আকীদা শাস্ত্র
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত (সুন্নি) আকীদা কি গ্রহন করা ফরজ?
মুমিনের কর্ম-কর্তব্য কি
কথিত আকীদা? নাকি
সিয়াসত ও রিয়াজত?
••••••
যুগযুগ ধরে চলে আসা অসার
আকীদা বিতর্কের রহস্য উন্মোচন
মানুষের হেদায়েতের নির্ভুল উৎস কোরআন মজীদে মহান আল্লাহ্ উনার সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী (স.) এর কাজ সম্পর্কে মানবজাতিকে অবহিত করতে গিয়ে বলেছেন:
لَقَد مَنَّ اللَّهُ عَلَى المُؤمِنينَ إِذ بَعَثَ فيهِم رَسولًا مِن أَنفُسِهِم يَتلوا عَلَيهِم ءايٰتِهِ وَيُزَكّيهِم وَيُعَلِّمُهُمُ الكِتٰبَ وَالحِكمَةَ وَإِن كانوا مِن قَبلُ لَفى ضَلٰلٍ مُبينٍ
অর্থ : "আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন, যিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব (কোরআন) ও হিকমত (সুন্নাহ তথা সবকিছুর সঠিক ও স্বাস্থ্য সম্মত নিয়ম) শিক্ষা দেন। নিশ্চয়ই এর আগে তারা স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত ছিল।" [সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৬৪]।
Meaning : "Indeed Allâh conferred a great favour on the believers when He sent among them a Messenger (Muhammad SAW) from among themselves, reciting unto them His Verses (the Qur'ân), and purifying them (from sins by their following him), and instructing them (in) the Book (the Qur'ân) and Al¬Hikmah [the wisdom and the Sunnah of the Prophet SAW (i.e. his legal ways, statements, acts of worship)], while before that they had been in manifest error." [Al-Qoran, Surah Al Imran, Verse : 164].
هُوَ الَّذى بَعَثَ فِى الأُمِّيّينَ رَسولًا مِنهُم يَتلوا عَلَيهِم ءايٰتِهِ وَيُزَكّيهِم وَيُعَلِّمُهُمُ الكِتٰبَ وَالحِكمَةَ وَإِن كانوا مِن قَبلُ لَفى ضَلٰلٍ مُبينٍ
অর্থ : "তিনিই উম্মীদের মাঝে তাদের মধ্য থেকে একজনকে রসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। নিশ্চয়ই এর আগে তারা স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত ছিল।" [সূরা জুমুয়া, আয়াত : ২]।
Meaning : "He it is Who sent among the unlettered ones a Messenger (Muhammad SAW) from among themselves, reciting to them His Verses, purifying them (from the filth of disbelief and polytheism), and teaching them the Book (this Qur'ân, Islâmic laws and Islâmic jurisprudence) and Al-Hikmah (As-Sunnah: legal ways, orders, acts of worship, of Prophet Muhammad SAW). And verily, they had been before in mainfest error." [Al-Qoran, Surah Al Jumuah, Verse : 2].
-
একই কর্মের কথা এসেছে সূরা বাকারায় উল্লেখিত ইব্রাহিম (আ.) এর দোয়াতেও।
رَبَّنا وَابعَث فيهِم رَسولًا مِنهُم يَتلوا عَلَيهِم ءايٰتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الكِتٰبَ وَالحِكمَةَ وَيُزَكّيهِم ۚ إِنَّكَ أَنتَ العَزيزُ الحَكيمُ
অর্থ : "হে আমাদের পরওয়ারদেগার! আর আপনি তাদের নিকট তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে রসূল হিসেবে প্রেরণ করুন, যিনি তাদের কাছে আপনার আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনাবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা (সঠিক সময়ে সঠিক কর্ম সম্পাদনকারী)।" [সূরা বাকারা, আয়াত : ১২৯]।
Meaning : "Our Lord! and Send amongst them a Messenger of their own (and indeed Allâh answered their invocation by sending Muhammad Peace be upon him ), who shall recite unto them Your Verses and instruct them in the Book (this Qur'ân) and Al-Hikmah (full knowledge of the Islâmic laws and jurisprudence or wisdom or Prophethood), and purify them. Verily! You are the All-Mighty, the All-Wise." [Al-Qoran, Surah Al Baqarah, Verse : 129].
-
তো আজ থেকে ১৫০০ চন্দ্রব ও ১৪৭৫ সৌর বছর পূর্বে সেই কাঙ্খিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ (স.) মক্কায় জন্মগ্রহণ করলেন এবং চল্লিশ বছর পূর্ণ হবার নুবুওয়াত লাভ করলেন। অতঃপর মানুষের কাছে আল্লাহর আয়াত সমূহ পাঠ করে শোনালেন, জাকাত তথা মানুষের কল্যাণে অর্থ ব্যয় ও জালিমদের অত্যাচারে ধৈর্য্য ধরানোর মাধ্যমে তাদেরকে পরিশুদ্ধ করলেন এবং কিতাব (কোরআন) ও হিকমত (সুন্নাহ তথা সবকিছুর সঠিক ও স্বাস্থ্য সম্মত নিয়ম) শিক্ষা দিলেন।
অতঃপর মদীনায় গিয়ে তিনি মহান আল্লাহর ক্ষমতা ও তাকদীরে বিশ্বাসী একটি দরদী (সহানুভূতিপূর্ণ) ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র কায়েম করলেন, যেখানে মানুষের পাশাপাশি উট, ছাগল, ভেড়া, কুকুর, বিড়াল, সাপ, সিংহ, শিয়াল, পিঁপড়া ও ব্যাঙসহ সকল প্রাণীর নিজ নিজ বাঁচার অধিকার ও কৃত অপরাধসমূহের শাস্তি সুনিশ্চিত করা হয়।
-
কিন্তু ইহজীবন শেষ করে মহানবী (স.) এর পরকালে যাত্রা করার পর ধীরে ধীরে সেই দরদী সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা দূর্বল হতে থাকে। ত্রিশবছর পর সেটির নেতৃত্ব ছিনতাই করে নিতে সক্ষম হয় উনার সেই শত্রু পরিবারের লোকজন, যারা উনাকে মক্কার তের বছরের দাওয়াতী ও মদীনার আট বছরের সিয়াসী (সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার) জীবনে জ্বালাতন করে এসে শেষপর্যন্ত অষ্টম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পর পরিস্থিতির শিকার হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
খলীফা রাশেদ হযরত আলী (র.) থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেবার পর তারা মহানবী (স.) এর মিনহাজ ছেড়ে তারা পথভ্রষ্ট কাফের রোমান সম্রাটদের স্টাইলে রাষ্ট্র পরিচালনা করা শুরু করে। এতে মুসলিম সমাজে মাথাছাড়া দিয়ে উঠে পার্থিব ভোগবিলাসের অনৈতিক প্রতিযোগিতা। পেশিশক্তির হুঙ্কারে রুদ্ধ করা হয় সত্য-ন্যায়ের ইসলামী কণ্ঠগুলো। এরপর ১৩২ হিজরীতে ক্ষমতার পালাবদল হয়। অত্যাচারী উমাইয়াদের হঠিয়ে ক্ষমতায় আসেন আব্বাসীরা। এতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও মদীনার সেই দরদী নববী মিনহাজের শাসন আর ফিরে এলো না।
-
এহেন পরিস্থিতিতে ওই ব্যর্থ মুসলিম সমাজের জ্ঞানী মহলে দেখা দেয় তথাকথিত আকীদা বিতর্ক। কারণ, তারা তখন নববী সিয়াসী মিশন বাস্তবায়নে অসহায় ও অক্ষম হয়ে পড়েছিলেন।
এতে ক্ষমতাবাদী শাসকগোষ্ঠী খুবই খুশী হয় এবং মানুষকে সিয়াসত থেকে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে সেই বিতর্কে হাওয়া দেয়।
তো এই হতাশাজনক পরিস্থিতিতে কিছু আলিম এসব অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক ছেড়ে রিয়াজত তথা আত্মশুদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করেন। আর কিছু আলিম সিয়াসত তথা রাষ্ট্র পরিচালনার যতটুকু সম্ভব ভালো রাখার চেষ্টা করেন। সেই সাথে আলিম নামধারী কিছু লোক লুঠেরা শাসকদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিতে তাদের ভালো-মন্দ সব কাজে শরয়ী বৈধতার সিল মারে।
-
কিন্তু ভোগ ও ক্ষমতাবাদী আব্বাসীদের সিংহাসনও বেশিদিন স্থায়ী হলো না। আজ থেকে ৭৬৫ সৌর বছর পূর্বে ১২৫৭ সালের নভেম্বরে মঙ্গোলিয়ার হালাকু বাহিনীর সামনে তাদের সিংহাসন নড়বড়ে হয়ে উঠলো। ১২৫৮ সালের ২৯ জানুয়ারি চীনা সেনাপতি গুয়ো খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলরা বাগদাদ শহর অবরোধ করে। এতে তৎকালীন আব্বাসী রাজা আলোচনা করতে চাইলে মঙ্গোলরা তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। বারো দিনের মাথায় ১০ ফেব্রুয়ারি আব্বাসী রাজার বাহিনী মঙ্গোলদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গোলরা শহরে ঝাপিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে।
-
এর ২৪৪ বছর পর ১৪৯২ সালে তৎকালীন উমাইয়া বংশদ্ভূদ শাসকদের চরম ভোগ, ক্ষমতা ও ভবন বিলাসের পাপের ভারে আক্রান্ত হয়ে আন্দালুস (স্পেন ও পর্তুগাল) থেকে মুছে যায় আটশ বছরের মুসলিম শাসনের শেষ চিহ্নটুকু। ক্রুসেডবাদী খ্রিষ্টানদের হাতে ধর্মত্যাগ ও গণহত্যার শিকার হয় সেখানে বসবাসকারী মুসলিম জনসাধারণ।
অতঃপর ১৭৫৭ সালে বৃটিশ ইবলীসদের হাতে পতন শুরু হয় ভারত উপমহাদেশের চরম ভোগ, ক্ষমতা, ভবন ও তোরণ বিলাসী মোগল মুসলিম শাসনব্যবস্থার। সিপাহীদের বিদ্রোহের ফলে ১৮৫৭ সালে বৃটিশ ইবলীসরা (ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি) তাদের পেনশনভোগী সর্বশেষ দন্তহীন মোগল রাজা বাহাদুর শাহকে দিল্লী থেকে রেঙ্গুনে নির্বাসিত করে দেয়।
এই মোগল শাসনের পতন শুরু হয়েছিল অস্থিরচিত্ত ও অদূরদর্শী বিলাসী শাসক ফররুখ সিয়ারের আমলেই। তিনি ১৭১৭ সালে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় শুল্কমুক্ত একচেটিয়া বাণিজ্যের সুবিধা প্রদান করেন এবং তাদেরকে তাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের অনুমতিসহ আরো অনেক সুবিধা দান করেন।
-
এই ঘটনার ৬৭ বছর পর ১৯২৪ সালে এই বৃটিশ ইবলীসদের পোষ্য সেক্যুলার কামাল আতাতুর্ক সর্বশেষ দন্তহীন উসমানী সুলতান দ্বিতীয় আবদুল মজীদকে ফ্রান্সে নির্বাসিত করে নাম সর্বস্ব উসমানী সলতনতের চূড়ান্ত পতন ঘটিয়ে তুরস্কে পিউর কুফরী শাসনব্যবস্থা চালু করে।
এই উসমানী সলতনতের পতন শুরু হয়েছিল সেটির ৩১তম অধিপতি সুলতান প্রথম আব্দুল মজিদের সময়। কারণ, তিনি ১৮৪৩-১৮৫৬ সালে পাঁচ মিলিয়ন অটোমান স্বর্ণমুদ্রা (৩৫ টন পরিমাণ স্বর্ণমূল্য) খরচ করে ইস্তাম্বুলের বসফরাস প্রণালীর ইউরোপীয় তীরবর্তী এলাকায় দোলমাবাহজ নামে একটি অতি বিলাসবহুল প্রাসাদ নির্মাণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল বিলাসিতায় ইউরোপীয়দের সাথে প্রতিযোগিতা করা। কিন্তু এই পাপাচারের পর থেকে উসমানীয় সরকার চরম অর্থ সঙ্কটে পড়ে অভ্যন্তরীণ নানা অশান্তি ও ইউরোপীয় বহিঃশত্রুদের ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হয় এবং শেষপর্যন্ত বৃটিশ ইবলীসদের ষড়যন্ত্রের মুখে পতন ঘটে ছয়শত বছরের উসমানী সলতনতের।
-
এই ঘটনার চার বছর পর ১৯২৮ সালে মুসলিম সমাজে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মিসরের বিপ্লবী তরুণ শহীদ হাসানুল বান্নার নেতৃত্বে ইখওয়ানুল মুসলিমীন (মুসলিম ব্রাদারহুড) এবং ১৯৪১ সালে ভারত উপমহাদেশের নবী বংশীয় ইসলামী চিন্তাবিদ দার্শনিক সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদীর নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরবর্তীতে এই দুইটি দলের চেতনা ও দর্শন থেকে আরো অনেক ইসলামী সিয়াসী দল প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইখওয়ান ও জামায়াত কোথাও রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে না পারলেও ইসলামে বিশ্বাসী লক্ষ লক্ষ জনতাকে সংগঠিত ও কোটি কোটি মানুষের মাঝে দরদী ইসলামী সমাজব্যবস্থার ধারণা উপস্থাপন করতে পেরেছে।
-
কিন্তু নববী মিনহাজের শাসনব্যবস্থার বিরোধী বৃটিশ ইবলীসদের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় সৌদি শাসকগোষ্ঠীসহ অন্যান্য শাসকরা একশ্রেণীর আলিমকে সেই পুরনো আকীদা বিতর্কে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করেন, যাতে মুসলমানদেরকে আকীদা নামের বেদাতের ঘুম পাড়িয়ে নববী সিয়াসত তথা শাসনব্যবস্থা থেকে দূরে রাখা যায়। কারণ, নববী শাসনব্যবস্থায় কারো জন্য মানুষের রাজা হয়ে ইচ্ছামত তাদের সম্পদ যেমন লুটপাট করা যায় না, তেমনি বিনোদনের নামে মদ ও মাগীবাজিতে আসক্ত হয়ে সমাজকে কলুষিত করার সুযোগ থাকে না।
এর বিপরীতে আলিমদের আরেকটি দল সিয়াসতকে ঘৃণা করে রিয়াজতের (ইবাদত সাধনার) নামে মানুষকে মানসিক ভাবে নপুংসক করে দিচ্ছে তথা নববী মিনহাজ বিরোধী শাসকদের গোলাম বানিয়ে রাখছে।
অথচ ইসলাম হলো রিয়াজত (ইবাদত) ও সিয়াসত (সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা) তথা হক্কুল্লাহ ও হক্কুল ইবাদের সমম্বিত রূপ। আর তথাকথিত আকীদা বিতর্কের কোনো স্থান ইসলামে নেই। ছাহাবা, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীন তথা আমাদের সালাফে সালিহীন এই অপ্রয়োজনীয় ও ফালতু বিতর্ক থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ছিলেন। মূলত এই কাজে যুক্ত হয় রিয়াজত ও সিয়াসতের পরীক্ষায় ফেল মারা লোকজন। এরা নিজেদের নিম্নমানের চিন্তা থেকে আকীদার নামে সাধারণ মানুষকে হাইকোর্টের ভয় দেখিয়ে নিজেদেরকে ভাইরাল বা রুটি-রুজির ধান্দাই করে থাকে।
তবে কেউ যদি এই অর্থহীন আকীদা বিতর্কের অবসানের লক্ষ্যে আকীদা নাম দিয়ে কোনো কিছু লিখেন, তাহলে সেটি অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। নিন্দনীয় ও পরিত্যাজ্য বিষয় হলো, মহান আল্লাহর অস্তিত্ব, আকৃতি ও অবস্থান নিয়ে বিতর্ক করে সময় নষ্ট করা। কারণ, দুনিয়াতে মুমিনের একমাত্র কাজ হলো আল্লাহর হুকুম তথা আদেশ-নিষেধ মত জীবন পরিচালনা করা ও সেদিকে মানুষকে আহবান করা; তাঁর অস্তিত্ব, আকৃতি ও অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন বা গবেষণা করা করা নয়। কারণ, এসব বিষয় মানুষের বোধগম্য নয়। এ কারণে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (র.) বলতেন:
عن سعيد بن جبير عن ابن عباس رضي الله عنهما قال :" تفكروا في كل شيء ، ولا تفكروا في ذات الله ". أخرجه البيهقي في "الأسماء والصفات" (618) من طريق محمد بن إسحاق ، وأيضا (887) من طريق الصاغاني ، وأبو الشيخ في "العظمة" (1/212) من طريق محمد بن يحيى المروزي ، بسند صحيح.
অর্থ : হযরত সাঈদ বিন জুবাইর কর্তৃক আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, "তোমরা সবকিছু নিয়ে চিন্তা করো। তবে আল্লাহর জাত (অস্তিত্ব, আকৃতি ও অবস্থান) নিয়ে চিন্তা করো না।" [ইমাম বায়হাকী রচিত 'আল-আসমা ওয়াস সিফাত' (৬১৮ ও ৮৮৭) ও আবুশ শায়খ রচিত 'আল-আজমাহ' (১/২১২)]।
মহান রব আমাদেরকে ছহীহ বুঝ দান করুন।
ঈমান নাকি আকীদা?
কুরআন হাদীসের পরিভাষা ঈমান৷ এ থেকেই উদগত হয়েছে আকীদা৷ তাই এটাকে অস্বীকারের যেমন সুযোগ নেই, তেমনি এটা নিয়ে পড়ে থাকারও প্রয়োজন নেই৷
কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত জরুরী বিষয়ে ঈমান রেখে আকীদা শব্দের স্বীকার অস্বীকারে কিছু আসে যায় না৷ আবার ঈমানের জরুরী বিষয়ে ঈমান না রেখে সারাদিন আকীদা আকীদা চিল্লিয়েও কোনো লাভ নেই৷
আকীদা ঈমানেরই মিনিং বহন করলেও কুরআন হাদীস ও সাহাবাদের পরিভাষা থেকে বের হয়ে আকীদা শব্দে স্থানান্তর হওয়ার কারণে কিছুটা সমস্যাও হয়েছে৷ ঈমান রাখা জরুরী নয় এমন অনেক বিষয়কে যার যার বিবেক দিয়ে যুক্তি খাটিয়ে আকীদার অংশ বানানো হয়েছে৷ এ থেকে শুরু হয়েছে মুসলিম উম্মাহর মাঝে ফিতনা ও বিচ্ছিন্নতা৷ কুরআন হাদীসে উল্লেখিত ঈমানের সকল বিষয়ে ঈমান রাখার পরও মুসলিম এক গ্রুপের কাছে অপর গ্রুপ কাফির বা ভ্রান্ত৷
বর্তমান পৃথিবীতে মুসলমানদের এমন কোনো দল নেই যাদেরকে মুসলমানদের কোনো না কোনো মুসলিম গ্রুপ কাফির বা ভ্রান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেনি৷ আর এর প্রধান কারণই হচ্ছে ঈমান পরিভাষা পরিহার করে আকীদায় গিয়ে এর মাঝে হাজারো বিষয় ঢুকানো৷
অবাক হই তখন যখন দেখি, যারা সবকিছুতে রাসূলের সুন্নাহর প্রতিফলন ঘটাতে চান, তারাই আবার সবচেয়ে বেশি আকীদা আকীদা করেন৷ ঈমান পরিভাষা বাদ দিয়ে আকীদায় গিয়ে তারা এমন অনেক কিছুকে জরুরী আলোচ্য বিষয় বানিয়ে অন্যদেরকে ভ্রান্ত ফতোয়া দেন, যেগুলোকে আলোচ্য বিষয় না নাবিজী বানিয়েছিলেন, না তার সাহাবা কেরাম৷
দেখা যায়, সুন্নাহ থেকে একটু বের হয়ে কোনো আমল করলে তা ধীরে অনেক দূর চলে যায়৷ প্রথমে একটি বিদআত একটু সহনীয় মনে হলেও পরবর্তীতে এতে ধরতে থাকে বিভিন্ন রং৷ একেকজন একেক রূপে বিদআতটি করে থাকেন৷ একই আমল বিদআতের বিভিন্ন রূপ রেখায় যাওয়ার প্রথম উৎসটি কিন্তু সুন্নাহ থেকে বের হওয়া৷ সুন্নাহ থেকে বের হওয়ার পরই ইবাদতটি যার যার বিবেক মতো হয়ে বিদআতের বিভিন্ন রূপ নিতে থাকে৷ অবশেষে সুন্নাহ সম্মত আমল ও বিদআতি পন্থায় আমলের মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য হয়ে যায়৷ ঈমান থেকে আকীদায় স্থানান্তর হওয়ার কারণেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি৷
এর জ্বলন্ত প্রমাণ আমি আপনাদের দেখাচ্ছি৷ একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে মুমিন বা কাফির নয় বলে স্বীকার করার পরও তাকে তার আকীদার ভাই মানছে না৷ আমাদের সহীহ আকীদার ভাই বলে তারা নির্ধারিত একটি দল বোঝিয়ে থাকেন৷ এর ভিতরে হয়ত বাংলাদেশে 2% পার্সেন্টের বেশি হবে না৷ তাহলে বাকী সবাই মুমিন আবার সহীহ আকীদার ভাই না এর মতলব কী? তাহলে তারা কি আকীদাকে ঈমানের স্থলে ব্যবহার করছেন? নাকি ঈমান বহির্ভূত অনেক কিছুকে আকীদার মাঝে ঢুকিয়েছেন? আকীদা দ্বারা ঈমান মিনিং হলে আকীদায় ভ্রান্ত মুমিন হয় কেমনে? বা মুমিন ব্যক্তি আকীদায় ভাই হয় না কেমনে?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন