকগুলো দ্বীনের ও সত্যের মাপকাঠি হবে?"
(আল উস্তাজুল মাওদুদী, পৃঃ৪৫)
.
দেখুন, যাঁরা (সাহাবা) দ্বীন ইসলামের অনুসারী ছিলেন, তাঁদেরকে সত্যের মাপকাঠি বলেই শান্ত হননি বরং তাঁদের পরবর্তীদেরও সত্যের মাপকাঠি বলে রিসালাতের আসনে বসিয়ে দিয়েছেন! নাউযূবিল্লাহ!!
.
শুধু এতোটুকুই নয় বরং এই দেওবন্দীগণ নিজেদেরকেই সত্যের মাপকাঠি, তাদের ইত্তেবার উপরই সফলতা, তারাই মানদন্ড বলে দাবি করে থাবেন! দেওবন্দীদের গুরু রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী বলেন,
"মনযোগ দিয়ে শোন! সত্য তা-ই যা রশীদ আহমদের মুখ থেকে বের হয়। আমি শপথ করে বলছি, আমি কিছুই না, কিন্তু এ যুগের সৎপথ প্রাপ্তি এবং সফলতা নির্ভর করে আমার ইত্তিবার উপর।"
(তাযকিরাত আর-রশীদ, ২য় খন্ড, পৃঃ১৭; তাবলীগ জামাআত ও দেওবন্দীগণ, পৃঃ২২২)
.
নিজের ইত্তিবার উপরই সফলতা নির্ভর করে- এমন দাবি কি সাহাবাগণ (রা) করেছেন? কখনোই না। যে দাবি রাসূলুল্লাহ (সা) ছাড়া আর কেউ করেন নি, সে দাবি দেওবন্দীগণ করে কি তারা নিজেদের রিসালাতের আসনে বসিয়ে দিচ্ছেন না?
.
রাসূলুল্লাহ (সা) ব্যতীত আর কোন ব্যক্তিই সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড নন। এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত এর সহীহ ও নির্ভুল আকিদা। রাসূলুল্লাহ (সা) এর প্রতি ঈমান এনে তাঁর আনুগত্য করার উপরেই হক-বাতিল, সফলতা-ব্যর্থতা, জান্নাত-জাহান্নাম নির্ভর করে। এ বিষয়ে শতাধিক দলিল কুরআন হাদীসে রয়েছে।
.
عن جابر رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "مثلي ومثلكم كمثل رجل أوقد ناراً فجعل الجنادب والفراش يقعن فيها وهو يذبهن عنها وأنا آخذ بحجزكم عن النار، وأنتم تفلتون من يدي" (رواه مسلم).
.
জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার ও তোমাদের উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মত যে আগুন প্রজ্জ্বলিত করল। অতঃপর তাতে উচ্চুঙ্গ ও পতঙ্গ পড়তে আরম্ভ করল, আর সে ব্যক্তি তা হতে তাদেরকে বাধা দিতে লাগল। আমিও তোমাদের কোমর ধরে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাচ্ছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে গিয়ে (জাহান্নামের আগুনে) পতিত হচ্ছ।’’
সহীহ মুসলিম ২২৮৫, আহমাদ ১৪৪৭১, ১৪৭৯১।
.
এ হাদীস সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করে, রাসূলুল্লাহ (সা) ও সাহাবাগণ (রা) উভয় সমান নন, বরং রাসূলুল্লাহ (সা) হলেন সত্যের মাপকাঠি ও সাহাবাগণ (রা) হলেন সত্যপন্থী, তাঁর (সা) অনুসারী। যারা (সাহাবাগণ) রাসূলুল্লাহ (সা) এর প্রতি ঈমান এনে তাঁর আনুগত্যের উপরে অটল ছিলেন তারাই জান্নাতি। পক্ষান্তরে যারা (মুরতাদ) রাসূলুল্লাহ (সা) প্রতি ঈমানে পরবর্তীতে ঈমান ও আনুগত্যের গন্ডি থেকে বের হয়ে গিয়েছে, ছুটে গেছে কিংবা যারা (কাফের) রাসূলুল্লাহ (সা) আহবানে সাড়াই দেয়নি অথবা যারা (মুনাফিক) রাসূলুল্লাহ (সা) অনুসারী হওয়ার দাবি করে, যথাযথ আনুগত্য না করে, আনুগত্যের গন্ডি থেকে ছুটে গেছে তারা জাহান্নামি। অর্থাৎ হক#বাতিল নির্ভর করছে রাসূলুল্লাহ (সা) উপর কারণ তিনিই সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড।
.
একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)ই হলেন সত্যের মাপকাঠি। তিনিই মানুষের মাঝে সত্য মিথ্যার হক #বাতিল এর পার্থক্যকারী!
.
ُ ﻓَﻤَﻦْ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﺍﻟﻠﻪَ
ﻭَﻣَﻦْ ﻋَﺼَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺪْ ﻋَﺼَﻰ ﺍﻟﻠﻪَ
ﻭَﻣُﺤَﻤَّﺪٌ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﺮْﻕٌ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ .
.
যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করল, তারা আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবাধ্যতা করল, তারা আসলে আল্লাহরই অবাধ্যতা করল। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মানুষের মাঝে (সত্য মিথ্যার) পার্থক্যের মাপকাঠি।
(সহীহ বুখারী হাঃ৭২৮১; আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৪)
.
এ হাদীস সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করে, রাসূলুল্লাহ (সা) ও সাহাবাগণ (রা) উভয় সমান নন, বরং রাসূলুল্লাহ (সা) হলেন সত্যের মাপকাঠি ও সাহাবাগণ (রা) হলেন সত্যপন্থী, তাঁর (সা) অনুসারী। যারা (সাহাবাগণ) রাসূলুল্লাহ (সা) এর প্রতি ঈমান এনে তাঁর আনুগত্যের উপরে অটল ছিলেন তারাই জান্নাতি। পক্ষান্তরে যারা (মুরতাদ) রাসূলুল্লাহ (সা) প্রতি ঈমানে পরবর্তীতে ঈমান ও আনুগত্যের গন্ডি থেকে বের হয়ে গিয়েছে, ছুটে গেছে কিংবা যারা (কাফের) রাসূলুল্লাহ (সা) আহবানে সাড়াই দেয়নি অথবা যারা (মুনাফিক) রাসূলুল্লাহ (সা) অনুসারী হওয়ার দাবি করে, যথাযথ আনুগত্য না করে, আনুগত্যের গন্ডি থেকে ছুটে গেছে তারা জাহান্নামি। অর্থাৎ হক#বাতিল নির্ভর করছে রাসূলুল্লাহ (সা) উপর কারণ তিনিই সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড।
.
একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)ই হলেন সত্যের মাপকাঠি। তিনিই মানুষের মাঝে সত্য মিথ্যার হক #বাতিল এর পার্থক্যকারী!
.
ُ ﻓَﻤَﻦْ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﺍﻟﻠﻪَ
ﻭَﻣَﻦْ ﻋَﺼَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺪْ ﻋَﺼَﻰ ﺍﻟﻠﻪَ
ﻭَﻣُﺤَﻤَّﺪٌ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﺮْﻕٌ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ .
.
যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করল, তারা আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবাধ্যতা করল, তারা আসলে আল্লাহরই অবাধ্যতা করল। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মানুষের মাঝে (সত্য মিথ্যার) পার্থক্যের মাপকাঠি।
(সহীহ বুখারী হাঃ৭২৮১; আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৪)
অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা- খুব মন দিয়ে পড়লাম। ভালো লাগল।
উত্তরমুছুন