রেজভী




 ব্রেলভী বা রেজভী মতবাদ

........................…..............

কাদিয়ানিদের পর উপমহাদেশে বৃটিশ আমলে দ্বিতীয় যে ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠা হয় তা হল “ব্রেলভী বা রেজভী মতবাদ”। উপমহাদেশে কবর বা মাজার কেন্দ্রিক শির্ক বিস্তারে প্রধান ভুমিকা রাখেন এই ‘ব্রেলভী বা রেজভী’ মতবাদ। এরাই মিলাদ, কিয়াম, মাজারপূজা, কবরপূজা, ব্যক্তিপূজা, আল্লাহর সাথে শির্ক, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর সমান মর্যাদা প্রদান করে (রসূল গায়েব জানেন, সকল কিছু করার ক্ষমতা রাখেন, সবকিছু দেখছেন)। পক্ষান্তরে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেমিক সেজে, তার সম্মানের মুখরোচক স্লোগান দিয়ে, সুন্নাতকে অবমাননা করে এবং বিদআত সৃষ্টির মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অস্বীকার করে। কাজেই এই দলের আকিদা, বিশ্বাস, আমল এবং তাদের কার্জ কালাপ সম্পর্কে জানা দরকার। তাদের সম্পর্কে জানতে পারলে তাদের ভ্রান্তি মাখা দাওয়াত পরিহার করে চলা সম্ভব। সেই সাথে সাধারন মুসলীম যাদের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান কম, তাদের ও সতর্ক করা সম্ভব হবে। বাংলদেশে রেজভী ফেরকার অনুসারির সংখ্যা কম নয়, তবে পাকিস্তার ও ভারতে তার অনুসারির সংখ্যা অনেক। তাদের আকিদায় মারাত্মক বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়। তারা সুফিবাদে বিশ্বাসি এবং সুফিদের আকিদায় যে সকল ভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়, তার সবগুলি ভ্রান্তিতে তারা জড়িত। সুফিদের আকিদা আর ‘ব্রেলভী’ আকিদা মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। ব্রেলভীদের মূল আক্বীদার ভিত্তি ও বিশ্বাসের মূল সৌধ নির্মিত হয়েছে শী‘আ সম্প্রদায় কেন্দ্রিক। তাদের বিশ্বাসের মূলে কিছু শীয়াদের ভ্রান্ত আক্বীদা ও বিশ্বাসও পরিলক্ষিত হয়। ফলে দেখা যায় তাদের আমল-আক্বীদায় শী‘আদের মতবাদের ব্যাপক প্রভাব। অর্থাৎ তাদের আকিদা জগাখিচুরির মত।


📍 তারা চারটি উৎস থেকে তাদের আকিদা গ্রহন করছে।


ক. দক্ষিণ এশীয় হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নিকট থেকে।


যেমন: প্রাচ্য দর্শন ভিত্তিক আকিদা। মৃত্যুর পর মানুষে আত্মা পার্থিব জীবনের ভাল মন্দ পৌছানের ক্ষমতা রাখে।


খ. খ্রিস্টানদের নিকট থেকে।


যেমন: হুলূল বিশ্বাসি, সাধনার এক পর্যায় আল্লাহ মানুষের দেহে হুলূল করে বা ‘মানুষের দেহে আল্লাহর অনুপ্রবেশ’ করে। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস ঈসা আলাইহিস সালাম স্বয়ং ঈশ্বর। বড় দিনের আদতে ঈদে মিলাদুন নবী পালন করা, ক্যারলের মত গান করা।


গ. সুফিদের নিকট থেকে।


যেমন: ওয়াহদাতুল উজূদ বা সর্বেশ্বরবাদ যা হুলূল-এর পরবর্তী পরিণতি। আল্লাহর সত্তার মধ্যে বান্দার সত্তা বিলীন হয়ে যাওয়া। তাদের দৃষ্টিতে পৃথিবীতে অস্তিত্ববান সব কিছুই আল্লাহর অংশ। আল্লাহ পৃথক কোন সত্তার নাম নয় (নাঊযুবিল্লাহ)।


ঘ. শিয়াদের নিকট থেকে।

যেমন: মাজার কেন্দ্রিক বিভিন্ন উৎসব ও ইবাদাত ও আহলে বাইয়াতকে নিয়ে বাড়াবাড়ি।


কাদিয়ানি ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা যেমন মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানি ঠিক তেমনি এই ‘ব্রেলভী বা রেজভী’ মতবাদটি প্রতিষ্ঠা করেন শাহ আহমদ রেজা খাঁন নামের এক ভারতীয়। যেহেতু এই মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আহমদ রেজা খাঁন, সুতরাং তার রেজা নাম থেকে রেজভী শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে। আবার তিনি যেহেতু ‘ব্রেলভী’ শহরে জন্ম গ্রহণ করেন, সুতরাং তার জম্মস্থানের নাম অনুসারে এই মতবাদটিকে ‘ব্রেলভী’ নামেও নামকরন করা হয়। তার অনুসারিরা তাকে ‘আলা হযরত’ হিসাবে পরিচয় দেন। বেরেলভী মতবাদের অনুসারীদের কাছে এ দলের নাম ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’ বা সুন্নী মুসলিম। নিজেদেরকে তারা সুন্নী ইসলামের অনুসারী প্রমাণ করার জন্য এ নাম ব্যবহার করে। তবে অন্যদের কাছে দলটি ‘‘ব্রেলভী’’ নামেই সমধিক পরিচিত। তাদের ভ্রান্ত আকিদা বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে তাদের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ রেজা খাঁনের জীবন সম্পর্কে জানতে হবে। তিনি কিভাবে, কখন, কেন এই মতবাদ সৃষ্টি করলেন? উত্তর জানতে পারলেই, এই মতবাদের স্বরূপ উম্মোচন করা সম্ভব হবে বলে আশা করি।


♦️শাহ আহমদ রেজা খাঁন


‘ব্রেলভী বা রেজভী’ মতবাদটি প্রতিষ্ঠা করেন শাহ আহমদ রেজা খাঁন। তিনি ১৮৫৬ সাল মোতাবেক ১২৭২ হিজরীতে ভারতের উত্তর প্রদেশের ব্রেলভী শহরে যাচুলী গ্রামের, সওদাগরা নামক মহল্লায় স্বনামধন্য এক মুসলিম হানাফি পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার নাম রাখা হয় মুহম্মদ। তার মাতা তার নাম রাখেন আমান মিয়া। পিতা তার নাম রাখেন আহমাদ মিয়া। দাদা তার নাম রাখেন আহমাদ রেজা। তার পিতা নক্বী আলী এবং দাদা রেজা আলীকে হানাফিদের মধ্যে আলেম হিসাবে বিবেচনা করা হত। (তাজকিরাতু উলামায়ে হিন্দ পৃষ্ঠা-৬৪)। তার মাতার নাম ছিল হুসাঈনী খানম।


▪️শিক্ষা: তারপর প্রাথমিক শিক্ষা ও নাহু, সরফ, উর্দু, ফারসীর জ্ঞান অর্জন করেন, তাঁর পিতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাওলানা গোলাম কাদের বেগ সাহেবের নিকট। তারপর ‘শরহে ছমগীনী’ নামক কিতাব পড়েন মাওলানা আব্দুল আলী রামপুরী সাহেবের নিকট। পিতা নকী আলীর কাছে তিনি প্রচলিত দারসে নিযামী ধারার পাঠ গ্রহণ করেন। এরপর মির্জা কাদীয়ানির ছোট ভাই মির্জা কাদের বেগ থেকে দীর্ঘ সাত বৎসর দীনি ইলিম শিক্ষা নেন। তিনি শিক্ষা অর্জনের জন্য কোনো মাদরাসায় ভর্তি হননি। (খায়াবানে রেজা-১৮, ইকবাল আহমাদ কাদেরী)।


আলা হযরত নিজেই বলেছেন যে, “আমার কোনো উস্তাদ নেই”। (সীরাতে ইমাম আহমাদ রেজা-১২, আব্দুল হাকীম শাহ জাহানপুরী)।


▪️ইসলামি কাজ কর্ম:

১৮৭৭ সালে জনৈক শাহ আলে রাসূলের নিকট কাদেরিয়া তরীক্বার বায়‘আত নেন ও খেলাফত লাভ করেন এবং ঐ সালেই পিতার সাথে হজ্জব্রত পালনের জন্য মক্কায় গমন করেন। অতঃপর দেশে ফিরে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন । ১৮৮০ সালের দিকে তিনি তার শির্কী, কুফুরী মতবাদ প্রচার করা শুরু করেন। তিনি নিজেকে অতিশয় রাসূল প্রেমিক প্রমাণের জন্য নামের পূর্বে ‘আব্দুল মুছতফা’ (মুহাম্মাদ মুছতফার দাস)’ উপনাম ব্যবহার করেন। অনুসারীদের কাছে তিনি ‘ইমাম’ ও ‘আ‘লা হযরত’ নামে পরিচিত হন।


▪️গবেষনা ও লেখাঃ

তিনি আরবী, উর্দূ, এবং ফারসী ভাষায় বিভিন্ন বিষয়ে অনেক বই লিখেছেন। তার লেখার বিষয়বস্তুতে আইন, ধর্ম এবং দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি ছিলেন উর্বর লেখক, তার জীবদ্দশায় তিনি ইসলামী আইন-কানুনের উপর অনেক লিখা লিখেছেন। তার লেখা বইয়ের সংখ্যা নিয়ে নানা বকম তথ্য পাওয়া যায়। ব্রেলভীদের কিতার ‘মান হুয়া আহমাদ রেজার’ ২৫ পৃষ্ঠায় তার লেখা কিতাব হাজারের উপর উল্লেখ করা হইয়াছে। আবার হায়াতে আহমাদ রেজার’ ১৩ পৃষ্ঠায় তার লেখা কিতাব ৬০০ উপর বলা হয়েছে। এভাবে কেউ কেউ ৪০০ বা ৪৪০ বা ৩৫০ বা্ ২০০ বা উল্লেখ করেছেন। তবে আল্লামা ইহসান এলাহী যহীর (রহঃ) বলেন, বই হিসাবে গণ্য হয় এমন বইয়ের সংখ্যা ১০–এর অধিক নয়। এবং আল্লামা খালেদ মাহমুদ রহঃ এর কথা মুতাবেক বই হিসাবে গণ্য হয় এমন বইয়ের সংখ্যা ১৫-এর অধিক নয়।


১৯১২ সালে তার প্রথম অনূদিত কুরআনের উর্দূ তরজমা ‘কুনূযূল ঈমান ফি তরজমাতিল কুরআন’ প্রকাশিত হয়। এটি ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ইংরেজী, হিন্দি, বাংলা, ডাচ, তুর্কী, সিন্ধি, গুজরাটী এবং পশতু। বাংলা ভাষায় কানযুল ঈমান গ্রন্থটি অনুবাদ করেন এম এ মান্নান। তবে এই “কুনূযূল ঈমান ফি তরজমাতিল কুরআন” প্রকাশিত হওয়ার কিছু দিনের মাথায় কিতাব আরব বিশ্ব প্রত্যাখ্যান করে এবং ২৭ টা আরব দেশে তা ব্যান্ড করে দেওয়া হয়।


তার প্রধান ও সর্ববৃহৎ রচনা হল ‘ফৎওয়া রিযভিয়াহ’ রেযা ফাউন্ডেশন মারকাজুল আউলিয়া লাহোরের তত্ত্বাবধানে এটি ৩০ খন্ডে প্রকাশিত হয়। যার পৃষ্ঠা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১৬৫৬, প্রশ্ন উত্তর ৬৮৪৭ টি, রিসালা মোট ২০৬ টি। অনেকে মনে করে, তেমন ভালো কিছু এ কিতাবে নেই, তবে ফতওয়াবাজীতে ভরপুর। এছাড়া আনবাউল মুছত্বফা, খালিছুল ই‘তিক্বাদ, মারজাউল গায়ব ওয়াল মালফূযাত, মাদায়ে আলা হযরত, হাদায়েকে বখশিস, প্রভৃতি তার শিরক কুফুরী ভরপুর প্রসিদ্ধ রচনা।


▪️চরিত্র: 

আলা হযরতের মেজাজ ছিল খুবই চড়া। (আনওয়ারে রেজা-৩৫৮)। তিনি ছিলেন চিররোগা, পিঠব্যথার রুগী, অত্যধিক রাগী, সুচতুর ও তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী। তার মেজাজ ছিল চড়া। মুফতী মাজহারুল্লাহ ব্রেলবী তার ফাতওয়ায়ে মাজহারিয়্যাতে লিখেন “চড়া মেজাজী আলা হযরত আহমাদ রেজা খান হয়তো এ অশ্লীল কবিতা বাজারী মহিলাদের ব্যাপারে উদ্ধৃত করেছেন। (ফাতওয়া মাজহারিয়্যাহ-৩৯২)।


এ কারণেই লোকেরা তার থেকে বিমুখ হতে শুরু করেছিল। অনেক কাছের বন্ধুরাও তার এ স্বভাবের কারণে তার থেকে দূরে চলে যায়। এদের মাঝে মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াসীনও আছেন। যিনি মাদরাসায়ে এশাআতুল উলুমের প্রধান ছিলেন। যাকে আহমাদ রেজা উস্তাদের মর্যাদা দিতেন। তিনিও তার থেকে আলাদা হয়ে যান। এছাড়াও মাদরাসায়ে মিসবাহুত তাহযীব যেটা তার পিতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেটাও তার দুর্ব্যবহার ও বদমেজাজী, আত্মগরীমা এবং মুসলমানদের কাফের বলার কারণে তার হাত থেকে ছুটে গিয়েছিল। আর মাদরাসার ষ্টাফরা তার থেকে দূরে সরে তথাকথিতা ওহাবীদের সাথে মিলে। অবস্থা এমন হয়ে যায় যে, বেরেলবীদের মার্কাজে আহমাদ রেজা খার তত্বাবধানে কোনো মাদরাসা বাকি রইল না। (আল্লামা ইহসান এলাহী যহীর, হায়াতে আলা হযরত-২১১)।


আলা হযরত, মাওলানা আব্দুল হক খায়রাবাদীর কাছে মানতেকী ইলম শিখতে চাইলেন। কিন্তু তিনি তাকে পড়াতে রাজি হলেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেনঃ আহমাদ রেজা বিরুদ্ধবাদীদের ব্যাপারে খুবই কঠোর শব্দ ব্যবহার করতে অভ্যাস্ত। (হায়াতে আলা হযরত-২৩, যফরুদ্দীন, আনওয়ারে রেজা-৩৫৭)।


▪️বৃটিশ শাসকদের সমর্থক: 

আহমেদ রেজা ব্রেলভী আযাদী আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন। শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেওলভীর বিরোধ পক্ষ হিসেবে তিনি আবির্ভূত হন। তৎকালীন মুসলিমগন বৃটিশ শাসিত ভারতকে ‘দারুল হারব’ ঘোষণা দিলে, তিনি তার ঘোর আপত্তি করেন। তিনি ততৎকালীন বৃটিশ শাসিত ভারতকে দারুল ইসলাম ঘোষণা করেন। জিহাদের বিপক্ষ অবস্থান নেন এবং এ দেশে জিহাদ ও হিজরতের বিরোধিতা করে ফতওয়া প্রদান করেন। আল্লামা ইহসান এলাহী যহীর “ব্রেলভী মতবাদ” বই-এ উল্লেখ করেন, বৃটিশদের সমর্থনের উদ্দেশ্যে আহমদ রেজা খাঁন একটি বই লিখেন। যাতে তিনি ফতওয়া প্রদান করেন যে, ভারতের মুসলিমদের জন্য জিহাদ ফরয নয়। আর যে ব্যক্তি এর ফরজিয়াতের উপর ঐক্যমত পোষন করে সে মুসলিমদের বিরোধী এবং তাদের ক্ষতি করতে চায়। জিহাদ ও বৃটিশ বরোধিতা হতে মুসলিমদের বিরত রাখার জন্য আহমদ রেজা খাঁন লিখেন, মহান আল্লাহ বলেন,


يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ عَلَيۡكُمۡ أَنفُسَكُمۡ‌ۖ لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا ٱهۡتَدَيۡتُمۡ‌ۚ إِلَى ٱللَّهِ مَرۡجِعُكُمۡ جَمِيعً۬ا فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ (١٠٥)


হে ঈমানদারগণ ! নিজেদের কথা চিন্তা করো, অন্য কারোর গোমরাহীতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই যদি তোমরা নিজেরা সত্য সঠিক পথে থাকো৷ তোমাদের সবাইকে আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে হবে৷ তখন তোমরা কি করছিলে তা তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন৷ (সুরা মায়িদা ৫:১০৫)।


অর্থাৎ প্রত্যেক মুসলিমরে ব্যক্তিগতভাবে আত্মসংশোধন করা উচিৎ এবং সম্মিলিত জিহাদের কোনো প্রয়োজন নেই। আর যারা বৃটিশ বিরোধী নেতৃবৃন্দ ও অসহযোগ আন্দোলন সমর্থন করে তাদের সকলের উপর কুফর ফতওয়া জারি করেন। (ব্রেলভী মতবাদ পৃষ্ঠা -৫৭)।


তিনি ইংরেজদের পৃষ্ঠপোষকতায় একদিকে ভ্রান্ত আকীদা প্রচার ও নানা প্রকার শরীয়ত বিরোধী কাজ চালু করে শির্ক ও বেদায়াতের পথ উন্মুক্ত করেন এবং অন্যদিকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদরত ওলামায়ে কেরামগণকে ওহাবী বলে প্রচার চালান। সেই সময়ের ৩ শতাধিক মুফাসসির,মুহাদ্দিস,মুজাদ্দিদ, মুজাহিদ এবং সংস্কারক বলে বিবেচিত আলেমদেরকে তিনি কাফির বলে ফতোয়া দেন।


▪️তার বিরোধী কারা: 

তার ভাষায়, দেওবন্দী ও ওহাবীরা রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যথাযথ সম্মান না দেয়ায়, তিনি তাদের তীব্র সমালোচনা ও তিরস্কার করেছেন। কাফের মুশরিক হওয়ার অসংখ্য ফতওয়াও প্রদান করেন। তার সাথে কিছু কিতাবও রচনা করে। কবর মাজার বা বিদাতে বিরুদ্ধে কিছু বললেই, তার অনুসারিদের প্রায়ই দেওবন্দী ও ওহাবী বলে গাল মন্দ করতে দেখা যায়। অন্যদিকে তিনি অবশ্য ক্বাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবীতে তৎপরতা চালান। তবে অনেকে মনে করেন, তা ছিল লোক দেখানোর জন্য। কারণ ভিতরগতভাবে তার সুসম্পর্ক ছিল কাদিয়ানী পরিবারের সাথে। (আল্লাহু আলাম)। তা যাহোক তিনি কাদিয়ানি বিরোধী ছিলেন এটা প্রমানিত।


আহমাদ রেজা খাঁ বেরেলভী ১৩২৩ হি: হজ্বের উদ্দেশ্যে সফর করেন। হজ্ব শেষে তিনি মক্কা শরীফে একটি পুস্তক রচনা করলেন। দেওবন্দ অনুসারি আলেমদের দাবি অনুসারে, এই পুস্তকে তিনি বেশ কয়েকজন বরেণ্য উলামায়ে দেওবন্দের বক্তব্যকে শাব্দিক ও অর্থগতভাবে বিকৃত করে উপস্থাপন করেন এবং দেওবন্দের উলামায়ে কেরামের ব্যাপারে কিছু অপবাদ আরোপ করে। এ পুস্তকে সে দেওবন্দের বড় বড় আলেমকে কাযযাবী দল, শয়তানী দল হিসাব উল্লেখ করেছেন এবং সে দেওবন্দী আলেম মাওলানা কাসেম নানুতুবী (রহ.), মাওলানা রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী (রহ.), হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী (রহ.) ও আশরাফ আলী থানবী (রহ.) এর বক্তব্যকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করে তাদের সবাইকে সুনিশ্চিত কাফের ফতোয়া দিয়েছে এবং এও লিখেছে যে, যারা তাদেরকে কাফের মনে করবে না, তারাও কাফের। আহম্মদ রেজা খান দেওবন্দী কিছু আমেদের লেখা বই উপস্থাপন করে। তাদের বিভিন্ন বইয়ের উদ্ধৃতিও উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন পদ্ধতিতে তিনি মক্বা-মদীনার আলেমগণের সাক্ষ্য গ্রহণের চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু মক্কা-মদীনার উলামায়ে কেরামের নিকট উলামায়ে দেওবন্দের আক্কিদা-বিশ্বাস ও তাদের লিখনী সম্পর্কে পরিচিত না থাকায়, অনেকেই সেখানে ফতোয়া দেয়ার সময় বলেন যে, যদি বাস্তবেই তাদের আক্বিদা এমন হয়ে থাকে, তবে তারা কাফের হবে। হজ্জ থেকে ফিরে কিছুদিন চুপ-চাপ থেকে ১৩২৫ হি: আহমাদ রেজা খাঁ উক্ত পুস্তিকাটি ‘হুসামুল হারামাইন’ নামে প্রকাশ করে এবং প্রচার করে যে, মক্কা-মদীনার উলামায়ে কেরামের নিকট উলামায়ে দেওবন্দ কাফির।


▪️বিরোধী চোখে: 

তার বিরোধীরা মনে করেন, তিনি শিয়া ছিলেন এবং ‘তাকিয়া’ করতেন। এবং তার পুরা জীবনে এ সত্য প্রকাশ করেনি যাতে সে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত এর মাঝে বসবাস করতে পারে এবং শিয়া আকিদা প্রাচার করতে পারে। প্রমান হিসাবে তার বিরোধীরা বলে,

ক. তিনি শিয়াদের মত পাক পাঞ্জাতন বিশ্বাস করতেন, তিনি তার ফতয়ায়ে রিজভিয়্যার ৬ষ্ঠ খন্ডের ১৮৭ পৃষ্ঠায় লিখেন, এমন পাঁচজন ব্যক্তি আছে যাদের বরকতে সকল দুঃখ কষ্ট দুর করে দেয়। (তারা হলেন) মুহম্মদ, আলী, হাসান, হোসেন ও ফাতিমা। (অথচ শিয়াদের এই পাঞ্জাতন সম্পর্কে যা কিছু বলা হয় সবই জাল: হাদিসের নামে জালিয়াতি; ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির)।


খ. তার বাবা দাদা ও পূর্ব পুরুষদের নামের সাথে শিয়াদের মাঝে পাওয়া নামের সাথে মিলে যায়। যেমন তার পূর্ণ নাম হল: আহম্মদ রেজা বিন নকী আলী বিন রেজা আলি বিন কাজিম আলী।


গ. তার অনেক হাদিসে এমন শিয়া বর্ণনাকারী আছে যার সাথে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কোনো সম্পর্ক নেই (শিয়া বর্ণনাকারি)। যেমন: আলী কিয়ামতের দিবসে জাহান্নাম বিতরন করবেন। (আলমান ওয়াল আলী, আহমদ রেজ ব্রেলভী)।


ঘ. শিয়াদের একটা বিপদ দুর করার দোয়া প্রসিদ্ধ, যার নাম হল “সাইফি দোয়া”। যেখানে আলীকে বিপদ দুরকারি বলে ঘোষনা করা হয়েছে। আহমদ রেজা খান বলেন, যে “সাইফি দোয়া” দ্বারা দোয়া করবে তার বিপদ দূর হয়ে যাবে।


ঙ. আহমদ রেজা খান তার “খতমে নবুয়াত” এর ৯৭ পৃষ্ঠায় লিখেন, ফাতিমা (রাদি:) এর নাম রাখা হয়েছিল কারন আল্লাহ তাকে এবং তার বংশধরদের আগুন হতে রক্ষা করছেন।


এভাবে অনেক লেখায় তার শিয়াদের প্রতি দুর্বলতা খুজে পাওয়া যায়, তাই অনেকে তাকে শিয়া বলতে দ্বিধা করেন নি। (আল্লাহতায়ালাই ভাল জানেন, হে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন)।


চ. তার অনুসারিরা শী‘আদের মত মনে করে যে, ওলীরা মা‘ছূম। তাদের কোনো পাপ নেই। তাই শী‘আদের ইমামদের মত তারাও তাদের আওলিয়াদের মাযার তৈরী করে। মাযারে মোমবাতি বা আলোকসজ্জা করে, কবরের উপর ফুল, নকশাদার চাদর ইত্যাদি চড়ায়। তাদের কবরকে ঘিরে তাওয়াফ করে। তারা মনে করে, আওলিয়াদের নযর-নেয়ায দেওয়া এবং তাদের কাছে প্রার্থনা করা জায়েয। এমনিভাবে জানাযার ছালাতের পর হাত তুলে দো‘আ করা, ফাতেহা পাঠ করা, তাজিয়া, চল্লিশা ও বার্ষিক ঈছালে ছাওয়াবের অনুষ্ঠান ও উৎকৃষ্ট ভোজের ব্যবস্থা করত: কুরআন খতম করা, কবরের পার্শ্বে আযান দেওয়া, মৃতের কাফনের উপরে কালেমা তাইয়েবা লেখা, শায়খ আব্দুল কাদির জিলানীর স্মরণে ফাতিহা-ইয়াযদাহমের অনুষ্ঠান করা এবং আওলিয়াদের নামে পশু পালন ইত্যাদি শির্কী-বিদ‘আতী কাজকে তারা পরম ছওয়াবের কাজ মনে করে।


ছ. তারা মনে করে, আলী (রাঃ) এর মধ্যে আল্লাহর বৈশিষ্ট্য ছিল।


মাওলানা আহমদ রেযা খান লিখেছেন, বে সক আলি কা নাম নামে আল্লাহ বাতেঁ আপকি কালামুল্লাহ ।

অর্থাৎ আলীর নামটাই হল আল্লাহর নাম এবং তাঁর কথা হল কালামুল্লাহ বা আল্লাহর কালাম । (নাউজুবিল্লাহি মিন যালিক। (নাতে মাকবুলে খোদা, পৃষ্ঠা-৮২)


▪️শেষ মুহুর্ত:

তাঁর মৃত্যুর ২ ঘন্টা ১৭ মিনিট পুর্বে তিনি একটি অসিয়ত লিখে যান । তাতে তিনি নির্দেশ দেন,

“রেযা হুসাইন হাসনাইন আউর তুম মুহাম্মাদ ও ইত্তেফাক সে রহো আউর হাত্তাল ইমকান ইত্তিবায়ে শরীয়াত না ছোড়ো, আউর মেরে দীন ও মাযহাব জো মেরে কুতুব সে জাহির হ্যায় উস পর মযবুতি সে কায়েম রহনা হর ফরয সে আহম ফরয হ্যায় ।” (অসায়া শরীফ, পৃষ্ঠা-১০, অসিয়ত নং ১৪)


বহু আলোচিত সমালোচিত গ্রন্থ রচনাকারী আহমদ রেজা খান ২৫ সফর ১৩৪০ হিজরি মোতাবেক ২৮ অক্টোবর ১৯২১ খ্রি. জুমারদিন ধরাধাম ত্যাগ করেন।


♦️ব্রেলভীদের আকিদা বিশ্বাস


▪️শির্কি বিশ্বাস সমূহ


০১। আল্লাহ তায়ালাকে সর্বত্র বিরাজমান মনে করা।


০২। আল্লাহ তায়ালাকে গুণশূণ্য মনে করা।


০৩। তাদের মতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহতায়ালার মতই অদৃশ্যর জ্ঞান রাখেন।


০৪। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহতায়ালার মতই সবকিছূ দেখেন।


০৫। একটা পর্যায় দুনিয়াতে বসেই আল্লাহকে দেখা সম্ভব বলে বিশ্বাস করে।


০৬। অহদাতুল অজুদে বা সর্বেশ্বরবাদে বিশ্বাসি, করে। {তাদের দৃষ্টিতে পৃথিবীতে অস্তিত্ববান সব কিছুই আল্লাহর অংশ। আল্লাহ পৃথক কোনো সত্তার নাম নয়।(নাঊযুবিল্লাহ)।


০৭। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নুরের তৈরি।


০৮। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মতই কবরে জীবিত আছেন।


০৯। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালার মত মানুষের ভাল মন্দ করার ক্ষমতা রাখেন।


১০। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহতায়ালার সাথে তুলনা করে ও কোনো কোন ক্ষেত্রে আল্লাহর সমান জ্ঞান করে।


১১। গাউস, কুতুব, আবদাল, নকিব ইত্যাদিতে বিশ্বাসি। (এদের ‌নিজেস্ব ক্ষমতা আছে বিশ্বাস করে)।


১২। বিপদে পীর বা অলি আওলিয়াদের আহবান করে এবং তাদের কবরের নিকট গিয়ে কোন কিছু চাওয়া, এবং তারা বিপদ হতে উদ্ধার করতে পারেন।


১৪। অলি আওলিয়ারা কবর থেকে ফরিয়াদ শুনতে পান।


১৫। কবরে সিজদাহ করে।


১৬। মিলাদ মাহফিল চলা কালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনে বিশ্বাস করা। (এ উপলক্ষে মিলাদ মাহফিলের মাঝে কিয়াম করে বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের কামনায় চেয়ারের ব্যবস্থা করে)।


১৭। মাধ্যম ছাড়া আল্লাহ পর্যন্ত পৌছানো যায় না বলে বিশ্বাস করে।


১৮। অলিদের কাশফকে তাদের নিজস্ব ক্ষমতা মনে করে।


১৯। অলি আওলিয়াদের কেরামত তাদের ইচ্ছাধীন মনে করে।


২০। তাবিজ কবজে বিশ্বাস করে।


▪️বিদআতি বিশ্বাসসমূহ


০১। কবর জিয়ারত ওয়াজিব মনে করা।


০২। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপনের মতই জীবিত অবস্থায় দেখা যায়,


০৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না হলে পৃথিবী সৃষ্টি হত না,


০৪। অলি আওলিয়াদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান থেকে বরকত লাভ করা যায় বলে বিশ্বাস করা।


০৫। তাক্কলিদে শাখসিতে বিশ্বাসি বা যে কোনো এক মাজহাব মানা ওয়াজিব বলে বিশ্বাস করা।


০৬। পীর বা অলীদের কলবের তাওয়াজ্জু দানে বা নেক নজরে বিশ্বাসি।


০৭। এলম সিনা থেকে সিনার মধ্যমে চলে আসছে বিশ্বাস করা।


০৮। সংশোধনের জন্য পীর ধরা ওয়াজিব মনে করা।


০৯। পীর ও অলি আওলিয়াদের ছাড়া ইসলাহ বা সংশোধন হয় না মনে করা।


১০। বিভিন্ন দিবসে মৃত্যু ব্যক্তি ফিরে আসে এই বিশ্বাস রেখে ঐ দিনে হালুয়া রুটি রেখে দেওয়া।


▪️বিদআতি আমলসমূহ


০১। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কল্পিত জ্ম্ম দিনকে সব ঈদের শ্রেষ্ঠ ঈদ (ঈদে মিলাদুন নবী) হিসবে পালন করা।


০২। ইবাদাত মনে করে কবরের নিকট মিলাদ পড়ে, ফাতিহা আদায় করে ও ওরস পালন করে।


০৩। কবর পাকা করে, কবরের উপর গম্বুজ নির্মান করে।


০৪। কবর চাদর চড়ায়, মোমবাতি ও আগর বাতি জ্বালায়।


০৫। মাজারে মান্নত করে, টাকা পয়সা দান করন, শিন্নি দেয়, তরিতরকারি দান করে, ফলমুল দান করে ইত্যাদি।


০৬। মাজারে গরু, মহিষ, উট, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি জবেহ করে।


০৭। মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কুলখানি, চল্লিশা আদায় করা।


০৮। বিভিন্ন বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করে খতম আদায় করে।


০৯। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনলে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করে।


১০। অলি আওলিয়াদের কবরের নিকট বরকতের জন্য দোয়া করা।


১১। দোয়ায় মৃত নবী, পীর ও অলি আওলিয়াদের অছিলা দিয়ে দোয়া করে।


১২। স্বন্পকে শরিয়তের দলিল মনে না করলেও প্রমান হিসাবে ব্যবহার করে।


১৩। পীর বা শায়েখের ধ্যান করে।


১৪। ইসলাহ বা সংশোধনের জন্য যে কোনো একটা তরিকা গ্রহণ করতেই হবে মনে করে। 


তাদের এ ভ্রান্ত ও শির্কি আকিদাগুলি প্রমানের জন্য তাদের কোন বইয়ের রেফারেন্স দেওয়ার দরকার নেই। কারণ তারা এই আকিদাগুলি স্বীকার করে ও প্রচার করে। এই ভ্রান্তি আকিদা প্রমানের জন্য বিভিন্ন ওয়েব সাইড থেকে ঢালাও ভাবে প্রচার চালাচ্ছে। শত শত কিতাব রচনা করছে। তার পরেও যদি কোনো সত্য সন্ধানী ভাই সত্যতা যাচাই করতে চান তবে শায়খ ইহসান ইলাহী যহীর (রহ) এর লেখা “ বেরেলভী মতবাদ:আকিদা-বিশ্বাস ও ইতিহাস” গন্থখানা পড়লেই সব রেফারেন্স এক সাথে পেয়ে যাবেন। দেখবেন এরাই প্রথম কুরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা করে প্রমান করতে চেষ্টা করে যে, মৃত আওলীয়াদের নিকট সাহায্য চাওয়া জায়েয।



বেরলভী মতবাদ : ভিত্তিহীন আকীদা ও ভ্রান্ত ধ্যানধারণা

.

-- মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

.

বেরলভী[1]জামাত যাদেরকে রেজাখানী বা রেজভীও বলা হয়, যারা নিজেদেরকে সুন্নী বা আহলে সুন্নাত বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। তাদের অনেক ভিত্তিহীন আকীদা, ভ্রান্ত ধ্যানধারণা ও মনগড়া রসম-রেওয়ায রয়েছে। খুব সংক্ষেপে তার একটি তালিকা এখানে তুলে ধরা হল।


 


ভিত্তিহীন আকীদা


১. গায়রুল্লাহর জন্য ইলমে গায়েবের আকীদা


আহলে হকের আকীদা হচ্ছে, আলিমুল গাইব অর্থাৎ অদৃশ্য জগতের বিষয়াদি সম্পর্কে জ্ঞাত একমাত্র আল্লাহ তাআলা। তাঁর জন্য অদৃশ্য বলতে কিছুই নেই। দৃশ্য-অদৃশ্যের পার্থক্য মাখলুকের জন্য। আল্লাহ সমানভাবে আলিমুল গাইব ও আলিমুশ শাহাদাহ। প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সবকিছুই তাঁর কাছে প্রকাশ্য। ইলমে যাতী  ও ইলমে মুহীত তথা নিজস্ব ও সর্বব্যাপী ইলম একমাত্র আল্লাহ পাকেরই। আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কেউ এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী নয়। তবে নবী-রাসূলগণকে আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে অদৃশ্য জগতের বহু জ্ঞান দান করেছেন। আর নবীগণের মধ্যে সাইয়েদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, খাতামাতুন্নাবিয়্যীন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাকাম এ বিষয়ে সকলের ঊর্ধ্বে। আল্লাহ পাক তাঁকে যে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছেন সমষ্টিগতভাবে অন্য কোনো রাসূলকেও তা দান করা হয়নি। কিন্তু এরপরও এ কথা বলার অবকাশ নেই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলিমুল গাইব ছিলেন বা “ভবিষ্যতে যা হবে ও অতীতে যা হয়েছে সকল বিষয়ে তিনি জ্ঞাত ছিলেন। তাঁর সামনে যা ঘটত তা যেমন তিনি জানতেন, দূরের-কাছের অন্য সবকিছুই জানতেন; যা ওহী আসত তা যেমন জানতেন, যা ওহী হত না তাও তেমনি জানতেন”!! কারণ, এ তো হবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর বিশেষ সিফাতের মধ্যে শরীক করা এবং কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট বিরুদ্ধাচরণ। কেননা কুরআনে কারীম থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, আলিমুল গাইব একমাত্র আল্লাহ পাকেরই গুণবাচক নাম। তেমনি অসংখ্য আয়াত ও হাদীস দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, অতীত ও ভবিষ্যতের অনেক কিছু আল্লাহ পাক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানাননি। কারণ, ঐসব বিষয় তার নবুওত ও রেসালাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। যেমন কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত কোনো আয়াত বা সূরা তাঁর কাছে ওহীরূপে আসার পূর্বে তা তাঁর জানা ছিল না। উল্লেখিত সহীহ আকীদার উপর মাওলানা মনযূর নোমানী রাহ. লিখিত ‘বাওয়ারিকুল গায়েব’গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে একটি দুটি নয়, চল্লিশটি আয়াতে কারীমা অনুবাদ ও ব্যাখ্যাসহ উল্লেখ করা হয়েছে। এবং ঐ গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে উপরোক্ত সহীহ আকীদার পক্ষে একশ পঞ্চাশ খানা হাদীস অনুবাদ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণসহ উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া এই বিষয়ে হযরত মাওলানা সরফরায খান সফদার রাহ.-এর কিতাব ‘ইযালাতুর রাইব আন ইলমিল গাইব’ তো আলেমদের হাতে আছেই।


উল্লেখিত ঈমানী আকীদার সম্পূর্ণ বিপরীত বেরলভীদের আকীদা  হচ্ছে- দৃশ্য-অদৃশ্য সকল কিছুর ইলম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেয়া হয়েছে। একই সাথে অতীতে যা কিছু হয়েছে ও কিয়ামত পর্যন্ত ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সব বিষয়ে তিনি সম্যক অবগত ছিলেন! সৃষ্টির সূচনা থেকে জান্নাত জাহান্নামে প্রবেশ পর্যন্ত সামান্যতম বিষয়ও তার জ্ঞানের বহির্ভূত ছিল না। উক্ত বাতিল আকীদা প্রচারের জন্য স্বয়ং আহমদ রেযা খান একাধিক বই লিখেছে। যেমন ‘ইম্বাউল মুস্তফা’ ও ‘আদ দাওলাতুল মাক্কিয়াহ বিল মাদ্দাতিল গাইবিয়্যাহ’। আরো দেখা যায়, প্রসিদ্ধ বেরলভী আলেম মৌলভী নাঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী  রচিত ‘আলকালিমাতুল উল্য়া’ পৃ. ৩, ৪৩, ও ৬৩। এবং কাজী ফযল আহমদ লুধিয়ানভী রচিত ‘আনওয়ারে আফতাবে সাদাকাত’ পৃ. ১৩৭


 


২. হাযির-নাযির শীর্ষক আকীদা


পরিভাষায় হাযির-নাযির ঐ সত্তাকে বলে যার শক্তি ও জ্ঞান সর্বাবস্থায় সকল স্থানকে বেষ্টন করে আছে। কোনো কিছু তাঁর ইলম ও কুদরতের বাইরে নয়। তিনি সকল কিছু দেখেন। কোনো কিছুই তাঁর দৃষ্টির আড়ালে থাকতে পারে না। এমন সত্তা একমাত্র আল্লাহ তাআলা । এটি অতি  স্পষ্ট ও অকাট্য এবং কুরআন-হাদীসের অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। এ কারণে উল্লেখিত অর্থে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে হাযির-নাযির মনে করা সুস্পষ্ট ভ্রান্তি ও শিরকী আকীদা। এই আকীদার ভ্রান্তি ও ভিত্তিহীনতা বোঝার জন্য দেখা যেতে পারে মাওলানা সরফরায খান লিখিত কুরআন ও হাদীসের দলীলসমূহের এক উত্তম সংকলন ‘তাবরীদুন নাওয়াযির ফী তাহকীকিল হাযির ওয়ান নাযির’।


কিন্তু আফসোস, বেরলভীরা উল্লেখিত শিরকী আকীদার প্রবক্তা। তারা শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই নয়, বুযুর্গানে দ্বীনকেও হাযির-নাযির মানে।


মশহুর বেরলভী আলেম আহমদ ইয়ার খান লিখেন,


عالم میں حاضر و ناظر کے شرعی معنی یہ ہے کہ قوت قدسیہ والا ایک ہی جگہ رہ کر تمام عالم کو اپنے کف دست کی طرح دیکھے اور دور و قریب کی آوازیں سنے یا ایک آن میں تمام عالم کو سیر کرے اور صدہا کوس پر حاجت مندوں کی حاجت روائی کرے، یہ رفتار خواہ صرف روحانی ہو یا جسم مثالی کے ساتھ ہو یا ایسی جسم سے ہو جو قبر میں مدفون ہو یا کسی  جگہ موجود ہے ان سب معنے کا ثبوت بزرگان دین کے لۓ قرآن و احادیث اور اقوال علماء سے ہے. (جاء الحق ج১ ص ১৩১ )


অর্থাৎ, জগতে হাযির-নাযির থাকার শরয়ী অর্থ হচ্ছে, পবিত্র শক্তির অধিকারী কোনো সত্তা একই স্থানে অবস্থান করে সমস্ত দুনিয়াকে নিজের হাতের তালুর মত দেখেন। দূরের ও কাছের সমস্ত আওয়ায শোনেন। আবার মুহূর্তের মাঝে সমস্ত পৃথিবী ভ্রমণ করতে পারেন। শত শত মাইল দূর থেকে প্রয়োজনগ্রস্তের প্রয়োজন পূরণ করেন। এ ভ্রমণ শুধু রুহানীভাবে হোক অথবা মিছালী দেহের সাথে, অথবা এমন দেহের সাথে যা কোনো কবরে সমাহিত বা কোনো স্থানে মওজুদ। হাযির-নাযিরের উল্লেখিত অর্থ কুরআন হাদীস ও উলামায়ে কেরামের বিভিন্ন উক্তির মাধ্যমে বুযুর্গানে দ্বীনের জন্য প্রমাণিত। (জা-আল্ হক, আহমদ ইয়ার খান, খ. ১ পৃ. ১৩১ )


সম্মানিত পাঠক লক্ষ করুন, উল্লেখিত ভ্র্রান্ত আকীদাকে কীভাবে কুরআন হাদীস ও উলামায়ে কেরামের উক্তির উপর আরোপ করে দেওয়া হল,


سُبْحٰنَكَ هٰذَا بُهْتَانٌ عَظِیْمٌ.


৩. মোখতারে কুল শীর্ষক আকীদা


ইসলামের সুস্পষ্ট ও সর্বজন বিদিত একটি আকীদা, যার পক্ষে যুক্তিভিত্তিক প্রমাণাদী ছাড়াও অনেক আয়াত ও হাদীসের স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে, তা এই যে, সৃষ্টিজগতের সকল কিছুর মালিক-মোখতার একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল  আলামীন। কিন্তু বেরলভী জামাতের আকীদা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে  মোখতারে কুল মনে করে।


 আহমদ রেযা খান লিখেছেন,


حضور ہر قسم کی حاجت روائی فرما سکتے ہیں، دنیا و آخرت کی مرادیں سب حضور کے اختیار میں ہیں. (برکات الإمداد لأهل الاستمداد ص (৮০


অর্থাৎ হুযুর সকল প্রকার প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম। দুনিয়া-আখিরাতের সকল মকসুদ ও উদ্দেশ্য তাঁরই ইখতিয়ারাধীন। -বারাকাতুল ইমদাদ লিআহলিল ইসতিমদাদ, আহমদ রেযা খান পৃ. ৮


আরো বলেছেন-  


رب العزۃ جل جلالہ نے اپنے کرم کے خزانے اپنی نعمتوں کے خوان حضور کے قبضے ميں دۓ جس کو چاہیں دیں اور جس کو چاہیں نہ دیں ، کوئی حکم نافذ نہیں ہوتا مگر حضور کے دربار سے، کوئی نعمت کوئی دولت کسی کو کبھی نہیں ملتی مگر حضور کی سرکار  سے صلے اللہ علیہ و سلم   ( ملفوظات ج ৪ ص ৭০-৭১ )


অর্থাৎ মহাপরাক্রমশালী প্রভু আপন দানের ভা-ার নিআমতের খাযানা হুযুরের কব্জায় দিয়ে দিয়েছেন। তিনি যাকে ইচ্ছা দিবেন যাকে ইচ্ছা দিবেন না। সমস্ত ফায়সালা কার্যকর হয় একমাত্র হুযুরের দরবার থেকেই। আর যে কেউ যখনই কোনো নিআমত কোনো দৌলত পায় তা পায় হুযুরের রাজ-ফরমান থেকেই। -মালফুজাত, আহমদ রেযা খান খ. ৪ পৃ. ৭০-৭১


আহমদ রেযা খান সাহেবের উপরোক্ত বাক্যগুলো পড়–ন, এরপর কুরআনে কারীমের আয়াতসমূহের উপর চিন্তা করুন। দেখুন কুরআন কী বলে আর আহমদ রেযা খান সাহেব কী বলেন!


قُلْ اِنَّمَاۤ اَدْعُوْا رَبِّیْ وَ لَاۤ اُشْرِكُ بِهٖۤ اَحَدًا قُلْ اِنِّیْ لَاۤ اَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَّ لَا رَشَدًا قُلْ اِنِّیْ لَنْ یُّجِیْرَنِیْ مِنَ اللهِ اَحَدٌ وَّ لَنْ اَجِدَ مِنْ دُوْنِهٖ مُلْتَحَدًا اِلَّا بَلٰغًا مِّنَ اللهِ وَ رِسٰلٰتِهٖ ؕ وَ مَنْ یَّعْصِ اللهَ وَ رَسُوْلَهٗ فَاِنَّ لَهٗ نَارَ جَهَنَّمَ خٰلِدِیْنَ فِیْهَاۤ اَبَدًا.


বলে দাও, আমি তো কেবল আমার প্রতিপালকের ইবাদত করি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না। বলুন, আমি মালিক নই তোমাদের ক্ষতি সাধনের আর না সুপথে আনয়নের। বলে দাও, আল্লাহ থেকে কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারবে না আর আমিও তাকে ছাড়া আর কোনো আশ্রয়স্থল পাব না। অবশ্য (আমাকে যে জিনিসের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে, তা হল) আল্লাহর পক্ষ থেকে বার্তা পৌঁছানো ও তাঁর বাণী প্রচার। কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্যতা করলে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। যেখানে তারা স্থায়ীভাবে থাকবে। -সূরা জিন (৭২) : ২০-২৩


২.    قُلْ لَّا أَقُولُ لَكُمْ عِنْدِيْ خَزَائِنُ الله.ِ


বলুন, আমি তোমাদের বলি না যে, আমার কাছে রয়েছে আল্লাহর ভা-ারসমূহ। -সূরা আনআম (৬) : ৫০


 ৩.   قُلْ لَّا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَّلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَّبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُون.َ


বলুন, আমি আমার নিজের ভাল-মন্দের মালিক নই; কিন্তু আল্লাহ যা চান।  আমি যদি গায়েব জানতাম তবে প্রচুর ভাল-ভাল জিনিস নিয়ে নিতাম এবং কোনো কষ্ট আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো কেবল একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা- যারা আমার কথা মানে তাদের জন্য। -সূরা আরাফ (৭) : ১৮৮


৪.  اِنَّكَ لَا تَهْدِیْ مَنْ اَحْبَبْتَ وَ لٰكِنَّ اللهَ یَهْدِیْ مَنْ یَّشَاء ُوَ هُوَ اَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِیْنَ.


তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎপথ অনুসারীগণকে। -সূরা কাসাস (২৮) : ৫৬


বেরলভী জামাত শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই নয়, অনেক বুযুর্গানে দ্বীনকেও মোখতারে কুল ও কুন ফায়াকুনের অধিকারী মনে করে। এ প্রসঙ্গে আহমদ রেযা খানের পুত্র মুস্তফা রেযা খান লেখেন-


اولیاء میں ایک مرتبہ ہے التکوین کا جو چیز جس وقت چاہتے ہیں فورا ہو جا تی ہے ، جسے کن کہا وہی ہو گیا  (شرح استمداد ص ২৮ )


অর্থাৎ আউলিয়ায়ে কেরামের একটি মাকাম হচ্ছে আসহাবে ‘তাকভীন’গণের মাকাম। তারা যখন যা ইচ্ছা করেন তৎক্ষণাত তা হয়ে যায়। যে সম্পর্কেই ‘কুন’ ‘হও’ বলেন তা-ই হয়ে যায়। -শরহে ইসতিমদাদ পৃ. ২৮


 বরং খোদ আহমদ রেযা খান শায়েখ আব্দুল কাদির জিলানী রাহ. সম্পর্কে লিখেছেন-


ذی تصرف بھی ، ماذون بھی، مختار بھی


کار عالم کا مدبر بھی عبد القادر


অর্থাৎ শায়েখ আব্দুল কাদের জিলানী সৃষ্টির উপর কর্তৃত্বের অধিকারী। অনুমতি প্রাপ্ত ও ইচ্ছা-ইখতিয়ারের অধিকারী এবং জগতের কার্যাবলীর পরিচালকও। -হাদায়েকে বখশিশ, আহমদ রেযা খান ১ : ২৭


বেরলভী জামাত যেহেতু গায়রুল্লাহকে মোখতারে কুল তথা সর্বক্ষমতার অধিকারী মনে করে তাই গায়রুল্লাহকে প্রয়োজন পূরণকারী ও বিপদ-আপদ বিদূরণকারী বলেও বিশ্বাস করে, তাই তারা উপায় উপকরণের ঊর্ধ্বের বিষয়েও মৃত ও জীবিত বুযুর্গদের কাছে প্রার্থনা ও ফরিয়াদ করাকে জায়েয মনে করে, যা “إياك نستعين”-এর মধ্যে ঘোষিত ‘তাওহীদুল ইসতিআনাহ’-এর পরিপন্থী স্পষ্ট র্শিক। তাদের এই শিরকী আকীদার উল্লেখ আহমদ রেযা খানের ‘আল আমনু ওয়াল উলা’ (الأمن والعلى لناعتي المصطفى بدافع البلاء) এবং মুস্তফা রেযা খানের ‘শরহে ইসতিমদাদ’ ইত্যাদি বইপত্রে রয়েছে।


৪. নূর-বাশার শীর্ষক আকীদা


কুরআনে কারীমের ঘোষণা ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাস্তবতা এই যে, আল্লাহর রাসূল বাশার তথা মানব ছিলেন। তবে তিনি ছিলেন সাইয়েদুল বাশার মানবকুল শিরোমণি। আল্লাহ পাক তাঁকে হেদায়েতের নূর ও ‘সিরাজুম মুনীর’ রূপে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু বেরলভী জনসাধারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মানবসত্তার অস্বীকারকারী। তাদের আকীদা- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্তাকে নূর দ্বারা তৈরি করা হয়েছে, যা কুরআন-হাদীসের  ঘোষণার সম্পূর্ণ বিরোধী।


এ সম্পর্কে সহীহ আকীদ জানতে দেখুন :


মাওলানা সরফরায খান রচিত ‘নূর ও বাশার’। মাওলানা আবদুল মাজেদ দরিয়াবাদী কৃত ‘বাশারিয়্যাতে আম্বিয়া কুরআন মাজীদ মে’, সাইয়েদ লাল শাহ বুখারীর ‘বাশারিয়্যাতে রাসূল’ ও মাওলানা মতিউর রহমানের ‘প্রচলিত জাল হাদীস’।


 ৫. কবর পূজা ও অন্যান্য র্শিক


বেরলভী জনসাধারণের একটি বড় অংশ মাজার পূজারী। বেরলভী সম্প্রদায়ের আলেমরা তাদের জনসাধারণকে যখন এই সবক দিয়েছে যে, প্রত্যেক বুযুর্গই হাযির-নাযির । মোখতারে কুল। হাজত পূরণকারী ও বিপদাপদ বিদূরণকারী। তখন তারা মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য ও বালা মসিবত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বুযুর্গানে দ্বীনের কবরে তাওয়াফ ও সেজদা২[2] কবরওয়ালার কাছে প্রার্থনা ও ফরিয়াদ, তাদের নাম জপা, গায়রুল্লাহর নামে মান্নত মানা, এবং গায়রুল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য পশু কুরবানীর মতো প্রকাশ্য শিরকী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে।


উল্লেখিত কর্মগুলো শিরক হওয়া দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। এ বিষয়ে কুরআন হাদীসের প্রমাণাদী জানার জন্য নিম্নোক্ত গ্রন্থাবলী দ্রষ্টব্য :


মাওলানা মনযুর নোমানী রাহ. লিখিত ‘কুরআন আপসে কিয়া কাহতা হ্যায়’ ও ‘দ্বীন ও শরীয়ত’। মাওলানা সরফরায খান লিখিত ‘ইতমামুল বুরহান ফী রদ্দি তাউযীহুল বয়ান’ ও ‘রাহে সুন্নাত’। এই অধম লিখিত ‘তাসাউফ তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ’


ভ্রান্ত ধ্যানধারণা


উল্লেখিত ভিত্তিহীন আকীদাগুলো ছাড়াও যে সকল ভ্রান্ত ধারণার উপর বেরলভী চিন্তা-ঘরানার ভিত্তি তন্মধ্যে  শুধু একটি মৌলিক ভ্রান্তি উল্লেখ করা হচ্ছে। আর তা হচ্ছে বিদআতের সংজ্ঞার তাহরীফ ও বিকৃতি। এই বিকৃতি সাধনের কারণে বেরলভী জামাতের আলেমগণ বিদআত ও কুসংস্কারের পক্ষের দলে পরিণত হয়েছেন।


খায়রুল কুরুন তথা সাহাবায়ে কেরাম তাবিঈন ও তাবে তাবিঈনের সোনালী যুগ থেকে আজ পর্যন্ত  বিদআতের যে সংজ্ঞা ও পরিচয় প্রতিষ্ঠিত তা হচ্ছে, শরঈ দলীল-প্রমাণ দ্বারা যে বিষয়টি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রমাণিত নয় এমন কিছুকে দ্বীনের হুকুম মনে করে করার নামই বিদআত। বিষয়টি আকাইদ সংক্রান্ত হোক বা ইবাদত সংক্রান্ত, অথবা ইবাদতের সময় ও পদ্ধতি সংক্রান্ত হোক, কিংবা তা হোক দ্বীনের অন্য কোনো শাখার সাথে সম্পৃক্ত কোনো বিষয়। (দ্র. আল ই‘তিসাম, শাতেবী; আল মাদখাল, ইবনুল হাজ্জ; মেরকাত, মোল্লা আলী কারী; রাহে সুন্নাত, সরফরায খান; মুতালাআয়ে বেরলভিয়্যাত, খালেদ মাহমুদ; ইখতেলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাকীম, মুহাম্মাদ ইউসুফ লুধিয়ানবী)


কিন্তু আহমদ রেযা খান ও তার সহযোগী মৌলভীরা এই সংজ্ঞা এভাবে  বিকৃত করেছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আকীদা, ইবাদাত অথবা ইবাদাতের বিশেষ কোনো পদ্ধতি নিষিদ্ধ হওয়ার উপর কোনো আয়াত বা হাদীস না থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত এমন বিষয়কে দ্বীনের হুকুম সাব্যস্ত করতে অসুবিধা নেই। এবং এটাকে বিদআত বলারও অবকাশ নেই।


[আল আমনু ওয়াল উলা, আহমদ রেযা খান, পৃ. ১৫৭-১৫৮; জা-আল হক, মুফতী আহমাদ ইয়ার খান খ. ১ পৃ. ২৩০, ২৫৩, ২৫৪; ইশতেহারে আতইয়াব, মুফতী নাঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী পৃ. ১৯ (মুতালাআয়ে বেরলভিয়্যাত খ. ৩ পৃ. ২১৫-৩৩৮-এর মাধ্যমে)]


অথচ যা কিছু নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে আয়াত বা হাদীস থাকবে তা তো হারাম বা মাকরূহে তাহরিমী হবে। বিদআত তো নিষিদ্ধ এই জন্য যে শরঈ দলীল ছাড়া একে শরীয়তের অংশ সাব্যস্ত করা হয়েছে । বেরলভী সম্প্রদায় বিদআতের যে সংজ্ঞা দিয়েছে তা সরাসরি হাদীসের খেলাফ। হাদীসে বর্ণিত হচ্ছে-


مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ.


অর্থাৎ যে কেউ দ্বীন নয় এমন কিছুকে আমাদের এই দ্বীনে অন্তর্ভুক্ত করলে তা পরিত্যাজ্য। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭১৮


 


বিদআত ও কুসংস্কারের পক্ষপাত


বেরলভী উলামা মাশায়েখের প্রধান কীর্তি সম্ভবত এটাই যে, তারা দ্বীনের বিষয়ে এই নতুন নিয়ম উদ্ভাবনের মাধ্যমে (অর্থাৎ কোনো কিছু বিদআত বলার জন্য তার নিষিদ্ধতার উপর স্বতন্ত্র আয়াত বা হাদীস থাকা চাই), শরঈ প্রমাণাদীর তাহরীফ ও বিকৃতির মাধ্যমে, শরঈ উসূল ও মৌলনীতিকে পদদলিত করে এবং ভিত্তিহীন ও অবাস্তব কিছু বর্ণনার আশ্রয় নিয়ে সমাজে প্রচলিত বিদআত রসম-রেওয়ায এবং মুনকার ও গর্হিত কর্মকাণ্ডের পক্ষে জোরদার ভূমিকা গ্রহণ করেছে এবং এগুলোকে ইলমী সনদ দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। যে সমস্ত বিদআতকে তারা মুবাহ-মুসতাহসান বলে সমাজে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে তার তালিকা অনেক দীর্ঘ। এখানে নিম্নে নমুনাস্বরূপ কিছু বিষয় তুলে ধরা হল।


১. ঈদে মিলাদুন্নবী নামে ইসলামে নতুন ঈদের আবিষ্কার।


২. রসমী মিলাদকেই দ্বীন মনে করা।


৩. উরস করা।


৪. মাজার পাকা করা ও তার উপর গম্বুজ নির্মাণ করা।


৫. কবরে বাতি জ্বালানো।


৬. কবরের উপর চাদর বিছানো ও ফুল ছড়ানো।


৭. মাযারে এক ধরনের মু‘তাকিফ বনে থাকা।


৮. জানাযার পরে দুআর রসম।


৯. কবরের উপরে আযান দেওয়ার রসম।


১০. আযান ও ইকামতে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলার সময় বৃদ্ধাঙ্গুল চুম্বন করে উভয় চোখে লাগানো।


১১. ঈসালে সাওয়াবের জন্য কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করে বিনিময় গ্রহণ করাকে বৈধ মনে করা।


১২. খাবার সামনে নিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে ফাতেহা পড়ার রসম।


১৩. আযানের পূর্বে দুরূদ ও সালামের রসম।


বেরলভী উলামা ও মাশায়েখের কিতাবাদী উল্লেখিত বেদআতসমূহের পক্ষপাতপূর্ণ। এর অধিকাংশ বিষয়ের উল্লেখ তো তাদের প্রসিদ্ধ বই ‘জা-আল হকে’ রয়েছে। এ ছাড়াও মৌলভী আব্দুস সামী‘ সাহেবের লেখা ‘আনওয়ারে সাতেআ’ও দেখা যেতে পারে। আর ঐ সমস্ত বিষয় বিদআত হওয়ার প্রমাণাদী জানতে চাইলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কিতাবাদী দেখুন। উদাহরণস্বরূপ :


১. আল জুন্নাহ্ লি আহলিস সুন্নাহ, মুফতী আব্দুল গণি, সাবেক ছদরে মুদাররিস, মাদারাসায়ে আমিনীয়া দিল্লী।


২. বারাহীনে কাতিআহ, মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী।


৩. ইসলাহুর রুসূম, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী।


৪. রাহে সুন্নাত, মাওলানা সরফরায খান।


৫. ইখতেলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাকীম, মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ লুধিয়ানবী।


আকাবিরে দ্বীনকে কাফের আখ্যা দেওয়া এবং মুসলমানদের মাঝে বিভেদ-বিভক্তির অপপ্রয়াস


আহমদ রেযা খান বেরলভী সাহেব যে ঘৃণ্য কাজগুলো করেছেন সেগুলোর অন্যতম হল, আকাবিরে উম্মতকে কাফের আখ্যায়িত করা। মুসলমানদের বিভক্ত করার এবং না জানি আরো কী কী ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যে আকাবিরে উম্মতকে কাফের আখ্যা দেওয়ার তার প্রবল আগ্রহ ছিল এবং এটি তার জীবনের অতি স্পষ্ট ব্যস্ততা ছিলো।


সুতরাং কোনো ভুল বুঝাবুঝির কারণে নয়, বরং জেনে শুনে নিতান্তই হঠকারিতার বশবর্তী হয়ে হযরত মাওলানা ইসমাঈল শহীদ রাহ., মাওলানা কাসেম নানুতবী রাহ., মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রাহ. ও মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ. প্রমুখ আকাবিরে উম্মতকে কাফের আখ্যায়িত করেন। এই সমস্ত বুজুর্গানে দ্বীনের জীবনে তো কুফুরীর গন্ধ আসে এরূপ কোনো কিছুই ছিল না। এরপরও কীভাবে তিনি এমন ব্যক্তিদের কাফের বলতে পারেন?


তাকে এর জন্য মিথ্যাচার ও বিকৃতির আশ্রয় নিতে হয়েছে। আকাবিরে উম্মতের কথাগুলো কাটছাঁট করে, নিজের পক্ষ থেকে কুফুরী বাক্য বানিয়ে তাদের সাথে সম্বন্ধ করে ‘হুসামুল হারামাইন’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছে, যার প্রতিবাদে আকাবিরে দ্বীন ‘আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ’ নামক ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনা করেন এবং খান সাহেবের মিথ্যাচার ও বিকৃতিসমূহ উম্মোচিত করে দেন।


আল্লামা খালেদ মাহমুদ সাহেবের লেখা ‘ইবারতে আকাবির’, মাওলানা সরফরায খানের ‘ইবারতে আকাবির’, মাওলানা মনযুর নোমানীর ‘মারেকাতুল কলম’ বা ‘ফায়সাল কুন মুনাযারা’। মাওলানা মুরতাযা হাসান চাঁদপুরীর অনেকগুলো পুস্তিকা ও হাকীমুল উম্মত মাওলানা থানবী রাহ.-এর ‘বাসতুল বানান’ ও ‘তাগয়িরুল উনওয়ান’ প্রভৃতি কিতাব এ প্রসঙ্গে লিখিত। যেগুলোতে খান বেরলভীর তাকফীরী কর্মকাণ্ডের পর্যালোচনা অত্যন্ত ইল্ম ও ইনসাফ ভিত্তিক করা হয়েছে এবং দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আকাবিরে উম্মতকে কাফের বলার ক্ষেত্রে আহমদ রেযা খান ছিলেন মিথ্যা অপবাদ আরোপকারী ও বিকৃতি সাধনকারী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, এখনও বেরলভী জনসাধারণ আকাবিরে উম্মতকে কাফের বলে নিজেদের দ্বীন ঈমান বরবাদ করছে।


এ সংক্ষিপ্ত তালিকায় কয়েকটি মাত্র বিষয়ের উল্লেখ করা হল। বেরলভী মতবাদ সম্পর্কে আরো অধিক জানতে হলে পড়তে পারেন ডা. খালেদ মাহমুদ লিখিত ‘মুতালাআয়ে বেরলভিয়্যাত’ যা অনেক আগেই ছেপে এসেছে। এ গ্রন্থটি বেরলভী মতবাদ সম্পর্কে একটি বিশ্বকোষ যা ঐতিহাসিক তথ্য ও প্রমাণ সমৃদ্ধ।


আর زلزله বইয়ের মিথ্যা অপবাদসমূহের স্বরূপ জানার জন্য পড়ুন : মাওলানা মুহাম্মাদ আরেফ সাম্ভলী নদভী কৃত


 بريلوي فتنہ كا نيا روپ


উল্লেখ্য, বেরলভী ঘরানার কোনো কোনো আলেম এসব শিরক ও বিদআতের অনেক কিছুরই প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু বেরলভী জনসাধারণের উপর তাদের বিশেষ কোনো প্রভাব লক্ষ করা যায় না। কত ভালো হত যদি অন্যান্য বেরলভী আলেমগণও এ আলেমগণের সমর্থন করতেন এবং তাদের চিন্তাগুলো প্রচার করার চেষ্টা করতেন। এ প্রসঙ্গে আমরা পাকিস্তানের বেরলভী ঘরানার প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম নাঈমিয়া করাচীর শাইখুল হাদীস আল্লামা গোলাম রাসূল সাঈদীর কথা উল্লেখ করতে পারি। তার কিতাব শরহে সহীহ মুসলিম সাত খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এতে তিনি ‘ইলমে গাইব’, ‘নূর ও বাশার’, ‘গায়রুল্লাহর জন্য মান্নত’ ইত্যাদি বিষয়ে বেরলভীদের মাঝে প্রচলিত ধ্যানধারণার বিপরীত মতামতকেই দলীলসহ সমর্থন করেছেন।


وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين


বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক


০৩/০১/১৪২৫ হি.


[এটি আমার পুরনো একটি লেখা। মনে নেই এর প্রেক্ষাপট কী ছিল। হঠাৎ হাতের কাছে পেয়ে সময়-উপযোগী মনে হওয়ায় এখন আলকাউসারে ছাপা হচ্ছে।


-আবদুল মালেক


১৮. ১০. ১৪৩৭ হি.]


[1] ইমাম মুজাহিদ হযরত মাওলানা সায়্যেদ আহমাদ শহীদ বেরলভী (জন্ম ১২০১ হি.- শাহাদত ১২৪৬ হি.) রায়বেরেলীর অধিবাসী ছিলেন। এজন্য তিনিও ‘বেরলভী’বলে প্রসিদ্ধ। কিন্তু আহমদ রেযা খান সাহেব (জন্ম: ১২৭২ হি. মোতাবেক ১৮৫৬ খৃ. মৃত্যু: ১৩৪০ হি. মোতাবেক ১৯২১ খৃ.) রায়বেরেলীর নয় বরং ‘বেরেলীর’অধিবাসী ছিলেন। তাকে বেরলভী বলা হয় বেরেলী এলাকার হিসেবে। বেরলভী জামাত তারই অনুসারী। (আবদুল মালেক)


[2] ২ গায়রুল্লাহর জন্য ‘সিজদায়ে তাহিয়্যা’ বা সম্মানের সেজদা হারাম হওয়ার বিষয়ে আহমদ রেযা খান সাহেবের স্বতন্ত্র পুস্তিকা রয়েছে। যার নাম الزبدة الزكية لتحريم سجود التحية কিন্তু এ পুস্তিকার কোনো প্রভাব মাযারপন্থী বেরলভীদের মাঝে পরিলক্ষিত হয় না।

.

[ মাসিক আলকাউসার || যিলকদ ১৪৩৭ || আগস্ট ২০১৬ ]


মাসিক আলকাউসার - The Monthly Al Kawsar



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে

৭১ এর যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস