হাদীস-ফিকাহ ছাড়া কুরআন বুঝা অসম্ভব




হাদিস অস্বীকারকারীরা নিঃসন্দেহে পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত এবং কা|ফির। হাদিস অস্বীকারকারীরা এখন মুসলিম সমাজে মহা ফিতনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাতিল গোষ্ঠীর বিভ্রান্তিকর প্রচারণায় অনেক অজ্ঞ সাধারণ মুসলিম বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং হাদিস অস্বীকার করে কুফরী ও জাহান্নামের পথে পা বাড়াচ্ছে। এই ফিতনা মোকাবিলায় জ্ঞান অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। হাদিস অস্বীকারের বিভ্রান্তি মোকাবিলায় কিছু বই, ভিডিও ও আর্টিকেল শেয়ার করছি। পোস্টটি যথাসম্ভব শেয়ার করে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরির আহ্বান। . হাদিসের প্রামাণিকতা - সানাউল্লাহ নজির আহমদ https://islamhouse.com/bn/books/409005/ . আমরা হাদিস মানতে বাধ্য - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক https://ia800709.us.archive.org/17/items/AmraHadisManteBaddho/Amra-Hadis-Mante-Baddho.pdf . রাসূল সা. এর সুন্নাহর উপর আমলের আবশ্যকতা আর তার অস্বীকারকারীর কাফের হওয়া - শায়খ আব্দুল আযিয বিন বায https://islamhouse.com/bn/books/438765/ . হাদিস সংকলনের ইতিহাস - মাওলানা আব্দুর রহিম https://drive.google.com/file/d/1Zj5sh3LVC27Jr_bV5mUShkKoXfOWnYmV/view?usp=sharing . হাদীসের নামে জালিয়াতী - ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর http://xeroxtree.com/pdf/hadiser_name_jaliyati.pdf . হাদীসের প্রামাণ্যতা - মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী https://www.wafilife.com/shop/books/hadiser-pramannota/ . হাদিস সংকলনের ইতিহাস - ড. মুস্তফা আল-আযমি https://www.wafilife.com/shop/books/hadis-songkoloner-itihas-by-somokalin . হাদিস অস্বীকারকারীদের মহা অসঙ্গতি - মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার (Facebook Post) https://www.facebook.com/mdmushfiqur.rahmanminar/posts/pfbid02gGJ2TFWY8nA7BijKEfSARcTgzkz8HJcYKNSEG1sAupfnMPMmsKuHg5NqPMr3j9Sil . হাদিসের বিশুদ্ধতা - ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর https://youtu.be/T5NvpTbC4cI . রিজাল শাস্ত্র বা জাল/সহিহ হাদিস গবেষণা। ( শায়খ - আব্দুর রাকিব মাদানি ) https://www.youtube.com/watch?v=e5qaqa94JrI . হাদীস সহীহ ও যয়ীফ হওয়ার কারণ রিজাল শাস্ত্র পরিচিতি ( শায়খ - আব্দুর রাকিব মাদানি ) https://www.youtube.com/watch?v=PRGfmCwoTlo . Hadith Rejection Part 1 - Adnan Rashid https://youtu.be/xEeL0F4DxVA . Hadith Rejection - PART 2 - Adnan Rashid https://youtu.be/qM5WvypMSvo আহলে কুরআন দল কেনো কাফের পর্ব ১ - https://www.alkawsar.com/bn/article/2719/ পর্ব - ২ - http://najibullahbd.blogspot.com/2017/03/blog-post_92.html?m=1 পর্ব - ৩ http://najibullahbd.blogspot.com/2017/03/blog-post_85.html?m=1 শাইখ আলবানীর একাধিক বই আছে, তন্মধ্য একটি হলো https://abdurrahmanorg.files.wordpress.com/2014/08/the-status-of-the-sunnah-in-islaam-shaykh-al-albanee-al-ibaanah-com.pdf আদনান রাসিদ https://www.youtube.com/playlist?list=PL5KgjwrPtPyvGb1_52r0zLECKYeBdjz71 লিংকের ১২নং বইটি। https://www.islamicboisomahar.in/2017/08/blog-post_91.html?m=0 লিংকের ৯০নং বইটি। https://www.islamicboisomahar.in/2017/04/blog-post_11.html?m=0 আল্লাহ্ আমাদের হিদায়াতের জন্য কেবল কিতাব পাঠান নি। কিতাবের সাথে পাঠিয়েছেন নবী। কখনো চিন্তা করেছেন কেন কিতাবের পাশাপাশি একজন নবী দরকার ছিল? কারণ কিতাব সীমাবদ্ধ। জি, সেটা আসমানী কিতাব হোক আর জমিনি কিতাব হোক, যেকোন কিতাব সীমাবদ্ধ। কেন? কারণ মানুষের ভাষা বাই ডেফিনিশন সীমাবদ্ধ। আর সেই ভাষা যদি হয় কিতাবে লিখিত ভাষা, তবে সেটা আরো বেশি সীমাবদ্ধ। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাতের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতে, আমাদের হাতে যেই লিখিত কোরআন আছে, সেটা প্রকৃত অর্থে আল্লাহর কালাম নয়। কেন? কারণ আল্লাহর কালাম আল্লাহর মতোই সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে। কিন্তু এই আরবী ভাষা তো মানুষের ভাষা। আর মানুষ তো সীমাবদ্ধ। মানুষের মুখে মুখে যে ভাষার জন্ম, তাতে তো সীমাবদ্ধতা থাকবেই। এই কারণে তারা বলেন, আল্লাহর কালাম মূলত আল্লাহর নফস বা সত্ত্বার মাঝে বিদ্যমান। আর আমাদের হাতে যে কোরআন আছে, সেটা হল ঐ কালামে নফসির ইবারত বা প্রতিনিধি, খোদ সেই কালামে নফসি নয়। আরবী কোরআন নিঃসন্দেহে আল্লাহর পক্ষ থেকে মুজিযা, কিন্তু এ সত্ত্বেও এটা ভাষাগত সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে নয়। এটা কোরআনের দিক থেকে কোন কমতি নয়। পৃথিবীতে এমন কোন ভাষা নেই, ছিল না এবং আসবেও না, যেটা সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে হবে। এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, ভাষা কেন সীমাবদ্ধ? এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হল – ভাষার বিকাশ ঘটেছে মানুষের ব্যবহারের মাধ্যমে, আর মানুষের এই ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হয়েছে তার পরিবেশ, পরিস্থিতি ও প্রয়োজন দ্বারা। এছাড়াও মানুষ নিজেরাই ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করেছে, একই শব্দকে কখনো এক অর্থে ব্যবহার করেছে, কখনো অন্য অর্থে, কখনো সময়ের পরিক্রমায় অর্থ পরিবর্তন করেছে। মূলত মানুষের সীমাবদ্ধতাই ভাষাকে সীমাবদ্ধ করেছে। কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, আল্লাহর পক্ষে কি এমন এক ভাষায় কিতাব নাযিল করা পসিবল ছিল না যেটা সকল সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে? প্রথম কথা হল, এই ভাষাটা মানুষের ভাষা হওয়া সম্ভব না, কারণ মানুষের ভাষা মানেই সীমাবদ্ধ। সুতরাং, মানুষের ভাষায় যদি নাযিল না করা হয়, তাহলে কিতাব হয়ত থাকবে, কিন্তু কেউই তার পাঠোদ্ধার করতে পারবে না। মূলত এই কারণেই কিতাবের ভাষাকে পারফেকট করার অবাস্তব চেষ্টা বাদ দিয়ে, সবচেয়ে রিয়ালিস্টিক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। সেটা হল এই কিতাবকে ইন্টারপ্রিট করার জন্য একজন নবী পাঠানো হয়েছে। নবীর সাথে আমাদের কোরআন বোঝার পার্থক্য কোথায়? পার্থক্যটা হল, আমরা কোরআন বুঝি সীমাবদ্ধ আরবী ভাষার মধ্যস্থতায়, কিন্তু নবী কোরআন বুঝতেন সরাসরি ইলহামের মাধ্যমে। অর্থাৎ কোরআন যেহেতু সরাসরি নবীর অন্তরে নাযিল করা হতো, তাই কোরআনের কোন শব্দ বা কোন বাক্যের কী অর্থ এটা নিয়ে কোন কনফিউশন তার থাকত না। অন্য উপায়ে বললে, মুসা নবীর সাথে আল্লাহ যখন কথা বলেছিলেন তখন মুসার অন্তরের সাথে আল্লাহ তাঁর কালামে নফসীর একটা যোগসূত্র তৈরি করে দিয়েছিলেন। ঠিক আমাদের নবীর কলবে যখন কোরআন নাযিল করা হতো, তখন নবী কোন ধরনের ভাষাগত মধ্যস্থতা ছাড়াই আল্লাহর কালামে নফসির চাহিদা উপলব্ধি করতে পারতেন। আর এই ভাষাগত মধ্যস্থতা না থাকার কারণে নবীজীর কোরআন বোঝা ছিল সকল ধরণের সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত। মূলত এই জন্যই কোরআনের ব্যাখ্যাকার হিসেবে নবীকে এই কিতাবের সাথে পাঠানো হয়েছে। অনেকেই ভাবেন, উসুলে ফিকহ শাস্ত্রের প্রায়োগিকতা কী? আসলে এখানেই এই শাস্ত্রের প্রাসঙ্গিকতা। যেহেতু আমাদের মাঝে নবী আর নেই, কোরআন বুঝতে হলে আমাদেরকে এই সীমাবদ্ধ আরবী ভাষার মধ্যস্থতা গ্রহণ করতেই হবে, তাই আমাদের আগে রপ্ত করতে হবে এই ভাষাকে বিশ্লেষণ করার পদ্ধতি। এটাই উসুলে ফিকহ শাস্ত্রের প্রধানতম লক্ষ্য। নবী যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন তিনিই ছিলেন কোরআনের ব্যাখ্যাকার। কিন্তু নবীর বিদায়ের পর সেই ব্যাখ্যা করার দায়িত্বটা এখন উসুলে ফিকহের। আর নবীর শিক্ষা ও সুন্নাত তো আছেই। তবে সেটাও উসুলে ফিকহের আওতাভুক্ত। কোরআনবাদীদের মূল সমস্যা হল অতি-সরলীকরণ। ইসলামকে বোঝার যেই অতি-সরলীকৃত পদ্ধতি মানুষের সামনে উপস্থাপন করে, সেটা সাধারণ মানুষের এক অংশ গেলেও। কারণ সাধারণ্য জটিলতা চায় না। পরিশ্রম করতে চায় না। শর্টকাটে সব হাসিল করতে চায়। কোরআনবাদের ন্যারেটিভটা যেহেতু মানুষকে অতি সহজে ইসলাম বুঝে ফেলার টোটকা প্রদান করে, তাই এই ধারাতে কনভার্ট করতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। তাদের এই অতি-সরলীকৃত চিন্তার সুত্রপাত হয় মূলত তাদের অজ্ঞতা থেকে। প্রথমত এই চিন্তাধারার লোকজন নিজেরা কোরআনকে এর মূল থেকে বোঝার ক্ষমতা রাখে না। তাদের ভরসা হয় অন্যদের করে দেয়া অনুবাদ। এই অনুবাদের মধ্য দিয়ে যে কোরআনের কত নুয়ান্স ও সাটলটি হারিয়ে যায়, সেটা তাদের কখনোই বোঝা সম্ভব হয় না। আরবি ভাষা ও ব্যাকরণেও তারা পারঙ্গম না। কোরআন থেকে পাঠোদ্ধার করা যে একটা গবেষণা ও ইজতিহাদের বিষয়, সেই অনুভূতিটাও তাই কখনো তাদের তৈরি হয় না। একেকটা শব্দ ও বাক্যাংশের যত কত মাল্টিপল ইন্টারপ্রিটেশন সম্ভব, এটাও কখনো তাদের আঁচ করা সম্ভব হয় না। কারণ কোরআনের মূল পাঠ থেকে তাদে এই কাজগুলো স্বয়ং নিজেদের তো করতে হচ্ছে না। এই শ্রেণীর মানুষজন স্থূলচিন্তার এবং অক্ষরবাদী হয়। ভাষার গতিশীলতা ও প্রশস্ততা তারা আঁচ করতে পারে না। ভাষার নৃতাত্ত্বিক দর্শন, উপযোগিতা নিয়েও তারা চিন্তা করে না। এই কারণে তারা ভাষার ত্রুটিপূর্ণ আক্ষরিক ব্যাখ্যাতে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখে। এর পর যে সমস্যাটার কথা বলা যায়, সেটা হল - কোরআন বোঝার যে (সুডো)মেথোডলজি প্রচার করে, তারা খোদ নিজেরাই সেই মেথোডলজি কখনো গোটা কোরআনের ওপর প্রয়োগ করে নি। খণ্ডিত কিছু উদাহরণ ও দৃষ্টান্তে তারা নিজেদের বয়ান হাজির করে। কনসিসটেন্সির সাথে সম্পূর্ণ কোরআনের ওপর তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করে, একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ সিস্টেম অফ থট তারা দাঁড় করাতে সক্ষম না। এর মূল কারণ হল, কোরআনবাদীরা অলস। পরিশ্রম এড়ানোই তাদের মূল মোটিভেশন। সুতরাং কোরআনবাদীদের কাছ থেকে হারমিনিউটিক্স ও এক্সিজিসিস এর কোন ফুলপ্রুফ কনসিস্টেন্ট সিস্টেম থাকা সম্ভব হয় না। এছাড়াও কোরআনবাদীরা নিজেরাও কখনো পুরো কোরআন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নিজেদের লেন্স দিয়ে পড়ার চেষ্টা করে না, এই কারণে তাদের থিওরিগুলোর শক্তিমত্তা কখনো যাচাই করার সুযোগও তাদের হয় না। তারা নিজেদের সাথেই আন্তরিক নয়। কোরআনবাদীদের আরেকটা সমস্যা হল স্ট্রম্যানিং। এই যে আমি কোরআন পাঠের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কথা বলছি, এটাকে তারা উপস্থাপন করবে, মানুষকে কোরআন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা কিংবা কোরআনকে পিছে ফেলার চেষ্টা হিসেবে। অথচ বাস্তবতা কিন্তু ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত। আমরা বরং কোরআনের নিয়ে যথেষ্ট সিরিয়াস এবং কোরআনের হক আদায়ের ব্যাপারে আন্তরিক বলেই, কোরআনকে যথাযথভাবে পাঠ করার ব্যাপারে সজাগ। আর এই কারণে আমরা আগে এই চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কথা বলি, যাতে কোরআন বোঝার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারি। আমরা কখনোই বলি না যে, সাধারণ মানুষের জন্য কোরআন বোঝা সম্ভব না, আমরা কেবল বলি, অলসতা, অমনোযোগিতা এবং শর্টকাট খোঁজার ধান্দা নিয়ে কখনো কোরআন সঠিকভাবে বোঝা সম্ভব না। অনেকে আবার এই কথাটা নিয়েও জলঘোলা করবেন যে, আল্লাহ যেখানে কোরআনকে সহজ বলেছেন, আমরা কেন জটিল বলি? শোনেন ভাই। থিওরি একটু পকেটে রাখেন। আমরা কোরআন বোঝার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখেছি কোরআন বোঝা সহজ না। আমরা যখন বলি কোরআন বোঝা জটিল তখন আমরা একটা চাক্ষুষ সমস্যার কথা বলছি, কেবল তত্ত্ব আওড়াচ্ছি না। কোরআন যথেষ্ট কমপ্লেক্স টেক্সট। তাহলে আল্লাহ কেন সহজ বলছেন? দেখুন, আল্লাহ এটা উপযোগিতার দিক থেকে বলেছেন। তিনি কোন রকম শর্ত সংযোগ ছাড়া বলেন নি, কোরআন সহজ। তিনি বলেছেন, কোরআনকে আমি সহজ করেছি যিকিরের জন্য। অর্থাৎ যিকিরের উপযোগিতা বা পারপাজ সার্ভ করার জন্য কোরআন সহজ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য কোরআন থেকে ইনস্পিরেশন বা মোটিভেশন নেয়ার জন্য কোরআনের এত গভীর হারমিনিউটিক্স বা এক্সিজিসিস জানা প্রয়োজন নেই। কোরআনকে সুপারফিশিয়ালি পড়ে গেলেও তাদের যে ভাসাভাসা বুঝ তৈরি হয়, সেটাই তাদেরকে ইনস্পায়ার ও মোটিভেট করার জন্য যথেষ্ট। এই ভাসাভাসা বুঝের নিজস্ব উপযোগিতা আছে। ক্লাস এইটে থাকতে যখন কেবল অনুবাদ দেখে পুরো কোরআন পড়েছিলাম, তখন কোরআন আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয় নি। কলেজে উঠে যখন আরবি শেখার প্রাথমিক ধাপ উত্তরণ করলাম, তখনও কোরআন বুঝতাম, কিন্তু এই বোঝার গণ্ডিটা ছিল আগের চেয়ে গভীর ও বিস্তৃত। এরপর যখন উলুমুল কোরআন, উসুলে তাফসির ও উসুলে ফিকহ নিয়ে পড়াশোনা করে কোরআন পড়লাম, তখনও কোরআন বুঝলম, কিন্তু আগের সাথে এর কোন তুলনা নেই। কোরআনের মধ্যে এই মিরাকুলাস নেচারটা আছে। সব স্তরের ও শ্রেণীর পাঠকের জন্য এতে খোরাক আছে। সবার বুঝ ও উপলব্ধি শতভাগ শুদ্ধ হওয়াটা কোরআন পাঠের মূল উপযোগিতা নয়। বরং কোরআন পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করাই এর প্রধান উপযোগিতা। তাই বিষয়টা যদি এই পর্যন্ত থাকত, কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু কোরআন-বাদীরা যেই ঝামেলা তৈরি করেছে, তা হল – তাদের ত্রুটিপূর্ণ, স্বল্পচিন্তিত ও অসামঞ্জস্য তত্ত্বগুলো পুঁজি করে কোরআন বোঝার প্রতিষ্ঠিত শাস্ত্রগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে। লেজে গোবর লাগা শুরু হয়েছে মূলত এখান থেকেই। পরিশেষে, আরেকটা বিষয় নিয়ে কথা তোলা প্রয়োজন। কোরআনের সাথে হাদিসের সম্পর্ক কেমন হবে? সাংঘর্ষিক কথা পাওয়া গেলে কী করতে হবে? কয়েকটা ধাপে এই বিষয়টা আলাপ করি। ১ - কোরআনবাদীদের সমস্যা যদি হয়, কোরআন বোঝার ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতি, তাহলে হাদীসবাদী সম্প্রদায়ের সমস্যাও হাদীস বোঝার ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতি। আহলে কোরআন ও আহলে হাদীস দুটোই এক্সট্রিমিস্ট উপদল। সুতরাং আমাদের এক্সট্রিমিজম ছেড়ে মাঝামাঝি আসতে হবে। ২ - কোরআন অবশ্যই জ্ঞানতাত্ত্বিক দিক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী সোর্স। কোরআনের বিশুদ্ধতা নিয়ে কোন ধরণের প্রশ্ন নেই। কিন্তু জটিলতা হল কোরআনের ইন্টারপ্রিটেশনে। ঐদিকে হাদীসের জটিলতা আরেক মাত্রা বেশি। এটার বিশুদ্ধতা নিয়ে যেমন জটিলতা আছে, তেমনি এর সঠিক ব্যাখ্যা নির্ণয় করাও আরেক জটিলতা। হাদীস সংকলন নবিজির সুপারভিশনে হয় নি, খুলাফায়ে রাশেদার তত্ত্বাবধানেও না। হাদীস সংকলন হয়েছে অরগ্যানিকালি। এর ফলে হাদীস সংকলনের ব্যাপারে কোরআনের ন্যায় নিশ্চয়তা লাভ করা যায় না। অনেকে ভাবেন, হাদীসের ইমামরা তো সহিহ-যয়িফ নির্ণয় করেই গিয়েছেন। না, বিষয়টা এত সরল না। হাদীসের ইমামরা সহিহ-যয়িফ নির্ণয় করার একটা চেষ্টা বা ইজতিহাদ করে গিয়েছেন কেবল। তাদের কোন কথা কনক্লুসিভ এভিডেন্স না। কোরআন নিয়ে কখনো এই ধরণের ইজতিহাদ করতে হয় না যে, এই কথাটা আসলেই আল্লাহ বলেছেন কিনা। কিন্তু সবচেয়ে বিশুদ্ধ হিসেবে আখ্যা পাওয়া হাদীসের ক্ষেত্রেও এই আশংকা ত্যাগ করা যায় না। আর এই কারণে উসুলে হাদীস শাস্ত্রবিদরা সবাই একমত হয়েছেন যে, কোন হাদিস সহিহ হলেও সেটার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান সম্ভব না। হাদিস বলে আমরা এখানে একক সুত্রে বর্ণিত হাদিস (খবরে ওয়াহেদ) এর কথা বলছি। শাস্ত্রবিদরা বলেন, খবরে ওয়াহেদ সর্বোচ্চ আমাদের প্রবল ধারণা প্রদান করে, অকাট্য জ্ঞান নয়। উদাহরণ দেই, বুখারির সহিহ হাদিসে আছে, নবীজি ওহি আসা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকার কারণে মনের অস্থিরতায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। এটা যদিও হাদিস পড়লে মনে হবে, আয়েশার কথা। কিন্তু বাস্তবে এটা একজন বর্ণনাকারীর নিজস্ব বক্তব্য, যা তিনি হাদীস বর্ণনা করার সময় মন্তব্য করেছিলেন। ফলে মানুষ ভেবে বসে, এটাও আয়েশার বক্তব্যের অংশ। এজাতীয় অনেক জটিলতা হাদিসে আছে, যার বিস্তারিত আলোচনা উসুলে হাদিস শাস্ত্রে পাবেন। ৩ - তাহলে দেখা যাচ্ছে, জটিলতামুক্ত কোন পথ নেই। অলস মানুষজন এই পর্যায়ে হতাশ হয়ে যাবে এবং আহলে কোরআন কিংবা আহলে হাদীস কোন একটা এক্সট্রিম ক্যাম্পে নাম লিখিয়ে ফেলবে। ভাই, দেখুন। আপনি অলস হন সমস্যা নেই, কিন্তু একজন চিন্তক বা গবেষক কেন হতে চান? এই দুইটা কী একসাথে যায়? ইজতিহাদ অর্থই তো পরিশ্রম, জটিলতা আছে বলেই তো পরিশ্রম। আপনি পরিশ্রম করতে না চাইলে, কোন সমস্যা নেই। যারা গবেষণা ও পরিশ্রম করছে, তাদের ফলো করুন না! ৪ - কোরআন ও নবির সুন্নাত (শিক্ষা ও আদর্শ) অস্বীকার করলে কারো পক্ষে মুসলিম থাকা সম্ভব না। কিন্তু এই কোরআন ও সুন্নাতকে কীভাবে জানতে হবে, কোন কোন সোর্স গ্রহণ করতে হবে, কী কী পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে, এসব নিয়ে অধ্যয়নের জন্য আমাদের হাজার বছর ধরে চলমান ও গতিশীল "উসুলি" ট্র্যাডিশন আছে। চাকা নতুন করে আবিষ্কার করার তো দরকার নেই! আমার-আপনার কাজ হল যা বিদ্যমান আছে তাকে আরো উন্নত করা, কোন সমস্যা থাকলে সেটা সংস্কারের চেষ্টা করা। সহজ কথায়, ট্র্যাডিশনের সাথে এঙ্গেজ করা। বাইপাস করার চেষ্টা করা কোন সমাধান না। অলস ও হেয়ালি মানুষজন ছাড়া এই বাইপাসারদের কোন ভক্ত-অনুসারী জোটে না। যেসব ইডিয়েট বলে বেড়ায়, কোরআন ছাড়া কিছু মানে না, তাদের বলবেন, সুরা মায়িদার ১০৩ নং আয়াতটা ব্যাখ্যা করতে কোন ধরণের হাদীস ও ইতিহাসের বইয়ের সহায়তা ছাড়া। অভিধানের সাহায্য নিলেও সেখান থেকে কোন ঐতিহাসিক তথ্য নির্ভর অর্থ নেয়া যাবে না, কারণ সেটাও হাদীসের বই থেকেই এসেছে। مَا جَعَلَ اللَّهُ مِنْ بَحِيرَةٍ وَلَا سَائِبَةٍ وَلَا وَصِيلَةٍ وَلَا حَامٍ وَلَكِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَأَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ “আল্লাহ কোন বাহিরা, সাইবা, ওয়াসিলা কিংবা হামি নির্ধারণ করেন নি। বরঞ্চ কাফেররা আল্লাহর নামে এসব মিথ্যা রচনা করেছে। এদের অধিকাংশই নির্বোধ।” বাহিরা, সাইবা, ওয়াসিলা, হামি এসব নামের অর্থ জানতে হলে হাদীসের বইপত্রের (যাতে ইতিহাসের বইও অন্তর্ভুক্ত) সহায়তা নিতে হবেই। কারণ কোরআন স্বয়ংসম্পূর্ণ না। জি। কথাটা শুনে শকিং মনে হলেও, এটাই বাস্তবতা। কোরআন খোদার কালাম হলেও, ভাষাটা মানুষের। আর ভাষা একটা নৃতাত্ত্বিক ফেনোমেনন। প্রত্যেকটা ভাষা একেকটা সংস্কৃতির মানুষের ধ্যানধারণাকে নিজের মাঝে ধারণ করে। সংস্কৃতির বাইরে কোন ভাষা হয় না। ভাষা মূলত সংস্কৃতির প্রতিনিধি। সংস্কৃতির পরিবর্তনের সাথে সাথে ভাষাও পরিবর্তন হয়। ইসলামের আগে আরব সংস্কৃতি একরকম ছিল, তাই সেসময় ভাষা ছিল একরকম। ইসলামের পর আরব সংস্কৃতি পাল্টেছে, তাল মিলিয়ে পাল্টেছে আরবী ভাষা। সালাত, সিয়াম, হজ, যাকাত এই শব্দগুলোর বর্তমান যেই অর্থ সেটা ইসলামের পর পারিভাষিক ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। কোরআনের বার্তা চিরন্তন ও টাইমলেস হলেও, এর ভাষা খুবই লোকালাইজড। সপ্তম শতাব্দীর হিজাযী আরবরা ছিল কোরআনের প্রাথমিক শ্রোতা। কোরআন তাদের ভাষায় নাযিল হয়েছে। এখানে ভাষা বলতে কেবল শব্দ না, কারণ ভাষা শব্দের চেয়েও বিশাল। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি সপ্তম শতাব্দীর হিজাযী সংস্কৃতি ও সমাজকে বুঝতে না পারবেন, ততক্ষণ কোরআনের বড় একটা অংশ আপনার জন্য অধরা হয়ে থাকবে। আর এই সংস্কৃতি ও সমাজকে জানার জন্যই হাদীস ও ইতিহাসের বইপত্র লাগবে। আমাদের পূর্বের প্রজন্ম অতি যত্ন সহকারে এগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা করে এসেছেন। হ্যাঁ, কোরআনের মত এগুলো নির্ভেজাল ও ত্রুটিমুক্ত নয়। হাদীসের বইগুলো হল খনির মত। এখানে স্বর্ণের আকরিকের সাথে আরো অনেক ভেজাল মিশ্রিত থাকে। এগুলো বিশোধন করে স্বর্ণ বের করতে হয়। খনির বাইরে যেমন স্বর্ণ পাওয়া সম্ভব না, তেমনি হাদীস, ফিকহ, তাফসীর ও তারিখের বইপত্রের বাইরে গিয়ে কোরআনের ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া সম্ভব না। আরবী ভাষা নিয়েই ভাবতে পারেন। আরবী ভাষা, ব্যাকরণ ও অভিধান যাদের মাধ্যমে সংকলিত হয়েছে, তাদের মাধ্যমেই অন্যান্য শাস্ত্রগুলো সংকলিত হয়েছে। আরবী ভাষা আমরা বর্তমানে যেভাবে বুঝি ও শিখি সেটাও এই শাস্ত্রবিদরাই নির্ধারণ করে গিয়েছেন। ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার সত্যই কোন সুযোগ নাই। আহলে কোরআন সম্প্রদায়ের লোকজন এসব জানে না ও বোঝে না বলেই, “আমাদের জন্য কোরআন যথেষ্ট” জাতীয় হাস্যকর দাবি করতে পারে। কোরআন সপ্তম শতাব্দীর হিজাযী আরবদের জন্য সরাসরি প্রযোজ্য হতে পারে, আমাদের জন্য নয়। কারণ আমাদেরকে কোরআন বুঝতে হবে কিয়াস বা তুলনার মাধ্যমে। উদাহরণ দিয়ে বললে, কোরআনে জান্নাতের যেই বিবরণ এসেছে, সেটা ঐ সময়ের মরুভূমির বেদুইন আরবদের উপযোগী করে এসেছে। কোরআন যদি স্ক্যানডিনেভিয়ার ভাইকিংদের ওপর নাযিল হত, অনেক বেশি ভিন্ন বিবরণ কোরআনে থাকত। কোরআনে আদ, সামুদ জাতির কথা এসেছে, হুদ, সালেহ ও শুয়াইবের ন্যায় আরব নবীদের কথা এসেছে, প্রাচীন ইয়েমেনের সাবা রাজ্য ও আরিম বাঁধের প্লাবনের কথা এসেছে, এগুলো বাইবেলে পাওয়া যায় না। কিন্তু আরব জনগোষ্ঠীর কাছে এসব ছিল সুবিদিত। কোরআন যদি চীন বা জাপানে নাযিল হত, তবে সেখানকার নবীদের ঘটনা আমরা কোরআনে পেতাম। কোরআনের ভাষা ও শাব্দিক বিবরণ লোকলাইজড হলেও এর শিক্ষা ও বার্তা কিয়ামত পর্যন্ত সব যুগের সব সমাজের জন্য প্রযোজ্য হবে, তবে কিয়াসের মাধ্যমে। আর এই কিয়াস করার কাজটাই হল প্রত্যেক যুগ ও প্রত্যেক সমাজের আলেমদের দায়িত্ব। তাওয়ারুস ও তাওয়াতুর ইসলাম কী? ইসলাম একটা ধর্ম। ধর্ম কী? ধর্ম একটা সামাজিক ও নৃতাত্ত্বিক ফেনোমেনন। সমাজের মানুষ যেসব বিশ্বাস, নীতিকথা, কর্ম, রিচুয়াল, প্র্যাকটিসের ব্যাপারে একমত হয়, সেটাই ধর্ম হিসেবে আখ্যা পায়। ধর্মের অস্তিত্ব একটা ফেনোমেনোলজিকাল অস্তিত্ব। অর্থাৎ এর অস্তিত্ব জানা যায় সামাজিক জগতের বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে। ইসলাম একটা ধর্ম হবার সুবাদে এই বৈশিষ্ট্যগুলো নিজের মাঝে ধারণ করে। ইসলাম সম্পর্কে মুসলিমরা জানতে পারে, মুসলিম পরিবার ও সমাজে জন্ম নিয়ে সেই ফেনোমেনাগুলো প্রত্যক্ষ ও অভিজ্ঞতাজাত করার পর সেগুলো আত্মকৃত করার মাধ্যমে। অমুসলিমরা ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারে মুসলিম সমাজের এই সমষ্টিক আত্মীকরণ পর্যবেক্ষণ করে। ধর্ম প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নয় – এখানে কোডিং করার জন্য একটা ম্যানুয়াল বই পড়ে প্রোগ্রামিং শুরু করে দিতে হবে – এমন কোন বিষয় না। ধর্ম হচ্ছে একটা যাপিত সামাজিক অভিজ্ঞতা। ধর্ম সম্পর্কে মানুষ জানতে পায়ই একটা ধর্মধারী সমাজের সংস্পর্শে এসে। মানবীয় সক্রিয়তা ও মিথষ্ক্রিয়ার বাইরে যারা ধর্মকে কল্পনা করেন, তারা মূলত একটা প্রোগ্রামিং ম্যানুয়ালকে ধর্ম ভেবে ভ্রম করছেন। যার কোন অস্তিত্ব মস্তিষ্কের বাইরে রিয়েল ওয়ার্ল্ডে নেই। ধর্ম একটা ম্যানুয়াল বইয়ের চাইতে বিশাল। ম্যানুয়াল বই থাকতেই পারে, কিন্তু ধর্ম হল সেই ম্যানুয়াল বইয়ের সাথে ধর্মধারী সমাজের মিথস্ক্রিয়ার নাম, খোদ ম্যানুয়াল বইটা কখনো ধর্ম নয়। ধর্মের এই সামাজিক মাত্রাকে যারা ভুলে যান তাদের মাঝেই ধর্মকে একটা-ছয়টা বইতে সীমাবদ্ধ করার ফ্যালাসি তৈরি হয় — নিজেদের তারা আহলে কোরআন বলুক কিংবা আহলে হাদীস। ধর্মকে যারা বইতে সীমাবদ্ধ করে ফেলে, দে টোটালি মিসড দা পয়েন্ট। ধর্ম তাহলে কী? — ধর্ম হল এসেনশালি “তাওয়ারুস” বা উত্তরাধিকার সূত্রে লব্ধ বিশ্বাস, কর্ম ও নীতি যা প্রত্যেক প্রজন্ম পূর্বের প্রজন্ম থেকে লাভ করে “তাওয়াতুর” বা গণ-সরবরাহের (মাস ট্রান্সমিশন) মাধ্যমে। ধর্ম একটা সামাজিক ফেনোমেনন হবার চাহিদাই হল এটা একে দুইয়ে সীমাবদ্ধ কোন এসোটেরিক গুপ্ত জ্ঞান হবে না। এটা হাজার থেকে হাজারে, এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে প্রবাহিত হবে। এই যে ম্যানুয়ালবাদী মানুষজন যারা আছেন, কোরআন-কোরআন করে বেড়ান, তারা কি জানেন কোরআনের সংজ্ঞা কী? আল্লাহ থেকে আগত, জিব্রিল হয়ে মুহাম্মদের প্রতি নাযিলকৃত, এমন অলৌকিক বাক্যসংকলন, যা গণ-সরবরাহের মাধ্যমে সংরক্ষিত। উপরের কোন একটা যদি মিসিং থাকে কোন একটা বাক্যের ব্যাপারে সেটা কোরআন হিসেবে স্বীকৃতি পাবে না। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিভিন্ন সময় “কোরআনের” (?) ভ্যারিয়েন্ট ও অল্টারনেট ভার্শন খুঁজে পান, আমাদের ইলমী ট্রাডিশনেও এসব “শায” ভার্শনের কথা জানা যায়। কিন্তু এগুলোর কোনটাই কোরআন নয়। কারণ মাস-ট্রান্সমিশন বা তাওয়াতুর এখানে মিসিং। আর এসব সংস্করণ মুসলিমদের বিশাল জনগোষ্ঠীর কেউই ঔন করে নি। কেউই না। অর্থাৎ এসবের কোন “তাওয়ারুস” নাই। যদি মুসলিমদের এমন কোন সম্প্রদায় খুঁজে পাওয়া যেত, যারা এসব ভার্শনের তাওয়ারুস স্বীকার করত, এগুলোকে ঔন করত, তবেই কেবল বলা যেত কোরআনের অল্টারনেট ভার্শন আছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, কোরআন কী এটা পর্যন্ত চিহ্নিত ও নির্ধারিত হচ্ছে “তাওয়াতুর” ও “তাওয়ারুস” এর মাধ্যমে। তো এই দুইটা বিষয়কে কোন ক্যাপাসিটিতে ডিনাই করার অর্থ হল খোদ কোরআনের ক্রেডিবিলিটি প্রশ্নবিদ্ধ করা। ধর্মের অগভীর পাঠে অভ্যস্ত মানুষজন এটা অবশ্য ধরতে পারবে না, কারণ তাদের জানাশোনার গণ্ডি খুবই ক্ষুদ্র। বহু মুসলিম পাবেন যারা বছরের কোন দিন নামাজ পড়ে না, কেবল ঈদের নামাজ পড়ে। যেসব কোরআনবাদী দাবি করেন, হাদীসের “সতীত্ব” পরীক্ষা করতে হবে কোরআন দিয়ে। আচ্ছা, সেটা কীভাবে? ... হাদীসটা কোরআনের কোন আয়াতের ব্যাখ্যা সেটা খুঁজে বের করতে হবে। যদি ঐ হাদীসের সাথে কোরআনের কোন আয়াত সরাসরি কানেক্ট না করা যায়, তবে সেটা জাল হাদীস। ... বেশ বেশ। তাহলে আমিও বলি, কোরআনের সতীত্ব পরীক্ষা করা হবে তাওয়াতুর ও তাওয়ারুস দিয়ে, এই দুইয়ের বাইরে গিয়ে যদি কোরআন দাবি করা হয়, সেটা হবে জাল কোরআন। তাহলে সতীত্ব পরীক্ষার প্রকৃত মানদণ্ড কী বোঝা গেল? — “তাওয়াতুর” ও “তাওয়ারুস”। কেউ কেউ একে ট্র্যাডিশন বলেন। কিন্তু শব্দ বিভ্রাট এড়াতে আমি আরবিতেই থাকছি। নবীর সুন্নত কোরআনের ব্যাখ্যা এই অর্থে কেবল নয় যে, কোরআনের প্রত্যেক আয়াতের জন্য নবীর একটা একটা করে হাদীস থাকা লাগবে। মজার বিষয় হল, কোরআনের তাফসীর বিষয়ে নবীর হাদীস একদম অপ্রতুল! ইমাম আহমদ তো বলেই দিয়েছেন, তিন জিনিসের ভিত্তি নেই, তার মধ্যে তাফসীর একটা। অর্থাৎ তাফসীর বা কোরআনের সরাসরি ব্যাখ্যা বিষয়ে নবীজী থেকে বর্ণিত হাদীস একদম বিরল! অনেকের কাছে বিষয়টা সাংঘর্ষিক মনে হয়! কোরআন ব্যাখ্যা করাই যদি নবীর কাজ হয়, তাহলে কোরআনের ব্যাখ্যায় কেন নবীর (বিশুদ্ধ) হাদীস নেই?! এর কারণ হল কোরআন ব্যাখ্যা করার জন্য সপ্তম শতাব্দীর হেজাযী আরবী ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস জানা হল প্রথম ধাপ। তারপর ভাষা ও ব্যাকরণের নিয়মকানুন মেনে, উসুলে তাফসীর ঠিক রেখে, কোরআনের ব্যাখ্যা করা যে কারো পক্ষেই সম্ভব। এটার জন্য নবীর তো দরকার নেই। নবীজী তো স্কুলের মাস্টার হিসেবে আসেন নাই যে বই নিয়ে বসে লাইন বাই লাইন পড়ে পড়ে ব্যাখ্যা করবেন। স্বয়ং নবীজী কোরআনের ব্যাখ্যা। এর অর্থ নবীজীর গোটা জীবন, চলন, কথা ও কর্ম হল কোরআন দ্বারা স্যাংশনড অর্থাৎ খোদার কাছ থেকে কোরআন নিয়ে আসার সুবাদে তিনি এই অথরিটি লাভ করেছেন। এছাড়াও কোরআনের প্রথম পাঠক হবার কারণে তার কাজকর্ম কখনো কোরআন বিরোধী হবে না, বরং তিনি যা করবেন সেটাই কোরআনের ব্যাখ্যা হবে। হ্যাঁ, নবীর সুন্নত সংকলনের মানবীয় প্রচেষ্টায় কিছু দুর্বলতা আছে, এর কারণে যদি কখনো নবীর সুন্নত বলে প্রচলিত কোন কথা বা কাজ কোরআনের একাপ্লিসিট টেক্সট বিরোধী হয়, তবে আমরা জ্ঞানতাত্ত্বিক মানদণ্ডে কোরআনের টেক্সট সবার উপরে রাখব। কিন্তু নবীর প্রতিটা কথা ও কাজের জন্য কোরআন ঘাটাঘাটি করতে হবে এমন ভাবার অর্থ নবীর ভূমিকা ও অস্তিত্বকে কার্যত অস্বীকার করে বসা। কেবল একটু চিন্তা করুন, কোরআন ভ্যালিডিটি পেল নবীর মুখে উচ্চারিত হওয়াতে। যেই নবী দিনের বেলায় তার মুখ দিয়ে কোরআন শোনালেন, রাতের বেলায় তিনি যদি একটি কথা বলেন, সেটা নিয়ে কি আমি সন্দেহ করা শুরু করব? প্যারাডক্সটা ধরতে পারছেন? নবীর কোন কথা বা কাজ নিয়ে যদি আপনার ডাউট তৈরি হয়, তাহলে কোরআন নিয়েই কিভাবে এত ভরসা আসে? আমি আগেও বলেছি, কোরআন-বাদীরা খোদ কোরআন সম্পর্কেই অজ্ঞ। কোরআনের এই আয়াতটা দেখুন। فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا “আপনার রবের কসম। কক্ষণো তারা মুমিন হবে না, যদি না তারা নিজেদের অন্তরীণ বিরোধগুলোতে আপনাকে হাকিম হিসেবে মেনে না নিচ্ছে এবং আপনি যেই ফয়সালা দিচ্ছেন তাকে প্রশ্নাতীতভাবে মেনে নিয়ে আত্মসমর্পণ না করছে।” (নিসা : ৬৫) এই আয়াতে নবীজীকে আল্লাহ মুমিনদের অন্তরীণ বিরোধগুলোতে অ্যাবসলিউট অথরিটি প্রদান করছেন। তাহলে বিরোধহীন বিষয়গুলোতে অথরিটি আরো কত শক্তিশালী হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নবী মদিনাতে এলেন, দেখলেন সেখানে বছরে দুইটা বড় মেলা হয়। তিনি ঘোষণা দিলেন এখন থেকে ঐ দুই দিন ইসলামী তরিকায় ঈদ উৎসব হবে। ঈদের নামাজ হবে, খুতবা হবে, নারী-পুরুষ সবাই সবাই তাতে শরিক হবে। কোথায় আছে কোরআনে এসব? আর কেনই-বা নবী থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্মের উত্তরাধিকারে (তাওয়ারুস) পাওয়া ধর্মের এসব মাস-ট্রান্সমিটেড (তাওয়াতুর) রিচুয়াল ও প্র্যাকটিস কোরআনে না পাওয়ার কারণে বাদ দিতে হবে? কেন নামাজের জন্য আযান দেয়ার সূত্র জানতে আমাকে কোরআন ঘাঁটতে হবে? আমাদের অবিশ্বাসটা কোথায়? তাওয়ারুস ও তাওয়াতুর নিয়ে? তাহলে কোরআন নিয়ে অন্ধবিশ্বাসের হেতু কী? এই কোরআন যে জিব্রিল নিয়ে আসছেন, এটা আপনি দেখছেন? নাকি বাপদাদার থেকে শুনেছেন? এই কোরআনটা আপনার হাতে কে তুলে দিয়েছে? জিব্রিল ফেরেশতা এসেছিল বুঝি? আপনাদের পায়ের নিচে যে কোন মাটি নেই, এটা কখন বুঝবেন?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম !

শর্ষীনা, ফুরফুরা, জৌনপুরী, ফুলতলী, সোনাকান্দা সহ সকল বালাকোটি পীরগনের শেরেকী আকীদা

নির্ভেজাল ইসলামের স্বরুপ সন্ধানে