মৃত দেহ অক্ষত থাকা ওলী হবার কোনো আলামত নয়
লাশ না পচার কারণ
https://www.facebook.com/
এই বৌদ্ধের দেহ পচেনি, সেও কি তাহলে ওলী আল্লাহ!!!
https://fb.watch/bxO96Jpkde/
লাশ পচার জন্য পরিবেশ বহুত বড় ভুমিকা পালন করে। যেমন অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম পরিবেশ লাশ পচায় বাধা হয়ে দাড়ায়। কারণ অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা লাশ পচাতে দায়ী মথ, পোকা, অনুজীব মেরে ফেলে, অনেক সময় এরা বাইরে বের হতে চায় না। অনুকুল তাপমাত্রা না হলে লাশ সহজে পচে নাহ। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা কেটে গেলে আবারও শরীর স্বাভাবিকভাবে পচতে শুরু করে কিন্তু গরমে একবার শরীর হাইড্রেট হয়ে গেলে তা মমি হয়ে যায়।
কেউ বর্ষাকালে মারা গেলে তার দেহ কত কিভাবে পঁচবে, দেহ ফুলে ফেঁপে উঠবে, কত গন্ধ হবে এ নিয়ে কথাবার্তা হয়। কিন্তু অনেক সময় বর্ষার পানি বা জলাভূমি বা পানি পূর্ন জায়গায় মৃত দেহ পচার ভিলেন হয়ে ওঠে৷ কারণ অতিরিক্ত পানিতে ওইসব মথ, ম্যাগেট ব্যক্টেরিয়াগুলো জন্মাতে পারে না। পানি মাঝেমধ্যে মৃতদেহ মমি করে ফেলে৷ এজন্য নদীর কাছে কবর দেওয়া তাজা লাশ পাবার রেকর্ড বেশি।
মৃতদেহ পচাতে ম্যাগট বা ওইসব অনুজীবগুলোর অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে। তাই অক্সিজেনের অভাবেও অনেক সময় লাশ পচে নাহহহহ।
লাশের পচার হার মাটির উপরও অনেকটা নির্ভর করে৷ যেমন মাটি লবনাক্ত হলে, বেশি পরিমাণে আর্সেনিক থাকলে মৃতদেহ প্রকৃতিকভাবে সংরক্ষিত হয়ে যায়। মাটিতে পচনে সহায়তাকারী অনুজীব থাকার অনুকূল পরিবেশও দরকার পড়ে। এজন্য কবরস্থানে অক্ষত লাশ পাওয়া যায় নাহহহ।
একজন চ্যাঙড়া বালক আর একজন ভুড়িওয়ালার মৃতদেহর ভিতর কোনটা আগে পঁচবে??? ওই ভুড়িওয়ালা। কারণ যার দেহে যতবেশি অর্গানিক ম্যাটেরিয়াল থাকবে সে তত তাড়াতাড়ি পচবে। সেই হিসেবে মমি হবার চান্স ওই চ্যাংড়া ছেলেটারই বেশি।এজন্য ছোট বাচ্চাদের মমি হবার চান্স বেশি।
অধিকাংশ সংস্কৃতিতেই মৃতদেহ সৎকারের জন্য কাপড় বা কিছু দিয়ে দেহ মুড়ে দেওয়া হয়। এরজন্য পোকামাকড়, ব্যাক্টেরিয়া এগুলো লাশে ঢুকতে পারে না৷ আবার অনেকক্ষেত্রে মৃতদেহকে সাজানো হয় বিভিন্ন ক্রিম দিয়ে৷ এগুলোও পোকামাকড়, ব্যাক্টেরিয়াদের দুরে রাখে। এটাও একটা কারণ দেহ না পচার বা দেরিতে পচার।
মমি বা অক্ষত দেহ সাধারণত মরুভূমি, গ্লেসিয়ার, সমুদ্রে( যদি না কোন প্রাণী খেয়ে ফেলে) এমন জায়গায় বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু তারপরও প্রকৃতিকভাবে একটা দেহ অক্ষত থাকার হার খুব কম।
Ref:
কিছু অমুসলিমের পাওয়া অক্ষত লাশ
১. সেন্ট বার্নাডেট (Saint Bernadette of Lourdes) – খ্রিস্টান (ক্যাথলিক)
মৃত্যু: ১৮৭৯ সাল
দেহ প্রথম কবর থেকে তোলা হয় ১৯০৯ সালে – প্রায় ৩০ বছর পর।
অবাক করা বিষয়: শরীর ছিল প্রায় অক্ষত, কোনো রাসায়নিক সংরক্ষণ ছাড়াই।
বর্তমানে তার দেহ ফ্রান্সের নেভারে প্রদর্শিত হয়।
২. সেন্ট জোসেফ অব কাপার্টিনো (Saint Joseph of Cupertino) – খ্রিস্টান (ক্যাথলিক)
একটি কফিনে ১০০ বছর পরও তার দেহ তুলনামূলক অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়।
৩. গুপ্তা আমলের এক বৌদ্ধ ভিক্ষু – বৌদ্ধ ধর্ম
চীনে একটি বৌদ্ধ ভিক্ষুর দেহ মমির মতো সংরক্ষিত পাওয়া যায়, যেটি কোনো রাসায়নিক সংরক্ষণের ফল নয় বলে ধারণা।
স্থান: চীনের সিচুয়ান প্রদেশ
সময়: আনুমানিক ১,০০০ বছরের পুরনো
৪. জিগমুন্ড গরগন (Zigmund Gorazdowski) – খ্রিস্টান (ক্যাথলিক)
পোল্যান্ডের একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান যাজক।
মৃত্যুর বহু বছর পর তার শরীর প্রায় অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়।
৫. সদগুরু মহারাজ কৌশিক (Hindu ascetic) – হিন্দু ধর্ম
ভারতের বিভিন্ন স্থানে সাধুদের দেহ প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত থাকার দাবি পাওয়া গেছে।
কিছু ক্ষেত্রে ২০-৩০ বছর পরও দেহের চামড়া ও অস্থি অক্ষত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
৬. ১৯৫২ সালে ডেনমার্কের গ্রাউবালে গ্রামের কাছের একটি পিট বগে পাওয়া যায় 'গ্রাউবালে ম্যান' নামক এক ব্যক্তির দেহ, যিনি খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে মারা গিয়েছিলেন। তাঁর দেহ এতটাই অক্ষত ছিল যে, প্রথমে তাঁকে সদ্য মৃত বলে মনে হয়েছিল।
৭. ১৯৫০ সালে ডেনমার্কের সিল্কেবর্গে পাওয়া যায় 'টোলুন্ড ম্যান' নামের এক ব্যক্তির দেহ, যিনি খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতকে মারা যান। তাঁর মুখে এমন শান্ত ভঙ্গি ছিল যেন ঘুমাচ্ছেন মাত্র।
৮. ২০১৫ সালে ফ্রান্সের রেন শহরে পাওয়া যায় লুইস ডি কুয়েঙ্গো নামক এক অভিজাত খ্রিস্টান নারীর দেহ। তিনি ১৬৫৬ সালে মারা যান, তবু তাঁর দেহ প্রায় অক্ষত অবস্থায় সীসার কফিনে সংরক্ষিত ছিল।
৯. লেবাননের কাদিশা উপত্যকার গুহায় পাওয়া গেছে ১৩ শতকের মারোনাইট খ্রিস্টানদের মৃতদেহ—তারা প্রায় ৭০০ বছর ধরে মাটির নিচে থেকেও অক্ষত ছিল।
Reference:
Lindow Man (England)
🔗 British Museum – Lindow Man
Tollund Man (Denmark)
🔗 Silkeborg Museum – Tollund Man
Grauballe Man (Denmark)
🔗 Moesgaard Museum – Grauballe Man
Windeby Girl (Germany)
🔗 National Geographic – Bog Bodies
Clonycavan Man (Ireland)
🔗 National Museum of Ireland – Clonycavan Man
অক্সিজেনের অভাব: যখন লাশ এমন স্থানে থাকে যেখানে বাতাস পৌঁছায় না—যেমন জলাবদ্ধ কাদা বা গভীর বগ—সেখানে পচনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে না। ফলে দেহ অক্ষত থাকে।
ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনে নির্ভর করে। বাতাস না থাকলে তারা সক্রিয় হতে পারে না। অম্লীয় ও রাসায়নিক মাটি যেমন; পিট বগে থাকা ট্যানিন ও হিউমিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং প্রোটিনকে রক্ষা করে। এতে দেহ শক্ত হয়ে যায়, চামড়া কালচে হয়, কিন্তু অক্ষত থাকে।
প্রাকৃতিক লবণ ও শুকনো পরিবেশে কিছু মাটিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে, যা জীবাণু নষ্ট করে। আর মরুভূমির মতো শুষ্ক এলাকায় পানি না থাকায় ব্যাকটেরিয়াও টিকে থাকতে পারে না।
কিছু মৃতদেহ প্রাকৃতিক তেল বা টার পিটে চাপা পড়ে যায়। এসব জায়গা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে এবং শরীর সংরক্ষিত থাকে।
এসব বৈজ্ঞানিক কারণেই মৃতদেহ বহু বছর অক্ষত থাকতে পারে। এর পেছনে অলৌকিকতার প্রয়োজন হয় না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন