হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (রা.)




হযরত মুয়াবিয়াকে তাকফীর করা যাবে কি? (দেখুন সম্পূর্ণ ছহীহ হাদীস ভিত্তিক উত্তর) •••••• হযরত আলী (র.) এর খিলাফতে রাশেদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ইসলামে রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাকারী ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া সম্পর্কে মুসলিম সমাজে ছাহাবাদের আমল থেকেই বিরোধ ছিল। কেউ তাকে অন্যান্য মুসলমানের মত একজন মুসলিম ও আর কেউ কেউ তাকে মুনাফিক (নামধারী মুসলিম) বলে মনে করতো। যেসব ছাহাবী তার সমালোচনা করতেন, তাদের মধ্যে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ছাহাবী হযরত আম্মার বিন ইয়াসির (র.) হযরত মুয়াবিয়াকে প্রকাশ্যে মুনাফিক বলতেন। বর্তমানে শিয়া মুসলমানদের সকলে হযরত মুয়াবিয়াকে মুনাফিক মনে করে। তবে সুন্নীরা উনার ব্যাপারে তিন ধরণের মনোভাব পোষণ করেন। একদল সুন্নী তাকে নাসেবী সর্দার ও মুনাফিক মনে করে। আরেকদল তাকে ক্ষমাযোগ্য ভুলকারী মনে করে। আর নাসেবীমনা সুন্নীরা তাকে প্রজ্ঞাবান ও মর্যাদাপূর্ণ ছাহাবী মনে করে। এ প্রবন্ধে আমরা জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ছাহাবী হযরত আম্মার বিন ইয়াসির (র.) কর্তৃক হযরত মুয়াবিয়াকে প্রকাশ্যে মুনাফিক বলে ঘোষণা দেবার তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করবো। হাদীস ও তারীখের কিতাবের তথ্যমতে, হযরত মুয়াবিয়া ছিলেন তলীক (মক্কা বিজয়ের দিন সাধারণ ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ইসলামে প্রবেশকারী) ছাহাবী। হযরত আলী (র.) এর খিলাফতে রাশেদার বিরুদ্ধে তার বিদ্রোহকালে যে কয়জন ছাহাবী তার পক্ষ নিয়ে সিফফীন যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন, তাদের মাঝে একজনও মুহাজির ও আনছারী ছাহাবী ছিলেন না। হযরত আম্মার বিন ইয়াসির (র.) ও আবু আইয়ুব আনসারীসহ (র.) মুহাজির ও আনছারী ছাহাবীদের অধিকাংশই খলীফা রাশেদ হযরত আলী (র.) এর সাথে ছিলেন। বাকীরা নিরপেক্ষ ছিলেন। যেমন মুহাজির ছাহাবী হযরত সা‘দ বিন আবু ওয়াক্কাস (র.) ও আনছারী ছাহাবী হযরত মুহাম্মদ বিন মাসলামা (র.)। হাদীস ও তারীখের কিতাবের তথ্যমতে, হযরত আম্মার বিন ইয়াসির (র.) ৩৭ হিজরীতে সিফফীন যুদ্ধে হযরত মুয়াবিয়ার লোকদের হাতে শাহাদত বরণ করেন। দেখুন ছহীহ দুটি বর্ণনা: عَنْ عِكْرِمَةَ ، قَالَ لِي ابْنُ عَبَّاسٍ وَلِابْنِهِ عَلِيٍّ: انْطَلِقَا إِلَى أَبِي سَعِيدٍ فَاسْمَعَا مِنْ حَدِيثِهِ. فَانْطَلَقْنَا فَإِذَا هُوَ فِي حَائِطٍ يُصْلِحُهُ ، فَأَخَذَ رِدَاءَهُ فَاحْتَبَى ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا حَتَّى أَتَى ذِكْرُ بِنَاءِ الْمَسْجِدِ ، فَقَالَ: كُنَّا نَحْمِلُ لَبِنَةً لَبِنَةً وَعَمَّارٌ لَبِنَتَيْنِ لَبِنَتَيْنِ ، فَرَآهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّم فَيَنْفُضُ التُّرَابَ عَنْهُ وَيَقُولُ: «وَيْحَ عَمَّارٍ تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ يَدْعُوهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ». قَالَ: يَقُولُ عَمَّارٌ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ الْفِتَنِ. أخرجه البخارى (3/1035 ، رقم 2657). অর্থ: তাবেয়ী ইকরমা বলেন, ইবনে আব্বাস (র.) আমাকে ও তাঁর ছেলে আলীকে বললেন, তোমরা আবু সাঈদের কাছে গিয়ে তাঁর কাছ থেকে হাদীছ শুনো। আমরা গেলাম। দেখলাম, তিনি একটি বাগান ঠিক করছেন। আমাদেরকে দেখে তিনি গায়ে চাদর মুড়িয়ে বসলেন। অতঃপর কথা শুরু করলেন। এক পর্যায়ে তিনি মসজিদের (মসজিদে নববী) আলোচনায় এলেন এবং বললেন, তখন আমরা সবাই একটি একটি করে ইট বহন করছিলাম। আর আম্মার (বিন ইয়াসির) বহন করছিলেন দুটি করে। নবীজি (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে দেখে তাঁর গায়ের উপর থেকে ধুলোবালি মুছে দিলেন এবং বললেন, “আম্মারের জন্য আফসোস! তাকে বাগী দল হত্যা করবে। সে তাদেরকে জান্নাতের দিকে ডাকবে, আর তারা তাকে জাহান্নামের দিকে ডাকবে।” আবু সাঈদ বললেন, আম্মার তখন বললেন, ‘আল্লাহর কাছে ফিতনাসমূহ থেকে আশ্রয়া গ্রহণ করছি।’ [ছহীহ বোখারী (২৬৫৭)]। টীকা : কেউকেউ এই হাদীসের শেষোক্ত বাক্য “সে তাদেরকে জান্নাতের দিকে ডাকবে আর তারা তাকে জাহান্নামের দিকে ডাকবে।” নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, এটি তাবেয়ী ইকরমার কথা, হাদীসের অংশ নয়। তবে এমন দাবির পক্ষে তাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই। তাছাড়া হাদীসটির বক্তব্যের ধরণ থেকেও তাদের এই দাবি সঠিক বলে মনে হচ্ছে না। ওই বাক্যটি হাদীসের অংশ না হয়ে তাবেয়ী ইকরমার কথা হলে ইমাম বোখারী নিশ্চয় তা উল্লেখ করতেন না। কারণ, সেটি একটি ভয়াবহ কথা (হযরত মুয়াবিয়াকে জাহান্নামের ডাকুক বানিয়ে দেওয়া)। আর উল্লেখ করলেও সেটি তিনি ইকরমার নাম ধরে তাঁর উক্তি হিসেবেই উল্লেখ করতেন। উল্লেখ্য, অলিমদের সর্বসম্মতিক্রমে হযরত আাম্মার বিন ইয়াসির (র.) ৩৭ হিজরীতে সিফফীন যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। দেখুন মুসনদে আহমদের ছহীহ বর্ণনা: عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ قَالَ إِنِّي لَأَسِيرُ مَعَ مُعَاوِيَةَ فِي مُنْصَرَفِهِ مِنْ صِفِّينَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ ، قَالَ: فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ: يَا أَبَتِ مَا سَمِعْتَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّم يَقُولُ لِعَمَّارٍ: «وَيْحَكَ يَا ابْنَ سُمَيَّةَ تَقْتُلُكَ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ؟». قَالَ فَقَالَ عَمْرٌو لِمُعَاوِيَةَ: أَلَا تَسْمَعُ مَا يَقُولُ هَذَا؟ فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: لَا تَزَالُ تَأْتِينَا بِهَنَةٍ ، أَنَحْنُ قَتَلْنَاهُ؟ إِنَّمَا قَتَلَهُ الَّذِينَ جَاءُوا بِهِ. أخرجه أحمد (رقم 6499) قال الشيخ شعيب الأرناؤوط: إسناده صحيح. অর্থ: আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস বলেন, সিফফীন (যুদ্ধ) থেকে ফেরার পথে আমি মুয়াবিয়া ও আমর ইবনুল আ‘সের মাঝখানে ছিলাম। তখন আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আ‘স (র.) তার পিতাকে জিজ্ঞেস করলেন, আব্বা! আপনি কি আম্মারকে উদ্দেশ্য করে রসূলুল্লাহ (স.) এর এই কথা বলতে শুনেননি, “হে সুমাইয়াপুত্র! তোমার জন্য আফসোস হয়। তোমাকে বাগী দল হত্যা করবে।” তখন আমর ইবনুল আ‘স মুয়াবিয়াকে বললেন, এ কি বলে শুনছো না? তখন মুয়াবিয়া বললেন, তুমি এখনো বাজে কথা বলা ছাড়তে পারলে না। উনাকে আমরা মেরেছি নাকি? উনাকেতো মেরেছে তারাই, যারা তাঁকে যুদ্ধে নিয়ে এসেছে।” [মুসনদে আহমদ (৬৪৯৯)। মুহাক্কিক শোয়াইব আরনাঊত হাদীসটির সনদ ছহীহ বলে জানিয়েছেন]। টীকা : ‘উনাকেতো মেরেছে তারাই, যারা তাঁকে যুদ্ধে নিয়ে এসেছে।’ হযরত মুয়াবিয়ার এমন দাবিটা মোটেই সত্য ছিল না। হযরত আম্মার (র.) নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই হযরত আলী (র.) এর সাথে থেকে বাগী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। মুসনদে আহমদে এসেছে: عن عبد الله بن سلمة- قال‏‏: رَأَيْتُ عَمَّارًا يَوْمَ صِفِّينَ ، شَيْخًا كَبِيرًا ، آدَمَ طُوَالاً ، آخِذَ الْحَرْبَةَ بِيَدِهِ ، وَيَدُهُ تَرْعَدُ ، فَقَالَ: "وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ ، لَقَدْ قَاتَلْتُ بِهَذِهِ الرَّايَةِ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّم ، ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ، وَهَذِهِ الرَّابِعَةُ ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ ، لَوْ ضَرَبُونَا حَتَّى يَبْلُغُوا بِنَا سَعَفَاتِ هَجَرَ ، لَعَرَفْتُ أَنَّ مُصْلِحِينَا عَلَى الْحَقِّ ، وَأَنَّهُمْ عَلَى الضَّلاَلَةِ". ‏أخرجه أحمد (18904). قال الهيثمي (243/7) رواه أحمد والطبراني ورجال أحمد رجال الصحيح غير عبد الله بن سلمة وهو ثقة. إلا أن الطبراني قال‏:‏ لقد قاتلتُ صاحب هذه مع رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّم ثلاث مرات وهذه الرابعة‏.‏ অর্থ: তাবেয়ী আবদুল্লাহ বিন সালামা বলেন, আমি সিফফীনের যুদ্ধের দিন হযরত আম্মার বিন ইয়াসিরকে একজন খুব বৃদ্ধ, বাদামী বর্ণ ও দীর্ঘকায় ব্যক্তি হিসেবে দেখেছি। তার হাতে বর্শা ছিল এবং হাতটি কাঁপছিল। ওই সময় তিনি বললেন, “যার হাতে আমার প্রাণ, তার কসম! আমি এ পতাকা নিয়ে রসূলুল্লাহ (স.) এর সাথে (ওদের বিরুদ্ধে) তিনবার যুদ্ধ করেছি। আর এটি চতুর্থবার। যার হাতে আমার প্রাণ, তার কসম! ওরা যদি আমাদের উপর আঘাত করে দূরের খেজুর বাগানেও নিয়ে যায়, তাহলেও আমি বিশ^াস করবে যে আমাদের মুছলিহ (হযরত আলী) হকের উপর এবং তারা পথভ্রষ্টতার উপর।” [ছহীহ সনদে মুসনদে আহমদ (১৮৯০৪)]। - এবার আসুন হযরত আম্মার বিন ইয়াসির (র.) কর্তৃক হযরত মুয়াবিয়াকে প্রকাশ্যে মুনাফিক আখ্যায়িত করার ছহীহ বর্ণনায়: عَنْ سَعْدِ بْنِ حُذَيْفَةَ قَالَ: قَالَ عَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ يَوْمَ صِفِّينَ، وَذَكَرَ أَمْرَهُمْ وَأَمْرَ الصُّلْحِ، فَقَالَ: وَاللَّهِ مَا أَسْلَمُوا، وَلَكِنِ اسْتَسْلَمُوا وَأَسَرُّوا الْكُفْرَ، فَلَمَّا رَأَوْا عَلَيْهِ أَعْوَانًا أَظْهَرُوهُ‏.‏ أخرجه الطبراني في الكبير كما فى مجمع الزوائد (1/ 308 ، رقم 439). وأخرجه ابنُ أبي خيثمة في تاريخه (2/ 208). وسنده صحيح على شرط الشيخين إلا سعد بن حذيفة بن اليمان وهو تابعي كبير ثقة ، ذكره ابن حبان فى الثقات. অর্থ: তাবেয়ী হযরত সা‘দ বিন হুযাইফা বলেন, সিফফীনের যুদ্ধের দিন আম্মার বিন ইয়াসির তাদের বিষয় ও প্রস্তাবিত সন্ধি নিয়ে আলোচনাকালে বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! তারা ইসলাম গ্রহণ করেনি। বরং আত্মসমর্পণ করেছিল এবং ভিতরে কুফর (আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলের অবাধ্যতা) লুকিয়ে রেখেছিল। অতঃপর যখন তারা সেটির প্রতি কিছু সাহায্যকারী দেখতে পেল, তখন তা (কুফর তথা আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলের অবাধ্যতা) প্রকাশ করে দিল।’ [তবরানী কবীর সূত্রে মজমাউয যাওয়ায়েদ (৪৩৯) ও তারীখে ইবনে আবু খাইসামাহ (২/২০৮)। সনদের মান: ছহীহ]। - عَنْ قَيْسٍ ، قَالَ : قُلْتُ لِعَمَّارٍ : أَرَأَيْتُمْ صَنِيعَكُمْ هَذَا الَّذِي صَنَعْتُمْ فِي أَمْرِ عَلِيٍّ ، أَرَأْيًا رَأَيْتُمُوهُ أَوْ شَيْئًا عَهِدَهُ إِلَيْكُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّم؟ فَقَالَ : مَا عَهِدَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّم شَيْئًا لَمْ يَعْهَدْهُ إِلَى النَّاسِ كَافَّةً ، وَلَكِنْ حُذَيْفَةُ أَخْبَرَنِي عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّم قَالَ: «فِي أَصْحَابِي اثْنَا عَشَرَ مُنَافِقًا لَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ ، ثَمَانِيَةٌ مِنْهُمْ تَكْفِيكَهُمُ الدُّبَيْلَةُ». وَأَرْبَعَةٌ لَمْ أَحْفَظْ مَا قَالَ شُعْبَةُ فِيهِمْ. أخرجه مسلم (4/2143 ، رقم 2779). অর্থ: তাবেয়ী হযরত কয়েস বলেন, আমি হযরত আম্মারকে বললাম, আপনারা হযরত আলীর পক্ষ নিয়ে যে কাজ (যুদ্ধ) করছেন, তা কি আপনাদের নিজস্ব চিন্তা থেকে করছেন নাকি তা রসূলুল্লাহ (স.) এর পথনির্দেশকৃত কোনো বিষয়? তিনি বললেন, সাধারণ মানুষ বাদ দিয়ে রসূলুল্লাহ (স.) আমাদেরকে আলাদা কোনো পথনির্দেশ দেননি। তবে আমাকে হুযাইফা (বিশিষ্ট মুনাফিকদের নাম জানা ছাহাবী) জানিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “আমার ছাহাবীদের মাঝে বারোজন মুনাফিক আছে। সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ না করা পর্যন্ত (অর্থাৎ, কস্মিণকালেও) তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তাদের আটজনের জন্য দুবাইলাই যথেষ্ট হবে (অর্থাৎ, তারা দুবাইলা তথা বুক ও গর্দান দুর্বলকারী এক ধরণের ফোঁড়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে)।” নীচের একজন বর্ণনাকারী বলেন, ‘বাকী চারজনের ব্যাপারে বর্ণনকারী শু‘বা কি বলেছেন, তা আমার স্মরণ নেই।’ [ছহীহ মুসলিম (২৭৭৯)]। সম্পূরক বর্ণনা : عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كُنْتُ آخِذًا بِخِطَامِ نَاقَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَقُودُ بِهِ، وَعَمَّارٌ يَسُوقُ النَّاقَةَ -أَوْ أَنَا: أَسُوقُهُ، وَعَمَّارٌ يَقُودُهُ -حَتَّى إِذَا كُنَّا بِالْعَقَبَةِ فَإِذَا أَنَا بِاثْنَيْ عَشَرَ رَاكِبًا قَدِ اعْتَرَضُوهُ فِيهَا، قَالَ: فَأَنْبَهْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِهِمْ فَصَرَخَ بِهِمْ فَوَلَّوْا مُدْبِرِينَ، فَقَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "هَلْ عَرَفْتُمُ الْقَوْمَ؟ قُلْنَا: لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَدْ كَانُوا مُتَلَثِّمِينَ، وَلَكُنَّا قَدْ عَرَفْنَا الرِّكَّابَ. قَالَ: "هَؤُلَاءِ الْمُنَافِقُونَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَهَلْ تَدْرُونَ مَا أَرَادُوا؟ " قُلْنَا: لَا. قَالَ: "أَرَادُوا أَنْ يَزْحَمُوا رَسُولَ اللَّهِ فِي الْعَقَبَةِ، فَيُلْقُوهُ مِنْهَا". قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَوَ لَا تَبْعَثُ إِلَى عَشَائِرِهِمْ حَتَّى يَبْعَثَ إِلَيْكَ كُلُّ قَوْمٍ بِرَأْسِ صَاحِبِهِمْ؟ قَالَ: "لَا أَكْرَهُ أَنْ تَتَحَدَّثَ الْعَرَبُ بَيْنَهَا أَنَّ مُحَمَّدًا قَاتَلَ بِقَوْمٍ حَتَّى إِذَا أَظْهَرَهُ اللَّهُ بِهِمْ أَقْبَلَ عَلَيْهِمْ يَقْتُلُهُمْ"، ثُمَّ قَالَ: "اللَّهُمَّ ارْمِهِمْ بِالدُّبَيْلَةِ". قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَا الدُّبَيْلَةُ؟ قَالَ: "شِهَابٌ مِنْ نَارٍ يَقَعُ عَلَى نِيَاطِ قَلْبِ أَحَدِهِمْ فَيَهْلِكُ". أخرجه البيقهي فى دلائل النبوة (5/261). অর্থ: হযরত হুযাইফা (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (তাবুক অভিযান থেকে ফেরার পথে) আমি নবীজি (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উটনীর লাগাম ধরে নিয়ে যাচ্ছিলাম এবং আম্মার (বিন ইয়াসির) পিছন থেকে হাঁকিয়ে নিচ্ছিলেন। অথবা আম্মার লাগাম ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং আমি পিছন থেকে হাঁকিয়ে নিচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে আমরা যখন আকাবায় (গিরিপথে) পৌঁছুলাম, তখন দেখলাম, বারোজন লোক তাঁকে (নবীজিকে) ঘিরে চললো। তখন আমি নবীজিকে সতর্ক করলাম। তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে আওয়াজ দিলেন। এতে তারা পিছনে চলে গেল। পরে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, “তোমরা কি ওদেরকে চিনতে পেরেছো?” আমরা বললাম, না ইয়া রসূলল্লাহ! তারাতো মুখোশ পরিহিত ছিল। তবে আমরা বাহনগুলোকে চিনেছি। বললেন, “এরা কেয়ামত পর্যন্তের জন্য মুনাফিক। তো ওরা কি চেয়েছিল, তা কি জেনেছো?” আমরা বললাম, না। বললেন, “আকাবায় তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে ভিড় সৃষ্টি করে আল্লাহর রসূলকে ফেলে দিতে (ক্ষতি করতে) চেয়েছিল।” আমরা বললাম, আপনি কি তাদের গোত্রের কাছে এ মর্মে নির্দেশ পাঠাতে পারেন না যে, প্রত্যেক গোত্র তাদের এসব লোকদের মাথা নিয়ে হাজির হবে? তিনি বললেন, “না। আমি এটা পছন্দ করি না যে, আরবরা পরস্পরে এ কথা বলাবলি করবে, মুহাম্মদ একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন, অতঃপর আল্লাহ যখন তাঁকে তাদের উপর বিজয় দান করলেন, তখন তিনি তাদেরকে হত্যা করতে শুরু করলেন।” অতঃপর তিনি বললেন, “ইয়া আল্লাহ! ওদেরকে দুবাইলা দিয়ে মারো।” আমরা বললাম, ইয়া রসূলল্লাহ! দুবাইলা কি? বললেন, “হৃদপিন্ড থেকে বের হওয়া একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ (ভয়াবহ ফোঁড়া), যাতে তারা মারা যাবে।” [বাইহাকীর দালায়েলুন নুবুওয়াহ্ (৫/২৬১)। টীকা : এসব হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়, হযরত মুয়াবিয়া মুনাফিক ছিলেন। জঙ্গে সিফফীনে উনার নেতৃত্বাধীন বাগী দলের হাতে নিহত হওয়া হযরত আম্মার বিন ইয়াসির (র.) হযরত হুযাইফা (র.) এর কাছ থেকে উনার হাকীকত জেনেই বৃদ্ধ বয়সেও হযরত আলী (র.) এর পক্ষে লড়াই করেছিলেন। উল্লেখ্য, মু‘জমে তবরানী কবীওে (১৯/৩৫৯) হযরত মুয়াবিয়ার অনুসারী আবু বুরদা আশআরী থেকে বর্ণিত তথ্য মতে, হযরত মুয়াবিয়া ফোঁড়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। মারা যাওয়ার আগে ফোঁড়ার ব্যাথায় দাঁড়াতে না পেওে তিনি বসে খুতবা দিতেন [ইবনুল আছীরের আল-কামিল (৪/৫৫৫)]। ইবনে সা‘দ ও আল্লামা যাহাবীও উনার ফোঁড়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। দেখুন: عن أبي بردة قال: دخلت على معاوية حين أصابته قرحته ، فقال: "هَلُمَّ يَا ابْنَ أخِيْ" ، فنظرتُ فإذا هي قد سبرت. يعني قرحته. فقلت: ليس عليك بأس ، إذ دخل ابنه يزيد فقال له معاوية: "إنْ وُلِّيتَ فَاستوصِ بهَذا ، فَإنَّ أبَاه كَان أخاً لِي غَيرَ أنِّي قَدْ رأيتُ فَي القتَال مَا لَمْ يَرَ". [الطبقات الكبرى – محمد بن سعد – ج ٤ – ص ١١٢، وسير أعلام النبلاء ج ٢ – ص ٤٠١]. অর্থ: আবু বুরদা (হযরত আবু মূসা আশআরীর ছেলে) বলেন, “হযরত মুয়াবিয়ার দেহে যখন ফোঁড়া দেখা দিয়েছিল, তখন আমি তাঁর কাছে গেলাম। তিনি আমাকে বললেন, ‘ধামার ভাতিজা কাছে এসো।’ দেখলাম, তাতে (ফোঁড়ায়) পরীক্ষা কওে ওষুধ দেয়া হয়েছে। আমি বললাম, আপনার কোনো অসুবিধা নেই। এসময় হঠাৎ তার ছেলে এজিদ এলো। তখন মুয়াবিয়া তাকে বললেন, ‘তুমি ক্ষমতায় এলে এর প্রতি কল্যাণকামী হয়ো। কারণ, তার পিতা আমার ভাই ছিল। তবে যুদ্ধের ব্যাপারে তার সাথে আমি একমত হতে পারিনি (হযরত আবু মূসা আশআরী হযরত আলীর পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন)।’ [তবকাতে ইবনে সা‘দ (৪/১১২) ও সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (২/৪০১)]। - জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ছাহাবী হযরত আম্মার বিন ইয়াসির (র.) এর অনুসরণে যেসব মুসলমান হযরত মুয়াবিয়াকে মুনাফিক মনে করে থাকেন, তারা ইমাম ত্বহাবী ও ইমাম বাইহাকীর বর্ণনা করা এই হাদীসটিকেও প্রমাণ হিসেবে পেশ করে থাকেন। عَنْ عَبَايَةَ : قَالَ ذُكِرَ قَتْلُ كَعْبِ بْنِ الْأَشْرَفِ عِنْدَ مُعَاوِيَةَ فَقَالَ ابْنُ يَامِينَ : كَانَ قَتْلُهُ غَدْرًا. فَقَالَ مُحَمَّدُ بْنُ مَسْلَمَةَ : يَا مُعَاوِيَةُ أَيُغْدَرُ عِنْدَكَ رَسُولُ اللَّهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَلَا تُنْكِرُ ، وَاللَّهِ لَا يُظِلُّنِي وَإِيَّاكَ سَقْفُ بَيْتٍ أَبَدًا وَلَا يَحْلُو لِي دَمُ هَذَا إلَّا قَتَلْتُهُ. أخرجه الطحاوي (رقم 175) ، والبيهقي فى دلائل النبوة (ج 3 ، ص 193). অর্থ: হযরত আবায়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “মুয়াবিয়ার দরবারে কা‘ব বিন আশরফের হত্যা নিয়ে আলোচনা হলো। এতে বিনইয়ামিন (ইয়াহুদী) বলে উঠলো, ‘তাকে বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছিল।’ তখন মুহাম্মদ বিন মাসলামা (র.) বললেন, ‘হে মুয়াবিয়া! তোমার দরবারে আল্লাহর রসুলকে (স.) বিশ্বাসঘাতক বলা হচ্ছে, অথচ তুমি কোন প্রতিবাদ করছ না! আল্লাহর কসম! কোনো ঘরের ছাদের নীচে তোমার সাথে আমার আর কখনো বসা হবে না (অর্থাৎ, আজ থেকে আমি তোমাকে এড়িয়ে চলবো)। আর সুযোগ পেলেই আমি ওকে হত্যা করে ছাড়বো।” [তহাবী (১৭৫) ও বাইহাকীর দালায়েলুন নুবুওয়াহ (৩/১৯৩)]। উল্লেখ্য, কা‘ব বিন আশরফ ছিল নবী (স.) এর যুগের একজন ইয়াহুদী এবং প্রকাশ্য ইসলাম বিদ্বেষী ও ষড়যন্ত্রকারী। সে মদীনা সনদ লঙ্ঘন করে অশ্লীল ও দাম্ভিকতাপূর্ণ ভাষায় রসূলুল্লাহ (স.) ও মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে দুর্নাম রটাতো। তৃতীয় হিজরীতে রসূলুল্লাহ (স.) ছাহাবীগণকে তাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেন। তখন বিশিষ্ট আনসারী ছাহাবী মুহাম্মদ বিন মাসলামা (র.) এক রাত কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে কা‘ব বিন আশরফের বাড়িতে যায় এবং প্রয়োজন আছে বলে তাকে ডেকে এনে তার আসল ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন। [ছহীহ বোখারী (৩৮১১) ও ছহীহ মুসলিম (৩৮১১)। তবে বিশ্বাসঘাতক ইয়াহুদীরা এ ঘটনাকে বরাবরই হযরত মুহাম্মদ বিন মাসলামা (র.) এর বিশ্বাসঘাতকতা আখ্যা দিয়ে এর জন্য আল্লাহর রসূলকে (র.) দায়ী করে আসছিল। আর এখানে দেখা যাচ্ছে, হযরত মুয়াবিয়া ইয়াহুদীদের এমন অপবাদের কোনো প্রতিবাদ করলেন না। এখানে বাংলা কবির ভাষায় বলা যায়, রসূলের অপমানে যদি না কাঁদে তোর মন, মুসলিম নয় মুনাফিক তুই রসূলের দুশমন। - প্রসঙ্গত, যেসব সুন্নী মুসলমান বাগী দলের নেতা হযরত মুয়াবিয়াকে মুমিন হিসেবে প্রমাণ করার জন্য সূরা হুজুরাতের ৯ নম্বর আয়াত দ্বারা দলীল দেন, তারা সম্ভবত আয়াতটির শানে নুজুল জানেন না। কারণ, এই আয়াতে বাগী মুমিন বলা হয়েছে মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ বিন উবাইয়ের সাঙ্গ-পাঙ্গদেরকে। দেখুন ছহীহ বোখারী ও ছহীহ মুসলিমের বর্ণনা: عَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه ، قَالَ : قِيلَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّم : لَوْ أَتَيْتَ عَبْدَ اللهِ بْنَ أُبَيٍّ ، قَالَ : فَانْطَلَقَ إِلَيْهِ ، وَرَكِبَ حِمَارًا ، وَانْطَلَقَ الْمُسْلِمُونَ ، وَهِيَ أَرْضٌ سَبِخَةٌ ، فَلَمَّا أَتَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّم ، قَالَ: إِلَيْكَ عَنِّي ، فَوَاللهِ ، لَقَدْ آذَانِي نَتْنُ حِمَارِكَ. قَالَ: فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ: وَاللهِ ، لَحِمَارُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّم أَطْيَبُ رِيحًا مِنْكَ ، قَالَ: فَغَضِبَ لِعَبْدِ اللهِ رَجُلٌ مِنْ قَوْمِهِ ، قَالَ: فَغَضِبَ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا أَصْحَابُهُ ، قَالَ: فَكَانَ بَيْنَهُمْ ضَرْبٌ بِالْجَرِيدِ وَبِالأَيْدِي وَبِالنِّعَالِ ، قَالَ: فَبَلَغَنَا أَنَّهَا نَزَلَتْ فِيهِمْ: ﴿وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا﴾. أخرجه البخارى (رقم 2545) ، ومسلم (رقم 1799). অর্থ: হযরত আনাস (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজিকে (স.) বলা হলো, আপনি যদি আবদুল্লাহ বিন উবাইয়ের কাছে একটু যেতেন। তখন তিনি একটি গাধায় সওয়ার হয়ে তার কাছে গেলেন এবং মুসলমানরাও সাথে গেল। সে যে স্থানটিতে ছিল, সেটি ছিল জলাভূমি/অনাবাদী ভূমি। নবীজি (স.) তার কাছে গেলে সে বললো, একটু দূরে যান। আল্লাহর কসম! আপনার গাধার দুর্গন্ধ আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। তখন আনছারী এক লোক বললো, আল্লাহর কসম! নবীজির (স.) গাধার গন্ধ তোমার নিজের গন্ধের চেয়ে অনেক উত্তম। তখন আবদুল্লাহর পক্ষের এক লোক রাগ দেখালো। ফলে উভয় পক্ষের লোকজন ক্ষুব্ধ হলো। অতঃপর উভয় পক্ষের মাঝে খেজুরের ডাল, জুতা ও হাতে মারামারি হল। পরে আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছলো যে, তাদের ব্যাপারেই এই আয়াতটি নাজিল হলো “আর মুমিনদের দুটি দল যদি মারামারিতে লিপ্ত হয়, তাহলে তাদের উভয়ের মাঝে সমঝোতা করে দাও। তারপরও যদি তাদের এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপর সীমালঙ্ঘন بغاوت করে, তাহলে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী পক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করো যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে।” । [ছহীহ বোখারী (২৫৪৫) ও ছহীহ মুসলিম (১৭৯৯)]। টীকা : এখানে দেখা যাচ্ছে, মহান আল্লাহ উরফ বা প্রথা (সমাজের সাধারণ লোকদের ধারণা ও আচরণ) মতে মুমিন-মুনাফিক উভয় দলকে শুধু মুসলিম নয়; মুমিন বলেই আখ্যায়িত করলেন। অতএব, এই আয়াত দ্বারা বাগী দলের নেতা হযরত মুয়াবিয়াকে প্রকৃত মুমিন হিসেবে প্রমাণ করার সুযোগ নেই। তবে তিনি ও আবদুল্লাহ বিন উবাইসহ মুনাফিক হিসেবে আখ্যায়িত সকল মুসলমান সামাজিক প্রথা মতে মুসলিম ও মুমিন। ছহীহ বোখারী (১৩৬৬) ও ছহীহ মুসলিমের (২৭৭৪) বর্ণনা মতে, রসূলুল্লাহ (স.) আবদুল্লাহ বিন উবাইয়ের নামাযে জানাযায় ইমামতি করেন এবং তাকে বকী গোরস্থানে দাফন করেন। তবে এ ঘটনার পর মহান আল্লাহ সূরা তাওবার ৮৪ নম্বর আয়াত নাজিল করে নবীজিকে (স.) মুনাফিক মুসলমানদের জানাযায় অংশ নিতে নিষেধ করেন। এরপর থেকে তিনি কোনো ফাসিক বা মুনাফিক মুসলমান মারা গেলে নিজে জানাযায় যেতেন না। বরং মৃতব্যক্তির স্বজন ও প্রতিবেশীদেরকে জানাযা পড়ার নির্দেশ দিতেন। -

 কে এই মুয়াবিয়া এবং তিনি কেন এত বিতর্কিত?

(সঠিক তথ্য অনুসন্ধান কারীদের জন্য লিখিত)

*****

ইসলাম ও এলিট শ্রেণী مترفون কিংবা ঈমান ও কুফর-নিফাকের দ্বন্দ্ব চিরন্তন।  হিজরতের নবম সাল। গ্রীষ্মকাল। ফসল কাটার সময়। তপ্ত মরুভূমির দেশ। দূরের সফর যারপর নেই কষ্টকর। মহান আল্লাহ মুমিন ও মুনাফিকদের পার্থক্য নিরুপণে সর্বশেষ ঘটনা ঘটাতে চাইলেন। মুতার যুদ্ধে কিছুটা বিজয় লাভের গৌরব থেকে রোমান সম্রাট মুসলমানদের নির্মূলে চূড়ান্ত যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন। মদীনা পানে পাঠানোর জন্য চল্লিশ হাজার সৈন্যের একটি বিশাল বাহিনী প্রস্তুত করলেন। তাদের সাথে যোগ দিতে বললেন লাখম ও জুযামের মত খ্রীষ্টান আরব গোত্রগুলোকে। নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র কাছে ভয়াবহ এ খবর এসে পৌঁছলে তিনি কালবিলম্ব না করে নফীরে আমের (যুদ্ধ সক্ষম সকলের বের হবার) নির্দেশ দিলেন। যুদ্ধের জন্য #তাবুকের দিকে বের হওয়ার সময় হযরত ফাতেমার অসুস্থতার কারণে হযরত আলীকে মদীনায় থেকে যেতে বললেন। তখন কান্নাভেজা কন্ঠে তিনি বললেন, আপনি কি আমাকে নারী-শিশুদের মাঝে রেখে যুদ্ধে যাবেন? নবীজি ছঃ বললেন, “তুমি কি আমার জন্য সেরকম হতে পেরে সন্তুষ্ট না, যেরকম হারূন মূসার জন্য হয়েছিলেন।” [ছহীহ বোখারী (৩৫০৩)]। হযরত আলী সন্তুষ্ট হলেন। নবীজির ছঃ নির্দেশ মত কিছু মুনাফিকসহ মুমিনদের সকলে যুদ্ধে বের হয়ে পড়েন। অবশিষ্ট মুনাফিকদের দেখাদেখি শুধুমাত্র অলসতাবশত (বের হবো বের হবো চিন্তা করে) তিনজন মুমিন ছাহাবীও তাবুকের ওই অভিযানে বের হননি। তারা হলেন, কা’ব বিন মালিক, মুরারা ইবনুর রবী ও হিলাল বিন উমাইয়া (রদিয়াল্লাহু আনহুম)। অন্যদিকে নবীজির ছঃ নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীর শামের দিকে বিশাল বাহিনী নিয়ে বের হবার খবর শোনার পর রোমান সম্রাটের বাহিনী ভয় পেয়ে যায়। ভয় পায় আরব খ্রীষ্টানেরাও। বর্তমানে জর্দানের বলকা নামক স্থানে তারা থেকে যায়। অথচ মুসলিম বাহিনী শামে ঢুকে তাবুকে অবস্থান গ্রহণ করেন। নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নিশ্চিত হলেন যে, রোমান বাহিনী মদীনাতো দূরের কথা, নিজ গৃহেও মুসলমানদের মোকাবিলা করার সাহস হারিয়ে ফেলেছে, তখন তিনি মদীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে গেলেন । তবে পথে একটি গিঁরিতে মুসলিম বাহিনীতে থাকা মুনাফিকদের মধ্যকার ১২জন বিশিষ্ট মুনাফিক মুখোশ পরে রাতের আঁধারে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র উপর পিছন থেকে গুপ্তহামলা করে তাঁকে শেষ করে দিয়ে মুসলিম সমাজে ফাসাদ সৃষ্টির চেষ্টা করে। কিন্তু নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টি টের পাবার সাথে সাথে তাঁর উটের পিছনে থাকা হযরত হুযাইফাকে বললেন, গিয়ে তাদেরকে তাড়া করো। তিনি গিয়ে মুনাফিকদের সওয়ারীর মুখে আঘাত করলেন। এতে তারা সরে যায়। অন্যদিকে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সামনে থেকে তাঁর উটের লাগাম ধরে ছিলেন হযরত আম্মার বিন ইয়াসির। পরে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত হুযাইফাকে এ  ১২জন বিশিষ্ট মুনাফিকের নাম বলে দেন। দেখুন ইমাম বাইহকীর দলায়েলনু নুবুওয়াহ, মুসনদে আহমদ ও ছহীহ মুসলিমসহ বিভিন্ন কিতাবের অকাট্য ও সুস্পষ্ট ছহীহ হাদীছঃ

أخبرنا أبو الحسن علي بن أحمد بن عبدان أخبرنا أحمد بن عبيد الصفار حدثنا أبو عمرو الحراني حدثنا أبو الأصبع عبد العزيز بن يحيى الحراني حدثنا محمد بن سلمة عن محمد بن إسحاق عن الأعمش عن عمرو بن مرة عن أبي البختري عن حذيفة بن اليمان قال: كنت آخذ بخطام ناقة رسول الله صلى الله عليه وسلم أقود به وعمار يسوقه أو أنا أسوقه وعمار يقوده حتى إذا كنا بالعقبة فإذا أنا باثني عشر راكباً قد اعترضوه فيها. قال: فأنبهت رسول الله صلى الله عليه وسلم بهم فصرخ بهم ، فولوا مدبرين. فقال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم: «هل عرفتم القوم؟». قلنا: لا يا رسول الله كانوا متلثمين ولكنا قد عرفنا الركاب. قال: «هؤلاء المنافقون إلى يوم القيامة ، وهل تدرون ما أرادوا؟». قلنا: لا. قال: «أرادوا أن يزحموا رسول الله في العقبة فيلقوه منها». قلنا: يا رسول الله أو لا تبعث إلى عشائرهم حتى يبعث إليك كل قوم برأس صاحبهم؟ قال: «لا ، أكره أن تحدث العرب بينها أن محمداً قاتل بقوم حتى إذا أظهره الله بهم أقبل عليهم يقتلهم». ثم قال: «اللهم ارمهم بالدبيلة». قلنا يا رسول الله وما الدبيلة؟ قال: «شهاب من نار يقع على نياط قلب أحدهم فيهلك». أخرجه البيقهي فى دلائل النبوة (5/261).

অর্থঃ হযরত হুযাইফা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (তাবুক থেকে ফেরার পথে) আমি নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র উটনীর লাগাম ধরে নিয়ে যাচ্ছিলাম এবং আম্মার পিছন থেকে হাঁকিয়ে নিচ্ছিলেন। অথবা আম্মার লাগাম ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং আমি পিছন থেকে হাঁকিয়ে নিচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে আমরা যখন আকাবায় (গিরিপথে) পৌঁছুলাম, তখন দেখলাম, ১২ জন লোক তাঁকে (নবীজিকে) ঘিরে চললো। তখন আমি নবীজিকে সতর্ক করলাম। তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে আওয়াজ দিলেন। এতে তারা পিছনে চলে গেল। পরে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের (উভয়কে) বললেন, “তোমরা কি ওদেরকে চিনতে পেরেছো?” আমরা বললাম, না ইয়া রসূলল্লাহ! তারাতো মুখোশ পরিহিত ছিল। তবে আমরা বাহনগুলোকে চিনেছি। বললেন, “এরা কেয়ামত পযর্ন্তের মুনাফিক। তো ওরা কি চেয়েছে, তা কি জেনেছো?” আমরা বললাম, না। বললেন, “আকাবায় তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে ভিড় সৃষ্টি করে তাতে আল্লাহর রসূলের ক্ষতি করতে চেয়েছিল।” আমরা বললাম, আপনি কি তাদের গোত্রের কাছে এ মর্মে নির্দেশ পাঠাতে পারেন না যে, প্রত্যেক গোত্র তাদের এসব দুরাত্মাদের মাথা নিয়ে হাজির হবে? তিনি বললেন, “না। আমি এটা অপছন্দ করি যে, আরবরা পরস্পরে এ কথা বলাবলি করবে, মুহাম্মদ একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করলেন। অতঃপর আল্লাহ যখন তাঁকে তাদের উপর বিজয় দান করলেন, তখন তিনি তাদেরকে হত্যা করতে শুরু করলেন।” অতঃপর তিনি বললেন, “ইয়া আল্লাহ, ওদেরকে দুবাইলা দ্বারা মারো।” আমরা বললাম, ইয়া রসূলল্লাহ! দুবাইলা কি? বললেন, “হৃদপিন্ড থেকে বের হওয়া একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ (ভয়াবহ ফোঁড়া), যাতে তারা মারা যাবে।” [বাইহাকীর দালায়েলুন নুবুওয়াহ্ (৫/২৬১)।

-

এই ঘটনাটি ছহীহ মুসলিমে এসেছে অন্য শব্দেঃ

عن أبى الطفيل قال: كان بين رجل من أهل العقبة وبين حذيفة بعض ما يكون بين الناس. فقال: أنشدك بالله! كم كان أصحاب العقبة؟ قال فقال له القوم: أخبره إذ سألك. قال: كنا نخبر أنهم أربعة عشر. فإن كنت منهم فقد كان القوم خمسة عشر. وأشهد بالله أن اثني عشر منهم حرب لله ولرسوله في الحياة الدنيا ويوم يقوم الأشهاد. وعذر ثلاثة. قالوا: ما سمعنا منادي رسول الله صلى الله عليه وسلم ولا علمنا بما أراد القوم. وقد كان في حرة فمشى فقال "إن الماء قليل. فلا يسبقني إليه أحد" فوجد قوما قد سبقوه. فلعنهم يومئذ. أخرجه مسلم (4/2143 ، رقم 2779).

-

এবার আসুন দালায়েলুন নুবওয়াহর পরবর্তী বর্ণনায়ঃ

وأخبرنا محمد بن عبد الله الحافظ قال حدثنا أبو الفضل بن إبراهيم قال حدثنا أحمد بن سلمة قال حدثنا محمد بن بشار حدثنا محمد بن جعفر حدثنا شعبة قال سمعت قتادة يحدث عن أبي نضرة عن قيس بن عباد قال: قلنا لعمار بن ياسر أرأيت قتالكم هذا أرأياً رأيتموه؟ فإن الرأي يخطىء ويصيب أم عهداً عهده إليكم رسول الله؟ فقال: ما عهد إلينا رسول الله صلى الله عليه وسلم شيئاً لم يعهده في الناس كافةً وقد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن في أمتي قال شعبة وأحسبه قال حدثني حذيفة أنه قال: «إن في أمتي اثنا عشر منافقاً لا يدخلون الجنة ولا يجدون ريحها حتى يلج الجمل في سم الخياط ، ثمانية منهم تكفيهم الدبيلة سراج من النار تظهر بين أكتافهم حتى تنجم من صدورهم». أخرجها البيقهي فى دلائل النبوة (5/261).

অর্থঃ তাবেয়ী কয়েস বিন আব্বাদ বলেন, আমি হযরত আম্মারকে বললাম, আপনারা (হযরত আলীর পক্ষ নিয়ে) যে কিতাল/যুদ্ধ করছেন, তা কি আপনাদের নিজস্ব মতামত থেকে করছেন নাকি তা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর পথনির্দেশকৃত কোনো বিষয়? কারণ, মতামততো ভুল ও শুদ্ধ উভয়টা হতে পারে। তিনি বললেন, সাধারণ মানুষ বাদ দিয়ে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বিশেষ কোনো পথনির্দেশ দেননি। তবে হুযাইফা (তিনি মুনাফিকদের নাম জানা বিখ্যাত মক্কী-মাদানী ছাহাবী) আমাকে জানিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মতের মাঝে ১২জন বিশিষ্ট মুনাফিক আছে। সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ না করা পর্যন্ত (অর্থাৎ, কস্মিণকালেও) তারা জান্নাতে প্রবেশ ও জান্নাতের সুঘ্রান লাভ করতে পারবে না। তাদের আটজন মরবে #দুবাইলায় (একটি দুরারোগ্য ফোঁড়া) আক্রান্ত হয়ে। এটি তাঁদের কাঁধে দেখা দিয়ে বক্ষেও প্রকাশ পাবে।” [বাইহাকীর দালায়েলুন নুবুওয়াহ্ (৫/২৬১)।

-


এই বর্ণনাটি ছহীহ মুসলিমেও এসেছে প্রায় একই শব্দেঃ

عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَبِي نَضْرَةَ عَنْ قَيْسٍ قَالَ: قُلْتُ لِعَمَّارٍ أَرَأَيْتُمْ صَنِيعَكُمْ هَذَا الَّذِي صَنَعْتُمْ فِي أَمْرِ عَلِيٍّ أَرَأْيًا رَأَيْتُمُوهُ أَوْ شَيْئًا عَهِدَهُ إِلَيْكُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ: مَا عَهِدَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا لَمْ يَعْهَدْهُ إِلَى النَّاسِ كَافَّةً ، وَلَكِنْ حُذَيْفَةُ أَخْبَرَنِي عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «فِي أَصْحَابِي اثْنَا عَشَرَ مُنَافِقًا لَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ ، ثَمَانِيَةٌ مِنْهُمْ تَكْفِيكَهُمُ الدُّبَيْلَةُ». وَأَرْبَعَةٌ لَمْ أَحْفَظْ مَا قَالَ شُعْبَةُ فِيهِمْ. أخرجه مسلم (4/2143 ، رقم 2779) ، وأحمد (رقم 18905). ولفظ أحمد: «فِي أُمَّتِي اثْنَا عَشَرَ مُنَافِقًا ، لاَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ ، وَلاَ يَجِدُونَ رِيحَهَا ، حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ ، ثَمَانِيَةٌ مِنْهُمْ تَكْفِيكَهُمُ الدُّبَيْلَةُ ، سِرَاجٌ مِنَ النَّارِ يَظْهَرُ فِي أَكْتَافِهِمْ ، حَتَّى يَنْجُمَ مِنْ صُدُورِهِمْ». تعليق شعيب الأرنؤوط: إسناده صحيح على شرط مسلم.


অর্থঃ তাবেয়ী কয়েস বিন উবাদ বলেন, আমি হযরত আম্মারকে বললাম, আপনারা হযরত আলীর পক্ষ নিয়ে যে কাজ (যুদ্ধ) করছেন, তা কি আপনাদের নিজস্ব চিন্তা থেকে করছেন নাকি তা রসূলুল্লাহ নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র পথনির্দেশকৃত কোনো বিষয়? তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ বাদ দিয়ে রসূলুল্লাহ নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বিশেষ কোনো পথনির্দেশ দেননি। তবে আমাকে হুযাইফা জানিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন, “আমার উম্মতে ১২জন মুনাফিক আছে। সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ না করা পর্যন্ত (অর্থাৎ, কস্মিণকালেও) তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তাদের আটজন মরবে দুবাইলায় (বুক ও গর্দান দুর্বলকারী এক ধরণের ফোঁড়া) আক্রান্ত হয়ে।” নীচের একজন বর্ণনাকারী বলেন, ‘বাকী চারজনের ব্যাপারে শু‘বা কি বলেছেন, তা আমার স্মরণ নেই।’ [ছহীহ মুসলিম (২৭৭৯) ও মুসনদে আহমদ (১৮৯০৫)]।

---

প্রসঙ্গত, মুজমে তবরানী কবীরে (১৯/৩৫৯) মুয়াবিয়ার অনুসারী আবু বুরদা থেকে বর্ণিত তথ্য মতে মুয়াবিয়া ফোঁড়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মারা যাবার আগে ফোঁড়া ব্যাথায় দাঁড়াতে না পেরে তিনি বসে খুতবা দিতেন [ইবনুল আছীরের আল-কামিল (৪/৫৫৫)]। উনার আগে ইসলামের ইতিহাসে কেউ বসে খুতবা দেননি। নাছেবীদের প্রতি কিছুটা পক্ষপাতদুষ্ট ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র আল্লামা যাহাবীও ওনার ফোঁড়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। দেখুন সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (২/৪০১)। যাহাবীর বক্তব্যের টেক্সট নীচে দিলামঃ 

عن أبي بردة قال: دخلت على معاوية حين أصابته قرحته ، فقال: "هلم يا ابن أخي ، فنظرتُ فإذا هي قد سبرت". يعني قرحته. فقلت: ليس عليك بأس ، إذ دخل ابنه يزيد فقال له معاوية: إن ولِّيت فاستوص بهذا ، فإن أباه كان أخاً لي غير أني قد رأيت في القتال ما لم ير.  [سير أعلام النبلاء (2/401)]. 

অর্থঃ আবু বুরদা (হযরত আলীর পক্ষাবলম্বনকারী আবু মূসা আল-আশআরীর মুয়াবিয়াপন্থী ছেলে) বলেন, “মুয়াবিয়ার দেহে যখন ফোঁড়া দেখা দিয়েছিল, তখন আমি তার কাছে গেলাম। তিনি আমাকে বললেন, আমার ভাতিজা কাছে এসো। দেখলাম, তাতে (ফোঁড়ায়) পরীক্ষা করে ওষুধ দেয়া হয়েছে। আমি বললাম, আপনার কোনো অসুবিধা নেই। এ সময় হঠাৎ তার ছেলে এজীদ এল। তখন মুয়াবিয়া তাকে বললেন, তুমি পদে এলে এর প্রতি কল্যাণকামী হয়ো। কারণ, তার পিতা আমার ভাই ছিল। তবে আমি যুদ্ধে তাকে অনাকাঙ্খিত অবস্থায় (আলীর পক্ষে) দেখেছি।” [সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (২/৪০১)]।

-

হযরত আলীর দুশমন (তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী ও তাঁকে গালিদাতা) মুয়াবিয়ার নিফাকের প্রমাণ সম্বলিত আরো কিছু হাদীছ হলোঃ

عَنْ زِرٍّ ، قَالَ: قَالَ عَلِيٌّ رضي الله عنه: "وَالَّذِي فَلَقَ الْحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ إِنَّهُ لَعَهْدُ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيَّ أَنْ لَا يُحِبَّنِي إِلَّا مُؤْمِنٌ وَلَا يُبْغِضَنِي إِلَّا مُنَافِقٌ". أخرجه مسلم (1/86 ، رقم 78) ، والترمذى (5/643 ، رقم 3736) ، وقال: حسن صحيح. والنسائى (8/115 ، رقم 5018). 

অর্থঃ তাবেয়ী জির বিন হুবাইশ বলেন, হযরত আলী -رضي الله عنه- বলেছেন, ‘সে মহান সত্ত্বার কসম, যিনি দানা উৎপন্ন করেছেন এবং সৃষ্টকূলকে সৃষ্টি করেছেন! আমার কাছে এটা অবশ্য রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم এর অঙ্গীকার যে, আমাকে মুমিন ছাড়া কেউ  ভালোবাসবে না এবং মুনাফিক ছাড়া কেউ আমাকে বুগজ/ঘৃণা করবে না।’ [ছহীহ মুসলিম (৭৮), সুনানে তিরমিযী (৩৭৩৬) ও সুনানে নাসায়ী (৫০১৮)]।

-

عن أبي سعيد الخدري -رضي الله عنه- ، قال: "إنَّا كنا لنعرف المنافقين نحن معشر الأنصار ببغضهم علي بن أبي طالب". أخرجه الترمذي (رقم 3717). 

অর্থঃ হযরত আবু সাঈদ -رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা আনছারীরা মুনাফিক চিনতাম আলী বিন আবী তালেবের প্রতি তাদের বুগজ/বিদ্বেষ দেখে।” [সুনানে তিরমিযী (৩৭১৭)]।

عن أبي ذر رضي الله عنه ، قال: "ما كنا نعرف المنافقين إلا بتكذيبهم الله ورسوله والتخلف عن الصلوات والبغض لعلي بن أبي طالب". أخرجه الحاكم فى المستدرك (رقم 4643).

-

 عن جابر بن عبد الله رضي الله عنه ، قال: "ما كنا نعرف المنافقين إلا ببغضهم عليًّا رضي الله عنه." أخرجه الطبراني في المعجم الأوسط (4/264 رقم 4151).


-


মুয়াবিয়ার ফিসক-নিফাক সম্পর্কিত আরো কিছু হাদীছঃ

-

১. মুয়াবিয়ার হযরত আলী/নবীজিকে সঃ গালি দেওয়া

عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ: أَمَرَ مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ سَعْدًا ، فَقَالَ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسُبَّ أَبَا التُّرَابِ؟ فَقَالَ: أَمَّا مَا ذَكَرْتُ ثَلَاثًا قَالَهُنَّ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَنْ أَسُبَّهُ ، لَأَنْ تَكُونَ لِي وَاحِدَةٌ مِنْهُنَّ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَهُ ، خَلَّفَهُ فِي بَعْضِ مَغَازِيهِ فَقَالَ لَهُ عَلِيٌّ يَا رَسُولَ اللَّهِ خَلَّفْتَنِي مَعَ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ؟ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلَّا أَنَّهُ لَا نُبُوَّةَ بَعْدِي» ، وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ يَوْمَ خَيْبَرَ: «لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ رَجُلًا يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ» ، قَالَ فَتَطَاوَلْنَا لَهَا ، فَقَالَ: «ادْعُوا لِي عَلِيًّا» ، فَأُتِيَ بِهِ أَرْمَدَ فَبَصَقَ فِي عَيْنِهِ وَدَفَعَ الرَّايَةَ إِلَيْهِ فَفَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ ، وَلَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ: "فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ" دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلِيًّا وَفَاطِمَةَ وَحَسَنًا وَحُسَيْنًا فَقَالَ: «اللَّهُمَّ هَؤُلَاءِ أَهْلِي». أخرجه مسلم (4/1870 ، رقم 2404). 

-

عن أبي عبد الله الجدلي قال: دخلت على أم سلمة فقالت لي: أَيُسَبُّ رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم فيكم؟! قلت: معاذ الله أو سبحان الله أو كلمة نحوها ! قالت: سمعت رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم يقول:  «مَنْ سَبًّ عَلِيًّا فَقَدْ سَبَّنِي». أخرجه أحمد (6/323 ، رقم 26791) قال الهيثمى (9/130): رجاله رجال الصحيح غير أبى عبد الله الجدلى ، وهو ثقة. وصححه شعيب الأرنأووط في تعليقه على المسند (44/329) والألباني في صحيحته (3332).

-

২. খিলাফাহ ব্যবস্থা নষ্ট করে মুয়াবিয়ার ইসলামে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং বেঈমান অবস্থায় মারা যাওয়ার নববী ভবিষ্যদ্বানী

عن أبى ذر رضي الله عنه ، قَالَ : سَمِعْت رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : «أَوَّلُ مَنْ يُبَدِّلُ سُنَّتِي رَجُلٌ مِنْ بَنِي أُمَيَّةَ». أخرجه ابن أبى شيبة (7/260 ، رقم 35877) وإسناده صحيح. وصححه الألباني في "السلسلة الصحيحة" (4/329 ، رقم 1749) وقال: لعل المراد  بالحديث تغيير نظام اختيار الخليفة ، و جعله وراثة. 


অর্থঃ হযরত আবু যর -رضِى الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলেছেন, “আমার সুন্নত (শাসন ব্যবস্থার নিয়ম-নীতি) সর্বপ্রথম পরিবর্তন করবে বনু উমাইয়ার একজন পুরুষ।” [ছহীহ সনদে মুছন্নফে ইবনে আবী শায়বা (৩৫৮৭৭)। আলবানীর সিলসিলা ছহীহাহও (১৭৪৯) দেখা যেতে পারে]।

-

قال البلاذري: وحدثني إسحاق وبكر بن الهيثم قالا حدثنا عبد الرزاق بن همام انبأنا معمر عن ابن طاوس عن أبيه عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ: كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «يَطْلُعُ عَلَيْكُمْ مِنْ هَذَا الْفَجِّ رَجُلٌ يَمُوتُ عَلَى غَيْرِ مِلَّتِي». قَالَ: وكُنْتُ تَرَكْتُ أَبِي قَدْ وُضِعَ لَهُ وَضُوءٌ ، فَكُنْتُ كَحَابِسِ الْبَوْلِ مَخَافَةَ أَنْ يَجِيءَ ، قَالَ: فَطَلَعَ مُعَاوِيَةُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هُوَ هَذَا». أخرجه البلاذري في أنساب الأشراف  (2/120).

-

وسند آخر: وحدثني عبد الله بن صالح حدثني يحيى بن آدم عن شريك عن ليث عن طاووس عن عبد الله بن عمرو قال: كنتُ جالسًا عند النبي صلى الله عليه وسلم فقال: «يَطْلُعُ عَلَيْكُمْ مِنْ هَذَا الْفَجِّ رَجُلٌ يَمُوتُ يومَ يَمُوتُ عَلَى غَيْرِ مِلَّتِي». قال: وكنت تركت أبي يلبس ثيابه ، فخشيت أن يطلع ، فطلع معاوية. أخرجه البلاذري في أنساب الأشراف (2/121). ورجاله رجال الصحيح. وابن همام فى السند الأول هو عبد الرزاق الصنعاني صاحب "المصنف" ، وأما ليث فى السند الثاني هو ابن أبي سليم من رجال مسلم وقد وثقه ابن معين. قال أحمد بن الصديق الغماري في كتابه جؤنة العطار (ج2 ص 154): وهذا حديث صحيح على شرط مسلم.

-

عن أبي هُريرة -رضي الله عنه- ، قال: سَمِعْتُ الصَّادِقَ الْمَصْدُوقَ يَقُولُ: «هَلَكَةُ أُمَّتِى عَلَى يَدَىْ غِلْمَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ». أخرجه البخارى (3/1319 ، رقم 3410) ، وأحمد (2/324 ، رقم 8287).

عن أبي عبيدة ومعاذ بن جبل -رضي الله عنهما- ، عن رسول الله -صلَّى الله عليه وسلم- قال: «إِنَّ هَذَا الأَمْرَ بَدَأَ رَحْمَةً وَنُبَوَّةً ، ثُمَّ يَكُونُ رَحْمَةً وَخِلافَةً ، ثُمَّ مُلْكًا عَضُوضًا ، ثُمَّ عُتَوًّا وَجَبَرِيَّةً ، وَفَسَادًا فِي الأَرْضِ يَسْتَحِلُّونَ الْحَرِيرَ ، وَالْفُرُوجَ ، وَالْخُمُورَ يُرْزَقُونَ عَلَى ذَلِكَ ، وَيُنْصَرُونَ حَتَّى يَلْقَوُا اللَّهَ». أخرجه الطبرانى فى الكبير (1/156 ، رقم 367) ، والبيهقى فى شعب الإيمان (5/16 ، رقم 5616) ، وابن قانع فى معجمه (2/234) ، الطيالسى (ص 31 ، رقم 228) ، والبيهقى فى الكبرى (8/159 ، رقم 16407) ،وأبو يعلى (2/177 ، رقم 873). قال الهيثمى (5/189): فيه ليث بن أبى سليم ، وهو ثقة ، ولكنه مدلس ، وبقية رجاله ثقات.

-

৩. খিলাফাহ ধ্বংসকারী মুয়াবিয়াকে আল্লাহর রসূলের সঃ বদদোয়া ও হত্যার নির্দেশ

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ:كُنْتُ أَلْعَبُ مَعَ الصِّبْيَانِ ، فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَتَوَارَيْتُ خَلْفَ بَابٍ. قَالَ: فَجَاءَ فَحَطَأَنِي حَطْأَةً وَقَالَ: «اذْهَبْ وَادْعُ لِي مُعَاوِيَةَ». قَالَ فَجِئْتُ فَقُلْتُ هُوَ يَأْكُلُ ، قَالَ: ثُمَّ قَالَ لِي: «اذْهَبْ فَادْعُ لِي مُعَاوِيَةَ». قَالَ فَجِئْتُ فَقُلْتُ هُوَ يَأْكُلُ ، فَقَالَ: «لَا أَشْبَعَ اللهُ بَطْنَهُ». قَالَ ابْنُ الْمُثَنَّى: قُلْتُ لأُمَيَّةَ: مَا حَطَأَنِى ؟ قَالَ: قَفَدَنِى قَفْدَةً. أخرجه مسلم (رقم 2604). وفى رواية البيهقي فى دلائل النبوة (6/243 ، رقم 2506): قال: فما شبع بطنه أبدا. 

অর্থঃ ইবনে আব্বাস বলেন, আমি শিশুদের সাথে খেলছিলাম। এ সময় নবীজি সঃ এলে আমি একটি গাছের পিছনে লুকিয়ে যাই। তখন তিনি এসে আমার ঘাড়ে ধরে বললেন, “যাও মুয়াবিয়াকে ডেকে নিয়ে এসো।” আমি গিয়ে এসে জানালাম, ও খানা খাচ্ছে। অতঃপর তিনি আমাকে আবারো বললেন, “যাও মুয়াবিয়াকে ডেকে নিয়ে এসো।” আমি গিয়ে এসে জানালাম, ও খানা খাচ্ছে। তখন তিনি বললেন, “আল্লাহ ওর উদর পূর্তি না করুন।” [ছহীহ মুসলিম (২৬০৪)]। বাইহাকীর দালায়েলুন নুবুওয়াহর (২৫০৬) বর্ণনায় আছে, ইবনে আব্বাস বলেছেন, মুয়াবিয়া এরপর খেয়ে আর কখনো তৃপ্ত হতে পারেনি। 

قال ابن كثير فى الجزء السادس من "البداية والنهاية" بعد ذكر هذ الحديث: قلتُ وقد كان معاوية لا يشبع بعدها ووافقته هذه الدعوة في ايام إمارته ، فيقال: إنه كان يأكل في اليوم سبع مرات طعاما بلحم وكان يقول والله لا أشبع وإنما أعيى.

وعَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَأْكُلُ فِي مِعًى وَاحِدٍ وَإِنَّ الْكَافِرَ أَوْ الْمُنَافِقَ –شك أحد الرواةِ- يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ». أخرجه البخارى (5/2061 ، رقم 5079) ، ومسلم (3/1631 ، رقم 2061).

-

عن أَبي بَرْزَةَ قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَسَمِعَ رَجُلَيْنِ يَتَغَنَّيَانِ ، وَأَحَدُهُمَا يُجِيبُ الْآخَرَ وَهُوَ يَقُولُ:

لَا يــَزَالُ حـَوَارِيَّ تَــلُــوحُ عِــظَامُهُ

زَوَى الْحَرْبَ عَنْهُ أَنْ يُجَنَّ فَيُقْبَرَا 

فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «انْظُرُوا مَنْ هُمَا» قَالَ فَقَالُوا: فُلَانٌ وَفُلَانٌ ، قَالَ ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللَّهُمَّ ارْكُسْهُمَا رَكْسًا وَدُعَّهُمَا إِلَى النَّارِ دَعًّا». أخرجه أحمد فى مسنده (رقم 19795). 

ولفظ الطبراني فى الكبير (رقم 10970 باب العين ، 10815 باب التاء حسب موقع إسلام ويب): حدثنا أحمد بن علي الجارُودي الأصبهاني ، ثنا عبد الله بن سعيد الكندي ، ثنا عيسى بن سوادة النخعي ، عن ليث ، عن طاوس ، عن ابن عباس رضي الله عنه ، قال: سَمِعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَوْتَ رَجُلَيْنِ وَهُمَا يَقُولانِ: 

ولا يَزَالُ حَوَارِيٌّ تَلُوحُ عِظَامُهُ * رَوَى الْحَرْبُ عَنْهُ أَنْ يُجَنَّ فَيُقْبَرَا

فَسَأَلَ عَنْهُمَا ، فَقِيلَ: مُعَاوِيَةُ وَعَمْرُو بن الْعَاصِ ، فَقَالَ: «اللَّهُمَّ أرْكِسْهُمَا فِي الْفِتْنَةِ رِكْسًا وَدُعَّهُمَا إِلَى النَّارِ دَعًّا». 

-

وفى حديث متهم بالوضع والضعف مروي عن عبد الله بن مسعود وجابر بن عبد الله وسهل بن حنيف وأبي سعيد الخدري والحسن بن علي رضي الله عنهم ، عن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال: «إذا رأيتم معاوية على منبري فاقتلوه». 

أخرجه ابن عدي في الكامل (2/146)، (5/200)، (5/314)، وابن الجوزي في الموضوعات (2/265) بلفظ « فارجموه »، وابن عساكر في تاريخ دمشق (59/155) كلهم من طريق مجالد بن سعيد عن أبي الوداك عن أبي سعيد الخدري.

وأخرجه ابن عدي في الكامل (7/83) والبلاذري في أنساب الأشراف (5/136)، وابن عساكر في تاريخ دمشق (59/55) كلهم من طريق علي بن زيد بن جدعان عن أبي نضرة عن أبي سعيد الخدري.

وأخرجه ابن عدي في الكامل (2/209) وابن حبان في المجروحين (1/35) وابن الجوزي في الموضوعات (2/265) كلهم من طريق عباد بن يعقوب الرواجني عن الحكم بن ظهير عن عاصم عن زر عن ابن مسعود مرفوعا به.

وأخرجه ابن عدي في الكامل (6/112) قال حدثنا علي بن سعيد حدثنا الحسين بن عيسى الرازي حدثنا سلمة بن الفضل حدثنا محمد بن إسحاق عن محمد بن إبراهيم التميمي عن أبي أمامة بن سهل بن حنيف عن أبيه مرفوعاً « إذا رأيتم فلاناً على المنبر فاقتلوه ».

وأخرجه ابن عدي في الكامل (6/112) من طريق أحمد بن الحسين الصدفي عن سفيان بن محمد الفزاري عن منصور بن سلمة عن سليمان بن بلال عن جعفر بن محمد عن أبيه عن جابر مرفوعا: « إذا رأيتم على منبري فاقتلوه يعني فلان»

وأخرجه ابن عدي في الكامل (3/419) ثنا ابن سعيد ثنا أبو شيبة بن أبي بكر بن أبي شيبة عن خالد بن مخلد عن سليمان بن بلال عن جعفر عن جماعة من أهل بدر عن النبي - صلى الله عليه وسلم -.

وأخرجه ابن عدي في الكامل (5/101) والعقيلي في الضعفاء (3/997) والخطيب في تاريخه (12/181) وابن الجوزي في الموضوعات (2/266) وابن عساكر في تاريخ دمشق (59/157) كلهم من طريق سليمان بن حرب عن حماد بن زيد قال قيل لأيوب أن عمرو بن عبيد يروي عن الحسن أن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قال: « إذا رأيتم معاوية على منبري فاقتلوه».

-

৪. খেলাফতের জন্য নিজেকে হযরত উমরের চেয়ে যোগ্য দাবি করে ইবনে উমরকে মুয়াবিয়ার হুমকি দেওয়া

قال الإمام البخاري: عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ خَالِدٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: "دَخَلْتُ عَلَى حَفْصَةَ وَنَسْوَاتُهَا تَنْطُفُ، قُلْتُ: قَدْ كَانَ مِنْ أَمْرِ النَّاسِ مَا تَرَيْنَ فَلَمْ يُجْعَلْ لِي مِنْ الْأَمْرِ شَيْءٌ". فَقَالَتْ: "الْحَقْ فَإِنَّهُمْ يَنْتَظِرُونَكَ وَأَخْشَى أَنْ يَكُونَ فِي احْتِبَاسِكَ عَنْهُمْ فُرْقَةٌ فَلَمْ تَدَعْهُ"، حَتَّى ذَهَبَ. فَلَمَّا تَفَرَّقَ النَّاسُ خَطَبَ مُعَاوِيَةُ، قَالَ: "مَنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَتَكَلَّمَ فِي هَذَا الْأَمْرِ فَلْيُطْلِعْ لَنَا قَرْنَهُ فَلَنَحْنُ أَحَقُّ بِهِ مِنْهُ وَمِنْ أَبِيهِ". قَالَ حَبِيبُ بْنُ مَسْلَمَةَ: فَهَلَّا أَجَبْتَهُ؟ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: "فَحَلَلْتُ حُبْوَتِي وَهَمَمْتُ أَنْ أَقُولَ: أَحَقُّ بِهَذَا الْأَمْرِ مِنْكَ مَنْ قَاتَلَكَ وَأَبَاكَ عَلَى الْإِسْلَامِ. فَخَشِيتُ أَنْ أَقُولَ كَلِمَةً تُفَرِّقُ بَيْنَ الْجَمْعِ وَتَسْفِكُ الدَّمَ وَيُحْمَلُ عَنِّي غَيْرُ ذَلِكَ، فَذَكَرْتُ مَا أَعَدَّ اللَّهُ فِي الْجِنَانِ". قَالَ حَبِيبٌ: حُفِظْتَ وَعُصِمْتَ. أخرجه البخاري (رقم 3882).

অর্থঃ ইকরমা বিন খালিদ হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি হাফসার (তাঁর বড় বোন ও নবীজি ছঃ এর স্ত্রী) ঘরে প্রবেশ করলাম। তখন তার চুলের বেণী থেকে পানি পড়ছিল (অর্থাৎ, তখন তিনি গোসলখানা থেকে বের হন)। আমি বললাম, তুমিতো দেখছো মুসলমানদের জন্য খলীফা নির্ধারণের কার্যক্রম চলছে (মুয়াবিয়া কর্তৃক ইমাম হাসানের সাথে সন্ধি অথবা ছেলে এজীদের জন্য অগ্রিম সমর্থন আদায় চলছিল)। হাফসা বললো, তুমি যাও। কারণ, (আমি মনে করি) তারা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমার অনুপস্থিতি মুসলমানদের মাঝে আরো বেশী বিরোধ/ফাটল সৃষ্টি করবে। তার এমন কথায় তিনি গেলেন। অতঃপর সাধারণ লোকজন চলে গেলে মুয়াবিয়া (ইবনে উমরকে ইঙ্গিত করে) বক্তব্য দিয়ে বললেন, ‘এ বিষয়ে (মুসলমানদের নেতৃত্ব নিয়ে) কেউ কথা বলতে চাইলে সে যেন আমার সামনে আসে। বস্তুত এ কাজে (মুসলমানদের নেতৃত্বের জন্য) আমরা (মুয়াবিয়া ও এজিদ) তার এবং তার পিতার (হযরত উমর) চেয়ে অধিক যোগ্য।’ ঘটনা শোনার পর হাবীব বিন মাসলামা বললেন, আপনি কি তার এমন কথার জবাবে কিছু বলেননি? ইবনে উমর বললেন, আমি তখন আমার আলখেল্লা জড়িয়ে নিলাম এবং বলতে চাইলাম, ‘এ কাজের জন্য অবশ্য তিনিই অধিক হকদার, যিনি তোমার ও তোমার পিতার বিরুদ্ধে ইসলামের পক্ষে (বদর, উহুদ ও খন্দকে) লড়াই করেছেন।’ তবে আমি মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি ও রক্তপাত এড়াতে এবং আমার বক্তব্য তাদের অন্যায় ভাবে গ্রহণের আশঙ্কা থেকে কথাটা বলা থেকে বিরত থাকলাম। অতঃপর আমি জান্নাতে (মুমিনদের জন্য) আল্লাহ যা রেখেছেন, তার কথা স্মরণ করলাম। হাবীব বললেন, আপনি (বড় ধরণের বিপদ থেকে) বেঁচে গেলেন। [ছহীহ বোখারী (৩৮৮২)]।

-

قال محب النواصب ابن تيمية: واتفق العلماء على أن معاوية أفضل ملوك هذه الأمة، فإن الأربعة قبله كانوا خلفاء نبوة، وهو أول الملوك [مجموع فتاوى ابن تيمية - ج 4 - مفصل الاعتقاد، الصفحة 478]

-

৫. মুয়াবিয়ার প্রতিবাদী ছাহাবী হুজর বিন আদীকে হত্যা 

قال الإمام الحاكم فى مستدركه فى باب "ذكر مناقب حجر بن عدي رضى الله تعالى عنه وهو راهب أصحاب محمد صلى الله عليه وسلم وذكر مقتله": 

حدثني علي بن عيسى الحيري ثنا الحسين بن محمد القباني ثنا إسحاق بن إبراهيم البغوي ثنا إسماعيل بن علية عن هشام بن حسان عن ابن سيرين: أن زيادا أطال الخطبة ، فقال حجر بن عدي: "الصلاة". فمضى في خطبته ، فقال له: "الصلاة". وضرب بيده إلى الحصى وضرب الناس بأيديهم إلى الحصى ، فنزل فصلى ، ثم كتب فيه إلى معاوية ، فكتب معاوية أن سرِّح به إلي فسرَّحه إليه ، فلما قدم عليه قال: "السلام عليك يا أمير المؤمنين". قال: "وأمير المؤمنين أنا؟ إني لا أقيلك ولا استقيلك". فأمر بقتله ، فلما انطلقوا به طلب منهم أن يأذنوا له فيصلي ركعتين ، فأذنوا له فصلى ركعتين ، ثم قال: "لا تطلقوا عني حديدا ولا تغسلوا عني دما وادفنوني في ثيابي فإني مخاصم". قال: فقُتِلَ. قال هشام: كان محمد بن سيرين إذا سئل عن الشهيد ذكر حديث حجر. أخرج الحاكم (رقم 5981).

-

حدثنا أبو بكر محمد بن أحمد بن بالويه ثنا إبراهيم الحربي ثنا مصعب بن عبد الله الزبيري قال: "حجر بن عدي الكندي يكنى أبا عبد الرحمن كان قد وفدَ إلى النبي صلى الله عليه وسلم وشَهِدَ القادسية وشهد الجمل وصفين مع علي رضى الله تعالى عنه ، قتله معاويةُ بن أبي سفيان بمرج عذراء ، وكان له ابنان عبد الله وعبد الرحمن قتلهما مصعب بن الزبير صبرا ، وقُتل حجر سنة ثلاث وخمسين". أخرج الحاكم (رقم 5974).

-

وعن عائشة أم المؤمنين رضي الله عنها ، أن النبي صلي الله عليه وسلم قال: «سيقتل بعذراء أناس يغضب الله لهم وأهل السماء». أخرجه ابن عساكر (12/226) ، وعزاه الحافظ فى الإصابة (2/38 ، ترجمة 1631 حجر بن عدي) ليعقوب بن سفيان فى تاريخه وقال: فى سنده انقطاع .

ومن غريب الحديث : ((عذراء)) : قرية من قرى دمشق.

-

৬. মুয়াবিয়ার হযরত আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও আম্মারকে খুন এবং এ নিয়ে মিথ্যাচার

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ قَالَ إِنِّي لَأَسِيرُ مَعَ مُعَاوِيَةَ فِي مُنْصَرَفِهِ مِنْ صِفِّينَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ ، قَالَ: فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ: يَا أَبَتِ مَا سَمِعْتَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لِعَمَّارٍ: «وَيْحَكَ يَا ابْنَ سُمَيَّةَ تَقْتُلُكَ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ؟». قَالَ فَقَالَ عَمْرٌو لِمُعَاوِيَةَ: أَلَا تَسْمَعُ مَا يَقُولُ هَذَا؟ فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: لَا تَزَالُ تَأْتِينَا بِهَنَةٍ ، أَنَحْنُ قَتَلْنَاهُ؟ إِنَّمَا قَتَلَهُ الَّذِينَ جَاءُوا بِهِ. أخرجه أحمد (رقم 6499) قال الشيخ شعيب الأرناؤوط: إسناده صحيح.

-

عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ ، قَالَ: لَمَّا قُتِلَ عَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ ، دَخَلَ عَمْرُو بْنُ حَزْمٍ عَلَى عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ ، فَقَالَ: قُتِلَ عَمَّارٌ ، وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ». فَقَامَ عَمْرُو بْنُ الْعَاصِ فَزِعًا يُرَجِّعُ ، حَتَّى دَخَلَ عَلَى مُعَاوِيَةَ ، فَقَالَ لَهُ مُعَاوِيةُ: مَا شَأْنُكَ؟ قَالَ: قُتِلَ عَمَّارٌ! فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: قَدْ قُتِلَ عَمَّارٌ ، فَمَاذَا؟ قَالَ عَمْرٌو: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ». فَقَالَ لَهُ مُعَاوِيَةُ: دُحِضْتَ فِي بَوْلِكَ ، أَوَ نَحْنُ قَتَلْنَاهُ؟! إِنَّمَا قَتَلَهُ عَلِيٌّ وَأَصْحَابُهُ ، جَاؤُوا بِهِ حَتَّى أَلْقَوْهُ بَيْنَ رِمَاحِنَا ، أَوْ قَالَ: بَيْنَ سُيُوفِنَا. أخرجه أحمد (رقم 17813). قال الهيثمي فى المجمع: رواه أحمد وأبو يعلى والطبراني ورجال أحمد رجال الصحيح غير محمد بن عمرو وهو ثقة‏.‏ 

-

عَنْ عِكْرِمَةَ ، قَالَ لِي ابْنُ عَبَّاسٍ وَلِابْنِهِ عَلِيٍّ: انْطَلِقَا إِلَى أَبِي سَعِيدٍ فَاسْمَعَا مِنْ حَدِيثِهِ. فَانْطَلَقْنَا فَإِذَا هُوَ فِي حَائِطٍ يُصْلِحُهُ فَأَخَذَ رِدَاءَهُ فَاحْتَبَى ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا حَتَّى أَتَى ذِكْرُ بِنَاءِ الْمَسْجِدِ ، فَقَالَ: كُنَّا نَحْمِلُ لَبِنَةً لَبِنَةً وَعَمَّارٌ لَبِنَتَيْنِ لَبِنَتَيْنِ ، فَرَآهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَنْفُضُ التُّرَابَ عَنْهُ وَيَقُولُ: «وَيْحَ عَمَّارٍ تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ يَدْعُوهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ». قَالَ: يَقُولُ عَمَّارٌ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ الْفِتَنِ. أخرجه البخارى (3/1035 ، رقم 2657) وابن حبان (15/554 ، رقم 7079). 

-

عن عبد الله بن سلمة قال‏:‏ قيل لعمار‏:‏ قد هاجر أبو موسى فقال‏:‏ "والله ليخذلن جنده وليفرن جهده ولينقضن عهده ، والله إني لأرى قوماً ليضربنكم ضرباً يرتاب له المبطلون ، والله لو قاتلونا حتى بلغوا بنا شعفات هجر لعلمت أن صاحبنا على الحق وهم على الباطل‏".‏ أخرجه الطبراني. قال الهيثمي (243/7) رجاله ثقات. وابن سعد (الطبقات 257/3) والطبري فى التاريخ (21/6).

وفى رواية عنه -أى عبد الله بن سلمة- قال‏‏: رَأَيْتُ عَمَّارًا يَوْمَ صِفِّينَ ، شَيْخًا كَبِيرًا ، آدَمَ طُوَالاً ، آخِذَ الْحَرْبَةَ بِيَدِهِ ، وَيَدُهُ تَرْعَدُ ، فَقَالَ: "وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ ، لَقَدْ قَاتَلْتُ بِهَذِهِ الرَّايَةِ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ، وَهَذِهِ الرَّابِعَةُ ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ ، لَوْ ضَرَبُونَا حَتَّى يَبْلُغُوا بِنَا سَعَفَاتِ هَجَرَ ، لَعَرَفْتُ أَنَّ مُصْلِحِينَا عَلَى الْحَقِّ ، وَأَنَّهُمْ عَلَى الضَّلاَلَةِ". ‏أخرجه أحمد (18904). قال الهيثمي (243/7) رواه أحمد والطبراني ورجال أحمد رجال الصحيح غير عبد الله بن سلمة وهو ثقة إلا أن الطبراني قال‏:‏ لقد قاتلتُ صاحب هذه مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاث مرات وهذه الرابعة‏.‏

-

৭. মুয়াবিয়ার মদপান ও মদের ব্যবসা:

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنُ بُرَيْدَةَ قَالَ: دَخَلْتُ أَنَا وَأَبِي عَلَى مُعَاوِيَةَ فَأَجْلَسَنَا عَلَى الْفُرُشِ ، ثُمَّ أُتِينَا بِالطَّعَامِ فَأَكَلْنَا ، ثُمَّ أُتِينَا بِالشَّرَابِ فَشَرِبَ مُعَاوِيَةُ ، ثُمَّ نَاوَلَ أَبِي ، ثُمَّ قَالَ: "مَا شَرِبْتُهُ مُنْذُ حَرَّمَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " ثُمَّ قَالَ مُعَاوِيَةُ: "كُنْتُ أَجْمَلَ شَبَابِ قُرَيْشٍ وَأَجْوَدَهُ ثَغْرًا ، وَمَا شَيْءٌ كُنْتُ أَجِدُ لَهُ لَذَّةً كَمَا كُنْتُ أَجِدُهُ وَأَنَا شَابٌّ غَيْرُ اللَّبَنِ ، أَوْ إِنْسَانٍ حَسَنِ الْحَدِيثِ يُحَدِّثُنِي". أخرجه أحمد بن حنبل في مسنده (رقم 22991) وصححه شعيب الأرنؤوط. قال الحافظ الهيثمي في مجمع الزوائد (5/42 رقم 8022): رجاله رجال الصحيح.

ولم يكتف معاوية بهذا بل كانت له قوافل تحمل الخمر له ويتاجر بها أيضاً، فقد ذكر الذهبي في سير أعلام النبلاء (2/9-10) مسألة متاجرة معاوية بالخمر ، فقال ما نصه: "عن يحيى بن سليم عن ابن خثيم عن إسماعيل بن عبيد بن رفاعة عن أبيه :أن عبادة بن الصامت مرت عليه قِطَارة وهو بالشام تحمل الخمر ، فقال : ما هذه ؟ أزيت ؟! قيل : لا بل خمر يباع لفلان فأخذ شفرة من السوق ، فقام إليها فلم يذر فيها راوية إلا بقرها. وأبو هريرة إذ ذاك بالشام فأرسل فلانٌ إلى أبي هريرة فقال : ألا تمسك عنا أخاك عبادة؟! أما بالغدوات فيغدو إلى السوق يفسد على أهل الذمة متاجرهم ، وأما بالعشي فيقعد في المسجد ليس له عمل إلا شتم أعراضنا وعيبنا. قال: فأتاه أبو هريرة فقال: يا عبادة مالك ولمعاوية ذره وما حمل. فقال لم تكن معنا إذ بايعنا على السمع والطاعة والأمر بالمعروف والنهي عن المنكر وألا يأخذنا في الله لومة لائم ، فسكت أبو هريرة وكتب فلان إلى عثمان إن عبادة قد أفسد عليَّ الشام.

ولم يتفرَّد معاوية بأمور الخمر هذه ، بل كان أصحابه ومحبوه وأحبابة يتاجرون بالخمر من زمن سيدنا عمر رضي الله عنه ، فقد ثبت أن عمر بن الخطاب لعن سَمُرَة –والي معاوية على الكوفة قبل زياد- ، لأنه أول من أذن في بيع الخمر ، ففي الحديث الصحيح عن ابن عباس قال: عَنْ طَاوُسٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ بَلَغَ عُمَرَ أَنَّ سَمُرَةَ بَاعَ خَمْرًا فَقَالَ: قَاتَلَ اللَّهُ سَمُرَةَ ، أَلَمْ يَعْلَمْ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَعَنَ اللَّهُ الْيَهُودَ حُرِّمَتْ عَلَيْهِمْ الشُّحُومُ فَجَمَلُوهَا فَبَاعُوهَ». أخرجه البخارى (2/774 ، رقم 2110) ، ومسلم (رقم 1582)، والنسائى فى الكبرى (6/342 ، رقم 11172) ، وابن ماجه (2/1122 ، رقم 3383) ، وأحمد (1/25 ، رقم 170) ، والدارمى (2/156 ، رقم 2104) ، وابن حبان (14/145 ، رقم 6252) .

تنبيه: حذف اسم سَمُرَة فى رواية البخاري ووضع بدله "فلاناً". 

-

৮. মুয়াবিয়ার সুদ, ঘুষ, মুতা ও হারাম বিলাসিতা

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ رَبِّ الْكَعْبَةِ قَالَ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَإِذَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ جَالِسٌ فِي ظِلِّ الْكَعْبَةِ وَالنَّاسُ مُجْتَمِعُونَ عَلَيْهِ فَأَتَيْتُهُمْ فَجَلَسْتُ إِلَيْهِ فَقَالَ كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَنَزَلْنَا مَنْزِلًا فَمِنَّا مَنْ يُصْلِحُ خِبَاءَهُ وَمِنَّا مَنْ يَنْتَضِلُ وَمِنَّا مَنْ هُوَ فِي جَشَرِهِ إِذْ نَادَى مُنَادِي رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاةَ جَامِعَةً فَاجْتَمَعْنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «إِنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِيٌّ قَبْلِي إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ وَإِنَّ أُمَّتَكُمْ هَذِهِ جُعِلَ عَافِيَتُهَا فِي أَوَّلِهَا وَسَيُصِيبُ آخِرَهَا بَلَاءٌ وَأُمُورٌ تُنْكِرُونَهَا وَتَجِيءُ فِتْنَةٌ فَيُرَقِّقُ بَعْضُهَا بَعْضًا وَتَجِيءُ الْفِتْنَةُ فَيَقُولُ الْمُؤْمِنُ هَذِهِ مُهْلِكَتِي ثُمَّ تَنْكَشِفُ وَتَجِيءُ الْفِتْنَةُ فَيَقُولُ الْمُؤْمِنُ هَذِهِ هَذِهِ فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُزَحْزَحَ عَنْ النَّارِ وَيُدْخَلَ الْجَنَّةَ فَلْتَأْتِهِ مَنِيَّتُهُ وَهُوَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَأْتِ إِلَى النَّاسِ الَّذِي يُحِبُّ أَنْ يُؤْتَى إِلَيْهِ وَمَنْ بَايَعَ إِمَامًا فَأَعْطَاهُ صَفْقَةَ يَدِهِ وَثَمَرَةَ قَلْبِهِ فَلْيُطِعْهُ إِنْ اسْتَطَاعَ فَإِنْ جَاءَ آخَرُ يُنَازِعُهُ فَاضْرِبُوا عُنُقَ الْآخَرِ». فَدَنَوْتُ مِنْهُ فَقُلْتُ لَهُ أَنْشُدُكَ اللَّهَ آنْتَ سَمِعْتَ هَذَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَهْوَى إِلَى أُذُنَيْهِ وَقَلْبِهِ بِيَدَيْهِ وَقَالَ سَمِعَتْهُ أُذُنَايَ وَوَعَاهُ قَلْبِي فَقُلْتُ لَهُ هَذَا ابْنُ عَمِّكَ مُعَاوِيَةُ يَأْمُرُنَا أَنْ نَأْكُلَ أَمْوَالَنَا بَيْنَنَا بِالْبَاطِلِ وَنَقْتُلَ أَنْفُسَنَا وَاللَّهُ يَقُولُ: ﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا﴾. قَالَ فَسَكَتَ سَاعَةً ثُمَّ قَالَ: "أَطِعْهُ فِي طَاعَةِ اللَّهِ وَاعْصِهِ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ". أخرجه مسلم (3/1472 ، رقم 1844) ، والنسائى (7/153 ، رقم 4191) ، وابن ماجه (2/1306 ، رقم 3956) ، وأحمد (2/191 ، رقم 6793).

-

عَنْ خَالِدٍ قَالَ: وَفَدَ الْمِقْدَامُ بْنُ مَعْدِي كَرِبَ وَعَمْرُو بْنُ الْأَسْوَدِ وَرَجُلٌ مِنْ بَنِي أَسَدٍ مِنْ أَهْلِ قِنَّسْرِينَ إِلَى مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ ، فَقَالَ مُعَاوِيَةُ لِلْمِقْدَامِ أَعَلِمْتَ أَنَّ الْحَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ تُوُفِّيَ؟ فَرَجَّعَ الْمِقْدَامُ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ أَتَرَاهَا مُصِيبَةً؟ قَالَ لَهُ: وَلِمَ لَا أَرَاهَا مُصِيبَةً وَقَدْ وَضَعَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حِجْرِهِ فَقَالَ: «هَذَا مِنِّي وَحُسَيْنٌ مِنْ عَلِيٍّ». فَقَالَ الْأَسَدِيُّ :جَمْرَةٌ أَطْفَأَهَا اللَّهُ. قَالَ: فَقَالَ الْمِقْدَامُ: أَمَّا أَنَا فَلَا أَبْرَحُ الْيَوْمَ حَتَّى أُغَيِّظَكَ وَأُسْمِعَكَ مَا تَكْرَهُ. ثُمَّ قَالَ: يَا مُعَاوِيَةُ إِنْ أَنَا صَدَقْتُ فَصَدِّقْنِي وَإِنْ أَنَا كَذَبْتُ فَكَذِّبْنِي. قَالَ: أَفْعَلُ. قَالَ: فَأَنْشُدُكَ بِاللَّهِ هَلْ تَعْلَمُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ لُبْسِ الذَّهَبِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: فَأَنْشُدُكَ بِاللَّهِ هَلْ تَعْلَمُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ لُبْسِ الْحَرِيرِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: فَأَنْشُدُكَ بِاللَّهِ هَلْ تَعْلَمُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ لُبْسِ جُلُودِ السِّبَاعِ وَالرُّكُوبِ عَلَيْهَا؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: فَوَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُ هَذَا كُلَّهُ فِي بَيْتِكَ يَا مُعَاوِيَةُ. فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: قَدْ عَلِمْتُ أَنِّي لَنْ أَنْجُوَ مِنْكَ يَا مِقْدَامُ. قَالَ خَالِدٌ: فَأَمَرَ لَهُ مُعَاوِيَةُ بِمَا لَمْ يَأْمُرْ لِصَاحِبَيْهِ وَفَرَضَ لِابْنِهِ فِي الْمِائَتَيْنِ ، فَفَرَّقَهَا الْمِقْدَامُ فِي أَصْحَابِهِ. قَالَ: وَلَمْ يُعْطِ الْأَسَدِيُّ أَحَدًا شَيْئًا مِمَّا أَخَذَ. فَبَلَغَ ذَلِكَ مُعَاوِيَةُ فَقَالَ: أَمَّا الْمِقْدَامُ فَرَجُلٌ كَرِيمٌ بَسَطَ يَدَهُ وَأَمَّا الْأَسَدِيُّ فَرَجُلٌ حَسَنُ الْإِمْسَاكِ لِشَيْئِهِ. أخرجه أبو داود (رقم 4131). وصحح الحديث الألباني فيما سماه صحيح أبي داود (2/778).

قال الذهبي تعليقاً على هذه الرواية: "سنده قوي. ومعاوية من خيار الملوك الذين غلب عدلهم على ظلمهم وما هو ببريء من الهَنَات ، والله يعفو عنه." (سير أعلام النبلاء ، الجزء 3 ، الصفحة 159).

-

عن ابن جريج عن عطاء قال : لأول من سمعت منه المتعة صفوان بن يعلى ، قال: أخبرني عن يعلى أن معاوية استمتع بامرأة بالطائف ، فأنكرت ذلك عليه ، فدخلنا على ابن عباس ، فذكر له بعضنا ، فقال له : نعم ، فلم يقر في نفسي ، حتى قدم جابر ابن عبد الله ،فجئناه في منزله ، فسأله القوم عن أشياء ، ثم ذكروا له المتعة ، فقال : نعم ، استمتعنا على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وأبي بكر ، وعمر، حتى إذا كان في آخر خلافة عمر استمتع عمرو بن حريث بامرأة - سماها جابر فنسيتها - فحملت المرأة ، فبلغ ذلك عمر ، فدعاها فسألها ، فقالت : نعم ، قال : من أشهد ؟ قال عطاء : لا أدري قالت : أمي ، أم وليها ، قال : فهلا غيرهما؟ قال : خشي أن يكون دغلا الاخر ، قال عطاء : وسمعت ابن عباس يقول: يرحم الله عمر ، ما كانت المتعة إلا رخصة من الله عز وجل ، رحم بها أمة محمد صلى الله عليه وسلم ، فلولا نهيه عنها ما احتاج إلى الزنا إلا شقي. أخرجه عبد الرزاق (7/496 ، رقم 14021).

৯. হযরত আলীর প্রতি বিদ্বেষবশত হজের তালবিয়া পাঠ না করা এবং এজন্য মুয়াবিয়াকে ইবনে আব্বাসের লানত করা

عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ قَالَ كُنْتُ مَعَ ابْنِ عَبَّاسٍ بِعَرَفَاتٍ فَقَالَ: "مَا لِى لاَ أَسْمَعُ النَّاسَ يُلَبُّونَ". قُلْتُ: يَخَافُونَ مِنْ مُعَاوِيَةَ. فَخَرَجَ ابْنُ عَبَّاسٍ مِنْ فُسْطَاطِهِ فَقَالَ: "لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ فَإِنَّهُمْ قَدْ تَرَكُوا السُّنَّةَ مِنْ بُغْضِ عَلِىٍّ. أخرجه النسائي (5/253 ، رقم 3006) ، وابن خزيمة في صحيحه (رقم 2830). 

-

عن أيوب قال: لا أدري أسمعته من سعيد بن جبير أم نُبِّئتُه عنه قال: أتيتُ علَى ابن عبَّاس بعرفةَ وهو يأكلُ رُمَّانًا فقال: "أَفْطَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِعَرَفَةَ". وَبَعَثَتْ إِلَيْهِ أُمُّ الْفَضْلِ بِلَبَنٍ فَشَرِبَهُ وَقَالَ: "لَعَنَ اللَّهُ فُلاَناً عَمَدُوا إِلَى أَعْظَمِ أَيَّامِ الْحَجِّ فَمَحَوْا زِينَتَهُ وَإِنَّمَا زِينَةُ الْحَجِّ التَّلْبِيَةُ". أخرجه أحمد (رقم 1870). قال شعيب الأرنؤوط: صحيح رجاله ثقات رجال الشيخين.

-

وكذا لعنه سمرة بن جندب ، فعن جعفر بن سليمان الضبعي قال: أقر معاوية سَمُرَة بعد زياد ستة أشهر ثم عزله ، فقال سَمُرَة : "لعن الله معاوية ؛ والله لو أطعت الله كما أطعت معاوية ما عذبني أبداً". أخرجه الطبري (4/217).

-

وقد جاء أن معاوية أول من خطب الجمعة قاعداً وسار على هذه السنة الخبيثة منحرفو بني أمية كما في الكامل لابن الأثير (4/555) ، وكذلك معاوية أول من ترك التكبير في الصلاة كما في الفتح (2/270).

-

وعن عبد الرحمن بن معقل قال: "صليت مع علي صلاة الغداة ، قال فقنَتَ فقال: في قنوته اللهم عليك بمعاوية وأشياعه وعمرو بن العاص وأشياعه وأبا السلمي وأشياعه وعبد الله بن قيس وأشياعه". أخرجه ابن أبى شيبة (جزء 2 - صفحة 108 رقم 7050).

ورواه البلاذري بلفظ: أن علياً قال : "اللهم العن معاوية بن أبي سفيان بادئاً ، وعمرو بن العاص ثانياً ، وأبا الأعور السلمي ثالثاً ، وعبد الله بن قيس رابعاً ". أخرجه البلاذري بسند صحيح في أنساب الأشراف (2/75).

-

১০. আবু সুফিয়ানের জারজ ছেলে জিয়াদকে ভাই বানিয়ে গভর্ণর বানানো

عن ميمونة -رضي الله عنها- أن رسول الله صلي الله عليه وسلم قال: « لا تزال أمتى بخير متماسكا أمرها ما لم يظهر فيهم ولد الزنا فإذا ظهروا خشيت أن يعمهم الله بعقاب ». أخرجه أحمد (6/333 ، رقم 26873) ، والطبرانى (24/23 ، رقم 55) ، وأبو يعلى (13/6 ، رقم 7091) . قال الهيثمى (6/257): فيه محمد بن عبد الرحمن بن أبى لبيبة وثقه ابن حبان وضعفه ابن معين ومحمد بن إسحاق قد سرح بالسماع فالحديث صحيح أو حسن .

-

قال الشوكاني فى نيل الأوطار (5/ 127): "إنَّ "زِيَادَ بْنَ أَبِي سُفْيَانَ" وَقَعَ التَّحْدِيثُ بِهَذَا فِي زَمَنِ بَنِي أُمَيَّةَ ، وَأَمَّا بَعْدَهُمْ فَمَا كَانَ يُقَالُ لَهُ إلَّا زِيَادُ ابْنُ أَبِيهِ. وَقَبْل اسْتِلْحَاقِ مُعَاوِيَةَ لَهُ كَانَ يُقَالُ لَهُ: زِيَادُ بْنُ عُبَيْدٍ وَكَانَتْ أُمُّهُ سُمَيَّةَ مَوْلَاةَ الْحَارِثِ بْنِ كِلْدَةَ الثَّقَفِيِّ وَهِيَ تَحْتَ عُبَيْدٍ الْمَذْكُورِ فَوَلَدَتْ زِيَادًا عَلَى فِرَاشِهِ فَكَانَ يُنْسَبُ إلَيْهِ ، فَلَمَّا كَانَ فِي أَيَّامِ مُعَاوِيَةَ شَهِدَ جَمَاعَةٌ عَلَى إقْرَارِ أَبِي سُفْيَانَ بِأَنَّ زِيَادًا وَلَدُهُ فَاسْتَلْحَقَهُ مُعَاوِيَةُ بِذَلِكَ وَخَالَفَ الْحَدِيثَ الصَّحِيحَ «أَنَّ الْوَلَدُ لِلْفِرَاشِ وَلِلْعَاهِرِ الْحَجَرُ» وَذَلِكَ لِغَرَضٍ دُنْيَوِيٍّ". 

-

১১. মুয়াবিয়ার পরিকল্পনায় ইমাম হাসানকে বিষ প্রয়োগে হত্যা

قال الإمام الطبراني: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بن عَبْدِ اللَّهِ الْحَضْرَمِيُّ ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بن عَبْدِ اللَّهِ بن نُمَيْرٍ ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بن أَبِي بُكَيْرٍ ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بن حَفْصٍ: "أَنّ سَعْدًا وَالْحَسَنَ بن عَلِيٍّ مَاتَا فِي زَمَنِ مُعَاوِيَةَ ، فَيَرَوْنَ أَنَّهُ سَمَّهُ". أخرجه الطبراني فى المعجم الكبير (ج3 ص 71). بسند صحيح.

قال ابن عبدالبر: وقال قتادة وأبو بكر بن حفص: "سُمَّ الحسن بن علي سَمَّتْهُ امرأته جعدة بنت الأشعث بن قيس الكندي". وقالت طائفة: "كان ذلك بتدسيس معاوية إليها وما بذل لها في ذلك". والله أعلم. (الاستيعاب ج1 ص 440.).

-

১২. হযরত আলীর সাক্ষ্য মতে মুয়াবিয়া ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা শৈশব থেকেই দুষ্ট প্রকৃতির ছিল

قال أبو مخنف حدثني عبد الرحمن بن جندب الأزدي عن أُبـَيٍّ أن عليًّا قال -يعني عند رفع أصحاب معاوية القرآن فى آخر أيام صفين-: "عباد الله أمضوا إلى حقكم وصدقكم وقتال عدوكم ، فإن معاوية وعمرو بن العاص وابن أبي معيط وحبيب بن مسلمة وابن أبي سرح والضحاك ابن قيس ليسوا بأصحاب دين ولا قرآن ، أنا أعرف بهم منكم صحبتهم أطفالا وصحبتهم رجالا فكانوا شر أطفال وشر رجال ، ويحكم والله إنهم ما رفعوها إنهم يقرأونها ولا يعملون بما فيها وما رفعوها إلا خديعة ودهاء ومكيدة". أخرجه الطبري فى تاريخه (27/6) ، وانظر الكامل لابن الأثير (161/4) ، ومروج الذهب للمسعودي (433/1) ، والبداية والنهاية لابن كثير (298/7).

تعليق: يُذكر أن التحكيم وقع بعد إصرار الخوارج والبسطاء من صف عليٍّ على قبوله ، وقد وقع بعده ما حذَّر منه على رضي الله عنه. وبعد ذلك وقعت فتنة تكفير الخوارج لعلي بدعوى أنه خالف حكم الله فى القرآن ، فقاتلهم وأجَّل شأن النواصب البغاة حتى استشهد على أيدى الخوارج عام 40 من الهجرة.

-

وقال علي أيضا عن معاوية بعد اتهامه إياه بقتل عثمان رضي الله عنه: "لم يجعل له سابقة في الدين ولا سلف صدق في الإسلام ، طليق بن طليق حزب من الأحزاب ، لم يزل حربًا لله ورسوله هو وأبوه حتى دخلا في الإسلام كارهين". الكامل لابن الأثير (148/4).

-

১৩. ক্ষমতার জন্য লড়াইয়ের কথা মুয়াবিয়ার নিজের স্বীকার এবং হযরত আয়েশার মুয়াবিয়াকে ফেরাউনের সাথে তুলনা করা

عن عمرو بن مرة عن سعيد بن سويد ، قال صلى بنا معاوية الجمعة بالنخيلة في الضحى ، ثم خطبنا فقال: "ما قاتلتكم لتصلوا ولا لتصوموا ولا لتحجوا ولا لتزكوا وقد أعرف أنكم تفعلون ذلك ولكن إنما قاتلتكم لأتأمر عليكم وقد أعطاني الله ذلك وأنتم له كارهون." أخرجه ابن أبى شيبة (6/187 ، رقم 30556) ، وابن عساكر (52/380 ، 59/150).

قال ابن عساكر باسناده عن أبى داود الطيالسى ثنا أيوب بن جابر عن أبى إسحاق عن الأسود بن يزيد قال قلت لعائشة: ألا تعجبين لرجل من الطلقاء ينازع أصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم فى الخلافة! فقالت: "وما تعجب من ذلك هو سلطان الله يؤتيه البر والفاجر ، وقد ملك فرعون اهل مصر أربعمائة سنة وكذلك غيره من الكفار." [البداية والنهاية لابن كثير 8/131].

-

১৪. হযরত হাসানের সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে ছেলে এজিদকে মুয়াবিয়ার ক্ষমতায় বসিয়ে যাওয়া

روى البلاذري في أنساب الأشراف: دفع معاوية إلى الحسن صحيفة بيضاء وقد ختم في أسفلها وقال له: اكتب فيها ما شئت. فكتب الحسن:

بسم الله الرحمن الرحيم هذا ما صالح عليه الحسن بن علي معاوية بن أبي سفيان، صالحه على: 

1. أن يسلّم إليه– إلى معاوية- ولاية أمر المسلمين على أن يعمل فيها بكتاب الله وسنة نبيّه وسيرة الخلفاء الصالحين؟!

2. وعلى أنه ليس لمعاوية أن يعهد لأحد من بعده، وأن يكون الأمر شورى.

3. والناس آمنون حيث كانوا على أنفسهم وأموالهم وذراريهم.

4. وعلى أن لا يبغي للحسن ابن علي غائلة سراً ولا علانية، و(على أن) لا يخيف أحداً من أصحابه.

شهد عبد الله بن الحرث، وعمرو بن سلمة. 

وردّهما إلى معاوية ليشهد (بما في الكتاب) ويشهدا عليه. البلاذري، أنساب الأشراف: ج3، ص41-42. 

وروى ابن حجر الهيتمي وثيقة الصلح هكذا: 

بسم الله الرحمن الرحيم 

هذا ما صالح عليه الحسن بن علي رضي الله عنهما معاوية بن أبي سفيان، صالحه على أن: 

1. يسلم إليه ولاية المسلمين على أن يعمل فيهم بكتاب الله تعإلى وسنة رسول الله وسيرة الخلفاء الراشدين المهديين.

2. ليس لمعاوية بن أبي سفيان أن يعهد إلى أحد من بعده عهداً بل يكون الأمر من بعده شورى بين المسلمين.

3. وعلى أن الناس آمنون حيث كانوا من أرض الله تعإلى في شامهم وعراقهم وحجازهم ويمنهم.

4. وعلى أن أصحاب علي وشيعته آمنون على أنفسهم وأموالهم ونسائهم وأولادهم حيث كانوا.

5. وعلى معاوية بن أبي سفيان بذلك عهد الله وميثاقه وأن لا يبتغي للحسن بن علي ولا لأخيه الحسين ولا لأحد من أهل بيت رسول الله غائلة سراً ولا جهراً ولا يخيف أحداً منهم في أفق من الآفاق.

أشهد عليه فلان وفلان بن فلان وكفى بالله شهيداً. [ابن حجر الهيتمي، الصواعق المحرقة: ص136].

قال الابن الأثير: وكان الذي طلب الحسن من معاوية أن يعطيه ما في بيت مال الكوفة، ومبلغه خمسة آلاف ألف، وخراج دار ابجرد من فارسن وأن لا يشتم علياً، فلم يجبه إلى الكف عن شتم علي، فطلب أن لا يشتم وهو يسمع، فأجابه إلى ذلك ثم لم يف له به أيضاً، وأما خراج دار ابجرد فإن أهل البصرة منعوه منه وقالوا: هو فيئنا لا نعطيه أحداً، وكان منعهم بأمر معاوية أيضاً. [الكامل في التاريخ 2/108].

-

১৫. মুয়াবিয়ার প্রতি তাবেয়ীন, সালাফে সালেহীন ও ইমামগণের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

-

অবিসংবাদিত বুজর্গ তাবেয়ী ইমাম হাসান বসরী বলেছেনঃ

عن الصقعب بن زهير ، عن الْحَسَن ، قَالَ: أربع خصال كن فِي مُعَاوِيَة ، لو لَمْ يَكُنْ فِيهِ منهن إلا واحدة لكانت موبقة: انتزاؤه عَلَى هَذِهِ الأمة بالسفهاء حَتَّى ابتزَّها أمرها بغير مشورة مِنْهُمْ وفيهم بقايا الصحابة وذو الفضيلة ، واستخلافه ابنه بعده سكيراً خميراً ، يلبس الحرير ويضرب بالطنابير ، وادعاؤه زياداً ، وقد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: الولد للفراش ، وللعاهر الحجر ، وقتله حُجراً ، ويلاً لَهُ من حُجر! مرتين. (تاريخ ابن جرير الطبري ج5 ص279 ، ط دار المعارف – مصر ، ت: محمد أبو الفضل إبراهيم).

-

ইমাম শাফেয়ী বলেছেনঃ

قال أبو الفداء في تاريخه : ورويَ عن الشافعي رحمه الله تعالى أّنه أسرّ إالى الربيع أنه لايقبل شهادة أربعة من الصحابة وهم معاوية وعمرو بن العاص والمغيرة وزياد. [تاريخ ابي الفداء المسمى المختصر في أخبار البشر ج1 ص259 ، ورواه البغدادي في خزانة الأدب ج6 ص51]. 

-

অবিসংবাদিত মুহাদ্দিছ ও ফকীহ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল বলেছেনঃ 

عن عبدالله بن أحمد بن حنبل قال: سألت أبى فقلت ما تقول في على ومعاوية؟ فأطرق ثم قال: "إيش أقول فيهما إن عليا عليه السلام كان كثير الاعداء ففتش أعداؤه له عيبا فلم يجدوا ، فجاءوا إلى رجل قد حاربه وقاتله فأطروه كيادا منهم له." (كتاب الموضوعات: الجزء 2 ، الصفحة 24-25).

-

আরো অবিসংবাদিত মুহাদ্দিছ অবিসংবাদিত মুহাদ্দিছ ও ফকীহ ইমাম ইসহাক বিন রাহওয়াই ও ইমাম নাসায়ীও একই কথা বলেছেনঃ

قال الحافظ ابن حجر: «وقد ورد في فضائل معاوية أحاديث كثيرة لكنْ ليس فيها ما يصحّ من طريق الإسناد ، وبذلك جزم إسحاق بن راهويه والنسائي وغيرهما» (فتح الباري في شرح صحيح البخاري 7/131 ب 28 ذ ح 3766).

ذكر الذهبي في تذكرة الحفاظ (2/699) عن النسائي أنه قال: دخلت دمشق والمنحرف عن علي بها كثير فصنفت كتاب الخصائص رجوت أن يهديهم الله.

وذكر الذهبي في "سير أعلام النبلاء" 14/132: أن النَّسائي خرج من مصر في آخر عمره إلى دمشق ؛ فسئل بها عن معاوية وما جاء في فضائله فقال: ألا يرضى رأسا برأس حتى يُفَضَّل؟! قال: فما زالوا يدفعون في خصيتيه حتى أُخْرِجَ من المسجد.

وقال الذهبي في ترجمة النسائي في "سير أعلام النبلاء" 14/132: قيل له ـ أي النسائي ـ: ألا تخرج فضائل معاوية.. فقال: أي شيء أخرج: اللهم لا تشبع بطنه؟! فسكت السائل.

-

আরেক বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আমশ বলেছেন:

روى البلاذري في انساب الاشراف بسند صحيح قال : وحدثني عبد الله بن صالح العجلي عن عبيد الله بن موسى قال ذكر معاوية عند الاعمش فقالوا : كان حليما ، فقال الاعمش : كيف يكون حليما وقد قاتل عليا وطلب – زعم – بدم عثمان من لم يقتله ، وما هو ودم عثمان ، وغيره كان أولى بعثمان منه . [أنساب الأشراف ج5 ص137 ، تحقيق الدكتور سهيل زكار]. 

-

আরেক বিখ্যাত মুহাদ্দিছ মাসরুক বলেছেন:

روى البلاذري في انساب الأشراف عن ابي وائل قال : كنت مع مسروق بالسلسلة ، فمرت به سفائن فيه أصنام صفر تماثيل الرجال ، فسألهم عنها فقالوا : بعث بها معاوية إلى أرض السند والهند تباع له. فقال مسروق : لو لم أعلم أنهم يقتلونني لغرقتها ، ولكني اخاف ان يعذبوني ثم يفتنوني ، والله ما ادري أي الرجلين معاوية ، أرجل يئس من الآخرة فهو يتمتع من الدنيا ، أم رجل زين له سوء عمله. [أنساب الأشراف ج5 ص137 بتحقيق الدكتور سهيل زكار]. 

-

বিখ্যাত কাজী শুরাইক বলেছেন:

قال الذهبي في ميزان الاعتدال: ورويأ قوما ذكروا معاوية عند شريك فقيل : كان حليما . فقال شريك : ليس بحليم مَنْ سَفَّهَ الحق وقاتل عليا ... قلت : قد كان شريك من أوعية العلم . [ميزان الاعتدال ج2 ص274].

-

বিখ্যাত আদীব জাহেয বলেছেন:

قال الكاتب والأديب الشهير الجاحظ : كان عليٌّ لايستعمل في حربه إلا ماعدّله ووافق فيه الكتاب والسنة ، وكان معاوية يستعمل خلاف الكتاب والسنة ، ويستعمل جميع المكايد ، وجميع الخدع ، حلالها وحرامها ، ويسير في الحرب سيرة ملك الهند إذا لاقى كسرى ، وخاقان إذا لاقى زنبيل ، وفنغور إذا لاقى المهراج ، وعليّ يقول : لاتبدؤوهم بقتل حتى يبدؤوكم ، ولاتتبعوا مدبراً ولا تجهزوا على جريح ، ولا تفتحوا باباً مغلقاً. [رسائل الجاحظ ص 365 ( الرسائل السياسية ) تقديم وشرح الدكتور علي أبو ملحم]. 

-

আরেক মুহাদ্দিছ ও ফকীহ ইমাম ইসহাক বিন ইব্রাহীম আল-হানজলী বলেছেনঃ

"لا يصح عن النبي صلى الله عليه وسلم في فضل معاوية بن أبى سفيان شئ". (كتاب الموضوعات: الجزء 2 ، الصفحة 24-25).

-

আরেক মুহাদ্দিছ উজলুনী বলেছেনঃ

وقال العجلوني: «باب فضائل معاوية ليس فيه حديث صحيح» (كشف الخفاء 2/420).

-

আরেক মুহাদ্দিছ ইমাম হাকেম বলেছেনঃ

في سير أعلام النبلاء (17/175) وطبقات الشافعية الكبرى للسبكي (4/163): لما قيل للحاكم حدِّث بفضائل معاوية حتى يكفُّوا عنك ، فقال: لا يجيىء من قلبي.

-

আরেক বিখ্যাত মুহাদ্দিছ মুছন্নফে আবদুর রজ্জাকের লেখক ইমাম আবদুর রজ্জাক ছনআনী বলেছেনঃ

في سير أعلام النبلاء للذهبي (9/570) قال عبد الرزاق لرجل: لا تقذِّر مجلسنا بذكر ابن أبي سفيان.

-

ইমাম বোখারীর শায়খ আরেক মুহাদ্দিছ আলী বিন জাদ বলেছেনঃ

"مات والله معاوية على غير الاسلام". أخرجه إسحاق بن إبراهيم بن هاني النيسابوري فى "مسائل الإمام أحمد بن حنبل" (رقم 1866).

-

বিখ্যাত ‘হেদায়া’ গ্রন্থের লেখক আল্লামা বুরহানুদ্দীন মুরগীনানী হানাফী হেদায়ার আদাবুল কাজা (বিচারের নিয়ম-নীতি) পরিচ্ছেদে মুয়াবিয়াকে জালিম শাসকের উদাহরণ হিসেবে পেশ করেছেন।

বিখ্যাত ‘আহকামুল কুরআন’ গ্রন্থের লেখক আল্লামা আবু বকর আল-জাচ্ছাস সূরা বাকারার আয়াত لا ينال عهد الظالمين এর ব্যাখ্যায় মুয়াবিয়াকে জালিম শাসকদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।

-

দুনিয়ার কাক-কুকুর ও জাহিলরা এতদিন ধরে হয়তো ভাবছে, আমি অকারণে উমাইয়া রাজা মুয়াবিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে বকাবকি করছি। তারা ভাবছে আবুল হুসাইন আলেগাজী তাদের মতই দুনিয়ার কাক-কুকুর। তারা ভুলে যাচ্ছে, আবুল হুসাইন আলেগাজীর একজন রব, মওলা ও ইলাহ রয়েছেন, যিনি তাঁর জীবন-জীবিকা ও সম্মান-নিরাপত্তার একক মালিক। 

---

হে দুনিয়ার কাক-কুকুরেরা! আল্লাহর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি নীচের কথাটি এমনি এমনি বলেছেন!

عن أبي ذر رضى الله عنه ، قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من أطاعني فقد أطاع الله ومن عصاني فقد عصى الله ومن أطاع عليًّا فقد أطاعني ومن عصى عليًّا فقد عصاني». أخرجه الحاكم (3/131 ، رقم 4617) وقال : صحيح على شرط الشيخين.

অর্থঃ হযরত আবু যর -رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم বলেছেন, “যে আমার আনুগত্য করলো, সে আল্লাহর আনুগত্য করলো। আর যে আমার নাফরমানি করলো, সে আল্লাহর নাফরমানি করলো। অনুরুপ যে আলীর আনুগত্য করলো, সে আমার আনুগত্য করলো। আর যে আলীর নাফরমানি করলো, সে আমার নাফরমানি করলো।” [মুস্তাদরকে হাকেম (৪৬১৭)। মান ছহীহ]।

-

তিনি আরো বলেছেন:

عن البراء وأبى هريرة وعلى وطلحة وأبى أيوب وزيد بن أرقم وحبشي بن جنادة -رضي الله عنهم- ، أن النبي صلى الله عليه وسلم أَخَذَ بِيَدِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَقَالَ: «أَلَسْتُ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ؟» قَالُوا بَلَى. قَالَ: « أَلَسْتُ أَوْلَى بِكُلِّ مُؤْمِنٍ مِنْ نَفْسِهِ؟» قَالُوا بَلَى. قَالَ: «فَهَذَا وَلِيُّ مَنْ أَنَا مَوْلَاهُ اللَّهُمَّ وَالِ مَنْ وَالَاهُ اللَّهُمَّ عَادِ مَنْ عَادَاهُ». وتخريجه فيما يلى: 

حديث البراء: أخرجه ابن ماجه (رقم 116).

حديث أبى هريرة: أخرجه ابن أبى شيبة (6/369 ، رقم 32092). 

حديث على وطلحة معا: أخرجه الحاكم (3/419 ، رقم 5594). 

حديث أبى أيوب: أخرجه أحمد (5/419 ، رقم 23609) ، والطبرانى كما فى مجمع الزوائد (9/104) قال الهيثمى: رجال أحمد ثقات.

حديث على وزيد معا: أخرجه أحمد (1/119 ، رقم 961) ، و الطبرانى فى الكبير (5/170 ، رقم 4983) ، والضياء (2/106 ، رقم 481).

حديث حبشى بن جنادة: أخرجه الطبرانى فى الكبير (4/16 ، رقم 3514). قال الهيثمى (9/106): رجاله وثقوا.

-

এতগুলো দলীল পাওয়ার পরও মাদ্রাসা শিক্ষিত কোনো পাপিষ্ট ইতরামি করে বলবে, কয় মুয়াবিয়ার নিফাক ও ফিসকের দলীল কোথায়?

সত্য হলো, বাংলা অনুবাদ ছাড়া ওই পাপিষ্টরা সকল হাদীছ বুঝার যোগ্যতাই রাখে বলে আমার মনে হয় না।

-

মহান আল্লাহ আমাদেরকে ছহীহ জ্ঞান দান করুন।

-বাদশা মুয়াবিয়ার সমালোচনার লাভের আলোচনা

******

কমেন্টে এক পাঠক জানতে চেয়েছেন: আমীরে মুআবিয়ার সমালোচনা করলে আমাদের কি লাভ আর তিনি সমালোচনার উর্ধ্বে থাকলে কি ক্ষতি সেটা বুঝতে পারছি না।

-

জবাবে বললাম: সময়ের জালিম রাজা, স্বৈরচার ও সেক্যুলারদের বিরোধিতা করে মানুষের কাছে ফ্যাসিবাদমুক্ত ইসলামী শাসন ব্যবস্থার স্বরূপ তুলে ধরতে হলে প্রতিবাদী ও বিপ্লবী (পরিবর্তনকামী) মুসলমানদের জন্য মুয়াবিয়া-এজিদদের সাকিত বা সমালোচনা الإسقاط أو النقد করার বিকল্প নেই৷ কারণ, তাদের অনৈতিক ভোগদখলের রাজনীতির ইতিহাস দ্বারা উলামায়ে সূ গোষ্ঠী সময়ের ফেরাউন-এজিদদের পক্ষে সাফাই গেয়ে মুসলমানদের মাঝে অভিশপ্ত ইরজাঈ ও সেক‌্যুলার চিন্তার প্রসার ঘটাচ্ছে৷

-

আগ্রহী পাঠকেরা হাদীছের আলোকে মুরজিয়া ও কদরিয়া এবং মুরজিয়া চিন্তার প্রসারে বাদশা মুয়াবিয়ার ভূমিকা নিয়ে জানতে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন:

https://mobile.facebook.com/story.php?story_fbid=896183927407831&id=565108593848701&refid=46&__xts__%5B0%5D=12.%7B%22unit_id_click_type%22%3A%22graph_search_results_item_tapped%22%2C%22click_type%22%3A%22result%22%2C%22module_id%22%3A5%2C%22result_id%22%3A%22565108593848701%3A896183927407831%22%2C%22session_id%22%3A%22a6baf5883236ae42b4efbf8a9c62b413%22%2C%22module_role%22%3A%22FEED_POSTS%22%2C%22unit_id%22%3A%22browse_rl%3A516bcfec-8b28-46aa-8566-885cef8865ca%22%2C%22browse_result_type%22%3A%22browse_type_story%22%2C%22unit_id_result_id%22%3A896183927407831%2C%22module_result_position%22%3A0%2C%22result_creation_time%22%3A1564160564%2C%22result_latest_edit_time%22%3A1564567787%7D&__tn__=%2As


-

বাদশা মুয়াবিয়া সম্পর্কে বিপ্লবী সুন্নী আলিমদের দলীল ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি জানতে আরবী শিক্ষিতরা পড়ুন ইয়েমেনের নবী বংশীয় আলিম সাইয়িদ মুহাম্মদ বিন আকীল (ইন্তেকাল ১৩৫০ হিজরী) কর্তৃক রচিত সুখপাঠ্য বই 

النصائح الكافية لمن تولى معاوية

বইটির পিডিএফ লিঙ্ক:

https://archive.org/download/108764/108764.pdf

-

আরো পড়ুন! হযরত মুয়াবিয়া থেকে শেখ হাসিনাঃ মিল-অমিলের ক্ষেত্রগুলো

(৫৫৫০ শব্দের একটি নিরপেক্ষ অনুসন্ধান প্রসূত প্রামাণ্য প্রবন্ধ)

https://mobile.facebook.com/story.php?story_fbid=973716369490232&id=100005556347745&ref=Footer&_ft_=mf_story_key.973716369490232%3Atop_level_post_id.973716369490232%3Atl_objid.973716369490232%3Acontent_owner_id_new.100005556347745%3Athrowback_story_fbid.973716369490232%3Astory_location.4%3Athid.100005556347745%3A306061129499414%3A2%3A1514793600%3A1546329599%3A7302891444979424933&__tn__=%2As-R

-

-

আরো পড়ুন! আহলে বাইত ও ছাহাবীদের সমালোচনার বিধান

(সুস্থ চিন্তার সত্য অনুসন্ধানীদের জন্য রচিত)

 https://mobile.facebook.com/story.php?story_fbid=880514638974760&id=565108593848701&ref=Footer&_ft_=mf_story_key.1131698197025381%3Atop_level_post_id.1131698197025381%3Atl_objid.1131698197025381%3Acontent_owner_id_new.100005556347745%3Aoriginal_content_id.880514638974760%3Aoriginal_content_owner_id.565108593848701%3Athrowback_story_fbid.1131698197025381%3Apage_id.565108593848701%3Astory_location.4%3Apage_insights.%7B%22565108593848701%22%3A%7B%22page_id%22%3A565108593848701%2C%22actor_id%22%3A100005556347745%2C%22attached_story%22%3A%7B%22page_id%22%3A565108593848701%2C%22actor_id%22%3A565108593848701%2C%22dm%22%3A%7B%22isShare%22%3A0%2C%22originalPostOwnerID%22%3A0%7D%2C%22psn%22%3A%22EntStatusCreationStory%22%2C%22post_context%22%3A%7B%22object_fbtype%22%3A266%2C%22publish_time%22%3A1562086547%2C%22story_name%22%3A%22EntStatusCreationStory%22%2C%22story_fbid%22%3A%5B880514638974760%5D%7D%2C%22role%22%3A1%2C%22sl%22%3A4%7D%2C%22dm%22%3A%7B%22isShare%22%3A0%2C%22originalPostOwnerID%22%3A0%7D%2C%22psn%22%3A%22EntStatusCreationStory%22%2C%22role%22%3A1%2C%22sl%22%3A4%2C%22targets%22%3A%5B%7B%22actor_id%22%3A100005556347745%2C%22page_id%22%3A565108593848701%2C%22post_id%22%3A880514638974760%2C%22role%22%3A1%2C%22share_id%22%3A0%7D%5D%7D%7D%3Athid.100005556347745%3A306061129499414%3A2%3A0%3A1569913199%3A3489889715476624416&__tn__=%2AsH-R

-

মহান আল্লাহ আমাদেরকে সাহসী ও মুত্তাকী মুমিনদের অন্তর্ভূক্ত করুন।

-মুয়াবিয়া হযরতের প্রতি ইমাম বোখারীর মনোভাব 

*****

জিজ্ঞাসাঃ

Ismail Azhari

السلام عليكم

ইমাম বোখারী রহঃ সাহাবায়ে কেরামের আলোচনা করতে গিয়ে #বাবু_মানাকিবি_আবী বকর,, উমর, এইভাবে মানাকিব শব্দ দ্বারা সবার শান বয়ান করেছেন, কিন্ত মুয়াবিয়া রাঃ এর আলোচনা করতে গিয়ে #মানাকিব শব্দ টা বাদ দিয়ে #যিকরু মুয়াবিয়া শব্দ লিখেছেন,,, এর কারণ কি?? তিনি কি রাফেজী ছিলেন?

আজ-এর 12:27 AM-এ · Messenger থেকে পাঠানো হয়েছে

-

উত্তরঃ উনি রাফেজী হওয়ার প্রশ্নই আসে না৷ সত্য হলো, ইমাম বোখারী ও ইমাম মুসলিমসহ সকল মুহাদ্দিছ আহলে বাইতকে ভালোবাসতেন এবং তাঁদেরকে কষ্টদাতা জালেমানে বনু উমাইয়াকে ঘৃণা করতেন৷ 

উমাইয়া রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা মুয়াবিয়া হযরতের প্রতি #জামালী তবীয়তের ইমাম বোখারীর মনোভাব ছিল উদার৷ তিনি মুয়াবিয়া হযরতকে নাছেবীবান্ধবদের মত মাথায় যেমন তুলেননি, তেমনি শিয়াদের মত পায়ের নীচেও পিষেননি৷ 

মুয়াবিয়া হযরত নিয়ে তাঁর শিরোনাম থেকে অন্তত এটাই স্পষ্ট হয় (উনার এমন শিরোনামের কারণ জানতে আল্লামা আইনীর উমদাতুল কারী ও ইবনে হাজরের ফতহুল বারী দেখা যেতে পারে)৷ অর্থাত, তিনি মুয়াবিয়াকে সন্দযুক্তদের তালিকায় ফেলেছেন৷ তবে #জালালী তবিয়তের ইমাম মুসলিম মুয়াবিয়া হযরতের সরাসরি মান ক্ষুন্ন করে এমন কয়েকটি হাদীছ তাঁর গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন৷ আমি নিজেও জালালী তবীয়তের মানুষ হওয়ায় ইমাম মুসলিমের আনীত এসব হাদীছ দ্বারা প্রভাবিত৷

কিন্তু সালাফী ও সুন্নী/ছূফী লাইনের কিছু উগ্র ও কিছু মূর্খ বনী আদম পথভ্রষ্ট শিয়াদের প্রতি অতি বিদ্বেষবশত কিছু খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করিয়ে মুয়াবিয়া হযরতকে তাঁদের মাথায় তুলে নিয়ে নৃত্যকর্ম করছে৷ এই উগ্র জাহিল নৃত্যবাজদের সাথে দ্বিমত পোষণ করাতে আমি নিজেও তাদের অপপ্রচার ও অপবাদের শিকার হয়েছি৷ কিন্তু আমি ইলমে হাকীকতের স্পর্শ পাওয়ায় তারা আমার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি৷

---একজন বিপ্লবী ফকীহ আবু হানীফা এবং আমার মুয়াবিয়া বিরোধী হয়ে উঠার গল্প

(মেয়াদোত্তীর্ণ ক্ষেপণাস্ত্রের উপর বোমা, ব্যাপক বিধ্বংসী বোমা ও পারমাণবিক বোমা)

*****

এইতো ২০১৩ সালের কথা। মালিক মুয়াবিয়াকে রাফেজী/শিয়াদের তাকফীর'র জবাব দিতে গিয়ে আমি একটি তথ্যবহুল রচনা লিখে ফেলি। নাম দিই الظلم على معاوية بن أبى سفيان الحاكم (শাসক মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ানের প্রতি অবিচার)। 

এই প্রবন্ধে আমি মুয়াবিয়া হযরতকে দ্বিতীয় স্তরের ছাহাবী ও তার পিতা আবু সুফিয়ানকে তৃতীয় স্তরের ছাহাবী বলে উল্লেখ করি এবং দাবি করি যে, হযরত আলীর বিরুদ্ধে কৃত বিদ্রোহ উনার ভুল হলেও এটির কারণে তাকে গালি বা তাকফীর করা যাবে না। প্রবন্ধটি হয়তো আমার ওয়েবসাইটে এখনো বিদ্যমান। তবে সরিয়ে ফেলার ইচ্ছা আছে। ফেসবুকে লেখালেখির কারণে অনেক দিন ধরে আমার ওয়েবসাইটটা আপডেট করার সময়-সুযোগ পাচ্ছি না। 

কিন্তু আমার মাঝে পরিবর্তন আসে এই প্রবন্ধটি রচনার আড়াই বছর পরে ২০১৫ সালের শেষের দিকে। তখন আমি ফেসবুকে নতুন। পরিবর্তনের বৃক্ষটি এখন বিশাল বটগাছে রুপান্তরিত হলেও প্রথমে এটি ছিল সদ্যভূমিষ্ট শিশুর মত ক্ষুদ্র। এই পরিবর্তন আসা শুরু হয়েছিল ইসলামের আত্মা (মূল চেতনা) নিয়ে আমার উপলব্ধির উন্নতি থেকে। ওই সময় (২০১৫) আমি মুয়াবিয়াকে শুধু জালিম শাসক মনে করতাম। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ফেসবুকে আমি যখন বাদশা মুয়াবিয়াকে নিয়ে মুবাহালা করছিলাম, তখনও তাকে শুধু জালিম মনে করতাম। কিন্তু ওই মুবাহালার বরকতে মুয়াবিয়া নিয়ে আমার জ্ঞান ও উপলব্ধির পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়। মানে তখন মুয়াবিয়া সম্পর্কে আমার জানাশোনা বর্তমানের চেয়ে অনেক কম ছিল৷ ওই মুবাহালায় হাসান জামিল (সাইন্স ল্যাবরেটরী), লুতফুর ফরাজী (নরসিংদী) ও আরো কিছু আমাদের কওমী ভাই-ব্রাদার অংশ নিয়েছিলেন। মুবাহালায় আমি বলেছিলাম:

ইয়া আল্লাহ! ইয়া রহমান! ইয়া ফত্তাহ! ইয়া বছীর! ইয়া মুন্তাকিম! আমি মনে করি আমীর মুয়াবিয়া একজন জালিম বাগী। আমার এ বিশ্বাস যদি ভুল হয়, তাহলে আমাকে সঠিক বুঝ দান করুন। আর সঠিক বুঝের যোগ্য না হলে আমার লেখালেখি করার ক্ষমতা/যোগ্যতা ছিনিয়ে নেন, যাতে আমি আমীর মুয়াবিয়া নিয়ে আর লিখতে না পারি। আর যদি আমার বিশ্বাস সঠিক হয়, তাহলে যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপবাদ ও কুৎসা রটাচ্ছে, তাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আর যদি তারা সঠিক বুঝের যোগ্য না হয়, তাহলে তাদের লেখালেখির ক্ষমতা/যোগ্যতা ছিনিয়ে নিন, যাতে তারা আমিসহ কারো বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপবাদ ও কুৎসা রটাতে না পারে। 

آمين يا رب العالمين بحرمة سيد المرسلين ومولانا على وابنه الحسن والحسين.

-

আমি যেহেতু এই ক্ষেত্রে বছীরত بصيرة ও ছিদকের صدق উপর ছিলাম, তাই আল্লাহ আমাকে মুয়াবিয়ায় শুধু নয়, ইসলাম ও #এলিট শ্রেণীর দ্বন্দ্বের পুরো জগত সম্পর্কেই অনেক জ্ঞান দিয়েছেন। ফলে আমি পরের বছর (২০১৭) ইসলাম ও এলিট শ্রেণীর দ্বন্দ্ব নিয়ে বিশাল একটি প্রবন্ধ রচনা করতে সমর্থ হই, যা আমার ফেসবুক টাইমলাইনে চার কিস্তিতে প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর বাদশা মুয়াবিয়ার হাকীকত নিয়ে 'জিহাদ, কিতাল, নিফাক ও নাছেবী রাজার অণুগল্প' শিরোণামে একটি তথ্যবহুল প্রবন্ধ রচনা করে আমার ফেসবুক টাইমলাইনে পোস্ট করি৷ এতে আমাকে নিয়ে অনেক হৈচৈ শুরু হয়৷ 

-

এরপর আমার কাছে ধরা দেয় মুয়াবিয়ার নিফাকের জাহেরী ছহীহ অকাট্য দলীল (ছহীহ বোখারী ও ছহীহ মুসলিমসহ সিহাহ সিত্তার বিভিন্ন হাদীছ এবং নাসায়ীর খসায়েসে আলী, বাইহকারী দালায়েলুন নুবুওয়াহ ও আবু আবদুল্লাহ হাকিম নিশাপুরীর মুস্তাদরক আলাছ ছহীহাইন ইত্যাদির বিভিন্ন বর্ণনা)। তখন আমি 'ফাসিক, মুনাফিক ও পাবলিক মুফতীর গল্প' শিরোণামে মুয়াবিয়া বাদশাকে নিয়ে আরেকটি পোস্ট দিই৷ এর আগে সৌদি আরবের বিখ্যাত মুয়াবিয়া বিরোধী গবেষক শায়খ হাসান বিন ফরহান আল-মালেকীর বর্ণনাকৃত একটি পয়েন্ট ইসলাম ও এলিট শ্রেণীর দ্বন্দ্ব নিয়ে আমার উপলব্ধির মাত্রা বৃদ্ধি করে। তিনি তার এক লেখায় মক্কার এলিট আবু সুফিয়ান, তার ছেলে মুয়াবিয়া ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের নামধারী মুসলিম প্রমাণ করতে সূরা ইয়াসীনের এই আয়াত প্রমাণ হিসেবে পেশ করেনঃ

لَقَدْ حَقَّ الْقَوْلُ عَلَى أَكْثَرِهِمْ فَهُمْ لا يُؤْمِنُونَ

অর্থঃ “তাদের অধিকাংশের দুর্ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে। ফলে তারা ঈমান আনবে না।” [সূরা ইয়াসীনঃ ৭]। । 

তিনি বলেছেন, এই আয়াত কুফফারে মক্কার ব্যাপারে নাজিল হওয়া নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। ফলে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, মক্কার যেসব লোক আল্লাহ্‌র রসূল হযরত মুহাম্মদকে সঃ তাঁর মক্কার দাওয়াতী জিন্দেগীর ১৩ ও মদীনার শাসন জীবনের ৭ বছর পর্যন্ত (নুবুওয়াত থেকে মক্কা বিজয় পর্যন্ত লাগাতার ২০ বছর) কষ্ট দিয়েছে, তারা মক্কা বিজয়ের পরে হঠাৎ করে হযরত মুহাম্মদ সঃ এর আন্তরিক ভক্ত হয়ে যাবে, তা অবিশ্বাস্য। বরং সত্য হলো, তারা #সামাজিক ও #রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মানুষের দল বদলের ন্যায় ইসলামে প্রবেশ করেছে। এই কারণে তাদের অনেকেই ইসলামের মূল্য উদ্দেশ্য 'আত্মশুদ্ধি' মোটেই অর্জন করতে পারেনি। ফলে তারা জাহেলী তরিকায় ক্ষমতা লাভের জন্য তাদের যাবতীয় কৌশল ব্যবহার করেছে৷

-

প্রসঙ্গত, গতানুগতিক জাহেরী #ফিকাহ/ফকীহদের ফতোয়া মতে বাংলাদেশসহ বর্তমান মুসলিম দেশগুলোর মুসলিমরা সকলে মুমিন হলেও বাস্তবতা হলো, এসব মুসলিমদের অধিকাংশই নামধারী মুসলিম। কিন্তু গতানুগতিক জাহেরী ফকীহরা কখনো এই সত্য স্বীকার করে বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশগুলোকে দারুল হারব ফতোয়া দিতে পারবে না। অন্য কথায় তারা ইসলামী রাষ্ট ও সমাজ ব্যবস্থার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিরোধী #সেক্যুলার দলসমূহ ও তাদেরকে ভোটদানকারী মুসলিমদেরকে কাফির বলে ফতোয়া দিতে পারবে না। কারণ, এই কাজ তারা করলে সমাজের তাগুত/ফেরাউনেরা তাদের মাদ্রাসা ও #ইফতা ফার্মগুলো সব গুড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে জেলে আবদ্ধ করবে। 

তো এই ভয় তাদেরকে এখন যেমন সত্য #উপলব্ধি বা প্রকাশ করা থেকে দূরে রাখছে, তেমনি ছাহাবীদের আমলেও অনেকে মুয়াবিয়াসহ বনু উমাইয়ার রাজাদের ব্যাপারে সত্য প্রকাশ থেকে দূরে থাকতো। এমনিক আব্বাসীদের আমলেও। কিন্তু তখন ইমাম আবু হানীফার মথ কিছু #বিপ্লবী ফকীহও ছিলেন। মুজাহিদীনে আহলে বাইতের অকৃত্রিম সমর্থক ইমাম আবু হানীফা আব্বাসী খলীফা আবু জাফর মনছুরের দেওয়া বিচারপতির পদ প্রত্যাখ্যা করায় তাকে জেলে ভরা হয়েছিল এবং সেখানে বিষ প্রয়োগে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। অবশ্য এর আগে বনু উমাইয়ার আমলেও তাকে বিচারপতির পদ গ্রহণের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে উনার ছাত্র আবু ইউসুফ আব্বাসী খলীফা আবু জাফর মনছুরের ওই পদ গ্রহণ করেছিলেন। এখন আপনি ইচ্ছা করলে কাজী আবু ইউসুফকে গতানুগতিক ফকীহ বলতে পারেন। তবে সত্য হলো, ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ সাধারণত গতানুগতিক ও ইতিহাসের অংশই হয়ে থাকেন; ইমাম আবু হানীফার মত বিপ্লবী বা ইতিহাস সৃষ্টিকারী হন না। তো ইমাম আবু হানীফার মত এরকম আরো কিছু বিপ্লবী ফকীহ ও মুহাদ্দিছ হলেন, ইমাম হাসান বসরী, ইমাম সুফিয়ান সওরী, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ইমাম আবদুর রজ্জাক সনআনী, মুহাদ্দিস আলী ইবনুল জাদ, মুহাদ্দিস আমশ, মুহাদ্দিস ইসহাক বিন রাহওয়াই, ইমাম মুসলিম, ইমাম নাসায়ী, ইমাম বাইহাকী ও ইমাম হাকেম এবং হানাফী ফিকাহর কিতাব 'হেদায়া'র মুছান্নিফ আল্লামা বুরহানুদ্দীন মুরগীনানী, হানাফী 'আহকামুল কোরআন'র মুছান্নিফ আল্লামা আবু বকর আল-জাসসাস, বিখ্যাত হাম্বলী আলেম আবদুর রহমান ইবনুল জওযী ও 'শরহে আকায়েদে নাসাফী'র লেখক আল্লামা সাদুদ্দীন তাফতাজানী ইসলামী সিয়াসত নিয়ে সাহসী কথা বলেছেন এবং বাদশা মুয়াবিয়ার প্রতি প্রকাশ্য নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তন্মধ্যে শীর্ষস্থানীয় তাবেয়ী ইমাম হাসান বসরী বলেছেনঃ

عن الصقعب بن زهير ، عن الْحَسَن ، قَالَ: أربع خصال كن فِي مُعَاوِيَة ، لو لَمْ يَكُنْ فِيهِ منهن إلا واحدة لكانت موبقة: انتزاؤه عَلَى هَذِهِ الأمة بالسفهاء حَتَّى ابتزَّها أمرها بغير مشورة مِنْهُمْ وفيهم بقايا الصحابة وذو الفضيلة ، واستخلافه ابنه بعده سكيراً خميراً ، يلبس الحرير ويضرب بالطنابير ، وادعاؤه زياداً ، وقد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: الولد للفراش ، وللعاهر الحجر ، وقتله حُجراً ، ويلاً لَهُ من حُجر! مرتين. أخرجه الطبري (ج5 ص279) ، ط دار المعارف – مصر ، ت: محمد أبو الفضل إبراهيم.

অর্থঃ সাকআব বিন জুহাইর থেকে বর্ণিত, হযরত হাসান বসরী বলেছেন, “মুয়াবিয়ার এমন চারটি কাজ ছিল, যেগুলোর একটি করলেও সেটি তার জন্য ধ্বংসাত্মক বিবেচিত হতো। এক. ছাহাবা কেরামের অনেকে জীবিত ও গুণ সম্পন্ন লোকজন থাকা সত্ত্বেও নির্বোধদের (দীনি দৃষ্টিকোণ থেকেই নির্বোধ) নিয়ে উম্মতের উপর চড়াও হওয়া এবং শূরা ছাড়া ক্ষমতাসীন হওয়া। দুই. তার মাদকাসক্ত ছেলেকে তার স্থলাভিষিক্ত করে যাওয়া, যে রেশমী কাপড় পরিধান করতো ও ঢাক-ঢোল পেটাতো। তিন. জিয়াদকে তার ভাই বলে দাবি করা। অথচ রসূলুল্লাহ ছঃ বলেছেন, “জেনার সন্তান মায়ের সাথেই সম্পৃক্ত হবে (মায়ের নামে ডাকতে হবে) এবং জেনাকারীর শাস্তি হবে পাথর মারা।” চার. হুজরকে (একজন আবিদ ছাহাবী) হত্যা করা। হুজর তার জন্য দুর্ভোগের কারণ হবে।” কথাটি তিনি দুইবার বললেন। [সুত্রঃ তারীখে তাবারী (৫/২৭৯)]৷

-

ইমাম বোখারীর শায়খ (ছহীহ বোখারীর বিশিষ্ট রাবী) মুহাদ্দিছ আলী বিন জাদ বলেছেনঃ

"مات والله معاوية على غير الاسلام". أخرجه إسحاق بن إبراهيم بن هاني النيسابوري فى "مسائل الإمام أحمد بن حنبل" (رقم 1866).

অর্থ: “আল্লাহর কসম! মুয়াবিয়ার মৃত্যু হয়েছে অনৈসলামের উপর।” [সূত্র: আল্লামা ইসহাক নিসাপুরী সঙ্কলিত মাসায়েলে ইমাম আহমদ (বর্ণনা নম্বর ১৮৬৬)]। 

-

অন্যদিকে হযরত আলী বিরোধীদের মুয়াবিয়ার পক্ষে হাদীছ জাল করা প্রসঙ্গে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল বলেছেন:

عن عبدالله بن أحمد بن حنبل قال: سألت أبى فقلت ما تقول في على ومعاوية؟ فأطرق ثم قال: "إيش أقول فيهما إن عليا كان كثير الاعداء ففتش أعداؤه له عيبا فلم يجدوا ، فجاءوا إلى رجل قد حاربه وقاتله فأطروه كيادا منهم له." (كتاب الموضوعات: الجزء 2 ، الصفحة 24-25).

অর্থঃ আবদুল্লাহ বিন আহমদ বিন হাম্বল বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, আলী ও মুয়াবিয়ার ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তখন তিনি একটু চিন্তা করলেন। অতঃপর বললেন, তাদের ব্যাপারে কি বলবো। বস্তুত আলী প্রচুর শত্রু ওয়ালা ছিলেন। তো তাঁর শত্রুরা তাঁর দোষ খুঁজে বের করার চেষ্টা করলো। কিন্তু তারা কোনো দোষ বের করতে পারলো না। ফলে তারা এমন একটি লোকের পথ ধরলো, যে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও মারামারি করেছে। তো তারা তাঁর (আলীর) প্রতি চক্রান্তবশত তার (মুয়াবিয়ার) প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করলো (জাল হাদীছ রচনা করলো)।” [ইবনুল জওযীর কিতাবুল মওজূয়াত (২/২৪-২৫)]

-

আর ইমাম ইসহাক ও ইমাম নাসায়ী বলেছেন, মুয়াবিয়ার ফযীলত বিষয়ে যে হাদীছগুলো বর্ণিত হয়েছে, তাতে কোনো ছহীহ হাদীছ নেই (সবটিই ভেজাল)৷ ছহীহ বোখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফতহুল বারী’তে রাজা মুয়াবিয়ার আলোচনা ذكر অধ্যায়ের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী লিখেছেনঃ

"وقد ورد في فضائل معاوية أحاديث كثيرة لكنْ ليس فيها ما يصحّ من طريق الإسناد ، وبذلك جزم إسحاق بن راهويه والنسائي وغيرهما". فتح الباري في شرح صحيح البخاري (7/131 ب 28 ذ ح 3766).

অর্থঃ “মুয়াবিয়ার ফযীলত নিয়ে অনেক হাদীছ এসেছে। তবে এতে ছহীহ সনদের কোনো হাদীছ নেই। বিষয়টি ইসহাক বিন রাহওয়াই ও নাসাঈসহ অন্যান্যরা জোর جزم দিয়ে বলেছেন।” [ফতহুল বারীঃ ৭/১৩১]৷

-

তবে সত্য হলো, ইমাম মুসলিম (দেখুন ‘মুনাফিকের বৈশিষ্টি ও বিধানাবলী’ শীর্ষক অধ্যায় বর্ণিত ২৭৭৯ নম্বর হাদীছ) ও ইমাম বাইহাকীর (দেখুন উনার রচিত ‘দালায়েলুন নুবুওয়াহ’র পঞ্চম খন্ডের ২৬১ নম্বর পৃষ্ঠা) মত মানুষ যেখানে মুয়াবিয়াকে ছাহাবা যুগের শীর্ষ ১২ মুনাফিকের অন্যতম বলে প্রমাণ করেছেন (এটি তাঁরা করেছেন আল্লাহ্‌র রসূল সঃ এর পক্ষ থেকে ছাহাবা যুগের কিছু মুনাফিকের নাম-পরিচয় প্রাপ্ত একমাত্র ছাহাবী হযরত হুযাইফার কথার আলোকে), সেখানে সাতশত বছর পরের আল্লামা ইবনে তাইমিয়া কিংবা চৌদ্দশত বছর পরের মাওলানা তাকী উসমানীর মত #চুনুপুটিদের জন্য বাদশা মুয়াবিয়ার পক্ষে সাফাই গাওয়ার আর কিছু থাকে না। এখন কথা হলো, গতানুগতিক কোনো ফকীহ বা মুহাদ্দিসের কোনো কথা দ্বারা যদি আপনার মনে হয় যে, মুয়াবিয়া মহান কাতিবে ওহী ও ইসলামের পঞ্চম খলীফা, তাহলে আপনার মত এলিট পূজারী নিম্নমেধার ভীতু ও অসৎ লোকের সাথে আমার কোনো কথা নেই। 

সাদৃশ্যবাদী المشبهة সালাফীদেরকে একজন আলিম বলেছিলেন, ‘তোমাদের কথা মত আল্লাহ যদি কেয়ামতের দিন আরশে চড়ে বিচার করতে না আসেন, তখন তোমরা কি করবে?’ এ কথার অনুসরণে এলিট পূজারী ও বাদশা মুয়াবিয়ার প্রতি ভক্তি পোষণকারীদেরকে আমি বলতে চাই, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ যদি মুয়াবিয়াকে মুনাফিকদের সাথে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন, তখন তোমরা কি করবে?’ 

সত্য হলো, তোমরা যারা হুজুর ও ইসলামপন্থী হয়েও ব্যক্তিগত জীবন ও বোধ-বিশ্বাসে আমীর মুয়াবিয়া ও শেখ হাসিনার চেয়েও অধম ও নির্বোধ, তারা দুনিয়ার রাজনীতির মারপ্যাঁচ ও ইসলামের মর্ম কিভাবে বুঝবে?

-

আমার অল্পবয়সী ভাতিজারা! তোমরাই বলো, বিচার করার ক্ষেত্রে বিচারকের ইজতেহাদ জনিত ভুল আর হযরত উসমানের ওয়ারিস না হয়েও তার খুনের বিচারের দাবিতে বছরের পর বছর হযরত আলীর মত একজন খলীফা রাশেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কি একই কথা? এটা কি হানাফী-শাফেয়ীদের 'মনি পাক-নাপাক'র মত ছোটখাটো বিষয়? তাছাড়া তোমরা কি জান, ৪০ হিজরীতে হযরত হাসান যখন মুয়াবিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে বাইয়াত দিয়ে তাকে মুসলিম জাহানের একক কর্তা বানিয়ে দেন, তখন তিনি আয়েশা বিনতে উসমানের দাবি সত্ত্বেও তাঁর পিতার জীবিত খুনীদের বিচার করা থেকে বিরত থাকেন! আর তার মানে হলো, খলীফা রাশেদ আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে রাজা মুয়াবিয়া কথিত মুজতাহিদ নয়; নির্ভেজাল ক্ষমতালোভী ছিলেন৷ দেখো, ইবনে কাসীরের উদ্ধৃত বর্ণনা:

وَقَالَ اللَّيْثُ: حَدَّثَنِي عُلْوَانُ بْنُ دُوَادَ ، عَنْ صَالِحِ بْنِ كَيْسَانَ ، أَنَّ مُعَاوِيَةَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ أَوَّلَ حَجَّةٍ حَجَّهَا بَعْدَ اجْتِمَاعِ النَّاسِ عَلَيْهِ ، فَلَقِيَهُ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ وَرِجَالٌ مِنْ قُرَيْشٍ ، فَتَوَجَّهَ إِلَى دَارِ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ ، فَلَمَّا دَنَا إِلَى بَابِ الدَّارِ صَاحَتْ عَائِشَةُ بِنْتُ عُثْمَانَ ، وَنَدَبَتْ أَبَاهَا ، فَقَالَ مُعَاوِيَةُ لِمَنْ مَعَهُ: انْصَرِفُوا إِلَى مَنَازِلِكُمْ فَإِنَّ لِي حَاجَةً فِي هَذِهِ الدَّارِ. فَانْصَرَفُوا وَدَخَلَ ، فَسَكَّنَ عَائِشَةَ ، وَأَمَرَهَا بِالْكَفِّ ، وَقَالَ لَهَا: يَا بِنْتَ أَخِي ، إِنَّ النَّاسَ أَعْطَوْنَا سُلْطَانًا فَأَظْهَرْنَا لَهُمْ حِلْمًا تَحْتَهُ غَضَبٌ ، وَأَظْهَرُوا لَنَا طَاعَةً تَحْتَهَا حِقْدٌ ، فَبِعْنَاهُمْ هَذَا ، وَبَاعُونَا هَذَا ، فَإِنْ أَعْطَيْنَاهُمْ غَيْرَ مَا اشْتَرَوْا شَحُّوا عَلَى حَقِّهِمْ ، وَمَعَ كُلِّ إِنْسَانٍ مِنْهُمْ شِيعَةٌ ، وَهُوَ يَرَى مَكَانَ شِيعَتِهِمْ ، فَإِنْ نَكَثْنَاهُمْ نَكَثُوا بِنَا ، ثُمَّ لَا نَدْرِي أَتَكُونُ لَنَا الدَّائِرَةُ أَمْ عَلَيْنَا؟ وَأَنْ تَكُونِي ابْنَةَ عُثْمَانَ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَكُونِي أَمَةً مِنْ إِمَاءِ الْمُسْلِمِينَ ، وَنِعْمَ الْخَلَفُ أَنَا لَكِ بَعْدَ أَبِيكِ". (البداية والنهاية: 10/ 433). 

-

আর খলীফা উমর মুয়াবিয়াকে শামের প্রশাসক পদে চাকরি দেওয়ায় মুয়াবিয়া যদি উত্তম ছাহাবী হয়ে যায়, তাহলে ফরিদ মাসউদকে আল্লামা আসআদ মাদানীর মত মানুষ খেলাফত দেওয়া সত্ত্বেও তিনি কেন অধম/ভন্ড দেওবন্দী হবেন? আর যেই আবদুল মালিক সাহেব তাঁর বইয়ে কওমী মহলে দীর্ঘদিন ধরে (১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী আমল থেকে) সেক্যুলীগ বান্ধব হিসেবে সুপরিচিত এই ফরিদ মাসউদ সাহেবের অভিমত ও দোয়া নেন, তিনি কতটুকু সাহসী ফকীহ হতে পারেন, তাও কি আপনারা ভেবে দেখেছেন? সকলে মনে রাখবেন, মালিক মুয়াবিয়া ও শায়খ নজদীকে চেনার জন্য গতানুগতিক ফকীহ, গতানুগতিক ইসলামপন্থী কিংবা দুর্বল ঈমান ও নিম্নমেধার ইসলামী লেখক হওয়া যথেষ্ট নয়। 

তাছাড়া মুয়াবিয়াবাদী বনী আদমগুলো কি জানে যে, ছহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনায় হযরত উমর নিজে হযরত উছমান ও আলীর সম্ভাব্য বিদ্রোহকারীদেরকে আল্লাহর দুশমন ও কাফির বলে আখ্যায়িত করেছেন? দেখুন হযরত উমরের ওসীয়ত মূলক উক্তি: 

فَإِنْ عَجِلَ بِي أَمْرٌ ، فَالْخِلاَفَةُ شُورَى بَيْنَ هَؤُلاَءِ السِّتَّةِ ، الَّذِينَ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَنْهُمْ رَاضٍ ، وَإِنِّي قَدْ عَلِمْتُ أَنَّ أَقْوَامًا يَطْعَنُونَ فِي هَذَا الأَمْرِ ، أَنَا ضَرَبْتُهُمْ بِيَدِي هَذِهِ عَلَى الإِسْلاَمِ ، فَإِنْ فَعَلُوا ذَلِكَ ، فَأُولَئِكَ أَعْدَاءُ اللهِ الْكَفَرَةُ الضُّلاَّلُ. 

অর্থঃ “যদি আমার মৃত্যু হয়, তাহলে খেলাফত এই ছয়জনের মাঝে পরামর্শক্রমে নির্ধারিত হবে। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন তাদের উপর সন্তুষ্ট থাকা অবস্থায়। আর আমি জেনেছি এ ব্যাপারে কিছু লোক তা‘ন (যোগ্যদের প্রতি আক্রমণ) করবে। ইসলাম গ্রহণের পর ওদেরকে আমি আমার এই হাতে মেরেছি। যদি তারা তা করে বসে, তাহলে জেনে রাখবে তারা আল্লাহর দুশমন, কাফির (অবাধ্য) ও পথভ্রষ্ট।” [ছহীহ মুসলিম (৫৬৭)]। 

-

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি আমি শুনেছি, #যুবাইর নামের এক যুবক লেখক চিন্তার ক্ষেত্রে গতানুগতিকতার বাইরে যাবার চেষ্টা করায় ফিকহী গবেষক মাওলানা আবদুল মালেক সাহেবের ভাইয়ের নিয়ন্ত্রিত মারকাজুদ দাওয়া আল-ইসলামিয়ার শিক্ষকতা থেকে তাকে বিদায় নিতে হয়েছে।

-

সত্য হলো, হযরত মুহাম্মদ সঃ পৃথিবীতে ইসলামী রাজতন্ত্র কিংবা স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আগমন করেননি। তিনি ইসলামী হামদর্দ সমাজের একটি নমুনা দেখিয়ে গিয়েছেন মাত্র। রাজতন্ত্র কিংবা স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে তিনি ইবনে সালুলসহ তাঁর পরোক্ষ প্রতিপক্ষ মদীনার মুনাফিকদের হত্যার ব্যবস্থা নিতেন, যেমন বাদশা মুয়াবিয়া তাঁর মুমিন প্রতিপক্ষ হযরত হাসানকে দুনিয়া থেকে সুকৌশলে বিদায় করে দেওয়ার ব্যবস্থা নেন।

-

তবে এর চেয়ে আরো কঠিন সত্য হলো, মুয়াবিয়ার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিগত ১৪০০ চন্দ্রবর্ষে এমন মুসলিম শাসক খুব কমই এসেছে, যারা মুত্তাকী ছিলেন। এই নন-মুত্তাকীদেরকে ইসলামী পরিভাষায় ফাসিক-ফাজির বলা হলেও বাস্তবতা হলো, তারা জিন্দীক তথা প্রকাশ্য মুনাফিকের তালিকাভুক্ত। হক্কানী আলিমদের মতামত হলো, কোনো আলিমের যদি এসব ফাসিক-ফাজির শাসকদের সমালোচনা করার সাহস না থাকে, তাহলে তার উচিত, তাদের পক্ষে যায় এমন কোনো কথা বলা থেকে বিরত থাকা।

-

প্রসঙ্গত, বিখ্যাত হানাফী ফকীহ আল্লামা আবু বকর আল-জাসসাস তাঁর রচিত ‘আহকামুল কোরআন’- এ সূরা বাকারার ইমামত/নেতৃত্ব সংক্রান্ত ১২৪ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, “ইমাম আবু হানীফা ফাসিকের ইমামতি/শাসন মেনে নেওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন। তার নামে ফাসিকের নেতৃত্ব জায়েয হওয়ার যে কথা বলা হয়, তা ভিত্তিহীন। তিনি শাসককে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা ওয়াজিব মনে করতেন। এতে (আদেশ-নিষেধে) কাজ না হলে তিনি লড়াইয়ের পক্ষে মত দিতেন। তাঁর কথা মেনে ইব্রাহীম সায়েগ নামের খোরাসানের একজন ফকীহ সেখানকার শাসক আবু মুসলিম খাওলানীকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করতে গিয়ে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। তাছাড়া ইমাম আবু হানীফা নিজেই ইমাম জাইদ বিন আলীকে বনু উমাইয়ার বিরুদ্ধে সহযোগিতা করতেন এবং গোপনের তার পক্ষে জনমত তৈরি করতেন। একই ভাবে আব্বাসীদের আমলেও তিনি মুহাম্মদ (নফসে জাকিয়া) ও ইব্রাহীম নামের আরো দুই মুজাহিদীনে আহলে বাইতকে জালিম আব্বাসীদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন।” (সারমর্ম, বিস্তারিত দেখতে মূল কিতাব দেখুন৷ কিতাবটি কওমী মাদ্রাসার উচ্চতর তাফসীর বিভাগের পাঠ্য)৷

-

আল্লামা জাসসাসের বক্তব্য দেখে আমার মনে হচ্ছে, ইমাম আবু হানীফা রহ. তৎকালীন তালেবান-আলকায়েদার পক্ষের লোক ছিলেন। তাছাড়া জাসসাস ছাহেবের কথা দেখে তাকেও #তালেবানপন্থী ফকীহ মনে হচ্ছে। 

-

শেষ কথা, ভাই পাবলিক মুফতী! আপনি সুবিধাবাদী হয়ে নিজের আখেরাতের অসুবিধা করছেন না তো? দুনিয়ার ক্ষুধা, বঞ্চনা ও জেলকে এত ভয় পেলে #হূরে ঈনের জান্নাতের মালিক হবেন কিভাবে?

-

আর দুনিয়ালোভী ইসলামপন্থীদের বলবো, তোমরা কি দুনিয়ার ভোগবিলাসের জন্য ইসলামী বিপ্লব চাও নাকি আখেরাতের জান্নাত লাভের জন্য? যদি দুনিয়ার ভোগবিলাসের জন্য ইসলামী বিপ্লব চাও, তাহলে জেনে রেখো, তোমরা মুয়াবিয়ার খালাতো ভাই এবং তোমাদের হাশর হবে তাঁর সাথেই। আবু বকর, উমর, উছমান ও আলীর সান্নিধ্য তোমরা পাবে না। জেনে রেখো, সাইয়েদ #মওদূদী ও সাইয়েদ কুতুবের প্রতি তোমাদের ভূয়া ও অজ্ঞতাপূর্ণ ভক্তি সেদিন তোমাদের কোনো উপকারে আসবে না। 

--

সতর্কীকরণঃ বাদশা মুয়াবিয়া সম্পর্কিত উপর্যুক্ত বিধ্বংসী বোমাগুলো পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া যে কেউ যেখানে-সেখানে ব্যবহার করতে যাবেন না৷ এতে আপনার গায়ে বিরোধীদের মেয়াদোত্তীর্ণ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত এসে লাগতে পারে, যার মোকাবিলা আপনি হয়তো সহজে করতে পারবেন না৷

-

মহান আল্লাহ আমাদেরকে সত্যবাদী মুমিনদের অন্তর্ভূক্ত করুন।

-তাগুত আবদুল মালিক, মহাখুনী হাজ্জাজ, বিপ্লবী আবদুল্লাহ বিন জুবাইর, কল্যাণকামী আবদুল্লাহ বিন উমর, দুঃসাহসী আসমা বিনতে আবু বকর এবং মুনাফিকদের মুমিনকে ধর্মদ্রোহী বলার সংস্কৃতি

*****

আবদুল মালিক বিন মরওয়ান হলো মুয়াবিয়া (সিনিয়র), এজিদ বিন মুয়াবিয়া, মুয়াবিয়া (জুনিয়র) বিন এজিদ ও মরওয়ানের পর পঞ্চম উমাইয়া বাদশা। বিখ্যাত হানাফী আলেম আল্লামা আবু বকর জাসসাসের মতে আরবদের ইতিহাসে আবদুল মালিকের চেয়ে ভয়ঙ্কর কোনে জালিম, জঘন্য কোনো কাফির ও বড় কোনো দৃর্বৃত্ত শাসক আর আসেনি। একই ভাবে তার গভর্ণর/প্রশাসকদের মাঝে হাজ্জাজের চেয়ে জঘন্য কোনো কাফির, ভয়ঙ্কর কোনো জালিম ও বড় কোনো দৃর্বৃত্ত ব্যক্তি আর ছিল না। আহকামুল কোরআনে সূরা বাকারার ১২৪ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় দৃশ্যমান জাসসাসের বক্তব্যটি কপি করছিঃ 

ولم يكن في العرب ولا آل مروان أظلم ولا أكفر ولا أفجر من عبد الملك، ولم يكن في عماله أكفر ولا أظلم ولا أفجر من الحجاج. وكان عبد الملك أول من قطع ألسنة الناس في الأمر  بالمعروف والنهي عن المنكر، صعد المنبر فقال: "إني والله ما أنا بالخليفة المستضعف يعني عثمان ولا بالخليفة المصانع يعني معاوية وإنكم تأمروننا بأشياء تنسونها في أنفسكم; والله لا يأمرني أحد بعد مقامي هذا بتقوى الله إلا ضربت عنقه".

অর্থঃ “আরবদের মাঝে ও মরওয়ানের বংশে আবদুল মালিকের চেয়ে ভয়ঙ্কর কোনে জালিম, জঘন্য কোনো কাফির ও বড় কোনো দৃর্বৃত্ত শাসক আর আসেনি। একই ভাবে তার গভর্ণর/প্রশাসকদের মাঝে হাজ্জাজের চেয়ে জঘন্য কোনো কাফির, ভয়ঙ্কর কোনে জালিম ও বড় কোনো দৃর্বৃত্ত ব্যক্তি আর ছিল না। এই আবদুল মালিকই সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধের কারণে সর্বপ্রথম মানুষের জিহবা কেটেছিল। মিম্বরে উঠে সে ঘোষণা দিয়েছিল, “আল্লাহর কসম! আমি দুর্বলমনা খলীফা তথা উসমান নই এবং নই আমি তোষামুদি খলীফা তথা মুয়াবিয়াও। তোমরা আমাকে এমন বিষয়ের আদেশ দিয়ে থাকো, যেগুলো তোমরা নিজেরা করতে ভুলে যাও। আল্লাহর কসম! আজকে থেকে কেউ আমাকে আল্লাহকে ভয় করতে বললে আমি তার শিরচ্ছেদ করবো।” 

-

আবদুল্লাহ বিন যুবাইর হলেন বিশিষ্ট মুহাজির ছাহাবী হযরত যুবাইর ইবনুল আওয়ামের ছেলে, নবীজি সঃ এর ফুফু সফিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিবের ছেলের নাতি, হযরত আবু বকরের মেয়ের নাতি এবং মদীনায় জন্মগ্রহণকারী মুহাজিরদের সন্তানদের প্রথম ব্যক্তি। ৬০ হিজরীতে মৃত্যুর আগে মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান যখন ছেলে এজিদের খেলাফতের জন্য মদীনাবাসীর বাইয়াত নিতে গভর্ণর মরওয়ানকে আদেশ দেন, তখন নেতৃস্থানীয় যেসব মুহাজির তনয়েরা এটির প্রকাশ্য বিরোধিতা করেন, তাদের মধ্যে হযরত আবু বকরের ছেলে আবদুর রহমান, হযরত উমরের ছেলে আবদুল্লাহ, হযরত আলীর ছেলে হুসাইন ও হযরত যুবাইরের ছেলে আবদুল্লাহ ছিলেন অন্যতম। তন্মধ্যে আবদুর রহমান বিন আবু বকর মরওয়ানের সাথে ঝগড়া করে মক্কায় রওনা হন এবং মক্কার পৌঁছার একটু আগে পথেই ইন্তেকাল করেন। মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর এজিদ রাজা হয়ে মদীনায় নতুন আমেল/গভর্ণর নিয়োগ দেয়। গভর্ণর তার রাজা এজিদ বিরোধীদের কাছে এজিদের জন্য বাইয়াত চাইলে হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর রক্তপাত এড়াতে এজিদকে বাইয়াত দেন। কিন্তু হযরত হুসাইন ও হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর এজিদকে বাইয়াত না দিয়ে মদীনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান। এর কয়েক মাস পর ৬১ হিজরীতে হযরত হুসাইন এজিদ বাহিনী কর্তৃক কারবালায় নিহত হলে পুরো মুসলিম দুনিয়া দামেস্কের বনু উমাইয়ার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তখন আবদুল্লাহ বিন যুবাইর মক্কাকে উমাইয়াদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেন। এতে এজিদ ক্ষুব্ধ হয়ে উনার কাছে লোকজন ও বাহিনী পাঠিয়ে বশে আনার চেষ্ট করে এবং ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় ৬৩ হিজরীতে মদীনাবাসী এজিদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। বাদশা এজিদ তার সেনা কর্মকর্তা মুসরিফ ওরফে মুসলিম বিন উকবার নেতৃত্বে মদীনায় বাহিনী পাঠিয়ে মদীনাবাসীর উপর ভয়াবহ খুন-ধর্ষণ চালায়। অতঃপর ওই মুসরিফ আবদুল্লাহ বিন যুবাইরকে শায়েস্তা করার জন্য মক্কা অভিমুখে রওনা হয়। কিন্তু অভিশপ্ত মুসরিফ পথেই মারা যায়। অতঃপর তার স্থলাভিষিক্ত হয় হুছাইন বিন নুমাইর এবং সে গিয়ে আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের নিয়ন্ত্রিত মক্কায় অবরোধ আরোপ করে। এতে যুদ্ধ বাঁধলে আবদুল্লাহ বিন যুবাইর পক্ষের অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি নিহত হয় এবং কাবাঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর কিছুদিন পর ৬৪ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে হঠাৎ করে এজিদ মারা গেলে তরুণ বয়সী তার দুর্বলমনা বড় ছেলে মুয়াবিয়াকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়। এই অবস্থায় এজিদ বাহিনী মক্কা ছেড়ে পালিয়ে যায়। তখন ইয়েমেন, শাম, ইরাক, মিসর ও খোরাসানসহ বিভিন্ন জায়গায় উমাইয়া শাসনের বিরুদ্ধে কিছু গভর্ণর অনাস্থা প্রকাশ করে। হিমসের গভর্ণর জুনিয়র আনছারী ছাহাবী নোমান বিন বশীরও বনু উমাইয়ার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের খেলাফতকে সমর্থন করেন। ফলে আবদুল্লাহ বিন যুবাইর মদীনা, ইয়েমেন, কুফা, বসরা, দামেশক ও মিসরসহ বিভিন্ন জায়গায় মক্কা কেন্দ্রিক নতুন খেলাফতের গভর্ণর নিয়োগ দেন। কিন্তু তিন মাসের মাথায় তরুণ মুয়াবিয়া মারা গেলে ক্ষমতায় আসে নবীজি সঃ এর জবানে অভিশপ্ত কুখ্যাত মরওয়ান ইবনুল হাকাম এবং সে এর আগে এজিদের বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করে নেয়। কিন্তু এক বছরের মাথায় (রমজান ৬৫ হিজরীতে) তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলা টিপে হত্যা করে এজিদের ওই বিধবা স্ত্রী। কারণ, একদিন মরওয়ান ওই বিধবার ছেলে খালিদ বিন এজিদের সামনে তার মাকে নিয়ে কটূক্তি করেছিল এবং সে গিয়ে তা তার মাকে বলে দিয়েছিল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সে মরওয়ানকে ঘুমের মধ্যে গলাটিপে হত্যা করে। মারা যাওয়ার আগে মরওয়ান আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের গভর্ণরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যায়। মরওয়ানের মৃত্যুর পর দামেস্কে ক্ষমতাসীন হয় তার ছেলে আবদুল মালিক। এই সময় ইরাকে দেখা দেয় রাফেজীগুরু ক্ষমতালোভী ও ভূয়া আহলে বাইতপ্রেমী মুখতার আস-সাকাফীর তৎপরতা। মুখতার আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের কাছে ক্ষমতার ভাগ চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। ফলে সে কুফা থেকে ইবনে যুবাইর সমর্থিত গভর্ণরকে বের করে দেয় এবং জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য হযরত হুসাইনের ঘাতকদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে। এতে তার সাথে যোগ দেন ইব্রাহীম বিন আশতার। অতঃপর তারা উভয়ে মিলে হযরত হুসাইনের ঘাতকদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করে। ৬৭ হিজরীতে তারা হযরত হুসাইনকে খুনের নেতৃত্বদানকারী উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদকে মসুলে গিয়ে হত্যা করে। এরপর মুখতার আস-সাকাফী বসরায় আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের গভর্ণর মুসআব বিন যুবাইরের মোকাবিলা করতে গেলে নিহত হয়। অন্যদিকে দামেস্কে ক্ষমতাসীন আবদুল মালিক পুরো শাম ও মিসরের কর্তৃত্ব বিস্তারের পর ৭১ হিজরীতে ইরাকের দিকে মনোনিবেশ করে। এতে সে বসরার গভর্ণর মুসআব বিন যুবাইরকে বাইয়াত দিতে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। অতঃপর ৭২ হিজরীতে বসরায় মুসআবের বাহিনীর সাথে আবদুল মালিক বাহিনীর যুদ্ধ বাঁধে। এতে মুসআব নিহত হলে পুরো ইরাক আবদুল মালিকের নিয়ন্ত্রণের চলে যায় এবং হাজ্জাজ বিন ইউসুফ অস-সাকাফীকে সেখানে গভর্ণর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।। অতঃপর আবদুল মালিক মদীনায় কর্তৃত্ব বিস্তারের দিকে মনযোগ দেয়। তার পক্ষ থেকে গভর্ণর হিসেবে তারেক বিন আমর মদীনায় গেলে ইবনে যুবাইরের গভর্ণর তলহা বিন আবদুল্লাহ বিন আউফ সেখান থেকে সরে যায়। এই সময় আবদুল মালিক আবদুল্লাহ বিন যুবাইরকে বশে আনার জন্য হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে মক্কায় পাঠায়। অন্যদিকে মদীনা থেকে তাকে সহযোগিতা করতে যায় তারেক বিন আমর। অতঃপর তারা উভয়ে মক্কা অবরোধ করলে খুবই কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে যান বিপ্লবী আবদুল্লাহ বিন যুবাইর। ফলে তার কতক ভাই ও কতক সন্তানসহ কিছু সহযোগী তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করেন। তখন তিনি তাঁর শতবর্ষী বৃদ্ধা অন্ধ মা আসমা বিনতে আবু বকরের কাছে গিয়ে পরামর্শ চান। মা তাঁকে বলেন, “তুমি যদি সত্য ও ন্যায়ের জন্য যুদ্ধ করো, তাহলে বনু উমাইয়ার ছেলেপেলেদের কাছে আত্মসমর্পন করো না। আর যদি তুমি দুনিয়ার জন্য যুদ্ধ করো, তাহলে তুমি খুবই খারাপ মানুষ। নিজেকে ও তোমারা সঙ্গীদেরকে তুমি ধ্বংস করেছো। আর যদি বলো, আমি আমার হকের জন্য যুদ্ধ করেছি, কিন্তু এখন আমার সঙ্গীরা হীনমনা হয়ে যাওয়ায় আমি দুর্বল হয়ে পড়েছি। তাহলে শোনো রেখো, এটি স্বাধীন ও ধার্মিক মানুষের কথা নয়। তুমি দুনিয়াতে কয়দিন বাঁচবে! নিহত হওয়াই উত্তম।”  

অতঃপর ৭২ বছর বয়সী ইবনে যুবাইর তাঁর অবশিষ্ট সঙ্গীদের নিয়ে জালিমদের বিরুদ্ধে দৃঢ়পদ থাকেন। ৮ মাস অবরোধের পর ৭৩ হিজরীর ১৭ জুমাদাল উখরায় উভয় পক্ষের কঠিন যুদ্ধ শুরু হয়। জালিমরা হারামের মান-সম্মান পদদলিত করে আবদুল্লাহ বিন যুবাইর ও তাঁর সঙ্গীদেরকে হত্যা করে। হত্যার পর হযরত হুসাইনের ন্যায় ইবনে যুবাইরের মাথা কেটে আবদুল মালিকের কাছে পাঠানো হয় এবং মস্তকবিহীন দেহটি মদীনাগামী মক্কা সড়কে শূলিতে চড়িয়ে (কাঠে বেঁধে ঝুলিয়ে) রাখা হয়। ছহীহ মুসলিমে এসেছেঃ   

عَنْ أبِي نَوْفَلٍ قال : رَأيْتُ عبد الله بْنَ الزُّبَيْرِ عَلَى عَقَبَةِ الْمَدِينَةِ . قال : قال : فَجَعَلَتْ قُرَيْشٌ تَمُرُّ عَلَيْهِ وَالنَّاسُ ، حَتَّى مَرَّ عَلَيْهِ عَبْدُ الله بْنُ عُمَرَ ، فَوَقَفَ عَلَيْهِ . فَقال : السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَبَا خُبَيْبٍ ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَبَا خُبَيْبٍ ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَبَا خُبَيْبٍ ، أَمَا وَالله لَقَدْ كُنْتُ أَنْهَاكَ عَنْ هَذَا ، أَمَا وَالله لَقَدْ كُنْتُ أَنْهَاكَ عَنْ هَذَا ، أَمَا وَالله لَقَدْ كُنْتُ أَنْهَاكَ عَنْ هَذَا ، أَمَا وَالله إِنْ كُنْتَ ، مَا عَلِمْتُ ، صَوَّاماً ، قَوَّامًا وَصُولاً لِلرَّحِمِ ، أَمَا وَالله لأُمَّةٌ أَنْتَ أَشَرُّهَا لأُمَّةٌ خَيْرٌ. ثُمَّ نَفَذَ عَبْدُ الله بْنُ عُمَرَ ، فَبَلَغَ الْحَجَّاجَ مَوْقِفُ عَبْدِ الله وَقَوْلُهُ ، فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ ، فَأُنْزِلَ عَنْ جِذْعِهِ ، فَأُلْقِيَ في قُبُورِ الْيَهُودِ ، ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى أُمِّهِ أَسْمَاءَ بِنْتِ أبيِ بَكْرٍ ، فَأَبَتْ أَنْ تَأْتِيَهُ ، فَأَعَادَ عَلَيْهَا الرَّسُولَ: لَتَأْتِيَنِّى أَوْ لأَبْعَثَنَّ إِلَيْكِ مِنْ يَسْحَبُكِ بِقُرُونِكِ . قال : فَأَبَتْ وَقَالَتْ: وَالله لاَ آتِيكَ حَتَّى تَبْعَثَ إِلَىَّ مَنْ يَسْحَبُنِي بِقُرُونِي . قال : فَقال : أَرُونِي سِبْتَيَّ . فَأَخَذَ نَعْلَيْهِ ، ثُمَّ انْطَلَقَ يَتَوَذَّفُ حَتَّى دَخَلَ عَلَيْهَا . فَقال : كَيْفَ رَأَيْتِنِي صَنَعْتُ بِعَدُوِّ اللهِ ؟ قَالَتْ: رَأَيْتُكَ أَفْسَدْتَ عَلَيْهِ دُنْيَاهُ ، وَأَفْسَدَ عَلَيْكَ آخِرَتَكَ ، بَلَغَنِى أَنَّكَ تَقُولُ لَهُ: يَا ابْنَ ذَاتِ النِّطَاقَيْنِ ، أَنَا وَالله ذَاتُ النِّطَاقَيْنِ ، أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكُنْتُ أَرْفَعُ بِهِ طَعَامَ رَسُولِ الله صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَطَعَامَ أبيِ بَكْرٍ مِنَ الدَّوَابِّ ، وَأَمَّا الآخَرُ فَنِطَاقُ الْمَرْأَةِ الَّتِى لاَ تَسْتَغْنِي عَنْهُ ، أَمَا إِنَّ رَسُولَ الله صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حدثنا ؛ "أَنَّ في ثَقِيفٍ كَذَّاباً وَمُبِيراً". فَأَمَّا الْكَذَّابُ فَرَأَيْنَاهُ ، وَأَمَّا الْمُبِيرُ فَلاَ إِخَالُكَ إِلاَّ إِيَّاهُ ، قال : فَقَامَ عَنْهَا وَلَمْ يُرَاجِعْهَا. أخرجه مسلم (رقم 2545).

অর্থঃ তাবেয়ী আবু নওফল বলেন, আমি মদীনাগামী মক্কা সড়কে আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের লাশ দেখতে পাই। কুরাইশ ও অন্যান্য লোকজন সেটি দিয়ে চলাচল করছিল। একসময় সেটি দিয়ে আবদুল্লাহ বিন উমর গেলেন এবং বললেন, “হে আবু খুবাইব! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, হে আবু খুবাইব! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, হে আবু খুবাইব! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে তা থেকে (বনু উমাইয়ার বিরুদ্ধে বিপ্লব থেকে) নিষেধ করেছিলাম, আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে তা থেকে নিষেধ করেছিলাম, আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে তা থেকে নিষেধ করেছিলাম। আল্লাহর কসম! আমার জানা মতে আপনি নফল রোজাদার, তাহাজ্জুদ গুজার ও স্বজনদের প্রতি উপকারী ছিলেন। আল্লাহর কসম! যে উম্মতের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আপনি (জালিমদের কাছে) অধিক মন্দ লোক বিবেচিত হয়েছেন, সে উম্মত নিশ্চয় উত্তম উম্মত। অতঃপর আবদুল্লাহ বিন উমর চলে গেলেন। পরে আবদুল্লাহ বিন উমরের এই কথাগুলো হাজ্জাজের কানে পৌঁছুলে সে লোক পাঠিয়ে লাশটি নামিয়ে ফেলে এবং ইহুদীদের কবরের মাঝে নিক্ষেপ করে। অতঃপর সে (হাজ্জাজ) লোক পাঠিয়ে আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের মা আসমা বিনতে আবু বকরকে তার কাছে যেতে বলে। তিনি যেতে অস্বীকার করেন। সে তখন মানুষ পাঠিয়ে তাকে চুলে ধরে টেনে নেওয়ার হুমকি দেয়। এতেও তিনি যেতে অস্বীকার করেন এবং বলেন, চুলে ধরে টেনে না নেওয়া পর্যন্ত আমি তোমার কাছে যাবো না। তখন হাজ্জাজ নিজেই তার কাছে গেল এবং গিয়ে বললো, আল্লাহর #দুশমনের সাথে আমি যা করেছি, তাকে আপনি কিভাবে দেখছেন? তিনি বললেন, আমি দেখছি, তুমি তার দুনিয়া (জীবন ও ক্ষমতা) নষ্ট করে দিয়েছো এবং সে তোমার আখেরাত নষ্ট করে দিয়েছে। আর আমি শুনেছি যে, তুমি নাকি তাকে দুই ফিতা ওয়ালীর ছেলে বলেছো! শোনো, আমি দুই ফিতা ওয়ালী তা সত্য। কারণ, একটি ফিতা দিয়ে আমি আল্লাহর রসূল সঃ ও আবু বকরের জন্য সওয়ারীতে তুলে খাবার নিয়ে যেতাম (লুকিয়ে মদীনায় হিজরত কালে)। আরেকটি ফিতা নারীদের সকলের সাথে সবসময় থাকেই। শোনো! রসূলুল্লাহ সঃ আমাদেরকে বলেছেন, “সাকীফ গোত্রের মাঝে একজন মহা মিথ্যাবাদী ও আরেকজন মহাখুনী দেখা দিবে।” তো মহা মিথ্যবাদীকেতো (অর্থাৎ, মুখতার আস-সাকাফী) দেখেছি। আর মহাখুনী তুমি ছাড়া আর কাউকে মনে করি না। বর্ণনকারী বলেন, হাজ্জাজ এই কথা শোনে আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো। [ছহীহ মুসলিম (২৫৪৫)]। 

-

মুসনদে হুমাইদীতে উম্মে আবুল মুহাইয়ার বর্ণনায় এসেছেঃ     

عَنْ أمِّ أبِي الْمُحَيَّاةِ ، أنَّهَا قَالَتْ: لَمَّا قَتَلَ الْحَجَّاجُ بْنُ يُوسُفَ عبد الله بْنَ الزُّبَيْر، دَخَلَ الْحَجَّاجُ ، عَلَى أسْمَاءَ بِنْتِ أبِي بَكْرٍ ، فَقَالَ لَهَا : يَا أمَّهْ ، إِنَّ أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ أوْصَانِي بِكِ فَهَلْ لَكِ مِنْ حَاجَةٍ ؟ قَالَتْ: مَالِي مِنْ حَاجَةٍ ، وَلَسْتُ لَكَ بِأمَّ ، وَلَكِنِّي أمُّ الْمَصْلُوبِ عَلَى رَأسِ الثَّنِيَّةِ ، وَلَكِنِ انْتَظِرْ أُحَدِّثُكَ مَا سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ الله صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُول: "يَخْرُجً مِنْ ثقِيفَ كَذَّابٌ وَمُبِيرٌ". فَأَمَّا الْكَذَّابُ فقَدْ رَأيْنَاهُ ، تَعْنِي الْمُخْتَارَ ، وَأمَّا الْمُبِيرُ فَأنْتَ ، فَقَالَ الْحَجَّاجُ : مُبِيرٌ لِلْمُنَافِقِينَ. أخرجه الحميدي (رقم 326).

অর্থঃ উম্মে আবুল মুহাইয়া বলেন, “হাজ্জাজ বিন ইউসুফ আবদুল্লাহ বিন যুবাইরকে হত্যা করার পর আসমা বিনতে আবু বকরের কাছে যায় এবং বলে, মা! আমীরুল মুমিনীন (আবদুল মালিক) আমাকে আপনার খোঁজ নিতে বলেছেন। তো আপনার কোনো প্রয়োজন থাকলে আমাকে বলতে পারেন। তিনি (শতবর্ষী অন্ধ আসমা) বলেন, আমার কোনো প্রয়োজন নেই। আর আমি তোমার মা নই। আমি হলাম সরুপথের মাথায় শূলিতে চড়িয়ে রাখা লোকটির মা। তুমি একটু অপেক্ষা করো। আমি রসূলুল্লাহ সঃ এর কাছে শোনা একটি হাদীছ তোমাকে শোনাচ্ছি। তিনি বলেছেন, “সাকীফ গোত্র থেকে একজন মহা মিথ্যাবাদী ও আরেকজন মহাখুনী বের হবে।” তো মহা মিথ্যবাদীকেতো দেখেছি। অর্থাৎ, মুখতার আস-সাকাফী । আর মহাখুনী হলে তুমিই। হাজ্জাজ বললো, (আমি) #মুনাফিকদের মহাখুনী। [মুসনদে হুমাইদী (৩২৬)]। 

-

মুসনদে আহমদে আবু সিদ্দীক নাজীর বর্ণনায় এসেছেঃ     

عَنْ أبِي الصِّدِّيقِ النَّاجِي ، أَنَّ الْحَجَّاجَ بْنَ يُوسُفَ دَخَلَ عَلَى أسْمَاءَ بِنْتِ أبِي بَكْرٍ ، بَعْدَ مَا قُتِلَ ابْنُهَا عبد الله بْنُ الزُّبَيْرِ ، فَقال : إِنَّ ابْنَكِ ألْحَدَ فِي هَذَا الْبَيْتِ ، وَإِنَّ اللّهَ عَزّ َوَجَلَّ أذَاقَهُ مِنْ عَذَابٍ ألِيمٍ ، وَفَعَلَ بِهِ مَا فَعَلَ ، فَقَالَتْ: كَذَبْتَ ، كَانَ بَرًّا بِالْوَالِدَيْنِ ، صَوَّاماً قَوَّاماً ، وَاللهِّ لَقَدْ أخْبَرَنَا رَسُول اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، أَنَّهُ سَيَخْرُجُ مِنْ ثَقِيفٍ كَذَّابَانِ ، الآخِرُ مِنْهُمَا شَرٌّ مِنَ الأوَّلِ ، وَهُوَ مُبِيرٌ. أخرجه أحمد (رقم 27012).  

অর্থঃ আবু সিদ্দীক নাজী বলেন, “উনার ছেলে আবদুল্লাহ বিন যুবাইরকে হত্যা করার পর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ আসমা বিনতে আবু বকরের কাছে যায় এবং বলে, আপনার ছেলে এই ঘরে (কাবাঘরে) ইলহাদ (ধর্মদ্রোহিতা) করেছে এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করিয়েছেন এবং তার সাথে আরো যা করার করে দেখিয়েছেন। তিনি (আসমা বিনতে আবু বকর) বললেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। সে পিতা-মাতার সাথে সৎ ব্যবহারকারী ছিল এবং নফল রোজাদার ও তাহাজ্জুদগুজার ছিল। আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ সঃ আমাদেরকে জানিয়ে গেছেন যে, সাকীফ গোত্র থেকে দুইজন মহা মিথ্যাবাদী বের হবে। তাদের শেষেরজন প্রথমজন থেকে খারাপ হবে। আর সে হলো মহাখুনী।” [মুসনদে আহমদ (২৭০১২)]। 

-

উপরের তিনটি বর্ণনা থেকে এটি স্পষ্ট যে, জিন্দীক (জালিম ও মুনাফিক) শাসকেরা তাদের স্বৈরশাসন টিকেয়ে রাখার প্রয়োজনে মুমিনদেরকে আল্লাহ্‌র দুশমন, মুনাফিক ও ধর্মদ্রোহী আখ্যায়িত করে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করে। আর এ ক্ষেত্রে অনেক সময় আলিম নামধারী কিছু হেমার ও কেলাব الحمار والكلاب তাদেরকে সমর্থন করে যায়। তবে বুদ্ধিমান আলিম ও মুমিনেরা মজলুম বিপ্লবীদেরকে সমর্থন না করলেও জালিমের পক্ষ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে না। বরং মজলুমের কল্যাণকামনা ও গুণকীর্তনই করে। যেমন ছাহাবী আবদুল্লাহ বিন উমর আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের কল্যাণকামনা (অন্তত তাঁর চিন্তা থেকে) ও গুণকীর্তন করেছেন।

-

উল্লেখ্য, মক্কা কেন্দ্রিক দশ বছরের শাসনামলে হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর নবীজি সঃ এর একটি আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছিলেন। তাহলো #জাহেলী যুগের নির্মাণ ভেঙে হাতীমসহ কাবাকে দুই দরজায় পুননির্মাণ করা। কিন্তু ধর্মদ্রোহী বনু উমাইয়া ইবনে যুবাইরের প্রতি বিদ্বেষবশত সে নির্মাণ আবার ভেঙে কাবাঘরকে আবারো জাহেলী যুগের রূপে নিয়ে আসে। পরে বনু উমাইয়াকে মেরে আব্বাসীরা (নবীজি সঃ এর চাচা হযরত আব্বাসের বংশধর) ক্ষমতায় এলে তারা কাবাঘরকে ভেঙে পুননির্মাণ করতে চাইলো। কিন্তু ইমাম মালিকসহ তৎকালীন আলিমগণ বললেন, থাক। এরকম করলে যারাই ক্ষমতায় আসবে, তারাই কাবাঘরকে বারবার ভেঙে নিজেদের ইচ্ছামত পুননির্মাণ করতে চাইবে।

-

এই ব্যাপারে (কাবাঘরকে পুননির্মাণের নবীজি সঃ এর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে) ছহীহ বোখারী ও ছহীহ মুসলিমে বিস্তর আলোচনা রয়েছে। তন্মধ্যে আমি কয়েকটি বর্ণনা তুলে ধরছিঃ 

عن عائشة رضي الله عنها ، قالت: سَالْتُ النَّبِىَّ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْجَدْرِ أمِنَ الْبَيْتِ هُو؟ قال: « نَعَمْ » قلتُ: فما لهم لم يُدخلُوه في البيت؟ قال: «إنَّ قَوْمَكِ قَصَّرَتْ بِهِمُ النَّفَقَةُ». قلتُ: فَمَا شَانُ بَابِهِ مُرْتَفِعًا؟ قال: « فَعَلَ ذَلِكِ قَوْمُكِ لِيُدْخِلُوا مَنْ شَاؤُوا وَيَمْنَعُوا مَنْ شَاؤُوا ، وَلَوْلا انَّ قَوْمَكِ حَدِيثٌ عَهْدُهُمْ بِالْجَاهِلِيَّةِ فَاخَافُ أنْ تُنْكِرَ قُلُوبُهُمْ أنْ أُدْخِلَ الْجَدْرَ فِى الْبَيْتِ وَأنْ أُلْصِقَ بَابَهُ بِالارْضِ». أخرجه البخارى (2/574 ، رقم 1507) ، ومسلم (2/969 ، رقم 1333) . 


অর্থঃ হযরত আয়েশা رضي الله عنها থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জদর (বর্তমানে হাতীম হিসেবে পরিচিত ঘেরা/বেড়া) সম্পর্কে নবীজিকে সঃ জিজ্ঞেস করে বলেছিলাম, এটি কি কাবাঘরের অংশ? তিনি বললেন, “হ্যা!।” বললাম, তাহলে এটিকে তারা কাবাঘরের  অন্তর্ভূক্ত করল না কেন? বললেন, “তোমার সম্প্রদায়ের (কুরাইশের) অর্থের অভাবে।” বললাম, তাহলে এর দরজা এত উচুঁ কেন? বললেন, “তারা যাকে ইচ্ছা প্রবেশের সুযোগ ও যাকে ইচ্ছা প্রবেশে বাধা দেওয়ার জন্য এমন করেছে। তোমার সম্প্রদায় যদি জাহেলিয়তের সাথে নিকটবর্তী সম্পর্ক ওয়ালা না হতো, তাহলে আমি জদরকে কাবাঘরের অন্তর্ভূক্ত করতাম এবং এর দরজাকে মাটির সাথে লাগিয়ে দিতাম।” [ছহীহ বোখারী (১৫০৭) ও ছহীহ মুসলিম (১৩৩৩)]। 

-

প্রসঙ্গত, নবীজি সঃ এর নুবুওয়াত প্রাপ্তির আগে একটি দীর্ঘমেয়াদী বন্যার কারণে কাবাঘর ভেঙে গিয়েছিল। পরে কুরাইশ (মক্কাবাসী প্রসিদ্ধ গোত্র) তা পুননির্মাণ করে এবং অর্থের অভাবে এর একটি অংশ বাইরে রাখে। আর #এলিটীয় চিন্তা থেকে সেটির ফ্লোর-দরজা এত উচুঁ করে যে, সিঁড়ি ছাড়া তাতে প্রবেশ করা সম্ভব হয় না। এটি তারা করেছিল বাইরের হাজীরা কাবাঘরে সহজে প্রবেশ করতে না পারার জন্য। কিন্তু নবীজি সঃ সর্বসাধারণের জন্য প্রবেশের সুবিধা রেখে কাবাঘরকে দুই দরজা বিশিষ্ট করে (এক দরজা দিয়ে প্রবেশ ও আরেক দরজা দিয়ে বের হওয়ার সুযোগ রেখে) পুননির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মক্কা বিজয়ের পর পরিস্থিতির শিকার হয়ে ইসলাম গ্রহণকারী মক্কাবাসী কুরাইশের সমালোচনার আশঙ্কা থেকে তিনি কাজটি করা থেকে বিরত থাকেন।

এ বিষয়ে বর্ণিত আরেকটি হাদীছ হলোঃ

-

عن عروة ، عن عائشة رضي الله عنها ، أن النبي صلى الله عليه وسلم قال لها : «يَاعَائِشَةُ لَوْلا انَّ قَوْمَكِ حَدِيثُ عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ لامَرْتُ بِالْبَيْتِ فَهُدِمَ ، فَادْخَلْتُ فِيهِ مَا اخرجَ مِنْهُ وَالْزَقْتُهُ بِالارْضِ ، وَجَعَلْتُ لَهُ بَابَيْنِ ، بَابًا شَرقِيًّا ، وَبَابًا غَرْبِيًّا ، فَانَّهُمْ قَدْ عَجَزُوا عَنْ بِنَائِهِ فَبَلَغْتُ بِهِ اساسَ إبراهيم». قَالَ : فَذالِكَ الَّذِي حَمَلَ ابْنَ الزُّبَيْرِ عَلَى هَدْمِهِ. أخرجه البخارى (2/574 ، رقم 1509) ، ومسلم (2/969 ، رقم 1333) .

অর্থঃ হযরত উরওয়া আয়েশা رضي الله عنها থেকে বর্ণনা যে, নবীজি সঃ তাকে বলেছিলেন, “তোমার সম্প্রদায় যদি জাহেলিয়তের সাথে নিকট সম্পর্ক ওয়ালা না হতো, তাহলে আমি কাবা ঘর ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিতাম। অতঃপর তার যে অংশ (বর্তমানে হাতীম) বাইরে রাখা হয়েছে, সেটিকে কাবা ঘরের অন্তর্ভূক্ত করতাম এবং তাকে মাটির সাথে সমান করে দিয়ে দুইটি দরজা দিতাম। একটি পূর্বদিকে ও একটি পশ্চিম দিকে। এতে করে আমি ইব্রাহীমের (আঃ) ভিত্তির পর্যন্ত পৌঁছে যেতাম। কারণ, তারা (কুরাইশ) এটির পুণনির্মাণে অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিল।” ইমাম বোখারী বলেন, এ কারণেই ইবনে যুবাইর কাবাঘরকে ভেঙে পুননির্মাণ করেছিলেন৷ [ছহীহ বোখারী (১৫০৯) ও ছহীহ মুসলিম (১৩৩৩)]। 

-

প্রসঙ্গত, কাবাঘরকে সেই থেকে এই পর্যন্ত আর কোনো শাসক পুননির্মাণ করতে চায়নি। তার মানে, কাবা এখনো সেই জাহেলী যুগের নির্মাণ পদ্ধতিতেই রয়েছে, যা অভিশপ্ত জালিম বনু উমাইয়াদের নবী সঃ বিদ্বেষের স্বাক্ষর বহন করে আছে। মক্কা মুকাররমা বর্তমানে নজদের যে শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তাদের এমন নবীপ্রেম নেই যে, তারা কাবাকে নবীজি সঃ এর আকাঙ্ক্ষার আলোকে পুননির্মাণ করবে। বরং জুলুম ও স্বৈরশাসনে তারা বনু উমাইয়ার চেয়ে কম যায় না। 

-

মহান রব আমাদেরকে জালিম শাসক ও দরবারী আলিমদের অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ রাখুন।

-আশেকানে বনু উমাইয়ার নতুন দাবি

*****

কাপুরুষ আশেকানে বনু উমাইয়ার একজন মুখপাত্র দাবি করেছে, বনু আব্বাসের ভয়ে নাকি ততকালীন ফকীহ ও মুহাদ্দিছগণ বনু উমাইয়ার বিরুদ্ধে হাদীছ জাল করেছেন (মনগড়া হাদীছ বানিয়েছেন)৷ 

অর্থাত, এই জ্ঞানপাপীর মতে ছহীহ বোখারী ও ছহীহ মুসলিমসহ বিভিন্ন হাদীছগ্রন্থে ইসলামে রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা মুয়াবিয়াসহ জালেমানে বনু উমাইয়ার বিরুদ্ধে যেসব হাদীছ রয়েছে, সেগুলো গ্রহণযোগ্য নয়৷

-

বাহ! এই নতুন মুজতাহিদ তাহলে চিরাচরিত সুন্নী উসূলে হাদীছের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে অনেকটা আহলে কোরআন বা কোরআনপন্থীদের দলে চলে যাচ্ছে!

-

ভাইয়েরা! এদের হাতে দীনে মুহাম্মদ সঃ নিরাপদ নয়৷ এরা ভোগদখল ও স্বৈরাচারের দীনে বনী উমাইয়াতেই বিশ্বাসী৷ এই দীনে বনী উমাইয়াতে রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র এবং আহলে বাইত বিদ্বেষ বৈধ৷ কিন্তু দীনে মুহাম্মদ সঃ এর কোথাও এসব বৈধ নয়৷

এবার ছহীহ বোখারীর একটি হাদীছ দেখে বুঝে নিন, ওই সময় আবদুল্লাহ বিন উমরের মত মানুষ কত অসহায়ত্ব অনুভব করেছিলেন!

عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ خَالِدٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: "دَخَلْتُ عَلَى حَفْصَةَ وَنَسْوَاتُهَا تَنْطُفُ، قُلْتُ: قَدْ كَانَ مِنْ أَمْرِ النَّاسِ مَا تَرَيْنَ فَلَمْ يُجْعَلْ لِي مِنْ الْأَمْرِ شَيْءٌ". فَقَالَتْ: "الْحَقْ فَإِنَّهُمْ يَنْتَظِرُونَكَ وَأَخْشَى أَنْ يَكُونَ فِي احْتِبَاسِكَ عَنْهُمْ فُرْقَةٌ فَلَمْ تَدَعْهُ"، حَتَّى ذَهَبَ. فَلَمَّا تَفَرَّقَ النَّاسُ خَطَبَ مُعَاوِيَةُ، قَالَ: "مَنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَتَكَلَّمَ فِي هَذَا الْأَمْرِ فَلْيُطْلِعْ لَنَا قَرْنَهُ فَلَنَحْنُ أَحَقُّ بِهِ مِنْهُ وَمِنْ أَبِيهِ". قَالَ حَبِيبُ بْنُ مَسْلَمَةَ: فَهَلَّا أَجَبْتَهُ؟ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: "فَحَلَلْتُ حُبْوَتِي وَهَمَمْتُ أَنْ أَقُولَ: أَحَقُّ بِهَذَا الْأَمْرِ مِنْكَ مَنْ قَاتَلَكَ وَأَبَاكَ عَلَى الْإِسْلَامِ. فَخَشِيتُ أَنْ أَقُولَ كَلِمَةً تُفَرِّقُ بَيْنَ الْجَمْعِ وَتَسْفِكُ الدَّمَ وَيُحْمَلُ عَنِّي غَيْرُ ذَلِكَ، فَذَكَرْتُ مَا أَعَدَّ اللَّهُ فِي الْجِنَانِ". قَالَ حَبِيبٌ: حُفِظْتَ وَعُصِمْتَ. أخرجه البخاري (رقم 3882).

অর্থঃ ইকরমা বিন খালিদ হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি হাফসার (তাঁর বড় বোন ও নবীজি ছঃ এর স্ত্রী) ঘরে প্রবেশ করলাম। তখন তার চুলের বেণী থেকে পানি পড়ছিল (অর্থাৎ, তখন তিনি গোসলখানা থেকে বের হন)। আমি বললাম, তুমিতো দেখছো মুসলমানদের জন্য খলীফা নির্ধারণের কার্যক্রম চলছে (মুয়াবিয়া কর্তৃক ইমাম হাসানের সাথে সন্ধি অথবা ছেলে এজীদের জন্য অগ্রিম সমর্থন আদায় চলছিল)। হাফসা বললো, তুমি যাও। কারণ, (আমি মনে করি) তারা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমার অনুপস্থিতি মুসলমানদের মাঝে আরো বেশী বিরোধ/ফাটল সৃষ্টি করবে। তার এমন কথায় তিনি গেলেন। অতঃপর সাধারণ লোকজন চলে গেলে মুয়াবিয়া (ইবনে উমরকে ইঙ্গিত করে) বক্তব্য দিয়ে বললেন, ‘এ বিষয়ে (মুসলমানদের নেতৃত্ব নিয়ে) কেউ কথা বলতে চাইলে সে যেন আমার সামনে আসে। বস্তুত এ কাজে (মুসলমানদের নেতৃত্বের জন্য) আমরা (মুয়াবিয়া ও এজিদ) তার এবং তার পিতার (হযরত উমর) চেয়ে অধিক যোগ্য।’ ঘটনা শোনার পর হাবীব বিন মাসলামা বললেন, আপনি কি তার এমন কথার জবাবে কিছু বলেননি? ইবনে উমর বললেন, আমি তখন আমার আলখেল্লা জড়িয়ে নিলাম এবং বলতে চাইলাম, ‘এ কাজের জন্য অবশ্য তিনিই অধিক হকদার, যিনি তোমার ও তোমার পিতার বিরুদ্ধে ইসলামের পক্ষে (বদর, উহুদ ও খন্দকে) লড়াই করেছেন।’ তবে আমি মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি ও রক্তপাত এড়াতে এবং আমার বক্তব্য তাদের অন্যায় ভাবে গ্রহণের আশঙ্কা থেকে কথাটা বলা থেকে বিরত থাকলাম। অতঃপর আমি জান্নাতে (মুমিনদের জন্য) আল্লাহ যা রেখেছেন, তার কথা স্মরণ করলাম। হাবীব বললেন, আপনি (বড় ধরণের বিপদ থেকে) বেঁচে গেলেন। [ছহীহ বোখারী (৩৮৮২)]।

-

সত্যতা যাচাই করতে আরবী ছাপার ছহীহ বোখারী না থাকলে বর্ণনাটি থেকে কোনো একটি বাক্য লিখে গুগলে সার্চ করতে পারেন৷

-

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে এসব উমাইয়ালীগ সমর্থকদের ক্ষতিকর তৎপরতা-ইজতেহাদ থেকে মুক্ত রাখুন৷

-মুনাফিক চেনার আনছারী ও মুহাজিরী সূত্র 

*****

عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه ، قال: "إنَّا كنا لنعرف المنافقين نحن معشر الأنصار ببغضهم علي بن أبي طالب". أخرجه الترمذي (رقم 3717). 

অর্থঃ হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (আনছারী) رضي الله عنه বলেন, “আমরা আনছারীরা মুনাফিক চিনতাম হযরত আলীর প্রতি তাদের বিদ্বেষ দেখে।” [সুনানে তিরমিযী (৩৭১৭)]৷

-

عن جابر بن عبد الله رضي الله عنه ، قال: "ما كنا نعرف المنافقين إلا ببغضهم عليًّا رضي الله عنه." أخرجه الطبراني في المعجم الأوسط (4/264 رقم 4151).

অর্থঃ হযরত জাবির (আনছারী) رضي الله عنه বলেন, “আমরা মুনাফিক চিনতাম হযরত আলীর প্রতি তাদের বিদ্বেষ দেখে।” [মুজমে তবরানী আউসাত (৪/২৬৪)]৷

-

عن أبي ذر رضي الله عنه ، قال: "ما كنا نعرف المنافقين إلا بتكذيبهم الله ورسوله والتخلف عن الصلوات والبغض لعلي بن أبي طالب". أخرجه الحاكم فى المستدرك (رقم 4643).

অর্থঃ হযরত আবু যর আল-গিফারী (মুহাজির) رضي الله عنه বলেন, “আমরা কেবলমাত্র (তিনটি লক্ষণ দেখে) মুনাফিক চিনতাম; আল্লাহ ও রসূলের কথা তাদের অস্বীকার, নামাজের প্রতি অবহেলা ও হযরত আলীর প্রতি তাদের বিদ্বেষ।” [মুস্তাদরকে হাকেম (৪৬৪৩)]৷

-

মুয়াবিয়ার নিফাক নিয়ে বিখ্যাত মুহাজির ছাহাবী হযরত আম্মার বিন ইয়াসিরের সাক্ষ্যঃ

عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَبِي نَضْرَةَ عَنْ قَيْسٍ قَالَ: قُلْتُ لِعَمَّارٍ أَرَأَيْتُمْ صَنِيعَكُمْ هَذَا الَّذِي صَنَعْتُمْ فِي أَمْرِ عَلِيٍّ أَرَأْيًا رَأَيْتُمُوهُ أَوْ شَيْئًا عَهِدَهُ إِلَيْكُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ: مَا عَهِدَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا لَمْ يَعْهَدْهُ إِلَى النَّاسِ كَافَّةً ، وَلَكِنْ حُذَيْفَةُ أَخْبَرَنِي عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «فِي أَصْحَابِي اثْنَا عَشَرَ مُنَافِقًا لَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ ، ثَمَانِيَةٌ مِنْهُمْ تَكْفِيكَهُمُ الدُّبَيْلَةُ». وَأَرْبَعَةٌ لَمْ أَحْفَظْ مَا قَالَ شُعْبَةُ فِيهِمْ. أخرجه مسلم (4/2143 ، رقم 2779) ، وأحمد (رقم 18905). 

ولفظ أحمد: «فِي أُمَّتِي اثْنَا عَشَرَ مُنَافِقًا ، لاَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ ، وَلاَ يَجِدُونَ رِيحَهَا ، حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ ، ثَمَانِيَةٌ مِنْهُمْ تَكْفِيكَهُمُ الدُّبَيْلَةُ ، سِرَاجٌ مِنَ النَّارِ يَظْهَرُ فِي أَكْتَافِهِمْ ، حَتَّى يَنْجُمَ مِنْ صُدُورِهِمْ». تعليق شعيب الأرنؤوط: إسناده صحيح على شرط مسلم.

অর্থঃ তাবেয়ী কয়েস বিন উবাদ বলেন, আমি হযরত আম্মারকে বললাম, আপনারা হযরত আলীর পক্ষ নিয়ে যে কাজ (যুদ্ধ) করছেন, তা কি আপনাদের নিজস্ব চিন্তা থেকে করছেন নাকি তা রসূলুল্লাহ ছঃ এর পথনির্দেশকৃত কোনো বিষয়? তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ বাদ দিয়ে রসূলুল্লাহ ছঃ আমাদেরকে বিশেষ কোনো পথনির্দেশ দেননি। তবে আমাকে হুযাইফা (মুনাফিকদের নাম জানা বিখ্যাত ছাহাবী) জানিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ ছঃ বলেছেন, “আমার উম্মতে ১২জন মুনাফিক আছে। সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ না করা পর্যন্ত (অর্থাৎ, কস্মিণকালেও) তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তাদের আটজন মরবে দুবাইলায় (বুক ও গর্দান দুর্বলকারী এক ধরণের ফোঁড়া) আক্রান্ত হয়ে।” নীচের একজন বর্ণনাকারী বলেন, ‘বাকী চারজনের ব্যাপারে শু‘বা কি বলেছেন, তা আমার স্মরণ নেই।’ [ছহীহ মুসলিম (২৭৭৯) ও মুসনদে আহমদ (১৮৯০৫)]৷

-

শিক্ষাঃ এই হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়, জঙ্গে সিফফীনে মুয়াবিয়া বাহিনীর হাতে নিহত হযরত আম্মার বিন ইয়াসির رضي الله عنه  মুয়াবিয়ার নিফাকের বিষয়টা হযরত হুযাইফা رضي الله عنه এর কাছ থেকে জেনেই বৃদ্ধ বয়সেও হযরত আলীর পক্ষে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন৷

-

অন্যদিকে মুজমে তবরানী কবীরে (১৯/৩৫৯) মুয়াবিয়ার অনুসারী আবু বুরদা থেকে বর্ণিত তথ্য মতে মুয়াবিয়া ফোঁড়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মারা যাবের আগে ফোঁড়া ব্যাথায় দাঁড়াতে না পেরে তিন বসে খুতবা দিতেন [ইবনুল আছীরের আল-কামিল (৪/৫৫৫)]। উনার আগে ইসলামের ইতিহাসে কেউ বসে খুতবা দেননি। নাছেবীদের প্রতি কিছুটা পক্ষপাতদুষ্ট ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র আল্লামা যাহাবীও ওনার ফোঁড়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। দেখুন সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (২/৪০১)। যাহাবীর বর্ণনার টেক্সট নীচে দিলামঃ 

عن أبي بردة قال: دخلت على معاوية حين أصابته قرحته ، فقال: "هلم يا ابن أخي ، فنظرتُ فإذا هي قد سبرت". يعني قرحته. فقلت: ليس عليك بأس ، إذ دخل ابنه يزيد فقال له معاوية: إن ولِّيت فاستوص بهذا ، فإن أباه كان أخاً لي غير أني قد رأيت في القتال ما لم ير. [سير أعلام النبلاء (2/401)]. 

অর্থঃ আবু বুরদা (হযরত আলীর পক্ষাবলম্বনকারী আবু মূসা আল-আশআরীর মুয়াবিয়াপন্থী ছেলে) বলেন, “মুয়াবিয়ার দেহে যখন ফোঁড়া দেখা দিয়েছিল, তখন আমি তার কাছে গেলাম। তিনি আমাকে বললেন, আমার ভাতিজা কাছে এসো। দেখলাম, তাতে (ফোঁড়ায়) পরীক্ষা করে ওষুধ দেয়া হয়েছে। আমি বললাম, আপনার কোনো অসুবিধা নেই। এসময় হঠাৎ তার ছেলে এজীদ এল। তখন মুয়াবিয়া তাকে বললেন, তুমি পদে এলে এর প্রতি কল্যাণকামী হয়ো। কারণ, তার পিতা আমার ভাই ছিল। তবে আমি যুদ্ধে তাকে অনাকাঙ্খিত অবস্থায় (আলীর পক্ষে) দেখেছি।” [সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (২/৪০১)]৷

-

নবীজি সঃ এর হাদীছ/কথাঃ

عَنْ زِرٍّ ، قَالَ: قَالَ عَلِيٌّ رضي الله عنه: "وَالَّذِي فَلَقَ الْحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ إِنَّهُ لَعَهْدُ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيَّ أَنْ لَا يُحِبَّنِي إِلَّا مُؤْمِنٌ وَلَا يُبْغِضَنِي إِلَّا مُنَافِقٌ". أخرجه مسلم (1/86 ، رقم 78) ، والترمذى (5/643 ، رقم 3736) ، وقال: حسن صحيح. والنسائى (8/115 ، رقم 5018). 

অর্থঃ তাবেয়ী জির বিন হুবাইশ বলেন, হযরত আলী -رضي الله عنه- বলেছেন, ‘সে মহান সত্ত্বার কসম, যিনি দানা উৎপন্ন করেছেন এবং সৃষ্টকূলকে সৃষ্টি করেছেন! আমার কাছে এটা অবশ্য রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم এর অঙ্গীকার যে, আমাকে মুমিন ছাড়া কেউ ভালোবাসবে না এবং মুনাফিক ছাড়া কেউ আমাকে বুগজ/ঘৃণা করবে না।’ [ছহীহ মুসলিম (৭৮), সুনানে তিরমিযী (৩৭৩৬) ও সুনানে নাসায়ী (৫০১৮)]।

-

মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত করুন৷

-আব্বাসীদের উপর চালানো মুয়াবিয়া বাহিনীর হলোকাস্ট

******

আবু মুয়াবিয়া (মুয়াবিয়ার বাপ) ও কথিত আহলে হক নামধারী একজন দেওনাসেবী সম্প্রতি তার একটি লেখায় বিভিন্ন জাল বর্ণনা এবং পক্ষপাতদুষ্ট ও অজ্ঞতাপূর্ণ কিছু উক্তি কপি করে দাবি করেছেন যে, বনু উমাইয়া দ্বারা ইসলামের বিরাট সেবা হয়েছে এবং তারা দুনিয়াতে ইনসাফের রাজত্ব কায়েম করেছিল। পরে বনু আব্বাস এসে তাদের উপর নৃশংসতা চালিয়ে তাদেরকে হত্যা করে এবং তাদের প্রশংসা করার পথ বন্ধ করে। 

কিন্তু সত্য হলো, এসব দেওনাসেবী লোকদেরকে সেক্যু ক্যান্সারে আক্রমণ করে তাদের বিবেক ও বুদ্ধি নষ্ট করে দিয়েছে। উনি তৎকালীন সেক্যুলীগ বনু উমাইয়াকে তৎকালীন ইসলামী মূল্যবোধ প্রেমী বনু আব্বাসের উপর প্রাধান্য দিতে গিয়ে যেই চাতুরির আশ্রয় গ্রহণ করেছেন, তার উত্তরে আমার এই লেখা।

-

 তো ওই লেখায় তিনি উল্লেখ করেছেন যে, বনু আব্বাসের লোকেরা বনু উমাইয়ার উপর হলোকাস্ট চালিয়েছে। 

আমি বলছি, বনু আব্বাস যদি বনু উমাইয়ার উপর হলোকাস্ট চালিয়ে থাকে, তাহলে নিশ্চয় সেটি ছিল বনু আব্বাসের উপর চালানো বনু উমাইয়ার হলোকাস্টের প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে। যেমন উনিশশ পচাত্তর সালে রক্ষিবাহিনীর খুন-খারাবির প্রতিবাদে ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন কিছু লোক ওই বাহিনীর পৃষ্টপোষকের উপর হলোকাস্ট চালিয়েছিল। তবে আমরা এমন হলোকাস্টের সমর্থক নই। আমরা মুজাহিদীনে আহলে বাইত ও হক্কানী লড়াকুদের পক্ষে।   

ঐতিহাসিক তথ্য মতে উমাইয়া রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ঠান্ডা মাথার ধূর্ত পলিটিশিয়ান মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ানের ত্রাসের বাহিনী ৩৭ হিজরীতে ইয়েমেনে বনু আব্বাসের উপর ভয়াবহ হলোকাস্ট চালিয়ে তাদের শিশুদেরকেও হত্যা করেছিল। ঐতিহাসিক তথ্য মতে এতে ছাহাবী ও তাবেয়ীসহ ত্রিশ হাজার মুসলিম নিহত হয় (الغارات للثقفي ص640)। কঠিন ক্ষমতালোভী বাদশা (হাদীছের ভাষায় الملك العضوض) এই মুয়াবিয়া পরবর্তীতে নিজেদের ক্ষমতা নিরাপদ ও স্থায়ী করতে ইমাম হাসান, মালেক আশতার, মুহাম্মদ বিন আবু বকর ও আবদুর রহমান বিন খালিদসহ অনেক ছাহাবা-তাবেয়ীকে বিভিন্ন কৌশলে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেয়। একই ভাবে তিনি হযরত তলহা, যুবাইর ও আম্মারসহ জমল ও সিফফীনে নিহত হাজার হাজার ছাহাবী ও তাবেয়ী খুনের জন্যও সরাসরি দায়ী। মুয়াবিয়ার অন্যতম সহযোগী মক্কার একজন খুনী সন্ত্রাসী বুসর বিন আরতাতের পরিচয় দিতে গিয়ে বিখ্যাত সুন্নী ইতিহাসবিদ আল্লামা ইবনে আবদুল বর তাঁর ‘আল-ইসতীয়াব ফী মারিফাতিল আছহাব’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেনঃ     

عن عوانة قال: أرسل معاوية بعد تحكيم الحكمين بسر بن أرطاة في جيش فساروا من الشام حتى قدموا المدينة ، وعامل المدينة يومئذ لعلي بن أبي طالب رضي الله عنه أبو أيوب الأنصاري صاحب رسول الله صلى الله عليه وسلم ، ففر أبو أيوب ولحق بعلي رضي الله عنه ودخل بسر المدينة فصعد منبرها فقال: أين شيخي الذي عهدته هنا بالأمس يعني عثمان رضي الله عنه. ثم قال يا أهل المدينة والله لولا ما عهد إلي معاوية ما تركت فيها محتلماً إلا قتلته. ثم أمر أهل المدينة بالبيعة لمعاوية وأرسل إلى بني سلمة فقال: ما لكم عندي أمان ولا مبايعة حتى تأتوا بجابر بن عبد الله. فأخبر جابر فانطلق حتى جاء إلى أم سلمة زوج النبي صلى الله عليه وسلم فقال لها: ماذا ترين فإنى خشيت أن أقتل وهذه بيعة ضلالة. فقالت أرى أن تبايع وقد أمرت ابني عمر بن أبي سلمة أن يبايع. فأتى جابر بسرا فبايعه لمعاوية وهدم بسر سوراً بالمدينة ، ثم انطلق حتى أتى مكة وبها أبو موسى الأشعري فخافه أبو موسى على نفسه أن يقتله فهرب. فقيل ذلك لبسر فقال ما كنت لأقتله وقد خلع علياً ولم يطلبه‏.‏ 

وكتب أبو موسى إلى اليمن إن خيلاً مبعوثة من عند معاوية تقتل الناس من أبي أن يقر بالحكومة‏.‏ 

ثم مضى بسر إلى اليمن وعامل اليمن لعلي رضي الله عنه عبيد الله بن العباس. فلما بلغه أمر بسر فر إلى الكوفة حتى أتى علياً واستخلف على اليمن عبد الله بن عبد المدان الحارثي فأتى بسر فقتله وقتل ابنه ولقي ثقل عبيد الله بن العباس وفيه ابنان صغيران لعبيد الله بن العباس فقتلهما‏.‏ الاستيعاب (1/161).

অর্থঃ “সিফফীনে দুইজনকে ফয়সাল বানানোর (প্রতারণাপূর্ণ) ঘটনার পর মুয়াবিয়া বুসর বিন আরতাতের নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। বাহিনীটি যখন শাম  থেকে মদীনায় এসে পৌঁছলো, তখন মদীনায় খলীফা আলীর পক্ষ থেকে গভর্ণর ছিলেন হযরত আবু আইয়ুব আনছারী। তো  এই বাহিনীর আগমনের খবর পেয়ে হযরত আবু আইয়ুব মদীনা ছেড়ে হযরত আলীর কাছে গিয়ে (ইরাকে) আশ্রয় নেন। বুসর মদীনায় প্রবেশের পর মিম্বরে উঠে ঘোষণা দিল, “ইতিপূর্বে আমি এখানে আমার যে মুরুব্বীকে (অর্থাৎ, হযরত উসমান) বাইয়াত দিয়েছিলাম, তিনি কোথায়?” অতঃপর সে আরো বললো, “হে মদীনাবাসী! মুয়াবিয়া যদি আমাকে গণহত্যা থেকে বারণ না করতেন, তাহলে আমি মদীনার কোনো বালেগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) পুরুষকে জীবিত রাখতাম না।” অতঃপর সে মুয়াবিয়াকে বাইয়াত দেওয়ার জন্য মদীনাবাসীকে নির্দেশ দিল এবং সালামার ছেলেদের (উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামার নাতি) ডেকে বললো, জাবির বিন আবদুল্লাহকে (একজন বিশিষ্ট আনছারী ছাহাবী) হাজির না করা পর্যন্ত আমার কাছে তোমাদের কোনো বাইয়াত ও নিরাপত্তা নেই। তারা বিষয়টি জাবিরকে জানালে তিনি উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামার কাছে এলেন এবং বললেন, “আপনার কি মতামত? আমিতো এই ভ্রষ্টতার বাইয়াত নিয়ে জানের ভয়ে আছি।” তিনি বললেন, “আমার মত হলো, বাইয়াত দিয়ে দেওয়া। আমি আবু সালামার ছেলেদেরকেও বাইয়াত দিতে বলে দিয়েছি।” অতঃপর জাবির এসে বুসরকে বাইয়াত দিলেন। বুসর মদীনার একটি বাউন্ডারি ভেঙে দিলো। অতঃপর সে মক্কার দিকে রওনা হলো। মক্কায় তখন হযরত আবু মূসা আশআরী ছিলেন। তিনি বুসরের আগমনের খবর পেয়ে ভয়ে পালিয়ে গেলেন। পরে বুসরকে বিষয়টি জানানো হলে সে বললো, আমি ওকে হত্যা করতাম না। কারণ, সে আলীকে দেওয়া বাইয়াত প্রত্যাহার করে নিয়েছিলে (মুয়াবিয়ার প্রতারণাপূর্ণ কৌশলের শিকার হয়ে তিনি এমন করেছিলেন এবং পরে জনরোষের কারণে তিনি ইরাক ছেড়ে মক্কায় চলে গিয়েছিলেন) এবং এরপর তার সন্ধান আর করেনি। এই পলাতক অবস্থায় হযরত আবু মুসা তার স্বদেশী ইয়েমেনবাসীর কাছে চিঠি পাঠিয়ে বললেন, “মুয়াবিয়ার পাঠানো মানুষ হত্যকারী একটি অশ্বারোহী বাহিনীর আগমন ঘটেছে এবং যেই তার সরকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না, তাকে ওই বাহিনী হত্যা করছে।” অতঃপর বুসর ইয়েমেনের দিকে রওনা দিল। তখন সেখানে হযরত আলীর পক্ষ থেকে গভর্ণর ছিলেন উবাইদুল্লাহ বিন আব্বাস (আবদুল্লাহ বিন আব্বাসের ভাই)। বুসরের আগমনের খবর পেয়ে তিনি পালিয়ে কূফায় হযরত আলীর কাছে চলে গেলেন এবং আবদুল্লাহ বিন আবদুল মুদান আলহারেছীকে তার স্থলাভিষিক্ত করে গেলেন। পরে বুসর ইয়েমেনে গিয়ে তাকে ও তার ছেলেকে হত্যা করলো। অতঃপর তার সাথে উবাইদুল্লাহ বিন আব্বাসের পরিবারের সাক্ষাত হলো, যাদের মাঝে উবাইদুল্লাহর দুই শিশু সন্তানও ছিল। বুসর ওই দুইজনকেও হত্যা করলো।” [আল-ইসতিয়াব ফী মারিফাতিল আছহাব, ১/১৬১]।  

ইবনে আবদুল বর আরো বলেন: 

ذكر أبو عمر الشيباني أغار بسر بن أرطاة على همدان وسبى نساءهم فكان أول مسلمات سبين في الإسلام وقتل أحياء من بني سعد‏.‏ الإستيعاب (1/161).

অর্থঃ “আবু উমর শায়বানী উল্লেখ করেছেন যে, বুসর বিন আরতাত ইয়েমেনের হামাদান গোত্রের উপর হামলা করে এবং তাদের নারীদেরকে বন্দী করে। তো তারা ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম বান্দী (মুসলিম কর্তৃক)। সে (বুসর) বনী সাদের কিছু পল্লীতেও হত্যাকান্ড চালায়।” [আল-ইসতীয়াব ফী মারিফাতিল আছহাব, ১/১৬১]।  

-

ইসলামে রাজতন্ত্রের অভিশাপের চালুকর্তা মুয়াবিয়া সম্পর্কে সিনিয়র তাবেয়ী আবদুর রহমান বিন গনম আল-আশআরীর মতামত হলো:

عن عبد الرحمن بن غنم الأشعري قال: «وأي مدخل لمعاوية في الشورى، وهو من الطلقاء الذين لا تجوز لهم الخلافة؟ وهو وأبوه من رؤوس الأحزاب». [الاستيعاب: ج4، ص851 ، أسد الغابة: ج3، ص318].

অর্থঃ “শূরাতে (ইসলামী খিলাফতে) মুয়াবিয়ার আবার কি অধিকার? ওতো সেসব তুলাকাদের (অপরাধের পার্থিব শাস্তি থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত লোকজন) অন্তর্ভূক্ত, যাদের জন্য মুসলমানদের খলীফা হওয়া জায়েয নয়। ও এবং ওর পিতা (আবু সুফিয়ান) খন্দক যুদ্ধের মুসলিম উৎখাতপন্থী দলগুলোর নেতা ছিল।” [ইবনে আবদুল বরের আল-ইস্তীআব (২/৮৫১) ও উসদুল গাবাহ (৩/৩১৮)]। 

-

অর্থঃ সিফফীনের আগে মুয়াবিয়ার দুষ্ট প্রতিনিধি হযরত আলীকে উছমান হত্যার জন্য অভিযুক্ত করলে তিনি (আলী রঃ) মুয়াবিয়ার ব্যাপারে বলেন:

 "لم يجعل له سابقة في الدين ولا سلف صدق في الإسلام ، طليق بن طليق حزب من الأحزاب ، لم يزل حربًا لله ورسوله هو وأبوه حتى دخلا في الإسلام كارهين". الكامل لابن الأثير (148/4).

অর্থঃ “দীনদারিতে ওর কোনো ভালো পূর্ব রেকর্ড নেই এবং ইসলামে সত্যবাদিতারও কোনো সালাফ (পূর্বকীর্তি) নেই। তলীক বিন তলীক এবং (খন্দকে মুসলিম উৎখাতপন্থী) দলসমূহের একটির দলপতি। বাধ্য হয়ে ইসলাম গ্রহণ পর্যন্ত সে ও তার পিতা আল্লাহ ও রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিল।” [ইবনুল আছীরের আল-কামিল ফিত তারীখ (৩/৩১৮)]

-

প্রিয় পাঠক, ইসলামে রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ধূর্ত ব্যক্তি মুয়াবিয়া সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সঃ একটি ছহীহ হাদীছে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। হাদীছটি হলোঃ

عن أبى ذر رضي الله عنه قال: قال النبي صلى عليه وسلم: «أولُ مَنْ يُبدِّلُ سُنَّتىْ رجُلٌ مِنْ بَنِىْ أُمَيَّة». أخرجه ابن أبى شيبة (7/260 ، رقم 35877) بسند صحيح ، وعزاه الذهبى فى السير (1/330) للرويانى. وأخرجه ابن عساكر (65/250) ، وإسناده صحيح. وصححه الألباني فيما سماه "السلسلة الصحيحة" (4/329 ، رقم 1749).   

অর্থঃ হযরত আবু যর রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার সুন্নত (ইমামতে কুবরা বিষয়ক নিয়মনীতি) সর্বপ্রথম পরিবর্তন করবে বনু উমাইয়ার একজন পুরুষ।” [মুছন্নফে ইবনে আবী শায়বা (৩৫৮৭৭)। সনদের মানঃ সর্ম্পর্ণ ছহীহ]।

উল্লেখ্য, এই হাদীছটিকে নাছিরুদ্দীন আলবানীও ছহীহ তালিকাভুক্ত করেছেন এবং বলেছেন, এখানে নিয়মনীতি থেকে উদ্দেশ্য শূরার স্থলে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। [সিলসিলা ছহীহাহ (১১৭৪৯)]।    

-

প্রসঙ্গত, কোনো মুমিন যদি আলে সৌদসহ এই যুগের জালিম শাসকদের চিনতে চায়, তাহলে তার উচিত হবে ইসলামে জুলুমের রাজতন্ত্রের ইতিহাস ভালো করে অধ্যয়ন করা। 

-

মহান আল্লাহ আমাদেরকে ইতিহাস ও বর্তমানের জালিমদের চিনে পথ চলার তৌফীদ দান করুন।

-আহলে বাইত ও ছাহাবীদের সমালোচনার বিধান

(সুস্থ চিন্তার সত্য অনুসন্ধানীদের জন্য রচিত)

*****

মূল বিষয়টি সহজে বুঝানোর জন্য প্রথমে আমি কিছু পয়েন্ট তুলে ধরছিঃ 

* ইসলামে একান্ত দীনি প্রয়োজন ছাড়া নিরীহ কোনে মুসলিমতো বটেই; অমুসলিমকেও গালমন্দ ও সমালোচনা (হাদীছের ভাষায় গীবত) করা জায়েয নেই। 

-

* তবে কোন মানুষটি নিরীহ ও নিরপরাধ এবং কার কোন্ ধরণের কথাগুলো #গালি ও সমালোচনার অন্তর্ভূক্ত হবে, তা নির্ধারণ করা ‘সন্ত্রাস’র সংজ্ঞা নির্ধারণ করার মত বড় জটিল বিষয়। 

-

* বর্তমান যুগে যেহেতু দীনদার ও আমানতদার আলিমের চরম সংকট ও অভাব চলছে, তাই মুমিনের উচিত সতর্ক হয়ে চলা এবং শুধুমাত্র মজবুতভাবে বিশ্বস্ত আলিমদের অনুসরণ করা। 

-

* আমার ব্যাপারে বলতে হয় যে, আমি আবুল হুসাইন আলেগাজী দীনদারি ও আমানতদারির সাথে মানুষের কাছে ইলম পৌঁছানোর চেষ্টা করছি মাত্র। এতে আমি কারো কাছ থেকে প্রতিদান দাবি করি না। আমার রিজিকের মালিক দয়াময় আল্লাহ এবং আমার প্রকৃত বন্ধু নিরীহ ও নিরপরাধ মুমিনরা।

-

* এ লেখার মাধ্যমে আমি আহলে বাইত ও ছাহাবা কেরামের সমালোচনা ও গালির বিধান বলার চেষ্টা করছি। কিন্তু এতে বড় সমস্যা হলো ছাহাবা কেরামের সংজ্ঞা। কিছু কিছু হাদীছে আহলে বাইতের সংজ্ঞা থাকলেও কোনো একটি হাদীছেও ছাহাবার সংজ্ঞা নেই। সালাফী, দেওবন্দী ও রেজভীসহ বিভিন্ন ইসলামী ধারার ভূয়া ছাহাবা প্রেমিক বনী আদমেরা নানা কারণে যাকে-তাকে ছাহাবা বিদ্বেষী বলে #তবলা বাজালেও সত্য হলো, তারা ছাহাবা কেরামের সংজ্ঞাটাও কোরআন ও হাদীছ বা ইজমায়ে উলামার দলীল দিয়ে বলতে পারবে না। দুই আনার দুনিয়াদার এসব ইসলামী #বক্তা, #লেখক ও #ফেসবুকাররা দুনিয়াবী ধান্ধার বাইরে ঈমান, আমল ও ইলম কোনোটা চর্চা করার সুযোগ পান না। কারণ, দুনিয়ার ভোগ-সম্মানের চিন্তা-ধান্ধা তাদের মাথায় জগদ্বল পাথরের মত চেপে বসেছে। মসজিদ, মাদ্রাসা, মাজার, মাহফিল ও ইসলামী দল সর্বত্র জোর কদমে চলছে তাদের অনৈতিক তৎপরতার দৌড়ঝাপ। 

এসব কথা আমি মঙ্গলগ্রহ থেকে অবতীর্ণ হয়ে বলছি না; চোখের সাক্ষ্য থেকে বলছি। অনেকের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেই কিছু প্রত্যক্ষদর্শনের কথা তুলে ধরা যাবে। তবে নাম-ঠিকানা বলে কারো গীবত আমি করতে চাই না। 

-

* ছাহাবীর সংজ্ঞায় অনেকে শিশুর মত কোনো দলীল ছাড়া বলতে পারেন, “ছাহাবী হলেন সেসব লোকজন, যারা ঈমানের হালতে নবীজিকে সঃ দেখেছেন এবং ঈমানের হালতে মারা গেছেন।” ঠিক আছে, আমি এসব তাদের কথা মেনে নিলাম। কিন্তু এখানে বড় প্রশ্ন হলো, নবী সঃ যুগের মুসলমানদের কার মাঝে ঈমান ছিল ও কার মাঝে ঈমান ছিল না, তা বুঝবেন কি দিয়ে? ঈমানতো হৃদয়ের ব্যাপার-স্যাপার। বলতে পারেন, আমল (নামাজ-রোজা ইত্যাদি) দিয়ে। তখন প্রশ্ন আসবে, আমলতো মুনাফিক মুসলমানরাও করতো। কার আমল খাঁটি ছিল ও কার আমল লোক দেখানো ছিল, তা আপনি বুঝবেন কি দিয়ে? কেউ বলবেন, নবীজি সঃ এর বাণী ও তাঁর পক্ষ থেকে ঈমানের স্বীকৃতি পাওয়া ছাহাবীদের সাক্ষ্য দ্বারা। তখন প্রশ্ন আসবে, এই সব বাণী ও সাক্ষ্য কোথায় পাবেন? কেউ বলবেন, হাদীছের মুসনদ কিতাবে (সূত্রগ্রন্থে)। তখন প্রশ্ন আসবে, মুসনদ কিতাবগুলোর বর্ণনাগুলো শুদ্ধ না ভেজাল তা বুঝবেন কি দিয়ে? কেউ বলবেন, রিজাল বিশেষজ্ঞ মুহাদ্দিসীনে কেরামের সাক্ষ্য দিয়ে। তখন প্রশ্ন আসবে, কিছু বর্ণনায় এসেছে ইসলামে রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাকারী ছাহাবী মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান ফাসিক এবং আর কিছু বর্ণনায় এসেছে তার জন্য নবীজি সঃ হেদায়তের দোয়া করেছেন। আর এসব বর্ণনাকে কিছু মুহাদ্দিস বলেছেন, ছহীহ/শুদ্ধ এবং আর কিছু মুহাদ্দিস বলেছেন, জঈফ/ভেজাল। এখন আপনি কোন মুহাদ্দিসের কথায় আস্থা রাখবেন? বলবেন, অধিকাংশের কথার অনুসরণ করবো। হ্যা! তাহলে মনে রাখুন, মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যেসব বর্ণনা এসেছে, সেগুলোকেই অধিকাংশ মুহাদ্দিস ছহীহ/শুদ্ধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং তার পক্ষে আসা বর্ণনাগুলোকে তারা দুর্বল-জাল বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু ব্যাখ্যাতে গিয়ে অনেক ব্যাখ্যাকার হাস্যকর কথা বলেছেন। এর কারণ, তাদের কারো মাঝে ছিল পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব ও আর কারো মাঝে ছিল সুপ্ত ইরজা বান্ধব চিন্তা। তবে আল্লামা মারগিনানী, আল্লামা তাফতাজানী, আল্লামা আবু বকর জাচ্ছাস ও আল্লামা শাওকানীসহ অনেকে এসব হাস্যকর কথা বলেননি। 

সত্য হলো, বাস্তবতা অনেক জটিল। তাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করুন যে, ১৪০০ বছর আগের ছাহাবা সমাজেও আমাদের সমাজের মত নানা ধরণের মুসলিম ছিল। তন্মধ্যে ঈমানওয়ালাদের স্তরও যেমন অনেক ছিল, তদ্রুপ বেঈমান বা ফাসিক-মুনাফিকদের স্তরও অনেক ছিল। তবে সত্য হলো খন্দকের যুদ্ধ ও মক্কা বিজয়ের পর আরব উপদ্বীপের যেসব মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তাদের মাঝেই মুনাফিক তথা সোশ্যাল মুসলিমদের সংখ্যা বেশী ছিল। এ জন্যই তাদের কেউকেউ রসূলুল্লাহ সঃ এর সাথে বেয়াদবি করে পরবর্তীকালের খারেজীদের অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল। আবার তাদের অনেকে নবীজি সঃ এর ইন্তেকালের পর জাকাতের বিধিবিধানসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন তুলে ইতিহাসে #মুরতাদ হিসেবে পরিচিত হয়েছিল (তারা আনুষ্ঠানিক ভাবে ইসলাম ত্যাগ করেছিলেন না)। 

তো এই ধরণের নামধারী ছাহাবীসহ সর্বযুগের সকল মুনাফিক ও ফাসিকদের সমস্যা হলো, তারা গাইবের প্রতি ঈমান আনতে পারে না। তারা ঈমান আনে মুখে এবং তা শুধুমাত্র পরিবেশ ও পরিস্থিতির টান-চাপে। 

যাই হোক, বিভিন্ন হাদীছ ও তাফসীর গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, কাঠোর নিফাকবিরোধী ছাহাবী দ্বিতীয় খলীফা উমর কারো জানাযায় হাজির হওয়ার জন্য তাতে হুযাইফা রাঃ অংশ গ্রহণ করছেন কি না দেখতেন। যদি দেখতেন, হযরত হুযাইফা তাতে অংশগ্রহণ করেছেন, তখন তিনিও তাতে অংশগ্রহণ করতেন। কিন্তু একদিন হুযাইফার প্রতিবেশী একজন ছাহাবী মারা গেলে তিনি তার জানাযায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। তখন তিনি তাকে সে লোকটি মুনাফিকদের অন্তর্ভূক্ত কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন হ্যা! তখন হযরত উমর মুনাফিকদের তালিকায় তার নাম আছে কি না জিজ্ঞেস করলেন। তিনি (হুযাইফা) বললেন, নেই। তখন উমর (আনন্দে) কেঁদে দিলেন। বিস্তারিত সূত্রসহ জানতে নিম্নোল্লিখিত ইমাম আবু বকর খরায়েতীর (২৪০-৩৩৭ হিজরী) ‘মাসায়িউল আখলাক’, ইমাম আবু বকর ইবনে আবী শায়বার ‘আল-মুছান্নাফ’ ও ইমাম ইবনে জরীর তাবারীর তাফসীর ‘জামউিল বয়ান’র বর্ণনাগুলো দেখুনঃ

حدثنا : حماد بن الحسن بن عنبسة الوراق ، ثنا : أبو داود الطيالسي ، ثنا : أبو حرة ، عن الحسن ، قال : هلك رجل من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم ، وكان جارًا لحذيفة ، فلم يصل عليه حذيفة ، فبلغ ذلك عمر لحذيفة ، وأقبل عليه : يموت رجل من أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم ، ولا تصلي عليه؟ ، فقال : يا أمير المؤمنين ، إنه منهم ، قال : فنشدتك الله ، أأنا منهم أم لا ؟ ، قال : اللهم لا ، ولا أؤمن منها أحداً بعدك. أخرجه الخرائطي فى مساوئ الأخلاق ، باب ذم النفاق (رقم 297). وأخرجه ابن أبي شيبة فى المصنف (8/637 ، رقم 36724) ، قال: حدثنا : أبو معاوية ، عن الأعمش ، عن زيد بن وهب قال : مات رجل من المنافقين فلم يصل عليه حذيفة ، فقال له عمر : أمن القوم هو ؟ ، قال : نعم ، فقال له عمر : بالله منهم أنا ؟ ، قال : لا ، ولن أخبر به أحداً بعدك. وأخرجه الطبري فى جامع البيان ، سورة التوبة (رقم 15743) ، قال: حدثنا : بشر ، قال : ، ثنا : يزيد ، قال : ، ثنا : سعيد ، عن قتادة سنعذبهم مرتين عذاب الدنيا وعذاب القبر ، ثم يردون إلى عذاب عظيم ذكر لنا أن نبي الله صلى الله عليه وسلم أسر إلى حذيفة باثني عشر رجلاً من المنافقين ، فقال : ستة منهم تكفيكهم الدبيلة ، سراج من نار جهنم يأخذ في كتف أحدهم حتى يفضي إلى صدره ، وستة يموتون موتاً ذكر لنا أن عمر بن الخطاب رحمه الله كان إذا مات رجل يرى أنه منهم نظر إلى حذيفة ، فإن صلى عليه وإلاّ تركه ، وذكر لنا أن عمر قال : لحذيفة : أنشدك الله أمنهم أنا ؟ ، قال : لا والله ، ولا أؤمن منها أحداً بعدك. قال الحافظ ابن حجر فى المطالب العالية ، كتاب التفسير (رقم 3718) إسناده صحيح.

-

তবে ছহীহ মুসলিম (২৭৭৯) ও বাইহাকীর দালায়েলুন নুবুওয়াতে (৫/২৬১) স্থান পাওয়া কিছু বর্ণনা থেকে জানা যাচ্ছে যে, মুনাফিকদে তালিকায় ইসলামে রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বাদশা মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ানের নাম ছিল এবং তিনি তাবুক অভিযান থেকে ফেরার পথে একটি গিরিপথে রাতের আধাঁরে নবীজি সঃ উপর হামলা করতে যাওয়া বা তাঁর নির্দেশ অমান্য করে একটি কূপের কাছে হাজির হওয়া লোকদের মাঝে ছিলেন। 

-

ভাইয়েরা! নিফাক যেমন কারো মক্কার গভর্ণর ও মুসলিম বিশ্বের রাজা হতে বাধ সাধে না, তেমনি মুহাদ্দিস ও মুফাসসির হতেও সাধে না। কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস ছিলেন খ্রীষ্টান। বর্তমান আরব ও অনারব অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী শিক্ষার পাঠ দেন খ্রীষ্টানসহ নানা ধরণের বেদীন লোকেরা। কাদিয়ানীগুরু গোলাম আহমদও অনেক বড় মুহাদ্দিস ছিল। তাগুত শাসকদের দরবারী শায়খ-হুজুররাও পদ্মা-যমুনার জলের সমান ইসলামী জ্ঞান রাখেন। মাথায় পাগড়ি বেধে মুহতামিম ও মুহাদ্দিছগিরীতে লিপ্ত সাধা দাড়ির শায়খ/হুজুরকেও কওমে লূতের কাজে ধরা পড়তে দেখা যায়। 

---

এবার আসুন ছাহাবীর সংজ্ঞা সম্পর্কে যুক্তিপূর্ণ কথায়। আরবী ছাহাবা صحابة শব্দের অর্থ সাহচর্য, সান্নিধ্য, সান্নিধ্য প্রাপ্ত লোকজন। এটির একবচন ছাহাবী। ইসলামী পরিভাষায় ছাহাবা বলা হয় সেসব মুসলিমকে, যারা মুসলিম অবস্থায় আল্লাহর রসূলকে সঃ দেখেছেন। তবে ১৪০০ বছর আগের কোনো মুসলিমের নবীজিকে সঃ দেখার অর্থ কখনো এই না যে, লোকটি খাঁটি মুমিন বা আল্লাহর ওলী হয়ে গেছে। কারণ, নবীজি সঃ এর জীবদ্দশায় তাঁকে দর্শনকারী অনেক মুসলিম আমাদের সমাজের মুসলিমদের ন্যায় নানা অন্যায় ও কপটতামূলক কাজ করেছেন। বিশেষত জিহাদ ও ও মুসলিমদের কল্যাণ কামনার প্রশ্নে সবসময় সুবিধাবাদী পথ অবলম্বন করেছেন। এর বিবরণ সূরা তাওবা, সূরা আহযাব, সূরা বাকারা, সুরা আলে ইমরান, সূরা নিসা ও সূরা মুনাফিকূনসহ বিভিন্ন সূরায় রয়েছে। অতঃপর নবীজি সঃ এর ইন্তেকাল হলে মক্কা বিজয়ের আগে-পারে ইসলাম গ্রহণকারী আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন গোত্র জাকাতের বাধ্যবাধকতার (রাষ্ট্র কর্তৃক জোরপূর্বক আদায়) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং আর কিছু লোক নজদের মুসাইলামা ও ইয়েমেনের আসওয়াদ আনাসীর মত ভন্ডদের দলে গিয়ে ভিড়ে। 

এর সুস্পষ্ট কারণ/ব্যাখ্যা হলো, নবীজি সঃ এর সময়ে ইসলাম গ্রহণ করলে কিংবা মুসলিম অবস্থায় তাঁকে দেখলেই কেউ খাঁটি মুমিন হয় না। এই ধরণের ভেজাল মুসলিমদের উদ্দেশ্য করে নবীজি সঃ মাঝে মাঝে কিছু কথা বলতেন। তন্মধ্যে একটি হলো:

عَنْ أَبِي بَرْزَةَ الأَسْلَمِيِّ ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الإِيمَانُ قَلْبَهُ ، لاَ تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ ، وَلاَ تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ ، فَإِنَّهُ مَنْ يَتَّبِعْ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ ، وَمَنْ يَتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِي بَيْتِهِ». أخرجه أبو داود (4/270 ، رقم 4880) ، والبيهقى فى الكبرى (10/247 ، رقم 20953) ، وأحمد (4/420 ، رقم 19791) ، وأبو يعلى (13/419 ، رقم 7423).

অর্থঃ হযরত আবু বারযা আসলামী -رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم বলেছেন, “হে মুখে ইসলাম গ্রহণকারী লোকজন! যাদের হৃদয়ে ঈমান প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলামানদের গীবত করো না এবং তাদের দুর্বলতা খুঁজে বেড়িও না। কারণ, যে মুসলিমদের দুর্বলতা খুঁজে বেড়ায়, আল্লাহও তার দুর্বলতা খুঁজেন। আর আল্লাহ যার দুর্বলতা খুঁজেন, তাকে তিনি তার নিজ গৃহেই লাঞ্চিত করেন।” [সুনানে আবু দাউদ (৪৮৮০), সুনানে বাইহাকী কোবরা (২০৯৫৩), মুসনদে আহমদ (১৯৭৯১) ও মুসনদে আবী ইয়ালা (৭৪২৩)]। 

ভেজাল ও দুর্বল ঈমানের ছাহাবীদের লক্ষ্য করে বিদায় হজের দিন নবীজি সঃ বলেছিলেন:

«لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّاراً يضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ». أخرجه البخارى (1/56 ، رقم 121) ، ومسلم (1/81 ، رقم 65). 

“তোমরা আমার পরে একে অপরের গর্দান মেরে কাফির/অকৃতজ্ঞে পরিণত হয়ো না।” [ছহীহ বোখারী (১২১) ও ছহীহ মুসলিম (৬৫)]। 

-

তো ছাহাবা সমাজে ভেজাল মুমিন থাকার কারণে বলতে হয় যে, বাহ্যিক হালত বিবেচনায় ছাহাবীগণ তিন প্রকার। যথাঃ মুবাশ্বারুন (সুসংবাদ প্রাপ্ত), মুযাম্মামুন (নিন্দিত) ও মসকূত আনহুম (ভালো-মন্দ কিছুই জানা যায়নি)। 

-

এবার আসুন ব্যাখ্যায়ঃ

এক. মুবাশ্বারুন। তারা হলেন সেসব ছাহাবী, যাদের ঈমানদার বা জান্নাতী হওয়ার ব্যাপারে বিশ্বাসযোগ্য কোনো বর্ণনা রয়েছে। 

এরকম শতশত ছাহাবীর নাম হাদীছ ও ইতিহাস গ্রন্থসমূহে রয়েছে। 

-

দুই. মুযাম্মামুন। তারা হলো সেসব ছাহাবী, যাদের ফাসিক বা মুনাফিক হওয়ার ব্যাপারে বিশ্বাসযোগ্য কোনো বর্ণনা রয়েছে। 

খলীফা হযরত আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ইসলামে রাজতন্ত্রে প্রতিষ্ঠাকারী মুয়াবিয়াসহ এরকম বেশকিছু ছাহাবীর নাম হাদীছ ও ইতিহাস গ্রন্থসমূহে রয়েছে। 

-

তিন. মসকূত আনহুম। যাদের ব্যাপারে ভালো-মন্দ কোনো কথা পাওয়া যায় না। এরকম হাজারো ছাহাবীর নাম হাদীছ ও ইতিহাস গ্রন্থসমূহে রয়েছে। 

-

বিধানঃ কোরআন ও হাদীছ, ইজমা ও কিয়াসের আলোকে আহলে বাইতে রসূল (হযরত আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন), মুবাশ্বারুন ও মসকূত আনহুম ছাহাবীদের কাউকে কোনো ভুল-ত্রুটির জন্য গালি/লানত দেওয়া জায়েয হবে না। তবে পরবর্তী যুগের মানুষের প্রয়োজনীয় শিক্ষার জন্য কোরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত তাদের কোনো ভুল-ত্রুটি উল্লেখ করা যাবে। কিন্তু এজন্য তাদেরকে গালি/লানত দেওয়া তথা হেয় প্রতিপন্ন করা কোনোভাবেই জায়েয হবে না। 

তবে আহলে বাইতকে বিশেষত হযরত আলীকে গালি দেওয়া নবীজিকে সঃ গালি দেওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে বিভিন্ন ছহীহ হাদীছে [মুসনদে আহমদ (২৬৭৯১) ও ইবনে আসাকির (১৪/১৩১)]। 

খারেজী-নাছেবীদের হযরত আলী ও হযরত হাসানকে গালি দেওয়ার এবং রাফেজী-শিয়াদের হযরত আবু বকর ও হযরত উমরসহ অধিকাংশ ছাহাবীকে গালি দেওয়ার কারণ হলো তাদের অজ্ঞতা ও বক্রতা। 

অজ্ঞতার কারণে ভালো কোনো ছাহাবীকে গালি অথবা মন্দ/মুনাফিক কোনো ছাহাবীর প্রশংসা করাতে কারো ঈমান নষ্ট না হলেও বক্রতার কারণে যেসব রাফেজীমনা শিয়া বা নাছেবীমনা সুন্নী এ কাজ করে, তারা জিন্দীক বা বকধার্মিক। তাদেরকে প্রকাশ্যে কাফির ফতোয়া দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়ানো ঠিক না হলেও হৃদয় থেকে তাদেরকে ঘৃণা করা যে কোনো মুমিনের কর্তব্য। কারণ, নবীজি সঃ তাঁর সময়ের মুনাফিক মুসলমানদেরকে তাকফীর কিংবা সমাজুচ্যত করেননি। 

কিন্তু সমাজ ও #রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাথায় কাজ না করায় ফকীহ-মুহাদ্দিস শ্রেণীর অনেক ইসলামিক স্কলার তাদের রচিত কিতাবসমূহে অনেক অসার ও অগ্রহণযোগ্য কথা বলেছেন। তন্মধ্যে তাকফীর (অর্থাৎ, এই কথা বললে কাফির হবে, ওই কথা বললে তাকে হত্যা করা হবে ইত্যাদি ফতোয়া) ও বিভিন্ন অশ্লীল কথাবার্তা রয়েছে (যেমন শিয়া/জাফরী ফকীহদের নারীর পায়ুপথে সঙ্গমের বৈধতার ফতোয়া, শাফেয়ী মাযহাবের ফকীহদের নিজের জারজ কন্যাকে বিয়ের বৈধতার ফতোয়া ও কাউকে মাহরিম বানানোর জন্য পুরুষদের জন্য যেকোনো নারীর দুধপানের বৈধতার পক্ষে সালাফী মুহাদ্দিছ আলাবানীর ফতোয়া)। এই কারণে পরবর্তী যুগের অনেক মানুষ বিভিন্ন ইসলামী বিষয়ে বিশেষত মুসলমান ও ইসলামী রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নিয়ে যথেষ্ট বিভ্রান্তিতে ভূগেছেন। বর্তমানে এই বিভ্রান্তিতে প্রবল হওয়ার কারণ হলো, দুনিয়া থেকে মনুষ্যত্ববোধ উঠে যাওয়া।

মূলত কোনো মানুষের ভালো #মুসলিম হওয়ার জন্য তাকে আগে ভালো #মানুষ হতে হয়। কাপুরুষ ও লোভী/স্বার্থপর মনের মানুষেরা যতই জ্ঞানী, গুণী, মুফতী, মুহাদ্দিস ও মুফাসসির হোক না কেন, তারা কখনো শুদ্ধমনের মুমিনের তালিকাভুক্ত হবে না। কারণ, আল্লাহর কাছে মানুষের সকল কর্মের মূল্যায়ন ও বিচার হয় কর্তার নিয়ত-উদ্দেশ্যের আলোকে। 

-

মুযাম্মাম/নিন্দিত ছাহাবীদেরকে কোরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত তথ্যের আলোকে হেয় প্রতিপন্ন করে কথা বলা যাবে। তবে তাদেরকে লানত দেওয়া কারো জন্য ফরজ নয়। বরং লানত এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। অনুরুপ কোনো দীনদার মুসলমানকেও গালি/লানত দেওয়া জায়েয হবে না। ইসলামে কাউকে গালি/লানত দেওয়া তখনই জায়েয হয়, যখন লোকটি প্রকাশ্য/সুস্পষ্ট জালিম (অত্যাচারী) হয়। 

আর ছাহাবীদের নামের শেষে রদিয়াল্লাহু আনহু رضي الله عنه এবং পরবর্তী সময়ের মৃত মুসলমানদের নামের শেষে رحمة الله عليه লেখা+বলা সুন্নত/মুস্তাহাব কিছুই নয়। এটি যারা যার অনুভূতির ব্যাপার। কোনো ছাহাবী বা পরবর্তী মুসলিমদের কারো নাম শুনে ভক্তি ও মহব্বত থেকে যে কেউ চাইলে তার ব্যাপারে রদিয়াল্লাহু আনহু ও রহমতুল্লাহি আলাইহি বলতে বা লিখতে পারে। তবে না বললে বা না লিখলে তার মাঝে তাদের প্রতি ভক্তি-ভালোবাসা নেই বলে কেউ দাবি করতে পারে না। কারণ, ছহীহ বোখারী ও ছহীহ মুসলিমসহ হাদীছগ্রন্থগুলোর কোথাও একজন ছাহাবী নামের শেষেও সেগুলোর রচয়িতাগণ رضي الله عنه লিখেননি। তবে ফাতেমাসহ আহলে বাইতের কারো নামের শেষে সালামের বাক্য (عليها السلام ، عليه السلام) দেখতে পাওয়া যায়। আর এটি রচয়িতার কাজও হতে পারে এবং কাতিব/রাইটারের কাজও হতে পারে। 

-

এবার আসুন বিভিন্ন শ্রেণীর উদাহরণে। 

এক. কতিপয় মুবাশ্বার ছাহাবীঃ

ক. মুহাজির পুরুষ: হযরত আবু বকর, হযরত উমর, হযরত উছমান, হযরত আলী ও তাঁর সন্তান হাসান-হুসাইন, হযরত হামজা, হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ, হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জররাহ, হযরত আম্মার, হযরত যুবাইর, হযরত তলহা, হযরত মুসআব বিন উমাইর, হযরত সাঈদ বিন জাইদ, হযরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস, হযরত আবু যর, হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ, হযরত আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম, হযরত সালমান, হযরত বেলাল, হযরত মিকদাদ, হযরত জুবাইর বিন মুতইম, আবদুল্লাহ বিন আব্বাস ও আরো অনেকে।

-

খ. মুহাজির মহিলা: নবীজি সঃ এর চার কন্যা জয়নব, উম্মে কুলসুম, রুকাইয়া ও ফাতেমা, স্ত্রীবর্গ (তবে স্ত্রী ছফিয়া বিনতে হুয়াই ও জুওয়ারিয়া বিনতে হারিছ মুহাজিরা নন), ছফিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব (নবীজি সঃ এর ফুফু), আসমা বিনতে উমাইস, আসমা বিনতে আবু বকর, উম্মে ফরওয়া বিনতে আবু কুহাফা (হযরত আবু বকরের বোন), হামনা বিনতে জাহাশ ও ফাতেমা বিনতে কয়েস প্রমুখ। 

-

গ. আনছার পুরুষ: হযরত আবু আইয়ুব, হযরত সাদ বিন মুয়ায, হযরত সাদ বিন উবাদা, হযরত মুআয বিন হারিছ, হযরত উবাদা বিন ছামিত, হযরত সাদ বিন জুরারা, আব্বাস বিন উবাদা, হযরত সাদ বিন রবী, হযরত আবদুল্লাহ বিন রওয়াহা, হযরত আবদুল্লাহ বিন হারাম (হযরত জাবিরের পিতা ও শহীদে উহুদ), হযরত আনাস বিন নজর (শহীদে উহুদ), হানজালা বিন আবু আমির (শহীদে উহুদ), হযরত আবু তলহা (উম্মে সুলাইমের স্বামী), হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ, হযরত উবাই বিন কাব, হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী, হযরত সাহল বিন সাদ, হযরত আনাস বিন মালিক, হযরত আবুদ দরদা ও আরো অনেকে। 

ঘ. আনছার মহিলা: উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান (হযরত আবু তলহার স্ত্রী ও হযরত আনাসের মা), উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (হযরত উবাদা বিন ছামিতের স্ত্রী), আসমা বিনতে ইয়াযীদ, উম্মে ওয়ারাকা (গৃহ শহীদা), উম্মে মুবাশ্বির (হযরত জায়েদ বিন হারেসার স্ত্রী), উম্মে সিনান, খাওলা বিনতে কয়েস/ছামির, রুবাইঈ বিনতে মুআউয়িয (رُبَيِّعِ بِنْتِ مُعَوِّذِ), উম্মে আতিয়া, উম্মে বুজাইদ, উম্মে সাদ, উম্মে শুরাইক, উম্মে উমারা, উম্মুল আলা, উম্মে আইয়ুব, উম্মে হুমাইদ, উম্মুল মুনযির প্রমুখ। এসব আনছার ছাহাবিয়ার সাথে নবীজি সঃ সুসম্পর্ক ছিল এবং তাঁরা সকলে উনার কাছ থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। 

-

দুই. কতিপয় মুযাম্মাম ছাহাবীঃ

মুযাম্মাম ছাহাবীদের তালিকায় যাদেরকে রাখা যায়, তাদের মধ্যে আলোচিত মদীনার কয়েকজন হলো, আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সালূল, জদ বিন কয়েস, জুলাস বিন সুওয়াইদ, হারেছ বিন সুওয়াইদ, বিজাদ বিন উছমান, নাবতাল বিন হারিছ, কয়েস বিন আমর, জাইদ বিন আমর, রাফে বিন ওয়াদীয়া, আউস বিন কয়জী, জুওয়াই বিন হারিছ, আব্বাদ বিন হুনাইফ, সাদ বিন হুনাইফ, জাইদ বিন লছীত, নোমান বিন আওফা, উছমান বিন আওফা, রেফায়া বিন জাইদ, ছালাবা বিন হাতিব ও কুজমান বিন হারিছ (জাহান্নামী বলে ঘোষিত উহুদের আলোচিত মুসলিম বীর) প্রমুখ। এদের অনেকের অপকর্মের কথা ومنهم (তাদের কেউকেউ) শব্দ দ্বারা সূরা তাওবায় আলোচিত হয়েছে। 

মক্কা ও তায়েফের কয়েকজন মুযাম্মাম ছাহাবী হলো, আল-হাকাম ইবনে আবিল আচ ও তার ছেলে মরওয়ান (সে ইমাম হাসানের বড়), আবু জাহম, আল-ওয়ালীদ বিন উকবা, উমারা বিন উকবা, আবদুল্লাহ বিন সাদ বিন আবী সারহ, আবু সুফিয়ান বিন হারব, তার বৈধ ছেলে মুয়াবিয়া ও জারজ ছেলে জিয়াদ (সে ইমাম হাসানের বড়), সফওয়ান বিন উমাইয়া, রবীআ বিন উমাইয়া, আমর বিন সুফিয়ান ওরফে আবুল আওয়ার আস-সুলামী, মুখতার বিন আবু উবাইদ আছ-ছাকাফী (সেও ইমাম হাসানের বড়) ও বুসর বিন আরতাত প্রমুখ।

নজদ ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কয়েকজন মুযাম্মাম ছাহাবী হলো খারেজীদের নেতা হুরকুছ বিন জুহাইর ওরফে জুল খুওয়াইছিরা আত-তামীমি, জাইদ বিন হুছাইন আত-তাঈ, জুরআ বিন বুরজ আত-তাঈ, আবদুল্লাহ বিন ওয়াহাব আর-রাসিবী। বর্তমানে ওমান ও উত্তর আফ্রিকার ইবাজী খারেজীদের অনেকে এসব খারেজী ছাহাবীদেরকে হেদায়ত প্রাপ্ত ও তাদেরকে দমনকারী সাইয়িদুনা হযরত আলীকে গোমরাহ বলে প্রচার করছে (ইন্টারনেটে তাদের প্রবন্ধ আছে)। 

-

তিন. মসকূত আনহুমঃ

এদের মাঝে রয়েছেন সেসব ছাহাবী, ফতেহ মক্কার আগে-পরে ইসলাম গ্রহণকারী সেসব লোক, যারা পরবর্তীতে মুরতাদ হয়নি কিংবা ইসলামবিরোধী কোনো কাজে জড়িত হয়নি। 

-

মহান আল্লাহ আমাদেরকে ছহীহ দীনি ইলম দান করুন।

-খিলাফত ও রাজতন্ত্র এবং মিনহাজে ইবনে তাইমিয়ার ওকালাতী নিয়ে মাওলানা মওদূদীর মন্তব্য

(আমার অনুভবে চিন্তাবিদ সাইয়েদ মওদূদী, তার ‘খিলাফত ও রাজতন্ত্র’ গ্রন্থ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ) 

*****

আজ হঠাৎ করে মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ‘লা মওদূদী রচিত ‘খিলাফত ও রাজতন্ত্র’ বইটি খুলে দেখলাম। বইটির অনুবাদক গোলাম সোবহান সিদ্দিকী। প্রকাশক বাংলাদেশ ইসলামিক ইনষ্টিটিউট পরিচালিত আধুনিক প্রকাশনী। প্রথম প্রকাশঃ ১৯৮৪। ১২শ প্রকাশ অক্টোবর ২০১৫। বইটি আমি কিনেছিলাম ২০১৭ এর শুরুতে আন্দরকিল্লা (চট্টগ্রাম) থেকে। বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৫০। 

-

আমার অনুভবে বইটির লেখক মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ‘লা মওদূদী (১৯০৩-১৯৭৯) একজন বিশ্ববিখ্যাত বিপ্লবী ইসলামী চিন্তাবিদ। দীর্ঘদিন ধরে আরব দুনিয়া নিয়ে আমার পড়াশোনা মতে তিনি (মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ‘লা মওদূদী) আরব ইসলামী বিপ্লবপন্থী বুদ্ধিজীবিদের কাছে হাসানুল বান্না ও সাইয়েদ কুতুবসহ সমকালীন সকল বিপ্লবী ইসলামী চিন্তাবিদদের চেয়ে মহান। উনার গুরুত্বপূর্ণ প্রচুর বই উনার জীবদ্দশাতেই আরবীতে রুপান্তরিত হয়েছে। আজ থেকে ১৫ বছর আগেই আমি এসবের পিডিএফ জর্দানী জিহাদী তাত্ত্বিক আবু মুহাম্মদ আল-মাকদেসী প্রতিষ্ঠিত ‘মিম্বারুত তাওহীদ ওয়াল জিহাদ’- এ দেখতে পেয়েছি। কেউ সাইয়েদ মওদূদীর আরবী বই পেতে চাইলে مؤلفات المودودي  লিখে গুগলে সার্চ দিতে পারেন। 

-

একজন রিয়েল জিহাদী-বিপ্লবী ব্যাকগ্রাউন্ডের মেধা হিসেবে আমার সাক্ষ্য হলো, সমকালীন ইসলামী দুনিয়ায় সাইয়েদ মওদূদীর চেয়ে বড় কোনো ইসলামী বিপ্লবী তাত্ত্বিক দেখা যায়নি। আমার মতে উনাকে বুঝানোর জন্য কারো উনার প্রতিষ্ঠিত দল জামায়াতে ইসলামীর আমীর হওয়া কিংবা গতানুগতিক কোনো মুফতী-মুহাদ্দিছ হওয়া যথেষ্ট নয়। উনাকে ভালো করে বুঝার জন্য যে কোনো মানুষকে যথেষ্ট মেধাবী, যথেষ্ট সাহসী ও যথেষ্ট বিশ্বাসী মুমিন হতে হবে। এর সাথে বয়স অন্তত ৩৫-৪০ হতে হবে। আমি যখন আমাদের দেওবন্দী লাইনের প্রচলিত ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সাইয়েদ মওদূদীকে তেমন বড় কোনো ইসলামী চিন্তাবিদ ভাবতাম না, তখন আমি নিশ্চয় দুর্বল ঈমানদার বা মেধাহীন ছিলাম- তা নয়। মূলত বয়সের স্বল্পতা ও অভিজ্ঞতার অভাবের কারণেই এমন হয়েছিল। 

-

সাইয়েদ মওদূদীর সাথে সাইয়েদ কুতুবসহ অন্যান্য ইসলামী বিপ্লবী চিন্তাবিদদের পার্থক্য হলো, সাইয়েদ মওদূদী আহলে বাইতের উত্তরাধিকারী তথা আওলাদে রসূল সঃ (আগ্রহী পাঠকদের জন্য আমি উনার শাজারায়ে নসব কমেন্ট বক্সে উল্লেখ করবো)। কিন্তু ইমাম সাঈদ নূরসী, হাসানুল বান্না, সাইয়েদ কুতুব, মোহাম্মদ কুতুব ও মুফতী ইউসুফ কারজাবী কিংবা আমি আবুল হুসাইন আলেগাজীর এই সোভাগ্য নেই। সাইয়েদ মওদূদীর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো মজলুম ইমাম আবু হানীফার সাথে উনার বিভিন্ন মিল। মুজাহিদীনে আহলে বাইতের সমর্থক ইমাম আবু হানীফা যেমন জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় ভালো ও মন্দ উভয় প্রকারের আলিমদের পক্ষ থেকে ভুল বুঝা ও অপ্রপ্রচারের শিকার হয়েছিলেন, তদ্রুপ সাইয়েদ মওদূদীও তার সমকালীন ভালো ও মন্দ উভয় প্রকারের আলিমদের পক্ষ থেকে একই ধরণের ভুল বুঝা ও অপ্রপ্রচারের শিকার হয়েছেন। 

-

ইমাম আবু হানীফা যেমন ইমাম বোখারীর মত মহান মুহাদ্দিছের ভুল বুঝার শিকার হয়েছেন, তদ্রুপ সাইয়েদ মওদূদীও ইউসুফ বিন্নুরীর মত মহান মুহাদ্দিছের ভুল বুঝার শিকার হয়েছেন। যথেষ্ট ভাবে না জানার কারণে ইমাম আবু হানীফাকে যেমন তৎকালীন অধিকাংশ আলিম কাইয়াস (অনুমানবাদী, যুক্তিপন্থী, হাদীছবিরোধী) বলে দাবি করে নিজেদেরকে তাঁর চেয়ে উত্তম মনে করতো, অনুরুপ এই যুগের কিছু ভালো আলিমও যথেষ্ট না জানার কারণে সাইয়েদ মওদূদীকে কাইয়াস বলে দাবি করেছে। অন্যদিকে একই কারণে মুহাদ্দিছ সর্দার ইমাম বোখারী ও ওলী সম্রাট আবদুল কাদের জিলানীর মত মানুষ পর্যন্ত যেমন ইমাম আবু হানীফাকে মুরজিয়া তথা আহলে সুন্নাহ বহির্ভূত বলে দাবি করেছেন, তেমনি এই যুগের আল্লামা আহমদ শফীর মত কিছু বুজর্গও যথেষ্ট না জানার কারণে সাইয়েদ মওদূদীকে আহলে সুন্নাহ বহির্ভূত বলে দাবি করেছেন। সত্য হলো, আল্লামা আহমদ শফী তাঁর ছেলে আনাস মাদানীর স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কেও বিস্তারিত জানেন না। যেমন হযরত উছমান রা: স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা না থাকায় আবদুল্লাহ বিন সাদ বিন আবী সারহ ও আল-ওয়ালীদ বিন উকবাকে গভর্ণর বানিয়েছিলেন। অবশ্য ছহীহ বোখারী (১৪৯৪) ও ছহীহ মুসলিমের (১২২৩) তথ্য মতে মানুষের দাবি ও উপযুক্ত সাক্ষ্যে মদ্যপায়ী প্রমাণিত হওয়ায় তিনি আল-ওয়ালীদের উপর হদ (বেত্রাঘাত) কায়েম করেছিলেন এবং তাকে পদচ্যুত করেছিলেন। মহান ব্যক্তিদের মানুষ না চেনার এই দুর্বলতা স্বভাবজাত। এর কারণে তাদেরকে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে চাওয়া ছেলেমানুষি ও উগ্রতার আলামত। বড়দের মানুষ না চেনার ভুল নিয়ে আমি একটি লেখা রচনা করেছি। আজকালের মধ্যেই পাবেন ইনশা-আল্লাহ। আমার এই পাতার ফলোয়াররা আমার আইডিও ফলো করবেন। ওখানেও আমি অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা প্রকাশ করি। 

উল্লেখ্য, ইমাম আবু হানীফার ব্যাপারে বিভিন্ন বাজে কথা নকল করার কারণে খতীবে বাগদাদীকে তুলাধুনা করে تأنيب الخطيب على ما ساقه فى ترجمة أبى حنيفة من الأكاذيب শীর্ষক একটি বই লিখেছেন গত শতাব্দীর জবরদস্ত হানাফী আলেম আল্লামা জাহিদ আল-কাওসারী (অটোমান খেলাফতের সর্বশেষ শায়খুল ইসলাম মোস্তাফা সবরীর সেক্রেটারী তথা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব)। 

-

প্রসঙ্গত, বর্তমান সময়টা বিগত বিশ বছর আগের চেয়েও অনেক খারাপ। আমি ঈমান ও ইলম নিয়ে অহঙ্কার করি না। তবে সার্টিফিকেট পূজারী সালাফী/টিভি শায়খ, সুরবাদী বক্তা ও হাটহাজারী-পটিয়ার যেসব শিক্ষক নিজেদেরকে মহা ইসলামী পন্ডিত ভাবেন, তাদের ঈমানের দৌড় ও ইলমের মান বিষয়ে হক বলতে আমার কোনো ডর-ভয় নেই। মূলত এসব হওয়ার জন্য মজবুত ঈমান ও গভীর ইলম কোনোটার প্রয়োজন হয় না; লোভ-লালসা ও ধান্ধাবাজির একটি মন/প্রাণ থাকলে যাথেষ্ট। আর আমি হাটহাজারী-পটিয়াতে পড়লেও ওখানে চাকরি করি না। ওখানে চাকরি করলে নিশ্চয় অসৎ শিক্ষকেরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে অনেক আগেই আমার চাকরি খোয়াতো। কারণ, আমি জাহিদ/সূফীবাদী হলেও ছোটকাল থেকেই একজন মার্কামারা জিহাদী তাত্ত্বিক। অনেকে হয়তো জানেন না যে, হাটহাজারী মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও খলীফায়ে গঙ্গুহী হযরত জমিরুদ্দীন রহ. এর নাতি আল্লামা কারী ইলিয়াস সত্য কথা বলার কারণে ভালো-মন্দ অনেকের আস্থা হারিয়েছেন। নতুবা তিনি আজ হাটহাজারী মাদ্রাসার শায়খুল হাদীছ হিসেবে সারা উপমহাদেশে পরিচিতি পেতেন। বুদ্ধিমান মহলের সবাই জানে, চট্টগ্রামে উনার মত বংশীয় মেধাবী কোনো আলেম এখনো জন্মগ্রহণ করেনি (আমি আলেগাজী মুমিন পিতার সন্তান বা মেধাবী তালিবে ইলম হলেও খলীফায়ে গঙ্গুহী রহ. বা অন্যকোনো সুপরিচিত ব্যক্তির সন্তান/নাতি হওয়ার ভাগ্য আমার নেই)। মওদূদীবাদী ট্যাগ খাওয়া পটিয়া মাদ্রাসার সাবেক মুহাদ্দিছ এই আল্লামা কারী ইলিয়াসকে আল্লামা সুলতান যওক নদভী ছাড়া আর কেউ সম্মান করার সাহস দেখাতে পারেনি। এখন আমাকে কেউ আবার মওদূদীর অনুসারী ভাববেন না। আমি নিজেই একজন স্বতন্ত্র চিন্তাবিদ; কারো অনুসারী হওয়ার প্রয়োজন নেই আমার। কিন্তু ভীরুতা ও ইলমের খেয়ানত থেকে মুক্ত থাকতে চাই এবং মুসলমানকে মূল্যায়ন করতে চাই তার তাকওয়া বা দীনদারির আলোকে। অমুক-তমুক হুজুরের অন্ধ অনুসরণবশত কতিপয় বিরোধপূর্ণ টপিককে ইস্যু বানিয়ে কথায় কথায় মুসলমানকে গোমরাহ ও বাতিল ইত্যাদি বলার রোগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আমার কোনো ভয় বা হীনমন্যতা নেই। 

-

আমার মতে ‘খিলাফত ও রাজতন্ত্র’ বইটি সাইয়েদ মওদূদীর শ্রেষ্ঠতম রচনাবলীর একটি। এই বইতে তিনি প্রথমে খিলাফত বা ইসলামী শাসননীতি সম্পর্কে কোরআন, হাদীছ ও ছাহাবা কেরামের উক্তি তুলে ধরেছেন। এরপর তিনি খেলাফতে রাশেদার বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। অতঃপর খিলাফতে রাশেদার পতনের ইতিহাস ও পরিণতি নিয়ে কথা বলেছেন এবং এর শূণ্যতা পূরণে ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম আবু ইউসুফের মত মহান ইমামদ্বয়ের কর্মতৎপরতা উল্লেখ করেছেন। সবশেষে তিনি তার বিরুদ্ধে ছাহাবা সমালোচনা ও শিয়াদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। এতে ‘ওকালতির মৌলিক দুর্বলতা’ শিরোনামের একটি প্রবন্ধে (পৃষ্ঠা ৩১০) তিনি কাযী আবু বকর ইবনুল আরবীর আল-আওয়াসিম, আল্লামা ইবনে তাইমিয়ার মিনহাজুস সুন্নাহ ও শাহ আবদুল আযীযের তুহফায়ে ইসনা আশারিয়ার উপর পুরোপুরি নির্ভর না করার কারণ তুলে ধরে বলেছেন, “মূলত এরা তিনজনেই ইতিহাস হিসেবে ঘটনাবলির বর্ণনার জন্য তাঁদের গ্রন্থ রচনা করেননি, বরং তাঁরা লিখেছেন শিয়াদের কড়া অভিযোগ এবং তাদের বাড়াবাড়ির প্রতিবাদে। এ কারণে কার্যত তাঁদের স্থান হয়েছে প্রতিপক্ষের উকিলের অনুরুপ। আর ওকালতী -তা বাদী পক্ষের হোক বা বিবাদী পক্ষের- তার স্বভাব হচ্ছে এই যে, মানুষ সেসব তথ্যের দিকেই ফিরে যায়, যাতে তার মামলা যুৎসই হয়, আর সেসব তথ্য এড়িয়ে যায়, যাতে তার মামলা দুর্বল হয়। সাধারণত এটাই হচ্ছে মানুষের স্বভাব। বিশেষ করে এ ব্যাপারে কাযী আবু বকর তো সীমাতিক্রম করে গেছেন। ইতিহাস অধ্যয়ন করেছে এমন কোনো ব্যক্তি তো এ থেকে কোনো শুভ প্রতিক্রিয়া লাভ করবে না। এ কারণে আমি তাদেরকে বাদ দিয়ে মূল ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছি এবং সেসব ঘটনাবলি সন্নিবেশ করে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে নিজেই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি।”

-

যারা সাইয়েদ মওদূদীকে ইবনে তাইমিয়ার ভাবশিষ্য মনে করেন, তারা হয়তো জানেন না যে, সাইয়েদ মওদূদী একজন স্বতন্ত্র চিন্তাবিদ। আমার মতে তাকে কারো ভাবশিষ্য বলা মানে তাঁর চিন্তার স্বাতন্ত্র্য অস্বীকার করা।

-

মহান আল্লাহ আমাদেরকে সাহসী মুমিনদের অন্তর্ভূক্ত করুন।

-মুয়াবিয়া ও এজিদের সহীহ ফযীলত!

******

প্রশ্ন: শায়খ, এক লোক বোখারীর নীচের হাদীছ দেখিয়ে দাবি করেছেন যে, ইঙ্গিতে হলেও এখানে আমীরে মুয়াবিয়া ও এজিদের সহীহ ফযীলত আছে:

حَدَّثَنِيْ إِسْحَاقُ بْنُ يَزِيْدَ الدِّمَشْقِيُّ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَمْزَةَ قَالَ حَدَّثَنِيْ ثَوْرُ بْنُ يَزِيْدَ عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ أَنَّ عُمَيْرَ بْنَ الأَسْوَدِ الْعَنْسِيَّ حَدَّثَهُ أَنَّهُ أَتَى عُبَادَةَ بْنَ الصَّامِتِ وَهُوَ نَازِلٌ فِيْ سَاحَةِ حِمْصَ وَهُوَ فِيْ بِنَاءٍ لَهُ وَمَعَهُ أُمُّ حَرَامٍ قَالَ عُمَيْرٌ فَحَدَّثَتْنَا أُمُّ حَرَامٍ أَنَّهَا سَمِعَتْ النَّبِيَّ يَقُوْلُ أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِيْ يَغْزُوْنَ الْبَحْرَ قَدْ أَوْجَبُوْا قَالَتْ أُمُّ حَرَامٍ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَنَا فِيْهِمْ قَالَ أَنْتِ فِيْهِمْ ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِيْ يَغْزُوْنَ مَدِيْنَةَ قَيْصَرَ مَغْفُوْرٌ لَهُمْ فَقُلْتُ أَنَا فِيْهِمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ لَا

অর্থঃ উমাইর বিন আসওয়াদ আনসী (রাঃ) হতে বর্ণিত,

তিনি উবাদা বিন সামিত (রাঃ)-এর নিকট আসলেন। তখন উবাদা (রাঃ) হোমস উপকূলে তাঁর একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন এবং তার সঙ্গে ছিলেন উম্মে হারাম (তার স্ত্রী)। উমাইর (রহঃ) বলেন, উম্মে হারাম (রাঃ) আমাদের নিকট বর্ণনা করেন, তিনি আল্লাহ্‌র রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, "আমার উম্মতের মধ্যে প্রথম যে দলটি নৌ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তারা জান্নাতের অধিকারী হবে।" উম্মে হারাম (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রসূলল্লাহ! আমি কি তাদের মধ্যে হবো? তিনি বললেন, "হ্যা! তুমি তাদের মধ্যে হবে।" অতঃপর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "আমার উম্মতের প্রথম যে দলটি কায়সার-এর রাজধানী (কনস্টাটিউপল) আক্রমণ করবে, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে।" আমি বললাম, ‘ইয়া রসূলল্লাহ! আমি কি তাদের মধ্যে হবো?’ তিনি বললেন, ‘না।’ [ছহীহ বোখারী (২৯২৪)]।

----

উত্তর: সালাফের (পূর্বসূরি) কোনো মুহাদ্দিছ এই হাদীছকে মুয়াবিয়া ও এজিদের ফযীলতের হাদীছ বলে দাবি করেননি৷ এখন খলফের কেউ যদি এটাকে মুয়াবিয়ার ফযীলত দাবি করতে চায়, তাহলে বলবো:

১. হযরত উসমানের আমলে মুয়াবিয়া দামেস্কের গভর্ণর থাকাকালে নৌযুদ্ধ সঙ্ঘটিত হলেও তিনি সরাসরি ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন বলে প্রমাণ নেই৷ 

২. আচ্ছা ধরে নিলাম, উনি সরাসরি নৌযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তাহলে অন্য কিছু অকাট্য দলীলের কারণে তাকে মুস্তাছনা মিনহু (ফযীলত বহির্ভূত) বলতে হবে৷ আর ইস্তেছনা শরীয়ত সম্মত বিষয়৷ যেমন উহুদের যুদ্ধের একজন প্রশংসিত বীর শহীদ কুজমান বিন হারিছ قزمان بن الحارث নিয়তের ত্রুটির কারণে জাহান্নামী হওয়ার কথা এসেছে হাদীছে৷ 

৩. আচ্ছা ধরে নিলাম, কারো দৃষ্টিতে উনি মুস্তাছনা মিনহু না হয়ে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত, তাহলে তার এই মনগড়া ও আবেগী মতের সাথে অন্যদেরকেও একমত হতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতাতো আমাদের দীন ইসলামে নেই৷

সো, লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়া দীন৷ যার যার বুঝ তার তার৷ কেউ কারো মত অন্যদের উপর চাপিয়ে না দিই৷

-

দ্বিতীয়তঃ কেউ যদি বলে এজিদতো কনস্টাটিউপলে অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছে৷ তাহলে সে ক্ষমাপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে না কেন?

-

উত্তরে বলবোঃ উপর্যুক্ত হাদীছে ফযীলত এসেছে প্রথমে অভিযানকারীদের৷ এজিদের ব্যর্থ অভিযানের আগে আবদুর রহমান বিন খালিদের নেতৃত্বেও সেখানে অভিযাত্রী দল গিয়েছিল৷ সুনানে আবু দাউদে এসেছে:

عن أسلم أبِي عِمْرَانَ قَالَ: غَزَوْنَا مِنَ الْمَدِينَةِ نُرِيدُ الْقُسْطَنْطِينِيَّةَ، وَعَلَى الْجَمَاعَةِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ، وَالرُّومُ مُلْصِقُو ظُهُورِهِمْ بِحَائِطِ الْمَدِينَةِ، فَحَمَلَ رَجُلٌ عَلَى الْعَدُوِّ، فَقَالَ النَّاسُ: مَهْ مَهْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، يُلْقِي بِيَدَيْهِ إِلَى التَّهْلُكَةِ، فَقَالَ أَبُو أَيُّوبَ: " إِنَّمَا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ فِينَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ لَمَّا نَصَرَ اللَّهُ نَبِيَّهُ، وَأَظْهَرَ الْإِسْلَامَ قُلْنَا: هَلُمَّ نُقِيمُ فِي أَمْوَالِنَا وَنُصْلِحُهَا "، فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: (وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ) [البقرة: ١٩٥] فَالْإِلْقَاءُ بِالْأَيْدِي إِلَى التَّهْلُكَةِ أَنْ نُقِيمَ فِي أَمْوَالِنَا وَنُصْلِحَهَا وَنَدَعَ الْجِهَادَ ، قَالَ أَبُو عِمْرَانَ: فَلَمْ يَزَلْ أَبُو أَيُّوبَ يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَتَّى دُفِنَ بِالْقُسْطَنْطِينِيَّةِ. 

অর্থঃ আবূ ইমরান আসলাম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা মদীনা থেকে কনস্টান্টিনোপল অভিমুখে বের হলাম। আমাদের সেনাপতি ছিলেন আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ)। রোমের সৈন্যবাহিনী শহরের প্রাচীর-বেষ্টনীর বহির্ভাগ থেকে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিলো। জনৈক মুসলিম সৈনিক শত্রুবাহিনীর উপর হামলা করে বসলো। লোকেরা বললো, হায়, থামো! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। সে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তখন আবূ আইউব আল-আনসারী (রাঃ) বললেন, এ আয়াত আমাদের আনসার সম্প্রদায়ের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছিলো। আল্লাহ যখন তাঁর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাহায্য করলেন এবং দীন ইসলামকে বিজয়ী করলেন, তখন আমরা বললাম, এসো! এবার আমরা নিজেদের ধন-সম্পদ দেখাশুনা ও উন্নয়নে মনোযোগ দেই। মহান আল্লাহ তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ ‘‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না।’’ [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত ১৯৫] তো আমাদের নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করার অর্থ হচ্ছে, ধন-সম্পদ নিয়েই ব্যস্ত থাকা, এর পরিবৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করা এবং জিহাদ ছেড়ে দেয়া। আবূ ‘ইমরান (রাঃ) বলেন, এরপর থেকে আবূ আইউব আল-আনসারী (রাঃ) সর্বদা মহান আল্লাহর পথে জিহাদে শরীক ছিলেন৷ অবশেষে তিনি জিহাদ করতে করতে কনস্টান্টিনোপলের কাছে সমাহিত হন। [সুনানে আবু দাউদ (২৫১২)]।

-

প্রসঙ্গত, কনস্টান্টিনোপল অভিযান যদি এজিদের নেতৃত্বেই সর্বপ্রথম হতো, তাহলে অন্য কিছু অকাট্য দলীলের কারণে তাকে মুস্তাছনা মিনহু (ফযীলত বহির্ভূত) বলতে হবে৷

উল্লেখ্য, কনস্টান্টিনোপল বিজিত হয়েছে হিজরী নবম শতকে (১৪৫৩ খ্রীষ্টাব্দে) উসমানী সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের নেতৃত্বে৷

-

সত্য হলো, মুয়াবিয়া ও এজিদদের মত রাজা-বাদশাদের অভিযানগুলো যত না দীনের জন্য ছিল, তার চেয়ে বেশি দুনিয়ার (গনীমতের) জন্যই ছিল৷ গনীমত হারাম হলে তারা এমন অভিযান পরিচালনা করতো না বলেই আমার মনে হয়৷ কারণ, তাদের জীবন-যৌবন সবই দুনিয়ার ক্ষমতা ও ভোগ-দখলের জন্য নিবেদিত ছিল৷

-

এখন কেউ যদি বলেন, লিবিয়ার লেখক সাল্লাবী বলেছে, মুয়াবিয়াসহ বনু উমাইয়ার রাজা-বাদশাদের মাধ্যমে ইসলামী সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটেছে৷

উত্তরে বলবো: ছহীহ বোখারী (২৮৯৭) ও ছহীহ মুসলিমের (১১১) একটি হাদীছে আমাদের নবী সঃ একজন বীর যোদ্ধা ছাহাবীর আত্মহত্যা দেখে বলেছেন, "(প্রকৃত) মুসলিম আত্মা/ব্যক্তি ব্যতীত আর কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না৷ আর মহান আল্লাহ্‌ ফাজির (মুনাফিক/ফাসিক) লোক দ্বারা এ দীনকে শক্তিশালী করেন৷" দেখুন সেই হাদীছের ট্যাক্সট:

« إِنَّه لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلاّ نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ، وَإِنَّ اللهَ لَيُؤَيِّدُ هذا الدِّينَ بِالرَّجُلِ الْفاجِرِ » أخرجه البخارى (3/1114 ، رقم 2897) ، ومسلم (1/105 ، رقم 111) .

-

মহান রব আমাদের নবী, তাঁর পরিবার ও সত্যবাদী ছাহাবীসহ সকল মুমিনের উপর ছলাত (রহমত) বর্ষণ করুন এবং জাহিল ছাহাবা প্রেমিকদের হেদায়তের আলো দান করুন৷

-এজিদকে ক্ষমতায় বসাতে ইবনে উমরকে মুয়াবিয়ার হুমকি (ছহীহ বোখারী থেকে)

**********

ওয়াহাবী সালাফী, রেজভী ব্রেলভী ও কওমী দেওবন্দীদের মধ্যকার যেসব লোক মুয়াবিয়া-এজিদের পক্ষে সাফায় গায়, তারা আবদু্ল্লাহ বিন উমরের হাদীছ ও তাঁর অবস্থানের অপব্যাখ্যা করে তাদের কাপুরুষতায় ভরা সময়গুলো ক্ষয় করে৷

-

প্রিয় মুমিন পাঠক! নীচে আমি ছহীহ বোখারীর একটি বর্ণনা তুলে ধরছি, যেখানে বাদশা মুয়াবিয়া হযরত উমরের ছেলে আবদুল্লাহকে ফ্যাসিবাদী কায়দায় হুমকি দিয়ে এজিদের ক্ষমতায়নের পথ সহজ করতে চেয়েছেন: 

عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ خَالِدٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: "دَخَلْتُ عَلَى حَفْصَةَ وَنَسْوَاتُهَا تَنْطُفُ، قُلْتُ: قَدْ كَانَ مِنْ أَمْرِ النَّاسِ مَا تَرَيْنَ فَلَمْ يُجْعَلْ لِي مِنْ الْأَمْرِ شَيْءٌ". فَقَالَتْ: "الْحَقْ فَإِنَّهُمْ يَنْتَظِرُونَكَ وَأَخْشَى أَنْ يَكُونَ فِي احْتِبَاسِكَ عَنْهُمْ فُرْقَةٌ فَلَمْ تَدَعْهُ"، حَتَّى ذَهَبَ. فَلَمَّا تَفَرَّقَ النَّاسُ خَطَبَ مُعَاوِيَةُ، قَالَ: "مَنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَتَكَلَّمَ فِي هَذَا الْأَمْرِ فَلْيُطْلِعْ لَنَا قَرْنَهُ فَلَنَحْنُ أَحَقُّ بِهِ مِنْهُ وَمِنْ أَبِيهِ". قَالَ حَبِيبُ بْنُ مَسْلَمَةَ: فَهَلَّا أَجَبْتَهُ؟ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: "فَحَلَلْتُ حُبْوَتِي وَهَمَمْتُ أَنْ أَقُولَ: أَحَقُّ بِهَذَا الْأَمْرِ مِنْكَ مَنْ قَاتَلَكَ وَأَبَاكَ عَلَى الْإِسْلَامِ. فَخَشِيتُ أَنْ أَقُولَ كَلِمَةً تُفَرِّقُ بَيْنَ الْجَمْعِ وَتَسْفِكُ الدَّمَ وَيُحْمَلُ عَنِّي غَيْرُ ذَلِكَ، فَذَكَرْتُ مَا أَعَدَّ اللَّهُ فِي الْجِنَانِ". قَالَ حَبِيبٌ: حُفِظْتَ وَعُصِمْتَ. أخرجه البخاري (رقم 3882).

অর্থঃ ইকরমা বিন খালিদ হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি হাফসার (তাঁর বড় বোন ও নবীজি ছঃ এর স্ত্রী) ঘরে প্রবেশ করলাম। তখন তার চুলের বেণী থেকে পানি পড়ছিল (অর্থাৎ, তখন তিনি গোসলখানা থেকে বের হন)। আমি বললাম, তুমিতো দেখছো মুসলমানদের জন্য খলীফা নির্ধারণের কার্যক্রম চলছে (মুয়াবিয়া কর্তৃক ছেলে এজীদের অভিষেকের জন্য অগ্রিম সমর্থন আদায় চলছিল)। হাফসা বললো, তুমি যাও। কারণ, (আমি মনে করি) তারা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমার অনুপস্থিতি মুসলমানদের মাঝে আরো বেশী বিরোধ/ফাটল সৃষ্টি করবে। তার এমন কথায় তিনি গেলেন। অতঃপর সাধারণ লোকজন চলে গেলে মুয়াবিয়া (ইবনে উমরকে ইঙ্গিত করে) বক্তব্য দিয়ে বললেন, ‘এ বিষয়ে (মুসলমানদের নেতৃত্ব নিয়ে) কেউ কথা বলতে চাইলে সে যেন আমার সামনে নত হয়ে আসে। বস্তুত এ কাজে (মুসলমানদের নেতৃত্বের জন্য) আমরা (মুয়াবিয়া ও এজিদ) তার এবং তার পিতার (হযরত উমর) চেয়ে অধিক যোগ্য।’ ঘটনা শোনার পর হাবীব বিন মাসলামা বললেন, আপনি কি তার এমন কথার জবাবে কিছু বলেননি? ইবনে উমর বললেন, আমি তখন আমার আলখেল্লা জড়িয়ে নিলাম এবং বলতে চাইলাম, ‘এ কাজের জন্য অবশ্য তিনিই অধিক হকদার, যিনি তোমার ও তোমার পিতার বিরুদ্ধে ইসলামের পক্ষে (বদর, উহুদ ও খন্দকে) লড়াই করেছেন।’ তবে আমি মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি ও রক্তপাত এড়াতে এবং আমার বক্তব্য তাদের ভুল/অন্যায় ভাবে গ্রহণের আশঙ্কা থেকে কথাটা বলা থেকে বিরত থাকলাম। অতঃপর আমি জান্নাতে (মুমিনদের জন্য) আল্লাহ যা রেখেছেন, তার কথা স্মরণ করলাম। হাবীব বললেন, আপনি (বিপদ থেকে) রক্ষা পেলেন ও বেঁচে গেলেন। [ছহীহ বোখারী (৩৮৮২)]।

-

এখানে দেখা যাচ্ছে, ইবনে উমর রাজা মুয়াবিয়াকে ছাড় দিয়েছেন মুয়াবিয়ার ফযীলতের জন্য নয়; বরং রক্তপাত এড়ানোর নিয়ত থেকে৷ কারণ, মুয়াবিয়া ছিলেন ঠান্ডা মাথার ক্ষমতালোভী৷ ক্ষমতার জন্য তিনি যেখানে হযরত আলীর মত খলীফার সাথে যুদ্ধ করেছেন, সেখানে তিনি আবদুল্লাহ বিন উমরের মতামত নিয়ে শূরা ব্যবস্থায় ফিরে যেতেন, তা ছিল অবিশ্বাস্য৷

--

মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে ইতিহাস ও সময়ের ফ্যাসিবাদের আরাধনা থেকে মুক্ত রেখে তাঁরই উপর ভরসা রেখে জীবন সমাপ্ত করার তৌফীক দান করুন৷

-হামযা, আলী, ইসমাঈল, উসামা, মুয়াবিয়া ও মরওয়ান প্রভৃতি নামের অর্থ ও প্রসঙ্গ কথা

*****

এক ভাই ইনবক্সে বেশ কিছু আরবী নামের অর্থ জানতে চেয়েছেন৷ তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির অর্থ তুলে ধরছি:

-

হামযা: সিংহের নামবাচক বিশেষ্য৷

-

বকর: তরুণ উট৷ এটি হযরত আবদুল্লাহ ওরফে আবু বকর রাঃ এর প্রথম সন্তানের নাম ছিল৷

-

উমর: বয়সী (কম বয়সে মরে না এমন মানুষ)৷

-

আলী: সুউচ্চ৷

-

উছমান: ১. অজগরের আশ্রয়স্থল৷ ২. হুবারা পাখির নীড়৷

-

তলহা: ছায়াদার বৃক্ষ৷

-

যুবাইর: মোটা/বিশাল বস্তু৷

-

ইব্রাহীম: মহান পিতা, জনগণের পিতা৷

-

ইসমাঈল: আল্লাহ্‌র কথা শ্রবণ/মান্যকারী৷

-

মরিয়ম: প্রভুর সেবা/দাসত্বকারিনী৷

-

খদীজা: সময়ের আগে বাচ্চা প্রসবকারীনি৷

-

জয়নব: সুন্দর ও সুরভিযুক্ত এক ধরণের উদ্ভিদ৷

-

রুকাইয়া: কোমলমনা৷

-

ফাতেমা: শিশুকে দুগ্ধ দানকারিনী৷

-

আয়েশা: জবীন যাপনকারিনী৷

-

উসামা: সিংহের নামবাচক বিশেষ্য৷ হামযা শব্দের অর্থও একই৷

-

আনাস: ১.বহু মানুষের দল সমূহ৷ ২. মানব/মানুষ৷ ৩. হৃদ্যতাপূর্ণ৷ ৪. তরুণীর সুমিষ্ট আওয়াজ৷

-

জাবির: প্রভাব বা পরাক্রমশালী

-

মুয়াবিয়া: ১. কুকুর সন্ধানকারী কুত্তী৷ ২. কুত্তার বাচ্চা৷ ৩. শিয়ালের বাচ্চা৷ (লিঙ্ক নীচে) 

-https://www.almaany.com/ar/dict/ar-ar/%D9%85%D8%B9%D8%A7%D9%88%D9%8A%D8%A9/

২. মরওয়ান: শক্ত প্রস্তর খন্ড৷

-

সূত্র: বিভিন্ন আরবী অভিধান৷

-

প্রসঙ্গতঃ শেষের দুইজন (মুয়াবিয়া ও মরওয়ান) খিলাফতে রাশেদার পতন ঘটিয়ে ইসলামে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অভিযুক্ত৷ মাথা মোটা গতানুগতিক ফকীহ-মুহাদ্দিসগণের অধিকাংশই তাদরকে ভালো ছাহাবার অন্তর্ভুক্ত করলেও বিপ্লবী ফকীহ, মুহাদ্দিস ও আলিমগণের অনেকে তাদেরকে দুষ্টু ছাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন৷ অন্যদিকে রাজতন্ত্র সমর্থক লোকজন মুয়াবিয়ার পক্ষে বিভিন্ন জাল হাদীছ ও জাল উক্তি তৈরি-প্রচার করে যুগে যুগে উমাইয়া রাজতন্ত্রের পক্ষে সাফাই গেয়ে চলেছেন৷

পাকিস্তানের আলোচিত মুফতী তাকী উসমানী হলেন একজন ইরজা+রাজতন্ত্র বান্ধব আলিম৷ তিনি খুনী পক্ষের আইনজীবীর মত মুয়াবিয়া-এজিদের রাজতন্ত্রের পক্ষে ডিফেন্স করে বই লিখছেন৷ ইসলামী বিপ্লব ও জিহাদপ্রেমীদের জন্য তিনি কখনো অনুসরণযোগ্য হতে পারেন না


ছহীহ হাদীসের কাঠগড়ায়

হযরত আমীর মুয়াবিয়া

•••••

ইসলামে খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নুবুওয়াহর স্থলে রাজতন্ত্র Umayyad monarchy প্রতিষ্ঠাকারী হযরত আমীর মুয়াবিয়ার কুফর, নিফাক ও ফিসকের প্রমাণবাহী ছহীহ বোখারী ও ছহীহ মুসলিমের ১০ হাদীস নীচে তুলে ধরা হলো।

১. নবীজি (স:) কর্তৃক কাফির বলে সতর্কীকরণ:

আমাদের নবী صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ তার উম্মতের জন্য যে বিষয়গুলোর সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা করেছিলেন, তন্মধ্যে রাজনৈতিক খুন বা পলিটিক্যাল কিলিং ছিল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। বিদায় হজের সময় এ ব্যাপারে তাঁর প্রদত্ত বক্তব্যের এ গুরুত্বপূর্ণ অংশটি শুধুমাত্র ছহীহ বোখারী ও মুসলিমেই চারজন প্রসিদ্ধ ছাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। বক্তব্যটি হলোঃ 

«لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّاراً يضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ». أخرجه البخارى (1/56 ، رقم 121) ، (6/2518 ، رقم 6474) ، (2/619 ، رقم 1652) ، (6/2593 ، رقم 6667) ، ومسلم (1/81 ، رقم 65). 

অর্থঃ “তোমরা আমার ইন্তেকালের পরে একে অপরকে খুন করে কুফরিতে ফিরে যেও না।” [ছহীহ বোখারী (আরবী তথা মূল সংস্করণে হাদীছ নম্বর ১২১, ১৬৫২, ৬৪৭৪, ৬৬৬৭) ও ছহীহ মুসলিম (৬৫)] 

হাদীছটির বক্তব্য স্পষ্ট যে, দুনিয়ার লোভে কোনো মুসলমানের নিরপরাধ কোনো মুসলমানকে জুলুম ও খুন করা কুফরী গুনাহ। কোরআন শরীফে সূরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, مَنْ قَتَلَ نَفْساً بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعاً অর্থঃ “যে খুনের বদলা ব্যাতীত বা দুনিয়াতে ফাসাদ করতে (অনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থের লোভে) কোনো প্রাণ বধ করলো, সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকে খুন করলো।” তাওবা ছাড়া মরলে এ অপরাধের নিশ্চিত শাস্তি জাহান্নাম। তবে সত্য হলো, দুনিয়ার লোভে যারা নিরপরাধ মানুষের উপর জুলুম ও খুন-গুম করে, তারা হারামখোর হওয়ায় সাধারণত প্রকৃত তাওবার সুযোগ হয় না। প্রকৃত তাওবার সুযোগ আসে খারাপ পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে জেনা ও মদ সেবনকারী এবং রাগবশত কাউকে মাইর বা খুনকারীদের ভাগ্যে। ছাহাবা কেরামের মাঝে স্থান করে নেওয়া আমীর মুয়াবিয়ার মত যেসব লোক ঠান্ডা মাথায় জুলুম ও খুনের মত কাজে লিপ্ত হয়েছে, তাদের ব্যাপারেও নবীজি (স:) এর ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। ছহীহ বোখারীতে উল্লেখ আছেঃ 

عَنْ سَعِيد الْمُسَيَّبِ عَن أَبِي هُرَيْرَةَ رضِى الله عنه ، أَنَّهُ كَانَ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَرِدُ عَلَيَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَهْطٌ مِنْ أَصْحَابِي فَيُحَلَّئُونَ عَن الْحَوْضِ فَأَقُولُ يَا رَبِّ أَصْحَابِي فَيَقُولُ إِنَّكَ لَا عِلْمَ لَكَ بِمَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ ، إِنَّهُمْ ارْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِهِمْ الْقَهْقَرَى». أخرجه البخارى (5/2407 ، رقم 6213).

অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা -رضِى الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলেছেন, “কেয়ামতের দিন আমার ছাহাবীদের একটি দল আমার কাছে আসবে। তখন তাদেরকে হাউজ (হাউজে কাউছার) থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে। তখন আমি বলবো, ইয়া রব, এরাতো আমার ছাহাবা। তিনি বলবেন, আপনার পরে এরা কি অপরাধ করেছে, তাতো আপনি জানেন না। এরা আপনার পরে সামনে না এসে পিছনে (রক্তপাতে) চলে গিয়েছিল।” [ছহীহ বোখারী (আরবী তথা মূল সংস্করণে হাদীছ নম্বর ৬২১৩)]

-

প্রসঙ্গত, আরবীতে দুর্ঘটনাকে হাদাছ বলা হলেও এখানে উদ্দেশ্য রক্তপাতের অপরাধ। হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত একটি হাদীছে আছেঃ 

«المدينة حَرَم ما بين عير إلى ثور فمن أحدث فيها حدثًا أو آوى محدثًا فعليه لعنة الله والملائكة والناس أجمعين». أخرجه البخارى (2/661 ، رقم 1771) ، ومسلم (2/1147 ، رقم 1370).

অর্থঃ “ঈর থেকে ছওর পর্বত পর্যন্ত মদীনা হারাম। যে এতে حدث হাদাছ (রক্তপাত) করবে অথবা কোনো হাদাছকারীকে (খুনীকে) আশ্রয় দিবে, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সকল মানুষের লানত।” [ছহীহ বোখারী (আরবী তথা মূল সংস্করণে হাদীছ নম্বর ১৭৭১) ও ছহীহ মুসলিম (১৩৭০)]।

তাছাড়া হযরত আমীর মুয়াবিয়া নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি নেতৃত্ব লাভের জন্য লড়াই করেছেন। দেখুন প্রমাণ:

عن سعيد بن سويد ، قال: صَلَّى بِنَا مُعَاوِيَةُ الْجُمُعَةَ بِالنَّخِيلَةِ فِي الضُّحَى ، ثُمَّ خَطَبْنَا فَقَالَ : " مَا قَاتَلْتُكُمْ لِتُصَلُّوا ، وَلَا لِتَصُومُوا ، وَلَا لِتَحُجُّوا ، وَلَا لِتُزَكُّوا ، وَقَدْ أَعْرِفُ أَنَّكُمْ تَفْعَلُونَ ذَلِكَ ، وَلَكِنْ إِنَّمَا قَاتَلْتُكُمْ لِأَتَأَمَّرَ عَلَيْكُمْ ، وَقَدْ أَعْطَانِي اللَّهُ ذَلِكَ وَأَنْتُمْ لَهُ كَارِهُونَ ". أخرجه ابن أبى شيبة (6/187 ، رقم 30556) ، وابن عساكر (52/380 ، 59/150).

অর্থঃ হযরত সাঈদ বিন সুওয়াইদ বলেন, নাখীলা নামক স্থানে মুয়াবিয়া আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর খুতবা দিলেন। তাতে তিনি বললেন, ‘আমি এ জন্য আপনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিনি যে, আপনারা নামাজ পড়বেন, রোজা রাখবেন, হজ করবেন এবং যাকাত দিবেন। আমি জানি এসব আপনারা পালন করেন। কিন্তু আমি আপনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি আপনাদের আমীর (নেতা) হওয়ার জন্য। আর আল্লাহ আমাকে তা দান করেছেন। অথচ আপনারা তা (আমার নেতৃত্ব) অপছন্দ করছেন।’ [সূত্রঃ মুছন্নফে ইবনে আবু শায়বা, খন্ড- ৬, পৃষ্টা- ১৮৬, মাকতাবুতর রুশদ, রিয়াদ, প্রিন্ট সাল ১৪০৯ হিজরী। তারীখে ইবনে আসাকির, খন্ড- ৫২, পৃষ্টা- ৩৮০]। 

-

আর রসূলুল্লাহ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলেছেন:

عن أبى ذر رضي الله عنه ، قال: قال النبي صلى عليه وسلم: «أولُ مَنْ يُبدِّلُ سُنَّتىْ رجُلٌ مِنْ بَنِىْ أُمَيَّة». أخرجه ابن أبى شيبة (7/260 ، رقم 35877) بسند صحيح ، وعزاه الذهبى فى السير (1/330) للرويانى. وأخرجه ابن عساكر (65/250) ، وإسناده صحيح. وصححه الألباني فيما سماه "السلسلة الصحيحة" (4/329 ، رقم 1749). 

অর্থঃ হযরত আবু যর -رضِى الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স:) বলেছেন, “আমার সুন্নত (ধর্ম ও শাসন ব্যবস্থার নিয়ম-নীতি) সর্বপ্রথম পরিবর্তন করবে বনু উমাইয়ার একজন পুরুষ (মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান)।” [ছহীহ সনদে মুছন্নফে ইবনে আবী শায়বা (৩৫৮৭৭) এবং আলবানী কর্তৃক তাঁর সিলসিলা ছহীহাতে (১৭৪৯) বিশুদ্ধ বলে উল্লেখিত]।

-

২. নবীজি (স:) কর্তৃক জাহান্নামী ঘোষণা:

عَنْ عِكْرِمَةَ ، قَالَ لِي ابْنُ عَبَّاسٍ وَلِابْنِهِ عَلِيٍّ: انْطَلِقَا إِلَى أَبِي سَعِيدٍ فَاسْمَعَا مِنْ حَدِيثِهِ. فَانْطَلَقْنَا فَإِذَا هُوَ فِي حَائِطٍ يُصْلِحُهُ ، فَأَخَذَ رِدَاءَهُ فَاحْتَبَى ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا حَتَّى أَتَى ذِكْرُ بِنَاءِ الْمَسْجِدِ ، فَقَالَ: كُنَّا نَحْمِلُ لَبِنَةً لَبِنَةً وَعَمَّارٌ لَبِنَتَيْنِ لَبِنَتَيْنِ ، فَرَآهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَنْفُضُ التُّرَابَ عَنْهُ وَيَقُولُ: «وَيْحَ عَمَّارٍ تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ يَدْعُوهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ». قَالَ: يَقُولُ عَمَّارٌ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ الْفِتَنِ. أخرجه البخارى (3/1035 ، رقم 2657).

অর্থঃ তাবেয়ী ইকরমা বলেন, ইবনে আব্বাস আমাকে ও তাঁর ছেলে আলীকে বললেন, তোমরা আবু সাঈদের কাছে গিয়ে তার কাছ থেকে হাদীছ শুনো। আমরা গেলাম। দেখলাম, তিনি একটি বাগান ঠিক করছেন। আমাদেরকে দেখে তিনি চাদর গায়ে মুড়িয়ে বসলেন। অতঃপর কথা শুরু করলেন। এক পর্যায়ে তিনি মসজিদের (মসজিদে নববী) আলোচনায় এলেন এবং বললেন, আমরা সবাই একটি একটি করে ইট বহন করছিলাম। আর আম্মার বহন করছিলেন দুইটি করে। নবীজি ছঃ তাঁকে দেখে তার গায়ের উপর থেকে ধুলোবালি মুছে দিলেন এবং বললেন, “আম্মারের জন্য আফসোস! তাকে বিদ্রোহী বাহিনী হত্যা করবে। সে তাদেরকে জান্নাতের দিকে ডাকবে আর তারা তাকে জাহান্নামের দিকে ডাকবে।” আবু সাঈদ বললেন, আম্মার তখন বললেন, ‘আল্লাহর কাছে ফিতনাসমূহ থেকে আশ্রয়া গ্রহণ করছি।’ [ছহীহ বোখারী (২৬৫৭)]।

-

প্রসঙ্গত, আম্মার বিন ইয়াসির ৩৭ হিজরীতে ছিফফীনের নাছেবী বিরোধী যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। 

عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ ، قَالَ: لَمَّا قُتِلَ عَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ ، دَخَلَ عَمْرُو بْنُ حَزْمٍ عَلَى عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ ، فَقَالَ: قُتِلَ عَمَّارٌ ، وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ». فَقَامَ عَمْرُو بْنُ الْعَاصِ فَزِعًا يُرَجِّعُ ، حَتَّى دَخَلَ عَلَى مُعَاوِيَةَ ، فَقَالَ لَهُ مُعَاوِيةُ: مَا شَأْنُكَ؟ قَالَ: قُتِلَ عَمَّارٌ! فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: قَدْ قُتِلَ عَمَّارٌ ، فَمَاذَا؟ قَالَ عَمْرٌو: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ». فَقَالَ لَهُ مُعَاوِيَةُ: دُحِضْتَ فِي بَوْلِكَ ، أَوَ نَحْنُ قَتَلْنَاهُ؟! إِنَّمَا قَتَلَهُ عَلِيٌّ وَأَصْحَابُهُ ، جَاؤُوا بِهِ حَتَّى أَلْقَوْهُ بَيْنَ رِمَاحِنَا ، أَوْ قَالَ: بَيْنَ سُيُوفِنَا. أخرجه أحمد (رقم 17813). قال الهيثمي فى المجمع: رواه أحمد وأبو يعلى والطبراني ورجال أحمد رجال الصحيح غير محمد بن عمرو وهو ثقة‏.‏ 

অর্থঃ মহাম্মদ বিন আমর বিন হাযম বলেন, আম্মার বিন ইয়াসির নিহত হলে আমর বিন হাযম আমর ইবনুল আছের কাছে গেলেন এবং বললেন, আম্মারতো নিহত হয়েছেন। অথচ রসূলুল্লাহ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলেছেন, “আম্মারকে বাগী/বিদ্রোহী দল হত্যা করবে।” তখন আমর ইবনুল আছ সন্ত্রস্ত হয়ে ইন্না লিল্লাহ পড়তে পড়তে মুয়াবিয়ার কাছে গেলেন। মুয়াবিয়া বললেন, কি হয়েছে তোমার? বললেন, আম্মার নিহত হয়েছে। মুয়াবিয়া বললেন, তো কি হয়েছে? আমর বললেন, আমি রসূলুল্লাহকে صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলতে শুনেছি, “আম্মারকে বাগী/বিদ্রোহী দল হত্যা করবে।” মুয়াবিয়া বললেন, “তুমি তোমার পেশাব/মূত্রে আছড়িয়ে পড়ো। তাকে আমরা মেরেছি নাকি? তাকেতো আলী ও তার সঙ্গীরা মেরে আমাদের বর্শা/তরাবারীর মাঝে এনে ফেলে দিয়ে গেছে।” [মুসনদে আহমদ (১৭৮১৩)। মানঃ ছহীহ]।

-

মন্তব্য : এই হলো উম্মতে মুহাম্মদীর বিশিষ্ট কপট ব্যক্তি বাদশা হযরত মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান মক্কী, কোরেশী ও উমাভীর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা! এই বকধার্মিক বাদশা কতবড় দাম্ভিক স্বৈরচার ছিলেন, তা হযরত উমরের চেয়ে নিজেকে খেলাফতের অধিক হকদার দাবি করা থেকেই শুধু নয়; তার ডানহাত আমর ইবনুল আছের প্রতি কৃত তার এ মন্তব্য থেকেও বুঝা যায়।

-

অন্যদিকে হযরত আম্মার বিন ইয়াসিরের ফজীলত দেখুন:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بن الْحَارِثِ ، عَنْ عُثْمَانَ بن عَفَّانَ ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لأَبِي عَمَّارٍ ، وَأُمِّ عَمَّارٍ: «اصْبِرُوا آلَ يَاسِرٍ مَوْعِدُكُمُ الْجَنَّةُ». أخرجه الطبرانى فى الكبير (24/303 ، رقم 769). قال الهيثمى (9/293): رجاله ثقات. 

অর্থঃ হযরত উছমান বলেন, আমি আম্মারের পিতা-মাতাকে লক্ষ্য করে আল্লাহর রসূলকে صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলতে শুনেছি, “হে ইয়াসিরের পরিবার! ধৈর্য্যধারণ করো। তোমাদের সাথে দেখা হবে জান্নাতে।’ [ছহীহ সনদে মুজমে তবরানী কবীর (২৪/৩০৩)]।

-

৩. হযরত উমরের চেয়ে নিজেকে খেলাফতের অধিক হকদার দাবি করা ও তাঁর ছেলে বিশিষ্ট ছাহাবী আবদুল্লাহকে হুমকি প্রদান:

عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ خَالِدٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى حَفْصَةَ وَنَسْوَاتُهَا تَنْطُفُ قُلْتُ قَدْ كَانَ مِنْ أَمْرِ النَّاسِ مَا تَرَيْنَ فَلَمْ يُجْعَلْ لِي مِنْ الْأَمْرِ شَيْءٌ. فَقَالَتْ: الْحَقْ فَإِنَّهُمْ يَنْتَظِرُونَكَ وَأَخْشَى أَنْ يَكُونَ فِي احْتِبَاسِكَ عَنْهُمْ فُرْقَةٌ فَلَمْ تَدَعْهُ حَتَّى ذَهَبَ ، فَلَمَّا تَفَرَّقَ النَّاسُ خَطَبَ مُعَاوِيَةُ قَالَ: مَنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَتَكَلَّمَ فِي هَذَا الْأَمْرِ فَلْيُطْلِعْ لَنَا قَرْنَهُ فَلَنَحْنُ أَحَقُّ بِهِ مِنْهُ وَمِنْ أَبِيهِ. قَالَ حَبِيبُ بْنُ مَسْلَمَةَ: فَهَلَّا أَجَبْتَهُ؟ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: فَحَلَلْتُ حُبْوَتِي وَهَمَمْتُ أَنْ أَقُولَ: أَحَقُّ بِهَذَا الْأَمْرِ مِنْكَ مَنْ قَاتَلَكَ وَأَبَاكَ عَلَى الْإِسْلَامِ. فَخَشِيتُ أَنْ أَقُولَ كَلِمَةً تُفَرِّقُ بَيْنَ الْجَمْعِ وَتَسْفِكُ الدَّمَ وَيُحْمَلُ عَنِّي غَيْرُ ذَلِكَ فَذَكَرْتُ مَا أَعَدَّ اللَّهُ فِي الْجِنَانِ قَالَ حَبِيبٌ حُفِظْتَ وَعُصِمْتَ. أخرجه البخاري (رقم 3882).

অর্থঃ ইকরমা বিন খালিদ হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি হাফসার (তাঁর বড় বোন ও নবীজি ছঃ এর স্ত্রী) ঘরে প্রবেশ করলাম। তখন তার চুলের বেণী থেকে পানি পড়ছিল (অর্থাৎ, তখন তিনি গোসলখানা থেকে বের হন)। আমি বললাম, তুমিতো দেখছো মুসলমানদের জন্য খলীফা নির্ধারণের কার্যক্রম চলছে (মুয়াবিয়া কর্তৃক ইমাম হাসানের সাথে সন্ধি অথবা ছেলে এজীদের জন্য অগ্রিম সমর্থন আদায় চলছিল)। হাফসা বললো, তুমি যাও। কারণ, (আমি মনে করি) তারা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমার অনুপস্থিতি মুসলমানদের মাঝে আরো বেশী বিরোধ/ফাটল সৃষ্টি করবে। তার এমন কথায় তিনি গেলেন। অতঃপর সাধারণ লোকজন চলে গেলে মুয়াবিয়া (ইবনে উমরকে ইঙ্গিত করে) বক্তব্য দিয়ে বললেন, ‘এ বিষয়ে (মুসলমানদের নেতৃত্ব নিয়ে) কেউ কথা বলতে চাইলে সে যেন আমার সামনে আসে। বস্তুত এ কাজে (মুসলমানদের নেতৃত্বের জন্য) আমরা তার এবং তার পিতার (হযরত উমর) চেয়ে অধিক যোগ্য।’ ঘটনা শোনার পর হাবীব বিন মাসলামা বললেন, আপনি কি তার এমন কথার জবাবে কিছু বলেননি? ইবনে উমর বললেন, আমি তখন আমার আলখেল্লা জড়িয়ে নিলাম এবং বলতে চাইলাম, ‘এ কাজের জন্য অবশ্য তিনিই অধিক হকদার, যিনি তোমার ও তোমার পিতার বিরুদ্ধে ইসলামের পক্ষে (বদর, উহুদ ও খন্দকে) লড়াই করেছেন।’ তবে আমি মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি ও রক্তপাত এড়াতে এবং আমার বক্তব্য তাদের অন্যায় ভাবে গ্রহণের আশঙ্কা থেকে কথাটা বলা থেকে বিরত থাকলাম। অতঃপর আমি জান্নাতে (মুমিনদের জন্য) আল্লাহ যা রেখেছেন, তার কথা স্মরণ করলাম। হাবীব বললেন, আপনি (বড় ধরণের বিপদ থেকে) বেঁচে গেলেন। [ছহীহ বোখারী (৩৮৮২)]।

-

৪. তাকে হযরত উমরের অগ্রিম কাফির ফতোয়া :

عَنْ مَعْدَانَ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، خَطَبَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَذَكَرَ نَبِيَّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَذَكَرَ أَبَا بَكْرٍ قَالَ إِنِّي رَأَيْتُ كَأَنَّ دِيكًا نَقَرَنِي ثَلاَثَ نَقَرَاتٍ وَإِنِّي لاَ أُرَاهُ إِلاَّ حُضُورَ أَجَلِي وَإِنَّ أَقْوَامًا يَأْمُرُونَنِي أَنْ أَسْتَخْلِفَ وَإِنَّ اللَّهَ لَمْ يَكُنْ لِيُضَيِّعَ دِينَهُ وَلاَ خِلاَفَتَهُ وَلاَ الَّذِي بَعَثَ بِهِ نَبِيَّهُ صلى الله عليه وسلم فَإِنْ عَجِلَ بِي أَمْرٌ فَالْخِلاَفَةُ شُورَى بَيْنَ هَؤُلاَءِ السِّتَّةِ الَّذِينَ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ عَنْهُمْ رَاضٍ وَإِنِّي قَدْ عَلِمْتُ أَنَّ أَقْوَامًا يَطْعَنُونَ فِي هَذَا الأَمْرِ أَنَا ضَرَبْتُهُمْ بِيَدِي هَذِهِ عَلَى الإِسْلاَمِ فَإِنْ فَعَلُوا ذَلِكَ فَأُولَئِكَ أَعْدَاءُ اللَّهِ الْكَفَرَةُ الضُّلاَّلُ. اخرجه مسلم (رقم 567).

অর্থঃ মা’দান ইবনু আবূ তালহা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর (রা.) একদিন জুম’আর খুতবা দিলেন। এতে তিনি আল্লাহর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রা.) এর আলোচনা করে বললেন, "আমি স্বপ্নে দেখলাম, একটি মোরগ এসে আমাকে তিনটি ঠোকর মারল। আমার মতে এর তা’বীর হচ্ছে, আমার মৃত্যু অতি নিকটবর্তী। লোকেরা আমাকে বলেছে আমার একজন স্থলবর্তী নিযুক্ত করতে। নিশ্চয় আল্লাহ তার দ্বীন ও খিলাফাতকে নষ্ট করবেন না। আর তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তাও নষ্ট করবেন না। যদি শীঘ্রই আমার মৃত্যু এসে পড়ে, তবে খিলাফত ঐ ছয় ব্যাক্তির পরামর্শের উপর রইল, যাদের প্রতি রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন। আমি জানি, কতিপয় লোক, যাদেরকে আমি নিজ হাতে শাস্তি দিয়েছি, এ ব্যাপারে তারা ইসলামের প্রতি দোষারোপ করবে। তারা যদি তা করে, তবে তারা আল্লাহর দুশমন ও পথভ্রষ্ট কাফির।" [ছহীহ মুসলিম (৫৬৭)]।

প্রসঙ্গত, খলীফা উমর (রা.) ওই কথাগুলো বলেছিলেন আবু লুলু নামের জনৈক ছাহাবীর একটি দুষ্ট গোলাম কর্তৃক গুপ্তহামলার শিকার হয়ে শাহাদত বরণের পূর্বে। তাছাড়া খলীফা উমর (রা.) হযরত মুয়াবিয়ার মত তুলাকাদের (ফতেহ মক্কার দিন সাধারণ ক্ষমা পেয়ে ইসলাম গ্রহণকারী লোকজনকে) খিলাফতের হকদার মনে করতেন না। তিনি বলেছেনঃ

"إن هذا الأمر لا يصلح للطلقاء ولا لأبناء الطلقاء". [كنز العمال للهندي: ج5، ص735، الطبقات الكبرى: ج3، ص248، أسد الغابة: ج4، ص387].

অর্থঃ “এ বিষয়টা (খেলাফত) তুলাকা ও তাদের ছেলেদের জন্য উপযুক্ত নয়।” [কানজুল উম্মাল (৫/৭৩৫), তবকাতে ইবনে সাদ (৩/২৪৮) ও উসদুল গাবাহ (৪/৩৮৭)]। 

-

৫. হযরত আম্মার কর্তৃক তাকে মুনাফিক মনে করা:

عَنْ قَيْسٍ قَالَ: قُلْتُ لِعَمَّارٍ أَرَأَيْتُمْ صَنِيعَكُمْ هَذَا الَّذِي صَنَعْتُمْ فِي أَمْرِ عَلِيٍّ أَرَأْيًا رَأَيْتُمُوهُ أَوْ شَيْئًا عَهِدَهُ إِلَيْكُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ: مَا عَهِدَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا لَمْ يَعْهَدْهُ إِلَى النَّاسِ كَافَّةً ، وَلَكِنْ حُذَيْفَةُ أَخْبَرَنِي عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «فِي أَصْحَابِي اثْنَا عَشَرَ مُنَافِقًا لَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ ، ثَمَانِيَةٌ مِنْهُمْ تَكْفِيكَهُمُ الدُّبَيْلَةُ». وَأَرْبَعَةٌ لَمْ أَحْفَظْ مَا قَالَ شُعْبَةُ فِيهِمْ. أخرجه مسلم (4/2143 ، رقم 2779) ، وأحمد (رقم 18905). 

ولفظ أحمد: «فِي أُمَّتِي اثْنَا عَشَرَ مُنَافِقًا ، لاَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ ، وَلاَ يَجِدُونَ رِيحَهَا ، حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ ، ثَمَانِيَةٌ مِنْهُمْ تَكْفِيكَهُمُ الدُّبَيْلَةُ ، سِرَاجٌ مِنَ النَّارِ يَظْهَرُ فِي أَكْتَافِهِمْ ، حَتَّى يَنْجُمَ مِنْ صُدُورِهِمْ». تعليق شعيب الأرنؤوط: إسناده صحيح على شرط مسلم.

অর্থঃ তাবেয়ী কয়েস বিন উবাদা বলেন, আমি হযরত আম্মারকে বললাম, আপনারা হযরত আলীর পক্ষ নিয়ে যে কাজ (যুদ্ধ) করছেন, তা কি আপনাদের নিজস্ব চিন্তা থেকে করছেন নাকি তা রসূলুল্লাহ ছঃ এর পথনির্দেশকৃত কোনো বিষয়? তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ বাদ দিয়ে রসূলুল্লাহ ছঃ আমাদেরকে বিশেষ কোনো পথনির্দেশ দেননি। তবে আমাকে হুযাইফা (নিফাক বিশেষজ্ঞ বিখ্যাত ছাহাবী) জানিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ ছঃ বলেছেন, “আমার উম্মতে ১২জন মুনাফিক আছে। সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ না করা পর্যন্ত (অর্থাৎ, কস্মিণকালেও) তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তাদের আটজন মরবে দুবাইলায় (বুক ও গর্দান দুর্বলকারী এক ধরণের ফোঁড়া) আক্রান্ত হয়ে।” নীচের একজন বর্ণনাকারী বলেন, ‘বাকী চারজনের ব্যাপারে শু‘বা কি বলেছেন, তা আমার স্মরণ নেই।’ [ছহীহ মুসলিম (২৭৭৯) ও মুসনদে আহমদ (১৮৯০৫)]

-

দেখুন ইমাম বাইহকীর দলায়েলনু নুবুওয়াহতে হাদীসটির ভয়াবহ শানে উরূদ:

أخبرنا أبو الحسن علي بن أحمد بن عبدان أخبرنا أحمد بن عبيد الصفار حدثنا أبو عمرو الحراني حدثنا أبو الأصبع عبد العزيز بن يحيى الحراني حدثنا محمد بن سلمة عن محمد بن إسحاق عن الأعمش عن عمرو بن مرة عن أبي البختري عن حذيفة بن اليمان قال: كنت آخذ بخطام ناقة رسول الله صلى الله عليه وسلم أقود به وعمار يسوقه أو أنا أسوقه وعمار يقوده حتى إذا كنا بالعقبة فإذا أنا باثني عشر راكباً قد اعترضوه فيها. قال: فأنبهت رسول الله صلى الله عليه وسلم بهم فصرخ بهم ، فولوا مدبرين. فقال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم: «هل عرفتم القوم؟». قلنا: لا يا رسول الله كانوا متلثمين ولكنا قد عرفنا الركاب. قال: «هؤلاء المنافقون إلى يوم القيامة ، وهل تدرون ما أرادوا؟». قلنا: لا. قال: «أرادوا أن يزحموا رسول الله في العقبة فيلقوه منها». قلنا: يا رسول الله أو لا تبعث إلى عشائرهم حتى يبعث إليك كل قوم برأس صاحبهم؟ قال: «لا ، أكره أن تحدث العرب بينها أن محمداً قاتل بقوم حتى إذا أظهره الله بهم أقبل عليهم يقتلهم». ثم قال: «اللهم ارمهم بالدبيلة». قلنا يا رسول الله وما الدبيلة؟ قال: «شهاب من نار يقع على نياط قلب أحدهم فيهلك». أخرجه البيقهي فى دلائل النبوة (5/261).

অর্থঃ হযরত হুযাইফা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (তাবুক থেকে ফেরার পথে) আমি নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র উটনীর লাগাম ধরে নিয়ে যাচ্ছিলাম এবং আম্মার পিছন থেকে হাঁকিয়ে নিচ্ছিলেন। অথবা আম্মার লাগাম ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং আমি পিছন থেকে হাঁকিয়ে নিচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে আমরা যখন আকাবায় (গিরিপথে) পৌঁছুলাম, তখন দেখলাম, ১২ জন লোক তাঁকে (নবীজিকে) ঘিরে চললো। তখন আমি নবীজিকে সতর্ক করলাম। তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে আওয়াজ দিলেন। এতে তারা পিছনে চলে গেল। পরে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের (উভয়কে) বললেন, “তোমরা কি ওদেরকে চিনতে পেরেছো?” আমরা বললাম, না ইয়া রসূলল্লাহ! তারাতো মুখোশ পরিহিত ছিল। তবে আমরা বাহনগুলোকে চিনেছি। বললেন, “এরা কেয়ামত পযর্ন্তের জন্য মুনাফিক। তো ওরা কি চেয়েছে, তা কি জেনেছো?” আমরা বললাম, না। বললেন, “আকাবায় তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে ভিড় সৃষ্টি করে তাতে আল্লাহর রসূলের ক্ষতি করতে চেয়েছিল।” আমরা বললাম, আপনি কি তাদের গোত্রের কাছে এ মর্মে নির্দেশ পাঠাতে পারেন না যে, প্রত্যেক গোত্র তাদের এসব দুরাত্মাদের মাথা নিয়ে হাজির হবে? তিনি বললেন, “না। আমি এটা অপছন্দ করি যে, আরবরা পরস্পরে এ কথা বলাবলি করবে, মুহাম্মদ একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন, অতঃপর আল্লাহ যখন তাঁকে তাদের উপর বিজয় দান করলেন, তখন তিনি তাদেরকে হত্যা করতে শুরু করলেন।” অতঃপর তিনি বললেন, “ইয়া আল্লাহ, ওদেরকে দুবাইলা দ্বারা মারো।” আমরা বললাম, ইয়া রসূলল্লাহ! দুবাইলা কি? বললেন, “হৃদপিন্ড থেকে বের হওয়া একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ (ভয়াবহ ফোঁড়া), যাতে তারা মারা যাবে।” [বাইহাকীর দালায়েলুন নুবুওয়াহ্ (৫/২৬১)।

-

এই ঘটনাটি ছহীহ মুসলিমে এসেছে অন্য শব্দেঃ

عن أبى الطفيل قال: كان بين رجل من أهل العقبة وبين حذيفة بعض ما يكون بين الناس. فقال: أنشدك بالله! كم كان أصحاب العقبة؟ قال فقال له القوم: أخبره إذ سألك. قال: كنا نخبر أنهم أربعة عشر. فإن كنت منهم فقد كان القوم خمسة عشر. وأشهد بالله أن اثني عشر منهم حرب لله ولرسوله في الحياة الدنيا ويوم يقوم الأشهاد. وعذر ثلاثة. قالوا: ما سمعنا منادي رسول الله صلى الله عليه وسلم ولا علمنا بما أراد القوم. وقد كان في حرة فمشى فقال "إن الماء قليل. فلا يسبقني إليه أحد" فوجد قوما قد سبقوه. فلعنهم يومئذ. أخرجه مسلم (4/2143 ، رقم 2779).

-

এইসব হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়, জঙ্গে সিফফীনে মুয়াবিয়া বাহিনীর হাতে নিহত হযরত আম্মার বিন ইয়াসির رضي الله عنه হযরত মুয়াবিয়ার নিফাকের বিষয়টা হযরত হুযাইফা رضي الله عنه এর কাছ থেকে জেনেই বৃদ্ধ বয়সেও হযরত আলী (রা.) এর পক্ষে হযরত মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন৷ 

অতএব, যে লোক রসূলুল্লাহ (স.) এর ক্ষতি করতে চাইতো, তাকে বিশিষ্ট ছাহাবী না বলে বিশিষ্ট মুনাফিক ছাহাবী বলাই সকল নবীপ্রেমিকদের কর্তব্য।

-

অন্যদিকে মুজমে তবরানী কবীরে (১৯/৩৫৯) হযরত মুয়াবিয়ার অনুসারী আবু বুরদা থেকে বর্ণিত তথ্য মতে হযরত মুয়াবিয়া ফোঁড়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মারা যাবের আগে ফোঁড়া ব্যাথায় দাঁড়াতে না পেরে তিন বসে খুতবা দিতেন [ইবনুল আছীরের আল-কামিল (৪/৫৫৫)]। উনার আগে ইসলামের ইতিহাসে কেউ বসে খুতবা দেননি। নাছেবীদের প্রতি কিছুটা পক্ষপাতদুষ্ট ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র আল্লামা যাহাবীও ওনার ফোঁড়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। দেখুন সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (২/৪০১)। যাহাবীর বর্ণনার টেক্সট নীচে দিলামঃ 

عن أبي بردة قال: دخلت على معاوية حين أصابته قرحته ، فقال: "هلم يا ابن أخي ، فنظرتُ فإذا هي قد سبرت". يعني قرحته. فقلت: ليس عليك بأس ، إذ دخل ابنه يزيد فقال له معاوية: إن ولِّيت فاستوص بهذا ، فإن أباه كان أخاً لي غير أني قد رأيت في القتال ما لم ير. [الطبقات الكبرى - محمد بن سعد - ج ٤ - الصفحة ١١٢، وسير أعلام النبلاء (٢/٤٠١)].

অর্থঃ আবু বুরদা (হযরত আলীর পক্ষাবলম্বনকারী আবু মূসা আল-আশআরীর মুয়াবিয়াপন্থী ছেলে) বলেন, “মুয়াবিয়ার দেহে যখন ফোঁড়া দেখা দিয়েছিল, তখন আমি তার কাছে গেলাম। তিনি আমাকে বললেন, আমার ভাতিজা কাছে এসো। দেখলাম, তাতে (ফোঁড়ায়) পরীক্ষা করে ওষুধ দেয়া হয়েছে। আমি বললাম, আপনার কোনো অসুবিধা নেই। এসময় হঠাৎ তার ছেলে এজীদ এল। তখন মুয়াবিয়া তাকে বললেন, তুমি পদে এলে এর প্রতি কল্যাণকামী হয়ো। কারণ, তার পিতা আমার ভাই ছিল। তবে আমি যুদ্ধে তাকে অনাকাঙ্খিত অবস্থায় (আলীর পক্ষে) দেখেছি।” [তবকাতে ইবনে সাদ (৪/১১২) ও সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (২/৪০১)]

৬. হযরত আলীকে গালি দেওয়া:

عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ: أَمَرَ مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ سَعْدًا ، فَقَالَ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسُبَّ أَبَا التُّرَابِ؟ فَقَالَ: أَمَّا مَا ذَكَرْتُ ثَلَاثًا قَالَهُنَّ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَنْ أَسُبَّهُ ، لَأَنْ تَكُونَ لِي وَاحِدَةٌ مِنْهُنَّ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَهُ ، خَلَّفَهُ فِي بَعْضِ مَغَازِيهِ فَقَالَ لَهُ عَلِيٌّ يَا رَسُولَ اللَّهِ خَلَّفْتَنِي مَعَ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ؟ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلَّا أَنَّهُ لَا نُبُوَّةَ بَعْدِي» ، وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ يَوْمَ خَيْبَرَ: «لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ رَجُلًا يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ» ، قَالَ فَتَطَاوَلْنَا لَهَا ، فَقَالَ: «ادْعُوا لِي عَلِيًّا» ، فَأُتِيَ بِهِ أَرْمَدَ فَبَصَقَ فِي عَيْنِهِ وَدَفَعَ الرَّايَةَ إِلَيْهِ فَفَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ ، وَلَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ: "فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ" دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلِيًّا وَفَاطِمَةَ وَحَسَنًا وَحُسَيْنًا فَقَالَ: «اللَّهُمَّ هَؤُلَاءِ أَهْلِي». أخرجه مسلم (4/1870 ، رقم 2404). 

অর্থঃ তাবেয়ী আমের বিন সাদ তাঁর পিতা (শীর্ষ মুহাজির ছাহাবী হযরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাছ) থেকে বর্ণনা করে বলেছেন, মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান সাদকে নির্দেশ দিয়ে বললেন, আবু তুরাবকে (হযরত আলীর উপনাম) গালি سب দিতে আপনাকে কিসে বাধা দিচ্ছে? তখন তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم তাঁর উদ্দেশ্যে যে তিনটি কথা বলেছেন, তা স্মরণ করে আমি তাঁকে কখনো গালি দিতে পারবো না। আমার জন্য এগুলোর কোনোটি হওয়া লাল উট পাওয়ার চেয়েও উত্তম মনে করি। রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم যখন কোনো যুদ্ধে গমনকালে (ওটি তাবুক যুদ্ধ) যখন তাঁকে প্রতিনিধি (মদীনায় তাঁর স্থলাভিষিক্ত) বানিয়েছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, আপনি কি আমাকে নারী ও শিশুদের সাথে রেখে যাচ্ছেন? তখন রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم বললেন, “তুমি কি আমার জন্য সে অবস্থানে হতে সন্তুষ্ট নও, যে অবস্থানে মূসার (আঃ) জন্য হারূন (আঃ) হয়েছিলেন?। তবে পার্থক্য এই যে, আমার পরে নুবুওয়াত নেই।” আর আমি খাইবারের যুদ্ধের সময় তাঁকে (রসূলুল্লাহ) বলতে শুনেছি, “আমি আজ ঝান্ডা এমন এক লোকের হাতে দেবো যে আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলকে ভালোবাসে এবং আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলও তাকে ভালোবাসেন।” তখন আমরা লোকটি কে তা নিয়ে অনেক গুঞ্জন করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, “আলীকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো।” তখন চক্ষুশূল অবস্থায় তাকে ডেকে নিয়ে আসা হলো। তিনি (রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم) তাঁর চোখে থুথু দিলেন (এতে তিনি তাঁর চক্ষুশূল ভালো হয়ে যায়) এবং তাঁর হাতে ঝান্ডা দিলেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁর (হযরত আলীর) হাতে (ওই যুদ্ধে) বিজয় দান করলেন। আর যখন (মুবাহালার) এ আয়াত “অতএব বলো, আসো ডেকে নিই আমরা আমাদের সন্তানবর্গকে ও তোমরা তোমাদের সন্তানবর্গকে।” অবতীর্ণ হলো, তখন রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইনকে ডেকে নিলেন এবং বললেন, “হে আল্লাহ! এরাই আমার পরিবার।” [ছহীহ মুসলিম (২৪০৪)]। 

উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামা (রা.) এর প্রতিবাদ:

- عن أبي عبد الله الجدلي قال: دخلت على أم سلمة فقالت لي: أَيُسَبُّ رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم فيكم؟! قلت: معاذ الله أو سبحان الله أو كلمة نحوها ! قالت: سمعت رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم يقول: «مَنْ سَبًّ عَلِيًّا فَقَدْ سَبَّنِي». أخرجه أحمد (6/323 ، رقم 26791) قال الهيثمى (9/130): رجاله رجال الصحيح غير أبى عبد الله الجدلى ، وهو ثقة. وصححه شعيب الأرنأووط في تعليقه على المسند (44/329) والألباني في صحيحته (3332).

অর্থঃ তাবেয়ী আবু আবদুল্লাহ আল-জাদালী বলেন, আমি (হযরত মুয়াবিয়ার শাসনামলে) হযরত উম্মে সালামার (উম্মুল মুমিনীনের অন্যতম) কাছে গেলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমাদের মাঝে কি আল্লাহর রসূলকে গালি দেওয়া হয়? আমি তখন মাআযাল্লাহ (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই) বা সুবহানাল্লাহ (আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি) অথবা এ রকম অন্য কোনো শব্দ বললাম। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم বলেছেন, “যে আলীকে গালি দিল সে আমাকেই গালি দিল।” [ছহীহ সনদে মুসনদে আহমদ (২৬৭৯১)। হাফেজ হাইছামী মজমায়ে (৯/১৩০), শুয়াইব আরনাঊত তাঁর মুসনদে আহমদের তাহকীকে (২৬৭৯১) এমনকি আলবানীও হাদীছটিকে তার সিলসিলা ছহীহাতে (৩৩৩২) ছহীহ বলে মন্তব্য করেছেন]।

-

৭. হযরত আলী (রা.) এর প্রতি বুগজ:

عَنْ زِرٍّ ، قَالَ: قَالَ عَلِيٌّ: "وَالَّذِي فَلَقَ الْحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ إِنَّهُ لَعَهْدُ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيَّ أَنْ لَا يُحِبَّنِي إِلَّا مُؤْمِنٌ وَلَا يُبْغِضَنِي إِلَّا مُنَافِقٌ". أخرجه مسلم (1/86 ، رقم 78) ، والترمذى (5/643 ، رقم 3736) ، وقال: حسن صحيح. والنسائى (8/115 ، رقم 5018). 

অর্থঃ তাবেয়ী জির বিন হুবাইশ বলেন, হযরত আলী -رضي الله عنه- বলেছেন, ‘সে মহান সত্ত্বার কসম, যিনি দানা উৎপন্ন করেছেন এবং সৃষ্টকূলকে সৃষ্টি করেছেন! আমার কাছে এটা অবশ্য রসূলুল্লাহ صلَّى الله عليه وسلَّم এর অঙ্গীকার যে, আমাকে মুমিন ছাড়া কেউ ভালোবাসবে না (অর্থাৎ, প্রকৃত অর্থে ভালোবাসা) এবং মুনাফিক ছাড়া কেউ আমাকে বুগজ (ঘৃণা/বিদ্বেষ) করবে না।’ [ছহীহ মুসলিম (৭৮), সুনানে তিরমিযী (৩৭৩৬) ও সুনানে নাসায়ী (৫০১৮)]।

-

হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরীর সাক্ষ্যঃ

عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه ، قال: "إنَّا كنا لنعرف المنافقين نحن معشر الأنصار ببغضهم علي بن أبي طالب". أخرجه الترمذي (رقم 3717). 

অর্থঃ হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী رضي الله عنه বলেন, “আমরা আনছারীরা মুনাফিক চিনতাম হযরত আলীর প্রতি তাদের বুগজ দেখে।” [সুনানে তিরমিযী (৩৭১৭)]

-

হযরত আবু যর আল-গিফারীর সাক্ষ্যঃ

عن أبي ذر رضي الله عنه ، قال: "ما كنا نعرف المنافقين إلا بتكذيبهم الله ورسوله والتخلف عن الصلوات والبغض لعلي بن أبي طالب". أخرجه الحاكم فى المستدرك (رقم 4643).

অর্থঃ হযরত আবু যর আল-গিফারী رضي الله عنه বলেন, “আমরা কেবলমাত্র (তিনটি লক্ষণ দেখে) মুনাফিক চিনতাম; আল্লাহ ও রসূলের কথা তাদের অস্বীকার, নামাজের প্রতি অবহেলা ও হযরত আলীর প্রতি তাদের বুগজ।” [মুস্তাদরকে হাকেম (৪৬৪৩)]

-

হযরত জাবিরের সাক্ষ্যঃ

عن جابر بن عبد الله رضي الله عنه ، قال: "ما كنا نعرف المنافقين إلا ببغضهم عليًّا رضي الله عنه." أخرجه الطبراني في المعجم الأوسط (4/264 رقم 4151).

অর্থঃ হযরত জাবির رضي الله عنه বলেন, “আমরা মুনাফিক চিনতাম হযরত আলীর প্রতি তাদের বুগজ দেখে।” [মুজমে তবরানী আউসাত (৪/২৬৪)]

-

হযরত আলীর সাক্ষ্যসমূহঃ 

وقال علي رضي الله عن معاوية بعد اتهامه إياه بقتل عثمان رضي الله عنه: "لم يجعل له سابقة في الدين ولا سلف صدق في الإسلام ، طليق بن طليق حزب من الأحزاب ، لم يزل حربًا لله ورسوله هو وأبوه حتى دخلا في الإسلام كارهين". الكامل لابن الأثير (148/4).

অর্থঃ সিফফীনের আগে মুয়াবিয়ার দুষ্ট প্রতিনিধি হযরত আলীকে উছমান হত্যার জন্য অভিযুক্ত করলে তিনি মুয়াবিয়ার ব্যাপারে বলেন, “দীনদারিতে ওর কোনো ভালো পূর্বরেকর্ড নেই এবং ইসলামে সত্যবাদিতারও কোনো সালাফ (পূর্বকীর্তি) নেই। তলীক বিন তলীক এবং (খন্দকে মুসলিম উৎখাতপন্থী) দলসমূহের একটি দলপতি। বাধ্য হয়ে ইসলাম গ্রহণ করা পর্যন্ত সে ও তার পিতা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিল।” [ইবনুল আছীরের আল-কামিল ফিত তারীখ (৩/৩১৮)]।

প্রসঙ্গত, হযরত মুয়াবিয়া ও তার অনুসারীরা হযরত আলীর প্রতি প্রচন্ড বুগজ রাখতো। দেখুন একটি প্রমাণ:

عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ قَالَ: كُنْتُ مَعَ ابْنِ عَبَّاسٍ بِعَرَفَاتٍ فَقَالَ: "مَا لِى لاَ أَسْمَعُ النَّاسَ يُلَبُّونَ". قُلْتُ: يَخَافُونَ مِنْ مُعَاوِيَةَ. فَخَرَجَ ابْنُ عَبَّاسٍ مِنْ فُسْطَاطِهِ فَقَالَ: "لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ فَإِنَّهُمْ قَدْ تَرَكُوا السُّنَّةَ مِنْ بُغْضِ عَلِىٍّ. أخرجه النسائي (5/253 ، رقم 3006) ، وابن خزيمة في صحيحه (رقم 2830). 

অর্থঃ হযরত সাঈদ বিন জুবাইর বলেন, আমি আরাফাতের মাঠে ইবনে আব্বাসের সাথে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, কি হলো! আমি লোকজনের তালবিয়া পড়ার আওয়াজ যে শুনছি না! আমি বললাম, তারা মুয়াবিয়াকে ভয় করছে (বাদশা মুয়াবিয়া হযরত সম্ভবত হাজীদের তালবিয়া বা আওয়াজ করে তালবিয়া পড়ার বিরোধী ছিলেন)। তখন ইবনে আব্বাস তাঁর তাঁবু থেকে বের হলেন এবং বললেন, “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা লাব্বাইক। ওরা (মুয়াবিয়াপন্থীরা) আলীর প্রতি বুগজ/ঘৃণাবশত সুন্নত ত্যাগ করেছে।” [সুনানে নাসায়ী (৩০০৬) ও ছহীহ ইবনে খুজাইমা (২৮৩০)]। 

-

৮. ছাহাবীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও সুদী লেনদেন চালু রাখা: 

عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ، قَالَ كُنْتُ بِالشَّامِ فِي حَلْقَةٍ فِيهَا مُسْلِمُ بْنُ يَسَارٍ فَجَاءَ أَبُو الأَشْعَثِ قَالَ: قَالُوا أَبُو الأَشْعَثِ أَبُو الأَشْعَثِ ‏.‏ فَجَلَسَ فَقُلْتُ لَهُ حَدِّثْ أَخَانَا حَدِيثَ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ ‏.‏ قَالَ نَعَمْ: غَزَوْنَا غَزَاةً وعلَى النَّاسِ مُعَاوِيَةُ، فَغَنِمْنَا غَنَائِمَ كَثِيرَةً، فَكانَ فِيما غَنِمْنَا آنِيَةٌ مِن فِضَّةٍ، فأمَرَ مُعَاوِيَةُ رَجُلًا أَنْ يَبِيعَهَا في أَعْطِيَاتِ النَّاسِ، فَتَسَارَعَ النَّاسُ في ذلكَ، فَبَلَغَ عُبَادَةَ بنَ الصَّامِتِ، فَقَامَ، فَقالَ: إنِّي سَمِعْتُ رَسولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وَسَلَّمَ يَنْهَى عن بَيْعِ الذَّهَبِ بالذَّهَبِ، وَالْفِضَّةِ بالفِضَّةِ، وَالْبُرِّ بالبُرِّ، وَالشَّعِيرِ بالشَّعِيرِ، وَالتَّمْرِ بالتَّمْرِ، وَالْمِلْحِ بالمِلْحِ، إلَّا سَوَاءً بسَوَاءٍ، عَيْنًا بعَيْنٍ، فمَن زَادَ، أَوِ ازْدَادَ، فقَدْ أَرْبَى، فَرَدَّ النَّاسُ ما أَخَذُوا، فَبَلَغَ ذلكَ مُعَاوِيَةَ فَقَامَ خَطِيبًا، فَقالَ: أَلَا ما بَالُ رِجَالٍ يَتَحَدَّثُونَ عن رَسولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وَسَلَّمَ أَحَادِيثَ قدْ كُنَّا نَشْهَدُهُ وَنَصْحَبُهُ، فَلَمْ نَسْمَعْهَا منه؟! فَقَامَ عُبَادَةُ بنُ الصَّامِتِ فأعَادَ القِصَّةَ، ثُمَّ قالَ: لَنُحَدِّثَنَّ بما سَمِعْنَا مِن رَسولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وَسَلَّمَ، وإنْ كَرِهَ مُعَاوِيَةُ، أَوْ قالَ: وإنْ رَغِمَ، ما أُبَالِي أَنْ لا أَصْحَبَهُ في جُنْدِهِ لَيْلَةً سَوْدَاءَ. أخرجه مسلم (رقم 1587).

অর্থ : হযরত আবূ কিলাবাহ (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে মুসলিম বিন ইয়াসারও ছিলেন। এমন সময় আবুল আশ’আসের আগমন হলো। তারা বলল, আবল আশ’আস (এসেছেন)! আমিও বললাম, আবুল আশ’আস (এসেছেন)! অতঃপর তিনি বসলেন। আমি তাকে বললাম, আমাদের ভাইকে উবাদাহ্ বিন সামিত (রা.) এর হাদীসটি শোনান। তিনি বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। আমরা একবার এক যুদ্ধে গমন করি, যার নেতৃত্বে ছিলেন মুয়াবিয়া। এতে প্রচুর পরিমাণ গনীমত আমাদের হাতে এলো যাতে রূপার একটা পাত্রও ছিল। মুয়াবিয়া সেটা লোকদের ভাতা দেওয়ার জন্য বিক্রি করে দিতে একজনকে নির্দেশ দেন। তো লোকজন সেটি নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করল। উবাদাহ ইবনু সামিত (রাযিঃ)-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি দণ্ডায়মান হন এবং বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিষেধ করতে শুনেছি- "স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর ও লবণের বিনিময়ে লবণ বিক্রি করতে, পরিমাণে সমান সমান ও নগদ নগদ ছাড়া। যে অতিরিক্ত দিবে বা অতিরিক্ত গ্রহণ করবে সে সুদের কাজ-কারবার করল।" তো এরপর লোকজন যা কিছু অতিরিক্ত নিয়েছিল তা ফেরত দিলো এবং মুয়াবিয়ার নিকট এ সংবাদ পৌঁছে দিলো। এর ফলে তিনি বক্তব্য দিতে দাঁড়ালেন এবং বললেন, মানুষের একী অবস্থা হলো, তারা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন বহু হাদীস বর্ণনা করেন যা আমরা তার থেকে শুনিনি অথচ আমরা তাঁর নিকট উপস্থিত থাকতাম। এরপর উবাদাহ (রা.) দাঁড়ালেন এবং বর্ণনার পুনরাবৃত্তি করে বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা কিছু শুনেছি তা অবশ্যই বর্ণনা করব, যদিও মুয়াবিয়া তা অপছন্দ করেন অথবা বলেছেন যে, যদিও মুয়াবিয়া তাতে দুঃখিত হন। এতে আমার কিছু আসে যায় না যে তার বাহিনীতে আমি এক কালো রাত্র না থাকি। [ছহীহ মুসলিম (১৫৮৭)]।

-

প্রসঙ্গত, হযরত উবাদা বিন সামিত (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেছেন হিজরতের আগে। তাই তিনি অন্তত বারো বছর রসূলুল্লাহ (স:) এর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। আর হযরত মুয়াবিয়া মুসলমান হয়েছিলেন ফতেহ মক্কার পর। ফলে তিনি রসূলুল্লাহ (স:) এর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন মাত্র দুই বছর।

-

৯ হারাম খাওয়া

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻜَﻌْﺒَﺔِ ، ﻗَﺎﻝ:َ ﺩَﺧَﻠْﺖُ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪَ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ ﺟَﺎﻟِﺲٌ ﻓِﻲ ﻇِﻞِّ ﺍﻟْﻜَﻌْﺒَﺔِ ﻭَﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻣُﺠْﺘَﻤِﻌُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ، ﻓَﺄَﺗَﻴْﺘُﻬُﻢْ ﻓَﺠَﻠَﺴْﺖُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻛُﻨَّﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ ﻓَﻨَﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣَﻨْﺰِﻻً ، ﻓَﻤِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﻳُﺼْﻠِﺢُ ﺧِﺒَﺎﺀَﻩُ ، ﻭَﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﻳَﻨْﺘَﻀِﻞُ ، ﻭَﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﻫُﻮَ ﻓِﻲ ﺟَﺸَﺮِﻩِ ، ﺇِﺫْ ﻧَﺎﺩَﻯ ﻣُﻨَﺎﺩِﻱ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﺟَﺎﻣِﻌَﺔً . ﻓَﺎﺟْﺘَﻤَﻌْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻝَ: «إنَّهُ لَمْ يَكُنْ نبي قَبْلي إلاَّ كَانَ حَقا علَيْهِ أنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلى خَيرِ ما يعْلَمُهُ لهُمْ ، ويُنذِرَهُم شَرَّ ما يعلَمُهُ لهُم ، وإنَّ أُمَّتَكُمْ هذِهِ جُعِلَ عَافيتُها في أَوَّلِها ، وسَيُصِيبُ آخِرَهَا بلاءٌ وأُمُورٌ تُنكِرُونَهَا، وتجيءُ فِتَنٌ فيُرقِّقُ بَعضُها بَعْضاً ، وتجيء الفِتْنَةُ فَيقُولُ المؤمِنُ: هذِهِ مُهْلِكَتي ، ثُمَّ تَنْكَشِفُ ، وتجيءُ الفِتنَةُ فَيَقُولُ المُؤْمِنُ: هذِهِ هذِهِ ، فَمَنْ أَحَبَّ أنْ يُزَحْزَحَ عن النَّارِ ، ويُدْخَلَ الجنَّةَ ، فَلْتَأْتِهِ منيَّتُه وَهُوَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ ، ولَيَأْتِ إلى الناسِ الذي يُحِبُّ أَنْ يُؤتَى إلَيْهِ .ومَنْ بَايع إماماً فَأَعْطَاهُ صَفْقَةَ يدِهِ ، وثمَرةَ قَلْبهِ فَليُطعْهُ إنِ اسْتَطَاعَ ، فَإنْ جَاءَ آخَرُ ينازعُهُ ، فاضْربُوا عُنُقَ الآخَرِ». ﻓَﺪَﻧَﻮْﺕُ ﻣِﻨْﻪُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻟَﻪ:ُ ﺃَﻧْﺸُﺪُﻙَ ﺍﻟﻠَّﻪَ أأﻧْﺖَ ﺳَﻤِﻌْﺖَ ﻫَﺬَﺍ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ؟ ﻓَﺄَﻫْﻮَﻯ ﺇِﻟَﻰ ﺃُﺫُﻧَﻴْﻪِ ﻭَﻗَﻠْﺒِﻪِ ﺑِﻴَﺪَﻳْﻪِ ﻭَﻗَﺎﻝ:َ ﺳَﻤِﻌَﺘْﻪُ ﺃُﺫُﻧَﺎﻯَ ﻭَﻭَﻋَﺎﻩُ ﻗَﻠْﺒِﻲ . ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻟَﻪُ ﻫَﺬَﺍ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﻤِّﻚَ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔُ ﻳَﺄْﻣُﺮُﻧَﺎ ﺃَﻥْ ﻧَﺄْﻛُﻞَ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻨَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻨَﺎ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﻭَﻧَﻘْﺘُﻞَ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻨَﺎ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﻘُﻮﻝُ: {ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻻَ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥْ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﺗِﺠَﺎﺭَﺓً ﻋَﻦْ ﺗَﺮَﺍﺽٍ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ}. ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺴَﻜَﺖَ ﺳَﺎﻋَﺔً ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻃِﻌْﻪُ ﻓِﻲ ﻃَﺎﻋَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻋْﺼِﻪِ ﻓِﻲ ﻣَﻌْﺼِﻴَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ. أخرجه مسلم (3/1472 ، رقم 1844) واللفظ له، والنسائى (7/153 ، رقم 4191) ، وابن ماجه (2/1306 ، رقم 3956) ، وأحمد (2/191 ، رقم 6793) . 

অর্থঃ তাবেয়ী আবদুর রহমান বিন আবদু রব্বিল কাবা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা মসজিদে হারামে প্রবেশ করলাম। তখন আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আছ কাবার ছায়ায় বসেছিলেন। লোকজন তাকে চারপাশ থেকে ঘিরেছিল। আমি তাদের নিকট গেলাম এবং তার পাশেই বসে পড়লাম। তখন তিনি বললেন, কোনো এক সফরে আমরা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সাথে ছিলাম। আমরা একটি জায়গায় অবস্থান গ্রহণ করলাম। আমাদের মধ্যকার কেউ তখন তার তাঁবু ঠিকঠাক করছিল, কেউ তীর ছুড়ছিল, কেউ তার পশুপাল দেখাশুনা করছিল। এমন সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র মুনাদী/নকীব হাঁক দিল, ‘নামায দাঁড়িয়ে যাচ্ছে!’ তখন আমরা গিয়ে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র কাছে জড়ো হলাম। তিনি বললেন, “আমার পূর্বে আগমন করা প্রত্যেক নবীর দায়িত্ব ছিল তার উম্মতকে সে সব বিষয়ের নির্দেশ করা, যা তিনি তাদের জন্য কল্যাণকর মনে করতেন এবং সে সব বিষয় থেকে তাদেরকে সতর্ক করা, যা তিনি তাদের জন্য ক্ষতিকর মনে করতেন। আর তোমাদের এ উম্মতের আফিয়ত (বিভেদ ও বিকৃতি থেকে রক্ষা) রাখা হয়েছে শুরুর দিকে। আর এর শেষের দিকে দেখা দিবে বিপদ ও এমন সব বিষয়, যা তোমাদের (প্রকৃত উম্মতদের) কাছে খুব খারাপ মনে হবে। আর এমন সব ফিতনা এসে আপতিত হবে, যার পূর্বেরটা পরেরটার চেয়ে হাল্কা হবে। তো এমন মারাত্মক ফিতনা এসে পতিত হবে, যখন মুমিন বলতে বাধ্য হবে, এইতো ধ্বংস হলাম। অতঃপর তা দূর হবে। অতঃপর এমন মারাত্মক ফিতনা এসে পতিত হবে, যখন মুমিন বলতে বাধ্য হবে, এইতো ধ্বংস হলাম, এইতো ধ্বংস হলাম। তো এই (ফিতনার) সময় যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতে প্রবেশ করতে চাইবে, তার কর্তব্য হবে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রেখে মৃত্যু বরণ করা এবং এমন লোকের সাথে সর্ম্পক রাখা, যে তার সাথে সর্ম্পক রাখতে চাই। আর কেউ কোনো শাসককে আনুগত্যের বাইয়াত দিলে ও অন্তর থেকে তাকে মেনে নিলে তার কর্তব্য হবে যতদূর সম্ভব ঐ শাসকের আনুগত্য করা এবং এ সময় অন্য কেউ পাল্টা শাসক হওয়ার দাবি করলে তাকে হত্যা করা।” (রাবী হযরত আবদুর রহমান বিন আবদু রব্বিল কাবা বলেন) তখন আমি (কাবা প্রান্তরে) তার নিকটে ঘেষলাম এবং তাকে বললাম, আমি আপনাকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, আপনি কি সত্যি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র কাছে এরকম কথা শুনেছেন? তখন তিনি (আবদুল্লাহ বিন আমর) তার দুই কান ও হৃদয়ের দিকে দুই হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন, ‘আমার দুই কান তা শুনেছে এবং আমার হৃদয় তা সংরক্ষণ করেছে।’

তখন আমি তাকে বললাম, এই যে আপনার চাচাতো ভাই মুয়াবিয়া (তৎকালীন মুসলিম রাজা এবং আবদুল্লাহ বিন আমরের পিতার সঙ্গী) আমাদেরকে আদেশ দেন যেন, আমরা আমাদের পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করি এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরে খুনাখুনি করি, অথচ আল্লাহ বলেছেন:

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻻَ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥْ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﺗِﺠَﺎﺭَﺓً ﻋَﻦْ ﺗَﺮَﺍﺽٍ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ

“হে মুমিনগণ! তোমরা ব্যবসার মাধ্যমে পারস্পরিক সন্তুষ্টি ছাড়া তোমাদের সম্পদগুলো পরস্পরে অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং তোমরা আত্মহত্যা/পরস্পরে হানাহানি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।” (সূরা আন নিসাঃ ২৯)।

রাবী (তাবেয়ী আবদুর রহমান বিন আবদু রব্বিল কাবা) বলেন, তখন তিনি (ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর) কিছুক্ষণের জন্য চুপ থাকলেন। অতঃপর বললেন, ‘আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারসমূহে তুমি তার আনুগত্য করবে এবং আল্লাহর অবাধ্যতার বিষয়গুলোতে তার অবাধ্যতা করবে।’ [ছহীহ মুসলিম (১৮৪৪), সুনানে নাসায়ী (৪১৯১), সুনানে ইবনে মাজা (৩৯৫৬) ও মুসনদে আহমদ (৬৭৯৩)]।

-

প্রসঙ্গ, এখানে কেউ হয়তো বলতে পারেন, আবদুল্লাহ বিন আমরতো তার পিতাসহ হযরত মুয়াবিয়ার পক্ষে ছিলেন। তাই তিনি কিভাবে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মেনে নিলেন? 

এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে নীচের বর্ণনায়:

عَنْ حَنْظَلَةَ بْنِ خُوَيْلِدٍ الْعَنَزِيِّ. قَالَ: بَيْنَمَا أَنَا عِنْدَ مُعَاوِيةَ ، إِذْ جَاءَهُ رَجُلاَنِ يَخْتَصِمَانِ فِي رَأْسِ عَمَّارٍ ، يَقُولُ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا: أَنَا قَتَلْتُهُ. فَقَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَمْرٍو: لِيَطِبْ بِهِ أَحَدُكُمَا نَفْسًا لِصَاحِبِهِ ، فَإِنِّي سَمعتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ». قَالَ مُعَاوِيَةُ: فَمَا بَالُكَ مَعَنَا ؟ قَالَ: إِنَّ أَبِي شَكَانِي إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَ: «أَطِعْ أَبَاكَ مَا دَامَ حَيًّا وَلاَ تَعْصِهِ». فَأَنَا مَعَكُمْ وَلَسْتُ أُقَاتِلُ. أخرجه الإمام أحمد في مسنده (رقم 6538) ، وصحح إسناده أحمد شاكر وشعيب الأرنؤوط فى تخريجهما.

অর্থঃ হানজালা বিন খুওয়াইলিদ আনাযী বলেন, একসময় আমি মুয়াবিয়ার কাছে ছিলাম। তখন তার কাছে দুইজন লোক এসে আম্মারের (তিনি ছিফফীন যুদ্ধে নিহত হওয়া জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত শীর্ষ ও সিনিয়র মুহাজির ছাহাবী এবং মক্কায় ইসলামের প্রথম মজলুম শহীদ ইয়াসির-সুমাইয়া দম্পতির সন্তান) হত্যা নিয়ে ঝগড়া করতে লাগলো। প্রত্যেকে বলছিল, আমিই তাকে হত্যা করেছি। তখন আবদুল্লাহ বিন আমর বললেন, যেকোনো একজনই দাবি করুন। কারণ, আমি রসূলুল্লাহকে صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলতে শুনেছি, “তাকে বাগী/বিদ্রোহী দল হত্যা করবে।” এই কথা শুনে মুয়াবিয়া বললেন, তাহলে তুমি আমাদের সাথে কেন? আবদুল্লাহ বললেন, আমার পিতা আল্লাহর রসূলের صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ কাছে আমার ব্যাপারে নালিশ করেছিলেন। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, “তোমার বাপ যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন তুমি তার আনুগত্য করবে এবং তার অবাধ্য হবে না।” তাই আমি (বাপের ডাকে সাড়া দিতে) আপনাদের সাথে রয়েছি। কিন্তু আমি কিতাল করছি না (আপনাদের ক্ষমতার লড়াইয়ে সম্পৃক্ত হইনি)।” [মুসনদে আহমদ (৬৫৩৮)। মানঃ ছহীহ]। 

-

১০. অতিভোজন ও নবীজি (স.) এর বদদোয়া:

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ:كُنْتُ أَلْعَبُ مَعَ الصِّبْيَانِ ، فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَتَوَارَيْتُ خَلْفَ بَابٍ. قَالَ: فَجَاءَ فَحَطَأَنِي حَطْأَةً وَقَالَ: «اذْهَبْ وَادْعُ لِي مُعَاوِيَةَ». قَالَ فَجِئْتُ فَقُلْتُ هُوَ يَأْكُلُ ، قَالَ: ثُمَّ قَالَ لِي: «اذْهَبْ فَادْعُ لِي مُعَاوِيَةَ». قَالَ فَجِئْتُ فَقُلْتُ هُوَ يَأْكُلُ ، فَقَالَ: «لَا أَشْبَعَ اللهُ بَطْنَهُ». قَالَ ابْنُ الْمُثَنَّى: قُلْتُ لأُمَيَّةَ: مَا حَطَأَنِى ؟ قَالَ: قَفَدَنِى قَفْدَةً. أخرجه مسلم (رقم 2604). وفى رواية البيهقي فى دلائل النبوة (6/243 ، رقم 2506): قال: فما شبع بطنه أبدا. 

অর্থঃ হযরত ইবনে আব্বাস বলেন, আমি শিশুদের সাথে খেলছিলাম। এ সময় হঠাৎ নবীজি (স.) এলে আমি একটি গাছের পিছনে লুকিয়ে যাই। তখন তিনি এসে আমার ঘাড়ে ধরে বললেন, “যাও মুয়াবিয়াকে ডেকে নিয়ে এসো।” আমি গিয়ে এসে জানালাম, ও খানা খাচ্ছে। অতঃপর তিনি আমাকে আবারো বললেন, “যাও মুয়াবিয়াকে ডেকে নিয়ে এসো।” আমি গিয়ে এসে জানালাম, ও খানা খাচ্ছে। তখন তিনি বললেন, “আল্লাহ ওর উদর পূর্তি না করুন।” [ছহীহ মুসলিম (২৬০৪)]। বাইহাকীর দালায়েলুন নুবুওয়াহর (২৫০৬) বর্ণনায় আছে, ইবনে আব্বাস বলেছেন, মুয়াবিয়া এরপর খেয়ে আর কখনো তৃপ্ত হতে পারেনি। 

এই হাদীসটির উপর মন্তব্য করতে গিয়ে আল্লামা ইবনে কাসীর বলেছেন: "আমার কথা হলো, মুয়াবিয়া এরপর খেয়ে তৃপ্ত হতে পারতেন না। তার ইমারতের সময় এই দোয়া প্রতিফলিত হয়। তো বলা হয় যে, তিনি গোশত দিয়ে দৈনিক সাতবার খেতেন। আর তিনি বলতেন, আমি তৃপ্ত হই না; বরং দুর্বলতাই অনুভব করি।" [আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৮৯]।

قال ابن كثير فى الجزء السادس من "البداية والنهاية" (الصفحة ١٨٩) بعد ذكر هذ الحديث: قلت: وقد كان معاوية لا يشبع بعدها، ووافقته هذه الدعوة في أيام إمارته، فيقال: إنه كان يأكل في اليوم سبع مرات طعاما بلحم، وكان يقول: والله لا أشبع وإنما أعيى.

-

অন্যদিকে রসূলুল্লাহ (স:) অতিভোজনকে কাফিরের বৈশিষ্ট্য বলে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন: 

عن أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَجُلًا كَانَ يَأْكُلُ أَكْلًا كَثِيرًا فَأَسْلَمَ فَكَانَ يَأْكُلُ أَكْلًا قَلِيلًا فَذُكِرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: "إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَأْكُلُ فِي مِعًى وَاحِدٍ وَالْكَافِرَ يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ". أخرجه البخارى (5/2062 ، رقم 5082) ، ومسلم (3/1632 ، رقم 2062).

অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন লোক খুব বেশী খাবার খেতো। অতঃপর লোকটি ইসলাম গ্রহণ করলো। পরে সে কম খেতে শুরু করলো। তখন বিষয়টি রসূলুল্লাহকে صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم অবহিত করা হলো। তিনি বললেন, “মুমিন খায় এক আঁতড়িতে আর কাফির খায় সাত আঁতড়িতে।” [ছহীহ বোখারী (৫০৮২) ও ছহীহ মুসলিম (২০৬২)]। 

-


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

শর্ষীনা, ফুরফুরা, জৌনপুরী, ফুলতলী, সোনাকান্দা সহ সকল বালাকোটি পীরগনের শেরেকী আকীদা

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে