জামায়াতে ইসলামীর আকীদা




জামায়াতে ইসলামী'র মৌলিক আকিদা: ------------------------------------- চোরমনাই সহ ইকামতে দ্বীনের বিরোধী শক্তি তাগুতের বিভিন্ন এজেন্ট বারংবার জামায়াতের আকিদার উপর অভিযোগ তোলে ভ্রান্ত আকিদা বলে ফতোয়া প্রসব করে। এমনতাবস্থায় জামায়াতের গঠনতন্ত্র থেকে জামায়াতে ইসলামী'র আকিদা পেশ করা জরুরী বলে মনে করছি। - ঈমান ও আকিদার মূল মন্ত্র হলো: ﻟَﺎ ﺇِﻟَٰﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪ ‏( ﻣﺤﻤﺪ : ١٩ ‏) ﻣُّﺤَﻤَّﺪٌ ﺭَّﺳُﻮﻝُ ﭐﻟﻠَّﻪِ ‏( ﻓﺘﺢ : ٢٩ ) অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল। ব্যাখ্যা: (ক) এই আকিদার প্রথমাংশ আল্লাহর একমাত্র ইলাহ হওয়া এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও ইলাহ না হওয়ার অর্থ এই যে, আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে সেই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা, স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধানদাতা, রব প্রতিপালক, মাবুদ, ইলাহ এবং প্রাকৃতিক ও বিধিগত সার্বভৌম সত্তা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। এই সবের কোন এক দিক দিয়েও কেউ তাঁর সহিত শরীক নাই। এই মৌলিক সত্য কথা কথাটি জেনে ও মেনে নিলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অনিবার্যভাবে গ্রহণ করতে হয়ঃ (আর এসব জামায়াত গ্রহণ করেছে) (১) মানুষ আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে নিজের পৃষ্ঠপোষক, কার্য সম্পাদনকারী, প্রয়োজন পূরণকারী, বিপদ দূরকারী, ফরিয়াদ শ্রবণকারী ও গ্রহণকারী এবং সাহায্যদাতা ও রক্ষাকর্তা মনে করবে না। কেননা তিনি ব্যতীত আর কারও নিটক কোন ক্ষমতা নাই। (২) আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে কল্যাণকারী মনে করবে না, কারও সম্পর্কে অন্তরে ভীতি অনুভব করবে না, কারও উপর নির্ভর করবে না, কারও প্রতি কোন আশা পোষণ করবে না এবং এই কথা বিশ্বাস করবে না যে, আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কারও উপর কোন বিপদ মুসীবত আপতিত হতে পারে। কেননা সকল প্রকার ক্ষমতা ও ইখতিয়ার একমাত্র আল্লাহই। (৩) আল্লাহ ছাড়া কারও নিকট দোয়া বা প্রার্থনা করবে না, কারও নিকট আশ্রয় খুঁজবে না, কাউকে সাহায্যের জন্য ডাকবে না এবং আল্লাহর ব্যবস্থাপনায় কাউকে এতখানি প্রভাবশালী বা শক্তিমান মনে করবে না যে, তার সুপারিশে আল্লাহ ফায়সালা পরিবর্তন করতে বাধ্য। কেননা তাঁর রাজ্যে সকলেই ক্ষমতাহীন প্রজামাত্র। (৪) আল্লাহ ছাড়া আর কারও সম্মুখে মাথা নত করবে না এবং কারও উদ্দেশ্যে মানত করবে না। কেননা এক আল্লাহ ব্যতীত (দাসত্ব, চূড়ান্ত আনুগত্য ও উপাসনা সহ যাবতীয়) ইবাদত পাইবার অধিকারী আর কেউ নাই। (৫) আল্লাহ ব্যতীত অপর কাউকে রাজাধিরাজ, বাদশাহ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মেনে নিবে না, কাউকে নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করার অধিকারী মনে করবে না, কাউকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধানদাতা ও আইন প্রণেতা মেনে নিবে না এবং আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর দেওয়া আইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন আনুগত্য মেনে নিতে অস্বীকার করবে। কেননা স্বীয় সমগ্র রাজ্যের নিরঙ্কুশ মালিকানা ও সৃষ্টিলোকের সার্বভৌমত্বের অধিকার আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও আসলেই নাই। . উপরোক্ত আকিদা অনুযায়ী নিম্নলিখিত বিষয়গুলিও মেনে নেওয়া আবশ্যকঃ (১) মানুষ স্বীয় স্বাধীন ইচ্ছা ও আযাদী কুরবানী করবে, নফসের ইচ্ছা-বাসনার দাসত্ব পরিত্যাগ করবে এবং যে আল্লাহকে ইলাহ মেনে নিয়েছে একনিষ্ঠভাবে একমাত্র তাঁরই বান্দাহ ও দাস হয়ে জীবন যাপন করবে। (২) নিজেকে কোন কিছুরই স্বাধীন ইচ্ছাসম্পন্ন মালিক মনে করবে না বরং স্বীয় জীবন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, মানসিক ও দৈহিক শক্তি তথা সবকিছুেক আল্লাহর মালিকানাধীন ও তাঁর নিকট থেকে প্রাপ্ত আমানত মনে করবে। (৩) নিজেকে আল্লাহর নিকট দায়ী ও জবাবদিহি করতে বাধ্য মনে করবে, শক্তি-সামর্থের ব্যবহার এবং স্বীয় আচারণ ও ক্ষমতা প্রয়োগে সবসময় সত্যের প্রতি লক্ষ্য রাখবে যে, পরকালে আল্লাহ তা'য়ালার সম্মুখে এইসব বিষয়ে হিসাব অবশ্যই দিতে হবে। (৪) আল্লাহ যা পছন্দ করে তাকেই নিজের পছন্দ এবং যা তাঁর অপছন্দ তাকেই নিজের অপছন্দ রূপে গ্রহণ করবে। (৫) আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর নৈকট্য লাভকেই নিজের যাবতীয় চেষ্টা সাধনার চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং নিজের সমগ্র তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে গ্রহণ করবে। (৬) নিজের নৈিতক চরিত্র, আচার-ব্যবহার এবং সামাজিক, স্বাংস্কৃিতক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড, এক কথায় জীবনের সর্ববিষয়ে কেবল আল্লাহর বিধানকেই একমাত্র হিদায়াত হিসাবে মেনে নিবে এবং আল্লাহর দেওয়া শরীয়তের বিপরীত যাবতীয় নিয়ম-নীতি ও পন্থা-পদ্ধতিেক প্রত্যাখ্যান করবে। . ব্যাখ্যা: (খ) এই আকিদার দ্বিতীয় অংশ ﻣُّﺤَﻤَّﺪٌ ﺭَّﺳُﻮﻝُ ﭐﻟﻠَّﻪِ ‏( ﻓﺘﺢ : ٢٩ ) হযরত মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল হওয়ার অর্থ এই যে, বিশ্বের একমাত্র রব আল্লাহর পক্ষ হতে বিশ্বের সকল মানুষের প্রতি সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা) এর মাধ্যমে একমাত্র নির্ভুল হিদায়াত ও আইন-বিধান প্রেরিত হয়েছে এবং এই হিদায়াত ও আইন-বিধান অনুযায়ী কাজ করে পূর্ণাঙ্গ বাস্তব নমুনা কায়েম করার জন্যই মুহাম্মদ (সা) কে নিযুক্ত করা হয়েছে। যারা এই পরম সত্য ও প্রকৃত জেনে ও মেনে নিবেন তাঁদের কর্তব্য হবে: (১) হযরত মুহাম্মদ (সা) এর নিকট থেকে যেই হিদায়াত ও আইন-বিধান প্রামাণ্য সূত্রে পাওয়া যাবে তা দ্বিধাহীন ও অকণ্ঠচিত্তে গ্রহণ করা; (২) কোন কাজে উদ্যোগী হওয়া বা কোন নিয়ম পদ্ধতি অনুসরণ থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহর রাসূল (সা) এর নিকট থেকে প্রাপ্ত আদেশ ও নিষেধকেই যথেষ্ট মনে করা; (৩) আল্লাহর রাসূল (সা) ব্যতীত অপর কারো স্বয়ংসম্পূর্ণ নেতৃত্ব মেনে না নেওয়া, কেননা অন্য কারও আনুগত্য হতে হবে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ (সা) এর সুন্নাতের অধীন; . (৪) জীবনের সকল ব্যাপারেই আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ (সা) এর সুন্নাতকে অকাট্য, প্রামাণ্য, বিশ্বস্তসূত্র ও নির্ভুল জ্ঞানের একমাত্র উৎসরূপে গণ্য করা। যেসব ধারণা, খেয়াল, বিশ্বাস কিংবা নিয়ম-নীতি ও পন্থা কুরআন সুন্নাহর বিপরীত তা পরিত্যাগ করা এবং কোন সমস্যার সমাধান প্রয়োজন হলে তার জন্য হিদায়াত লাভের উদ্দেশ্যে এই উৎসের দিকেই ধাবিত হওয়া; (৫) ব্যক্তিগত ও পারিবারিক, বংশীয় ও জাতিগত, দলীয় ও সম্প্রদায়গত, আঞ্চলিক ও ভাষাগত তথা সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ও বিভেদ হতে মন-মগজকে মুক্ত ও পবিত্র করে নেওয়া এবং কারো ভালোবাসা বা অন্ধ ভক্তি এমনভাবে বন্দী না হওয়া যার দরুন তা রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপস্থাপিত সত্যের প্রতি ভালোবাসা ও ভক্তির উপর জয়ী কিংবা তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাড়ােত পারে; (৬) হযরত মুহাম্মদ (সা) এর জীবন চরিত্রকে কুরআনের বাস্তব ব্যাখ্যা এবং তাঁকে সকল ব্যাপারে সত্যের একমাত্র মাপকাঠি হিসাবে মেনে নেওয়া। আল্লাহর রাসূল (সা) ব্যতীত আর কাউকে ভুলের ঊর্ধ্বে মনে না করা, কারো অন্ধ গোলামীতে নিমজ্জিত না হওয়া বরং প্রত্যেককেই আল্লাহর দেওয়া এই মাপকাঠিতে যাচাই ও পরখ করে যাঁর যেই মর্যাদা হবে তাঁকে সেই মর্যাদা দেওয়া; (৭) হযরত মুহাম্মদ (সা) এর নবুয়াতের পরে কোন ব্যক্তির এমন কোন মর্যাদা মেনে না নেওয়া যার আনুগত্য করা বা না করার ভিত্তি ঈমান ও কুফর সম্পর্কে ফয়সালা হতে পারে। (জামায়াতে ইসলামী, গঠনতন্ত্র, ধারাঃ২ থেকে সংগ্রহীত) . বিঃদ্রঃ জামায়াতে ইসলামী রাসূলুল্লাহ (সা) কে একমাত্র সত্যের মাপকাঠি হিসাবে গ্রহণ করেছে কারণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আনুগত্যের মাধ্যমেই আল্লাহর আনুগত্য করা সম্ভব। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ ﻣَﻦْ ﻳُﻄِﻊِ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﺍﻟﻠَّﻪَ যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। (সূরা নিসাঃ৪/৮০) আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আনুগত্যের উপরই মানুষের জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ভর করবে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﻄِﻊِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻳُﺪْﺧِﻠْﻪُ ﺟَﻨَّﺎﺕٍ ﺗَﺠْﺮِﻱ ﻣِﻦْ ﺗَﺤْﺘِﻬَﺎ ﺍﻟْﺄَﻧْﻬَﺎﺭُ ﺧَﺎﻟِﺪِﻳﻦَ ﻓِﻴﻬَﺎ ۚ ﻭَﺫَٰﻟِﻚَ ﺍﻟْﻔَﻮْﺯُ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢُ . ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻌْﺺِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻭَﻳَﺘَﻌَﺪَّ ﺣُﺪُﻭﺩَﻩُ ﻳُﺪْﺧِﻠْﻪُ ﻧَﺎﺭًﺍ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻟَﻪُ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﻣُﻬِﻴﻦ . যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব। (সূরা নিসাঃ৪/১৩-১৪)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

শর্ষীনা, ফুরফুরা, জৌনপুরী, ফুলতলী, সোনাকান্দা সহ সকল বালাকোটি পীরগনের শেরেকী আকীদা

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে