সেকুলারিজম একটি কুফরী মতবাদ



আজকের আলোচ্য বিষয় ধর্মনিরপেক্ষতা। ইনশাআল্লাহ আজ আমরা কথা বলব ধর্মনিরপেক্ষতার পরিচয়, এর গোড়ার কথা, ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং আমাদের দেশে এর প্রাসঙ্গিকতাসহ সংশ্লিষ্ট আরো কিছু বিষয়ে। শুধু সচেতন আলেমে দ্বীন হিসেবেই নয়, স্বাধীন দেশের একজন নাগরিক হিসেবেও এ বিষয়টি আমাদের বোঝা উচিত। কারণ স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচিত হয়েছে তাতে রাষ্ট্রের মৌলিক চার নীতির মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতাকে স্থান দেওয়া হয়েছে। এরপর সংবিধানের ৫ম সংশোধনীতে এ নীতিটি বাদ দিয়ে তার স্থলে আনা হয়েছে মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস। কিন্তু তিন দশক পর আবারো বর্তমান সরকার ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে ফিরিয়ে এনেছে এবং ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে ‘‘মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’’-এর নীতিটি।

সংবিধান জনগণকে প্রজাতন্ত্র তথা দেশের মালিক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সে হিসেবে রাষ্ট্রের মালিক তথা নাগরিকদের জন্য দেশের সংবিধান জানার ও বোঝার প্রয়োজন রয়েছে। জনগণের নামে জনপ্রতিনিধি তথা সংসদসদস্যগণ কী কী বিষয় সংবিধানে যোগ-বিয়োগ করছেন তার প্রতি নজর রাখা সচেতন নাগরিকদের কর্তব্যও বটে। আমরা মূল আলোচনায় চলে যাই।

ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা/পরিচয়

প্রথমেই বলা দরকার যে, কিছু জিনিস আছে যেগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া লাগে না। এমনিই বুঝে আসে। ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটিও এমন। কম পড়ুয়া লোকজনও এর অর্থ বুঝে নিতে পারবে। ইংরেজি Secularism শব্দের বাংলারূপ হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতাআরবীতে যাকে বলা হয় আলআলমানিয়্যাহ

প্রথমেই দেখুন বাংলা একাডেমীর ইংলিশ-বাংলা ডিকশনারী। ২০১২ সালের এ সংস্করণ ছেপেছে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী সাহেবের সম্পাদনায়। Secular-(অর্থ) পার্থিব, ইহজাগতিকতা, জড়, জাগতিক।

Secular State গীর্জার সঙ্গে বৈপরিত্যক্রমে রাষ্ট্র। এ অর্থ অনুযায়ী মুসলিম দেশে এর ব্যাখ্যা হবে মসজিদের সঙ্গে বৈপরিত্যক্রমে রাষ্ট্র।

Secularism নৈতিকতা  শিক্ষা ধর্মকেন্দ্রিক হওয়া উচিৎ নয়-এই মতবাদ। জাগতিকতা, ইহবাদ।

এ অর্থগুলো লিখেছে বাংলা একাডেমীর অভিধান। এটির সম্পাদনায় কোনো ডানপন্থী বা কোনো হুজুর জড়িত ছিলেন না। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী সাহেব ছিলেন এর সম্পাদক।

এটা এমন নয় যে, কোনো মতবাদ ওয়ালারা নিজ মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এ ব্যাখ্যা লিখেছে; বরং দেশের সরকার-নিয়ন্ত্রিত এবং বর্তমান সরকার নিয়ন্ত্রিত সরকারী প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমী, যারা সংবিধানে আবার সেকুলারিজমকে স্থান দিয়েছে তাদের কর্তৃক নিয়োজিত, নির্ভরযোগ্য, যোগ্য ব্যক্তিরাই সেকুলারিজমের এই অর্থ ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

আমার দেখে ভালো লেগেছে যে, ওনারাও ভালো মানুষ। রাখঢাক না করে সাফ সাফ কথাটাই মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন। ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মহীনতা নয়-এমন কথা লেখেননি। আমি বাইরের অভিধানেও খোঁজ করেছি। ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটেনিকা দেখেছি, উইকিপিডিয়া দেখেছি। একই ব্যাখ্যা পেয়েছি। অক্সফোর্ড ইংরেজী-উর্দু ডিকশনারী। সেখানে লেখা আছে, Secularism لا دينية  لا مذهبية،  (ধর্মহীনতা)।

এগুলো মুসলমানদের ব্যাখ্যা নয়।  সেকুলারিজম যে বাস্তবেই لا دينية  لا مذهبية، (ধর্মহীনতা) এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায় না। বাংলা একাডেমীরটা তো দেখলেনই। উইকিপিডিয়াতে সেকুলারিজমের ব্যাখ্যা করা হয়েছে Anti Islam দিয়ে।

তাই বলছিলাম অনেক কিছুই আছে যেগুলো ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানোর দরকার হয় না। শব্দ দেখেই মতলব স্পষ্ট হয়ে উঠে।

বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা

আমাদের দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছিল ১৯৭২ সালে। সদ্য স্বাধীন হওয়া রাষ্ট্রের নতুন সংবিধানের মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। জনগণ তখন জেনেছে এই রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য স্বাধীন হয়েছে। বিজয়ের এক বছর পর ১৯৭২ সালের শেষের দিকে সংবিধান প্রণয়ন সমাপ্ত হয়েছে। বস্ত্তত তখনই দেশের সাধারণ জনগণ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা জেনেছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ধর্মীয় পরিচয় যাই হোক, অল্প ধার্মিক হোক বা বেশি ধার্মিক যুদ্ধের সময় তারা জানেনি যে, তারা সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য যুদ্ধ করছেন। এটা জেনেছেন তারা ১৯৭২ এর শেষে স্বাধীনতা যুদ্ধেরও আরো এক বছর পরে। কারণ সংবিধানে এই কথা লিখে দেওয়া হয়েছে যে, যে সব কারণে আমাদের দেশের আবাল, বৃদ্ধ, নওজোয়ানরা মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তার অন্যতম উদ্দেশ্য  ধর্মনিরপেক্ষতা। এটা সংবিধানে লেখা আছে।

এর আগ পর্যন্ত কেউ বলতে পারবে না যে, আমাদের দেশের স্বাধীনতা-সংগ্রাম ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য হয়েছে। কোনো ঐতিহাসিক দলিলে সেটা নেই। আপনি আমাদের দেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বইগুলো, পৌরনীতির বইগুলো পড়লে এর যথার্থতা খুঁজে পাবেন। এছাড়া স্বাধীনতার পূর্বে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে পূর্ব

পাকিস্তানী জনগণ বহু আন্দোলন করেছে। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে অনেক আন্দোলন হয়েছে। ঐতিহাসিক ৬ দফা পেশ হয়েছে। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। ৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচন হয়েছে। এগুলোর কোথাও ধর্মনিরপেক্ষতার নাম-গন্ধও ছিল না। এমনকি আপনি বর্তমান সময়ের (যখন দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়) মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট দেখুন। সেখানেও মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা পাবেন না। সুতরাং অত্যন্ত দৃঢ়তা ও আস্থার সাথে বলা যায় যে, সংবিধানের প্রস্তাবনায় লিখিত নিম্নলিখিত বাক্যটি বাস্তবসম্মত নয়।

‘‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল ... ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে।’’

সম্ভবত এ কারণেই স্বাধীনতার ঘোষণাকারী মতান্তরে ঘোষণা পাঠকারী জেডফোর্সের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান প্রথম সুযোগেই এটিকে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন এবং পরবর্তীতে অনেক সেক্টর কমান্ডারকেই জনগণ ধার্মিকরূপে পেয়েছে।

সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার বিদায়

শেখ মুজিব সরকারের সময়েই সংবিধানে ৪টা সংশোধনী হয়ে গিয়েছিল। এরপর জিয়াউর রহমান ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের আইন থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে সরিয়ে দেন এবং তার স্থলে মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস বাক্য স্থাপন করেন। দুই যুগেরও বেশি সময় পর্যন্ত সংবিধানে এ বাক্যটি ছিল। এমনকি ১৯৯৬-২০০১ সময়ের আওয়ামী লীগ আমলেও।

আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস বাদ গেল, ধর্মনিরপেক্ষতা আবার এল

এরপর হঠাৎ একদিন দেশের ধর্মপ্রাণ নাগরিকগণ অবাক বিস্ময়ে শুনলেন যে, তাদের সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃস্থাপিত হয়েছে এবং এ কাজটি করেছেন দেশের উচ্চ আদালত। যদিও আদালতের রায় প্রকাশ করতে গিয়ে মিডিয়াগুলো বলেছে, ৫ম সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে। আসলে বিষয়টি তেমন নয়। বরং ৫ম সংশোধনীর অনেক কিছুই আদালত বহাল রেখেছেন। বাছাই করে করে কিছু জিনিস বাতিল করেছে আর কিছু জিনিস আগের মতোই রেখে দিয়েছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, বিচারপতি খায়রুল হক সাহেবের আদালত এ কাজটি করেছে স্বউদ্যোগী হয়ে। তার কাছে কেউ এ ব্যাপারে আবেদন বা মামলা করেনি। বরং একটি সিনেমা হলের মালিকানা সংক্রান্ত্র মামলার রায় দিতে গিয়ে তিনি কাজটি করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলার উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসকে সরিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে এনেছেন।

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরপরই বর্তমান সরকার সে অনুযায়ী সংবিধান মুদ্রণ করে এবং এরপর ১৫তম সংশোধনী এনে ধর্মনিরপেক্ষতাকে পুনরায় স্থান করে দেয়। এভাবে উৎফুল্ল হয়ে উঠে দেশের একশ্রেণীর ধর্মবিদ্বেষী শ্রেণী, ধর্মবিরোধী গণমাধ্যমগুলো। আর উপেক্ষিত হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ মানুষের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা। ... আমাদেরকে ইতিহাস জানতে হবে, মনে রাখতে হবে এবং অনুধাবন করতে হবে। কে কোন কাজটি কোন মতলবে করছে তা বুঝতে হবে। আজকে আমার মূল আলোচ্য বিষয় সেটি নয়। আমি শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে সেকুলারিজম তথা ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে দুচারটা কথা বলব।

ধর্মনিরপেক্ষতাটা বেশি দিন আগের পরিভাষা নয়। অনেক আগ থেকে তা শুরু হয়েছে এমন নয়। ফরাসী বিপ্লবের পরের ঘটনা এগুলো। বিপ্লবটা ১৭৮০/১৭৯০এর দিকের অর্থাৎ ১৮০০ এর কাছাকাছি সময়ের। ইসলামী খেলাফতের পতনের পরের ঘটনা।

ইসলামী খেলাফত শেষ হওয়ার পর মুসলমানরা এসবের সম্মুখীন হয়েছে। আর পশ্চিমাবিশ্ব যখন তাদের পার্থিব উন্নতি ও মনোরঞ্জনের পথে কিছু কিছু জায়গায় চার্চগুলোতে তাদের ধর্মীয় নেতাদেরকে তাদের বিরোধী মনে করেছে তখন থেকে এ ধরনের চিন্তা কারো কারো মাথায় চাড়া দিয়ে উঠেছে এবং ধীরে ধীরে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির প্রসার ঘটেছে।

সেকুলারিজম মুসলমানদের মধ্যে

মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে মুস্তফা কামাল পাশা আতাতুর্ক (জন্ম : ১৮৮১, মৃত্যু : ১৯৩৮)। ১৯ শতকের শুরুতে ধর্মনিরপেক্ষতাকে একেবারে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে।

মুসলমানদের সর্বশেষ দারুল খিলাফা তুরস্কে বসে ঐ লোকটি এ কাজ করেছিল। তার ক্ষমতার মেয়াদকাল ছিল ১৯২৩-১৯৩৮ পর্যন্ত। তখনকার সময়ে সেকুলারিজমটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। ঐ ব্যক্তি ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে পুঁজি করে কত কি সংঘটিত করেছে তা ভাবলেও গা শিউরে উঠে। সে বিষয়ে একটু পরে আরো কিছু কথা হবে ইনশাআল্লাহ।

আল্লামা ইবনে খালদুন সিয়াসাতকে তিন ভাগ করেছেন

১। সিয়াসাতে তাবয়ী (السياسة الطبعية)  সেটা হল فوضي অর্থাৎ যার যার মন মতে চলবে কেউ কারো কর্তৃত্ব  মানবে না।

২। (السياسة الملكية) অর্থাৎ এমন একটা ব্যবস্থাপনা থাকবে যে অনুযায়ী মানুষ জাগতিক বিষয়গুলো একটি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করবে। বর্তমানের ধর্মনিরপেক্ষতা তেমনি একটি নীতি।  

৩। আলখিলাফাহ যেটা মানুষের পার্থিব-অপার্থিব ও ইহ-পরলৌকিক উভয় কল্যাণ নিশ্চিত করে। এরকম একটা নেযামের নাম খিলাফত।

আমাদের দেশে ধর্মনিরপেক্ষ লোকেরা দুই ধরনের।

১. ধর্মবিদ্বেষী ও ধর্মদ্রোহী লোকজন। অনেক কট্টর বামপন্থী এ শ্রেণীর আওতাভুক্ত।

২. আরেক শ্রেণী আছে যারা জায়গা বুঝে কথা বলে। আত্মরক্ষার জন্য যারা ভদ্র সাজে। ভদ্র বলতে যারা একটু রাখঢাক করতে চায়। এরা বলে ধর্মনিরপেক্ষতা মানেই ধর্মহীনতা নয়। এরা  ধর্মনিরপেক্ষতাও রাখবে আবার ধর্ম ওয়ালাদের নারাজও করবে না। এদের উদাহরণ হল।

رحمن بهى راضى رہے اور شيطان بهى  بے زار نہ ہو۔

আল্লাহও রাজি থাকুক, কিন্তু শয়তানও অসন্তুষ্ট না হোক।

এরা মানুষকে বলে বেড়ায় যে, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়; বরং এর উদ্দেশ্য হল, রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করবে না; ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার ইত্যাদি। এ লোকগুলো একদিক থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার আসল সংজ্ঞাকে গোপন করে, অন্যদিকে নিজেদের আসল মতলবকে গোপন রেখে ধর্মপ্রাণ ও ধর্মবিরোধী উভয় গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট রাখতে চায়।

আমরা আজকে বিশ্লেষণ করব যে, ধর্মনিরপেক্ষতা আসলে ধর্মহীনতা নাকি ধর্মহীনতা নয়। কার কথাটা ঠিক? ধর্মনিরপেক্ষদের দেখলাম যে, তারা বিভিন্ন ধরনের কথা বলে। এটা তো এই দেশীয় বক্তব্য। অথচ সেক্যুলারিজম তো এদেশে শুরু হয়নি। এ দেশের আগেই এ নীতি প্রচার পেয়েছে। আমরা পড়া-শোনা কম করি তাই অন্যরা আমাদেরকে ধোঁকা দিতে সক্ষম হয়।

উপরোক্ত দুটি পক্ষই সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা রাখতে বদ্ধপরিকর। অথচ যে দুই যুগের বেশি সময় সংবিধানে এ জিনিসটি ছিল না তখন কি এদেশে শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সহাবস্থান ছিল না। ঐ সময়ের মধ্যে তো আওয়ামী লীগও ৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। তারা কি দেশে ধর্মীয় সৌহার্দ্য বজায় রাখতে কোনো সমস্যায় পড়েছিল। দুটির উত্তরই না। তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে ফিরিয়ে আনার পিছনে নিশ্চয়ই আরো অনেক উদ্দেশ্য লুকায়িত, যা বুঝতে হলে আপনাকে দৃষ্টি দিতে হবে, মুসলমানদের খেলাফত পরবর্তী অবস্থার দিকে। চোখ ফেরাতে হবে একসময়ের তুরস্ক, ইরাক, মিসর ও সিরিয়ায়।

আমি আগেই বলেছি যে, আদালতে ৫ম সংশোধনী বাতিল হয়েছে বলা হলেও আসলে এর অনেক কিছুই বাতিল হয়নি। এমনকি অনেক মৌলিক বিষয়ও নয়, যেমন ৫ম সংশোধনী দ্বারা ৪র্থ সংশোধনীকে বাতিল করা হয়েছিল। তৎকালীন মুজিব সরকার ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে একটি রাজনৈতিক দল বানিয়েছিল। সেটা হল বাকশাল। আর সকল পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে সরকার নিজের মালিকানায় চারটি পত্রিকা চালু রেখেছে। রাজনৈতিক দল বা জনগণ ছাড়াও সরকারী কর্মকর্তাদেরও আবশ্যিকভাবে বাকশালে যোগ দেয়াকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জিয়াউর রহমান ৫ম সংশোধনীতে ঐ সব বাতিল করে আবার বহুদলীয় গণতন্ত্র এনেছেন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু সম্মানিত আদালত যখন ৫ম সংশোধনী বাতিল করেন তখন তিনি এ অংশটুকু বহাল রেখে দিয়েছেন।

যদি পুরো ৫ম সংশোধনী বাতিল করা হত তাহলে ৪র্থ সংশোধনী ফিরে আসত এবং দেশে পুনরায় একদলীয় বাকশালি শাসন চালু হত। মানুষ হরতাল, অবরোধ থেকে রেহাই পেত আর বর্তমান সরকারী দল অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পেয়ে দ্রুত দেশকে উন্নত করে ফেলতে পারত। নির্বাচন কমিশনকে বদনাম হতে হত না বিরোধী দলবিহীন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করে। যাহোক, ঐ সংশোধনী বাতিলের অন্যতম উদ্দেশ্যই হয়তো ছিল আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের স্থলে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বসানো।

প্রসঙ্গের টানে আরেকটি কথা বলি, ১৫ তম সংশোধনীর মাধ্যমে বাহাত্তর সালের সংবিধানে ফেরত যাওয়ায় রাষ্ট্রের মৌলিক নীতিগুলোর মধ্যে সমাজতন্ত্রও ফিরে এসেছে। কিন্তু সকলেই জানে যে, বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণ পুঁজিবাদী একটি রাষ্ট্র। বাহাত্তর সালে সংবিধানে যখন সমাজতন্ত্র ছিল তখন তো বিশ্বের বড় বড় দুটি রাষ্ট্রে সমাজতন্ত্র চালু ছিল, এখন সেগুলো ধনতন্ত্রের স্বর্গরাজ্য। অথচ আমরা এখন ফিরিয়ে এনেছি সমাজতন্ত্র। কিন্তু চলছি পুঁজিবাদী নীতিতে। এটা নিয়ে কোন বিশ্লেষণ নেই, ঝগড়া-ঝাটিও নেই। সমাজতান্ত্রিক দলগুলোর কয়েকজন তো এখন জোট সরকারেই আছে, মন্ত্রীও আছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রধান এখন মন্ত্রী। মেনন সাহেবরাও মন্ত্রী। জাসদের সেক্রেটারী সংসদ সদস্য। মেনন সাহেব, বাদল সাহেব, ইনু সাহেবরা কি কখনো সংসদে এ কথা উঠিয়েছেন যে, সংবিধানে এখন তো সমাজতন্ত্র আছে। সুতরাং দেশের পুরো অথনীতি সমাজতন্ত্র অনুযায়ী হতে হবে। খোদ আওয়ামী মন্ত্রী বা নেতাদের মধ্যেও সম্পূর্ণ কমিউনিস্ট মানসিকতার যারা আছেন তারাও তো এমন কথা বলেননি। তেমনি বাইরের বড় বড় বুদ্ধিজীবি, গণমাধ্যম ব্যক্তি, শিক্ষাবিদ যারা তারাও তো সরকারের কাছে এই দাবি তোলেননি। কেন? কেউ তো আদালতে রিটই করে দিতে পারত? সংবিধানের মৌলিক নীতি হল সমাজতন্ত্র তোমরা চলছ ক্যাপিটালিজমে, অর্থাৎ ধনতন্ত্র, পুঁজিবাদী নীতিতে।

এত মোক্ষম সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সমাজতন্ত্রীরা কেন এই দাবি উঠায় না। এর  চেয়ে বড় মোক্ষম সুযোগ আর কোথায়? আসলে না আদালতের এ নিয়ে কোন মাথাব্যাথা আছে, না তাদের।  তারা বরং ধর্মনিরপেক্ষতা পেয়েই আপাতত অন্য বিষয়ে ছাড় দিতে প্রস্ত্তত। আসল বিষয় হল সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা। সংবিধানের শুরুতে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস বড়ই বেমানান। আর ধর্মনিরপেক্ষতাটা রাখা অনেক কিছুর জন্যই প্রয়োজনীয়। এ প্রয়োজনেই সংবিধানের সংশোধনী এসেছে।

আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস নীতিকে ছুঁড়ে ফেলে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিস্থাপন। না হয় আদালত যখন বাছাই করে করেই বাতিল করলেন ও রাখলেন তখন তিনি এ অংশটুকুও তো রেখে দিতে পারতেন।

ওটা বসালে লাভ কী?

আমাকে কেউ বলেছিল, মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংবিধানে থেকেই বা লাভ কী? সংবিধানে তো ইসলাম বিরোধী অনেক কিছুই আছে। দেশে তো আর ইসলামী হুকুমত নেই, কখনো ছিলও না। তাহলে অতটুকু কথা বাদ দিলেই বা কী এসে যায়? আপনি কেন এর বিরোধিতা করছেন? আমি বলি, ঠিক যে কারণে ওরা সংবিধান থেকে বিষয়টি তুলে দিতে চায়। মহান আল্লাহ তাআলার উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস যদি কোনো কাজেই না আসত তাহলে কেন তারা এটি সরিয়ে দিতে চায়? ওটা সরিয়ে দেওয়ার কারণে কি কোনো বদনাম হতে হচ্ছে না। তারপরও তারা এ ঝুঁকি নিল কেন?। কিছু কথা আছে খুব সহজেই বুঝে আসে। অনেক দূরে গিয়ে বোঝার দরকার হয় না। সরকার কেন ওটাতে হাত দিচ্ছে? এতেই বুঝা যায় যে, এতটুকু বাক্য সংবিধানে থাকারও কিছু মূল্য আছে।

সুতরাং কালো এবং সাদার পার্থক্য বুঝতে হবে। আলো-অন্ধকারকে একাকার করা যাবে না। যদিও সেটা হয় আলোর রেখাপাতমাত্র। ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা মতলববাজরা যা দেওয়ার দিক, আলেম-ওলামাদেরকে থাকতে হবে সতর্ক। কিছুতেই বলা চলবে না ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মহীনতা নয়; বরং বিষয়টি দেখতে হবে বাস্তবতার নিরিখে, সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি দিয়ে। আমরা মনে করি যে, আমাদের এখন যে আলেমপ্রজন্ম আছে এরা গলদ বুঝ নিয়ে ওদিকে অগ্রসর না হোক। তাদেরকে ভবিষ্যতে এ বিষয়গুলোর সম্মুখীন হতে হবে আরো বেশি।

২০০৬-২০০৮ তত্ত্বাবধায়ক সময়ের একটি ইসলামী দল ও একটি ধর্মনিরপেক্ষ দলের জোটবদ্ধ হওয়া এবং ঐ ইসলামী দলটি কর্তৃক ধর্মনিরপেক্ষতার গলদ ব্যাখ্যা দেওয়ার পরই মনে হয়েছিল যে, সেক্যুলারিজম সম্পর্কে মাদরাসাগুলোতে পড়াশোনা থাকা দরকার এবং এ বিষয়ে আমাদের আরো সচেতন হওয়া উচিত।

তুরস্ক এর উদাহরণ

ধর্মনিরপেক্ষতার বাতিক একটি জাতিকে কত উঁচু থেকে কত নীচুতে নিক্ষেপ করতে পারে তার নযীর আপনি দেখতে পারেন একসময়কার সালতানাতে উসমানিয়ার রাজধানী তুরস্কে। এটি ঐ তুরস্ক, যে শাসন করেছিল হারামাইন শরীফাইনসহ পৃথিবীর একটি বিশাল অংশ। শত শত বছরের সে উসমানী খেলাফতের কেন্দ্রবিন্দুই শেষের দিকের সুলতানদের অযোগ্যতা-অদক্ষতা ও অপরিণামদর্শিতার কারণে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। কামাল আতাতুর্ক হলেন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের  আদর্শ ব্যক্তি, যিনি এই তুরস্কেই সেক্যুলারিজমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন। আতাতুর্ক সাহেব তুরস্কে কী কী ঘটিয়েছিলেন হয়ত অনেকেরই জানা থাকবে। বিশেষ করে যাদের ইতিহাস নিয়ে নাড়া-চাড়ার অভ্যাস রয়েছে।

খুব সহজ একটা উদাহরণ হল আযান। আযানের ভাষাও ওখানে বদল করে দেওয়া হয়েছিল। মাইকে দেওয়া তো নিষিদ্ধই ছিল। তুর্কি ভাষায় আযান দেওয়া হত। দারুল খিলাফা হওয়ার কারণে সেখানে অসংখ্য মাদরাসা ছিল। সেগুলো সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মানুষ গর্তের ভিতরে থেকে থেকে কুরআন শিক্ষা চালু রেখেছিল। ওদের  বর্ণমালা ঠিক আরবীর মতোই ছিল। এখনো তুর্কী ভাষায় লেখা বই-পত্র পাওয়া যায়। কিন্তু আতাতুর্ক সে বর্ণমালাকে নিষিদ্ধ করে রোমান অক্ষর চালু করেছেন। এখন সেখানে রোমান লিপি চলে। অর্থাৎ ইংরেজী অক্ষরে তুর্কী ভাষা লেখা হয়। এই ভদ্রলোক শুধু ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান তৈরি করে এবং ইসলামী শিক্ষা বন্ধ করেই ক্ষান্ত হননি; বরং সে দেশের প্রতিরক্ষা তথা আর্মি ও আদালতকে কড়া সেক্যুলার বানিয়ে গেছেন। কঠোরহস্তে সেখানে সেক্যুলারিজমের ধর্ম ও ধর্মওয়ালাদের বিরুদ্ধে একপক্ষীয় যুদ্ধ করা হয়েছে। কেননা ধর্মের পক্ষের লোকজন ছিল অস্ত্রশস্ত্রহীন। হাজার হাজার লোককে প্রহসনের বিচার করে-বিনা বিচারে মেরে ফেলা হয়েছে। এভাবে সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে সেক্যুলারিজম। আর আর্মি ও আদালতকে এত কড়া সেক্যুলার বানানো হয়েছিল যে, তারা কোনো ধার্মিক তো দূরে থাক কোনো ধর্মীয় দলকে ক্ষমতা দেওয়া তো দূরের কথা, কোনো দাড়িওয়ালা বা কোনো হিজাব পড়ুয়া মহিলার স্বামীকেও রাষ্ট্রপতি হিসেবে গ্রহণ করেনি; যদিও তাদের কর্তৃক পরিচালিত নির্বাচনেই ঐ ব্যক্তিরা জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত দলকে নিষিদ্ধ করে দিতে কোনো দ্বিধাই করেনি ঐ শক্তিগুলো।

এসব থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। অন্যদেরকে সতর্ক করতে হবে এবং যারা মজলুম তাদের জন্য আশার বাণী হচ্ছে, তুরস্কের বর্তমান পরিস্থিতি। যেখানে ঐ অপশক্তিগুলোর হুংকার কমে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু সেটি ঘটেছে অসংখ্য শহীদের রক্ত, মজলুমানের কান্না, অসীম ধৈর্য্য ও অক্লান্ত পরিশ্রমের পর। এ তুর্কিতেই একসময় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হত পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটে। পার্লামেন্ট নির্বাচনে সেক্যুলার আর্মি বড় বড় অফিসাররা পাহারাদারি করত। প্রায় বিশ-ত্রিশজন বড় বড় আর্মি অফিসারের রাঙ্গানো চোখের সামনে দিয়ে ভোট দিতে হত। ভোটের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বসে থাকত লোকগুলো। এভাবে তারা যতদিন পেরেছে নিয়ন্ত্রণ করেছে।

বর্তমান সরকার অনেক ধৈর্য ও কৌশলের বিনিময়ে ক্ষমতায় বসেছে। বিভিন্ন কারণে কয়েকবারই দলের নাম পরিবর্তন করতে হয়েছে। কখনো দেশের সংবিধানের সাথে মিল নেই বলে, কখনো দেশের মেযাজের সাথে মিল নেই বলে, এই সেই বলে পুরো দলকেই অযোগ্য ঘোষণা করে দিয়েছে আদালত ও আর্মিরা। তারপরও তারা ধৈর্য হারায়নি। চেষ্টা ও মেহনত অব্যাহত রেখেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার মেহেরবানিতে এখন সেখানে পরিবর্তন ঘটছে। ২ বছর আগের তুরস্ক সফরে সেখানকার মুসলিম ভাইবোনদের অবস্থা কিছুটা দেখার সুযোগ আমাদের হয়েছিল। সেখানকার ধর্মপ্রাণ হাজার হাজার নরনারীর এখনকার আনন্দাশ্রু দেখে আমার মনে হয়েছে, এটি আসলে আতাতুর্কের দুঃখের কান্না। এতদিন লোকটি বেঁচে থাকলে তার মিশনের সমাপ্তি দেখে যে কান্নায় জড়াত সেটিরই প্রতিচ্ছবি হয়তো এই খুশির কান্না। তবুও ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। ধৈর্য, কৌশল ও মেহনত এবং সর্বোপরি আল্লাহর রুজ্জুকে আকড়ে রাখার হাতিয়ার ছেড়ে দিলেই বিপদ।

প্রসঙ্গ মিসর

ঐতিহ্যবাহী দেশ মিসরের সর্বপ্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসী। রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ তাকে ভোট দিয়েছে। এর আগে মিসরের ইতিহাসে কোনো নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিল না। আগের সরকারগুলো রাষ্ট্রীয় ফরমান, সামরিক ফরমান জারি করে ক্ষমতায় ছিল। ড. মুহাম্মাদ মুরসী পশ্চিমা লোকদের বড় বড় আস্থাভাজন, নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বড় বড় ব্যক্তিদের মোকাবেলা করে নির্বাচিত হয়েছেন। এভাবে নির্বাচিত হওয়ার পরও অনেক চড়াই উৎরাই এবং প্রাণহানির পর ক্ষমতায় বসেছেন। কিন্তু একটি দিনের জন্যও তাঁকে শান্তিতে রাষ্ট্র চালাতে দেওয়া হয়নি। আদালত ও সামরিক বাহিনীর নগ্ন হস্তক্ষেপ এবং সেক্যুলার ও বেদ্বীন তথাকথিত সুশীলদের বহুমুখি ষড়যন্ত্র চলেছে সমান্তরালে এবং শেষ পর্যন্ত বন্দুকের জোরে ক্ষমতাচ্যুত করে অন্ধকার কারাবাসে পাঠানো হয়েছে। এসব কী? এসবই হল সেক্যুলারিজমের বদ-আছর। এভাবেই সেক্যুলার শক্তিগুলো যুগে যুগে দেশে দেশে ষড়যন্ত্র ও দমন-পীড়নের মাধ্যমে মুসলমান ও ইসলামপন্থীদের দমিয়ে দিচ্ছে। তাদের গণতন্ত্র-মানবাধিকার এক্ষেত্রে অন্য কোনো অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

স্বদেশ পরিস্থিতি

এদেশের কিছু লোক আগেও ধর্মনিরপেক্ষ ছিল, এখনো আছে। কিন্তু তারা কখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল না। বিশাল ধর্মপ্রাণ মানুষের তুলনায় তাদের সংখ্যা খুবই কম। অথচ এ সংখ্যালঘুদের মতবাদই এখন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে পুরো দেশের উপর। সময় কম। আমি সেক্যুলারিজমের প্রভাবে ঘটে যাওয়া শুধু দুএকটি নযীর পেশ করব।

আমাদের শিক্ষা কমিশন

প্রথমে বলে রাখি, একটা শিক্ষা কমিশন গঠন থেকে শুরু হয়ে কমিশনের রিপোর্ট হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়। কমিশনের সদস্য ও সহযোগীরা পৃথিবীর বহু দেশ সফর করেন। তারা ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষানীতি স্বচক্ষে দেখে সে অনুযায়ী এদেশের শিক্ষানীতি তৈরি করেন। এভাবেই কাজ করেছে এ দেশের সর্বশেষ শিক্ষা কমিশন।

প্রত্যেক শিক্ষানীতিরই কতগুলো উপাদান থাকে, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। আমাদের শিক্ষানীতির মূল আদর্শ বানানো হয়েছে সেক্যুলারিজমকে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে মাথায় নিয়ে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। স্পষ্টভাবে তা উল্লেখও করা হয়েছে। অবশ্য ওটা যদি শব্দে ব্যবহার না করত তবুও তা স্পষ্ট ছিল।

আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো শিক্ষা কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তিন জায়গাতেই পাকাপোক্ত কড়া বাম ব্যক্তিরা দায়িত্ব পালন করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ সাহেব ভদ্র লোক। তিনি সমাজতান্ত্রিক দলের বড় নেতা ছিলেন। বেশি বছর হয়নি আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন, যৌবনের পুরো অংশই পার হয়েছে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির সাথে।

শিক্ষা কমিশনের প্রধান ছিলেন কবীর চৌধুরী সাহেব। পরলোকগত হয়ে গেছেন। এ লোক আযানকে কিসের সাথে তুলনা করেছিলেন আপনারা হয়তো জানেন। এসব কথা  তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান রাশেদ খান মেনন সাহেব। তার রাজনৈতিক চিন্তাধারা কারো অজানা নয়। যে দেশের শিক্ষা খাতের তিনটি স্তম্ভে এমন ব্যক্তিরা থাকবেন সে দেশে কেমন শিক্ষানীতি ও শিক্ষা চলবে তা সহজেই অনুমেয়। আগে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মুসলমান শিক্ষার্থীদের অনেকে এ বলে অনুযোগ করত, দুঃখ করত যে, তাদের কোনো কোনো স্যার প্রকাশ্যেই ইসলাম ও কুরআন-সুন্নাহ নিয়ে বিদ্রূপ, কটাক্ষ করেন। তা ছিল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বুঝমান শিক্ষার্থীদের সমস্যা। কিন্তু এখন আর ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ শোনার জন্য আপনাকে কলেজ-ইউনিভার্সিটি যেতে হবে না। বর্তমান শিক্ষানীতি শিশু শ্রেণী থেকেই মুসলিম ছেলেমেয়ের সেক্যুলার আদর্শে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়েছে। সেভাবেই তৈরি হয়েছে বইপত্র। গত বছর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষা কারিকুলাম ঠিক করতে গিয়ে জেনারেল বিষয়গুলো সরকারি বোর্ডের বই থেকে পড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই বিদ্যালয়ের শিক্ষা-বিভাগের নেগরান সাহেব দেখতে পান বর্তমান সময়ের প্রাথমিক বই ও পূর্বেকার বইগুলোর পার্থক্য। কোমলমতি শিশুদের অঙ্কুর থেকেই শিরকী ভাবধারায় গড়ে তোলার মতো যথেষ্ট উপাদান এই বইগুলোতে রয়েছে।

প্রসঙ্গ বোরকা

কয়েক মাস আগের কথা। সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধনী হয়ে সেক্যুলারিজম প্রতিস্থাপিত হয়েছেমাত্র। কিছু দিনের মধ্যে উচ্চ আদালত সুয়োমটো (কারো আপিলের অপেক্ষা না করে স্বপ্রণোদিত রুল) জারি করলেন। বিচারক সাহেব বললেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদেরকে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না। এটা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। এ দেশের সংবিধান অনুযায়ী উচ্চআদালত যা বলবেন তা-ই আইন। ভালো যে, পশ্চিমা কোনো রাষ্ট্রের মতো এখানে বোরকা নিষিদ্ধ হয়ে যায়নি। তবে বিজ্ঞ বিচারক যে যুক্তি দিয়েছেন তা লক্ষণীয়। তিনি বলেছেন, যেহেতু আমাদের রাষ্ট্র হল ধর্মনিরপেক্ষ তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদেরকে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না। ধর্মনিরপেক্ষতা বুঝতে কারো অসুবিধা হলে এ ধরনের দু চারটা নজির মনে রাখলেই হবে।

ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষতিটা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, এই শব্দটাকে গলদভাবে ব্যবহার করে আরো কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে তা দেখার জন্য হয়তো বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। আপনি শুধু চোখ-কান খোলা রাখুন, কয়েক দশকের ইতিহাস দেখুন, স্বদেশী লোকজনের হাতে নিরীহ ধর্মপ্রাণ লোকদের হতাহতের চিত্র দেখুন এবং সেক্যুলার গণতন্ত্রবাদী, মানবতাবাদী, স্বাধীন গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রত্যক্ষ করুন। তারা কোন খবরটা কীভাবে ছাপছে, কোন বিষয়টা কীভাবে বিশ্লেষণ করছে তা খেয়াল করুন। এভাবেই একটি দেশের প্রতিরক্ষা, আইন-আদালত, শিক্ষা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো পাকাপোক্ত সেক্যুলার হয়ে উঠে এবং পরের কাজগুলো স্বাভাবিক গতিতেই চলতে থাকে। তখন মুরসী, এরদোগান, আবদুল্লাহ গুলদের দেশের অধিকাংশ লোক ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলেও তারা হয়তো ক্ষমতায় বসতেই পারেন না, না হয় ক্ষমতাচ্যুত হন। স্বদেশের ৫ জানুয়ারি ২০১৪-এর নির্বাচনের ব্যাপারে মন্তব্য করার দরকার আছে বলে মনে করি না। কিন্তু আপনি এর পরের অবস্থার প্রতি নজর দিন। দেখুন নির্বাচিত (!) ব্যক্তিগণ বেশি খুশি নাকি তাদের সমর্থক শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ ও সংশ্লিষ্ট অন্যরা বেশি আনন্দিত। কারণ এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার-গণতন্ত্র সবই নস্যি। নিজেদের মতবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত করার মোক্ষম সুযোগ তারা হাতছাড়া করতে চান না।

তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

আমাদের এখানে কেউ লিখেছেন কি না জানি না, তবে আরব বিশ্বের কোনো কোনো ডক্টর-প্রফেসর ধর্মনিরপেক্ষতার সপক্ষে বইপত্রও লিখে ফেলেছেন। তারা নিজেদেরকে আলেমও মনে করে থাকেন এবং নিজেদের বক্তব্যের সপক্ষে কুরআন-হাদীসের দলিল দেওয়ারও চেষ্টা করেছেন। তারা বলেন যে, ইসলাম নামায, রোযা, ইবাদত-বন্দেগী কীভাবে আদায় করবে তা শিক্ষা দেয়, কিন্তু রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে তা ইসলাম বলেনি। সুতরাং ইসলামে রাজনীতি নেই। (এ কথাটাই আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো এভাবে বলে যে, ধর্ম পবিত্র জিনিস। রাজনীতি থেকে এটাকে আলাদা রাখতে হবে।) যা হোক, ঐ আরব সেক্যুলার আলেমদের বক্তব্য হচ্ছে ইসলাম ইবাদত বন্দেগীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। রাষ্ট্র পরিচালনা, বিচার প্রক্রিয়া, শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধর্মকে টেনে আনার কথা ইসলামে নেই।

হাদীস দ্বারা দলিল

এরা আমাদের দেশের কারো কারো মতো লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন (শুনেছি কেউ কেউ নাকি নিজেদের ভাষণে সূরা কাফিরূনের এই আয়াতকে বুখারী শরীফের হাদীস বলে থাকেন) দ্বারা দলিল পেশ না করলেও ধর্মনিরপেক্ষতার স্বপক্ষে দু একটি হাদীসও পেশ করে থাকেন। এমনই একটি হাদীস হল, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইরশাদ-

أنتم أعلم بأمور دنياكم

হাদীসের প্রেক্ষাপট হল, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তাবীরুন নাখল (খেজুর চাষ সংক্রান্ত একটি বিশেষ পদ্ধতি) বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া হলে তিনি তা অপছন্দনীয় বলেছেন। পরবর্তী বছরে ফলন কম হলে তখন তিনি বলেছিলেন-

إذا أمرتكم بشيء من أمر دينكم فاتبعوه

অর্থাৎ দ্বীনি বিষয়ে বললে সেটা শুনো, মানো। আর দুনিয়াবী বিষয়ে কিছু বললে মনে করবে তোমাদের এসব বিষয়ে তোমরাই ভালো জান।

এটা তাদের বড় দলিল। কেননা আল্লাহর রাসূল নিজেই বলেছেন যে, দুনিয়াবী বিষয়ে আমার কথা তোমরা শুনলেও শুনতে পার আবার নাও শুনতে পার। যদি সকল বিষয়ে তার নির্দেশনা মানা আবশ্যিক বিষয় হত তাহলে এখানেও আবশ্যিক হত।

শরীয়তের মেযাজ, খেতাব সম্পর্কে যারা অবগত তাদেরকে এসব কথার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তারা নিজেরাই তা সহজে বুঝতে পারে।

উপরোক্ত হাদীসটির তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় না গিয়ে শুধু তরজমা দেখেও যে কেউ বুঝে নিবেন যে, এখানে কোনো কৃষিনীতি পেশ করা হয়নি। বরং খেজুর বাগানে ফলন বৃদ্ধির একটি বিশেষ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে, যা নিতান্তই একজন কৃষকের নিজস্ব ব্যাপার। ঠিক যেমন একজন কৃষক তার ক্ষেতে ধান চাষ করবে না গম, সাধারণ জাতের চাষ করবে না হাইব্রিড-এগুলো তার একান্ত বিষয়। যে পর্যন্ত জনস্বার্থের ক্ষতি না হবে ইসলাম তার কাজে হস্তক্ষেপ করবে না। কৃষকের এ স্বাধীনতাকে ধর্মনিরপেক্ষতার দলিল বানানোর যৌক্তিকতা কোথায়?

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো সে প্রেক্ষিতেই বলেছেন-

أنتم أعلم بأمور دنياكم

তোমাদের দুনিয়াবি বিষয়গুলো তোমরাই ভালো জান।

তাদের এ সকল বক্তব্যের খন্ডন তখনই হয়েছে। বিজ্ঞ আলেমরা যুক্তিপূর্ণ জবাব দিয়েছেন। ইসলামের এটা বৈশিষ্ট্য। হাদীস শরীফে এসেছে-

لا تزال طائفة من أمتي منصورين على الحق

অর্থাৎ আমার উম্মতের একটা দল সর্বদা হকের উপর বিজয়ী থাকবে। তারা সব যুগেই ছিল, থাকবে।

অন্য হাদীসে আছে,

يحمل هذا العلم من كل خلف عدوله

এরা যুগে যুগই ছিল। ওরা বই লিখেছে। কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশে থেকেও আলেমরা এর কঠোর প্রতিবাদ করেছে।

কারাফীর কিতাব থেকে দলিল

তারা ইমাম কারাফীর কিতাব আলইহকাম থেকেও দলিল দিয়ে থাকেন। সেক্যুলারিজমের কিছু কিছু লোক দাবি করেছেন যে, ইসলামের বড় বড় পন্ডিত, উসূল ও ফিকহবিদগণও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছেন। তার নজির হিসেবে তারা ইমাম কারাফী রাহ.কেও পেশ করেছেন।

ইমাম কারাফী রাহ. তাঁর কিতাবের ২৫ নং প্রশ্নোত্তর অধ্যায়ে খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়েছেন যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কার্যাবলির কোনো কোনোটি নবী হিসেবে করেছেন, কোনোটি দাঈ-মুবাল্লিগ হিসেবে, কোনোটা হাকেম-রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। কোনোটা কাযী ও বিচারক হিসেবে। আবার কোনোটা বাশার বা মানুষ হিসেবেও করেছেন। এ কথাগুলো খুবই সুস্পষ্ট। কারাফী রাহ. বিভিন্ন হাদীসের উদাহরণ দিয়ে বিষয়গুলো বুঝিয়েছেন। ঐ অধ্যায়টি ভালোভাবে পড়ে নিলে হাদীসের কিতাবগুলো বোঝাও সহজ হয়ে যাবে।

কিন্তু কোনো কোনো গবেষক (!) ইমাম কারাফী রাহ.-এর এ কথাগুলোর উল্টো ব্যাখ্যা করেছেন। তারা বলেছেন, আল্লাহর রাসূল যে কাজগুলো নবী হিসেবে করেছেন সেগুলোই শুধু মুসলমানদের পালনীয় বিষয়। তিনি রাষ্ট্রনায়ক ও বিচারক হিসেবে যা করেছেন তা ইসলামের অন্তর্ভুক্ত বিষয় নয়।

অর্থাৎ তাদের দাবি হল, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাযী হিসাবে, হাকেম হিসাবে যা যা করেছেন তার কোনোটিই অনুসরণীয় নয়। (হ্যাঁ, অনুসরণীয় হতে পারে ঐ অ্যারিস্টটল ও আব্রাহাম লিংকনের মত। তাদের মতো ওনাকেও একজন দক্ষ ব্যক্তি হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। ইনিও একজন বড় রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন।)

গোড়াটা কিন্তু ঐ জায়গায়। অর্থাৎ এই মতবাদ মানলে শরীয়তের বড় একটা অংশকে অস্বীকার করে দিতে হয়। এটাকে গভীর থেকে দেখতে হবে তাহলে এর ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

আমাদের দেশের রাজনীতি বা বিশ্ব রাজনীতির এবং রাজনীতিবিদদের অনেক কথাই আছে স্থূল, যা শুধু বলার জন্যই তারা বলে, মানুষ এগুলোকে হালকাভাবে দেখেই অভ্যস্ত। ধর্মনিরপেক্ষতাকে এ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ নেই। এর ক্ষতিটা যে কত গভীর ও ব্যাপক হতে পারে তা অনুধাবন করা বিবেকবান মানুষের কতর্ব্য। কারাফী রাহ.-এর কিতাব থেকে দলিল দেওয়া লোকদের কথার আরো কিছু জবাব একটু পরে বলছি।

আলোচনার শুরুতে আমি এনসাইক্লোপিডিয়ার উদ্ধৃতিতে প্রথমেই দেখিয়েছিলাম যে, তারা সেক্যুলারিজম অর্থ করেছে অহঃর ওংষধস। আসলে খুব সহজে চিন্তা করলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে আসে। কেননা ধর্মনিরপেক্ষতা যখন থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছে তখন কিন্তু অন্যান্য ধর্মওয়ালারা রাষ্ট্রের সাথে লড়াই করেছে এমন নয়। রাষ্ট্রের আইন নিয়ে তো তাদের কোনো মাথাব্যাথাই ছিল না। খ্রীষ্টানরা তো তাদের ধর্মকে চার্চকেন্দ্রিক করে ফেলেছে আগেই। আরবদের ভাষায়-

دع ما لقيصر لقيصر وما لله لله

অর্থাৎ ধর্ম মসজিদ পর্যন্ত আর রাষ্ট্র পরিচালিত হবে রাষ্ট্রনায়কদের মাধ্যমে। একটার সাথে আরেকটার কোনো সম্পর্ক থাকবে না। এতকিছুর পর আবার ধর্মনিরপেক্ষতা বা ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে দূরে রাখার কেন দরকার হল?

খুব স্পষ্ট কথা। রাষ্ট্র থেকে ইসলামকে দূরে সরিয়ে রাখাই আসল উদ্দেশ্য। কেননা একমাত্র ইসলামের নীতিমালাই তাদের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

মুসলিম শাসকদের ইসলামী নীতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। গোটা পৃথিবীর অনেক অংশই যখন সভ্যতা বিবর্জিত ছিল ইসলামই তখন সভ্যতার রাস্তা দেখিয়েছে। সত্যিকারের রাষ্ট্রব্যবস্থা যে অন্য যে কোনো নীতি থেকে হাজারো গুণ ভালো তা ইসলাম দেখিয়ে দিয়েছে। মূলত এটাই ছিল তাদের বাধা। এ কারণেই হয়তো সেক্যুলারিজমকে Anti Islam বলা হয়েছে। Anti Religion নয়। ধর্মবিরোধী নয়, আসলে ইসলাম বিরোধী। এই সত্যটাকে অনুধাবন করতে হবে। কারণ ধর্মের কথা তারাও বলে। তবে ওটা বাইবেল ছুঁয়ে শপথ করা পর্যন্তই এবং ডলারের গায়ে In God we trust লিখে দেওয়া পর্যন্তই। অবশ্য এতটুকুতেই ওরা খুশি। এর বেশি দরকারও মনে করে না। তো সেক্যুলারিজম দরকারই হয়েছে ইসলামকে ঠেকানোর জন্য। এ কারণেই Anti Islam ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়-এ কথা শুনে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। বরং ধর্মনিরপেক্ষতা পুরোটাই ধর্মহীনতা।

শরীয়তে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই

ইসলামে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কিছু নেই। ইসলামের মূল ভিত্তি হল আল্লাহর কালাম কুরআন মজীদ। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وان احكم بينهم بما انزل الله

আর তাদের মাঝে আপনি ফয়সালা করুন  আইন দ্বারাযা আপনার প্রতি আল্লাহ তাআলা নাযিল করেছেন।-সূরা মায়েদা : ৪৯

অন্যত্র আছে-

ومن لم يحكم بما انزل الله فاولئك هم الظالمون، ... فاولئك هم الكافرون،... فاولئك هم الفاسقون

যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফয়সালা করে না তারা জালিম ... তারা কাফির ... তারা ফাসিক।-সূরা মায়েদা : ৪৪, ৪৫ ও ৪৭। এ তিনটি আয়াতে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর বিধান ভিন্ন ফয়সালাকারীকে জালিম, কাফির ও মুনাফিক বলা হয়েছে। এ আয়াতগুলো পড়ুন এবং কারাফীর কথার গলদ ব্যাখ্যাকারী সেক্যুলার মুহাক্কিকদের (!) বক্তব্য শুনুন, জবাব আপনিই দিতে পারবেন।

সেক্যুলারিজমের বক্তব্য হচ্ছে, আইন-আদালত, বিচারকার্য এসব চলবে রাষ্ট্রীয় নীতি ও জনগণের চাহিদা অনুযায়ী। রাষ্ট্র যেভাবে আইন করে সেভাবে চলবে। ধর্মের সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। ঐ কোনো কোনো সেক্যুলারপন্থী তথাকথিত আলেমের বক্তব্য হল, খলীফারা যে আইনে আদালত ও রাষ্ট্র চালিয়েছেন তা তাদের নিজস্ব বিষয়। এটি ইসলামের কিছু নয়। আপনি উপরোক্ত আয়াত এবং এ সংক্রান্ত আরো যত আয়াত আছে সেগুলো দেখুন। এগুলোতে কি বলা হয়েছে, ঐ সকল হুকুম-আহকাম খলীফাদের পর্যন্ত সীমিত? পরবর্তীদের জন্য তা পালনীয় নয়? দেখুন, সেক্যুলারিজম এমন কোনো বিষয় নয় যে, তার অসারতা সম্পর্কে জবাব দিতে হলে মাটি খুড়ে বের করে দলিল দিতে হবে। বরং শরীয়তের বিষয়গুলো হল

ليلها كنهارها

অর্থাৎ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, স্পষ্ট ও প্রকাশ্য। এখানে অস্পষ্টতা বা অন্ধকারের স্থান নেই। ইবাদত-বন্দেগী থেকে শুরু করে আইন-আদালত, রাষ্ট্রনীতি সব কিছুই কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা সুপ্রমাণিত। কিন্তু এখন ভাবটা এমন যে, নামায, রোযা ইত্যাদি মানুষকে তাদের ধর্ম মতো করতে দাও। (আসলে এটিও কথার কথা, না হয় আপনি কি নামায ঠিকমতো আদায় করতে পারছেন, জুমআর খুতবায় খতীব সাহেবেরা কি কুরআন-হাদীসের কথা স্বাধীনভাবে বলতে পারছেন, দুআ-মুনাজাতও কি তারা তাদের মতো করে করতে পারছেন? উত্তর আপনাদের জানা আছে।) আর রাষ্ট্র ও আদালত পরিচালিত হবে মানবরচিত আইনে। সুতরাং কুরআনের বিধানের সাথে সামঞ্জস্য থাকুক বা না থাকুক তিনি মীরাছের হিস্যা তার মতো করে বণ্টন করে দিতে পারবেন। এর জন্য মুসলিম স্কলারের ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। বিচারক নিজেই লিবারেল ও স্বাধীন। ফতওয়া সম্পর্কে ধারণা থাকুক বা না থাকুক, এমনকি ফতোয়ার সঠিক সংজ্ঞাও যদি জানা না থাকে তিনি ফতোয়া অবৈধ বলে দিতে পারবেন এবং বলতে পারবেন যে, ফতওয়া দিতে পারবে শুধু উচ্চ আদালতের বিচারক। ফতওয়া দেওয়ার আইনগত কর্তৃপক্ষ হল কোর্ট।

সেক্যুলারিজমটা এমনই। অন্য ধর্মের ব্যাপারে এর তেমন মাথাব্যাথা নেই। তাদের বিরোধিতারও দরকার নেই। কারণ অন্য ধর্মওয়ালারা এ নিয়ে কোনো চিৎকার-চেঁচামেচি করে না। ইন্ডিয়ার উগ্রপন্থী বিজেপি কি কখনো দাবি উঠিয়েছে যে, গীতা, মহাভারত অনুযায়ী রাষ্ট্র চালাতে হবে? খ্রীষ্টানরাও একথা বলেনি। কারণ তাদের নিকট ইসলামের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নীতিগুলোই নেই। এই অতুলনীয় ও সুমহান নীতি কেবল ইসলামেরই রয়েছে। সেক্যুলারিজম এসেছেই ইসলামকে প্রতিহত করার জন্য, স্রষ্টার আইনের বদলে নিজেদের মনমতো করে মানুষকে শাসন করার জন্য।

কিছু মোটা কথা

আপনি পুরো কুরআন মজীদ, বিশেষ করে মাদানী সূরাগুলো মনোযোগ দিয়ে অর্থসহ পড়ুন এবং লক্ষ্য করুন তাতে নামায, রোযা, হজ্ব ইত্যাদির বাইরে অন্যান্য বিষয়ের আরো কত আয়াত রয়েছে। হাদীসগ্রন্থগুলোতে ইবাদাত অধ্যায়গুলোর তুলনায় পরিবারনীতি, সমাজনীতি, বিচারনীতি, লেনদেন পদ্ধতি, কৃষি-সেচ ইত্যাদি অধ্যায়গুলোর হাদীস সংখ্যার তুলনামূলক হিসাব করুন তাহলে দেখবেন দ্বিতীয় অংশের হাদীসের সংখ্যা কত বেশি। সেক্যুলারিজম মানতে হলে আপনাকে ঐসব কিছুই এখন রহিত হয়ে গেছে-ঘোষণা করতে হবে। (নাউযুবিল্লাহ)

যে ব্যক্তি ইসলামী নীতিমালা ও আদর্শে বিশ্বাসী তাকে যদি কোনো সেক্যুলার রাষ্ট্রের বিচারক বা কাযী নিযুক্ত করা হয় তার ধর্ম কি তাকে শরীয়তের বাইরে গিয়ে কোনো বিচার করার সুযোগ দিবে? তখন তো তিনি অসংখ্য আয়াত ও হাদীসের জেরার মুখে পড়বেন। তিনি কি বলতে পারবেন যে, এই আয়াত ঐ সন পর্যন্ত, ঐ প্রজন্মের জন্য ছিল? এ রকম করলে সবই ছেড়ে দিতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়কের একটি অপরিহার্য দায়িত্ব হল হুদূদ-কিসাস কার্যকর করা। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র সেক্যুলার হওয়ার কারণে তাকে কিতাবুল হুদূদের হাদীসগুলোতে, সূরা নূরের আয়াতসমূহে টীকা লাগিয়ে দিতে হবে যে, এগুলো প্রথম যুগের সাথে সম্পৃক্ত। পরবর্তীদের জন্য তা প্রযোজ্য নয়। তাই সেক্যুলারিজম নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ার কোনো সুযোগ নেই। দৃঢ়তার সাথে বুঝতে হবে যে, এটা সম্পূর্ণ লা দ্বীনী ও Anti Islam নীতি।

বিখ্যাত মুহাদ্দিস আবু যুরআ রাহ.কে খলীফা ওলিদ ইবনে আবদুল মালিক জিজ্ঞাসা করেছিল যে, أيحاسب الخليفة খলীফারা যে রাষ্ট্র পরিচালনা করে তাদের কি হিসাব দিতে হবে? পাকড়াও হবে?

আবু যুরআ রাহ. বলেছিলেন, অবশ্যই হিসাব নেওয়া হবে এবং দলিল হিসেবে তিনি কুরআন মজীদের এই আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন-

يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ إِنَّ الَّذِينَ يَضِلُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ بِمَا نَسُوا يَوْمَ الْحِسَابِ

অর্থ : হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার কর এবং খেয়ালখুশির অনুসরণ করো না। কেননা এটি তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করবে। যারা আল্লাহর পথ হতে ভ্রষ্ট হয় তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। কারণ তারা বিচারদিবসকে বিস্মৃত হয়ে আছে।-সূরা ছোয়াদ : ২৬

ইবনে কাসীর রাহ. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ঠিক একই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন-

هذه وصية من الله عز وجل لولاة الأمور أن يحكموا بين الناس بالعدل

অর্থ : এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে শাসকদের প্রতি নির্দেশনা যে, তারা যেন লোকদের মধ্যে সুবিচার করে।

বিচার একমাত্র আল্লাহর আইনেই হওয়া বাধ্যতামূলক। ধর্মনিরপেক্ষতা বা নিরপেক্ষ ভাব-ভঙ্গি বলতে কিছু নেই।

শেষকথা

দুতিন ঘণ্টার আলোচনায় ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষতিকর সকল দিক বলা সম্ভব নয়। আর ইলসামের রাষ্ট্রনীতি, বিচারনীতি ও ইবাদাতের বাইরের অন্যান্য বিষয়াবলির বিশালতা সম্পর্কে তো আপনারা অবগত আছেন।

আমি শুধু সংক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছি এবং সেক্যুলার ব্যক্তিবর্গের কথা ও লেখা থেকে প্রমাণ করেছি যে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মহীনতা সমার্থবোধক। এবং এর সবচেয়ে হালকা ব্যাখ্যাদাতারও দাবি হল, রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডের সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। যা সুস্পষ্ট কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী বক্তব্য। এবং প্রায় ৯০% মুসলমানের বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়ন গণতন্ত্র, মানবাধিকার পরিপন্থী কাজ। আর দেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় ও  মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতাকে স্থান দেওয়া এবং এটিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করা বাস্তবতা বিবর্জিত হঠকারিতা ও সীমিত সংখ্যক লোকের মতকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়ার নামান্তর। যারা এমনটি করছে তারা কিন্তু প্রকারান্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সংকীর্ণ করছে।

আল্লাহ তাআলা স্বীয় অনুগ্রহে আমাদেরকে সঠিক ইসলামের উপর পরিচালিত করুন। সকল ভ্রান্ত ধারণা ও বিশ্বাস থেকে দূরে রাখুন


সেক্যুলারিজম সম্পর্কে রাসূলে মাকবুল স. এর ================= মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আলনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "সাবধান! ইসলামের চাকা ঘূর্ণায়মান, তোমরাও ইসলামের সাথে ঘুরতে থাকবে। সাবধান! অচিরেই কুরআন ও ক্ষমতা আলাদা হয়ে পড়বে, অর্থাৎ ধর্ম থেকে রাষ্ট্র অচিরেই পৃথক হয়ে যাবে, তোমরা আল্লাহর কিতাব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ো না। সাবধান! অচিরেই তোমাদের ওপর এমন শাসক চেপে বসবে যারা নিজেদের জন্য এমন ফয়সালা করবে যা তোমাদের জন্য করবে না, তোমরা যদি তাদের আনগত্য না কর তারা তোমাদের হত্যা করবে, আর যদি আনুগত্য করো তবে তোমাদের পথভ্রষ্ট করবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ আমরা তখন কি করব ইয়া রাসূলুল্লাহ? রাসূলুল্ললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ "তোমরা তা করবে যা করেছেন ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহিস সালামের অনুসারীগণ। করাত দিয়ে তাদেরকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং শূলে চড়ানো হয়েছে (এরপরও তারা আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে আসেনি)। আল্লাহর নাফরমানী করে বেঁচে থাকার চেয়ে তাঁর আনগত্যের পথে মারা যাওয়া অনেক শ্রেয়। তথ্যসূত্রঃ ১. ইমাম বুসীরির ইত্তেহাফ গ্রন্থ ২. ইবনে হাজার প্রণীত আল মাতালিব আল আলিয়া, তাহকীক। শাইখ হাবূবুর রহমান আল আ'জমী। কুয়েতের ধর্মমন্ত্রনালয় থেকে প্রকাশিত, ৪র্থ খণ্ড, হাদিস নম্বর-৪৪০৮ (উপরের অংশ ও তথ্যসূত্রসমূহসমেত ইউসুফ'কারযাভী রচিত 'ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা তত্ত্ব ও প্রয়োগ' গ্রন্থ পৃষ্ঠা নম্বর ৭-৮ থেকে সংগৃহীত। মোহাম্মদ হাবীর রহমান কর্তৃক অনূদিত বইটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থ্যট। প্রকাশকাল ২০১৫) বাংলাদেশে সেকুলারিজমের অনুবাদ করা হয় ‘ধর্মনিরপেতাবাদ’। কিন্তু এ অনুবাদ সঠিক নয়। ধর্মনিরপেতাবাদ সেকুলারিজমের প্রকৃত তাৎপর্য প্রকাশ করে না। এতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এবং জনগণ প্রকৃত বিষয়টি বুঝতে পারে না। সেকুলারিজমের প্রকৃত তাৎপর্য রাষ্ট্র ও শিাকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করা। সেকুলারিজমের উদ্ভব ঘটেছিল এনলাইটেনমেন্ট আন্দোলন বা ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলনের মাধ্যমে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই আন্দোলন শুরু হয় ফ্রান্সসহ ইউরোপের কিছু দেশে। এটা ছিল মূলত ধর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলন। তাদের মূলকথা ছিল দু’টি। প্রথমত, ন্যাচারালিজম (Naturalism)। অর্থাৎ জগতের সৃষ্টি প্রাকৃতিকভাবে হয়েছে; এখানে ‘স্রষ্টা’ বলে কোনো সত্তার ভূমিকা নেই। অর্থাৎ এটি স্রষ্টাকে অস্বীকার করারই শামিল। দ্বিতীয়ত, র‌্যাশনালিজম (Rationalism) বা যুক্তিবাদ। অর্থাৎ মানুষ জীবনে চলার ক্ষেত্রে যুক্তির ভিত্তিতে চলবে; স্রষ্টা বা ওহি বা ধর্মগ্রন্থের নির্দেশের ভিত্তিতে নয়। এটিও নাস্তিকতারই নামান্তর। এ দু’টি ছিল এনলাইটেনমেন্ট মুভমেন্টের মূল কথা। এ চিন্তারই প্রায়োগিক বিস্তার ঘটেছে ‘সেকুলারিজম’-এর নামে। কোথাওবা এর প্রয়োগ নাস্তিকতার রূপ নিয়েছে। যেমন রাশিয়া, চীন ও কমিউনিস্ট দেশগুলোতে। অন্যান্য দেশে এটা রাষ্ট্র ও শিাকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়েছে; যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি দেশে সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কোনো শিাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মশিা দেয়া হয় না। তবে প্রত্যেক ধর্মীয় গোষ্ঠী নিজের অর্থে নিজস্ব শিাপ্রতিষ্ঠান চালাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তা করাও হচ্ছে। ভারতেও শিাকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সরকারি কোনো স্কুলে ধর্মীয় শিার কোনো সুযোগ নেই। তবে বেসরকারি স্কুলে ধর্মশিা দিতে পারে। তবে তারা সরকারি সাহায্য নিতে পারবে না। বলার অপো রাখে না যে, এ ধরনের ব্যবস্থার সাথে ইসলাম বা কোনো ধর্মেরই কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো ধর্মই এ ধরনের ব্যবস্থা সমর্থন করে না। ইসলামের কথা বলতে গেলে বলতে হয় যে, রাসূল সা: নিজেই মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার আইন ছিল ইসলামি শরিয়াহ। খেলাফতে রাশেদার সময়েও রাষ্ট্রের ভিত্তি ছিল ইসলাম ও ইসলামি আইন। একই কথা সত্য উমাইয়া, আব্বাসী ও উসমানী খিলাফতের ব্যাপারে এবং মোগল শাসিত রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে। আল্লাহ হচ্ছেন মালিকিন্ নাস (মানুষের শাসক, সূরা নাস) এবং মালিকাল মুলক (রাষ্ট্রের মালিক, সূরা আলে ইমরান)। কোনো মুসলিমই আল্লাহর চূড়ান্ত মতা অস্বীকার করতে পারে না। সেকুলার ব্যবস্থা বিশ্বে কমবেশি ২০০ বছর প্রতিষ্ঠিত আছে। এতে তেমন কোনো কল্যাণ হয়নি। সেকুলারিজমের গর্ভ থেকে কমিউনিজম ও ফ্যাসিবাদের উদ্ভব হয়েছে। এ সব মতবাদ মানুষের কোনো কাজেই লাগেনি। সেকুলারিজমের কারণেই উগ্র পুঁজিবাদের জন্ম হয়েছে, যারা সারা বিশ্বের সম্পদ লুট করে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় নিয়ে গেছে। সেকুলার শাসকরাই বিশ্বে কলোনি বা উপনিবেশ বানিয়েছে। সারা বিশ্বকে বানিয়েছে দাস। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসব কলোনি মুক্ত হয়েছে। সেকুলার শাসকদের কারণেই বিশ্বে প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ হয়েছে। ভিয়েতনাম ও আলজিরিয়াসহ বহু দেশে রক্তপাত হয়েছে। বিশ্বের দরকার গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নৈতিকতা। সেকুলারিজম নয়। সেকুলারিজমের প্রকৃত অর্থ না জানার কারণেই অনেক লোক নামাজ পড়েন, আবার সেকুলার। সেকুলারিজমের অর্থ বুঝলে এ বিভ্রান্তি দূর হবে। এখন ইসলামি মন বা ধার্মিক মন এবং সেকুলার মনের পার্থক্য বলব। ‘ইসলামি মন’ হলো সেই মন, যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধান খোঁজে কুরআন ও সুন্নাহতে, পরে অন্য দিকে। অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে- তাদের ধর্মের মধ্যে সমাধান খোঁজে, পরে অন্য দিকে। কিন্তু ‘সেকুলার মন’ সমাধান খোঁজে বিভিন্ন পণ্ডিতের মতামতে, যুক্তরাষ্ট্র কী করে, রাশিয়া কী করে, চীন কী করে- এসব দিকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামমনাদের দায়িত্ব, সেকুলারমনাদের ইসলামের দিকে ফিরিয়ে আনা। এ জন্য সেকুলারদের ইসলামের মৌলিক কিছু বই পড়াতে হবে। আশা করি, এতে ভালো ফল হবে। `` আমরা সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে তো এটাই বুঝি, তোমার ধর্ম তুমি পালন করবা, আমার ধর্ম আমি পালন করবো। আমি যতোটুকু সীমিত শিক্ষায় জানি, ইসলাম ধর্ম আমাকে এই শিক্ষা দেয় না জোর করে কাউকে ধর্মান্তরিত করো, অন্য ধর্মের মানুষকে অধিকার বঞ্চিত করো- বরং ইসলামই তো মানুষকে প্রতিবেশী হক আদায় করার জন্য বলে। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে আপনারা আসলে একটু বিরোধী অবস্থানে কেন? আমাকে একটু বুঝিয়ে বলেন, অনেক মানুষের প্রশ্ন এটা, ইন্টেলেকচুয়াল, আপনার সাংবাদিক, সিভিল সোসাইটির অনেকের প্রশ্ন। আপনি যদি বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করেন। আমি একটু সবিনয়ে জানতে চাই!`` এখানে 'তোমার ধর্ম তুমি পালন করবা, আমার ধর্ম আমি পালন করবো' কথাটি শুনতে খুব সুন্দর শোনালেও এবং ইসলামের সাথে একদিক থেকে সঙ্গতিপূর্ণ হলেও বক্তার উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন রয়েছে। অন্যথা বাকি আলোচনা পন্ডশ্রমে পরিণত হতে পারে। ধর্ম বলতে বর্তমানে আমরা ব্যক্তির নিজেস্ব কিছু বিশ্বাস ও আনুষ্ঠানিকতা(ইবাদত, উপাসনা) বুঝে থাকি। আমাদের সমাজে ধর্মপালন বলতে বোঝায় ধর্মীয় পবিত্র স্থানে(মসজিদ,মন্দির,গির্জায়) গিয়ে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ, কিছু আচার, উৎসব ও প্রথাপালন। প্রচলিত ধর্মের এই সীমিত অর্থ নিলে বলতে হয় বিদ্যমান অন্যান্য ধর্মের মতো ইসলাম নিছক কিছু প্রথা সর্বস্ব ধর্ম নয়, ইসলাম কিছু নির্দিষ্ট আচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভুল জীবনব্যবস্থার নাম। ইসলামে যেমন পরকালের কথা আছে, একান্ত আল্লাহর জন্য ইবাদতের কথা আছে, আবার ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্রজীবনের ব্যাপারেও সত্য-সুন্দর, অলঙ্ঘনীয় দিকনির্দেশনা এবং বিধি-নিষেধ রয়েছে। আর ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র দ্বীন(ধর্ম,জীবনব্যবস্থা)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا) ... [المائدة: 3] ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন(ধর্ম,জীবনব্যবস্থা) হিসাবে পছন্দ করলাম’ (সূরা আল-মায়েদা:৩)। ইসলামী আকিদা অনুসারে ইসলামের বিপরীত যাবতীয় মতবাদ ও ধর্ম ভুল, পরিত্যাজ্য। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, ہُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَہٗ بِالۡہُدٰی وَ دِیۡنِ الۡحَقِّ لِیُظۡہِرَہٗ عَلَی الدِّیۡنِ کُلِّہٖ ۙ وَ لَوۡ کَرِہَالۡمُشۡرِکُوۡنَ]﴿۳۳] 'তিনিই সে সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, যেন তিনি অন্য সকল দ্বীনের উপর একে বিজয়ী করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।' (সূরা তাওবাহ:৩৩) অর্থাৎ ইসলামকে সকল ধর্ম, জীবনব্যবস্থা তথা দ্বীনের উপর বিজয় করা রাসূলদের ও তাদের অনুসারী তথা মুসলিমদের উপর আল্লাহ প্রদত্ত মহান দায়িত্ব ও মিশন। যৌক্তিকভাবেই ইসলাম সকল ধর্মকে সমান চোখে দেখে না, সত্য ও মিথ্যা সমানও হতে পারে না। মুসলিমদের দায়িত্ব হলো সকল ধর্ম ও দ্বীনের উপর ইসলামকে বিজয়ী করার মিশন নিয়ে কাজ করা, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা তথা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। [ এ পর্যন্ত পড়ে থাকলে পুরো লেখা পড়ার অনুরোধ রইলো, অন্যথা ভুল বোঝার সম্ভবনা রয়েছে] এবার আসা যাক সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে। আমরা সকলেই জানি যেকোন মতবাদ সূচনা ও বিকাশ লাভের পেছনে প্রেক্ষাপট থাকে। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী একটি মতাদর্শকে ভুল প্রমাণ করতে আরেকটি মতবাদ জন্মলাভ করে। সেক্যুলারিজমের ক্ষেত্রেও বিষয়টির ব্যতিক্রম ঘটেনি। সেক্যুলারিজমের মূল কথা হলো বর্তমান সময়ের জীবন সমস্যার সমাধানে ধর্ম অপারগ ও অচল। তাই কল্যাণ ও প্রগতির জন্য ধর্মের স্থানে অধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক্ষেত্রে সেক্যুলারিজমকে বোঝার জন্য এর উদ্ভবের ইতিহাস জানা থাকা জরুরী। বর্তমান সেক্যুলারিজম মতবাদ হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে মধ্যযুগে ইউরোপে। খ্রিষ্টীয় পনেরো শতাব্দী থেকে ইউরোপে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা বিকাশ লাভ করতে শুরু করে। তখনকার ইউরোপীয় সমাজে গীর্জা ও তার পাদ্রীদের ব্যাপক প্রভাব ছিল। পাদ্রীরা নিজেদের কথাকে ধর্মের প্রলেপ লাগিয়ে প্রচার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতো। বিজ্ঞানীদের গবেষণামূলক মত পাদ্রীদের অসার উক্তি গুলোকে ক্রমাগত ভুল প্রমাণ করে। এরফলে বিজ্ঞানীদের সাথে পাদ্রীদের মতবিরোধ ক্রমশ বাড়তে থাকে। পাদ্রীগণ নিজেদের ইমেজ ধরে রাখার জন্য অনন্যপায় হয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের মনগড়া ব্যাখ্যা রক্ষায় ধর্মের দোহায় দেয়া শুরু করে । অবস্থা বেগতিক দেখে একপর্যায়ে গির্জাগুলো সরাসরি বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় , গির্জা কর্তৃক Inquisition কোর্ট গঠন করা হয় এবং বিজ্ঞানীদেরকে ধর্মদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। বিজ্ঞানী কোপার্নিকাস (Copernicus) ১৫৪৩ সালে ‘‘আকাশে গ্রহ নক্ষত্রের আবর্তন’’ নামক একটি বই প্রকাশ করেন। গির্জা কর্তৃক বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। খ্যাতিমান বিজ্ঞানী গ্যালিলিও (Galileo) টেলিস্কোপ আবিস্কার করার কারণে ৭০ বছর বয়সী এই বিজ্ঞানীর ওপর কঠোর নির্যাতন নেমে আসে। ১৬৪২ সালে তিনি মারা যান। বিজ্ঞানী স্পিনোজা (Spinoza) ছিলেন ইতিহাস সমালোচনার প্রবক্তা। তাঁর শেষ পরিণতি হয়েছিল তরবারীর আঘাতে মৃত্যুদণ্ড। এভাবে বিজ্ঞানীদের উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন ও চরমদণ্ড। এর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় যা হবার তাই হলো! চিন্তক ও গবেষকদের উপর নির্যাতনের প্রতিক্রিয়ায় বিজ্ঞানী ও চিন্তাশীলদের মধ্যে বিদ্রোহের সূচনা হয়। পাদ্রিদের নিজস্ব মনগড়া মতামতের ভ্রান্তি যতই প্রমাণিত হয় বিদ্রোহীদের শক্তি ও মনোবল ততই বৃদ্ধি পায়। ধর্মের নামে পাদ্রীদের এই অধার্মিক আচরণ বিদ্রোহীদের মনে প্রবল ধর্ম বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। তারা ধর্মকে সকল অমঙ্গলের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিদ্রোহীরা সিদ্ধান্ত নেয় সমাজজীবনের সকল স্তর থেকে ধর্মকে বিতাড়িত করবে। ধর্মের কর্তৃত্ব ধ্বংস না করলে অগ্রগতি সম্ভব নয়। পাদ্রীরাও রাজশক্তি ও ধর্মান্ধ জনতাকে সাথে নিয়ে বিদ্রোহীদের দমন করা শুরু করে । বিদ্রোহীদের সাথে এ সংঘাত দুইশত বছর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে । যা রাষ্ট্র বনাম গির্জা সংঘাত নামে পরিচিত ।[1] দীর্ঘ সংঘাতের একপর্যায়ে একদল সংস্কারবাদীর আবির্ভাব ঘটে। তারা উভয় পক্ষকে একটি সিদ্ধান্তে আনতে সক্ষম হন। তা হলো , "ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে সীমাবদ্ধ থাকুক এবং মানুষের ধর্মীয় কিছু আচার-অনুষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ক্ষমতা চার্চের হাতে থাকুক। কিন্তু সমাজের পার্থিব জীবনের সকল দিকের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব রাষ্ট্রের হাতে থাকবে এবং পার্থিব কোন বিষয়েই চার্চের কোন কর্তৃত্ব থাকবে না। অবশ্য রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দকে ক্ষমতা নেবার সময় চার্চের নিকট রাষ্ট্র পরিচালনার রাষ্ট্র পরিচালনার শপথ গ্রহণ করতে হবে ।" কোণঠাসা হয়ে যাওয়া পাদ্রীরা কেবল গির্জার কর্তৃত্ব পেয়েই আপোষ প্রস্তাব এক বাক্যে মেনে নেয়। আর বিদ্রোহীরাও রাষ্ট্র সমাজ ও অর্থনীতি থেকে ধর্মকে বিতাড়িত করতে পেরে সানন্দে প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি হয়। মূল কথা দাঁড়ায় ব্যক্তি মসজিদে যাবে নাকি গির্জায় যাবে নাকি কোথাও যাবে না- এটা তার একান্ত ঐচ্ছিক ব্যাপার। রাষ্ট্র এখানে নাক গলাবে না, তবে রাষ্ট্রের সংবিধানে ধর্মের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ থাকবে। সেক্যুলারিজমের প্রধান আদর্শিক প্রতিপক্ষ যেহেতু ধর্ম তাই সেক্যুলার রাষ্ট্রকে জনগণের একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিমণ্ডলেও ধর্ম পালনে ব্যাঘাত ঘটানোর প্রয়াস চালাতে দেখা যায়। তবে আমরা একথা স্বীকার করি, এর সংজ্ঞা ও বাস্তব প্রয়োগের ব্যাপ্তি নিয়ে কিছুটা মতানৈক্য রয়েছে। তবে সকল ধর্মনিরপেক্ষ তাত্ত্বিক একমত যে, ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে এমন এক মতবাদ যেখানে রাষ্ট্র থাকবে ধর্মের প্রভাব থেকে মুক্ত, রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতিতে ধর্মের প্রবেশাধিকার হবে নিষিদ্ধ। রাষ্ট্র নিজে কোন ধর্মচর্চা করবে না। ক্যামব্রিজ ইংলিশ ডিকশনারিতে সেক্যুলারিজমের সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে এভাবে , "secularism definition: the belief that religion should not be involved with the ordinary social and political activities of a country." "ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা: দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ধর্ম জরিত হওয়া উচিত নয় এমন বিশ্বাস ।"[2] ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার ‘ইহজাগিতিকতার প্রশ্ন’ প্রবন্ধে বলেন , 'ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, এই কথাটা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর পরই খুব জোরেসোরে বলা হচ্ছে। কথাটা সত্য বটে আবার মিথ্যাও বটে। সত্য এ দিক থেকে যে, রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা নাগরিকদের এ পরামর্শ দেয় না যে, তোমাদের ধর্মহীন হতে হবে; কিন্তু তা বলে এমন কথাও বলে না যে, রাষ্ট্র নিজেই সকল ধর্মের চর্চা করবে, কিংবা নাগরিকদের নিজ নিজ ধর্ম চর্চায় উৎসাহিত করবে। রাষ্ট্র বরঞ্চ বলবে ধর্মচর্চার ব্যাপারে রাষ্ট্রের নিজের কোন আগ্রহ নেই, রাষ্ট্র নিজে একটি ধর্মহীন প্রতিষ্ঠান।ধর্ম বিশ্বাস নাগরিকদের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। রাষ্ট্রের ওই ধর্মহীনতাকেই কিছুটা নম্রভাবে বলা হয় ধর্মনিরপেক্ষতা।'[3] এছাড়া আমেরিকান হেরিটেজ ডিকশনারীতে secularism শব্দটির সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে এভাবে - "The view that religious considerations should be excluded from civil affairs or public education." "নাগরিক বিষয় বা পাবলিক শিক্ষা থেকে ধর্মীয় বিবেচনা বাদ দেওয়া উচিত " [4] এসকল সংজ্ঞা থেকে স্পষ্ট হয়, ধর্মকে রাষ্ট্রের কাজের সাথে জড়ানো যাবে না- এটাই সেক্যুলারিজমের মূল কথা। ধর্ম যদিও থাকতে পারে, তবে তা থাকবে জনগণের একান্ত ব্যক্তিগত পরিমণ্ডলে – 'প্রাইভেট' ব্যাপার হিসেবে; 'পাবলিক' ব্যাপার স্যাপারে তাকে জড়ানো যাবে না। এপর্যায়ে নুরুল হক নূর ভাই বা সমচিন্তার অন্যান্য ভাইরা বলতে পারেন, আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা ও পশ্চিমের ধর্মনিরপেক্ষতা তো এক হবে না, দুইয়ের মধ্যে বুঝ ও প্রয়োগের পার্থক্য আছে। এক্ষেত্রে নূর ভাইদের কাছে সবিনয় প্রশ্ন থাকবে সে পার্থক্য কতটুকু? সে ধর্মনিরপেক্ষতা অনুযায়ী কী রাষ্ট্র একক কোন ধর্ম বা আরো স্পেসিফিক বললে রাষ্ট্র শরিয়াহ আইন মেনে নিবে? কোরআন সুন্নাহ কী শাসনযন্ত্রের আইনের প্রধান উৎস হবে? অর্থনীতি, কূটনীতি, রাজনীতি কী ইসলাম অনুযায়ী পরিচালিত করতে সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে? যদি না হয় তাহলে তো ইসলামের সাথে আপনাদের বঙ্গীয় সংজ্ঞা অনুযায়ী ধর্মনিরপেক্ষতার সাথেও বিরোধ থেকেই যায়। আর যদি হয়, তাহলে শরীয়াহ আইনে পরিচালিত রাষ্ট্রকে কী কেউ সেকুলার রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দিবে? ইসলাম নিজেই একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, এর সাথে মানবরচিত মতবাদগুলোর বিরোধ থাকবে খুব স্বাভাবিক। বলা যায় ইসলামী আইন প্রত্যাখ্যানকারী রাষ্ট্রকে মুসলিম সমর্থন করার তো প্রশ্নই আসে না। এখন কারও মনে সংশয় তৈরি হতে পারে ইসলাম অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হলে দেশে অবস্থানরত বাকি ধর্মাবলম্বী মানুষের অবস্থান কী হবে? এক্ষেত্রে আমাদের জানা থাকা উচিত, ইসলাম নিজেই ন্যায় ও ইনসাফের ধর্ম, সত্যের ধর্ম। ইসলাম চায় সকল মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিক, ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি পাক। এজন্য ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থা অনুযায়ী খলিফা প্রথমে সকল অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানায়, যারা ইসলামের ছায়াতলে চলে আসে তারা মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, তাদের অতীত ভুলের কারণে কোনই ভৎসনা বা বৈষম্য করা হয় না। বরং ক্ষেত্রে বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। আর যারা ইসলামের দাওয়াত কবুল করে না, তাদেরকে জিযিয়া বা নিরাপত্তা করের বিনিময়ে ইসলামি খিলাফতে বসবাসের সুযোগ দেয়া হয়, ইনসাফভিত্তিক নিরপত্তা করের বিনিময়ে তারা পূর্ণনিরাপত্তার সাথে থাকতে পারেন, তাদের ব্যক্তিজীবনে ধর্মপালনেরও অধিকার নিশ্চিত করা হয়। তার বিচারের ক্ষেত্রেও পরিপূর্ণ ইনসাফ পাবেন, কোন মুসলিম অমুসলিম জিম্মির(নিরপত্তা প্রাপ্তর) উপর জুলুম করে পার পাবে না। এটাই ইসলামের কালজয়ী শাশ্বত আদর্শ। যেসকল অমুসলিম ইসলামও গ্রহণ করবে না, আবার জিযিয়া দিয়ে রাষ্ট্রের অনুগত থাকতেও অস্বীকৃতি জানাবে, সে সকল নৈরাজ্যবাদী রাষ্ট্রদ্রোহী অমুসলিমরা ইসলামী খিলাফতে বসবাসের অধিকার পাবেন না, তাদের উচ্ছেদ করা হবে। খেলাফতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সবসময় নির্দিষ্ট যোগ্যতা সম্পন্ন মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।(খলিফা, সেনাবাহিনী প্রধান, বিচারপতি প্রভৃতি) অন্যধর্মালম্বীদের মাঝে কেবল সত্য ধর্ম প্রচারের অনুমতি থাকবে, কোন মিথ্যা ও ভুল ধর্ম প্রচারের ধৃষ্টতা প্রদর্শনের স্বীকৃতি দেয়া হবে না। রাষ্ট্রের আইন হবে কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াসের ভিত্তিতে। বিশেষ ধার্মিক জ্ঞানী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরামর্শসভা থাকবে। তাদের সাথে পরামর্শ করে খলিফা শাসনকার্য পরিচানলা করবেন। খলিফা ইসলামী আইনের অনুগত ও জনগনের কাছে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য থাকবেন, স্বেচ্ছাচারী হওয়ার বৈধতা নেই। ইসলামি খেলাফত কোন ইউটোপিয়ান ধারণাও নয়, যার বাস্তব প্রয়োগের সুদীর্ঘ গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। ইসলামি খেলাফত যে অমুসলিমদের নিরাপদে বসবাসের সুযোগ দেয়, তা শুধু কাগজে কলমে নয়, ইতিহাস থেকেই প্রমাণিত। এখানে সংখ্যালঘুদের নিরপত্তার জন্য প্রাচ্য থেকে সেকুলারিজম আমদানির প্রয়োজন নেই। ইনসাফের সর্বোত্তম আদর্শ ইসলামেই বর্ণিত হয়েছে। প্রাচ্যের খ্রিষ্টীয় গির্জাতন্ত্রের মতো ইসলাম বিজ্ঞানচর্চার বিরোধী নয়, ইসলাম বরং সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করতে উৎসাহিত করে, ফজিলত বর্ণনা করে। ইসলামের সাথে কখনো জাগতিক জ্ঞানচর্চার বিরোধ ঘটেনি, এজন্য ইসলামি খেলাফতের জ্ঞানীদের সম্মানিত স্থান ছিল, ইসলামে কোন কুসংস্কারের স্থান নেই, তাই শাসনব্যবস্থা থেকে ইসলামকে বাদ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না, আল কোরআনই সর্ব যুগের, সকল মানুষের যাবতীয় সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষম। তাই রাষ্ট্র , সমাজ , অর্থনীতি থেকে ইসলাম ত্যাগ করা তথা সেকুলারিজম গ্রহণের প্রশ্নই আসে না। ইসলামের দাবি শুধু ব্যক্তি জীবন নয়, রাষ্ট্রের প্রতিটি অর্গানকে ইসলামের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এখানেই সেকুলারিজমের সাথে ইসলামের বড় বিরোধ, মুসলিমদের বিরোধ। নূর ভাই সহ এরকম প্রশ্ন করা অনেককেই গর্বের সাথে মুসলিম পরিচয় দিতে দেখা যায়, এটা অবশ্যই একটি ভালো গুন। তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে সত্য ধর্ম ইসলাম পরিপূর্ণভাবে মেনে নেয়া, সর্বক্ষেত্রে ইসলামী বিধান বাস্তবায়নের পক্ষে অবস্থান নেয়া। ইসলাম যেহেতু নিছক কিছু প্রথাসর্বস্ব ধর্ম নয়, ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ষব্যবস্থা তাই সেকুলারিজমের পক্ষ নেয়ার অর্থ হলো বহু ক্ষেত্রে ইসলামি আইনের বিপক্ষে দাঁড়ানো, শত শত আয়াতের বিপক্ষে দাড়ানো, যা অবশ্যই একজন মানুষের জন্য আল্লাহর অসন্তুটির কারণ হবে। ইমান ভঙ্গের কারণ হবে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে মাজিদে বলেছেন, اَلَّذِیۡنَ اِنۡ مَّکَّنّٰہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَوُا الزَّکٰوۃَ وَ اَمَرُوۡا بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ نَہَوۡا عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ لِلّٰہِ عَاقِبَۃُ الۡاُمُوۡرِ ﴿۴۱﴾ "আমি তাদেরকে পৃথিবীতে (রাজ)ক্ষমতা দান করলে তারা নামায কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎকার্য হতে নিষেধ করে। আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর আয়ত্তে। [ সূরা আল হাজ্জ- ৪১] অর্থাৎ শাসকের উপর ফরজ হলো নামাজ কায়েম করা, এখানে শুধু নামাজ নিজে পড়া নয়, প্রতিটি মুসলিমকে পড়া নিশ্চিত করা। সকল ধনবান মুসলিমদের থেকে যাকাত আদায় করে যথাযথ খাতে প্রদান করা। ইসলাম যেটাকে অন্যায় মনে করে তা বন্ধ করে দেয়া, আর যা আদেশ করে তা বাস্তবায়ন করা। এই কাজগুলো যিনি করবেন তাকে নিশ্চয়ই সেকুলার শাসক আপনারাও বলবেন না। উক্ত আলোচনায় আশা করি ইসলামপন্থীদের ধর্মনিরপেক্ষতার পশ্নে বিরোধিতার কারণ স্পষ্ট হয়েছে। আমার এখানে সেকুলারিজমকে প্রশ্ন করিনি, অসারতাও তুলি ধরার চেষ্টা করিনি, জীবনবিধান হিসেবে ইসলামের সুমহান আদর্শ তুলে ধরাও এখানে সম্ভব হয়নি। আমরা কেবল প্রশ্নটি এড্রেস করার চেষ্টা করেছি। সর্বশেষ প্রশ্নকারী ভাইদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান থাকবে আপনারা বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত, সাইয়েদুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া জীবনী পড়ুন। কোরআন পড়ুন, বোঝার চেষ্টা করুন। ইসলামের সুমহান আদর্শে জীবন, সমাজ ও বিশ্ব সাজাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। মনে রাখুন দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, আমাদের ফিরে যেতে হবে আল্লাহর কাছে, তাই আল্লাহর সন্তোষ অর্জনই হোক আমাদের পরম কামনা। তথ্যসূত্র: 1.http://www.iun*edu/~hisdcl/h113_2001/churchstate.htm[* এর স্থলে . হবে] 2.https://dictionary.cambridge*org/amp/english/secularism] 3.ইহজাগতিকতার প্রশ্ন প্রবন্ধ,'স্বতন্ত্র ভাবনা' (চারিদক, 2008) 4.https://www.ahdictionary*com/word/search.html?q=secularist&submit.x=0&submit.y=0] । "secularism"(ধর্মনিরপেক্ষতা) সেকুলারিজম( secularism) শব্দটি ইংরেজি যার উৎপত্তি হয়েছে secular এবং Ism নামক দুটি শব্দের সংযুক্তিতে। secular শব্দের অর্থ পার্থিব, জাগতিক, বা লকায়িত এবং Ism এর অর্থ মতবাদ বা বিশ্বাস। তাহলে অভিধানিক অর্থ হল জাগতিক বিশ্বাস। যারা কোন ধর্ম বা অলৌকিক কোন আচার বিধানে বিশ্বাস করে না তাদের সেকুলার বলা হয়। তার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া, আমি প্রথমে আমার মত করে বলি। তার পর জ্ঞানীদের মত বা ব্যাখ্যা বলী উপস্থাপন করব। আমি যা করলাম বা জন্ম দিলাম তা হলো ক্রিয়া।করার পর যা বিনিময় পেলাম বা জন্ম নেয়া বস্তু আমার প্রতি কি আচরণ করলো তাহলো প্রতিক্রিয়া। এইবার আসি জ্ঞানীদের কথায়। আমি মনে করি পাঠ্যপুস্তকে যাদের জ্ঞান ভড়া কথা মুদ্রিত হয়, তাঁরাই হচ্ছেন সুত্র। যে সুত্র অবলম্বন করে সকল জটিলতার সমাধান পাবেন। বা নিজেও নতুন কোন সুত্র আনয়ন করবেন। আর আমিও আমার পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে জানলাম, কর্তার ইচ্ছাই কর্ম। কর্মই হচ্ছে ক্রিয়া। এইখানে জন্মদাতা কর্তা,জন্ম দিতে গিয়ে যা কিছু করা হয়েছে তাহলো কর্ম।কর্মের ফসল বা বস্তুই হচ্ছে ক্রিয়া।কর্তা ছাড়া কর্ম সম্ভব নয়। সেই হিসেবে পৃথিবী জন্ম নিয়েছে। তাহলে পৃথিবীর ও কর্তা আছে। সৃষ্ট সকল ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া আছে বলে আমি মনে করি। সেটা জীববস্তু হউক আর জরবস্তুই হউক। তবে বিজ্ঞান সম্মত কি না তা জানিনা। কর্তাই ঠিক করে থাকেন কাজটা কি ভাবে কত পরিমাণ করবেন।কর্তার শক্তির উপর নির্ভর কাজের পরিমান কম বেশি। তা হলে আমি বুজে নিলাম কর্তা,কর্ম বা ক্রিয়ার মুল উৎস হচ্ছে শক্তি। ফিরে আসি মুল কথায় secularism যার বাংলা অর্থ, ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু অর্থটা নিরপেক্ষধর্ম হয়নি, বা নিরপেক্ষতারধর্ম হয়নি। বা বাংলায় শব্দটা এই ভাবেও আসেনি যে ধর্ম-নিরপেক্ষতা।এই শব্দটি প্রথম যিনি তাঁর ভাষায় সংযোগ করেন, উইকিপিডিয়া থেকে জানলাম তাঁর নাম জর্জ জ্যাকব, তিনি একজন লেখক ছিলেন। ১৮৫১ সালে তিন এই শব্দটি ব্যবহার করেন। তিনি ধর্মের কোন রকম সমালোচনা ছাড়া, সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলা আনয়ন ও বজায়ে রাখার যে ধারনার অবতারণ করেন তা বুঝাতেই এই শব্দটির উচ্চারণ করেন। যা হচ্ছে একটি ধারনা বা মতবাদ। দুনিয়া ভর এই পর্যন্ত যাঁরা লেখালেখি করেছেন, তাঁরা কেউই পারিপার্শ্বিক বিরাজমান অবস্থা অবলোকন না করে লিখেছেন আমার জানামতে এমন কেউ আছেন বলে জানানাই। আর পৃথিবীতে যত বিখ্যাত লেখক জন্ম নিয়েছেন, তাদের লেখা ও লেখার ভাব, শব্দ উচ্চারণ ও উচ্চারণ ভঙ্গি, লেখার সময়, কাল, স্থান ও পাত্র। এই বিষয়ে পৃথিবী যত দিন ক্রিয়াশীল থাকবে ততদিন পর্যন্ত আলোচনা পর্যালোচনা ও চুল ছেঁড়া বিশ্লেষণ চলতেই থাকবে। জর্জ জ্যাকব এই ধারনা কে আরো বিস্তৃত করতে গিয়ে তার মতবাদে উল্লেখ করেন, "ধর্মনিরপেক্ষতা খ্রীষ্টধর্মের বিরুদ্ধের কেনো মতবাদ নয়। এটি একটি স্বাধীন সত্ত্বা। ধর্মের অস্তিত্ব নিয়ে এটি কোনো প্রশ্ন তোলে না, কিন্তু অন্যদের ধর্মনিরপেক্ষ হতে উৎসাহিত করে।” তাহলে আমরা ভাবতে পারি যে, ধর্ম তখনকার সময়ের শাসকের ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিল,অথবা তার নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তা নাহলে এমন অদ্ভুত ধারনা লেখকের মস্তিস্কে জন্ম নেয়ার কথা নয়। ১৮৫১ সালে এই লেখক কয়টা ধর্ম সম্পর্কে জানতেন? বা তখন বৃটেনে কয়টা ধর্মের অস্তিত্ব ছিলো? তখনকার বৃটেনের শাসক কোনো ধর্ম বিশ্বাসী ছিলেন কিনা? থাকলে কোন ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন? ওখানকার সমাজে ধর্মের কি প্রভাব ছিলো। ধর্মের নিয়ন্ত্রক কে ছিলেন? ধর্মীয় নেতাগণ নাকি সম্পদশালী সামাজিক নেতাগণ? বা কিসের ভিত্তিতে লেখকের এমন চিন্তার উদয় ঘটল। এই মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা কি করে আমাদের বোকা বানিয়ে ধর্ম হীনতার দিকে নিচ্ছে,একটু মনোযোগ দিলেই আপনারা পরিষ্কার হয়ে যাবেন।১৮৯৬ সালে তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কিত এক প্রকাশনায় ধর্মনিরপেক্ষতাকে নিম্ন লিখিত ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন: ধর্মনিরপেক্ষতার জীবন, বিশুদ্ধরূপে মানুষের বিবেচনার উপর প্রতিষ্ঠিত, পাঠকগণ কোড করলাম ("যারা ধর্মের অনির্দিষ্ট বা অপর্যাপ্ত, অবিশ্বস্থ বা অবিশ্বাস্য ধর্মতত্ত্বকে বিশ্লেষণ করেতে ইচ্ছুক তাদের জন্যই এই মতবাদের উৎপত্তি)। কেন এই মতবাদ নিরপেক্ষতা নাকি হীনতা, ধর্মে অনির্দিষ্ট কোন বিষয় বা বস্তু নেই। ধর্মে অপর্যাপ্ততা বলতে কোন অবস্থান নেই। ধর্মে অবিশ্বস্থ বা অবিশ্বাস্যতার কোন স্থান নেই। ধর্মনিরপেক্ষতা এর তিনটি মূল ভিত্তি বিদ্যমান, যথাঃ- (১) উন্নয়ন: জীবনকে নৈতিক গুণাবলীর ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে। (২) বিজ্ঞান মানুষের উপলব্ধ রিযিক. (৩) যে কাজ ভালো তাকে ভালো ভাবে মূল্যায়ন করতে হবে এবং পাথির্ব জীবনের সার্বিক কণ্যানকেই বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। এই মতবাদ বা বিশ্বাসের মূল তিনটি ভিত্তির মধ্য পৌনে তিন ভিত্তিই হলো ধর্মে প্রবেশ করার প্রথমিক ভিত্তি। ১)উন্নয়নঃ তার ব্যাখ্যা দার করিয়েছেন, জীবনকে নৈতিক গুণাবলীর ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে ধর্ম কি বলে বা কি শিক্ষা দেয়। ২) বিজ্ঞান মানুষের উপলব্ধ রিযিক। ধর্ম কি বলে না বুঝে ধর্ম পালনে কোনো মহর্ততা নেই। তাহলে যার জ্ঞান নেই, তার নিকট বিজ্ঞান উপলব্ধ হবে কিনা। ৩) যে কাজ ভালো তাকে ভালো ভাবে মূল্যায়ন করতে হবে এবং পাথির্ব জীবনের সার্বিক কণ্যানকেই বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। ধর্ম কি বলে, ভালোকে কি কালো হিসেবে মূল্যায়ন করার নির্দেশ দেয়। এখন দেখুন কি ভাবে ধর্মকে অশিকার করা হচ্ছে।"(পাথির্ব জীবনের কেই বেশি প্রাধান্য দিতে হবে)। পাথির্ব হচ্ছে ইহকাল বা দুনিয়া মুখি। আপনি যদি ইহকাল বা দুনিয়া মুখি হন। তাহলে আপনার আর ধর্মের প্রতি আস্থাই রইল না। কারন ধর্ম বলে ইহকাল মানব জাতীর জন্য একটা পরিক্ষা ক্ষেত্র মাত্র আর এই পরিক্ষারভালো মন্দ ফলাফল পরকালেই প্রকাশিতব্য। এছাড়া কিছু রেফারেন্স নিন্মে প্রদান করিলাম। ইংরেজি অভিধানে secularism শব্দের নিম্নরূপ অর্থ এসেছে: ১. পার্থিববাদী অথবা বস্তুবাদী। ২. ধর্মভিত্তিক বা আধ্যাত্মিক নয়। ৩. দ্বীনপালনকারী নয়, দুনিয়াবিমুখ নয় [a]। একই অভিধানে secularism শব্দের সংজ্ঞায় এসেছে: “secularism এমন একটি দর্শন, যার বক্তব্য হচ্ছে, চরিত্র-নৈতিকতা ও শিক্ষা ধর্মীয় নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না”। ‘ব্রিটিশ বিশ্বকোষ’-এ আমরা দেখি, সেখানে সেকুলারিজম সম্পর্কে বলা হয়েছে: “সেকুলারিজম একটি সামাজিক আন্দোলন, যার একমাত্র লক্ষ্য মানুষদেরকে পরকালমুখী থেকে ফিরিয়ে এনে দুনিয়ামুখী করা”। Encyclopedia Britanica নামীয় ব্রিটিশ বিশ্বকোষে Atheism বা ‘নাস্তিকতা’ শিরোনামের অধীন secularism এর আলোচনা এসেছে। তাতে Atheism তথা নাস্তিকতাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে: ১. তাত্ত্বিক নাস্তিকতা ২. ব্যবহারিক নাস্তিকতা ‘বিশ্বকোষ’ সেকুলারিজমকে দ্বিতীয় প্রকার নাস্তিকতার অন্তর্ভুক্ত করেছে। সেকুলারিজমের প্রথম উদ্যোক্তা Holyoake যিনি secular socity গঠন করে এর পক্ষে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন, তিনি সেকুলারিজমের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “সেকুলারিজমএমন একটি কর্তব্য পালন পদ্ধতি, যা শুধু ইহিজীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট ও কেবল মাত্র মানবীয় বিবেচনার উপর প্রতিষ্ঠিতএবং এটি তাদের জন্য যারা ধর্মতত্বকে অস্পষ্ট, অপূর্ণ, আনির্ভরযোগ্য ও অবিশ্বাসযোগ্য মনে করে”। (English secularism : A confession of belief (Chicago 1896) – Holyoake) National secular society বিখ্যাত ওয়েব সাইটে সেকুলারিজম এর সংঙ্গা দিয়েছে : Secularism is a principle that involves two basic propositions. The first is the strict separation of the state from religious institutions. The second is that people of different religions and beliefs are equal before the law. সূত্র : / http://www.secularism.org.uk/what-is-secularism ইংরেজিতে বিখ্যাত dictionary.reference.com এ সেকুলারিজম এর সংঙ্গা দেয়া হয়েছে : 1. secular spirit or tendency, especially a system of political or social philosophy that rejects all forms of religious faith and worship. 2. the view that public education and other matters of civil policy should be conducted without the introduction of a religious element. Encyclopedia of Britanica তে বলা হয়েছে : any movement in society directed away from otherworldliness to life on earth অর্থাৎ এটি এমন একটি সামাজিক আন্দোলন যা মানুষকে পরকাল থেকে মুখ ফিরিয়ে পার্থিব বিষয়ের দিকে দৃষ্টিনিবদ্দ করে। সূত্র : http://www.britannica.com/secularism বিখ্যাত oxford dictionaries তে বলা হয়েছে : Not connected with religious or spiritual matters সূত্র : http://www.oxforddictionaries.com/definition/english/ secular Encyclopedia of Religion & Ethics এর সেকুলারিজম এর সংঙ্গায় বলেন : সেকুলারিজম’ বলতে সেই ব্যাবস্থাকে বুঝায় যেখানে মানবকল্যাণ নির্ধারিত হবে যুক্তির মাধ্যমে, ওহী বা ধর্মীয় নির্দেশনার মাধ্যমে নয়। আর যুক্তি পরিক্ষিত হবে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ‘সেকুলারিজম’ এমন একটি মতবাদ যা ধর্মিয় বা আধ্যাত্বিক ভাবে পবিত্র বলে বিবেচিত নয়। যা কোন ভাবেই কোন ধর্মে সাথে সম্পর্কিত নয়। এটি ধর্মিয় আইন-কানুন বহির্ভুত একটি ব্যাবস্থা।[Random House Dictionary of English language college edition, Newyork-1968] ইংল্যান্ডের national secular society এর সভাপতি Mr. Charles Bradlaugh রচিত বই Autobiography তে সেকুলারিজম সম্পর্ক বিস্তারিত ব্যাখ্যায় লিখেন : সেকুলারিজম ও আস্তিকতা পাশাপাশি চলতে পারে না। তাই আস্তিকবাদী বিশ্বাস্বের সাথে লড়াই করা ‘সেকুলারিজম’ এর জন্য অপরিহার্য । অদৃশ্য বিশ্বাস ও মানবপ্রগতির পাশাপাশি চলতে পারে না। ধর্মিয় বিশ্বা প্রতিহত করাই ‘সেকুলারিজমের’ এর কর্তব্য। কেননা এসব কুসংস্কারমূলক ধারনা-বিশ্বাস যতদিন পর্যন্ত পূর্ণ শক্তিতে বিরাজমান থাকবে, ততদিন পর্যন্ত বস্তুগত উন্নতি লাভ করা কল্পনাতীত হয়ে থাকবে।ধর্ম অজানা জগত নিয়ে কথা বলে। ফলে ইহকালীন বিষয়ে ধর্মের কোন স্থান নেই, যেমন পরকালের ব্যাপারে ‘সেকুলারিজ’ এর কোন বক্তব্য নেই। তাহলে পরকালে যারা বিশ্বাস করে, তারা সেকুলারিজম এ বিশ্বাস রাখতে পারেনা



••• ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটির অর্থ আসলে কী?

ইংরেজি Secularism শব্দের বাংলা অনুবাদ হলো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। বিশ্বের প্রধান প্রধান ডিকশনারীগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ করা হয়েছে ধর্মহীনতা কিংবা নাস্তিকতা।

ক) বিশ্বখ্যাত Random house dictionary of English language এ - Secularism এর তিনটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হয়েছে।

No. 1- no regarded as religious or spiritually sacred. যা ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিকভাবে পবিত্র বলে বিবেচিত নয়।

No. 2- no partaining to or connected with a religion. যা কোনো ধর্মের সাথে সম্পর্কিত নয়।

No. 3- no belonging to a religious order. যা কোনো ধর্ম বিশ্বাসের অন্তর্গত নয়।

খ) Webster অভিধানে 'Secular' শব্দটির অর্থ: ধর্ম বা ধর্ম-বিশ্বাস বর্জন বা এই বিষয়ে উদাসীন থাকা।

গ) Short Oxford Dictionary-তে 'Secular' শব্দটির সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে : এমন একটি তত্ত্ব যার মূলনীতি হলো, নৈতিকতার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ইহজগতে মানুষের ভালো থাকা, এতে পরলোক বা ঈশ্বরে বিশ্বাসের কোনো স্থান নেই। এই শব্দটির সাথে ধর্মহীনতা, ইহজগৎবাদ, রাষ্ট্র-ধর্ম-পৃথকীকরণ, দৈবশক্তির পরিবর্তে মানবিক ক্ষমতায় বিশ্বাস, বি-ধর্মীকরণ ও যুক্তিবাদী বিশ্বাস ইত্যাদি ধারণার একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।

উল্লিখিত ৩টি ডিকশনারীর বক্তব্য অনুযায়ী ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা।

••• ধর্মে বিশ্বাসীরা কি ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারেন?

বর্তমান বিশ্বে যারাই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী তারাই কোন না কোন ধর্মের অনুসারী। তাই মুসলমানরা তো দূরের কথা- অন্য কোনো ধর্মের অনুসারীও ধর্মনিপেক্ষ হতে পারবে না। নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করার অর্থ নিজের সাথেই নিজে প্রতারণা করার শামিল।

এবার বাস্তব কয়েকটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করুন এবং নিচের প্রশ্নের উত্তরগুলো নিজের বিবেকের কাছ থেকে জেনে নিন।

ক ) একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী যখন পরনে ধুতী, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, গায়ে নামাবলী ও পৈতা জড়িয়ে, মাথায় টিকি, সিঁথিতে সিঁদুর ও হাতে শাঁখা পরেন, তেত্রিশ কোটি দেবতায় বিশ্বাস করে প্রত্যহ মন্দিরে গিয়ে দেবতার পদপ্রান্তে অর্ঘ-নৈবেদ্য নিবেদন করেন, তখন কি তিনি আর ধর্মনিরপেক্ষ থাকলেন? 

খ) একজন মুসলিম নারী বা পুরুষ যখন হিজাব বা মাথায় টুপি, মুখে দাড়ি এবং লম্বা জামা পরেন, নামায-রোযা, হজ্জ ও উমরাহ পালন করেন, যাকাত আদায় করেন, নিজের বা সন্তানের নাম ইসলাম অনুসরনে রাখেন, বিয়ে বা আকিকা রাসুলুল্লাহর (সা) সুন্নাহ অনুসারে করেন,  আল্লাহ-রাসূল, কুরআন-হাদীস, পরকাল, জান্নাত-জাহান্নামে বিশ্বাস করেন, এমনকি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী কুরবানীর পশু জবেহ করেন, তখন সেই নারী বা পুরুষ কি আর ধর্মনিরপেক্ষ থাকলেন?

গ) একজন শিখ যখন গুরু নানকের অনুসারী হয়ে দাড়ি না কেটে মাথায় পাগড়ী পরেন এবং হাতে বালা ও কৃপাণ ধারণ করেন, গুরুদুয়ারায় গিয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন, তখন কি তিনি আর ধর্মনিরপেক্ষ থাকলেন?

ঘ) একজন বৌদ্ধ যখন গৌতম বুদ্ধের ‘অহিংসা পরমধর্ম’ ও ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে গেরুয়া বসন পরিধান করে আত্মার মহানির্বাণ লাভের জন্যে কৃচ্ছ সাধন করেন, বোধিবৃক্ষকে পবিত্র জ্ঞান করে প্যাগোডায় যান, তখন কি তিনি আর ধর্মনিরপেক্ষ থাকলেন?

ঙ) একজন খৃস্টান যখন যিশুখৃস্টকে তাদের ত্রাণকর্তা প্রভু বলে বিশ্বাস করেন, গলায় ক্রুশ ঝুলান, ত্রিত্ববাদ ও বাইবেলে বিশ্বাস করেন, মুখে যিশুর নাম উচ্চারণ করে প্রতি রোববার গির্জায় প্রার্থনা করেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যখন বাইবেল স্পর্শ করে শপথ নেন এবং যাদের প্রতিটি ডলারে যখন ছাপার অক্ষরে লেখা থাকে 'IN GOD WE TRUST'- তখন তারা কি আর ধর্মনিরপেক্ষ থাকলেন?

সবগুলো প্রশ্নের উত্তর একটাই। আর তা হলো- 'না! তারা কেউই আর উপরোক্ত কার্যক্রমের পর ধর্মনিরপেক্ষ থাকলেন। বরং তারা সবাই ধর্মের পক্ষে অবস্থান গ্রহন করেছেন।'

এটাই যখন প্রকৃত বাস্তবতা, তখন কতিপয় নাস্তিক ছাড়া আর ধর্মনিরপেক্ষ রইলো কারা? প্রকৃত বিষয় হচ্ছে ধর্মে বিশ্বাসী কোনো মানুষই ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে না।

নির্দ্বিধায় যাদের কাফির আখ্যায়িত করা উচিত...
লেখক : ড. ইউসুফ আল কারযাভী
১. কমিউনিস্ট : যারা কমিউনিজমকে জীবনদর্শন এবং জীবনের মূল চাবিকাঠি মনে করে। কারণ, এটি ইসলামি চিন্তাধারা ও তার ধর্মবিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। আর কমিউনিজমের অনুসারীরা মনে করে, ধর্ম হচ্ছে মানবজাতির জন্য আফিমের মতো এক ভয়ংকর নেশাসদৃশ। তারা শুধু ইসলাম নয় বরং সব ধর্মেরই বিরোধিতা করে। কিন্তু বিশেষভাবে ইসলামকে তারা শত্রুতা এবং আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। কারণ, ইসলামই হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ধর্মবিশ্বাস এবং সঠিক জীবনদর্শন।
.
২. সেকুলার শাসক : সেকুলার দলের নেতারা আল্লাহপ্রদত্ত শরিয়তের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে থাকে। তাদের মূল দর্শন ও কথা হচ্ছে--- রাষ্ট্র ও দ্বীন সম্পূর্ণ ভিন্ন ও পৃথক দুটি বিষয়। এদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদর্শের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়, তখন এরা প্রকাশ্যে অস্বীকার করে এবং তা পালনে নিজেদের স্বাধীন বলে মনে করে। আরও ভয়ংকর কথা হলো, তারা আল্লাহর শরিয়ত ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার আহ্বানকারীদের কঠোরভাবে প্রতিহত করতে চায়।
৩. পথভ্রষ্ট সম্প্রদায় : ইসলাম থেকে প্রকাশ্যে বের হয়ে যাওয়া ধর্মের অনুসারী বলে দাবি করা কিছু সম্প্রদায়। যেমন : দুরুয, নুসাইরিয়া, ইসমাইলিয়া ইত্যাদি এবং তাদের মতো বিভিন্ন বাতিনি ফিরকা। ইমাম গাযালিসহ অনেকের মতে, “এরা বাহ্যত অল্প কিছু বিষয়ের বিরোধিতা করে, কিন্তু এদের মনে রয়েছে শুধুই কুফরি।”
ইমাম তাকিউদ্দিন ইবনে তাইমিয়া বলেন, “এরা ইহুদি-খ্রিস্টানদের থেকেও ভয়ংকর কাফির।” কারণ, তারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত ইসলামের মৌলিক বিষয়কেও অস্বীকার করে। বর্তমান সময়ে এর উদাহরণ হচ্ছে ‘বাহায়ি’ সম্প্রদায়। এদের প্রবর্তিত ধর্মদর্শন দেখলে বোঝা যায়, তারা সম্পূর্ণ নতুন এক ধর্ম প্রবর্তন করেছে। আরেকটি হলো কাদিয়ানি সম্প্রদায়, যারা সর্বশেষ নবি ও রাসূল মুহাম্মাদ সা.-এর পর নতুনভাবে নবুয়তের দাবি করেছে।
.
আমাদের উচিত, যারা কোনোরকম লজ্জিত না হয়ে প্রকাশ্যে নিজেদের কুফরির কথা বলে বেড়ায়, তাদের কাফির আখ্যায়িত করা। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে নিজেদের মুসলিম বলে; যদিও বাস্তবে তাদের মনে ঈমানের লেশমাত্র নেই, আমরা তাদের কাফির আখ্যায়িত করা থেকে বিরত থাকব। কারণ, ইসলামি পরিভাষায় তাদের মুনাফিক বলা হয়। যারা মৌখিকভাবে বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’, কিন্তু তাদের মনোজগতে ঈমানের কোনো স্থান নেই। তাদের কর্মকাণ্ড তাদের মুখের কথাকে সত্যায়িত করে না। দুনিয়াতে বাহ্যিক দাবি অনুযায়ী তাদের ওপর মুসলিমের হুকুম সাব্যস্ত হবে, আর আখিরাতে তারা পেটে লুকিয়ে রাখা কুফরির কারণে জাহান্নামের নিকৃষ্ট তলানিতে অবস্থান করবে। 
.
বই- তাকফির : কাফির ঘোষণায় বাড়াবাড়ি ও মূলনীতি
 

 



----------------------------------------------------
    (১) "ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা কাফির"।
           - সৌদী 'আরাবের সর্বোচ্চ ফাতওয়া বোর্ডের সদস্য 
           - শায়খ সালেহ আল ফাওযান :
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1431382720594874&id=100011694785433
----------------------------------------------------
     (২) "ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা কাফির"।
             - শায়খ আহমদুল্লাহ :
https://m.youtube.com/watch?v=97W6ALpTwt4&feature=share
---------------------------------------------------
     (৩) "ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও জাতীয়তাবাদীরা কাফির"।
          - শায়খ মতিউর রহমান মাদানী :
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1408155742917572&id=100011694785433
-----------------------------------------------------
     (৪) "আল্লাহর আইন ব্যতীত বিচার-শাসনকারীরা কাফির"।
           - শায়খ আবু বাকর যাকারিয়া :
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=342594870530015&id=100043385138413
---------------------------------------------------
     (৫) "আল্লাহর বিধানের পাশাপাশি যারা বিধান রচনা করে, সেই বিধান মানে এবং সেই বিধান রচয়িতাদেরকে সমর্থন করে ও ভালবাসে তারা সবাই বড় মুশরিক - কাফির"।
        - শায়খ সলাহুদ্দীন আহমাদ মাক্কী :
https://m.youtube.com/watch?v=VOtlkbp8ZN4
-----------------------------------------------------
     (৬) "ত্বাগূত তথা আল্লাহদ্রোহী কুফর ও কাফির হল আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান ব্যতীত অন্য সকল বিধান ও ঐ সকল বিধান রচয়িতাগণ"।
          - শায়খ মুজাফফর বিন মুহসিন :
https://youtu.be/dg4GQuNWWbA
-----------------------------------------------------
    (৭) "ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী কাফিররা কাদিয়ানী কাফিরদের চেয়ে বহুগুণ ভয়ঙ্কর কাফির"।
   - মুফতী শাহ সদরুদ্দীন : 
https://youtu.be/qlhgCwh9Lu0

যুগে যুগে জালিম শাসক ও তাদের চাটুকারদের ব্যাপারে আমাদের প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেন, اسَمعُوا هلْ سِمعتُم إنَّه سيكُون بعدى أُمرَاء ، فَمَن دَخَل عليهم فَصَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَأَعَانَهُمْ على ظُلْمِهِمْ فليس مِنِّى ولست منه وليس بوَارِدٍ علىَّ الحوضَ. শোন, তোমরা কি শুনেছ? আমার পর খুব শীঘ্রই এমন কিছু শাসক আবির্ভূত হবে, যে ব্যক্তি তাদের সংস্পর্শে গিয়ে তাদের মিথ্যাচারকে সমর্থন করবে এবং তাদেরকে অত্যাচারে সহায়তা দান করবে, সে আমার দলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আমিও তার দলের অন্তর্ভুক্ত নই। আর সে ব্যক্তি হাওজে কাওসারে আমার সামনে পৌঁছতে পারবে না। অতঃপর ব্যক্তিত্ববান ইমানদারদের জন্য সুসংবাদ দেন, ومن لم يدخُل عليهِم ولم يُعِنْهُمْ على ظلمهم ولم يُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ فهو مِنِّى وأنا منه وهُو وارِدٌ علىَّ الْحَوضَ. আর যে ব্যক্তি তাদের সংস্পর্শে যাবে না, তাদের অত্যাচারে সহায়তা দান করবে না এবং তাদের মিথ্যাচারকে সমর্থন করবে না, সে আমার এবং আমিও তার। সে হাওযে কাওসারে আমার সাক্ষাৎ লাভ করবে। [সুনানুত্ তিরমিযী, হাদীছ নং:২২৫৯] হে আল্লাহ! আপনার হাবিব ও খলিল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাউজে কাউছারের পানি আমাদের নসীব করুন। ‘কওমিজননী’ থেকে ‘জান্নাতি মানুশ’: ফ্যাসিবাদের স্বর্গযাত্রা * ১. ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, আপনার যে প্রখর স্মরণশক্তি, যেদিন এই দেশে একদল লোক জ্বালাও-পোড়াও চালাচ্ছিল, বাস জ্বালাচ্ছিল, এবং আমার এক গর্ভবতী বোনকে আগুনে পোড়াচ্ছিল, ঘটনাচক্রে আমি তখন আপনার সামনেই ছিলাম। তখন আমি আপনাকে একটু বিমর্ষ দেখে বলেছিলাম: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভয় পাবেন না; আল্লাহ আপনার সাথে আছেন (ঠিইইইইইক)। তখন আপনি আকার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাইলেন। আর বললেন, মওলানা, আমি আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে ভয় পাই না (ঠিইইইইইক)। এই যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস...বলেছিলেন, কত মৃত্যু আমি দেখেছি চোখের সামনে, নিজের পরিবারের... আল্লাহ আমাকে বাঁচায়ে রাখছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার দ্বারা কোন বড় কাজ নিবেন। ...মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার দ্বারা আল্লাহ ইসলামের অনেক কাজ নিয়েছেন, দেশের অনেক কাজ নিয়েছেন। আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন, এই দেশকে আপনি মহাকাশে নিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে, দেশকে এত উন্নত করেছেন যে, আমাদের এককালের শত্রুদেশের পাকিস্তানের জনগণও আবেদন জানায়, যে আমাদের বাঙলাদেশের মত উন্নত করে দাও। ...আপনি এমন ব্যক্তি যাদেরকে আমরা দেখেছি, যা ওয়াদা করে, সেই ওয়াদা রক্ষা করে। তাই আমরা বিশ্বাস করি, সামনেও আপনি আসলে, আপনি যে আসবেন ইনশাল্লাহ, যে ওয়াদা করবেন তা রক্ষা হবেই হবে৷ আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন, আমাদেরকে কবুল করুন...বাতেল শক্তিকে আপনার নেতৃত্বে চূর্ণবিচূর্ণ করার তৌফিক দান করুন।’ — আল্লামা ফরিদউদ্দিন মাসউদ দা. বা. ২. ‘এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তিনি দেশের ওলামায়ে কেরাম, ছাত্রসমাজ ও ধর্মপ্রাণ মানুশের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, তিনি মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যেই এই কওমি সনদের স্বীকৃতি দিয়েছেন।...আমরা বিশ্বাস করি, মহান রাব্বুল আলামিন তাকে এবং তার মন্ত্রীপরিষদের সদস্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সামরিক সচিবসহ যারা এই কওমি স্বীকৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, আল্লাহ পাক তাদের দুনিয়ার জীবনে ও আখেরাতের জীবনে পরিপূর্ণ সফলতা দান করবেন, এবং দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ পাক তাদের কল্যাণ সাধন করবেন (ঠিইইইক)। ...সাহাবায়ে কেরাম হচ্ছেন সত্যের মাপকাঠি। যারা সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি মানে না, তারা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভূক্ত নয়, হতে পারে না (ঠিইইইইইক; নারায়ে তাকবির: আল্লাহ আকবার ইত্যাদি)। আমি আলোচনা দীর্ঘায়িত করব না। শুধু বলব, প্রধানমন্ত্রী, আপনি মহিয়সী নারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বাঙলাদেশের মানুশ, বাঙলাদেশের ওলামা ও ছাত্ররা, আপনাকে কৃতজ্ঞতার সাথে দোয়ার মধ্যে সবসময় স্মরণ রাখবে।’ — মুফতি ফয়জুল্লাহ দা. বা. ৩. ‘এই ১৪ লক্ষ শিক্ষার্থীর জননীর ভূমিকা আপনি পালন করেছেন।...আপনি কওমি জননী...আজ আপনাকে এই উপাধি দিলাম।’ — মুফতি রুহুল আমিন দা. বা. ৪. ‘ভালমত লেখাপড়া করেন, শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করেন।...আমরা দোয়া করতেছি, আমাদেরকে বিরাট উপকার করেছেন। উনি এককথা আমাকে দিছেন, কতজনে কত কথা বলছে, ওদিকে লক্ষ্য করেন নাই। (বরং বলছেন) আমি দেওয়ার জন্য ওয়াদা করেছি, সনদের স্বীকৃতি আমি দেবই দেব। দিয়ে দিছেন; কারো কথার দিকে লক্ষ্যপাত করেন নাই। তো সেইজন্য শেখ হাসিনার শুকরিয়া আদায় করতেছি আমি। কেউ কেউ বলে, আমি আওয়ামী লীগ হয়ে গেছি। কমবখতো, মিথ্যা কথা বলতেছ। উনি আমাকে এমনি মহব্বত করে দিয়ে দিছে, আমি আওয়ামী লীগ হই নাই। ওইটা আপনাদের ভুল।...কী করে বইলতেছেন, আমি আওয়ামী লীগ হইয়া গেছি? আওয়ামী লীগ হইয়া গেলেও কোন আপত্তি নাই। আওয়ামী লীগের মধ্যেও এমন এমন লোক আছে, যারা দ্বীনকে ভালবাসে; আমাদেরকে মোটা অঙ্কের সাহায্য করে মাদ্রাসায়; মোটা অঙ্কের সাহায্য করে।’ — আল্লামা শাহ আহমদ শফি রহ. ৫. ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার সুযোগ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তার কন্যাকে দেওয়া হয়েছে। ...একইসঙ্গে ৫৬ হাজার বর্গমাইল এলাকায়, পৃথিবীর কোন শাসক, ৫৬৪ টি মসজিদ করেছেন কী? (নায়ায়ায়া, সম্মিলিত শ্রোতারা)। কিন্তু এটা বাঙলাদেশে হয়েছে (ঠিইইইইইক)৷ এটা কোন গল্প বা রাজনৈতিক বক্তব্য না।...এই মসজিদগুলোর প্রতিষ্ঠাতা, স্বপ্নদ্রষ্টা, রুপকার বঙ্গবন্ধুকন্যা (ঠিইইইইইক)! ...এখানে ১০১০ টি মাদ্রাসা থেকে আলেমরা এসেছেন, এবং এই ১০১০ টি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা (ঠিইইইইইক)...একইসময়ে ১০১০ টি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, অতীতের কোন রুলার আছেন কিনা, যারা ইতিহাস পড়েন, তাদেরকে চিন্তা করতে বলব (সুবহানাল্লাহ)! যারা ছোট আছো, তোমাদের আমরা বলতে চাই...১৭৫৭ সালে এদেশের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। এবং সেই স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে আজ থেকে ৭০ বছর পূর্বে, ২৩ শে জুন আবার আওয়ামী লীগ হয়েছিল। ...বলশেভিক বিপ্লব, ১৯১৭ সালের পরে সোভিয়েতে কোরআন শরিফ ছিল না। বঙ্গবন্ধু প্রথম শাসক হিশেবে সেখানে ফিজিক্যালি কোরআন শরিফ প্রেরণ করেন, ইসলাম প্রচারের জন্য সেখানে তাবলিগ জামাত প্রেরণ করেন, যার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের ৬ টি মুসলিম রাষ্ট্র এখন স্বাধীন এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ (সুবহানাল্লাহ)! ...প্রধানমন্ত্রীর কাছে যখন এটা বলা হল, তিনি বললেন সীমিত আকারে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে, হেফজখানা খুলে দাও (সুবহানাল্লাহ)। এই যে বিশ্বের সমস্ত স্রোতের বিরুদ্ধে একটা সিদ্ধান্ত, এর ফলে বাঙলাদেশে হিফজ বা কওমিমাদ্রাসা বা ইসলামচর্চা যেভাবে উৎসাহিত হয়েছে, তার একটা প্রভাব সমস্ত এমপি-মন্ত্রীর মধ্যে ফেলে গেছে...এবং একটা অর্থবহ ও গভীর সমর্থন তিনি পেয়ে গেছেন (ঠিইইইক)। এই সমর্থটা নীরবে আছে৷ শত অপপ্রচার ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, এবং বাঙলাদেশের ভৌগোলিক, ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সবকিছুর ভেতরে, যে ক্যাপ্টেন্সি, যে নাবিক দেশটাকে চালিয়ে নিচ্ছেন... ...এই ১৫/২০ বছরটাও কিন্তু থাকবে না। প্রতিটি সময় চলে যাচ্ছে। আমি মনে করি আমাদের পরেও যে প্রজন্ম থাকবে, তারা স্মরণ করবে যে, এই ১৫ বছর ভাল ছিল (ঠিইইইইইইইইক)! সামনে কী আসবে জানি না৷ কিন্তু আমরা দোয়া করি, দেশের জনগণ দোয়া করে, কোরআনের পাখিরা দোয়া করে, এবং এখানে অনেক ধরনের এভিনিউ আছে যেগুলি উনার জন্য দোয়া বয়ে আনে।’ — মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভি দা. বা. ৬. ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আলেম সমাজের জননী। এদেশের মানুশ দিনরাত আপনার জন্য দোয়া করে।’ — মাওলানা এহসানুল হক মুজাদ্দেদি দা.বা. ৭. ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি একজন জান্নাতি মানুশ। এই পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ও স্মরণীয় একজন শাসক হিশেবে আপনি চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন (ঠিইইইক)। এই বাঙলাদেশে আপনি একটি অবিস্মরণীয়, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম উদাহরণ সৃষ্টি করে রেখেছেন। পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন দেশে কোন রাষ্ট্রপ্রধান একইসঙ্গে ৫৬৪ টি মডেল মসজিদ তৈরি করেছেন এর কোন উদাহরণ নেই।’ — মাওলানা কফিলুদ্দিন সালেহি দা. বা.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

শর্ষীনা, ফুরফুরা, জৌনপুরী, ফুলতলী, সোনাকান্দা সহ সকল বালাকোটি পীরগনের শেরেকী আকীদা

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে